CH Ad (Clicksor)

Saturday, December 14, 2013

দ্বিতীয় অঙ্ক_Written By pinuram [ষষ্ঠ পর্বঃ আতঙ্কিত আর্তনাদ]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




দ্বিতীয় অঙ্ক
Written By pinuram





ষষ্ঠ পর্বঃ আতঙ্কিত আর্তনাদ (#1)

আতঙ্কে ভরা ধরা নারী কন্ঠ চিন্তে অসুবিধা হয় না বুধাদিত্যের। ঝিলামের কি হল, এত রাতে ফোন করেছে? বুধাদিত্যের সারা শরীর টানটান হয়ে যায় ঝিলামের আর্তনাদ শুনে। বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে ঝিলামকে, “তুমি কোথায়?”

কাঁপা গলায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে, “আমি গুরগাওএর একটা ফার্ম হাউসে। সমীর ভেতরে কোথাও। প্লিস আমাকে বাঁচাও।” 

ঝিলাম যে ফার্ম হাউসের নাম বলে সেটা আয়েশার বাড়ি থেকে বেশি দুরে নয়। পাশের সিটের নিচে হাত দিয়ে দেখে নেয় বাক্স আছে ত। একটা ছোটো বাক্সে পিস্তল রাখা। পিস্তলটা বেশ কয়েক বছর আগে কিনেছিল, এক শখে দ্বিতীয় মাঝে মাঝেই নিরুদ্দেশের পানে ঘুরতে বেড়িয়ে পরে তাই নিজের নিরাপত্তার জন্য। 

পাগলের মতন গাড়ি ছুটিয়ে দিল বুধাদিত্য। সাড়ে দশটার মধ্যে ফার্ম হাউসের সামনে পৌঁছে গেল। বাক্স থেকে পিস্তল বার করে প্যান্টের পেছনে বেল্টের ভেতরে গুঁজে নেয়। পকেটে একটা ম্যাগাজিন নিয়ে নেয়। গাড়ি থেকে নামার আগে জামার হাতা গুটিয়ে নেয়, জামা ছেড়ে দেয় প্যান্টের ওপরে যাতে পেছনে গোঁজা পিস্তল্টা দেখা না যায়। চোয়াল শক্ত করে ঢুকে পরে ফার্ম হাউসে। দারয়ান জিজ্ঞেস করে কাকে চাই। ভারী গলায় কম্পানির নাম বলে উত্তর দেয় সে এই পার্টির লোক। বুকের মধ্যে তুমুল ঝড়, ঝিলামের যদি কিছু হয় তাহলে আজ সারা পৃথিবীর রক্ত ঝরিয়ে দেবে। মাথার মধ্যে রক্ত টগবগ করে ফুটছে, চোয়াল শক্ত করে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখে। অধীর উৎকণ্ঠায় এদিক ওদিক চেয়ে দেখে, খোঁজে ঝিলামকে। ফার্ম হাউসের সামনের বাগানে বেশ কিছু চেয়ার পাতা। বুফে সিস্টেমে এক পাশে খাবার রাখা। বেশ কিছু লোক হাতে প্লেট নিয়ে খাবার খাচ্ছে। একটি জায়গায় দেখে যে একটা লোক মদের নেশায় চুড় হয়ে টেবিলে শুয়ে। ওর চোখ শুধু ঝিলামকে খুঁজে বেড়ায়।

বুকের মাঝে হুহু করে ওঠে যখন লক্ষ্য করে যে ঝিলাম এক কোনায় একটি চেয়ারে একাকী মাথা নিচু করে বসে। চওড়া ফর্সা পিঠ থেকে থেকে ফুলে উঠছে। বুঝতে দেরি হয়না বুধাদিত্যের, ওই মীনাক্ষী অশ্রু সিক্ত। কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখে বুধাদিত্য। কাঁধের ওপরে কারুর হাতের পরশ পেয়ে সারা শরীর কেঁপে ওঠে থরথর করে, ভীষণ আতঙ্কে কুঁকড়ে যায় ঝিলাম। ভয়ার্ত চোখে মাথা তুলে পাশের লোকের দিকে তাকায়। ঝাপসা চোখের সামনে বুধাদিত্যকে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা। 

উঠে দাঁড়িয়ে বুধাদিত্যের হাত ধরে কাতর আবেদন জানায়, “দয়া করে সমীরকে ভেতর থেকে খুঁজে আনো। আমাকে বাঁচাও, এখান থেকে নিয়ে চল। আমি এখানে থাকতে পারছিনা।”

বুধাদিত্য ঝিলামের সুন্দর মুখখানির দিকে তাকিয়ে থাকে, দুই চোখে কাজল এঁকেছিল। কান্নার জলে সেই কাজল মুছে গেছে, ভয়ে গালের লালিমা উবে গেছে, ঠোঁট জোড়া ফ্যাকাসে। মাথায় সুন্দর করে একটা খোঁপা বেঁধেছিল কিন্তু এখন কেমন আলুথালু। নভেম্বরের ঠাণ্ডা কিন্তু ঝিলাম আতঙ্কে ঘেমে গেছে। বুধাদিত্য ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে যে এখানে কেউ ওর সাথে কিছু দুরব্যাবহার করেছে কি না? মাথা দুলিয়ে জানায় যে এখনো পর্যন্ত কেউ কিছু করেনি।

ঝিলাম ওর হাত প্রানপন শক্তি দিয়ে চেপে ধরে থাকে, বুধাদিত্য ওর শেষ সম্বল। ধরা গলায় বলে, “এই নাকি অফিসের পার্টি। আমার ভেতরে যেতে ভয় করছে, বুধাদিত্য।”

ঝিলাম এই রকম উদ্দাম চালচলনে অভ্যস্ত নয়। বুধাদিত্য ওকে আসস্থ করে বলে, “চল আমার সাথে ভেতরে।”

ঝিলাম জোরে মাথা দোলায়, “না না, আমি ভেতরে যাবনা। তুমি দয়া করে সমীরকে খুঁজে আনো। আমাকে বাড়ি নিয়ে চল।”

চোয়াল শক্ত করে ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে, “ভেতরে কেন যাবেনা?”

ঝিলাম ধরা গলায় উত্তর দেয়, “ভেতরে সবাই উন্মাদ, সবাই ইতর। জঘন্য নোংরামো করে বেড়াচ্ছে ছেলেরা আর মেয়েরা। আমার যেতে ঘেন্না আর ভয় করছে।”

ঝিলামের বাজু টেনে পেছনে নিয়ে বলে, “আমি আছি, আমার পেছন পেছন এস।” বুধাদিত্য বাড়িটার দিকে পা বাড়ায়।

ঝিলাম ওর পেছন পেছন গুটি গুটি পায়ে ফার্ম হাউসের হলের মধ্যে ঢোকে। খুব শক্ত করে বুধাদিত্যের জামা আঁকড়ে ধরে থাকে। হলের মধ্যে অন্ধকার, শুধু মাত্র ঝিকিমিকি আলো সামনের নাচের জায়গা আলোকিত করে রেখেছে। খুব জোরে গান বেজে চলেছে। নাচের জায়গায় খান আটেক মেয়ে আর প্রায় খান পনেরো ছেলে মিলে উদ্দাম নাচে মগ্ন। মেয়ে গুলোর পরনের কাপড় দেখে মনে হয় অঙ্গ ঢাকার চেয়ে খুলে রাখা ভালো ছিল। বেশির ভাগ মেয়েদের পরনে ইভিনিং পারটির হাতাবিহীন কাঁধবিহীন ছোটো বস্ত্র, যা পাছার নিচে এসে শেষ হয়ে গেছে। তিনটে মেয়ের পরনে ছোটো স্কার্ট, উদ্দাম নাচের ফলে তাদের প্যান্টি ঢাকা জানুসন্ধি দেখা যায় বারেবারে। কয়েকটা মেয়ের পরনে ছোটো জিন্সের প্যান্ট শুধু মাত্র পাছা ঢেকে রাখতে পেরেছে। সবাই নেশায় চুড়, সবাই মাতাল। ছেলগুলো মেয়েদের ঘিরে অশ্লিল ভাবে নেচে চলেছে। মেয়েগুলো সেই তালেতালে নেচে চলেছে। সবার বয়স এই পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে। কেউ বিবাহিতা কেউ অবিবাহিতা। একটি মেয়ের স্কার্ট কোমরের উপরে উঠে গেছে, সামনে পেছনে দুটি ছেলে ওদের যৌনাঙ্গ মেয়েটির সামনে আর পেছনের অঙ্গের সাথে চেপে ধরে এক কোনায় নেচে চলেছে। বুধাদিত্য এই সব দৃশ্য দেখে অভ্যস্থ, দিল্লীর পার্টিতে এই সব জামা কাপড় পরে উন্মাদ হয়ে যাওয়া খুব সামান্য ব্যাপার।

কোথায় এই সব মেয়েরা আর কোথায় ঝিলাম। স্বামীর সাথে অফিস পার্টিতে যাবে তাই সুন্দর গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছিল। কপালে গোলাপি আর লাল টিপ আঁকা। ঠোঁটে লাল রঙ, গালে গোলাপি রুস, চোখের কোণে কাজল এঁকে সুন্দর সেজেছিল। গোলাপি শাড়ির রঙের সাথে মিলিয়ে গোলাপি রঙের ব্লাউস পরনে। ভারী সুন্দর শাড়ি, আঁচলে রুপোলী সুতোর ভারী কাজ করা। সোনার লোহা বাধানোর সাথে দুই হাতে গোলাপি আর সাদা রঙের চুড়ি। পরনের শাড়ি আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ঝিলামের নধর দেহপল্লব, গলা আর দুই হাত ছাড়া বাকি সব অঙ্গ কাপরে ঢাকা। অসামান্য সুন্দরী দেখতে লাগছিল ঝিলামকে। সামনের মেয়েদের দিকে তাকায় বুধাদিত্য আর একবার পেছনে দাঁড়িয়ে আতঙ্কিত সুন্দরীর মুখের পানে তাকায়। সামনে পাতাললোকের পাপের উদ্দাম নাচ, পেছনে স্বর্গ থেকে নেমে আসা অপ্সরা। 

পেছন থেকে একজন ঝিলামকে বলে “কি ম্যাডাম, একা দাঁড়িয়ে কেন? চলুন একটু নাচা যাক। সমীর ত মদ খেয়ে কোথাও পড়ে আছে।” 

ওই লোকটার কথা শুনে মাথায় রক্ত চড়ে যায় বুধাদিত্যের। ভয়ে সিটিয়ে যায় ঝিলাম। শক্ত করে ধরে বুধাদিত্যের হাতা, থরথর করে কাঁপতে থাকে। সামনে এসে বুধাদিত্যের দিকে একটা গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে ড্রিঙ্ক করতে বলে। বুধাদিত্যের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। এক থাবরে ওর হাতের গ্লাস মেঝেতে ফেলে দেয়। হকচকিয়ে যায় লোকটা। থতমত খেয়ে নেশার ঘোরে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ঝিলামের দিকে তাকায়। ঝিলাম বুধাদিত্যের জামা খামচে ধরে পিঠের পেছনে লুকিয়ে যায়। বুধাদিত্য ওর চোখে দেখে বুঝতে পারে যে ইতর লোকটির নজরে ঝিলামের দিকে। প্যান্টের পেছন থেকে পিস্তল বের করে আনে। এক ঝটকায় লোকটাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে খোলা মুখের মধ্যে পিস্তল ধরে। পিস্তলের চমকানি দেখে নেশা ছুটে যায়। গম্ভির গলায় লোকটাকে জিজ্ঞেস করে সমীরের কথা। লোকটা কাঁপতে কাঁপতে হাত উলটে জানায় যে, সমীরের খবর জানেনা। আশপাশ থেকে বেশ কিছু লোক ওদের দিকে আসে। সবার চোখে মদের নেশা, সবাই যেন ঝিলামকে ক্ষুধার্ত হায়নার মতন খুবলে খাবলে লুটেপুটে খাচ্ছে। বুধাদিত্য সামনের লোকটার হাঁ করা মুখের মধ্যে পিস্তলের নলি চেপে দিয়ে হুঙ্কার দেয়, একপা এগোলে মাথার সবকটা গুলি এর মুখের মধ্যে ঢেলে দেবে। আশেপাশের লোকজন এতটা ভাবতে পারেনি, থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে পরে। ঝিলাম চোখ বন্ধ করে বুধাদিত্যের পিঠের সাথে নিজেকে লুকিয়ে নিতে প্রানপন চেষ্টা করে। আবার হুঙ্কার দেয় বুধাদিত্য, কেঁপে ওঠে বড় হল ঘর, জিজ্ঞেস করে, সমীর কোথায়। 

পেছন থেকে একজন উত্তর দেয়, “ওই বোকা... উপরের কোন এক রুমের মধ্যে কবিতার সাথে পরে আছে। যা গিয়ে নিজের চোখে দেখে নে শালা...”

ওই খবর শোনার আগে ঝিলাম মরে কেন যায়নি। বুধাদিত্য অনুভব করে যে ঝিলামের চোখের জলে ওর জামার পিঠের দিক ভিজে গেছে। লোকটার কথা কানে যেতেই, ঘৃণায়, রোষে, তীব্র দুঃখে বুধাদিত্যের পিঠের ওপরে দশ আঙ্গুলের নখ বসিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করে। 

বুধাদিত্য সামনের লোকটাকে ছেড়ে দেয়। পিস্তলের নল দেখে অনেকের নেশার ঘোর কেটে যায়। লোকটা ছাড়া পেয়ে দৌড়ে ওর সামনে থেকে পালিয়ে যায়। বুধাদিত্য ঝিলামের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। 

ঝিলামের দুই চোখ শক্ত করে বন্ধ, মাথা নিচু, বুধাদিত্যের বুকের কাছে হাত জোর করে কাতর মিনতি জানায়, “সমীরকে অইখান থেকে নিয়ে এস দয়া করে।”





ষষ্ঠ পর্বঃ আতঙ্কিত আর্তনাদ (#2)

বুধাদিত্য ঝিলামের হাত ধরে হল ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে একটা ঘরের দরজায় লাথি মারে। হাতে উঁচিয়ে থাকে পিস্তল। কিছু এদিক ওদিক হলে সামনে যে আসবে তার ঘুলি গুঁড়িয়ে দেবে। ঘরের ভেতর দেখে যে বেশ কয়েকটা ছেলে মেয়ে সিগারেটের মধ্যে গাঁজা ভরে টানছে আর উদ্দাম নাচে ব্যস্ত। দরজা খোলার আওয়াজে ঢুলুঢুলু চোখে ওই ছেলে মেয়েরা ওদের দিকে তাকায়। বুধাদিত্যক গর্জন করে জিজ্ঞেস করে সমীরের কথা। একজন উত্তর দেয় যে পাশের ঘরে সমীর থাকতে পারে। 

পাশের ঘরের দরজায় লাথি মারে বুধাদিত্য। ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগানো ছিল তাই প্রথম লাথিতে খুলতে পারেনা। দ্বিতীয় লাথি জোরে মারে, ছিটকিনি ভেঙ্গে খুলে যায় দরজা। 

ভেতরের দৃশ্য দেখে চাপা আর্তনাদ করে ওঠে ঝিলাম। মেঝের ওপরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় লুটিয়ে পরে আছে সমীর। পরনের কাপড় আগছলা, প্যান্টের চেন খোলা, নেতান লিঙ্গ কিছুটা বেড়িয়ে। খাটের ওপরে অর্ধনগ্ন একটি মেয়ে শুয়ে। পরনের জিন্সের ক্যাপ্রি হাঁটুর কাছে নামান, কালো প্যান্টিতে ঢাকা জানুসন্ধি, মাথার কাছে টপ দলা পাকিয়ে পরে আছে। ফাঁক করা উরুর মাঝে একটি ছেলে শুয়ে, তার প্যান্ট নেমে গেছে কোমর থেকে। দুইজনের কারুর শরীর নড়ছে না।

ওই দৃশ্য দেখে ঝিলাম ঘর থেকে বেড়িয়ে মুখের ওপরে হাত রেখে পাঁজর ভাঙ্গা বেদনার আর্তনাদ গিলে নেয়। চোখ বন্ধ করে, দুই হাত মুঠি করে মাথায় বাড়ি মারতে মারতে মেঝের ওপরে বসে পরে। সেই করুন দৃশ্য বুধাদিত্যের সহ্য হয়না। সমীরের দিকে দুপা এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে পরে। নাকের কাছে আঙুল দিয়ে দেখে যে ধড়ে প্রান আছে কিনা। শ্বাস চলছে, কিন্তু বেশ ধিমে তালে। নেশার ঘোরে কি করেছে হয়ত নিজেই জানেনা সমীর। প্যান্টের পেছনে পিস্তল গুঁজে নেয়। সমীরের লিঙ্গ প্যান্টের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে, প্যান্টের চেন আটকে দেয়। ওর ঘাড়ের নিচে হাত গলিয়ে দিয়ে বস্তার মতন কাঁধের ওপরে উঠিয়ে নেয় সমীরের নেশা গ্রস্থ সংজ্ঞাহীন দেহ। ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখে ঝিলাম, উন্মাদিনির মতন হয়ে গেছে। দু’চোখ জবা ফুলের মতন লাল। ঝাপসা চোখে বুধাদিত্যের দিকে তাকায় ঝিলাম। বুধাদিত্য ওকে ইশারা করে ওর পেছন পেছন আসার জন্য। কোনোরকমে নিজেকে মেঝে থেকে টেনে তোলে ঝিলাম। কাঁদতে কাঁদতে গুটি পায়ে বুধাদিত্যের পেছন পেছন সিঁড়ি ভেঙ্গে নেমে আসে। গাড়ির কাছে গিয়ে বুধাদিত্য গাড়ির পেছনের দরজা খুলতে বলে। ঝিলাম গাড়ির পেছনের দরজা খুলে ধরে, পেছনের সিটে সমীরকে শুইয়ে দেয়। 

ঝিলাম গাড়িতে উঠে সমীরের মাথা নিজের কোলের মধ্যে নিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে, “হায় বিধাতা আজ আমাকে এই দিন দেখতে হল?” 

বুধাদিত্য আবার ফিরে যায় ফার্ম হাউসে, একটা ছোটো বালতিতে জল নিয়ে আসে। সমীরের মাথা ধরে বালতির সব জল মাথার মধ্যে ঢেলে দেয়। সমীরের সম্বিৎ ক্ষণিকের জন্য ফিরে আসে। ঝাপসা চোখে একবার বুধাদিত্যের দিকে তাকায় একবার ঝিলামের দিকে তাকায়। শরীর কেঁপে ওঠে সমীরের। হরহর করে কালো মদের বমি করে দেয় ঝিলামের কোলের ওপরে। ঝিলামের শাড়ি মদের বমিতে নোংরা হয়ে যায়। রাগে কাঁপতে থাকে বুধাদিত্য। ঝিলামের অশ্রুসিক্ত চোখ আর করুন মুখ দেখে সমীর কে কিছু বলেনা। ঝিলাম সমীরের মাথা বুকের কাছে টেনে ধরে শাড়ির আঁচল দিয়ে ওর মুখ মুছিয়ে দেয়। সেই দৃশ্য দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারেনা বুধাদিত্য। রাগে গজগজ করতে করতে দুম করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেয়। থমথমে মুখে চালকের সিটে বসে গাড়ি হাকিয়ে দেয় বাড়ির দিকে।

পাগলের মতন ফাঁকা হাইওয়ে দিয়ে দিল্লীর দিকে গাড়ি ধেয়ে চলে। আয়নার প্রতিফলনে দেখে যে সিক্ত বসনা, সিক্ত নয়না ঝিলাম স্বামীর মাথা বুকে করে নিয়ে বারেবারে কপাল, মুখ শাড়ির আঁচলে মুছে দেয়। 

বুধাদিত্য ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে, “আমার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।”

ঝিলাম কাঁপা গলায় নিচু সুরে উত্তর দেয়, “যেখানে একটু শান্তি পাবো সেখানে নিয়ে চল।”

রাত প্রায় একটা নাগাদ বুধাদিত্য ওদের নিয়ে বাড়ি পৌঁছায়। ঝিলামের শাড়ি সমীরের বমিতে ভর্তি, গাড়ির ভেতর থেকে বোটকা গন্ধ বের হচ্ছে। ঝিলাম সেই নোংরা শাড়ি পরে সমীর কে দুহাতে আগলে রেখেছে, ওর ভিজে মাথার ওপরে গাল চেপে ধরে আছে। চোখে মুখে একটা হেরে যাওয়া ভাব, দুঃখে বুক ফেটে যায় ঝিলামের। বুধাদিত্য ওর মনের ভাব ওর মুখ দেখেই বুঝতে পেরে যায়। ঝিলামকে শান্তনা দেবার মতন ভাষা খুঁজে পায়না বুধাদিত্য। মনে হয় যেন সমীরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এই সুন্দরী প্রতিমাকে বুকের কোণে লুকিয়ে রাখে। চোয়াল শক্ত করে সেই অভিব্যাক্তি চেহারায় আনতে দেয় না। পেছনের দরজা খুলে সমীরকে টেনে কাঁধের ওপরে নিয়ে নেয়। ঝিলামকে বাড়ির চাবি হাতে দিয়ে বলে তিনতলায় উঠে যেতে। ঝিলাম আগে আগে, পেছনে বুধাদিত্য সমীরের শরীর কাঁধে ফেলে সিঁড়ি ভেঙ্গে তিনতলায় ওর ফ্লাটে আসে। 

ঝিলাম তালা খুলে দেয়, বুধাদিত্য সমীরকে বয়ে নিয়ে গেস্টরুমে ঢুকে বিছানার ওপরে শুইয়ে দেয়। ঝিলামের চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে, চোখের কোনের কাজল লেপটে গেছে চোখের পাশে। শাড়ি ভিজে গেছে সমীরের বমিতে, সারা শরীর থেকে দুর্গন্ধ আসছে। গা ঘিনঘিন করে ওঠে বুধাদিত্যের, কিন্তু ঝিলামের সেদিকে খেয়াল নেই। তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে একটা তোয়ালে জলে ভিজিয়ে নিয়ে আসে। সমীরের পাশে বসে অতি যত্ন সহকারে ওর কপাল, মুখ মুছিয়ে দেয়। ভালোবাসার সেই স্পর্শ দেখে বুধাদিত্য বুক ফাঁকা হয়ে ওঠে। বুধাদিত্য সমীরের জামা কাপড় ছাড়িয়ে দেয়, ঘরের এসি চালিয়ে দেয়। আলমারি থেকে একটা চাদর বের করে সমীরের অর্ধ নগ্ন দেহ ঢেকে দেয়। ঝিলাম চুপ করে গালে হাত দিয়ে থমথমে মুখে সমীরের মুখের দিকে চেয়ে থাকে আর মাথায় কপালে হাত বুলিয়ে দেয়। সমীর অচেতন। দু’চোখে অবিরাম বয়ে চলে শ্রাবন ধারা। মাঝে মাঝে মাথা নাড়ায় ঝিলাম। 

বুধাদিত্য ঝিলামের কাঁধে হাত রেখে বলে, “ওই পাগলার কিছু হয়নি। মদ খেয়ে উলটে পরে গেছে ব্যাস। সকাল হলেই ঠিক হয়ে যাবে। তুমি বাথরুমে গিয়ে স্নান করে নাও। আমি দেখি তোমার জন্য কোন কিছু পড়তে দিতে পারি কিনা।”

ঝিলাম বুক ভাঙ্গা কৃতজ্ঞ ভরা চাহনি নিয়ে বুধাদিত্যের দিকে তাকায়। গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পরে। ঘরের মৃদু আলোতে দু’ফোঁটা চোখের জল দুটি মুক্তোর ফোঁটার মতন ফর্সা গালে চিকচিক করছে। ঠোঁট কেঁপে ওঠে ঝিলামের, “তুমি না থাকলে আমি আজ মরে যেতাম।”

বুধাদিত্য কিছু বলে না। মাথা নিচু করে আলমারি থেকে একটা ট্রাক প্যান্ট, একটা কালো পাঞ্জাবী আর একটা তোয়ালে বের করে আনে। বুধাদিত্য ইচ্ছে করেই কালো লম্বা পাঞ্জাবী বার করে, বিবকে চায়নি ঝিলামের দেহপল্লব দেখার জন্য। ঝিলামের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “বাথরুমে যাও, ওখানে সাবান শ্যম্পু সব আছে। ঠান্ডা লাগলে গিজার চালিয়ে নিও। স্নান করে পরিষ্কার হয়ে এস।”

ঝিলাম ওর হাত থেকে কাপড়, তোয়ালে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে পরে। চোখের জল মুছতে মুছতে বাথরুমে ঢুকে পরে। বুধাদিত্য কিছুক্ষণ সমীরের দিকে তাকিয়ে থাকে। মরার মতন বিছানার ওপরে এলিয়ে পরে আছে সমীর। রাগে ফেটে পরে বুধাদিত্য, মনে হয় পিস্তলের গুলি সবকটা ওর মাথার মধ্যে নামিয়ে দেয়। এত সুন্দরী বউ, প্রান দিয়ে ভালোবাসে তোকে, তা সত্তেও তুই মদ গিলে একটা অন্য মেয়ের কোলে ঢলে পরে গেলি? আমার না হয় কেউ নিজের বলতে নেই, আমি শালা জাত শয়তান। আলমারি থেকে নিজের জন্য বারমুডা নিয়ে নিজের বাথরুমে ঢুকে পরে বুধাদিত্য। 

স্নান সেরে বেড়িয়ে আসে বুধাদিত্য। গেস্টরুমে ঢুকে দেখে সমীর অচেতন অবস্থায় উলটে শুয়ে। ঝিলাম তখন বাথরুম থেকে বের হয়নি, বাথরুম থেকে কোন আওয়াজ শুনতে পায়না। চিন্তায় পরে যায় বুধাদিত্য, রাগে দুঃখে কিছু করে বসেনি ত। দরজায় টোকা মেরে দেখবে কি? গুটি পায়ে বাথরুমের দরজার দিকে এগোয়, ঠিক সেইসময়ে দরজা খুলে ঝিলাম বেড়িয়ে আসে। সামনে বুধাদিত্য কে দেখে মাথা নিচু করে নেয়। 

বুধাদিত্য ঘর থেকে বেড়িয়ে ফ্রিজের কাছে চলে যায়। কিছু খাওয়া হয়নি, ঝিলাম হয়ত এখন কিছু খায়নি। ফ্রিজ খুলে দেখে একটু খানি ভাত আছে, তাতে দু’জনার হয়ে যাবে, একটু ডাল আছে আর একটু আলু ভাজা। বুধাদিত্য খাবার ফ্রিজ থেকে বের করে দেখে পেছনে ঝিলাম দাঁড়িয়ে। কালো পাঞ্জাবী হাঁটু ছেড়ে অনেকটা নেমে এসেছে, সারা শরীর আজ ঢাকা। হাতা গুটিয়ে নিয়েছে। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বুধাদিত্যের দিকে তাকায়। 

ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে বুধাদিত্য, “কিছু খাওয়া হয়েছে?”

ম্লান হাসি দিয়ে বলে, “খাওয়া মাথায় উঠে গেছে আমার। তুমি কিছু খেয়েছ?”

বুধাদিত্য মাথা নাড়ায়, “না কিকরে খাবো। তোমার গলা শুনে দৌড়ে গেছি।” লুকিয়ে নিল যে বিকেলে একজনের সাথে ছিল।

ঝিলাম কাঁধের ওপরে তোয়ালে রেখে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, “দাও ওই গুলো গরম করে দেই।”

বুধাদিত্য, “রান্না ঘরে ঢুকে দেখবে কোনার দিকে মাইক্রো অভেন আছে।”

ঝিলাম মাথা নাড়িয়ে ওর হাত থেকে খাবার নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে পরে। বুধাদিত্য চুপ করে সোফার ওপরে বসে টিভি চালিয়ে দেয়। কিছু পরে ঝিলাম একটা থালায় ভাত ডাল আর ভাজা নিয়ে ওর সামনে রাখে। 

বুধাদিত্য ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি খাবে না?”

ঝিলাম মাথা নাড়িয়ে বলে, “না আমার খিধে নেই, তুমি খেয়ে নাও। আমি ও কাছে গিয়ে একটু বসি।”





ষষ্ঠ পর্বঃ আতঙ্কিত আর্তনাদ (#3)

ঝিলামকে জোর করার ক্ষমতা নেই বুধাদিত্যর, তাই খাওয়ার প্রতি মন উঠে যায়। ঝিলাম ওর সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। বুধাদিত্য কোনোরকমে ভাত মাখতে শুরু করে। 

ঝিলামের দিকে তাকিয়ে বলে, “কিছু খেয়ে নাও, না হলে শরীর খারাপ করবে।”

ঝিলাম কাষ্ঠ হেসে উত্তর দেয়, “খেয়ে আর কি হবে। তোমার জন্য জল নিয়ে আসি, তুমি খাও।”

ঝিলাম জল আনতে চলে যায়। বুধাদিত্যের খাওয়া আর হয়না। ঝিলাম জলের গ্লাস হাতে এসে দেখে ভাত পরে আছে, বুধাদিত্য মাথা নিচু করে সোফার ওপরে বসে। ঝিলাম জিজ্ঞেস করে, “কি হল, খাও?”

বুধাদিত্য মাথা তুলে বলে, “না খিদে মরে গেছে আমার।”

ঝিলাম একটু কড়া গলায় ওকে আদেশ করে, “চুপচাপ খেয়ে নাও, আমার কথা চিন্তা করে কোন লাভ নেই তোমার।”

বুধাদিত্য চুপ করে কয়েক গ্রাস ভাত মুখে তোলে। ঝিলাম সেই দেখে একটু হেসে শোয়ার ঘরে ঢুকে যায়। ঝিলাম চলে যাওয়া মাত্রই বুধাদিত্য থালা নিয়ে উঠে পরে। রান্না ঘরে গিয়ে সব খাবার ডাস্টবিনে ঢেলে থালা সিঙ্কে রেখে দেয়। ফ্রিজ থেকে এক বোতল হুইস্কি আর বরফ বার করে। ফ্রিজের ওপরে ওর কাট গ্লাস সবসময়ে রাখা থাকে। সেই কাট গ্লাসে বরফ ঢেলে হুইস্কি ঢেলে নেয়। বোতল, বরফ আর গ্লাস নিয়ে সোফার ওপরে বসে পরে। সামনে টিভি চলছে, ডিস্কভারি চ্যানেলে সেই পুরানো সেরেঙ্গেটি। এক দল সিংহ একটি হরিণ ধরে তাকে খাবলে খুবলে খায়। বুধাদিত্য হুইস্কির গ্লাসে ছোটো ছোটো চুমুক দেয়। 

ঠিক সেই সময়ে ঝিলাম ওর পাশের সোফার ওপরে এসে বসে। ঝিলামকে বসতে দেখে একটু নড়েচড়ে বসে বুধাদিত্য। ঝিলাম কিছুক্ষণ ফাঁকা চোখে তাকিয়ে থাকে টিভির দিকে। ড্রয়িং রুমের মৃদু আলোতে বুধাদিত্য লক্ষ্য করে ঝিলামের সুন্দর গোল মুখখানি অসামান্য বেদনায় মাখা। চোখ দুটি ফাঁকা ভাষা হীন, ঠোঁট দুটি শুকিয়ে গেছে, চোখের কোনে যেন একটু কালি পরে গেছে। 

ঝিলাম ওর দিকে তাকিয়ে বেদনা ভরা চোখে চাপা গলায় জিজ্ঞেস করে, “কি ছাইপাশ গেল বলতে পার? কি আছে এই মদে?”

বুধাদিত্যের গ্লাস হাতেই থেমে যায়, কি উত্তর দেবে। টিভির দিকে মুখ করে উত্তর দেয়, “জানি না কি আছে, তবে এর স্বাদ অন্য। তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না।”

হটাত করে ঝিলাম বুধাদিত্যের সামনে রাখা মদের বোতল হাতে নিয়ে বলে, “আজ আমি খাব, দেখব কি নেশা আছে এই মদে। কত শান্তি পাও এই সব ছাইপাস গিলে।”

হকচকিয়ে যায় বুধাদিত্য আঁতকে ওঠে, “না তোমাকে খেতে দিতে পারিনা। তুমি খেও না ঝিলাম।”

ঝিলাম বোতল ঠোঁটের কাছে এনে রেগে দুঃখে গঙ্গিয়ে ওঠে, “কেন, আমি কেন খেতে পারিনা, তোমরা খেলে কিছু না, আমি খেলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?”

বুধাদিত্য ওর হাত ধরে ফেলে, “তুমি খাওনি কোন দিন, তুমি খেওনা এই সব।”

ঝিলাম ওর হাতের কবল থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে, চেঁচিয়ে বলে, “সবকিছুর প্রথম বার বলে কিছু আছে। আজ আমি খাবো, আজ এর স্বাদ নিয়ে দেখতে চাই, কি মধু এই মদে।”

বুধাদিত্য দাঁড়িয়ে পরে ঝিলামের সামনে। বোতলের ওপরে শক্ত করে ধরে থাকে। ঝিলাম দাঁড়িয়ে পরে ওর সামনে বোতল কিছুতেই ছাড়ে না। ওর মাথায় রক্ত চেপে গেছে। আজ যেন ঝিলামের দেহে দেবীর শক্তি ভর করে এসেছে। শক্ত করে ঠোঁটের কাছে ধরে থাকে বোতল। বুধাদিত্য একটানে বোতল ছিনিয়ে নেয়, ঝিলাম বোতল ধরতে গিয়ে ওর বুকের ওপরে পরে যায়। 

ঝিলাম কেঁদে ফেলে, “তোমরা খেতে পার, তোমরা সব কিছু করতে পার আর আমি খেলে দোষ?”

বুধাদিত্য চোয়াল শক্ত করে। বুকের মাঝে তোলপাড় হয়ে যায়, বুকের ওপরে টিশার্টএর কলার চেপে ধরে ঝিলাম। মাথা ঝিমঝিম করে বুধাদিত্যের। ছুঁড়ে ফেলে দেয় মদের বোতল, মেঝেতে পরে ঝনঝন শব্দে ভেঙ্গে যায় কাঁচের বোতল, ছড়িয়ে পরে মদ আর কাঁচের টুকরো। 

বুধাদিত্য ঝিলামকে নিচু গলায় বলে, “আমি প্রতিজ্ঞা করছি, ঝিলাম, আজ থেকে আমি আর মদ ছোঁব না।”

কলার ছেড়ে মুখ চাপা দিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে ঝিলাম, “যার প্রতিজ্ঞার অপেক্ষায় আমি, সে করে না কেন? বল আমাকে, উত্তর দাও।”

কি উত্তর দেবে বুধাদিত্য, তাও স্বান্তনা দেয় ঝিলামকে, “আমি কথা দিচ্ছি, সমীরকে আমি মদ খেতে বিরত করব।”

ঝিলাম চুপ করে হাঁটু মুড়ে নিজেকে গুটিয়ে সোফার ওপরে বসে পরে। খুব ক্লান্ত ঝিলাম, ক্লান্তিতে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে, কিন্তু বুকের মাঝে সমীরের চিন্তা। এখন জাগেনি, এখন চোখ খোলেনি। বুধাদিত্য ওর চোখমুখ দেখে বুঝে যায় যে ঝিলাম সমীরের চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। ঝিলামের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর হাতের ওপরে হাত রাখে। জল ভরা চোখে বুধাদিত্যের দিকে তাকায় ঝিলাম।

ঝিলামের ঠোঁট কেঁপে ওঠে, “ভালো হয়ে যাবে তো?”

বুধাদিত্য ম্লান হাসে, “আরে বাবা, কিছু হয়নি। শুধু মদ খেয়ে উলটে পরে আছে। দাঁড়াও আমি এক গ্লাস নুন জল বানিয়ে দিচ্ছি, তুমি ওকে খাইয়ে দাও, দেখবে সব মদ পেট থেকে হরহর করে বেড়িয়ে যাবে, শালা একদম ঠিক হয়ে যাবে।”

ঝিলাম কিছু বলেনা, চুপ করে বসে থাকে। বুধাদিত্য রান্না ঘরে ঢুকে নুন জল বানিয়ে ঝিলামের হাতে ধরিয়ে দেয়। ঝিলাম গ্লাস নিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে পরে। বুধাদিত্য বালতি আনতে বাথরুমে ঢুকে পরে। ঝিলাম সমীরের মাথা কোলের ওপরে তুলে ধরে, কানেকানে মুখ খুলতে বলে। সমীর অচেতন, একটু নড়াচড়া করে ব্যাস। ঝিলাম ওর ঠোঁটের কাছে জলের গ্লাস ধরে, সমীর কোনোরকমে একটু ঠোঁট খোলে, ঝিলাম নুন জল ওর গলায় ঢেলে দেয়। নুন জল পেটে যাওয়ার কিছু পরে ওর শরীর কেঁপে ওঠে। বুধাদিত্য তাড়াতাড়ি বালতি নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরে। হরহর করে বমি করতে শুরু করে সমীর। কালো হলদে মদ আর কিছু খাবার বেড়িয়ে যায় পেট থেকে। ঝিলাম বারেবারে সমীরের মাথায় কপালে হাত বুলিয়ে দেয়। বুধাদিত্য জলের নিয়ে বোতল ঝিলামের হাতে ধরিয়ে দেয়। ঝিলাম আঁজলা করে জল নিয়ে সমীরের মুখে চোখে ছিটিয়ে দেয়। কিছু পরে সমীর শান্ত ছেলের মতন চুপ করে শুয়ে পরে ঝিলামের কোলে। 

বুধাদিত্য ঝিলাম কে বলে, “ব্যাস, নো চিন্তা। এবারে একটু পরে দেখবে তোমার সমু ডারলিং চোখ খুলেছে।”

ঝিলাম ম্লান হেসে বলে, “চোখ খুল্লেই খেয়ে ফেলব আমি।”

হেসে ওঠে বুধাদিত্য, “পরে খেও, এখন একটু বিশ্রাম করো।”

ঝিলাম, “তুমি শুয়ে পড়ো, অনেক ধকল দিলাম তোমাকে।”

বুধাদিত্য, “না এমন কিছু ধকল দাওনি আমাকে। আমি ঠিক আছি।”

বুধাদিত্য বসার ঘরে চলে যায়, সোফার ওপরে বসে চুপ করে টিভি দেখে। ওদিকে ঘরের মধ্যে ঝিলাম সমীরের মাথার কাছে বসে থাকে চুপ করে। সমীর কিছু পরে চোখ খুলে ঝিলামের দিকে তাকায়। বুধাদিত্য দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে যে ঝিলাম ওর মুখের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। সমীর কাচুমাচু মুখ করে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে। ঝিলামের ফর্সা গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরে। উলটো হাতে চোখ মুছে নেয়। বুধাদিত্য চুপ করে সোফা ছেড়ে উঠে দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। 

ঝিলাম সমীরকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন লাগছে তোমার শরীর?”

সমীরের গলা শুকিয়ে গেছে, ঝিলামের মুখ দেখে ওর নেশার ঘোর কেটে গেছে। মাথা নিচু করে বিছানার ওপরে উঠে বসে। ঝিলাম ওর চিবুকে হাত রেখে মুখ নিজের দিকে করে। ঝিমীর চোখ বন্ধ করে থাকে। ঝিলাম ওর গালে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দেয়। চড়ের আওয়াজ সেই রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে সারা বাড়িতে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। সমীর চুপ করে বসে থাকে কিছু বলে না। 

ঝিলাম সমীরের দিকে চেঁচিয়ে ওঠে, “আমাকে একটু বিষ দিতে পার না। খেয়ে মরে গেলে শান্তি পাবে।”

সমীর লাল চোখে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে বলে, “দয়া করে ক্ষমা করে দাও আমাকে। আমি মদের নেশায় কি করেছি কিছুই মনে নেই।”

ওর পায়ের ওপরে ঝুঁকে পরে সমীর। ঝিলাম পা সরিয়ে নিয়ে চুলের মুঠি ধরে মাথা তুলে ধরে।

সমীরকে বলে, “ছিঃ পা ধরতে নেই।” ওর মুখখানি আঁজলা করে ধরে কাতর সুরে বলে, “কেন গেল ওই ছাইভস্ম? কি স্বাদ পাও ওর মধ্যে? আমি কি দেইনি তোমাকে?”

সমীর ককিয়ে ওঠে, “না ঝিলাম, না, তোমার মধ্যে কোন খুত নেই। আমি দুঃখিত ঝিলাম, আমাকে ক্ষমা করে দাও।” কেঁদে ফেলে সমীর। ঝিলাম ওকে দুহাতে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে। 

বুধাদিত্য চুপচাপ দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে আসে। এবারে সমীর আর ঝিলামের মান অভিমানের পালা চলবে, তারপরে বাইবে প্রেমের ভেলা।







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment