CH Ad (Clicksor)

Friday, January 17, 2014

পাপ কাম ভালোবাসা_Written By pinuram [সপ্তদশ পর্ব (চ্যাপ্টার ১ - চ্যাপ্টার ৩)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




পাপ কাম ভালোবাসা
Written By pinuram






সপ্তদশ পর্ব (#01)

দিল্লীর এক বিশাল পাঁচ তারা হোটেলের কামরায় বসে দেবশ্রী। শুক্রবার কোলকাতা ফিরে যাবার কথা ছিল, সেটা আর হয়ে উঠল না। ব্যাঙ্গালোর থেকে শুক্রবার দিল্লী চলে আসতে হয় দেবশ্রীকে। অনুপমা ফোনে জানিয়ে দিয়েছে যে বোর্ডিং পাস পেয়ে গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যে প্লেনে চাপবে ওরা। বুকের মাঝে ধুকপুক করতে শুরু করে দেবশ্রীর, একমাত্র ছেলেকে ছেড়ে এতদিন বাড়ির বাইরে কাটায়নি কোনদিন। বিগত পনেরো দিন ওর জীবনে অনেক ঢেউ এসে দোলা দিয়েছে, এই ঢেউয়ের দোলা দেবায়নের জীবন আন্দোলিত করবে সেটা নিশ্চিত। দেবায়নের জীবন আন্দোলিত হলে অনুপমার জীবন আন্দোলিত হবে, তাই দুই জনকে ডাকা। দেবশ্রী ভেবে পায়না দেবায়নকে কি বলবে, বলার অনেক কিছু আছে কিন্তু কি করে বলবে। ব্যাগ গুছানো হয়ে গেছে, একটু পরে চেক আউট করে নেবে হোটেল থেকে। গাড়ি নিয়ে এয়ারপোর্ট তারপরে সেই গাড়ি করে সোজা মুসউরির পথ ধরবে। মুসউরিতে গিয়ে পরে ধিরে সুস্থে ছেলেকে কাছে বসিয়ে সব বুঝিয়ে বলবে।

চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঠিক পনেরদিন আগের রবিবারের রাত। কোনদিন প্লেনে চাপেনি দেবশ্রী, প্রথম বার প্লেনে চেপে দিল্লী, অফিসের কাজে আসা। প্লেনে জানালারা ধারে সিট পেয়েছিল, কিন্তু এত ভয় করছিল যে চোখ বন্ধ করেছিল সারা রাস্তা। এয়ার হস্টেসেটের কাছে জল চেয়ে চেয়ে প্রায় দুই লিটার জল শেষ করে দিয়েছিল। বারেবারে কান বন্ধ হয়ে যায়, গলা শুকিয়ে আসে। পার্স খুলে বারেবারে ওর চোখের মানিক, দেবায়নের ছবিটা খুলে দেখে। বছর পাঁচেক আগে ছেলেকে নিয়ে শান্তিনিকেতন পৌষ মেলায় ঘুরতে গিয়েছিল, সেখানে নাগরদোলা থেকে নেমেই দেবায়ন বমি করে একাকার করে দিয়েছিল। কথাটা মনে পরে যেতেই হাসি পেয়ে যায়, ছেলের চোখ মুখ মুছিয়ে তারপরে একটা ফটো তুলেছিল মা আর ছেলে। দেবায়নের ঠোঁটে কোনোরকমে টানা হাসি, ইচ্ছে করেই রেখেছে দেবশ্রী ওই ফটোটা, কারন নাগোরদোলা থেকে নেমে ছেলে আর মায়ের হাত ছারেনি, শক্ত করে ধরেছিল যতক্ষণ না হোটেলে ফিরে এসেছিল।

কোম্পানির উচ্চ পদস্থ কর্তারা ওকে চিফ রিক্রুটার নিযুক্ত করেছে। সাথে আরও কয়েক জন থাকবে ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য কিন্তু অন্তিম নির্ণয় দেবশ্রীকে নিতে হবে। দিল্লীতে নামল দেবশ্রী, রাত প্রায় দশ’টা, জিএম এইচআর, মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর বলে রেখেছিলেন যে ওর জন্য লোক আর গাড়ি পাঠাবে। মনীষা নামে একজন দিল্লীর এইচ আর ডিপার্টমেন্ট থেকে ওর এসিস্টেন্ট হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে। দিল্লী টার্মিনাল থেকে বের হতেই সামনে প্লাকারড নিয়ে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে, তার পাশে একটা মেয়ে। ছেলেটা নিজের পরিচয় দেয়, শান্তনু দুবে আর মেয়েটা মনীষা জিন্টা। শান্তনু দেবশ্রীকে নিয়ে হোটেলে পৌঁছে দেয়। দক্ষিণ দিল্লীর নাম করা পাঁচতারা হোটেলে দেবশ্রীর থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। রাতে মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর ফোন করে খবরা খবর নেন, কোনোরকমের অসুবিধে হলে শান্তনুকে জানাতে। মনীষা জিন্টা, বেশ হাসিখুশি চটপটে মেয়ে, বেশি বয়স নয়, দুই বছর হল পড়াশুনা শেষ করে কাজে জয়েন করেছে। মনীষাকে নিজের এসিস্ট্যান্ট হিসাবে পেয়ে বেশ খুশি হল দেবশ্রী। শান্তনু বিহারী ছেলে আসানসোলে বাড়ি সেই সুত্রে বাংলা জানে। বিদেশ বিভূঁইয়ে এসে বাংলা কথা বলার লোক পেয়ে দেবশ্রী বেশ খুশি। শান্তনু এডমিনে আছে, এই রিক্রুটমেন্টের সব ব্যাবস্থা শান্তনুর ঘাড়ে।

পরের দিন সকালে মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর আসেন দেবশ্রীর সাথে দেখা করতে, সেই সাথে বাকি টিমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ইন্টারভিউ প্যানেলে চারজন, দুইজন টেকনিকাল দুই জন মার্কেটিং আর সেলস থেকে। টেকনিকালে, একজন দিল্লী থেকে, মিস্টার আশিস কুমার, অন্য জন বম্বে থেকে মিস্টার পার্থ কেলকর। মার্কেটিঙে একজন দিল্লী থেকে নিযুক্ত, বাঙালি ভদ্রলোক, মিস্টার ধৃতিমান দেবনাথ, অন্যজন পুনের অফিসের আনন্দ সিনহা। দেবশ্রী, দেবায়ন আর অনুপমার বায়না অনুযায়ী সুট পরেছিল, অফিসে পা রাখতেই অনেকের চোখ দেবশ্রীর দিকে চলে যায়। সবার নজর প্রথম দিনেই দেবশ্রীর উপরে পরে, সুন্দরী, সম্ভ্রান্ত সেই সাথে ঋজু প্রকৃতির মহিলা। কথাবার্তা আময়িক বুদ্ধিদীপ্ত কিন্তু দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া যায়। বিগত চোদ্দ পনেরো বছরে দেবশ্রী অনেক কিছু শিখেছে, কার সাথে কি রকম ভাবে কথা বলে কাকে কিভাবে বশ মানাতে হয়। ছেলেদের নজর আজকাল আর গায়ে লাগেনা, মনে মনে হাসে দেবশ্রী। প্রথম দিনে দেবশ্রীর কাজ বিশেষ কিছু নেই। যাদের ইন্টারভিউ নিতে হবে তাদের তালিকা আগে থেকে তৈরি করে রেখেছে মনীষা, সেই অনুযায়ী ডাকা হবে ইন্টারভিউ নিতে।

মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর দেবশ্রীকে বলেন একবার গুরগাও হেডফিসে যেতে। সিইও মিস্টার ব্রিজেশ ত্রিপাঠি একবার দেবশ্রীর সাথে দেখা করতে চান। দেবশ্রী যেহেতু আগে কোনদিন দিল্লী অথবা কোথাও যায়নি তাই সিইও সাথে কোনদিন দেখা হয়নি। দেবশ্রী মনীষাকে নিয়ে মিস্টার হেমন্তের সাথে গুরগাও অফিসে রওনা দেন। রাস্তায় যেতে যেতে মিস্টার হেমন্ত জিজ্ঞেস করেন দেবশ্রীর কথা, কোলকাতায় কোথায় বাড়ি, ইত্যাদি। মিস্টার হেমন্তের সাথে বার কয়েক কোলকাতার অফিসে দেখা হয়েছিল। হেড অফিসে ঢুকে মনে হল, বেশ বড় অফিস, কোলকাতা অফিসের চেয়ে অনেক অনেক বড়। অফিসে পা রাখার পরে সবার চোখ চলে যায় দেবশ্রীর দিকে, পুরদস্তুর প্রফেশানাল চালচলন। সিইও সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর।

মিস্টার ব্রিজেশ দেবশ্রীকে দেখে হাত বাড়িয়ে বসতে বলে, “আশা করি কোন কষ্ট হয়নি।”

দেবশ্রী হেসে জবাব দেয়, “প্লেনে চেপে দিল্লী আসা, একটা পাঁচতারা হোটেলে থাকা, তার উপরে এবার একটা এসিস্ট্যান্ট। এসবে অভ্যস্ত নই তাই একটু কষ্ট হয়েছে বইকি।”

মিস্টার ব্রিজেশ নিজের পরিচয় দেয়, “ম্যাডাম, আমি বছর চারেক হল এই কোম্পানি জয়েন করেছি। এর আগে আমি বিদেশে ছিলাম, অনেক দেশ ঘুরে, অনেক কোম্পানি অনেক প্রোফাইল বদলে এই কোম্পানি জয়েন করি। মিস্টার হেমন্ত আপনার ব্যাপারে অনেক কিছু আমাকে জানিয়েছে, আপনিও আমাদের কোম্পানি চার বছর আগে জয়েন করেছেন।” 

মিস্টার হেমন্ত বলে, “আপনার সাথে একটু অন্য কথা ছিল আমাদের।” 

দেবশ্রী, “হ্যাঁ বলুন?”

মিস্টার হেমন্ত, “আমি আর ব্রিজেশ এই চিফ রিক্রুটার পদে কাউকে নিযুক্ত করার সময়ে অনেক ধন্দে পড়েছিলাম। এখানে যে এইচ আর ডিপার্টমেন্টে কোন ডিজিএম নেই, একজন সিনিয়র ম্যানেজার আছে। এই রকম মাস স্কেলে আমাদের অফিসে রিক্রুট্মেন্ট হয়েছিল বছর চাকের আগে, তারপরে আর হয়নি। ব্রিজেশ আমাকে প্যানেলে থাকতে অনুরোধ করেছিল, কিন্তু আমি মানা করে দিলাম, বললাম । আপনাকে নিযুক্ত করার আসল উদ্দেশ্য জানাই আপনাকে। আপনি বুদ্ধিমতী, আপনি সহজে বিচলিত হন না। গত বছর কোলকাতায় একটা প্রবলেম হয়েছিল কিছু প্রোজেক্ট নিয়ে আর সেটা আপনি খুব পটুহস্তে সমাধান করেছিলেন।”

দেবশ্রীর মনে আছে, একটা প্রোজেক্ট টেকনিকাল কারনে কিছু দিনের জন্য দেরি হয়ে যায়, বাইরের একটা কোম্পানির প্রোজেক্ট ছিল সেটা, ক্লায়েন্টের অনেক চাপ ছিল ঠিক সময়ে প্রোজেক্ট ডেলিভার হচ্ছে না বলে। শেষ পর্যন্ত দেবশ্রী নিচের স্টোর রুমে আগুন ধরাতে বলে, আগুন এমন ভাবে ধরান হয় যাতে টেকনিকালের লোকেদের কোন অসুবিধে না হয়ে বাকি অফিস বন্ধ হয়ে যায়। এই ভাবে টেকনিকালের লোকেরা হাতে এক সপ্তাহ বেশি পেয়ে যায় কাজ শেষ করার জন্য। বাইরের টিম যখন পর্যবেক্ষণ করতে আসে তারা আগুন দেখে এবং বাকি রিপোর্ট দেখে সন্তুষ্ট হয়। এই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় উপর মহলে ছড়াতে বেশিক্ষণ সময় লাগে নি। বিকেলের মধ্যে মিস্টার হেমন্ত এবং কোম্পানির বাকি উচ্চ পদস্থ কর্তারা দেবশ্রীর সাথে দেখা করার জন্য কোলকাতা পৌঁছে গিয়েছিলেন।

দেবশ্রী হেসে বলে, “হ্যাঁ স্যরা আমার বেশ ভালো ভাবে মনে আছে।” 

মিস্টার ব্রিজেশ, “আপনি সেদিন তাবড় তাবড় এমবিএ করা অথবা অভিজ্ঞ মানুষদের পিছিয়ে দিয়েছিলেন আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে। আপনি চাইলে অনেক উপরে উঠতে পারেন।”

দেবশ্রী, “স্যার, আমি সামান্য বি এ পাশ। চাকরি করব, পড়াশুনা করব সেটা কোনদিন মাথায় ছিল না আমার। যা করেছি সব চাকরি করতে করতে আর ছেলে মানুষ করতে করতে করা।”

চোখের কোল ভরে আসে দেবশ্রীর। ধরা গলায় বলে, “শুধু ছেলেটার মুখ চেয়ে আমি চাকরি করতে নেমেছিলাম, না হলে আমি কিছু করতাম না।”

মিস্টার হেমন্ত বলেন, “দেখুন, আমি জানি আপনার যোগ্যতা কি। আমি আজ পর্যন্ত অনেক এমবিএ প্রফেশানাল দেখেছি, আমার অফিসে এইচ.আর ডিপার্টমেন্টে ভর্তি এমবিএ। তাদের সাথে আপনার অনেক তফাত, আর সেইজন্য আপনাকে চিফ রিক্রুটার হিসাবে নিযুক্ত করা। আমরা, এইচ.আর ডিপার্টমেন্ট হচ্ছে চাষার মতন। মাটি খুঁড়ে আসল রত্ন বের করে আনার কাজ আমাদের। কিন্তু সেই চাষিদের মধ্যে পার্থক্য আছে, ম্যাডাম। আমি যা দেখেছি, বা যাদের দেখেছি তারা সব তাবড় তাবড় জায়গা থেকে পাশ করে বেড়িয়েছে। তারা সবাই ট্রাক্টরে বসে, তাদের পা মাটিতে পরে না, তারা কাদা ঘাটেনা। বৃষ্টি পড়লে ট্রাক্টরের মাথায় ঢাকনা থাকে সেই ঢাকনা ওদের ঝড় বৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে দেয়। কিন্তু আপনি অন্য ধরনের চাষি। আপনি, লাঙ্গল মাটির এক হাত নিচে গেঁথে, খেত জোতেন। আপনার নগ্ন পায়ে মাটি লেগে থাকে, আপনার নাকে ভেসে আসে মাটির গন্ধ। বৃষ্টি বাদলে, আপনার মাথায় ছাতা থাকে না, কিন্তু আপনি নিজের কাজ করে যান। পুথিগত বিদ্যে নিয়ে সবাই এসেছে, সেখানে আপনি এসেছেন নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে। এতদিনে যাদের দেখেছি, এই করপোরেট দুনিয়ায় সবাই খুব ম্যানিপুলেটিভ, সেখানে আপনি সবাইকে বুঝিয়ে মাথা ঠাণ্ডা করে কাজ করান। আমি নিজের একটা উদাহরন দেব, কাউকে যদি সরাতে হয় তাহলে আমি হয়ত দুই জনের মধ্যে মারামারি লাগিয়ে দেব, এবং দুরে বসে দেখব ওদের মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী। যে বেশি শক্তিশালী আমি তার দিকে ঝুঁকে যাব, আর অন্য জনকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেব। সেইখানে আপনি থাকলে, দুইজনের মধ্যে বোঝাপরা করিয়ে দেবেন, একজনকে আপনি পোষ্ট দিয়ে শান্ত করাবেন, একজনকে মাইনে দিয়ে, কি ঠিক বলছি।” 

দেবশ্রী মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ।”

ও কোনদিন কারুর সাতে মারামারি যুদ্ধ হোক সেটা চায় না। দেবশ্রী সবসময়ে চায় সবার মাঝে হৃদ্যতা ভালোবাসা বিরাজ করুক। 

মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর বলেন, “আমি বছর তিনেক পরে রিটায়ার নিতে চাই। মেয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকে, অনেকদিন ধরে তার কাছে যাওয়া হয়নি। এবারে কারুর হাতে ভার সঁপে আমি আমার নাতি নাতনির কাছে যেতে চাই। তাই ব্রিজেশকে আমি জানালাম যে আমার পদে এমন কাউকে নিযুক্ত কর, যার পুথিগত বিদ্যে হয়ত না থাকতে পারে কিন্তু সে অনেক বুদ্ধিমান হবে নিজ গুনে। আমি ব্রিজেশকে আপনার নাম বলি। ব্রিজেশ আপনার সাথে দেখা করতে চাইল। আমি আপনার সব কিছু জানালাম, ব্রিজেশ আমাকে বলল যে আপনাকে চিফ রিক্রুটার নিযুক্ত করতে। ব্যাস আর আপনি এখানে।”

সব শুনে দেবশ্রী হাসবে না কাঁদবে ভেবে পেল না। দেবশ্রী কোনদিন ভাবেনি এত বড় পদের জন্য ওকে নিযুক্ত করা হবে। দেবশ্রী বুদ্ধিমতী মহিলা, নিজের মনের ভাব সংযত করে বললেন, “স্যার, আপনাদের এই মনোভাব দেখে আর আমাকে আপনারা যে সন্মান দিয়ে কাজে নিযুক্ত করেছেন আমি যথাযথ চেষ্টা করব সেটাকে সফল করতে। কিন্তু আমার একটা বক্তব্য আছে।” 

মিস্টার হেমন্ত, “হ্যাঁ বলুন, নিঃসন্দেহে বলুন।”

দেবশ্রী, “আমার একমাত্র ছেলে দেবায়ন, ওই আমার সব। ছেলের মুখ চেয়ে ওকে বড় করে তোলার জন্য আমি চাকরি করতে নামি। আমার ছেলে এখন কলেজে পড়ে, ফিসিক্স নিয়ে ফাইনাল ইয়ার। ওর পড়াশুনা, তারপরে ওর চাকরি বাকরি ওর ইচ্ছেই আমার ইচ্ছে। ও যদি কোলকাতা না ছাড়তে চায় তাহলে আমার দিল্লীতে আসা হয়ে উঠবে না।”

মিস্টার ব্রিজেশ একটা খাম দেবশ্রীর হাতে ধরিয়ে বললেন, “ম্যাডাম, আমি জানি যে আপনার এক পুত্রসন্তান আছে। আমি চাই না ওর পরাশুনার মাঝ পথে আপনি এখানে ট্রান্সফার নিয়ে চলে আসুন। আপনার ছেলের কলেজ শেষ হোক, আপনি ছেলের সাথে কথা বলুন। সে যদি চায় চাকরি করতে, আমি এই কোম্পানিতে চাকরি দেব। এখানে জয়েন করুক টেকনিকালে কাজ শিখে অনেক উপরে উঠবে সে ভরসা আছে আমার। ও যদি চায় আরও পড়তে তাহলে এখানে অনেক নাম করা কলেজ আছে, সেখানে এডমিশান পেতে আমি সাহায্য করব। যার মা এত বুদ্ধিমতী এবং সৎ, সে ছেলে কঠিন পরিশ্রমি হবে সেই আশা রাখি। আর এই হচ্ছে আপনার অফার লেটার। আমি জানি কোলকাতায় আপনার নিজস্ব বাড়ি, কোলকাতা, দিল্লীর চেয়ে অনেক চিপ শহর। আমার অফার, আপনার বর্তমান মাইনের দ্বিগুন এবং সাথে অন্য সুযোগ সুবিধে দেব। আপনি যেদিন মনে করবেন যে আপনি দিল্লীতে আসতে চান, চিঠিতে স্বাক্ষর করে পাঠিয়ে দেবেন মিস্টার ঠাকুরের কাছে। ততদিন আমি কাউকে ডিজিএম এইচআর নিযুক্ত করব না। একটু ভেবে দেখবেন আমাদের অফার, ম্যাডাম। আপনার মতন মানুষ পাওয়া অনেক মুশকিল এই পৃথিবীতে তাই আমি নিজে আপনাকে এই চিঠি দিচ্ছি।”

দেবশ্রী অনেকক্ষণ খামের দিকে তাকিয়ে দেখে, খাম থেকে অফার লেটার বের করে পড়ে। দিল্লীতে ডিজিএম এইচ আর পোস্টের অফার, মাইনে কোলকাতার থেকে দ্বিগুন। দেবশ্রী জানায় যে ছেলের সাথে এই বিষয়ে কথা বলার পরেই নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন। মিস্টার ব্রিজেশ আর মিস্টার হেমন্ত জানিয়ে দেন যে তারা দেবশ্রীর উত্তরের অপেক্ষায় থাকবে।

দুপুরে লাঞ্চের সময়ে প্যানেলের বাকি লোকেদের সাথে দেখা। মনীষা আর দেবশ্রী ছাড়া বাকি সবাই ছেলে, হোটেলের নিচে একটা বড় রেস্টুরেন্টে ওদের খাওয়ার ব্যাবস্থা। খাওয়ার সময়ে কাজ নিয়ে কথা হল, সেই সাথে পরিচয় একটু বাড়ল সবার মাঝে। দেবশ্রীর কথাবার্তা বেশ সংযত, মনীষার সাথে কাজ নিয়ে বেশি কথাবার্তা করে।

দেবশ্রী ফিরে আসে হোটেলে, সারা রাত ভাবে কি করবে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওর জীবন। ওর বড়দার বন্ধু সায়ন্তন, কলেজে পড়তে পড়তে প্রেমে পরে পরস্পরের। বড়দার মত ছিল কিন্তু বাড়ির বাকিদের মত ছিল না বিয়েতে। সায়ন্তন বিশেষ বড় চাকরি করত না, বাড়ির অবস্থা বিশেষ ভালো ছিল না ওদের। সায়ন্তন ভাড়া বাড়িতে থাকত, সেই নিয়ে দেবশ্রীর বাবা মায়ের অমত ছিল বিয়েতে। বড়দার ইচ্ছেতে কলেজে পড়তে পড়তে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরে সায়ন্তনের ইচ্ছেতেই গ্রাজুয়েশান পাশ করে। ভাড়া বাড়িতে থাকার খুব সমস্যা ছিল তাই বিয়ের পরে দেবশ্রীকে নিয়ে সায়ন্তন আলাদা হয়ে যায়। ঠিক দুই বছরের মাথায় পেটে দেবায়ন আসে। ওদের ছোটো ঘর খুশিতে ভরে ওঠে, সারাদিন ছেলেকে নিয়ে পরে থাকত দেবশ্রী আর সায়ন্তনের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় সময় কেটে যেত। একদিন হটাত সায়ন্তন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, ডাক্তার দেখানো হয় কিন্তু কিছুদিন পরে হটাত অফিসে হার্টএটাকে দেবশ্রী আর দেবায়নকে একা ফেলে চিরতরে চোখ বন্ধ করে। ছেলেকে নিয়ে অথই জলে পড়েছিল দেবশ্রী, হাতে বিশেষ টাকা পয়সা ছিল না তখন। দুই ননদের বিয়েতে সায়ন্তন টাকা দিয়েছিল তার প্রতিউত্তরে কোন ননদ ওদের সাহায্য করেনা। ওদের রাগ, দাদা কেন বিয়ের পরে আলাদা হয়ে গেছে। দিদিরা তেমন কিছু সাহায্য করেনি সেদিন। সায়ন্তনের অফিসের মালিক দেবশ্রীকে রিসেপশনিস্টের চাকরি দেয়। বড় বৌদিকে লুকিয়ে বড়দা এক লাখ টাকা দিয়েছিল দেবশ্রীকে, সেই টাকা আর জীবন বিমার টাকা মিলিয়ে লেকটাউনে জমি কেনে দেবশ্রী। এল.আই.সি থেকে গৃহ নিরমানের লোণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করে ধিরে ধিরে। রিসেপ্সানিস্টের চাকরির পরে দেবশ্রী পড়াশুনা শুরু করে। কাজের চাপ, বাড়িতে একা ছোটো ছেলে তারপরে পরশুনা, সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিল কিন্তু মনোবল হারায়নি কোনদিন। দেবায়নের বড় হওয়ার সাথে সাথে রিসেপ্সানিস্ট থেকে দেবশ্রীর পদন্নোতি ঘটে। চাকরি বদলে এক অফিসে এইচ.আরে চাকরি পায়। তারপরে আর ফিরে তাকায়নি। আরও দুটি চাকরি বদলে নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। বর্তমান অফিসে জয়েন করেছিল বছর চারেক আগে। সেই থেকে অনেক কাজ বেড়ে গেছে, ছেলের সাথে দেখা সাক্ষাৎ কমে গেছে, কিন্তু ছেলের মুখ দেখেই ও চাকরি করেছিল। দেবায়নের ভবিষ্যৎ, দেবায়নের পড়াশুনা ওকে রাতের পর রাত জাগিয়ে রাখত। বাড়িতে থাকে মা আর ছেলে কিন্তু মনে হত যেন দুটি ভিন্ন প্রদেশের প্রাণী। বিগত কয়েক মাসে ছেলেকে আবার ফিরে পেয়ে দেবশ্রী খুব খুশি। এক মাত্র ছেলে যার সবকিছু কোলকাতায় হয়েছে, সে কি আদৌ কোলকাতা ছেড়ে আসতে চাইবে? দেবায়নের সাথে ফোনে কথা বলার সময়ে এইসব কথা আলোচনা করতে পারে না। মনের মাঝে দ্বিধা বোধ ভর করে, ঠিক করে যে বাড়িতে পৌঁছে ছেলের সাথে মুখোমুখি বসে সব কথা আলোচনা করবে।







সপ্তদশ পর্ব (#02)

যে তিনদিন দেবশ্রী দিল্লীতে ছিল, সেই তিন দিন কাজের পরে মনীষাকে নিয়ে একটু দিল্লীর বাজারে ঘুরল, দেবায়নের জন্য একটা ঘড়ি কিনল আর অনুপমার জন্য একটা জিন্স। দিল্লীতে থাকাকালিন দেবশ্রী লক্ষ্য করে যে ধৃতিমান কোন আছিলায় ওর সাথে একটু মিশতে চায়, একটু বেশি কথা বলতে চায়। দেবশ্রী ধৃতিমানের আচরনে মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যেত। দিল্লীতে শেষ দিন, কাজে খুব ব্যাস্ত দেবশ্রী, ফাইনাল অফার লেটার দেওয়া আর একটা ফাইনাল লিস্ট তৈরি করে হেড অফিসে পাঠানো। মনীষা মাঝে এসে ওর কেবিনে লাঞ্চ রেখে যায়। খেতে খেতে কাজে ব্যাস্ত দেবশ্রী, এমন সময়ে ওর কেবিনে ধৃতিমান প্রবেশ করে। ধৃতিমান রাতের ডিনারের জন্য দেবশ্রীকে নিমন্ত্রন করে। দেবশ্রী জানায় যে সকালে ওদের বোম্বের জন্য বেড়িয়ে পড়তে হবে, সেই অছিলায় দেবশ্রী ডিনারের নিমন্ত্রন কাটিয়ে দেয়। ধৃতিমান শুকনো মুখে বাড়ি ফিরে যায়।

পরের দিন খুব ভোরের ফ্লাইট ধরে সবাই বম্বে পৌঁছে যায়। ফ্লাইটে মনীষার সাথে বসে দেবশ্রী। দেবশ্রী মনীষাকে ধৃতিমানের কথা জিজ্ঞেস করে। মনীষা জানায় যে ধৃতিমান আগে একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে মারকেটিঙ-এ ছিল, দুই বছর হল ওদের কোম্পানি জয়েন করেছে। মানুষ হিসাবে বেশ হাসিখুশি, খেতে খাওয়াতে ভালোবাসে, পার্টি করতে ভালোবাসে। একটু মেয়েদের প্রতি গায়ে পরে কথা বলার স্বভাব আছে তবে অফিসের কোন মেয়ের সাথে দুরব্যাবহার করেনি। দিল্লীতে নিজের একটা ফ্লাটে থাকে, পরিবারে ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানে না তবে স্ত্রী নেই অথবা বিয়ে করেনি। দেবশ্রী দেখল একবার ধৃতিমানের দিকে, ভদ্রলোক দেখতে মোটামুটি, বয়স পঁয়তাল্লিশ ছেচল্লিশের কাছাকাছি। দেবশ্রীর কথা কারুর অজানা নয়, টিমের সবাই জানে যে দেবশ্রী কড়া ধাতের মহিলা হলেও মন ভালো, দেখতে সুন্দরী আর স্বামীর মৃত্যু অনেকদিন আগেই হয়েছে। দেবশ্রী বুঝতে পারে যে প্রথম দেখাতেই হয়ত ধৃতিমানের ওর ভালো লেগেছে। কোন সম্পর্কে নিজেকে জড়াবার আগে বাজিয়ে দেখবে ধৃতিমানকে। ধৃতিমানের আচার ব্যাবহার বেশ ভদ্র, একটু জেচে কথা বলতে চায় দেবশ্রীর সাথে তবে সেটা খারাপ লাগে না দেবশ্রীর। মাঝে মাঝে দেবায়নের মুখ ভেসে ওঠে যখন মনে হয় যে একটু বেশি মাত্রায় ধৃতিমানের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। একমাত্র ছেলের মুখের দিকে চেয়ে পিছিয়ে যায়। বম্বেতে সব কিছু ঝড়ের গতির মতন কেটে যায়। মুম্বাইয়ে যেই কয়দিন ছিল সেই কয়দিন ধৃতিমান বেশ গম্ভির ছিল, কাজ ছাড়া বিশেষ কারুর সাথে কোন কথাবার্তা বলেনি। যে ধৃতিমানকে দিল্লীতে দেখেছিল দেবশ্রী, সেই মানুষ বম্বে এসে আমূল বদলে যায়। অনেকের মনে সেই প্রশ্ন জাগে কিন্তু কেউ যেচে জিজ্ঞেস করার সাহস পায় না ধৃতিমানকে। রোজদিন কাজের শেষে মনীষাকে নিয়ে একটু মুম্বাইয়ের রাস্তায় ঘোরা আর তারপরে নিজের কামরায় ফিরে এসে টিভি দেখা অথবা কাজে ব্যাস্ত থাকা আর কিছু করার থাকেনা দেবশ্রীর।

এর মাঝে একদিন দুপুর বেলায় হটাত করে সূর্যের ফোন। ইতর মনোবৃত্তি নিয়ে দেবশ্রীকে একবার দেখা করতে বলে। দেবশ্রী চুপচাপ শুনে যায় ওদের কথাবার্তা, কেঁদে ফেলে দেবশ্রী যখন সূর্য সবকথা দেবায়নকে জানিয়ে দেবার ধমকি দেয়। দেবশ্রী জানায় না ও কোথায় আছে, শুধু মাত্র বলে যে অফিসের কাজের শেষে একটু ভেবে একটা পথ ঠিক করবে। কাজে কিছুতেই মন বসাতে পারে না। সূর্য আর মণির সাথে অবৈধ এক সম্পর্কের জালে জড়িয়ে পড়েছিল, জানেনা সেই অবৈধ সম্পর্কের বেড়াজাল ওকে কোথায় টেনে নিয়ে যাবে। প্রানপন চেস্টায় আছে সেই বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য। সেই অবৈধ সম্পর্কের কথা কাউকে জানাবার নয়, কাউকে বোঝাবার নয়। অভুক্ত শারীরিক চাহিদা মেটাতে হটাত পা পিছলে দেবশ্রী মনিদিপার তৈরি ফাদে পা দিয়ে দিয়েছিল, সূর্যের সাথে জড়িয়ে পড়েছিল। না চাইতেও সেই সম্পর্কে জড়াতে জড়াতে অনেক হীন মনে হয়েছিল নিজেকে, চেয়েছিল সেই সম্পর্ক ভাঙ্গতে কিন্তু সেই সময়ে সূর্য ওকে ব্লাকমেইল করে। কাজের থেকে অবসর নিয়ে হোটেলে নিজের কামরায় ফিরে যায়। অনেকক্ষণ ধরে কাঁদে, ভেবে কূলকিনারা পায় না নিজেকে কি ভাবে এই বেড়জাল থেকে মুক্ত করবে। দেবশ্রী বুঝতে পারে যদি সূর্যকে বাড়ির দোতলা দেয় তাহলে প্রতি রাতে সূর্যের যৌননিপীড়ন ওকে সহ্য করতে হবে। যদি মনিদিপা আর সূর্য দেবায়নকে সব বলে দেয় তাহলে ওর আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন রাস্তা থাকবে না।

শনিবার কাজ শেষ হতেই বিকেলে ওরা সবাই পুনে চলে আসে। রবিবার একদিন হাতে ছুটি, বিকেলে ছেলেকে ফোন করতেই বুক কেঁপে ওঠে দেবশ্রীর। বড় কান্না পায় ছেলের মুখে “মা” ডাক শুনে। একবার মনে হয় সব ছেড়ে দিয়ে কোলকাতা ফিরে যাক। দেবায়নকে কি করে জানাবে এই দিল্লীর কথা, ওর কোম্পানি ওকে দিল্লীতে ডিজিএম হিসাবে চায়, সেটা ভাবতে শুরু করে। দেবায়নের জন্ম কোলকাতায়, ভালোবাসা কোলকাতায়, বন্ধু বান্ধব কোলকাতায়, সব ছেড়ে দিয়ে কি দেবায়ন দিল্লী আসতে চাইবে? কিন্তু সব মা চায় তার ছেলে এক ভালো জায়গায় চাকরি করুক, তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক, সেই সুযোগ দেবশ্রীর হাতের মুঠোতে। খুব চিন্তিত দেবশ্রী একা একা হোটেলের কামরায় বসে ছিল। এর মাঝে মনীষা একবার এসে ডাক দেয়, জিজ্ঞেস করে কোথাও ঘুরতে গেলে ভালো হয়। বাইরে বের হলে হয়ত মন ভালো লাগবে সেই ভেবে শেষ পর্যন্ত মনীষার সাথে বাজারে বের হয় দেবশ্রী।

বাজারে ধৃতিমানের সাথে দেখা। ধৃতিমান দেবশ্রীকে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করে, “ম্যাডাম তাহলে বাজার করেন? আমি ভাবলাম শুধু কাজ ছাড়া আপনি হয়ত কিছু জানেন না।” 

দেবশ্রী হেসে উত্তর দেয়, “জানলেই কি সব দেখাতে হয় নাকি। কিছু কথা নিজের কাছে রাখা ভালো।”

ধৃতিমান, “হ্যাঁ, সারা অফিস আপনার গুণগান করে। গত সাতদিনে মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর আর মিস্টার ব্রিজেশ ত্রিপাঠি আপনাকে একদম মাথায় করে রেখেছে। কি ব্যাপার বলুন তো?”

দেবশ্রী হেসে উত্তর দেয়, “দুষ্টু ছেলেরা যাতে নিজেদের কাজ সুস্থ ভাবে করে তার দ্বায়িত্ব আমার ঘাড়ে, সেইজন্য মিস্টার ঠাকুর একটু আমার দিকে নজর রাখছেন।”

ধৃতিমান হেসে দেয়, “ভালো বলেছেন, সব বুড়ো ছেলে গুলো একেবারে বখাটে হয়ে গেছে।”

দেবশ্রী, “আপনি যেন শান্ত ছেলে?” 

ধৃতিমান, “তাহলে শেষদিনে ডিনারে ডাকলাম এলেন না যে?”

দেবশ্রী মিষ্টি হেসে বলে, “সবাইকে ছেড়ে আমাকে ডিনারে ডাকলেন, কি করে বুঝবো আপনার আসল উদ্দেশ্য?”

ধৃতিমান, “আজকে যদি ডিনারে ডাকি তাহলে আশা করি নিমন্ত্রন রক্ষা করবেন?”

মনীষা চোখ টিপে দেবশ্রী কে ইঙ্গিতে জানায়, “ম্যাডাম, আপনি ফেঁসে গেছেন।” 

মনীষার চোখের ইঙ্গিতে দেবশ্রীর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, মনীষার গালে আলতো চাটি মেরে কানেকানে বলে, “ওর ঘাড় ভেঙ্গে ডিনার করতে পারলে ভালো।”

ধৃতিমান দেবশ্রীর একাকী সান্নিধ্য চাইছিল, দেবশ্রী চায়না সেই পথে পা বাড়াতে। বুদ্ধিমতী দেবশ্রী হেসে বলে, “বলুন কোথায় নিয়ে যেতে চান, সেইসাথে বাকিদের ফোন করেদিন। মনীষা সাথেই আছে, শান্তনুকে আমি ডেকে নিচ্ছি।”

কিছু পরে মনীষা জানায় যে হোটেলে ফিরে গেলে ভালো হয়। দেবশ্রী মনীষাকে বলে যে ধৃতিমান সেই রাতের ডিনার খাওয়াতে চায় সবাইকে। দিয়ে শান্তনুকে ডেকে পাঠায়। ধৃতিমান মাথা চুলকিয়ে বাকিদের ফোন করে দেয়। ধৃতিমান জানায় যে পুনেতে একটা খুব ভালো সি ফুড রেস্টুরেন্ট আছে, সেখানে যাওয়া যেতে পারে। দেবশ্রী সি ফুড বলতে শুধু মাত্র লটে মাছ ছাড়া আর কিছু খায়নি। ধৃতিমান জানায় ওই রেস্টুরেন্টে হাঙ্গরের সুপ, বড় বড় অস্ট্রেলিয়ান কাঁকড়া, অক্টোপাস, স্কুইড এবং আরও ভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক জীব পাওয়া যায়। এইসবের নাম শুনে দেবশ্রী একটু দমে যায়, নাক কুঁচকে জানিয়ে দেয় যে হাঙ্গর, অক্টোপাস ইত্যাদি খেতে নারাজ তবে বাকিরা ইচ্ছে করলে খেতে পারে। মনীষা জানায় এমনি মাছ ছাড়া কোনদিন কিছু খায় নি তাই বাকি ডিশ একাবার চেষ্টা করে দেখতে ওর আপত্তি নেই।

ধৃতিমান হেসে দেবশ্রীকে বলে, “আপনার এসিস্ট্যান্ট আপনার চেয়ে বেশি স্মার্ট দেখছি।”

দেবশ্রী, “হতেই পারে, আমি ছাপোষা বাঙালি ঘরের মেয়ে।”

ধৃতিমান আপাদমস্তক দেবশ্রীকে নিরীক্ষণ করে বলে, “আপনি অফিসে বিজনেস সুট পরে আসেন, কয়জন ছাপোষা বাঙালি বৌ অফিসে বিজনেস সুট পরে আসে একবার বলতে পারেন?”

হেসে ফেলে দেবশ্রী, “ওটা আমার ছেলের খুব শখ, মাকে পাওয়ার ড্রেসিং করাবে।”

ধৃতিমান, “তার মানে আপনার ছেলে অনেক স্মার্ট।”

দেবশ্রী, “হ্যাঁ, তা বটে। সব মায়ের কাছে তার ছেলে বিশ্বের সবথেকে সুন্দর, সব থেকে ভালো ছেলে হয়। আমার ছেলে আমার কাছে ঠিক সেই রকম।”

বাকিরা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে যায়। ধৃতিমান দেবশ্রী আর মনীষাকে নিয়ে টেবিলের যোগাড় করে ফেলে। আশিস, পার্থ, ধৃতিমান রেড ওয়াইনের সাথে স্কুইডের অর্ডার দেয়। দেবশ্রী কাঁকড়া আগেও খেয়েছে তাই অস্ট্রেলিয়ান কাঁকড়ার অর্ডার দেয়। কাঁকড়ার সাথে একটু রেড ওয়াইন নিয়েছিল সবার জোরাজুরিতে। প্রথম বার সবার কাছে চাপে পরে একটু ওয়াইন নিয়ে দেবশ্রী চাপে পরে যায়, এক চুমুক দেবার পরে গা গুলিয়ে ওঠে। ডিনারের সময়ে মনীষা আর শান্তনু পরস্পরের সাথে গল্পে মত্ত। দেবশ্রী মিচকি হেসে একবার মনীষাকে জিজ্ঞেস করে শান্তনুর ব্যাপারে। মনীষার লাজুক হাসি জানিয়ে দেয়, যে মনীষা আর শান্তনু পরস্পরের প্রেমে মজে গেছে। ডিনারের সময়ে বেশির ভাগ আলোচনা কাজের মাঝে ঘোরাফেরা করে। একবার আশিস দেবশ্রীর কাছে দেবায়নের কথা জানতে চায়, দেবশ্রী সংক্ষেপে ছেলের কথা জানায়। নিজের বিগত জীবনী কারুর সামনে তুলে ধরতে একদম পছন্দ করে না দেবশ্রী, কারুর সামনে যেচে হাত পাতার পাত্রী নয়। চোদ্দ বছর আগে নিজের দাদার কাছে ফিরে গেছিল, বৌদি যন্ত্রণায় সেখানে বেশিদিন টিকতে পারেনি। নিকট আত্মিয়রা বিশেষ কেউ সাহায্য করেনি একমাত্র ওর বড়দা ছাড়া। সায়ন্তনের অফিসে চাকরি পাওয়ার পরে আর পেছনে ফিরে তাকায়নি দেবশ্রী। ডিনার শেষে সবাই ফিরে আসে হোটেলে। রাস্তায় আসার সময়ে দেবশ্রীর চোখের সাথে বারেবারে ধৃতিমানের চখাচুখি হয়। ধৃতিমানের চোখ দেখে বুঝে যায় দেবশ্রী যে ধৃতিমান ওর প্রেমে পরে গেছে। হোটেলে ঢুকেই ধৃতিমান বারের দিকে হাটা দেয়, দেবশ্রী ওর দিকে তাকিয়ে একবার বারন করে। ধৃতিমান ম্লান হেসে জানিয়ে দেয় যে একটা ছোটো ড্রিঙ্ক নিয়ে নিজের কামরায় ফিরে যাবে।

নিজের রুমে ঢুকতে গিয়ে একবার মনীষার দিকে তাকাল, শান্তনু আর মনীষা প্রেমে বিভোর। মনে মনে হাসল দেবশ্রী, বুঝতে দেরি হল না যে এই রাত ওদের দুইজনের মিলনের রাত হবে। হৃদয়ের রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠল দেবশ্রীর। বেশ গরম পড়েছে, কাপড় ছেড়ে বাথরুমে ঢুকে পরে। একবার স্নান করে নিয়ে শুতে গেলে ভালো হয়। স্নানের সময়ে নিজের দিকে তাকায় দেবশ্রী, বয়সের ভার শরীরে বিশেষ ছোঁয়া লাগাতে পারেনি। কাজের চাপের মধ্যেও নিজেকে ফিটফাট রেখেছে, বয়সের ভারে দুই স্তন আরও বড়বড় হয়ে গেছে, একটু ঝুলে গেছে। পেটে নাভির চারপাশে একটু মেদ জমে উঠেছে, শরীরে থলথলে ভাব নেই তবে নধর দেহপল্লব। ঊরুর মাঝে চোখ যেতেই রক্ত যেন আরও চঞ্চল হয়ে ওঠে। ঊরুসন্ধি ঘন কালো কুঞ্চিত যোনিকেশে ঢাকা, বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে। মাঝে মাঝে এই শরীরের জৈবিক চাহিদা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, আপনা হতেই হাত চলে যায় স্তনের উপরে। দুই স্তন হাতের মুঠিতে নিয়ে আলতো টিপে আত্মসুখ মোচনে মেতে ওঠে। স্তনের বোঁটা ফুলে ওঠে কামোত্তেজনায়, উরুসন্ধিতে তিরতির করে উষ্ণ প্রস্রবনের ধারা বইতে শুরু করে দেয়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওর ভালোবাসা, সায়ন্তনের চেহারা। সায়ন্তন ওকে নিবিড় করে বুকে জড়িয়ে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে তুলেছে। হটাত করে কান্না পায় দেবশ্রীর, বুক ভাঙ্গা চাপা কান্না। দেবশ্রী বাথরুমের ভিজে মেঝের উপরে লুটিয়ে পরে। শাওয়ারের জলের সাথে চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। প্রবোধ দেয় নিজেকে, শক্ত করে নিজেকে, নিজেকে বোঝায় দেবশ্রী।

দেবশ্রী হটাত ওর মাথার মধ্যে ওর ভালোবাসা, সায়ন্তনের কণ্ঠস্বর শোনে, “ওঠ শ্রী, তুমি বাইরে থেকে অনেক ঋজু মহিলা হলেও, তোমার হৃদয় বড় নরম। শ্রী, আমাকে আর কতদিন নিজের বুকে বেঁধে রাখবে? ছেলের মত আছে, শ্রী, নিজের জীবন এবারে নিজের মতন করে একটু বাঁচো, সোনা। ছেলে বড় হয়েছে, দেবায়ন আর ছোটো সেই স্কুলে যাওয়া ছেলে নেই। দেবায়ন তোমার মনের ব্যাথা বুঝবে শ্রী। ওঠ, উঠে দাঁড়াও, চোখ মুছে নাও সোনা, বাইরের পৃথিবীতে কেউ একজন হয়ত তোমার ভালোবাসার পরশের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। খুঁজে নাও তাকে শ্রী।”

চোখের জল মুছে, স্নান সেরে বেড়িয়ে এসে একটা পাতলা মাক্সি পরে নেয়। আয়নার সামনে বসে রাতের প্রসাধনি সেরে ফেলে। ওয়াইন খাওয়া ঠিক হয়নি, একটু কোল্ড ড্রিঙ্কস পেলে বড় ভালো হত। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আপাদমস্তক দেখে, সায়ন্তন কি চায়? ওই কণ্ঠস্বর কি ওর নিজের? সত্যি কি কেউ ওর জন্য দাঁড়িয়ে দুই হাত বাড়িয়ে? কিন্তু ভয় হয়, আবার যদি কেউ ফাদ পেতে বসে থাকে। দেবায়নকে ফোন করতে গিয়েও আর করে না, বারেবারে ছেলেকে ফোন করে বিরক্ত করা। ঠিক সেই সময়ে হোটেলের ফোন বেজে ওঠে, অন্যপাশে ধৃতিমানের কণ্ঠস্বর শুনে বুক তীব্র বেগে ধুকপুক করে ওঠে। ধৃতিমানের চোখের চাহনি, গভীর কণ্ঠস্বর, কার ডাকে স্বারা দেবে দেবশ্রী? হটাত এত রাতে ফোন? কণ্ঠস্বর সংযত রেখে জিজ্ঞেস করে ফোন করার কারন।

ধৃতিমান, “ম্যাডাম, আপনাকে বড় দেখতে ইচ্ছে করছে।”







সপ্তদশ পর্ব (#03)

ধৃতিমানের আব্দার শুনে প্রথমে রাগ হয় দেবশ্রীর। এতরাতে এইরকম এক আব্দার, চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। সংযত কণ্ঠে জবাব দেয় দেবশ্রী, “অনেক রাত হয়ে গেছে, আপনি ড্রিঙ্ক করেছেন। তাড়াতাড়ি শুতে যান, কাল সকালে আমাদের অনেক কাজ আছে।”

ধৃতিমান, “আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম, একটা ছোটো পেগ নেব, আমি একটা ছোটো পেগ নিয়েছি, বেশি খাইনি।”

দেবশ্রী, “ভালো, শুনে খুশি হলাম যে আপনি আমার কথা রেখেছেন।”

ধৃতিমান, “আপনার কণ্ঠ স্বর বড় মধুর ম্যাডাম, আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।”

দেবশ্রীর ধৃতিমানকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ, বলুন কি বলতে চান।”

ধৃতিমানের গলা হটাত ধরে আসে, “অনেক দিন কারুর সাথে মন খুলে কথা বলতে পারিনি, তাই আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল। বুকে বড় পাপবোধ জেগে উঠেছে, ম্যাডাম। সেই বেদনা ঢাকতে আমি ড্রিঙ্ক নিয়ে বসেছিলাম, আর আপনার কথা মনে পরে গেল।”

কথাটা শুনে দেবশ্রীর সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়। এই অশ্রু সিক্ত কণ্ঠের পেছনের ধৃতিমানকে জানার ইচ্ছে প্রবল হয়ে ওঠে। দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “আপনার কি হয়েছে?”

বুক ভরে শ্বাস নেয় ধৃতিমান, “বড় কষ্ট, আমি বড় অপরাধী, ম্যাডাম।”

ধৃতিমানের কণ্ঠ স্বর শুনে দেবশ্রী বিচলিত হয়ে ওঠে, “সত্যি বলুনত আপনার কি হয়েছে? আপনি কোথায়?”

ধৃতিমান, “আমি বারে বসে আছি। একটা পেগ নিয়েছি, কিন্তু কিছুতেই শেষ করতে পারছি না।”

ধৃতিমানের গলার স্বরে বেদনা। বহু মানুষের সাথে ওঠাবসা করেছে দেবশ্রী, কার কণ্ঠস্বর কি বলতে চাইছে সেটা ভালো ভাবেই জানে। ধৃতিমানের কণ্ঠে পাপবোধ ছলকে পড়ছে, কারন জানতে উন্মুখ হয়ে ওঠে দেবশ্রী। তাড়াতাড়ি একটা মাক্সি ছেড়ে, জিন্স আর শার্ট পরে হোটেলের বারে ঢোকে। রাত অনেক হয়ে গেছে, হৃদপিণ্ড ধুকপুক করছে এক অজানা আশঙ্কায়। বারের এক কোনায় দুই মহিলার সাথে একজন লোক বসে। অন্য কোনায় একা ধৃতিমান এক গ্লাস স্কচ নিয়ে চুপচাপ বসে। দেবশ্রীকে দেখে ধৃতিমান উঠে দাঁড়ায়। দেবশ্রী ধৃতিমানের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে ওই দুই চোখ কিছু বলতে চাইছে দেবশ্রীকে। সামনের সোফার উপরে দেবশ্রীকে বসতে অনুরোধ করে ধৃতিমান। টেবিলের উপরে একটা ছোটো মেয়ের হাসিখুশি ছবি। 

ধৃতিমান ম্লান হেসে গ্লাসে একটা ছোট্ট চুমুক দিয়ে বলে, “আমি স্বপ্নে ভাবিনি আপনি সত্যি আসবেন।”

দেবশ্রী এইরকম ভাবে আসার কারন, নিজেই ঠিক করে জানেনা। দেবশ্রী ধৃতিমানকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে আপনার? এত রাতে আবার ড্রিঙ্ক করতে করতে হটাত আমার কথা কেন মনে পড়ল?”

টেবিলের উপরে থেকে দেবশ্রী ছবিটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখে। হাসি হাসি মুখ, বড় মিষ্টি দেখতে মেয়েটাকে, মেয়েটার নাক, থুতনি ধৃতিমানের মতন। দেবশ্রীর হাতের ছবি দেখিয়ে ধৃতিমান বলে, “আপনার হাতের ছবিটা আমার একমাত্র কন্যের, মল্লিকা দেবনাথ।”

এক অজানা আশঙ্কায় দেবশ্রীর হৃদয় ধুক করে ওঠে। ধৃতিমান বলে, “দিল্লিতে ডিপিএস এ ক্লাস এইটে পড়ে। দুই বছর পরে স্কুল ফাইনাল দেবে।”

বড় একটা পাথর বুকের উপরে থেকে সরে যায়, দেবশ্রীর। ধৃতিমান বলে, “জানেন ম্যাডাম, মলির চেহারা, মলির চোখ দুটি ওর মায়ের কথা আমাকে বারেবারে মনে করিয়ে দেয়।”

দেবশ্রী একবার ভাবে ধৃতিমানের স্ত্রীর কথা জিজ্ঞেস করবে। ধৃতিমান, “আপনি হয়ত লক্ষ্য করেছিলেন যে আমি মুম্বাই থাকাকালীন খুব চুপচাপ ছিলাম।” 

দেবশ্রী মাথা নাড়ায় “হ্যাঁ, করেছিলাম। একবার ভেবেছিলাম জিজ্ঞেস করব, কিন্তু আপনার মানসিক অবস্থা দেখে ঠিক জিজ্ঞেস করে উঠতে পারিনি আর।”

ধৃতিমান, “আজকে আপনাকে একটা মনের কথা বলব, আজ পর্যন্ত কাউকে বলতে পারিনি আমি।”

দেবশ্রী একবার ছবির দিকে তাকায়, আরেকবার ধৃতিমানের মুখের দিকে তাকায়। দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “আপনার স্ত্রী কোথায়?”

ধৃতিমান চোখের কোল মুছে বলে, “সব বলছি ম্যাডাম। মুম্বাই আমার ভালোবাসার শহর, আমার সবকিছু কেড়ে নেওয়ার শহর। আমি মুম্বাইয়ের ছেলে, ছোটবেলা থেকে ওইখানে বড় হয়েছি, বিচে খেলেছি, গনপতি বাপ্পা মউরা করে মাথায় গনপতি নিয়ে বিসর্জন দিয়েছি। কলেজে পড়ার সময়ে এক মারাঠি সুন্দরী মেয়ের সাথে আমার দেখা হয়, তার নাম কল্পনা পাটেকর। কলেজ শেষে আমি মাস্টারস করি মার্কেটিঙে, ও ছিল একাউন্টসে। আমাদের ব্রেকআপ হয়ে গেল, আমাদের বিয়ে হল না। একটু ভেঙ্গে পড়েছিলাম আমি তবে নিজেকে শক্ত করে নিয়েছিলাম। ব্রেকআপের কারন আর কিছু না, আমি নাকি একটু ন্যাকাপনা ছেলে, আমার মধ্যে নাকি পুরুষত্ব নেই। দুইজন শেষ পর্যন্ত দুইজনের পথ ছেড়ে দাঁড়ালাম।” 

দেবশ্রী হেসে ফেলে ধৃতিমানের কথা শুনে। ধৃতিমান দেখতে মোটামুটি, বয়সের ভারে একটু ভুঁড়ি হয়ে গেছে দেবশ্রীর চেয়ে ইঞ্চি দুয়েক লম্বা কিন্তু পুরুষত্ব বিহীন একেবারে বলা চলে না। ওর কথাবার্তা ওর চালচলন আদবকায়দা বেশ রুচিসম্পন্ন। বেশি খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হল না দেবশ্রীর। 

ধৃতিমান, “পড়াশুনা শেষে চাকরি পেলাম। বাবা আমার জন্য মেয়ে বাঙালি মেয়ে দেখলেন, তার নাম রেনুকা, বেহালায় বাড়ি। ষোলো বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে রেনুকা চাকরি করতে চায়, আমি বাধা দিলাম না। আমার স্ত্রী রেনু, বড্ড ভালো মেয়ে, খুব ভালবাসত আমাকে। পুরাতন সব ব্যাথা মন থেকে মুছে গিয়েছিল আমার। মার্কেটিঙের কাজ, মাঝে মাঝেই বাইরে থাকতাম কাজের জন্য। প্রথম দুই বছর বিশেষ কিছু পদন্নোতি ঘটল না, পরের বছর আমি বেশি করে কাজে মন দিলাম আর বাড়ির বাইরে থাকতাম। তবে যেটুকু সময়ে বাড়িতে বা মুম্বাই অফিসে থাকতাম, চেষ্টা করতাম স্ত্রীর সাথে কাটাতে। রোজ অফিস ফেরত ওকে আমি ওর অফিস থেকে তুলে নিতাম, কোনদিন বিচের ধারে ঘোরা, কোনদিন রেস্টুরেন্টে খেয়ে বাড়ি ফেরা। মোটামুটি ভালো মন্দ মিলিয়ে সুন্দর ছিল আমাদের দুই জনের সংসার।” 

“বিয়ের তিন বছর পরে ঘর আলো করে আমার লক্ষ্মীর জন্ম। মল্লিকা নাম দিলাম সেই ছোট্ট ফুটফুটে মুক্তোর বিন্দুকে। মলির জন্মের পরে পরিবার বাড়ল, কাজ বাড়ল। আমার বাড়িতে থাকা কমে গেল। রেনুকা চাকরি ছেড়ে দিল মেয়েকে দেখার জন্য। আমি বাড়ির বাইরে থাকতে লাগলাম কাজের জন্য। মাথায় ভর করল উপরে ওঠার, টাকা প্রতিপত্তি নামযশ কেনার। আমার সাথে যারা পাস করেছিল তাদের গাড়ি হয়ে গেছে, কেউ কেউ ফ্লাট কিনেছে। আমরা দুই কামরার একটা ফ্লাটে থাকতাম, ভালোবাসার ফ্লাট ছোটো হয়ে গেল আমার কাছে।”

কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে ধৃতিমানের, সেই সাথে দেবশ্রী একবার ছবিতে মল্লিকার হাসিহাসি চেহারা দেখে আর ধৃতিমানকে দেখে। ধৃতিমান, দেবশ্রীর দিকে একটা ছবি এগিয়ে দেয়। এক সুন্দরী মহিলা কোলে একটা ছোটো মেয়ে। দুইজনে কোন এক সমুদ্র সৈকতে সাগর জলের মধ্যে শুয়ে।

ধৃতিমান বলে, “আমার স্ত্রীর আর মেয়ের শেষ ফটো। ঠিক দশ বছর আগে, এক শীতের ছুটিতে আমরা গোয়া ঘুরতে যাই। সময় বিশেষ পেতাম না, তাই বেশ কয়েক দিনের ছুটি নিলাম। মলি তখন সবে আধো আধো কথা বলতে শিখেছে, মাম্মা, পাপ্পা। শুনতে বড় মিষ্টি লাগত।” 

দেবশ্রীর মনে পরে যায় দেবায়নের কথা, স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার সময় পর্যন্ত খাইয়ে দিতে হত ছেলেকে। নিজে হাতে কিছুতেই খাবে না সে ছেলে। রাতের বেলা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ত দেবায়ন, কোনদিন বাড়ির কাজ সারতে একটু দেরি হয়ে গেলে কান্নাকাটি বাধিয়ে বাড়ি মাথায় করে তুলত। সব কাজ ছেড়ে ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে তবে আবার রান্না ঘর পরিষ্কার, এঠো বাসন গুলো সকালের কাজের লোকের জন্য জড় করে রাখা ইত্যাদি কাজ করে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরা। 

ধৃতিমান বলে চলে, “ট্রেনে যেতে বলেছিল রেনুকা, আমি নতুন গাড়ি কিনেছিলাম তখন। গাড়ি করে আমরা গোয়া ঘুরতে গেলাম। পাঁচদিন খুব জমিয়ে ছুটি কাটালাম। রেনুকা সাঁতার জানে, সমুদ্রকে ভয় করে না। মেয়েকে পিঠে বেঁধে সমুদ্রের জলে ঝাঁপিয়ে পরে সে এক উদ্দাম খুসি। শেষদিন, গোয়ায় এক ব্যাস্ত বাজারে আমি আর রেনুকা কিছু কেনাকাটা করছিলাম, মলি আমার কোলে ছিল। রঙ্গিন চুড়ি, স্টোল ইত্যাদি দেখতে দেখতে রেনুকা এগিয়ে যায়, ভিড়ে হারিয়ে যায়। সেই সময়ে হটাত আমার চোখ পরে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার দিকে। বড় চেনা মনে হল মহিলাকে, কাছে এগিয়ে যেতেই চিনতে অসুবিধে হল না আমার পুরাতন প্রেমিকা, কল্পনাকে। আমাকে দেখে চমকে গেল কল্পনা, জিজ্ঞেস করল আমার কথা। আমি বললাম যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে, কোলে মলিকে দেখিয়ে পরিচয় দিলাম আমার মেয়ে। নিজের কথা বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখন দেখি রেনুকা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে চলে আসে। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার একটা কার্ড বের করে কল্পনার হাতে গুঁজে চলে গেলাম। রেনুকা আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এল। আমি হাঁপ ছেড়ে বাচলাম, কল্পনাকে অন্তত দেখেনি রেনুকা। দেখলে কি হত জানতাম না। হোটেলে ফিরে এলাম, বিকেলের দিকে কল্পনার ফোন এল। আমাকে বলল যে আমার সাথে মুম্বাই ফিরে দেখা করতে চায়। আমি কারন জিজ্ঞেস করাতে জানাল কিছু ব্যাক্তিগত কারনে আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম ওর বিয়ে হয়েছে কি না। উত্তরে জানায় যে স্বামীর সাথে কিছু দ্বন্দের ফলে বছর দুয়েক ধরে আলাদা থাকে। ডিভোর্স হয়নি ওদের মধ্যে। রেনুকার দিকে তাকিয়ে দেখলাম অদুরে দাঁড়িয়ে আমাকে খুঁজছে। রেনুকার হাসি মুখ আমাকে চুম্বকের মতন টেনে নিল। আমি কল্পনাকে বললাম যে মুম্বাই ফিরে ওর সাথে আমি দেখা করব। কিন্তু মনের মধ্যে খচখচ করে উঠল পুরানো প্রেমের কাঁটা, কল্পনার কথা জানতে বড় ইচ্ছে হল। শেষ বিকেল, গোয়ায় রেনুকাকে জড়িয়ে ধরে আমরা আড়াই জনে সূর্যাস্ত দেখলাম।”

“বিকেলবেলা গোয়া থেকে রওনা দিলাম মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে। আমি গাড়ি চালাচ্ছি, পাশে রেনুকা মলিকে কোলে নিয়ে বসে। মলি রেনুকার কোলে ঘুমিয়ে পড়ল। রেনুকা মলিকে পেছনের সিটের উপরে বিছানা করে বেল্ট দিয়ে আড়াআড়ি বেঁধে দিল সিটের সাথে। আমাকে জাগিয়ে রাখার জন্য গল্প করতে শুরু করে রেনুকা। একটু খানি ক্লান্তি বোধ করলে বিস্কুট খাইয়ে দেয় অথবা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল মুখের কাছে ধরে। রেনুকা আমাকে বলেছিল যদি আমার গাড়ি চালাতে কষ্ট হয় তাহলে রাতে কোথায় একটা হোটেল দেখে থেকে যেতে। আমি হেসে বললাম যে ওর মতন সুন্দরী পাশে বসে থাকলে ঘুম কেন যম পর্যন্ত আমার পাশে আসতে পারবে না। গল্প করতে করতে এক সময়ে রেনুকার চোখ বুজে এল। আমি আর ওকে জাগালাম না। গাড়ি চালাতে চালাতে মাঝে মাঝে পেছন মলির দিকে তাকিয়ে দেখি, পাশে বসে রেনুকা ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলাম, রেনুকার দিকে ঝুঁকে ওর গায়ের সুবাস বুকে টেনে নিলাম। ভাগ্য বিধাতা সেখানেই বাধ সাধল, ওর গায়ের গন্ধে আমি পাগল হয়ে গেলাম, চোখে লাগল ঘুমের আবেশ।”

“সকাল হয় হয়, আমরা মুম্বাইয়ের খুব কাছে, ঠিক খোপোলি পেরিয়েছি। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে গেল আমার, হটাত সাত বছর আগের কল্পনা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। আমি পুরানো প্রেমের স্বপ্নে ভেসে গেলাম। গাড়ি নিয়ে সোজা ধাক্কা রাস্তার পাশে একটা লাইট পোস্টে। গাড়ির সামনেটা দুমড়ে মুচরে গেল। পাশে তাকিয়ে দেখি, রেনুকা সামনের কাঁচ ভেঙ্গে অর্ধেক শরীর গাড়ির বাইরে, মাথাটা বনেটের উপরে। আমার পা আটকে গেছিল ব্রেক প্যাডেলে, স্টিয়ারিং বুকের বেঁধে আমাকে গেঁথে দিয়েছিল সিটের সাথে। কোনোরকমে জ্ঞান হারাবার আগে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, মলির কিছু হয়নি, সিটের সাথে বাধা থাকার ফলে শুধু মাত্র সিট থেকে নিচে পরে কান্নাকাটি করছে। যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি হস্পিটালের বেডে শুয়ে। অফিসের লোকজন বাড়ির লোকজন সবাই আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। আমি চোখ খুলে রেনুকার কথা জিজ্ঞেস করলাম। কেউ বলতে চায় না আমার স্ত্রীর কথা, সবাই আমাকে সান্ত্বনা দিতে ব্যাস্ত। আমি বুঝতে পারলাম না আমাকে সান্ত্বনা দেবার কারন। সবাইকে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে রেনুকার নাম ধরে ডাক দিলাম, কেউ উত্তর দিল না। একদিন গেল, দুই দিন গেল, তিনদিন গেল, রেনুকার দেখা নেই। আমার থমথমে চেহারায় স্বাশুরি মলিকে কোলে নিয়ে চুপ করে এক কোনায় দাঁড়িয়ে। আমি আমার শালাকে জিজ্ঞেস করলাম ওর দিদির কথা। শালা একটু মাথা নাড়াল, আমার মেয়েকে আমার কোলে তুলে দিল। আমি চেঁচিয়ে বললাম একবার আমি রেনুকাকে দেখতে চাই। আমাকে নিয়ে গেল মর্গে, আমি দেখলাম আমার সুন্দরী ভালোবাসার পাত্রী রেনুকাকে। সাদা চাদরে ঢাকা, মাথায় ঘাড়ে ব্যান্ডেজ। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে রেনুকার কি হয়েছে। আমার শালা আমাকে জানাল যে, মাথা ভেঙ্গে প্রচুর কাঁচ মাথায় ঢুকে যাওয়ার ফলে সেই খানেই আমার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। আমি নির্বাক, আমি স্তব্দ হয়ে গেলাম। সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করল এক্সিডেন্ট কি করে হল, আমি নির্বাক। রেনুকা আমাকে বারবার বলেছিল ঘুম পেলে রাতে কোথাও থেকে যেতে, আমি থাকিনি ওর কথা শুনিনি। মেয়ের মুখের দিকে তাকালেই মনে পরে যেত যে আমার ভুলের জন্য আমার মেয়ে মাতৃহীনা।”

“আমি মুম্বাইয়ের চাকরি ছেড়ে বাইরে চলে গেলাম। আমার শ্বাশুরি আমার মেয়েকে নিয়ে কোলকাতায় চলে গেল। একবছর নিজের থেকে দুরে পালিয়ে থাকলাম, দেশের বাইরে চলে গেলাম। মাঝে মাঝেই আমার মা আমার শ্বাশুরি আমাকে ফোন করত। মলির আধো আধো কথা আমাকে বড় টানত। আমি ফিরে এলাম দেশে, কিন্তু মুম্বাইয়ে আর ফিরে গেলাম না। এই দিল্লীতে চাকরি নিলাম, কিন্তু মেয়ের সামনে যাবার মতন সাহস ছিল না আমার। দুই বছর পরে আমার শ্বাশুরি আমাকে বললেন যে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করতে। আমার মা বাবা আমকে মুম্বাই ফিরে যেতে বলল, আমি রেনুকাকে ছাড়া আর মুম্বাই ফিরে যেতে পারলাম না। বড় ভালবাসত আমাকে আমার স্ত্রী, ওকে ছাড়া মুম্বাই কেন এই পৃথিবী বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। আমি আর কোনদিন কল্পনার সাথে দেখা করিনি, যদিও কল্পনা বেশ কয়েক বার ফোন করেছিল যখন আমি হসপিটালে ছিলাম। আমি উত্তর দেই নি। তারপরে আর কোনদিন ওর সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি। একদিন আমার মা আর আমার শ্বাশুরি মেয়েকে নিয়ে আমার কাছে চলে এল। রেনুকা চলে যাওয়ার দুই বছর পরে মেয়ের মুখ দেখে কেঁদে ফেললাম, বেঁচে থাকার একটা রস খুঁজে পেলাম। সেই থেকে মেয়ে আমার কাছে। কিন্তু মেয়ের মুখ দেখলেই মনে হয় আমি ওর মায়ের খুনি। সেই রাতের ঘুম, সেই রাতের আমার পুরানো হারানো প্রেমিকার স্বপ্ন আমার বাস্তবের স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে।”

দেবশ্রী স্তব্দ হয়ে যায় ধৃতিমানের কথা শুনে। ধৃতিমানের হাত ধরে দেবশ্রী প্রবোধ দিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে, “ধৃতিমান দশ বছর আগে যা ঘটেছিল সেটা একটা দুর্ঘটনা ছিল। আপনার দোষ একটাই আপনি স্ত্রীর কথা শোনেনি। মিস্টার দেবনাথ, আপনি খুনি নন। মানুষের জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত আসে, মানুষকে সেই সব ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে এগিয়ে চলতে হয়। জীবন একজনের চলে যাওয়াতে থেমে যায়না, মিস্টার দেবনাথ। নিজেকে এই রকম ভাবে কষ্ট না দিয়ে নিজের জীবন খুঁজে নিন পুনরায়।”






কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment