আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
পাপ কাম ভালোবাসা
Written By pinuram
Written By pinuram
ত্রয়োবিংশ পর্ব (#01)
গোয়া থেকে ফিরে আসার পরে দেবায়ন আর অনুপমা নিজেদের ডুবিয়ে নেয় কম্পিউটার ক্লাসে, কলেজের পড়াশুনায়। দেবশ্রীর কড়া তত্বাবধনে কোন কিছু ফাঁকি দেওয়ার অবকাশ পায় না দেবায়ন। মে মাসের শেষে বি.এস.সি ফাইনাল পরীক্ষা হবার কথা ছিল, পরীক্ষার দিন পিছিয়ে যায় জুলাই মাসে।
অনুপমা আর পারমিতার তত্তাবধনে, পায়েল সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। পায়েল নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে চাইলে, অনুপমা বারন করে দেয়। পারমিতা বলে যে একা একা অত বড় বাড়িতে থাকা ঠিক নয় আর যখন মিস্টার সেন আর পারমিতা, অঙ্কন আর পায়েলের সম্পর্ক মেন নিয়েছেন তখন একটু আগেই না হয় ওর বাড়িতে চলে এসেছে। এতদিন কলেজ আর পড়াশুনা থেকে দুরে থাকার ফলে, পায়েল ঠিক করে যে পরের বছর পরীক্ষা দেবে। পায়েলের স্বভাবে আমূল পরিবর্তন হয়। চঞ্চলা মৌমাছির মতন পায়েল, যে এক সময়ে উড়তে ভালবাসত, নেচে হেসে জীবনকে উপভোগ করার স্বপ্ন দেখতে ভালবাসত। মা মারা যাবার পরে আর বাবার কারাদন্ডের পরে আমূল বদলে যায়। প্রচন্ড রকমের শান্ত আর লাজুক হয়ে যায়। অনুপমা, পারমিতা, অঙ্কন আর দেয়াবায়ন ছাড়া কারুর সাথে বিশেষ কথা বলে না। কোন বন্ধু বান্ধবী ওর সাথে দেখা করতে এলেও খুব চুপচাপ থাকে। অঙ্কন ভালো মার্কসে ক্লাস টুয়েল্ভে ওঠে।
পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসির বিরুদ্ধে পায়েলের মাকে খুন করার মামলা চলে। মামলা চলাকালীন বেশ কয়েকবার পায়েলকে নিয়ে দেবায়ন আর রূপককে কোর্টের চক্কর কাটতে হয়েছিল। দেবায়ন ইচ্ছে করে বাকি সবাইকে এর থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছিল। সবাই ওদের সাথে কোর্টে এসেছিল বটে। মিস্টার সেন, কোলকাতার সব থেকে বড় ক্রিমিনাল উকিল নিযুক্ত করেন পায়েলের বাবা আর পিসির বিরুদ্ধে। নিরঞ্জন বাবু আর কোলকাতা ক্রাইম ব্রাঞ্চ, আদালতে সব তথ্য প্রমান দেন। কোর্টে বাবাকে দেখে পায়েল ডুকরে কেঁদে ওঠে। ওকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়। আইন তাদের যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত করে।
অনুপমা আগে থেকে শ্রেয়াকে কোম্পানির ব্যাপারে কিছু আভাস দিয়ে রেখেছিল। শ্রেয়া আর রূপককে অনুপমা বলেছিল যে ওদের পরীক্ষা শেষ হলে বিস্তারিত ভাবে এই ব্যাপারে কথা বলবে।
জুলাইয়ের বৃষ্টি মাঝে ওদের পরীক্ষা শেষ। যেদিন পরীক্ষা শেষ হয় সেদিন সকাল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি। সব বন্ধু বান্ধবীরা পরীক্ষা দিয়ে বেড়িয়ে হাঁফ ছেড়ে ওঠে।
শর্বরী বৃষ্টির মাঝে একটু নেচে ভিজে বলে, “সেই কে.জি থেকে বই পড়া শুরু, এবারে আমি আর বই খাতার মুখ দেখব না।”
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “তাহলে কি করবি?”
শর্বরী, “হাতে অঢেল সময়, এবারে একটা চুটিয়ে প্রেম করব।”
সবাই হেসে ফেলে। মনিষ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল, শর্বরীর গায়ে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে, “লাইনে আছি একটু দেখিস।”
আবার হাসির কল্লোল ফেটে পরে বন্ধুদের মধ্যে। সমুদ্র এককোনায় দাঁড়িয়ে তনিমার দিকে তাকিয়ে ছিল। একবছর আগের, দেবায়নের বাড়ির পার্টির কথা মাথায় ঘুরছিল ওর। তনিমা বুঝতে পারে যে সমুদ্র ওর দিকে তাকিয়ে আছে, তাও বাঁকা হেসে বলে, “তোর কিছু হবে না।”
সমুদ্র, “আমি কি বলেছি কিছু হতে? আমি শুধু চান্সের অপেক্ষায়।”
শ্রেয়া, “সে গুড়ে বালি। এবারে বাল ছিঁড়ে আঁঠি বাঁধিস রাতে আর সকালে সেই গুলো খুলে আবার ঠিক জায়গায় বেঁধে নিস।”
শ্রেয়ার কথা শুনে সমুদ্র বলে, “নিজের কাজ হয়ে গেছে তাই বেশ ফুর্তিতে আছিস তাই না। বেগুন শশার দরকার পরে না তোর। আমার অবস্থা ভাব ত। দ্যাখ শালা প্রবালকে, কি কপাল করে এসেছিল।”
সঙ্গীতা প্রবালের হাত খানা মুঠির মধ্যে ধরে দাঁড়িয়েছিল। সবার চোখ প্রবালের দিকে চলে যায়। প্রবাল বলে, “আমার দিকে হাঁ করে দেখছিস কেন তোরা?”
দেবায়ন, “তোদের কি কিছু হল, না ওই হাত ধরা পর্যন্ত এগিয়েছিস। এর পরে দুটি সূর্যমুখি ফুলকে চুমু খাইয়ে বলে দিবি আমাদের প্রেম হয়ে গেছে।”
ধিমান, “না না, সূর্যমুখি নয় রে আমি ওদের বড় এক প্যাকেট ফ্লেভারড কন্ডমের ব্যাবস্থা করেছি। বাল যদি না করে তাহলে ওর বিয়েতে কনডমের বেলুন উপহার দেব।”
সঙ্গীতার কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়। প্রবালের পেছনে পারলে মুখ লুকিয়ে ফেলে। অনুপমা ওকে বলে, “সখীর লজ্জা দেখো। কি রে তোদের কি কামসুত্র দিতে হবে না লাইভ দেখবি বল?”
শ্রেয়া হেসে ফেলে, “মাল্টুস কে সেদিন রাতে রেখে দিলে হত। বড় হয়ে যেত ছেলে মেয়ে দুটো। দ্যাখ দ্যাখ, প্রবাল এইবারে মাটির মধ্যে ঢুকে যাবে।”
প্রবাল বিরক্ত হয়ে বলে, “এই তোরা থামবি?”
দেবায়ন, “কি করেছি যে থামব? তোর বউকে কোলে করেছি, তোর নুনু ধরে টান মেরেছি?”
মৃগাঙ্ক সঙ্গীতার মাথায় চাটি মেরে বলে, “তুই সেই রাতে কি এমন চিকেন পকোড়া বানিয়েছিল রে?”
সঙ্গীতা, “কেন, তুই খাস নি সেই রাতে?”
মৃগাঙ্ক, “খেয়ে আমি ত উলটে পড়েছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল হাত মারার কিন্তু প্রবাল কি স্পেশাল দিল সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।”
সবাই আবার হো হো করে হেসে ওঠে। তনিমা অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে পায়েল থাকলে বড় ভালো হত।”
কথাটা শুনে সবাই চুপ করে যায়। হাসি ঠাট্টার মধ্যে নেমে আসে গভীর কালো ছায়া। বিশেষ করে অনুপমার বুকে বড় বেজে ওঠে পায়েলের কথা। ছোটো বেলা থেকে এক সাথে পড়েছে, কলেজে থাকাকালিন একসাথে সব করেছে। কারন কারুর অজানা নয়। অনুপমার চোখ ছলছল করে ওঠে, “আগের থেকে অনেক ভালো আছে এখন।”
তনিমা, “ফোন করলে ধরে না কেন তাহলে?”
অনুপমা, “জানিস ত কারুর সাথে আজকাল আর কথা বলে না। বাড়ি ফিরে দেখব হয়ত চুপচাপ টিভি দেখছে না হয় রুমে বসে গল্পের বই পড়ছে।”
তনিমা, “ওকে নিয়ে আমাদের একবার কোথাও যাওয়া দরকার। ওই বাড়ির মধ্যে থেকে থেকে ওকে তোরা আরও বেঁধে রেখেছিস।”
অনুপমা হাল্কা হাসি দিয়ে বলে, “শুধু মাত্র ভাইয়ের সাথেই বের হয় তাও আবার সামনের পার্ক পর্যন্ত। একবার চেষ্টা করেছিলাম শপিঙে নিয়ে যাওয়ার, গাড়ি মিন্টো পার্ক থেকে ঘুরিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে হয়েছিল।”
শ্রেয়া একসময়ে দেবায়নকে একদিকে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে তুই যে কি সব বলছিলিস, সফটওয়্যার ফার্ম খুলবি? সেসব কি আদৌ হবে না এমনি গুলতানি মেরেছিলি আমাদের?”
দেবায়ন ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলে, “ডারলিং, সব হবে সব হবে। আজ সবে আমাদের পরীক্ষা শেষ হল। এবারে আমার আর পুচ্চির দৌড়ান শুরু, মাথা ব্যাথা শুরু। অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে কিন্তু আমি তোকে কথা দিচ্ছি, সফটওয়্যার ফার্ম হবে।”
শ্রেয়া, “দ্যাখ ভাই, রূপক ক্যম্পাসে মুম্বাইয়ের একটা বড় কোম্পানিতে চাকরির অফার পেয়েছে। পরের মাসে জয়েনিং।”
দেবায়ন প্রশ্ন করে, “মানে? অনু আর আমি যে তোদের আগে থেকে একটু বলে রেখেছিলাম।”
শ্রেয়া, “জানি বলে রেখেছিলি। ঝোপের মধ্যে দশ খানা পাখীর চেয়ে হাতের একটা পাখীর দাম অনেক। তুই আগে ফার্ম তৈরির কিছু ব্যাবস্থা কর তারপরে রূপকের সাথে কথা বলিস, কেমন।”
দেবায়ন, “হ্যাঁ সেটা ঠিক। দেখি কিছুদিনের মধ্যেই শুরু করব এই নিয়ে ভাবনা চিন্তা।”
শ্রেয়া, “অনু বলছিল যে টাকার ব্যাপারে কোন অসুবিধে নেই, ওর কাছে নাকি টাকা আছে। কি ব্যাপার, একটা সফটওয়্যার ফার্ম খোলার মতন এত টাকা পেলি কোথায় তোরা?”
দেবায়ন বাঁকা হাসি হেসে বলে, “পরে বিস্তারিত জানাবো। আর আমার পুচ্চিটা কিছুই পেটে রাখতে পারে না।”
গল্প মজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে দেবায়ন অনুপমাকে ধমক দিয়ে বলে, “তুমি শ্রেয়াকে টাকা পয়সার কথা বলে দিয়েছ নাকি?”
অনুপমা হেসে বলে, “না মানে একটু খানি জানিয়েছি যে বাবা টাকা দেবে।”
দেবায়ন, “আজ জিজ্ঞেস করছিল আমাকে। তুমি কোন কথা পেটে রাখতে পারো না? এখুনি ওই সব বলার কি দরকার, টাকা কোথা থেকে আসবে, কি করতে চলেছি। পরীক্ষা শেষ হল আজকে। এবারে আগে কাকুর সাথে কথা বলতে হবে। আর সব থেকে বড় ব্যাপার আমার মা। মা একবার বেঁকে বসলে কিন্তু কিছুই করা সম্ভব হবে না।”
অনুপমা দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মামনিকে আমি ঠিক পটিয়ে নেব।”
দেবায়ন জানে, মিস্টার সেনের কথার চেয়ে অনুপমা আর দেবায়নের আব্দার বেশি কাজে দেবে ওর মায়ের কাছে। বেশি যুক্তি তক্ক মায়ের সামনে খাটে না। যে কাজ মায়ের পছন্দ নয় সেটা মা কখনই করবে না অথবা করতে দেবে না। মায়ের কাছে আদর করে আব্দার করলে মা কথা রাখবে।
বাইকে বসে, পেছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেবায়ন অনুপমার গালে চুমু খেয়ে বলে, “হ্যাঁ তা জানি। তোমার মামনিকে একমাত্র তুমি বশ মানাতে পারবে।”
সেদিন রাতে খাবার সময়ে দেবশ্রী ছেলেকে জিজ্ঞেস করে ওর পরীক্ষার ব্যাপারে আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে। দেবায়ন জানায় যে মিস্টার সেনের সাথে কথা বলবে ওদের ভবিষ্যতের সফটওয়্যার ফার্মের ব্যাপারে। দেবায়ন মাকে মনে করিয়ে দেয় এক বছর আগের মুসৌরির কথা। দেবশ্রীর মনে আছে এক বছর আগে মুসৌরিতে ছেলে কি বলেছিল। দেবশ্রীর মনে আছে এক বছর আগে মুসৌরিতে আর কি কি হয়েছিল। হটাত মুসৌরির কথা মনে পরে যাওয়াতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায়। দেবায়ন বলে যে কয়েক দিনের মধ্যে মিস্টার সেনের সাথে বিস্তারিত কথা বার্তা বলবে ওদের সফটওয়্যার ফার্মের ব্যাপারে সেই মতন পরের পদক্ষেপের কথা চিন্তা করবে। দেবশ্রী বলেন যে তিনি একবার মিস্টার সেনের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে চান। দেবশ্রী বলেন যে অফিস থেকে একদিন ফোন করবে মিস্টার সেনকে এবং বাড়িতে ডাকবেন।
এক রবিবার বিকেলে, পারমিতা দেবশ্রীকে বাড়িতে ডিনারের জন্য ডাকে। সেই সাথে জানায় যে দেবায়ন আর অনুপমার ভবিষ্যতের সফটওয়্যার ফার্মের ব্যাপারে কথা বলতে চায়।
দেবায়ন আর অনুপমার দিকে এক বার দেখে, মিস্টার সেন বলতে শুরু করেন, “এদের পরীক্ষা শেষ, কলেজ শেষ। দুই জনে যথেষ্ট বড় হয়েছে। নিজেদের ভালো মন্দ বিচার বিবেচনা করতে শিখেছে। আমি ওদের কথা ভাবছিলাম অনেক দিন থেকে।”
দেবশ্রী, “তার কিছুটা দেবু আর অনু আমাকে বলেছে। এরা একটা সফটওয়্যার ফার্ম খুলতে চায়। সেইজন্য এরা কম্পিউটার শিখেছে।”
মিস্টার সেন, “হ্যাঁ, আমার একবার মনে হয়েছিল। কম্পিউটার শিখলে এই ফিল্ডে ভালো কাজ করতে পারবে। বর্তমানে এই ফিল্ডে বেশ টাকা। তাই ওদের একটা সফটওয়্যার ফার্ম খুলে দেব ভাবছি। দুইজনে নিজদের বুদ্ধি দিয়ে, শক্তি দিয়ে সেটা তৈরি করুক।”
দেবশ্রী, “সব বুঝলাম। কিন্তু আমার মনে হয় এত তারতারি ওদের সফটওয়্যার ফার্ম খোলা উচিত নয়। কয়েক বছর ওরা দুইজনে আরও কিছু পড়াশুনা করে নিক, কোন একটা সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করুক একটু অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিক তারপরে না হয় নিজেদের একটা ফার্ম খুলবে।”
দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের মুখ চাওচায়ি করে। দেবায়ন চেয়েছিল কলেজের পরেই ফার্ম খুলতে। জানে একবার মা যদি দেরি করায় তাহলে ধিরে ধিরে মা ওকে চাকরি করতে বলবে। অনুপমা দেবশ্রীকে বলে, “মামনি, নিজের ফার্মে কাজ করতে করতে সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করা যেতে পারে।”
দেবশ্রী হেসে বলে, “না রে। যখন নিজের ফার্ম হবে তখন তোদের ঘাড়ে সেই ফার্মের সব ভার এসে পড়বে। তোদের মাথায় চিন্তা ঢুকবে কি করে ফার্ম টিকিয়ে রাখা যায়, কি ভাবে বিজনেস বাড়ানো যায়, কি ভাবে টাকা রোজগার করা যায়। এই সব একবার মাথায় ঢুকে গেলে পড়াশুনা মাথা থেকে বেড়িয়ে যাবে।”
দেবায়ন, “মা, আমি আর রূপক ভেবে রেখেছি যে আমরা টেকনিকাল দিকটা দেখব। বাকিটা কাকু আর তোমার সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যাবো।”
দেবশ্রী অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “আমি মানে?”
মিস্টার সেন বলে, “দিদি, ব্যাপারটা ঠিক দেবায়ন বলে বুঝাতে পারছে না।”
দেবশ্রী দেখে মিস্টার সেনের দিকে। মিস্টার সেন বলেন, “ওদের ফার্ম খুলে দেব। সব কিছু ওদের হাতে থাকবে, কিন্তু ওদের সাথে কয়েক জন এডভাইসর হিসাবে থাকবে যারা এই বিজনেস, এডমিনিস্ট্রেসান আর একাউন্টস দেখবে। ওরা নিজেদের মতন টেকনিকাল নিয়ে থাকতে পারে, আর সেই সাথে যদি ওরা আরও কয়েক জনকে খুঁজে পায় তাহলে ভালো হবে। আর আপনার ছেলের কথা বলি। আপনার ছেলের মাথায় এই বুদ্ধি ভালো আছে। গত ডিসেম্বরে, র্যাডিসন ফোর্টের মিটিঙে, দেবায়ন সবাইকে অবাক করে অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়। ওর পরিকল্পনা জানার পরে আমার বিশ্বাস আছে যে ওর হাত ধরে ওদের কোম্পানি অনেক উঁচুতে যাবে।”
দেবশ্রীর বুক ছেলের কথা শুনে গর্বে ফুলে ওঠে। ছেলের দিকে চেয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি এমন করেছিলি রে তুই?”
মিস্টার সেন হেসে বলে, “ওর সিদ্ধান্তের জন্য আমার লাভের অংশ বেড়ে গেছে।”
দেবশ্রী, “বুঝলাম সব। কিন্তু বড্ড তাড়াতাড়ি সব করছে এটাই একটু ভাবনার বিষয়।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “অনুপমা আমার একমাত্র মেয়ে আর দেবায়ন আপনার একমাত্র ছেলে। ওরা দুইজনে ভেবেই রেখেছে যে ওদের ভবিষ্যৎ একসাথে বাঁধা। এই বিষয়ে আমার কোন অমত নেই, ওর মায়ের নেই আপনার নেই। তবে মেয়ের পিতা হিসাবে আমার একটা কর্তব্য আছে বিয়ের পরে মেয়ের সংসার যাতে সুখ শান্তিতে ভরে ওঠে।”
দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি বলতে চাইছেন? অনুকে আমি অনেক আগেই আমার বৌমা হিসাবে মেনে নিয়েছি। আমার ছেলে ওকে এক কাপড়ে বাড়িতে নিয়ে এলেও আমি কিছু বলব না।”
পারমিতা অবস্থার সামাল দেবার জন্য মুখ খোলে, “না দেবশ্রীদি, তুমি যেটা ভাবছ সোমেশ ঠিক সেই ব্যাপারে কিছু বলতে চায় নি। সোমেশ বলতে চাইছে যাতে ওরা দুইজনে ভালো থাকে। যতদিন আমাদের ক্ষমতা আছে ততদিন আমরা ওদের জন্য করে যাবো, তারপরে ওদের ব্যাপার।”
মিস্টার সেন বুঝতে পারেন যে কথাটা অনেকটা বিয়ের যৌতুকের মতন হয়ে গেল। তাই ক্ষমা চেয়ে বলেন, “দুঃখিত দিদি। আমার কথা অনেকটা বিবাহের যৌতুকের মতন হয়ে গেল। আমি ঠিক সেটা বলতে চাইনি। আমি বলতে চেয়েছিলাম যে ওদের ফার্মের ইনিশয়াল ক্যাপিটাল আমি লোন হিসাবে দেব।”
দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “আপনার এই পরিকল্পনা একবার জানতে পারি কি?”
মিস্টার সেন এই এক বছরে বুঝে গেছেন সামনে বসা ভদ্রমহিলা সব কিছু না শুনে, ঠিক মতন বিচার বিবেচনা না করে মত দেবেন না। তিনি হেসে বলেন, “নিশ্চয় জানতে পারবেন। আপনাকে না জানিয়ে কিছু করা ভুল। আমি ভেবে রেখেছি ওদের ফার্মের জন্য কুড়ি থেকে ত্রিশ কোটি দেব। এই যে এডমিনিস্ট্রেসান সেখানে আপনার সাহায্য পেলে ভালো হয়। একাউন্টসের জন্য চেনা জানা লোক আছে। বাকি মার্কেটিং না হয় প্রথম প্রথম আমি একটু দেখে দেব। টেকনিকাল ওরা নিজেরা ঠিক করে নেবে।”
দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “কোন প্রোজেক্ট প্লান ছাড়াই সফটওয়্যার ফার্ম খোলা হবে? রোডম্যাপ কই, বিজনেস প্লান কই? খালি হাতে একটা ফার্ম খোলার পরে কি ওরা বাজারে বের হবে বিজনেস তুলতে? এই রকম করলে কয়েক মাসের মধ্যে আপনার টাকা গুলো জলে যাবে। এটা ঠিক নয়, আগে ওরা একটা প্রোজেক্ট প্লান করুক। আপনি দেখুন আমি দেখি, বিচার বিবেচনা করি। আমি বেশ কয়েক জনের সাথে আলাপ আলোচনা করব এই বিষয়ে তারপরে আমার মতামত জানাবো।”
মিস্টার সেন চিন্তিত হয়ে দেবায়নকে বলে, “দেবায়ন, দেবশ্রীদি র কথা একদম ঠিক। আগে তুমি রূপক আর শ্রেয়ার সাথে কথা বলে দেখো। ওদের সাথে মিলে একটা প্রোজেক্ট প্লান বানাও। যদি ওরা না আসে তাহলে আমি দেখি কয়েক জনকে বলে। সফটওয়ারে কি বিজনেস করা যায় সেই নিয়ে তাহলে ভাবনা চিন্তা করা যাবে।”
পারমিতা দেবশ্রীকে আসস্থ করে বলে, “দেবশ্রীদি তোমার হ্যাঁ বলার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। দেবায়ন আর অনুর ওপরে আমার বিশ্বাস আছে।”
দেবশ্রী একবার অনুপমা আর দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়ন আর অনুপমা কাচুমাচু মুখ করে দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। জানে, ওই এক মাত্র মানুষ এইখানে যার সম্মতি না পেলে ওদের সফটওয়্যার কোম্পানির স্বপ্ন স্বপ্ন হয়ে থেকে যাবে।
অনুপমা দেবশ্রীর পাশে বসে আদুরে কণ্ঠে বলে, “মামনি আমরা সব ঠিক করে নেব। প্লিস মামনি না করো না।”
পারমিতা হেসে ফেলে মেয়ের কথা শুনে, দেবশ্রীকে বলে, “দেখেছ দিদি, আমার থেকে তোমার দাম বেশি।”
দেবশ্রী আর হাসি চাপতে পারে না, শেষ পর্যন্ত বলে, “ঠিক আছে আমার মত আছে তোদের এই সফটওয়্যার ফার্মে।”
মায়ের সম্মতি পেয়ে দেবায়ন খুব খুশি। দেবশ্রী ছেলেকে শুধু একটা কথা বলে, এই টাকা পয়সা, নাম যশে যেন নিজের মান সন্মান বজায় রেখে চলে। মাকে জড়িয়ে ধরে দেবায়ন আসস্থ করে। দেবশ্রী জানায় ওদের দিল্লী অফিসে একটা ছেলে এডমিনে ছিল, নাম শান্তনু দুবে। ছেলেটা বিহারী কিন্তু আসানসোলে বাড়ি। দেবশ্রীর আগের অফিসের কাজ ছেড়ে দিয়েছে এবং দিল্লীতেই চাকরি করছে কিন্তু কোলকাতা ফিরতে চায়, বাড়ির কাছে কোথাও চাকরি করতে চায়। দেবায়নের সফটওয়্যার ফার্ম হলে ওকে যেন একটা কাজ দেয়। সেই সাথে শান্তনুর স্ত্রী, মনীষা জিন্টা সে আগে দেবশ্রীর নিচে কাজ করত। এইচ.আর হিসাবে সে ভালোই কাজ করবে। দেবায়ন জানিয়ে দেয়, ওদের ফার্মে লোকজনের দরকার পড়বে, চেনাজানা হলে ভালো হয়।
ত্রয়োবিংশ পর্ব (#02)
মায়ের সম্মতি পেয়ে দেবায়ন খুব খুশি। দেবশ্রী ছেলেকে শুধু একটা কথা বলে, এই টাকা পয়সা, নাম যশে যেন নিজের মান সন্মান বজায় রেখে চলে। মাকে জড়িয়ে ধরে দেবায়ন আসস্থ করে। দেবশ্রী জানায় ওদের দিল্লী অফিসে একটা ছেলে এডমিনে ছিল, নাম শান্তনু দুবে। ছেলেটা বিহারী কিন্তু আসানসোলে বাড়ি। দেবশ্রীর আগের অফিসের কাজ ছেড়ে দিয়েছে এবং দিল্লীতেই চাকরি করছে কিন্তু কোলকাতা ফিরতে চায়, বাড়ির কাছে কোথাও চাকরি করতে চায়। দেবায়নের সফটওয়্যার ফার্ম হলে ওকে যেন একটা কাজ দেয়। সেই সাথে শান্তনুর স্ত্রী, মনীষা জিন্টা সে আগে দেবশ্রীর নিচে কাজ করত। এইচ.আর হিসাবে সে ভালোই কাজ করবে। দেবায়ন জানিয়ে দেয়, ওদের ফার্মে লোকজনের দরকার পড়বে, চেনাজানা হলে ভালো হয়।
মিস্টার সেন নিজের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি ব্যাবসা দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। পুরানো গাড়ি বিক্রি করে দুটো গাড়ি কেনা হয়। একটা অনুপমার বাড়ির জন্য টয়োটা ক্যামরি আর মিস্টার সেন নিজের জন্য কেনেন, অডি এ-সিক্স। দেবায়ন বলে, নিজের জন্য পরে গাড়ি কিনবে। এখন ওর বুলেটে ঘোরার শখ কমেনি। গাড়ি থাকলেও অনুপমা ওর সাথেই বাইকে চেপে সব জায়গায় যায়। অনুপমার গাড়ি বেশির ভাগ দিন বাড়িতেই থাকে।
এক বছর বাদ গেছে পায়েলের। তবে নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করছে আশেপাশের আবহাওয়ার সাথে। অনুপমা ওকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে তারপরে দেবায়নের সাথে কাজে বের হয়। বিকেলে গাড়ি ওকে কলেজ থেকে বাড়ি নিয়ে আসে। পায়েলের দৌড় এই বাড়ি থেকে কলেজ আর কলেজ থেকে বাড়ি। এছাড়া কোথাও বের হতে চায় না।
এক বিকেলে মিস্টার সেন দেবায়নের সাথে এই সফটওয়্যার ফার্মের ব্যাপারে আলোচনা করে বুঝিয়ে দেয় কার সাথে কি ভাবে কথা বলে বশ করবে। মিস্টার সেন বলেন যে, ফার্ম প্রাইভেট লিমিটেড করতে হলে কমপক্ষে তিন জন ডাইরেক্টর চাই। অনুপমাকে ডাইরেক্টর করে দিলে ভালো। কারন ডাইরেক্টর লাভের অংশ পাবে এবং সাথে সাথে মাইনে। কিন্তু শুরুতে যতদিন না কোম্পানি ব্রেক ইভেনে পৌছাবে ততদিন বাকিদের খাতিরে অনুপমা কোন মাইনে নেবে না। দেবায়ন যদি মাইনে নিয়ে চাকরি করে তাহলে বিয়ের পরে টাকার সমস্যা থাকবে না। দেবায়ন বুঝতে পারল এই কোম্পানির প্যাঁচ। মিস্টার সেন আরো জানালেন যে, শ্রেয়ার সাথে ঠিক যেন সেই রকম করে। শ্রেয়াকে যেন বেশি শেয়ার না দেয়, কারন টাকা লাগাবে মিস্টার সেন, বুদ্ধি আর মাথা লাগাবে দেবায়ন। শ্রেয়ার নামে দশ থেকে বারো শতাংশ দিলেই হবে। যদি রূপক অন্য কোথাও চাকরি করতে চায় তাহলে অন্য কিছু ভাববে এই সফটওয়্যার ফার্মের ব্যাপারে। সবকিছু বুঝে শুনে যেন কথাবার্তা বলে দেবায়ন আর অনুপমা। ব্যাবসা এক জিনিস আর বন্ধুত্ত অন্য। ব্যাবসার মধ্যে বন্ধুত্ত আনা ভালো কিন্তু একটা সীমা পর্যন্ত। তৃতীয় ডাইরেক্টর হিসাবে মিস্টার সেন থাকবেন।
মিস্টার সেন আরো জানান, যে প্রথমে একটা অফিসের জন্য জায়গা যোগাড় করতে হবে। কোম্পানির নাম রেজিসস্টার করাতে হবে, সব ডাইড়েক্টর দের নাম ধাম দিতে হবে। তারপরের বিজনেশ আর জনবল যোগাড় করা। মিস্টার সেন বললেন, শুরু দিকে ওদের আগের কোম্পানির যে ছেলেটা একাউন্টস দেখত তাকে দিয়ে কাজ করাবেন। দেবায়ন বলে, মা একজন এইচ.আর এর কথা বলেছে। বিজনেসের জন্য মিস্টার সেন খুঁজবেন, কারন সফটওয়্যার মারকেটিং আর অন্য মারকেটিঙ্গের মধ্যে অনেক তফাত। সময়ের আগেই সব যোগাড় করে নেবেন। মিস্টার সেন বললেন দেবায়ন বড় হয়ে গেছে, এবারে যেন নিজের ভালো মন্দ বুঝে শুনে সবার সাথে এই ব্যাবসা আর বাকি কাজ নিয়ে কথাবার্তা বলে।
দেবায়ন মিস্টার সেনকে জিজ্ঞেস করে নিবেদিতার কোম্পানির ব্যাপারে। মিস্টার সেন বলেন যে ওদের কন্সট্রাক্সান কোম্পানির জন্য মিস্টার সেন ডাইরকেটর যোগাড় করেছেন। যাদের সাথে এতদিন কাজ করে এসেছিলেন তাদের মধ্যে দুই জনকে নিয়েছেন। তাদের নামে শেয়ার নেই, তারা নামেই ডাইরেক্টর। আর নিবেদিতার কোম্পানির জন্য মিস্টার সেন চল্লিশ কোটি টাকা দিয়েছে। নিবেদিতা মিন্টো পার্কের কাছে অফিস নিয়েছে। মিস্টার সেন বলেন, ওদের এই গ্রুপ কোম্পানির জন্য রাসেল স্ট্রিটের পুরনো অফিসের নিচের তলায় অফিস খুলতে। মিস্টার সেন বলেন শ্রেয়া আর রূপকের সাথে কথাবার্তা বলার পরে ওরা নিজেরাই এইসব দেখতে যেতে পারে। ওদের সাথে নিয়ে গেলে ওদের ভালো লাগবে, ওরা বুঝবে যে ওদের কথার দাম দেওয়া হয়েছে। এই ভাবে মানুষকে বশে করা যায়। দেবায়ন হেসে ফেলে মিস্টার সেনের কথা শুনে।
একদিন বিকেলে শ্রেয়া আর রূপকের সাথে আলোচনায় বসে দেবায়ন আর অনুপমা।
দেবায়ন প্রথম কথা শুরু করে, “আমি আর অনুপমা ঠিক করেছি একটা সফটওয়্যার ফার্ম খুলব।”
রূপক, “হ্যাঁ, শ্রেয়া আমাকে জানিয়েছিল অনেক আগে। কিন্তু আমি মুম্বাইয়ে একটা বড় সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি।”
দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। রূপক বলে, “আগে তোদের পুরো পরিকল্পনা শুনি তারপরে সিদ্ধান্ত নেব কোথায় জয়েন করব। তোদের কাছে কি কোন প্রোজেক্ট প্লান আছে এই কোম্পানির ব্যাপারে? মানে কি নিয়ে কোম্পানি বিজনেস করবে, কি কি প্রোডাক্ট হবে এই সব আর কি?”
অনুপমা আর দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “না ওই সব ব্যাপারে কিছু জানি না বলেই তোকে ডাকা।”
রূপক হেসে দেয়, “তার মানে আমার সাহায্য চাই। কিন্তু এতে আমাদের লাভ?”
অনুপমা বলে, “লাভ মানে, তুমি আমাদের সাথে থাকবে। এই কোম্পানির এক অংশীদার হবে।”
রূপক শ্রেয়ার দিকে তাকায়। শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “টাকা কে দেবে?”
অনুপমা, “টাকার কথা চিন্তা করিস না। টাকা আমি আর দেবায়ন যোগাড় করে নেব। তোরা শুধু এই টুকু জানা যে তোরা কি আমাদের সাথে থাকবি?”
রূপক একভার শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমি মুম্বাইয়ে যে কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি সেই কোম্পানি দুশো কোটি টাকার কোম্পানি। আমার জয়েনিং স্যালারি পঁচিশ হাজার এবং সাথে আরও অনেক সুযোগ সুবিধে আছে।”
দেবায়ন হেসে বলে, “দ্যাখ ভাই, আমি এখুনি বলছি না যে আমরা তোকে ওই মাইনে দিতে পারব। তবে তোর ওপরে নির্ভর করবে ভবিষ্যতে এই কম্পানিকে তুই কোথায় নিয়ে যেতে চাস। তার ওপরে নির্ভর করবে তোর মাইনে আর বাকি সুযোগ সুবিধে।”
রূপক, “তাহলে একটু খুলেই বল। কত টাকা দিয়ে শুরু করবি। আমি সেই মতন প্রোজেক্ট প্লেন মন দেব।”
অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়ন বলে, “আমাদের ইনিশিয়াল ইনভেস্টমেন্ট হবে কুড়ি থেকে ত্রিশ কোটি টাকা।”
টাকার অঙ্ক শুনে শ্রেয়া আর রূপক অবাক হয়ে যায়। শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “এত টাকা আসবে কোথা থেকে?”
অনুপমা হেসে বলে, “তুই শুধু এবারে বল যে আমাদের সাথে কি তোরা যোগ দিবি?”
শ্রেয়া একটু ভেবে রূপককে বলে, “তুমি কি ভাবছ?”
রূপক, “আমি ভাবছি পরের কথা। ওরা যে অঙ্ক নিয়ে কোম্পানি শুরু করার কথা ভাবছে। এই কোলকাতা শহরে এই অঙ্কে বেশ বড় কোম্পানি খোলা যাবে।”
দেবায়ন রূপকের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, “তাহলে কি ভেবে নেব যে তুই আমাদের সাথে আছিস?”
রূপক, “একদম গুরু। আমি যেখানে জয়েন করতাম সেই কোম্পানি ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট করে, ছোটো খাটো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করে। আমরা সেই পন্থা অবলম্বন করতে পারি। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট দিয়ে শুরু করতে পারি, সেই সাথে ওয়েবএপ্লিকেশান আছে, বিভিন্ন ছোটো ছোটো কোম্পানির জন্য সফটওয়্যারের কাজ আছে। তুই কিছু জানিস আমি কিছু জানি, বাকি করতে করতে হয়ে যাবে। তবে আমি কয়েক জন সিনিয়ারের সাথে কথা বলে একটা প্রোজেক্ট প্লান করে নেব।”
দেবায়ন, “হ্যাঁ তাহলে তুই একটা প্রোজেক্ট প্লান করে ফেল। ইতিমধ্যে দেখি কাউকে বলে কয়ে যদি বিজনেসের ব্যাপারে কিছু হয়। কোন সফটওয়্যার ডিল যদি করা যায় তাহলে বেশ ভালো হবে।”
শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “আমি কি করব এখানে?”
অনুপমা হেসে ফেলে, “তুমি কি করতে চাও সোনা মণি? তুই মাঝে মাঝে অফিসে এসে রূপককে একটু দেখা দিয়ে যাস তাহলেই হবে।”
শ্রেয়া রূপকের বাজু জড়িয়ে বলে, “কি গো, তোমার সামনে ঘোরাফেরা করলে তুমি কাজ করবে তো?”
চারজনে হেসে ফেলে শ্রেয়ার কথা শুনে। দেবায়ন বলে, “এবারে একটা সিরিয়াস কথা। দ্যাখ তুই আমার কোম্পানিতে চাকরি করবি, সেটা হয় না। চাকরির চেয়ে বড় তুই আমার বন্ধু। আমি ভেবে রেখেছি তুই একজন ডাইরেক্টর হবি এই কোম্পানিতে।”
রূপক অবাক হয়ে যায় দেবায়নের প্রস্তাবে, “তুই সত্যি বলছিস?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ। এই কোম্পানির শেয়ার দেব তোকে। আমি তোকে শুধু মাত্র মাইনে দিয়ে রাখব সেটা ভালো নয়। প্রধানত যেখানে তুই আমার জন্য এত করবি।”
রূপক বার কয়েক চোখের পাতা নাড়ায়। শ্রেয়া দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “কত পারসেন্ট শেয়ার পাবে রূপক?”
দেবায়ন বলে, “না আমার পরিকল্পনা একটু ভিন্ন। শ্রেয়া হবে ডাইরেক্টর আর রূপক চাকরি করবে।”
রূপক বুঝতে পারে না। দেবায়ন মিস্টার সেনের সাথে থেকে থেকে ব্যাবসার প্যাঁচ বেশ শিখে গেছে, তবে বন্ধুদের ভালো করতে চায় তাই বলে, “দ্যাখ ভাই। আমি যদি রূপকের নামে শেয়ার দেই তাহলে যতদিন না কোম্পানি লাভের অংশ দেখছে ততদিন শুধু আঙুল চুষে একটা সামান্য মাইনে নিতে হবে। আমি চাইছিলাম যে শেয়ার হবে শ্রেয়ার নামে, তাতে যখন লাভ হবে তখন তোরা মোটা টাকা লাভের অংশ থেকে পাবি। কিন্তু এই কয় বছর চলার জন্য টাকা চাই, তাই রূপককে মাইনে দেওয়া হবে।”
শ্রেয়া জড়িয়ে ধরে দেবায়নকে, “তুই মাল এত বুদ্ধি কোথায় রেখেছিলি রে।”
রূপক মিচকি হেস শ্রেয়াকে বলে, “নৈহাটির রাতে তুমি তো ছিলে না তাই জানো না। ওর মাথায় যে কখন কি আসে সেটা ওই জানে।”
দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “যাই হোক ভাই, সেসব নিয়ে আমার চিন্তা নেই তুই যা ভালো বুঝিস সেটা করিস।”
শ্রেয়া দেবায়নের গলা জড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, আমি ডাইরেক্টর হব আমাকে একটা কেবিন দিবি?”
অনুপমা হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “কেন মাল কেবিনে বসে কি করবি? রূপকের কোলে বসে থাকবি নাকি?”
শ্রেয়া, “কেন রূপক কেন? কোম্পানির ডাইরেক্টর যখন দেবায়ন, তখন ওর কোলে বসব।”
অনুপমা হেসে বলে, “হে হে সোনা মণি। কোম্পানির ডাইরেক্টর আমি, পুচ্চু নয়। তুই আর আমি ডাইরেক্টর হব আর আমাদের বর গুলো গাধার মতন খাটবে।”
দেবায়ন, “শ্রেয়ার নামে বারো পারসেন্ট শেয়ার থাকবে।”
শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “এত কম, বারো পারসেন্ট কেন?”
অনুপমা, “সবে শুরু। এখন তুই কিছুই পাবি না। রূপকের মাইনে দিতে, বাকিদের মাইনে দিতে হিমশিম খেয়ে যাবো।”
শ্রেয়া রূপককে বলে, “কি গো কিছু বলবে? বন্ধুত্ত এক জায়গায় আর বিজনেস এক জায়গায়। কিন্তু তাই বলে বারো পারসেন্ট?”
দেবায়ন শ্রেয়াকে বুঝিয়ে বলে, “শোন। একবার ব্রেক ইভেনে পৌঁছে গেলে বারো পারসেন্ট অনেক টাকা। আর রূপক প্রতি মাসে ভালো মাইনে পাবে।”
শ্রেয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “না না, বারো পারসেন্ট অনেক কম। আমি গরু নাকি? রূপক প্রোজেক্ট প্লান করবে, রূপক কাজ করবে আর শেয়ারের বেলায় শুধু মাত্র বারো পারসেন্ট। কুড়ি থেকে পঁচিশ না হলে রূপক কাজ করবে না।”
শ্রেয়া মনক্ষুণ্ণ হয়ে যায়।
শ্রেয়ার বেগতিক দেখে দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। টেবিলের তলা দিয়ে অনুপমা ওর হাত চেপে শান্ত করে শ্রেয়াকে বলে, “দ্যাখ ভাই, একা রূপকের মাথায় কাজ হচ্ছে না। আমার পুচ্চুর আর রূপকের মাথা মিলে এই কোম্পানির টেকনিকাল তৈরি হবে। আমি সেই সাথে একটু এডমিনিস্ট্রেসান দেখব, একাউন্টসের জন্য, এইচ.আরের জন্য লোক জন থাকবে। আমাকে পুরোটা খরচ করতে হবে। ভবিষ্যতে কোম্পানি বড় হলে তখন দেখা যাবে।”
রূপক শ্রেয়াকে বুঝিয়ে বলে, “তোমার একি হল? রাম না হতে রামায়ন কেন গাইছ তুমি? আমি একা ত করছি না। দেবায়নের মাথা লাগছে, অনুপমার টাকা লাগছে। সত্যি কথা বলতে আমাদের গ্যাঁটের থেকে কিছু যাচ্ছেনা একবার ভেবে দেখো। ওরা যে আমাদের একটা এত বড় অফার দিয়েছে সেটাই বড় কথা।”
শ্রেয়া চাপা গলায় বলে, “আমাদের দরকার তাই এসেছে আমাদের কাছে। কিন্তু পনেরো হতেই পারে।”
শ্রেয়ার কথা শুনে দেবায়ন বলতে যাচ্ছিল যে তুই না হলে আমি অন্য কাউকে দেখে নেব। অনুপমা দেবায়নের হাতে চিমটি কেটে চুপ করে যেতে বলে। সূর্য মনিদিপার সময়ে, পায়েলের সময়ে শ্রেয়া ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল। একটা ভালো বান্ধবীকে হারাতে চায় না অনুপমা। অনুপমা তাই কথা না বাড়িয়ে বলে, “ওকে বাবা, পনেরো দেব। এবারে শান্তি? কিন্তু এখুনি পনেরো দিতে পারছি না। দুই বছর যাক তারপরে পারসেন্টেজ বাড়িয়ে দেব।”
রূপক শ্রেয়াকে শান্ত করে বলে, “তুমি না একদম যাতা। আগে কোম্পানি শুরু হোক, টাকা আসুক তারপরে।”
দেবায়নকে বলে, “ভাই তুই যা ভালো বুঝিস সেটা করিস। ওর কথায় বেশি কান দিস না।”
রূপকের কথায় শ্রেয়া একটু আহত হয়। ভেবেছিল রূপক ওর হয়ে কথা বলবে। শ্রেয়ার চেহারায় কালো মেঘের ছায়া দেখে অনুপমা বড় ব্যাথা পায়। বান্ধবী ভেবে ওর সাথে কাজের কথা ভেবেছিল, ভাবেনি যে এর মধ্যেই বিজনেসের প্যাঁচ চলে আসবে। রূপক অনুপমার চোখের ভাষা পড়ে কথা ঘুরিয়ে অন্য কথা বলতে শুরু করে।
এরপরে একদিন রূপকের সাথে দেবায়ন আর অনুপমা রাসেল স্ট্রিটের অফিস দেখতে যায়। চার হাজার স্কোয়ার ফিটের বেশ বড় অফিস। একি বিল্ডিংয়ে মিস্টার সেনের কন্সট্রাক্সান কোম্পানি। জায়গা দেখার পরে মিস্টার সেনের সাথে কথা বলে ভাড়া এবং বাকি কাজ সেরে ফেলে। এবারে কথা ওঠে লোকজন যোগাড়ের। দেবশ্রী বলেছিল শান্তনু আর মনীষার কথা। দেবশ্রী ওদের দিল্লী থেকে ডেকে পাঠায়। শান্তনু আর মনীষার সাথে দেখা করে সবাই। দেবশ্রী ওদের দেখে ভারী খুশি হয়। মনীষা এইচ.আরের ভার গ্রহন করে আর শান্তনু এডমিন দেখে। শান্তনুর ঘাড়ে অফিস সাজানোর দায়িত্ত পরে। ইলেক্ট্রিকের কাজ, কেবিন, ফারনিচার ইতাদ্যির কাজ শুরু হয়। পাঁচখানা কেবিন, একটা বড় কনফারেন্স হল আর একশ জনের মতন বসার জায়গা করা ঠিক করা হয়। ইতিমধ্যে অনুপমা আর দেবায়নের যৌথ একাউন্টে মিস্টার সেন কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে বলেন, ওদের ভবিষ্যৎ এবারে ওদের হাতে, এই টাকা যেন বিচার বিবেচনা মতন খরচ করা হয়। একটা বড় ব্যাঙ্কে কোম্পানি একাউন্ট খোলা হয়। মিস্টার সেন তাঁর অফিসের একাউন্টসের সুজিতকে নিযুক্ত করে অনুপমার কোম্পানির একাউন্টস দেখার জন্য। মারকেটিঙ্গের জন্য দেবশ্রী পুরান অফিসের দীপঙ্কর সরকারকে অফার দেয় দেবায়নের কোম্পানিতে জয়েন করতে।
ইতিমধ্যে রূপক ওর কলেজের সিনিয়ারদের সাথে আলাপ আলোচনা করে একটা প্রোজেক্ট প্লান তৈরি করে কোম্পানির জন্য। কি ভাবে অয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ হবে, কি কি সফটওয়্যার লাগবে, ইত্যাদি। রূপক আর দেবায়ন সেই প্রোজেক্ট প্লান মাকে দেখায়। দেবশ্রী ছেলে মেয়েদের উৎসাহ উদ্দিপনা দেখে খুশি হয়ে বলেন যে তাঁর আশীর্বাদ সবসময়ে ওদের সাথে আছে। কোম্পানির একটা নাম ঠিক করা হয় আর কাজের জন্য লোক নিযুক্ত করা শুরু হয়। ওরা চারজনে ঠিক করে যে পুজোর আগেই কোম্পানির কাজ শুরু করে দেবে। সেই মতন বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে কাজ শুরু হয়। অফিস সাজানো, ফারনিচার, ইত্যাদিতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। ছোটো অফিস, পুজোর আগেই ভরে ওঠে লোকে। রূপকের তত্তাবধনে থাকে টেকনিকাল, শ্রেয়া নামেই ডাইরেক্টর। অনুপমা আর দেবায়নের ঘাড়ে সব কিছু দেখার ভার এসে পরে। দেবায়ন বুঝতে পারে যে ভবিষ্যতে শ্রেয়াকে নিয়ে কোম্পানির মধ্যে একটা গণ্ডগোল পাকাতে পারে। ওদের কম্পিউটার শিক্ষিকা মিস সুপর্ণা চ্যাটারজির কথা মাথায় আসে। অনুপমা আর দেবায়ন, সুপর্ণাকে অনুরোধ করে ওদের কোম্পানিতে জয়েন করার জন্য। দেবায়নের কথা শুনে সুপর্ণা যেন আকাশ থেকে পরে। অনুপমা সুপর্ণাকে রাজি করায়, ম্যাডাম অনেকদিন থেকে কম্পিউটার ফিল্ডে আছে, তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়। সুপর্ণা ওদের কোম্পানিতে সি.টি.ও হিসাবে জয়েন করে।
পুজোর আগেই ওদের ছোটো কোম্পানিতে কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রথম দিনে, সব বন্ধুদের ডাকে। দেবায়ন আর অনুপমার সাথে সাথে রূপক আর শ্রেয়ার পরিবারের সকলে উপস্থিত। দেবশ্রী আর পারমিতা বেশ খুশি, ছেলে মেয়ে নিজের চেষ্টায় একটা বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই দাঁড় করাতে চেষ্টা করছে।
ত্রয়োবিংশ পর্ব (#03)
ওদের এই সফটওয়্যার ফার্মে ছোটো ছোটো কাজ আসতে শুরু হয়। প্রথম কয়েক মাস সবাই কাজে ডুবে যায়। একদিন মিস্টার সেন দেবায়নকে ডেকে বলেন যে ওকে এই সফটওয়্যার ফার্ম ছেড়ে হোটেকের দিকে একটু নজর দিতে হবে। সফটওয়্যার ফার্মের পরিচালনা করার জন্য অনেক লোকজন আছে। হোটেল বিজনেসের ব্যাপারে দেয়ায়ন শুধু মাত্র অনুপমাকে জানিয়ে রেখেছিল।
কাঁচের দরজার পেছনে বসে দেবায়ন, সামনে বড় টেবিল একটা ল্যাপটপ। ঘষা কাঁচের দরজায় ওর পোস্ট লেখা, অপারেশান ম্যানেজার। কোনদিন স্বপ্নে ভাবেনি এত তাড়াতাড়ি নিজের একটা কোম্পানি হয়ে যাবে। স্বপ্ন সাকার হবার পরে দেবায়নের সাথে সাথে অনুপমা বেশ খুশি। সামনে ল্যাপটপ খোলা। ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায় তাই অফিসে আসতে দেরি হয়ে যায়। অফিসে ঢুকে নিজের মেল দেখে একটু চুপচাপ বসে। টেবিলে ওর মায়ের আর অনুপমার ছবি। ধনোলটি গিয়ে মায়ের সাথে অনুপমার একটা ছবি তুলেছিল। ওর জীবনের সব থেকে বড় দুই স্থম্ভ কে দেখে, হবু বৌমা তাঁর মামনিকে জড়িয়ে ধরে। এমন সময়ে অনুপমা কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে।
অনুপমা চেয়ারে বসে বলে, “তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কার কি হল আবার? শ্রেয়া কিছু বলেছে? পায়েলের কিছু হয়েছে?”
অনুপমা, “না এসব কথা নয়। বাবা কালকে আমাকে বলছিল যে তুমি নাকি পরের মাস থেকে বাইরে যাবে ওই হোটেলের কাজে?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ। এর পর থেকে এইখানে আমার কাজ একটু একটু করে কমাতে হবে। তুমি এই অপারেশান দেখবে আর সুপর্ণা ম্যাম আছেই তোমাকে হেল্প করার জন্য। রুপক টেকনিকালে আছে, সুতরাং চিন্তার কোন কারন নেই।”
অনুপমা, “দীপঙ্করদা একবার আমাকে বলছিল যে বাইরের কিছু প্রোজেক্ট এলে ভালো হয়। সেই নিয়ে বাবার সাথে আমার গত রাতে কথা হচ্ছিল। বাবা আমাকে বলল যে অনিমেশ আঙ্কেলের ছেলে ইন্দ্রনীল নাকি আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে চায়।”
দেবায়ন, “ইন্দ্রনীল? মানে যার সাথে তোমার একসময়ে...”
অনুপমা হেসে ফেলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। ওই ইন্দ্রনীলের সাথে বাবা আমার এঙ্গেজমেন্ট ঠিক করেছিল। যাইহোক সেটা পুরানো ব্যাপার, ওই নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ইন্দ্রনীল নাকি আমাদের ওভারসিস বিজনেস দেখবে।”
দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রনীল আমাদের কোম্পানি জয়েন করবে এই কথা আমাকে এতদিন কেন জানায়নি কাকু?”
অনুপমা, “আমি ঠিক এই কথা বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাবা বললেন যে, ওই কথা নাকি একদম মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছিল। তোমার সাথে নাকি এই নিয়ে আলোচনা করত পরে। মানে তুমি আর বাবা যখন ওই বিন্সারের রিসোর্ট কিনতে যাবে তখন তোমার সাথে এই নিয়ে আলোচনা করত। যাই বল, এই পদক্ষেপ আমার ঠিক ভালো বলে মনে হচ্ছে না।”
দেবায়ন, “কারন?”
অনুপমা, “তুমি বলেছিলে যে, কন্সট্রাক্সান কোম্পানির ভি.সি জোগাড় করতে অনিমেশ আঙ্কেল হেল্প করেছিল। এখন আবার ওর ছেলে আমাদের কোম্পানি জয়েন করতে চায়। অনিমেশ আঙ্কেলের আসল উদ্দেশ্যটা কি?”
দেবায়ন একটু চিন্তিত হয়ে পরে, “দেখি পরের মাসে বিন্সার যাবো আরও কয়েকটা জায়গায় যাবো। তখন না হয় কাকুর সাথে আলোচনা করে নেব এই ব্যাপারে।”
অনুপমা একটু চিন্তিত হয়ে বলে, “আমি চাইনা ইন্দ্রনীল আমাদের কোম্পানি জয়েন করুক।”
দেবায়ন হেসে ফেলে অনুপমার কথা শুনে, “আরে বাবা, পুরানো কথা ছাড়ো। তুমি ওকে দেখেছ সেই সাত আট বছর আগে। এখন দেখে কি আর প্রেম জাগবে নাকি? দেখা যাক কি হয়। কাকু যখন বলছেন তখন একবার শোনা যাক।”
অনুপমা, “ইন্দ্রনীল জয়েন করতে চাইলে ভালো কিন্তু কত কাজে দেবে সেটা দেখার। আমি বাবাকে বলে দিয়েছি যে ওকে জয়েন করাতে পারি একটা শর্তে ও যদি জয়েন করার এক মাসের মধ্যে আমাদের একটা বাইরের বড় প্রোজেক্ট এনে দেয়।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “এই ত আমার পুচ্চি সব শিখে গেছে। এবারে তাহলে আমি বাইরের কাজ দেখতে পারি।”
অনুপমা, “হ্যাঁ, তুমি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেরাও আর কি।”
দেবায়ন চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি না থাকলে আমি কি আর এখানে বসতে পারতাম?”
অনুপমা ওর গলা জড়িয়ে বলে, “সত্যি সেটা নয় পুচ্চু ডারলিং। তুমি না থাকলে আমি এখানে বসতে পারতাম না। সব কিছু হয়েছে শুধু তোমার জন্য। তুমি বাবার সাথে যদি না কথা বলতে তাহলে আজ অনেক কিছু হতনা।”
দেবায়নের চোখে সেই রাতের দৃশ্য ভেসে ওঠে। পারমিতাকে কোলে করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া, সারা রাত ধরে পারমিতার সাথে সম্ভোগ কেলিতে মত্ত হওয়া। কিছুদিন পরে অনুপমার বাড়িতে এই নিয়ে বচসা। একটা ছোটো প্রশ্ন সবার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
অনুপমা হেসে দেবায়নের মাথায় টোকা মেরে বলে, “ওই রাতের কথা মনে পরতেই আমার বরটা হারিয়ে যায়।”
দেবায়নের কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “না না... সেটা নয়।”
অনুপমা বাঁকা হাসি হেসে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, জানা আছে আমার। এক কাজ কর, আজকে আমার বাড়িতে রাতে থেকে যেও। আমি ভাবছি একবার বাবার সাথে কথা বলতে। আমি মামনিকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।”
দেবায়ন হেসে বলে, “থাকতে পারি একটা শর্তে, রাতে গেস্ট রুমে আমার সাথে কাটাতে হবে।”
অনুপমা হেসে গলা জড়িয়ে বলে, “ওকে ডান পুচ্চু সোনা।”
প্রেয়সীর গজ দাঁতের মোহিনী হাসি দেখে অফিস ভুলে ওই খানে গোলাপি নরম অধরে চুম্বন একে দেয়। অনুপমা স্থান কাল ভুলে দেবায়নের গলা জড়িয়ে সেই সুমধুর চুম্বনে হারিয়ে যায়। দেবায়ন ঠোঁট ছেড়ে কানে কানে বলে, “রাতে একটা লাল লঞ্জারি পরে এস। তোমাকে অনেকদিন কাছে পাইনি, রাতে তোমাকে চটকে একাকার করে দেব।”
দেবায়নের প্রসস্থ ছাতির ওপরে নরম স্তন জোড়া চেপে, নিজেকে কঠিন কাঠামোর সাথে মিশিয়ে দিয়ে প্রেমঘন মিহি কণ্ঠে বলে, “রাতের জন্য তর সইছে না পুচ্চু সোনা।”
দেবায়ন ওর কোমর জড়িয়ে বলে, “তর আমারো সইছে না পুচ্চি। কতদিন হয়ে গেল তোমাকে ঠিক ভাবে চুমু খাইনি, তোমাকে প্রান ভরে দেখিনি। তোমার শরীরের রস খাওয়া হয়নি।”
অনুপমা দেবায়নের আগুন চোখ দেখে লজ্জা পেয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে বলে, “প্লিস সোনা এখানে ওই ভাবে দেখো না। আমি গলে যাচ্ছি, তোমার ওই চোখের সামনে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলছি সোনা।”
এমন সময়ে ফোন বেজে ওঠাতে ওদের প্রেমের স্রোতে বাধাপ্রাপ্তি হয়।
রোজ বিকেলের মতন অফিসের পরে বাইকে চেপে দেবায়ন আর অনুপমা বাড়িতে পৌঁছায়। অন্যদিন অনুপমাকে বাড়িতে নামিয়ে চা খেয়ে তারপরে লেকটাউন চলে যায়। অনুপমা ওর মামনিকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছিল যে দেবায়ন ওদের বাড়িতে রাতে থাকবে।
নিচে বসার ঘরে পারমিতা আর পায়েল বসে টিভি দেখছিল। অঙ্কনের সামনে ক্লাস টুয়েল্ভের পরীক্ষা, তাই নিজের রুমে পড়াশুনায় ব্যাস্ত। বেশির ভাগ দিন দেবায়নের সাথে পায়েলের দেখা হয় না। অনুপমাকে নামিয়ে বাড়ি ফেরার একটু তারা থাকে। পায়েল উপরে অনুপমার রুমে বসে টিভি দেখে। আগের থেকে পায়েলের মানসিক অবস্থা বেশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এই বাড়িটাকে নিজের বাড়ির মতন করে নিয়েছে। অনুপমার দেখাদেখি পায়েল পারমিতাকে মামনি বলে ডাকে। দেবায়নকে দেখে মৃদু হাসে পায়েল। সবাই বসার ঘরে বসে গল্প করে, পায়েল চুপচাপ সবার কথা শোনে।
দেবায়ন একবার পায়েলকে জিজ্ঞেস করে, “তুই একবারের জন্য আমাদের অফিসে গেলি না।”
পায়েল মৃদু হেসে বলে, “পরে যাবো।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তোর কলেজ কেমন চলছে?”
পায়েল, “ভালো।”
দেবায়ন, “বেড়াতে যাবি কোথাও?”
পায়েল, “অঙ্কনের পরীক্ষা শেষ হোক তারপরে ভেবে দেখব।”
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, “আমাদের সাথে যেতে দোষ আছে নাকি?”
পায়েল কিছু উত্তর দেয় না। চুপচাপ বসে থাকে। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কি হল তোর? একটু বাইরে বের হতে পারিস ত। অন্তত কাকিমার সাথে শপিং করতে যেতে পারিস। তাতে তোর মন ভালো হবে।”
পায়েল নিচু গলায় বলে, “ভেবে দেখব।”
অনুপমা দেবায়নকে ইশারায় জানায়, থাক আর বেশি বলতে যেও না। যা করার ভাই করবে খানে।
কিছু পরেই মিস্টার সেন বাড়ি পৌঁছে যান। দেবায়নকে দেখে খুশি হয়ে বলেন যে ওর সাথে কথা ছিল। অনুপমা আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিল কিছুটা। দেবায়ন মিস্টার সেনকে বলে যে অনুপমার সাথে ওই বিষয়ে একটু কথাবার্তা হয়ে গেছে। মিস্টার সেন বলেন রাতে খাবার পরে কথা বলবেন।
রাতে খাবার পরে বসার ঘরে মিস্টার সেন, অনুপমা আর দেবায়ন বসে ওদের আলোচনা নিয়ে। পারমিতা, পায়েল আর অঙ্কনকে নিয়ে ওপরে চলে যায়। পারমিতা আজকাল আর এই সব বিষয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না। গত কয়েক মাসে, অফিসের কাজ করতে করতে অনুপমার মাথা অনেক খুলে গেছে।
অনুপমা কথা শুরু করে, বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি ইন্দ্রনীলের কথা বলছিলে আমাকে। হটাত ইন্দ্রনীল কেন? বাইরে অনেক ভালো ভালো কোম্পানি পাবে চাকরি করতে সেই সব ছেড়ে এখানে কেন?”
মিস্টার সেন, অনুপমা আর দেবায়নের দিকে একবার দেখে বলেন, “অনিমেশের ইচ্ছে কোলকাতা ফিরে আসার। অনিমেশ চাইছিল যে ইন্দ্রনীল কোন দেশি একটা কোম্পানিতে চাকরি করুক। ওদিকে ইন্দ্রনীল ফ্রাংকফুর্ট ছেড়ে আসতে নারাজ। একটা বাইরের প্রোজেক্ট তোমাদের ফার্মে এলে খুব ভালো। অনিমেশের সাথে মিস্টার হেরজোগের ভালো সম্পর্ক আছে। আর মিস্টার হেরজোগের অনেক চেনাজানা আছে আছে সারা ইউরোপে। সব মিলিয়ে আমি দেখলাম যে ইন্দ্রনীল একদম উপযুক্ত ছেলে। ইন্দ্রনীল ওকে দিয়ে ইউরোপের কিছু কাজ উঠাতে পারবে।”
দেবায়ন অনুপমার দিকে তাকায়। অনুপমা ওর বাবাকে বলে, “বাইরের প্রোজেক্ট এলে খুব ভালো। তবে আমার মনে হয় এখানের কাউকে নিযুক্ত করলে ভালো হত।”
মিস্টার সেন, “ইন্দ্রনীল ইউরোপে বড় হয়েছে, ওখানে পড়াশুনা করেছে। অইখানের মানসিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবে ওয়াকিবহাল। ওর হাত দিয়ে ব্যবসা আসা বেশি সুবিধাজনক। সবকিছু ভেবেই আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।”
অনুপমা, “কিন্তু বাবা, এই ফার্ম আমাদের। এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একবার আমাদের জানালে বড় ভালো হত।”
মিস্টার সেন, “জানি সেটা। বলতাম তোদের। আমি আর দেবায়ন পরের মাসে হোটেলের কাজে বের হতাম। সেই সময়ে ওর সাথে এই সব নিয়ে আলোচনা করতাম। আমি সব কিছু ভেবে চিন্তেই পদক্ষেপ নেই, আর দেবায়নের আশা করি কোন অমত নেই।”
দেবায়ন মিস্টার সেনকে আহত না করে অনুপমাকে বলে, “ঠিক আছে, কাকু যখন বলছেন তখন সেটাই হবে। আর তুমি যেটা বলেছ সেটা আমরা করব।”
মিস্টার সেনকে বলে, “কাকু, আমাদের একটা কথা আছে এখানে। ওকে নিযুক্ত করা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই তবে ওকে এক মাসের মধ্যে বিজনেস নিয়ে আসতে হবে।”
মিস্টার সেন হেসে বললেন, “হুম বুঝতে পারছি। ইন্দ্রনীলের ব্যাপারে আমার এইটুকু খবর তোমাদের দেবার ছিল। এরপরে তোমরা কি করে ওকে কাজে লাগাবে সেটা তোমাদের ব্যাপার।”
আলোচনা পর্ব শেষে দেবায়ন গেস্টরুমে চুপচাপ বসে চিন্তায় মগ্ন। মিস্টার সেনের কপালের রেখা ওকে বলছে যে মিস্টার সেন কিছু লুকিয়ে গেছেন ওদের কাছ থেকে। অনুপমার সামনে সরাসরি প্রশ্ন করতে চায়নি, হয়ত আবার কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে আসবে সেই দ্বিধায়। ঠাণ্ডা বেশ ভালোই পড়েছে। দেবায়ন একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনুপমার অপেক্ষা করে। সেদিন আর উপরে অনুপমার রুমে যায় না। ওইখানে অনুপমার সাথে পায়েল থাকে। পায়েল আর সেই আগের মেয়েটা নেই, যে এক সাথে দুই রমণীর সাথে খেলায় মেতে উঠতে পারবে।
চলবে
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment