আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
ওই কাগজে লেখা, “উইথ লাভ ফর এভার ইওরস, মনিদিপা চৌধুরী।”
প্যাকেট’টা খুলে দেখল যে ওতে কড়কড়ে হাজার টাকার নোটের তাড়া, দেড় লাখ টাকা। কিছুই ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছে না দেবেশ। চোখের সামনে মনীষার মুখ আর তার সাথে মনিদিপার মুখ কিছুতেই মিলয়ে নিতে পারছে না। কিন্ত এই কাগজ মিথ্যে নয়, ওই হাতের লেখা ও ভাল ভাবে চেনে। ওই হাতের লেখা দেখে চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে এল দেবেশের, একি করল সে। একজন কে পেতে গিয়ে আরেক জনের শরীরের সাহায্য নিল। সামনে রিতিকা, যে ওকে বিয়ে করবে, হাতে মনিদিপার চেক, সেই ভালবাসার পাত্রি মনিদিপা, যে এমনকি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে আর রিতিকাকে বরন করে নেবার সুযোগ দিয়েছে। রিতিকা ওর রজনীগন্ধা, সুন্দর কোমল নির্মল ফুল আর মনিদিপা ওর হাসনাহেনা, মাদকতায় ভরা এক ভালবাসা।
না আর ভাবতে পারছে না দেবেশ, হাতের মুঠিতে কাগজ’টা প্রাণপণে শক্ত করে ধরে আরেক হাতের মুঠিতে সোনার হার। নিজের কপালে করাঘাত করল দেবেশ। হৃদয় ফাটিয়ে আর্তনাদ করে উঠল, “মনিদিপআআআআআ...” না সে নাম ঠোঁটে এল’না ওর, বুকের আর্তনাদ, বুকের মাঝেই রয়ে গেল। মেঝের ওপরে বসে পড়ল দেবেশ।
রিতিকা দেবেশের জল ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল খুব বড় একটা অঘটন ঘটে গেছে। বিছানার চাদর জড়িয়ে নেমে এল দেবেশের পাশে, বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে রিতিকার, কি হল দেবেশের।
রিতিকা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে, হানি?”
রিতিকার গলা শুনে পৃথিবীতে ফিরে এল দেবেশ। কি বলবে রিতিকাকে, ভাষা হারিয়ে ফেলেছে দেবেশ। রিতিকা ওর হাত থেকে কাগজ’টা নিয়ে দেখল ওতে কি লেখা আছে। লেখা পড়ে রিতিকার চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে গেল। বুকের মাঝে কেউ যেন দুমদাম করে হাতুরি মারতে শুরু করে দিল।
কান্না ভেজা গলায় জিজ্ঞেস করল রিতিকা, “এটা কি দেবেশ?”
কি উত্তর দেবে রিতিকাকে, কাঁপতে কাঁপতে দেবেশ বলল, “আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না, রিতিকা?”
দেবেশের কথা শুনে রিতিকার মুখ শুকিয়ে গেল, কেউ যেন ওর সারা শরীরের রক্ত শুষে নিয়েছে। বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করে উঠল রিতিকা, “কি হয়েছে তোমার দেবেশ, আমাকে বল।”
রিতিকার দিকে তাকিয়ে দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “আমি খুব বড় পাপী রিতিকা। আমায় বিয়ে করলে তুমি সুখী হবে না। তুমি চলে যাও আমাকে ছেড়ে।”
রিতিকা জড়িয়ে ধরল দেবেশকে, “কি যাঃতা বলছ তুমি, তোমার চোখ দেখে আমার ভয় করছে হানি। কি হয়েছে তোমার?”
দেবেশ দাতে দাঁত চিপে রিতিকার হৃদয় ভেঙ্গে দিল। চেঁচিয়ে উঠল দেবেশ, “আই হেট ইউ রিতিকা, তুমি সুবিধা বাদি মেয়ে। আমি সুইজারল্যান্ডের চাকরি পেলে তবে তুমি আমাকে বিয়ে করবে না হলে তুমি আমাকে করতে না। এই রকম সুবিধা বাদি তুমি। আই হেট ইউ রিতিকা।” কথাগুল বলতে দেবেশের বুক ফেটে যাচ্ছিল কিন্তু ওকে ওর মনিদিপাকে খুঁজতে হবে, এই হার মনিদিপার গলার, এই হার আর কাউকে ও পরাতে পারবে না, মরে গেলেও পারবেনা।
দেবশের কথা শুনে রিতিকা জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল, “না হানি আমার সুইজারল্যান্ড চাই না, প্লিস ওই রকম ভাবে আমাকে ফেলে দিও না। তুমি আমাকে যেখানে রাখবে সেখানে থাকতে আমি রাজি। তোমার সাথে আমি কলকাতা যেতেও রাজি।”
দেবেশ দেখল রিতিকাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না, বুক ফেটে যাচ্ছে দেবেশের। নিরুপায় হয়ে দেবেশ শেষ পর্যন্ত হাতের মুঠি খুলে ওকে সোনার হার’টা দেখাল।
রিতিকার চোখে জল নিয়ে দেবেশের হাত থেকে সোনার হার’টা নিয়ে নিল।
কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল “এটা কি?”
দেবেশ কান্না জড়িত স্বরে উত্তর দিল, “এটা আমার ভালবাসা। আমার জেঠিমা আমাকে দিয়েছিল আর বলেছিল যে আমি যেন আমার বউয়ের গলায় পড়িয়ে দেই। আজ রাতে এই হার তোমার গলায় পড়িয়ে চিরকালের জন্য নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম আমি। এই হার আমার প্রথম ভালবাসা, মনিদিপার। মনিদিপা সুইসাইড করে আর আমাকে ওর এই হার দিয়ে যায়। আজ আমি আমার মনিদিপা কে খুঁজে পেয়েছি। রামাচন্দ্রনের সাথে যে মনীষা রাত কাটিয়ে ছিল সে আমার মনিদিপা। মনিদিপা বেঁচে আছে, আমি ওর হার আর কারুর গলায় দিতে পারব না। এই হার আমি তোমাকে পড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারলাম না, রিতিকা। রিতিকা আমি পাপী, আমাকে ক্ষমা কর।”
রিতিকার পায়ে লুটিয়ে পড়ল দেবেশ। সোনার হার হাতে নিয়ে পাথর হয়ে গেল রিতিকা। ওর গা হাত পা, ঠান্ডা হয়ে গেছে দেবেশের কথা শুনে। হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে রিতিকার। দু’চোখে যেন অস্রু নয়, রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অনেকক্ষণ পরে চোখের জল মুছে রিতিকা সোনার হার’টা দেবেশের হাতে দিল। দেবেশ তাকিয়ে রইল রিতিকার লাল চোখের দিকে।
হৃদয় ভাঙ্গা এক হাসি দিয়ে রিতিকা দেবেশকে বলল, “আজ রাতের জন্য একবার’টি এই হার আমার গলায় পড়িয়ে দাও, হানি। আমি কাল সকালে তোমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো।”
কাঁপা হাতে দেবেশ রিতিকার গলায় ওই সোনার হার পড়িয়ে দিল। দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে নরম বিছানায় উঠে গেল। শেষ বারের মতন প্রান ঢেলে নিজেকে উজাড় করে দিল, রিতিকা। চোখে জল নিয়ে, দেবেশ নিজেকে সপে দিল রিতিকার প্রেমঘন বাহু পাশে। যেন এই রাতের আর শেষ নেই।
এক সময়ে ক্লান্ত হয়ে রিতিকার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল দেবেশ। সারা রাত দেবেশ কে জড়িয়ে কেঁদে গেল রিতিকা। পুব আকাশে সূর্য উঠছে, ঘরের মধ্যে নতুন সূর্যের আলো, কিন্তু রিতিকার হৃদয় আজ কালো মেঘ। খুব সাবধানে, আস্তে আস্তে কপালে চুমু খেল, ঠোঁটে চুমু খেল, বুকে চুমু খেল রিতিকা, পাছে দেবেশ জেগে যায়। গলা থেকে খুলে নিল সোনার হার আর পড়িয়ে দিল দেবেশের গলায়। ঠিক বাঁ বুকের ওপরে যেখানে হৃদয় খানি ধুকপুক করছে, সেখানে চুমু খেল রিতিকা।
একটা কাগজে লিখল, “আই উইল রিমেম্বার ইউ ফরেভার। আমার শুভেচ্ছা আর ভালবাসা তোমার সাথে থাকবে। আমার সামনে আর কোনদিন এসো না। নিজের ভালবাসার খোঁজে যাও, হানি।”
তারপরে আর পেছন ফিরে তাকাল না, নিজের জামা কাপড় পরে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।
সকালে উঠে দেখে বিছানায় রিতিকা নেই, ওর গলায় ঝুলছে সোনার হার। ফাঁকা বুক নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়ল দেবেশ। হাতে রিতিকার ছোট্ট চিঠি। অনেক্ষন পরে রাজন কে ফোন করল দেবেশ, কিন্তু রাজন ফোন উঠাল না, বারে বারে ফোন করল। কিন্তু রাজন আর ফোন ধরল না। কিছুদিন পরেও ফোন করে দেখল যে নাম্বারটা আর চলছে না। এত কাছে এসেও মনিদিপাকে হারিয়ে দিল দেবেশ।
সারা দিল্লী তোলপাড় করে খুঁজতে চেষ্টা করল মনীষা’কে, কিন্তু এ নারী যে অধরা। কোন নাইট ক্লাব বা ডিস্কোতে কেউ ওই নামের কোন মেয়ে কে চেনেনা। রাজনের ফোন আর পেল না দেবেশ।
একদিন বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে দেবেশ, পাশে একটা বইয়ের দোকানে একটা মেয়েদের পত্রিকায় দেখল মনীষা শর্মার নাম। নামটা দেখে চমকে গেল দেবেশ, যাক একটা কিছু পেয়েছে অবশেষে। এবার মনীষা ওরফ মনিদিপা কে খুঁজে বের করবেই। ফোন করল সেই পত্রিকার অফিসে। সেখানে গিয়ে জানতে পারল যে মনীষা শর্মা কিছুদিন আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। দেবেশ ঠিক বুঝে গেল যে মনিদিপা আবার ওর হাতের নাগাল থেকে বেড়িয়ে চলে গেছে। এতদিন পরে ও বুঝল যে জারনালিস্ট মনীষা কেন নিজেকে এত ঢেকে রেখেছিল সেই রাতে।
সুইজারল্যান্ডের চাকরি নিলনা দেবেশ তবে ফ্রান্সের একটা খুব বড় কম্পানিতে চাকরি পেয়ে গেল।
গলায় আজ’ও সোনার হার’টা ঝুলছে। আজও দেবেশের বুকের কাছে জানান দেয় যে মনিদিপা কোথাও লুকিয়ে আছে। এখন থেকে দিন গোনার পালা শুরু আর লুকোচুরির খেলা শুরু। আবার কবে দেখা হবে মনিদিপার সাথে। কিন্তু আর দেখা হয় না। দেবেশ বিদেশে চলে গেল।
দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে গেল। প্রত্যেক বছরে একমাস ছুটি নিয়ে দেবেশ বাড়ি যায়।
মা প্রত্যেক বার জিজ্ঞেস করে, “কিরে বিয়েটা কবে করবি? এবারে ত করে ফেল।”
প্রত্যেক বার একই উত্তর দেয় দেবেশ, “আরে মা, এখন যা’কে খুজছি তাকে পাইনি।”
তিন বছর পরে একদিন, দেবেশের আই-আই-টি র বন্ধু অনির্বাণের ফোন এল। জানাল যে, বেশ কয়েক জন মিলে দিল্লীতে একটা গেট টুগেদার করবে। ওকে আসতেই হবে। অনেক নাছরবান্দার করার পরে দেবেশ রাজি হল গেটটুগেদার’এ যাবে। ভালই হবে এবছরের বাড়ির ট্রিপ’টাও একসাথে সারা হয়ে যাবে।
তিন বছর পরে, দিল্লী ফিরে সেই পুরান আই.আই.টি ক্যাম্পাসে ঢুকে অনেক দিন পরে ভাল লাগল দেবেশের। দেখা হল অনেক পুরান বন্ধুদের সাথে। অনির্বাণ, ভিশাল, নিলাঞ্জন আর ধিমান। অনির্বাণ এখন বাসেল থাকে, ভিশাল লন্ডনে, ধিমান কায়রো আর নিলাঞ্জন দিল্লীতেই থাকে। দেবেশকে দেখা মাত্রই ভিশাল ওকে জড়িয়ে ধরল।
দেবেশ একটু অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিরে কি হল তোর?”
ভিশাল একটু হেসে উত্তর দিল, “না ইয়ার কিছু’না, আসল কথা হচ্ছিল যে তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই।”
অনির্বাণ প্রস্তাব দিল যে হৃষীকেশ যাবে র্যাফটিং করতে। বেশ হইহুল্লর হবে এই ভেবে সবাই এক কথায় রাজি হয়ে গেল।
একদিন আগেই ওরা পৌঁছে গেছিল হৃষীকেশে। রাতের বেলা গঙ্গা নদীর তীরে বসে পাঁচ বন্ধু হাতে বিয়ারের বোতল নিয়ে বসে। বেশ হাসি ঠাট্টা মজা চলছে।
অনির্বাণ ওকে জিজ্ঞেস করল, “মাল কবে বিয়ে করবি, সাতাশ ত হল। আমাদের ত সবার বিয়ে হয়ে গেল শুধু তুই বাকি।”
কাষ্ঠ হাসি হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “আমার মনে হয় না বিয়ে হবে?”
অনির্বাণ ওকে একটু ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করল, “কেন রে? রিতিকা ডিচ করেছে তাই আর বিয়ে করবি না।”
গম্ভির আওয়াজে উত্তর দিল দেবেশ, “না রিতিকা আমাকে ডিচ করেনি। রিতিকা অনেক অনেক ভাল মেয়ে। আমার নিজের কিছু প্রবলেম ছিল যার জন্য আমি আর রিতিকা আলদা আলদা পথে চলে যাই।”
ওর গলার আওয়াজ শুনে সবাই চুপ করে গেল। ভিশাল বলল, “আরে ইয়ার, পুরান কথা ঘেঁটে আর কি হবে। চল চল ওসব কথা ছাড়, কাল সকালে উঠে র্যাফটিংএ যেতে হবে চল সবাই শুয়ে পড়ি।”
সকালবেলায় ওরা বেড়িয়ে পড়ল র্যাফটিং করতে। দুপুরবেলা পর্যন্ত গঙ্গায় র্যাফটিং করে সবাই ক্লান্ত হয়ে ফিরল। সবাই নিজের নিজের ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়েছে। দেবেশ ক্লান্ত থাকা স্বতেও ঘুমতে পারল না। অনেকদিন পরে ওর রিতিকার কথা মনে পরে গেল আর তার সাথে মনে পরে গেল গলায় ঝোলা মনিদিপার সোনার হার।
একটু খানি মনমরা হয়ে গেল দেবেশ, “আর কি আমি মনিদিপাকে খুঁজে পাব না?”
কাউকে কিছু না জানিয়ে ও গঙ্গার ঘাটের দিকে হাঁটা দিল। পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যে হয় হয়। দেবেশ চুপ করে বসে রইল গঙ্গার ঘাটে, এক মনে বয়ে চলা গঙ্গার জলের দিকে তাকিয়ে আছে। কতো লোকে কতো রকমের মানত করে এই মা গঙ্গার কাছে, অনেকের সেই মনকামনা পূরণ হয় অনেকের হয় না। দেবেশ বুক ভরে বড় একটা নিস্বাস নিল, না ওর ভাগ্য অত ভাল নয় যে মা গঙ্গা ওর কথা শুনবে।
ঠিক এমন সময়ে ওর চোখ গেল কিছু দুরে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার দিকে। মহিলা ওর দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে তাই ওই মহিলার মুখ দেখতে পাচ্ছে না দেবেশ। মহিলার পরনে একটা ঘিয়ে রঙের দামী ঢাকাই জামদানি শাড়ি। মাথার চুল এল খোঁপা করে ঘাড়ের কাছে এলিয়ে আছে। মহিলার গায়ের রঙ বেশ ফর্সা আর বেশ সুন্দরী দেখতে। মহিলার হাতে একটি পুজোর থালা। মহিলাটি পুজো সেরে একটু ঝুঁকে গঙ্গার জল নিজের মাথায় ছিটিয়ে নিল।
দেবেশ একমনে মহিলাকে দেখে চলেছে। দেখতে’ত বাঙালি বলেই মনে হচ্ছে দেবেশের। মহিলার রুপ আর সাজ যেন দেবেশকে টেনে ধরে রেখেছে, চোখের পলক যেন পড়ছে না দেবেশের।
মহিলাটি ধিরে ধিরে পেছন ফিরল আর দেবেশের চোখ সোজা মহিলার মুখের ওপরে। দেবেশ স্তানুর মতন দাঁড়িয়ে পড়ল। বুকের ধুকপুকানি থেমে গেছে, এই মুখ সে চেনে, এই চোখ সে চেনে। বড় কাছ থেকে দেখেছে ওই কাজল কালো চোখ। সামনে দাঁড়িয়ে মনীষা ওরফে মনিদিপা। বুকের মাঝে তোলপাড় করে উঠল। এক পা এগিয়ে যে মনিদিপার দিকে যাবে সেই শক্তি টুকু নেই।
মনিদিপা মাথা তুলে এগিয়ে যাবার জন্য পা বাড়াল, হটাত করে চখাচুখি হয়ে গেল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দেবেশের সাথে। পা বাড়াতে ভুলে গেল মনিদিপা। কেউ যেন ওর পায়ের পাতার ওপরে পেরেক দিয়ে মাটির সাথে গেঁথে দিয়েছে। নড়বার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে মনিদিপা। ঠোঁট দুটি তিরতির করে কেঁপে উঠল মনিদিপার, আস্তে আস্তে করে দুটি চোখ জলে ভরে গেল। পৃথিবীটা ওর দুই ভেজা চোখের সামনে বনবন করে ঘুরছে। মনিদিপার মাথা ঘুরতে শুরু করল, আর যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা।
লুটিয়ে পরে যাবার আগেই দৌড়ে গিয়ে দেবেশ দু হাতে জড়িয়ে ধরল মনিদিপাকে। পুজোর থালা মাটিতে পরে গেল, ঝনঝন শব্দে গড়াতে গড়াতে পুজোর থালা গঙ্গার জলে ভেসে গেল। দেবেশ মনিদিপার জলে ভরা কাজল কালো চোখের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ পরে ধিরে ধরে চোখ খুল্ল মনিদিপা, ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইল দেবেশের মুখের দিকে। একটু অপ্রস্তুত লাগল নিজেকে অত লোকের সামনে একজনের বাহুর মধ্যে নিজেকে পেয়ে, আস্তে করে দেবেশের আলঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। দু’চোখে বন্যা নেমেছে মনিদিপার। বারে বারে চোখ মুছছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।
বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করার ইচ্ছে হচ্ছে মনিদিপার, “কেন এসেছ আমার সামনে আবার আমাকে ব্যাথা দিতে। কেন আমার জীবন থেকে চলে যেতে পার না তুমি, দেবেশ?” না মনিদিপা ওই কথা ওর ঠোঁটে আনতে পারেনি। চোখের জল মুছে ম্লান হাসি হেসে জিজ্ঞেস করল দেবেশকে, “কেমন আছো দেবেশ? তিন বছর আগে যা ছিলে তার থেকে একটু যেন রোগা হয়ে গেছ।”
এতদিন পরে ওই আওয়াজ শুনে দেবেশের বুক কেঁপে উঠল। চোখের জ্বালা করছে কিন্তু কাঁদতে পারছে না। হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “তুমি অনেক বদলে গেছ, মনি।”
মনিদিপা ঠোঁট কামড়ে ধরল, সাত বছর পরে ওই নামে আবার কেউ ওকে ডাকল আজ। সত্যি অনেক বদলে গেছে, মাথা নাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমার জীবন’টাই এইরকম। তোমার খবর বল, আজকাল ত মনে হয় সুইজারল্যান্ডে আছো তাইতো?”
দেবেশ মনিদিপার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দিল, “অনেক কিছু খবর রাখ দেখছি।”
মনিদিপা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “কেউ কেউ রাখে কেউ কেউ রাখে না।”
দেবেশ মাথা নেড়ে জানাল, “না মনি, আমি সুইজারল্যান্ডে থাকিনা, আমি বোরদে, ফ্রান্সে থাকি।”
এবারে অবাক হবার পালা মনিদিপার, একভাবে তাকিয়ে রইল দেবেশের মুখের দিকে কতবছর পরে একে অপরকে এত কাছ থেকে দেখছে। মনিদিপার হাত ধরল দেবেশ, হাতের ছোঁয়া পেয়ে যেন গলে যাবে মনিদিপা, একটু কেঁপে উঠল ওর হাতের পরশ পেয়ে। দেবেশ বলল, “এসো আমার সাথে।”
জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মনিদিপা, “কোথায় যাবো?”
দেবেশ হেসে জবাব দিল, “একটু হাটতে আপত্তি নেই নিশ্চয়?”
মাথা নাড়ল মনিদিপা, “না তা নেই।” বলেই হেসে ফেলল। সেই মুক্ত সাজান দাঁতের পাটি দেখে দেবেশের মন খুশিতে ভরে গেল।
দু’জনে রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করল। কারুর মুখে কথা নেই, দুজনের বুকে এক অজানা শূন্যতা আর ভাললাগা দুটোই ভর করে রয়েছে। দুজনেই যেন ভাবছে কে আগে কিছু বলবে।
অনেকক্ষন পরে দেবেশ ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “দিল্লীতে কোথায় থাক?”
মনিদিপা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, “আমি তিন বছর হল দিল্লী ছেড়ে দিয়েছি।”
দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “কেন? তুমি ত একটা পত্রিকায় লিখতে তাই না?”
মনিদিপা উত্তর দিল, “হ্যাঁ লিখতাম। কিন্তু আর থাকতে পারলাম না তাই দিল্লী ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হল।”
দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “এখন কোথায় থাকো তুমি?”
“কেন আমাকে শেষ করে দিয়েও তোমার এখন শান্তি হয়নি।” না কথাটা বলল না মনিদিপা, কাষ্ঠ হাসি হেসে উত্তর দিল, “আমি যেখানে আছি ভাল আছি তুমি আর জেনে কি করবে?”
উত্তরটা দেবেশের মনে বড় ব্যাথা দিল। মনিদিপার অধিকার আছে সে ব্যাথা দেবার। আবার দুজনেই চুপ। নিজেদের মাঝে একটু ব্যাবধান রেখে হাঁটতে থাকল। দেবেশ ভাবছে যে কি কথা বলা যায়, কি প্রশ্ন করবে মনিদিপাকে, কি হয়েছিল মনিদিপার এই প্রশ্ন করবে? ওদিকে মনিদিপা ভাবছে যে, কেন আবার দেবেশের সাথে দেখা হল, ভাল’ত ছিল মনীষা হয়ে এক নতুন জীবন নিয়ে। কিন্তু দেবেশ এখানে কি করছে? এতদিনে নিশ্চয় বিয়ে করেছে।
মনিদিপা দেবেশকে জিজ্ঞেস করল, “তা হৃষীকেশ-এ কেন?”
মনিদিপার আওয়াজ শুনে দেবেশের ধড়ে প্রান ফিরে এল, “অনেক দিন পর পুরান বন্ধুদের সাথে দেখা হল আর এই বন্ধুদের সাথে র্যাফটিং করতে এখানে আসা।”
হাসি থামাতে পারল না মনিদিপা, “ফ্রান্স থেকে এখানে র্যাফটিং করতে আসা? বাপরে তোমার ফ্রান্সে নদী নালা নেই নাকি?”
হাসি শুনে খুব ভাল লাগল দেবেশের, ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল দেবেশ, “না, সেই রকম নয়, আমার বন্ধুরা সবাই বিদেশে থাকে। একটা গেটটুগেদার হয়ে গেল আর র্যাফটিং’ও হয়ে গেল।”
আবার দুজনেই চুপ, কে কাকে কি জিজ্ঞেস করবে এই নিয়ে দুজনেই মনের মধ্যে প্রশ্নের অভিধান খুলে বসেছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “মনি যাবে আমার সাথে?” জিজ্ঞেস করার পরেই দেবেশের হৃদয়ের ধুকপুকানি বেড়ে গেল, মনিদিপা কি উত্তর দেবে এই ভেবে।
মনিদিপার বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেল। আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় নিয়ে যাবে?”
দেবেশ উত্তর দিল, “আমার হোটেলে চল একটু বসে গল্প করব।”
হেসে জবাব দিল মনিদিপা, “গল্প করার জন্য’ত অন্য কোথাও বসা যেতে পারে, কিন্তু হোটেলে কেন নিয়ে যেতে চাও আমাকে?”
দেবেশ হেসে উত্তর দিল, “ভয় নেই খেয়ে নেব না আমি।”
মনিদিপা বলল, “আচ্ছা চল, তবে বেশিক্ষণ বসব না। আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরে জিনিস গুছাতে হবে। কাল সকাল বেলা আমি চলে যাব তাই।”
click here
পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী
Written By pinuram
Written By pinuram
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#19)
ওই কাগজে লেখা, “উইথ লাভ ফর এভার ইওরস, মনিদিপা চৌধুরী।”
প্যাকেট’টা খুলে দেখল যে ওতে কড়কড়ে হাজার টাকার নোটের তাড়া, দেড় লাখ টাকা। কিছুই ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছে না দেবেশ। চোখের সামনে মনীষার মুখ আর তার সাথে মনিদিপার মুখ কিছুতেই মিলয়ে নিতে পারছে না। কিন্ত এই কাগজ মিথ্যে নয়, ওই হাতের লেখা ও ভাল ভাবে চেনে। ওই হাতের লেখা দেখে চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে এল দেবেশের, একি করল সে। একজন কে পেতে গিয়ে আরেক জনের শরীরের সাহায্য নিল। সামনে রিতিকা, যে ওকে বিয়ে করবে, হাতে মনিদিপার চেক, সেই ভালবাসার পাত্রি মনিদিপা, যে এমনকি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে আর রিতিকাকে বরন করে নেবার সুযোগ দিয়েছে। রিতিকা ওর রজনীগন্ধা, সুন্দর কোমল নির্মল ফুল আর মনিদিপা ওর হাসনাহেনা, মাদকতায় ভরা এক ভালবাসা।
না আর ভাবতে পারছে না দেবেশ, হাতের মুঠিতে কাগজ’টা প্রাণপণে শক্ত করে ধরে আরেক হাতের মুঠিতে সোনার হার। নিজের কপালে করাঘাত করল দেবেশ। হৃদয় ফাটিয়ে আর্তনাদ করে উঠল, “মনিদিপআআআআআ...” না সে নাম ঠোঁটে এল’না ওর, বুকের আর্তনাদ, বুকের মাঝেই রয়ে গেল। মেঝের ওপরে বসে পড়ল দেবেশ।
রিতিকা দেবেশের জল ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল খুব বড় একটা অঘটন ঘটে গেছে। বিছানার চাদর জড়িয়ে নেমে এল দেবেশের পাশে, বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে রিতিকার, কি হল দেবেশের।
রিতিকা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে, হানি?”
রিতিকার গলা শুনে পৃথিবীতে ফিরে এল দেবেশ। কি বলবে রিতিকাকে, ভাষা হারিয়ে ফেলেছে দেবেশ। রিতিকা ওর হাত থেকে কাগজ’টা নিয়ে দেখল ওতে কি লেখা আছে। লেখা পড়ে রিতিকার চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে গেল। বুকের মাঝে কেউ যেন দুমদাম করে হাতুরি মারতে শুরু করে দিল।
কান্না ভেজা গলায় জিজ্ঞেস করল রিতিকা, “এটা কি দেবেশ?”
কি উত্তর দেবে রিতিকাকে, কাঁপতে কাঁপতে দেবেশ বলল, “আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না, রিতিকা?”
দেবেশের কথা শুনে রিতিকার মুখ শুকিয়ে গেল, কেউ যেন ওর সারা শরীরের রক্ত শুষে নিয়েছে। বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করে উঠল রিতিকা, “কি হয়েছে তোমার দেবেশ, আমাকে বল।”
রিতিকার দিকে তাকিয়ে দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “আমি খুব বড় পাপী রিতিকা। আমায় বিয়ে করলে তুমি সুখী হবে না। তুমি চলে যাও আমাকে ছেড়ে।”
রিতিকা জড়িয়ে ধরল দেবেশকে, “কি যাঃতা বলছ তুমি, তোমার চোখ দেখে আমার ভয় করছে হানি। কি হয়েছে তোমার?”
দেবেশ দাতে দাঁত চিপে রিতিকার হৃদয় ভেঙ্গে দিল। চেঁচিয়ে উঠল দেবেশ, “আই হেট ইউ রিতিকা, তুমি সুবিধা বাদি মেয়ে। আমি সুইজারল্যান্ডের চাকরি পেলে তবে তুমি আমাকে বিয়ে করবে না হলে তুমি আমাকে করতে না। এই রকম সুবিধা বাদি তুমি। আই হেট ইউ রিতিকা।” কথাগুল বলতে দেবেশের বুক ফেটে যাচ্ছিল কিন্তু ওকে ওর মনিদিপাকে খুঁজতে হবে, এই হার মনিদিপার গলার, এই হার আর কাউকে ও পরাতে পারবে না, মরে গেলেও পারবেনা।
দেবশের কথা শুনে রিতিকা জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল, “না হানি আমার সুইজারল্যান্ড চাই না, প্লিস ওই রকম ভাবে আমাকে ফেলে দিও না। তুমি আমাকে যেখানে রাখবে সেখানে থাকতে আমি রাজি। তোমার সাথে আমি কলকাতা যেতেও রাজি।”
দেবেশ দেখল রিতিকাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না, বুক ফেটে যাচ্ছে দেবেশের। নিরুপায় হয়ে দেবেশ শেষ পর্যন্ত হাতের মুঠি খুলে ওকে সোনার হার’টা দেখাল।
রিতিকার চোখে জল নিয়ে দেবেশের হাত থেকে সোনার হার’টা নিয়ে নিল।
কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল “এটা কি?”
দেবেশ কান্না জড়িত স্বরে উত্তর দিল, “এটা আমার ভালবাসা। আমার জেঠিমা আমাকে দিয়েছিল আর বলেছিল যে আমি যেন আমার বউয়ের গলায় পড়িয়ে দেই। আজ রাতে এই হার তোমার গলায় পড়িয়ে চিরকালের জন্য নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম আমি। এই হার আমার প্রথম ভালবাসা, মনিদিপার। মনিদিপা সুইসাইড করে আর আমাকে ওর এই হার দিয়ে যায়। আজ আমি আমার মনিদিপা কে খুঁজে পেয়েছি। রামাচন্দ্রনের সাথে যে মনীষা রাত কাটিয়ে ছিল সে আমার মনিদিপা। মনিদিপা বেঁচে আছে, আমি ওর হার আর কারুর গলায় দিতে পারব না। এই হার আমি তোমাকে পড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারলাম না, রিতিকা। রিতিকা আমি পাপী, আমাকে ক্ষমা কর।”
রিতিকার পায়ে লুটিয়ে পড়ল দেবেশ। সোনার হার হাতে নিয়ে পাথর হয়ে গেল রিতিকা। ওর গা হাত পা, ঠান্ডা হয়ে গেছে দেবেশের কথা শুনে। হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে রিতিকার। দু’চোখে যেন অস্রু নয়, রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অনেকক্ষণ পরে চোখের জল মুছে রিতিকা সোনার হার’টা দেবেশের হাতে দিল। দেবেশ তাকিয়ে রইল রিতিকার লাল চোখের দিকে।
হৃদয় ভাঙ্গা এক হাসি দিয়ে রিতিকা দেবেশকে বলল, “আজ রাতের জন্য একবার’টি এই হার আমার গলায় পড়িয়ে দাও, হানি। আমি কাল সকালে তোমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো।”
কাঁপা হাতে দেবেশ রিতিকার গলায় ওই সোনার হার পড়িয়ে দিল। দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে নরম বিছানায় উঠে গেল। শেষ বারের মতন প্রান ঢেলে নিজেকে উজাড় করে দিল, রিতিকা। চোখে জল নিয়ে, দেবেশ নিজেকে সপে দিল রিতিকার প্রেমঘন বাহু পাশে। যেন এই রাতের আর শেষ নেই।
এক সময়ে ক্লান্ত হয়ে রিতিকার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল দেবেশ। সারা রাত দেবেশ কে জড়িয়ে কেঁদে গেল রিতিকা। পুব আকাশে সূর্য উঠছে, ঘরের মধ্যে নতুন সূর্যের আলো, কিন্তু রিতিকার হৃদয় আজ কালো মেঘ। খুব সাবধানে, আস্তে আস্তে কপালে চুমু খেল, ঠোঁটে চুমু খেল, বুকে চুমু খেল রিতিকা, পাছে দেবেশ জেগে যায়। গলা থেকে খুলে নিল সোনার হার আর পড়িয়ে দিল দেবেশের গলায়। ঠিক বাঁ বুকের ওপরে যেখানে হৃদয় খানি ধুকপুক করছে, সেখানে চুমু খেল রিতিকা।
একটা কাগজে লিখল, “আই উইল রিমেম্বার ইউ ফরেভার। আমার শুভেচ্ছা আর ভালবাসা তোমার সাথে থাকবে। আমার সামনে আর কোনদিন এসো না। নিজের ভালবাসার খোঁজে যাও, হানি।”
তারপরে আর পেছন ফিরে তাকাল না, নিজের জামা কাপড় পরে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#20)
সকালে উঠে দেখে বিছানায় রিতিকা নেই, ওর গলায় ঝুলছে সোনার হার। ফাঁকা বুক নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়ল দেবেশ। হাতে রিতিকার ছোট্ট চিঠি। অনেক্ষন পরে রাজন কে ফোন করল দেবেশ, কিন্তু রাজন ফোন উঠাল না, বারে বারে ফোন করল। কিন্তু রাজন আর ফোন ধরল না। কিছুদিন পরেও ফোন করে দেখল যে নাম্বারটা আর চলছে না। এত কাছে এসেও মনিদিপাকে হারিয়ে দিল দেবেশ।
সারা দিল্লী তোলপাড় করে খুঁজতে চেষ্টা করল মনীষা’কে, কিন্তু এ নারী যে অধরা। কোন নাইট ক্লাব বা ডিস্কোতে কেউ ওই নামের কোন মেয়ে কে চেনেনা। রাজনের ফোন আর পেল না দেবেশ।
একদিন বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে দেবেশ, পাশে একটা বইয়ের দোকানে একটা মেয়েদের পত্রিকায় দেখল মনীষা শর্মার নাম। নামটা দেখে চমকে গেল দেবেশ, যাক একটা কিছু পেয়েছে অবশেষে। এবার মনীষা ওরফ মনিদিপা কে খুঁজে বের করবেই। ফোন করল সেই পত্রিকার অফিসে। সেখানে গিয়ে জানতে পারল যে মনীষা শর্মা কিছুদিন আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। দেবেশ ঠিক বুঝে গেল যে মনিদিপা আবার ওর হাতের নাগাল থেকে বেড়িয়ে চলে গেছে। এতদিন পরে ও বুঝল যে জারনালিস্ট মনীষা কেন নিজেকে এত ঢেকে রেখেছিল সেই রাতে।
সুইজারল্যান্ডের চাকরি নিলনা দেবেশ তবে ফ্রান্সের একটা খুব বড় কম্পানিতে চাকরি পেয়ে গেল।
গলায় আজ’ও সোনার হার’টা ঝুলছে। আজও দেবেশের বুকের কাছে জানান দেয় যে মনিদিপা কোথাও লুকিয়ে আছে। এখন থেকে দিন গোনার পালা শুরু আর লুকোচুরির খেলা শুরু। আবার কবে দেখা হবে মনিদিপার সাথে। কিন্তু আর দেখা হয় না। দেবেশ বিদেশে চলে গেল।
দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে গেল। প্রত্যেক বছরে একমাস ছুটি নিয়ে দেবেশ বাড়ি যায়।
মা প্রত্যেক বার জিজ্ঞেস করে, “কিরে বিয়েটা কবে করবি? এবারে ত করে ফেল।”
প্রত্যেক বার একই উত্তর দেয় দেবেশ, “আরে মা, এখন যা’কে খুজছি তাকে পাইনি।”
তিন বছর পরে একদিন, দেবেশের আই-আই-টি র বন্ধু অনির্বাণের ফোন এল। জানাল যে, বেশ কয়েক জন মিলে দিল্লীতে একটা গেট টুগেদার করবে। ওকে আসতেই হবে। অনেক নাছরবান্দার করার পরে দেবেশ রাজি হল গেটটুগেদার’এ যাবে। ভালই হবে এবছরের বাড়ির ট্রিপ’টাও একসাথে সারা হয়ে যাবে।
তিন বছর পরে, দিল্লী ফিরে সেই পুরান আই.আই.টি ক্যাম্পাসে ঢুকে অনেক দিন পরে ভাল লাগল দেবেশের। দেখা হল অনেক পুরান বন্ধুদের সাথে। অনির্বাণ, ভিশাল, নিলাঞ্জন আর ধিমান। অনির্বাণ এখন বাসেল থাকে, ভিশাল লন্ডনে, ধিমান কায়রো আর নিলাঞ্জন দিল্লীতেই থাকে। দেবেশকে দেখা মাত্রই ভিশাল ওকে জড়িয়ে ধরল।
দেবেশ একটু অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিরে কি হল তোর?”
ভিশাল একটু হেসে উত্তর দিল, “না ইয়ার কিছু’না, আসল কথা হচ্ছিল যে তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই।”
অনির্বাণ প্রস্তাব দিল যে হৃষীকেশ যাবে র্যাফটিং করতে। বেশ হইহুল্লর হবে এই ভেবে সবাই এক কথায় রাজি হয়ে গেল।
একদিন আগেই ওরা পৌঁছে গেছিল হৃষীকেশে। রাতের বেলা গঙ্গা নদীর তীরে বসে পাঁচ বন্ধু হাতে বিয়ারের বোতল নিয়ে বসে। বেশ হাসি ঠাট্টা মজা চলছে।
অনির্বাণ ওকে জিজ্ঞেস করল, “মাল কবে বিয়ে করবি, সাতাশ ত হল। আমাদের ত সবার বিয়ে হয়ে গেল শুধু তুই বাকি।”
কাষ্ঠ হাসি হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “আমার মনে হয় না বিয়ে হবে?”
অনির্বাণ ওকে একটু ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করল, “কেন রে? রিতিকা ডিচ করেছে তাই আর বিয়ে করবি না।”
গম্ভির আওয়াজে উত্তর দিল দেবেশ, “না রিতিকা আমাকে ডিচ করেনি। রিতিকা অনেক অনেক ভাল মেয়ে। আমার নিজের কিছু প্রবলেম ছিল যার জন্য আমি আর রিতিকা আলদা আলদা পথে চলে যাই।”
ওর গলার আওয়াজ শুনে সবাই চুপ করে গেল। ভিশাল বলল, “আরে ইয়ার, পুরান কথা ঘেঁটে আর কি হবে। চল চল ওসব কথা ছাড়, কাল সকালে উঠে র্যাফটিংএ যেতে হবে চল সবাই শুয়ে পড়ি।”
সকালবেলায় ওরা বেড়িয়ে পড়ল র্যাফটিং করতে। দুপুরবেলা পর্যন্ত গঙ্গায় র্যাফটিং করে সবাই ক্লান্ত হয়ে ফিরল। সবাই নিজের নিজের ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়েছে। দেবেশ ক্লান্ত থাকা স্বতেও ঘুমতে পারল না। অনেকদিন পরে ওর রিতিকার কথা মনে পরে গেল আর তার সাথে মনে পরে গেল গলায় ঝোলা মনিদিপার সোনার হার।
একটু খানি মনমরা হয়ে গেল দেবেশ, “আর কি আমি মনিদিপাকে খুঁজে পাব না?”
কাউকে কিছু না জানিয়ে ও গঙ্গার ঘাটের দিকে হাঁটা দিল। পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যে হয় হয়। দেবেশ চুপ করে বসে রইল গঙ্গার ঘাটে, এক মনে বয়ে চলা গঙ্গার জলের দিকে তাকিয়ে আছে। কতো লোকে কতো রকমের মানত করে এই মা গঙ্গার কাছে, অনেকের সেই মনকামনা পূরণ হয় অনেকের হয় না। দেবেশ বুক ভরে বড় একটা নিস্বাস নিল, না ওর ভাগ্য অত ভাল নয় যে মা গঙ্গা ওর কথা শুনবে।
ঠিক এমন সময়ে ওর চোখ গেল কিছু দুরে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার দিকে। মহিলা ওর দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে তাই ওই মহিলার মুখ দেখতে পাচ্ছে না দেবেশ। মহিলার পরনে একটা ঘিয়ে রঙের দামী ঢাকাই জামদানি শাড়ি। মাথার চুল এল খোঁপা করে ঘাড়ের কাছে এলিয়ে আছে। মহিলার গায়ের রঙ বেশ ফর্সা আর বেশ সুন্দরী দেখতে। মহিলার হাতে একটি পুজোর থালা। মহিলাটি পুজো সেরে একটু ঝুঁকে গঙ্গার জল নিজের মাথায় ছিটিয়ে নিল।
দেবেশ একমনে মহিলাকে দেখে চলেছে। দেখতে’ত বাঙালি বলেই মনে হচ্ছে দেবেশের। মহিলার রুপ আর সাজ যেন দেবেশকে টেনে ধরে রেখেছে, চোখের পলক যেন পড়ছে না দেবেশের।
মহিলাটি ধিরে ধিরে পেছন ফিরল আর দেবেশের চোখ সোজা মহিলার মুখের ওপরে। দেবেশ স্তানুর মতন দাঁড়িয়ে পড়ল। বুকের ধুকপুকানি থেমে গেছে, এই মুখ সে চেনে, এই চোখ সে চেনে। বড় কাছ থেকে দেখেছে ওই কাজল কালো চোখ। সামনে দাঁড়িয়ে মনীষা ওরফে মনিদিপা। বুকের মাঝে তোলপাড় করে উঠল। এক পা এগিয়ে যে মনিদিপার দিকে যাবে সেই শক্তি টুকু নেই।
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#21)
মনিদিপা মাথা তুলে এগিয়ে যাবার জন্য পা বাড়াল, হটাত করে চখাচুখি হয়ে গেল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দেবেশের সাথে। পা বাড়াতে ভুলে গেল মনিদিপা। কেউ যেন ওর পায়ের পাতার ওপরে পেরেক দিয়ে মাটির সাথে গেঁথে দিয়েছে। নড়বার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে মনিদিপা। ঠোঁট দুটি তিরতির করে কেঁপে উঠল মনিদিপার, আস্তে আস্তে করে দুটি চোখ জলে ভরে গেল। পৃথিবীটা ওর দুই ভেজা চোখের সামনে বনবন করে ঘুরছে। মনিদিপার মাথা ঘুরতে শুরু করল, আর যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা।
লুটিয়ে পরে যাবার আগেই দৌড়ে গিয়ে দেবেশ দু হাতে জড়িয়ে ধরল মনিদিপাকে। পুজোর থালা মাটিতে পরে গেল, ঝনঝন শব্দে গড়াতে গড়াতে পুজোর থালা গঙ্গার জলে ভেসে গেল। দেবেশ মনিদিপার জলে ভরা কাজল কালো চোখের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ পরে ধিরে ধরে চোখ খুল্ল মনিদিপা, ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইল দেবেশের মুখের দিকে। একটু অপ্রস্তুত লাগল নিজেকে অত লোকের সামনে একজনের বাহুর মধ্যে নিজেকে পেয়ে, আস্তে করে দেবেশের আলঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। দু’চোখে বন্যা নেমেছে মনিদিপার। বারে বারে চোখ মুছছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।
বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করার ইচ্ছে হচ্ছে মনিদিপার, “কেন এসেছ আমার সামনে আবার আমাকে ব্যাথা দিতে। কেন আমার জীবন থেকে চলে যেতে পার না তুমি, দেবেশ?” না মনিদিপা ওই কথা ওর ঠোঁটে আনতে পারেনি। চোখের জল মুছে ম্লান হাসি হেসে জিজ্ঞেস করল দেবেশকে, “কেমন আছো দেবেশ? তিন বছর আগে যা ছিলে তার থেকে একটু যেন রোগা হয়ে গেছ।”
এতদিন পরে ওই আওয়াজ শুনে দেবেশের বুক কেঁপে উঠল। চোখের জ্বালা করছে কিন্তু কাঁদতে পারছে না। হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “তুমি অনেক বদলে গেছ, মনি।”
মনিদিপা ঠোঁট কামড়ে ধরল, সাত বছর পরে ওই নামে আবার কেউ ওকে ডাকল আজ। সত্যি অনেক বদলে গেছে, মাথা নাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমার জীবন’টাই এইরকম। তোমার খবর বল, আজকাল ত মনে হয় সুইজারল্যান্ডে আছো তাইতো?”
দেবেশ মনিদিপার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দিল, “অনেক কিছু খবর রাখ দেখছি।”
মনিদিপা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “কেউ কেউ রাখে কেউ কেউ রাখে না।”
দেবেশ মাথা নেড়ে জানাল, “না মনি, আমি সুইজারল্যান্ডে থাকিনা, আমি বোরদে, ফ্রান্সে থাকি।”
এবারে অবাক হবার পালা মনিদিপার, একভাবে তাকিয়ে রইল দেবেশের মুখের দিকে কতবছর পরে একে অপরকে এত কাছ থেকে দেখছে। মনিদিপার হাত ধরল দেবেশ, হাতের ছোঁয়া পেয়ে যেন গলে যাবে মনিদিপা, একটু কেঁপে উঠল ওর হাতের পরশ পেয়ে। দেবেশ বলল, “এসো আমার সাথে।”
জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মনিদিপা, “কোথায় যাবো?”
দেবেশ হেসে জবাব দিল, “একটু হাটতে আপত্তি নেই নিশ্চয়?”
মাথা নাড়ল মনিদিপা, “না তা নেই।” বলেই হেসে ফেলল। সেই মুক্ত সাজান দাঁতের পাটি দেখে দেবেশের মন খুশিতে ভরে গেল।
দু’জনে রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করল। কারুর মুখে কথা নেই, দুজনের বুকে এক অজানা শূন্যতা আর ভাললাগা দুটোই ভর করে রয়েছে। দুজনেই যেন ভাবছে কে আগে কিছু বলবে।
অনেকক্ষন পরে দেবেশ ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “দিল্লীতে কোথায় থাক?”
মনিদিপা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, “আমি তিন বছর হল দিল্লী ছেড়ে দিয়েছি।”
দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “কেন? তুমি ত একটা পত্রিকায় লিখতে তাই না?”
মনিদিপা উত্তর দিল, “হ্যাঁ লিখতাম। কিন্তু আর থাকতে পারলাম না তাই দিল্লী ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হল।”
দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “এখন কোথায় থাকো তুমি?”
“কেন আমাকে শেষ করে দিয়েও তোমার এখন শান্তি হয়নি।” না কথাটা বলল না মনিদিপা, কাষ্ঠ হাসি হেসে উত্তর দিল, “আমি যেখানে আছি ভাল আছি তুমি আর জেনে কি করবে?”
উত্তরটা দেবেশের মনে বড় ব্যাথা দিল। মনিদিপার অধিকার আছে সে ব্যাথা দেবার। আবার দুজনেই চুপ। নিজেদের মাঝে একটু ব্যাবধান রেখে হাঁটতে থাকল। দেবেশ ভাবছে যে কি কথা বলা যায়, কি প্রশ্ন করবে মনিদিপাকে, কি হয়েছিল মনিদিপার এই প্রশ্ন করবে? ওদিকে মনিদিপা ভাবছে যে, কেন আবার দেবেশের সাথে দেখা হল, ভাল’ত ছিল মনীষা হয়ে এক নতুন জীবন নিয়ে। কিন্তু দেবেশ এখানে কি করছে? এতদিনে নিশ্চয় বিয়ে করেছে।
মনিদিপা দেবেশকে জিজ্ঞেস করল, “তা হৃষীকেশ-এ কেন?”
মনিদিপার আওয়াজ শুনে দেবেশের ধড়ে প্রান ফিরে এল, “অনেক দিন পর পুরান বন্ধুদের সাথে দেখা হল আর এই বন্ধুদের সাথে র্যাফটিং করতে এখানে আসা।”
হাসি থামাতে পারল না মনিদিপা, “ফ্রান্স থেকে এখানে র্যাফটিং করতে আসা? বাপরে তোমার ফ্রান্সে নদী নালা নেই নাকি?”
হাসি শুনে খুব ভাল লাগল দেবেশের, ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল দেবেশ, “না, সেই রকম নয়, আমার বন্ধুরা সবাই বিদেশে থাকে। একটা গেটটুগেদার হয়ে গেল আর র্যাফটিং’ও হয়ে গেল।”
আবার দুজনেই চুপ, কে কাকে কি জিজ্ঞেস করবে এই নিয়ে দুজনেই মনের মধ্যে প্রশ্নের অভিধান খুলে বসেছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “মনি যাবে আমার সাথে?” জিজ্ঞেস করার পরেই দেবেশের হৃদয়ের ধুকপুকানি বেড়ে গেল, মনিদিপা কি উত্তর দেবে এই ভেবে।
মনিদিপার বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেল। আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় নিয়ে যাবে?”
দেবেশ উত্তর দিল, “আমার হোটেলে চল একটু বসে গল্প করব।”
হেসে জবাব দিল মনিদিপা, “গল্প করার জন্য’ত অন্য কোথাও বসা যেতে পারে, কিন্তু হোটেলে কেন নিয়ে যেতে চাও আমাকে?”
দেবেশ হেসে উত্তর দিল, “ভয় নেই খেয়ে নেব না আমি।”
মনিদিপা বলল, “আচ্ছা চল, তবে বেশিক্ষণ বসব না। আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরে জিনিস গুছাতে হবে। কাল সকাল বেলা আমি চলে যাব তাই।”
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here
পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment