Thursday, January 9, 2014

ভালবাসার রাজপ্রাসাদ_Written By pinuram [অদৃশ্য চিঠি, অপরিজ্ঞাত যাত্রা (#1)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




ভালবাসার রাজপ্রাসাদ
Written By pinuram





দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ হিম-আঁচলের ছায়ায়

অদৃশ্য চিঠি

দিন চলে যায়, সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে। অভির মন থেকে পরীর কথা মুছে যায় না, কলেজে, বাড়িতে সবসময়ে ওর শুধু পরীর কথা মনে পরে। মা জানালেন যে পরী বাসন্তি পুজোর পরে, মানে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বাড়ি আসবে। এর মধ্যে অভি ঘর বদলে নিয়েছে, ছাদের ঘরে ওর বর্তমান বাসস্থান। নিচের ঘর ছেড়ে দিয়েছে পরীর জন্য। মা পরীর ঘরটাকে সাজাতে ব্যাস্ত, অনেকদিন পরে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে বুকে পাবে। অভির কোন বোন নেই, তাই পরীকে দিয়ে মা সেই কন্যের সাধ মিটিয়ে নিতে চায়। 

মা বাবা দু’জনেই অভির ওপরে বেশ কড়া। হয়ত বা মা একটি মেয়ে চেয়েছিলেন কিন্তু তার পরিবর্তে ভগবান ওদেরকে একটি ছেলে জন্ম দিয়েছে। খাবার টেবিলেও মায়ের মুখে পরীর কথা। মাঝে মাঝে মায়ের পরীর প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা দেখে অভির মনে জ্বালা ধরে যেত কিন্তু সেই জ্বালা মিটে যেত যখন ভাবত যে কিছু দিন পরে পরী ওর কাছে থাকবে।

অনেক দিন দেখা হয়নি পরীর সাথে, গ্রামের বাড়িতে কোন টেলিফোন নেই যে পরীর সাথে কথা বলবে। মাঝে মাঝে অন্ধকার রাতে যখন পরীর কথা মনে পড়ত তখন ও পরীর দেওয়া সিল্কের রুমাল টা বের করে নাকের সামনে ধরত, চেষ্টা করত পরীর গায়ের গন্ধ শোঁকার। মুখের ওপরে রুমাল বুলিয়ে নিয়ে অনুভব করত পরীর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া।

একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে মা ওকে জিজ্ঞেস করেন যে দিদার বাড়িতে বিয়ের সময়ে কিছু ছেড়ে এসেছে কিনা। মাথা নাড়াল অভি, ওর মনে নেই কিছু ছেড়ে এসেছে কিনা। মা ওর হাতে একটা জামা ধরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে এটা কি ওর জামা নাকি। জামা দেখে চিনতে পারে অভি। মা জানালেন যে, পরী অনার সাথে দেখা করতে স্কুলে এসেছিল আর এই জামাটা আর একটা খাম মায়ের হাতে দিয়েছিল। মা জানালেন যে খামটা খালি।

রাতের বেলা অভি জামাটা পরে নিল এই ভেবে যে পরীর হাতের ছোঁয়া আছে ওর জামার ওপরে। হাতে নিয়ে খাম’টা দেখল অভি, পুরানো ভারতীয় ডাকের হলদে রঙের খাম, ভেতর টা খালি। 

পরের সারাদিন মাথার মধ্যে খালি খামের ব্যাপার চিন্তা করে গেল, কি পাঠাতে পারে খালি খামে। রাতের বেলা আবার খাম খানি হাতে নিয়ে এদিক ওদিক করে দেখতে চেষ্টা করল, যে খালি খাম ওকে কি বলতে চাইছে। কিন্তু কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না অভি। নাকের কাছে ধরল খাম খানি, একটু যেন জুঁই ফুলের গন্ধ মাখা। হ্যাঁ, এটা পরীর গন্ধ কিন্তু তাঁর সাথে আর একটা গন্ধ নাকে এল অভির, লেবুর গন্ধ।

মাথায় বিজলি খেলে গেল অভির, ওর হাতে পরীর লেখা এক অদৃশ্য চিঠি। অভি খাম খানি ঠোঁটে ছোঁয়াল, পরী সত্যি অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে, এমনি এমনি কি আর ফিসিক্স নিয়ে পড়েছে। ওর ত স্পাই হওয়া উচিত, টিচার নয়। সযত্নে খামের চারপাশ খুলে ফেলল, তারপরে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে খাম খানি মোমবাতির আলোর সামনে ধরল। চিঠির লেখা আস্তে আস্তে ফুটে উঠল, 

"আমার বুকের ধুকপুক...
ছোট্ট সোনা রাজকুমার।
তোমার শাল গায়ে দিলে এখন আমি তোমাকে আমার চারপাশে খুঁজে পাই। শীতের রাত গুলো বড় নিষ্ঠুর আর খুব লম্বা মনে হয়। তোমার কথা চিন্তা করতে করতে রাতে ঘুম আসেনা চোখে। তোমার সেই প্রথম চুম্বন টি এখন আমার কপালে লেগে আছে। একদিন এলে আমার সাজান বাগানে আর আমাকে উপড়ে দিয়ে তছনছ করে চলে গেলে। 
আমি এমন একটা জীবন চাই যেখানে শুধু তুমি থাকবে আমার পাশে, আর কেউ না।
আমি ভবিষ্যৎ দেখতে চাইনা, শুধু তোমার পাশে থেকে একটু বাঁচতে চাই। জীবনের প্রতি মুহূর্ত তোমার পাশে, তোমার আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে কাটিয়ে দিতে চাই আমি। আমার অতীতকে ভুলে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে শুধু বর্তমানে তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।
আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব, কাল বাদে পরশু, দুপুর এগারটায় আমার সাথে বারাসাত রেল স্টেসানে দেখা কর। 
গুড বাই হানি।
ফর এভার ইওরস, তোমার বুকের পাঁজর, পরী।"

কাল বাদে পরশু, মানে কালকে। অভি অধির ব্যাকুলতায় সারা রাত ঘুমাতে পারল না। অনেক দিন পরে পরীর সাথে দেখা হবে। 

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ, কোলকাতায় ঠাণ্ডা বেশ ভাল ভাবে পড়েছে। প্রাতরাসের টেবিলে চুপচাপ খেয়ে নিল অভি। মা ওকে জিজ্ঞেস করলেন যে পরীকে কিছু বলতে হবে কিনা, কেননা মা আজ দিদার সাথে দেখা করতে যাবেন। মায়ের কথা শুনে মাথায় বাজ পড়ল অভির। আজ যে পরী ওর সাথে দেখা করতে বারাসাত আসবে। মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে কাউকে কিছু বলার নেই।

সময়ের বেশ কিছুক্ষণ আগেই অভি রেল স্টেসানে পৌঁছে গেছিল। অধির ব্যাকুলতায় দাঁড়িয়ে অভি, কখন ওর পরী আসে। থাকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত প্লাটফরমের ওপরে পায়চারি শুরু করে দিল। বুকের মাঝে হৃদপিন্ডটি যেন দুমদুম করে কিল মারছে পাঁজরের ওপরে। বারে বারে শুধু ঘড়ি দেখে, সময় যেন আর কাটেনা। মনে মনে একবার ভাবে, পরী আসবে’ত?

বেশ কিছুক্ষণ পরে লক্ষ্য করল যে, পরী ওর দিকে দৌড়ে আসছে। ওকে দেখতে পেয়ে যেন চাতকের প্রানে জল চলে এল। 

পরীর পরনে আকাশী নীল রঙের শাড়ি আর একটা লম্বা জ্যাকেট গায়ে। চুলের কিছু অংশ গালের ওপরে নাচছে। মাথা নাড়ল অভি, কি মেয়ে সবসময়ে শুধু শাড়ি পরে থাকে।

দৌড়ে আসার ফলে পরী হাঁপাচ্ছিল, তাঁর ফলে ওর উন্নত বখদ্বয় বারে বারে ফুলে উঠছিল। ওকে দেখে শান্ত হতে বলে অভি, "কি হল দউরাচ্ছিলে কেন?"

পরী, "সরি বাবা, একটু দেরি হয়ে গেল।"

পরী ওর হাত জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল, "ছোটো মা কেমন আছে?"

অভি মাথা নেড়ে জানাল যে ওর ছোটো মা ভালোই আছেন। আজকে ওর সাথে দেখা করার কথা।

পরী, "যাঃ ছোটমা আজকে আমার বাড়ি যাবে? আমার সাথে ত দেখা হবে না।"

অভি, "কি করে হবে? আচ্ছা কি বলে বাড়ি থেকে এসেছ?"

পরী, "আমি বলেছি যে আমি এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।" অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল পরী, "আমার সাধের বান্ধবী... হে হে..."

অভি ওকে জানাল যে মা ওর জন্য ঘর ঠিক করে রেখেছে। মা খুব খুশি যে পরী অনার সাথে থাকতে আসছে। 

পরী অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "যাক বাবা তুমি তাহলে শেষ পর্যন্ত আমার চিঠিটা পেয়েছ। আমি ত তোমার সাথে দেখা করার জন্য মরে যাচ্ছিলাম। তুমি সত্যি অনেক ব্রিলিয়ান্ট, সোনা।"

অভি, "আমি না তুমি? চিঠি টা কে লিখেছে? আমি ত স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে তুমি আমাকে এই রকম একটা চিঠি লিখবে। বাপরে তোমার ত টিচার নয় স্পাই হওয়া দরকার।"

পরী, "তাহলে বল তোমার হার্ট কত ইন্টেলিজেন্ট।"

পরীর হাসি মুখ দেখে অভির মনে হল যেন এখুনি ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, কিন্তু দিনের আলোয় আর রেল স্টেসানে এই রকম ব্যাবহার বাঞ্ছনীয় নয়। 

অভি, "কোথাও যেতে চাও?"

পরী, "হ্যাঁ, চলো না একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি। তোমার সাথে অনেক কথা বলার আছে।"

অভি, "হুম, ইন্টারেস্টিং, কি আবার ভুত মাথায় চাপালে?"

রেস্টুরেন্টে ঢুকে একটা কনার টেবিলে বসে পড়ল ওরা। অভি জানাল ওর কাছে বেশি পয়সা নেই। পরী বলল, ও থাকতে অভি যেন পয়সার চিন্তা না করে, যখন সময় আসবে তখন চিন্তা কোরও, তাহলেই হবে। 

পরী, "এই তোমার মনে আছে, বউভাতের দিনে আমার দুই বান্ধবীর সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম?"

অভি মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ মনে আছে।"

পরী, "ওরা জানুয়ারির লাস্ট উইকে মানালি যাচ্ছে পুর এক সপ্তাহের জন্য, আমিও যাবো ওদের সাথে।"

অভি, "ত কি বলতে চাও?"

পরী, "তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে।"

অভি, "ঠিক আছে, আমি বাবা মা কে কিছু করে ম্যানেজ করে নেব। আমার যেতে বিশেষ অসুবিধা হবে না, কিন্তু তোমার বান্ধবীরা জানে যে আমি তোমার দিদির ছেলে, আর একবার তোমার ছোটো মা বা দিদা জানতে পারলে আমাদের অবস্থা কি হবে সেটার ধারনা আছে কি?"

"না না সেটা নয়। আমি শুধু তোমার সাথে যেতে চাই, যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব।" কাতর চাহনিতে তাকাল অভির দিকে, "প্লিস সোনা না কোরও না।"

মাথা চুলকে অভি বলল, "ঠিক আছে, হাওড়া স্টেসান থেকে আমি তোমাকে তুলে নেব তারপরে দেখা যাবে কোথায় যেতে পারি।"

পরী, "না গো, সে গুড়ে বালি। সুব্রতদা আমাদের সবার টিকিট কেটেছে। সেই জন্য আমরা সবাই হাওড়া কাল্কা মেলে চেপে একদম কাল্কা যাচ্ছি।"

অভি, "ওকে দেখি হিমাচলে কোন কোন জায়গায় যাওয়া যায়।"

পরী, "আমি জায়গার কথা জানিনা, সেটা তোমার ব্যাপার। আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে চাই, ব্যাস।"

কিছু পরে খাবার চলে আসে, পরী ওর মুখের মধ্যে চামচ দিয়ে খাবা ঢুকিয়ে দেয়।

অভি, "আমি কি এখন বাচ্চা ছেলে নাকি?"

পরী, "চুপ একদম, এখন তুমি আমার কাছে বাচ্চা। সেই ছোট্ট রাজকুমার আমার।"

অভি দুহাত জোড়া করে বলে, "হয়েছে মা জননি।"

পরী, "এবারে বল কি করে ট্রিপ প্লান করবে?"

অভি, "দাড়াও কিছুক্ষণ ভাবতেত দেবে নাকি? এই বললে এই যেন হয়ে গেল।"

পরী, "ঠিক আছে ঠিক আছে, ভাব ভাব..."

অভি, "আমি তোমার জন্য কাল্কা স্টেসানে দাঁড়িয়ে থাকব, তারপরে কি হবে সেটা দেখা যাবে। তুমি কি করে তোমার বান্ধবীদের টুপি পরাবে সেটা তুমি ভেবে নিও। বাকি প্লান, এখন আমার মাথায় কোন প্লান নেই।"

পরী, "উফফফফ... ভেবেই আমার সারা গায়ে কাটা দিচ্ছে। আমি আর তুমি, একসাথে এক অজানা অচেনা জায়গায়।"

অভি ওর চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে নাড়িয়ে বলে, "সোনা, তোমার বান্ধবীরা জানে কি যে তুমি প্রেমে পরেছ?"

পরী, "হ্যাঁ ওরা একটু একটু ধরে ফেলেছে, কিন্তু কেউ জানে না যে ছেলেটা কে আর তুমি ওদের সামনে এস না যেন। তোমাকে ওরা চেনে আর ছোটো মাকে ও চেনে। আমাদের একসাথে দেখে ফেললে কিন্তু... আমি যদি বলি যে আমি কাল্কা থেকে অন্য দিকে যাব, তাহলে ওরা জানতে চাইবে আমি কোথায় যাচ্ছি আর কার সাথে যাচ্ছি। সেই সব ভেবে চিন্তে কাজ কোরো কিন্তু।"

অভি ওর কাঁধে আলতো করে ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করল, "তোমার মাথায় কি কিছু আসছে?"

পরী, "আমি তোমাকে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছি, এবারে তুমি কি করে আমাকে নিয়ে যাবে সে চিন্তা তোমার।"

অভি পরীকে বলল যে সেই সময়ে হিমাচল প্রদেশে অনেক ঠাণ্ডা পড়বে, ও যেন ভাল সীতের জামাকাপড় নিয়ে বেড়াতে বের হয়। সবসময়ে যেন শাড়ি পরে না, শীতের দেশে শাড়ি চলেনা। পরী জানাল যে ওর কাছে ভাল জ্যাকেট আছে আর ও ত আর জিন্স পরে না তাই সালোয়ার নিয়ে যাবে। 

নুডুলস খেতে খেতে অভি জিজ্ঞেস করল যে সুব্রতর হানিমুন কেমন কাটল। ওদের হানিমুন ভালোই কেটেছে, পরী আরও জানাল যে, ইন্দ্রানি মাসি ওকে বম্বে যেতে বলেছে। অভি জিজ্ঞেস করল যে পরী বম্বে যেতে চায় কিনা, তার উত্তরে পরী বলল সেটা পরের কথা, ভবিষ্যতে দেখা যাবে পরী বম্বে যাবে কিনা। ওর মাথায় এখন শুধু ছোটমা আর ও এম.এস.সি করতে চায় তারপরে ওর ছোটমা র মতন স্কুলে পড়াতে চায়। এইসব গল্প করতে করতে অনেক সময় চলে গেল।

পরী ঘড়ি দেখে বলল, "এবারে আমাকে যেতে হবে যে।"

অভি, "একটা গুডবাই কিস দেবে না?"

পরী, "না সোনা, আমি তোমাদের মতন শহুরে লোক নই যে দিনের আলতে রাস্তার মাঝে সবার সামনে তোমাকে কিস করব।" একটা দুষ্টু মিষ্টি হেসে বলল, "তোমাকে এই গ্রামের মেয়েকে নিয়ে থাকতে হবে।"

রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে ওরা বাস স্টান্ডে পৌঁছে গেল। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ওরা। 

অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "আমাকে বিশ্বাস কর?"

ওর প্রশ্ন শুনে চমকে গেল পরী, "হটাত এই রকম প্রশ্ন?"

অভি, "আমি বেড়াতে যাবার জন্য কিছু না কিছু ব্যাবস্থা করব, যাতে এই ট্রিপ টা সারা জীবন মনে থাকে।"

পরী ওর হাত জড়িয়ে বলে, "আমি জানি অভি। আমি তোমার জন্য কাল্কা স্টেসানে অপেক্ষা করে থাকব।"

ওর বাস এসে গেল। বাসে উঠে পড়ল পরী। জানালার পাশে সিট পেয়ে গেল। বাস ছেড়ে দেবার আগে, পরী তর্জনী টা ঠোঁটের কাছে এনে, একটা ছোটো চুমু খেয়ে অভির দিকে নাড়িয়ে দিল। বাস ছেড়ে দিল। বাস’টাকে যতক্ষণ দেখা গেল ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল অভি তারপরে উলটো দিকের বাসে চেপে বাড়ি ফিরে এল।





অপরিজ্ঞাত যাত্রা (#01)

কিছুদিন পরে অভি দেখল যে ওর চোখে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা নিল অভি। ওর চোখে চশমা দেখে মায়ের চিন্তা একটু বেড়ে গেল, মৃদু বকুনিও শুনতে হল ওকে, নিজের যত্ন নেয় না খালি রাত জেগে টি.ভি দেখা। প্রথম প্রথম চশমা নিয়ে একটু অসুবিধা হত, পরে ঠিক হয়ে গেল| 

অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। বাবা মাকে কি বলে বের হবে তাঁর চিন্তা, কোথায় যাবে, কি করে যাবে তাঁর চিন্তা, পরীকে কি করে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বার করবে তাঁর চিন্তা। ওর এক সিনিয়ার বন্ধু, সুপ্রতিমদা দিল্লীতে থাকে। নয়ডার কোন এক বড় আই.টি কম্পানিতে চাকরি করে। একদিন ওকে ফোন করল অভি, জানাল যে ও হিমাচল ঘুরতে যেতে চায়, একটা গাড়ির ব্যাবস্তা করে দিতে হবে। সুপ্রতিমদা জানাল যে অভি ওর টাটা সাফারি নিয়ে ঘুরতে যেতে পারে, আরও জিজ্ঞেস করল যে কাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে, একা একা না কেউ স্পেসাল থাকবে সাথে। সুপ্রতিমদা জানতে চাইল যে বাবা মা জানেন কিনা ওর প্রেমের ব্যাপারে। অভি বলল যে, দেখা হলে সব জানাবে, কিন্তু গাড়ি ওর কাল্কাতে চাই। সুপ্রতিমদা বলল, যে অনেক দিন পরে ওদের দেখা হবে সুতরাং দিল্লীতে যদি ও দেখা না করে তাহলে ও গাড়ি দেবে না।

অভি হেসে ফেলল, "ঠিক আছে বাবা আমি তোর সাথে দিল্লীতে দেখা করব, কিন্তু গাড়ি ঠিক করে রাখিস।"

সুপ্রতিমদা, "তুই ব্যাটা ডুবে ডুবে কি জল খাচ্ছিস সেটা না যেনে আমি তোকে গাড়ি দেব না। গাড়ি পেতে হলে দিল্লীতে নাম তারপরে গাড়ি।"

অভি, "ঠিক আছে তাই হবে।"

বেশি দিন বাকি নেই, পরিকল্পনা টাকে বেশ ভাল করে ভাবতে হবে আবার। কাল্কা না এবারে দিল্লী যেতে হবে। একদিন রাতে খাবার টেবিলে অভি জানাল যে ও ঘুরতে যেতে চায়। একা একা আগেও ঘুরতে বেড়িয়েছে ও, তাই বাবা মার কাছ থেকে অনুমতি পেতে বিশেষ অসুবিধা হল না। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে কোথায় যেতে চায়। অভি জানাল যে ও হিমাচল প্রদেশে ঘুরতে যেতে চায়। বাবা প্রস্তাব দিলেন যে মানালি তে এখন বরফ পড়বে, ও যদি বরফ দেখতে চায় তাহলে মানালি, কুলু সিম্লা ঘুরতে যেতে পারে। অভি বলল যে ও এমন এক জায়গায় যেতে চায় যেখানে মানুষের যাতায়াত কম। বাবা খুব ঘুরেত ভালবাসেন। বাবা আই.এ.এ.আই এর(দমদম এয়ারপোরট অথরিটি) উচ্চ পদস্থ অফিসার। একদিন বাবা হিমাচলের ম্যাপ নিয়ে এলেন। ম্যাপ দেখে জানালেন যে অভি সাঙলা ভ্যালি তে চিতকুল নামে এক জায়গায় ঘুরতে যেতে পারে। ওখানে মানুষের আগমন খুব কম আর শীত কালে জায়গাটা একদম খালি থাকবে। অভি এই জায়গার নাম আগে কোনদিন শোনেনি, তাও যেতে রাজি হল এই ভেবে যে জায়গাটা একদম নিরিবিলি।

ব্যাগ ঘুছাতে শুরু করে দিল অভি, শীতের জামাকাপড় আর ঘুরতে যাবার সরঞ্জাম। মা প্রথমে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু অভি অনাকে শান্তনা দিয়ে বলে, ও আগেও একা একা ঘুরতে গেছে তাই যেন চিন্তা না করে। এবারে চিন্তা হচ্ছে পরীকে কি করে কাল্কা স্টেসান থেকে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বের করা যায়। যাবার আগে আর দাড়ি কামালো না, গাল ভর্তি গোঁফ দাড়ি, চোখে চশমা, একদিন আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারল না অভি। ছদ্মবেশ টা বেশ ভাল লাগল অভির। মা ওকে দেখে রেগে গিয়ে দাড়ি কাটার জন্য বললেন। 

চিতকুলে একা অভি আর পরী থাকবে, হয়ত আর কোন লোকজনের দেখা পাবে না। রাত একসাথে এক ঘরের মধ্যে কাটাবে, অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। কামনার আগুনে পুড়ে অভি আর পরী শুধু মাত্র যে চুম্বনে বা আলঙ্গনে থেমে থাকবে না সেটা অনুধাবন করতে অসুবিধে হল না। অভি সেই মিলন রাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিল। যত দিন এগোয় অভির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলে, পরীর সাথে একা একা ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবে, প্রথম মিলনের রাতের কথা ভেবে, কি করে প্রেমে ভালবাসায় পরীকে ভরিয়ে তুল্বে সেই কথা ভেবে রাত আর কাটতে চায় না।

যাবার আগেও মা বললেন ওকে দাড়ি কাটতে, মাকে বলল যে দিল্লী নেমে ও সুপ্রতিমদার বাড়িতে যাবে সেখানে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে তবে গাড়ি নিয়ে হিমাচলের যাত্রা করবে। যাবার আগে বাবা ওর হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন যে ওতে হাজার আটেক টাকা আছে।

অবশেষে এল ঘুরতে যাবার দিন। দুপুরের ফ্লাইটে চেপে অভি দিল্লীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। রবিবার ভোররাতেই পরী কাল্কা স্টেসানে পৌঁছে যাবে। অভির বিশ্বাস যে পরী ওর জন্য অপেক্ষা করবে, কিন্তু পরী যে জানেনা যে অভি প্লেনে করে দিল্লী আসছে।

দিল্লী নেমে সুপ্রতিমদার সাথে দেখা হল। সুপ্রতিমদার বাড়ি চিত্তরঞ্জন পার্কে, ওর বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম করে নিল। গল্পের ছলে সুপ্রতিমদা ওর ভালবাসার কথা জানতে চাইল। পরীর কথা বলল সুপ্রতিমদা কে কিন্তু অতি সতর্কতা করে অভি পরীর আর মায়ের সম্পর্ক এড়িয়ে গেল। 

সুপ্রতিমদা অবিবাহিত, অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "তুই আর কত দিন একা একা থাকবি? এবারে বিয়ে টা ক্করে ফেল।"

সুপ্রতিমদা, "ধুর বাবা বিয়ে করে কি হবে, টাইম পাসের জন্য ত পাওয়া যায় রে।" দুজিনেই হেসে ফেলল।

সুপ্রতিমদা, "তাহলে চিতকুল যাচ্ছিস? কোথায় সেটা?"

অভি, "হিমাচলের এক কোনায়, সাঙলা ভ্যালি নামে এক ভ্যালিতে।"

সুপ্রতিমদা, "মানালি বা ডালহউসি যেতে পারতিস।"

অভি, "না পরীর বান্ধবীরা মানালি যাচ্ছে, পরীর ইচ্ছে আমরা এমন এক জায়গায় যাই যেখানে কেউ থাকবে না। অনেক ভেবে চিন্তে এই জায়গাটা বেছেছি।"

সুপ্রতিমদা বলল যে ওর ড্রাইভার বল্বিন্দার অভির সাথে যাবে। বেশ মিশুকে লোক, ভাল ড্রাইভার আর ঘুরতেও ভালবাসে। অভি বা পরীর কোন চিন্তা করার দরকার নেই। সুপ্রতিমদা আরও বলল যে দিল্লী থেকে কাল্কা প্রায় ঘন্টা আটেকের রাস্তা, বিকেল বিকেল বেড়িয়ে পড়তে পারলে মাঝ রাতের মধ্যে কাল্কা পৌঁছে যাবে। রাতের বেলা ড্রাইভ করাটা যদিও একটু মুশকিল হতে পারে, একে শীতকাল রাস্তায় রাতে কুয়াশা হতে পারে আর ট্রাক বা বাস ত আছেই। অভিকে জিজ্ঞেস করল যে পর্যাপ্ত গরমের পোশাক এনেছে কিনা।

বিকেল বেলায় অজানার পানে যাত্রা হল শুরু। দিল্লী থেকে গাড়ি ছাড়ল বিকেল ছটার মধ্যে, ঘন্টা দুয়েক পরেই গাড়ি দউরাতে শুরু করল হাইওয়ে ধরে। এক মিনিট পার হচ্ছে আর অভির ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে, সকাল বেলায় দেখা হবে পরীর সাথে। অভি বল্বিন্দর কে বলল যে ও গাড়ি চালাবে। বল্বিন্দর ওকে সাবধান করে বলল যে রাতে কুয়াশা আর ট্রাক দেখে যেন গাড়ি চালায়। অভি বলল যে পাহাড়ে ও গাড়ি চালাতে পারবেনা কিন্তু সমতলে ওর হাত নিখুঁত। 

সনেপত পেরনর পরে বল্বিন্দার ওকে গাড়ির স্টিয়ারিঙে বসতে দিল। অভি স্টিয়ারিঙে বসেই গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটা আশি ছাড়িয়ে একশো। বল্বিন্দার বলল যে ওর শুধু মাত্র দু’বোতল চাই তাহলেই ওর পারিশ্রমিক হয়ে যাবে। আম্বালাতে থেমে ওরা এলকোহল কিনে নেবে এই ঠিক হল।

বল্বিন্দার ওকে জিজ্ঞেস করল, "স্যারজি, ভাভি জি কি করেন?"

"ভাভিজি" কথাটা শুনে মনে মনে হেসে ওঠে অভি, "ভাভি জি এই সবে কলেজ থেকে পাশ করেছে।"

বল্বিন্দার, "ট্রেন কাল্কা স্টেসানে কখন পৌঁছাবে?"

অভি, "হাওড়া কাল্কা মেলে আসছে ভাভিজি। সম্ভবত সকাল চারটে কি সাড়ে চারটেতে পৌছবে।"

বল্বিন্দার, "কাল্কা মেল, তাহলে লেট করবে স্যারজি, চিন্তা নেই আপনি আস্তে চালান।"

অভির মন মানে না, যদি ট্রেন আগে এসে পৌঁছে গিয়ে থাকে, যদি পরী ট্রেন থেকে নেমে ওকে দেখতে না পায়, তাহলে কি করবে। অভি বল্বিন্দার কে বলে, "না আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি আগেভাগে স্টেসানে পৌছাতে চাই, তাতে যদি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তা আমি দাঁড়িয়ে থাকব।"

ঠাণ্ডার অন্ধকার রাত কেটে গাড়ি সো সো করে এগিয়ে চলে অচেনা গন্তব্য স্থলের পানে। জানে না অভি কোথায় যাচ্ছে, অভি কোনদিন হিমাচলে আগে আসেনি আর পরীও কোনদিন পাহাড় দেখেনি। সো সো করে ট্রাক বাস কে টপকে গাড়ি কুয়াশা আর অন্ধকার কেটে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। একটানা গাড়ি চালিয়ে অভির মাঝে একটু ঝিম ধরে গেল, রাত দশ’টা নাগাদ, মাঝখানে এক জায়গায় থেমে বল্বিন্দার আর অভি একটু চা খেয়ে নিল। 

গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। কুয়াশা দেখে বল্বিন্দার ওকে আস্তে চালাতে বলল। গাড়ি ধিরে ধিরে চালাচ্ছে অভি। বল্বিন্দার ওকে বলল যে আম্বালা পৌঁছে যেন ফ্লাই অভারে না চড়ে। ফ্লাইঅভারের নিচ দিয়ে সহরে ঢুকে ওরা দু বোতল এলকোহল কিনে নিল। 

বল্বিন্দার, "স্যারজি, আমরা অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব’ত। আপনি পিঞ্জোর পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যান তারপরে আমি চালাব খানে।"

অভি জানাল যে আগে কোনদিন এদিকে আসেনি তাই ও রাস্তা ঘাট চেনেনা। বল্বিন্দার বলল যে সিমলা পর্যন্ত রাস্তা ওর চেনা, তারপরে না হয় লোকজন কে জিজ্ঞেস করে রাস্তা যেনে নেওয়া যাবে। আম্বালা ছাড়িয়ে গাড়ি এন.এইচ.1 ছেড়ে এন.এইচ.22 ধরল। পিঞ্জোর ছাড়াতেই বল্বিন্দার গাড়ি চালাতে শুরু করল। পাসের সিটে বসে অভি চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নিল।






কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment