কামসূত্রের উৎপত্তি ও বিকাশ
আমাদের দেশের প্রাচীন শাস্ত পাঠে জানা যায় যে, খ্রীষ্টের জন্মের শত শত বৎসর আগেও ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিরাট উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ছিল।
সেই প্রাচীন দিনে বিশ্বের বিভিন্ন জাতির আত্নিক উন্নতি, সামাজিক ও বৈষয়িক ধ্যান জ্ঞান সব কিছুর সার্থক সাধনার জন্যেই ভারতের শাস্ত্রের দিকে দৃষ্টিপাত করতেন।
সে ছিল একটা স্বর্ণ যুগ- একটি অতুলনীয় যুগ।
একদিকে বেদ, উপনিষদ, প্রভৃতি ধর্ম গ্রন্থ, অন্য দিকে বিভিন্ন জ্ঞান- বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে সার্থক সব গ্রন্থ রচিত হয়েছিল।
মানুষ যাতে ধর্মীয় ভাবে জীবন যাপন করতে পারেন তাই তাঁদের জীবনে চারটি সাধনের স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়। তা হলো-ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ।
মানুষের সমস্ত কাজের পেছনে চাই অর্থ। চারটি সাধনের স্পষ্ট সাহচর্য দেখা যেত।
মানুষের জীবন যাত্রাকে নিয়ন্ত্রিত করার জন্যে বিভিন্ন অংশে ভাগ করা হতো-তা হলো ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বাণপ্রস্থ ও সন্ন্যাস।
তাই দেখা যাচ্ছে সাধনার মধ্যে ধর্মের পর অর্থ, তারপরই কাম-ছাত্র জীবনে বা ব্রহ্মচর্যের পরই গার্হস্থ্য বা দাম্পত্য জীবন স্থান পেয়েছে।
কামশাস্ত্র আলোচনার স্তর
পুরাণ মতে ব্রহ্ম বা পূর্ণব্রহ্ম সারা বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞান নানা ঋষি বা মুনির মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করে থাকেন।
তাই ঋষি বা মুনিদের প্রাচীন ভারতে বিরাট একটা সম্মানের আসন দেওয়া হতো।
এই মত অনুযায়ী নর-নারীদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে সমস্ত বিধান রচনা করেন মনু-যাঁকে ভারতীয় আইন শাস্ত্রের পিতা বলা হয়ে থাকে।
তারপর বৃহস্পতি রচনা করেন অর্থশাস্ত্র।
মহাদেবের অনুচর নন্দী হরপার্বতীর কথোপকথন শুনে রচনা করেন রতিশাস্ত্র। এ গ্রন্থের নাম মনুসংহিতা।
মহর্ষি উদ্দালিকের পুত্র শ্বেতকেতু তা থেকে একটি সুন্দর প্রন্থ রচনা করেন। তাপর বাভ্রব্য নামে উত্তর ভারতের একজন ঋষি তাকে সুন্দরভাবে ১৫০টি পরিচ্ছেদে ভাগ করে তা বিশ্লেষণ করেন।
বাভ্রব্যের বিভিন্ন বিভাগ রচনা
বাভ্রব্য তাঁর গ্রন্থে কামশাস্ত্রকে মোট সাতটি ভাগ করে রচনা করেছিলেনঃ
১। সাধারণ কথ।
২। নর-নারীর যৌনমিলন ও তৃপ্তি।
৩। যুবতী নারীদের কাম জাগরণ।
৪। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দৈহিক আনন্দ।
৫। পরস্ত্রীর সঙ্গে সম্বন্ধ ও পরস্ত্রীর সঙ্গে কাম।
৬। বারাঙ্গনামের কাম বৃত্তান-।
৭। শারীরিক সৌন্দর্য ও কামশক্তি বৃদ্ধির উপায়।
বাভ্রব্য এইভাবে তাঁর গ্রন্থে কামশক্তিকে একটা সুনির্দিষ্ট পথে চালিত করেন ও তার একটি বিভাগ করে দেন।
বাভ্রব্যের এই পুস্তক সারা বিশ্বের পণ্ডিত ও লেখক সমাজে বিশেষ প্রশংসা লাভ করে।
বাভ্রব্যের পর কামশাস্ত্র
বাভ্রব্যের গ্রন্থটির বিভিন্ন অধ্যায়কে আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে ভারতের ঋষিরা বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন।
১। চারায়ণ লেখেন-সাধারণ কাম বিচার।
২। সুবর্ণাভ নামক লেখক-যৌন কাম বিচার।
৩। ঘোটকমুখ লেখেন- যুবতী নারীর বিচার।
৪। গোমার্দীয় লেখেন-স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধের বিচার।
৫। গণিকাপুত্র লেখন-পরস্ত্রীগমন বিচার।
৬। দত্তক লেখেন-পতিতাদের কাম বিচার।
৭। কুচুমার লেখেন-দেহ সৌন্দর্য ও যৌনিক বৃদ্ধির উপায় বিচার।
কিন্তু এই সব গ্রন্থ প্রত্যেকটি উৎকৃষ্ট হলেও, পরস্পর পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল বলে লোকের মনকে তা আকর্ষণ করতে পারেনি।
তাই ঋষি বাৎস্যায়ন এই শাস্ত্র একত্রিত করে তাঁর ‘কামসূত্রম’ নামক গ্রন্থটি রচনা করলেন। এই গ্রন্থে তিনি বিভিন্ন ভাগে সব রকম কাম উদ্রেকের তত্ত্ববিষয়ে সুন্দর ভাষায় ও স্পষ্ট করে আলোচনা করেছেন।
কামশাস্ত্রের ধারা
বাৎস্যায়নের কামসূত্রের বাভ্রব্যের মতই সাতটি অংশ। এই গ্রন্থ তিনি ছত্রিশটি অধ্যায়ে ভাগ করেন।
মোট ৬৪টি বিষয়ে তিনি এ গ্রন্থের মধ্যে বিশদভাবে আলোচনা করেন।
এই গ্রন্থের আলোচনা তিনি সম্পূর্ণ করেন মো ১২৫০টি শ্লোকের মাধ্যমে।
কিন্তু তাঁর শ্লোকগুলি অপূর্ব। প্রতিটি শ্লোকের বক্তব্য এত সুন্দর যে তার ব্যাখ্যা করলে প্রচুর লেখা যায়। কিন্তু আমরা অতি সংক্ষেপে অথচ সুস্পষ্ট ভাবে কি করে তা ব্যাখ্যা করা যায় সেই চেষ্টা করেছি।
বাৎস্যায়ন তাঁর বইতে তৎকালীন সমাজের সুন্দর স্পষ্ট ছবি এঁকে গেছেঁন।
তিনি যে কালে গ্রন্থ রচনা করেন,
তখন এ দেশে স্ত্রী-স্বাধীনতা বিদ্যমান ছিল।
স্ত্রী-পুরুষ স্বাধীনভাবে মেলামেশা করত-এমন কি নানা ঠাট্টা তামাশা বা কৌশলে শ্লোকের মাধ্যমে যৌনতার ইংগিত দেওয়াকে তারা ঘৃনা মনে করত না। সত্যিকারের রুচি জ্ঞান ছিল তাদের মনে।
কামশস্ত্রে সমাজ ব্যবস্থা
বাৎস্যায়নের কামশাস্ত্রে সমাজ ব্যবস্থার বিষয়ে সুন্দর বর্ণনা আছে।
পুরুষেরা পুঁথিপাঠ,গ্রন্থরচনা, দেশ-বিদেশে গমন নানা প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য করত।
আর্থিক, ধর্মবিষয়ক ও সম্ভোগাদি বিষয়ে তাঁরা যথেষ্ট উন্নতি করেছিলেন।
নারীরা, তেমনি স্বাধীনভাবে নানা শিল্পকলা ও সঙ্গীতকলায় পারদর্শিনী হয়ে সংসারের নানাবিধ সুখ সম্পদ উপভোগ করত।
এইভাবে সুন্দর জীবন তাঁরা উপভোগ করতেন-জীবনকে প্রকৃত শিল্পকলার মত ভাবে তাঁরা গ্রহণ করতেন।
বিলাস ব্যসন
সে আমলে দেশের রাজকর্মচারী ও ধনী, অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা নৃত্যগীত ও বিলাস ব্যসনে বেশ সময় কাটাতেন-এইভাবে তাঁরা জীবনকে ভোগ করতেন।
নৃত্যগীত নিপুনা ও বিলাস ব্যসন সংযুক্ত নানা কৃষ্টিসম্পন্ন গণিকা ছিল সে আমলে। তারা অধিকাংশই ছিল সুন্দরী নর্তকী ও গায়িকা। এদের সংস্পর্শে এসে তাঁরা জীবনটিকে ভোগ করতেন ঠিক ইন্দ্রপুরীর মত। জীবনকে ভোগ করতেন ধর্ম, অর্থ, কামের প্রতীক রূপে।
সে এমন একদিন ছিল, যখন পুরুষ ও রমণীর উপভোগে কোন বাধা ছিল না। কামতৃপ্তি ছিল বিরাট বড় বস্থ, তাতে কোন সামাজিক বাধা মাথা তুলতে পারত না।
কামশাস্ত্রে যথেষ্ট সঙ্গম
কামশাস্ত্রে যথেষ্ট সঙ্গম বা ইচ্ছামত নর-নারীর তৃপ্তিকে উচ্চ আসন দেওয়া হয়েছে।
তাই তৎকালীন পরিপ্রেক্ষিতেই পরস্ত্রীগমন পতিতাগমন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
নারী যেমন খুশিভাবে পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশা কত, তেমন ইচ্ছামত নিজের মনোমত পুরুষ উপভোগ করতেও পারত।
পুরুষ অর্থ ও উচ্চপদের অধিকারী হলে ইচ্ছানুযায়ী নারীকে যথেষ্ট ভোক করতে পারত- কিন্তু বলপ্রয়োগ ছিল অশাস্ত্রীয়।
সে আমলে দরিদ্রা নারী যদি গুণবতী বা রূপবতী হতেন তা হলে রাজ্যের প্রধান পুরুষকেও ধন্য করতে পারতেন।
যদি কোন পুরুষ বংশদোষে হীনপদস্থ বা অর্থাবাবে পথের কাঙালও হতেন, তা হলেও শিল্প বা কলার প্রভাবে বা বাণিজ্যের অর্থাগমে রাজ্যের রাজকন্যাকেও শয্যাসঙ্গিনী করতে পারতেন।
সেকালে ইন্দ্রিয়-সেবা, উল্লসিত জীবন ও যৌবন চরিতার্থতা ছিল মানুষের কাম্য পদার্থ।
শুধু মাত্র মোক্ষ বা মুক্তির জন্যেই মানুষ পাগল ছিল না। ধর্ম, অর্থ, কাম এই তিন বস্থর জন্যেও লালায়িত ছিল।
আমরা সমাজের এই সব অনেক দৃষ্টান- অন্যান্য সংস্কৃত গ্রন্থেও দেখতে পাই।
বাৎস্যায়নের দেশ ও কাল
বাৎস্যায়নের কামসূত্র পড়লে বোঝা যায়, ঐরূপ কাম বিলাস সম্পন্ন পুরুষ ও নারীদের যুগে তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল।
কোথায় এবং কোন দেশে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন তার ঐতিহাসিক বৃত্তান- বিশেষ পাওয়া যায় না।
তবে মনে হয়, তিনি গুপ্ত সম্রাটদের সময়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন।
এই গুপ্ত সম্রাটদের সময়েই মহাকবি কালিদাস, জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির ইত্যাদি মনীষা সম্পন্ন ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
বাৎস্যায়নের সাহিত্যের মত তাঁদের সাহিত্যেও অনেক অধুনা সমাজ বিরুদ্ধ ও তথাকথিত বর্তমান অশ্লীল আখ্যা বিশিষ্ট কবিতাও লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
নাট্য লেখক শূদ্রক রাজাও ঐ সময়ে তাঁর মৃচ্ছকটিক নামে সংস্কৃত নাটক লেখেন।
তবে অনেকে বলেন বাৎস্যায়ন খ্রীষ্ট পূর্ব যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
কেউ কেউ বলেন খ্রীষ্ট জন্মের পরবর্তী যুগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন দাক্ষিণাত্য দেশে। এ বিষয়ে অনেক মতানৈক্য আছে।
তবে আমরা এ কথা অনেকটা বিশ্বাস করি যে মহর্ষি বাৎস্যায়ন গুপ্ত রাজাদিগের সময়েই জন্মগ্রহণ করেছিলেণ। বহু দেশ-বিদেশ ঘুরে যৌনক্রিয়ার বিভিন্ন প্রচলন দেখে জ্ঞান লাভ করে কামসূত্র নামে এই পুস্তকটি রচনা করেন।
তাঁর পুস্তক পড়লে বুঝতে পারা যায় যে, তিনি যখন জীবন যাপন করেছিলেন, সেই সময় ভারতের অধিকাংশ লোক গীত বাদ্য ও নানা কামশাস্ত্রে ব্যুৎপন্ন ছিলেন।
কামসূত্রকালে সামাজিক জীবন
কামসূত্র যে কালে রচিত হয়, সে আমলে লেখাপড়া সাধারণ লোকের মধ্যে খুব বেশি পরিমাণে চালু ছিল।
স্ত্রী-স্বাধীনতা, স্ত্রীলোকদের আদর যত্ন করা সমাজে বেশ প্রচলিত ছিল।
কামশাস্ত্র পাঠ করলে বোঝা যায় তখনকার সমাজের ব্যবস্থা মদ্যপায় নিজেদের একত্র বিহার ও উল্লসিত আচরণ উদ্যান যাত্রা অর্থাৎ বহু প্রস্ফুটিত ও সুগন্ধি পুষ্পদল শোভিত উদ্যান বীথিকায় নর-নারীর একত্রে ভ্রমণ, লেখাপড়া, শিল্প কার্য, বাণিজ্য ইত্যাদি যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল।
তৎকালীন নানা সাহিত্যে (যেমন প্রাচীন নাট্য লেখক কালিদাস প্রভৃতির গ্রন্থে) সেই সমাজের জীবন ধারার অনেক ইতিহাস পড়তে পারা যায়। যা বাৎস্যায়ন লিখে গেছেন তার সঙ্গে এর অনেকটা মিল পাওয়া যায়।
অশ্লীল কথাটায় বহু ব্যাপকতা আজকাল ঘটেছে, কিন্তু ঋষি বাৎস্যায়নের সময়ে এই কথাটার এত প্রচলন হয়নি। রসপূর্ণ বাক্য সে আমলে রাজদরবার থেকে সুরু করে সাধারণ মানুষ সকলের কাছেই ছিল আদরণীয়।
অবশ্য বাক্য নগ্ন হতো না- কিন্তু এমনভাবে তা বলা হতো যে তার অর্থ দুভাবে ব্যবহার করা যায়। সে আমলে শালীনতা বোধ ছিল ঠিকই- কিন্তু রসবোধ ছিল এবং যৌনতা রস বলে গণ্য হতো।
ত্রিবর্গের প্রতিপত্তি
মানবজীবনের সর্বাপেক্ষা অপরিহার্য
প্রাচীনযুগের ইতিহাস পড়লে দেখা যায় তখন মানুষ সাধারণতঃ একশত বৎসর বাঁচতেন।
প্রথম ষোল বছর বাল্য ও শৈশবকাল বিদ্যার্জনে ব্যয়িত হতো।
তারপর আরম্ভ হতো সংসার জীবন। সেটা চলত পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত। তারপর আসত বানপ্রস্থ-শেষ জীবনে অর্থাৎ ষাটের ওপরে হতো সন্ন্যাস।
তখন ভগবানের ধ্যান্-ধারণা করতে করতে শেষ জীবনটুকু কাটাতেন তাঁরা।
বাল্য ও কৈশোরে
বাল্য ও কৈশোরে ছেলেরা প্রথম অভিভাবদের অধীন থেকে বিদ্যাশিক্ষা করত।
তারপর তারা যেত গুরুগৃহে। গুরুগৃহে থেকে তারা অঙ্কন বিদ্যা, গণিত শাস্ত্র, শিল্পকলা, সাহিত্য, ব্যাকরণ, ন্যায়, বাণিজ্য প্রভৃতিতে জ্ঞানলাভ করত।
আর ষোল বছর বয়েস পার হয়ে গেলে গুরুগৃহের পাঠ শেষ করে ফিরত।
তখন কেউ বা বিবাহ করত কেউ বা করত না।
যৌবনে
গুরুগৃহে যে বিদ্যা অর্জন করত তার অনুশীলন করে তারপর তারা নানা শিল্প, বাণিজ্য, কাব্য, সাহিত্য, ব্যবসায় ইত্যাদি নানাভাবে অর্থ উপার্জনের চেষ্ট করত।
সঙ্গে সঙ্গে যৌবন আগমনে তাদের মধ্যে কামবৃত্তি স্ফুরিত হওয়ায় তারা হয় বিবাহের পর স্ত্রীসঙ্গ করত। আর তা না হলে সুন্দরী কলাবিদ্যানিপুণ্য নারীদের সঙ্গ লাভ করত।
তাছাড়া নানা প্রকার জীবন আনন্দকর উৎসবে যোগদান করে সঙ্গীত, নৃত্য, বাদ্য ইত্যাদিতে পারদর্শিতা লাভ করে জীবনটাকে পরম সুখে অতিবাহিত করার চেষ্টা করত।
তখনকার দিনে বহু নারীকে বিবাহ করা এবং বহু নারীকে একসঙ্গে সম্ভোগ করা অসামাজিক ও নিন্দনীয় বলে পরিগণিত হতো না।
সেটা ছিল সামাজিক রীতি।
এমন কি কোন ভদ্রসন্তান বা অভিজাত বংশের লোক যদি পতিতা সম্ভোগ করত, তখনকার দিনে তা পাপ বলে লোকে মনে করত না।
তাদের দুশ্চরিত্র বা অপবাদ দেওয়া হতো না।
বারনারী বা পতিতারা শিল্পবিদ্যা, সঙ্গীতবিদ্যা, বাদ্যযন্ত্র প্রভৃতিতে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করত।
শূদ্রক রাজার রচিত ‘মৃচ্ছকটিক’ নাটকে সে আমলের এক অপূর্ব চিত্র পাওয়া যায়। এটি কবি কালিদাসের বা বাৎস্যায়নের সমসাময়িক কালেই রচিত।
এই নাটকে দেখা যায় চারুদত্ত নামে একজন সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তি বসন্তসেনা নামে এক বারাঙ্গনার জন্যে শূলে মৃত্যু পর্যন্ত বরণ করতে গিয়েছিলেন।
তখনকার দিনে কি যুবক, কি যুবতী সকলেই যৌবন মদে মত্ত হয়ে পরস্পর উল্লাস, কাম ও যৌন আনন্দ ইত্যাদি সম্ভোগ করতেন।
কামশাস্ত্র ও ধর্ম
যুবক বা যুবতীরা সংসার ধর্ম পালন করতে বা যৌবন মদে মত্ত হয়ে যে হিন্দু শাস্ত্রের বিধিনিষেধগুলি অবজ্ঞা করতেন তা কখনো নয়।
পুরুষেরা দেখতেন, নারীর সঙ্গে পূর্ণ বিলাস, পূর্ণ কামচর্চা করলে তাতে কোন ধর্মশাস্ত্র ব্যবস্থা লঙ্ঘন করা হয় না। বরং যে কোন নায়িকা অধিকাংশ স্থানে ধর্মকার্যে বা সৎপথে নায়ককে চলতে প্ররোচিত করত।
তখনকার দিনে ব্রাহ্মণদিগের কর্তব্য ছিল-
ইষ্যাধ্যয়ন দানামিং তপঃ শান্তিং ধৃতিঃ ক্ষমা।
অলোভ ইতি অষ্টানি ব্রাহ্মণানাৎ!
-মনুসংহিতা
অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের কর্তব্য ছিল যজ্ঞ, পড়াশুনা, দান, তপস্যা, ক্ষমা, সহ্যগুণ বা ধৃতি প্রভৃতি।
ক্ষত্রিয়দের কর্তব্য ছিল- প্রজাদিগের রক্ষা, যুদ্ধ বিগ্রহ, যজ্ঞকার্যের উদ্যোগ প্রভৃতি।
বৈশ্যদের কর্তব্য ছিল- বাণিজ্য, অর্থ উপার্জন। আর শূদ্রদের কর্তব্য ছিল অন্য জাতিদের সেবা।
এই সব কাজে নারী পুরষদের উৎসাহ দিত এবং কামচর্চা করতে করতে তাঁরা প্রিয় বংশবদ পুরুষকেও সৎ উদ্দীপনায় প্ররোচিত করত।
নারীর ধর্ম ছিল স্বামী- স্বামীর ধর্মই নারীর ধর্ম বলে গণ্য হতো।
তাই স্ত্রীর নাম ছিল সহধর্মিণী।
অর্থ ও কাম
বাৎস্যায়ন বলেন যতো কামে উন্মত্ত হবে ততো অর্থ উপার্জন করবার প্রবৃত্তি ও কৌশল সৃষ্টি করতে পারবে- তার অর্থ উপার্জন ততো বাড়বে।
তার কেবলই ইচ্ছা হবে কিসে বেশি অর্থ উপার্জন করে সে স্ত্রী পরিনীতা বা অভীপ্সীতা বা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নারীকে উজ্জ্বল মণিমাণিক্যাদি কচিত অলংকার দিয়ে তৃপ্ত করতে পারবে।
তার সঙ্গে প্রেমানন্দ ততো বৃদ্ধি পাবে।
নায়িকা এতে তৃপ্ত হবে, তাই সে পুরুষকে সুখপূর্ণ আলিঙ্গন, চুম্বন, সুরত ইত্যাদি দ্বারা তার জীবনকে স্বর্গতুল্য করে তুলবে।
জীবন হবে সুখ পূর্ণ- জীবন হবে প্রকৃতই আনন্দময় ও তৃপ্তিকর।
এইভাবে বাৎস্যায়নের মত- কাম এবং কাম পরিতৃপ্তিই মানুষকে ধর্ম ও অর্থ উপার্জনের পথে নিয়ে যায়।
কামই মানুষকে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে যাবার ক্ষমতা দেয়।
কামই জীবনের পথকে প্রকৃতই সুগম্য ও কুসুমে আত্তীর্ণ করে তোলে।
কলাবিদ্যা শিক্ষা
কমের চৌষট্টি কলা
বাৎস্যায়নের মতে কামের পথে প্রকৃতই অগ্রসর হতে হলে নারী বা পুরুষ উভয়ের কতকগুলি কলাবিদ্যা শিক্ষা করা উচিত।
কলাবিদ্যা একটি নয়-একাধিক।
মোট ৬৪টি কলা বাৎস্যায়ন দেখিয়ে গেছেন। এই সব কলায় একজন লোক হয়ত শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে না-তবে কয়েকটি কলায় সে ব্যুৎপত্তি লাভ করতে পারে।
আর কলা ছাড়া জীবন ও কাম কিছুই মধুময় হতে পারে না।
নারী ও কলা
নারী যে শুধু সুন্দরী হলেই পুরুষের মন জয় করতে পারে বা তাকে আকর্ষণ করতে পারে, একথা ঠিক নয়।
এমন অনেক সময় দেখা যায় যে নারীর যথেষ্ট গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল না হলেও বা যথেষ্ট সুগঠন না থাকলেও যদি তার কণ্ঠস্বর মিষ্ট হয়, ব্যবহার খুব সনে-াষজনক হয়, নানাপ্রকার কলা বিদ্যা তার আয়ত্তে থাকে, তা হলেও সে জীবনে উন্নতি করতে পারে।
অনেক গুনগ্রাহী, বিদগ্ধ পুরুষ হয়ত সেই নারীকে পাবার জন্যে আকুল হতে পারে।
তাই বাৎস্যায়নের চৌষট্টি কলা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা নারীদেরও অবশ্য উচিত।
চৌষট্টি কলার প্রয়োজনীয়তা
নিুলিখিত কলাগুলি চৌষট্টি কলার মধ্যে গণ্য। তাদের প্রত্যেকটির কথা বলা হচ্ছেঃ
১। কণ্ঠ সংঙ্গীত চর্চা।
২। যন্ত্র সংঙ্গীত পারদর্শিতা।
৩। নৃত্য-কলা বা নাচ।
৪। অঙ্কন বিদ্যা বা ছবি আঁকা।
৫। নিজ সীমন্ত বা চুলকে সুসজ্জিত করা।
৬। নানাবিধ পুষ্পে শয্যা সুশোভিত করা।
৭। নানাবিধ বর্ণে গৃহ সুসজ্জিত করা।
৮। আপন দন্ত, পোষাক-পরিচ্ছদ, কেশ নখ প্রত্যক্ষ বর্ণের দ্বারা সুসজ্জিত করা।
৯। বর্ণাঠ্য প্রস্তরে ও ধাতব পদার্থে ঘর ও শয্যা সুশোভিত করা।
১০। ভিন্ন ভিন্ন উৎসবে বা আনন্দে শয্যা নানাভাবে আস্তরণ দেওয়া।
১১। সাঁতার ও জলকেলি।
১২। প্রিয় লোককে আকর্ষণ করার জন্য মন্ত্রতন্ত্র অনুশীলন।
১৩। ফুল নিয়ে মালা গাঁথা ও অঙ্গাদি সুশোভিত করা।
১৪। ফুল নিয়ে মালার মুকুট ও বেষ্টন।
১৫। নিজের শোভন বেশভুষা করা-এক উৎসবে এক প্রকার, অন্য উৎসবে অন্য প্রকার।
১৬। চিত্তহারী প্রথায় কানের দুল পরিধান করা।
১৭। সুগন্ধি দ্রব্য তৈরী করা। তৈজস পত্রাদি তৈরী সম্বন্ধে শিক্ষা করা।
১৮। নূতন ভূষণ তৈরী বা পুরানো বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার নতুন করে গড়া।
১৯। অতিথিবর্গের সন্থষ্ট করবার বিদ্যা।
২০। পরিচ্ছদ রচনার সুচারুতা।
২১। হস্ত কৌলশ।
২২। রান্না করার পারদর্শিতা।
২৩। পানীয় দ্রব্য তৈরী করা, বিভন্ন মিষ্টান্ন তৈরী করা, অম্ল, চাটনি, প্রভৃতি তৈরীতে পারদশিতা।
২৪। সেলাই ও দেহের বস্ত্রাবরণ করতে সুদক্ষতা।
২৫। বস্ত্রখণ্ড ও সুতা দিয়ে পাখি, পাতা, ফুল ইত্যাদি তৈরী করা।
২৬। বীণা ও ডমরুর শব্দ অনুকরণ।
২৭। নানাবিধ হেঁয়ালী রচনা।
২৮। সঙ্গে সঙ্গে না ভেবে চিনে- কবিতা রচনা করা বা কবিতার পাদপূরণ করা।
২৯। কঠিন অর্থপূর্ণ দুরূহ শব্দের অর্থ নিরূপণ করা।
৩০। সুমধুর কণ্ঠে শাস্ত্রীয় শ্লোক পাঠ করা।
৩১। নাটক অভিনয় দর্শন ও নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের প্রকৃত সমালোচনা।
৩২। কোনও কবিতার হারানো পংক্তির পুনরুদ্ধার করা বা তা পুনরায় নতুন করে লেখা।
৩৩। বেত বা তৃণ থেকে নানাবিধ নতুন নতুন আসবাবপত্র রচনা বা বোনা।
৩৪। কাঠ থেকে কুঁদে ছবি বা দৃশ্য রচনা।
৩৫। ছুতারের কাজ এবং বাড়ি ঘর তৈরী।
৩৬। সোনা বা রূপা ও দামী পাথর বসিয়ে নানা কাজ করা।
৩৭। রসায়ন বা ধাতব শাস্ত্র অধ্যয়ন।
৩৮। উজ্জ্বল পাথর ও দামী ধাতুর বস্তু রচনা।
৩৯। বাগানের কাজ করা।
৪০। ভেড়া, মোরগ এবং পায়রাদের নিয়ে কৌতুকপূর্ণ খেলা করার উৎসাহ দান।
৪১। শুক, ময়না প্রভৃতি পাকিকে কথা শেখানো ও তাদের দিয়ে নানা কৌতুককার্য করানো।
৪২। গাত্র মর্দন করতে শেখা, বেশভূষা রচনা করা, কাজের শিল্প শিক্ষা করা।
৪৩। সংবাদ প্রাপ্তির নমুনা স্বরূপ আঙ্গুলের দাগ বোঝা।
৪৪। গুপ্ত সংবাদ বোঝার জন্যে ভাষা শিক্ষা।
৪৫। বিভিন্ন দেশের লিখিত ভাষা ও কথাবার্তা বোঝা।
৪৬। ঘোড়া হাতী ও যানবাহন সুসজ্জিত করা।
৪৭। সংকেত চিহ্ন বা গুপ্ত বার্তা বোঝা।
৪৮। নানা ধরণের যন্ত্রে জ্ঞানলাভ করা।
৪৯। স্মৃতিশক্তি বা স্মরণশক্তি বৃদিধ করার অভ্যাস বা কি করতে পারলে বেশি কথা মনে রাখা যায়।
৫০। নানাবিধ পুস্তক পাঠ।
৫১। নানাবিধ পুস্তক রচনা।
৫২। অভিধান ও বিশ্বকোষ সংগ্রহ।
৫৩। ছন্দের নিয়ম এবং বক্তৃতা শিল্প শিক্ষা।
৫৪। লুকাবার শিল্প, তুলা রচিত দ্রব্যকে পশমরূপে রূপদান, সাধারণ দ্রব্যকে চিত্তাকর্ষক করে তোলা। নানা বস্ত্র পরিধান করা।
৫৫। দাবা খেলা ও পাশা খেলায় দক্ষতা।
৫৬। বস্ত্র পরিচ্ছদ পরিধান করে নিজেকে অন্যের চোখে আকর্শণীয় করে তোলা।
৫৭। শিশুদের মত পুতুল ও গোলাকার সব বস্তু নিয়ে খেলা করা।
৫৮। নানা প্রকার শারীরিক ব্যায়াম ও কলাকৌশল শিক্ষা করা।
৫৯। রাজনীতি শিক্ষা করা।
৬০। সামরিক রীতিনীতি সম্পর্কে জ্ঞান।
৬১। মুখ দেখে মানুষের চরিত্র বোঝা।
৬২। কৃত্রিম পুষ্প রচনা শিক্ষা করা।
৬৩। কর্দম বা নরম মাটি দ্বারা নানা ধরণের সুন্দর মূর্তি রচনা করা।
৬৪। গণিত বিষয়ে জ্ঞান লাভ।
চৌষট্টি কলার প্রয়োজনীয়তা
এই চৌষট্টি কলা ছাড়া বাভ্রব্য আরও চৌষট্টি ধরনের শিল্পকাজের কথা বলেছেন।
বাভ্রব্য ছিলেন পঞ্চাল দেশের লোক।
তাই তিনি এই কথাগুলিকে পাঞ্চালী কথা বলে অভিহিত করেছেন।
যে বারাঙ্গনা এই চৌষট্টি কলায় পারদর্শিনী হতে পারতেন তাঁদের বলা হতো ‘রূপ-গণিকা’ সংক্ষিপ্ত ভাষায় গণিকা।
সাধারণ মানুষ এই গণিকাকে সম্মান করত-বর্তমানেও গণিকারা পরম আদরণীয়।
রাজবংশীয় বা অভিজাতবংশীয় মেয়েরাও এই চৌষট্টি কলা শিক্ষা করলে তারা যতাযথ আদর্শ স্থানীয় বলে গণ্য হতেন ও উত্তম পুরুষকে লাভ করতে পারতেন।
দায়িত্ব ও কর্তব্য
পুরুষের কর্তব্য
যেমন নারী তেমনি পুরুষের পক্ষেও কলাবিদ্যা বা ভালবাসার বিজ্ঞান এমনভাবে শিক্ষা করা উচিত যাতে তার ভার্য্যা বা উপপত্নী সন্তোষের সঙ্গে জীবন যাপন করতে পারে।
বাল্যে ও কৈশোরের গুরুগৃহে বা পাঠশালায় বিদ্যা অর্জন করার পর প্রত্যেক নাগরিকের অর্থোপার্জন করায় নিযুক্ত হওয়া অবশ্য উচিত।
শাস্ত্রে আছে, ব্রাহ্মণ লোকের কাছ থেকে দান গ্রহণ করবে, ক্ষত্রিয় যুদ্ধে জয়লাভ করে কৃতিত্ব দেখাবে, বৈশ্য যুবক ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থ উপার্জন করবে-আর শূদ্র যুবক পরের সেবা করে জীবন যাপন করবে।
অর্থ উপার্জনের পর নাগরিক তার নিজের জন্যে বসত বাড়ি তৈরী করবে। সে সর্ব প্রকার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করবে।
মানুষের উচিত রাজধানীতে বা অন্য বড় শহরে বাসগৃহ নির্মাণ করা।
তবে বহু গণ্যমান্য লোকের সঙ্গে তার সহৃদয়তা বা বন্ধুত্ব হয়ে থাকে।
গৃহ নির্মাণ কলা
বাড়ি এমন স্থানে নির্মিত হওয়া উচিত, যাতে জল পাবার কোন কষ্ট না হয়।
বাৎস্যায়ন পড়ে মনে হয়, যে সময়ের কথা লেখা হচ্ছে সে সময় শহরে নগরে জল পাবার ব্যবস্থা ভাল ছিল না।
এই বাড়ি ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য সাধন করতে ভিন্ন ভিন্ন অংশে গঠিত হওয়া উচিত।
বাড়িতে ফুলবাগান, উদ্যান, লতাকুঞ্জ ইত্যাদি থাকবে। এ অংশের কক্ষগুলি দুই ভাবে বিভক্ত হবে-বহির্বাটী ও অন্তঃপুর। অন্তঃপুর হবে নারীদের আবাস্তবর্হিবটীতে থাকবে, বৈঠকখানা, যেখানে বিভিন্ন সুরসিক জ্ঞানী বা বাণিজ্য সম্পর্কিত লোকেরা বসে কথাবার্তা বলবে।
এই বৈঠকখানায় বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে খেলাধুলাও হতে পারে। বৈঠকখানার মেঝে মাদুরের দ্বারা ও জানালা পট্ট বস্ত্রের দ্বারা আবৃত থাকবে। এখানে একটি সুন্দর বিছানা থাকবে-একধারে ফুলদানীতে ফুল থাকবে। বালিশ বেশ নরম হবে।
প্রধান পর্যাঙ্কের কাছে থাকবে একটি শয্যা- সেখানে গৃহকর্তা তাঁর প্রিয় নারীদের সঙ্গে রতি কার্য করলেও শয্যা বসন সিক্ত বা কলুষিত হবে না।
এর মাথার দিকে থাকবে ব্রাকেট গৃহ দেবতার একটি প্রতিচ্ছবি বা ছবি।
এই ছবির নীচে থাকবে একটি টেবিল। এই টেবিলে থাকবে যে দ্রব্য তা হলো-
সুগন্ধি দ্রব্য, পুষ্পমাল্য, মোমবাতি, সুগন্ধি পান, দাড়িম্বের খোসা ও তাম্বুল । বিছানার তলায় থাকবে পিকদানী।
এছাড়া, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য থাকতে পারে বীণা, ছবি আঁকার পাত্র, ব্রাশ, রঙ, বই, হাতীর দাঁতের তৈরী বস্তু, পুষ্পনির্মিত স্তবক প্রভৃতি।
ঘরের বিছানা ছাড়া, বালিশ থাকবে-সব ঘরে মাদুর বিছানা থাকা উচিত।
দাবা পাশা থাকবে ঘরে।
বাইরের গৃহসজ্জা
এই বৈঠকখানা ঘরের বাইরে থাকবে বারান্দায় ময়না, টিয়া প্রভৃতি পাখি।
গ্রীষ্মকালের জন্যে থাকবে বাসগৃহের পাশে একটি বাগান। বাগানটি হবে মনোরম।
এই বাগানে একটি ছায়াযুক্ত গাছের তলে থাকবে একটি দোলনা। এই দোলনাটি হবে সুদৃশ্য।
এই বাগানে ফোয়ারা থাকলে ভাল হয়।
না থাকলে, কয়েকটি সুদৃশ্য বেদী থাকবে। বেদীতে থাকবে সুগন্ধি ফুলচন্দন। এর চারিদিকে লতাপাতা ও সুগন্ধি ফুলের বৃক্ষ থাকবে।
নাগরিকদের দৈনিক জীবনধারা
১। সকালে উঠে নাগরিক প্রাতঃকৃত্যাদি করবে। তার মধ্যে দাঁতমাজা, মুখ ধুয়ে, ফেলা ইত্যাদি থাকবে।
২। ্লান করবে সুগন্ধি জল দিয়ে। তোয়ালে দিয়ে গা মুছবে।
৩। চন্দনাদি সুগন্ধি দ্রব্য অঙ্গে লেপন করবে। ঠোঁটে একটু লিপষ্টিক লাগাবে। গরায় একটি মালা ঝোলাবে।
৪। একটি আয়নায় ভাল করে মুখ দেখে কেশ রচনা করবে।
৫। অবশেষে নিজের কাজে বের হবে।
সম্ভ্রান্ত নাগরিকের উচিত
১। প্রত্যহ একবার পা্লান করবে।
২। একদিন অন্তর ভাল করে গাত্রমর্দন বা গাত্র মার্জনা করা।
৩। প্রতি তৃতীয় দিনে মালা দরকার।
৪। প্রত্যেক চতুর্থ দিনে মুখের দাঁড়ি গোঁফ কামানো আরামদায়ক হয়ে থাকে।
৫। প্রত্যেক পঞ্চম দিনে মাথার চুল কাঁটা উচিত।
৬। প্রতি দশদিন অন্তর দেহের গোপনীয় স্থানের কেশ মুণ্ডন করা উচিত।
৭। রোদের সময় বিনা ছাতায় বের হবে না। তা হলে শরীর থেকে বেশী ঘাম বের হতে পারে বেশী ঘাম দুর্গন্ধ যুক্ত হয়।
৮। দিবারাত্রে দুবারের বেশি ভোজন্তদুপুর ও সন্ধ্যা-প্রত্যহ দুবার প্রধান আহারের পর উচিত প্রিয় পাখিদের কথা বলা শেখানো। ভেড়া ইত্যাদি থাকলে তাদের কৌতুক যুদ্ধ শেখানো।
৯। সকালে মুখ, হাত, পা, ধুয়ে কিছু সামান্য খেয়ে বন্ধুবান্ধব প্রভৃতিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবে। দুপুরে খাবার পর দিবানিদ্রা বা ঘুম হবে।
১০। দিবা নিদ্রার পর সংগীত চর্চা বা ক্রীড়া প্রভৃতি চলতে পারে।
১১। তারপর বাইরে কাজ থাকলে বের হয়ে-সন্ধ্যায় ফিরবে।
১২। বাড়ি ফিরে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা, গল্প প্রভৃতি করতে থাকবে। তারপর বন্ধুদের বিদায় দেব।
১৩। তাপর প্রণয়িনীদের সঙ্গে দেখা করবে-বা তার আগমন প্রতীক্ষা করবে। সে এলে কুসুমাস্তীর্ণ শয্যায় তাকে বসাবে। মধুর নরম বাক্য বলে তাকে আনন্দ দেবে। তার আসতে বিলম্ব হলে তার জন্যে দূত পাঠাবে।
১৪। দূতীর বাক্যেও যদি প্রণয়িনী না আসে তা হলে নিজে তার বাড়ি যাবে, নানা সন্তোষ করে তাকে নিয়ে আসবে। যদি বৃষ্টি থাকে ও তার গা বা বস্ত্র ভিজে যায়, তাকে শুকনো বস্ত্র পরিয়ে দেবে। যেন বন্ধু বান্ধবেরা সে সব কাজে সাহায্য না করে। নিজের বস্ত্রাদি ভিজে গেলেও পরিবর্তন করবে।
১৫। তারপর সবাইকে বিদায় দিয়ে প্রণয়িনীর সঙ্গে সুমধুর সম্ভাষণ করবে।
১৬। প্রণয়িনীকেই সমস্ত রাত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান দান করা অবশ্য কর্তব্য।
যদি এ বিষয়ে কোনও ভুল হয়, তার জন্যে প্রণয়িনীর কছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে কোন দোষ নেই।
উপরে সে সব জীবন বৃত্ত লিখিত হলো, তা শুধুমাত্র ধনী ও যার অবসর প্রচুর তাদের পক্ষেই সম্ভব। রাতে প্রণয়িনী নিয়ে সম্ভোগ ঠিক ভাবেই হতে পারে।
নৈমিত্তিক নাগরিককৃত বা সামাজিক কর্ম
উপরের প্রাত্যহিক কর্ম ছাড়া অনেক সামাজিক কাজ ও অনুষ্ঠান নাগরিকের পালন করা উচিত।
এতে নাগরিক সমাজের মধ্যে একটি সম্মানও প্রতিষ্ঠা হয়। বাৎস্যায়ন নিুলিখিত সামাজিক অনুষ্ঠানগুলির অবশ্য পালনীয় বলছেন।
১। ঘটা নিবন্ধক
দেবতার উদ্দেশ্য অনুষ্ঠিত সব উৎসবে নাগরিকের অবশ্যই যোগদান করা উচিত। এতে দেশ বা বিদেশ থেকে আগত শিল্পীরা সংগীত ও অন্য নানা কলা উৎসবের নৈপুণ্য দেখাতে পারে। এতে মানব সংস্কৃতি উন্নতি লাভ করে। মাসে অন্ততঃ একবার তা অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।
২। গোষ্ঠী সমন্বয়
সমান বয়স্ক বা সমান চরিত্র বা সম চরিত্রবান যুবকদের মিলন ও সমন্বয়। এতে ভাবের আদান্তপ্রদানে প্রচুর সাহায্য হয়ে থাকে।
এরূপ জন সমাবেশ কোন সম্ভ্রান্ত রাজকর্মচারীর বৈঠকখানায় বা অলিন্দে, কোন নৃত্যকলয়ে বা বন্ধু-বান্ধবদের বহিঃকক্ষে হওয়া উচিত। এই সম্মিলনীতে নৃত্যগীত বা কোন প্রবন্ধ পাঠ হতে পারে। নানা কলা প্রদর্শনও এখানে হতে পারে।
৩। সমাপালক
পালাক্রমে বন্ধুদের বাড়ীতে গিয়ে সেখানে নানা প্রকার সুস্বাদু ফল নিয়ে তার সঙ্গে সুরা পান হয়ে থাকে। এতে আগে সম্মিলিত গণিকাদের সুরাপাত্র দেওয়া হয়-তাদের পান হয়ে গেলে নাগরিকবৃন্দ পান করবে। সেই সঙ্গে নানা রকম ফল খাওয়া হয়।
৪। উদ্যান প্রমোদ
ভিন্ন ভিন্ন বন্ধুর বাগানে প্রমোদ উৎসব হয়ে থাকে। যাঁরা অংশ গ্রহণ করেন তাঁরা অশ্বে আরোহণ করে দাসদাসী নিয়ে সেখানে যাবেন। এখানে নানা খেলাধূলা, মোরগ লড়াই, নৃত্যগীত, যাদুবিদ্যা প্রভৃতি হয়ে থাকে। এইভাবে সারাদিন আনন্দে কাঠিয়ে সন্ধ্যাবেলা বাড়ী ফিরবে। ফেরার সময় বাগান থেকে পুষ্পস্তবক ও পুষ্পমালা প্রভৃতি নিয়ে ফিরবে।
৫। উপরে যেসব উৎসব বর্ণনা করা হলো তা ছাড়া
সাধারণ নাগরিকদেরও কতকগুলি উৎসবে যোগদান করা অবশ্য কর্তব।
তা এবারে একে একে বলা হচ্ছে।
(ক) দেওয়ালি উৎসব।
(খ) পূর্ণিমা উৎসব বা পূর্ণিমার রাতে নানান উৎসব।
(গ) বসন্ত উৎসব-বসন্তকালে।
(ঘ) অপক্ক আম্রোৎসব (শেখর লঞ্জলিকা) আম পাকার আগে।
(ঙ) পিষ্টক উৎসব বা পিঠে বানানো।
(চ) বিশ খাদিকা-ফাল্গুন্তচৈত্র মাসে।
(ছ) নব পত্রিকা-বর্ষার প্রথমে।
(জ) হোলি উৎসব।
(ঝ) পাঞ্চালি উৎসব বা ভাঁড়ামি।
(ঞ) শিমুল উৎসব-শিমুল ফুল নিয়ে খেলা।
(ট) কদম্ব উৎসব-কদম্ব ফুল নিয়ে খেলা।
(ঠ) যব উৎসব-যবের গুঁড়া নিয়ে খেলা।
(ড) ঝুলন উৎসব।
(ঢ) মদন উৎসব-চৈত্রমাসে মদন দেবের সম্মান।
(ণ) দমনকে উৎসব-ফুল নিয়ে খেলা।
(ত) অশোক উৎসব-ফুল নিয়ে খেলা।
(থ) পুষ্পচয়ণ উৎসব।
(দ) আম্রলতিকা-কচি আমপাতা নিয়ে খেলা।
(ধ) ইক্ষুমঞ্জিকা-আখ খাবার প্রতিযোগিতা।
সম্ভ্রান্ত নাগরিকের সঙ্গী ও কিংকর পীঠ মর্দ
নাগরিকের সহযাত্রীদের মধ্যে পীঠ মর্দন সর্ব প্রধান। প্রেম বিজ্ঞানে সে বিশেষ পারদর্শী। তার স্ত্রী নেই পুত্র কন্যা নেই। সংসারে কারও হেপাজত নেবার বাধ্যবাধকতা নেই।
দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো ও প্রেম বিষয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ই তার জীবনের কাজ।
অতি দরিদ্র সে কিন্তু খাওয়া পরা কোনও সম্ভ্রান্ত নাগরিকের দায়িত্বে চলে।
বাৎস্যায়নের কালে এরূপ পীঠ মর্দ প্রায়ই সম্ভ্রান্ত নাগরিকের থাকত। বর্তমান যুগে এরূপ লোক খুব অল্পই দেখা যায়।
বিট
এ আর এক প্রকারের লোক। বেশ লেখা পড়া জানা ও অভিজ্ঞ। এক কালে যথেষ্ট ধন সম্পত্তি ছিল। কিন্তু কাম সম্ভোগে সমস্তই হারিয়েছে।
মৃচ্ছকটিক নামক বহু পুরানো সংস্কৃতি নাটকে এরূপ একটি মানুষের অবতারণা দেখা যায়। এ সকল লোক ধনী ও প্রভুত্ব সম্পন্ন ব্যক্তির চিত্ত জয় করে থাকে।
নিজে কিছু উপার্জন করে না। বড় লোক সঙ্গীর ব্যয়েই তার বাবুয়ানা চলে যায়।
বিদূষক
ইংরেজীতে যাবে বলে ‘বাফুন্থ’ বা ‘ক্লাউন’ তাদেরই সে আমলে বিদূষক বলা হতো। এদের অন্য নাম ছিল ভাঁড়। ভাঁড়ামিই তার ব্যবসা। বড় বড় লোকও রাজরাজড়াদের সঙ্গী। কোনও নারীর সঙ্গে প্রেম যুদ্ধে তিনিই হলেন ঐ ধনী রাজার বা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির সাক্ষী বা দূত।
বিদূষক সাধারণতঃ অবিবাহিত এবং ব্রাহ্মণ বংশোদ্ভূত। তিনি তাঁর সম্পত্তি নষ্ট করেছিলেন। এবং সাধারণত এক দরিদ্র ব্যক্তি।
রাজার বা সম্ভ্রান্ত নায়কের বড় বড় সভায় বিদূষক অনেক কৌতুকপূর্ণ কতাবার্তা বলেন ও সভাষদবর্গকে বিভিন্ন কৌতুক দ্বারা উল্লাসিত করে থাকেন।
সংস্কৃত নাটকে দেখা যায় যে এঁরা নায়কের সহচর-এঁরা অভীষ্টা নারীর প্রতি দৌতকার্য্য করে থাকেন। আধুনিক যুগে গোপাল ভাঁড়ের কতা সকলে জানেন সম্রাট আকবরের সভায় রসিক বীরবল ঐ বিদূষকের একটি দৃষ্টান্ত। বিদূষকের মত কাজ অনেক স্ত্রীলোকেরাও করে থাকে। তারা কেউ কেউ (১) উদাসিনী-সন্ন্যাসিনী যিনি বিজ্ঞানে বিশেষ পারদর্শিনী (২) নারী নাপতানী (৩) অসৎ দরিদ্রা নারী (৪) নিঃসন্তান নারী (৫) কোনও বৃদ্ধ বেশ্যা তপস্বিনী। এঁরা সম্ভ্রান্ত বংশের কুল নারীদের নাগর সংগ্রহে প্রায় দূতীকার কাজ করে থকেন।
দূতীর কাজ
এই দূতীরা খুব কুশলী হয়ে থাকেন।
এরা নায়ক বা নায়িকার গুণাবলী এমন সুন্দর ও বিশদভাবে বা বাড়িয়ে পরস্পরের কাছে বলে থাকেন যে তারা মুগ্ধ হতে বাধ্য হয়।
তাই দূতীকাদের সে আমলে বিশেষ কদর ছিল-কারণ সে আমলে লোকে জানত যে দূতীকারা নারীর পক্ষে অপরিহার্য।
বিশেষ করে উচ্চ রাজ পরিবারে বা খুব উচ্চ রাজ পরিবারে বা খুব ধনী পরিবারের পক্ষে তারা ছিল অপরিহার্য।
এই দূতীকারের গুণাবলীও ছিল অশেষ-তারা হাস্যরস, নাট, গান ইত্যাদি জানত।
দূতী ও দূত কর্ম
কামসাধানায় নারী-পুরুষের বিভিন্ন ধারা
শাস্ত্রমতে কামচর্চার জন্য কোনও নারী লাভ করতে গেলে, স্ব-বর্ণীয় বা স্বজাতির কোন অবিবাহিতা কিশোরীকে শাস্ত্র ও সমাজ সম্মতভাবে বিবাহ করে তার সঙ্গে সহবাস করা উচিত।
কিন্তু কোনও উচ্চবংশীয় নারী বা নীচ বংশীয়া মেয়েমানুষ অথবা অন্য কোনও লোকের বিবাহিতা পত্নীর সঙ্গে সহবাস নিষিদ্ধ।
উপরের শাস্তসম্মতবাবে বিবাহিত নারীর সঙ্গে সহবাস করলে যে সন্তান বা সন্ততি জন্মায় তারাই হলো কুল প্রদীপ।
এছাড়া কোনও বারাঙ্গনা বা বিধবার সঙ্গে সহবাসে যে সন্তান হয় তারা পূর্বপুরুষের বংশধারার স্থান পায় না। তাদের সঙ্গে সহবাসে পুরুষ বেশি সুখ উপভোগ করতে পারে, কিন্তু সন্তান বংশের ধারায় স্বীকৃত হয় না।
সহবাসের অনুমোদিত নারী
তিন প্রকার সাধারণতঃ বাৎস্যায়নের মতে দৈহিক সহবাসের জন্য অনুমোদিত-
১। সমাজসম্মতভাবে বিবাহিতা স্ত্রী।
২। বারাঙ্গনা বা পতিতা নারী
৩। বিধবা নারী।
আচার্য গণিকাপুত্র যোনিসুখের জন্য আর একশ্রেণীর নারী কথা লিখেছেন। তিনি (ক) অন্যের স্ত্রী উপভোগ করা যায়; সম্পত্তি বা ধনলাভের সম্ভাবনা থাকলে।
(খ) আত্বারক্ষার্থে বা জীবন বাঁচাবার জন্য।
(গ) বন্ধুত্ব দৃঢ় করার জন্যে।
অন্যের বিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে যৌনসুখ লাভ করা সাধারণতঃ পাপকার্য।
কিন্তু যদি জানা যায় ঐ নারী স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষের সঙ্গে এর আগে যৌন সহবাস করেছে বা করে তাহলে সে স্ত্রীলোক উচ্চবংশীয় হলেও সহবাসের পক্ষে সে উপযুক্ত বলে বিবেচিত। এতে ধর্মনাশের কোন প্রশ্ন ওঠে না।
নরনারী উপভোগের বিধিসম্মত ব্যবস্থা
গণিকাপুত্রের মতে নিুলিখিত অবস্থায় নরনারী উপভোগ বিধিসম্মত।
(১) যদি কোনও লোক প্রতাপসম্পন্ন ও ধনবান হয় কিন্তু যদি কোন ব্যক্তির শত্রুর সঙ্গে যোগদান করে থাকে, তা হলে পূর্বোক্ত ধন ও প্রতাপসম্পন্ন ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে সুুবিধা হলে সহবাস করা সংগত।
কেননা, তার নারীর সঙ্গে সহবাসে, সে ব্যক্তি শত্রুর দল ছেড়ে উপপতির দলে আসতে পারে-বা স্ত্রী তাকে আসতে প্রলুব্ধ করতে পারে।
(২) ঠিক সেই নারীর সঙ্গে অবৈধ প্রণয় করা যেতে পারে, যার স্বামী বহু কালের পরম শত্রু বা শত্রুতা করে আসছে। এরূপ ধর্ষিতা স্ত্রী স্বামীকে বন্ধু পদে আনতে পারে।
(৩) সে নারী তার স্বামীকে ভবিষ্যৎ উপপতির বন্ধর দলে আনতে পারে এবং উপপতির শত্রু নাশ করেত প্রলুব্ধ করতে পারে।
(৪) কোনও নারীর স্বামী যদি কাও ঘরবাড়ী, সম্পত্তি বা ধনদৌলত কেড়ে নিতে থাকে, তা হলে সঙ্গে শেষোক্ত লোক প্রণয়স্থাপন বা যৌন সহবাস করতে পারে। ফলে হয়তো ঐ ব্যক্তির স্ত্রীর সাহায্যে সে ঘরবাড়ী বা ধনদৌলত ফিরে পেতে পারে।
(৫) যে নারীর সাহায্যে কোনও পুরুষ বিপদ ছাড়া কোনও অর্থ উপার্জন করতে পারে ঐ নারীর সঙ্গে যৌন সংসর্গ সে নিঃসন্দেহে করতে পারে।
(৬) যে নারী অত্যন্ত কামুক এবং তার কাম পরিতৃপ্তি না হলে উপপতির বিশেষ নিন্দা প্রচার করতে পারে। এরূপ নারীর সঙ্গে ব্যভিচার করতে পারে।
(৭) যে নারী তার ঈপ্সিত পর পুরুষের বিশেষ ক্ষতি এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে, সে নারীকে উপভোগ করে জীবন ধন বাঁচানো যেতে পারে।
(৮) যে নারী স্বামীকে শত্রুর সঙ্গে যোগদান করিয়েছে, এমন কি নিজেকে শত্রুর দলে মিশিয়েছে, সুযোগ ঘটলে সে নারীর সঙ্গে কাম সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
(৯) যদি কোনও পুরুষ অন্য পুরষের পত্নীর সঙ্গে কাম সম্পর্ক স্থান করে তাকে-তাহলে শেষোক্ত পুরুষ প্রতিশোধ নেবার জন্যে প্রথমোক্ত পুরুষের স্ত্রীর সঙ্গে ইচ্ছামত ব্যভিচার করতে পারে।
(১০) রাজ-অন্তঃপুর লুক্কায়িত শত্রুর অনুসন্ধান করতে পারে বলে কোন লোক রাজার অনুগৃহীতা পরস্ত্রীর সঙ্গে কাম সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
(১১) কোন অভীপ্সতা কুমারীকে বিবাহ করতে হলে যে নারী এ বিবাহ সফল করে দিতে পারে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক চলতে পারে।
(১২) যে নারীর স্বামী কারও পত্নী বা উপপত্নীকে প্রলুব্ধ করে কেড়ে নেয়, তা হলে শেশোক্ত ব্যক্তিও ঐ নারীকে শয্যাশায়িনী করতে পারে।
(১৩) শত্রুতা থাকলে যে কোনও লোক শত্রুর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করতে পারে।
(১৪) চারায়ণ (কামশাস্ত্রের একজন লেখক), আরও বেশী সাহশী! তিনি বলেন, রাজার ভার্য্যা অথবা অন্যান্য রাজকর্মচারীদের নারী বা বিধবাগণ অর্থ উপার্জন সহায়তায় পথের দিক দর্শন করে। তাই তারাও উপভোগ্যা।
(১৫) সুর্বণাভ বলেন্তবিধবা সন্ন্যাসীনীরাও উপভোগ্র।
পুরুষের শ্রেণীবিভাগ
যে কুমারী নারী কখনও কোনও পুরুষের সঙ্গে কামক্রিয়া করেনি, সে কুমারীর নাম অনাঘ্রাত কুমারী। কিন্তু যতোই কোনও নারী বা নারীদের সঙ্গে যৌনক্রিয়া করে থাকুক সে চিরদিন যৌনশক্তি সম্পন্ন ও নারীদের কাম্য।
নিষিদ্ধা নারী
বাৎস্যায়নের মতে নিম্নলিখিত নারীরা চিরদিন পুরুষের সঙ্গে সঙ্গমে নিষিদ্ধ।
১। কুষ্ঠ রোগ সংক্রান্ত নারী।
২। যক্ষ্মা রোগগ্রস্তা নারী।
৩। উন্মাদ রোগ আক্রান্তা নারী।
৪। জাতি বা সমাজ পরিত্যাগী নারী।
৫। যে নারী প্রেমের গোপন সংবাদ রক্ষণে অসমর্থা।
৬। যে নারী এত কামুকী যে সাধারণের দৃষ্টির সামনেও যৌন সহবাস করতে প্রস্থত।
৭। বয়স্থা নারী।
৮। যে নারীর চোখ পাটকিলে রং কিন্তু অতি শুভ্র চর্ম।
৯। যে নারী অত্যন্ত কালো।
১০। যার মুখে বা যোনিতে অত্যান্ত দুর্গন্থ বের হয়।
১১। নিকটাত্নীয় (যেমন বোন পিসতুতো বোন প্রভৃতি)।
১২। নিজের স্ত্রীর কোনও বান্ধবী।
১৩। সন্ন্যাসিনী বা ব্রহ্মচারিণী নারী।
১৪। কোনও আত্নীয়ের স্ত্রী।
১৫। কোনও বন্ধুর স্ত্রী।
১৬। কোন পণ্ডিত বা গুরু পত্নী।
১৭। রাজপত্নী।
বাভ্রব্য বলেন, যে নারী তার পতি ছাড়া আও পাঁচজন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রয়েছে তার সঙ্গে অবাধে মিলন চলতে পারে।
দূতী নির্বাচন
প্রেম সম্পর্ক স্থাপন করতে দূতীর প্রয়োজন হয়ে থাকে।
এই দূতীর মাধ্যমে অন্য নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। এই দৌত্য করার জন্য নিুলিখিত ধরণের নারী খুব প্রশস্ত।
১। বাল্যের বান্ধবী।
২। যে লোকের কোন উপকার করা হয়েছে এমন লোক বা তার স্ত্রী।
৩। সম ব্রবসায়ী কোন লোক বা তার স্ত্রী।
৪। সগোত্র বা সহপাঠী বা পাঠিনী।
৫। মনের সব গোপন কথা জানে এমন বন্ধু বা তার স্ত্রী।
৭। যাকে সব কথা বলা চলে এমন বন্ধু বা তার স্ত্রী।
৮। যদি সমবয়সী ধাত্রীপুত্ বা ধাত্রী কণ্যা থাকে।
৯। সমবয়সী লোক একসঙ্গে বাস করে বা তার স্ত্রী।
দৌত্য কার্য্যে গুণ
প্রথম দূত বা দূতীর কতকগুলি গুণ থাকা একান্ত প্রয়োজন। তা হচ্ছে-
১। এরা উচ্চবংশীয় হওয়া উচিত।
২। এরা প্রতারণা পরায়ণ হবে না।
৩। এদের মনসি’র হবে।
৪। এরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হবে।
৫। এরা লোভী বা দূর্নীতি পরায়ণ হবে না।
৬। এরা স্বদেশে থাকবে।
৭। অপরিচিত লোককে গুপ্ত উদ্দেশ্য প্রকাশ করবে না কখনও।
নিম্নজাতির দূতী
চারায়ণ বলেন, নীচজাতীয় লোকের সঙ্গেও বন্ধুত্ব স্থাপন করা যায়-দূত নির্বাচনও করা যায়। তা হলো-
১। রজক বা ধোপা।
২। নাপিত।
৩। বাগানের মালী!
৪। গন্ধ বা আতর ব্যবসায়ী।
৫। মদ্য বিক্রেতা।
৬। স্বর্ণকার।
৭। পীঠ মর্দ (বিলাস শিক্ষক)
৮। বিট (যে নায়িকা বেশ্যার বিশ্বস্ত)
৯। বিদূষক (ভাঁড় জাতীয় লোক)।
এই নয় ধরনের লোকেরা প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে যেতে পারে, তাই সফল হয়। অবশ্য বুদ্ধিমান লোক হওয়া উচিত, এদের পত্নীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা।
এর কারণ হলো নারীই পুরুষদের দোষগুণ সম্পর্কে সংবাদ সহজে সংগ্রহ করে দিতে পারে।
বিশেষ দূতীর গূণ
যে লোক অতি সহজে বারাঙ্গনাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে আবার বিলাসী লোকদেরও বন্ধু হয়, সেই লোকই সহজে প্রণয়িনী জোগাড় করতে পারে।
কিন্তু এ কাজটি খুব সহজ নয়।
এর জন্যে যে গুণগুলি অবশ্যই থাকা দরকার তা এখানে বলা হচ্ছে-
১। যে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।
২। সে বিশেষ ভাবে সাহসী ও সব কাজে অগ্রসর হবার মত মনের বল রাখবে।
৩। সে লোকদের এমন গুণ থাকবে, যে কোনও লোকের মুখ দেখেই তার মনের ভাব বুঝতে পারবে।
৪। সহজে তার মন দমবে না।
৫। অপরের মনের গোপন কথা না বললেও, বুঝতে পারবে।
৬। স্থান ও কাল বুঝে উচিত মত পরিবর্তনের পারদর্শিতা থাকবে।
দৌত্যের প্রয়োজন কেন হয় তা বলা হচ্ছে।
যখন কোন নারীর সঙ্গে সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারা যায়, তখন বাধ্য হয়ে এই দৌতের কার্যের সহায়তা নেওয়া উচিত।
কিন্তু সব গুন না থাকলে দৌত্য কাজে কখন সফল হবে না- বরং তাতে সুফলের বদলে কু-ফলই ফলতে পারে।
আদর্শ বধূ নির্বাচন
আদর্শ বধূ নির্বাচন আমাদের দেশে একটি প্রকৃত সমস্যা হিসাবে রয়েছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি একটি সমস্যা নয়-কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে ঠিক ছেলেমেয়ে পরস্পর পছন্দ করে বিয়ে করে না। বিয়ে হয় অনেকটা ভাগ্যকে অবলম্বন করে। তাই আমাদের দেশে প্রাচীন শাস্ত্রে সুলক্ষণযুক্ত নর-নারীর বিচারে এত ঘটা ছিল।
শাস্ত্রে আছে পুরুষের ভাগ্য এবং স্ত্রীলোকের চরিত্র দেবতারাও বুঝতে পারেন না। তাই কথার ভিত্তিতেই আমাদের শাস্ত্রে নরনারী নির্বাচন সমস্যাকে এত গুরুত্ব দেওয়া হতো।
আদর্শ বধূ নির্বাচন সমস্যার ব্যাপারে যে যে বিষয়গুলি দেখা হতো তা হলোঃ-
১। ভাবী বধূর রূপ ও তাহার চেহারার কথা।
২। বধূর গায়ের রং- সন্তানের দেহে মায়ের রং আসতে পারে, তাই ফর্সা নারীর কদর।
৩। শরীর সুগঠিত কিনা।
৪। হাঁটা চলা ভাল কিনা।
৫। চুল কত লম্বা- মাথা ঠিক আছে কিনা।
৬। বধূর স্বভাব চরিত্র কেমন- ঝগড়াটে কিনা।
৭। বধূর কর্মকুশলতা।
৮। বিদ্যাচর্চা।
৯। অন্যান্য চর্চা-সেলাই, বাদ্য, সঙ্গীত ইত্যাদি।
বধূ নির্বাচন সমস্যা
বধূ নির্বাচন প্রাচীন যুগেই একটি সমস্যা বলে পরিগণিত হতো। শাস্ত্রে বধূ নির্বাচন সমস্যা সমাধানের জন্য যে যে কথা বলা হয়েছে তা নিম্নে প্রদত্ত হলো।
১। বধূ স্বামীর সঙ্গে একই জাতির ও ধর্মের হবে। প্রাচীন যুগে একশ্রেণীর সঙ্গে অন্য শ্রেণীর বিবাহ প্রচলিত ছিল না।
২। বধূ যে উঁচু বংশের মেয়ে হবে এটা সর্বদাই কাম্য।
৩। মেয়ের চরিত্র বেশ উন্নত হবে।
৪। স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বয়স অন্ততঃ পাঁচ বছরের ছোট হেব। স্ত্রীর চেয়ে স্বামীর বিদ্যা কিছু বেশী থাকা উচিত।
৫। কোষ্ঠীতে উপযুক্ত যোটক বিচার আমাদের শাস্ত্রমতে করা হ’য়ে থাকে।
এ ছাড়া নারীর অন্যান্য গুণের কথা ত আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু এই সব গুণগুলি একত্রে কাম্য হলেও একই নারীর মধ্যে তা অনেক সময় দেখা যায় না বা মনোমত পাত্রী মেলে না।
এ ছাড়া কন্যা নির্বাচনের সময় অন্য যে সব দিকে নজর রাখা হয়ে থাকে তাও বলা হচ্ছে-
আমাদের শাস্ত্রে চেহারা ও গণাগুণ অনুযায়ী নারীকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়-
১। উত্তমা কুমারী।
২। মধ্যমা কুমারী।
৩। অধমা কুমারী।
উত্তমা কুমারীর লক্ষণ
যে কন্যা শ্যামাঙ্গী, যার কেশ মনোহর, দেহে অল্প অল্প লোম বিরাজমান সে কন্যা মনোহারিনী। মনোহর ভ্রূ-যুক্তা, সুশীলা, মৃদু গতিশালিনী। সুদন্তা, পঙ্কজ নয়না। যার কটি ক্ষীণ, যার কথা অতি উত্তম ও মিষ্টভাষী বলে মনে করবে। যে কন্যা কুলের কল্যাণ কারিণী। যার দেহ নাতিদীর্ঘ, নাতিহ্রাস। যার বর্ণ শ্যাম, দেহ ক্ষীণ, গতি হংসিনীর মত। করতল রক্তপদ্মের মত, স্তন নাতিউচ্চ, নাতি ক্ষুদ্র, যোনিপৃষ্ঠ কচ্ছপাকৃতি, ধর্মপরায়ণ, পতিব্রতা, তাকেই উত্তমা রমনী বলে মনে করা চলে।
মধ্যমা কুমারীর লক্ষণ
যার শরীর মধ্যবিত্ত, কেশ দীর্ঘ। যে রমনী সর্বদা আলস্য পরিত্যাগ করে।
কি সুখ কি দুঃখ উভয় যার সমজ্ঞান। যে সর্বদা হাসি মুখে কথা বলে, যার নাভিদেশ গভীর, যে রমনী সকলের প্রতি মিষ্ট বাক্য প্রয়োগ করে, যে সদাচার পরায়ণ, যার মতি সর্বদা ধর্মে প্রতিষ্ঠিত। অল্পমাত্র আহারেই যার তৃপ্তিবোধ হয়, সর্বজীবে যার আত্নজ্ঞান, যে রমণী গুরুভক্তি পরায়ণ, দেবপূজায় নিযুক্ত ও দ্বিজ সেবায় রত এবং যে রমণী সাধ্বী, তাকেই মধ্যমা রমনী বলে।
অধমা কুমারীর লক্ষণ
অধমা কুমারী হস্ত ও পদ ক্ষীণ, চক্ষু পিঙ্গলবর্ণ, দন্ত সুদীর্ঘ ও বিরল (ফাঁকা ফাঁকা) এবং উদর বৃহৎ হয়ে থাকে। এর শরীর অধিক লোমে পরিপূর্ণ। এই রমনী অতি উচ্চৈঃস্বরে হাস্য করে এবং বেশি কথা বলে। এই রমণী অতি নির্লজ্জ, সদা ক্রোধর্পূর্ণ এবং চিত্ত সদা বিকল।
অধমা কুমারীর হস্ত ও পদে দীর্ঘ এবং কেশ খর্ব হয়ে থাকে। এদের সমস্তই কুলক্ষণে পরিপূর্ণ। অধমা রমণী কদাচ স্বধর্মবিহিত সদাচারের অনুষ্ঠান করে না। সুতরাং রমণীকে পরিত্যাগ করা কর্তব্য।
যেখানে অধমা রমণী বাস করে, লক্ষ্মী কখনও সেখানে বিরাজ করেন না। যে-লোক এহেন কন্যাকে বিবাহ করে, তাকে আজীবন মহাদুঃখ ভোজ করতে হয় এতে সন্দেহ নাই। অতএব সব সময় এরূপ নারীর সংসর্গ ত্যাগ করা উচিত।
যার সর্বাঙ্গ লোমে পরিপূর্ণ সেরূপ কন্যা কূলে উঁচু হলেও বিবাহযোগ্যা নহে। সে কন্যা কুলক্ষণাযুক্তা।
যে কন্যা শুভ্রবর্ণা, অধিকাঙ্গী, রোগিণী, লোমশূন্য অধিক রোমান্বিত, বাচাল, পিঙ্গলবর্ণা, নক্ষত্র নাসিকা, বৃক্ষনাসিকা, নদীনাম্নী, পক্ষীনাম্নী, সর্পনাম্মী, ভীষণনাম্মী, সেরূপ কন্যাকে বিবাহ করা কর্তব্য নহে। সেরূপ লক্ষণযুক্ত কন্যা শাস্ত্রে কুলক্ষণা বলে কথিত হয়ে থাকে।
নদীনাম্নী, বৃক্ষনাম্নী ও নক্ষত্রনাম্নী কন্যাকে বিয়ে করা উচিত নয় পূর্বে একথা বলা হয়েছে বটে, কিন্তু গঙ্গা, যমুনা, গোমতী, স্বরস্বতী এই সব নদীর নাম। তুলসী ও মালতী এই দুই বৃক্ষের নাম এবং রেবতী, অশ্বিনী ও রোহিনী এই তিন নক্ষত্রের বেলায় কোন দোষ নয়।
যে কন্যার চক্ষুদ্বয় ট্যারা ও চপল, যে কণ্যা দুঃশীলা ও পিঙ্গলবর্ণ এবং হাস্যকালে যার গণ্ডস্থলে কূপাকার চিহ্ন দৃষ্ট হয় তাকে কামুকী বলে জানবে।
বিবাহের বিচার্য বিষয়
এবারে বিবাহের আগে কি কি বিষয়ের বিচার করা উচিত সে সম্বন্ধে বলছি।
(ক) যোগ্য বর কনে পছন্দ করা।
(খ) কন্যার উপযুক্ত শিক্ষা-দীক্ষা।
(গ) বরের উপযুক্ত উপার্জন ক্ষমতা ও জীবনে প্রতিষ্ঠা।
(ঘ) দু’জনের শরীর গঠনে ঠিকমত মিল।
(ঙ) সম্ভব হলে ডাক্তার দ্বারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
(চ) দুজনের পূর্ণ বয়স। আমাদের দেশে পুরুষের বয়স ২২-৩০ আর নারীর বয়স ১৮-২৫ হলে ভাল হয়।
(ছ) ছেলে ও মেয়ের মধ্যে অন্ততঃ সাত আট বছরের পার্থক্য থাকা উচিত।
(জ) দু’জনেরই মনের গঠন ও চিন্তাধারার প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত।
(ঝ) বিবাহের আগে দুজনের কামশাস্ত্র বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়।
(ঞ) বিবাহের আগে যেন কারও চারিত্রিক দোষ না থাকে।
(ট) দু’জনের প্রকৃতি এক প্রকার কিনা সে বিষয়েও বিচার করা।
(ঠ) দু’জনের আর্থিক অবস্থায় যেন বিরাট পার্থক্য না হয়।
অত্যধিক নারী পুরুষের সঙ্গে খুব গরীব ঘরের নারী বা খুব ধনী ঘরের মেয়ের সঙ্গে খুব গরীব পুরুষের বিয়ে হ’লে তাদের পারিবারিক জীবন প্রায়ই সুখের হয় না।
প্রধানতঃ এইগুলি বিচর করে দেখে, বিয়ে দিরে প্রায়ই তারা সুখী দম্পতি হয়।
কোকো পণ্ডিতের মত হলো সাধারণ মানুষ পুরুষ বা নারীর রূপ, তাদের বংশ ও তাদের দেহের উচ্চতা দেখে বিয়ের বিষয় বিচার করেন- কিন্তু এটা যে কত বড় ভ্রান্তি তা একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারা যায়।
পুরুষ বা নারীর ভেতরটা অর্থাৎ তাদের অন্তরের কথা বুঝতে বা হৃদয় দখল করতে পারে খুব কম সংখ্যক মানুষ। তাই তাদের দু’টি প্রকৃত সুখমণ্ডিত হবে কিনা, তা সঠিক বিচার না করে বিয়ে দিলে সুখের চেয়ে দুঃখই দেখা দেবার আশঙ্কা থাকে অনেক বেশী।
যখন বর-কনে পরস্পরকে দেখতে পায় না বিয়ের আগে, তখন বিচারকদের হাতে সবে সার্থক ও উপযুক্ত দম্পতি নির্বাচন।
বিভিন্ন শুভাশুভ বিচার
যখন বরপক্ষরা কন্যা দেখতে যাবেন, তখন নিম্নলিখিত চিহ্নগুলি তাদের অবশ্য দেখা উচিত।
১। কন্যাটি এই সময় ঘুমোচ্ছে বা কাঁদছে কিনা, কিংবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে কিনা।
২। কন্যার নাম সহজে এবং প্রকৃতপক্ষে উচ্চরণ করা যায় কিনা, তার নাম অকল্যাণ সূচক কিনা।
৩। খবর নেওয়া উচিত, ঐ কন্যার আগে অপর কারও সাথে বিয়ের কথা পাকা হয়েছিল কিনা।
৪। কন্যার গাযের রং পিঙ্গলবর্ণ কিনা। তার মুখে সাদা সাদা দাগ আছে কিনা।
৫। কন্যার মুখ দেখতে পুরুষের মত যেন না হয়।
৬। তার মুখে চুল আছে কিনা।
৭। তাঁর কাঁধ নিচে ঝুলে পড়া কিনা।
৮। পা দুটি বাঁকা কিনা।
৯। কপাল বাইরে ঠেলে বের হয়েছে কিনা, অথবা খুব উঁচু কিনা।
১০। তার স্তন দু’টি অনুদ্ভিন্ন কিনা।
১১। যদি কন্যা তার পিতার শবদাহ করে থাকে।
১২। যদি কোনও পুরুষের সঙ্গে আগে যৌন মিলন করে থাকে এবং তা জানা যায়।
১৩। যদি তার বিয়ের বয়স পার হ’য়ে গিয়ে থাকে।
১৪। যদি কন্যা রুগ্না বা বোবা হয়।
১৫। কন্যার সঙ্গে যদি কোনও সম্পর্ক যেমন খুড়তুতো কি মামাতুতো বোন ইত্যাদি থাকে।
১৬। যদি কন্যা বরের চেয়ে খুব ছোট বা বড় হয় (বয়সে)।
কন্যার এইসব লক্ষণ থাকলে বিবাহ করা কখনও উচিত নয়।
বিবাহান্তর কর্তব্য
নব বধূর প্রতি কর্তব্য
নববধূর প্রতি অবশ্যই পালনীয় কতকগুলি কর্তব্যের নির্দেশ করা হয়েছে আমাদের শাস্ত্রে। শাস্ত্রমতে সেগুলি অতি অবশ্যই পালন করা উচিত।
এখানে একে একে সেগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
১। নববধূ বাড়িতে প্রথম পদার্পণের পর প্রতিটি পরিজন তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা উচিত। এটি মনে রাখতে হবে, যেরকম তাকে দেখান হবে, তেমন আচরণ সে করবে। তাকে যদি প্রত্যেকে ভালবাসে, সেও প্রত্যেককে ভালবাসবে।
২। নববধূকে জোর করে বা হুকুম করে কোনও কাজ করাতে নেই। তাতে পরিবারের বা স্বামীর গৃহের প্রতি তার একটা বিরক্তির ভাব জন্মায়।
৩। নববধূ ইচ্ছা করে যদি কিছু কাজকর্ম সখ ক’রে নিজের হাতে তুলে নেয় তাতে কোন বাধা দিতে নেই। তাতে তার মনে দুঃখ বা ব্যথা লাগতে পারে।
৪। নববধুর প্রতি তার স্বামীর খুব ভদ্র ভ্যবহার করা উচিত। এটা অবশ্য মনে রাখা কর্তব্য, স্বামীর ভালবাসাই বিবাহিতা নারীর জীবনে সবচেয়ে বেশী কাম্য। তাতে স্বামীন আহ্লাদ থেকে বঞ্চিত হলে কিছুতেই তার মনে শান্তি আসতে পারে না।
৫। নববধূ পিতামাতার স্নেহের আলয় ছেড়ে স্বামীগৃহে পদার্পণ করেছে একথা মনে রাখা উচিত। বিবাহের আগে সে পিতামাতাকে খুব ভালবাসত একথা অস্বীকার করা যায় না, তাই পিতামাতার নিন্দা তার কাছে মোটেই ভাল লাগে না- এতে সে মনে আঘাত পায়। তাই বিবাহিতা নববধূর সামনে কখনও তার পিতৃগৃহের নিন্দা করা উচিত নহে।
৬। ছোটখাটো আর্থিক বা ঐ ধরণের সামান্য বিষয় নিয়ে কখনও নববধূর মনে আঘাত দেওয়া উচিত নয়। এই কথা তুলে তার পিতাকে ছোট প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা কোনও মতেই উচিত নয়। এই ধরনের আলোচনা সর্বদা বর্জনীয়।
৭। আদর, সোহাগ, প্রীতি ও সেই সঙ্গে শ্বশুর গৃহের প্রকৃত অবস্থার বিষয়ে নববধূকে জ্ঞান দান করা কর্তব্য। নববধূ যদি স্বামীর প্রকৃত অবস্থা বোঝে, তবে সে নিশ্চয়ই প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার চেষ্টা করবে।
৮। নারীর কোমলতা, প্রেম, অভিমান এগুলি যে নারীর সহজাত বৃত্তি- নববধূকে তা বলা উচিত নয়।
নববধূর বিশ্বাস উৎপাদন
স্বামী কি করে নববধূর বিশ্বাস উৎপাদন করবে, এ বিষেয়ে শাস্ত্রে যা বলা হয়েছে তা হচ্ছে-
১। স্বামী কখনও বাড়ির সম্বন্ধে কোনও মিথ্যা কথা নিজে নববধূকে কিছুতেই বলবে না- এটা অত্যন্ত অন্যায় এবং এর ফলে পরে সে বধূর কাছে ছোট হয়ে যায়।
২। স্বামী তার ব্যবহারের মধ্যে কোনও সময়েই স্ত্রীর প্রতি সহসা কামভাব প্রদর্শন করবে না।
৩। ধীরে ধীরে স্ত্রীর সঙ্গে নানা কথা বলে আনন্দ করবে এবং তার ফাঁকে ফাঁকে নিজের প্রকৃতি, বুদ্ধি ও সংযমের পরিচয় দেবে।
৪। প্রয়োজন হলে নববধূর প্রশংসা করবে- তার ব্যবহার, কথাবার্তা, রূপ-গুণের প্রশংসা করবে।
৫। নববধূ তার প্রতি ধীরে ধীরে আকৃষ্টা হ’লে, তা প্রকাশিত হবে তার ব্যবহার ও রতি-প্রকৃতিতে। তা না হলে জোর করে স্বামী যৌন আকর্ষণ বা দৃঢ়তা দেখাবে না।
৬। নববধূ নিজে থেকে প্রেম ও প্রীতি প্রকাশ করলে তার মন বুঝে স্বামী তার প্রতি চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদি ধীরভাবে করতে পারে, তবে দেখতে হবে সে তা চায় কিনা।
৭। নববধূ বিমুখ হলে তার প্রতি কখনও রূঢ় আচরণ বা কর্কশ বাক্য ব্যবহার করবে না।
৮। প্রয়োজন হ’লে বধূকে প্রসন্ন করার জন্যে তার কাছে সব নিজেকে নিচু করবে। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে- কোনরকম রূঢ়তা ও কর্কশতা সর্বদা পরিত্যাজ্য।
৯। যখন নববধূ চুম্বন নেবে তারপর আলিঙ্গন ও ধীরে ধীরে তার সম্মতি নিয়ে মিলনের কথা উঠতে পারে।
১০। নববধূর যদি প্রথম ঋতু না হয়ে থাকে, কদাচ মিলন উচিত নয়। নারী ঋতুমতী হবার আগে পর্যন্ত সে কখনও মিলনের উপযুক্তা হয় না।
এখানে একটা কথা।
আজকাল অধিকাংশ বিয়েই হয় নারীর ঋতুর পর-কিন্তু বাৎস্যায়নের আমলে তা হতো না।
উপরের নিয়মগুলি পালন না করলে বালিকার মনে স্বামীর প্রতি ঘৃণা বা বিরক্তির ভাব জাগতে পারে- তাতে দাম্পত্য জীবন কখনও সুখের হয় না।
যৌবনাগমন ও মাসিক ধর্ম
নারী ও পুরুষ উভয়ের জীবনেই বিভিন্ন সময়ে যৌবনের সঞ্চার ঘটে থাকে। তবে যৌবন আগমন উভয়ের ঠিক একই সময়ে ঘটে না- বিভিন্ন সময়ে ঘটে।
নারীর যৌবন আগমন ঘটে আগে- পুরুষের ঘটে কিছু পারে।
গ্রীষ্মপ্রধান দেশে পুরুষের যৌবন আগমন ঘটে আঠারো থেকে কুড়ি বছরের মধ্যে। শীতপ্রধান দেশে- অর্থাৎ ভারতের বহির্দেশে যুবকদের যৌবন আগমন ঘটে বাইশ থেকে পঁচিশ বছর বয়সে।
নারীর যৌবন আগমন ঘটে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে চৌদ্দ থেকে ষোল বছর বয়সে- আর শীতপ্রধান দেশে আঠারো থেকে কুড়ির মধ্যে।
যৌবন ধর্মের তালিকা
শীতপ্রধান দেশে যৌবন আগমন
পুরুষ- ২২-২৫
নারী- ১৮-২০
গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যৌবন আগমন
পুরুষ- ১৮-২০
নারী- ১৪-১৬
শীতপ্রধান দেশে যৌবন নিরোধন
পুরুষ- ৬৫-৭০
নারী- ৫০-৫৫
গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যৌবন নিরোধন
পুরুষ- ৫৫-৬০
নারী- ৪৫-৫০
পুরুষের যৌবন আগমনের লক্ষণ
অবশ্য মাঝে মাঝে উপরের প্রকৃতিগত নিয়মেও ব্যতিক্রম দেখা যায়।
পুরুষের যৌবন আগমন বিভিন্ন লক্ষণের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে।
যেমন-
(১) কষ্ঠস্বর ভারী হয়।
(২) গোঁফের মধ্যে রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
(৩) বগলে ও বসি-দেশে লোম দেখা যায়।
(৪) তাদের দেহের মধ্যে বীর্য্য বা শক্তি সৃষ্টি হয়।
(৫) মানসিক পরিবর্তন ঘটে।
নারীর যৌবন আগমনের লক্ষণ
নারীর যৌবন আগমনের সঙ্গে সঙ্গে তার দেহে যে সব চিহ্ন ফুটে ওঠে তা হলোঃ- তাদের দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন।
১। দেহে নারী-সুলভ কমনীয়তা ফুটে ওঠে।
২। হাত, পা, জঙ্ঘন, নিতম্ব ইত্যাদিতে মেদ জমে ওঠে।
৩। বক্ষদেশ উন্নত হ’য়ে ওঠে।
৪। মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়।
৫। প্রায় আঠাশ দিন অন্তর মাসিক বা ঋতুস্রাব হয়ে থাকে।
এই ঋতুস্রাব হলো নারীর যৌবন আগমনের সবচেয়ে বড় চিহ্ন।
মাসিক বা ঋতু
নারীর যৌবন আগমনর থেকে যৌবনের সীমা পর্যন্ত এই সময়ে প্রতি আঠাশ দিন অন্তর নারীর যোনি থেকে কিছুটা রক্ত ও শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসে। একই বলা হয় মাসিক বা ঋতু।
বাৎস্যায়ন বলেন- এই ঋতু নারীর বিবাহের সূচনা বোঝায়।
বাৎস্যায়নের মত বিবাহের সূচনার সময়, ঋতুস্রাবের ঠিক প্রারম্ভে। কিন্তু আজকাল ও বিধান প্রাই মানা হয় না- কারণ ভারত সরকার আঠারো বছরের আগে কোনও নারীর বিবাহ অসিদ্ধ বলে ঘোষনা করেছেন।
ঋতুর সময়ে বিভিন্ন সতর্কতা
ঋতুমতী নারীর সময় বা ঐ সময়ের পরে কতকগুলি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা কর্তব্য। তা না হলে তার দৈহিক ও মানসিক নানা প্রকার ক্ষতি হ’তে পারে। এ বিষয়ে এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে।
ঋতু যে একটি সাধারণ বস্তু নয়, তা আমাদের ভারতীয় সব শাস্ত্রকারদের বেশ জানা ছিল- তাই তাঁরা এটা মেনে চলতেন সব সময়ে।
শাস্ত্রের ভাষায়ঃ-
ঋতুমতী যদা নারী চণ্ডালী প্রথমেহনি।
পাপীয়সী দ্বিতীয়ে চ তৃতীয়ে নষ্টরূপিনী ॥
উপস্বিনী চতুর্থে চ লাতা চৈব বিশুদ্ধতি।
প্রথমেহ হ্নি অগত্যা চ গমনে জীবন ক্ষয় ॥
দিনভেদে ঋতুমতী নারীর বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে ভারতীয় শাস্ত্রে। নারীর ঋতু হলে তিন দিন কোন নারীকে কি নামে ডাকা হয় এবং তার প্রকৃতি কি হয় তা বলা হয়েছে।
যেদিন নারী জাতি প্রথম ঋতুমতী হয় সেদিন সে চণ্ডালিনীসদৃশা হয়ে থাকে। তেমনি দ্বিতীয় দিনে সে হয় মহাপাপীয়সী, তৃতীয় দিনে হয় নষ্টরূপী, চতুর্থ দিনে সে হয় উপস্বিনীসদৃশা। চতুর্থ দিনে নারী যথাবিধি স্নান করলে সে পবিত্রা হয়ে থাকে।
ঋতু হলে প্রথম দিন নারী স্পর্শ করবে না। সেই দিন উপগত হ’লে পরমায়ু হ্রাস হ’য়ে থাকে। যদি দ্বিতীয় দিনে নারী গমন করা হয় তাহলে সেই পুরুষকে মহাপাপে লিপ্ত হতে হয়।
তৃতীয় দিনেও নারীকে পরিত্যাগ করা উচিত। সেই দিন নারীকে স্পর্শ করলে সেই নারী বেশ্যাবৃত্তি অবলম্বন করে এবং সেই পুরুষকেও বেশ্যাগমনজনিত পাপে লিপ্ত হ’তে হয়। চতুর্থ দিনে নারী স্নান করে বিশুদ্ধা হলে তারপর তাকে স্পর্শ করবে।
ঋতুকালীন নিয়ম
শাস্ত্রের এই কথাগুলির মধ্যে যে কতটা বাস্তবতা প্রচ্ছন্ন আছে তা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়। তারপর ঋতুকালীন বিভিন্ন বিষয়ের ফলাফল বলা হচ্ছে।
(ক) ঋতুর পরই নারীর জরায়ু থাকে নরম ও সংবেদনশীল। ঐ সময় কোন ব্যায়াম, দৌড় ঝাঁপ, ছুটাছুটি, লাফালাফি করা উচিত নয়।
(খ) ঋতুর সময় নিয়মিতভাবে দৈহিক বিশ্রাম অবশ্য কর্তব্য। তাই আমাদের দেশে ঋতুর সময় তিন দিন পূর্ণভাবে নারীর অশৌচ পালন করা হয়ে থাকে। এর অর্থ আর কিছুই নয়। এই তিন দিন বিশেষ ভাবে গৃহকর্ম থেকে নারীকে বিশ্রাম দেওয়া কর্তব্য।
(গ) ঋতুর সময় ঋতুস্রাব মুছে ফেলার জন্যে বা রক্ত শুষে নেবার জন্যে অনেকে অত্যন্ত ময়লা কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে এটি যে কত বড় ভুল জিনিস এবং এর জন্যে যে কতটা অনিষ্ট হতে পারে এটি তারা গভীরভাবে দেখবার অবসর পান না।
যদি কাপড়ের বা কার্পাস তুলোর টুকরোতে কোন রোগের বা দুরারোগ্য ব্যাধির জীবাণু থাকে তবে তা যোনিনালী দিয়ে দেহের ভিতরে প্রবেশ করবে।
এর ফলে জরায়ু বা গর্ভাশয় কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হ’তে পারে। এজন্য অনেক সময় ধনুষ্টংকার বা রতিজ রোগ বা অন্য কোন রোগ হতে পারে। ঋতুমতী নারীর তাই এ বিষয়ে সাবধান থাকা একান্ত প্রয়োজন। ঋতুমতী নারীর উত্তর ধৌত কার্পাস বস্ত্র ব্যবহার করা উচিত।
(ঘ) ঋতুর সময় কখনও শরীরে ঠান্ডা লাগান উচিত নয়-রাত্রি জাগাও উচিত নয়। ঐ সময় শরীর দুর্বল থাকে। সহজেই ঠাণ্ডা লাগতে পারে। রাত জাগলেও শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
(ঙ) ঋতুস্রাবের সময়ে পরিষ্কার কার্পাস টুকরো বা সাবান গরম জল ইত্যাদি দ্বারা পচা কাপড়ের টুকরো যোনিতে ব্যবহার করা উচিত।
(চ) ঋতুস্রাবের সময় অন্ততঃ তিন চার দিন কোন পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলনে ব্রতী হওয়া উচিত নয়। তাতে জরায়ু কোন না কোন ভাবে আহত হতে পারে। তার ফলে নানা ক্ষতি হতে পারে।
(ছ) ঋতু কালীন মাটির পাত্রে জলপান, কঠোর বিছানায় শয়ন করা উচিত। এ সময়ে চুলে তেল দেওয়া, গন্ধ দ্রব্য বা সুগন্ধি বস্তু ব্যবহার করা উচিত নয়। এ সব পর্যন্ত শাস্ত্রীয় মতে নিষিদ্ধ।
(জ) যদিও আজকাল ও সব নিয়ম পালন করা হয় না। তবু এগুলি পালন করা উচিত। তার কারণ ঋতুকালে এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে নারী কামাতুর হয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারে।
বিবাহের চেষ্টা ও উপায়
বালিকা বয়স থেকে প্রেমালাপ
কখনও কখনও এমন ঘটে থাকে যে, কোন তরুণ যুবক, বহু চেষ্ট করে অতিপ্রেত তরুণীকে বিয়ে করে উঠতে পারে না। নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে এরূপ হতে পারে।
(১) যখন কোন লোক গুণবান হয়েও নির্ধন।
(২) যখন কোন লোক দেখতে সুন্দর বা গুণবান হয়েও প্রতিপত্তিশালী বন্ধু বা আত্নীয়ের অভাবে বিবাহ স্থির করতে পারে না।
(৩) যখন কোন লোক ধনশালী হয়েও অত্যন্ত কলহ পরায়ণ হয়।
(৪) যখন কোন যুবক তার পিতামাতা বা ভাইদের উপর নির্ভরশীল থাকে।
(৫) যখন কোন লোক দেখতে স্ত্রীলোকের মত। অন্য লোকের অন্তঃপুরে গিয়ে মিলতে পারে।-কিন্তু কেউ বর বলে গ্রাহ্য করে না।
এরূপ ক্ষেত্রে সেই যুবক যাকে বিয়ে করতে চায়, বালিকা বয়স থেকেই সে বিষয়ে চেষ্টা করা উচিত।
দক্ষিণ ভারতে দেখা গেছে, কোন পিতৃমাতৃহীন বালক অন্য মানুষের ঘরে মানুষ হয়েও, এমন কন্যা বিবাহ করেছে, যে সে তা সাধারণভাবে করতে পারত না। কিন্তু তা ঘটেছে শুধু প্রেম-নিবেদন কৌশলে।
কোনও কোনও বালক প্রেমালাপ করেও বালিকার মাকে মাতৃ সম্বোধনের কৌশলেও উচ্চস্তরের মেয়ে বিয়ে করতে পারে। যা অনেক ধরনবান ব্যক্তিও পারে না।
অবশ্য এই বালক ও বালিকারা ছেলেবেলা থেকেই সাথী হওয়া চাই।
তারপর দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব বেশ দৃঢ় হওয়া চাই, বাল্যকাল থেকে।
দু’জনে একসঙ্গে নানা খেলা করবে-ফুল তুলবে, পুতুল তৈরি করে খেলবে, নানা ফুলের মালা গাঁথবে, মেয়েটা-ছেলেটাকে ফুল তুলে দিয়ে সাহায্য করবে।
তা ছাড়া চোর চোর খেলা, বিচি নিয়ে খেলা, পাখি ওড়ানো ইত্যাদি নানা প্রকার খেলা আছে।
এবারে এগুলি বিষয়ে বলা হচ্ছে।
বাৎস্যায়ন নিম্নোক্ত খেলাগুলির কথা অনুমোদন করেছেন।
(১) চোর চোর খেলা- এই খেলায় একজন অন্যজনের চোখ বেঁধে দেয়। সহচর সহচরিরা কোন গুপ্ত স্থানের ভেতর লুকিয়ে পড়ে। তারপর তার চোখ খুলে দেওয়া হয়। তখন সে তাদের খুঁজতে আরম্ভ করে দেয়।
একজনকে খুঁজে বের করে তাকে ছুঁয়ে দিলেই সে চোর হবে।
সাধারণতঃ প্রেমিক প্রেমিকা পরস্পরকে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করে-
(২) বিচি নিয়ে খেলা- বিভিন্ন ফলের বিচি নিয়ে এই খেলা হয়।
একজন হাতে কিছু বিচি নিয়ে প্রশ্ন করে, জোড় না বেজোড় তারপর সে হয়ত উত্তরে বলল জোড়। তখন খুলে গুণে দেখা হয়।
কথা মিলে গেলে সে জিতল-অন্যথায় হেরে গেল।
(৩) পাখি ওড়ান- সব খেলোয়াড় হাতে হাত দিয়ে দাঁড়ায়-একজন ঝাপটা দিয়ে দৌড়াতে শুরু করে দেয়।
(৪) লবণ বীথিকা- বাৎস্যায়নের সময়ও খেলা ছিল-বর্তমানে আছে কিনা জানা নেই।
একদল ছেলেমেয়ে একটি লবণের ছোট স্তূপ তৈরি করে।
অন্য দল তাদের ধরবার চেষ্টা করে লবণের স্তূপটি জয় করতে চায়।
তারা কিছু লবণ চুরি করে পালায়-আগের দল তাদের ধরবার চেষ্টা করে।
(৫) গম নিয়ে খেলা- গম ও চাল একত্র মিশিয়ে দেয়। তারপর তা পৃথক পৃথক করার চেষ্টা।
(৬) কানামাছি খেলা- এই খেলার বর্তমান নাম কানামাছি খেলা।
খেলোয়াড়দের একজনের চোখ বেঁধে দেওয়া হয়ে থাকে। তারপর তার মাথায় সকলে থাবড়া মারতে থাকে।
সে যদি চোঁখ বাঁধা অবস্থায় একজনকে ধরতে পারে বা তার নাম বলতে পারে তখন সে আবার কাণাষাঁড় হবে। তখন আবার তার চোখ বেঁধে এইভাবে খেলা চলবে।
কৈশোর প্রেম
এইভাবে নানা খেলা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে তরুণ প্রেমিকের উচিত প্রেমাস্পদকে লাভ করার চেষ্টা করা।
তাছাড়া যারা একটু বয়সে বেড়েছে তারা তাদের অভিপ্সীতার সখা বা বাল্যবন্ধুর সঙ্গে আলাপ পরিচয় করবে।
যদি অভিস্পীতার কোন ধাত্রী কন্যা থাকে, তার সাহায্যে তার দেখা পেতে হবে। বা কোনও নারীর সাহায্যে ঐ নারীর সঙ্গে দেখা করবে।
আর যদি কোন বাধা না থাকে স্বাভাবিক ভাবে দেখা করবে।
কৈশোর প্রেমের কাজ
প্রেমিকের কাজ প্রেমিকাকে সর্বদা সুখী করে রাখা। তরুণী বা কিশোরী যা চায় তাকে তাই জোগাড় করে এনে দিতে হবে।
যে সব খেলার জিনিস প্রেমিকা কোথাও পায় না, তা জোগাড় করে দিতে হবে।
নানাবিধ খেলনা জোগাড়ে খুব সাবধান্তকোন পুরুষ বন্ধুর সাহায্য না নেওয়া হয় যেন। তা হলে সে পরে উক্ত প্রেমিকার প্রতি আকৃষ্ট হ’তে পারে।
স্থান বা কাল অনুযায়ী প্রসাধন দ্রব্য, গন্ধদ্রব্য,কুমকুম্,চন্দন ইত্যাদিও জোগাড় করে দেওয়া উচিত।
ওসব কিন্তু করতে হবে খুব নিভৃতে, যাতে আর পাঁচজন জানাতে না পারে।
প্রেমাস্পদকে চুপি চুপি বলতে হবে-তোমাকে যা দিচ্ছি তা যেন কাউকে বলো না।
যদি প্রেমিকা বলে-কেন?
তার উত্তরে বলতে হবে-তোমাকে আমার ভাল লাগে-তাই বলে তা কি সকলকে বলা উচিত?
যখন তরুণীর মন আরও জয় হয়েছে দেখবে, তখন নানা ম্যাজিক যাদুবিদ্যা ইত্যাদি দেখাবে।
যদি গান বা আবৃত্তি জান, গোপনে তাকে বা তার সখীদের সহ তাকে গান বা আবৃত্তি ধীরে ধীরে শোনাবে।
যখন শরৎ বা বসন্ত কালে আসে, পৃথিবী যখন চাঁদের আলো আর মন্দ মধুর বাতাসে ভেসে আসে, তখন নিরালায় প্রেমিকাকে ফুলের মালা গন্ধদ্রব্য উপহার দিবে।
তার সঙ্গে মিষ্ট সুরে নানা কথা বলবে।
এইভাবে নানা কাজের মাধ্যমে বুঝতে হবে যে নায়িকার মন টলেছে কি না।
নায়িকার প্রেমের লক্ষণ
নারীর কাম্য পুরুষের সঙ্গে দেখা হলে সে মুখের দিকে তাকায় না। যদি হঠাৎ কখনো দেখা হয় তাহলেও সে মাথা নামিয়ে নিয়ে চলে যায় বা আড়চোখে তাকায়। তবে মনের প্রেম জানাবার জন্য সে হয়ত কাপড় ঘুরিয়ে পরার অছিলায় দেহের অংশ যেমন স্তন, কাঁধ বা বগল নায়ককে দেখাতে পারে। এটি তাকে আকর্ষণের জন্যে।
যদি নারী দেখে যে তার প্রেমের মানুষটি তাকে ঠিক দেখতে না পেয়ে অন্যমনস্কভাবে চলে যাচ্ছে, তখন নারী দূর থেকে তার দিকে অজ্ঞাতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
যদি প্রেমিক কোনও কিছু জিজ্ঞাসা করে, নারী ধীরভাবে কিন্তু সংক্ষেপে তার জবাব দেয়। নায়িকা কেবলই তার কাছে কাছে থাকতে চায়-যদি নায়ক কোনও সময় একটু দূরে থাকে তা হ’লে নায়িকা তার আত্নীয়ের সঙ্গে কথা বলে -কিন্তু আড়চোখে নায়কের দিকে তাকায়।
সে নায়কের কাছ থেকে সরতে চায় না-কোন সামান্য বিষয়ের অজুহাতে বা কোনও অছিলা ধরে নায়কের সঙ্গে কথা বলতে সে আগ্রান্বিত হয়।
হয়তো সখীদের চুল নিয়ে তা গোছাতে গোছাতে প্রেমাস্পদের কাছে সময় কাটায়।
যে প্রেমিকের বন্ধুদের ওপর বিশ্বাস রাখে-তাদের প্রতি সম্মানসূচকভাবে কথা বলে। প্রেমিকের পরিচারকের কথা মন দিয়ে শোনে-তার সঙ্গে নিজের পরিচারকের মত ব্যবহার করে থাকে। নায়কের সঙ্গে নানা খেলা করতে চায়-যেমন তাস, পাশা ইত্যাদি- অবশ্য একটু পরিচয় হলে এটি হয়।
নায়ক কোনও বস্তু নায়িকার কাছে গচ্ছিত রাখতে দিরে সে তা বেশ যত্ন সহকারে রেখে দেয়।
বেশভূষা করলেই নারী চায় তার প্রেমাস্পদকে সেই সব বেশভূষা দেখাতে।
ঐ নায়ক যদি তার বেশভূষার প্রশংসা করে, তাতে সে মহাখুশী হয়।
যদি নায়ক বেশভূষার প্রশংসা না করে-তবে সে মনে করে তা মোটেই ভাল হয়নি। সে পরে সেই বেশ পরতে চায় না। নায়কের প্রতি বিরূপ মনোভাবও আসতে পারে।
নায়ক যদি তাকে কোনও বেশ বা অলংকার উপহার দেয়, নায়িকা সেগুলি পরিধান করে বাইরে বা কোনও উৎসবে যেতে খুব ভালবাসে।
যদি তার নিজের বাড়িতে অপর কোনও ভদ্রলোকের সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা হয়, তখন সে ভারি বিষণ্ন হয়ে ওঠে যাতে ও বিয়ে না হয় বা ভেঙ্গে যায়। আর এ বিয়ে যাতে না হয় সেই চেষ্টা করে। এছাড়া নায়ককে দূর থেকে দেখলে, তার কন্ঠস্বর শুনলে বা গান শুনলে সে খুব খুশী হ’য়ে ওঠে।
এ সময় সে বেশ হাসিখুশী থাকে।
অন্য সময়ে দূরে থাকলে সে কি যেন চিন্তা করতে থাকে।
যদি কোনও লোক নায়কের কোনও গুণের প্রশংসা করে, তবে নায়িকা খুশী হয়।
নায়ক কোন বড় পরীক্ষায় পাশ করলে বা কোন উচ্চ সম্মান লাভ করেছে শুনতে পেলে নায়িকা খুবই খুশী হয়ে ওঠে।
নায়ক কোনও অন্যায় কাজ করেছে শুনলে, সে তা প্রায় বিশ্বাস করে না-তবু সে মনে মনে বিষন্ন ও দুঃখিত হয়ে ওঠে।
নায়িকার মনোভাব বুঝে চালচলন ও কাজকর্ম করা নায়কের উচিত। তার ভালবাসার নায়িকাকে বিয়ে করার জন্যে সর্ব প্রকারে চেষ্ট ও যত্ন করবে।
বাৎস্যায়ন আরও বলেন্তবাল্যের বন্ধুকে বাল্যের খেলার মাধ্যমে বিয়ে করা উচিত। যুবকদের উচিত, যৌবন সুলভ কাম ক্রিয়ার সব চিহ্ন দেখলে সেই যুবতীকে লাভ করার জন্যে সর্ব প্রকার চেষ্টা করে। আর বর্ষীয়সীদের উচিত তাদের বিশ্বস্ত সখীদের মাধ্যমে পুরুষকে লাভ করা।
প্রেম নিবেদন
বাইরের সাহায্য ছাড়া যুবক-যুবতীদের প্রেম নিবেদন
যখন কোনও তরুণী তার হাবভাবে বা ব্যবহারে আর এক যুবকের প্রতি আসক্তি দেখায়, তখন ঐ যুবক আর কোনবও ঘটক বা মধ্যবর্ত্তী দূতের সাহায্য না নিয়ে নিজেই ঐ যুবতীকে লাভ করবার ব্যবস্থা করবে।
পাশা খেলা বা তাস খেলতে খেলতে ছলনা করে যুবক যুবতীর সঙ্গে ঝগড়া আরম্ভ করতে পারে। তখন যুবতী নিশ্চয়ই তার আকারে প্রকারে নানা রকম কামক্রিয়ার সূচনা করতে পারে।
অবসর পেলেই ঐ প্রেমিক যুবক যুবতীকে আল্গা আল্গা ভাবে অঙ্গ স্পর্শ করবে। তখন সে হয়তো এমন ছবি ঐ নায়িকাকে দেখাতে পারে যাতে দুটি মূর্ত্তি (একটি নারী একটি পুরুষ) পরস্পর আলিঙ্গন অবস্থায় অঙ্কত।
কোন মিলনের ছবি দেখিয়ে নায়িকাকে নায়ক তার মনের ইচ্ছা বোঝাতে পারে। অথবা নদীতে বা দীঘিতে দু’জনে স্নান করার সময় নায়ক একটু তফাতে ডুব মেরে একেবারে নারীর অঙ্গ ঘেঁসে উঠতে পারে। গা ঘেঁসে দূরে যেয়েও উঠতে পারে। এতে প্রেমাকর্ষণ বাড়ে।
বসন্ত উৎসবের সময় কোনও পাতায় তার মনের ইচ্ছার ছবি এঁকে তা ঐ প্রেমিকাকে দেখিয়ে তার মনের কথাটা জানাতে পারে।
ঐ যুবক তার প্রেমিকাকে বলতে পারে যে তাকে না পেলে বড় মন খারাপ হয়ে যায়। ঘুম আসে না, ঘুমোলে সে তাকে স্বপ্ন দেখে।
থিয়েটার বা যাত্রা দেখতে গিয়ে কোনও ছল করে সে ধীরে ধীরে তার অঙ্গ স্পর্শ করবে। খুব আসে- আসে- তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুল নিজের আঙ্গুলে দিয়ে চেপে ধরবে। যে কোন নিশানাতেই নিজের মনের ভাব নায়িকাকে জানাবে-আমি তোমাকে ভুলতে পারি না। এসো দু’জনে একসঙ্গে থাকি।
যখন নায়ক বুঝবে-নায়িকা সত্যিই তার প্রতি আসক্ত তখন সে অসুখের ভান করবে। নায়িকাকে ডেকে পাঠাবে-নায়িকা হয়ত এসে মাথায় গায়ে হাত বুলাবে।
তখন নায়ক বলবে-উঃ কি আরাম। এত ওষুধ খাওয়া হলো, তাতে কিছুই হলো না। তোমার সামান্য স্পর্শে আমি খুব আনন্দ পেলাম, আমি অনেক সুস্থ।
তারপর সে নায়িকার অনেক প্রশংসা করবে। এইভাবে ধীরে ধীরে নায়িকা আকৃষ্ট হ’লে দু’জনে কোনও দিন নিভৃতে থাকাকালে নায়ন যৌন কার্যের কথা বলবে। এটি অন্ধকারে করা উচিত-কারণ অন্ধকারে নায়িকাদের প্রেম কামনা বৃদ্ধি পায়।
একান্ত কিছুতেই স্বীকৃতি না পেলে নায়িকার কোন সখী বা সাথীদের সাহায্য নেওয়া উচিত।
যখন কোনও তরুণী সাধারণ কোন জায়গায়, দেব মন্দির কিংবা উৎসবের জায়গায় কোনও তরুণের প্রতি ভালবাসা দেখায় (যমন চাউনি, হাসি খুশি ইত্যাদি) তখন বুঝতে হবে ঐ তরুণ ইচ্ছুক হলেই তরুণীটিকে সে লাভ করতে পারে। শুধু চাই ধৈর্য্য, কৌশল ও অধ্যবসায়।
ইচ্ছুক নারীদের কর্তব্য
যখন কোনও নারী তার মনের মত পুরুষ পেতে ইচ্ছুক হয়, তখন এমনও হতে পারে যে ঐ তরুণীকে সে কিছুতেই যোগাড় করতে পারে না।
এরূপ ঘটনা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে ঘটতে পারে। যথা-
১। কোন সম্ভ্রান্ত কন্যা, সুন্দরী, গুণবতী কিন্তু আর্থিক অভাবগ্রস্ত।
২। নারী গুণবতী, সুন্দরী কিন্তু উচ্চবংশের নয়।
৩। পিতৃমাতৃহীন, মাতুলালয়ে প্রতিপালিত।
৪। স্বামী জোগাড় করে দেবার লোকের অভাব।
৫। বয়সে বিবাহ যোগ্যের হয়ে বেশি।
এইসব ক্ষেত্রে হলে নিজের চেষ্টা করে তার মনোমত প্রতি যোগাড় করে নেবে।
সে তখন একজন পরিশ্রমী, উদ্যমশীল ও সুশ্রী তরুণকে মনে মনে ঠিক করে নেবে।
হয়তো বাল্যকালে যে সব বালকের সঙ্গে সে খেলাধূলা করেছিল, তাদের একজনকে ঠিক করে নিতে পারে। অথবা এমন যুবককে মনে মনে ঠিক করবে-যে তার প্রতি কিছু কিছু ইশারায় আসক্ত হয়েছে।
সেই যুবক এমন চিহ্ন প্রকাশ করেছে যে, নায়িকার মত পেলে সে তাকে বাবা মার মতের বিরুদ্ধেই বিয়ে করতে পারে। তাকে পাবার জন্যে নিজের পৈতৃক ধন্তসম্পত্তিও বিসর্জন দিতে পারে। এমন কি সমাজের নিন্দা বা নিষেধাজ্ঞা সে অগ্রাহ্য করতে পারে।
মনে মনে এমনি পাত্র ঠিক করে সে সেই তরুণের সঙ্গে নিভৃতে দেখা করবে। হাব ভাব ইঙ্গিতে সে তাকে আকর্ষণ করতে চেষ্টা করবে।
সুযোগ পেলে সে গোপনে নায়ককে ফুলের মালা বা গন্ধ দ্রব্য উপহার দিতে পারে।
নায়িকা নিভৃতে নায়ককে মনের ভাব জানাবে-তার কাণের কাছে মুখ নিয়ে ফিস্ফিস্ করে গল্প করবে, দেখবে, নায়ক তাকে চায় কিনা।
যদি নায়ক তা চায় সে তখন নায়িকার দেহ স্পর্শ বা আলিঙ্গণ করবে।
নায়িকা আগে বুঝবে, নায়ক তাকে গ্রহণ করতে সত্যি রাজী কিনা। যদি দেখে নায়ক তাকে গভীর ভাবে ভালবাসে-তখন সে নায়কের চুম্বন বা আলিঙ্গনের উত্তর দেবে।
নায়ক যদি যৌন মিলনের প্রস্তাব করে নায়িকা তাতেও রাজী হবে।
তারপর দু’জনে চুম্বন, আলিঙ্গন করবে। নায়ক তার দেহ মর্দন করলে সে তা উপভোগ করবে। কিন্তু আগে দেখা উচিত নায়ক যেন বিশ্বাসী হয়-অর্থাৎ উপভোগ করে ত্যাগ করতে না পারে।
মিলনের সময় নায়ক চাইলে, নায়িকা তার বাম হাত দিয়ে নায়কের লিঙ্গ স্থানে চাপ দিতে পারে।
নায়িকার যোনিতে হাত দিয়ে নায়কের লিঙ্গ স্থানে চাপ দিতে পারে।
নায়িকার যোনিতে হাত দিয়ে চাইলে, সে মৃদু আপত্তি করবে, তাতে বাধা দেবে না।
কিন্তু প্রত্যক্ষ যৌন মিলনে রাজী হওয়া উচিত-যতক্ষণ অন্ততঃ গান্ধর্ব বিয়ে অনুষ্ঠিত না হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরে বলা হবে।
নারী কিরূপ পুরুষ চায়
১। বলিষ্ঠ, স্বাস্থ্যবান ও যুবক।
২। সুন্দর গাত্রবর্ণ, সুদর্শন ও সুশ্রী।
৩। যার মধ্যে নিজস্ব স্বকীয়তা বা বিশেষ দৃঢ়তা আছে।
৪। যে কিছুটা অহঙ্কারী, গর্ব্বিত।
৫। যার প্রচণ্ড আত্নবিশ্বাস আছে।
৬। যার বিশেষ ব্যক্তিত্ব ও দৃঢ়তা আছে।
৭। যে পুরুষের নিজস্ব উপার্জন যথেষ্ট এবং সে তাকে প্রতিপালন করার যোগ্য।
৮। যে পুরুষের অন্য স্ত্রী নাই-বা অন্য নারীর প্রতি গভীর আসক্তি নাই।
৯। যে নির্ভরযোগ্য ও তাকে সারা জীবন আশ্রয় দিতে পারবে।
১০। নায়ক সুশিক্ষিত, মার্জিত ও রুচি সম্পন্ন হলে খুব ভাল হয়।
১১। খেয়ালী ও কল্পনা প্রবণ পুরুষকেও অনেক নারী পছন্দ করে থাকে।
১২। যে পুরুষের নানা গুণ আছে-যেমন,গান, বাজনা, শিশুসাহিত্য, কাব্য ইত্যাদি। কোনও বিশেষ গুণের অধিকারী যে পুরুষ।
১৩। যে পুরুষ উচ্চ বংশ উদ্ভুত।
১৪। বয়সে নারীর চেয়ে কিছুটা অন্ততঃ পাঁচ-ছয় বছরের বড়।
১৫। যে পুরুষ নারীকে সত্যিই গভীর ভাবে ভালবাসে।
১৬। খুব কামুক বা লম্পট পুরুষকে চায় না।
১৭। বয়স্ক বা অনাসক্ত পুরুষকে চায় না।
১৮। জুয়াড়ি বা বেশ্যাসক্ত পুরুষকে চায় না। এই ধরণের অন্যান্য গুণ থাকলেও তাকে নারী ঘৃনা করে।
১৯। যে পুরুষ হৃদয়হীন বা অত্যাচারী ও স্বেচ্ছাচারী হয় তাকে নারী চায় না।
২০। যে পুরুষ পৌরুষত্বহীন বা দৃঢ়তাহীন তাকেও নারী চায় না।
বিয়ের প্রকারভেদ
বিয়ের প্রকারভেদ
হিন্দু ধর্ম্ম গ্রন্থ হমে বাৎস্যায়ন আট প্রকার বিয়ে কথা উল্লেখ করেছেন-
১। ব্রাহ্ম বিয়ে।
২। প্রজাপত্য বিয়ে।
৩। আর্য্য বিয়ে।
৪। দৈব বিয়ে।
৫। অসুর বিয়ে বা আসুরিক বিয়ে।
৬। গন্ধর্ব বিয়ে।
৭। পিশাচ বা পৈশাচিক বিয়ে।
৮। রাক্ষক বিয়ে।
যে আট রকম বিয়ের কথা বলা হলো তার মধ্যে প্রথম চার রকম-ব্রাহ্ম, প্রজাপত্য, আর্য্য ও দৈব বিয়ে থাকে বিভিন্ন মন্ত্র ক্রমে।
বর্তমানে প্রজাপত্য বিয়ের চলনই বেশি।
এই সব প্রথায় বিয়ে করতে বর ও কনের কোনও প্রকার চেষ্টা করতে হয় না।
পিতামাতা বা আত্নীয় স্বজনই এই ধরনের বিয়ের ব্যবস্থা করে থাকেন।
কেবল বিভিন্ন মন্ত্র অনুযায়ী বা পদ্ধতি অনুযায়ী বিভিন্ন নামকরণ।
এ ছাড়া যে সব বিয়ে আছে, সেগুলির জন্য বর এবং কন্যার নিজের ব্যবস্থা করা দরকার। এ গুলিতে পিতামাতা বা আত্নীয় স্বজনের কোন দায়িত্ব নেই।
যেমন ধারা গান্ধর্ব বিয়ে। এ বিয়ে বর এবং কনে পরস্পরকে ভালবেসে নিজে থেকে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেনি এবং নিজেও কোনও পুরুষকে আকর্ষণ করতে পারেনি, তা হলে তাদের বিয়ে হবে আসুরিক মতে।
যদি পিতামাতাকে টাকা বা বেশ উপহার দিয়েও ঐ নারীকে বিয়ে করতে স্বীকৃত না করা যায়, তাহলে তা হয় পৈশাচিক বা রাক্ষস বিবাহ।
গান্ধর্ব বিবাহ
গান্ধর্ব ইত্যাদি বিয়ের প্রথম দরকার নারীকে আকর্ষণ করা। তা করতে হলে একটি সুনিপুণা ঘটকী আবশ্যক।
যদি কোনও প্রেমিক তার মনের মত নির্বাচিত নারীকে পেতে অসমর্থ হয়-তা হলে তার দরকার-ঐ নারীর ধাত্রী কন্যার সঙ্গে বন্দোবস্ত করা। ধাত্রী কন্যাকে পাঠানো যেতে পারে ঐ নারীর কাছে।
নারীর কাছে গিয়ে ধাত্রী কন্যা পাণি প্রার্থী যুবকের গুণ, বিদ্যা, সম্পত্তি, বিষয় ইত্যাদি নিয়ে নানান প্রশংসা করা। এইসব কাজের জন্যে নিপুণা ও কৌশলময়ী একজন বিশ্বস্ত ধাত্রী কন্যা দরকার। তরুণীর বাড়ীর কোন বিশ্বাসী ও ধাত্রী কন্যা ভাল হয় ও আবশ্যক।
অবশ্য ধাত্রী কন্যা তরুণীর সমবয়সী হওয়া প্রয়োজন। তার বেশ প্রভাব থাকা উচিত।
সে তরুণীকে বেশ নিভৃতে নিয়ে গিয়ে পূর্বে যেসব সম্বন্ধ তার জন্য এসেছে-বা যে বরের সঙ্গে পিতামাতার মত আছে বিয়ে দিতে, সেগুলির একে একে নিন্দা করবে।
যেমন, অমুক বাঁড়-জ্যের ছেলে? আর রাম-লোকটা মদ খায়, আমি নিজে চোখে দেখেছি, বা নিজে কানে শুনেছি। আর তার বাপ এককালে ধনী ছিল এখন তার সর্বস্ব বিক্রি হয়ে গেছে এবারের তাকে ত পথে বসতে হবে। অন্য মেয়ের সঙ্গে তার ভালবাসা আছে।
এই সব বলে তরুণীর মনে বীতরাগ জন্মে দেবে। তারপরে বলবে-আমি যে ছোকরার কথা বলছি, তার বাপের অনেক ভূসম্পত্তি আছে। অনেক বিদ্যা, অনেক গুণ, বহু টাকা রোজাগার করে। ভবিষ্যতে ঠিক রাজরাণী হয়ে থাকবে। ইত্যাদি-
এই সব কথা বলে তরুণটির নানা গুণ ব্যাখ্যা করবে। তারপর দু’জনে নিভৃতে দেখা হবে, প্রেমলিপি বা প্রেমের কথা হবে। দু’জনের সঙ্গ গভীর প্রেম ও মিলন হবে ভালো। শেষে গোপনে কোন ব্রাহ্মণ ডেকে এনে হোম করবে-বিয়ে হবে অগ্নিদেবকে সাক্ষী করে পরে অবশ্য আত্নীয়দের বলা চলে। এই হলো গান্ধর্ব বিয়ে।
পৈশাচিক বিয়ে
যদি কোন তরুণ-তরুণীর মধ্যে গান্ধর্ব বিয়ে করার উপায় না থাকে, তাহলে আর এক উপায় চলতে পারে। এ প্রথা বাৎস্যায়নের যুগে ছিল। দু’জনে আগে প্রেম করবে, তারপর সুযোগ বুঝে গোপনে নারীকে কোন মাদকদ্রব্য খাইয়ে অধজ্ঞানহীন ও উত্তেজিত করে যৌন মিলন করবে। তারপর পুরোহিত ডেকে সেই নারীকে বিয়ে করবে। নারী রাজী হলে- কারণ সে জানবে তার অন্য গতি নাই।
রাক্ষস বিয়ে
যদি কোনও রুপসী নারীকে লাভ করা দুস্কর হয়ে পড়ে, তখন তাকে কোনও বাগান বা পথ থেকে লোকজনের সাহায্যে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে পরে ব্রাহ্মণ ডেকে হোম করে বিয়ে করার নাম রাক্ষস বিয়ে। পুরাকালে ক্ষত্রিয় রাজারা এইভাবে বাহুবলে বহু নারীকে ধরে এনে বিয়ে করত। বর্তমানে এর চলন প্রায় নাই।
আসুরিক বিয়ে
যদি কোন লোক রুপসী তরুণীর কোন আত্মীয় বা আত্মীয়কে অর্থের সাহায্যে ভুলিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে হাত করে তাকে এনে বিয়ে করে-
উক্ত লোকটির সাহায্যে-একে বলা হয় আসুরিক বিয়ে।
আসুরিক বিয়ে আজকাল মাঝে মাঝে হয়, তবে লোকে তা বুঝতে বা জানতে পারে না। তাবে কন্যার বা আত্মীয়ের অমতে এ সব করা উচিত নয়।
দাম্পত্য ব্যবহার ও রীতি প্রকৃতি
দৈনন্দিন জীবনে নর-নারীর সম্বন্ধ দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর মধুময় করে তোলবার একটি প্রধান উপায়। এবার সে সম্বন্ধেই সুন্দর ও সুষ্ঠ আলোচনা করব।
দুটি তরুণ-তরুণীকে জীবন সংগ্রামের অজস্র সুখ, দুঃখ, হাসি এবং কান্নার মধ্য দিয়ে ভারসাম্য রেখে চলবার উপযুক্ত করে দেখবার জন্যেই এই নিবিড় বন্ধনে বেঁধে দেবার প্রথা- যার নাম বিয়ে।
এমন একদল লোক আছেন যাঁরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে যৌন মিলনের ছাড়পত্রই হচ্ছে বিয়ে।
এখানে আমি তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলছি- তাঁরা জীবনের স্বকীয়তাকে প্রথম দৃষ্টি থেকেই ভুল ভাবে দেখতে শুরু করেছেন।
বিবাহিত ধর্মপত্নী মানে যে কেবলমাত্র যৌন জীবনের দাম্পত্য সঙ্গী তা নয়। সেটা এখানে আমি বেশ বড় করে তুলতে চাই।
পুরুষের এক মধুর আচরণ বন্ধন প্রথারুপেই এই বিয়ে স্বীকৃতি ও বিশ্লেষিত হয়ে এসেছে। বিয়ের প্রধান নির্দেশ এবং আসল বিষয় হল স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, দায়িত্ব-কর্তব্য, অধিকার প্রভৃতি। যাবতীয় উপলব্ধিকে এক ও অভিন্ন করে মিলিয়ে দিয়ে একত্রিত অনুভুতিতে প্রতিষ্ঠা করা। অনেকে হয়তো মনে করতে পারে যে এর সব একটা ঘোর অবিচার। একজন নারীর একজন পুরুষকে এবং একজন পুরুষের একজন নারীকে এক বছর ভালো লাগতে পারে। কিন্তু তার পরেই আসে একঘেয়েমী, অসাড়তা এবং আনন্দহীনতা। এতে যে যৌন জীবনকে দুঃখ-কষ্টে ভরিয়ে তোলে।
কিন্তু প্রাচীন ঋষিরা অনেক ভেবেই চিন্তেই এ রীতির প্রচলন করেছিলেন। আমিত্ব, আত্ম সংযম কঠোর সাধনা ও একাগ্রতা, বিপুল ধৈর্য ও অধ্যবসায় দ্বারা যৌন সম্পর্কের অনেক উর্দ্ধে বিবাহিত জীবনকে একটি শাশ্বত স্থায়িত্বের ও নিড়ত্বের গন্ডিতে মানতে হবে। সংস্কৃত শাস্ত্রে স্ত্রীকে মাতা, সখী, দাসী এবং বেশ্যা রুপে যে বর্ণনা করা তা এক বিন্দু অতিরঞ্জিত নয়।
স্নেহ এবং অধিকারে স্ত্রী হবে মাতার সমান।
দৈনন্দিন জীবনে, অসংখ্য সংঘাতের দুর্বিপাক থেকে স্বামীকে কিছুটা আড়াল করবার জন্যে স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে থেকে সে হবে সখী।
স্বামীর কর্মকেই নিজের জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার জন্যে সে হবে শিষ্যা বা সহধর্মিনী। স্বামীর নিপুণ সেবার ভার সে নিজ হাতে তুলে নেবে, সে হবে দাসী।
স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে সে যখন মেতে উঠবে তখন হবে বেশ্যা এটার মধ্যে অত্যুক্তি কিছুই নেই। দাম্পত্য জীবনে এটা প্রত্যেক নারীর কর্তব্য।
পুরুষ স্বাভবতঃই বহুকামী। একঘেয়েমী সে কোনও দিনই সহ্য করতে পারে না। একঘেয়েমী দূর করে তাকে নানারূপ পন্থায়, দাম্পত্য জীবনকে মধুময় করে তুলতে হয়। সব সময়ই ভাবতে হবে দু’জনে যেন দুটি নবীন প্রেমিক আর প্রেমিকা। দু’জনের কথার মাঝে ফুটে উঠবে নূতন প্রেমিক-প্রেমিকার কথার সুর।
আমাদের দাম্পত্য জীবন নিরানন্দ একঘেয়ে। অপ্রীতি ও নানা মনোমালিন্যের কেন্দ্রে পরিণত হয় অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত শিক্ষার অভাবে। আর দাম্পত্য জীবন সুখময় করে তোলবার উপায় না জানবার জন্যে।
বহু দাম্পত্য জীবন নারীর জন্যে সুখী হ’তে পারে না। পৃথিবীর বুকে সুখী দম্পতির সংখ্যা দিনের পর দিন কমেই আসছে। এর ফলে বিয়ের আগ্রহের অভাব আজকাল বড়ই স্পষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছে।
দাম্পত্য জীবনের গোড়া দিকে আগ্রহের অভাব থাকে না। এ কথা বুঝিয়ে না বললেও চলবে। তখন দেখা যায় যে দু’জনের গভীর অনুরাগ অপরীসিম নিবিড়তা। কিন্তু যতই দিন যায় ততই যেন তা মিলিয়ে যায়।
অনুরাগ তখন পরিণত হয় বিরাগে। দাম্পত্য জীবনে ঘনিয়ে আসে তখন কলহ বিবাদ, মনোমালিন্য গতানুগতিকতা। এমন নারী অবশ্য পুরুষের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হবার প্রয়াস পায়।
কিন্তু সত্যি কি তাই?
এটা কিন্তু নিরপেক্ষ মনোভাবের পরিচায়ক নয়।
বহু দাম্পত্য জীবন নারীর জন্যে সুখী হতে পারে না। আবার বহু দাম্পত্য জীবন অসুখী হয় পুরুষের জন্য। অবশ্য এসবের জন্যেই দায়ী আমাদের শিক্ষা। দাম্পত্য জীবনকে সুখী করে তোলার শিক্ষা আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা তাদের পিতা-মাতাদের কাছ থেকে পায় না। বড় হয়ে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করে বটে কিন্তু এই যৌন জীবন সম্বন্ধে থাকে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। এটা মনে রাখা উচিত যে একদিন জোর করে দাম্পত্য জীবনের বোঝা তরুণ-তরুণীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে প্রথম কিছুদিন তারা এর অপব্যবহার করবে। তারপর একদিন সব কিছুর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হ’য়ে পড়বে।
প্রথমতঃ পুরুষের কথা ধরা যাব। পুরুষ অত্যন্ত স্বার্থপর। তারা ভুলে যায় যে নারীরও ব্যক্তিত্ব বলে একটা জিনিস আছে। তারা সব সময় নারীর উপর অধিকার এবং প্রভুত্বে দাবী ঘটায়। পান থেকে চুন খসালেই তার মনে অহেতুক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। নারী যে দাসী নয়- জীবনসঙ্গিনী এটা মনে রাখা প্রত্যেক পুরুষের কর্তব্য। সহৃদয়তা এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভুতি সম্পন্ন হওয়াই সবচেয়ে বড় সাধনা।
তারপর নারীর কথা।
এমন অনেক নারী আছে, যারা গৃহকর্ম পূজার্চনা, শ্বশুর-শাশুড়ীর সেবা ও দৈনন্দিন কার্যাবলীর প্রতি ব্যস্ত। আর তাদের সে ব্যস্ততাও অত্যধিক। এই বিভিন্ন কার্যাবলীর মধ্যে তাদের অধিকাংশ সময় কাটে। তারা হয়ত গৃহিণী পতে পারে কিন্তু স্বামীর মনতুষ্টি বিধানে অক্ষম। শারিরীক ও মানসিক মিলন থাকা সত্বেও যৌন ব্যপারে দু’জনের মধ্যে অনেক সময় গরমিল দেখা যায়।
স্ত্রীর ব্যবহারে হয়ত স্বামী আনন্দিত ও গর্বিত। কিন্তু তার যৌন জীবনে সে স্ত্রী সাহচর্য্যে বঞ্চিত। সব নারীরই যে সমান যৌন প্রাবল্য থাকবে তা বলছি না। কিন্তু গোটা দাম্পত্য রতি পর্যায়ের প্রাধান্যকেও অস্বীকার করা যায় না।
পতির কর্তব্য
১। স্ত্রীকে মিত্র ভেবে তার সঙ্গে মিত্রবৎ আচরণ করবে।
২। স্ত্রী যেন আপনাকে তার একমাত্র নির্ভরস্থল বলে মনে করতে পারে।
৩। পত্নী যদি পতির চেয়ে সুন্দর না হয়, তথাপি তাকে ঘৃণা বা উপেক্ষা করা উচিত নয়। ভালোবেসে তাকে আপন করে নেওয়াই কর্ত্তব্য।
৪। পত্নীর কাছে কোন কথা গোপন করা উচিত নয়। নিজের যা কিছু দোষগুণ খুলে বলা উচিত।
৫। কখনও পত্নীর সঙ্গে নির্লজ্জের মত ব্যবহার করা উচিত নয়।
৬। পত্নীর কাছে সর্বদা নিজের গাম্ভীর্য্য বজায় রাখা অনুচিত।
৭। সর্বদা সুমধুর ভাষায় তাকে আকর্ষণ করে নেওয়া উচিত।
৮। পত্নীর সামনে কোনও পরস্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা বা তার গুণগান করা উচিত নয়- তাতে তার মনে দুঃখ বা হিংসার ভাব জাগতে পারে।
৯। পত্নী সাজসজ্জা করলে তার গুণগান করা পতির কর্ত্তব্য।
১০। পত্নী কোনও ভাল রান্না করে খেতে দিলে তার প্রশংসা করা উচিত।
১১। পত্নীর কোনও দোষত্রুটি থাকলে তা বুঝিয়ে বলা উচিত। তাকে সেগুলি শুধরে নেবার জন্য উপদেশ দেওয়া উচিত। জোর জবরদস্তি দ্বারা কখনও তাকে সংশোধন করা যায় না তা মতে রাখা কর্ত্তব্য।
স্ত্রীর কর্তব্য
১। পতিকে সব সময় প্রেমিক বা নিজের সাথী বলে ভাবা উচিত। তার সঙ্গে সেই রকম ব্যবহার দ্বারা তুষ্ট করা সাধ্বী স্ত্রীর অবশ্য কর্তব্য।
২। কোন রোগব্যাধি হলে তা গোপন না করে পতির কাছে খোলাখুলি ভাবে বলা উচিত।
৩। পতিনিন্দা শোনা উচিত নয়- কারণ তাতে নৈতিক অধঃপতন ঘটতে পারে।
৪। বেশি খরচ পত্র করা বা পতির চেয়ে বেশি খরচ করে চালবাজী করা উচিত নয়।
৫। পতি বাইরে থেকে ফিরলে তার প্রতি যথোচিত সম্মান ও প্রীতি প্রদর্শন করা উচিত।
৬। পতির সব জিনিসপত্র সব সময় ঠিকমত হাতের কাছে এগিয়ে দেওয়া উচিত।
৭। নারীর সব সময় মন ভার করে থাকা উচিত নয়। এতে পতি ও পত্নীর আন্তরিকতার অভাব ঘটে।
৮। সহনশীলতা নারীর শ্রেষ্ঠ গুণ- এটি প্রত্যেক নারী মনে রাখা উচিত।
৯। পতির সঙ্গে সব সময় মধুর ব্যবহার করা পত্নীর অবশ্য কর্ত্তব্য।
১০। স্বামীকে কখনও কটু বাক্য বলা বা তার সঙ্গে ঝগড়া করা নারীর উচিত নয়।
১১। পতির নিত্যব্যবহার্য্য যে সব বস্তু-যেমন কাপড়, ছাতা, জুতো, বইপত্র এ সবের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা বুদ্ধিমতী নারী মাত্রেরই কর্ত্তব্য।
১২। সংসারের খরচ পত্রের হিসেব রাখা প্রত্যেক পত্নীর অবশ্য কর্ত্তব্য। আয় বুঝে ব্যয় করবে।
১৩। কোনও প্রদর্শণী বা উৎসব আনন্দে পতির অনুমতি ছাড়া যোগদান করা স্ত্রীর কর্ত্তব্য নয়।
১৪। পতির উপদেশ অনুযায়ী এবং তার রুচি অনুযায়ী ঘরের আসবাব পত্রাদি সাজানো এবং পরিষ্কার রাখা উচিত।
১৫। সখী বা বান্ধবীদের সঙ্গে বসে কখনও পতির নিন্দা করা উচিত নয়।
১৬। পতিকে প্রকৃত বন্ধুর মত ভাবা উচিত।
১৭। ঘর পরিষ্কার এবং ঘরের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা উচিত।
১৮। চাকরের সাহায্য ছাড়াই যতটা সম্ভব নিজ হাতে পরিবারের সব কাজ করবে।
১৯। সাধারণতঃ পরিচ্ছন্ন থাকবে- তবে বেশি বাবুগিরি ভাল নয়।
২০। স্বামীর খাদ্যদ্রব্য সম্ভব হলে নিজ হাতে রান্না করবে।
এখানে পতি-পত্নীর বিষয়ে সাধারণ বিষয়গুলি নিয়েই আলোচনা করা হলো।
তবে একটা কথা মনে রাখা উচিত।
মেয়েদের পক্ষে স্বামী ও শ্বশুরের ঘর হলো একটি বিরাট পরীক্ষাগার।
উপরের নিয়মগুলি ছাড়াও আপন বুদ্ধির বলে যে মেয়ে সংসারের সব প্রয়োজনীয় কাজ খুঁজে নিয়ে করে থাকে, সে মেয়ের স্বামীর সংসারে সকলের প্রিয় হয়।
স্ত্রীর পালনীয় দায়িত্ব
যখনই কোনও তরুণীর সঙ্গে কোন পুরুষের শাস্ত্র মতে বিয়ে হলো, তখনই নারীর কর্তব্য হবে স্বামীর সঙ্গে একত্রে জীবন যাত্রা নির্বাহ করা।
এই বিশ্বসংসারে যত রকম দুঃখ কষ্ট বা শোক তাপ আছে, সে সবই স্বামীর সঙ্গে অংশীদার হয়ে ভোগ করতে হবে। তা হলেই স্বামীর গৃহের সবাই অতি শীঘ্র আপন হয়ে উঠবে।
তার পিতৃগৃহের দায়িত্ব ও কর্তব্য খুবই সীমাবদ্ধ হয়ে গেল- সঙ্গে সঙ্গে তার স্বামীর সংসারে সে একজন গুরুত্বপূর্ণ লোক হয়ে দাঁড়াল।
বাৎস্যায়নের আমলে স্ত্রী ছিল দুই প্রকার। এক ধরণের স্ত্রী একা স্বামীর সঙ্গে বাস করত, অন্য ধরনের হলো একজন লোক বহু স্ত্রীর সঙ্গে বাস করত।
স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর কথা কখনো না করা। তাঁকে পূর্ণভাবে ভক্তি-শ্রদ্ধা করা। কখনও তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। এতে স্বামীর মনে গভীর দুঃখের আদর্শ।
স্ত্রী সংসারে যা কিছু করবে তা যেন স্বামীর মত নিয়ে বা তার সঙ্গে কথাবার্তা বলে করে। সে যেন সর্বদা তাদের গৃহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে। সংসার যে গৃহদেবতা আছেন তাঁকে প্রত্যহ সকালে, দুপুরে ও সন্ধ্যায় পূজা করবে।
পুরোহিত থাকলে তার পূজার জন্য ফুল, বেলপাতা, নৈবেদ্য, তুলসী ইত্যাদি যোগাড় করে দেবে যেন তাঁর কোন অসুবিধা না হয়।
তাছাড়া স্বামীর ভাই-বোন, আত্নীয়-স্বজন বা পিতামাতাকে অবশ্য বহু যত্নে তত্ত্বাবধান করবে। স্বামীর বন্ধু-বান্ধবকে শ্রদ্ধা ও প্রীতির চোখে দেখবে। এতে স্ত্রীও প্রিয় ও আদরণীয়া হয়ে উঠবে পরিবারের সকলের কাছে।
নারীর উচিত তার রন্ধন গৃহের ভার নেওয়া। রান্না ঘরের পাশে কোনও জমি পতিত রাখতে নেই। তা থাকলে সেখানে নানা ফলমূল বা শাকসব্জীর গাছ লাগানো উচিত। অবশ্য এতে সংসারে খরচও কিছু কমে যাবে।
কুমড়া, লাউ, সিম, সরষে, আদা, শাক ইত্যাদি লাগানো যায়।
তাছাড়া একপাশে একটি ফুলের গাছ থাকবে- যেমন, গাঁদা, জুঁই, বেল, চামেলি, সূর্য্যমুখি, জবা ইত্যাদি ফুল গাছ।
সেখানে পুষ্পকুঞ্জের মধ্যে একটি বা দুটি বসবার বেঞ্চেরে ব্যবস্থা রাখবে অবসর সময় সেখানে বসে বায়ু সেবন করা যায়।
স্বামীর ভাই-বোন, আত্নীয়-স্বজন, বৃদ্ধ পিতা-মাতা-ওদের অবশ্য বহু যত্নে তত্ত্বাবধান করবে। স্বামীর বন্ধুবান্ধবকেও শ্রদ্ধা করা উচিত।
নারী স্বেচ্ছায় কোন ভিখারিনী, সন্ন্যাসিনী বা স্বামী যাকে অপছন্দ করেন এমন নারীর সঙ্গে মিশবে না। যে সব নারী তুকতাক জানে তাদের সহিত মিশবে না। তাদের সঙ্গে মেশামেশি স্বামী পছন্দ করেন আর করেন না তাও সে লক্ষ্য করবে। পতির মন জুগিয়ে চললে অতিশীঘ্র পতিপ্রাণা হয়ে উঠবে।
স্বামী কোন কোন খাদ্য খেতে ভালবাসে তাও স্ত্রীর জানা দরকার। সম্ভব হলে সে সব খাদ্য রেঁধে দেবে। স্বামীর শরীর কখন কেমন থাকে তাও লক্ষ্য করা উচিত।
স্বামীর পদশব্দ পেলেই স্ত্রী অলঙ্কার পরে বা ভাল কাপড় পরে তার সামনে যাবে- কখনও নোংরা কাপড় পরে তার সামনে যাবে না। যদি স্বামী খরচ পরায়ণ হয়, তা হলে তাকে খরচের বিষয়ে পরামর্শ দেবে।
স্ত্রীর উচিত স্বামীর সঙ্গে মিশে স্বামীর অনুমতি নিয়ে অলঙ্কর ইত্যাদি পরিধান করে বিবাহাদি উৎসবে যোগদান করা।
সাধারণ পূজা বা কোনরূপ উৎসবে পল্লীর সঙ্গীদের সাথে মিশে যোগদান করা উচিত।
স্বামী ভোজ করে নিদ্রা গেলে, তারপর স্ত্রীর বিছানায় যাওয়া উচিত।
স্বামী নিদ্রিত থাকলে তখন তাকে নিদ্রা থেকে তোলা উচিত না। ভোরে স্বামী শয্যাত্যাগ করবার পূর্বেই স্ত্রীর বিছানা ছেড়ে উঠে যাওয়া উচিত।
রান্নাঘর হবে বাড়ির এক বিপরীত দিকে- যাতে বাইরের অতিথি বা স্বজন এসে দেখতে না পায়। এই রান্নাঘরে যথেষ্ট আলো বাতাস ও পরিষ্কার থাকা দরকার।
যদি স্বামী কোনও অপরাধ করে থাকেন বা স্ত্রীকে তিরষ্কার করেন তা হলে স্ত্রীর উচিত নয় তাকে কতকগুলি রূঢ় কথা বলা। অবশ্য স্ত্রী স্বামীর তিরস্কারের উত্তরে কপট ক্রোধ দেখাতে পারে। কিংবা সে মনমরা বা বিষণ্ন ভাব দেখাতে পারে যখন স্বামী একা থাকবেন তখন তাঁকে সব কথা বোঝাতে পারে।
স্ত্রীর কখনও স্বামীর ভালবাসা পাবার জন্যে কোনও যাদুবিদ্যা প্রয়োগ বা তুকতাক করা উচিত নয়। স্ত্রী এসব করলে সে স্বামীর অবিশ্বাস ভাজন হয়ে যায়।
স্ত্রীর যা করা উচিত নয়
১। স্বামীর সঙ্গে রূঢ় ভাষায় কথা বলা।
২। নিরানন্দ ভাবে কখনও স্বামীর দিকে তাকাতে নেই।
৩। রুষ্ট ভাবে কখনও স্বামীর দিকে পিছন ফিরে থাকবে না।
৪। কখনও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পথচারীদের দিকে চেয়ে থাকবে না।
৫। স্বামী ছাড়া অপর পুরুষের সঙ্গে একাকী নির্জনে বা বাগানে কথাবার্তা বলবে না।
৬। অনেকক্ষণ ধরে নির্জনে একাকী সময় কাটাবে না।
৭। দেহ থেকে বেশি ঘাম বের হয়ে গেলে বা দুর্গন্ধ হলে, সেই ঘাম ধুয়ে সুগন্ধ লাগাবে। যদি দাঁতে বা মুখে দুর্গন্ধ হয় তা হলে দাঁত মুখ পরিষ্কার করা উচিত।
৮। যখন স্বামীর সঙ্গে বা অন্য কারও সঙ্গে দেখা করতে যাবে, কখনও কু-বেশ বা নিম্ন স্তরের বেশ পরে যাবে না।
৯। স্বামীর মত না নিয়ে কোনও ব্রত সাধন বা ভগবানের উপাসনা করবে না। স্বামীকে তা জানাবে। বলবে- যা করছি, তা তোমরাই মঙ্গলের জন্যে প্রিয়তম।
১০। স্বামীর মত না নিয়ে কারও সঙ্গে এমন কি আত্নীয়ের সঙ্গেও বের হওয়া উচিত নয়।
১১। স্বামীর শরীর অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁর কাছে সব সময়ে থাকবে। কি দরকার তা জিজ্ঞাসা করবে। ঠিক মত ওষুধ খাওয়াবে। সময় মত পথ্যাদির ব্যবস্থা করবে। প্রয়োজন হলে হাত পা টিপে দেবে।
মোট কথা তাড়াতাড়ি যাতে স্বামী সেরে ওঠে সে সব কাজ করবে।
বিবাহিতা মেয়েদের পতিই এক মাত্র গতি এ কথা মনে রাখা উচিত।
স্ত্রী কি কি বস্তু সংসারে রাখবে
স্ত্রীর উচিত সংসারের অতি প্রয়োজনীয় সব বস্তুগুলি সংসারে মজুত রাখা। তা হলো-
(১) মাটির তৈরী হাঁড়ি, বেতের ঝুড়ি, কাঠের পাত্র বা সিন্দুক, লোহা বা চামড়ার তৈরী জিনিস।
(২) লবণ, ঘি, তেল, গন্ধদ্রব্য, মশলা প্রভৃতি।
(৩) চাল, গম, প্রভৃতি।
(৪) বিরল বা দুষ্প্রাপ্য ঔষধ।
(৫) কতকগুলি জিনিসের বীজ সঞ্চয়- যেমন আলু, মূলা, শশা, পেঁয়াজ, বেগুন ইত্যাদি। ঠিক সময়মত ঐ সব মাটিতে পুঁতে দেওয়া দরকার।
আর একটি কথা-
গৃহস্থের স্ত্রী হয়ে কখনও ঘরের গোপন খবর বা প্রকৃত অবস্থা কাউকে জানাতে নেই। তাতে সংসারে অবনতি ঘটে সন্দেহ নাই।
(৬) সংসারের যা দুধ খরচ হয় তা করে, যা অবশিষ্ট থাকে তার ঘৃত তুলে নিয়ে সঞ্চয় করবে। সরিষার থেকে, তেল, তূলা, থেকে সূতা প্রভৃতিও সঞ্চয় করবে।
স্ত্রী নিজে হাতে কি করবে
(১) পাত্রের জন্যে ঢাকনা, জল তোলার দড়ি।
(২) ধান ঝাড়া- তা থেকে প্রয়োজন মত চাল বের করে নেওয়া। ধানের খোসা আলাদা করে নেওয়া।
(৩) তূষ, ভূষি, ফেন ও খড়ের ঠিক ব্যবহার জানা।
(৪) পোড়া কয়লা থেকে কয়লা বের করে জমিয়ে রাখা।
(৫) কর্মচারীদের কাজ দেখা- মাহিনার ব্যবস্থা করা; তাদের সুখ সুবিধার দিকে লক্ষ্য করা।
(৬) চাষের জন্য উৎকৃষ্ট বীজ সঞ্চয়।
(৭) গরু, বাছুর, হাঁস, মুরগী, ইত্যাদি গৃহপালিত পশু পাখির যত্ন ও পরিচর্যা।
(৮) বেশি পশু পাখি থাকলে তাদের হিসাব মিলিয়ে নিয়মিত দেখা।
আয়-ব্যয়ের হিসাব ও সঞ্চয়
১। স্বামীর আয়-ব্যয়ের হিসেব নেবে ও সেই মত খরচ করবে। আয় বুঝে ব্যয় করবে।
২। কিছু সঞ্চয় করবে।
৩। স্বামীর কাপড় চোপড় সব ঠিক মত কিনে তৈরী রাখবে। ছিঁড়ে গেলে সেগুলি সেলাই করে বা রং করে ঝি, চাকর ও দুঃখীজনকে দেবে।
৪। এই সব ছেঁড়া কাপড় চোপড় থেকে পর্দা, ঢাকনা প্রভৃতি করতে পারে।
৫। মদ্য বা মাদক দ্রব্য ব্যবহার করলে তা কিছু সঞ্চয় করবে, প্রয়োজন মত খরচ করবে। তবে মাত্রা ঠিক রাখা অবশ্য কর্তব্য।
৬। স্বামরীর বন্ধু বান্ধব এলে তাদের ফল মূল ও তাকাম দিয়ে আপ্যায়ন করবে।
৭। স্বামীর বন্ধু নিজের বন্ধু- তাঁর শত্রু, নিজের শত্রু সম জ্ঞান করবে।
৮। ভৃত্যদের মাঝে মাঝে গুণ দেখে পুরষ্কার দেবে। এতে তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
৯। সকাল বেলা শয্যাত্যাগ করা ও বিছানা তুলতে অবহেলা করা উচিত নয়।
১০। সন্ধ্যায় নিজের হাতে ঘর ঝাঁট দেবে ও ধুপ দীপ দেবে।
স্বামী বিদেশে থাকলে
এ সময়ও স্ত্রী অনেক কর্তব্য আছে যা একে একে বরা হলো-
(১) স্বামীর কল্যাণ ব্রত, উপবাস ইত্যাদি করবে।
(২) বাড়ির যারা প্রবীণ প্রবীণা তাদের তাদের আজ্ঞা পালন করা কর্তব্য।
(৩) স্বামী যেমন ব্যবস্থা করে যাবেন সেই অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করবে।
(৪) কেউ ধার নিয়ে থাকলে তা আদায় করতে হবে।
(৫) নতুন কেউ ধার চাইলে দেবে না।
(৬) স্বামী বিদেশে অর্থাভাবে পড়লে অর্থ পাঠাতে চেষ্টা করবে।
(৭) স্বামী যে সব কাজ আরম্ভ করে গেছেন সে সব চালাতে হবে।
(৮) সংসারের সব ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।
(৯) বিয়ে বা কারও মৃত্যু ছাড়া কদাচ পিত্রালয়ে গমন করবে না।
(১০) কারো বিয়ে বা মৃত্যু ঘটলে কোন আত্নীয়কে সঙ্গে নিয়ে ভাল পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করে যাবে।
(১১) চিঠিতে স্বামীকে সান্ত্বনা দেবে।
(১২) স্বামীর চিঠির তাড়াতাড়ি জবাব দেবে।
(১৩) শ্বশুর-শাশুড়ি বা গুরুজনকে জিজ্ঞাসা না করে কোনও ব্রত বা উপবাস করবে না।
(১৪) বাজে অর্থ ব্যয় করবে না।
(১৫) বিশ্বাসী কর্মচারী দিয়ে কাজ চালাবে। বাজার-হাট ও অন্যান্য খরচ কমাবে।
(১৬) অবস্থা অনুযায়ী বুঝে কিছু কিছু খরচ কমাতে পার।
(১৭) স্বামী বাড়ি ফিরে যেন অতি সাদা পোষাকে দেখতে পান। তাহার অবর্তমানে স্ত্রী যে মিতব্যয়িনী ছিলে এটা তাঁকে বোঝাতে হবে।
(১৮) স্বামী যেন কোনও কু-ধারণা কোন সময়ের জন্য না আনতে পারে।
(১৯) স্বামী ফিরে এলে গৃহ দেবতার পূজা দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।
বাৎস্যায়ন বলেন- যদি বিবাহিতা স্ত্রী না হয়ে বারবনিতা বা রক্ষিতা বিধবা হয়, তারও এই সব কর্তব্য পালন করা উচিত।
এতে পুরুষের আস্থা ও ভালবাসা প্রভৃতি অনেক বৃদ্ধি পায়। দাম্পত্য প্রেমও মধুময় হয়ে ওঠে।
সহপত্নী
সহপত্নীর প্রতি ব্যবহার
লোকে সহপত্নী কেন রাখে?
এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করে বাৎস্যায়ন বলেছেন, নিম্নলিখিত কারণের জন্য লোকে সহপত্নী রাখে। তা হলো-
১। প্রথম স্ত্রীর নির্বুদ্ধিতা বশতঃ
২। তার কড়া মেজাজের জন্য বাধ্য হয়ে।
৩। স্বামীর উক্তির বিরুদ্ধ ব্যবহারে।
৪। তার কদর্য রূপ হলে।
৫। সর্বদা রোগ ভোগ করতে থাকলে।
৬। তার গভীর আলস্য থাকলে। সে একেবারেই কাজকর্ম করতে চায় না।
৭। তার বন্ধ্যাত্ব বা কেবল কন্যা প্রসব করতে থাকলে।
৮। স্বামীর কামনা চরিতার্থ করতে না পারলে।
স্ত্রীর উচিত, যাতে উপরোক্ত কারণগুলি না ঘটে তার ব্যবস্থা করা।
তবে যদি তা নেহাৎ ঘটে যায় বা সে নিজে বন্ধ্যা হয় তা হলে সহপত্নী গ্রহণ করতে স্বামীকে বাধা দেওয়া উচিত নয়।
কিন্তু সহপত্নী বাড়িতে এলেই যে পূর্ব গৃহিণী নিজেকে অপমানিতা ও ঘৃণিতা মনে করবে, এর যথেষ্ট কারণ না ঘটলে এই মনোভাব হৃদয় মধ্যে পোশণ করা উচিত নয়।
তারই তো সংসার ছিল-এখনও তারই সংসার থাকল। তবে স্বামীর ভালবাসার একজন অংশীদার এসেছে বলেই সহ অংশীদারকে কেবলই ঘৃণা এবং অপমান করতে হবে এর মধ্যে কি কোনও সুনীতি আছে?
বরং তার সঙ্গে একত্রে বাস করে যাতে সংসারের কল্যাণ হয়-পরিবারস্থ অন্যান্য লোকের খাওয়া, পরা বা আর্থিক কষ্ট তারা না পায়, তাই করা উচিত।
সহপত্নী এলে বড় গৃহিণী তাকে নিজের ছোট বোনের মত আদর করে ঘরে তুলবে।
কিন্তু তা না করে অধিকাংশ গৃহিণী সহপত্নীর সঙ্গে ঝগড়া করেন।
তাকে হিংসা করেন- এতে তার সংসার কখনও সুখের হতে পারে না।
এতে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ আরও বেড়ে যায়। স্বামী ঝগড়া-হিংসা সব দেখে বড় বিরক্ত হন্ততিনি হয়তো তখন শান্তির আশায় প্রথমা স্ত্রীকে ছেড়ে দ্বিতীয়াকে নিয়ে অন্যত্র চলে গেলেন। পূর্ব পত্নীর সঙ্গে হয়তো সম্বন্ধ একেবারে ত্যাগ করলেন।
এতে স্বামীর আনুকূল্য পাবার যেটুকু আশা ছিল তা নষ্ট হয়ে গেল। সমস্ত পৃথিবীটাই তার কাছে যেন শূন্য হয়ে গেল।
তার চেয়ে তার উচিত নবাগত সহপত্নীকে সংসারে আনা মাত্র নিজের ছোট বোনের মত নিজের কাছে টেনে নেওয়া। তাকে আপন করে নেওয়া। রাত্রিকালে তার বিছানা ছেড়ে স্বামীকে এবং নব বিবাহিতা সহপত্নীকে একত্রে শুতে দেওয়া উচিত।
সন্ধ্যাবেলা ঐ নবাগতা সহপত্নীর চুল বেঁধে দেবে-তাকে ভাল বেশভূষা পরাবে, মুখে গন্ধদ্রব্য লাগাবে-তারপর তাকে স্বামীর বিছানায় পাঠিয়ে দেবে।
নবাগতা সহপত্নীকে নানা প্রসাধন দ্রব্যে, সজ্জিত করে তাকে নানাবিধ কামকথা শিখিয়ে দেওয়া উচিত।
কোনও রকম স্বামীকে জানানো উচিত নয় যে তার মনে মনে ঈর্ষা বা দুঃখ জন্মেছে।
বরং স্বামীকে মাঝে মাঝে বলা দরকার, নতুন বউকে মাঝে মাঝে অলঙ্কার, বস্ত্র ইত্যাদি তিনি ক্রয় করে দেন।
সহপত্নীর সন্তান্তসন্থতিদের নিজের সন্তান সন্ততির মত আদর যত্নে মানুষ করা উচিত-তাদের সেবা, যত্ন করতে হবে নিজহাতে।
তারা তার আত্নীয়স্বজন কেউ এলে, তাকে নিজের আত্নীয়-স্বজনের মতো যত্ন করতে হবে, তাদের শ্রদ্ধা করতে হবে।
এইরূপ করলে তার পূর্বে সংসার টিকে থাকবে, একথা মনে রাখা উচিত।
কনিষ্ঠা সহপত্নীর কর্তব্য
কনিষ্ঠা সহপত্নী হয়তো স্বামীর ভালবাসা কিছু কিছু আয়ত্ত করে নিয়েছে- তখনও তার উচিত জ্যেষ্ঠা সহপত্নীকে প্রথমে শ্রদ্ধা ভক্তি করা-সংসারের সব কিছুর জন্যে তার মতামত নেওয়া।
স্বামীকে প্ররোচনা দেওয়া, যাতে তিনি জ্যেষ্ঠা সহপত্নীকে কিছু কিছু সম্মান দেন্তমাঝে মাঝে তাকেও আদর করেন।
জ্যেষ্ঠার প্রতি ঘৃণা, হিংসা কি কলহপ্রবণতা কখনও করা উচিত নয়।
বিধবার কর্তব্য
কোন কোন বিধবা তার কাম-বাসনা চরিতার্থ না করতে পেরে বা মনস্কামনা সিদ্ধ করার জন্য সুদর্শন বলবান যুবা পুরুষকে গ্রহণ করতে পারে। একে বিবাহ বলা হয় না একে বলে পূণর্ভূ।
পূণর্ভূ হয়ে নতুন স্বামী পেতে হলে তাকে একটা অনুষ্ঠান করে স্বামীর বন্ধুদের ভোজন করাবে-কিছু কিছু অর্থ তাদের দান করবে।
তারপর নতুন স্বামীর প্রদত্ত অলঙ্কার ও বস্ত্রাদি পরিধান করে স্বামীর আত্নীয়স্বজনের কাছে উপস্থিত হবে। সে পূর্ব গৃহে যাবে না-এই কথা প্রকাশ করবে। নতুন স্বামীর গৃহে এসে তার সঙ্গে কাম কলা প্রকাশ করবে।
অবহেলিতা পত্নী
যখন ওকানও লোকের কতকগুলি পত্নী থাকে, তখন হয়ত একটি পত্নী হয়-অবহেলিতা।
সে হতে পারে স্বামীর অনাদৃতা। স্বামী তার সঙ্গে হয়তো যৌনকার্যও করেন না।
এমন অবস্থা ঐ অবহেলিতা পত্নীর উচিত, যে পত্নী স্বামীর সবচেয়ে প্রিয়তমা, তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব স্থাপন করা।
তর উচিত অন্যান্য পত্নীদের সঙ্গে বা বাড়ির অন্য আত্নীয় স্বজনের সঙ্গে সম্ভাব রাখা।
তার উচিত কামের যৌন কলা যা আছে তা নিপুণভাবে শিক্ষা করা হয়ত এই নিপুণতার অভাবেই সে স্বামীর ভালবাসা হারিয়েছে।
তার সপত্নীর সন্তান-সন্ততিদের প্রতি ভালবাসা হারিয়েছে।
সংসারে যে সব পূজা আছে, ব্রত পার্বণ আছে তাও তার ভালভাবে পালন করা দরকার।
স্বামী যৌন সম্পর্কের ইচ্ছা প্রকাশ করা মাত্র তার তাতে সাড়া দেওয়া উচিত। ইচ্ছা না থাকলেও স্বামীর মতে মত দেওয়া উচিত। মোট কথা যাতে স্বামীর মন জয় করা যায় তার চেষ্টা করা উচিত।
স্বামীর সঙ্গে কোন পুরানো কলহের কথা বা ঝগড়ার কথা তার না তোলাই কর্বব্য। এমন কি তখন তার স্বামীর অন্য কোনও পত্নীর সঙ্গেও তার কলহ করা কদাচ উচিত নয়।
যদি কোনও পত্নীর সঙ্গে স্বামীর বিবাদ হয়, সে তার মীমাংসা করে দিতে চেষ্টা করবে।
যে সব কাজ করলে স্বামী তাকে ভালবাসতে পারে, তাকে পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারে, সে সব কাজ করা উচিত।
স্বামী তাকে যাতে ভালবাসতে পারে, প্রতিটি কাজ তার এমন ভাবে করা কর্তব্য।
অন্তঃপুরের মহিলাদের কর্তব্য
রাজার অন্তঃপুরে সাধারণতঃ প্রত্যেক রাণীর পৃথক পৃথক মহল বা ঘর থাকে।
রাজার একজন করে চাকরানী বা দূতী থাকে। তাকে দিয়ে বলে পাঠান, নির্দিষ্ট রাতে তিনি কোন রাণীর কাছে রাত্রি যাপন করবেন।
রাজ অন্তঃপুরে প্রধান মহিষী থেকে পরস্পর স্তর আছে।
মাঝে থাকেন উপপত্নী, বাঈজী ও বারাঙ্গনা প্রভৃতি-সব শেষে থাকেন রাণীরা।
রাণীদের উচিত চাকরানীদের মাধ্যমে রাজার কাছে মালা, চন্দন, সুগন্ধি প্রভৃতি পাঠানো-যাতে রাজা তার কথা আগে মনে করেন।
রাজার নিকট থেকে যেমন আদেশ হয়, সেই অনুযায়ী রাজা ইচ্ছামত অন্তঃপুরিকাদের অনুগৃহীত করে থাকেন।
এই বিষয়ে রাণীদের উচিত নয়, রাজার বিরুদ্ধে কোন মত প্রকাশ করা।
বহু পত্নীকে লোকের কর্তব্য
বহু পত্নীক লোকের কর্তব্য তার প্রতিটি স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখা-তাদের কাউকে অবহেলা না করা।
যদি কেউ কোনও দোষ করে থাকে-তবে তার অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি দেবেন- মিথ্যা কাউকে শাস্তি দেবেন না- প্রমাণ না পেলে তা সঠিক বলে বিশ্বাস করবেন না।
সে একজন পত্নীর সঙ্গে কিরূপ কামকেলি করে থাকে তা অন্যের কাছে প্রকাশ করবে না।
একজনের যোনির গঠন কেমন তা কদাচ অন্যকে বলবে না। এতে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।
যদি তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়, সে ধীর স্থিরর মস্তিষ্কে তার বিচার করবে। কদাচ যেন এর অন্যথা না হয়।
সঙ্গম সময় কোন স্ত্রীর কাছে কতটা আরাম পায়, অন্যের কাছে তা বলা অনুচিত। প্রত্যেকের কাছেই তার প্রশংসা করা উচিত। তাতে সকলেই রাজাকে ভালবাসে।
পতিতাদের ইতিবৃত্ত
পতিতা অর্থাৎ বেশ্যারা। এরা হলো সেই সমপ্রদায়ভুক্ত নারী যারা পুরুষকে যৌন সুখ ভোগ করতে নিজেদের দেহ দিয়ে আপনাদের জীবিকা অর্জন করে।
অবশ্য তারা যে কোনও পুরুষকে দেহ দানের বিনিময়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করে, তা নয়। তারাও মানুষ- তাদেরও মন আছে, অভিরুচি আছে, ভাল-মন্দ বিবেচনা শক্তি।
তাই তাদের বিষয়ে অনেক কিছু সাধারণ মানুষের শিক্ষা করা উচিত। অনেক সময় যাদের সঙ্গে যৌন মিলন করতে পারে হাতে তাদের পয়সাও আছে, তবু তারা সেই লোককে ফেরৎ দেয়। কারণ সেই নারী তাকে পছন্দ করে না। যৌন মিলনে কিছুটা মনের মিলেরও প্রয়োজন হয়।
বেশ্যারা প্রয়োজনমত নিজেকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও অলঙ্কারে ভূষিতা রাখে। যেন এক প্রকার পণ্য দ্রব্য। তাই তার বাড়ি এমন থাকবে যেন বাইরের লোক তাকে দেখতে পায় এবং সেও বাইরের লোককে দেখতে পায়। তার আরও জানা উচিত, সৌন্দর্য্য দিয়ে পুরুষকে জয় করতে পারলে তবে তার অর্থ মিলবে।
বেশ্যাদেরও আবার ঘটক বা দূত থাকে। তারা অন্য লোককে তার গুণ পণ্য বলে তাকে আকর্ষন করে নিয়ে আসে।
বেশ্যা যাদের খুশী রাখবে
নিম্নলিখিত লোকদের বেশ্যাদের সর্বদা খুশী রাখা উচিত। তা না হলে ব্যবসা চলে না। তা হলো-
(১) নগরের নগরপাল ও পুলিশের কর্তা।
(২) দেশের কোনও বিচারক বা বিখ্যাত আইনবিদ।
(৩) কোনও গণৎকার বা জ্যোতিষ।
(৪) কোনও ব্যায়ামবীর লোক।
(৫) কোনও সতীর্থ বা সমব্যবসায়ী।
(৬) কোনও শিল্পপতি।
(৭) কোনও পীঠমর্দ বা বিট বা বিদূষিকা, সুগন্ধি দ্রব্য বিক্রেতা বা মদ্য বিক্রেতা, কোন রজক বা নাপিত।
বাৎস্যায়ন বলেন উপরোক্ত লোকদের উপরে বেশ্যার কোন যৌন আকর্ষন থাকা উচিত নয়। তাদের কেবল অর্থ দ্বারা বশীভূত করে ব্যবসায়ে উন্নতি করবে।
বেশ্যারা যাদের পছন্দ করে
বেশ্যা কোন্ কোন্ ধরনের ব্যক্তিকে মনে প্রাণে কামনা করবে তাও বাৎস্যায়ন বলে গেছেন।
তারা হলো-
১। কোনও স্বাধীন ধনশালী লোক।
২। রাজ্যের কোন উচ্চপদস্থ কর্মচারী।
৩। যে ব্যক্তি অল্পদিনে প্রচুর সম্পত্তি বা টাকাকড়ি পেয়েছে।
৪। বেশ্যার সমব্যবসায়ী ব্যক্তির সঙ্গে যে সম্প্রতি কলহ করেছে।
৫। যে লোকের স্থায়ী নিশ্চিত উপার্জন আছে।
৬। যে কুৎসিৎ হলেও নিজেকে সুন্দর বলে মনে করে।
৬। যে আত্নপ্রশংসায় খুব বিরত।
৮। কোনও রতি অক্ষম লোক- সে নিজে মনে করে যে সে খুব রতি পারদর্শী।
৯। যে লোক আত্নপ্রশংসা ভালবাসে।
১০। যে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাস্ত করতে খুবই ইচ্ছুক।
১১। খুব দানশীল ব্যক্তি।
১২। যে লোক রাজা, ধনী বা সম্ভ্রান্ত লোকের সঙ্গে দিন যাপন করে।
১৩। যে নিজ ভাগ্যকে খুব বিশ্বাস করে।
১৪। অপরিমিত ব্যয়শীল লো্ক। টাকা খরচ করতে যার দরদ নাই।
১৫। যে লোক পিতামাতার অবাধ্য।
১৬। কোন ধনীর একমাত্র সন্তান।
১৭। নিঃসন্তান ধনী ব্যক্তি।
১৮। যে কামুক লোক তার কামক্রিয়া গোপন রাখতে পারে।
১৯। যে সন্ন্যাসী গোপনে কামক্রিয়া চরিতার্থ করে।
২০। কোনও সাহসী যোদ্ধা।
২১। কোন চিকিৎসক বা বৈদ্য।
২২। বহু দিনের পরিচিত লোক।
বেশ্যার পছন্দমত যুবকের গুণাবলী
বাৎস্যায়ন বলেছেন ভালবাসা, সুখ্যাতি ও ধন অর্জন করতে হলে বেশ্যার প্রয়োজন একজন বিলাসী যুবক। তার কি কি গুণ থাকবে, তা হলা হচ্ছেঃ-
১। সে উচ্চবংশীয় হবে।
২। তর্কশাস্ত্রে বেশ বুৎপন্ন হবে।
৩। রাজনীতিতে পারদর্শী হবে।
৪। কবি বা শিল্পী হবে।
৫। বেশ গল্প বলতে পারদর্শী হবে।
৬। সু-বক্তা ও বুদ্ধিমান লোক।
৭। বিভিন্ন কথায় যারা পাণ্ডিত্য দেখায়।
৮। মনে উচ্চাশা থাকবে।
৯। প্রাচীন লোকদের যারা শ্রদ্ধা করবে।
১০। প্রচুর গুণ থাকবে।
১১। সৎসাহসী হবে।
১২। একনিষ্ঠ প্রেমিক হবে।
১৩। বন্ধুদের প্রতি সৌহার্দ্যশীল হবে।
১৪। নানাবিধ বাকবিতণ্ডায় কুশলী হবে।
১৫। শরীর নীরোগ হবে।
১৬। কামশক্তি পরায়ণ হবে।
১৭। মদ্যপানদোষ থাকবে না।
১৮। সব নারীর প্রতি স্নেহ ভালবাসা দেখাবে।
১৯। স্বাধীনচেতা লোক হবে।
২০। মনে সন্দেহ থাকবে না।
বেশ্যার গুণাবলী
বেশ্যারও কতকগুলি বিশেষ গুণ থাকা একান্ত প্রয়োজন। তা হলো-
১। সে সুন্দরী হবে।
২। সে যুবতী হবে।
৩। দেহে সুলক্ষণ যুক্ত চিহ্ন থাকবে।
৪। মধুরভাষিণী হবে। সলজ্জ ভাব দেখাবে।
৫। অর্থের কথা চিন্তা না করে নিজের স্বামীর মত উপপতিকে ভালবাসে, এমন ভাব দেখাবে।
৬। দু-একটি মাত্র উপপতির সঙ্গে রতি মিলন করবে।
৭। স্থির চিন্তা করবে।
৮। উপপতির সঙ্গে প্রবঞ্চনা করবে না। ভাল ব্যবহার করা উচিত।
৯। কৃপণী হবে না। এতে উপপতি সরে পড়তে পারে।
১০। সাধারণ সমিতি বা যাত্রায় যোগদান করবে। এতে চাহিদা বাড়বে সন্দেহ নাই।
১১। নানা শিল্পের অনুরাগিণী হবে।
১২। সুকণ্ঠী গায়িকা হলে আরও ভাল হয়।
নারী পতিতা হয় কেন
১। অর্থাভাবে বা দারিদ্র্যতাবশতঃ অনেক সময়ে মেয়েরা পতিতা বৃত্তি গ্রহণ করে।
২। সংসারের অনাদর বা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পতিতা বৃত্তি গ্রহণ করে।
৩। স্বামীর অনাদর অত্যাচারও এ পথে যাবার মস্ত বড় একটি কারণ।
৪। অতি কামুকতা। যে স্বামীর দ্বারা পূর্ণ তৃপ্তি পায় না।
৫। একাধিক পুরুষে আকর্ষণ।
৬। অতিরিক্ত বিলাসের প্রতি আকর্ষণ।
৭। বৈধব্য।
৮। অন্যের প্ররোচনায় প্রভাবিত হওয়া।
৯। একজনকে ভালবেসে গৃহত্যাগ, পরে তার দ্বারা প্রত্যাখ্যান।
১০। সামপ্রদায়িক দাঙ্গা বা যুদ্ধের জন্য কুলত্যাগিনী।
১১। আজীবন কুমারী থাকা। পরে অন্য পথে গমন।
১২। গ্রামাদি থেকে সংগৃহিতা নারী।
১৩। গোপন প্রেম ও স্বামী কর্তৃক ধৃত ও স্ত্রী ত্যাগ।
১৪। স্ত্রীর সংসারে বিতৃষ্ণা-স্বামী হয়ত আজীবন চরিত্রহীন।
১৫। দারিদ্রতার জন্য কুমারী কন্যা বা স্ত্রীকে বিক্রয়।
পতিতাদের প্রকারভেদ
১। একমাত্র উপপিতিতে আকৃষ্ট।
২। নাচ গান জানা কলারসিক পতিতা- দেহমিলন বেশি চায় না। নির্দিষ্ট একজন নায়ককে রাখে।
৩। বাড়িউলি বা কোনও নারীর অধীনে বাস করা পতিতা।
৪। কোন রাজ অনুগৃহীত বিশেষ ধনী পতিতা, সে উপপত্নীর মত পৃথক প্রাসাদে বাস করে।
পতিতার উপপতি
পতিতার উপপতির যে সব গুণ থাকবে
১। সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া দরকার।
২। সদবুদ্ধি ও বিবেক থাকবে।
৩। সৎব্যবহার।
৪। সরলতা।
৫। পরস্পরের প্রতি কৃতজ্ঞতার ব্যবহার।
৬। দূরদর্শিতা।
৭। কাজের প্রতি ঔদাসীন্য।
৮। স্থান কাল অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা।
৯। আইন মান্য করে চলা।
১০। দারিদ্র্যে মুহ্যমানতা।
১১। যথাসময়ে হাস্য করা।
১২। পরনিন্দা ও জনশ্রুতি বৃদ্ধি না করা।
১৩। দুর্নাম থেকে আত্নরক্ষার শক্তি।
১৪। রোষ, হিংসা, আত্নগর্ব থাকা উচিত।
১৫। চপলতা থেকে মুক্ত ভাব।
১৬। যার সঙ্গে দেখা হবে তাকে অভিবাদন।
১৭। কাম ক্রীড়ায় বৈচিত্র্য।
১৮। মনে সব সময় স্ফুর্তি থাকা দরকার।
১৯। অন্তঃকরণ হবে উদার।
২০। মুক্ত হসে- খরচ করবে।
২১। পতিতার মন জুগিয়ে চলবে।
২২। শৃঙ্গার দক্ষতা থাকবে।
বেশ্যারা যেসব পুরুষকে পছন্দ করে না
১। যক্ষ্মা বা কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত লোক।
২। যে লোক মেহ বা প্রমেহ রোগে ভুগছে।
৩। যে পুরুষের মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
৪। যে লোক বহু নারীর সঙ্গে মিলন করে।
৫ । যে লোক তার স্ত্রীকে খুব ভালবাসে।
৬। যে লোক কটুভাষী, দয়ামায়া শূন্য।
৭। যে সাধু লোক বলে মোটেই গণ্য নয়।
৮। যে চুরি কার্য্য করে।
৯। যে আত্নরক্ষার জন্যে মিথ্যা কথা বলে।
১০। যে টাকার জন্যে সব কিছু করতে পারে।
১১। যে প্রেমের জন্যে বা গুপ্ত প্রেমের জন্যে লজ্জিত বা ভীত হয় না।
১২। যে লোক সুরত কার্যে অক্ষম।
১৩। যে পুরুষ পয়সা খরচ করতে কুণ্ঠিত।
পত্নীরূপে বেশ্যা
যে বেশ্যা অনেকদিন ধরে কোন একজন পুরুষের উপপত্নীরূপে বাস করে, তার সঙ্গে ধর্ম পত্নীর মত ঘর করা ও সহবাস করা যায়।
পত্নীরূপে বেশ্যার কর্তব্য
১। নায়কের মর্দন চাওয়া। নিজেও চুম্বন, আলিঙ্গন, দংশন প্রভৃতি করতে পারে।
২। ধর্ম কর্মে মন দেওয়া।
৩। নিত্য নূতন কামকেলি।
৪। নিজে অর্থ না চাওয়া। দাসদাসী বা কোন ধাত্রীকে দিয়ে সাংসারিক প্রয়োজন জানাবে।
৫। মর্য্যাদা দিয়ে নায়ককে সন্থষ্ট রাখতে চেষ্টা করবে।
৬। নায়ক ক্রুদ্ধ হলে হাসবে। যথাসাধ্য তাকে সন্থষ্ট করবার চেষ্টা করবে।
৭। নায়কের মনে কোন ব্যথা দেবে না।
৮। কখনও কটু কথা বলবে না। নিজের স্বামীর মত তাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাববে।
৯। অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে না। তাতে নায়কের আগ্রহ কমে যাবে।
১০। নায়কের বিরুদ্ধে কেউ নিন্দা করলে তার প্রতিবাদ করবে-না হয় তা শুনবে না। এতে নায়কের অতি প্রিয় হয়ে উঠবে।
১১। নায়কের অসুখে সেবা করবে।
১২। সন্তানলাভের আকাঙ্খা থাকবে। সন্তান একটি কি দু’টি হরে ভাল হয়। এর বেশী হওয়া উচিত নয়।
বিতৃষ্ণাযুক্ত উপপতির লক্ষণ
যখন কোন উপপতির কোনও বেশ্যার উপরে বিতৃষ্ণা আসে তখন যে সব লক্ষণ দেখা যায়-তা এবারে বলা হচ্ছে-
১। উপপত্নীকে দেয় টাকা সম্পূর্ণ দেয় না।
২। যাদের সঙ্গে তার হিংসা দ্বেষ থাকে, তাদের সঙ্গে সে হেসে কথা বলে।
৩। উপপত্নীর মতের বিরুদ্ধে কাজ করে। অন্য বারাঙ্গনার নিকট যাওয়া আসা করে।
৪। উপপতি তার প্রতিশ্রুতি রাখে না।
৫। নিজের মনোভাব উপপতীকে গোপন করে। এই নায়িকার প্রতি ভালবাসার বন্ধন কমে যায়।
৬। উপপতীকে সর্বদা বিদ্রুপ করে। যাতে সে রেগে যায়।
৭। প্রায়ই তাকে ছেড়ে ছেড়ে থাকতে চায়।
৮। উপপত্নীর পূর্বের সব বিরুদ্ধ-চারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে কথাবার্তা বলে।
৯। তাকে ঘৃণার ভাব দেখায়।
এ সকল লক্ষণ নায়কের মধ্যে দেখা গেলে, বুঝতে হবে নায়ক তাকে ত্যাগ করবে।
উপপত্নীর নায়ক ত্যাগের চিহ্ন
বেশ্যারা যখন উপপতিকে ছেড়ে দেবার চেষ্টা করবে এবং যে সব চিহ্ন দেখাবে, তা হ’লো-
১। উপপতি যা পছন্দ করে না এমন কাজ উপপতী করবে।
২। উপপতিকে কেবল ব্যথা দেবে। অপমানসূচক কার্যকলাপও করতে পারে।
৩। এমন লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলবে-যাদের সঙ্গে উপপতির সদ্ভাব নেই।
৪। তার নিন্দা করবে-মর্যাদাহীন করবে।
৫। তাকে প্রত্যেক বিষয় তিরষ্কার করবে।
৬। অন্য বেশ্যাদের উপপতির প্রশংসা করবে, নিজের উপপতির কাছে।
৭। উপপতির যত দোষ অবাধে অন্যের কাছে জানাবে ও তার প্রচণ্ড নিন্দা করবে।
৮। উপপতি ডাকলে তার কাছে আসবে না-তাড়াতাড়ি সাড়া দেবে না।
৯। রতি কার্য করতে চাইবে না।
১০। উপপতি চুম্বন করতে চাইলে মুখ ফেরাবে। ঘৃণার ভাব দেখাবে।
১১। আলিঙ্গনে বাধা দেবে। দূরে দূরে থাকবে।
১২। রতি কাজের জন্য জোরাজুরি করলে ঊরু দুটি চেপে রাখবে।
১৩। উপপতির কোন কথা গ্রাহ্য করবে না। তার যা ইচ্ছা তাই করবে।
১৪। সুরতের সময় উপপতি ঘুমের ভান করবে।
১৫। সুরতকালে উপপতি ক্লান্ত হ’য়ে পড়লে তাকে উপহাস করবে।
১৬। দিনের বেলায় উপপতি সঙ্গম করতে চাইলে, সে অন্যত্র চলে যাবে।
১৭। উপপতির সামনে অন্য পুরুষের সঙ্গে প্রেমালাপণ করবে।
১৮। শৃঙ্গারের শেষে বীর্য স্খলনের সময়ে, উপপতিকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেবে।
উপপতি এমন সব কার্যকলাপ করলে বুঝবে যে, সে তাকে আর চায় না।
পরনারী-পরপুরুষ
পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক
শাস্ত্রে আছে, অপরের পরিণীতা স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা কদাচ উচিত নয়। মানুষের সমাজও এর বিশেষ বিরোধী। মানুষ এ কাজকে খুব নিন্দনীয় বলে মনে করে।
তবে বাৎস্যায়ন বলেন- প্রেম ও ধন সম্পত্তির লোভে এরূপ কাজ করা যেতে পারে- তবে নিম্নলিখিত বস্তুগুলি বিচার করতে হবে।
১। লাঞ্ছিত পর নারীকে সহজে পাওয়া যেতে পারে কি না।
২। তার সহিত সহবাস দুষ্ট ব্যাধি আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ঘটতে পারে কিনা।
৩। তার সঙ্গে কোন শাস্ত্র বিরুদ্ধ সম্পর্ক আছে কিনা- যেমন মাসী, পিসী, গুরু পত্নী ইত্যাদি।
৪। বাঞ্ছিত স্ত্রীর সঙ্গে ভালোবাসা করলে সত্যিই কোন ধন লাভ ঘটতে পারে কিনা।
৫। যদি ইচ্ছা এত প্রবল হয় যে ঐ কাজ না করলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
আকর্ষণের প্রাবল্যের প্রমাণ
এই আকর্ষণ প্রকৃত প্রবল কি না তা বিচার করা যায় নানা উপায়ে।
যথা-
(১) প্রথম দর্শনেই নারী প্রতি প্রেমের উদয়।
(২) মনে তার প্রতি দৃঢ় আকর্ষণ।
(৩) সর্বদা ঐ নারীকে মনে মনে চিন্তা করা।
(৪) চিন্তা করতে করতে যদি নিদ্রাহীন হতে হয়।
(৫) কিছুকাল বিনিদ্র থেকে যদি শরীর দুর্বল হয়ে যেতে থাকে।
(৬) জীবনের অন্যান্য সব কাজ যদি অরুচিকর বলে মনে হয়।
(৭) সব বাধা বিপত্তি তুচ্ছ মনে হওয়া।
(৮) ঐ নারী ভাল না বাসলে স্নায়ুবিক রোগ উপস্থিত হ’তে পারে।
(৯) এমন অবস্থা যে, মাঝে মাঝে মৃগীরোগের মত দেখা দেখা দিতে পারে।
(১০) এ অবস্থার জন্যে পরে মৃত্যু পর্য্যন্ত ঘটতে পারে।
(১১) ঐ নারীকে যথাসর্বস্ব দিয়ে দেওয়া যায়।
(১২) তাকে না পেলে নিজের জীবনই বৃথা বলে মনে হয়।
বিচার্য্য বিষয়
পর নারীকে কাম নিবেদন করার আগে যে সব বিষয়ে মনোযোগ সহকারে দেখা কর্তব্য, তা হলো-
(১) ঐ নারীর মনোভাব কেমন?
(২) তার মতবাদ বিশ্বাসযোগ্য কিনা।
(৩) তার সতীত্ব দৃঢ় কিনা। সতীত্ব দৃঢ় না হলে তাকে সহজে পাওয়া যায়।
(৪) তাকে সহজে পাওয়া যেতে পারে কিনা।
(৫) তার কাম বাসনা উগ্রচিতা-যাতে সে পর পুরুষ কামনা করে।
(৬) নারীর দৃষ্টিভঙ্গীই তার মনোভাব ব্যক্ত করে। তা ছাড়া কথাবার্তা হাবভাব দেখা উচিত।
(৭) সুসজ্জিত পুরুষ দেখে নারী আকৃষ্ট হয়- পুরুষও সুসজ্জিতা নারী দেখে আকৃষ্ট হয়। কিন্তু নানা কারণে তাদের কাম নির্ধারিত হয়।
(৮) সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে যাতে স্বামী না জানতে পারে। যেন স্বামী তাকে তাড়িয়ে না দেয়- তা হলে সে পর পুরুষ প্রেমিকাটিকে ঘৃণা করবে।
(৯) নূতন প্রেমিক দু-একদিন পর উদাসীন হয়ে পড়লে নারী আবার নিজেকে সংযত করে নেয়।
(১০) যে নারী যতো সহজলভ্য তার প্রতি পুরুষের ততো আগ্রহ বাড়ে না- যে যত দুর্লভ, তত তার প্রতি কামনা বাড়ে।
কি কারণে নারী পরপুরুষ চায় না
১। যখন স্বামীর সঙ্গে গভীর ভালবাসা থাকে।
২। যখন তার কিছু ছেলে-পুলে থাকে।
৩। যখন তার বয়স বাড়ে।
৪। যখন সে কোন মনস্তাপ পায়।
৫। যখন সর্বদা স্বামীর কছে থাকে।
৬। যখন সে তার নতুন প্রেমিকের বিষয়ে সন্ধিদ্ধ চিত্ত।
৭। তার প্রেমিকের কাছে যেতে বিপত্তি থাকে।
৮। যখন সে বুঝতে পারে, নতুন প্রেমিক শুধু ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়ায়।
৯। যখন সে বোঝে ঐ পুরুষ অন্য নারীর সঙ্গে প্রেম চালাচ্ছে।
১০। যখন সে সন্দেহ করে নব প্রেমিক তার গুপ্তপ্রেমের কথা সহজে ব্যক্ত করতে পারে।
১১। যখন সে মনে করে নব প্রেমিকের প্রেম নিবেদন একটা ছলনা মাত্র।
১২। যদি সে মনে করে নবপ্রেমিক তার বন্ধু-বান্ধবদের দ্বারায় তাকে ভোগ করাবে।
১৩। স্বামী টের পেতে পারে যদি এমন ভয় থাকে।
১৪। যখন নতুন প্রেমিক প্রচুর কাম ক্রীড়া অবগত, তখন তার সঙ্গে মিলনে ভয় পায়।
১৫। দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে শান্তিতে বাস করেছে। তখন যে নতুন প্রেমিকাকে ভয় পায়।
১৬। যদি হরিণী নারী বোঝে প্রেমিকের বৃষ বা অশ্ব জাতীয় লিঙ্গ।
১৭। যখন সে দেখে নতুন প্রেমিক স্থান কাল মানতে চায় না।
১৮। যখন সে দেখে নতুন প্রেমিকের সমাজে কোন স্থান নেই।
১৯। যখন দেখে নতুন প্রেমিক তার সংকেত বা ইশারা ইত্যাদি বোঝে না। খুব নির্বোধ।
২০। যখন হস্তিনী নারী দেখে তার প্রেমিকের শশক জাতীয় লিঙ্গ।
২১। যখন সে বুঝবে তার সঙ্গমে নবপ্রেমিকের শারীকির বা আর্থিক ক্ষতি হবে।
২২। যখন সে বোঝে ধরা পড়লে আত্নীয়স্বজন মহলে বদনাম হবে।
২৩। যখন দেখে নব প্রেমিক তাকে সন্দেহ করেছে।
২৫। যখন তার মনে খুব ধর্মভাব বর্তমান ও এই সব বিষয় চিন্তা করে-যে লোক পরস্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের কথা ভাবে, সে এই কাজে প্রকৃত সফলতা লাভ করতে পারে।
পরনারীর কাম্য পুরুষ
পরনারী কোন কোন ধরনের পুরুষ বিশেষ ভাবে কামনা করে তাও অবশ্য দেখা দরকার।
নিম্নলিখিত গুণবিশিষ্ট ব্যক্তিরা সহজেই পরনারীকে আকর্ষন করতে পারে।
১। যে কামশাস্ত্রে বেশ সুপণ্ডিত।
২। যে বেশ গুছিয়ে গল্প করতে পারে।
৩। যে বাল্যকালে খেলার সাথী ছিল।
৪। সুন্দর ও সুদর্শন যুবক।
৫। যে খেলার সঙ্গী।
৬। যে নারীর কথা বেশ মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং কোন যথোচিত ভাবে তার আবদার শোনে।
৭। যে বুঝে সুঝে কথা বলে।
৮। নারী যা চায়, তা সহজে যে জোগাড় করে দিতে পারে।
৯। নারীর প্রেমিকের পূর্ববর্তী দূত।
১০। যে যুবক নারীর গুপ্ত কথা জানে।
১১। যে অনেক বিলাসিনী নারীর কেন্দ্রীভূত হয়।
১২। যে পুরুষ তার অভিলষিত নারীর সাথীদের সঙ্গে বেশ মেলামেশা করে।
১৩। যে তার সম্পত্তির জন্যে সুবিদিত।
১৪। যে একজন নারীর সঙ্গে একত্রে বয়সে বেড়েছে।
১৫। একজন কামুক বলে বিদিত। তার প্রতিপত্তি বা অর্থ আছে।
১৬। কামুক পরিচায়ক।
১৭। ধাত্রী কন্যার প্রেমিক বা স্বামী।
১৮। সংসারে যে নূতন বরস্বরূপ এসেছে।
১৯। যে পুরুষ বনভোজন ও উদ্যান উৎসবে কৃতি।
২০। একজন অপব্যয়ী বা ব্যয়ে মুক্ত হস্ত।
২১। আমোদপ্রিয় অর্থাৎ নাটক দেখতে ভালবাসে।
২২। যারা বৃষ জাতীয় পুরুষ- নারী বোঝে ওদের দ্বারা পূর্ণ কামতৃপ্তি সম্ভব।
২৩। অতি সাহসী এবং মস্তান ধরনের লোক।
২৪। যে লোক নারীর স্বামীর থেকে বেশি বিদ্বান সুন্দরতর বা বেশি প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি।
২৫। যে খুব বাবুয়ানা করে বেড়ায়।
পুরুষ যেমন নানা হাবভাব করে নারীর মনোহরণ করতে পারে, তেমনি অনেক নারী ইঙ্গিত প্রকারে পুরুষের সুগম হতে পারে।
সুলভ পরনারী চেনার উপায়
নারী নিম্নলিখিত প্রকার ইঙ্গিতে পুরুষের সুলভ বলে প্রতীয়মান হয়। তা হলো-
১। যে নারী তাদে গৃহদ্বারে পথিকদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
২। যে বাড়ীর ছাদ থেকে পথচারীদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
৩। যে পল্লী পুরুষেরা বেশি গুলতানি করে- যে নারী তাতে সহজে যোগ দেয়।
৪। যে বিদেশীর দিকে কটাক্ষনেত্রে তাকায়।
৫। বিদেশীরা তাকালে যে নারী তাদের দিকেও বারবার তাকায়।
৬। যে নারীর স্বামী কারণ ছাড়া অন্য নারীকে বিয়ে করেছে।
৭। যে নারী স্বামীকে ঘৃণা করে।
৮। স্বামী কৃর্তৃক ঘৃণিতা নারী।
৯। সে স্বভাবতঃই অতি অবগুন্ঠনবতী।
১০। যে নারী অপুত্রকা।
১১। যে নারী সর্বদা তার পিতৃগৃহে বাস করে।
১২। যে সব নারীর পুত্রকণ্যা প্রায়ই মারা যায়।
১৩। যে নারী তার নিজের বাড়িতে বা পল্লীর অন্য বাড়িতে বিভিন্ন সমিতিতে যোগদান করে।
১৪। যে প্রথমেই ইচ্ছা করে পুরুষদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করে।
১৫। কোন অভিনেতা বা নর্তকের স্ত্রী।
১৬। বাল্য বিধবা নারী।
১৭। যে নারী নিজে দরিদ্র হলেও বিলাসী জীবন যাপন করতে ভালবাসে।
১৮। যার স্বামীর অনেকগুলি কনিষ্ঠা প্রণয়িনী বা পত্নী আছে।
১৯। যে নারী স্বামীকে অপদার্থ বলে বিবেচনা করে কিন্তু নিজে বেশ সুন্দরী।
২০। যে নারী নিজে বেশ গুণবতী কিন্তু স্বামী একেবারে অপদার্থ।
২১। যে নারী অন্য পতির সঙ্গে বিবাহ স্থির কিন্তু তখনও বিবাহিতা নয়।
২২। যে নারীর নায়কের স্বভাব প্রভৃতি তার গুপ্ত প্রেমিকের তুল্য।
২৩। যে নারী সর্বদা অপরিচিত লোকের মতে মত দিয়ে থাকে।
২৪। যে নারী বিনা কারণে স্বামী কর্তৃক অপমানিতা হয়েছে।
২৫। যে নারী সপত্নীদের দ্বারা অপমানিতা হয়েছে।
২৬। যে নারীর স্বামী প্রায়ই বিদেশে বাস করে।
২৭। যে নারী অতি কামুক।
২৮। যার স্বামী বেশি বাইরে সারাদিন থাকে।
২৯। যে নারীর স্বামী নিষ্ঠুর।
৩০। ভীরু, স্বভা, বেঁটে বিকলাঙ্গ ও বৃদ্ধ যে নারীর স্বামী।
৩১। মনিখারে পত্নী বা পত্নীগণ।
৩২। কোনও কৃষক পত্নী- যে নগরে বাস করে।
৩৩। যে নারীর স্বামী যৌন শীতলযুক্ত।
৩৪। যে নারীর স্বামীর গা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়ে থাকে।
পরনারীর লাভের উপায়
পরনারীর সহিত কামকেলীর বিভিন্ন উপায়
বাৎস্যায়ন বলেন, যে নারী তরুণী বা অবিবাহিতা, তাদের পেতে হলে ব্যক্তিগত চেষ্টায় এবং আত্নীয়স্বজনের চেষ্টায় পেতে পারে। কিন্তু যারা বিবাহিতা সে সব নারীকে পেতে হলে, কামদূতী বা ধাত্রী কন্যা পাঠিয়ে তাকে দিয়ে নানা গুণের কথা বলে, তার মন ভিজিয়ে তাকে পেতে হয়।
অবশ্য এর জন্যে প্রথম পরিচয়ের দরকার। পরিচয় করার জন্যে অভিলাষিতা নারীর পরিচিতা ধাত্রী কন্যা বা উপযুক্ত কোন ঘটকীয় প্রয়োজন হয়।
যখন কোন রকমে পরিচয় ঘটবে, তখন মাঝে মাঝে তার কাছে ঘোরাফেরা করা একান্তভাবে প্রয়োজন।
সে যে যে পথ দিয়ে যায়, সেই পথে ঘোরাফেরা করা প্রয়োজন। একা পেলে কথাবার্তা বলা উচিত। তার যে সব সখী বা বান্ধবী আছে তাদের সঙ্গে গল্প করা প্রয়োজন।
সখীদের সঙ্গে গল্প করতে করতে উক্ত নারীর সঙ্গে গল্প করাও সুরু হয়ে যেতে পারে।
সেই সময় এই নারীর সখীদের বা ঐ নারীকে কিছু বিলাস দ্রব্য উপাহার দেওয়া উচিত। এইভাবে ক্রমশঃ তার সঙ্গে আত্নীয়তা শুরু হয়ে যাবে।
যদি বিবাহিতা তরুণী হয় তবে তাহার কোনও ভাইকে খুড়তুতো, জ্যেঠতুতো বা মামাতো ভাইদের সঙ্গে কিছু ভাব করা দরকার।
যদি সেই পরনারীর কোন ছোট শিশু থাকে, তখন তাকে কোল থেকে তুলে নিয়ে নিজের কোলে দুলিয়ে আদর করলে ভাল হয়। এতে অনেক ঘনিষ্ঠতা আসে।
পরনারীর সহিত ঘনিষ্ঠতা
ক্রমে ক্রমে সামান্য ঘনিষ্ঠতার পর কথা বলার সুযোগ আসে। তখন সেই নারীর পাশে এসে নানা সাধারণ বা সামাজিক কথা বলবে। যখন দেখবে গল্প করতে তার কোন আপত্তি নেই, তখন ক্রমশঃ রসের গল্প অবতারণা করবে। যেমন অমুক লোক তার কন্যাকে ্লেহবশতঃ চুমু খেলো। তারপর, তার স্ত্রীর গালে মুখে চুমু খেলো। চুমু খেতে বেশ লাগে-এই সব বলে তরুণীর মন রসসিক্ত করবে।
প্রায়ই প্রত্যহই সুযোগ মত নিভৃতে বসে তরুণীর সঙ্গে এই সব কথা বলবে। বলতে বলতে মাঝে মাঝে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তরুণীর অঙ্গ স্পর্শ করবে।
যখন তরুণী বিশেষ আপত্তি করবে না তখন তার একটু উপরে উঠবে।
ক্রমশঃ ক্রমশঃ তার কাছে প্রেমের কথা জানাবে। অবশ্য যদি এর আগে অঙ্গ স্পর্শে বাধা ন দেয় তবেই তা করবে।
বসন নিয়ে নাড়াচাড়া করলেও যদি সে ঐ পুরুষের কাছে লজ্জাবোধ না করে, তা হলে জানবে তার মনে কিছু কামভাব জাগ্রত হয়েছে।
হঠাৎ যদি একদিন ঐ পুরুষ এই নারীর গাল টিপে ধরে তাতে নারী লজ্জিত হয় বটে, আপত্তিও একটু করে, কিন্তু তা পাঁচ জনকে জানাতে চায় না। তখন জানবে নারী প্রেমের পথে একটু করে, কিন্তু তা পাঁচ জনকে জানাতে চায় না। তখন জানবে নারী প্রেমের পথে একটু এগিয়ে গেছে।
যখন অধিকাংশ সময় ঐ নারী পুরুষটির সঙ্গে একত্রে নির্জনে থাকতে চাইবে-সরস গর্প গুনতে সে আগ্রহ প্রকাশ করবে।
তারপর ক্রমশঃ ঐ নারীর সঙ্গে যৌন কথা বলা সম্ভব হ’তে পারে।
পরনারীর সহিত যৌন সম্পর্ক
যৌন ভাব প্রকাশ করতে হলে পুরুষকে খুব ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হবে।
প্রথমে নারীকে দু-একটা বিদেশী বই, নানা গল্পের বই এবং সবার শেষে কোন যৌন বিষয়ক বউ উপহার দেবে।
তারপর থেকে জিজ্ঞাসা করবে তুমি ও বই থেকে কি পাঠ গ্রহণ করলে? তরুণী ধীরে ধীরে হয়ত উত্তর দেবে। তখন তাকে বিসতৃতভাবে কাম বিষয়ক গ্রন্থের বিষয়ে বর্ণনা করে বুঝিয়ে দিতে হবে।
ক্রমশঃ সেগুলি গা সহ্য হলে বলবে-আচ্ছা ধর আমি যদি তোমাকে জড়িয়ে ধরি ত কেমন লাগতে পারে?
ধীরে ধীরে তরুণী নিরুত্তর থাকলে গালে গাল ঘষবে, হাতে হাত ঘষবে, ধীরে ধীরে তার অনুমতি নিয়ে দেহ মর্দন করবে।
যে যখন বলবে, বেশ লাগছে।
তখন তার অনুমতি নিয়ে তার হাত পা জোর মর্দন করবে। দেখবে সে চুপ করে তা উপভোগ করছে।
তারপর তাকে সজোরে আলিঙ্গন করবে-খুব জোরে তা হবে। তারপরই আসবে চুম্বন। তাতেও যদি সে বাধা না দেয়, তখন তার সারা দেহ মর্দন চলবে, তার কামকেন্দ্র জোরে জোরে মর্দন করবে। স্তন নিপীড়ন যৌন কেন্দ্র বা যোনিতে হাত প্রয়োগ করবে।
তখন নিশ্চয়ই নারী পুরুষের পুরুষাঙ্গে হাত দেবে বা চাপ দেবে। এতে বুঝতে হবে সে নিশ্চয়ই কামার্তা হয়ে উঠেছে।
তখন পুরুষ নারীকে চিৎ করে শুইয়ে তার বুকের উপর উঠে শৃঙ্গার করবে। প্রথমে অন্য কোন আসন গ্রহণ করা উচিত নয়।
এই আসন বেশ ধীরে ধীরে এবং দীর্ঘক্ষণ করতে থাকবে।
এই আসন হলে পরে ধীরে ধীরে অন্য আসনও করা চলবে।
নারীর হাবভাব পরীক্ষা
নারীদের মধ্যে অনেক রকম নারী দেখতে পাওয়া যায়। কতকগুলি নারী আছে যারা মনের ভাব গোপন করে রাখতে পারে। তারা হয়ত গোপনে পরপুরুষকে মনে মনে ভালবাসে, মুখে কিন্তু প্রকাশ কখনও করে না।
আর কতকগুলি নারী আছে যারা ইংগিত দেখলেই রেগে ওঠে-গালাগালি করে। তাদের এড়িয়ে চলতে হবে। তবে যদি ঐ নারী একদিন গালাগালি দিয়ে পরে নীরব থাকে, তখন আর একবার চেষ্টা করে দেখা উচিত। তখন যদি ছুতা করে থাকে ত বুঝতে হবে, তার মনে কামের বীজ বপন হয়েছে কি না।
সাধারণতঃ কোন্ কোন্ নারী নতুন প্রেমিকের কুক্ষিগত খুব সহজে হয়?
(১) যে নারী এর আগে অনেক কাম চিহ্ন প্রকাশ করেছে।
(২) যে নারী প্রেমিককে নির্জনে তার স্তন খুলে দেখায়।
(৩) যে নারী পাশে শুয়ে কোন পুরুষের অঙ্গ মর্দন করে।
(৪) অঙ্গমর্দন করতে করতে যে নারী মাঝে মাঝে বেশ উত্তেজিত হ’য়ে উঠে।
(৫) পুরুষ কর্তৃক অঙ্গমর্দনে যে নারী বাধা দেয় না।
(৬) যে নারী পাশে শুয়ে ঊরুদেশ টিপলে কোনও রকম লজ্জা অনুভব করে না। যে ঘুমানোর ভাব করে চুপ করে পড়ে থাকে।
এই সব হতে হতে একটু এগালেই আপনা থেকেই নারী আলিঙ্গনের ইচ্ছা প্রকাশ করে।
অভিজাত নারীদের কাম ইচ্ছা পূরণ
অভিজাত রাজা জমিদারদের বাড়িতে একাধিক কর্ত্রী থাকে। তাদের সবাইকে রাজা বা জমিদার তুষ্ট করতে পারে না। তাছাড়া ধনী নারীদের মধ্যে কামের ভাব বেশি থাকে।
রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়ির মেয়েরা বাড়ির অন্তঃপুরে! তাই গোপনে কাম ইচ্ছা পূর্ণ করার পথ খোঁজে।
রাজবাড়িতে বা ধনীগৃহে নানা ধরণের নারী থাকে বা আসে। – নাপতানী, মালিনী, দাসী বা দাসীর বান্ধবী, প্রজাদের মেয়ে ও বৌ ইত্যাদি।
এর কিন্তু আসলে এক একজন এক একটি নারীর গোপন দূতী হ’য়ে ওঠে।
দূতীকে অর্থের দ্বারা হাত করে তার দ্বারা বাইরের মনোমত পুরুষ বা দূতীর বর্ণনা করা পুরুষের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ স্থাপন করে।
এই যোগাযোগের ফল ভালই হয়। সাধারণত, ধনী সুন্দরী নারীদের দিকে গোপন আকর্ষণের সুযোগ পেলে তারা রাজী হয়।
দূর সম্পর্কের আত্নীয়, সুন্দর প্রজা, সুন্দর কর্মচারী, সুন্দর চাকর এদের সঙ্গেও অনেক সময় গোপন প্রণয় স্থাপিত হয়।
দূতীদের মাধ্যমে মনের ইচ্ছার আদান্তপ্রদান হয়। পরে গভীর রাতে খিড়কীর দরজা দিয়ে পারিয়ে গিয়ে বাইরেও কোন গোপন স্থানে মিলিত হয়ে পূর্ণ উদ্যমে যৌন বাসনার তৃপ্তি করে।
অনেক সময় দেখা যায় ধনী সুন্দরী পরনারীকে হাত করে অনুগৃহীত লোকেরা মোটা অর্থ উপার্জন করে থাকে। এই ত গেল নারীদের কথা।
রাজা ও জমিদারদের কাম ইচ্ছা পূরণ
পুরুষেরাও গোপনে প্রজা বা গরীব লোকদের সুন্দরী স্ত্রী বা কন্যাকে উপভোগ করে।
জমিদার তার কর্মচারী গোমস্তা বা চঞ্চুকীর দ্বারা খবর পাঠায়। মোটা অর্থের প্রলোভনেও অনেক প্রজা তার স্ত্রী বা মেয়েকে রাজার দ্বারা ভোগ করায়। অনেকে এই সূত্রে সাহায্যে রাজদরবারে প্রতিষ্ঠাও পায়।
আবার অনেক কর্মচারী রাজার এই প্রভাব জানলে তাকে সুন্দরী নারীর খবর এনে দেয়।
রাজা ছলে, বলে, কৌশলে এই কর্মচারীর সাহায্য নিয়ে সেই কন্যাকে হাত করে উপভোগ করে। পরে সেই কর্মচারীও এসব কথা প্রচার করার ভয় দেখিয়ে গোপনে উক্ত কন্যাকে ভোগ করে।
প্রাচীন আমলে তাই কামুক রাজাদের অধীনে প্রজারা সুন্দরী স্ত্রী বা মেয়ে নিয়ে বাস করতে খুব ভয় পেতো্।
প্রাচীনকালে নাকি এমনও নিয়ম ছিলো যে, কোন প্রজা বিয়ে করে এলে তার তরুণী বৌকে প্রথম রাত্রে রাজবাড়ীতে দিতে হতো।
ঐ তরুণীকে রাজা উপভোগ করবে।
নর-নারীর শ্রেণীবিভাগ ও সঙ্গম
পুরুষদের শ্রেণীবিভাগ ও সঙ্গম
নারী ও পুরুষের সংযুক্ত রতিক্রিয়ায় উভয়ের যে চরম উল্লাস হয় তার অধিকাংশ নির্ভর করে মন ও শরীরের ওপর।
মনস্তত্ত্বের দিক দিয়ে বলা যায় নারী ও পুরুষের মন পরস্পরের দিকে যথেষ্ট আকৃষ্ট থাকলে অর্থাৎ উভয়ের ভালবাসা পরস্পরের প্রতি প্রবল হলে এই যৌন সঙ্গমের সূখ খুব উচ্চস্তরের হয়।
কিন্তু দেহাংশের ওপরেও এই সুখ কোধ অনেকটা নিভর করে। কেননা পুরুষের পুরুষাঙ্গ নারীর যোনির ভেতর প্রবেশ করে ঘর্ষণ করলে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে এবং সেই সময়ই পুরুষের সুখ সর্বোচ্চ মাত্রায় ঘটে। নারীরও যোনি ঘর্ষণে ও তথা থেকে রস স্খলনেই অধিক মাত্রায় সুখ অনুভূত হয়।
সুতরাং পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য ও নারীর যোনির বিস্তারের ওপরেই নারীর সুখ বোধ নির্ভর করে।
পুরুষের পুরুষাঙ্গ সাধারণতঃ তিনভাবে বিভক্ত।
১। শশকীয়। ২। বৃষকীয়। ৩। অশ্বকীয়।
শশকীয় লিঙ্গ
তার বচন হবে মিষ্ট, মন সদা প্রফুল্ল, সে দেখতে সুন্দর এবং কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট, তার মুখ গোলাকার এবং দেহ মধ্যাকারের।
তার হাত পা খুব হালকা এবং সুন্দর।
তার আত্নসম্মান জ্ঞান আছে। গুরু ও জ্ঞানীজনে ভক্তি থাকে।
এর পুরুষাঙ্গ ছয় আঙ্গুল লম্বা এবং বীর্য থেকে সুরভিগন্ধ বের হয়। সে খুব হালকাভাবে বেড়ায় এবং কামেচ্ছা মাঝে মাঝে উদ্ভূত হয়।
বৃষকীয় লিঙ্গ
এরূপ ব্যক্তিও কিছু পরিমাণে মধুরভাষী হয়। তার ঘাড় গর্দান বলিষ্ঠ, কর্কশ কণ্ঠস্বর, রক্তবর্ণ হস্ত পদ এবং গতি চমৎকার।
তার ভ্রু খাড়া এভং পেট কচ্ছপাকারে গোলাকার।
তার বীর্য এবং দেহ থেকে লবণাক্ত আস্বাদ বের হয়। তার গতি মাঝারি রকমের কিন্তু তিক্ত স্বাভাব। তার পুরুষাঙ্গ নয় আঙ্গল দীর্ঘ।
অশ্বকীয় লিঙ্গ
এরূপ লোক সাধারণতঃ বাচাল, মুখ হয় লম্বা। লম্বা ও সরু কান, মাথা ও অধর ওষ্ঠ সরু।
তার কেশ ঘন সন্নিবিষ্ট ও বক্র।
তার হাত পা খুব লম্বা এবং দৃঢ়।
তার লম্বা অঙ্গলি কিন্তু নখের চেহারা সুগঠিত।
তার স্বর যেন মেঘ গর্জন এবং সে দ্রুত পা ফেলে হাঁটে। তার শুক্র থেকে যেন মদের গন্ধ বের হয়। তার পুরুষাঙ্গ প্রায় বারো আঙ্গুল লম্বা হয়ে থাকে।
এইভাবে নারীর যোনিও তিনভাগে বিভক্ত।
১। হরিণী যোনি। ২। ঘোটকী যোনি। ৩। হন্তিনী যোনি।
হরিণী যোনি
এদের চটুল চক্ষুতে লাল রেখা থাকে। তাদের মুখ পদ্মের মত প্রফুল্ল, বাবলা জাতীয় গাছের ফুলের মত তাদের গাত্র চর্ম কোমল হয়।
এদের স্তনও হয় কদম্ব গাছের ফুলের মত গোলকার বিশিষ্ট ও নরম। গাত্র চর্ম হয় চম্পা পুষ্পের মত শ্বেতবর্ণ, টিয়াপাখীর নাকের মত তাঁদের নাসিকা তীক্ষ্ণ ও লম্বা, দন্ত হয় মুক্তার মতো এবং গমনধারা হয় রাজহংসীর মত। কোকিলের মত কণ্ঠস্বর হয় সুমধুর। হরিণীর মত হয় গ্রীবা। তাঁরা গুরুজন ব্রাহ্মণ, শিক্ষক ও দেবদেবীর প্রতি বিশেষ ভক্তিমতী হয়।
শুভ্র বসন পরিধান করে। খায় খুব অল্প পরিমাণে। যদিও এরা বিলাসবর্তী হয় না। তথাপি অনুভূতিতে বেশ পারদর্শিনী।
কথা বলে কম, ঘুমায় অল্প। তাঁদের যোনি ছয় আঙ্গুল গভীর এবং পদ্মগন্ধা।
ঘোটকী যোনি
কৃশা ও স্থুলকায় হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘকায় বহুবর্ণ বিশিষ্ট বেশভূষা এদের প্রিয় জিনিস। এরা ধৈর্যহীনা, এদের স্তন হয় শিথিল। চক্ষু হয় কাপর্দ ও শ্যামবর্ণ কিন্তু বাঁকা চোখে কটাক্ষ মারতে খুব পটু।
এরা তাড়াতাড়ি হাঁটে। পুরুষের সঙ্গে সহবাসে বড়ই প্রিয় এবং রতি কলায় দংশন আঁচড় এবং চিমটিতে বড়ই অগ্রসর।
সুবিধা হলে অত্যধিক মদ্য পান করতে পারে। এদের কণ্ঠস্বর কর্কশ এবং চিৎকার প্রবণ। লম্বা লম্বা দাঁত এবং খাঁড়া খাঁড়া চুল এদের বিশেষত্ব।
অত্যন্ত নিদ্রালু। এদের যোনি হয় নয় আঙ্গুল গভীর এবং মৎস্যা গন্ধ্যা।
হস্তিনী যোনি
এদের গতি ভঙ্গী হস্তিনীর মত। এদের আঙ্গুল হয় মাংসল এবং বাঁকা বাঁকা।
গ্রীবা হ্রস্ব এবং মাংসল হয়ে থাকে। ওষ্ঠাধর হয় পুরু পুরু। নিতম্ব বিশেষ চর্বিযুক্ত প্রচুর খাদ্য খেতে পারে। এরা হস্তিনীর মত নিদ্রা যায়।
এদের অঙ্গে বহু লোম থাকতে দেখা যায়, আচরণ হয় নির্লজ্জ। এর সর্বদাই পুরুষ সহবাসের জন্য প্রস্থত কিন্তু বেশির ভাগই দেখা যায় অর্থের বিনিময়ে।
এদের যোনি খুব প্রশস্ত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনও আকারের লিঙ্গ ধারণ করতে পারে।
পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য
পুরষের পুরুষাঙ্গ ছয়, নয় এবং বারো আঙ্গুল দীর্ঘ হয়ে থাকে এবং দৈর্ঘ্য অনুযায়ী স্থুলত্বও কম বেশী হয়ে থাকে।
নারীর যোনির দৈর্ঘ্য
নারীর যোনিও ছয়, নয় ও বারো আঙ্গুল হতে পারে। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী বা উত্তেজনায় এদের যোনির ব্যাস মাংসপেশীর ক্রিয়ার দরুন কম বেশী হতে পারে।
পুরুষের পুরুষাঙ্গ এবং নারীর যৌনাঙ্গ যদি সমান ব্যাসবিশিষ্ট ও দৈর্ঘ্যযুক্ত হয় তা হলে সঙ্গমকালে উভয়ে বেশ সমান আনন্দ পেতে পারে একে বলা হয় পূর্ণ মিলন বা সম আনন্দ।
কোন শশকলিঙ্গ পুরুষ যদি হরিণী যোনিবিশিষ্ট্য নারীর সহিত সঙ্গম কার্য্য করে অথবা কোন বৃষ লিঙ্গ পুরুষ যদি হস্তিনী নারীর সঙ্গে সহবাস করে-তা হলে পুরুষাঙ্গ ও যোনি ঠিক খাপে খাপে লাগতে পারে।
অসমান রতি
এই অসমান রতিক্রিয়া ছয়ভাগে বিভক্ত হয়-
১। শশকীয় পুরুষ ও ঘোটকীয় নারী। ২। ঘোটকীয়া পুরুষ ও হস্তিনী নারী। ৩। বৃষকীয় পুরুষ ও হস্তিনী নারী। ৪। ঘোটকীয় পুরুষ ও হরিণী নারী। ৫। ঘোটকীয় পুরুষ ও ঘোটকীয়া নারী।
অসমান সহবাসের অন্য বিভাগ
অসমান সহবাস আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত যথা-
যদি পুরুষের লিঙ্গ নারী যোনির গভীরতাকে ছাড়িয়ে যায় যেমন বৃষ জাতীয় পুরুষ হরিণী জাতীয় পরুষ হরিণী জাতীয়া নারীর যদি সঙ্গম হয় তাকে বলা হয় কলিন যোগ। কিন্তু ঘোটকীয় পুরুষাঙ্গ এবং হরিণীর যোনিকে বলা হয় কঠিনতর যোগ কেননা এই শ্রেণীর পুরুষ ও নারীর সহবাস অত্যন্ত কষ্টকর হয় ও বেদনাদায়ক হতে পারে।
অপরপক্ষে শশকীয় পুরুষ ও ঘোটকীয় নারীর সহবাস অথবা বৃষ ও হস্তিনীর সহবা হয় শিথিল যোগ। এই দুই প্রকার রতিক্রিয়ার মধ্যে বৃষ ও হস্তিনীর সহযোগ শিথিলতর যোগ হয় কারণ যদিও পুরুষাঙ্গ সম্পূর্ণভাবে যোনির মধ্যে হয়তো অর্ধেকের বেশি প্রবেশ করতে পারে না।
এক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গ ও যোনির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এমন ব্যবধান হয় যে এরূপ সহবাসে সাধারণত সুখ ও ও অনুভূতি কিছুই হতে পারে না।
আরামপ্রদ সঙ্গম
সর্বপ্রকার সঙ্গমের মধ্যে কেবল তিন প্রকার সঙ্গম সবচেয়ে বেশি আরামদায়ক।
কিন্তু কঠিন যোগ ও শিথিল যোগ সহবাস মাত্র মাঝামাঝি আনন্দ দান করতে পারে।
কিন্তু কঠিনতর যোগ ও শিথিলতর যোগ সব প্রকার রতির মধ্যে অধম প্রকৃতির। এতে সম্পূর্ণ সঙ্গম সুখ সম্ভবপর হয় না।
কিন্তু কঠিন যোগ ও শিথিল যোগের মধ্যে কঠিন যোগ অধম প্রকৃতির। এতে সম্পূর্ণ সঙ্গম সুখ সম্ভবপর হয় না।
কিন্তু কঠিন যোগ ও শিথিল যোগের মধ্যে কঠিন যোগ অপেক্ষকৃত ভাল, কারণ এতে যোনি অঙ্গ পুরুষাঙ্গের ঘর্ষণ বিশেষ আনন্দপ্রদ ও নারীর তৃপ্তিদায়ক।
এ সব সঙ্গমে নায়কের পুরুষাঙ্গ আরও কঠিনতর সন্নিবেশিত হলেই নারী তার উরুদ্বয় ছড়িয়ে দেয়-তাতে পুরুষের দীর্ঘাকার ও বৃহদাকার লিঙ্গ ভালভাবে প্রবেশ করতে পারে।
স্থুলাকার পুরুষাঙ্গ সংকীর্ষ যোনির মধ্যে প্রবেশ করাতে যোনির আগে ঘর্ষণ হয়-তাতে নারীর কাম অনেকটা শান্ত হয়- নারীর প্রবল সুখ ঘটে থাকে।
কিন্তু যদি তার উল্টো হয় অর্থাৎ পুরুষাঙ্গ যদি যোনির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী ছোট হয় তাতে নারীর সুখবোধ কিছুটা কম হয়ে থাকে সন্দেহ নেই।
কামোত্তজনার প্রভাব
নারী পুরুষের যৌন মিলনের সুখ, কাম উত্তেজনার প্রভাবের উপর অনেকটা নির্ভর করে।
পুরুষের কাম উত্তেজনা যদি প্রবল না হয়, তাদের সঙ্গমকাল যদি বেশীক্ষণ স্থায়ী না হয় অথবা সঙ্গমকালে যদি পুরুষের শুক্র কম বের হয়, তা হলে এই সহবাসে অংশভাগিনীর সুখ বেশী হয় না।
কিন্তু যাদের কাম তীব্র তাদের রতিক্রিয়ায় নারী বেশি তৃপ্তি পেয়ে থাকে।
দুর্বলকাম, মধ্যমকাম ও তীব্রকাম পুরুষ
যে সব পুরুষ নারীর চুম্বন, অধর দংশন, আঁচড়ানো, কামড়ানো বিশেষ পছন্দ করে না বা তাতে উত্তেজিত হয় না, সে সব পুরুষের দ্বারা যৌন মিলন করলে, নারী সুখী হয় না। এরূপ পুরুষকে বলা হয় দুর্বল কাম পুরুষ।
যে পুরুষের কাম উত্তেজনা মাঝারী রকমের তাকে বলা হয় মধ্যম কাম।
আর যে সব পুরুষের কাম উত্তেজনা খুব প্রবল রকমের এবং যার বীর্য্যপাত প্রচুর পরিমাণে ঘটে এবং যে পুরুষ তার সঙ্গে রতি ক্রিয়াকারিণী নারী চুম্বন, আলিঙ্গন ও আঁচড়ানো কামড়ানোতে বেশ আনন্দে যোগদান করে সে পুরুষকৈ বলা হয় কামুক পুরুষ বা তীব্র কাম হতে পারে।
বিভিন্ন প্রকার সমকাম ও অসমান কাম
সমকাম বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। দুর্বল, মধ্যম ও প্রবল কাম পুরুষের সঙ্গে যথাক্রমে দুর্বল, মধ্যম ও প্রবল কাম নারীর মিলন। অসমান কাম নারী ও পুরুষের মিলন হয় ছয় ধরনের।
সেগুলি হলো-
(ক) দুর্বল কাম পুরুষের সঙ্গে মধ্যমা কাম নারীর মিলন।
(খ) দুর্বল কাম পুরুষ, তীব্র কাম নারীর মিলন।
(গ) মধ্যম কাম পুরুষ, দুর্বল কাম নারীর মিলন।
(ঘ) মধ্যম কাম পুরুষ, তীব্র কাম নারীর মিলন।
(ঙ) তীব্র কাম পুরুষ, দুর্বল কাম নারীর মিলন।
(চ) তীব্র কাম পুরুষ, মধ্যম কাম নারীর মিলন।
রতিক্রিয়ার সময়
কতো সময় ধরে যৌনাঙ্গ মিলন হতে পারে সেই সময়ের ওপরেও নারী ও পুরুষের প্রভেদ নিরূপণ করতে পারা যায়। কেউ অল্পক্ষণ স্থায়ী সঙ্গমকামী; কেউ মধ্যকাল সঙ্গমকারী; কেউ বা বহুক্ষণ ব্যাপী সঙ্গমকারী।
একই সময় ব্যাপী সঙ্গম উভয় পক্ষে হলেই সেই সঙ্গম সর্বোৎকৃষ্ট বলে ধরা হয়।
স্ত্রী পুরুষ উভয়েরই দীর্ঘকাল স্থীয় সঙ্গম, মধ্যকাল ব্যাপী সঙ্গম বা অল্পকাল স্থীয় সঙ্গম হতে পারে। উভয় পক্ষেই কাল সমান হলে উভয়েরই সমস্থষ্টি ঘটে।
নারীর উল্লাস
কামশাস্ত্র লেখক উদ্দলক বলেন পুরুষের যেমন সঙ্গম শেষে বীর্য্যপাত ঘটে, নারীর সেরূপ ঘটে থাকে। পুরুষ যেমন রতিক্রিয়া আরম্ভ হওয়ার সময় থেকেই স্নায়বিক আনন্দ অনুভব করতে থাকে এবং কিছুক্ষণ ধরে রতিক্রিয়া করার পর তার স্থানীয় স্নায়ুগুলি এমন উল্লাসের সৃষ্টি করে যে বীর্য্যপাত হবার সঙ্গে সঙ্গে তার দেহ মনে সুখ বোধ চরম হয়ে ওঠে। সে আনন্দ ও স্নায়ু চাঞ্চল্য একেবারে অভূতপূর্ব ও সর্বাধিক হয়ে থাকে।
নারীর রতি ক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে বা আরম্ভে ততটা সুখ ও উল্লাস অনুভব করে না। শুধু যোনি নালীর মধ্যে যে কন্ডুতি বা চুলকানি তারই কথাঞ্চিত উপশম ঘটতে থাকে।
কিন্তু পুরুষের মত নারীর কোনও বীর্য্যপাত ঘটে না, শুধু রসস্রাব হয়। সেই রসস্রাবেও তাদের আনন্দ উপলব্ধি হয় বটে, কিন্তু পুরুষের বীর্য্যপাতকালীন আনন্দের মত অতোটা হয় না। নারীদের চরম উল্লাস অনেক সময় বীর্য্যপাতের আগে বা পরে ঘটতে পারে।
যদি ঠিক একই সময়ে তা হয়, তা হলে ঐ রতি ক্রিয়ায় নারী ও পুরুষের উভয়ের পক্ষেই খুব উল্লাসপ্রদ হয়।
রসস্রাব ও বীর্য
নারীর রসস্রাবেও কোন সন্তান সম্ভারক বীজ থাকে কিনা, ইহাই প্রশ্ন। যে সময় বাৎস্যায়ন তাঁর কামশাস্ত্র লেখেন, তখন কামশাস্ত্রবিদদের মধ্যে এ বিষয়ে অনেক মতভেদ ছিল।
অনেকে বলতেন যে, স্ত্রী যোনি পরিসৃত রসেও সন্তান উৎপাদক জীবাণু থাকে। তা না হলে স্ত্রী ও পুরুষের রতির ফলে সন্তান জন্মায় কি করে?
আবার একদল কামশাস্ত্রবিদ বলতেন নারীর যোনি নিঃসৃত রসে কোনও গর্ভ সঞ্চারক বস্তু থাকে না। এর মীমাংসায় অনেকদিন পর্যন্ত কেউ পৌছাতে পারেনি।
নারীর রস ও পুংবীর্যে পার্থক্য
আসল কথা পুরুষদের বীর্য্যপাতকালে যথেষ্ট আনন্দ সঞ্চায় হয় এবং সেই বীর্য্যে সন্তান উৎপাদক বীজ থাকে। নারীর যৌন অঙ্গ থেকে রসস্রাব হলে তাকে orgasm বলা হয়।
ঐ নারীর যথেষ্ট পুলক সঞ্চায় হয় বেট কিন্তু যতক্ষণ না তাদের যোনি দেশ থেকে উক্ত স্রাব বের হচ্ছে ততক্ষণ লিঙ্গ সঞ্চালন করাবার অভিলাষ চরিতার্থ হয় না। কিন্তু উহার সঙ্গে সঞ্চারের কোনও মৌলিক কারণ থাকে না।
এমনও দেখা যায়-নারীর যতক্ষণ না পর্যন্ত পুলক ঘটছে, ততক্ষণ পর্যন্ত হয়তো পুরুষ রতিক্রিয়া চালাচ্ছে। তাতে নারীর যোনিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে আনন্দদায়ক রসস্রাব ঘটল। কিন্তু তথাপি এরূপ ঘটনা বারবার অনেক দিন ধরে ঘটলেও উক্ত নারী গর্ভবতী হয় না।
সুতরাং গর্ভ হবে কিনা এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে পুরুষের বীর্য্যপাতের ওপর। ঐ বীর্য্যে সন্তান উৎপাদক বীজ থাকলেই তবে নারী গর্ভবতী হতে পারেন।
পূর্ণ তৃপ্তি
এমন ঘটনা প্রায় দেখা যায় যে, পুরুষের বীর্য্যপাতের পরেও নারীর সম্পূর্ণ যৌন তৃষ্ণা মেটে না। তখন এক পুরুষের বীর্য্যপাত ঘটলেও অন্য পুরুষকে সে ইচ্ছা করে, কাম চরিতার্থ বশতঃ নিজের উপরে সংলগ্ন করে।
পুরুষের বীর্য্যপাত ঘটলেই তার পুরুষাঙ্গ শিথিল হয়ে পড়ে এবং সে আর সেই নারীতে বা অন্য নারীতে সঙ্গম করতে চায় না।
নারীর কিন্তু অন্য রকম ঘটে। তার যোনি দেশ থেকে রস বের না হওয়া পর্যন্ত সে আবার রমণ আকাঙ্খা পরিতৃপ্ত করতে চায়। অনেক ক্ষেত্রে এ হেন নারীরা অন্য পুরুষও গ্রহণ করে থাকে।
সুতরাং বেশ কিছু বিলম্বে তার চরিতার্থ ঘটে। যখন তার যোনিদেশে যথেষ্ট পরিমাণে রসস্রাব ঘটে তখনই তার তৃপ্তি হয়ে থাকে।
নারী ও পুরুষের উত্তেজনায় পার্থক্য
পুরুষ রতি ক্রিয়ার প্রথমে যথেষ্ট উত্তেজিত হয়। কিন্তু একবার বীর্য্যপাত ঘটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আবার রতিক্রিয়ায় আর তার পূর্বের মত উত্তেজনা থাকে না।
নারীর উত্তেজনা কিন্তু ভিন্ন প্রকারের।
প্রথম রতিক্রিয়ায় সে বিশেষ আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু যখন রতি ক্রিয় কিছুক্ষন চলে তখন ক্রমশঃ তার আগ্রহ বাড়তে থাকে। পর পুরুষের বীর্য্যাপাত ঘটলেও নারীর রতি ক্রিয়ার আগ্রহ ক্রমশঃ বাড়তে থাকে।
এইজন্য কামশাস্ত্র লেখকেরা বলেন- নারীর সহিত রতিক্রিয়া আরম্ভ করতে হলে একেবারেই প্রথম থেকেই রতিক্রিয়া করা উচিত নয়। প্রথমে নারীর সঙ্গে কথাবার্তা বলা দরকার, তারপর তাকে চুম্বন, দংশন, নখচ্ছেদ ও আলিঙ্গন ইত্যাদি প্রাথমিক ক্রিয়া করা উচিত।
এ সকল প্রাথমিক রসালাপ অঙ্গ-মর্দন, অধর, চুম্বন ইত্যাদিতে যখন নারীর কামেচ্ছা প্রবল থেকে প্রবলতর হবে। তখন সঙ্গমের জন্য প্রস্থত হওয়া দরকার।
একেবারে দর্শন মাত্রেই রতিক্রিয়া আরম্ভ করা উচিত নয়। তাতে নারীর কামেচ্ছা তেন জাগ্রত হয় না। কাজেই উভয়ের পক্ষে রতিক্রিয়া তেমন আনন্দদায়ক হয় না।
রসাস্বাদন
এছাড়া একথাও মনে রাখা দরকার যে, নারীদেহ মন সাধারণতঃ খুব কোমল ও রসাস্বাদনে আগ্রহশীল হয়ে থাকে। তাদের সঙ্গে মধুর ও মিষ্টি আলাপ জমাতে হবে। তাদের মন সাময়িকভাবে অনেক কঠিন ও হিংস্র হলেও মাটি যেমন জল সেচন করতে করতে কোমল ও কর্ষণোপযোগী হয়ে পড়ে- তেমনি ঐসব হৃদয়গ্রাহী মিষ্ট কথা শুনে শুনে অন্ততঃ তাদের কঠিন মনও সঙ্গমে আকৃষ্ট হয়ে ওঠে।
তাই প্রত্যেক রতি ক্রিয়ার উপক্রমণিকা হিসেবে তাদের সঙ্গে মিষ্ট কথা, অঙ্গ মর্দন, চুম্বন ইত্যাদি আরামপ্রদ কাজ করে শেষে রতি ক্রিয়ায় ব্রতী হওয়া উচিত।
সমস্ত প্রিয় কার্যের শেষ কাজ হলো সঙ্গম বা দৈহিক মিলন। অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অলঙ্কারে ভূষিত না হলে যেমন মাথার মুকুট পরানো যায় না- এও ঠিক তেমনি।
শ্রেষ্ঠ কামতৃপ্তির উপায়
যাঁরা কাম বিজ্ঞানে বিশেষভাবে পারদর্শী, তাঁরা বলেন সাধারণতঃ চার রকম উপায়ে কামের পূর্ণ তৃপ্তি ঘটতে পারে।
১। কোনও কাজ অবিরত করতে থাকলে অনেকের নেশার উদয় হয়, যেমন শিকার করা, সঙ্গীত চর্চা করা, মদ্যপান করা, খেলাধূলা করা ইত্যাদি।
২। কাল্পনিক সঙ্গম সুখ-সত্যি সত্যিই যোনি প্রদেশে লিঙ্গ প্রবেশ ক্রিয়া ছাড়াও মনে মনে রতিক্রিয়ার চিন্তা করলে….আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করতে থাকলে-সুখ অনুভব হয়।
৩। কোন নারীর প্রতি কামক্রিয়া করা সুযোগ না থাকলেও সেই নারী বা অন্য কোন নারীর সঙ্গে কামনার সঙ্গম করলেও শ্রেষ্ঠ তৃপ্তি হতে পারে।
৪। ইন্দ্রিয় ভোজ জনিত সুখ- শরীরে পাঁচটি ইন্দ্রিয় আছে। যথা- চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক এদের তৃপ্তির উপায় করলেও মিলনের মত শ্রেষ্ঠ সুখ হতে পারে।
আলিঙ্গন শিল্প
কামশাস্ত্রে আছে প্রকৃত যৌন মিলনের আগে কতকগুলি কাজ করা একান্ত প্রয়োজন। তার মধ্যে সর্ব প্রধান হলো আলিঙ্গন। তাই আলিঙ্গনকে একটি শিল্প হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
কামশাস্ত্রবিদরা বলেন- সাধারণতঃ আট রকমের আলিঙ্গন পুরুষ ও নারী পরস্পরের প্রতি হতে পারে। এই আটভাবে নারী ও পুরুষ প্রাথমিক সুখ পায়। প্রত্যেকটি আলিঙ্গন আবার আট রকমের হয়- তাহলে মোট ৬৪ প্রকার আলিঙ্গন হতে পারে।
বাৎস্যায়ন বলেন- আলিঙ্গন ঠিক ৬৪ রকম। ইহাতে এক রকমের সঙ্গে অন্য রকমের কিছুটা মিল হতে পারে। তবুও কিছু না কিছু তফাৎ থাকবেই।
যেমন ছাতিম ফুল ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হলেও প্রত্যেক ফুলে সাতটি করে পূর্ণ থাকবেই- আলিঙ্গনও ঠিক তাই।
রতিক্রিয়ার প্রথম কাজ হলো আলিঙ্গন। একে অনেকে শৃঙ্গারও বলে থাকেন।
মোটামুটি আলিঙ্গন দুই ভাগে বিভক্ত-
(১) যে নারী কখনো রতিক্রিয়া করেনি তার সঙ্গে আলিঙ্গন।
(২) যে নারী রতিক্রিয়ায় অভিজ্ঞ তার সঙ্গে আলিঙ্গন।
প্রথম প্রকার আলিঙ্গন একটু চর্চা বা অভ্যাস করে সুসম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
দুইভাবেই দুজনের মধ্যে ভালবাসা হতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় ভাবে ভালবাসা হতে দেরী হয়। প্রথম প্রকার আলিঙ্গন চার প্রকার-
(১) স্পৃষ্টক (মৃদু স্পর্শ)
(২) বিদ্ধক (স্তনাগ্র দ্বারা খোঁচা দেওয়া)
(৩) উদ্ঘৃষ্টক (আস্তে ঘর্ষণ পূর্বক)
(৪) অবপীড়িতক (সজোরে ঘর্ষণ পূর্বক)
স্পৃষ্টক আলিঙ্গন
এতে নারী ও পুরুষের অঙ্গ পরষ্পরকে সমান স্পর্শ করতে পারে। কোনও নায়কা ঘটনাক্রমে কোনও লোকের সঙ্গে থাকতে পারে।
তখন নায়ক নায়িকাকে সামান্য স্পর্শ করে উঠে যায়। এই যে স্পর্শ আলিঙ্গন হয় তাকেই বলে স্পৃষ্টক আলিঙ্গন। এতে শুধু বোঝা যায় দু’জনের মধ্যে কোন আকর্ষন আছে কি-না।
বিদ্ধক বা বক্ষচাপ আলিঙ্গন
এই আলিঙ্গন সাধারণতঃ নারীর প্রথমে হয়ে থাকে। পুরুষকে নারী প্রথমে কোন নির্জন জায়গায় দেখতে পায়। যে কোন অছিলায় নায়িকা সেখানে যায়। সেখান থেকে কোন কোন জিনিস মাটি থেকে কুড়িয়ে নেবার সময় সে পুরুষের সঙ্গে তার স্তন ঘর্ষণ করে- এতে তার আলিঙ্গনের সুখ অনুভব করে। এটি সামনের বা পেছনের দিক থেকেও হতে পারে।
ঘর্ষণ বা উদ্ঘৃষ্টক আলিঙ্গন
এই আলিঙ্গণে নারী ও পুরুষ পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ঘর্ষণ করতে পারে। এই ঘর্ষণ আস্তে আস্তে কিন্তু অনেকক্ষণ হ’তে পারে।
যখন এটি দুই পক্ষেই খুব জোরে চলে তখনই একে বলা হয় উদ্ঘৃষ্টক আলিঙ্গন। যখন শুধু একজন চালায় তখন তাকে বলা হয় ঘৃষ্টক।
দৃঢ় ঘর্ষণ বা অবপীড়িতক আলিঙ্গন
যখন পুরুষ বা নারী কোনও দেওয়াল বা স্তম্ভে হেরান দিয়ে দাঁড়ান এবং জোরে জোরে পরস্পরকে ঘর্ষণ করে তাকে বলা হয় অবপীড়িতক আলিঙ্গন। এত দু’জনেই বেশ ভালভাবে অংশ গ্রহণ করে থাকে। দু’জনে পরস্পরকে জাপটে ধরলেও পূর্ণ আনন্দ হয়।
এই তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকার আলিঙ্গন হয়, তখন দু’জনের মধ্যে প্রেম ভাব হয়েছে- এমতাবস্থায় একজন অন্যজনকে ডেকে আনে বা তাকে বশে আনতে পারে।
কিন্তু প্রেমিক প্রেমিকা সাক্ষাৎ যৌন ক্রিয়ায় যে যে আলিঙ্গন ক’রে থাকে তাহা হলো নিম্নোক্ত চার প্রকার।
লতাবেষ্টিত আলিঙ্গন
এতে পুরুষ দাঁড়িয়ে থাকে এবং নারী লতার মত তাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। নায়িকা নায়ককে গলা জড়িয়ে ধরে থাকে। তার মুখ তুলে পুরুষের চোখের দিকে প্রেমাতুর ভাবে তাকায়। চুমু খাবার জন্যে পুরুষের মুখ নিচু করে ধরে। সে নিজের স্তন তখন তুলে ধ’রে পুরুষের বাসনা বৃদ্ধি করে।
বৃক্ষাধিরূঢ় আলিঙ্গন
পুরুষ দাঁড়িয়ে থাকে প্রেমিকা তার পায়ের উপর উঠে অন্য পা দিয়ে উরুদেশ জড়িয়ে ধরে।
এই অবস্থায় নারী নিজের যোনি পুরুষের লিঙ্গ মুণ্ডের কাছে ঘর্ষণ করার চেষ্টা করে। অথবা সে পুরুষের কোমর জড়িয়ে ধরে মুখে ভালবাসার গুঞ্জন করতে থাকে। এই সময় নায়িকা তার শরীর তুলে পুরুষকে চুম্বন করতে থাকে।
তিলতন্ডুল আলিঙ্গন
এই আলিঙ্গন নায়ক নায়িকা বিছানায় শুয়ে শুয়ে সম্পন্ন করে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ে উভয়ের দিকে ফিরে থাকে। নারী বা-হাত পুরুষের ডানদিকে গলিয়ে দেয়- ডান হাত পুরুষের বাঁ অঙ্গের উপরে রেখে দুই উরুদেশ পরস্পর সংযুক্ত করে। তাতেও নারী ও পুরুষ তাদের যোনি ও পরুষাঙ্গ পরস্পরের সান্নিধ্যে এনে ঘর্ষণ করতে পারে। এতে প্রচুর আনন্দ হয়।
ক্ষীর নীরক
দুধ আর জল যেমন একসঙ্গে মিশলে আলাদা করা যায় না- পুরুষ ও নারী এমনভাবে সংযুক্ত হবে যেন একজনে অন্যের অঙ্গ থেকে পৃথক করা না যায়। এতে নারী পুরুষটির কোলের উপর এসে এবং নারী পুরুষের উপর শুয়ে নিজেকে তার দেহের মধ্যে মিশিয়ে নেয়।
পুরুষ ও নারী রতিক্রিয়া আরম্ভ করার পর তৃতীয় ও চতুর্থ প্রক্রিয়া শুরু করে। এই সময়ে পুরুষের রুরুসাঙ্গ দৃঢ় ও আকারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং নারীর যোনিদেশ তখন রসস্রাব হতে থাকে। যাতে লিঙ্গমুন্ড বেশ আরামে যোনিরন্ধ্রে প্রবশ করতে পারে।
সুবর্ণাভ নামক লেখক আরও চার প্রকার আলিঙ্গনের কথা বলেছেন তাঁর প্রন্থে। তা হলো-
ঊরুপগৃহণ আলিঙ্গন
নারী পুরুষ পাশাপাশি শুয়ে থাকে। একজন অন্যের উরুদেশ বেশ আরামদায়কভাবে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে। যার উরু বেশী মাংসল সেই বেশী জোর দিয়ে জড়াতো পারে।
জগনোপগূহন আলিঙ্গন
এতে পুরুষ বিছানার উপরে চিৎ হয়ে শয়ন করে থাকে। নারী তার বুকের উপরে শুয়ে তার পদদ্বয় ও নিতম্ব বেশ কোর করে আঁকড়ে ধরে- তার যোনি পুরুষের পুরুষাঙ্গের উপর ঘর্ষণ করতে থাকে। এই সময় প্রেমিকা পুরুষকে চুম্বন, নখাঘাত ও অধর দংশন ক’রে উল্লাস অনুভব করে থাকে।
স্তন আলিঙ্গন
এই সুরত ক্রিয়ায়, নারী পুরুষের বুকের ওপর শুয়ে তার স্তনদ্বয় দ্বারা জোরে জোরে চাপ দেয়, পুরুষের বুকের ওপর নিজের দেহভার ন্যস্ত করে। কোমল স্তন মর্দনের জন্য পুরুষের বেশ আরামবোধ হয়ে থাকে। এরূপ রতিক্রিয়া দু’জনে সম্পাদন করতে পারে। পাশাপাশি শুয়ে এরূপ করা যায়।
ললাটিকা আলিঙ্গন
এরূপ রতিক্রিয়াতে নারী পুরুষের বুকের ওপর শয়ন করে অথবা পাশাপাশি শয়ন করে। চোখে চোখে মিলন হয় নারীর ওষ্ঠাধর চুম্বন করে পুরুষ আংটির মত জড়িয়ে ধরে।
দু’জনের কপালে কপালে ঘর্ষণ হয়। তাই এর নাম হয়েছে ললাটিকা।
পুরুষ ও নারী তাদের সমস্ত শরীর অপরের সঙ্গে মিশিয়ে যথেষ্ট আনন্দ উপভোগ করে।
এইসব নানা বিধ আলিঙ্গন ইত্যাদি দ্বারা নরনারীর কামেচ্ছা চূড়ান্ত জাগ্রত হ’য়ে থাকে- এতে রতি কাজের সুখ অনেক বেশী বৃদ্ধি পায়।
চুম্বন শিল্প
চুম্বন একটি শিল্প
নায়ক নায়িকা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরার পরেই দু’জনের মধ্যে শুরু হয় কামক্রিয়া। এই কামক্রিয়ার মধ্যে চুম্বন, স্তন নিপীড়ন, নখাঘাত ও দংশন আছে।
বাৎস্যায়ন বলেন- এসব কাম-ক্রিয়ার মধ্যে কোনটি সবার চেয়ে প্রশস্ত বা কার্যকরী তা নির্ভর করে নারী ও পুরুষ দু’জনের ইচ্ছার উপরে।
যে অঙ্গটি যে সুন্দর বলে বিবেচনা করে, তেমনি সেই অঙ্গকে উপভোগ করতে বেশি আগ্রহান্বিত হয়।
তবে এ্সব কাম-ক্রিয়া-যেমন চুম্বন, স্তন নিপীড়ন, নখাঘাত, দংশন, এ সব সাধারণতঃ মৈথুনের আগেই দু’জন করে থাকে। মৈথুনের পর এসবের প্রতি আর্কষণ থাকে না।
যখন কাম উত্তেজিত হয়, তখন কোন ক্রিয়া আগে বা পরে সে জ্ঞান থাকে না। তখন যে কাম-ক্রিয়া ভাল লাগে নায়ক নায়িকা তাই শুরু করে দেয়। নারীর ইচ্ছা এতে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
চুম্বনের স্থান
বাৎস্যায়ন বলেন- চুম্বন আরম্ভ হয় ললাট, সিঁথি, গন্ড, চঞ্চু আর পুরুষের বক্ষে, নারীর স্তনে, তারপর অধরে, তটে এবং মুখের ভেতরে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের লোকেরা কেউ উরু, কেউ বাহু, কেউ বা যোনিও চুম্বন করে থাকে। আসলে যে দেশে যে প্রথা সেইমত হয়ে থাকে।
চুম্বন পদ্ধতি
বাৎস্যায়ন চুম্বনের পদ্ধিতি ভালভাবে নির্দেশ করেছেন। তা হলো অধর দু’টি ফুলের মতই প্রস্ফুটিত ও কুঞ্চিত হয়ে প্রেমিক বা প্রেমিকার অধর বা স্তন সংলগ্ন হয়ে থাকবে।
অনেক রকমের চুম্বন আছে। অঙ্গের যে স্থানে ওষ্ঠধর দিয়ে চুম্বন কার্য করা হয় তার উপরেই তা নির্ভর করে।
ওষ্ঠ বা অধরের সঙ্গে ওষ্ঠ বা অধরের যোগ হলো শ্রেষ্ঠতম চুম্বন।
প্রাথমিক চুম্বন
যে নর-নারী কখনও কোনও যৌন সংসর্গ করেনি, তাদের পক্ষে চুম্বনের কতকগুলি নিয়ম আছে।
তা একে একে বলা হচ্ছে।
নিমিতক চুম্বন
যখন কোনও পুরুষ কোন নারীকে প্রথম স্বীকার করিয়েছে একটি একটি চুম্বন দিতে- তা হলো নিমিতক চুম্বন।
তখন নারী লজ্জায় অভিভূতা হয়ে পড়বে। লজ্জার মধ্যেও সে সঙ্কুচিতা ভাবে মুখ বাড়িয়ে চুম্বন করতে তার ঈস্পিত পুরুষকে সুযোগ দেবে। অধর বা ওষ্ঠ এগিয়ে দিতে কিন্তু বিশেষ আগ্রহ দেখায় না।
স্ফুরিতক চুম্বন
পুরুষ তার ওষ্ঠ অধরের মধ্যে নারীর অধর ধারণ করে। নারীও এরূপ করতে পারে- কিন্তু সামান্য পরিচয়- তাই লজ্জায় কামড়াতে পারে না।
থর্থর্ করে কাঁপতে থাকে। পুরুষ জোর করে চুম্বন করে, নারী যেন তা এড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে, কিন্তু তা নিজের ইচ্ছায় না। একেই বলে স্ফুরিতক চুম্বন।
ঘট্টিতক চুম্বন
ঘট্টিতক এমন একটি চুম্বন যাতে নারীই প্রধান অংশ গ্রহণ করে থাকে।
সে তখন একটু পরিচিত হয়েছে, লজ্জা তার সামান্য কমে গেছে।
সে তখন প্রেমিকের চোখ দু’টি নিজের করতল দ্বারা আবৃত করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে নিজের দু’টি চোখ বন্ধ করে।
তারপর অতি ধীরে অতি লজ্জায় দু’জনে পরস্পর পরস্পরকে চুম্বন করে থাকে।
নারী তারপর নিজের সুখে পুরুষের দুটি ওষ্ঠ নিয়ে ধীরে ধীরে চুষতে থাকে এতে সে অনির্বচনীয় আনন্দ লাভ করে।
চুম্বনের অন্যান্য প্রকাভেদ
সাধারণ ভাবে পুরুষ নারীর মধ্যে পরিচয় গভীর হলে তারা যে কয় প্রকারে পরস্পরকে চুম্বন করে থাকে তা এবারে বলা হলো।
সাধারণ রতি ক্রিয়ার আগে যেগুলি হয়ে থাকে, তা নিম্নে দেওয়া হলো।
সম চুম্বন
প্রেমিক, প্রেমিকা সোজাসুজি মুখে মুখ, ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুম্বন ক’রে থাকে। সেজন্য একে বলে সমচুম্বন।
তর্য্যক চুম্বন
এরূপ চুম্বনে পুরুষ নারীকে দৃঢ়ভাবে জড়িতে ধরে- তারপর চুম্বন করে।
দু’জনের ঠোঁট পরস্পর আড়াআড়ি ভাবে থাকে- তারপর সজোরে চুম্বন হয়।
তাই তাকে বলে তির্য্যক চুম্বন।
উদভ্রান্ত চুম্বন
পুরুষ একটি হাত দিয়ে নারীর অধর নিজের দিকে ফিরিয়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে তার চিবুক ধরে রাখে। তারপর তার দুটি ঠোঁটে চুমু খায়।
অবপীড়িতক চুম্বন
যখন পুরুষ তার দুটি ঠোঁট দিয়ে বেশ পীড়ন করে বা সজোরে চাপ দিয়ে নারীকে চুম্বন ক’রে থাকে থাকে তখন তাকে বলে অবপীড়িতক চুম্বন।
আর যখন জিহ্বা দ্বারা সেই চোষণ করে তখন তাকে বলে অধর পান।
আকৃষ্ট চুম্বন
যখন পুরুষ তার বুড়ো আঙ্গুল ও অন্যান্য আঙ্গুল নিয়ে নারীর অধর একটি গোলাকার বলের আকারে পরিণত করে- তারপর তা নিজের জিহ্বা দিয়ে চুষতে থাকে- তখন তাকে বলা হয় আকৃষ্ট চুম্বন।
চুম্বন প্রতিযোগিতা
বাৎস্যায়ন বলেন, কামক্রিয়ার আনন্দ পাবার জন্যে পুরুষ ও নারী চুম্বন প্রতিযোগিতা করতে পারে।
এর অর্থ হলো, পুরুষ ও নারী পরস্পর পরস্পরকে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুম্বন করবে।
তার আগেই প্রতিযোগিতা স্থির করে, কে বেশিক্ষণ চুম্বন করতে পারে।
সাধারণতঃ পুরুষ জয়ী হবে- তখন নারী কৃত্রিম তর্ক করবে। বলবে-অন্যায়ভাবে আমাকে হারানো হয়েছে।
তখন পুরুষ তাকে মিষ্ট বাক্যে ভুলিয়ে আবার চুম্বন প্রতিযোগিতা শুরু করবে।
এবারে নারীকে ইচ্ছা করে জয়ী করা হবে। তখন সে আনন্দে হাসবে, নাচবে, অঙ্গভঙ্গী করবে।
কিন্তু তখন সে যদি পুরুষকে ঠাট্টা করে, তখন রাগলে চলবে না।
উত্তর চুম্বিতা
এর উত্তরে অর্থাৎ পুরুষ হেরে গেলে সে রাগ করবে না। বরং নায়িকাকে আদর করে চুম্বন করবে- তাকেই বলে উত্তর চুম্বিতা।
সম্পুটক চুম্বন
দু’জনে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে এক প্রকার শিষ দেবার মত শব্দ করে চুম্বন করে- তাকে বলে সম্পুটক চুম্বন।
রাগোদ্দীপক চুম্বন
পুরুষ ঘুমোলে বা নায়িকা ঘুমোলে, অন্যজন ঘুম থেকে জাগাবার জন্য ঘন ঘন হাল্কা চুম্বন করে- তাকে বলে রাগোদ্দীপক চুম্বন।
অনেক সময় মিলন কালেও প্রেম বর্ধিত করার জন্যে এটি হতে পারে।
প্রতিবোধিক চুম্বন
নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারলে- কোনও মূর্তি, ছবি বা শিশুকে চুম্বন করে অপরকে বোঝান হয়। আমি তোমায় ভালবাসি। তাকে প্রতিবোধিক চুম্বন।
জিহ্বা যুদ্ধ
যখন পুরুষ বা নারী একজন অন্যজনের মুখে পরস্পর জিহ্বা প্রবেশ করিয়ে চুম্বন করতে থাকে, তখন বলা হয় জিহ্বা যুদ্ধ। এতে একে অন্যের মুখে জিহ্বা প্রবেশ করায়- দুইজন বার বার এই রকম করতে থাকে।
নারীর শরীরের কোন্ কোন্ স্থানে পুরুষ চুম্বন করতে পারে, তার নির্দেশও দিয়েছেন বাৎস্যায়ন।
১। গাল বা গণ্ডদ্বয়।
২। ওষ্ঠ-অধর।
৩। কপাল বা ললাট।
৪। মাথা ও চুল।
৫। চক্ষুদ্বয়।
৬। স্তনদ্বয় ও দন্তবৃন্ত সজোরে চুম্বন।
৭। কাঁধ, ঘাড়, বুক।
৮। নিতম্বদ্বয়।
৯। জঘনদ্বয়।
১০। কামাদ্রি ও যোনিপ্রদেশ।
শরীরের বিভিন্ন স্থান চুম্বন
অবস্থা অনুযায়ী আরও বিভিন্ন প্রকার চুম্বন প্রচলিত আছে-সেগুলির সম্বন্ধেও এখানে আলোচনা করা হচ্ছে।
অবস্থা অনুযায়ী চুম্বন
১। উদ্দীপক চুম্বন – ঘুম থেকে জাগাবার জন্য।
২। চলিতক চুম্বন – পুরুষ যখন কাজে ব্যস্ত থাকে তখন তাকে বিব্রত করার জন্যে চুম্বনকে চলিতক বলে।
৩। সঙ্কেত চুম্বন – যখন বাড়ি ফিরে পুরুষ দেখে নায়িকা রাগ করেছে বা কটট রাগে মুখ আচ্ছন্ন তখন ঘন ঘন চুম্বন।
৪। ছায়া চুম্বন – পরস্পর পরস্পরকে মনের ভাব জানাবার জন্যে ছায়াকে চুম্বন করা।
৫। জিজ্ঞাসার চুম্বন – যখন নারী পুরুষ পরিচিত, দু’জনে পাশাপাশি বসে বা শুয়ে আছে, তখন একজন অন্যজনের মনের ভাব জানবার জন্যে নারীর দেহে মৃদু হাত বুলোতে পারে, কিংবা কোনও স্থানে মৃদু চুম্বন করতে পারে। একে বলা হয় জিজ্ঞাসা চুম্বন।
৬। সুরত চুম্বন – সুরত চলার সময় দ্রুত বা ঘন ঘন পরস্পর পরস্পরকে চুম্বন করলে তাকে সুরত চুম্বন বলে।
নখাঘাত বা নখচ্ছেদ্য
নারী ও পুরুষ আলিঙ্গন ও চুম্বনের দ্বারা রতি ক্রিয়ায় যথেষ্ট উৎসাহী হয় ও তাতে অনুরাগ বৃদ্ধি হয়।
এখন এই দু’টি প্রক্রিয়া ছাড়া আরও বিভিন্ন প্রক্রিয়া আছে বা রতি ক্রিয়ার আগে দুজনের মধ্যে যথেষ্ট আনন্দ ও উল্লাস সঞ্চার করতে পারে। এগুলি হলো নখাঘাত বা নখচ্ছেদ্য, দংশনচ্ছেদ্য বা দংশন ইত্যাদি।
কখন নখাঘাত প্রয়োজন
নখাঘাত কখন কখন প্রয়োজন সে বিষয়ে এবারে বেশ ভালভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। নিম্নলিখিত সময় নখাঘাত করা প্রয়োজন্ত
১। সুরতের জন্য প্রথম মিলনে।
২। অনেকদিন পর পুরুষ বা নারী ফিরে এলে যে প্রবল মিলনেচ্ছা জাগে সে সময়।
৩। দীর্ঘ প্রবাস যাত্রার আগে।
৪। প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে কেউ কেউ ক্রুদ্ধ হলে।
৫। মদ্যপান করে নারী অত্যন্ত কাম বিহ্বল হয়ে পড়লে।
৬। ব্যক্তিগত ইচ্ছা।
যারা কাম ক্রিয়া করতে অত্যন্ত উত্তেজিত হয় তারা এ কাজ করতে পারে।
নখাঘাতের পরই কামুক ব্যক্তিরা মিলনের সময় দংশন করে।
বিভিন্ন প্রকার নখাঘাত
বাৎস্যায়ন নখাঘাতকে কতকগুলি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে তা বর্ণনা করেছেন। সে বিষয়ে এবারে একে একে আলোচনা করা হচ্ছে।
অঙ্কুরিত নখাঘাত
যে পুরুষের নখ মাঝারি রকমের, তারা নারীর চোয়ালে, অধরে বা স্তনাগ্রে নখ রেখে এসব স্থানে একটু ধীরে ধীরে চাপ দিতে পারে। তাতে নারীর অঙ্গে ব্যথা লাগে না-বরং এতে আনন্দকর ঝিনঝিনি লাগে-ঐ বিশেষ স্থানে বা সারা গায়ে কাঁটা দেয়। এতে নারীর কামোদ্রক তীব্র হয়। নারীর যে সব স্থান খুব কোমল সেখানেই এটি করা যায়। অনেক সময় কাম কলহের সময় এটি করা হয়।
অর্ধচন্দ্র নখাঘাত
এতে নখগুলি বাঁকা ও খুব ধারালো হয়- নারীর যৌনাঙ্গ এবং স্তনে এর দ্বারা আঘাত দেয়া হয়। এতে খানিকটা দাগ হ’তে পারে।
বৃত্তাকার নখাঘাত
যদি দু’টি অর্ধবৃত্তাকার আঘাত পরস্পর মুখোমুখি হয় তখন তা সম্পূর্ণ অঙ্কিত করে। এটি শরীরের যে কোন অংশে-বিশেষ করে কোমরে, নিতম্বে, নাভির তলায় হ’তে পারে।
সমরেখ নখাঘাত
এটি শরীরে যে কোনও স্থানেই ঘটতে পারে। সমান রেখায় একবার সামনে একবার পেছনে এইভাবে নখাঘাত ঘটে থাকে।
ব্যাঘ্র থাবা নখাঘাত
যখন নখাঘাত স্তনবৃন্তেরর উপর বাঁকা রেখায় অঙ্কিত হয়। ব্যাঘ্র থাবার মত দেখতে হয়- এটি সজোরে হতে পারে।
ময়ুর পদ নখাঘাত
যখন পুরুষের পাঁচটি আঙ্গুল স্তরে আঘাত ক’রে বৃন্তে মিলিত হয়, আবার পিছিয়ে যায়, তখন তা দেখতে ঠিক ময়ুরের পায়ের চিহ্নর মত হয়, তাই এই নামকরণ।
লম্ফমান হরিণ আঘাত
প্রথমে নারীর স্তনে নখাঘাত করা হয়, তারপর স্তনাগ্রে বা বক্ষে করা হয়। এইভাবে তা যখন কুব জোরে চাপ দেয়, তখন নারী ও পুরুষের কাম উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তখন তাকে এই নাম দেয়া হয়।
পদ্মপাতা আঘাত
যখন স্তনাগ্রে নখের আঘাত, নিতম্বের আঘাত, কোমরের আঘাত, উরু ও জঘনের আঘাত, এই পাঁচটি যখন একসঙ্গে থাকে তখন তা দেখতে পদ্মপাতার মত হয়। তখন তাকে এই নাম দেওয়া হয়।
স্মারক নখাঘাত
যখন কোন পুরুষ বিদেশ যাত্রার আগে তার প্রিয়া নারীকে তিন চারটি স্থানে জোরে জোরে নখাঘাত করে, তখন তাকে বলে স্মারক নখাঘাত। এর অর্থ হলো, আমি যে নখাঘাত করলাম তা তোমাকে যেন আমার কথা বার বার স্মরণ করিয়ে দিতে থাকে।
নারীদেহের বিভিন্ন নখাঘাতের স্থান
নারীদের নিম্নলিখিত স্থানগুলিতে নখাঘাত হ’য়ে থাকে। তা হলো
১। বগল
২। নারীর স্তন
৩। ঘাড় ও কাঁধ
৪। পৃষ্ঠ দেশের সর্বত্র
৫। নিতম্ব
৬। উরুদ্বয়ের সংযোগ স্থান
৭। যোনি স্থান
৮। গলা
কিন্তু সুবর্ণাভ বলেন্তনারী পুরুষ কামে উন্মত্ত হয়ে উঠলে তখন কোনও স্থান জ্ঞান থাকে না- তখন যে কোন স্থানে নখাঘাত করা যায়।
নখের আকৃতি
কামোন্মত্ত পুরুষের নখের আকৃতি খুব লম্বা হয়। সেগুলি করাতের মত ধারালো হয়-দু একটি জায়গায় কাটা দাগও থাকতে পারে।
কিন্তু যারা বেশি কামোন্মত্ত নয় তাদের নখ অর্ধচন্দ্রাকার হ’য়ে থাকে।
তাদের নখ ভোঁতা হয়-ধারালো হয় না।
উৎকৃষ্ট নখ
বাৎস্যায়নের মতে নিম্নলিখত নখগুলি খুব উৎকৃষ্ট প্রকৃতির হয়ে থাকে।
১। যাদের নখে সবুজ বা কালো দাগ নেই।
২। নখের উপরিভাগ সমতল।
৩। উজ্জ্বল নখ।
৪। পরিষ্কার নখ।
৫। খুব চওড়া নখ।
৬। যেগুলি শীঘ্র গজায় বা বাড়ে।
৭। খুব নরম নখ।
৮। বেশ চকচকে নখ।
বাৎস্যায়ন আরও বলেছেন, যারা বেশি নখাঘাত করতে পারে, রতিকালে তারা নারীদের কাছে বেশি আদরনীয় হয়। যে সব নারী স্বামীর অজ্ঞাতে প্রেম করে, তারা যাতে শরীরে নখাঘাত না পায় তা দেখা কর্তব্য-তরুণী নারীদের নখাঘাত করা উচিত নয়-কারণ তাতে ধরা পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
নখাঘাতের চিহ্ন ও দংশনাঘাতের চিহ্ন মানুষের কাম বাসনাকে প্রবল করে তোলে, এ কথা কামশাস্ত্রকাররা বলেছেন।
দংশন বা দংশনচ্ছেদ্য ও দেশাচার
যখন নারী পুরুষের কাম খুব চূড়ান্তস্তরে, তখন তারা শুধু নখাঘাত করেই তৃপ্ত থাকে না- সেই সঙ্গে তারা দংশনও ক’রে থাকে।
স্নায়ুর উত্তেজনা খুব বেশী হলেই মানুষ দংশন করে- তা ছাড়া করে না। কপাল, অধর, ঘাড়, গলা, বুক, স্তন, নিতম্ব, উরুদ্বয় ও যোনিদেশে দংশন করতে পারে।
দাঁতের গুণাবলী
দাঁত দিয়ে দংশন ক’রে প্রেম চরিতার্থ করতে গেলে দাঁতের কতকগুলি গুণ থাকা উচিত। তা হলো-
১। দাঁতগুলি এক পংক্তিতে থাকেব।
২। পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হবে।
৩। পান খেলে যেন সহজেই তা রক্তিম হয়ে পড়ে।
৪। আকৃতি যেন ভাল হয়, খুব বড় বা ছোট না হয়।
৫। বেশ সাজানো থাকবে।
৬। একটু তীক্ষ্ণ ধার হবে।
কিন্তু দাঁত বড় বা ছোট, এক পংক্তিতে নয় বা দেখতে কদাকার। দাঁত নষ্ট হয়েছে, পোকায় খাওয়া, মুখে দুর্গন্ধ বের হয়, এমন থাকলে কখনও প্রিয়াকে দংশন করা উচিত নয়।
দন্ত দংশনের প্রকারভেদ
সাধারণতঃ দন্ত দংশন আট প্রকারের হতে পারে। এবারে তা একে একে আলোচনা করা হচ্ছে।
গূঢ় দংশন
যখন দংশিত স্থানে অল্প পরিমাণে দাঁতের চাপ দেওয়া হয়, তখন তাকে গূঢ় দংশন বলা হয়ে থাকে।
স্ফীত দংশন
যখন একটু জোরে দংশন করা হয় এবং তার ফলে দংশিত স্থান ফুলে ওঠে তখন তাকে বলে স্ফীত দংশন।
বিন্দুমালা দংশন
নিচেকার সামনে দাঁত ও ঠোঁটের দ্বারা এমনভাবে দংশন করা হয় যে, সবগুলি দাঁতের দাগ দেখা যায়, তখন তাকে বলে বিন্দুমালা দংশন।
প্রবালমণি দংশন
যখন অধর ও ওপরের দাঁতগুলি দিয়ে দংশন করা হয়, তখন সেখানে ছোট একটি লাল দাগ হয়-দেখতে ঠিক প্রবালের মত তাই এই নাম।
প্রবাল মালা দংশন
যখন অনেকগুলি প্রবাল দংশন পাশাপাশি হয়ে একটি প্রবালের মালার মত দেখায়, তখন তাকে বলা হয় প্রবাল মালা দংশন।
ভগ্নমেঘ দংশন
যখন মুখ দিয়ে স্তন নিপীড়নর ক’রে মাঝে মাঝে দংশন করা হয়, তখন ছোট বড়, ভিন্ন ভিন্ন নানা আকৃতির দাগ হয়- তা দেখতে ছিন্ন মেঘের মত। তাই এই নাম দেওয়া হয়েছে।
বরাহ চর্বিক দংশন
যখন নারীর দেহের কিছুটা স্থান মুখে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে চর্বণ করা হয় এবং তারপর আবার অন্য অংশ এই ভাবে চর্বণ করা হয় তখন তাকে শূকর চর্বণ বা বরাহ চর্বিক দংশন বলে।
শেষ দুটি দংশন অবশ্য কাম খুব প্রকটিত হলে করা হয়-তা না হলে হয় না।
ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে ভিন্ন ভিন্ন কামক্রিয়া
বাৎস্যায়ন বলেন, যে দেশে যেমন কামক্রিয়ার প্রথা চালু আছে, সেই প্রথা অনুযায়ী নারীর সঙ্গে সহবাস করা পুরুষের উচিত-আবার নারীরও উচিত পুরুষের নিজ দেশে ব্যবহৃত বিভিন্ন অনুসরণ ক’রে চলা। তিনি বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
মধ্যপ্রদেশের অধিবাসীরা সুনীতির সঙ্গে সঙ্গম করে। নারীরাও খুব স্বাভাবিক সঙ্গম চায়, আঁচড়ানো, কামড়ানো ইত্যাদি পছন্দ করে না। তারা ওগুলি অসভ্য কাজ বলে মনে করে।
বাহলীক ও অবন্তী দেশের (উত্তরপ্রদেশ) নারীরা চুম্বন, দংশন ইত্যাদির কার্য্য পছন্দ করেন, কিন্তু রতি ক্রিয়ায় নিত্য নূতন নায়ককে বেশী পছন্দ করেন।
কুরুক্ষেত্র, পূর্ব মালব প্রভৃতি দেশের নারীরা আলিঙ্গন, চুম্বন, দংশন ইত্যাদি খুব ভালবাসে-কিন্তু কোন ক্ষত চিহ্ন রাখতে চায় না।
কঙ্কন ও গুজরাটের নারীরা অত্যন্ত কাম প্রবল ও প্রচুর পরিমাণে উপাচার পছন্দ করে। প্রসাধন এদের অতি প্রিয় জিনিস।
পাঞ্চাব ও সিন্ধু প্রদেশের নারীরা খুবই কামুক হয়-তারা যোনি-দেশে পুরুষের পুরুষাঙ্গ আমূল প্রবেশ অত্যন্ত পছন্দ করে। এমন কি পায়ু প্রদেশেও লিঙ্গ প্রবেশ করিয়ে আনন্দ পায়। আচড়ানো, কামড়ানো, নিপীড়ন সবই তারা খুব ভালবাসে। এমন কি একাধিক পুরুষকেও মাঝে মাঝে চায়।
অন্ধ্রপ্রদেশের নারীরা বড় কোমলমনা। তারা শুধু চুম্বন ও মিলন চায়। অন্যান্য উপাচারগুলি তারা মোটেই ভালবাসে না। কিন্তু পুনঃ পুনঃ মিলন তারা পছন্দ করে।
মহারাষ্ট্র – এ দেশের নারীরা সহবাসের কালে স্তনমর্দন, চুম্বন, দংশন ইত্যাদি কাম পরিচর্যায় বড় চতুরা হয়- তারা সহবাসকালে নানা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী ও বাক্যালাপ পছন্দ করে। যে পুরুষ এসব বেশী করতে পারবে সে মেয়েদের তত ভালবাসা পাবে। তারা বিহার (অর্থাৎ পুরুষের উপরে উঠে বিহার) সঙ্গম বেশ পছন্দ করে।
পাটনা – এ দেশের নারীরা যদিও খুব বেশি কামুক, তবে একটু লাজুক।
দ্রাবিড় দেশের- নারীরা সামান্য চুম্বন বা আলিঙ্গনেই খুব দ্রুত উত্তেজিত হয় ও সঙ্গম কামনা করে। তাদের যোনিও খুব দ্রুত সিক্ত হ’য়ে ওঠে।
উত্তরবঙ্গের-নারীরা কোমল আকৃতির। তারা হয়ত অশ্লীল কথা বলা, বেশি কঠিন উপাচার পছন্দ করে না।
পূর্ব কঙ্কন – এই অঞ্চলের নারীরাও খুব লাজুক ও নরম স্বভাবের। তারা সজোরে চুম্বন পছন্দ করে-কিন্তু সামান্য উপাচার চায় না। তারা প্রতি রাত্রে একবার সঙ্গম চায়- তার বেশী নয়।
বাৎস্যায়ন বলেছেন, বিবাহ বা মিলনকালে এইসব কথা মনে রেখে কামতৃপ্তি ও উপাচার স্থির করা অবশ্য উচিত।
প্রত্যক্ষ মিলন ও মিলনের আসন
সংবেশন বা প্রত্যক্ষ মিলন
বাৎস্যায়ন বলেন, নারী ও পুরুষের পরস্পর মিলনের আনন্দ উচ্ছাস পেতে হলে, প্রথমে পরিচয় লাভ, মৈত্রী, ক্রমে আলিঙ্গন, চুম্বন, নখচ্ছেদ্য, স্তন নিপীড়ন ইত্যাদি শৃঙ্গার করে, শেষে রতিক্রিয়া আরম্ভ করবে। এই রতিক্রিয়াই চরম আনন্দ (অন্য শরীরের) দান করায় একমাত্র প্রধান বস্তু। এ না হলে কোন পুরুষ বা নারীর চরম সুখ লাভ ঘটে না।
নর-নারীর সাধারণ মিলনের আসন
সাধারণতঃ নারী ও পুরুষের আঙ্গিক মিলন অর্থাৎ রতিক্রিয়ায় এইরূপ ঘটেঃ-
নারীর কোন বিছানার উপরে (মাটিতে পাতাই হোক বা চৌকি বা খাটের উপরেই হোক) শয়ন করবে। তার বুকের ওপর শয়ন করবে পুরুষ।
সঙ্গে সঙ্গে চুম্বন, আলিঙ্গন, নখচ্ছেদ্য করতে পারে- কিন্তু পুরুষের কর্তব্য নারীকে কাম উন্মত্ত ক’রে নেওয়া।
তারপর পুরুষ নারীর বক্ষ আবরণ ও কটি আবরণ একে একে উন্মোচন করে তাকে আও উত্তেজিত করে তার আবরণহীন যোনির মধ্যে নিজের পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করাবার চেষ্টা করে।
অনেক সময় এতে সফল হবার জন্যে পুরুষ তার শক্ত পুরুষাঙ্গ নারীর ভগাঙ্কুর ঘর্ষণ করে। নারীর এই ভগাঙ্কুর-যেখানে যোনি অঙ্গের দুটি ওষ্ঠ মিলিত হয়েছে- যেখানে একটি মটরের আকারের ক্ষুদ্র মাংসপিণ্ড থাকে। তাকে বলা হয় ভগাঙ্কুর। বর্তমানে যোনি বিজ্ঞানীরা একে বলেন ঈষরঃড়ৎরং.
এটি নারীর একটি উত্তেজনাপূর্ণ প্রত্যঙ্গ- এই ভগাঙ্কুর মর্দনে নারী চরম উত্তেজিত হয়ে থাকে। পুরুষের পুরুষাঙ্গ স্পর্শে বা ঘর্ষণে এটি প্রবল উত্তেজিত হ’য়ে উঠে। পুরুষের দৃঢ় পুরুষাঙ্গ ঘর্ষণ করলে ভগাঙ্কুরে যে অনুভূতি হয়, তাতে যোনির মধ্যে রসঃস্খলন হয়ে থাকে।
তখন পুরুষ অনেক সহজে নারীর যোনির মধ্যে নিজের কঠিন পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করাতে পারে। এতে ক্রিয়াশীল পুরুষ ও নারীর বেশ আনন্দ হয়। এই সঙ্গে একবার সামনে একবার পেছনে পুরুষাঙ্গ সঞ্চালন করলে তাতে নারীর আনন্দ আরও বেশি হয়ে থাকে।
এইভাবে কিছুকাল সাধারণ রতিক্রিয়া চালালে পুরুষাঙ্গ থেকে বীর্য্য নামক পদার্থ বের হয়ে যায়। এতে যে কেবলমাত্র পুরুষের আনন্দ হয় তা নয়-নারীরও যথেষ্ট আনন্দ বোধ হয়ে থাকে। পুরুষের বীর্য্যপাতের সময় নারীর শরীর থেকেও এক প্রকার রসস্রাব ঘটে থাকে।
অন্যান্য সংবেদন ভঙ্গী
অন্যান্য সংবেদন ভঙ্গী প্রয়োজন হয় দুটি কারণে-
১। যদি পুরুষাঙ্গ বড় বা মোটা হয় এবং স্ত্রী যোনি ছোট হয়।
২। যদি যোনি শিথিল বা বড় হয় এবং পুরুষাঙ্গ ছোট হয়ে থাকে।
বড় পুরুষাঙ্গের উৎফুল্লক আসন
নারী যদি পিঠের উপরে শয়ন ক’রে তার নিতম্ব বা পাছা তুলে ধরে- উরুদ্বয় পরস্পর থেকে ছড়িয়ে থাকে- তা হলে তাকে বলা হয় উৎফুল্লক আসন। এই অবস্থায় নারী তার পাছার তলে একটি বালিশ রেখে যোনি বেশ ফাঁকা করতে পারে । এই অবস্থায় পুরুষ নারীর কোমর দুহাতে জাপটে ধরে জোরে করে তার লিঙ্গকে যোনি মধ্যে আমূল প্রবেশ করাতে পারে। নারী যোনির গভীরতল প্রদেশে প্রবেশ করিয়া একবার সামনে একবার পেছনে ইন্দ্রিয় সঞ্চালন করলে নারী খুব বেশি আনন্দ পায়। তবে যাতে নারীর যোনিতে আঘাত না লাগে তা দেখতে হবে।
বিজুমিভক আসন
এই ভঙ্গিমায় নারীকে তার জানু গুটিয়ে তুলে, উরুদ্বয় তুলে, উরুদ্বয় উঁচু করে এবং পরস্পর থেকে ছড়িয়ে দিয়ে তার যোনি একেবারে ব্যাদিত মুখ করে দিলে পুরুষের সুবিধে হতে পারে।
ইন্দ্রানিক আসন
ইন্দ্র পত্নী শচীদেবী এই আসন করতেন বলে তার এই নাম। নারী তার হাঁটু এবং উরুদ্বয় এমনভাবে জড়িয়ে ধরবে, যাতে নারীর কোমরের দিকে সেগুলি গিয়ে লেগে যায়। এতে একটি সাধারণ নারী, হস্তিনী জাতীয় নারীর মত সুখদান করতে পারে।
শিথিল যোনির আসন
এবারে শিথিল যোনি রতির বিভিন্ন ভঙ্গির কথা বলা হবে।
এই রতিতে প্রধান যা দেখা উচিত তা হলো-নারী বা পুরুষের মধ্যে ব্যবধান। নারীর যোনি শিথিল না পুরুষাঙ্গ অস্বাভাবিক ছোট।
এই অবস্থায় পুরুষাঙ্গ যদি ঢল্ ঢলে ভাবে যোনির ভেতরে প্রবেশ করে এতে তা ব’লে নারী পূর্ণ তৃপ্তি পেতে পারে না।
এখানে উচিত হলো নারীর যোনিতে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করার পর যোনি শক্ত করা-যেন এঁটে পড়ার জন্য পুরুষ আনন্দ পায়।
এই অবস্থায় আরও বিভিন্ন আসন আছে।
সম্পূটক আসন
এতে নারী ও পুরুষ তাদের উরুদ্বয় ও পদদ্বয় সম্পূর্ণ ছড়িয়ে দেবে (অর্থাৎ লম্বা করে দেবে)-তারপর পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে শয়ন করবে। যদি পাশাপাশি শুয়ে জড়িয়ে ধরে তা হলে পুরুষাঙ্গ যোনিতে প্রবেশ করিয় উরু-পা লম্বা করে ছড়িয়ে ধরবে। একে ইংরাজীতে Side Clasping attitude ব’লে অনুবাদ করা হয়েছে। আর যদি নারীর বুকের উপরে পুরুষ শয়ন করে তাকে বলা হয় Back clasping attitude.
প্রচাপ আসন
যদি নারী পুরুষের সঙ্গে জড়াজড়ি করে শুয়ে পুরুষের পুরুষাঙ্গ নিজের যোনির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে উরুদ্বয় খুব জোরে চেপে ধরে, তাহলে তাকে বলে প্রচাপ আসন। এই ভঙ্গিতে সঙ্গমকালে অনেক সময় পুং ইন্দ্রিয় বেরিয়ে আসে-তখন পুরুষের উচিত আবার তা যোনির মধ্যে প্রবেশ করানো।
অর্দ্ধবৃত্ত আসন
পুরুষ আপন লিঙ্গ নারীর যোনি মধ্যে প্রবেশ করিয়ে তাকে ভাল ভাবে জড়িয়ে ধরবে। নারীও তাই দুই উরু বিপরীত দিকে রেখে পুরুষাঙ্গ খুব জোরে চেপে ধরবে। যাতে লিঙ্গ বের হয়ে যেতে না পারে, এই আসনকে বলা হয় অর্দ্ধবৃত্ত আসন। এতে যোনি বেশ সঙ্কুচিত হয়ে আসে ও নারী বেশ আরাম অনুভব করে।
ক্রান্তাসন
এই ভঙ্গিতে ঘোটকির মত নারীও পুরুষের পুরুষাঙ্গ যোনির ভেতরে প্রবেশ করিয়ে এত জোরে উরু দুটি বিপরীত দিকে এনে উরু দিয়ে চেপে ধরে, যে পুরুষাঙ্গ কিছুতেই যোনি থেকে বের হতে পারে না। বাৎস্যায়নের মত অন্ধ্র প্রদেশের নারীরা এরুপ বিহার করতে খুবই অভ্যস্ত ছিল।
উপরের লেখা আসনগুলি ছারাও আরও নানা আসনের বিষয়ে এবার বলা হচ্ছে।
ভগ্নক আসন
এই ভঙ্গিমায় যখন কোনও হস্তিনী নারী তার উরুদ্বয় একতিএত করে পা দুটি মাথার দিকে উল্টে দেয় এবং পুরুষ তার উরুদ্বয়কে ফাঁকা করে নিজ লিঙ্গ যোনিত প্রবেশ করায়, তাকে বলা হয় ভগ্নক আসন।
জৃম্ভিতক আসন
এই ভঙ্গিতে পুরুষ নারীর উরু দুটি বেঁকিয়ে নিজের উপর তুলে নেবে তারপরে রতি সুরু করবে।
উৎপীড়িতক আসন
এতে নারী উরুদ্বয় ও জানু বেঁকিয়ে পুরুষের বুকের ওপর রাখে এবং পুরুষও তার হাত দুটি দিয়ে নারীর কটিদেশে চেপে দরে এই ভঙ্গিমায় রতি সুরু করে। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে উৎপীড়িতক।
অর্দ্ধ উৎপীড়িতক আসন
যখন নারীর এক পা লম্বা থাকে আর এক পা পুরুষের বুকের ওপর থাকে, তখন তাকে অর্দ্ধ উৎপীরিতক বলা হয়।
বেনু বিদারিতক আসন
এই ভঙ্গিতে নারী তার এক পা পুরুষের কাঁধের ওপর চাপায় আর এক পা লম্বা করে রাখে। এই ভঙ্গিমায় একবার এক পা, আর একবার অন্য পা পুরুষের কাঁধের ওপরে চাপান চলে।
শূল চিত্রাতক আসন
এই ভঙ্গিতে নারী এক পা লম্বা করে বিছানায় রাখেবে আর এবং অন্য পা বেঁকিয়ে তার নিজের মাথায় ঠেকবে। এই ভঙ্গিমা আয়ত্তে আনতে একটু অভ্যাসের প্রয়োজন হয়ে থাকে সন্দেহ নাই।
কর্কটক আসন
যখন নারী তার পা গুটিয়ে উরুর সঙ্গে যোগ করে এবং পুরুষের পাছার তলদেশ জড়িয়ে ধরে তার গোড়ালি নিজের পাছায় রাখে এবং অনেক সময় হাঁটু গেড়ে সুরত আরম্ভ করে। তখন এই ভঙ্গির নাম কর্কটক আসন।
পীড়িতক আসন
যখন নারী বিছানায় শুয়ে তার উরুদ্বয় তুলে ছড়াইয়া দেয় এবং একবার এক উরু অন্য উরুর ওপর অদলবদল করে চাপিয়ে দেয়, তখন তার নাম হয় পীড়িতক আসন।
পদ্মাসন
এই আসনে নারী বাঁ পা মুড়ে পায়ের পাতা ডানদিকের উরুর ভাঁজে লাগিয়ে দেয় এবং তার ডান পাও মুড়ে বাঁ পায়ের উরুর ভাঁজে লাগিয়ে থাকে। তারপর পুরুষ তার ইন্দ্রিয়টি যোনি মধ্যে প্রবেশ করায়, এর নাম পদ্মসন।
পরাবৃত্তক আসন
এই অবস্থায় নারী উপুড় হ’য়ে বুকের ওপর শয়ন করবে। পুরুষ তার উপরে শয়ন করে পেছন দিক থেকে যোনির মধ্যে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করাবে।
দন্ডায়মান বিভিন্ন আসন
উপরের সব কটি ভঙ্গিই হ’য়ে থাকে বিছানায় শোয়া অবস্থায়। আরও নানা প্রকার মিলন করা যায়।
এগুলি আবার জলের মধ্যে দণ্ডায়মান ভাবেও করা যায়- তবে বাৎস্যায়ন জলকেলি পছন্দ করেন না।
এই সব দণ্ডায়মান আসনগুলি এবারে বলা হবে।
ব্যায়ত সম্মুখ আসন
দণ্ডায়মান নারী ও পুরুষ মুখোমুখি থাকবে। নারী এক পা তুলে ধরবে-পুরুষ তার যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশ করাবে-এর নাম ব্যায়ত সম্মুখ আসন।
দু’তল আসন
উপরের অবস্থায় নারী তার হাঁটু দুটি মুড়ে তার পা দুটি পুরুষের পায়ের উপর রাখবে। এই অবস্থায় পুরুষাঙ্গ যোনি মধ্যে প্রবেশ করাবে।
জানু কর্পূরা আসন
নারী তার নিজ হসে- দ্বারা হাঁটু দুটি মুড়ে ধরবে- পুরুষ তার কনুই দিয়ে নারীকে তুলে ধরে সঙ্গম শুরু করবে। এর নাম জানু কর্পূরা আসন।
অবলম্বিতক আসন
যখন পুরুষ কোনও দেয়ালে বা থামে আশ্রম করে- বা তাতে হেলান দিয়ে দাঁড়াবে-নারী এগিয়ে গিয়ে পুরুষের সামনে দাঁড়াবে। পুরুষ তার নিতম্ব ধরে তুলে নেবে। তারপর যোনিতে লিঙ্গ সংযুক্ত করে কটি চালনা করবে।
ধেনুক আসন
নারী তার হাত পা চারটিই মাটির উপরে রেখে দেবে এবং পুরুষ তাকে দুই হাতে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরবে। ধেনুর মত থাকে ব’লে একে বলা হয় ধেনুক আসন্তঅর্থাৎ গাভীদের মত আসন।
সংঘটক আসন
যখন একজন পুরুষ দুটি নারীকে একই বিছানায় শুইয়ে রমণ করে তখন তার নাম সংঘটক আসন। এখানে দু’জনেই উপুড় হয়ে শোবে পাশাপাশি ভাবে। পুরুষ একবার একজনের সঙ্গে শৃঙ্গার করবে অন্যবার ওর সঙ্গে শৃঙ্গার করবে আর একজনকে রমণ করবে।
একাধিক নারী একত্রে সঙ্গম
এটি বর্তমানে আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ হলেও বাৎস্যায়নের কালে চালু ছিল। এই অবস্থায় একটি নারী চিৎ অন্যটি উপুড় হয়ে শোবে এই ভাবে সঙ্গম করতে হলে খুব দ্রুত লিঙ্গ চালনা করতে হতো- অথচ পুরুষের বীর্য্যপাত হতো না-বিশেষ করে রাজারা একাধিক পত্নীর সঙ্গে এইভাবেই সঙ্গম করে থাকতেন। এর সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, এতে দ্রুত একাধিক নারীকে তৃপ্ত করা যায়।
বাৎস্যায়নের সময়ে স্ত্রীরাজ্য আসামে আবার একই নারীর বহু পুরুষ সঙ্গমও চালু ছিল-যেমন দ্রৌপদীর পাঁচজন স্বামী ছিল। বর্তমানে তা নেই-তাইও বিষয় আলোচনা করা হলো না।
শীৎকার ধ্বনি
সঙ্গমকালে মুখে নানারকম শব্দ
নারী পুরুষের মিলনের সময় নারী থাকবে ক্রিয়াহীন্তপুরুষ নারীর বিভিন্ন অঙ্গ সংবাহন করবে-তার সঙ্গে মিলন চলবে। পূর্ণ আনন্দ নারী পেলে তার মুখ দিয়ে নানারকম ধ্বনি বা আনন্দ শব্দ বের হবে। যেমন আঃ আঃ ইঃ ইঃ ওঃ ওঃ ইত্যাদি।
নারীর দেহে টিপুনীর স্থান
১। হাতে চেটো।
২। সম্পূর্ণ বাহু।
৩। পায়ের চেটো।
৪। উরুদ্বয় ও পায়ে মাংসল ভাগ।
৫। ভগদেশ বা যোনি স্থান।
৬। ভগাঙ্কুর।
যখন মিলনের পূর্বে বা সঙ্গে সঙ্গে এই মৃদু শীৎকার ধ্বনি হয়-তখন নারী ও পুরুষ নানা প্রকার শব্দ করে থাকে। একে আনন্দের শীৎকার ধ্বনি বলে। নারী ও পুরুষ ভীষণ কামোন্মত্ত হলে এ রকম শব্দ হতে পারে।
নানা প্রকারের শীৎকার ধ্বনি
১। হিঙ্কার যা নাসিকা উত্থিত।
২। স্তনিত- অনেকটা মৃদু মেঘ গর্জনের মত শব্দ।
৩। কৃজিত-আসে- আসে- হং হং বা হিং হিং ধরণের শব্দ।
৪। রুদিত-এটি আসে- আসে- কান্নার শব্দের মত।
৫। সুৎকৃত-এটি রতি কার্যের পর পরিশ্যান্ত হবার শব্দ-সেই সঙ্গে বের হ’বে কথা-‘শিগগীর শিগগীর’-কিন্তু কথাও শীৎকৃতের মধ্যে গণ্য।
৬। দ্যুৎকৃত-জিহ্বা ও তালুর মিলিত শব্দ।
৭। ফুৎকৃত- ঠিক ফু দেবার মত এই শব্দ-সেই সঙ্গে বের হবে ঠিক কিছু কথা- ও গো মা-ছেড়ে দাও-মরি মরি আঃ-পারছি না ইত্যাদি নানা শব্দ।
এছাড়া বিভিন্ন শব্দ হ’তে পারে-যেমন পাখির কূজনের শব্দ-মৌমাছির শব্দ-হরিণীর শব্দ-আরও নানা শব্দ।
অবশ্য বীর্য্যপাত হয়ে যাবার সময় বা পরেও পুরুষ অনুরূপ নানা শব্দ করতে পারে। কিন্তু পুরুষের লক্ষ্য রাখতে হবে-যেন নারীর শব্দ আগে বের হয়।
শীৎকারের প্রয়োজনীয়তা
পুরুষ সাধারণতঃ নারীর চেয়ে বলশালী, তাই সে সহসা উত্তেজিত হয়।
নারীকে শৃঙ্গার তৃপ্তি যে যত তাড়াতাড়ি পরিপূর্ণ করতে পারে, শীৎকার তত আগে বের হবে নারীর মুখ থেকে।
শীৎকার বা রতির আনন্দ শব্দ নারীর মুখ থেকে বের হ’লে তা সার্থক রতি। তা যদি না হয়, তবে রতি অসার্থক।
বভিন্ন উপাচার বা অত্যাচার
শীতকার বের হবার জন্যে নারী দেহে বিভিন্ন উপাচার বা অত্যাচার প্রয়োগ দরকার।
(১) কিল ব্যবহার। (২) বিদ্ধক স্তনে আঙ্গুল বিদ্ধ করা। (৩) করতলি-একসঙ্গে অনেকগুলি আঙ্গুল দ্বারা নারীর মাথায় আঘাত করা হয়। (৪) সঙ্গম শিখা-আঙ্গুল দিয়ে নারীর স্তনবৃন্ত নিপীড়ন ও স্তন তুলে ধরা।
বাৎস্যায়ন বলেন- মিলনে এসব উপাচার প্রয়োগ করা উচিত কেবল নারী যেন বেশী ব্যথা না পায়।
বিপরীত বিহার
নারী পুরুষের মিলনের সাধারণ নিয়ম হলো এই যে, নারী বিছানার উপরে চিৎ হয়ে শেঅবে-উপরে উঠে পুরুষ বিহার করবে।
কিন্তু যদি পুরুষ চিৎ হ’য়ে শয়ন করে-নারী তার উপরে উঠে বিহার ক’রে থাকে, তবে তাকে বলা হয় বিপরীত বিহার।
বিপরীত বিহারের কারণ
১। পুরুষের অনিচ্ছা বা সামান্য ইচ্ছা।
২। পুরুষের রতি ক্লান্তি।
৩। পুরুষ রতি অনিচ্ছা।
৪। পুরুষ নিজেকে নারীর হাতে ছেড়ে দিতে চায়।
৫। একই পদ্ধতির পরিবর্তন।
৬। অনেক পুরুষেরই এই বিহার পছন্দ হয়।
বিপরীত বিহারের বিভিন্ন পদ্ধতি
১। শুয়ে শুয়ে ইন্দ্রিয় উত্তেজিত করবে নারী তার বুকের উপর শয়ন ক’রে, যোনি মধ্যে লিঙ্গ প্রবেশ করাবে।
২। পুরুষ শায়িত, নারী বসে তার যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশ করাবে।
৩। পুরুষ দণ্ডায়মান নারী কায়দা করে যোনি মধ্যে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করাবে।
৪। পুরুষ বসে নারী তার উপরে বসে পুরুষাঙ্গ নিজ যোনিতে প্রবেশ করাবে।
নারীর কাম উত্তেজনা ও তৃপ্তি
নারীর কাম উত্তেজনা
নারীর কাম উত্তেজনা দ্রুত কি ভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়েও কামশাস্ত্রে আলোচনা করা হয়েছে।
নিম্নলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করলে দ্রু নারীর কাম উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
তা হলোঃ-
১। মুখ, কপাল, গাল ইত্যাদি স্থানে ঘন ঘন চুম্বন করা ও ধীরে ধীরে ঘর্ষণ করা।
২। সঙ্গমের পূর্বে নারী দেহের বিভিন্ন স্থান স্পর্শ করলে, ধীরে ধীরে নাড়াচাড়া করলে কাম উত্তেজনা জাগে।
৩। নারীর যৌন ইন্দ্রয়গুলি স্পর্শ, ঘর্ষণ ও মর্দন করা উচিত।
৪। বিশেষ করে স্তন ও ভগাঙ্কুর মর্দন কাম উত্তেজনার সহায়ক।
৫। প্রয়োজন হ’লে ধীরে ধীরে আঘাত করা, দংশন করা বা নিপীড়ন করা চলে।
৬। সহবাসের আগে উপরোক্ত বিষয়ে স্ত্রীকে ভালভাবে উত্তেজিত কারা একান্ত আবশ্যক-অন্যথায় স্ত্রীর অতৃপ্তি থেকে যেতে পারে।
নারীর উত্তেজনার লক্ষণ
নারী উত্তেজিত হ’লে তার কি কি লক্ষণ পেতে পারে তা এবারে বলা হচ্ছে।
১। নারী উত্তেজিত হ’য়ে পড়লে এবং কামবিহ্বল হলে তার দু’টি চোখ অর্দ্ধনিমীলিত ও রক্তবর্ণ ধারণ করে।
২। জোরে জোরে নিশ্বাস পড়তে থাকে।
৩। চেহারার মধ্যে উত্তেজনার ভাব স্পষ্ট ফুটে ওঠে।
৪। হাত পা শিথিল হ’য়ে পড়ে।
৫। চোখ বুজে থাকতে চায়।
৬। তার লজ্জা কমে যায়, পুরুষ তার অঙ্গস্পর্শ করলে সে তাতে বাধা দেয় না।
৭। পুরুষ তার গোপন স্থানে হাত দিলে বা চাপ দিলে সে তা উপভোগ করে।
৮। সব রকম ভয়, সঙ্কোচ কাটিয়ে সারাটা দেহই সে পুরুষকে অর্পণ করে।
নারীর তৃপ্তির লক্ষণ
নারী যৌন তৃপ্তি লাভ করলে তার মধ্যে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায় তা এবারে আলোচনা করা হচ্ছে।
১। দেহ নুইয়ে পড়ে।
২। সারাটা দেহে যেন অবসান আসে।
৩। দ্রুত হৃৎস্পন্দন হ’তে থাকে।
৪। আবেশে চোখ বুজে থাকে।
৫। যোনি থেকে রসস্রাব নির্গত হয়।
৫। নারীর সারা দেহে পুনঃপুনঃ শিহরণ হতে থাকে।
৬। অনেকে পূর্ণ তৃপ্তির আবেশে অজ্ঞান পর্যাপ্ত হ’তে পারে এমন ঘটনাও জানা যায়।
৭। ধীরে ধীরে গোঁ গোঁ বা প্রাণীর অনুরূপ শব্দ বের হ’তে পারে।
৮। সে পুরুষকে জোর করে বুকে চেপেও ধরে রাখতে পারে।
সহাবাসের আগে ও পরে
সম্ভোগের আগে স্বামীর কর্তৃব্য
১। পতির কর্তব্য হলো, পত্নীকে প্রিয়তমা জ্ঞানে বা সত্যিকারের ধর্মপত্নী জ্ঞানে নিজের তৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তারও দৈহিক ও মানসিক তৃপ্তি বিধান করা। নিজের কামনা পরিতৃপ্ত করাই সম্ভোগের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়।
২। কোন প্রকার বল প্রয়োগ করা আদৌ বাঞ্ছনীয় নয়। একথা মনে রাখতে হবে।
৩। চুম্বন, আলিঙ্গন, নিপীড়ন ইত্যাদি নানাভাবে স্ত্রীর মনে পূর্ণ কামাব জাগিয়ে তারপর তার সঙ্গে সহবাসে রত হওয়া প্রতিটি পুরুষের কর্তব্য।
৪। নারী ধীরে ধীরে আত্নসমর্পণ না করা পর্যন্ত তার সঙ্গে কখনও সহবাসে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়।
৫। নারী কখনও নিজের যৌন উত্তেজনাকে মুখে প্রকাশ করে না। তবে সেটা অনেকটা লক্ষণ দেখে বুঝে নিতে হয়।
৬। নারীর কর্তৃব্য সর্বদা পতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার ভাব ফুটিয়ে তোলা।
৭। পতিকে ঘৃণা করা, তাকে নানা কু-কথা ইত্যাদি বলা কখনই উচিত নয়। সহবাসের অনিচ্ছা থাকলে তা তাকে বুঝিয়ে বলা উচিত। ঘৃণা বা বিরক্তিসূচক তিরস্কার করা কখনও উচিত নয়। এতে পতির মনে দুঃখ ও বিরক্তি জাগতে পারে।
৮। নারীর কর্তৃব্য স্বামীর চুম্বন, দংশন ও আলিঙ্গনের প্রতিউত্তর দেওয়া।
৯। নারীর পূর্ণ কামভাব জাগলে পতিকে কৌশলে তা বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।
১০। নারীর উত্তেজনা ধীরে ধীরে আসে-আবার তা ধীরে ধীরে তৃপ্ত হয়। পুরুষের উত্তেজনা আসে অকস্মাৎ আবার তা অকস্মাৎ শেষ হয়। তাই নারীর পূর্ণ কামভাব না জাগিয়ে সঙ্গমে মিলিত হলে নারী পূর্ণ তৃপ্তি পেতে পারে না। এরকম করা রিধিবিরুদ্ধৃ। এতে নারী পূর্ণ তৃপ্তি পায় না- এর জন্যে সে পর-পুরুষ পর্যন্ত গমন করতে পারে। দাম্পত্য জীবনে অনেক বিপর্যয় এর জন্যে আসতে পারে।
স্ত্রীকে দ্রুত তৃপ্তির উপায়
১। গালে ঠোঁটে ঘন ঘন চুম্বন করা।
২। স্ত্রীর ঊরুদেশ জোরে জোরে মৈথুনের আগে ঘর্ষণ করা।
৩। সম্ভোগের আগে যোনিদেশ, ভগাঙ্কুর কামাদ্রি আলতো ভাবে ঘর্ষণ করা।
৪। ভগাঙ্কুর মর্দন।
৫। মৈথুনকালে স্তন মর্দ্দন।
৬। সহাবাসের আগে যদি পুরুষাঙ্গের আগায় খুব সামান্য পরিমাণ কর্পূর লাগানো হয় তবে স্ত্রী দ্রুত তৃপ্তি লাভ ক’রে থাকে। তবে কর্পূর যেন বেশি না হয়, তাতে স্ত্রী যোনি ও পুরুষাঙ্গ জ্বলন অনুভূত হ’তে পারে।
সহবাসের কাল
১। মেয়েদের একটু ঘুমোবার পর রাত্রির দ্বিতীয় প্রহর শ্রেষ্ঠ মৈথুন সময়।
২। দিনের বেলা সহবাস নিষিদ্ধ।
৩। ভোরবেলা সহবাস শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হ’তে পারে।
৪। গুরু ভোজনের পর সঙ্গে সঙ্গে সহবাস নিষিদ্ধ।
৫। ক্রুদ্ধ বা চিন্তিত মেজাজে স্ত্রী সহবাস উচিত নয়। প্রফুল্ল মনে সহবাস উচিত।
কোন ঋতু মৈথুনের পক্ষে কতটা উপযোগী তার বিচার করা হচ্ছে।
ক। বসন্তকাল-৯০%।
খ। শরৎকাল-৭০%।
গ। বর্ষাকাল-৫০%।
ঘ। হেমন্তকাল-৪০%।
ঙ। গ্রীষ্মকাল-৩০%।
চ। শীতকাল-২০%।
প্রহরণ বা মৃদু প্রহার
মৈথুনকালে মৃদু প্রহার-শৃঙ্গারও কামের একটি অঙ্গ হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে।
কথাটা শুনতে অনেকটা আশ্চার্য্য বোধ হয়, কিন্তু কামসূত্রে তার ব্যাখ্যা প্রদত্ত হয়েছে।
নারী কিছুটা উৎপীড়িত হ’তে চায় যৌন মিলনে-তাই মনোবিজ্ঞান স্বীকার করে যে, পুরুষ কিছুটা উৎপীড়ন করতে পারে নারীকে।
কিন্তু প্রহরণ ঠিক শৃঙ্গার নয়-কারণ মিলনের আগে এর প্রয়োজন নেই।
পূর্ণ মিলনের সময় আনন্দ বৃদ্ধির জন্যে পুরুষ ধীরে ধীরে নারী-দেহের কোমল অংশে মৃদু প্রহার করতে পারে।
পুরুষ অথ্যাচারী-মনোবিজ্ঞানের মতে যে প্রহার করা হয় তা আনন্দের। তাই বলে এতে দু’জনেই যে আনন্দ পাবে এমন নয়। এটা দু’জনের মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে।
প্রহরণের মধ্যে আবার প্রকারভেদ আছে-
১। মুষ্টি প্রহার-হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দেহের বিভিন্ন অংশে মৃদু প্রহরণ।
২। চপেটাঘাত (হাত খুলে রেখে ধীরে ধীরে।)
৩। দু’টি অঙ্গুলির সাহায্যে প্রহরণ।
৪। প্রহরণ ও সংবহন মিশ্রিত করে প্রহরণ।
মর্দন বা সংবাহন
যদিও মর্দন শৃঙ্গার কালে মাঝে মাঝে হয়- তবে এই মর্দন প্রকৃত শৃঙ্গার নয়।
মর্দন বেশি হয় রতিকালে বা রতির পূর্বে।
নারীদেরহর কোমল অংশে যেমন স্তন, নিতম্ব, ঊরুদ্বয় প্রভৃতির মর্দন হ’য়ে থাকে।
রতিক্রিয়াকালে স্তন ও নিতম্ব মর্দন করেও পুরুষ ও নারী উভয়ে আনন্দ পায় বলে বাৎস্যায়ন বলেছেন।
তবে যারা পছন্দ করেন তাঁরাই এটা করবেন। যদি একজন বা দু’জনেই পছন্দ না করেন তবে এর প্রয়োজন নেই।
ঔপরিষ্ঠক বা মুখমেহন
মুখমেহন স্বাভাবিক মিলন হিসাবে বাৎস্যায়ন স্বীকার করেন নি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এটি সর্বদা চলতে পারে না। তবু শাস্ত্রে এটি উল্লিখিত হয়েছে।
শাস্ত্রে উল্লিখিত হবার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, এটি খুব ভাল আসন বা এটি সম্মান পেয়েছে। শাস্ত্রে কেবল এটাকে একটি অস্বাভাবিক মিলন বলেই এর নাম উল্লিখিত হয়েছে।
ভারতের কোন কোন জাতির মধ্যে ঔপরিষ্ঠক স্বীকৃত ও বেশ প্রচলিত-কিন্তু তাই বলেই তাকে উচ্চ স্থান দেওয়া হয় না।
মুখমেহন সব পণ্ডিতের মতেই ঘৃন্য-তাই এ বিষয়ে বেশি আলোচনা করা হলো না।
বাৎস্যায়ন বলেন নারী শুধু তিনটি শ্রেণীরই নয়-তাছাড়াও আছে আর এক শ্রেণী-তার নাম হলো নপুংষক শ্রেণী।
এই নপুংষক শ্রেণীর যোনি ঠিকমত গঠিত নয়-তাই এদের সঙ্গে যৌন ক্রিয়া সম্ভব নয়। এদের দ্বারা কেবল মুখমেহন করানো চরতে পারে।
এই শ্রেণীর নপুংষক অনেক সময় অর্থের বিনিময়ে মুখমেহনে রাজী হয়।
এই মুখমেহন আট প্রকার হ’য়ে থাক-
১। নিমিত-এতে নপুংষক তার করতলে পুরুষাঙ্গ ধরে আসে- আসে- তার ওষ্ঠাধারে ঘর্ষণ করে।
২। পার্শ্ব-লিঙ্গ মুণ্ডের আবরণ খুলে আসে- আসে- মুখে প্রবেশ করানো।
৩। বহিঃসংদংশন্তদাঁত ও ঠোঁট দিয়ে পুরুষাঙ্গের আবরণ উন্মোচন।
৪। পুরুষাঙ্গ বারে বারে মুখের ভেতরে নেওয়া ও বের করা। বহুক্ষণ এরূপ করা।
৫। অন্তঃসংদংশন্তওষ্ঠাধর দিয়ে চোষণ করা।
৬। জিহ্বা দ্বারা চোষণ।
৭। আম্রচোষণ-পুরুষাঙ্গ আম্রের মত চোষণ করা।
৮। আকন্ঠীত-সম্সত পরুষাঙ্গ গিলে ফেলার মত।
মুখের মধ্যে সুরতের সঙ্গে সঙ্গে আলিঙ্গনাদিও চলতে পারে।
অনেক নীচজাতীয়া নারীদের দ্বারা এ কাজ করানো যেতে পারে।
কামশাস্ত্রে মুখে সুরত নিষিদ্ধ। তবে অনেকে এটি পছন্দ করেন।-বা কোন রাবাঙ্গনা রাজী হলে তার দ্বারা এটি করান। কিন্তু অন্তঃপুর চারিনীদের এটি করা উচিত নয়।
সহবাসের পরের কথা
সহবাসের পরে দু’জনেরই উচিত কমপক্ষে এক পোয়া গরম দুধ, একরতি কেশন ও দুই তোলা মিশ্রি সংযোগে সেবন করা। সহবাসে কিছু শক্তির হ্রাস হ’তে পারে। এতে করে কিঞ্চিৎ পূরণ হয়। অন্যথায় সহবাস করা উচিত নহে। এই কারণেই মনীষীরা মাসানে- একবার রতিক্রিয়া ব্যবস্থা করে দেন। যাতে উপরোক্ত সামগ্রীর যোগাড় করতে গরীব বা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকের পক্ষেও কষ্টকর না হয়। পুষ্টিকর খাদ্য না খেলে পুরুষ অচিরেই শক্তিহীন হ’য়ে পড়ে ও তার কর্মশক্তি লোপ পায়।
অত্যধিক মৈথুনের জন্য হজমশক্তি লোপ পায়। ফলে অম্ল, অজীর্ণ প্রভৃতি নানা প্রকার রোগ দেখা দেয়। এই সমস্ত রোগের হাত থেকে নিশ্চিত ভাবে নিষকৃতির জন্য মৈথুনের পর দুগ্ধ পান অত্যাবশ্যাক। অবস্থায় সম্ভব হলে নিম্নের টোটকাগুলি ব্যবহার করলে ভয়ের কারণ থাকবে না।
(১) বাদাম দুই তোলা ভালভাবে বেটে নিয়ে তা মিশ্রি সংযোগে মৈথুনের পর গরম করে খেলে বিশেষ উপকার হয়।
(২) দুতোলা ঘি, দু তোলা মিশ্রি কিংবা গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করলে সহজে ক্ষয় পূরণ হয়।
(৩) মুগের ডাল ভালভাবে বেটে নিয়ে ভেজে নিন, পরে মিশ্রি কিংবা চিনি মিশিয়ে নাড়ার মত করে চার তোলার মত মৈথুনের পর খেয়ে নিলে উপকার হয়।
সহবাসের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষাঙ্গ ধৌত করলে নপুংষকতার লক্ষণ প্রকাশ পায়। সেজন্য রতিক্রিয়ার কিছু সময় পরে পুরুষাঙ্গ ধৌত করা বিধেয়। এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রত্যেকের উচিত।
সহবাসের পর দেহের বিষয়ে কি কি যত্ন নিতে হবে এ বিষয়ে শাস্ত্রে কতগুলি নিয়ম বিধিবন্ধ আছে। আমরা তা একে একে আলোচনা করছি।
১। সহবাসের পর দু’জনের কিছুক্ষণ পরস্পর সংলগ্ন হ’য়ে অবস্থান করবে। এতে মানসিক তৃপ্তি হয়। ধীরে ধীরে দেহ শীতল হয়। এতে প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হ’য়ে থাকে।
২। তারপর অবশ্য প্রত্যেকেই নিজ নিজ যৌনাঙ্গ ভালভাবে ধৌত করবে-এটি অবশ্য পালনীয়। তবে কিছুক্ষণ পর।
৩। অনেক শাস্ত্রে দুজনের ্লান করা বিধান আছে তবে তা সকলে পালন করে না।
৪। শর্করা মিশ্রিত এক গ্লাস জল কিঞ্চিৎ লেবুর রস বা দধি কিংবা শুধু ঠাণ্ডা জল কিছু খেতে হবে। এতে শরীরের মঙ্গল করে।
৫। প্রয়োজন হরে কোন পেটেন্ট ঔষধ সেব করা যাইতে পারে।
৬। সহবাসের পর ঘুম একান্ত আবশ্যক-তদাই শেষ রাতে সহবাস বাঞ্ছনীয় নয়।
৭। পরদিন প্রভাতে স্নান করা একান্ত আবশ্যক। তা না হলে মন শুচি হয় না- কর্মে প্রফুল্লতা আসে না। অন্যথায় পরদিন মন খারাপ থাকে, কর্মে একঘেয়েমি আসতে পারে।
৮। সহবাস প্রারম্ভে বা শেষে নেশা সেবন ভাল নয়। এতে দৈহিক ক্ষতি হয়-প্রেম দূরে যায়-মানসিক অসাড়তা আসতে পারে।
৯। রাত্রির প্রথম ও শেষ প্রহর বাদে মধ্যম অংশই সহবাসের পক্ষে উৎকৃষ্ঠ সময়, এ কথা সর্বদা মনে রাখতে হবে।
১০। সহবাসের পর অধিক রাত্রি জাগরণ, অধ্যয়ন, শোক প্রকাশ, কলহ কোন দুরূহ বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তা ও মানসিক কোন উত্তেজনা ভাল নয়।
সফল মৈথুন
এবারে আমরা একটি প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা সফল মৈথুন।
এমন প্রশ্ন অনেকে করতে পারে-মৈথুন আবার সফল অ-সফল কি? যথারীতি নর-নারীর মিলন। দৈহিক মিলনের পরিপূর্ণ আনন্দ ও রেতঃপাত। এই ত মৈথুন।
আমরা বলব না, তা নয়।
তবে?
আমরা বলব শতকরা একটি কি দু’টির বেশি মৈথুন সফল মৈথুন হয় না। কেন হয় না? তা বলতে গের সফল মৈথুন কি, সে বিষয়ে আলোচনা করতে হয়। স্ত্রীর কামনার তৃপ্তি কম বেশি হয়ত হয়ে থাকে। তথাপি স্ত্রী গর্ভবতী হ’য়ে সন্তানের জন্মও দিতে সুরু করে, তবু তা সফল মৈথুন হয় না।
কেন?
এর উত্তর হলো শৈথুন বা রেতঃপাত অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু সফল মৈথুন খুব অল্প জনের ভাগ্যেই ঘটে থাকে।
এবার সে বিষয়ে আলোচনা করব।
সফল মৈথুনের পরিচয়
যে মৈথুন করলে শারীরিক, মানসিক ও দৈহিক কোনও ক্ষতি হয় না। উলটে কর্মে আনন্দ ও একাগ্রতা আসে এবং মৈথুনের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়; স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় এবং হৃদয় প্রফুল্ল ও শান্ত, ্লিগ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে-তাকে সফল মৈথুন বলে।
সফল মৈথুনের ফল
১। মনের শান্তি পায়। মন সর্বকাজে দৃঢ় হ’য়ে থাকে ও মনের উৎসাহ বাড়ে।
২। কাজকর্মে একাগ্রতা আনে। কাজকর্মের দিকে মন সংযোগ বৃদ্ধি পায়।
৩। দৈহিক ও মানসিক তৃপ্তির জন্যে কর্মক্ষমতা বৃৃদ্ধি পায়। নিজেকে গর্ব অনুভব করে।
৪। স্ত্রীর প্রতি প্রেম বৃদ্ধি পায় ও স্ত্রীকে প্রকৃত ভালবাসতে পারে। স্ত্রীর আকর্ষণ আসে স্বামীর প্রতি।
৫। অন্য নারীর প্রতি আকর্ষণ থাকে না।
অসফল মৈথুনের ফল
১। মনে শান্তি থাকে না। মন ধীরে ধীরে অবসাদে ভরে ওঠে। মেজাজ হ’য়ে যায় খিটখিটে।
২। সব সময় মন উত্তেজিত ও বিরক্ত থাকে।
৩। মানসিক দুর্বলতা প্রযুক্ত কাজকর্মে ইচ্ছা কমে যায়।
৪। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা কমে আসে।
৫। পরনারীর প্রতি আকর্ষণজনিত চরিত্রদোষ ঘটতে পারে। পতিতারয় গমনও ঘটতে পারে।
৬। শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে-সব সময় শরীর ভার ভার বোধ হয়। আহার ও নিদ্রার প্রতিও আকর্ষণ কমে যায়।
৭। বায়ুর প্রাবল্য, চোখ মুখ জ্বালা করতে থাকে।
৮। মাথা ঘোরে ও গা বমি বমি করে।
৯। ধীরে ধীরে মৈথুনের প্রতি ঘৃণাও জন্মাতে পারে।
এখন কথা হচ্ছে কি করলে মৈথুন সফল করা যায়।
মৈথুন অ-সফল হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে-উপযুক্ত পুরুষ ও নারীর মিলনের অভাব।
অ-সফল মৈথুনের কারণ
এবারে অ-সফল মৈথুনের কতকগুলি প্রধান কারণের বিষয় লেখা হচ্ছে-এগুলিও মনে মনে চিন্তা ও বিচার করে নিতে হবে।
১। মৈথুনের আগে নারীকে উত্তেজিত না করা।
২। মৈথুনে যোগ্যভাবে নিজেকে তৈরী না করা।
৩। উপযুক্ত আসন না করে মৈথুনে লিপ্ত হওয়া।
৪। শক্তির অভাবে মৈথুন পূর্ণ হ’তে পারে না।
৫। অসুস্থ অবস্থায় মৈথুন্তএতে তত পূর্ণ আনন্দ হয় না। দৈহিক ক্ষতি করে।
৬। ঘন ঘন মৈথুন্তএটি অবশ্য পরিত্যজ্য। ইহা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
৭। অযোগ্য স্ত্রী-স্ত্রী উপযুক্ত না হলে পূর্ণ মৈথুন হয় না।
৮। অন্যান্য অসুবিধা বা মানসিক কারণ।
৯। স্বামী বা স্ত্রীর অন্য নারী বা পুরুষের প্রতি গোপন আসক্তি।
১০। প্রকৃত উত্তেজনা ছাড়া মৈথুন।
উত্তেজনার বিচার
এবারে প্রকৃত উত্তেজনা কি ও কি তার লক্ষণ সে বিষয়ে বলা হচ্ছে।
উত্তেজনা দুই প্রকার-(১) আসল (২) নকল বা বাহ্যিক।
যে যৌন উত্তেজনা সাধারণতঃ নর-নারীর মধ্যে দেখা যায় তা প্রায়ই নকল উত্তেজনা।
নকল কেন তার প্রমাণ করে দেওয়া হবে-আগে আসল উত্তেজনার লক্ষণ কি তাই বলা হচ্ছে।
নারী পুরুষকে বা পুরুষ নারীকে কাছে টেনে নিয়ে পরস্পর উত্তেজনা সৃষ্টির প্রয়াস পায় এবং তার ফলে যদি হৃদয়ে উত্তেজনা জাগে তা প্রকৃত উত্তেজনা নয়।
হৃদয়ে আপনা থেকেই ভাবভঙ্গীর মুখে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হবার দুর্দমনীয় কামনা যদি জাগে তবে তা হলো আসল অর্থাৎ প্রকৃত উত্তেজনা।
প্রকৃত উত্তেজনা সম্বন্ধে বাৎস্যায়ন বলেছেন।-
যদি কোন নারীর স্মৃতি (চেহারা) বা ধ্যান ছাড়াও আপনা থেকেই হৃদয় উত্তেজিত হ’য়ে উঠে, তবে তা হরো প্রকৃত উত্তেজনা।
কিন্তু এ হলো সেই যুগের কথা-মানুষ যখন প্রকৃতির উপর নির্ভর করে চলতো। প্রকৃতির উপর নির্ভর করে সে নিজের মানসিক অবস্থা নিরূপণ করতো।
আজকাল যুগ পালটে গেছে।
নারী মূর্তি দর্শন আজকাল হামেশাই করতে হয়। হাটে-বাজারে চারপাশে নারীর নানা ভঙ্গির নানা ছবি নানা বিজ্ঞাপন। নারীর দেহ আর যৌবনের নানারূপ ভঙ্গিমার বিজ্ঞাপন দিয়েই আজকাল প্রচুর জিনিস বিক্রি হয়। সাইনবোর্ডেও নারীর নানারূপ প্রতিকৃতি দেখা যায়।
তবে আজকাল সেভাবে প্রকৃত উত্তেজনা বোজা সহজ কথা নয়।
প্রকৃত উত্তেজনা তাই আজকাল অন্যভাবে সি’র করা হ’য়ে থাকে।
অর্থাৎ যখন চিত্তবৃত্তি আপনা থেকেই নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং মনকে কিছুতেই আর সংযত করা যায় না, তখনই প্রকৃত উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং তাকেই প্রকৃত উত্তেজনা বলে।
এ কথা ঠিক যে প্রকৃত উত্তেজনা ছাড়া মৈথুন করা উচিত নয়। তেমনি প্রকৃত উত্তেজনা জাগলে তা দমন করা ঠিক নয়। তাতে দৈহিক ও মানসিন ক্ষতি হ’তে পারে।
প্রকৃত উত্তেজনার সময় ব্যতীত মৈথুন করলে তা মৈথুন হতে পারে না।
মৈথুনের শক্তির স্বল্পতা
মৈথুনে শক্তির স্বল্পতা আর শীঘ্র রেতঃপাত করলে একই কথা, কিন্তু দু’টির কারণ কিছুটা ভিন্ন।
শীঘ্র বীর্য্য পতন এক ধরনের রোগ। এ বিষয়ে আমরা এর পরে রোগের পরিচ্ছেদে বিশেষভাবে আলোচনা করব।
কিন্তু মৈথুন শক্তির স্বল্পতা একটা প্রধান জিনিজ। এটি দৈহিক ও মানসিক অবস্থার ওপর হ’য়ে থাকে। কারণঃ-
১। অধিক উত্তেজনা।
২। ঘন ঘন উত্তেজনা কিন্তু কম পরিমাণে।
৩। যখন উত্তেজনা আসে তখন স্ত্ররি সঙ্গে মৈথুন না করা।
৪। মৈথুনের সময় ভয়, লজ্জা ও কোন বাধা।
৫। বহুদিন বাদে মৈথুন করা।
৬। হস্তমৈথুন করা।
৭। দৈহিক অসুস্থতা।
৮। জন্মগত দুর্বলতা।
৯। যৌন ব্যাধি ইত্যাদি।
প্রতিকার-শীঘ্র পতন, যৌন ব্যাধি জন্মগত দুর্বলতা ইত্যাদি বিষয়ে এর পরে আলোচনা করা হয়েছে। প্রত্যেক রোগের কি ঔষধ তাও বলা হয়েছে।
নেশা সেবন
কোন প্রকার নেশা করা অবশ্যই অনুচিত বলে শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে। তবে কিছু সংখ্যক লোক মৈথুন শক্তি বাড়াবার মত কিছু কিছু নেশা করে থাকেন। তবে নেশা যদি সামান্য হয় অর্থাৎ তাতে যদি ঠিক পুরা মাদকতা না আসে, অথচ যৌন ক্ষমতা যদি সামান্য বৃদ্ধি পায়, তবে তা নিশ্চয়ই উপকারী।
নেশায় যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়?
ঠিক তা নয়-নেশায় বীর্য্যকে কিছুটা শুকিয়ে গাঢ় করে দেয়, তাই কিছুটা বেশী সময় ধরে মৈথুন করা চলে।
শাস্ত্রের মতে মাদক দ্রব্য অল্প পরিমাণে অবশ্য ইন্দ্রিয় শক্তি ও দৈহিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি ঔষধের সাথে ব্যবহার করা হয়।
যেমন- (১) এ্যালকোহল। (২) সিদ্ধি। (৩) আফিং ইত্যাদি
কিন্তু পরিমাণে তা ব্যবহৃত হয় খুব কম-ঠিক মাত্রা অনুযায়ী।
কিন্তু লজ্জাশালী রমণী স্বামীর এ প্রস্তাব প্রকারান্তরে প্রত্যাখ্যান করে। এতে স্বামী অবশেষে মনঃক্ষুন্ন হয় এবং বেশ্যালয়ে যাওয়া সুরু করে। পেটের দায়ে যারা এ বৃত্তিকে স্বেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছে, পয়সা রোজগারের জন্য যত নগ্ন ও গর্হিত কাজই হোক না কেন, এরা তা করে।
আর একটা কথা।
সাধালণ খাদ্য পানীয় দ্বারা যতটা সম্ভব ততটা যৌন ক্ষমতা আগে বাড়াবার চেষ্টা করা উচিত। তারপর অবশ্য ঔষধ। ঔষধের চেয়ে বেশী মাত্রায় নেশা ভাল নয়।
যৌন ইন্দ্রয়ের অক্ষমতা
যৌন ইন্দ্রয়ের অক্ষমতা হলো সকল মৈথুনের আর একটা প্রধান অন্তরায়।
মৈথুন শক্তির অক্ষমতা আর যৌন অক্ষমতার কারণ কিন্তু ঠিক এক নয়। মৈথুন শক্তির অক্ষমতা সক্ষম ইন্দ্রিয় শক্তি থাকলেও হতে পারে।
কিন্তু অনেকের ইন্দ্রিয় আবার ঠিক তার মত দৃঢ় হয় না। আর ইন্দ্রিয় দৃঢ় না হলে মৈথুন ক্ষমতা স্বাভাবিক হয় না।
এর প্রকৃত কারণ কি?
এ বিষয়ে নানা আলোচনা আগে করা হয়েছে। এখনও করা হবে।
ইন্দ্রিয় উত্তেজিত না হবার কারণ হলো অবশ্য শারীরিক দুর্বলতা। কিন্তু তা আসে কেন?
(১) অমিতাচার।
(২) জন্মগত অক্ষমতা।
(৩) যৌন ক্ষমতার অভাব।
(৪) হস্তমৈথুন অভ্যাস ইত্যাদি।
যাই হোক যৌন ইন্দ্রিয়ের অক্ষমতা উপযুক্ত চিকিৎসক দ্বারা অবশ্যই চিকিৎসা করান দরকার।
তা না হলে যৌন ইন্দ্রিয়ের ক্রমশঃ আরও মারাত্নক হ’য়ে অন্য রোগের সূচনা করতে পারে।
অযোগ্য স্ত্রী
স্ত্রী, মৈথুনে অযোগ্য হয় কেমন করে?
এর উত্তর হলো-মৈথুনের উপযুক্ত ভাবে সহায়ক না হলে সেই স্ত্রীকে অযোগ্য বলা হয়।
স্ত্রী অযোগ্য কি করে হতে পারে।
১। মৈথুনে অনাসক্তি।
২। উপযুক্ত শ্রেণী হিসাবে মিল না হবার জন্য মৈথুনে অক্ষমতা। যেমন বৃষ বা অশ্ব জাতীয় পুরুষের সাথে পদ্মিনী জাতীয় স্ত্রীর।
৩। দৈহিক গঠনের জন্য মৈথুনে অতৃপ্তি।
৪। লজ্জা ও ভয় ইত্যাদি কারণে স্বামীর সঙ্গে মৈথুনে লিপ্ত না হতে ইচ্ছা।
৫। হৃদয়ে প্রেমের অভাব।
৬। গোপন প্রণয়ী-স্বামীর প্রতি আসক্তি বা প্রেমের অভাব।
এর জন্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মানসিক হলে তার জন্যে স্ত্রীকে ভালোবেসে তার হৃদয় জয় করতে হবে।
দৈহিক হলে, চিকিৎসার প্রয়োজন। নারী পুরুষ উভয়েই সমশ্রেণীর না হলে মৈথুনকালীন বিবিধ অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এই অসুবিধাই হলো অ-সফল মৈথুন।
মৈথুনে অন্যান্য অসুবিধা
সফল মৈথুনের অন্যান্য অসুবিধা হলো-
(১) আর্থিক অস্বচ্ছলতা।
(২) যোগ্য স্থানের অভাব।
(৩) খাদাদির অভাব ও দৈহিক দুর্বলতা ইত্যাদি।
একথা অবশ্যই ঠিক যে সুবিধাজনক সময়, স্থান, খাদ্যদির অভাব হলে, মৈথুন, সফল হ’তে পারে না। কোন গরীব বা অভাবী লোক আগে খাদ্যের যোগাড় করবে তারপর মৈথুন।
এখানে আর একটি প্রয়োজনীয় কথা হলো-প্রাচীন শাস্ত্র কারক বলেছেন যে, সফল মৈথুন নর-নারীর আনন্দ প্রাপ্তির উৎস তা ঠিক।
সফল মৈথুন না হলে, হৃদয়ে পূর্ণ আনন্দ প্রাপ্তি না হলে উপযুক্ত সন্তান হয় না। অ-সফল মৈথুনে যে সন্তান হয়, তা জাতির প্রতিবন্ধক স্বরূপ। সফল মৈথুনই প্রকৃত সন্তানের জন্ম দেয়।
অবশেষে একটি প্রধান কথা হলো-মৈথুন যক কম হয় তত ভালো। তাতে রতিশক্তি বৃদ্ধি পায় ওসকল মৈথুনের জন্যে দেহমনকে শক্তি সঞ্চয়ী করে তোলে।
সৌন্দর্য সাধন ও কাম বর্ধন
প্রেম বিষয়ে সু-ফল পেতে হলে যে কটি কাজ অবশ্যই জানতে হবে তা হলো-
(১) দৈহিক সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্যই নারীকে টেনে আনে। যেমন আগুনের দিকে পতঙ্গ ছুটে যায়।
(২) গুণাবলী। যে সকল গুণের কথা পুস্তকের প্রথম দিকে লেখা আছে।
(৩) যৌবন। যৌবন না থাকলে সুন্দর পুরুষ কোন নারীকে প্রেমে ফেলতে পারে না।
(৪) হৃদয়ের ঔদার্য্য।
নারীর সৌন্দর্য চর্চা
১। প্রত্যহ স্নান। সুগন্ধি সাবান দিয়ে স্নান করলে আরো ভাল হয়।
২। প্রত্যহ মাথা আঁচড়ে বেণী বাঁধা।
৩। মালা বা ফুল ব্যবহার।
৪। অলঙ্কার পরিধান।
৫। গন্ধ দ্রব্য ব্যবহার।
৬। মুখে পান।
৭। লিপষ্টিক ঠোঁটে দেবে।
৮। প্রত্যহ পরিষ্কার বস্ত্রাদি পরবে।
৯। যে ভাবে প্রসাধন করলে ভাল হয় বা নিজেকে সুন্দর দেখায় তা করবে।
১০। সর্বদা পরের রুচিমত ভাল পোষাক পরিধান করবে।
পুরুষের সৌন্দর্য চর্চা
১। যাতে মুখে দুর্গন্ধ না থাকে, সেজন্য রোজ সকালে বিকালে মুখ ধোবে।
২। রোজ স্নান করবে।
৩। সাবান দিয়ে গাত্রমার্জন করবে।
৪। সুগন্ধ দ্রব্য ব্যবহার করবে।
৫। কেশ আঁচড়াবে।
৬। দাড়ি মুন্ডিত করবে।
৭। সর্বদা ভাল পোষাক পরিচ্ছদ পরবে।
বশীকরণ
কাম উপদেষ্টগণ বলেন- পুরুষ ও নারীর কাম অভিযানের আগে প্রয়োজন যৌবন সাধনা।
বাৎস্যায়নের মতে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত দ্রব্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে-
১। টগর ফুল, সাদা কূজ এবং তুলসী পত্র একত্রে মাড়িয়া সর্বাঙ্গে প্রলেপ দেবে। এতে কুৎসিত মানুষকেও সুন্দর করে তোলে।
২। উপরোক্ত তিন প্রকার উপাদান সূক্ষ্ম ভাবে গুঁড়া করতে হয়। তারপর পশম বস্ত্রের সলতেতে লাগিয়ে আগুনে পোড়াবে। আগুনে পোড়াবার পূর্বে ঐ সলতে অক্ষ তেল দিয়া ভিজাবে। এই সলতে পোড়ানো ধুন বা কালি নর-কঙ্কালে লাগাতে হবে। এই ‘কাজল’ পুরুষ কপালে লাগালে, তার কামনার নারী অবশ্যই বশীভূত হবে।
৩। পুনন বা, সহাদেবী, কুরন্টক, সরিষা গাছ, নীল পদ্ম এক সঙ্গে শিশোমাস্ তেলে ফুটিয়ে মলম তৈরী করবে। এই মলম অঙ্গে প্রলেপ দিলে কুৎসিৎ ব্যক্তিকেও সুন্দর করে তোলে। এতে বাঞ্ছিতা নারীও বশীভূত হয়।
৪। শ্বেত পদ্ম, নীল পদ্ম ও নাগ গাছের শুষ্ক ফুল একত্রে গুঁড়া করে ঘৃত ও মধুসহ সেবন করলে মানুষ সুন্দর হয়। সে রমণীগণের প্রিয় হয়ে ওঠে।
৫। শ্বেত পদ্ম, নীল পদ্ম, নাগ গাছের শুকনা ফুল, টগর পাতা, তুলসী পাতা ও তামল গাছের পাতা এক সঙ্গে চূর্ণ করে মলম তৈরী করবে। এই মলম গাত্রে প্রলেপ দিলে মানুষকে সুন্দর করে তোলে।
সঙ্গম ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়
১। কামশাস্ত্র অধ্যাপকরা বলেন, ধুতুরা, কালো মরিচ ও পিপুল সমপরিমাণ একত্রে গুঁড়া করবে। তাপর সমপরিমাণ মুধুর সঙ্গে একত্রে মিশিয়ে মলম করবে। এই মলম লিঙ্গ মুণ্ডে লাগিয়ে পরে তাহা পরিষ্কার করে ফেলতে হয়। এখন এই পুরুষ যে নারীর সঙ্গে সঙ্গমে ব্রতী হবে, সে নারী, এ পুরুষ ব্যতীয় অন্য কোন পুরুষকে পছন্দ করবে না। সঙ্গমও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
২। ঝড়ে ফেলে যাওয়া গাছের তেজ পাতা, শবের মাথার পুড়ে যাওয়া অবশিষ্টাংশ ও ময়ূরের অসি’ এক সঙ্গে বেঁটে গুঁড়া করবে। এই গুঁড়া যদি নারী পুরুষের পায়ে, কিংবা পুরুষ নারীর মাথায় মেখে দিতে পারে, তা হলে ঐ পুরুষ বা নারী অবশ্যই বশীভূত হবে।
৩। যদি কোন স্ত্রী লোক শকুনের স্বাভাবিক মৃতদেহ সংগ্রহ করে শুকিয়ে গুড়ো করে নেয়। তারপর সেই গুঁড়ো মধুর সহিত মিশিয়ে ্লানের পূর্বে আপন অঙ্গে মর্দন করবে। কয়েক দিন এর রকম করলে বাঞ্ছিত পুরুষ অবশ্য তার বশীভূত হবে। ইহাতে প্রেম ভালবাসা সুদৃঢ় হয়।
৪। যদি কোন লোক সুনুহ (Cuphortra Nellifolia) গাছের শিকড় ও গন্ড (acacic catechu) গাছের পল্লব মিশিয়ে বিশুদ্ধ গন্ধক সহ Red Arsenic -এ সাত বার ডোবাবে ও সাত বার শুকোবে। তারপর ঐ গুড়ো মধুর সহিত মিশিয়ে প্রলেপ দেবে। ইহার পর সে যে নারীর সহিত সুরত কার্যে রত হবে সে নারী চিরদিন এই পুরুষের দাসী হ’য়ে থাকবে।
৫। কোনও শিংশপা (শিশু) গাছে একটি ফুটো করবে (যেখান থেকে পাতা গজিয়েছে এমন জায়গা)। শেষে ঐ ফুটাতে আম্রফলের আঁটির তেল কতকগুলি বচার (বচের) (Acorus calamus) খণ্ড দিয়ে ফুটো বন্ধ করে দিতে হবে। ছয় মাস পরে, ঐ দ্রব্যগুলি ফুটা খুলে বের করতে হবে। তারপর এ দিয়ে একটি মলম তৈরী করতে হবে। ঐ মলম যদি কোনও পুরুষ তাহার সমস্ত অঙ্গে প্রলেপ লাগায়, তাহা হলে সে দেবতার মত দেখতে সুন্দর হয় এবং সমস্ত নারীর মনাকর্ষণ করতে পারে।
৬। উদর্ কিডল (Phascolus Radiatus) তার ভূষি না বাদ দিয়ে, পরিষ্কার করে, ভেজে নেবে ও গো দুগ্ধে ইহা স্দ্িধ করতে হয়। তারপর ইহা অর্ধেক ঝোলে (soup) পরিণত করে তাহা মধু ও ঘৃতে মিশ্রিত করতে হয়। কামসূত্ররূপী অধ্যাপকগণ বলেন, ইহা ভোজন করলে পুরুষকে বহু নারীর সঙ্গে সুরতে ক্ষমতাশালী করে তোলে।
৭। ভিদারি এবং স্বায়ংগুপ্তর শিকড় এক সঙ্গে গুঁড়া করে ময়দার সহিত মিশিয়ে চিনি, মধু ও ঘৃতের সহিত মিশিয়ে লেচি তৈরি করতে হয়। ইহা হতে পিষ্টক তৈরী করে খেতে হবে। ইহা খেলে একসঙ্গে বহু নারীর সহিত সুরত কার্য করতে সক্ষমতা লাভ করে।
৮। চাউল, চটক (চড়ুই পাখীর) ডিম্বের সহিত চটকে তারপর শুষ্ক করতে হবে। পরে দুগ্ধে সিদ্ধ করে পায়েসে পরিণত করতে হবে। এই পায়স মধু এবং ঘৃতের সহিত মিশিয়ে খেলে সুরতে যথেষ্ট শক্তি দান করে।
৯। সিসেমাম্ (sesamum) বীজের খোসা ছাড়িয়ে, চাতক পাখির ডিমের সহিত মিশ্রিত করতে হবে। পরে শুষ্ক করে নিতে হবে। তারপর শৃঙ্গাটক, কেসুর ও স্বয়ংগুপ্ত বীচির সহিত মিশ্রিত ক’রে ময়দা বা আটায় মিশিয়ে দুগ্ধ এবং ঘৃতে সিদ্ধ করতে হবে। এই সুপ (soup) তৈরী করতে হবে। ইহা সেব করলে বীর্য কামশক্তি ও দীর্ঘ জীবন লাভ করে।
১১। শতভরি, (asparagus saaramantosus) এবং গোক্ষুর গাছের ছালের রস গুড়ের সহিত মিশ্রিত করে, পিপুল ও দারুচিনি গুঁড়া করে মেশাবে। গোদুগ্ধ ও ভেড়ার ঘৃত দিয়ে সিদ্ধ করে চাটনী তৈরী করতে হবে। পুষ্যা নক্ষত্রের সঙ্গে যে দিন চন্দ্রের মিলন হয়, সেই দিন থেকেই ইহা খেতে আরম্ভ করতে হয়। ইহাও খুবই শক্তি বর্ধক বীর্য প্রসবক।
১২। সমান ভাগ শতভরি, গোক্ষুর এবং শ্রীপর্নি ফল নিতে হবে। তাহা জলে সিদ্ধ করতে হবে। যখন মাত্র সিকি ভাগ থাকবে, তখন আগুন থেকে নামাবে। ইহা পুষ্যা নক্ষত্র যুক্ত চন্দ্রের দিনে খেতে হয়। ইহা খেলে শরীরে বীর্য ও গুণ বাড়তে দেখা যায়।
১৩। গোক্ষর এবং বার্লি সমান বাগে মিশাবে। প্রত্যেক দিন সকালে ঐ মিশ্রিত দ্রব্যের ক্কথ এক পলা করে খেলে ইহাতে বুদ্ধি, আয়ু এবং রতি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
এ সকল ব্যবস্থা আয়ুর্বেদ, অর্থববেদ এবং তর্কশাস্ত্র হ’তে গৃহীত হয়েছে। তবে এ সকল উপাদান খেতে হলে, শরীরে যাহাতে কোনও ক্ষতি না হয়, এমনভাবে খেতে হবে।
আধুনিক যুগে উপরোক্ত উপাদান, পর্বত অরণ্য ইত্যাদি স্থান থেকে সংগ্রহ করা খুবই দুষ্কর। শুধু-যে সকল বস্তু মহর্ষি বাৎস্যায়ন সকল বেদ ও তন্ত্রশাস্ত্র হ’তে উল্লেখ করেছেন, তাই আমরা লিখলাম।
রতি কার্যে নানাবিধ ব্যবস্থা
যে সকল পুরুষ রতিকার্য করে নারীর কাম উত্তেজনা শান্ত করতে পারে না তাহাদিগের উচিত আয়ুর্বেদ, অথর্ব বেদ ও তন্ত্রশাস্ত্র হতে উদ্ধৃত উপাদান ব্যবহার করা।
তাহাদিগের কর্ত্তব্য, সুরত আরম্ভ করবার আগে, নারীর যোনিরন্ধ্রে আপনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় করাঙ্গুলি একত্রিত করে তাহার দ্বারা ইহা সুগম করে নেওয়া। পরে ঐ নারীর রস্তক্ষয় আম্ভ হবার মত হবে তখন আপনার লিঙ্গ মুন্ড যোনিতে প্রবেশ করিয়ে দেবে। এইভাবে নারীর যৌন কন্ডুয়ন নিবারিত হতে পারে।
কৃত্রিম লিঙ্গ
যে সকল পুরুষ খুব দুর্বল স্থুল শরীর ও বার্ধক্যবশতঃ ক্লান্তিবোধ করে, ইহারা পুরুষাঙ্গ শক্ত করতে পারে না। তাহারা কৃত্রিম লিঙ্গ মুন্ড ব্যবহার করে। ইহা লিঙ্গে লাগিয়ে নারীর যোনির মধ্যে প্রবেশ করাইয়া দিতে পারে।
আচার্য্য বাভ্রব্য বলেন-ইহার উদ্দেশ্যে সুবর্ণ বা রৌপ্য, তাম্র বা লৌহে প্রস্থত লিঙ্গ-মুন্ড ব্যবহার করা যেতে পারে; বাৎস্যায়ন বলেন, কাষ্ঠের নির্মিত লিঙ্গ মুন্ডও ব্যবহার করা চলে।
যে কৃত্রিম লিঙ্গ মণ্ডু ব্যবহার করতে হবে, তা যেন পুরুষের স্বাভাবিক লিঙ্গ মুণ্ডের মত দীর্ঘ হয়, এবং তার বাইরের দিকটা অমসৃণ হবে। ছোট ছোট উঁটু-নীচু কাঁকরের মত থাকবে।
যথা, একটি বাঁশের পিপ তেল মেখে, তাহা কোমরের সহিত একটি সূতা দিয়ে বেঁধে রাখবে এবং রতিকালে তা লাগিয়ে নেবে। তারপর আমলকির ছোট ছোট দানা লিঙ্গের মূলে (গোড়ায়) লাগিয়ে তার সহিত কৃত্রিম লিঙ্গমুণ্ড জুড়ে দেবে।
দক্ষিণ দেশে এক প্রকার প্রথা আছে। যেমন কারো লিঙ্গমুণ্ড ক্ষুদ্র হলে, তার ফুটার মধ্যে একটু তীক্ষ্ম সূচ দিয়া ফুটা করে দিতে হয়। যেমন বালক বালিকার কর্ণে ফুটা করে দেওয়া হয়, সেইরূপে লিঙ্গ মুন্ডের ফুটা বাড়িয়ে দিতে হয়। তাতে ক্রমশঃ লিঙ্গ মুন্ড স্ফীত হতে পারে।
যে কৃত্রিম লিঙ্গ মুন্ডের কথা বলা হয়, তাহা নানা প্রকারের করা যায়। কোনটা অর্দ্ধগোলাকার, কোনটা গোলাকার, কোনটা পদ্মের মত, আবার কোনটা হস্তিদন্তর মত করা যায়।
সমাপ্ত
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার লেখা শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ