CH Ad (Clicksor)

Thursday, January 9, 2014

ভালবাসার রাজপ্রাসাদ_Written By pinuram [জলপরীর স্বপ্ন (#4), দেবীকথা-অরুন্ধতি (#1, #2)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




ভালবাসার রাজপ্রাসাদ
Written By pinuram





জলপরীর স্বপ্ন (#04)

মৈথিলী ওকে বলে, "ঠিক আছে সেটা না হয় হল না, কিন্তু শনিবার আমরা ঢাকুরিয়ায় অমল কাকুর বাড়ি যাব, সেখানে তোমাদের দু’জনকেই যেতে হবে।"

অভি জিজ্ঞেস করে, "কে অমল কাকু?"

মৈথিলী, "অরুনিমার বাবা, আমি কিছু জানিন, তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছও।"

পরী ওর দিকে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আর মৈথিলী ওর দিকে উৎসুক ভাবে তাকিয়ে। বড় দো’টানার মাঝে পরে যায় অভি, কিছু একটা বলে খান্ত করতে হবে মৈথিলীকে আর পরীকে পরে বোঝানো যাবে।

অভি, "ঠিক আছে, শনিবারের কথা শনিবারে দেখা যাবে।"

রাত অনেক হয়ে গেছে, সুব্রত মৈথিলীকে সঙ্গে করে বেড়িয়ে যায় অভির ঘর থেকে। পরী ওদের পেছন পেছন বেড়িয়ে যেতে থাকে। অভি দেখল পরী যে ওর কথা রাখছে না তাই পেছন থেকে পরীর কাঁধে হাত রাখে, ইশারায় বলতে চায় যে তুমি তোমার কথা রাখছ না। পরী কাঁধের ওপর থেকে ওর দিকে মিষ্টি করে তাকায়। সুব্রত আর মৈথিলী কিছুটা এগিয়ে গেল। পরী একটু দাঁড়িয়ে রইল তারপরে ওর দিকে তাকিয়ে ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের সামনে এনে ডগায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর দিকে নাড়ে, অভি সেই ছুঁড়ে দেওয়া চুম্বন টাকে বুকের ওপরে মেখে নেয়।

ভগ্ন হৃদয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে চোখের ইশারায় বলে, "তুমি কথা দিয়েছিলে পরী।"

পরী মাথা নেড়ে চোখের ইশারায় জানায়, "এটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাক সোনা।"

এই বলে পরী ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।

অভি বিছানার ওপরে শুয়ে পরে, গায়ের ওপরে লেপ টেনে নেয়। ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে অভি, চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরীর লাল ঠোঁট আর মিষ্টি হাসি। চোখ বন্ধ হয়ে যায় অভির।

কিছু নরম জিনিস যেন ওর কপালে ছুঁয়ে যায়। ঘুম ঘুম চোখ খুলে তাকায় অভি, চারদিকে তাকিয়ে দেখে যে ও একটা বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে বসে আছে। গাছের সবুজ পাতা রক্ত লাল ফুলের নিচে ঢেকে গেছে, পাতার জায়গায় শুধু লালা ফুল দেখা যাচ্ছে। গাছ থেকে একটা ফুল ওর কপালের ওপরে এসে পরে। ওর চারদিকে কৃষ্ণচুরার লাল ফুল ছড়িয়ে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে অভি, গাছটা একটা ছোটো পাহাড়ের ওপরে, আর সবুজ ঘাসে ঢাকা সেই পাহাড়। সামনের দিকে চোখ যায় অভির, ঘাসে ঢাকা পাহাড় নেমে গেছে সমুদ্র তীরে। ঘন নীল সমুদ্র অবিস্বাস ভাবে শান্ত, এসে মিশেছে পাহাড়ের পাদদেশে। মাথার ওপরের আকাশের রঙ ও ঘন নীল, এক ফোঁটা মেঘের দেখা নেই। দিগন্তের দিকে তাকায় অভি, কোথায় যে সমুদ্র শেষ হয়েছে আর কোথায় যে আকাশ শুরু হয়েছে সেটা ঠিক বোঝা যায় না।

অভি নিজের দিকে তাকায়, পরনে ওর প্রিয় ঘিয়ে রঙের তসরের পাঞ্জাবী আর ধাক্কা পাড়ের ধুতি। ওর সেই ডায়রিটা ওর বুকের ওপরে আধা খোলা অবস্থায় রাখা আর ওপর হাত সেই ডায়রির ওপরে। দিগন্ত থেকে একটা তীব্র সাদা আলো ওর দিকে ধেয়ে আসে। আলোর রস্মি সমুদ্র তীরে এসে থেমে যায়। সেই আলোর ছটা থেকে একটা ছয় ঘোড়ায় টানা একটা বাঁকা চাঁদ বেড়িয়ে আসে। ঘোড়া গুলো অধভুত সুন্দর দেখতে, সবার মাথার ওপরে একটা শিঙ। একটা সুন্দরী জলপরী ওই বাঁকা চাঁদের ওপরে বসে, ওর লম্বা ঘন কালো চুল হাওয়ায় উড়ছে। চুলের দু’গোছা কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে এসে জলপরীর উন্নত বুক দুটি ঢেকে রেখেছে। সেই উন্নত বক্ষের নিচে চোখ যায় অভির, সুন্দর নরম গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তাঁর নিচে ফুলে উঠেছে সুডৌল নিতম্ব। কোমরের নিচে পায়ের জায়গায় মাছের লেজ। কোমরের নিচে শরীরের নিম্নাগ সোনালি আর রুপলি রঙের মাছের আঁশে ঢাকা। ছয় ঘোড়া বাঁকা চাঁদ টিকে টেনে নিয়ে আঁশে অভির কাছে। জল পরীর মুখের দিকে লক্ষ্য করল অভি, এযে তাঁর প্রেমিকা পরীর মুখবয়াব। পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে, দু’হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দেয় আলিঙ্গনে আহ্বান জানায় অভিকে। কাজল কালো চোখ দুটি বড় বড় হীরের মতন জলজল করছে। হাসিতে গালে টোল পড়েছে। চুলের এক গোছা ওর বাঁ গালের ওপরে এসে পড়েছে, দেখে মনে হল যেন চাঁদ এক চিলতে মেঘের আড়ালে লুকচুরি খেলে বেড়াচ্ছে। অভি জলপরী, পরীর দিকে তাকিয়ে হাসল আর উঠে চলে গেল ওর দু’বাহুর মাঝে। অভিকে জড়িয়ে ধরল পরী, পরীর প্রেমের আলিঙ্গনে অভি হারিয়ে গেল।





দেবীকথা-অরুন্ধতি (#01)

অভির কলেজ ওর বাড়ি থেকে বেশি দুরে নয়। কলেজে সবার একটা ডাক নাম থাকে, অভির ডাক নাম "বিহারী", তার কারন অভি ওর পরাশুনার বেশির ভাগ সময় বিহারে কাটায়। দেওঘরে হস্টেলে থেকে অভি স্কুল আর হাইস্কুল পড়েছে।

অভির কলেজ পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়, প্রথম পিরিওড, অপ্টিক্সের, করতে পারেনা অভি। লাঞ্চ ব্রেকের পরে প্রাক্টিকাল ক্লাস। প্রাক্টিকাল ক্লাসে ঢুকে পরে অভি, বই খুলে একমনে পড়তে শুরু করে। এখনো কেউ আসেনি ক্লাসে। খোলা বইয়ের পাতায় পরীর চোখ আর হাসি দেখতে থাকে অভি। অভির গতকাল রাতের কথা মনে পরে যায়, কেমন জলপরীর মতন পরী ওর বাহুপাসে কাঁপছিল, আর অভি ওর কোমল শরীর টাকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে ছিল। বারেবারে নিজের গাল ঘষে অভি, যেখানে পরী গাল ঘষে দিয়েছিল।

এমন সময়ে ওর বাঁ বাহুতে টান পরে, "কিরে ওর নাম কি?"

অভির মুখ থেকে আপনা হতেই পরীর নাম বেড়িয়ে যায়, "পরী।"

নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে অভির ঘোর কাটে, মাথা ঘুরিয়ে দেখে ওর দিকে মিটিমিটি করে হাসছে ওর সব থেকে ভাল বান্ধবী, অরুন্ধতি, ওর প্রাক্টিকাল পারটনার আর ক্লাসের সব থেকে ভাল মেয়ে।

অরুন্ধতি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "শেষমেশ বিহারী প্রেমে পড়ল। হুম গাধা ছেলে!"

মৃদু ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "পরীর সাথে কত দিন থেকে প্রেম চলছে? আর আমাকে একবারও জানাস নি তুই?"

অরুন্ধতি ব্যানারজি, অভি ওকে মিষ্টি করে ডাকে অরুনা। অরুনা ওর হতবাক বোকা বোকা মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। অভি অনেক সযত্নে পরীর নাম বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু আজ ধরা পরে গেল ওর প্রিয় বান্ধবীর হাতে!

অভি মাথা নাড়ায়, "না না না, কে পরী, আমি কোন পরীকে চিনি না।"

মাথার পেছনে আলতো করে একটা থাপ্পর মারে আরুনা, "আমার কাছে মিথ্যে কথা বলছিস? তোর চোখ বলছে যে তুই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস আর তুই কিনা চিনিস না পরীকে?"

ধরা পড়ার পরেও অভি মানতে নারাজ, "না রে সত্যি বলছি আমি কোন পরীকে চিনি না।"

অরুনা, "মানতেই পারলাম না যে অভি প্রাক্টিকাল ক্লাসে এই রকম ভাবুক হয়ে বসে থাকতে পারে।"

শেষমেশ অভিকে স্বীকার করতে হয়, "আচ্ছা বাবা আমি তোকে প্রাক্টিকাল ক্লাসের পরে সব বলব।"

অরুনা মৃদু চিৎকার করে ওঠে, "না, আমি এখুনি সব শুনতে চাই।"

জামা ধরে টানতে শুরু করে অরুনা, "চল না ক্লাস বাঙ্ক করি।"

অভি, "মানে? আমি তোর জন্য শুধু প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছি আর তুই কিনা ক্লাস বাঙ্ক করার কথা বলছিস।"

অরুনা ওর জামা টেনে তুলে দেয়, "অহ, তুই আমার জন্যে যখন প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছিস তাহলে আমি তোকে যেখানে নিয়ে যাব সেখানে চল। আর সত্যি যদি তুই না যাস তাহলে কিন্তু আমি সত্যি রাগ করব।"

অগত্যা অভি দাঁড়িয়ে পরে, কিন্তু তাও অরুনা কে জিজ্ঞেস করে, "প্রাক্টিকালের কি হবে?"

অরুনা, "ধুর বাবা প্রাক্টিকাল নিয়ে চিন্তা করিস নাত। আমার বাড়িতে ব্রেড বোর্ড আর মাল্টিমিটার সব আছে। আমরা পরে করে নেব। তুই চল আমার সাথে, আমি আর তর সইছেনা।"

অরুনা অভির জামা টানতে টানতে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেল। ওদের দিকে বাকিরা তাকিয়ে, বিশেষ করে সুকোমল আর অনুসুয়া। 

পুবালি দৌড়ে অরুনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "এই তোরা কোথায় যাচ্ছিস রে? প্রাক্টিকাল ক্লাস করবিনা তোরা?"

অরুনা একবার অভির দিকে তাকিয়ে পুবালিকে উত্তর দিল, "না রে আমরা একটু বের হচ্ছি। আমি তোকে সবকিছু বাড়িতে গিয়ে বলব আর তুই ঠিক করে প্রাক্টিকাল ক্লাস টা করিস।"

কলেজ থেকে বেড়িয়ে অরুনা ওকে জিজ্ঞেস করল, "কি রে কোথায় যেতে চাস?"

অভি, "আর কোথায় যাব বল, চল কফি হাউসে গিয়ে বসি আর কি।" দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।

অরুন্ধতি ওর বাবা মার দ্বিতীয় সন্তান, দমদম এয়ারপোর্টের কাছে ওদের বাড়ি। অরুনার বাবা আর অভির বাবা দু’জনেই এয়ারপরট অথরিটি তে চাকরি করেন। অরুনাদের একান্নবর্তি পরিবার বাবা কাকা সবাই মিলে এক বিশাল বাড়িতে থাকে। পুবালি অরুনার খুরতুত বোন, একি বয়স। অরুনা বেশ মিষ্টি দেখতে, চোখে চশমা আর চোখ দুটো যেন সবসময়ে কথা বলে। খুব চঞ্চল আর হসিখুসি প্রকৃতির মেয়ে অরুনা কোন সময়ে বুকের ভেতরে কন কথা লুকিয়ে রাখে না, যা মনে আসে তাই লোককে বলে দেয়। এই জন্যে যেমন ওর বন্ধুর সংখ্যা বেশি তেমনি শত্রুর সংখ্যাও বেশি। পুবালি ঠিক উল্টো প্রকৃতির মেয়ে, খুব চুপচাপ আর সংযত একটু লাজুক। কারুর সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না। সারাদিনে হয়ত দুটো কি তিনটে কথা বলে অন্যদের সাথে। 

হাঁটতে হাঁটতে ওরা শিয়ালদা পৌঁছে গেল। অরুনা অর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল, "কিরে গাধা, চুপ করে কেন আমি তোর পরীর কথা সব শুনতে চাই, যদি তুই চুপ করে থাকিস তাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোক জড় করে বলব যে এই ছেলেটা আমার সাথে অপব্যাবহার করছে।"

অভি ওর দিকে মিনতির সুরে বলল, "প্লিস ওই রকম করিস না, আমি তোকে সব বলছি।"

অভি ওর গল্প শুরু করল, কি করে পরীর সাথে সুব্রতর বিয়েতে দেখা হয়েছিল, কপালে প্রথম চুম্বনের কথা, পরী আর ওর সম্পর্কের কথা। মায়ের সাথে পরীর সম্পর্কের কথা। ওকে জানাল যে পরী কিছুদিন পরে ওদের বাড়িতে থাকতে আসছে। 

সব শুনে অরুনা আঁতকে ওঠে, "বলিস কি রে? তিন মাস ধরে তোদের প্রেম চলছে আর আমি কিছু জানি না। শয়তান ছেলে কেন তুই এত কথা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলিস বলত। কুত্তা, শূয়র..."

মাঝ রাস্তায় অরুনা অভিকে মারতে শুরু করে। 

রাজাবাজার থেকে বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে ওরা শিয়ালদা স্টেসানের দিকে হাঁটতে শুরু করে। সামনে ফুচকা ওয়ালা দাঁড়িয়ে, টাকে দেখে অরুনা ওকে জিজ্ঞেস করে যে ফুচকা খাবে কিনা। অভি মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ"

অরুনা, "ঠিক আছে বাকি গল্প কফি হাউসে গিয়ে সুনব।"

অরুনার সারা মুখে একটা দুষ্টু মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে থাকে। অভিকে একটু আনমনা দেখে জিজ্ঞেস করে, "আজ কি প্রব্লেম তোর যে তুই এত আনমনা?"

অভি, "কাল পরী আমার বাড়িতে এসেছে।"

অরুনা, "তুই একটা বড় কুত্তা। পরীকে ছেড়ে তুই প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছিস? যাই হক তুই না এলে আমি ত জানতেও পারতাম না তাই না।"

তারপরে ওর দিকে প্রশ্নের জাল ছুঁড়ে দেয় অরুনা, "আচ্ছা, পরীকে দেখতে সুন্দরী? কি পড়াশুনা করেছে? তুই কবে ওর সাথে আমার দেখা করাবি?"

অভি ওর মাথায় চাঁটি মেরে উত্তর দেয়, "আরে বাবা দাঁড়া দাঁড়া। বাসন্তি পুজোর পরে পরী যখন আমার বাড়িতে থাকতে আসবে তখন তোর সাথে দেখা করাব, চিন্তা নেই তোর।"

তর্জনী উচিয়ে বলে অরুনা, "কথা দিচ্ছিস?"

অভি, "হ্যাঁ বাবা কথা দিচ্ছি, তোকে না দেখিয়ে আমি কোথায় যাব রে।"

ওরা ফুচকা খাওয়ার পরে আবার হাঁটতে শুরু করে, ফ্লাইঅভার পার করে কলেজ স্ট্রিটের দিকে চলতে থাকে। 

অরুনা, "তাহলে বিহারী শেষ পর্যন্ত প্রেমে পড়ল।" খিলখিল করে হেসে বলে, "আমি এক সময়ে ভাবতাম তোর কপালে কোন মেয়ে জুটবে না। তোর যা তিরখি মেজাজ আর যা মুখ।"

"তিরিক্ষি মেজাজ, হ্যাঁ তা বটে" ম্লান হাসি হেসে অরুনা কে বলল, "এই মেজাজ আমাকে আমার চার পাশের পৃথিবী দিয়েছে রে।"

অরুনা দেখল অভি আবার ভাবুক হয়ে উঠেছে, "এই ছেলে, অসব কথা ছাড়। তোর চোখে জল দেখলে আমার খুব কান্না পায়। তোর মুখে হাসি দেখে আমি সত্যি খুব খুশি। আমি সত্যি পরীর সাথে দেখা করে ওকে অনেক বড় ধন্যবাদ জানাব যে তোর মুখে আবার হাসি ফুটিয়ে তুলেছে।"

অভি, "এই সমুদ্রনীল কে ডেকে নেব কফি হাওসে?"

সমুদ্রনীল, অরুনার বন্ধু, অরুনার প্রেম। কোলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স করছে। গত বছর অক্টবরে ওদের দেখা হয় কোন কলেজ অনুষ্ঠানে আর তারপর থেকে প্রেম। সমুদ্রনীল বেশ ভাল ছেলে। যেদিন সমুদ্রনীল অরুনাকে প্রোপস করে, সেদিন অভি সমুদ্রনীল কে বলেছিল যে যদি কোন দিন অরুনার চোখে জল দেখে তাহলে ও সমুদ্র কে আস্ত রাখবে না, কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে ওকে।

ওরা দু’জনে কফি হাউসের দিকে হাঁটতে থাকে। অভির মনে পুরান স্মৃতি জেগে ওঠে, অরুন্ধতির স্মৃতি আর ওর নিজের জীবনের কথা। কলেজে দেরিতে ঢোকে অভিমন্যু তাই বাকিদের চেয়ে ও বছর দুই বড়। ছোটো বেলায় হস্টেলে মানুষ, স্কুলের পড়াশুনা ও দেওঘরের এক স্কুল থেকে পড়ছে। ক্লাস ইলেভেনে একবার ফেল করে আর এক বছর নষ্ট হয় জয়েন্ট আই.আই.টি পরীক্ষা দেবার প্রস্তুতি নেবার সময়ে। বাবা মায়ের খুব চাপ ছিল যে ছেলে কে ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। সবসময়ে অভিকে কথা শুনাত যে যেহেতু ওর পরাশুনার পেছনে বাবা মা অনেক টাকা খরচ করছে তাই ওকে জয়েন্ট পেতেই হবে, ভালো রেসাল্ট করতেই হবে। ছোটো বেলা থেকে অভিমন্যুর খুব শখ ছিল যে বড় হয়ে ও একজন নামী চিত্রকার হবে। ক্লাস টেন পাশ করার পরে ও শান্তিনিকেতনে পড়তে চেয়েছিল, কিন্তু বাবা মা বাধ সেধে ছিলেন। বলেছিলেন যে এত পয়সা ওরা অভির পেছনে খরচ করেছে শুধু ওকে চিত্রকর বানানোর জন্য নয়, ওকে জয়েন্ট পেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য। বহু রাত কেটে গেছে, বাবা মায়ের সাথে ঝগড়া করে অভি রাতে ঘুমায়নি। ক্লাস ইলেভেনে ওকে একরকম জোর করে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হয়েছে, যেটা ওর বিশেষ ইচ্ছে ছিল না। টুয়েলভ পাশ করার পরে অভি আই.আই.টি আর আই.এস.এম এ পায় কিন্তু অভির মাথায় রোখ চেপে যায় যে ও ইনঞ্জিনিয়ার হবে না। অনেক লড়াই যুদ্ধ করার পরে ও শেষমেশ ফিসিক্স নিয়ে কলকাতার এক কলেজে ভর্তি হয়।

আড়াই বছর আগে অভি যখন কলেজে পড়তে আসে, তখন কোলকাতা শহর ওর কাছে এক নতুন জায়গা। হ্যাঁ কোলকাতায় জন্ম ওর হয়েছিল কিন্তু পড়াশুনার জন্য ওকে বাইরে থাকতে হয়েছিল। প্রথম প্রথম ওর কলকাতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে একটু অসুবিধে হয়েছিল। কথাবার্তা বলার ঢঙ্গে বেশি হিন্দি আর ইংরাজি শব্দ বের হত, যার জন্য ওর ক্লাসের বাকিরা ওকে বাইরের মানুষ বলে গন্য করত। বন্ধু বলতে কম ছিল, বিশেষ কোন দরকার না থাকলে কেউ ওর সাথে কথা বলত না বা অভিও কারুর সাথে বিশেষ কথা বলত না। 

কলেজে দেখা হয় অনুশুয়া চ্যাটার্জি, এক সুন্দরী মেয়ে খুব ভাল নাচত অনুশুয়া। নাচ সেখার জন্য অনুশুয়ার শরীরের গঠন বেশ পাতলা আর দেখতে ভারী মিষ্টি লাগত। অভি অনুশুয়ার রুপ দেখে ওর প্রেমে পড়ে যায়। ওদের দুজনার মধ্যে বন্ধুত গড়ে ওঠে। অভি অনুশুয়াকে ওর জীবনের অনেক কথা বলে, ওর হেরে যাওয়ার কথা, মনের ব্যাথা, সব কিছু বলে আর সেটাই সে জীবনের সব থেকে বড় ভুল করে ফেলে একজন কে বিশ্বাস করে মনের কথা বলার। সুন্দরী অনুশুয়াকে ওর পাশে দেখে অনেকে বন্ধুতের হাত বাড়িয়ে দেয় অভির দিকে। কলেজের প্রথম বছরের ডিসেম্বরে অভি অনুশুয়াকে প্রোপোস করে, কিন্তু অনুশুয়া ওকে প্রত্যাখান করে দেয়, কারন বলে যে ও হেরে যাওয়া মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না, ও ভীতু তাই আই.এস.এম পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে। আরও জানায় যে ওর কথাবার্তা বাঙ্গালীর মতন নয় তাই ওদের সম্পর্ক বন্ধুতের বেশি কিছু হতে পারে না। ভেঙ্গে পরে অভি, আবার একা এই চেনা মুখের ভিড়ে, নিজেকে আর খুঁজতে চেষ্টা করে না। পেছনের বেঞ্চে বসে থাকত অভি আর ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে থাকত অনুশুয়ার দিকে।

অরুন্ধতি আর পুবালি খুব অধ্যয়নশীল আর বুদ্ধিমতী, তাদের অনেক বন্ধু বান্ধবী ছিল। আর অরুন্ধতি যেহেতু খুব হাসিখুশি মেয়ে তাই ওর চারপাশে অনেক লোকেরা জড় হয়ে থাকত। অনুশুয়া অভির কথা ক্লাসে বলে বেড়ায়, অভিকে সবার সামনে নিচে নামিয়ে দেয়। অভিমন্যু খুব অসহায় বোধ করে, পাশে কোন বন্ধু না থাকার জন্য।অভি অনুশুয়াকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে ওর জন্ম কোলকাতায় কিন্তু পড়াশুনার জন্য বাইরে থাকতে থাকতে ওর কথাবার্তার শুর বদলে গেছে। অনুশুয়া মানল না আর, বলল যে হেরে যাওয়া মানুষের সাথে ও কোনরকমের সম্পর্ক রাক্তে চায় না। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয় অভি। কিছুদিন পরে ওই অনুশুয়া ওর ক্লাসের এক বন্ধু সুকোমলের সাথে ঘুরে বেড়ায় হতে পারে অভিকে ঈর্ষার বাণে জর্জরিত করার জন্য। অভি প্রথম প্রথম ঈর্ষান্বিত হয়, কিন্তু পরে মন কে প্রবোধ দেয় যে অনুশুয়ার মতন সুবিধাবাদী মেয়ে ওর জন্য নয়। ধিরে ধিরে স্বাভাবিক হয়ে যায় সবকিছু কিন্তু অনুশুয়ার সাথে ওর সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয় না।





দেবীকথা-অরুন্ধতি (#02)

কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ, সেপ্টেম্বরের একদিন। লাঞ্চের সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে, ক্লাসে অরুন্ধতি আর পুবালি বসে আছে। অভি ওদের অনেক পেছনে বসে একটা বাংলা উপন্যাস পড়ছে। হটাত করে সবাই চুপ, একটা কান্নার মতন গোঙানি আওয়াজ গেল অভির কানে। অভি বই থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে যে অরুন্ধতি পুবালির পিঠে হাত বোলাচ্ছে আর পুবালি মাথা নিচু করে কাঁদছে। পুবালির নাক থেকে অসম্ভব রকমের রক্ত বের হচ্ছে। পুবালি যন্ত্রনায় ককিয়ে উঠছে বারে বারে আসে পাশের ছেলেরা শুধু দেখা ছাড়া আর নির্দেশ দেওয়া ছাড়া কিছু করছে না। সত্যি বাঙ্গালীর রক্ত, মাথা গরম হয়ে গেল অভির। অভি দৌড়ে যায় অরুন্ধুতির কাছে, গিয়ে জিজ্ঞেস করে যে পুবালির কি হয়েছে। অরুন্ধুতি ওর দিকে চোখে জল নিয়ে তাকায়। পুবালির মাথা উঁচু করে ধরে অভি, গায়ের জামা খুলে চেপে ধরে পুবালির নাক। বাকিদের চিৎকার করে একটা এম্বুলেন্স ডাকতে বলে। পুবালি কে পাজা কোলা করে হাতের মধ্যে তুলে নেয় অভি, জামা আর গেঞ্জি রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পুবালি ওর কোলে অজ্ঞান হয়ে যায়। অরুন্ধতির চোখে জল, পুবালির মাথাটা কোনরকমে ধরে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এম্বুলেন্স এসে পৌছয়, অভি ওদের কে নিয়ে এম্বুলেন্সে উঠে হস্পিটাল নিয়ে যায়। সবার মুখে এক কথা যে কি হয়েছে পুবালির, ওদের দিকে তাকিয়ে অভি বলে যে পুবালির বাড়িতে খবর দিতে।

হস্পিটালে গিয়ে জানা যায় যে পুবালির নাকের আর কপালের মাঝে একটা ছোট্ট টিউমার আছে আর সেটা ফেটে গিয়ে রক্ত বেড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পুবালিকে অপারেসান থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অরুন্ধতি আর অভি উৎকণ্ঠায় অপারেসান থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। অরুন্ধুতি সমানে কাঁদতে থাকে, অভির কাছে ওকে সান্তনা দেবার মতন কোন ভাষা থাকে না। মনে মনে অভি কলেজের বন্ধুদের মুন্ডপাত করে যাচ্ছিল, কেউ একবারের জন্য এগিয়ে এসে পুবালিকে হস্পিটাল নিয়ে যাবার কথা ভাবেনি, তাঁর চেয়ে কিনা জ্ঞান দিতে ব্যাস্ত ছিল সবাই। অরুন্ধতিকে একটা চেয়ারে বসিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অভি, ওর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে শান্তনা দেবার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণের মধ্যে ওদের কলেজের বন্ধুরা হসপিটাল পৌঁছে যায়, সাথে সাথে পুবালির বাবা মা ও হস্পিটাল পৌঁছে যায়। কলেজের সবাই ওদের কে জিজ্ঞেস করে যে পুবালির কি হয়েছিল, অরুন্ধতি সবার দিকে একটু রেগে তাকিয়ে থাকে তারপরে কাকু কাকিমা কে সব কথা বলে। অভি খালি গেঞ্জি পরে বসে, গেঞ্জির বেশির ভাগ রক্তে ভিজে গেছে। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে অভির, ছেলেরা ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে যে পুবালির কি হয়েছে। অভি উত্তরে জানায় সব ঘটনা।

অপারেসান থিয়েটারের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে, কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এসে জানায় যে, পুবালি বর্তমানে বিপদমুক্ত, কিছু দেরি হলে হয়ত টিউমারের রক্ত ওর মাথার ভেতরে চলে যেত আর মাথার শিরা উপশিরা গুলোকে খতিগ্রস্থ করে দিত। পুবালির বাবা মা আর অরুন্ধতির বাবা মা অভির দিকে কৃতজ্ঞ ভরা চোখে তাকায়। অরুন্ধতি দৌড়ে এসে অভিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। সেই কান্না বেদনার কান্না ছিল না, সেই কান্না কৃতজ্ঞতার কান্না ছিল, যেহেতু অভি ওর প্রানের বোন পুবালিকে আবার ওর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তাই। অভির মনে হল বিগত চোদ্দ বছরে কেউ ওকে ভালবাসায় বা কৃতজ্ঞতায় ওই রকম ভাবে জড়িয়ে ধরেনি। সারা জীবন ধরে বাবা মার কাছে ধিক্কার শুনে গেছে যে ও জীবনে কিছু করতে পারল না। অভির চোখে জল এসে যায়। অরুন্ধতির বাবা ওকে বাড়িতে আসতে বলে কিন্তু অভি ওদের জানায় যে অন্য কোনদিন ওদের বাড়িতে আসবে সেদিন আর যায় না। খুব ক্লান্ত লাগছিল অভির। অরুন্ধতির বাবা ওকে একটা টিশার্ট কিনে দেয়, কেননা তখন পর্যন্ত অভির গায়ে রক্ত মাখা গেঞ্জি ছিল।

হসপিটাল থেকে অভি মাথা উঁচু করে বেড়িয়ে এল, মনে হল যেন জীবনে খুব বড় কাজ করেছে, ও আর সেই ভীতু হেরে যাওয়া অভি নয়। সেই প্রথম বার অভির মনে হল যে ওর চারপাশের পৃথিবী টা কত অন্ধকার ময় আর কত সুবিধাবাদী মানুষে ভরা। বাকি কলেজের বন্ধুরাও ওর পেছন পেছন হস্পিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে। অভিকে ডাকে কফি হাউসে যাবার জন্য। অভি ওদের মানা করে দেয়। অভি হটাত করে দেখে যে অনুশুয়া ওর দিকে দৌড়ে আসছে আর হাতের ইশারায় ওকে দাঁড়াতে বলছে। অভি ওর দিকে তাকায় মাথা নাড়িয়ে ওকে ক্ষমা করে দেবার ইশারা করে, সামনে যে বাস আসে তাতে অভি উঠে পরে। একসময়ে অভির চোখে যে হেরে যাওয়ার চাহনি ছিল সেটা ও অনুশুয়ার চোখে দেখতে পায়। ভগবানকে মাথা তুলে ধন্যবাদ জানায় অভি, তিনি যা করেন সবার ভালোর জন্য করেন।

তারপরে বেশ কিছুদিন অরুন্ধতি আর পুবালি কলেজে আসেনা, অভির ও আর ওদের বাড়ি যাওয়া হয় না কেননা ও চেনেনা ওদের বাড়ি বা ওর কাছে অরুন্ধুতির ফোন নাম্বার ও নেই যে ফোন করে পুবালির খবর জেনে নেবে। এমন একদিনে, অভি চুপ করে ক্লাসে বসে। অরুন্ধতি ক্লাসে ঢোকে, সবার চোখ অরুন্ধতির দিকে চলে যায়, সবার মুখে এক প্রশ্ন পুবালি কেমন আছে। অরুন্ধতি বিরক্তি ভরা চোখে সবার দিকে তাকায়, যেন বলতে চায় যে তোদের জানা কোন অধিকার নেই। 

অভির দিকে হেঁটে এসে কাঁধ নাড়িয়ে বলে, "এই বিহারী, আমার সাথে চল।"

অভি ওকে জিজ্ঞেস করে, "কোথায়।"

অরুন্ধুতি, "বাবা তোকে বাড়িতে ডেকেছে।"

এই বলে ওর জামা ধরে টানতে টানতে ক্লাস থেকে বের করে নিয়ে আসে।

অরুন্ধতির বাড়ি যাবার পথে অভি পুবালির কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে পুবালি এখন ভালো আছে আর গতকাল বিকেলেই হস্পিটাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে এসেছে। তাই ও অভিকে বাড়ি নিয়ে যেতে কলেজে এসেছে। অভি ওকে জিজ্ঞেস করে যে ও ওকে ফোন কেন করেনি।

অরুন্ধতি জবাবে বলে, "আমার কাছে ত তোর ফোন নাম্বার নেই।"

অভি, "তুই কোনদিন চাসনি।"

অরুন্ধতি, "জীবনের এই প্রথম আমি সব থেকে বড় ভুল করেছি।"

অভি, "কি ভুল?"

অরুন্ধুতি, "মানুষ চিনতে ভুল করেছি, বন্ধু চিনতে ভুল করেছি।"

অভি, "ধুর বোকা, সবাই কিছু না কিছু ভুল করে ফেলে, ছাড় অসব কথা।"

অরুন্ধুতি কিছু পরে ওকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে তোর বাবার নাম কি অর্জুন তালুকদার?"

অভি চমকে যায়, "হ্যাঁ কিন্তু তুই কি করে জানলি?"

অরুন্ধুতি, "আমি এইটুকু জানতাম যে কাকু এয়ারপোর্ট অথরিটি তে চাকরি করেন আর আমার বাবাও করেন। আমার বাবা যখন তোর নামধাম আমাকে জিজ্ঞেস করল তখন আমি বললাম যে আমি তো কাকুর নাম জানিনা। বাবা আমকে তোর কাছে কাকুর নাম জিজ্ঞেস করতে বলেছে।"

অভি, "হুম... আচ্ছা তোর বাবা মানে ব্যানারজি কাকু। ওকে এবারে বুঝেছি।"

দিন যায় ওদের বন্ধুত প্রগাঢ় হয়ে ওঠে। ক্লাস ফাকি দিয়ে কলেজ স্ট্রিটে ঘোরা, গ্লোবে সিনেমা দেখা, এস্প্লানেড বা পার্ক স্ট্রিটে কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়া বা নন্দনে আড্ডা মারা। পুবালি খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে তাই বেশির ভাগ দিন ওরা দু’জনে ঘুরে বেড়াত এদিক সেদিক। কোলকাতায় অভি নতুন, অরুন্ধতি ওর গাইডের কাজ করত যেন। কলেজের বাকিরা ওদের এই বন্ধুত্ত টাকে অন্য চোখে দেখে, সবার মুখে এক কথা, অরুন্ধতি অভির প্রেমে পড়েছে আর সেই কথা ওদের কানে আসে, ওরা দু’জনে খুব উপভোগ করে বাকিদের সংশয়। কেউ ভাবতে পারে না যে একটা ছেলের আর একটা মেয়ের মধ্যে প্রেম প্রীতির থেকেও ভালবাসা এক অন্য ধরনের হতে পারে, বন্ধুত্তের ভালবাসা থাকতে পারে। 

অভির বাবা যেহেতু অরুন্ধতির বাবার অফিস কলিগ তাই ওদের বাড়িতে অভির যেতে কোন বাধা থাকেনা। অভির বাবা মা আর অরুন্ধতির বাবা মায়ের মধ্যেও সেই একি ধারনা জাগে যে অভি অরুন্ধতিকে ভালবাসে আর ওর মায়ের কোন বাধা থাকে না অরুন্ধতিকে বউমা করে ঘরে আনতে। অভি আর অরুন্ধতি দু’জনে ওদের চারদিকের ভুল ধারনা টাকে খুব উপভোগ করে আর হাসে।

পুবালি আর অরুন্ধুতি সবসময়ে অভিকে অনুশুয়ার কাছ থেকে আগলে রাখত, কিছুতেই অনুশুয়াকে অভির কাছে আসতে দিত না। একদিন ওরা তিনজনে মিলে পার্ক স্ত্রিটের ফ্লুরিসে বসে খাচ্ছিল তখন পুবালি অরুন্ধতিকে বলে, "জানিস, কাল অনুশুয়া তোর কথা আর অভিমন্যুর মাঝের সম্পর্কের কথা জিজ্ঞেস করছিল।"

ওরা দু’জনে হেসে উঠে জিজ্ঞেস করে যে পুবালি কি উত্তর দিয়েছে। 

পুবালি, "আমি বলেছি যে তোরা খুব ভাল বন্ধু ব্যাস আর কিছু না।"

অরুন্ধতি পুবালিকে আলতো করে চাঁটি মেরে বলে, "বোকা মেয়ে ওকে বলবি ত যে আমরা প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। ধুত বোকা, এখন আবার অনুশুয়া ওর পেছন পেছন আসতে চাইবে।"

অরুন্ধতি অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "মাগি টার পেছনে আর গেছিস ত আমি তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে দেব।"

হেসে ওঠে অভি, মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ন্যাড়া বেলতলায় একবার যায়। 

ঠিক দুর্গাপুজার আগে, অরুনা আর অভি আউট্ট্রাম ঘাটের, স্কুপে বসে গল্প করতে থাকে। দুজনে আইস ক্রিম খেতে খেতে সামনের কাঁচের জানালা দিয়ে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় আলোকিত লাল নদীর জল দেখতে দেখতে হারিয়ে যায়। অভি একমনে অরুনার দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই প্রথম বার অভির মনে হয় যে অরুনা ওর কত কাছের মানুষ। অরুনার চোখ দুটি খুশিতে চকচক করছে যেন। খুব বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে অভি অরুনার কাঁধে হাত রাখে।

অরুনা অভির হাতের স্পর্শে আইসক্রিম খাওয়া থামিয়ে অভির মুখের দিকে তাকায়, চোখের চাহনি দেখে অভির মনের ভাব বুঝতে পারে অরুনা, কিন্তু তাও জিজ্ঞেস করে, "কিরে আমার দিকে ওই রকম ভাবে দেখছিস কেন রে?"

হাত সরিয়ে নেয় অভি, হেসে ফেলে, "কিছু না এমনি।"

গভীর ভাবে অভির দুচোখের দিকে তাকায় অরুনা, "আমার কাছে থেকে কিছু লুকাতে পারবি না রে। তুই চুপ থাকলে কি হবে তোর চোখ দুটো যে অনেক কথা বলে।"

অভি ওকে হেসে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা তাহলে তুই বল আমার চোখ কি বলছে?"

অরুনা ওর গাল টিপে বলে, "তুই যা ভাবছিস আমিও সেটাই ভাবছি।"

অভি ওর দু’হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। অরুনা বলতে থাকে, "আমি চাই না আমাদের সম্পর্ক একটা বাঁধনের জোরে নষ্ট হক। বহু দিন পরে আমাদের মনে হবে যে আমাদের কোন বন্ধু হত যাকে আমরা আমাদের মনের কথা বলতে পারি, যেগুলো হয়ত আমরা আমাদের সাথি কে বলতে পারব না সেগুল আমরা এঁকে অপরকে বলব। আমি আমার সব থেকে ভাল বন্ধুকে হারাতে চাই না অভিমন্যু।"

এইসব ভাবতে ভাবতে ওরা কফি হাউসে পৌঁছে যায়। অরুনা ওর বাজুতে চাঁটি মেরে বলে, "কিরে সারা রাস্তা এত চুপ মেরে গেলি কেন? তুই কি পরীর খেয়ালে আবার হারিয়ে গেলি নাকি?"

অভি মাথা চুলকে বলে, "নারে, আমি ত তওর কথা আর আমাদের বন্ধুত্তের কথা ভাবছিলাম।"

অরুনা ওকে আলতো করে থাপ্পর মেরে বলে, "আহা, ছেলের ভাব দেখ, ভেতরে যেন টালা ট্যাঙ্ক ভরে উঠেছে। হ্যাঁ রে তোর পরীর কথা আমাকে বলতে হবে সেটা মনে থাকে যেন নাহলে কিন্তু আমি তোকে ছিঁড়ে খাবো। যাই হক পরীর ভাল নাম কি?"

অভি, "শুচিস্মিতা মন্ডল।"

অরুনা, "শুচিস্মিতা, মানে যার হাসি শুদ্ধ, বাহ রে নিশ্চয় পরীর হাসি খুব সুন্দর হবে।"

লাজুক হেসে অভি উত্তর দেয়, "হ্যাঁ রে পরীর হাসি খুব মিষ্টি। ও যখন হাসে তখন দু’গালে টোল পরে আর হাসিটা যেন আরও বেশি মিষ্টি হয়ে যায়।" অভি যেন ওর চোখের সামনে পরীর হাসি মাখা মুখ দেখতে পায়। 

কফিহাউসে বসে অভি পরীর গল্প শুরু করে, কি করে অভি ওকে নিয়ে হিমাচলে ঘুরে এসেছে। সব শুনে অরুনা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির দিকে, বাবা ছেলের কি সাহস। 

অরুনা কফির কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "ত অসুবিধে টা কোথায়?"

অভি মাথা নাড়ে, "আমাদের মধ্যে ত কোন অসুবিধে নেই।"

অরুনা, "ধুর বোকা ছেলে, আমি জানি যে তোদের মধ্যে কোন অসুবিধে নেই, কিন্তু তোর মনের ভেতরে একটা গভীর সংশয় বা ভয় দানা বাধছে তাই না।"

অভি অবাক হয়ে অরুনার দিকে তাকিয়ে বলে, "তুই জানলি কি করে।"

অরুনা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "আমি তোকে তোর চেয়ে বেশি জানি বুঝলি রে। তুই ভাবছিস যে কাকু কাকিমা তোদের সম্পর্ক মেনে নেবে না, কেননা পরী তোর চেয়ে দু’বছরের বড় আর কাকিমার সাথে পরীর সম্পর্ক। কাকিমা কে বুঝাতে অনেক কষ্ট হবে কেননা কাকিমা খুব কড়া প্রকৃতির মহিলা।"

অসহায় ভাবে অভি ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, "আমি জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি। এই নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাকে অনেক কঠিন করে দিয়েছে। পরীকে পাওয়ার জন্য আমি আকাশ পাতাল এক করে দেব।"

অরুনা, "অত শত ভাবিস না। আমি কাকু কাকিমা কে বুঝাতে আপ্রান চেষ্টা করব। তুই শুধু বসে কফি খা কুত্তা।"

অভি অরুনার হাসি মুখ দেখতে থাকে, অরুন্ধুতি ওর কাছে যেন দেবী প্রতিমা, ওর সব থেকে ভাল বন্ধু। জীবনের কিছুর বিনিময়ে ও অরুনার হসি মুখ হারাতে চায় না।






কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment