Friday, January 10, 2014

ভালবাসার রাজপ্রাসাদ_Written By pinuram [লাহুল স্পিতি ভ্রমন (#1, #2, #3)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




ভালবাসার রাজপ্রাসাদ
Written By pinuram





লাহুল স্পিতি ভ্রমন (#01)

অভির সুকৌশল পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওরা দুজনে একদম মেপে মেপে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। সর্বপ্রথম পরী কল্যাণী আর রানী কে ফোন করে পরিকল্পনার কথা জানায়। ওদের যে হেতু এখন কোন সন্তান নেই তাই ওরা সব শুনে পরীদের সাথে যেতে রাজি হয়। তারপরে পরী ব্যানারজি কাকুকে বাড়িতে ডাকে। ইচ্ছে করেই অভি সেই দিন বাড়িতে থাকে না। পরী, ব্যানারজি কাকুকে বুঝিয়ে রাজি করে যে ও অরুনাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায়, যাতে অরুনার মনের পরিবর্তন হয়। বাবা মা ওর কথায় খুব খুশি হয়ে মত দেন। অভি বাড়ি ফেরার পরে বাবা ওকে সব ঘটনা জানিয়ে বলেন যে মেয়েদের সাথে যেতে, যেহেতু বাড়ির কেউ পরীর বান্ধবীদের ভাল ভাবে চিনত না। সবকিছু অভির আর পরীর সুকৌশল পরিকল্পনার মতন হতে থাকে।

অভি ঠিক করে যে এবারে ও আরও দুরে যাবে। পুরো লাহুল স্পিতি উপত্যকা ঘুরবে, পরীকে নিজের অভিপ্রায় জানাতে পরী খুশিতে নেচে ওঠে। সবকিছু ঠিক হয়, যাবার দিন ঠিক হল যে ওরা জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে বেড়িয়ে পড়বে। পুর ট্রিপ করতে প্রায় চোদ্দ দিনের মতন লেগে যাবে। যাবার আগে অভি ভালো করে সেই জায়গার বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করে দেয়, কোথায় কি ভাবে যাবে, কোথায় থাকবে সব খুটিনাটি তথ্য যোগাড় করে ফেলে। পরীকে পুরো ঘোরার রাস্তা এবং সব কিছু তথ্য জানায়। ওরা নিউ দিল্লী থেকে কাল্কা হয়ে সারাহান, রেকংপিও হয়ে সোজা নাকো চলে যাবে। তারপরে নাকো থেকে এবারে আগে যাবে ওরা, তাবো, কাজা হয়ে কুনযুম পাস। তারপর রহতাং পাস হয়ে মানালি ঢুকে, মান্ডি হয়ে দিল্লী ফিরবে। পরীকে ভালো করে বুঝিয়ে দেয় ভ্রমণের পরিকল্পনা যাতে ও দিপঙ্কর কে বুঝিয়ে বলতে পারে। কেননা, অভির বাবা মা দিপঙ্করকে জিজ্ঞেস করবে যে ওরা কোথায় যাচ্ছে এবং সেই জায়গার সম্বন্ধে আরও তথ্য জিজ্ঞেস করতে পারে। 

লোকজনকে কথা বুঝানোর ক্ষেত্রে পরী খুব পটু তাই দিপঙ্করকে বুঝিয়ে উঠতে ওর বেগ পেতে হল না, এবং সাথে সাতে ছোটো মাকেও হাতের মুঠিতে করে নিল। 

ওদিকে অরুনার স্বাস্থ্য কিছুটা উন্নতি হয়েছে, কিন্তু মনের ভাব সেই এক, কেউ ওকে কথা বলাতে পারল না বা পুবালির ঘর থেকে বের করতে পারলনা। ব্যানারজি কাকু যখন ওকে জানালেন যে পরী ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায় তখন শুধু মাত্র মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় অরুনা। সেই ভাবলেশ হীন অভিব্যাক্তি দেখে পরীর হৃদয় কেঁদে ওঠে। 

অভি ওর পুরানো বন্ধু সুপ্রতিমদা কে ফোন করে, "এই সুপ্রতিমদা কেমন আছিস?"

সুপ্রতিমদা, "কিরে শয়তান, এত দিন পরে মনে পড়ল। তুই শালা কাজ না থাকলে মনে করিস না। বল এবারে আবার কাকে নিয়ে কোথায় প্লান করেছিস। শালা এবারে যদি দিল্লী এসে উড়ে পালিয়ে যাস তাহলে তোকে আর আস্ত রাখবো না।"

অভি, "নারে ভাই, এত রেগে যাস না। এবারে আমরা সাত জনের একটা গ্রুপ সেই হিমাচলে ঘুরতে যাব ভাবছি। তাই তোকে ফোন করে জানালাম। তুই আমাদের জন্য একটা ছোটো বাসের যোগাড় করে দিতে পারিস? এবারে কারন একটু অন্য ধরনের, এবারে আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে যাচ্ছি আর তার অবস্থা আমি তোকে পরে জানাব।" অভি সুপ্রতিমদাকে অরুনার পুরো ঘটনা জানাতে, ও রাজি হয়ে যায়। 

শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় যে অরুনা, অভি আর পরী প্লেনে করে দিল্লী পৌঁছাবে আর দিপঙ্কর, কল্যাণীরা রাজধানি এক্সপ্রেসে করে দিল্লী পৌঁছে যাবে। 

সুপ্রতিমদা দিন তিনেক পরে অভিকে ফোন করে, "শোন ভাই, আরও দুজন যদি তোদের সাথে যেতে চায় তাহলে কি নিবি?"

অভি জিজ্ঞেস করে, "কে কে যাবে?"

সুপ্রতিমদা হেসে উত্তর দেয়, "আমি আর আমার বান্ধবী।"

সুপ্রতিমদার কথা শুনে অভি অবাক, যে ছেলে শুধু চরে খেত আজ সে ছেলের মুখে অন্য কথা, "তুই জাবি আর আমি না করতে পারি নাকি। তা শেষ পর্যন্ত তুই টেস্ট ম্যাচ খেলার পিচ পেয়েই গেলি বল। তোর বউ কি দেখতে সেক্সি রে?"

সুপ্রতিমদা, "শালা নিজের একটা ব্যাটিং পিচ আছে না সেখানে গিয়ে ব্যাটিং কর না, আমার পিচের কথা তোর জেনে কি হবে।"

অভি, "রেগে যাচ্ছিস কেন রে তুই।"

সুপ্রতিমদা, "আচ্ছা শোন এবারে, আমি একটা ইনোভা ঠিক করেছি আর আমার ত টাটা সাফারি আছে। আমাদের কাছে তাহলে দু দুটো ড্রাইভার থাকবে, আর আমার ড্রাইভার বল্বিন্দারকে ত তুই আগে থেকে চিনিস। এবারে আমি ভাবছি কি যে আমি আর তুই আমার টাটা সাফারিতে আমাদের বউ নিয়ে যাব, বাকিরা ইনোভাতে যাবে। তুই ড্রাইভ করতে জানিস আমিও জানি সুতরাং গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষ অসুবিধে হবে না। আর তুই যে সব জায়গার কথা আমাকে শুনালি সেসব জায়গায় আমি কোনদিন যাইনি, রিতিকা ত সব কথা শুনে খুব খুশি। তোর বউয়ের সাথে আমার বউয়ের দেখা হয়ে যাবে।"

অভি, "হুম্মম্ম... তাহলে তোর বউয়ের নাম রিতিকা, বেশ মিষ্টি নাম রে। তা তওর মনের মতন ত?"

সুপ্রতিমদা, "বোকা... এসে দেখে যা একবার। আর শালা একবার যদি কিছু কমেন্ট মেরেছিস রিতিকাকে দেখে তাহলে তোর টা কেটে তোর হাতে ধরিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেব।"

অভি, "গুরু বিয়ে হয়নি আর এখন থেকেই এত আগলে রাখছিস।"

সুপ্রতিমদা, "বোকা... ছাড় অসব কথা, এবারে বল কবে দিল্লী আসছিস।"

অভি, "পরের রবিবার, সকালের ফ্লাইট, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স আই.সি.264।"

যাবার দিন কাছে চলে আসে। ব্যাগ গুছানোর পালা প্রায় শেষ। ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া গরম জামাকাপড় নেওয়া হয়। যে জায়গায় যাচ্ছে সেখানে ঠাণ্ডা ভীষণ। অভি পরীকে জিন্স নিতে বলে, পরী প্রথম প্রথম নারাজ হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভির কারত মিনতির সামনে হেরে যায়। এরই মাঝে পরী অরুনার বাড়ি গিয়ে ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে আসে, অরুনার মানসিক অবস্থার কনো পরিবর্তন হয় না। অরুনা যেমন চুপ ছিল সেইরকমই আছে, আর সেটাই সবার চিন্তার বিষয়। ব্যানারজি কাকু পরীর ব্যাবহারে ভীষণ খুশি। পরী জানতে চায় যে অভি কি করে অরুনার মানসিক সাস্থ্যের উন্নতি করাবে, অভির কাছে উত্তর দেবার মতন কোনো পরিকল্পনা থাকে না, শুধু এই টুকু জানায় যে কিছু একটা হয়ে যাবে, হয়ত নতুন জায়গায় গিয়ে বা অচেনা মানুষদের সাথে মিশে অরুনার মানসিক পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে অভির ধারনা। 

কল্যাণী দীপঙ্কর রা একদিন আগেই ট্রেনে চেপে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। 

বাবা আর ব্যানারজি কাকু অনেক চেষ্টা চরিত্র করে প্লেনের টিকিট এক্সিকিউটিভ ক্লাসে কাটে। যাবার দিন বাড়ির সবাই এয়ারপোর্টে ওদের ছাড়তে এসেছিলেন। অরুনা নিজের খেয়ালেই ছিল, পাথরের পুতুলের মতন নড়াচড়া করছিল। অরুনার মা আর অভির মা দুজনের চোখে জল এসে গেছিল অরুনার অবস্থা দেখে। ব্যানারজি কাকু অভিকে আবার মনে করিয়ে দেন ওর প্রতিজ্ঞার কথা, এবারে অভি হেসে জানায় যে ও ওর কথা রাখবে, এবং অরুনাকে ঠিক করেই ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।

প্লেনে অরুনা আর পরী পাশাপাশি বসে, করিডোরের অন্য দিকে অভি। অরুনা জানালার ধারের সিটে বসে হাতের ওপরে মাথা রেখে একমনে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। পরী একটা সুন্দর সবুজ রঙের সালোয়ার পড়েছিল। পরী প্রথম বার প্লেনে চাপে কিন্তু সেই উৎসাহ ছাপিয়ে ওর মনের ভেতরে অরুনার চিন্তা বেশি করে ভর করে। সকালের খাবার দিয়ে যায় এয়ারহোস্টেস, পরী খাবারের বহর দেখে অভির দিকে তাকায়। অভি ওকে জানায় যে ও এক্সিকিউটিভ ক্লাসে ভ্রমন করছে। পরী অরুনার দিকে তাকায়, অরুনা ভাবলেশহীন চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে মেঘ দেখতে থাকে। পরী ওর কাঁধ ছুঁয়ে আলতো করে নারা দিতে, অরুনা পরীর দিকে খালি চোখ নিয়ে তাকায়। সেই চোখের চাহনি দেখে পরীর আত্মা যেন ককিয়ে কেঁদে ওঠে। পরী পাউরুটির এক টুকরো ছিঁড়ে তাতে মাখন লাগিয়ে ওর ঠোঁটের কাছে ধরে। অরুনা একটু খানি মুখ খুলে মুখের মধ্যে পাউরুটির টুকরো নিয়ে নেয়। পরী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কোনোরকমে চোখের জল সংবরণ করে আরও একটা টুকরো খাওয়াতে যায়।

অরুনার ঠোঁট কেঁপে ওঠে, "শুচিদি, ঠাণ্ডা লাগছে।"

অরুনার ঠোঁটের ওই তিনটি শব্ধ যেন অভির আর পরীর কানে মধুর মতন মনে হয়। পরী নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মমতাময়ী হৃদয়ের খুশির জল চেপে রাখে। জল ভরা চোখ নিয়ে একবার অভির দিকে তাকায়। অভির দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, এয়ারহোস্টেস কে অনুরধ করে একটা কম্বলের ব্যাবস্থা করে। পরী দুই সিটের মাঝের হাতল উঠিয়ে দিয়ে, অরুনার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। পরীর মমতাময়ী স্পর্শে অরুনার চোখে জল চলে আসে। 

দুহাতে পরীকে জড়িয়ে ধরে বলে, "শুচিদি আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে।"

পরী ওর গালে হাত রেখে সান্তনা দিয়ে বলে, "অরুনা আমি তোর কাছে আছি। তোর আর ঠাণ্ডা লাগবে না।"

এয়ারহোস্টেস কম্বল দিয়ে গেলে, অভি অরুনার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেয়। পরী ওকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে। অরুনা পরীর বুকে মাথা গুঁজে ফুফিয়ে ওঠে, বুকের মাঝের অন্তহীন বেদনা দুগাল বেয়ে বয়ে চলে অবিরাম ধারায়। ওর চোখের জলে পরীর বুক ভিজে যায়, কিন্তু একবারের জন্যেও পরী ওকে কাছছাড়া করে না।

পরী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "তুমি খেয়ে নাও।"

অভি বলে, "ওকে কিছু বলো?"

পরী, "না, ওকে কাঁদতে দাও। ওর ভেতরের সব জমানো ব্যাথা সব দুঃখ চোখের জল হয়ে বেড়িয়ে যাক। তাতে ওর মন অনেক হালকা হবে। যে অরুন্ধতি দিল্লী পৌঁছাবে সেই অরুন্ধতি অনেক বদলে যাবে কোলকাতার অরুন্ধতির থেকে।"

অরুনা কেঁদে কেঁদে শেষ পর্যন্ত পরীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে। পরী ওর ঘুমন্ত মাথা কোলের ওপরে নিয়ে আস্তে আস্তে মাথা গালে হাত বুলিয়ে দেয়। অরুনা পরীর কোলে ঠিক একটা বাচ্চা মেয়ের মতন ঘুমিয়ে থাকে, চেহারায় এক অনাবিল শান্তির ছায়া। 

প্লেন ধাক্কা মেরে দিল্লী এয়ারপোর্টে নামে। ঝাঁকুনির জন্য অরুনার ঘুম ভেঙ্গে যায় আর পরীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয়। পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আবেগে প্রায় চোখে জল চলে আসে। আঙ্গুল দিয়ে অরুনার গালে জলের দাগ মুছিয়ে দিয়ে কপালে ছোটো একটা চুমু খায়। প্লেন থামলে ব্যাগ হাতে নিয়ে নামার উদ্যোগ করে অভি, পেছনে অরুনা আর পরী। 

অরুনা অভির কাঁধ আলতো করে ছোঁয়, অভি পেছন দিকে তাকায়। অরুনার ঠোঁট মৃদু কেঁপে ওঠে, "এই বিহারী আমরা কোথায় যাচ্ছি রে?"

শেষ পর্যন্ত অভির অনুপম দেবী প্রতিমা কথা বলল। অভির বুকের বাঁধ ভেঙ্গে গেল ওর গলার আওয়াজ শুনে। ওর মনে হল যেন হারিয়ে যাওয়া বহুমুল্যবান রত্ন আবার ফিরে পেয়েছে। অরুনার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথার ওপরে চুমু খায়। অভিকে শান্তনা দেবার জন্য পরী আলতো করে পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। 

অরুনার ঠোঁটে আবার হাসি দেখে পরী আর অভি যেন স্বস্তির শ্বাস নেয়। পরীকে পেয়ে অরুনা যেন সেই পুরানো দিন ফিরে পেল। দুজনেই মেতে ওঠে গল্পে, অভি বিশেষ কান দেয় না মেয়েদের গল্পে। পরীকে বলল যে বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিরে যে ওরা দিল্লী ঠিক ভাবে পৌঁছে গেছে। পরী জিজ্ঞেস করে যে ব্যানারজি কাকু যদি ওর কথা জিজ্ঞেস করে ত কি উত্তর দেবে পরী, সেই শুনে অভি বলল যে ব্যানারজি কাকু কে বলে দিতে যে ও পরে বাড়িতে ফোন করবে। অভি চলে গেল কনভেয়র বেল্ট থেকে বাকি ব্যাগ নিতে, আর পরী আর অরুনা চলে গেল ফোন করার জন্য। বারবার মাথা ঘুরিয়ে অভি ওদের দিকে লক্ষ্য রাখে যাতে কোথাও হারিয়ে না যায়। অরুনার জন্য এটা প্রথম বার নয় যে ও দিল্লী এসেছে, কিন্তু অরুনার মানসিক অবস্থা এখন সেই পুরান অবস্থায় নেই ও এখন পরীর ওপরে নির্ভর।





লাহুল স্পিতি ভ্রমন (#02)

ব্যাগ নিয়ে তৈরি অভি, কিছু পরে পরী আর অরুনা ফোন সেরে ওর কাছে চলে আসে। অভি জিজ্ঞেস করাতে পরী জানায় যে ও দুই বাড়িতে ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছে। বাড়ির সবাই খুব খুশি যে অরুনা আবার কথা বলছে। অরুনা পরীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে আর অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসে। 

অভি অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, "কাকুর সাথে কথা বলেছিস?"

অরুনা ওকে হেসে উত্তর দেয়, "জানিনা তুই বাবা মা কে কি বলছিস, কিন্তু আমার কথা শুনে ওরা খুব খুশি। শুচিদি ও মায়ের সাথে কথা বলেছে, সবাই তোর কথা খুব জিজ্ঞেস করছিল।"

অভি, "ঠিক আছে, এবারে চল। এতক্ষণে হয়ত রাজধানি এক্সপ্রেস দিল্লী পৌঁছে গেছে আর সুপ্রতিমদাও হয়ত আমাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে।"

বাইরের দিকে হাঁটতে শুরু করে ওরা। অরুনা পরীকে জিজ্ঞেস করাতে, পরী ওকে পুরো ঘটনার বিবরন দেয় যে কি ভাবে অভির সুকৌশল পরিকল্পনায় এই সব সম্ভব হয়েছে। সব কথা শুনে অরুনা অবাক হয়ে যায়। 

অরুনা অভির কাছে এসে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, "তুই আমার জন্য এত সব করেছিস?" 

অভি হেসে ফেলে, ওর মাথায় ছোট্ট চাঁটি মেরে উত্তর দেয়, "ধুর তোর জন্য করতে যাবো কেন আমি। আমি তিন জনের কাছে তিনটে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য এই সব পরিকল্পনা।"

পরী ঠোঁট জোড়া ছোটো গোল করে অভির দিকে একটা চুম্বন ছুঁড়ে দেয়। অরুনা তর্জনী দিয়ে চোখের কোল মুছে পরীর হাত জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্ষণিকের জন্যেও যেন ও পরীকে কাছ ছাড়া করতে চায় না। 

ওরা বাইরে বেড়িয়ে দেখল যে সুপ্রতিমদা একজন সুন্দরী মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে, ওদের জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। মেয়েটির বেশ সুন্দরী দেখতে, পরনে সাদা জিন্স আর বাদামি রঙের টপ, গায়ের সাথে এটে আসে পরনের পোশাক। শরীরের প্রতিটি বাঁক পোশাকের নিচে ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। চুল ঘাড় পর্যন্ত, মাথার পেছনে বাঁধা একটা ছোট্ট পনি টেলের মতন। চোখ মুখ বেশ মিষ্টি, কালো কালো চোখ দুটি একটু ছোটো, পরীর মতন অচ বড় নয় কিন্তু বেশ চঞ্চল। অভি দেখে মৃদু হেসে দেয়, এটা হয়ত দিল্লীর ফ্যাসান। অভি একবার পরী আর মেয়েটিকে মনে মনে তুলনা করে কে বেশি সুন্দরী, কিন্তু অভির মনের ভেতরে পরীর বাস, তাই আর বেশি কিছু ভাবতে পারল না অভি। 

সুপ্রতিমদা ওদের কে দেখে অভির দিকে এগিয়ে এসে হাত মেলায়। পরী আর অরুনা উৎসুক চোখে সুপ্রতিমদাকে দেখে। সুপ্রতিমদা অভির পাশে দুটি মেয়ে কে দেখে বিভ্রান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, "এর মধ্যে কে শুচিস্মিতা?"

পরী আর অরুনা দুজনেই ওর প্রশ্ন শুনে হেসে ফেল। অভি হেসে কিছু উত্তর না দিয়ে সুন্দরী মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দেয়, "আমি অভিমন্যু তালুকদার আর তুমি নিশ্চয় রিতিকা চতুর্বেদী।"

রিতিকা হেসে বলে, "হ্যাঁ আমি জানি তোমাদের কথা। আমি ওর কাছে থেকে তোমাদের হস্টেলের কথা অনেক শুনেছি। গত বার তুমি দিল্লী এসেই পালিয়ে গেলে দেখা না করে। ও আমাকে বলেছে যে তুমি নাকি তোমার বান্ধবীকে নিয়ে একা একা কোন এক দুর্গম পাহাড়ি জায়গায় বেড়াতে গেছিলে। হুম তুমি শুধু মাত্র সাহসী বললে ভুল হবে তুমি দুঃসাহসী ছেলে। এবারে বলত এদের মধ্যে কে শুচিস্মিতা?"

অভি পরীদের দিকে হেসে রিতিকাকে উত্তর দেয়, "আন্দাজ করো, তবে তোমার কাছে একটাই সুযোগ।"

রিতিকা পরীকে দেখিয়ে বলে অভির দিকে হেসে বলে, "ওই যে সবুজ রঙের সালোয়ার পরে আছে সেই শুচিস্মিতা।"

রিতিকা এগিয়ে যায় পরীর দিকে। তিন জনে মেয়ে এসে অপরকে সংবর্ধনা জানিয়ে মিশে যায়। মেয়েদের নিজেদের মধ্যে মিশতে বেশি সময় লাগেনা আর ওদের গল্প শুরু হয়ে যায়। সুপ্রতিমদা অভির দিকে তাকিয়ে হেরে যাওয়ার হাসি দেয়। অরুনার চেহারায় পুরান হাসি দেখে পরী একবার অভির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে, মাথা নাড়ায়। 

সুপ্রতিমদার গাড়ি চেপে ওরা সবাই সি.আর.পার্কের ওর বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করল। সুপ্রতিমদা গাড়ি চালাচ্ছে আর অভি পাশে বসে, মাঝখানের সিটে বসে তিন জন মেয়ে যেন পাখীর মতন কিচিরমিচির শুরু করে দিয়েছে। 

সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে আমরা কখন দিল্লী থেকে রওনা দেব?"

অভি সুপ্রতিমদাকে জিজ্ঞেস করে, "আরে তুই নিউ দিল্লী রেলস্টেসানে কাউকে পাঠিয়েছিস কল্যাণীদের বাড়ি আনার জন্য।"

সুপ্রতিমদা, "হ্যাঁ রে বাবা, বল্বিন্দার ওদের আনতে চলে গেছে। আমি ওর হাতে একটা প্লাকারডে দিপঙ্করের নাম লিখে দিয়েছি, খুঁজতে কোন অসুবিধে হবে না।"

অভি, "ভাবছিলাম ত যে দুপুরে খাওয়ার পড়েই বেড়িয়ে পড়ব কিন্তু এখন ভাবছি কিছু তাবু আর বাকি সরঞ্জাম নিয়ে গেলে হয়।"

সুপ্রতিমদা আঁতকে ওঠে, "শয়তান ছেলে, আগে বলতে পারিস না। বোকা... এখন দুপুরে কি করে হবে?"

অভি, "না না দুপুরে নয়, রাতে বের হব আমরা। এদের বাড়িতে রেখে, আমি আর তুই টেন্টের খোঁজে বের হয়ে যাব।"

সুপ্রতিমদা, "হটাত করে তোর মাথার প্লান বদলে কেন গেল।"

অভি পিছনে ঘুরে একবার অরুনার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, "অরুনা যখন প্লেনে উঠেছিল তখন ওর মানসিক অবস্থা এখন যা দেখছিস তখন এই রকম ছিলনা। ওকে হাসতে দেখে আমি ভাবলাম কি আছে আবার কবে যাওয়া হবে ঠিক নেই, চল কাম্পিং করে আসি।"

সুপ্রতিমদা, "এখানে কেউ কিন্তু কাম্পিং করতে জানে না।"

অভির মুখে কাম্পিঙ্গের কথা শুনে পরী আর রিতিকা পেছন থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, "এটা কি রকম হল? আগে থেকে কিছু বলা নেই কওয়া নেই, হটাত করে তোমরা সব প্লান বদলে দেবে কি করে হবে, আমরা খেলবো না।"

অভি ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দিকে দেখে বলে, "আরে ভদ্রমহিলা, ঘুরতে গিয়ে যদি কিছু আডভেঞ্চার না হয় তাহলে মজা কি?"

রিতিকা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে ওরা কোথায় ঘুরতে যাচ্ছে। পরী ওকে পুর পরিকল্পনা জানায় আর জায়গার বিবরন দেয়। পরীর নাকো পর্যন্ত ঘোরা তাই সেই পাহাড়ের বিবরন দিতে বিশেষ অসুবিধে হয় না। পরীর মুখে স্পিতির গল্প শুনে অরুনা আর রিতিকা দুজনেই খুব উত্তেজত হয়ে ওঠে। 

সুপ্রতিমদার বাড়িতে কল্যানিরা আগেই পৌঁছে যায়, পরী গাড়ি থেকে নেমে ওদের দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কল্যাণীকে। বাড়িতে পাঁচটা মেয়ে যেন গল্পে মেতে ওঠে, ওদের দেখে মনে হল যেন একদল সুন্দরী পাখি একসাথে বসে কিচির মিচির শুরু করে দিয়েছে। খাওয়ার পরে অভি দীপঙ্কর আর রামানুজ কে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে অনুরধ করে ওরা দুজনে বেড়িয়ে যায় কাম্পিঙ্গের সরঞ্জাম ভাড়া করতে।

কাম্পিঙ্গের সরঞ্জাম যোগাড় করতে করতে প্রায় ঘন্টা তিনেক লেগে যায়। দুটি বড় টেন্ট নেওয়া হয় আর একটা ছোটো টেন্ট নেওয়া হয়, সাথে নেওয়া হয় স্লিপিং ব্যাগ, দড়ি, মাদুর ইত্যাদি। সরঞ্জাম গাড়ির পেছনে রেখে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে।

অভি, "বস, একটু ওষুধের দোকানে দাঁড়াতে হবে আর বেশ কিছু সিগারেট কিনতে হবে।"

ওষুধের দোকানে দাঁড়ানোর কথা শুনে সুপ্রতিমদা বুঝতে পারে যে অভি কি কিনবে, হেসে বলে "বোকা... না নিয়েই বেড়িয়ে পরেছিস?"

অভি হেসে ফেলে, "শালা এত ঝামেলার মধ্যে কিনতে ভুলে গেছি।"

সুপ্রতিমদা, "আবে শুয়র, চিন্তা করিস না, আমার কাছ থেকে ধার নিয়ে নিস।"

অভি, "বোকা... মাঝ পথে যদি ফুরিয়ে যায় আর আমরা কন্ট্রোল না করতে পারি তাহলে শালা ন’মাস নিয়ে ফিরতে হবে কিন্তু।" দুজনেই হেসে ফেলে। 

সুপ্রতিমদা, "তোর বউ খুব সুন্দরী আর তোর বান্ধবী দুজনকেই দেখতে বেশ সুন্দরী।"

অভি, "নজর দিস না যেন, দুজনেই এনগেজড কিন্তু।"

সুপ্রতিমদা, "তোর ত শালা ওখানে মাথা, সুন্দরী কে সুন্দরী বলেছি তাতেই গা জ্বলে গেল যেন তোর।"

অভি, "রিতিকাকে কোথায় পেলি?"

সুপ্রতিমদা, "আরে নেহেরু প্লেসে একটা টেকনিকাল কনভেন্সান ছিল, সেখানে ওর সাথে দেখা হয়। ওখানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ছিল, ব্যাস আর কি, তিন মাস প্রেম আর তারপর সব ঠিকঠাক।"

ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ আর বাকি জিনিস কিনে বিকেল পাচটার মধ্যে বাড়ি ঢুকে যায়। মেয়েরা জামা কাপড় বদলে বেশ আরাম করে বসে গল্প করছিল। রিতিকার পোশাক দেখে দীপঙ্কর আর রামানুজের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রিতিকার পরনে হাল্কা গোলাপি রঙের আঁটো স্লাক্স আর সাদা হাত কাটা গেঞ্জি। ওর গায়ের কাপড় যেন ওর পেলব কমনীয় শরীরের একপ্রস্ত রঙের প্রলেপের মতন সেটে। সুগোল নিতম্বের ওপরে অন্তর্বাসের স্পষ্ট দাগ বোঝা যাচ্ছে। অভি ওই দেখে একবার দিপঙ্করদের দিকে আর চোখে তাকায় আর সুপ্রতিমদাকে চোখ টিপে ইশারা করে। পরী, অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে কি এত মন দিয়ে দেখছে। পরী, দীপঙ্কর আর রামানুজের দিকে তাকিয়ে ওদের চোখের চাহনি দেখে মৃদু রেগে যায়। একটু বিরক্ত হয়ে মেয়েদের নিয়ে অন্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। 

অভি আর সুপ্রতিমদা শেষ বারের মতন বেড়াতে যাবার পুর পরিকল্পনা একবার পুনরালোচনা করে নেয়। অভি পরীকে ডাক দেয় ওদের সাথে বসে বেড়াতে যাবার কথা বলার জন্য। এবারে ঠিক করা হয় যে কে টিম লিডার হবে, সবাই এককথায় অভির নাম নেয়, তারপরে ক্যাশিয়ারের কথা ওঠে, সবার চোখ পরীর দিকে।

পরী চেঁচিয়ে ওঠে, "না না, আমি পয়সার হিসেব রাখতে পারব না।"

সুপ্রতিমদা পরীকে মজা করে বলে, "রানীরা সুখে দুঃখে সর্বদা রাজার পাশে থাকে, তাহলে এখন কেন পিছিয়ে যাচ্ছও? এর পরে ত সপ্তপদি বাকি আছে, তখন কি করবে?"

লাজুক হেসে সুপ্রতিমদার দিকে তাকায় পরী। রিতিকা সুপ্রতিমদাকে বলে, "ঠিক আছে অনেক হয়েছে ওর পেছনে লাগা, ওই ক্যাশিয়ার হবে।"

গাড়ির ব্যাপারে কথা উঠলে অভি জানায় যে কল্যাণীদের জন্য ইনোভা আর সুপ্রতিমদার গাড়িতে ওরা যাবে। কল্যাণীদের গাড়ি বল্বিন্দার আর আরেক ড্রাইভার চালাবে, আর অভি আর সুপ্রতিমদা নিজেদের গাড়ি চালাবে। 

অরুনা অভির কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "কিরে তুই আবার গাড়ি চালাতে কবে থেকে শিখলি?"

পরী ওকে গত বারের কথা জানায়। 

অভি দিপঙ্করের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমরা কি ড্রিঙ্ক করো?"

দুজনেই ওদের বউয়ের দিকে তাকায়। কল্যাণী বিরক্তি ভরা চোখ নিয়ে দিপঙ্করকে ইশারায় বারন করে। পরী একবার কটমট করে অভির দিকে তাকায়, অভি সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করে। পরী ওর ভাব দেখে হাল ছেড়ে দেয়।

সুপ্রতিমদা ওদের দিকে হেসে বলে, "আরে ভাই, ঘুরতে গিয়ে এই রকম বাঁধনে থাকতে কি কারুর ভালো লাগে নাকি।" তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "বোতল কোথায়? কিনেছিস নাকি তুই?"

অভি মাথা নাড়ায়, "না রে কিনিনি, যাবার পথে আম্বালা থেকে কিনে নেব।"

সুপ্রতিমদা বিরক্ত হয়ে বলে, "বোকা...শূয়র, তুই একবারে সব কথা বলতে পারিস না।"

অরুনা অভির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুই কবে থেকে ড্রিঙ্ক করা শুরু করলি রে?"





লাহুল স্পিতি ভ্রমন (#03)

পরী ওকে সুব্রতর বিয়ের সময়ের অভির কান্ডকারখানা শুনায়, ওই শুনে সবাই হেসে ফেলে। গল্প আবার চলতে শুরু করে। সুপ্রতিমদা আর অভি বিয়ারের ক্যান নিয়ে গলায় ঢালতে থাকে আর বাকিরা কোল্ডড্রিঙ্কস হাতে নিয়ে নেয়। 

কিছু পরে পরী অভিকে বাইরে ডেকে বলে, "বাড়ি ফিরে ছোটোমা, বাবু আর ব্যানারজি কাকু কে কি বলবে কিছু ভেবেছ কি?" পরীর ধরা গোল শুনে অভির ওর কাঁধে হাত দেয়। পরী থাকতে না পেরে অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ভয়ে কেঁপে ওঠে, "আমার জানো, মাঝে মাঝে খুব ভয় করে, জানি না কি হবে।"

অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, "কিছু হবে না, ভয় নেই, আমি আছি।"

অরুনা পরীকে বেড়িয়ে যেতে দেখে কিছু পরে কল্যাণী কে নিয়ে বাইরে আসে। এসে দেখে যে পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। পরী ওদের দেখে অভিকে ছেড়ে দাঁড়ায় আর চোখের কোল মুছে নেয়। অরুনা প্রশ্নভরা চাহনি নিয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী মাথা নাড়িয়ে জানায় যে কিছু হয়নি। অরুনার সে কথা বিশ্বাস হয় না, পরীকে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি যদি কোন কিছু না হয়ে থাকে তাহলে তুমি কাঁদছ কেন?"

অভি ওকে নিশ্চিন্ত করে বলে, "তুই এসব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে আনন্দ কর, বুঝলি।"

রাত ন’টা নাগাদ ওরা সবাই সেই দূর পাহাড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সবাই বেশ হাল্কা জামাকাপড় পরে, রিতিকা একটু বেশি হাল্কা জামা কাপড় পরে। সুপ্রতিমদা আর অভি বারমুডা আর টিশার্ট গায়ে গলিয়ে নিয়েছে। দিল্লী ছাড়ার আগে ওরা পাঁচ বোতল ভদকা আর পাঁচ ক্যারেট বিয়ারের ক্যান কিনে নিয়েছিল, পরী তাতে একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু যেহেতু সবাই আনন্দে মেতে তাই অল্প সাবধান করে দিয়েছে অভিকে। সুপ্রতিমদার গাড়িতে মাঝের সিটে রিতিকা আর অরুনা বসে আর ওরা দুজনে বিয়ার পেছনে বসে, নতুন ড্রাইভার আমজাদ গাড়ি চালাচ্ছিল। পরী অভিকে বলে যে ও রাত টুকু কল্যাণী আর রানীদের সাথে ইনোভায় যাবে যাতে ওরা নিজেদের পৃথক না ভাবে। পরীর কথায় বল্বিন্দার ওদের গাড়ি চালায়। 

অরুনা যথারীতি চুপচাপ বসে, রিতিকা আর ওরা বেশ গল্পে মেতে ওঠে। দিল্লী ছাড়িয়ে বেড়িয়ে পরতেই গাড়ি দ্রুত গতিতে ধেয়ে চলে, সামনে ইনোভা আর পেছনে সাফারি। বিয়ারের ফলে অভি আর সুপ্রতিমদার নেশা লাগে, বেশ একটু ঝিমঝিম পায়। অভি সুপ্রতিমদাকে বলে যে একটা সিগারেট দরকার। কিছু দূর গিয়ে গাড়ি থামায় বল্বিন্দার। দু’জনেই গাড়ি থেকে নেমে একটা করে সিগারেট ধরিয়ে টান দেয়।

অরুনা এর মধ্যে নেমে এসে অভিকে বলে, "আমার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আমাকে ওই ইনোভায় পাঠিয়ে দিবি, প্লিস?"

অভি, "তোর ঘুম পাচ্ছে ত এখানে ঘুমিয়ে পর না।"

অরুনা অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমার ভালো লাগছে না, আমি শুচিদির কাছে যাবো।"

একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে অরুনার ঝাপসা হয়ে আসা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "ঠিক আছে আমি ওকে এই গাড়িতে আস্তে বলব খানে।"

বল্বিন্দার গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা সামনের গাড়িকে ধরে ফেলল। গাড়ি থামিয়ে অভি পরীকে ওদের গাড়িতে আসতে বলে। 

পরী কারন জিজ্ঞেস করাতে অভি একটু বিরক্ত হয়ে বলে, "আমাদের গাড়িতে এসে অরুনাকে সামলাও, ওর আবার মন কেমন করছে। ওকে সামলানোর দায়িত্ব তোমার, আমাকে যদি এই রকম অবস্থায় ফেলে যাও তাহলে দেখে নিও।"

পরী গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে ওদের গাড়িতে চেপে যায়। অরুনাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, অরুনা চুপ করে ওর মুখের দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। পরীর বুঝতে দেরি হয় না যে ওর মনে আবার সেই পুরানো বেদনা জেগে উঠেছে। পরী ওর মাথা জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই অরুনা ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে। 

অভি দুই ড্রাইভারকে সোজা চায়েল নিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। সুপ্রতিমদা আর অভি সাফারির পেছনের সিটে বসে ঘুম লাগায়।

সকাল সাড়ে দশ’টা নাগাদ ওরা চায়েল পৌঁছে যায়। ছোট্ট শহর চায়েলের উচ্চতা বেশি নয়, চারদিকে সবুজে ঢাকা পাহাড়। চায়েলের আবহাওয়া বেশ মনোরম, চারদিকে উঁচু উঁচু পাইন, কেদার, শাল দেবদারুর বন। হোটেলে ওরা দুটো রুম নিয়ে নেয় একটু বিশ্রাম নেবার জন্য। সারা রাত ধরে ড্রাইভার গাড়ি চালিয়েছে তাই ঠিক করা হল যে দুপুরে খাওয়ার পরে ওর চায়েল ছেড়ে বের হবে। 

দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আবার বেড়িয়ে পরে সবাই। এবারে অভির হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং, পাশে পরী। সুপ্রতিমদা, রিতিকা আর অরুনা পেছনের সিটে বসে। পরীর মুখে সবাই সেই জায়গার গল্প শুনছে মন দিয়ে। পরীর বর্ণনা শুনে সবাই মুগ্ধ, রাস্তা ঘাটা যেন পরীর এত চেনা যে মনে হয় ও এখানে সবসময়ে ঘুরতে আসে। 

পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা আমরা কি শতদ্রু নদীর তীরে দাঁড়াবো?"

অভি, "না এবারে নয়, কল্পা বাঁ রেকং পিও পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে, বেবি।"

পরী, "ভিমাকালি মন্দিরে নিয়ে যাবে না?"

অভি, "বেবি, কি করে হবে? আমাদের হাতে সময় কম।"

পরী একটু মনমরা হয়ে বলে, "কেন সময় কম, আমাদের হাতে ত অনেক সময় আছে। তাহলে চলো না আজ রাতে চিতকুলে থেকে যাই আমরা।"

কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছিল অভির, চেঁচিয়ে ওঠে পরীর দিকে, "তুমি কি আবার চিতকুলে গিয়ে গতবারের মতন ঝগড়া করতে চাও?"

পরী খিলখিল করে হেসে অভির গালে টোকা মেরে বলে, "না সোনা, এবারে আর ঝগড়া করব না। কিন্তু বাকিদের কথা বলতে পারছিনা, অভি।"

সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "কিরে, আমরা কি শেষ পর্যন্ত চিতকুল যাচ্ছি নাকি?"

পরী অভির হয়ে উত্তর দিল, "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা চিতকুল যাচ্ছি। আমাদের হাতে অনেক সময় আছে আমরা আরামসে চিতকুলে দুই দিন কাটাতে পারি।" পরী অভির দিকে মিষ্টি হেসে চোখ টেপে। 

রিতিকা আর সুপ্রতিমদা একসাথে বলে ওঠে, "কিন্তু চিতকুল ত আমাদের পথে ছিলে না, তাহলে?"

পরী, "কেন তোমরা ছেলেরাই ত বলেছিলে যে, ঘুরতে গিয়ে যদি এডভেঞ্চারের গন্ধ না পাও তাহলে ঘোরা আর ঘোরা কি। চলো এক নতুন দুর্গম জায়গায়, সেটাও এক রকমের এডভেঞ্চার বইকি।"

অরুনা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে, তোরা কেন চিতকুলে গিয়ে ঝগড়া করেছিলিস?"

পরী পেছনে অরুনার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে উত্তর দেয়, "ধৈর্য ধর আর দেখ। চিতকুল পৌঁছে সব বুঝতে পারবি আমরা কেন ঝগড়া করেছিলাম।"

পরীর সেই শয়তানি হাসি আর চোখের ভাব দেখে অভির যেন ভেতরটা গলে গেল। সেই দুষ্টু হাসি ওকে মনে করিয়ে দিল সেই পুরানো দিনের কথা। 

গাড়িতে তেল ভরানোর জন্য ওরা জিওরিতে থামে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে একটু হাটাহাটি করে, এতক্ষণ বসে বসে সবার পা ধরে গেছে। সবাই পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যায়। হাইওয়ের পাশ দিয়ে শতদ্রু নদী বয়ে চলেছে। গতবারের চেয়ে এবারে রাস্তার অবস্থা একটু যেন ভালো। তেল ভরানোর পরে সুপ্রতিমদার সাথে গিয়ে, পরী পয়সা মিটিয়ে দিল। 

অরুনা আর রিতিকা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে সত্যি কি আমরা চিতকুলে যাচ্ছি?" 

অভি ম্লান হেসে উত্তর দেয়, "আমাকে জিজ্ঞেস করে কি লাভ আছে। তোমরা কি জানো না যে প্রানীদের মধ্যে মানুষ হচ্ছে সব থেকে বিপ্পজন্নক আর মানুষের মধ্যে তোমরা, মেয়েরা সব থেকে মারাত্মক। তোমাদের কথা না মানলে ত মহাভারত উলটে দেবে, তাই না।"

সুপ্রতিমদা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে কখন ওরা চিতকুল পৌঁছাবে, পরী অভির দিকে তাকায়। অভি ঘড়ি দেখে অনুমান করে যে চিতকুল পৌছাতে ওদের রাত আটটা বেজে যাবে। 

পরীকে বলে, "তুমি রাস্তার অবস্থা জানো, তা সত্তেও কেন ওদের নিয়ে চিতকুল যাবার জন্য জেদ করছ, সোনা?"

পরী অভির একদম কাছে এসে, বুকের ওপরে হাত রেখে মুখ উঁচু করে নেয়। ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস অভির সারা মুখের ওপরে বয়ে যায়, মিষ্টি লালা ঠোঁটের কাতর আহবান অভি প্রত্যাখান করতে পারে না। পরীর কোমর জড়িয়ে ঠোঁট নামিয়ে নিয়ে আসে আর পরী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মধুর সুরে বলে, "আমার একটা কথা রাখবে না, সোনা?"

অভি ঠোঁট নিচে নামিয়ে বলে, "এটা কিন্তু ব্লাকমেইল করা হচ্ছে বেবি।"

অভি পরীর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে যায়, পরী সবার দিকে চেঁচিয়ে বলে ওঠে, "আমরা চিতকুল যাচ্ছি।"

বলেই অভির হাতের বাঁধন ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। অভির দিকে মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে ইশারায় বলে, "ওই চুমুটা পাওয়ার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে, সোনা।"

গাড়িতে উঠে অভি, চিতকুলের হোটেলের ম্যানেজারের ফোন নাম্বার খুঁজে টাকে ফোন করে জানিয়ে দিল পাঁচটা রুম বুক করার কথা। ম্যানেজার রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অভি বাকি সবাই কে জিজ্ঞেস করে রাতের খাওয়ার ব্যাপারে। সবাই আঁতকে ওঠে যে বিকেল বেলায় রাতের খাবার। পরী ওদের জানায় যে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে যাবে আর যেখানে যাচ্ছে সেখানে গিয়েই বুঝতে পারবে কেন রাতের খাবারের কথা এত তাড়াতাড়ি অর্ডার দেওয়া হচ্ছে। 

রকছাম ব্রিজ পৌঁছতে সন্ধ্যে নেমে এল। অভি মনে মনে একটু ভয় নিয়েই পরীর দিকে তাকাল, পরী হেসে ওকে আসস্থ দেয় যে এবারে ও আর রাগবে না। অরুনা গাড়ি দাঁড় করাতে অনুরধ করে নিচে নেমে নদী দেখতে চায়। গাড়ি দাঁড়াতেই সবাই নেমে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে থাকে। এর মাঝে সুপ্রতিমদা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে যে ওর গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছে কিনা। অভি হেসে বলে যে পরী যতক্ষণ ওর পাশে আছে ততক্ষণ ওর শরীরে ক্লান্তি আসতে পারেনা। 

সুপ্রতিমদা ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলে, "শালা, আজ রাতে তাহলে এক প্যাকেট কন্ডম শেষ করবি।"

অভি, "এমন বলছিস যেন তুই হাতে ধরে নাড়াবি। শালা তুই কি থেমে থাকবি নাকি?" সিগারেট জ্বালিয়ে দুজনেই হেসে ফেলে। 

বল্বিন্দার এর মাঝে এসে জিজ্ঞেস করে অভিকে যে ওই রাস্তায় চালাতে পারবে কিনা। রাত ঘনিয়ে আসে, অভি বড় এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলে যে ও চালাতে পারবে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে, অভির পাশে সুপ্রতিমদা বসে। খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে শুরু করে অভি, সঙ্কীর্ণ পাহাড়ি রাস্তায় রাতের অন্ধকারে গাড়ি ধিরে ধিরে উঠতে শুরু করে। কিছু দুরে দুরে অন্ধ বাঁক, সামনে থেকে কোন গাড়ি না আসাতে গাড়ি চালাতে বিশেষ অসুবিধে হয় না। পাথুরে রাস্তায় গাড়ি দোল খায়, অরুনা আর রিতিকার ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে। পরীর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকায় দুই মেয়ে, জিজ্ঞেস করে যে ওরা ঠিক রাস্তায় যাচ্ছে কি না। পরী ওদের অভয় প্রদান করে, আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, মনে পরে যায় প্রথম বার যখন পরী এখানে এসেছিল তখন ও ঝগড়া করেছিল অভির সাথে।

রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওর সবাই চিতকুল পৌঁছে যায়। গাড়ি সোজা হোটেলে নিয়ে যায় অভি। ম্যানেজার পরী আর অভিকে দেখে চিন্তে পেরে যায় আর ওদের থাকার জন্য রুম দেখিয়ে দেয়। ম্যানেজার জানায় যে রাতের খাবার একদম তৈরি, ওরা যেন খাওয়ার আগে একটু খবর দেয়।






কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

4 comments:

  1. Plz, check 2 ensure your...
    http://cchotiheaven.blogspot.in/2014/01/written-by-pinuram-4-5-6.html
    চতুর্থ অধ্যায়ঃ দিবস রজনীর গল্প
    লাহুল স্পিতি ভ্রমন (#4, #5, #6)
    as Blog not found…
    Blogger apologies sorry as their good manners 2 express themselves, subsequently the blog I looking for doesn't exist. Plz, repost once again for continuation of ভালবাসার রাজপ্রাসাদ; OK.

    ReplyDelete
    Replies
    1. এখুনি ঠিক করে দিচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই ভুলটি ধরিয়ে দেবার জন্য।

      Delete
  2. So nice of you 'CHOTILAL' & like to add more comments from my side in days to come b4 I myself an errant reader from 22.5667° N, 88.3667° E;
    just 2 develop myself in your ways thru 'Bangla Script' as Vrinda - an awful Bengali Fonts (OTF) from Microsoft; OK. So, best of luck for the moment...

    ReplyDelete
  3. So nice of you 'CHOTILAL' & like to add more comments from my side in days to come b4 I myself an errant reader from 22.5667° N, 88.3667° E;
    just 2 develop myself in your ways thru 'Bangla Script' as Vrinda - an awful Bengali Fonts (OTF) from Microsoft; OK. So, best of luck for the moment...

    ReplyDelete