CH Ad (Clicksor)

Thursday, January 9, 2014

ভালবাসার রাজপ্রাসাদ_Written By pinuram [মাতৃময়ী মূর্তি (#1, #2), অনধিকার প্রবেশ (#1)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




ভালবাসার রাজপ্রাসাদ
Written By pinuram





মাতৃময়ী মূর্তি (#01)

কফি হাউস থেকে বাড়ি ফিরতে অভির দেরি হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে দেখে যে সবাই বসার ঘরে বসে চা খাচ্ছে। বাবা নিজের ঘরে বসে অফিসের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত। মা পরীর মাথা কোলে করে নিয়ে ডিভানের ওপরে বসে আছে আর পরীর চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। পরী ছোট্ট বিড়ালের মতন মায়ের আদর খাচ্ছে। লম্বা সোফায় মৈথিলী আর সুব্রত বসে। অভি ঘরে ঢুকে ছোটো সোফার ওপরে গিয়ে বসে পরে। মা ওকে জিগ্যেস করলেন যে দেরি কেন। উত্তর অভি জানাল যে প্রাক্টিকাল ক্লাসের জন্য দেরি হয়ে গেছে। মা ওকে বললেন যে আগামি কাল সুব্রত আর মৈথিলী ঢাকুরিয়া যাবে মৈথিলীর কাকার বাড়িতে, অভি কেও সঙ্গে নিয়ে যেতে চায়। মায়ের কথা শুনে অভি পরীর দিকে তাকায়, পরীর চোখ ইশারায় বলে ওঠে "প্লিস যেও না" অভি মাকে জিজ্ঞেস করে যে কালকে মা আর পরী কোথায় যাবে। মা জানালেন যে পরীকে নিয়ে মা একটু কেনাকাটা করতে শ্যাম বাজার হাতিবাগান যাবে তারপরে পরীর জন্য গয়না কিনতে বউ বাজারে যাবে। 

মৈথিলী অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি আজকে আমাদের সাথে সিনেমা দেখতে গেলে না, কাল কিন্তু না করতে পারবে না।"

অভি দেখল মা ও চাইছে অভি ওদের সাথে ঢাকুরিয়া যাক, কিন্তু বাধ সাধছে প্রেয়সী পরীর চোখ। 

সুব্রত ওকে বলল, "মামা আমি কোন কথা শুনব না, কাল তোমাকে আমাদের সাথে যেতেই হবে।"

অভি দেখল যে বড় ফাঁপড়ে পরে গেছে, কিছু একটা বলে ওদের কে ক্ষান্ত না করলে অভির যে স্বস্তি নেই। 

অভি পরীর দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে একটু কথা বলে বাকিদের জানাল, "ঠিক আছে, শনিবার আসুক আমি জানাব আমি কি করব।" পরী ওর কথা শুনে মৃদু হেসে জানিয়ে দিল যে ও খুব খুশি। 

মা পরী আর মৈথিলীকে নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে যায়। অভি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। সুব্রত জিজ্ঞেস করে যে ও সাথে যেতে পারে কিনা। মাথা নাড়ায় অভি, জানিয়ে দেয় যে সুব্রতর জন্য ওর দরজা সবসময়ে খোলা।

সুব্রত ওর ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার বলত মামা, তুমি কি অরুনিমার প্রতি ইন্টারেস্টেড নও?"

মাথা চুলকালো অভি, কিছু একটা উত্তর দিতে হবে যাতে সাপ মরে কিন্তু লাঠি ভাংবে না। অভি বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দেয়, "মামা আসল কথা হচ্ছে যে আমি একজনার প্রতি একটু ঝুঁকে আছি।"

সুব্রত চমকে গিয়ে বলে, "কি বলছ মামা, এ কথা ত আমাকে জানাও নি। কে সে? তুমি নাকি অরুনিমাকেও বলেছিলে যে তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই তাহলে?"

অভি, "মামা প্রেম কি আর বলে কয়ে আসে, এত হয়ে যায় হটাত করে। কার সাথে কি ভাবে হবে কেউ জানেনা। মামা প্রেম ত আর অঙ্ক নয় যে দুয়ে দুয়ে চার হবে। তুমিও ত প্রেম করে বিয়ে করেছ, তুমি ত বুঝবে মনের কথা।"

সুব্রত, "কিন্তু মামা, একতরফা প্রেম হলে যে মুশকিল। তা তুমি কি প্রোপস করেছ?"

অভি দেখল সত্যি কথা বলা বিপদ, অগত্যা অভি কে অরুন্ধতি কে টেনে নিয়ে আসতে হল। অভি বলল, "না মামা আমি এখনো প্রোপস করিনি তবে আমি জানি যে মেয়েটা আমাকে ভালবাসে।"

সুব্রত, "কে সে?"

অভি, "আমার কলেজের এক বান্ধবী।"

সুব্রত, "কবে প্রোপোজ করবে?"

অভি, "দেখি, ওর জন্মদিনে ভাবছি প্রোপস করব।"

সুব্রত মনে হল যেন একটু মনক্ষুণ্ণ হয়ে গেল অভির কথা শুনে, "অরুনিমা একটু আঘাত পাবে এই কথা শুনে। বিগত দু’মাস ধরে ও তোমার ফোনের আশায় বসে আছে। যাই হক একবার ফোন করে দেখ, তুমি ত তোমার বান্ধবিকে এখন মনের কথা বলোনি তাই ত। হয়ত অরুনিমার সাথে দেখা করলে তোমার মনের ভাব বদলে যেতেও পারে।"

অভি ওর দিকে তাকিয়ে হাসল, "ঠিক আছে আমি কথা দিচ্ছি যে আমি অরুনিমার সাথে দেখা করব, কিন্তু কাল হবে না। একটা কথা বল মামা, তুমি আর চুরনি কেন আমার পেছনে অরুনিমার জন্য পরে আছো?"

সুব্রত ওর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি হেসে বলল, "ধিরে ধিরে সব জানতে পারবে মামা।"

অভি ঠিক বুঝতে পারল না যে সুব্রত হটাত করে এই রকম কথা কেন বলল, কি জানতে পারবে অভি, কি মতলব চলছে সুব্রতর মাথার মধ্যে? সুব্রতর হাসির মধ্যে যেন একটু শয়তানি বদ মতলবের ছোঁয়া রয়েছে।

ঠিক সেই সময়ে মৈথিলী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে জানাল যে খাবার তৈরি আর মা ওদের কে খেতে ডাকছে। সুব্রত মৈথিলীকে দেখে বলল যে ও অভিকে অরুনিমার সাথে দেখা করার কথা বলেছে আর অভি রাজি হয়েছে যে অরুনিমার সাথে দেখা করবে, কিন্তু কাল দেখা করতে পারবে না, পরে দেখা করবে। সুব্রত আরো জানাল যে অভির কলেজে একটি বান্ধবী আছে যাকে অভি ভালবাসে আর ভবিষ্যতে প্রেম নিবেদন করতে চায়। মৈথিলী লাজুক নয়নে অভির দিকে তাকিয়ে খুব মিষ্টি করে একটা হাসি দিল, বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুল দিয়ে দাঁতের মাঝে চেপে ধরল। অভি ওর মন মাতান হসি দেখে চঞ্চল হয়ে উঠল, বুকের মধ্যে যেন ওই মত্ত হাসিটা একটা গভীর রেখা পাত করে গেল।

অভি মৈথিলীকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি আমার দিকে ওই ভাবে তাকিয়ে হাসছ কেনও?"

"কিছু না, এমনি হাসছি।" অভিকে আপাদ মস্তক চোখ বুলিয়ে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "কি বলেছ ওকে?"

সুব্রত ওর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি হেসে বলল, "আরে না না ডার্লিং, চিন্তা কোরো না। ও বলেছে ত যে অরুনিমার সাথে দেখা করবে, ব্যাস তারপর যা হবার সেটা সময়ের ওপরে ছেড়ে দাও।"

"খাবার তৈরি, নিচে এস"

এই বলে মৈথিলী ওর সুডৌল নিতম্ব মাছের মতন দুলিয়ে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেল। অভির চোখ মৈথিলীর মত্ত চলনের ওপরে নিবদ্ধ হয়ে থাকল, চোখের সামনে মৈথিলীর সুডৌল নিতম্বের লয় যেন বুকের ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে চলে গেল। ইচ্ছাকৃত ভাবে কি মৈথিলী ওই রকম ভাবে কোমর দুলিয়েছে? কি জানি। দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যাবার ঠিক আগে, মৈথিলী ওদের দিকে ঘুরে তাকাল, চোখে যেন কামনার আগুন জ্বলছে, কিছু একটা বলতে চাইছে দু’চোখ ঠিক বুঝতে পারছে না অভি। অভির চোখ ওর মত্ত ছন্দময় নিতম্বের ওপরে, একটু যেন কেঁপে উঠল মৈথিলী, অভির চোখ যেন ওর পিঠ কোমর আর নিতম্ব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে। সুব্রতর দিকে চোখ টিপলও মৈথিলী। অভি একি করছে, বরের সামনে তার নতুন বিয়ে করা বউয়ের মত্ত চলন লম্পটের মতন দেখছে।

অভি যেন ধরা পরে গেল সুব্রতর কাছে, ওর কান গরম হয়ে ওঠে, কি করছে ও? মৈথিলী কেন ওই রকম ভাবে কোমর দুলিয়ে গেল? সুব্রতর কি মতলব? কি জানে কি আছে ভবিষ্যতে।

খাবার সময়ে পরীর সাথে বিশেষ কথাবার্তা হল না, সবার সামনে একটু দুরত্ত রেখে কথা বলতে হয়েছে দুজনকে। পরীর মন খুব আনচান করতে থাকে, সামনে অভি বসে কিন্তু কিছুতেই ছুঁতে পারছে না, একি বিড়ম্বনা বিধাতার। সামনে সুধার ভাণ্ডার তাও ভালবাসার পাত্র খালি, বারে বারে আর চোখে পরীর দিকে তাকায় অভি। মা জানালেন যে ওরা কাল দুপুরে শপিং করতে বের হবে। অভি ওদের কে বলল যে ও ঢাকুরিয়া যাবে না। অভির কথা শুনে পরীর মনে যেন খুশি আর ধরে না, চোখ জলজল করে ওঠে পরীর, বুকের মধ্যে খুশির জোয়ার আসে।

পরী শয়তানি করে মাকে বলে, "আচ্ছা ছোটো মা, আমাদের তো একটা গাধা লাগবে ব্যাগ ধরার জন্য, তাই না।"

অভি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "দেখ তোমার পরী আমাকে কি সব বলছে।"

পরী, "দেখ দেখ একটা গাধা কিনা মাংস খাচ্ছে।"

অভির খুব ইচ্ছে করছিল ওই গোলাপি গালে চিমটি কাটার জন্য। নিজেকে কোন মতে সামলে নিয়ে, "কুকুর, ভেড়া, ঢেঁড়স, কাক, হাড়গিলে..."

ওদের ঝগড়া দেখে সবাই হেসে ফেলল, মা ওদের দু’জনকে মৃদু বকুনি দিল, "তুই খেয়ে শুতে যা" পরীর দিকে তাকিয়ে বলল "আর তুই তাড়াতাড়ি কর, কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।"

অভি খাওয়া শেষ করে মাকে বলল, "আমার শুতে দেরি হবে প্রাক্টিকালের কিছু কাজ বাকি আছে আমার।"

পরীর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ইশারায় বলে, "আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব কিন্তু।"

প্রাক্টিকাল খাতা লিখতে লিখেত অনেক রাত হয়ে গেল, ঘড়ি দেখল অভি, রাত একটা বাজে। চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা করছে, মাথাও একটু ব্যাথা ব্যাথা করছে। আঙ্গুল দিয়ে মাথায় আঁচর কাটে অভি, মনে পরে কতকাল পরীর ছোঁয়া পায়নি মাথার ওপরে, কি সুন্দর চুলে বিলি কাটে পরী আর অভি ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ত। পরী আর এলনা তাহলে, এই ভেবে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে থাকল। কিছুতেই প্রেয়সি কে কাছে পাওয়া যাচ্ছে না, তবে এটা ভেবে মন খুশিতে ভরে গেল যে কাল মা আর পরীর সাথে কেনাকাটা করতে বের হবে। হ্যাঁ, পাশে হয়ত হাঁটতে পারবে না বাঁ জড়িয়ে ধরতে পারবে না, কিন্তু চোখের সামনে ত থাকবে পরী। পরীর গায়ের ঘ্রান কতদিন বুকের মধ্যে নিতে পারেনি, টেবলের ড্রয়ার থেকে রুমাল বের করে মুখের ওপরে মেলে ধরে অভি, গায়ের গন্ধ কিছু যেন এখন লেগে আছে রুমালে। এত কাছে পরী তবুও এত দুরে পরী, হাতের নাগালের বাইরে।

এমন সময়ে অভির অরুন্ধুতির কথা মনে পরে যায়, পরীকে জানান হয় নি অরুন্ধুতির ব্যাপারে। মনে ভেতরে একটা সংশয় জেগে ওঠে, অরুনার কথা শুনলে পরী কি ভাবে গ্রহন করবে অরুনাকে। অরুনা এই পৃথিবীতে ওর একমাত্র বন্ধু। পরীর কাছে থেকে অরুনাকে লুকিয়ে রাখা মস্ত বড় ভুল হবে, পরীকে জানাতে হবে অরুনার কথা কিন্তু সাবধানে।

দরজায় খুব মৃদু আওয়াজ হয়, হাওয়ায় মনে হয়, বাইরে বেশ মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। ঠিক তারপরে কপালে ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকাল অভি। ওর চোখের সামনে পরীর হাসি মুখ, কখন যে চেয়ারের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে টের পায়নি। দু’কাঁধের ওপর দিয়ে হাত গলিয়ে বুকের ওপরে হাত রাখল পরী। মাথা পেছনে হেলিয়ে দিল অভি, পরী ওর কপালে চিবুক রেখে আবার একটা ছোট্ট চুমু খেল কপালে। পেছনে হাত বাড়িয়ে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়, ঘাড়ের ওপরে পরীর বুকের উষ্ণতা অনুভব করে। 

পরী মৃদুকনে বলে, "আমার ছোট্ট রাজকুমার কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে?"

অভি, "হ্যাঁ সোনা, তা তোমার এত দেরি কেন হোলো?"

পরী, "তুমি তো বললে..."

অভি, "তোমার ছোটো মা কি ঘুমিয়ে পড়েছে?"

পরী, "হ্যাঁ বাবা অনেক আগে ঘুমিয়ে পড়েছে।"

অভি, "তাহলে এত দেরি কেন?"

পরী, "সুব্রত আর মৈথিলী জেগে ছিল তাই।"

অভি, "ওরা দুজনে কেন জেগেছিল সেটা তো বেশ জানো আর তুমি কি করছিলে তাহলে?"

পরীর গাল লাল হয়ে ওঠে, "ধ্যাত বাবা, ওরা কেন জেগেছিল সেটা যেন তুমি জানো না।"

পরী বুকের ওপরে আলতো করে চাঁটি মেরে বলে।





মাতৃময়ী মূর্তি (#02)

অভি পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে হাত চেপে ধরে আর মৃদু মৃদু চাপ দেয়, কোমল নারী মাংসে। মাঝে মাঝে হাতের চাপ বেশ শক্ত হয়ে ওঠে, নখের আঁচর কাটে কোমল গোলকে। পরী ওর কোমল শরীরে অভির নখের আঁচরের স্পর্শ পেয়ে অভির বুকে হাত চেপে ধরে। 

অভি পরীকে উত্যক্ত করার জন্য বলে, "ওদের কথা মনে মনে ভেবে তুমি কি করছিলে শুনি? তোমার গাল লাল হয়ে যায়নি ওদের আওয়াজ শুনে, দুষ্টু মেয়ে।"

পরী, "না বাবা ওরা যা আওয়াজ করছিল, আমি শেষ পর্যন্ত টি.ভি র আওয়াজ জোরে করে দেই।"

অভি, "মিথ্যে বোলোনা সোনা, তুমিও ওই আওয়াজ গুলো বেশ উপভোগ করছিলে তাই না।"

পরী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, লজ্জা ঢাকার জন্য নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। পরীর নরম পেছনে অভির হাত যেন থেমে থাকতে পারে না বারে বারে মুঠি মুঠি শরীরের অংশ নিয়ে হাত দিয়ে চাপে। হাতের তালুর নিচে অভি অনুভব করল যে পরীর গায়ের কাপড়ের নিচে কিছু নেই, সেটা ভেবেই মাথার মধ্যে কামনার আগুন চাগিয়ে উঠল অভির। 

অভি মৃদু কন্ঠে পরীকে বলে, "ভেরি সরি সোনা আজ আমি তোমার সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারিনি।"

পরী, "সেটা ঠিক আছে, তার জন্য ত আমি রাগ করিনি। তোমার পরীক্ষা কাছে আসছে তোমার ভাল করে পড়াশুনা করা উচিত। দেখ আড়াইটে বেজে গেছে এবারে শুয়ে পরো।"

অভি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ওকে বাহুপাশে বেঁধে ফেলে। পরী ওদের দুজনের শরীরের মাঝে হাত এনে অভির বুকের ওপরে হাত রাখে, মুখ উঁচু করে অভির মুখের দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে অভি আলতো করে পরীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।

কানে কানে বলে, "রাতে আমার সাথে এখানে শুয়ে পর।"

পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে ওর কপাল ছুঁতে যায় পরী। কল্পালে ঠোঁট দিয়ে চুমু খাবার পরে অভির ঠোঁটের ওপরে গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে, "না সোনা, তুমি আমার কোলে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে পরো, আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দেই, দেখবে খুব আরাম লাগবে।"

পরী হাঁটু গেড়ে বিছানার ওপরে বসে পরে, অভি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। পরী খুব আদরে অভির চুলে বিলি কেটে দেয়। অভি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে। দু’জনের বুকের ভেতর এক অনাবিল প্রেমের আলো বিছুরিত হয়, সেই প্রেমে কোন কামনার লেশ নেই, বাসনার লেশ নেই, এ যেন এক সুন্দর ধবধবে সাদা প্রেমের বন্ধন। 

অভি, "পরী..."

পরী, "হুম বল।"

অভি, "সুব্রত আর মৈথিলী আমার সাথে অরুনিমার সম্পর্ক তৈরি করার জন্য উঠে পরে লেগেছে।"

পরী, "আমি জানি অভি, আর এও জানি সেই জন্য তুমি আজ ওদের বাড়ি যাচ্ছ না। তোমার ওপরে যে আমার অগাধ বিশ্বাস আছে অভি।"

অভি আজ বিকেলের কথা সব পরীকে জানাল, সুব্রত ওকে কি বলেছে, মৈথিলী ওর দিকে কেমন করে তাকিয়েছিল আর যা যা কিছু ঘটেছে সব কিছু পরীকে বলে দিল। পরী ওর কথা শুনে মিষ্টি হেসে জানিয়ে দিল যে ওর নিজের হৃদয়ের ওপরে মানে অভির ওপরে অগাধ বিশ্বাস যে অভি ওকে ছেড়ে কোনদিন যাবে না। কিন্তু সুব্রতর কথা শুনে মনে একটু সংশয় জেগে উঠলো পরীর, "আমি ত ঘুণাক্ষরে ও ওদের মতলব বুঝতে পারছিনা অভি, যাই হক দেখা যাক কি করতে চায় ওরা।"

পরী ওর দিকে একটু ঝুঁকে এল, অভি নাকের ওপরে নাক ঘষে বলল, "তুমি সত্যি অনেক সুন্দরী আর বুদ্ধিমতী, পরী।"

পরী, "আমি না তোমার চেয়ে দু বছরের বড়, তাই ত তোমার চেয়ে আমার মাথায় কিছুটা বেশি বুদ্ধি আছে।"

অভি ভাবল এবারে ওকে অরুনার কথা জানানো যেতে পারে, "পরী, আমি তোমাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই। আমি আজ প্রাক্টিকাল ক্লাস করিনি।"

আঁতকে ওঠে পরী, "মানে? কি করেছ তাহলে?"

অভি একটু চিন্তায় পরে যায়, তারপরে বলে, "আজ আমি আমার সব থেকে ভাল বান্ধবীর সাথে ছিলাম, তার নাম অরুন্ধতি ব্যানারজি।"

পরীর হাত থেমে যায়, চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে ফেলে পরী। বুকের মধ্যে হটাত করে কেউ যেন বাড়ি মেরে দিয়েছে। অভির কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য বুক দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে, কি বলতে চাইছে অভি? হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে। অভি ওর চোখের চাহনি দেখে পরীর মনে ভাব বুঝতে পারে। পরীর মনের ভেতরে এক উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পরে যেন, "কি করে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ভাল বন্ধু হতে পারে? না সেটা ঠিক নয়, অভি কেন বলেনি আগে, কেন আমাকে এত বড় একটা ভ্রান্তিতে ডুবিয়ে রেখেছে?"

মাথা নাড়াল অভি, "কি দেখছ ওই রকম ভাবে আমার দিকে?"

পরী কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, "তুমি ত কোনদিন আমাকে জানাও নি যে তোমার কোন ভালো বান্ধবী আছে মানে গার্লফ্রেন্ড।"

অভি, "না পরী না, তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ।" মাথা নাড়ে অভি, "অনেক বড় গল্প পরী, কিন্তু আজ তোমাকে আমি সেই গল্প বলব।"

অভি ওর জীবন কাহিনী পরীর সামনে মেলে ধরে। মায়ের কথা, বাবার কথা, সবসময়ে ওর ওপরে বাবা মায়ের চাপ, যেন পয়সাই সব। ভালবাসা কি ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারেনি অভি। ছোটো বেলায় চাকরদের কাছে আর তারপরে হস্টেলে জীবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছে। পরাশুনায় ভাল ছিল অভি, তাঁর সাথে সাথে ভাল আঁকত। মনে খুব ইচ্ছে ছিল যে বড় হয়ে খুব বড় এক চিত্রকর হয়। বাবা মাকে জানিয়েছিল মনের অভিপ্রায়, কিন্তু না তাদের কথা, যে ওদের পরিবারের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, এমত অবস্থায় অভি যদি সামান্য এক চিত্রকর হয় তাহলে কি করে সবাই কে মুখ দেখাবে বাবা মা। মা স্কুলের শিক্ষিকা, বাবা এয়ারপোর্ট অথরিটির বড় ম্যানেজার, এই অবস্থায় অভি কিছুতেই চিত্রকর হতে পারে না। এত পয়সা খরচ করে ওর বাবা মা ওকে সব থেকে ভাল স্কুলে পড়িয়েছে আর অভি যখন ভাল ফল আনতে পেরেছে তাহলে ওকে বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে হবে। উচ্চমাধ্যমিকেও ওকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হল শেষ পর্যন্ত। পরী চুপ করে অভির কথা শোনে, কাহিনী বলতে বলতে অভির চোখের কোল যেন একটু চিকচিক করে আসে। ভেতরটা যেন ককিয়ে ওঠে বেদনায়। পরী আলতো করে অভির কপালে হাত বুলিয়ে দেয়, ওর কথা শুনে পরীর চোখের কোলেও জল চলে আসে।

কম্পিত স্বরে বলে, "আমি এ সব জানি, ছোটো মা আজ আমাকে তোমার কথা বলছিল।"

অভি চমকে ওঠে, "কি? মা তোমাকে এই সব কথা বলেছে?"

পরী, "হ্যাঁ সোনা। ছোটো মা তোমাকে বড় করার জন্য যা করেছে সেই সব বলেছে আর তুমি ছোটো মায়ের কথা একদম শোনো না তাই বলেছে। নদীর সবসময়ে দু’ধার দেখা উচিত না হলে নদীর কথা বোঝা দায় হয়ে ওঠে, তাই না। এখন বুঝেছি আমি তোমার কষ্ট, আমি ছোটো মা কে বুঝিয়ে বলব খানে। দেখ সোনা, মনের ঘা এমন ঘা যে ঠিক ত হয়ে যায় সময়ের সাথে কিন্তু একটা কাটা দাগ চিরদিনের জন্য রেখাপাত করে রেখে যায়। আমি আপ্রান চেষ্টা করব তোমার সেই দাগ মুছে দেবার জন্য।"

চোখের কোল মুছে অভি কে জিজ্ঞেস করে, "এবারে বল ত যা আমি জানি না। কে এই অরুন্ধতি ব্যানারজি?"

অভি ওর কলেজের গল্প বলতে শুরু করে, অনুশুয়ার কথা তারপরে পুবালির কথা। সবশেষে অরুনার কথা। সব কিছু শুনে পরী একটু ঝুঁকে অভির কপালে মিষ্টি করে একটি চুমু খেয়ে বলে, "তোমার দেবী, অরুনার সাথে কবে দেখা করাচ্ছ?"

অভি মৃদু হেসে বলে, "অরুনাও তোমার সাথে দেখা করতে চায়।"

ওর হাতদুটি বুকের ওপরে চেপে ধরে অভি।

পরী ঘড়ির দিকে দেখে চমকে ওঠে, "আরে সাড়ে চারটে বাজে যে।"

অভি ওর হাত টেনে বলে, "পরী, এই তোমার অভিমন্যু, তোমার সামনে খোলা বইয়ের মতন রাখা।"

পরী অভির মাথার নিচে একটা বালিস টেনে দিয়ে ওর পাশে বসে। নরম হাতে অভির গালের ওপরের জলের দাগ মুছে দেয়। আস্তে করে চোখ থেকে চশমা খুলে ভাঁজ করে মাথার পেছনে রাখে। 

আলতো করে গালে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, "অতীত কখন ভুলতে নেই অভি, অতীত আমাদের ভবিষ্যতের সিঁড়ি, অতীত আমাদের অনেক কিছু শেখায়। জীবন একটি চক্রের মতন অভি, কোন একসময়ে হয়ত আমাদের অতীত আমাদের সামনে এসে দাঁড়াতে পারে, তখন আমরা দু’জনে মিলে এক সাথে তার সামনা করব। এখন একটু বিশ্রাম করও ছোট্ট সোনা, আজকে আবার শপিঙয়ে বের হতে হবে তাই না।"

অভির মাথা বুক একদম খালি হয়ে আসে, কে এই নারী? কে এই পরী, "তুমি কে?"

গলা ধরে আসে অভির।

পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে পরে, কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে উত্তর দেয়, "আমি তোমার পরী, বুদ্ধিতে তোমার মন্ত্রি, সুন্দরী আর ধনে আমি লক্ষ্মী, আমি ধরিত্রি তোমাকে বোঝার জন্য আর আমি তোমার মা তোমাকে ভালবাসা আর স্নেহে ভরিয়ে তোলার জন্য, শয়নে আমি রম্ভা আর মেনকা, আমি তোমার পরী।"

পরী ওর খোলা চোখের ওপরে আঙ্গুল রেখে চোখের পাতা বন্ধ করে দেয়। মিষ্টি গলায় বলে, "শুয়ে পরো ছোট্ট রাজকুমার আমার।"





অনধিকার প্রবেশ (#01)

মা ধাক্কা মেরে অভি কে ঘুম থেকে তুলে দিলেন, "এই ছেলে ওঠ, সাড়ে নটা বাজে আর কত ঘুমাবি।"

অভি, "আহ মা, আর একটু শুতে দাও না, আজ ছুটির দিন, আর একটু প্লিস।"

মা, "তোর বাবা অফিসে বেড়িয়ে গেছেন আর সুব্রত আর মৈথিলী সেই সকাল বেলায় ঢাকুরিয়া বেড়িয়ে গেছে। তুই যদি আমাদের সাথে শপিঙে যেতে চাস তাহলে উঠে পর না হলে তুই ঘুমতে পারিস। আমি কিন্তু তোর জন্য কোন রান্না করিনি।"

ঘুম চোখে অভির মনে পড়ল যে কেনা কাটা করতে বের হতে হবে, যদিও পছন্দ নয় তবুও যেহেতু পরী সাথে থাকবে তাই ওর যেতেই হবে। পরী পাশে না থাক কাছে ত থাকবে। 

মা, "চা তৈরি, স্নান সেরে তাড়াতাড়ি নিচে আয়।"

অভি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "আর তোমার মেয়ে কি করছে? ও শুয়ে থাকলে কিছু না আর আমি শুয়ে থাকলে যেন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়।"

মা, "ওর কথা তোকে জিজ্ঞেস করতে হবে না। পরী অনেক সকালে উঠে স্নান সেরে পুজো দিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে গেছে, ও লুচি ভাজচ্ছে, তোর মতন নয়, খালি পড়ে পড়ে ঘুমাতে পারলে যেন বেঁচে যাস।"

অভি মায়ের কথা শুনে মনে মনে হেসে ফেলল, "আমার সোনার পরী জানে কি করে ছোটো মায়ের মন জিততে হয়। মেয়ে নয় মা, তোমার ভাবি বউমা করে আনব আমি।" 

স্নান সেরে দৌড়ে নিচে নেমে আসে, "টিং টিং টিং টিং ... পেটে আগুন জ্বলছে, ফায়ার ব্রিগেড চাই।"

অভি খুব খুশি, পরী লুচি রান্না করছে।

পরী রান্না ঘর থেকে জোর গলায় বলে, "চিল্লিয়ো না, চুপ করে বসার ঘরে বসো, আমি তোমার লুচি নিয়ে এখুনি আসছি।"

বসার ঘরের পর্দা সরিয়ে পরী ঘরে ঢুকল, মনে হল সকালের আলো যেন ওর সদ্যস্নাত রুপের কাছে ম্লান হয়ে গেল। ভেজা চুল ঘাড়ের ওপর দিয়ে বাঁ কাঁধের ওপর দিয়ে সামনের দিকে ফেলা। পরনে ঘিয়ে রঙের শাড়ি আর লাল ব্লাউস। চেহারায় যেন দেবী প্রতিমার মতন আলোর ছটা দিচ্ছে। কপালে ছোট্ট লাল সিঁদুরের টিপ, পুজোর টিপ মনে হল, দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে শোভা পাচ্ছে। কানে সমার দুল তাতে আবার দুটি ছোটো ছোটো মুক্ত ঝুলছে। বাঁ গালের ওপরে সেই ছোট্ট চুলের এক গুচ্ছ দুলে বেড়াচ্ছে। গোলাপি ঠোঁটে কোন রঙ মাখা নেই তবুও কত গোলাপি আর নরম যেন গোলাপ ফুলের কুঁড়ি। কাজল কালো নয়নে অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। পরীর ওই লক্ষ্মীর মতন রুপ দেখে অভি থমকে যায়। পরী যেন চোখের ইশারায় ওকে বলে, "অভি এই অপরূপ সুন্দরী ছোঁয়ার নয়, শুধুমাত্র দুচোখ ভরে দেখার।"

সামনে এসে টেবিলের ওপরে খাওয়ার থালা রেখে অভির মাথায় ছোট্ট চাঁটি মেরে ফিসফিস করে বলে, "আমার দিকে ওই রকম ভাবে তাকিয়ে থেক না, তাড়াতাড়ি লুচি তরকারি শেষ করো।"

অভি ওর মুখের দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে, চোখের পলক যেন পরে না। পরী মুখের সামনে মুখ এনে বলে "ওই রকম ভাবে দেখতে থাক যদি তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে যাবো না।"

অভি যেন এতক্ষণ মোহাচ্ছন্নে ছিল, ওর কথা শুনে যেন সেই ঘোর কেটে গেল। হাঁ করে পরীকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কে?"

এক অদ্ভুত সুন্দর হাসি দেয় পরী, ফিসফিস করে বলে, "আমি তোমার পরী।"

উত্তর দিয়ে পরী ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।

প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ ওরা সবাই শপিঙ্গে বের হল। পরী খুব সুন্দর একটা গাড় নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পরে। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে পরীকে। মায়ের সাথে যেন পরী নয় একটা সুন্দর ময়ুর হেঁটে চলেছে আর অভি ওদের পেছন পেছন হাটছে। পরীর চেহারায় এক অনাবিল শান্তির ছটা, ও যে ছোটো মায়ের পাশে আর ভালবাসার কাছে আছে।

শপিং জিনিসটা অভির কোনদিন ভালো লাগে না তাও আবার মায়ের সাথে। দশটা দোকান ঘুরবে, একশ খানা শাড়ি নামিয়ে দেখবে তারপরে বলবে যে না ঠিক পছন্দ হচ্ছে না বলে আরও একটা দোকানে ঢুকবে। কিন্তু ওর সেই বিরক্তি আজ নেই কেননা ওর সাথে পরী আছে। প্রথমে ওরা শ্যামবাজারে গেল পরীর জন্য শাড়ি কিনতে। তিনটে শাড়ি কিনতে পৌনে ঘন্টা, বাপরে, মেয়েদের কেনাকাটা। প্রতিবার অভি যখনি পরীর দিকে তাকায়, পরী ওর দিকে ইশারা করে, "আর পাঁচ মিনিট" কিন্তু সেই পাঁচ মিনিট আর আসেনা, শাড়ি দেখা থামেনা। অভি মনে মনে বিরক্তি বোধ করে, আমার সাথে বের হলে আগে থেকে রঙ পছন্দ করে রাখবে তারপরে শাড়ি কিনতে বের হবে। কেনাকাটা চলতে থাকে, বিছানার চাদর, শাড়ি আরও অনেক কিছু। অভির সহ্য শক্তির আর বাহুর শক্তির যেন পরীক্ষা চলছে, শপিঙ্গের ব্যাগ গুলো ত ওর হাতেই।

পরী ওর ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মাকে বলে, "দেখলে তো ছোটো মা, আমি বলেছিলাম না যে আমাদের ব্যাগ বওয়ার জন্য একটা গাধার দরকার ছিল।"

মা অভির ক্লান্ত চেহারা দিকে তাকিয়ে মিনতির সুরে বলল, "ব্যাস আর কয়েক ঘন্টা অভি।"

"বাপরে..... আরও কয়েক ঘন্টা!" মায়ের কথা শুনে অভির মাথায় যেন বাজ পড়ল।

অভি, "শোনো মা, তোমার মেয়ে যদি আর একবার আমাকে গাধা বলেছে তাহলে কিন্তু আমি ওকে এক লাত্থি মারব আর সব ব্যাগ ফেলে দেব। ওকে বারবার গাধা গাধা বলতে বারন করও।"

পরী অভিকে খ্যাপানোর জন্য আবার বলে, "গাধ গাধা গাধা, একশ বার বলব গাধা।"

অভি মাকে বিরক্তি হয়ে বলল, "আচ্ছা কি দরকার পরীর জন্য অত শাড়ি কিনে? ওর ত হাজার গন্ডা কেন কয়েক লক্ষ শাড়ি আছে। তুমি না পরীকে লাই দিয়ে মাথায় তুলছ।"

অভির কথা শুনে মা বিরক্ত হয়ে ওঠেন, "তোর যদি ভালো না লাগে তাহলে তুই বাড়ি চলে যা।"

পরী দেখল মা ছেলের মধ্যে আবার তুমুল কিছু একটা শুরু হতে দেরি লাগবে না। দু’জনের তিরিক্ষি মেজাজ। পরী ছোটো মায়ের হাত ধরে শান্ত করে দিল আর অভির দিকে তাকিয়ে ইশারা করল শান্ত হবার জন্য। বাজুতে পরীর হাতের স্পর্শ পেয়ে মা শান্ত হয়ে গেল। শ্যামবাজারে কেনাকাটা শেষ করার পরে হাতিবাগান থেকে পরীর জন্য সালোয়ার কামিজ কেনা হল। মা মৈথিলীর জন্য একটা দামী সিল্কের শাড়ি কিনল আর সুব্রতর জন্য রেমন্ডের সুটের কাপড়। অভি ওই দেখে একটু বিরক্ত হল, পরীর জন্য কিনছো কেন সুব্রত মৈথিলীর জন্য অত দামী উপহার কেনার কি মানে।

অভি মা'কে জিজ্ঞেস করল যে সুব্রত আর মৈথিলী, ঢাকুরিয়া থেকে কখন ফিরবে, মা জানালেন যে ওরা বিকেল ছ’টার মধ্যে ফিরে আসবে আর বাবাও সম্ভবত ততক্ষণে বাড়ি ফিরে আসবেন।

অভির খুব ক্লান্ত লাগছিল, কিন্তু পরীর হাসি মুখ চোখের সামনে দেখে অভির সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। প্রায় আড়াইটে নাগাদ মা পরীকে জিজ্ঞেস করলেন যে খিদে পেয়েছে কি না। অভি ভেবে পেলনা কি হল, ওযে সাথে আছে সেটা যেন মা বেমালুম ভুলে গেছে, হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে পেয়ে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে অভির মনের কথা বুঝতে পারল, একটু ব্যাথা ভরা হাসি দিয়ে মনটাকে শান্ত করতে অনুরধ করল পরী। 

মা পরীকে জিজ্ঞেস করল, "অনেক তো শাড়ি সালোয়ার কেনা হল, তুই জিন্স পরবি?"

মায়ের কথা শুনে পরী আর অভি দু’জনেই হতবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। বুঝতে চেষ্টা করে যে মা কি বলতে চাইছে। পরী যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না, ওর ছোটো মা ওকে জিন্স কিনে দেবে?

মা ওদের হতবাক মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "ওই রকম ভাবে তোরা আমাকে দেখছিস কেন? আজকালকার ফ্যাসান এটা, সব মেয়েরাই জিন্স টপ পরে। কিছুদিন পরে তুই ইউনিভারসিটি যাবি তখন তুই পড়তে পারিস।"

রাস্তার মাঝে পরী মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে, "তুমি সত্যি আমার আদরের ছোটো মা। কিন্তু ছোটো মা, আমি ত কোনদিন জিন্স পড়িনি? আমি জানি না আমাকে জিন্স পড়লে মানাবে কি না।" 

মা, "আরে বোকা মেয়ে, সবকিছুর একটা প্রথম বার বলে কিছু আছে তো। আর তোকে ভালোই লাগবে দেখতে। তুই চাস কি না তাই বল।"






কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment