Thursday, December 19, 2013

লুকিয়ে ছিলে এতদিন_Written By aarushi1977 [নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




লুকিয়ে ছিলে এতদিন
Written By aarushi1977






নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#01)

শীত কালের দুপুর, বাইরে বেশ মিষ্টি রোদ উঠেছে। ব্যাগ ঘুছান হয়ে গেছে। এখন সিতাভ্র আর স্যামন্তক বাড়ি ফিরলো না। বেশ কিছুক্ষণ আগে বেড়িয়েছে বলে গেল ওদের নিজেদের খোরাক কিনতে যাচ্ছে। বন্দনা একটা কালো রঙের জিন্স আর একটা সাদা ফুল শার্ট পড়েছে, ওপরে একটা হাত কাটা নীল রঙের জ্যাকেট। লম্বা চুল নিয়েই যত ঝামেলা, জিন্সের সাথে কি আর লম্বা চুল ভালো লাগে? যাই হোক, স্যামন্তক চুল কাটতে দেবে না, আবার আবদার যে প্রেমিকা জিন্স ও পড়বে, যায় কোথায়। তাই চুলে একটা খোঁপা বাঁধা। পুবালী একটা নীল জিন্স, সিতাভ্র চায় যে যখন ঘুরতে যাবে তখন যেন একদম দারুন ড্রেস করে তার বউ। ঘরে যাই পরুক না কেন, ঘুরতে গেলে ওর চাই আধুনিকা স্ত্রী। পুবালীর সেই নিয়ে কোন দ্বিরুক্তি নেই, স্বামীর ভালবাসার কাছে সারা পৃথিবীর সব সুখ যেন তুচ্ছ।

তিনটে বড় বড় ব্যাগ তাতে জামাকাপড় আর শীতের কাপড়, দুটো ছোটো ব্যাগ তাতে কিছু হাতে রাখার জিনিস আর একটাতে খাবার দাবার। দুই বান্ধবী বেশ উৎফুল্ল, ঘুরতে যাবে। সেই যে বিয়ের পরে পুবালী মধুচন্দ্রিমার সময়ে ঘুরতে গেছিল তারপরে আর সিতাভ্র ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে বের হয়নি। খুব কাজের চাপ, রাশিয়া থেকে ট্রেনিং নিয়ে ফিরে আশার পরে তো কাজের চাপ আর বেড়ে গেছে। সরকারি চাকরি তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে, অন্তত ভাইটার মতন নয়, ভাইয়ের কথা ভেবে মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। সাধারন দিনেও মাঝে মাঝে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। সিতাভ্রকে বলেছিল একবার যে দেখ না ভাইটার কিছু করা যায় কিনা। কিন্তু স্যামন্তক জানিয়ে দেয় যে ও নিজের তাগিদে, নিজের চেষ্টায় চাকরি করবে। পুবালী সেইদিনের পর থেকে আর চায় নি ভাইয়ের সম্মানে আঘাত লাগুক, একটি মাত্র ভাই। বন্দনা বেশ খুশী, এই প্রথম বার হৃদয় সঙ্গির সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, অবশ্য সব কিছুই ওর ঘোরার মতন হচ্ছে। কোলকাতা থেকে দিল্লী আসা তারপরে এই পুবালীদের সাথে জয়শাল্মির যাওয়া, সব কিছু তো একটি বৃহৎ ভ্রমনের অঙ্গ।

"কি রে একবার ফোন করে দেখ তো সামু কে" পুবালী জিজ্ঞেস করে বন্দনাকে।

"কেন তুই করতে পারিস না?" 

"আরে আমি করলে ঝাঁজিয়ে উঠবে দু’জনে, তার চেয়ে তুই একজনার শালি আর এক’জনার নতুন প্রেমিকা। তুই একদম সেফ সাইডে" হেসে বলে পুবালী।

ফোন করল বন্দনা "কি গো, কোথায় তোমরা।"

স্যামন্তক "কেন কি হল?"

"কি হল মানে" গলার স্বর একটু চড়িয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা "বের হবে কখন, আমাদের ড্রেস করতে বলে গেলে আর নিজেরা বেপাত্তা। পনেরো মিনিটের মধ্যে যদি বাড়ির সামনে না দেখি তো আমি আর যাবনা।"

"উফ, দেখো মেয়ের কাণ্ড, আসছি এই আসছি। জাস্ট আধা ঘণ্টা ডার্লিং, ব্যাস।"

স্যামন্তক কাতর স্বরে বলে ওঠে। 

ফোন রেখে দিতেই পুবালী ওর দিকে হেসে বলে "কিরে দেখলি তো কাজ হল। এই যদি আমি বলতে যেতাম আমাকে দুজনে মলে এমন কথা শোনাত যেন আমি কত পাপ করে ফেলেছি।"

মিনিট পনেরো পরেই বাড়ির সামনে গাড়ি এসে হাজির। স্যামন্তক গাড়ি থেকে নামতে নামতে সিতাভ্র কে বলে "ধুর তোমার জন্য তো দেরি হল, কি না একটা মারতেই হবে যাবার আগে। এবার বোঝো ঠেলা, আমাদের দুই চন্ডী মাতা বসে আছেন আমাদের পিঠের ছাল নামানর জন্য।"

একটা কোল্ড বক্সে বরফের মধ্যে খান দশেক বিয়ারের ক্যান। ক্যানটা ডিঁকি তে ঢোকাতে হবে দিদি দেখলে তাও ঠিক আছে কিন্তু বন্দনা জানে না যে ও ড্রিংক করে। 

সিতাভ্র ওর মুখ দেখে বুঝে যায় "ধুর এত ভয় পেলে হবে, চল ওপরে। বক্সটা ওখানেই থাক, যেতে যেতে দুটো মারবো। সেই তো সারা রাত ধরে গাড়ি চালাতে হবে।"

"চিন্তা নেই আমি চালিয়ে নেব কিছুটা।"

"উপ্স তাহলে হয়েছে।"

"আরে বাবা, তুমি ছিলেনা, ঐ দশ দিনে আমি গাড়ি শিখে নিয়েছি।"

"তাই বলি শালা, বাম্পারে স্ক্রাচ লাগলো কি করে। যাই হোক তোমার দিদি হয়তো দেখেনি এই স্ক্রাচ না হলে কুরুক্ষেত্র বেঁধে যেত।"

"আরে বাবা, ভয় পেওনা, বলে দিও যে আমি স্ক্রাচ মেরেছি, দেখবে কিছু বলবে না।" স্যামন্তক জানে দিদির দুর্বলতা। 

গাড়ির আওয়াজ শুনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুই বান্ধবী ওদের দেখে হাসে। ওপর থেকে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনে পুবালী বন্দনা কে বলে "ছেলেটা যে বিয়ার খায় এটা তো আমিও জানতাম না রে।"

"হুম, তোর ভাই তোকে খুব ভয় পায়।"

"ভয় পায় না ঘোড়ার ডিম। দেখলি তো গাড়িতে স্ক্রাচ মেরেছে, আর কি বলছে যে দিদি কে বল যে আমি মেরেছি দিদি কিছু বলবে না।" হেসে ফেলে দু’জনে তারপরে নিচের দিকে চেঁচিয়ে ওঠে "এই যে হল তোমাদের বিয়ার কেনা।"





নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#02)

ওপরে তাকিয়ে চমকে ওঠে দুজনে, আমতা আমতা করে মাথা চুলকায় স্যামন্তক। পুবালী মৃদু রাগের স্বরে বকে দেয় "আয় তুই ওপরে তোর বিয়ার খাওয়া বের করে দিচ্ছি।"

ওপরে উঠে স্যামন্তক বলে "চল বেড়িয়ে পড়ি, না হলে দেরি হয়ে যাবে।"

পুবালী আর বন্দনা সিঁড়ি দিয়ে আগে নামে, পেছনে সিতাভ্র আর স্যামন্তক হাতে ব্যাগ নিয়ে নামে। বন্দনা মাথা ঘুড়িয়ে ওদের দিকে দেখে যে দুজনে কেমন একটা চোখে দুই নারীর দিকে তাকিয়ে আছে। 

বন্দনা পুবালী কে জিজ্ঞেস করে কানেকানে "কিরে, ওরা আমাদের দিকে ওই রকম লুচ্চার মতন তাকিয়ে কেন?"

পুবালী হেসে উত্তর দিল "আরে আমারটা তো পেছন পাগল, তোরটা তোর কি দেখছে আমি জানিনা।" কথা শুনে দুজনে হেসে ওঠে। 

গাড়ির পেছনে ব্যাগ রাখার সময়ে বন্দনা স্যামন্তকের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল "ওইরকম ভাবে কি দেখছিলে বলতো?"

স্যামন্তক নাক মুখ কুঁচকে হেসে বলে "কেন বলব? আমরা যা দেখার সব তোমাদের বলতে হবে নাকি?"

"আমি জানি, তুমি যা ছেলে তুমি ওইসব ছাড়া আর কিছু দেখতে পারনা। সেই বিড়লা মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ও শুধু মেয়েদের পাছা দেখে যাচ্ছিলে।" 

কথা শুনে স্যামন্তক হেসে ফেলে, একটু খানি ঝুঁকে বন্দনার কানে কানে বলে "তোমাকে জিন্সে যা লাগছে না, কি যে বলি, আরও ভালো হত যদি স্লাক্স টা পরতে বেশ মনে হত যে কিছুই পরে নেই।"

আদরের মার মারতে শুরু করে বন্দনা স্যামন্তকের পিঠের ওপরে। "উফ, এখনি মেরো না, মারার অনেক সময় আছে।"

পুবালী গাড়ির মধ্যে বসে পেছনে তাকিয়ে দেখে, বন্দনা আর স্যামন্তক মারামারি করছে, তবে প্রেমের ঝগড়া, হেসে বলে "এই তোরা কি গাড়িতে উঠবি না, বাড়ির চাবি দিয়ে যাবো, বাড়িতে থাক বাড়ি পাহারা দে আর নিজেদের ঝগড়া বাড়ি গিয়ে কর।"

দিদির কথা শুনে একটু খানি লজ্জায় পরে যায় স্যামন্তক, বন্দনা গাড়িতে উঠে পড়ে।

হাইওয়ে আট ধরে গাড়ি ধেয়ে চলে, স্টিয়ারিংএ সিতাভ্র বসে, পাশে পুবালী। পেছনের সিটে বন্দনা আর স্যামন্তক। পুবালী সিতাভ্র কে জিজ্ঞেস করল যে কতক্ষণ লাগবে জয়শাল্মির পৌঁছতে, সিতাভ্র উত্তর দিল যে কুড়ি ঘন্টার মতন লাগবে। তখন বাজে দুপুর দুটো, জয়শাল্মির পৌঁছতে পৌঁছতে সকাল দশটা এগারোটা তো বেজে যাবে।

শুনে আঁতকে ওঠে পুবালী "তুমি একা একা এতটা রাস্তা চালাবে? কবে থেকে বলেছি আমাকে একটু গাড়ি শেখাও তা না।"

পেছন থেকে স্যামন্তক বলে "আরে আমি কিছুটা চালিয়ে নেব, চিন্তা নেই তোর।"

"তুই কবে চালান শিখলি?" পুবালী ঘাড় ঘুড়িয়ে স্যামন্তকে জিজ্ঞেস করল। 

"এই যখন তোরা কোলকাতা গেছিলি তখন গাড়িটা শিখে নিয়েছি।"

"আমি গাড়ি থেকে তাহলে নেমে যাবো" বন্দনা হেসে বলে ওঠে "আমি বাবা অকাল মৃত্যু বরণ করতে চাই না, এখন বিয়ে হয় নি আমার আর বিয়ের আগেই..."

বন্দনা স্যামন্তকের গা ঘেঁসে বসে ছিল, স্যামন্তক বাঁ হাতে জড়িয়ে ধরেছিল বন্দনা কে। কথা শুনে পেটের ওপরে কাতুকুতু দিয়ে কানেকানে বলে "তোমার চিন্তা কি, বলত মাঝখানে কোথাও গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটা মন্দির দেখে বিয়ে করে নেব।"

"হ্যাঁ, হয়েছে তোদের অনেক।" পুবালী ওদের প্রেমালাপ শুনে ফেলে বলে "যা করছো করো, এমন কিছু করো না যে আমাকে ন’মাস আগেই বিয়ের দিন ঠিক করতে হয়।"

সিতাভ্র এতক্ষণ চুপ করে গাড়ি চালাচ্ছিল, কিছু বলতে পারছিল না। গুরগাঁওয়ে এত ট্রাক আর গাড়ির জ্যাম যে কোন কথা ঠিক মতন কানে যাচ্ছে না। কিছুক্ষণের মধ্যে খালি রাস্তা এসে পড়লো, গাড়ি ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলে। বারবার পুবালী পেছন ঘুরে তাকিয়ে গল্প করছিল বন্দনা আর স্যামন্তকের সাথে, কিছুক্ষণ পরে সিতাভ্র পুবালী কে বলল যে ওরা দুই মেয়ে পেছন সিটে বসে পড়ুক, ছেলেদের কিছু কাজ আছে। একটি ফাঁকা জায়গায় গাড়ি দাঁর করিয়ে নেমে পরে সিতাভ্র, স্যামন্তককে ডেকে বলল যে দুটি বিয়ার ক্যান বের করতে। স্যামন্তক একবার দিদির দিকে দেখে সিতাভ্রকে বলল যে ও যদি বের করে বিয়ার ক্যান তাহলে পুবালী ওর মাথার ঘিলু বের করে দেবে।

পুবালী ওর দিকে দেখে বলে "ঠিক আছে, ঘুরতে যাচ্ছি বলে মাফ করে দিচ্ছি, তবে যে দিন বাড়িতে খেয়ে ঢুকবি সেদিন বাড়ি থেকে বের করে দেব।"





নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#03)

তিড়িং করে লাফিয়ে ওঠে স্যামন্তক, যাক বাবা সুপ্রিম কোর্ট অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। বন্দনা চুপ করে স্যামন্তক আর পুবালী কে দেখে, দেখে দিদির প্রতি ভাইয়ের ভালবাসা আর শ্রদ্ধা। ভয় তাকেই পাওয়া যায়, যাকে মানুষ সব থেকে বেশি ভালবাসে নিজের জীবনে। ওকে এই জায়গা টাকে অর্জন করতে হবে, কিন্তু দিদির ভালবাসা খণ্ডন করে নয়, নিজের বুক ভরা প্রেম ভালোবাসা দিয়ে। দিদির স্থান এক অন্য জায়গায়, প্রেমিকার স্থান এক অন্য সমান্তরালে। 

কথায় গল্পে মুখর হয়ে ওঠে যাত্রা। বন্দনা যখন ডিব্রুগড়ে থাকতো, তখন পুবালী একবার ওদের বাড়িতে গেছিল, ঠিক শীতকালের পরেপরে। দু’জনে মিলে একসাথে অরুনাচল প্রদেশ ঘুরতে গেছিল। সেই বরফে ঢাকা তাওয়াং উপত্যকা, হিমালয়ের কোলে ঠিক একটি পটের ছবির মতন আঁকা সুন্দর সেই সাদা ছোট্ট শহর। বরফের মধ্যে গড়াগড়ি খাওয়া, বরফ নিয়ে খেলা। ঠিক যেন মর্তের ওপরে ছোট্ট একটি স্বর্গ রাজ্য, পৃথিবীর এই জনারন্যের থেকে অনেক অনেক দুরে, মানুষেরা কত সাদাসিধে। সেই বরফে ঢাকা সেলা পাস পেরিয়ে বরফ জন সেলা লেক। কথা গুলো মনে করে দুই বান্ধবী কেমন যেন হারিয়ে যায়। বন্দনার মনটা একটু ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, ডিব্রুগড়ে সারা জীবন কাটিয়েছে, বড় হয়েছে সেখানে, খেলেছে ব্রমহপুত্রের তিরে। পুবালী ওর চোখ দেখে বুঝতে পারল যে বন্দনা নিজের সেই ছোটোবেলার কথা মনে করে মন খারাপ হয়ে উঠেছে।

হাসির ছলে মন ভুলানর জন্যে থাপ্পর মেরে বলে "আরে মন খারাপ করছিস কেন, হানিমুনে তোরা তাওয়াং যাস।"

চোখের কোনে এক চিলতে জল চলে এসেছিল বন্দনার একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে "তাওয়াং নয় রে, পুবালী, আমাকে ব্রক্ষ্মপুত্র টানছে।"

"তুই চিরকাল তো আর সেই ডিব্রুগড়ে থাকতিস না রে। যেতে হত সেই জায়গা ছেড়ে একদিন।" 

"তাহলেও, বড় হয়েছি ওখানে যে।"

"ওকে বাবা, সামু নিয়ে যাবে তোকে।"

হেসে বলে বন্দনা "নিজের বাড়ি যাবার সময় হয়না ওর আবার আমাকে নিয়ে ডিব্রুগড় যাবে, তাহলে হয়েছে।"

স্যামন্তক আর সিতাভ্র, দুজনের বিশেষ কিছু বলার নেই, কওয়ার নেই, চুপ করে দুজনে বিয়ারে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে আর সিতাভ্র একমনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুড়িয়ে স্যামন্তক পেছনে বসে থাকা নিজের প্রেমিকার দিকে একবার করে দেখে একটু হেসে যাচ্ছে। কি করবে আর, পাশে বসে থাকলে না দিদির চোখ চুরিয়ে চুপিচুপি একটু দুষ্টুমি করা যেত, সামনে বসে সেটা আর সম্ভব নয়। 

পুবালী এর মাঝে ফোন করে বাড়িতে জানিয়ে দেয় যে ওরা রওনা দিয়েছে, জয়শাল্মির পৌঁছে জানিয়ে দেবে। রাস্তার অত্যধিক যানজটের ফলে জয়পুর পৌঁছতে পৌঁছতে বেশ রাত হয়ে যায়, প্রায় রাত ন’টা। জয়পুরে নেমে রাতের ডিনার সেরে নিল ওরা। বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা, রাস্তায় কুকুর ছাড়া আর কোন প্রাণীর দেখা নেই। এবারে সিকর রোড ধরে এগিয়ে যেতে হবে সেই বিকানীর পর্যন্ত তারপরে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার মরুভুমির মাঝখান দিয়ে যাত্রা। জয়পুর থেকে যখন যাত্রা শুরু করে তখন বাজে রাত সাড়ে দশটা। গাড়ির হেডলাইটের আলো গিয়ে ফিরেও আসেনা, এই রকম ঘুটঘুটে অন্ধকার। পুবালী আবার সামনে চলে গেছে, নিজের বরের পাশে, গিয়ারের ওপর দিয়ে প্রায় গা ঘেঁসে বসে। পেছনে বন্দনাকে এক প্রকার কোলের ওপরে তুলে বসে স্যামন্তক। 

কিছুক্ষণের মধ্যে মনে হল যেন ঘুম পাবে। সিতাভ্রর দু’চোখ ঢুলু ঢুলু, গাড়ি সিকর পৌঁছানোর একটু আগে গোঁত্তা খেয়ে প্রায় একটা গাছে ধাক্কা মারার যোগাড়। ব্যাস, সেই দেখে সবার ঘুমের গেল বারোটা বেজে। বন্দনা কি সুন্দর স্যামন্তকের বুকের ওপরে মাথা দিয়ে আদর খাচ্ছিল, গেল সেটা ভেস্তে। সবার যেন প্রান হাতে চলে এলো।

স্যামন্তক, সিতাভ্রর অবস্থা দেখে বলল "দাও, আমাকে বাকিটা আমি চালাচ্ছি।"

পুবালী জিজ্ঞেস করল "তোর ঘুম পাচ্ছে না?"

"না ঘুমের তো বারোটা বাজিয়ে দিল তোর বর।" স্যামন্তক সিতাভ্রর উদেশ্য বলে উঠলো। সিতাভ্র আর স্যামন্তক দু’জনে গাড়ি থেকে নেমে একটু গাড়ির এদিক ওদিকে দেখে নিল, সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি না। দেখে সন্তুষ্ট হয়ে স্যামন্তক সামনে স্টিয়ারিং ধরে বসে পড়লো। বন্দনা পাশের সিটে, সিতাভ্রকে পুবালী পেছনে ডেকে নিয়েছে। গাড়ি আবার ধেয়ে চলে, নিস্তব্ধ নিশুতি রাতের অন্ধকার চিরে। শুরু শুরু তে একটু খানি ব্রেক আক্সিলেটর নিয়ে অসুবিধা হয়েছিল স্যামন্তকের, কয়েক কিলোমিটার পেরিয়ে যেতেই, সব অসুবিধা কাটিয়ে গাড়ি ছোটাতে শুরু করে দেয় খালি রাস্তার ওপর দিয়ে।

কিছুক্ষণের মধ্যে সিকর পেরিয়ে যায় ওরা, বন্দনা পেছনে তাকিয়ে দেখে যে সিতাভ্র বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। পা দুটি ভাঁজ করে সিটের ওপরে রেখে, স্যামন্তকের দিকে গা ঘেঁসে বসে। 

"কি গো ঠাণ্ডা লাগছে" জিজ্ঞেস করে বন্দনা।

একবার ধিরে করে পেছন দিকে তাকায় স্যামন্তক, দেখে দিদি জামাইবাবু ঘুমিয়ে পড়েছে। বন্দনার গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে "ঠাণ্ডা লাগবে কিকরে পাশে যদি এত উষ্ণতা নিয়ে কেউ বসে থাকে তাহলে তো এবারে আমি গাড়ি নিয়ে বালিতে চড়িয়ে দেব।"





নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#04)

হেসে ফেলে বন্দনা "অনেক হয়েছে, তোমার প্রেম নিবেদন। সামনে দেখে গাড়ি না চালালে এবারে সত্যি কিছু একটা ঘটিয়ে দেবে।"

"সিট পেছনে হেলিয়ে দিয়ে তুমি ঘুমোতে পারো।" স্যামন্তক বলে।

"তুমি জেগে গাড়ি চালাবে আর আমি ঘুমব, আমি অতটা পাষাণ হৃদয়ের মেয়ে নই সামু" মাথার চুলে বিলি কেটে উত্তর দেয় বন্দনা। 

"উমম... চুলে হাত দিও না, তোমার হাতের ছোঁয়ায় কিন্তু আমার ভেতরে কেমন কেমন করছে। গাড়ি দাঁর করিয়ে দিয়ে কিন্তু......" বত্রিশটি দন্ত বিকশিত করে স্যামন্তক চোখ টিপে বলে।

কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে বন্দনা "গাড়ি দাঁড় করিয়ে কি করবে?"

"দেখতে চাও কি করব?" 

বন্দনাও কম যায় না স্যামন্তকের সাথে খুনসুটি করতে, জ্যাকেটের চেন খুলে দেয় "হ্যাঁ করবে টা কি, তুমি কিছুই করতে পারবে না, একে তো হাতে স্টিয়ারিং ধরে তারপরে পেছনে তোমার দিদি।" বলেই হি হি করে হেসে দেয়।

স্যামন্তকের অবস্থা খারাপ, গাড়ি চালাবে কি, ওর স্বর্গের নর্তকী তো গাড়ির মধ্যে দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছে। অসুবিধা তো স্যামন্তকের, বন্দনার তো সিটের পেছনে লুকিয়ে, পেছন থেকে কেউ দেখতে পাবেনা ও কি করছে। ডান হাত, স্টিয়ারিঙ্গে বাঁ হাত গিয়ারের ওপরে, চোখ সামনের দিকে, চোয়াল শক্ত। প্রেয়সীর দুষ্টুমি দেখতে হলে গাড়ি থামাতে হবে আর দিদি জেগে গেলে একদম কেলেঙ্কারি কাণ্ড। 

মৃদু ধমকানির সুরে বলে স্যামন্তক "বদমাশি করা থামাবে, না হলে আমি ঠিক গাড়ি থামিয়ে দেব এবারে।"

মাথার পেছনে হাত দিয়ে চুল খুলে ফেলে বন্দনা, মাথা ঝাঁকিয়ে নিয়ে চুল গুলো এলোমেলো করে দেয়, কিছু গুচ্ছ চুল ওর মুখের ওপরে এসে যায়, কিঞ্চিত ঢেকে যায় মুখটা "ওকে, আমি কিছু করব না।"

কিন্তু উচ্ছল নারী তার প্রেমিকের হৃদয় আন্দলিত করার জন্য রূপের ডালি সাজাতে শুরু করে ঐ নিশুতি রাতের অন্ধকারে। স্যামন্তকের গালে মাথায় বন্দনার চুল উড়ে আসে।

এবারে রেগে যায় স্যামন্তক, গাড়িতে ব্রেক কষিয়ে বলে "ধুর আমি আর চালাবো না।"

ব্রেকের চোটে সামনে ঝুঁকে পরে বন্দনা, দিদি আর সিতাভ্র জেগে যায়। "কি হল" ঘুম জড়ানো চোখে জিজ্ঞেস করে পুবালী। বন্দনা উত্তর দেয় যে গাড়ির সামনে কুকুর এসে গেছিল তাই গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। স্যামন্তক একবার কটমট করে তাকাল বন্দনার দিকে, মাথা দিয়ে মাথায় টোকা মেরে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করল।

গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে বিকানির ছাড়িয়ে যায়। বন্দনা চুপ করে স্যামন্তকের সিটের পেছনে হাত রেখে বসে। গাড়ি সিঙ্গেল লেন রোড ধরে ধেয়ে চলে। সামনে পেছনে কোণ গাড়ি নেই, দুপাশে কিছুই নেই, কোণ গ্রাম নেই, কোণ বসতি নেই, মাঝে মাঝে গাড়ি ধিরে করে দুপাশের আঁধারের মাঝে দেখতে চেষ্টা করে স্যামন্তক।

বন্দনা জিজ্ঞেস করে "কি আছে গো দুপাশে।"

"কিছু নেই, শুধু মনে হয় ছোটো ছোটো ঝোপ ঝাড় আর কিছু নেই।"

কানে কানে ফিস ফিস করে বলে "এই ঝোপঝাড়ের মধ্যে গাড়ি নিয়ে গেলে কেমন হয়।"

"তোমার সব অধভুত চিন্তা ধারা।"

"তুমি তো দেখছি একদম রোম্যান্টিক নও। সবকিছু কেমন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব, ওয়াইল্ড হতে হয়, বুঝলে।" চোখে যেন একটু বাসনার উষ্ণতা লেগে। কাছের মানুষটি এত কাছে তাও নিবিড় করে জড়িয়ে ধরতে পারছে না।

"একবার স্টিয়ারিং ধরে বস, আর আমি করি তোমার সাথে অয়াইল্ডনেস তারপরে দেখব। আর আমি ওয়াইল্ড কিনা সেটা আমি জয়সাল্মির পৌঁছে জানিয়ে দেব।" বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে স্যামন্তক।

"আচ্ছা বাবা, এবারে গাড়ি চালাও আমি কিছু ডিস্টার্ব করব না।" চুপ করে বসে পরে বন্দনা।

পোখরানের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, পেছনের আকাশে ঊষার লালিমা মাখছে আর সামনে বিস্তীর্ণ মরুভুমির হলুদ বালু। চোখে একটু খানির জন্য ঢুলুনি লাগে স্যামন্তকের, পাশে তাকিয়ে দেখে, বন্দনা জেগে বসে। কি করে ঘুমোয় বন্দনা একা একা ছেড়ে, তাই প্রানপনে নিজেকে ঘুমের কোলে সঁপে দিতে গিয়েও পারেনি, ছেলেটা যে জেগে আছে।

"কি হল ঘুম পাচ্ছে নাকি?" বন্দনা জিজ্ঞেস করে।

"হুম এবারে পাচ্ছে।" 

"দাড় করিয়ে একটু মুখে জল দিয়ে নাও ঠিক হয়ে যাবে।" 

ভোরের আলো কালো রাতের আঁধার কে ঠেলে সরিয়ে আকাশকে রঙ্গিন করে তুলেছে, শীতের সকাল কিন্তু এই দিকের হাওয়ায় শুষ্কতা মাখা। গাড়ি থেকে নেমে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে নেয় স্যামন্তক, নিজেকে ধাতস্থ করার জন্য একটা সিগারেট জ্বালায়। বন্দনা জ্যাকেটটা জড়িয়ে ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। 

ভোরের মতন মিষ্টি হেসে বলে "এনার্জি চাই নাকি তোমার!"





নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#05)

ঠোঁট দেখে স্যামন্তকের লোভ হয়, একটু এনার্জি সত্যি লাগবে এতটা গাড়ি চালিয়ে গা হাত পা ব্যাথা করতে শুরু করে দিয়েছে। দু, তিন টানে সিগারেট শেষ করে বন্দনার পেলব কমনীয় দেহটি বাহুপাশে আবদ্ধ করে নেয়। বন্দনা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে স্যামন্তকের গলা, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মরুভুমির নব ঊষা বরণ করে কপোত কপোতী। অধর ওষ্ঠের ঘর্ষণে নিদ্রা সহস্র যোজন দুরে পলায়ন করে, শরীরের উষ্ণতা বণ্টন করে নেয় দু’জনে মিশে যায় দুই বক্ষ দুই প্রান।

গাড়ি থামার ফলে পুবালী, সিতাভ্র উঠে পরে। দেখে যে গাড়ির সারথি, গাড়ি থামিয়ে প্রেমে মগ্ন। স্ত্রীর ঘুম জড়ানো চোখের মাঝে হারিয়ে যেতে বর ইচ্ছে করে সিতাভ্রর, কেউ যখন পাশে নেই, তখন সেই মাদকতাময় সম্মহিনির বাহুপাশে নিজেকে সঁপে দেয়। 

চুম্বনের রেশ ঠোঁটে মেখে উতপ্ত হয়ে ওঠে স্যামন্তক, ঠোঁট জোড়া ছেড়ে বলে "চল এবারে যাওয়া যাক, নাহলে দিদি উঠে পরে আমাদের দেখে কিছু একটা ভাবতে পারে।"

দুহাতে স্যামন্তকের কোমর জড়িয়ে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলে "হ্যাঁ চল।"

গাড়ির ভেতরে চোখ যায় বন্দনার, দেখে হেসে ফেলে বলে স্যামন্তককে "না আমরা শুধু একমাত্র প্রাণী নয় যে কিনা এই তপ্ত বালুচরের উষ্ণতা বুকে এঁকে নিয়েছি, ঐ দেখো গাড়ির ভেতরে।"

স্যামন্তক দেখেও না দেখার ভান করে। 

ওদের কাছে আসতে দেখে প্রেমের জোয়ারে ভাটা টানে সিতাভ্র, ছেড়ে দেয় সুন্দরী স্ত্রীর কোমল ওষ্ঠ। স্যামন্তককে দেখে বলে "তোমাদের দেখে মনে হল আমরা কি বুড়ো হয়ে গেছি নাকি?"

হা হা করে হেসে ওঠে চারজনেই।

সকাল দশটা নাগাদ জয়শাল্মির পৌঁছায়, ঠিক কেল্লার পেছন দিকের বাজারের কাছে একটি সুন্দর হোটেল নেয় ওরা। হোটেলের জানালা দিয়ে গাড় হলুদ রঙের কেল্লাটা সেই সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লার মতন দেখতে মনে হয়, সকালের মিষ্টি রোদে ঝলমল করছে হলদে বালি পাথরের নির্মিত কেল্লা। সেই ফেলুদার গল্পের শুটিঙের পরে এই কেল্লার নতুন নামকরণ, সোনার কেল্লা। 

হোটেলের কামরার মধ্যে ঢুকে পরে জুত জামা না খুলে এক লাফে বিছানার ওপরে শুয়ে পরে বন্দনা। স্যামন্তক ব্যাগের ভেতর থেকে ক্যামেরা বের করে বাইরে কিছুর ছবি তুলতে ব্যাস্ত। বন্দনা, দেখে রেগে যায়, কি ছেলেরে বাবা, ছবি তোলা যেন পালিয়ে যাচ্ছে। চেঁচিয়ে বলে "এইযে ক্যামেরা ম্যান, ছবি তোলা বন্দ করে যদি একটু বউয়ের দিকে নজর দেন তো এই তৃষ্ণার্ত চাতকীর প্রান কৃতার্থ হয়।"

"তোমাকে দেখতে এসেছি নাকি আমি?" রাগিয়ে দেয় স্যামন্তক।

"ওকে আমাকে দেখতে আসনি, খুব ভালো কথা, এটা যেন মনে থাকে।"

হাঁটু গেড়ে বসে পরে বিছানার ওপরে। প্রথমে জ্যাকেটটা খুলে একদিকে ছুঁড়ে মারে বন্দনা। খিলখিল করে হেসে ওঠে মাথার নাড়িয়ে, চুল গুল কিছু সামনে চলে আসে, ঢেকে দেয় সুন্দর মুখখানি। হাসি শুনে ক্যামেরা হাতে ঘুরে দাঁড়ায় স্যামন্তক, সাদা ধবধবে বিছানার ওপরে প্রানের জলপরী ঠিক যেন উত্তাল সমুদ্র তরঙ্গে ঢেউ খেলে মেতেছে নিজেকে উজার করার খেলায়। বাঁ হাতের তর্জনী বেঁকিয়ে কাছে ডাকে বন্দনা। হাতের ক্যামেরা চোখের ওপরে উঠে আসে, ক্লিচ, একটি ছবি, এই লাস্যময়ী নারীর। গোলাপি জিব বের করে নিচের ঠোঁটের ওপর বুলিয়ে ভিজিয়ে নেয়, বন্দনা। 

স্যামন্তকের মাথার রক্ত ধিরে ধিরে গতি ধারন করছে। কোমরে হাত রেখে, জিন্সের বেল্ট খুলে ফেলে দেয় বন্দনা। এবারে, শক্তির পরীক্ষা কে জেতে। বুকের ওপরে হাত চলে আসে রমণীর, উন্নত বক্ষ যুগল, পরনের জামার ভেতরে এতক্ষণ যেন ছাড়া পাওয়ার উৎকণ্ঠা নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিল। একটানে সবকটি বোতাম খুলে ফেলে, জানালা দিয়ে উপচে আসা মিষ্টি রোদ, বক্ষের মসৃণ ত্বকের ওপরে পিছলে পরে। কি করছে মেয়েটা। গায়ের জামা খুলে ফেলে একটানে, ঊর্ধ্বাঙ্গ, অনাবৃত, শুধু মাত্র কালো একটি বক্ষবন্ধনী দ্বারা সুগোল বক্ষ কোনরকমে ঢাকা। দুই বক্ষ যেন একে ওপরের সাথে যুদ্ধ করছে। বক্ষ মাঝের গভীর উপত্যকা হাতছানি দিয়ে ডাকছে স্যামন্তককে, কি হল আর কত দেরি করবে তুমি।

ক্যামেরাটা চেয়ারে রেখে এগিয়ে আসে স্যামন্তক। বনার চোখে কামনার তরল অগ্নি। স্যামন্তক বিছানার পায়ের দিকে এসে দাঁড়ায়, পরনের জামা, গেঞ্জি একটানে খুলে ফেলে। অনাবৃত পেশিবহুল ছাতি দেখে ঝাঁপিয়ে ওঠার মন চায়, কিন্তু আরও একটু যেন মাতোয়ারা করার প্রবল ইচ্ছে জাগে জলপরীর মনের কণে। সামনে যেন একটি মত্ত বাঘ, বাঘিনীর দিকে স্বাদন্ত বের করে তাকিয়ে, এই যেন খাবলে খুবলে কোমল নধর দেহটিকে আস্টে পিষ্টে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে।

গলায় স্বরে নেশার ঘোর মিলিয়ে ডেকে ওঠে বন্দনা "কি গো, তুমি আমার বুনো চেহারা দেখনি আগে।"

একটু খানি পেছনে সরে শুয়ে পরে বন্দনা, কোমর থেকে টেনে পরনের জিন্স নামিয়ে দেয় হাঁটু পর্যন্ত। বাঘের চোখে আগুন, সামনে এত সুন্দর বাঘিনী তার লাস্যময়ী রূপ ধরে কেলি করছে, কিন্তু ছুঁতে দিচ্ছে না। পরনের এক চিলতে কালো রঙের কটি বন্ধনি রূপের আধার ঢেকে রাখতে অক্ষম। জিন্সের দু’পায়ে হাত দিয়ে একটানে খুলে ফেলে স্যামন্তক। চোখের সামনে প্রান প্রেয়সী শুধু মাত্র অন্তরঙ্গ পরিধানে পরিহিত, যেটুকু না ঢাকলে সভ্য সমাজ আমাদের সভ্য বলে গন্য করে না, সেই দুই স্থান ছাড়া সারা অঙ্গ অনাবৃত।





নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#06)

"দেখলে হবে সোনা? খরচা আছে।"

খিলখিল করে হেসে ওঠে বন্দনা।

শরীরের সহস্র শিরায় উপশিরায় বয়ে চলে তরল অগ্নি, ক্ষিপ্ত স্যামন্তকের বাঘ লোলুপ দৃষ্টি হেনে তাকিয়ে আছে কামিনীর মত্ত রূপের পানে। 

"সো, ইউ অয়ান্ট টু প্লে হানি" চোখ দুটি ছোটো ছোটো করে দাঁতে দাঁত পিষে বলে স্যামন্তক।স্যামন্তক এক লাফে বিছানার ওপরে চড়ে যায়।

উচ্ছল তরঙ্গিণীর ন্যায় ঘুরে শুয়ে পরে বন্দনা "তুমি তো দেখতে চেয়েছিলে তাই না।" একলাফে বিছানা থেকে নেমে পরে "ধরতে আমাকে পারবে না।"

বিছানার ওপরে শুয়ে হেসে ফেলে স্যামন্তক, হেরে গেছে বাঘিনীর কাছে। লাস্যময়ী রমণী, কটিদেশে ঢেউ খেলিয়ে বাথরুমের দিকে হেঁটে যায়। পরনে শুধু মাত্র ক্ষীণ বক্ষবন্ধনি আর সরু কটিবন্ধনি। সারা শরীরে যেন কামনার আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে। দুই সুগোল নিটোল নিতম্ব চোখের সামনে সম্পূর্ণ উন্মচিত, কিছুই আর ভেবে দেখার নেই, সব কিছুর ওপরে থেকে পর্দা উঠে গেছে। 

পেছনে হাত নিয়ে গিয়ে বক্ষের শেষ পরিধান টুকু মেঝেতে ফেলে দেয়। উন্নত বক্ষযুগল, এতক্ষণ যাহারা হাঁসপাস করছিল ঐ দৃঢ় বক্ষবন্ধনী মাঝে, তারা যেন ছাড়া পেয়ে নেচে ওঠে "ওখানে শুয়ে থাকবে না আমার সাথে স্নান করতে আসবে?"

বলার কি দরকার ছিল, আমি কি তোমাকে এমনিই ছেড়ে দিতাম নাকি, ভাবে স্যামন্তক। এক্লাফে বিছানা ছেড়ে নেমে জড়িয়ে ধরে প্রেয়সীর কোমল শরীর। দু হাতে কোলে তুলে নেয় হৃদয়ের তস্করি কে। কোমল পেলব দেহখানি নিয়ে ঢুকে পরে স্নান ঘরে। দুহাতে স্যামন্তকের গলা জড়িয়ে ধরে নগ্ন রমণী। মাথার ওপরে জলের ফোয়ারা, তার নিচে দাঁড় করিয়ে জলক্রীড়ায় মেতে ওঠে ভিজে থাকা বাঘ। আস্টে পিস্টে কোমল দেহখানি বারংবার নিয়ে চলে সুদুর সুখের সমুদ্রে, বাসনার আগুনে সিক্ত বাঘিনী নিজেকে পুনরায় সঁপে দেয় প্রানের রাজকুমারের হাতে। স্নান এবং তার সাথে রতিক্রীড়া সেরে সিক্ত দেহে কোলে উঠে আবার সাদা ধবধবে বিছানার ওপরে রত হয় পুনরায়। থেকে থেকে যেন আর শেষ হয় না দুজনে, হাঁপিয়ে উঠেও যেন নবীন শক্তি নিয়ে মত্ত হয় দু’জনে।

স্যামন্তক বন্দনার দেহখানি নিজের বুকের ওপরে নিয়ে কেলি শেষে শুয়ে থাকে, শরীরের শেষ শক্তি টুকু উজার করে একে ওপরকে মাতিয়ে দিয়েছে। সোহাগের চুম্বনে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে যায় স্যামন্তকের বুক, দুহাতে জড়িয়ে আছে বন্দনাকে। 

এমন সময়ে ফোনের রিং বাজে "কিরে তোরা কি করছিস" পূবালীর গলা অন্য দিকে থেকে।

রিসিভার কানে ধরে স্যামন্তকের চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় বন্দনা "তোর ভাই আমাকে ছারলে তো আমি কিছু করব।"

হেসে ফেলে পুবালী "ঠিক আসছে বাবা, নিজেদের লাঞ্চ নিজের রুমে খেয়ে নিস। বিকেলে স্যাম যাবো, ওখানে রাতে রাজস্থানি প্রোগ্রাম দেখব।"

"ওকে ডার্লিং" তারপরে জিজ্ঞেস দুষ্টুমি ভরা স্বরে জিজ্ঞেস করে পুবালীকে "তোমার নিশ্চয় খালি বসে নও, শুধু কি আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি নাকি?"

"ভাই কি ঘুমোচ্ছে?" জিজ্ঞেস করে পুবালী।

স্যামন্তক তখন বন্দনার নগ্ন পিঠের ওপরে আঙ্গুল বোলাচ্ছে, ঠোঁটে একটি চুমু খেয়ে পুবালীকে উত্তর দেয় "হ্যাঁ ঘুমিয়ে পড়েছে, কেন বলতো?" বন্দনার খুব ইচ্ছে করছিল পুবালীর কথা শোনার, জানে যে যদি বলে যে স্যামন্তক জেগে তাহলে ওদের কেলির কথা শুনতে পাবে না, তাই মিথ্যে কথা বলে।

"উফ আর বলিস না। ঘরে ঢুকে আমাকে সেই যে নিয়ে পড়েছে এই উঠলাম।" চোখ বড় বড় হয়ে স্যামন্তকের দিকে দেখে বন্দনা যেন বলতে চাইছে দেখেছ তোমার দিদি কম যায় না। স্যামন্তক খুকখুক করে কেশে ওঠে, জানান দেয় দিদিকে যে ঘুমোয়নি ও। কাশি শুনে লজ্জায় পরে যায় পুবালী "কিরে ভাই তো জেগে, তুই আমাকে মিথ্যে কথা বললি, দাঁড়া পরে দেখাচ্ছি।"

স্যামন্তকের বুকের ওপরে শুয়েশুয়েই, ফোনে দুপুরের খাবারের অর্ডার দিয়ে দিল বন্দনা। কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার চলে এলো, দরজা খোলার আগে কোনরকমে কিছু একটা পরে নিল ওরা, খেয়ে দেয়ে আর একচোট পাগলামি করে দুজনে ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।

বন্দনা চোখ খুলে দেখে যে সূর্য ধিরে ধিরে পাটে বসার তৈরি করছে। এবারে নিজেদের ঠিকঠাক করে বের হওয়া উচিৎ, অনেক হল। পেটের ওপর থেকে স্যামন্তকের ভারী হাতখানা সরিয়ে দিয়ে বাথরুম ঢুকে তৈরি হয়ে নেয়।





নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#07)

তারপরে ধাক্কা দিয়ে স্যামন্তককে উঠিয়ে বলে "কিগো, যাবে না?"

"হুম, তুমি কখন উঠেছ।"

"এইতো, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। আমি দেখি ওরা কি করছে।"

বলে বেড়িয়ে যায় বন্দনা। পেছন থেকে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তক, বন্দনা একটা ধূসর জিন্স আর কালো টপ পরে, তার ওপরে একটা ধূসর কার্ডিগান চাপিয়ে। শরীরের প্রত্যেক বাঁকের সাথে যেন জিন্স আর টপটি এঁটে বসে।

পেছনে তাকিয়ে দেখে, স্যামন্তকের জিভ দিয়ে আবার জল পড়ছে, হেসে বলে বন্দনা "অনেক হয়েছে, এবারে মার খাবে। তাড়াতাড়ি কর।"

বাইরে বেড়িয়ে দেখে, সিতাভ্র গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। জিজ্ঞেস করে পুবালী কোথায়, পুবালী ওর ঘরে জেনে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। কিছুক্ষণের পরে সবাই বেড়িয়ে পরে স্যাম মরুভুমিরে দিকে। হোটেলের ম্যানেজার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিল স্যামের রাজস্থানি নাচ দেখার। 

স্যামে গিয়ে আগে ওরা উঠের পিঠে চড়ে। তারপরে দুরে একসারি তাঁবুর দিকে রওনা হয়, ওর মাঝে কোনো একটা জায়গায় ওদের রাতের খাবার ব্যাবস্থা আর রাজস্থানি প্রোগ্রাম দেখার ব্যাবস্থা। সূর্য কিছুক্ষণ আগে ডুবে গেছে, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে মরুভুমির ওপর দিয়ে। দুই বান্ধবী হাতে হাত দিয়ে এগিয়ে চলেছে গল্প করতে করতে, পেছনে স্যামন্তক আর সিতাভ্র, গাড়ি থেকে যথারীতি দু ক্যান বিয়ার গলায় ঢালছে। কি করবে এই ঠাণ্ডায় গা গরম তো কিছু করে হোক করতে হবে। 

ওদের জন্য আগে থেকে ঠিক করা একটি তাঁবুর সারির মাঝে ঢুকে পরে। চারদিকে ছোটো ছোটো তাঁবু খাটানো, কেউ কেউ নাকি রাতে মরুভুমির মাঝে রাত কাটায়। মাঝখানে একটা জায়গায়, বেশ খানিকটা কাঠ রাখা, মনে হয় রাত বাড়লে বা প্রোগ্রাম শুরু হলে এখানে আগুন জ্বালানো হবে। নিচে মাটিতে জাজিম পাতা, তার ওপরে ওরা বসে পরে। কিছুক্ষণ পরে জ্বলে ওঠে কাঠ, ইংরাজি নাম বনফায়ার, বন তো নেই তবে কনকনে ঠাণ্ডায় আর প্রিয়তমার শরীরের উষ্ণতায় ফায়ার ঠিক আছে। কিছুক্ষণ পরে শুরু হয়, রাজস্থানি মেয়েদের নাচ আর গান। বেশ সুন্দর লাগে জাতিগত রাজস্থানি প্রথার নাচ আর গান। যে মেয়েটা নাচছিল, তাকে দেখে দুই বান্ধবীর মনে হয় যেন আমরা একটু নাচি, কিন্তু অত গুলো লোকের সামনে নাচা তাও আবার কত্থক, ঠিক জমবে না। 

পুবালী একবার বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে "কিরে নাচবি নাকি?"

"না বাবা এখানে নয়" হেসে বলে বন্দনা। 

সিতাভ্র পুবালীর কানে কানে জিজ্ঞেস করে "কি গো, রাতে থাকবে নাকি তাঁবুতে। বল তো একবার কথা বলে দেখতে পারি।"

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় পুবালী, এক নতুন অভিজ্ঞতা হবে রাতে মরুভুমির মাঝে রাত কাটানোর। গলা বাড়িয়ে বন্দনাকে প্রশ্ন করে "কিরে রাতে এখানে থাকবি?" বন্দনা সায় দেয়।

সিতাভ্র উঠে তাঁবুর পরিচালকের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে যে রাতে থাকার ব্যাবস্থা কি, উত্তরে জানায় যে একটা বড় তাবু খালি আছে তাতে চারজনে থাকতে পারে। সেটা শুনে একসাথে স্যামন্তক আর পুবালী চিৎকার করে ওঠে, না না একদম না। 

স্যামন্তক বলে "তুমি তোমার বউ নিয়ে থাকো আমি থাকছি না।"

"তোমার মাথা খারাপ নাকি? তোমার নিজের কোন ঠিক নেই কখন কি করে বসবে আর ভাইয়ের সাথে এক তাঁবুতে কখন না।" জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে জানান দেয় পুবালী।

"ওকে দেন উই গো ব্যাক।" সিতাভ্র বলল।

বন্দনার কেমন যেন একটু মন খারাপ হয়ে গেল, সিতাভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল "কি রকম আমার কপাল দেখো, এই কিনা মজা করতে এলাম আর ভাই বোনে মিলে বাধা দিয়ে দিলো।"

স্যামন্তক ক্ষেপে গিয়ে বলল "চলো হোটেলে তোমার কত মজা আর বাকি আছে আমি দেখিয়ে দেব।"

সিতাভ্র বলল "ওকে, উই ক্যান ডু ওয়ান থিং। পরশু রাতে শুধু আমরা চারজনে মিলে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাবো এই মরুভুমির মাঝে। আমরা নিজেরাই করবো নিজেদের মতন করে বনফায়ার আর মজা।"

পুবালী দেখল ওর কিছুই করার নেই, বলল "ঠিক আছে।" রাতে বাইরে খেয়ে ওরা হোটেলে ফিরে গেল। 

পরদিন সকালে উঠে, কেল্লা দেখতে যাওয়া, তারপরে লেক দেখা আর আসেপাসের হাভেলি গুলো দেখা। কেল্লার ওপর থেকে দুরে রেল লাইন দেখা যায়। কেল্লার ভেতরে একটি মন্দির আছে, স্যামন্তক মন্দিরে দাঁড়িয়ে বন্দনা কে বলে "বনা, চল একটু ফিল্মি ইস্টাইল মারি, বুড়ো আঙ্গুল কেটে বেশ বিয়ে করে ফেলি আমরা। দুই প্রান এক হয়ে যাক আমাদের।"

"আদিখ্যেতা দেখো ছেলের। অনেক হয়েছে স্টাইল মারা তার চেয়ে এক কাজ কর, গাড়ি চালান টা ভালো করে শেখ। প্রান হাতে নিয়ে পাশে বসে ছিলাম আমি।"

হেসে বলে বন্দনা।





নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#08)

"কিরে কার বিয়ে করার শখ জেগেছে?" পুবালী স্যামন্তকের দিকে দেখে বলে "তোর?"

"বাঃ রে, বিয়ে না করে একসাথে থাকবো কি করে।" বন্দনা কে জড়িয়ে ধরে বলে "এই তো ফিরে গেলে ও আবার চলে যাবে কোলকাতা।" শুনে একটু মন খারাপ হয়ে যায় বন্দনার, হ্যাঁ ফিরে তো যেতেই হবে।

"ওকে বাবা, ব্যাস একটু সবুর কর সব ঠিক করে দেব।" ভাইয়ের মাথায় চাঁটি মেরে উত্তর দেয় পুবালী।

বেশ হইহুল্লরে কেটে যায় সারাদিন। ফাঁকা রাস্তা ঘাট, ছোট্ট শহর যেন মরুভুমির মাঝে ছোট্ট একটি মরুদ্যান।

পরদিন সকাল বেলা ঠিক করা হল যে বর্ডার দেখতে যাবে, লোকজনের কাছ থেকে রাস্তা জিজ্ঞেস করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে চারজনে। কিছুদুর গিয়ে ধুধু করা বালিচরের মাঝ দিয়ে রাস্তা এগিয়ে গিয়েছে। শীতকাল ধুত, কে বলবে রোদের তেজ দেখে। গাড়ি যেন হাওয়ার সাথে দৌর লাগিয়েছে। দুপাশে বালির উঁচু উঁচু পাহাড়, মাঝখানে সরু কালো পিচের রাস্তা, যেন ঠিক দিগন্তের ঢালে গিয়ে নেমে গেছে। কিছু দুর যাওয়ার পরে, তপ্ত বালিয়াড়ির মাঝে একটি ছোট্ট গ্রাম দেখতে পায়। মাটির দেওয়াল, চালের খড় গুলো পুড়ে গেছে গরমে আর রোদের তেজে। এটা যেন পৃথিবীর নতুন এক আশ্চর্য শিল্প কলা, মানুষ কোথায় কোথায় না থাকে। গাড়ি দাড় করিয়ে বিস্ময় ভরা নয়নে সবাই দেখে ছোটো গ্রামটাকে। কোথায় বিলাস বহুল তিন রুমের বাতানুকুলিত ফ্লাট আর কোথায় এই তপ্ত মরু মাঝে ছোটো ছোটো এক কামরার ঘর। 

গাড়ি দাঁড়িয়ে পরাতেই কয়েকটা ছোটো ছেলে দৌড়ে আসে গাড়ির দিকে। বন্দনা ওদের জিজ্ঞেস করে "কি করে এখানে থাকো? জল কোথায় পাও?"

বর্ডার পুলিসের তৈরি পাশে একটা কুয়ো দেখিয়ে বলে "পানি অখান দিয়ে আসে।"

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, এই মরুভুমির মাঝে জল করে আসতে পারে। ছেলেটা জবাব দেয় "আল্লাহ পানি দেয়। যে রাখার সে ঠিক নিজের সন্তানদের দেখে।"

হ্যাঁ সত্যি কথা, রাখে হরি মারে কে, সেটা বন্দনার চেয়ে এই পৃথিবীতে মনে হয় আর কেউ জানেনা। স্যামন্তকের গা ঘেঁসে বসে জড়িয়ে ধরে হটাৎ করে। ওর মুখের দিকে চেয়ে থাকে, চোখের কোলে একটু খানি জল চলে আসে। এক রকম মরেই তো গেছিল, যদি না দেবমাল্য দেখত আর স্যামন্তক ঠিক সময়ে এসে না নিয়ে যেত ওকে। কি করছে দেবমাল্য? যে ওকে ফেলে পালিয়েছিল তার শাস্তি কি সেই দুরাচারী আত্মা পেয়েছে?

ঐ রকম ভাবে হটাৎ করে জড়িয়ে ধরতেই স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে "কি হল তোমার, কুয়ো দেখে?"

"না কিছু না, আমি ভাবছিলাম রাখে হরি মারে কে।" পুবালী আর স্যামন্তক বুঝতে পারল কথাটার মানে।

পুবালী বলল "অতীত ভুলে বর্তমান আর ভবিষ্যতের দিকে চোখ মেলে তাকা।"

আলতো করে স্যামন্তকের গালে চুমু খায় বন্দনা বলে "হ্যাঁ একরকম সব কিছু ভুলেই বসেছি, সব তো এই পাগলের জন্য, না হলে কি যে হত। হয়তো আবার হারিয়ে যেতাম আমি।"

"আমি হারিয়ে যেতে দিতাম না তোমাকে।" 

সিতাভ্র প্রেমালাপ গুলো বেশ মন দিয়ে শুনছিল, ঠিক সেইসময়ে বলে "তোমরা তো জানোনা আমার বউ এক সময়ে প্রেম করেছিল। ব্যাস আর কি, মাঝখান থেকে আমি এসে চুরি করে নিয়ে পালালাম।"

সিতাভ্রর কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল বন্দনা আর স্যামন্তক। এত ভালো বান্ধবী হয়েও জানেনা কে তার প্রেমিকা আর কিনা ওর স্বামী জানে? 

পুবালী মারতে শুরু করে দেয় সিতাভ্রকে "ছাড়ো ওইসব কথা, তোমাকে বলেছি বলে কি হাটে হাড়ি ভেঙে দেবে।"

সেইজন্য তো এত ভালবাসে সিতাভ্র পুবালীকে, বিয়ের আগে প্রথম যেদিন দুজনে একসাথে বেড়াতে বের হয়, দুর্গাপুর ব্যারেজের দিকে, সেইদিন বলেছিল পুবালী নিজের পুরনো প্রেমের কথা, ও চায়নি যে ওর অতীত নিয়ে কোনদিন ওর স্বামী ওকে প্রশ্ন করুক। সেদিনের সব কথা শুনে একটু খানি দমে গেছিল সিতাভ্র, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ছিল চুপ করে। পুবালী ওর সেই ভালোবাসার কথা বলে ছিল, বলেছিল যে বাবা মার অমত আর পরের দিকে নিজের ইচ্ছে টুকু ছিল না, তাই সেই প্রেম কেটে যায়। এই অকাট সত্য কথা শুনে, মনের মধ্যে সেই দিন গভীর ভাবে ভালবেসে ফেলেছিল পুবালীকে। তাই তো যখন পুবালী ওকে বলল যে দেরাদুনে ট্রান্সফার না নিয়ে দিল্লীতে ট্রান্সফার নিতে এক কথায় রাজী হয়ে গেছিল। ও জানে বন্দনা আর স্যামন্তক কের মাঝে পারিবারিক অসামঞ্জস্য নিয়ে কথা উঠবে, কথা উঠবে যে মেয়ে ছেলের চেয়ে বয়সে বড়। হয়তো যেটা পুবালী পারেনি, সেটা সিতাভ্র ওর শালার চোখে দেখতে চায় না। 

বন্দনা জিজ্ঞেস করে পুবালী কে "নামটা জানতে পারি কি?"

সিতাভ্র বন্দনার কথা শুনে অবাক "কি? তুমি জানো না? হতেই পারে না। আমি তো ভাবলাম যে তুমি জানো।"

"না আমি ঠিক জানিনা।"

"যে তোমাকে সেদিন রাতে বাঁচিয়েছিল, সে।"





নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#09)

আকাশ থেকে পড়ল বন্দনা, "হোয়াট!!!!!"

পুবালীর মুখ লাল হয়ে গেছে লজ্জায়, জানালার বাইরে তাকিয়ে। সিতাভ্র দেখল হিতে বিপরীত হয়ে যাবার যোগাড় এবারে প্রসঙ্গ বদলাতে হবে নাহলে বউ মেরে ফেলবে।

স্যামন্তক আর বন্দনা মুখ চাওয়াচায়ি করে, এত বড় কথা দুজনের মধ্যে কেউ জানেনা, ডুবে ডুবে এত জল খেয়েছে এরা। 

সিতাভ্র সবাইকে চুপ করতে বলে, পুবালীর মনে একটা বড় ধাক্কা লেগেছে। যে কথা কেউ জানত না, শুধু মাত্র বিশ্বাস করে নিজের ভালোবাসার লোককে বলেছিল, সে সবার সামনে বলে দিল। সিতাভ্র মান ভাঙ্গানর জন্য বলে "ওকে বাবা, আর না। ঠিক আছে।"

সিতাভ্র আবার কিছুক্ষণ পরে গাড়ি চালাতে লাগলো, রাস্তার শেষে গিয়ে বি এস এফ এর অফিস। নিজেদের প্রমান পত্র দেখিয়ে ঢুকল ওরা। ওখানে একটা মন্দির আছে, ঐ মন্দিরে নাকি ভারত পাকিস্থানের যুদ্ধের সময়ে অনেক গলা বারুদ পড়েছিল কিন্তু মায়ের মন্দির অক্ষত থাকে সব নাকি সেই দেবীর কৃপা। বেশ কিছুক্ষণ ওখানে কাটিয়ে আবার ফেরার পথ ধরে চারজনে।

গাড়িতে উঠে পুবালী বলে "আমি পেছনে বসব" একটু অভিমানের লেশ ঢেকে রেখেছে সুন্দর মুখখানি। সিতাভ্র স্যামন্তকের কানে কানে বলে "তুমি গাড়ি চালাও বুঝলে আমিও পেছনে বসি। তোমার দিদি ক্ষেপে গেছে, শান্ত না করলে আমাদের ট্রিপ আজ রাতে গুটাতে হবে।"

"ওকে বস।" বন্দনা কে বলল "সামনে বস।" গাড়িতে ওঠার সময়ে বন্দনা কে জিজ্ঞেস করে স্যামন্তক "সত্যি তুমি জানতে না, দিদির কথা?"

"না গো, মেয়েটা কখন কি ভাবে কি করল আমি কিছুই জানিনা। সত্যি বলছি, তবে এত করে যখন লুকিয়ে রেখেছিল সবার কাছ থেকে, আমার মনে হয় এই ব্যাপারে বেশি কথা বললে ওর আরও খারাপ লাগবে।"

সিতাভ্র বুঝতে পারল যে সত্যি ওর এই প্রসঙ্গ নিয়ে একদম কথা বলা উচিৎ হয়নি, ওকি জানত যে ওর ভাই আর ওর সব থেকে ভালো বান্ধবী পর্যন্ত এই ব্যাপার জানেনা। ওত ভেবেছিল একটু মজা করার জন্য, ও ভেবেছিল যে হেতু সবাই জানে তাই একটু খ্যাপানোর জন্য। 

বন্দনা স্যামন্তকের কানেকানে বলল "কেন যে মরতে সিতাভ্র কথাটা উঠাতে গেছিল, এবারে বোঝ ঠেলা খানা। আমার তো মনে হচ্ছে ট্রিপ না মাটি হয়ে যায়।"

স্যামন্তক একবার পেছনে দেখল, দিদির চোখ লাল, কষ্ট করে যেন জল টাকে বেঁধে রেখেছে। বন্দনাকে বলল "হোটেলে চল, আমি ঠিক করে দেবো দিদিকে। আমি ছাড়া ওকে আজ ওর বরও ঠিক করতে পারবে না।"

সারাটা রাস্তা পুবালী জানালার বাইরে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকে, শত চেস্টা করেও মানিনীর মান ভাঙ্গাতে পারল না সিতাভ্র।

হোটেলে ঢুকেই, স্যামন্তকদের ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে পুবালী, সিতাভ্রকে বলে "তুমি আমার সাথে একদম কথা বলবে না।"

বন্দনা সিতাভ্রকে বলল "চিন্তা নেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, দেখছি কি করা যায়।"

স্যামন্তক আর সিতাভ্র বেড়িয়ে গেল আবার গাড়ি নিয়ে, বন্দনা বুঝল যে দুজনে একদম টুন হয়ে রাতে ফিরবে। রুমে ঢুকে দেখে, পুবালী চুপ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। বন্দনা দেখল যে পরিবেশ ভালো রকম ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। পূবালী তো এই রকম মেয়ে নয়। পাশে বসে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করে "কাঁদিস কেন তুই?"

ফুঁপিয়ে বলে "তুই কি বুঝবি? আমি কি পেছনের কথা ভেবে কাঁদছি নাকি? আমি তো ওর কথা শুনে কাঁদছি? ওর বলা ঠিক হয়নি। কেন বলতে গেল, কাউকে আজ পর্যন্ত এই কথা জানাইনি শুধু মা কে ছাড়া। মা বারণ করেছিলে ব্যাস সেইদিন থেকে আর কোনদিন ফিরে তাকাই নি। আর সিতাভ্র কিনা..."

"ওরে পাগলী, ওত একটু মজা করছিল।"

"জানি, কিন্তু আমার বড় খারাপ লেগেছে এই যা। আমাকে একা ছেড়ে দে, কিছুক্ষণ পরে ঠিক হয়ে যাবো।" তারপরে মাথা উঠিয়ে বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে "তুই একদিন বুঝবি, এত ভালবাসিস তো ভাইকে। দেখবি কখন কোন খুব ছোটো একটা কথা কি ভাবে মনে লেগে যাবে, সেটা শুধু তোরা ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। খুব সত্যি কথা বলছিরে তোকে, অনেকে অনেক জ্ঞান দিতে আসবে তখন দেখিস। তাই আমি বলছি যে ছেড়ে দে আমাকে, একটু পরে আমি ঠিক হয়ে যাবো।"

চোখের জল মুছে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে "কোথায় গেছেরে পাগল দুটো।"

"গাড়ি নিয়ে তো বেড়িয়েছে, আসবে মনে হয় টুন হয়ে।" তারপরে পুবালী কে হেসে বলে "রাতে রুমে ঢুকতে দিস যেন। বেশি খেলে আমার টাকে আমি ভালো মতন সামলে নেব।"





নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#10)

বেশ রাত করে ফেরে স্যামন্তক আর সিতাভ্র, সিতাভ্রর একটু বেশি খাওয়া হয়ে গেছে স্যামন্তক শুধু এক ক্যান বিয়ার গলায় ঢেলেছে। সিতাভ্র অনেক আগে গাড়ির ডিকিতে লুকিয়ে রেখে ছিল দু’বোতল হুইস্কি, তার একখানি শেষ করে এসছে। স্যামন্তকের আবার হুইস্কি ঠিক পছন্দ নয়, তবু একটু হাতে, জামায় লাগিয়ে নিয়েছিল, বন্দনাকে একটু রাগানোর জন্য। হোটেলে ঢুকে টলতে টলতে দরজায় টোকা মারে স্যামন্তক।

বন্দনা দরজা খুলতেই সামনে দেখতে পেল, একদম মহাদেবের মতন রাঙ্গা চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে স্যামন্তক। রুমের ভেতরে মাথা বাড়িয়ে দেখে দিদি বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে। ওর দিকে তাকিয়েও যেন না তাকানোর ভান করে চুপ করে টিভি দেখতে থাকে, পুবালী।

স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে "মাতা অন্নপূর্ণার কি ক্রোধ কমেনি?"

চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে বন্দনার, সারা গা থেকে বিকট গন্ধ বের হচ্ছে "তোমরা দুজনে আজ রাতে ঐ রুমে শুয়ে পর। খেতে ইচ্ছে হলে খেও না হলে যা খুশী কর। অনেক হয়েছে, আজ রাতে এই ঘরে কেউ ঢুকতে পারছ না।"

সিতাভ্র একরকম টলতে টলতে দরজার কাছে এসে উঁকি মেরে একবার নিজের প্রেয়সীর মুখখানি দেখার চেষ্টা করে, কিন্তু এদিকে যে রণচন্ডী রূপ ধারন করে বন্দনা দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। 

স্যামন্তক কানে কানে ফিসফিস করে বলে "আরে বাবা আমি খাইনি, শুধু দিদিকে একটু ভড়কানোর জন্য।"

গলা শুনে তো একদম ঠিকঠাক মনে হল বন্দনার "মানে আর সিতাভ্র?"

"ও ব্যাটা ঢেলে চুড় হয়ে আছে। যাই হোক দিদির কি অবস্থা, তোমরা কি খেয়ে নিয়েছ?"

"না আমরা খাইনি।" স্যামন্তককে বাইরে ঠেলে বের করে নিজেও বাইরে চলে আসে "আচ্ছা একটা কথা বলবে আমাকে? কোনদিন ঝগড়া হলে বা মজার ছলে তুমিও তো আমাকে এইরকম ভাবে বলবে আমার অতীতের কথা?"

মাথা চুলকে বলল স্যামন্তক "না একদম নয়। আমি সত্যি বলছি।"

ক্ষীণ হেসে দেয় বন্দনা, সময় বলবে সবকিছু, এত তাড়াতাড়ি কোন কিছু বলা যায় না, মানুষ কখন কি ভাবে বদলে যাবে কেউ জানে না "ঠিক আছে, চল ভেতরে" তারপরে সিতাভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে "তুমি তোমার রুমে যাও, তোমার বউকে পাঠাচ্ছি আমি।"

স্যামন্তক রুমের মধ্যে ঢুকে দিদির পাশে গিয়ে বসে, দিদির মাথায় হাত বুলাতে থাকে। পুবালী ভাইয়ের হাতের স্পর্শ পেয়ে কেমন যেন হয়ে যায়, চোখে একটু জল, হাসি হাসি মুখ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে "সর, অনেক হয়েছে।"

"যা এবারে, বেচারা, সিতাভ্রদা এবারে কেঁদে ফেলবে মনে হয়" দিদির সাথে মজা করে বলে।

"হ্যাঁ, তোরা ছেলেরা সব এক রকমের, আগে বউকে কাঁদিয়ে তারপরে আদর করতে আসবি।"

পেছন থেকে বন্দনা পুবালী কে বলে "আর রাগ করিস না। বেচারা সিতাভ্র। যা ঘরে যা।"

চোখ মুখ মুছে পুবালী বন্দনা আর স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে বলে "তোরা রাতে ডিনার করে নিস, গুড নাইট।" বন্দনার কাছে এসে কানে কানে বলে "সোনা মনা, অনেক কসরত করেছ, এবারে খেয়ে দেয়ে ঘুম লাগিয়, বুঝলে।"

বন্দনার মুখখানি লাল হয়ে যায় পুবালীর কথা শুনে, তাও ফুট কেটে বলে "তুই তো আজ রাতে মনে হয় না ঘুমবি, তোর বর তোকে আজ সারা রাত জাগিয়ে রাখবে, আমি বাজি রেখে বলতে পারি।"

"ওকে, দেখা যাবে, আমি চললুম।"

হাত মুখ ধুয়ে, ডিনারের অর্ডার করে দিল স্যামন্তক। রাতের খাবার পরে, বিছানায় শুয়ে, অর্ধেক শরীর লেপের নিচে ঢেকে টিভি দেখছিল স্যামন্তক। বন্দনা আয়নার সামনে বসে হাতে মুখে ক্রিম লাগাচ্ছিল। পরনে রাতের পোশাক, ফিনফিনে একটি পাতলা স্ট্রাপ দেওয়া সাদা স্লিপ ঠিক নিতম্বের নিচে এসে শেষ হয়ে গেছে। স্যামন্তকের পছন্দ যে ওর প্রেয়সী একটু খানি খলামেলা কাপড় পরে, হ্যাঁ তবে শুধু ওর চোখের সামনে। কিছুক্ষণের মধ্যে খুলেই ফেলবে। আয়নার প্রতিফিলনে একবার বিছানার ওপরে দেখল বন্দনা, দেখছে না ওর দিকে, কি একটা খবরের চ্যানেল লাগিয়ে বসে আছে। 

"কোথায় গেছিলে তোমরা গলায় ঢালতে?" বন্দনা ঘাড় ঘুড়িয়ে প্রশ্ন করে স্যামন্তককে।

"এই বাইরে, রাস্তা দিয়ে কিছু দুরে।" স্যামন্তক দেখল একবার বন্দনার দিকে। সিল্কের কাপড়টা গায়ের সাথে লেগে, রুমের ম্রুদু আলো পিছলে যাচ্ছে মসৃণ দুই হাতের ওপর দিয়ে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল স্যামন্তক, কেন যে মেয়েটা ঘরের মধ্যেও কিছু পরে থাকে। ধুত কি যে ভাবছে, তার চেয়ে তো ভালো কোলে তুলে বিছানায় ফেলে...

স্যামন্তকের বুকের ওপরে মাথা রেখে শুয়ে বন্দনা, স্যামন্তক আলতো করে বন্দনার চুলে বিলি কেটে দেয়। আদর সোহাগের রেশ টাকে আর প্রলম্বিত করার জন্য নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে বন্দনা।





নবম অধ্যায়ঃ মরুদ্যানের সুধা (#11)

বুকের ওপরে চবুক রেখে স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে "তুমি আমাকে যদি কোনদিন এভাবে বল তাহলে?"

"কি?" কথাটা ঠিক ভাবে বুঝতে পারেনা স্যামন্তক।

"আমি এক সময়ে যা কিছু করেছি, সেই সব নিয়ে তো হয়তো ভবিষ্যতে আমাকে কথা শুনাতে পারো, তাই না।"

"আমি তোমার সবকিছু জেনে তবে তোমার সাথে প্রেম করেছি। তুমি কি করেছ কে ছিলে সব জানি আমি, সেই নিয়ে আবার প্রশ্ন কর কেন আমাকে?"

"না এমনি।" বুকের মাঝে নিজেকে যদি মিলিয়ে দিতে পারত বন্দনা, তাহলে কেউ আর ওকে বিচ্ছিন্ন করতে পারত না "কাল এই সময়ে আমরা দিল্লীর দিকে যাত্রা শুরু করব, তারপরে আমি কোলকাতা।"

"হ্যাঁ, সেটাই তো সব থেকে খারাপ, তুমি চলে যাবে, আমি পড়ে থাকবো এখানে একা একা।"

"তুমি আবার কবে কোলকাতা আসবে?"

"ঠিক জানিনা, তবে আমার এবারে ইচ্ছে আছে, পয়লা বৈশাখ কলকাতায় কাটানোর, দিদি যদি যায় তবে।"

"কেন একা একা চলে এস। শুধু আমার জন্যে আসতে পারনা তুমি? এই যে তোমার জন্য আমি চলে এসেছি।"

"ওকে বাবা, আমি যাবো। দিদি যদি নাও যায় তবুও আমি যাবো।"

বুকের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে চোখ বন্দ করে বন্দনা। নগ্ন পিঠের ওপরে স্যামন্তকের উষ্ণ হাতের পরশ, শরীরের সব ক্লান্তি দুর করে দেয়, বুকের মাঝে জড়িয়ে থেকে মনে হয় যেন মায়ের কোলের পরে এইটা সব থেকে নিরাপদ স্থান।



====== নবম পর্ব সমাপ্ত ======







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




aarushi1977-এ লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

aarushi1977-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment