CH Ad (Clicksor)

Friday, January 17, 2014

পাপ কাম ভালোবাসা_Written By pinuram [অষ্টদশ পর্ব (চ্যাপ্টার ১ - চ্যাপ্টার ৫)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




পাপ কাম ভালোবাসা
Written By pinuram






অষ্টদশ পর্ব (#01)

সিকিউরিটি চেক হয়ে গেছে, অনুপমা দেবশ্রীকে ফোনে জানিয়ে দেয় ওরা কিছুক্ষণের মধ্যে প্লেনে চাপবে। দেবায়ন প্রথম বার প্লেনে চাপতে চলেছে, এয়ারপোর্টের চারদিকে তাকিয়ে দেখে। দেবায়নের চাপা উত্তেজনা দেখে অনুপমা হেসে ফেলে। অনুপমা দুই বার মুসউরি ঘুরতে গেছে, জায়গার প্রতি অনুপমার সেইরকম টান নেই। দেবায়নের সাথে ঘুরতে যাবার খুশির উত্তেজনা চোখে মুখে ফেটে পড়ছে অনুপমার। দেবায়নের সাথে, একা নিভৃতে দূর পাহাড়ের কোলে এক কামরায়, ভাবতেই অনুপমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। প্লেনে ওঠার আগে পর্যন্ত দেবায়নের হাত শক্ত করে ধরে থাকে, হাতের উষ্ণতা মাখিয়ে নেয় নিজের শরীরে। প্লেনে উঠে চারদিকে তাকিয়ে দেখে দেবায়ন। কিছু পরেই প্লেন ঝাঁকুনি দিয়ে দুরন্ত গতিতে দৌড়াতে শুরু করে। দেবায়ন শক্ত করে সিটের হাতল ধরে বসে। পাশে বসে অনুপমা ওকে বারেবারে আসস্থ করে কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না। জানালার পাশে বসে অনুপমা তার পাশে দেবায়ন। প্রথমবার প্লেনে চাপার ভীতি কাটানোর জন্য অনুপমা দেবায়নের হাত ধরে জিজ্ঞেস করে এত কি ভাবছে। প্রেয়সীর কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে ধড়ে প্রান ফিরে আসে দেবায়নের। দেবায়ন জানায় মিস্টার সেনের কথা নিয়ে একটু চিন্তিত সেই সাথে মাকে কি ভাবে এই সব কথা জানাবে। মাকে বললে মা হয়ত মানা করে দেবে। অনুপমা চিন্তা করতে বারন করে দেয়।

দেবায়নের মন শান্ত করার জন্য পুরানো দিনের প্রেমের কথা মনে করিয়ে দেয়। অনুপমা বলে ওদের প্রথম দেখার কথা, শুরুতে শুধু চোখে চোখে দেখা, কেউ কারুর সাথে কথা বলত না। দেবায়নের বলিষ্ঠ দেহ আর গায়ের তামাটে রঙ দেখে অনুপমা পাগল হয়ে গেছিল কিন্তু মনের ভাব ব্যক্ত করার মতন সাহস ছিল না। অনুপমার চিবুকের তিল আর গজ দাঁতের হাসি দেখে দেবায়ন পাগল, কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে আসা একটা মেয়ের দিকে তাকান, দেবায়ন ঠিক সাহস জুগিয়ে উঠতে পারেনি, যদি অনুপমা ওর প্রেম নাকচ করে দেয় সেই ভয়ে। প্রথম বেশ কয়েক মাস কেউ কাউকে কিছু বলেনি। দেবায়ন আড় চোখে দেখত অনুপমাকে, গাড়ি থেকে নেমে সোজা কলেজে ঢুকতো, হাঁটা চলার ভঙ্গিমায় দেবায়ন বুঝতে পারতো যে খুব বড় লোকের মেয়ে। কলেজের অর্ধেক ছেলের নজর অনুপমার দিকে। অনুপমা সবসময়ে পায়েল, শ্রেয়া আর সঙ্গীতার সাথে ঘুরত। সব ছেলেরা ওই চার মেয়েকে নাক উঁচু বলে জানত। অনুপমা হেসে ফেলে কথা বলতে বলতে, দেবায়নকে মনে করিয়ে দেয় প্রথম দিনের ঝগড়ার কথা। দেবায়ন কোনদিন ভুলবে না সেইদিনের কথা। দেবায়নের সাথে অনুপমার প্রথম কথা হয়েছিল এক বাকবিতন্ডের মাধ্যমে। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল, লাঞ্চের পরে বিশেষ ক্লাস ছিল না তাই সবাই ঘর মুখি। অনুপমা, পায়েল আর শ্রেয়া কলেজের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। দেবায়ন, অলোক, ধিমান, প্রবাল সবাই ওদের পেছন পেছন নামছিল। দেবায়ন আর ধিমান, সামনে মেয়েদের দেখে টিপন্নি করছিল মাঝে মাঝে। তাতে অনুপমা আর শ্রেয়া একটু রেগে গেছিল। বৃষ্টির জন্য সিঁড়ি ভিজে ছিল আর সেই জলে পেছল খায় প্রবাল। প্রবাল পা হড়কে সোজা ধাক্কা খায় শ্রেয়ার সাথে। শ্রেয়া তেলেবেগুন জ্বলে উঠে চেঁচামেচি শুরু করে দেয়, প্রবালকে অনেক কথা শুনিয়ে দেয়। দেবায়ন বুঝাতে চেষ্টা করে যে যে প্রবাল ইচ্ছে করে ধাক্কা মারে নি, সিঁড়ির জলের জন্য প্রবাল পেছল খেয়েছিল। কিন্তু অনুপমা আর পায়েল ঘিরে ধরে প্রবালকে। প্রবাল শান্তশিষ্ট ছেলে, পড়াশুনা ছাড়া বিশেষ কারুর সাথে কথা পর্যন্ত বলে না। প্রবালের কথা মানতে নারাজ অনুপমা, টিচারের কাছে নালিশ করবে বলে ধমক দেয়। বেগতিক দেখে ইচ্ছে করে দেবায়ন অনুপমাকে ধাক্কা মেরে বলে প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে যেন নালিশ করে। অনুপমা দেবায়নের ধাক্কা খেয়ে তাল সামলাতে পারে না। সিঁড়ি থেকে পরে যাবার আগেই দেবায়ন ওকে ধরে ফেলেছিল। ওদের সেই হাত ধরা আর ঝগড়া দেখে শ্রেয়া নিজের কথা ভুলে যায়। দেবায়ন বলেছিল, যে প্রবাল ইচ্ছে করে মারেনি, ধাক্কা সে মেরেছে, যদি নালিশ করতে হয় তাহলে যেন প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে নালিশ করে। অনুপমা, দেবায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে, রাগ করতে ভুলে যায়, দুই চোখ চার হয়ে যায়। দেবায়নের ধাক্কা খেয়ে অনুপমা শিহরিত হয়েছিল সেদিন। সাড়া শরীরে কাটা দিয়েছিল। দেবায়ন অনুপমার হাত মুঠির মধ্যে ধরে ঠোঁটের কাছে এনে বলে যে সেদিনের কথা কোনদিন ভুলবে না। ওই ধাক্কা না মারলে কেউ হয়ত কোনদিন কথা বলত না, চুপচাপ পরস্পরকে দেখে যেত। তারপরে শুধু বন্ধুত্ব, প্রগাড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে দুই জনের মাঝে। দেবায়ন নিজের মনের ভাব ব্যাক্ত করতে দ্বিধা বোধ করে ভবিষ্যতের কথা ভেবে। ভেবেছিল অনুপমার বাবা মা ওদের সম্পর্ক নাও মেনে নিতে পারে। এই ভাবে দুই বছর শুধু ভালোবাসার টান উপলব্দধি করে কাটিয়ে দেয়। একদিন আর থাকতে পারে না অনুপমা, দেবায়ন কে ধরে জিজ্ঞেস করে ওদের বন্ধুত্বের ব্যাপারে, জিজ্ঞেস করে কি চায় দেবায়ন। সেদিন বেশ বৃষ্টি হচ্ছিল, পায়েল সাথে ছিল। দেবায়ন দুই বান্ধবীকে নিয়ে কফি হাউসে বসেছিল। পায়েল চুপ করেছিল, অনুপমা দেবায়নকে প্রশ্ন করে উত্তরের অপেক্ষায় ছিল। দেবায়ন বেশ কিছুক্ষণ অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল যে রাতে উত্তর দেবে। দেবায়ন জানত না কি উত্তর দেবে। অনুপমা রেগে পায়েল কে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে যায়। কফি হাউসের পাশেই একটা বড় বইয়ের দোকান, দেবায়ন দৌড়ে সেখান থেকে একটা ইংরাজি প্রেমের কবিতার বই কেনে। নিচে নেমে দেখে, পায়েল আর অনুপমা ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছে। দেবায়ন পেছন থেকে এসে অনুপমার পিঠে হাত রেখেছিল। অনুপমা পেছন ঘুরতেই দেবায়ন ওই বই হাতে দিয়ে বলেছিল যে রোজ রাতে অনুপমা যেন একটা একটা করে কবিতা পড়ে ওকে শোনায়। অনুপমা বই খানা, বুকে জড়িয়ে বলেছিল যে নিশ্চয় শোনাবে কবিতা।

মুসউরিতে এক ঘরের মধ্যে রাত কাটাবে সেই ভেবে দেবায়নের উত্তেজিত হয়ে ওঠে। অনুপমার কোমল হাতখানি মুঠি করে ধরে মুখের কাছে নিয়ে এসে ছোটো চুমু খেয়ে বলে রাতের পরিকল্পনা। একটু লজ্জা পেয়ে যায় সুন্দরী ললনা, দেবায়ন কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে যে একটা রাতেও ঠিক করে ঘুমাতে দেবে না অনুপমাকে। অনুপমা চোখের লাজুক হাসি লুকিয়ে জানালার বাইরে ঘন নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

দিল্লী এয়ারপোর্টে প্লেন নামে। প্লেন থেকে নেমে দিল্লীর এয়ারপোর্ট দেখে দেবায়ন থমকে যায়। দেবায়ন মানুষের ভিড় দেখে, আলো দেখে থমকে যায়। গরম কাল, ছেলেরা অনেকেই হাফ প্যান্ট, বারমুডা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বেশির ভাগ মেয়েদের ছোটো ছোটো পোশাক। অনেক মেয়েরা হাফ প্যান্ট অথবা ছোটো ছোটো স্কার্ট পরা। দেবায়ন যে মেয়েদের ছোটো পোশাকে দেখেনি সেটা নয় তবে প্রকাশ্যে কোলকাতায় কোন মেয়েরা এত ছোটো পোশাক পরে না, পার্টিতে পড়ে। অনুপমা দেবায়নের মুখের ভাবভঙ্গি দেখে হেসে ফেলে। অনুপমা দেশ বিদেশ ঘুরেছে, ওর কাছে এইসব ছোটো পোশাক আশাক কিছু না। দেবায়নকে বলে দিল্লীর এয়ারপোর্টের চেয়ে হেথ্রো এয়ারপোর্ট অনেক বড়, মাসির বাড়ি বেশ কয়েক বার বেড়াতে গেছে অনুপমা। দিল্লী, রাজধানী শহর, মেট্রো শহর, বাকি শহরের চেয়ে মানুষের চিন্তন শিলতা এখানে অনেক উন্মুক্ত। এই খানে মেয়েদের এমন পোশাকে দেখা কোন নতুন নয়। অনুপমা দেবায়নকে কনভেয়ার বেল্ট থেকে ব্যাগ নিয়ে আসার জন্য বলে।

দেবায়ন প্লেন থেকে নেমেই মাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ওরা পৌঁছে গেছে দিল্লী। এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে দেখে দেবশ্রী ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকদিন পরে মাকে দেখে খুব খুশি দেবায়ন। অনুপমা দৌড়ে দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে।

দেবায়ন মাকে বলে, “তোমার জন্য খুব মন কেমন করছিল জানো।”

দেবশ্রী ছেলের গালে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ বাবা, জানি। বাড়ির বাইরে থাকতে থাকতে প্রান হাঁপিয়ে উঠেছিল আমার।”

অনুপমা, “হ্যাঁ মামনি, বেস্পতিবার সেই দুঃখে মদ খেয়ে পড়েছিল জানো।”

দেবায়ন মাথা নিচু করে নেয়। দেবশ্রী রাগত কণ্ঠে দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে আমি বাড়িতে নেই বলে কি বাড়ি একদম আড্ডা খানা হয়ে উঠেছে।”

দেবায়ন, অনুপমার চুল টেনে ইশারায় জানায় একবার হাতের কাছে পেলে মেরে ফেলবে। অনুপমা দেবশ্রীর পেছনে লুকিয়ে পরে হেসে বলে, “না মামনি ও কিছু করেনি। বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারছিল তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।”

দেবায়ন মাকে জিজ্ঞেস করে, “এই কয়দিন কেমন ঘুরলে?”

দেবশ্রী, “কোথায় আর ঘুরলাম, সব কাজ আর কাজ। দিল্লীতে সেই প্রথম দিনে একটু সময় পেয়েছিলাম তাই তোর জন্য একটা ঘড়ি কিনলাম আর অনুর জন্য একটা জিন্স।”

অনুপমা, “মামনি, তুমি বিজনেস সুট পড়েছিলে?”

দেবশ্রী অনুপমার গালে হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, “হ্যাঁ তোর মামনিকে আরো বিজনেস সুট পরা। ক্ষান্ত দে ওই সব, চল যাওয়া যাক। অনেকদুর যেতে হবে, রাস্তায় কোথাও খেয়ে নেব।”

অনুপমা আগে দুই বার মুসৌরি ঘুরতে গেছে তাই দেবশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, “মামনি, আমরা কোন হোটেলে থাকব?”

দেবশ্রী, “রেসিডেন্সি ম্যানর।”

হোটেলের সম্বন্ধে অনুপমার অজানা নয়, একবার রেসিডেন্সি ম্যানরে ছিল। প্রথমে ঠিক বিশ্বাস করতে না পেরে আবার জিজ্ঞেস করে অনুপমা, “মামনি, ওটা ফাইভ স্টার হোটেল।” 

দেবশ্রী, “হ্যাঁ ফাইভ স্টার।”

দেবায়ন একটু অবাক হয়ে যায়, জানে ওদের অত পয়সা নেই যে ঘুরতে গিয়ে একটা ফাইভ স্টার হোটেলে থাকবে। তাই দেবায়ন মাকে জিজ্ঞেস করে, “আমরা সত্যি ফাইভ স্টারে থাকব?”

দেবশ্রী হেসে বলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। অফিস আমাকে এল.টি.এ দিয়েছে তাই তোদের নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি।”

দেবায়ন, “এত দিন বেড়াতে যাওনি বলে অফিস তোমাকে রানীর হালে রাখবে মনে হচ্ছে। বেশ ভালো বেড়ান যাবে তাহলে।”

অনুপমা আদুরে কণ্ঠে আব্দার করে, “মামনি বেড়াতে যাচ্ছ, সেখানে কিন্তু জিন্স পড়তে হবে।”

দেবশ্রী, “পাগলি মেয়ে, আগে গাড়িতে ওঠ।”

অনুপমা আর দেবশ্রী গাড়ির পেছনের সিটে বসে আর দেবায়ন সামনের সিটে। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে হটাত ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনার পেছনের কারন। দেবশ্রী হেসে উত্তর দেয় যে অনেক ছুটি পাওনা ছিল তাই কাজের চাপ ছেড়ে একটু ঘুরতে যাবার ইচ্ছে হল। দেবশ্রী চোখের পেছনে লুকিয়ে রাখে ওর মনের ভাব। গাড়ি সোজা এয়ারপোর্ট থেকে মুসউরির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। স্করপিওর ড্রাইভার এক পাঙ্গাবি, অংশুমান সিং। দেবায়ন ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে কতখনে মুসউরি পৌঁছাবে, উত্তরে অংশুমান জানায় যে পরেরদিন ভোরবেলা নাগাদ মুসউরি পৌঁছে যাবে। ভিড় ভর্তি রাস্তা দেখতে দেখতে দেবায়নের গাড়ি এগোতে শুরু করে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে গাড়ি দিল্লীর জ্যাম ছাড়িয়ে হাইওয়ে ধরে। পেছনে বসে দেবশ্রী আর অনুপমা নিজেদের গল্পে মত্ত। মাঝে মাঝে পেছনে তাকায় দেবায়ন, ওর জীবনের সবথেকে প্রধান দুই নারী বসে। একজন ওর মা, যে ওর অতীত বর্তমান গড়ে তুলেছে, দ্বিতীয় ওর প্রেয়সী যার হাতে ওর ভবিষ্যতের সবকিছু। রাত নেমে আসে। রাতে একটা হোটেলে থেমে ওরা রাতের খাবার সেরে ফেলে।

খাবার সময়ে দেবশ্রী ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, তুই কিছু বলবি বলছিলি?”

দেবায়ন ভেবেছিল যে একেবারে মুসৌরিতে গিয়ে মায়ের সাথে কথা বলবে। দেবায়ন অনুপমার দিকে আড় চোখে তাকায়। অনুপমা দেবায়নের হয়ে উত্তর দেয়, “মামনি, আমি আর দেবায়ন ভাবছি কলেজের সাথে সাথে একটা কম্পিউটার কোর্স করব।”

অনুপমার কথা শুনে দেবশ্রী বেশ খুশি হয়, “হ্যাঁ রে এই কথা আমার একবার মনে হয়েছিল। আজকাল যা চাকরির বাজার তাতে শুধু মাত্র একটা গ্রাজুয়েশান করে কিছু হবে না। একটা কিছু পাশাপাশি না করলে চাকরি পাওয়া বড় মুশকিল।”

দেবায়ন, “হ্যাঁ, তাই ভাবছি একটা ফাস্ট ট্রাক কম্পিউটার কোর্স করব আমরা।”

দেবশ্রী, “সে ত খুব ভালো কথা। কত টাকা লাগবে, কতদিনের কোর্স, সেইসব ব্যাপারে কোথাও খোঁজ খবর নিয়েছিস কি?”

অনুপমা, “না মামনি, সেই সব কিছু জানা হয়নি তবে কলেজ খুললেই অথবা কোলকাতা ফিরলেই আমরা পার্ক স্ট্রিটে একটা খুব নামকরা কম্পিউটার ইন্সটিটিউট আছে সেখানে যাবো। আগে তোমার মতামত চাই তাই এখন কিছু দেখিনি।”

দেবশ্রী ভুরু কুঁচকে হেসে অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “তুই কি পারমিতার সাথে কথা বলেছিস এই ব্যাপারে?”

অনুপমা, “হ্যাঁ, বাবার সাথে কথা বলা হয়ে গেছে। শুধু তোমার মতামতের প্রয়োজন।” অনুপমা, কোম্পানির তৈরির কথা লুকিয়ে যায়। অনুপমা চোখের ইশারায় দেবায়নকে জানায় যে পরে এই ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলা যাবে। 

দেবশ্রী অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “আর একটা বছর আছে ফাইনালের। তারপরে কি করবি তোরা কিছু ভেবেছিস? মাস্টার্স করবি না এম.বি.এ করবি?”

অনুপমা আর দেবায়ন পরস্পরের দিকে তাকায়। দেবশ্রীর প্রশ্ন দুইজনকে ফাঁদে ফেলে দেয়। অনুপমা হেসে কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বলে, “মামনি, প্লিস ঘুরতে এসেছি এখানে আর পরাশুনার কথা উঠিয় না। আমরা বই খাতা কিন্তু বাড়িতে রেখে এসেছি, এখানে যদি পড়তে বল তাহলে কিন্তু কেঁদে ফেলব।”

দেবশ্রী হেসে বলে, “ঠিক আছে বাবা। চল এবারে যাওয়া যাক।”

অন্ধকার রাত কেটে গাড়ি এগোতে শুরু করে দেয়। একদিকে দেবশ্রী অফিসের কথা কিভাবে শুরু করবে সেই চিন্তায় মগ্ন, অন্যদিকে দেবায়নকি ভাবে নতুন কোম্পানি খুলতে চায় সেই কথা শুরু করবে সেই চিন্তায় মগ্ন। রাতে অনুপমা বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ভালো ভাবে দিল্লী পৌঁছে ওরা সবাই মুসউরির উদ্দশ্যে রওনা হয়েছে। গাড়ি চলতে চলতে কিছুক্ষণের মধ্যে অনুপমা আর দেবশ্রী ঘুমিয়ে পরে। গাড়ির ড্রাইভারের সাথে দেবায়ন গল্প জুড়ে দেয়। রাস্তা জিজ্ঞেস করাতে ড্রাইভার উত্তর দেয়, হাইওয়ে ছেড়ে ওরা গ্রামগঞ্জের ভেতর দিয়ে দেরাদুন পৌঁছাবে। দেবায়ন, কারন জিজ্ঞেস করাতে ড্রাইভার জানায় যে গরম কালে প্রচুর ভিড় হয় পাহাড়ে তাই হাইওয়েতে মাঝে মাঝে জ্যামে পড়তে হয় আর রাতের বেলা ট্রাক বাস সব মাতালের মতন চালায় তার চেয়ে গ্রামের ভেতরের খালি রাস্তা নিরাপদ। অনেকক্ষন গাড়ি চালানোর পরে, মাঝরাতে একটা ছোটো চায়ের দোকানে গাড়ি থামাতে বলে দেবায়ন। ওখানে একটা সিগারেট ধরায়। গাড়ি থামতেই অনুপমা জেগে ওঠে। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার, রাস্তায় আলো নেই, রাস্তার দুপাশে খালি মাঠ আর মাঠ, দুরে কোথাও কোন গ্রামের আলো দেখা যায়। মাঝে মাঝে শেয়াল কুকুরের ডাক। দেবায়ন জন্য এই সব দৃশ্য একদম নতুন। চোখ কচলাতে কচলাতে অনুপমা দেবায়নের গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে যায়। দেবায়ন অনুপমাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে রাতের সৌন্দর্যের ব্যাখা দেয়। দেশ বিদেশ অনেক জায়গা অনুপমার ঘোরা কিন্তু নিস্তব্দ রাতের এই সৌন্দর্য অতুলনীয় মনে হয় অনুপমার কাছে। সিগারেট শেষ করে যাত্রা আবার শুরু, ফাঁকা রাস্তা ধরে ড্রাইভার বেশ জোরেই গাড়ি হাঁকিয়ে দেয়।







অষ্টদশ পর্ব (#02)

দেরাদুনের পরে দেবায়ন আবার জেগে যায়। দেরাদুনের পরে গাড়ি আঁকাবাঁকা পথে পাহাড় চড়তে শুরু করে দেয়। ভোরের আলোয় ছোটো ছোটো সবুজে ঢাকা পাহাড় দেখে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে দেবায়ন। মায়ের সাথে কোন এক ছোটো বেলায় একবার গ্যাংটক বেড়াতে গিয়েছিল, সেইসব মনে নেই। দেবশ্রী জেগে যায়, দেবায়নের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে কেমন লাগছে পাহাড়। মায়ের নরম হাতের স্পর্শে দেবায়নের চমক ভাঙ্গে। হেসে জানায় পাহাড় ঘুরতে বেশ ভালো লাগছে। অনুপমা তখন দেবশ্রী কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে। দেবশ্রী অনুপমার মুখের উপরে ঝুঁকে কপালে স্নেহের চুম্বন এঁকে দেয়। সকাল ছ’টার সবাই মুসৌরি পৌঁছে যায়।

হোটেল রেসিডেন্সি ম্যানর মুসউরির শহরের রাস্তার ডান দিকে একটা ছোটো পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। রিসেপ্সানের লোক জানিয়ে দেয় সকালের ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি আর রাতের বুফের সাথে আলাকারটে ডিনারের ব্যাবস্থা আছে। দুটি কামরা দেবশ্রীর নামে আগে থেকে বুক করা ছিল। দেবায়নের জন্য একটা কামরা আর অন্য কামরায় দেবশ্রী আর অনুপমা থাকবে। সেই শুনে অনুপমার মুখের হাসি চলে যায়। দেবশ্রীর কড়া চাহনির সামনে কিছু বলতে পারে না দেবায়ন। অগত্যা অনুপমা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওর “মামনি”র সাথে রুমে চলে যায়। দেবশ্রী বলে দেয় যে স্নান সেরে তৈরি হয়ে ওরা ব্রেকফাস্ট করতে নিচে রেস্তোরাঁতে দেখা করবে। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে ফেলে দেবায়ন, সারারাতের যাত্রার পরে স্নান সেরে দেবায়নের বেশ ভালো লাগে। মায়ের উপরে একটু রাগ হয়, অনুপমাকে মা নিজের রুমে রেখে দিয়েছে। বেড়াতে আসার আগে থেকে দুই জনের কত পরিকল্পনা ছিল, হোটেলের সাদা বিছানার উপরে সারারাত ধরে ভালোবাসার খেলা খেলবে, বাথরুমে বাথটবে দুইজনে গা ভাসিয়ে স্নান করবে। মায়ের কড়া নজরে সেটা সম্ভবপর হতে পারবে না। স্নান সেরে একটা জামা কাপড় পরে তৈরি দেবায়ন। দেবায়নের রুমে একটু পরে অনুপমা ঢোকে। অনুপমার দিকে তাকিয়ে দেবায়ন হাঁ হয়ে যায়। পরনে ছোটো সাদা রঙের জিন্সের হাফ প্যান্ট আর ছোটো হাতার হাল্কা গোলাপি টপ দেহের সাথে এঁটে বসে। দুই মসৃণ থাই, সম্পূর্ণ অনাবৃত, চকচক করছে পায়ের গুলি। চোখের কোণে একটু কাজল, মাথার চুল একটা পনি টেল করে বাঁধা। গজ দাঁতের মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে দেবায়নের দিকে। ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন দেখাচ্ছে? দেবায়ন অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে ছোটো একটা প্রেমঘন চুম্বন একে দেয়। অনুপমা দেবায়নের গলা জড়িয়ে সেই ভালোবাসার চুম্বন গভীর করে নেয়।

অনুপমা দেবায়নকে বলে, “ইসস মামনি আমাদের একসাথে থাকতে দেবে না।”

দেবায়ন, “দাঁড়াও না কিছু একটা করে ম্যানেজ করা যাবে। তুমি আর আমি পাশাপাশি রুমে এমনি এমনি কি করে ঘুমাব বলত।”

অনুপমা হেসে দেবায়নের বুকের উপরে মাথা পেতে বলে, “তোমাকে ছাড়া এই কয়দিন কি ভাবে ঘুমিয়েছি আমি জানি।”

দেবায়ন, “কেন রোজ রাতে ফোন করে জ্বালাতন করতে, তারপরে ঘুমাতে না?”

অনুপমা, “কি করে ঘুম পায় বলো দেখি? তুমি আমার অভ্যাস সাতদিনে বদলে দিয়ে চলে গেলে যে?”

দেবায়ন, “আচ্ছা বাবা। দেখা যাক মায়ের চোখের আড়াল করে কিছু করা যায় কি না।”

অনুপমা, “জানো মামনি বলছিল এই ট্রিপ নাকি মামনির অফিস পে করছে।”

দেবায়ন, “মা যে বলল এল.টি.এ নিয়েছে?”

অনুপমা, “হ্যাঁ এল.টি.এ নিয়েছে। মামনি কিছু একটা বলতে গিয়ে একটু ভাবুক হয়ে গেল, থেমে গেল। আমার মনে হয় যে মামনি আমাদের কিছু একটা কথা বলার জন্য এখানে ডেকেছে।”

দেবায়ন, “কেন মনে হল তোমার?”

অনুপমা, “সকালে কারুর একজনের ফোন এসেছিল। মামনিকে কথা বলতে শুনলাম। মামনি ফোনে সেই ব্যাক্তিকে বলছিল যে রাস্তায় কোন অসুবিধে হয়নি আর হোটেল ঠিক মতন পেয়ে গেছে। আমার মনে মামনির বসের ফোন ছিল সেটা। মামনি সেই ব্যাক্তিকে অনেক ধন্যবাদ জানায়।”

দেবায়ন, “আচ্ছা চলো দেখি রেস্তরাঁয়, ব্রেকফাস্ট করার পরে তোমার মামনির প্লান কি? কোথায় যাবে না হোটেলে থাকবে?”

অনুপমা আর দেবায়ন বেড়িয়ে পরে রুম থেকে। দেবশ্রী স্নান সেরে অনুপমার জেদের বশে একটা নীল রঙের জিন্স আর আকাশি নীল রঙের শার্ট পরে। মাকে জিন্সে দেখে দেবায়ন স্থম্ভিত, কোলকাতায় মাকে বিজনেস সুটে দেখেছে কিন্তু জিন্সে মা যেন আরো সুন্দরী হয়ে উঠেছে। খাবার টেবিলে বসে দেবায়ন দেবশ্রীকে মজা করে বলে যে মাকে ভারী সুন্দরী দেখাচ্ছে। দেবশ্রী ছেলের মুখে নিজের রুপের কথা শুনে একটু লজ্জা পেয়ে যায়।

দেবায়ন জিজ্ঞেস করে দেবশ্রীকে, “আজকের প্লান কি? ব্রেকফাস্টের পরে কি কোথাও যাবো আমরা?”

দেবশ্রী, “ঠিক জানি না, তোর মতন আমিও প্রথম বার এখানে এসেছি। অনুকে জিজ্ঞেস কর অনেক বার এসেছে।”

অনুপমা, “মামনি আজকে ধনোলটি চলো, একদম পাহাড়ের মাঝে ছোটো একটা জায়গা খুব সুন্দর। অইখান থেকে হিমালয়ের অনেক বরফ ঢাকা পাহাড় দেখা যায়। খুব ভালো লাগবে। আমরা একবার শীতকালে এসেছিলাম আর কোনোরকমে ধনোলটি বেড়াতে গিয়েছিলাম। ওখানে সেবারে খুব বরফ পড়েছিল, আমি আর ভাই সেই বরফে খুব খেলা করেছিলাম।”

দেবশ্রী, “ঠিক আছে সেখানে যাওয়া যাবে, তুই এখন সব। ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে গেছে, যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যাবো।”

দেবায়ন একটু খানি থেমে মাকে বলে, “মা আমার একটা আব্দার আছে।”

দেবশ্রী, “কি আব্দার?”

দেবায়ন, “মা আমি একটা বাইক কিনব।”

দেবশ্রী খাওয়া থামিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “বাইক কেন? এই বললি যে কম্পিউটার করতে হবে, সেখানে টাকা লাগবে না?”

দেবায়ন চুপ করে যায়। দেবশ্রী ছেলের শুকনো মুখ দেখে হেসে বলে, “ঠিক আছে বাবা, তবে এত তাড়াতাড়ি কিনে দিতে পারব না। তুই আগে তোর কম্পিউটার কোর্স শুরু কর তারপরে পুজোর আগে দেখি টাকা যোগাড় করে তোকে বাইক কিনে দেব।”

দেবায়ন অনুপমার দিকে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে যে ওদের আই.টি কোম্পানি তৈরির কথা কি এখুনি শুরু করবে না পরে। অনুপমা ইশারায় জানায় যে পরে সময় হলে সেই নিয়ে কথা বলবে, সেই সব আলোচনা করার অনেক সময় আছে।

দেবশ্রী আড় চোখে রেস্তোরাঁর একপাশে কাউকে দেখে চুপ করে যায়। কিছু পরে খাওয়া থামিয়ে দেবশ্রী বলে, “তোদের সাথে আমার একটা বিশেষ কথা আছে।”

অনুপমা আর দেবায়ন পরস্পরের দিকে তাকায়। অনুপমা আগেই অনুধাবন করেছিল ব্যাপারটা, কিন্তু জানত না কি সেই ব্যাপার। দেবশ্রী বলে, “আমার এই ট্রিপ আসলে কোম্পানি পে করছে। আমার ব্যাঙ্গালোর থেকে সোজা কোলকাতা ফিরে যাবার ইচ্ছে ছিল। চিফ রিক্রুটার হিসাবে আমার হাতে একটা বাজেট দেওয়া হয়। সেই বাজেটের থেকে প্রায় সতের লাখ টাকার মতন বেঁচে যায়। সেই দেখে কোম্পানির সি.ই.ও, মিস্টার ব্রিজেশ ত্রিপাঠি আর আমার বস, মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর, এই ট্রিপ আমাকে উপহার দিয়েছে।”

দেবায়ন বড় বড় চোখ করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “বাপরে তুমি তাহলে পুরোদস্তুর পেশাদারী মহিলা হয়ে গেছ।”

দেবশ্রী হেসে বলে, “হ্যাঁ তা হয়ে গেছি অনেকটা, সেটা যে আমার কাজ রে।”

অনুপমা, “আর কি করলে এই পনেরো দিনে? কোথাও বেড়াতে যাওনই তুমি? কারুর সাথে পরিচয় হল না এই ট্রিপে?”

পরিচয়ের কথা শুনে দেবশ্রী্র গাল লাল হয়ে ওঠে, অনুপমার দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দেয়, “অফিসের লোকের সাথে পরিচয় আর অফিসের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত ছিলাম এই কয়দিন।”

ঘাড় ঘুরিয়ে দুরে বসে টেবিলে এক ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে দেখে দেবশ্রী। অনুপমা আর দেবায়নের সেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখা অস্বাভাবিক বলে মনে হয় না। ওদের টেবিলের অদুরে এক টেবিলে একটা ছোটো মেয়ের সাথে এক ভদ্রলোক বসে, দেখেই বোঝা যায় যে বাবা তার মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে। দেবশ্রী চিন্তায় পরে যায়, এখুনি কি দিল্লীর চাকরির কথা বলা ঠিক হবে না রাতে খাবারের সময়ে বলবে। আগে বেড়িয়ে নেওয়া ঠিক, দিল্লীর কথা শোনার পরে হয়ত অনুপমা আর দেবায়নের মন খারাপ হয়ে যাবে।

দেবশ্রী খাওয়া সেরে অনুপমাকে বলে, “চল রে, বেড়িয়ে পরি। কোথায় নিয়ে যাবি বলছিলি তুই।”

ব্রেকফাস্ট সেরে তিনজনে গড়ি নিয়ে ধনোলটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। হোটেলে থেকে বেড়িয়ে মুসউরি শহরে পৌঁছাতেই মনে হল যেন জন সমুদ্রের কবলে পড়েছে। স্কুল কলেজে গ্রীস্মকালের ছুটি, সবাই ঘুরতে বেড়িয়েছে সুন্দর শহর মুসৌরি। দেশের ভিন্ন প্রান্তের লোক সমাগম, তার মাঝে কিছু বিদেশি পর্যটকের দেখা মেলে। মুসৌরির ম্যাল রোড ছাড়িয়ে, ভিড় ভর্তি এলাকা ছাড়িয়ে গাড়ি আঁকা বাঁকা পথে আবার পাহাড় চড়তে শুরু করে দেয়। এক জায়গায় ড্রাইভার গাড়ি দার করিয়ে রাস্তা জিজ্ঞেস করে নেয়, তারপরে আবার গাড়ি চলতে শুরু করে। ড্রাইভার বেশ পটু, মুসউরি থেকে ধনোলটি যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যাবে বলে জানায়। আঁকা বাঁকা পথের একপাশে উঁচু পাহাড় অন্য পাশে গভীর খাদ। সবুজ বিশাল বিশাল গাছে ভরা পাহাড়। দূর উত্তর দিকে দিগন্তে দেখা যায় বরফে ঢাকা হিমালয় পর্বতমালা, সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে সুউচ্চ শৃঙ্গ সমুহ। খালি রাস্তা, সামনে পেছনে খুব কম গাড়ি, তবে একটা গাড়ি সেই মুসউরি থেকে ওদের অনুসরণ করছে। পেছনের সিটে অনুপমা বসে ওদের সেই পর্বত শৃঙ্গের গল্প করে আর ছোটোবেলায় একবার এসেছিল এই ধনোলটি সেই গল্প করে। দুপুর নাগাদ দেবায়নেরা ধনোলটি পৌঁছে যায়। পেছনের গাড়ি কিছু পরে এসে ওদের গাড়ির কাছে থামে। সেই গাড়ি থেকে একা এক ভদ্রলোক ক্যামেরা হাতে নেমে জায়গার শোভা দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। খুব ছোটো জায়গা, কয়েকটা দোকান আর কয়েকটা ছোটো হোটেল ছাড়া কিছু নেই। সবাই মিলে বেশ কিছুক্ষণ দূর পর্বতশৃঙ্গের শোভা দেখে। মায়ের অলক্ষ্যে অনুপমাকে একটু নিবিড় করে আদর করার ইচ্ছে জাগে। দেবায়ন আর অনুপমা হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেবশ্রীকে ছাড়িয়ে বেশ দুরে এগিয়ে যায়। প্রেয়সীকে একটু এক পেয়ে, দেবায়ন দুই বাহু মেলে জড়িয়ে ধরে অনুপমাকে।

অনুপমা দেবায়নের চোখের উপরে চোখ রেখে গভীর আলিঙ্গনে গলা জড়িয়ে বলে, “তোমার জন্য এই জায়গা নতুন লাগছে জানো।”

দেবায়ন অনুপমার কোমল দেহ নিজের সাথে মিলিয়ে নিয়ে গালে চুমু একে বলে, “তোমার গজ দাঁতের হাসি বড় মিষ্টি। জায়গার কথা জানিনা, তবে তোমাকে পাশে পেলে যেখানে খুশি যেতে রাজি।”

চুলের মধ্যে নাক গুঁজে প্রেয়সীর গায়ের মিষ্টি সুবাস বুকে ভরিয়ে নেয়।

অনুপমা, “আচ্ছা আমরা হানিমুনে কোথায় যাবো?”

দেবায়ন হেসে বলে, “এই তো হানিমুন হয়ে যাচ্ছে আবার কোথায় যাবো।”

অনুপমা দেবায়নের বুকে ছোটো কিল মেরে বলে, “ধুর বাবা বলো না কোথায় নিয়ে যাবে? এখানে হানিমুন কিছু হবে বলে আমার মনে হয় না। মামনি মনে হয় না, আমাকে তোমার কাছে একা ছারবে। আমাদের হানিমুন মাঠে মারা গেল।”

দেবায়ন, “কোথায় যেতে চাও তুমি?”

অনুপমা, “হানিমুনে সঞ্চয়িতাদির বাড়ি। আমার মাসির মেয়ে সঞ্চয়িতা, ইংল্যান্ডে, মারগেট শহরে থাকে। তিন বছর আগে ওর বিয়েতে গিয়েছিলাম। উফফফ কি দারুন জায়গায় বাড়ি জানো, একদম সমুদ্রের তীরে।”

দেবায়ন চুপ করে মিষ্টি হাসি মাখানো অনুপমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিস্টার সেনের কথা মনে পরে যায়, অনুপমার বাবা বলেছিলেন যে মেয়ে যদি কখন লন্ডন যেতে চায় তাহলে কি চাকরির পয়সায় মেয়েকে লন্ডন নিয়ে যেতে পারবে দেবায়ন। দেবায়ন কোনদিন পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে বের হয়নি, মায়ের অফিসের দৌলতে সুদুর মুসউরি বেড়াতে এসেছে। নিবিড় আলিঙ্গন পাশে বদ্ধ কোমল প্রেয়সীর দেহপল্লব, আদুরে কণ্ঠে অনুপমা আবার বলে, “নিয়ে যাবে আমাকে? দারুন জায়গা, নীলচে সবুজ সমুদ্রের পাশে খুব ছোটো সাজানো শহর।”

দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ সোনা তুমি যেখানে যেতে চাইবে আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।”

মাথার মধ্যে ঘোরপ্যাঁচ খেয়ে যায় মিস্টার সেনের কথা, নিজের কোম্পানি যদি দাঁড় করাতে না পারে তাহলে প্রেয়সীর স্বপ্ন পূরণ করতে অক্ষম হবে দেবায়ন।

অনুপমা দেবায়নের চোখে চোখ রেখে বলে, “ধুর বোকা ছেলে, আমি তোমার সাথে মজা করছিলাম। আমি তোমার চোখ পড়তে জানি পুচ্চু। তুমি নিজেকে যত চেননা, তার চেয়ে বেশি আমি তোমাকে চিনি, বুঝেছ। আমি মারগেট যাবো না, তুমি আমাকে যদি আউট্রামের স্কুপে বসিয়ে আইসক্রিম খাইয়ে বল যে আমাদের হানিমুন হয়ে গেছে, তাতেই আমার হানিমুন হয়ে যাবে। তুমি এত কেন ভাবছ যে আমার বাবা আমাকে যেখানে নিয়ে গেছে সেখানে তোমাকে নিয়ে যেতে হবে? আমার বাবার কাছে পয়সা ছিল, ছেলে মেয়ের জন্য সময় আর ভালোবাসা ছিল না। আমি যে তোমাকে ভালোবাসি পুচ্চুসোনা, তোমার বুকের মাঝে থাকলেই আমার হানিমুনের সাধ পূরণ হয়ে যাবে।”

অনুপমার কথা শুনে দেবায়ন উত্তরের ভাষা হারিয়ে প্রেয়সীকে জড়িয়ে মাটি থেকে উঠিয়ে দেয়। অনুপমা দেবায়নের গলা জড়িয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে গভীর চুম্বন একে দেয়। ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়ার পরশ দুই প্রেমঘন নর নারীকে একত্রিত করে দেয়, সময় থমকে দাঁড়ায় দুই মিলনেচ্ছুক হৃদয়ের চারপাশে।

কোলে তুলে দেবায়ন অনুপমাকে বলে, “না পুচ্চি সোনা, তুমি বলেছ যখন আমি তোমাকে নিয়ে যাবো। আমি দেখি আমাদের এই কোম্পানির ব্যাপারে মায়ের সাথে কথা বলে।”

অনুপমা, “পুচ্চু, অনেক সময় আছে আমাদের হাতে। আমাদের আগে কম্পিউটার কোর্স করতে হবে, তারপরে মামনির সাথে কথা বলতে হবে। কম্পিউটার কোর্স করতে মামনির যখন কোন বাধা নেই তাহলে আশা করি আমাদের আই.টি কোম্পানির স্বপ্নেও মামনি বাধা দেবে না।”

দেবায়ন, “ঠিক জানিনা পুচ্চি। তবে মায়ের মনের মধ্যে কিছু একটা আছে বলে মনে হয়। মাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।”

অনুপমা, “হ্যাঁ, মামনি মাঝে মাঝে কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে, চোখ ভাসা ভাসা হয়ে জাচ্ছে। আমি খেয়াল করেছি আজ সকালে খাবার সময়ে। চল দেখা যাক মামনি একা একা কি করছে আবার।”

দেবায়ন আর অনুপমা দুরে দাঁড়িয়ে থাকা দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে দেখে। দূর থেকে দেবশ্রীকে নীল রঙের জিন্সে দেখে অনুপমা দেবায়নকে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “মামনিকে জিন্সে দারুন দেখাচ্ছে। আবার পাশে এক ভদ্রলোক দেখছি মনে হচ্ছে? চলো দেখা যাক।”

দেবায়ন আর অনুপমা এগিয়ে আসে দেবশ্রী যেখানে দাঁড়িয়েছিল। পাশের ভদ্রলোককে দেখে দেবায়নের মনে পরে যে এই ভদ্রলোক হোটেলে ছিলেন, সকালে রেস্তোরাঁতে দেখতে পেয়েছিল দেবায়ন। অদুরে দাঁড়িয়ে ছোটো ফুটফুটে একটা মেয়ে, বয়স খুব বেশি নয় তবে সুন্দরী, দেখে মনে হল যেন স্কুলে পড়ে।







অষ্টদশ পর্ব (#03)

দেবায়ন আর অনুপমাকে দেখে দেবশ্রী হেসে বলে, “কি রে তোদের বেড়ান হল?”

দেবায়ন মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ।”

দেবশ্রী পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, “এতদুর এসে একজনকে খুঁজে পেলাম। আমাদের দিল্লী অফিসের মারকেটিংয়ের ম্যানেজার, মিস্টার ধৃতিমান দেবনাথ।”

মেয়েটির পরিচয়ে বলে, “এই হল, ধৃতিমানের কন্যে, মিস মল্লিকা দেবনাথ। দিল্লীতে ডি.পি.এস ক্লাস এইটে পড়ছে।”

দেবায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে হাত মেলায় ধৃতিমান, “গ্লাড টুঁ মিট ইউ।”

অনুপমার দিকে হাত বাড়িয়ে হাত মেলায়। 

ধৃতিমানের দেখা পেয়ে দেবশ্রীর মুখের ভাবব্যাক্তি বদলে যায়, বিষণ্ণ চিন্তিত চেহারায় এক অনাবিল খুশির আলোক ছটা বিচ্ছুরিত হয়। মল্লিকার সাথে দেবশ্রী বেশ মিশে গেছে। অনুপমার শ্যেন দৃষ্টি ধৃতিমানের চেহারা নিরীক্ষণ করে। বয়স তেমন কিছু বেশি নয়, কথাবার্তা মার্জিত, তবে চেহারার ভাবব্যাক্তি ঠিক অনুপমার পছন্দ হয় না। বারেবারে ওর মামনির শরীরের দিকে কেমন এক আড় চোখে তাকিয়ে দেখে।

দেবশ্রী বলে, “আমাদের হোটেলে উঠেছেন, গতকাল রাতে মেয়েকে নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছেন।”

ধৃতিমান দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “ম্যাডামের সাথে কথা হচ্ছিল তোমাদের নিয়ে। তুমি ফাইনাল ইয়ারে তাই না?”

দেবায়ন, “হ্যাঁ।”

ধৃতিমান, “কেমন লাগছে মুসৌউরি?”

দেবায়ন, “এই সকালে এখানে পৌঁছেছি, এখন শহর ঘুরে দেখা হয়নি। তবে ভিড় দেখে মনে হল বেড়ানোর চেয়ে হোটেলে থাকা ভালো। লোকজন, কেঁচোর কিলবিল করছে।”

ধৃতিমান হেসে উত্তর দেয়, “ছুটির মরশুমে এইরকম হবেই।”

অনুপমা দেবায়নের গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে, আলতো করে দেবায়নের বাহুতে একটা ছোটো চিমটি কাটে। দেবায়ন অনুপমার দিকে তাকাতেই অনুপমা দেবশ্রীকে বলে, “মামনি, এবারে চলো মুসউরি ফিরে একটু শপিং করা যাক।”

দেবশ্রী ধৃতিমানের দিকে হেসে বলে, “এক হোটেলে যখন আছি তাহলে সেখানে দেখা হবে। আর হ্যাঁ, কথাবার্তা কিছুই হয়নি এখন, পরে জানাবো। জানিনা একটু ভয় ভয় করছে।”

মল্লিকার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “তোমার জন্য কি কিনব?”

মল্লিকা হেসে জানায়, “আবার প্রেসেন্ট দেবেন?”

দেবশ্রী একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। অনুপমা আর দেবায়ন মুখ চাওয়াচায়ি করে, বুঝতে পারে যে ওর মায়ের সাথে মল্লিকার পরিচয় এই সুদুর মুসৌরিতে এসে হয়নি, এখানে আসার আগে মল্লিকা দেবায়নের মাকে চেনে। 

ধৃতিমান, দেবশ্রীকে বলে, “আমি উত্তরের অপেক্ষায় থাকব।”

দেবায়নের দিকে ফিরে বলে, “ডিনার আমার তরফ থেকে, কেমন?”

দেবায়ন হাত মিলিয়ে জানায়, “ঠিক আছে।”

গাড়িতে চড়ে দেবায়নেরা মুসৌরির উদ্দশ্যে রওনা দেয়। গাড়ি ছাড়তেই কিছু পরে পেছনে ধৃতিমানের গাড়ি দেখা যায়। ঘণ্টা দুই পরে আঁকা বাঁকা পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে বিকেলের দিকে দেবায়নেরা মুসউরি পৌঁছে যায়। দেবায়ন জানিয়ে দেয় যে শপিঙ্গে ওর ইচ্ছে নেই, ও হোটেলে ফিরে যেতে চায়। ম্যাল রোডে দেবশ্রী আর অনুপমাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি দেবায়নকে নিয়ে হোটেলে পৌঁছে দেয়। হোটেলে পৌঁছানর পরে গাড়ি ছেড়ে দেয় দেবায়ন। হোটেলে ঢুকে একা একা কিছুক্ষণ নিজের কামরায় বসে টিভি দেখে, তারপরে বারে চলে যায়। একটা বিয়ার নিয়ে চুপচাপ বসে অনুপমার কথা ভাবে। খুব বড়লোকের মেয়ে অনুপমা সেন, রুপের ডালি সাজিয়ে ওর কোলে এসে পড়েছে তবে এই সুন্দরীর মনের আশা পূরণ করতে হলে ওকে অনুপমার বাবার কথা মেনে কোম্পানি খুলতে হবে। নিজের একটা আই.টি কোম্পানির স্বপ্ন বুকের মধ্যে একে নেয় দেবায়ন। সময় কেটে যায় কতক্ষনে ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারে না। একহাতে বিয়ারের বোতল অন্য আঙ্গুলে সিগারেট জ্বালিয়ে চোখের সামনে অনুপমার মিষ্টি মুখের স্বপ্ন দেখে।

দেবায়ন সম্বিৎ ফিরে পায় ধৃতিমানের কণ্ঠস্বর শুনে, “একা একা বসে যে? ম্যাডাম কি শপিং করতে গেছেন?”

ধৃতিমান ওর পাশে একটা হুইস্কির গ্লাস নিয়ে বসে পরে। 

ধৃতিমানকে দেখে দেবায়ন সঙ্গে সঙ্গে হাতের সিগারেট নিভিয়ে দিয়ে হেসে বলে, “হ্যাঁ, মা আর অনুপমা একটু ম্যাল রোডে শপিং করতে গেছে। মেয়েদের শপিং করতে যাওয়া মানে একশোটা দেখবে তারপরে একটা নেবে তাই আমি আর যাইনি। আপনার মেয়ে কোথায়?”

ধৃতিমান হেসে বলে, “তা ঠিক বলেছ। মল্লিকা রুমে বসে টিভি দেখছে, আমি ভাবলাম একটু বারে যাই আর দেখো তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল, বেশ ভালোই হল।”

দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “আপনি মেয়েকে নিয়ে একা বেড়াতে এসেছেন, ফ্যামিলি কোথায়?”

ধৃতিমান ম্লান হেসে বলে, “ফ্যামিলি বলতে এক ওই মেয়ে, মল্লিকা। এই অফিসের কাজে খুব ব্যাস্ত থাকি ছুটি পাওয়া যায় না। ওর গরমের ছুটি তাই ভাবলাম একটু ঘুরে বেড়িয়ে আসি।”

দেবায়ন বুঝতে পারল যে ভদ্রলোক ইচ্ছে করে নিজের স্ত্রীর কথা এড়িয়ে গেছেন, দুটি কারন হতে পারে এড়িয়ে যাবার, এক এই ভদ্রলোক ডিভোর্সি দ্বিতীয়, স্ত্রী হয়ত গত হয়েছেন। দুইজনের মাঝে কথাবার্তা গল্প গুজব শুরু হয়। দেবায়ন জানতে পারে যে মায়ের নাম শুধু মাত্র কোলকাতা অফিসে সীমিত নেই, দিল্লীর হেড অফিস থেকে শুরু করে বম্বে, পুনে সবাই মাকে চেনে। মায়ের গর্বে ছেলের বুক ফুলে ওঠে। দেবশ্রীর সাথে ধৃতিমান এই রিক্রুট্মেন্ট টুরে গিয়েছিল সেখানেই পরিচয়। ধৃতিমান, দেবায়নকে ওর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন উত্তরে বলে কলেজ শেষে কোন আই.টি কম্পনি জয়েন করতে চায় আর সেই জন্য কোলকাতা ফিরে একটা কম্পিউটার কোর্স করবে। ধৃতিমান জানায় যে ওদের কোম্পানির দিল্লী অফিসে কিছু আই.টি ফিল্ডে লোক দরকার পরে সেখানে ইচ্ছে করলে জয়েন করতে পারে। দেবায়ন জানায় কোলকাতা থেকে বাইরে যেতে চায় না। দেবায়নের কথা শুনে একটু দমে যায় ধৃতিমান। খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলে কোলকাতায় তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে বিশেষ কোন বড় কোম্পানি নেই, ইচ্ছে করলে দিল্লীতে এসে চাকরি করতে পারে। দেবায়ন ওর আসল পরিকল্পনা একজন বাইরের লোকের কাছে জানাতে অনিচ্ছুক তাই বিজ্ঞের মতন মাথা নাড়িয়ে বলে যে ছোটো খাটো যা চাকরি পাবে তাতেই সে খুশি তবে কোলকাতা ছেড়ে বাইরে যেতে নারাজ। ধৃতিমানের সাথে তর্কে যেতে নারাজ দেবায়ন। নিজের জন্মভুমি ছেড়ে দূর দেশে থাকা, নিজের ভালোবাসার দেশ ছেড়ে অচিন পুরে সোনার খাঁচায় বন্দি জীবনে নারাজ দেবায়ন।

শপিং থেকে ফিরে দেবশ্রী দেবায়নকে ফোন করে রুমে ডাকে। দেবায়ন আর অনুপমার জন্য ভারী জ্যাকেট কেনে দেবশ্রী, নিজের জন্য বেশ কয়েকটা স্টোল আর শাল। পারমিতার জন্য একটা শাল আর মিস্টার সেনের জন্য একটা দামী শার্ট কেনে। অঙ্কনের জন্য একটা চামড়ার জ্যাকেট কেনা হয়। অনুপমা শপিং গল্পে মত্ত, এইখানে এই দেখছে ওই খানের ওইটা ভালো এই নিয়ে বউমা আর হবু স্বাশুরির মাঝে গল্প শুরু হয়। গল্পে আবার রাত বেড়ে ওঠে, দেবশ্রী আর অনুপমা একে একে জামা কাপড় বদলে রাতের খাবারের কথা বলে। রেস্তোরাঁর দিকে যাওয়ার সময়ে অনুপমা দেবায়নেকে মুখ ভার করে জানায় অনেক চেষ্টা করেও ওর মামনি ওকে দেবায়নের সাথে এক রুমে রাত কাটাতে বারন করেছে। দেবায়ন কিঞ্চিত দুঃখিত হয়ে যায়, কোলকাতা থেকে দুই জনে অনেক স্বপ্ন বুকে করে এনেছিল, নিরবে নিভৃতে একসাথে রাত কাটাবে। অনেকদিন অনুপমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি দেবায়ন। অনুপমা মৃদু হেসে জানিয়ে দেয় যে ওর মামনিকে আবার একবার অনুরোধ করে দেখবে।

রেস্তোরাঁতে ধৃতিমান আর মল্লিকার সাথে দেখা। আগে থেকে একটা পাঁচজনের টেবিল বুক করে রেখেছিল ধৃতিমান। অনুপমা বারেবারে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে তার ভাব্ব্যাক্তি নিরীক্ষণে ব্যাস্ত। দেবশ্রী আর ধৃতিমান সামনা সামনি বসে আর দেবায়ন আর অনুপমা সামনা সামনি বসে। দেবশ্রীর পাশে বসে মল্লিকা, বারেবারে দেবশ্রীর মুখের দিকে তাকায় আর ফিকফিক করে হেসে ফেলে। খাওয়ার সময়ে ধৃতিমান, অনুপমা আর দেবশ্রীর উদ্দশ্যে জিজ্ঞেস করে শপিঙ্গের কথা। মল্লিকা কিঞ্চিত মুখ ভার করে অভমানি কণ্ঠে বলে যে ওকে কেন শপিঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়নি। দেবশ্রী হেসে বলে যে পরেরদিন ওদের সাথে শপিঙ্গে নিয়ে যাবে। মল্লিকা বেশ খুশি। দেবশ্রী, ধৃতিমানের প্রশ্নের উত্তরে হেসে বলে, ছুটির মরশুমে মুসউরির মতন নামকরা জায়গায় ভিড় হবেই। সব দোকানে অনেক ভিড়, রাস্তায় পা ফেলার জায়গা নেই, রেস্তোরাঁ আর হোটেল গুলোতে লোকজন মনে হয় উপচে পড়ছে আর জিনিস পত্রের দাম তেমন কিছু কম নয়। ধৃতিমান জানায় যে দেবায়নের সাথে বারে দেখা হয়েছিল। দেবশ্রী ছেলের দিকে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে বারে কি করছিল। মায়ের শ্যেন চাহনির সামনে মাথা নিচু করে উত্তর দেয় যে একা একা ভালো লাগছিল না তাই একটু বারে বসে বিয়ার নিয়েছিল। অনুপমা মাঝে মাঝে কথোপকথনে যোগদান করে। অনুপমা ওর মামনিকে আসস্থ করে বলে বেড়াতে এসে এই টুকু ছাড় ছেলে মেয়েদের দেওয়া উচিত। দেবশ্রী মৃদু হেসে বলে ছাড় সে দিয়ে দিয়েছে তাই বলে যেন সেই স্বাধীনতার অপমান না করে। অনুপমা বুঝে যায় ওর মামনি কি বিষয়ে বলতে চাইছে।

ধৃতিমান বলে, “ম্যাডাম, তোমার ছেলে বেশ বুদ্ধিমান।” 

দেবশ্রী একটু হেসে বলে, “জানি না মাথায় কি আছে।”

অনুপমা দেবায়নকে উত্যক্ত করার জন্য বলে, “কি গো তুমি বুদ্ধিমান নাকি? জানতাম না ত?”

ধৃতিমান, “আমি জিজ্ঞেস করছিলাম যে কলেজের পরে কি করতে চায়।”

দেবশ্রী একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার ধৃতিমানের দিকে তাকায়। ধৃতিমান বলে, “আজকাল তথ্য প্রযুক্তির বাজার, জেনে খুশি হলাম যে তোমার ছেলে আই.টি জয়েন করতে চায়, খুব ভালো।” 

দেবশ্রী দেবায়নের দিকে তাকাতেই দেবায়ন উত্তরে বলে, “হ্যাঁ, মানে কথাবার্তা হচ্ছিল সেইরকম, কিছু।”

ধৃতিমান বলে, “আমি ওকে বলছিলাম যে আমাদের দিল্লীর অফিসে আই.টি ইনফ্রাস্ট্রাকচার আছে, সেখানে লোকের প্রয়োজন থাকে।”

দেবশ্রী খাওয়া থামিয়ে ধৃতিমানের উদ্দশ্যে বলে, “এই সব কথা হয়েছে?”

ধৃতিমান দেবশ্রীর বলার ধরন না বুঝে হেসে বলে, “হ্যাঁ, মানে আমি ওকে বলছিলাম যে দিল্লীতে অনেক আই.টি কোম্পানি আছে, আর আমাদের অফিসে লোকের দরকার পরে। কিন্তু তোমার ছেলে কোলকাতা ছাড়তে চায় না, কোলকাতা সম্বন্ধে বেশ ইমোশানাল।”

ধৃতিমানের এহেন আচরনে দেবশ্রী একটু ক্ষুদ্ধ হয়ে যায়, চোদ্দ দিনের একজনের সাথে থেকে তার প্রেম প্রীতি অন্তত বাইশ বছরের স্নেহ মমতাকে ভাসিয়ে দিতে পারে না। ধৃতিমানের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে চিবিয়ে শীতল কণ্ঠে দেবশ্রী বলে, “ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া আমি পছন্দ করিনা, ধৃতিমান।”

মায়ের হিম শীতল কণ্ঠস্বরের পেছনের কারন বুঝে উঠতে পারে না দেবায়ন, কারন খুঁজতে অনুপমার দিকে তাকায়। অনুপমা ভুরু কুঁচকে ইশারায় জানিয়ে দেয় যে ওর মামনির হটাত করে এইরকম কণ্ঠের উত্তরের কারন ওর অজানা। 

ধৃতিমান সহজে অনুধাবন করে দেবশ্রীর মনের কথা, আমতা আমতা করে উত্তর দেয়, “না মানে আমরা শুধু আলোচনা করছিলাম ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে।”

দেবশ্রী ক্রোধ সংবরণ করে কথা ঘুরিয়ে অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, তুই আগে মুসউরি এসেছিলি তা আর কোথায় ঘুরছিস? কাল আমাদের কি প্রোগ্রাম হবে?”

অনুপমা, “এখানে বেশ কয়েকটা ঝরনা আছে, কেম্পটি ফলস নামকরা, আরো ছোটো ছোটো ঝরনা আছে। তারপরে ম্যাল রোডের শেষে একটা রোপঅয়ে আছে, কাল আমরা সেই সব জায়গায় ঘুরতে যাবো।”

দেবশ্রী দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “তুই এত চুপচাপ কেন? মায়ের হাতের রান্না এত খারাপ যে হোটেলের রান্না থেকে মাথা উঠাতে পারছিস না?”

দেবায়ন হেসে বলে, “না মা, সেটা নয়।”

দেবশ্রী ধৃতিমানকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি দিল্লী কবে ফিরছ?”

ধৃতিমান এই প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিল না, ওর ধারনা ছিল দেবশ্রীর সান্নিধ্যে হয়ত দুটি রাত নিভৃতে কাটাতে পারবে। কিন্তু দেবশ্রীর ভাবমূর্তি দেখে সেই সাহস যোগাতে অক্ষম হয় ধৃতিমান, “না মানে, দিন দুয়েক পরে ফিরব।”

দেবশ্রী থালা থেকে মাথা না উঠিয়ে বলে, “আচ্ছা, ঠিক আছে। পরে তোমার সাথে তাহলে কথা হবে।”

মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলে, “আগামী কাল আমরা ঘুরতে যাবো, তখন তোমাকে নিয়ে যাবো।”

মল্লিকা হেসে বলে, “বাপির সাথে থাকলে বেড়ান যাবে না। আমি সকাল বেলায় তাড়াতাড়ি স্নান সেরে রেডি হয়ে থাকব।”

খাওয়া শেষে দেবশ্রী ধৃতিমানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, অনুপমা আর দেবায়নকে নিয়ে নিজের কামরার দিকে পা বাড়ায়। দেবশ্রী দেবায়নকে বলে ওর সাথে কিছু কথা বলতে চায়। অনুপমা জিজ্ঞেস করাতে বলে দেবায়ন একা নয় অনুপমার সাথে কিছু কথা আছে। দেবায়ন জানায় যে জামাকাপড় বদলে কিছুক্ষণের মধ্যে দেবশ্রীর রুমে চলে আসবে। দেবায়ন বেশ ভাবনায় পরে যায় মা কি কথা বলতে চায় সেই নিয়ে। জামাকাপড় বদলে মায়ের রুমে ঢুকে দেখে, মা টেবিলের পাশে একটা চেয়ারে বসে, হাতে একটা সাদা খাম। মায়ের পাশের সোফার উপরে বসে অনুপমা। দেবায়ন অনুপমাকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি কারন, অনুপমা জানিয়ে দেয় যে দেবায়নের অপেক্ষা করা হচ্ছিল।







অষ্টদশ পর্ব (#04)

খাওয়া শেষে দেবশ্রী ধৃতিমানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, অনুপমা আর দেবায়নকে নিয়ে নিজের কামরার দিকে পা বাড়ায়। দেবশ্রী দেবায়নকে বলে ওর সাথে কিছু কথা বলতে চায়। অনুপমা জিজ্ঞেস করাতে বলে দেবায়ন একা নয় অনুপমার সাথে কিছু কথা আছে। দেবায়ন জানায় যে জামাকাপড় বদলে কিছুক্ষণের মধ্যে দেবশ্রীর রুমে চলে আসবে। দেবায়ন বেশ ভাবনায় পরে যায় মা কি কথা বলতে চায় সেই নিয়ে। জামাকাপড় বদলে মায়ের রুমে ঢুকে দেখে, মা টেবিলের পাশে একটা চেয়ারে বসে, হাতে একটা সাদা খাম। মায়ের পাশের সোফার উপরে বসে অনুপমা। দেবায়ন অনুপমাকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি কারন, অনুপমা জানিয়ে দেয় যে দেবায়নের অপেক্ষা করা হচ্ছিল। 

দেবশ্রী দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “তুই কম্পিউটার কোর্স করতে চাস, ভালো কথা, তার টাকা আমি যোগাড় করে দেব। তারপরে কোলকাতায় কি তেমন কোন ভালো আই.টি কোম্পানি আছে যেখানে তুই মনের মতন কাজ পাবি?”

দেবায়ন আর অনুপমা মুখ চাওয়াচায়ি করে। একটা কিছু অনুধাবন করেছিল অনুপমা, কিন্তু সেটা ওদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে হবে সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। 

দেবায়ন একবার অনুপমার দিকে তাকিয়ে মাকে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, কিছু কোম্পানি আছে কোলকাতায় যেখানে চাকরি পেতে পারি। আর আজকাল সল্টলেকে অনেক নতুন নতুন আই.টি কোম্পানি খুলছে।”

দেবশ্রী, “দ্যাখ, তুই আর অনুপমা, দুইজনেই এখন আমার সম্বল।” অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার মেয়ে নেই।”

অনুপমা দেবশ্রী জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে, “মামনি আমি তোমার মেয়ে নয়?”

দেবশ্রী অনুপমার গালে হাত বুলিয়ে স্নেহ ভরা কণ্ঠে বলে, “না তুই আমার মেয়ে নয়। মেয়েরা বাবা মায়েদের দায়িত্ব। তুই আমার বাড়ির সন্মান, আমার বউমা, আমার ভবিষ্যৎ তুই।” অনুপমা জড়িয়ে ধরে দেবশ্রীকে। দেবশ্রী অনুপমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “সব মায়ের মতন আমি চাই আমার ছেলে ভালো থাকুক, ভালো চাকরি করুক। আমি যে কষ্টে ওকে মানুষ করেছি, সেই কষ্ট যেন তোদের পোহাতে না হয়।”

দেবায়ন মায়ের পায়ের কাছে বসে জিজ্ঞেস করে, “তুমি ঠিক কি বলতে চাইছ?”

দেবশ্রী খানিকক্ষণ চুপ থাকার পরে হাতের খাম দেবায়নের হাতে ধরিয়ে বলে, “আমি একটা চাকরির অফার পেয়েছি। দিল্লীতে আমার হেডঅফিসে ডি.জি.এম এইচ.আর পোস্টের, মাইনে কোলকাতার চেয়ে দ্বিগুন। আমার সি.ই.ও সেই সাথে আমাকে জানিয়েছে যে দিল্লীতে এলে তোকে এখানের বড় কোম্পানিতে চাকরি করিয়ে দেবে অথবা আমাদের কোম্পানিতে তোর চাকরি হয়ে যাবে।”

অনুপমা আর দেবায়নের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরে, ভালোবাসার দেশ, ভালোবাসার শহর কোলকাতা ছেড়ে অচিনপুরি দিল্লীতে চলে আসবে? ভাবতে পারছে না অনুপমা, দেবায়নকে ছেড়ে যেতে হবে ভেবেই চোখের কোণে জল ছলকে আসে। অনুপমা ধরা গলায় বলে, “তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? এই বলার জন্য আমাদের ডেকে নিয়ে এলে।”

দেবশ্রী অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, “না মা, আমি জানি তুই কি ভাবছিস। তোর ভালোবাসা যদি এত গভীর হয় তাহলে তোর ভয় কোথায়? আমি এখুনি দিল্লীতে ট্রান্সফার নিচ্ছি না মা। তোদের কলেজ শেষ হবে তারপরে দিল্লীতে ট্রান্সফার নেব। দেবায়নের চাকরি হয়ে গেলেই আমি তোদের দুইজনের বিয়ে দিয়ে দেব।”

দেবায়ন মায়ের হাত ধরে বলে, “তোমার কোলকাতা, তোমার বাড়ি। সব ছেড়ে তুমি দিল্লীতে আসতে চাও?”

দেবশ্রী, “বাড়ি ছেড়ে আসতে খুব কষ্ট হবে জানি। বাড়ির এক একটা ইট আমার বুকের জল করা রক্ত দিয়ে গাঁথা। কিন্তু তুই যদি কোলকাতায় চাকরি না পাস তাহলে যেখানে তোর চাকরি হবে সেখানে আমাকে যেতে হবে। সেই ভেবে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

দেবায়ন অবাক চোখে মাকে প্রশ্ন করে, “তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছ মানে? তুমি অফার নিয়েছ?”

দেবশ্রী ম্লান হেসে বলে, “না, চরম সিদ্ধান্ত নেবার আগে তোদের সাথে কথা বলা দরকার তাই তোদের এখানে ডাকা।”

দেবায়ন মায়ের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে, “মা আমাদের কিছু বলার আছে তোমাকে। এই কয়দিনে আমরা দুইজনে অনেক কিছু ভেবেছি আমাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে।”

দেবশ্রী, “কি?”

দেবায়ন, “আমরা কম্পিউটার শিখতে চাই একটা কারনে। কলেজের পরে দুইজনে মিলে একটা ছোটো আই.টি সফটওয়্যার ফার্ম খুলতে চাই কোলকাতায়।” 

দেবশ্রী ছেলের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি? তুই কি ভাবছিস? একটা সফটওয়্যার কোম্পানি খোলা এত সহজ? কি জানিস তুই এই সফটওয়্যার, এই কম্পিউটার নিয়ে? এক বছরে তোদের এমন কি হাতি ঘোড়া শিখিয়ে দেবে যে তোরা কোম্পানি খুলতে চাস? একটা কোম্পানি খুলতে কত মাথা ব্যাথা সেটা জানিস? ব্যাবসার কি জানিস তুই?”

অনুপমা, “মামনি, শ্রেয়ার বন্ধু রূপক, যাদবপুরে আই.টি তে বি.টেক করছে। ওর সাথে মিলে আমরা এই কোম্পানি খুলতে চাই।”

দেবশ্রী মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে যায় অনুপমার কথা শুনে, “মানে আমাকে না জানিয়ে এই সব ভাবনা চিন্তা করা হয়ে গেছে তোদের?”

অনুপমা, “না মামনি, আমরা এখন পর্যন্ত কাউকে এই কথা জানাই নি। রূপক অথবা শ্রেয়া কারুর সাথে এই বিষয়ে কোন কথা হয় নি। শুধু তোমাকে জানালাম আমাদের পরিকল্পনার কথা। তোমার মতামত না পেলে, তোমার আশীর্বাদ না পেলে আমরা কিছুই করতে পারব না, মামনি।”

দেবশ্রী, “আচ্ছা একটা কথা বল, যত ছোটো কোম্পানি হোক না কেন সেটা শুরু করতে অনেক টাকা লাগে। কোথা দিয়ে আসবে এত টাকা? আমি অত বড়োলোক নই যে একটা কোম্পানি তৈরি করার মতন টাকা আমার কাছে থাকবে। জমি কিনেছি দেবায়নের বাবার জীবনবিমা আর ওর বড় মামার দেওয়া টাকা দিয়ে। বাড়ি করতে আমাকে এল.আই.সি থেকে লোণ নিতে হয়েছে। মাসের শেষে আমার হাতে এমন কিছু বাঁচে না যে তোদের আমি তোদের টাকা দিতে পারব।”

দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে, সময় এসেছে মাকে সব কথা খুলে বলার। অনুপমা দেবশ্রীকে বলে, “মামনি, সময় মতন টাকার যোগাড় আমরা ঠিক করে নেব।”

দেবশ্রী, “পারমিতা, মিস্টার সেন তোদের এই পরিকল্পনার কথা জানেন?”

অনুপমা মাথা নাড়িয়ে উত্তরে জানায়, “হ্যাঁ, বাবা সব জানে। বাবা, মায়ের মত আছে এই ব্যাপারে। আসলে আমার বাবা ওকে এই আই.টি কোম্পানি খুলতে বুদ্ধি দিয়েছেন।”

অনুপমার কথা শুনে দেবশ্রীর কান গরম হয়ে যায়। দেবশ্রী বুঝতে পারেন যে ছেলে নিশ্চয় মিস্টার সেনের সাথে কথা বলে এই টাকার ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু ছেলের মুখ থেকে সত্য শুনতে চায়, “পরকল্পনা বেশ গভীর ভাবে ভাবা হয়েছে মনে হচ্ছে, তাহলে নিশ্চয় টাকার কথা ভাবা হয়েছে। কোথা থেকে টাকা যোগাড় হবে?”

দেবায়ন, “মা, প্লিস আমাদের কথা শুনে রেগে যেও না। আমাদের পুরো পরিকল্পনার কথা আগে শোনো, বিচার কর, তারপরে বল আমরা ভুল কি করছি। আমি আর অনুপমা, রূপকের সাথে মিলে একটা সফটওয়্যার কোম্পানি তৈরি করতে চাই। সেই বুদ্ধি আমাকে সোমেশ কাকু দিয়েছেন আর সেই সাথে বলেছেন যে কোম্পানির তৈরির যত টাকা লাগে তিনি আমাদের দেবেন।”

দেবশ্রীর চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ছেলের কথা শুনে, হিম শীতল ঠাণ্ডা কণ্ঠে উত্তর দেয়, “তোর বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি অনেকের কাছে হাত পেতেছিলাম কেউ বিশেষ সাহায্য করেনি। তারপরে তোকে অনেক কষ্টে মানুষ করেছি যাতে তোকে কারুর কাছে হাত না পাততে হয় আর তুই কি না নিজের আত্মসন্মান টুকু ডুবিয়ে মিস্টার সেনের কাছে টাকা চাইলি?”

মাথা নিচু করে বসে থাকে দেবায়ন। অনুপমা দেবশ্রীকে বলে, “না মামনি তুমি ভুল বুঝছো। আমাদের কথা একটু ভালো করে শোন।” 

দেবশ্রী অনুপমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আর কি শোনাতে চাস তুই?”

অনুপমা বুঝতে পারে যে ওর মামনি রেগে গেছে, দুঃখে ভেঙ্গে পড়েছে। আসস্থ কণ্ঠে মামনিকে বলে, “মামনি, চাকরির চেয়ে একটা ছোটো ফার্ম খুলতে দোষ কি? দেবায়নের স্বপ্ন একটা নিজের ফার্ম হবে।” 

দেবশ্রী, “ওটা দেবায়নের স্বপ্ন না তোর স্বপ্ন?”

মায়ের কথার উত্তরে দেবায়ন বলে, “মা, চাকরি করতে করতে কিছু বছর পরে আমি একটা নিজের ফার্ম খুলতে চেষ্টা করতাম ঠিক। ওটা আমার স্বপ্ন ছিল বলতে পারো। অনু এই ব্যাপারে আমাকে কোনদিন কিছু বলেনি। অনু বরাবর আমার চাহিদাকে সন্মান দিয়েছে, মা।”

দেবশ্রী অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, তুই কি বলতে চাইছিস শুনি?”

অনুপমা ওর মামনির হাত দুটি ধরে বলে, “মামনি, প্লিস আমাদের ভুল বুঝ না। আমার স্বপ্ন শুধু তোমার কাছে থাকার। আমার কথা একটু শোনো মামনি। সফটওয়্যার ফার্ম তৈরি করতে গেলে একটা ফাইনেন্সিয়ারের দরকার পড়ত, সেখানে আমার বাবা আমাদের টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চায়। তোমার কাছে টাকা থাকলে তুমি দেবায়ন কে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে না? সেখানে বাবা যদি আমাদের সাহায্য করে তাহলে ক্ষতি কোথায়? তুমি টাকা দিলে ঠিক আর আমার বাবা আমাকে টাকা দিলে সেটা ভুল? এটা কেমন মামনি?”

দেবায়ন মুখ তুলে অনুপমার দিকে তাকায়। দেবশ্রী দেবায়নের মাথায় হাত বুলিয়ে সাবধান বানী শোনায়, “ভুল নয় সেটা সত্যি। তবে একটা কথা মনে রাখিস। এই সম্পদ প্রতিপত্তির সিঁড়ি চড়তে চড়তে, কোনদিন ফেলে আসা ধাপ গুলো যেন ভুলে যাস না। এমন যেন না হয়, যে একদিন তুই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আর তোর সামনের জন তোকে প্রশ্ন করল, তুমি কি ঠিক করেছ দেবায়ন? আর সেইসময়ে তোর কাছে সেই উত্তর দেওয়ার ভাষা নেই।”

দেবায়ন মায়ের হাত ধরে আসস্থ করে বলে, “না মা, আমি কথা দিচ্ছি, এমন কিছু আমরা করব না যাতে আমি নিজের সামনে দাঁড়াতে অথবা তোমার সামনে দাঁড়াতে অক্ষম হয়ে যাই।”

দেবশ্রী অনুপমাকে বলে, “কোলকাতায় ফিরে আমি একবার মিস্টার সেন আর পারমিতার সাথে দেখা করতে চাই।”

বুক দুরুদুরু করে ওঠে দেবায়নের। মিস্টার সেন বারেবারে বারন করেছিল, কাউকে যেন খোলসা করে বিশেষ কথা না জানায়। কিন্তু দেবশ্রীর কাছে লুকাতে পারল না অনুপমা অথবা দেবায়ন, মমতার তীব্র বন্ধনে মনের কথা খুলে বলতে হল। অনুপমা প্রমাদ গোনে, বাবার সাথে মামনি দেখা করলে বাবা ক্ষুণ্ণ হতে পারেন, দেবশ্রীকে আসস্থ করে বলে, “মামনি এখন অনেক সময় বাকি আছে। প্লিস মামনি, এখুনি এইসব নিয়ে আমরা কোন ভাবনাচিন্তা করছি না। আগে ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে যাক তারপরে না হয় তুমি মায়ের সাথে বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে।”

দেবশ্রী, “ঠিক আছে তাই হবে। ফাইনাল পরীক্ষার আগে, কলেজ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত তোরা দুইজনে এই সব ব্যাপারে একদম মাথা খাটাবি না। আগে নিজেদের পড়াশুনা, কলেজ ঠিক ভাবে শেষ কর। আমি পারমিতা আর মিস্টার সেনের সাথে এই বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে চাই। সবার কি ইচ্ছে সেটা জানার পরে আমি আমার সিদ্ধান্ত তোদের জানাব।” অনুপমার গাল টিপে আদর করে বলে, “ এখুনি যেন ভেবে বসিস না যে আমি তোদের কথা মেনে নিয়েছি। যা অনেক রাত হয়ে গেছে। আজ রাতে ছুটি দিচ্ছি, বেশি দুষ্টুমি যেন করিস না।”

অনুপমা অবাক হয়ে, খুশিতে দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলে, “তুমি আমার দুষ্টু মিষ্টি মামনি।”

দেবশ্রী, “হুম বুঝতে পারছি বেশ তেল মারা হচ্ছে। যা বদমাশ, আর হ্যাঁ কাল তাড়াতাড়ি উঠিস, কোথায় বেড়াতে নিয়ে যাবি কত ফলস দেখাবি বললি যে।”

অনুপমা, “উম্মম্ম মামনি, কাল আবার শপিং যাবো বিকেলে। কালকে তোমার জন্য একটা ভালো কার্ডিগান কিনে দেব আমি।”

দেবশ্রী অনুপমার গাল টিপে বলে, “আরে পাগলি মেয়ে। যেদিন তুই নিজের আয় করা টাকায় কিনে দিবি সেদিন আমি খুশি হব। তুই দশ টাকার কানের দুল কিনে দিলেও আমি সেদিন বুক ফুলিয়ে বলতে পারব যে আমার বউমা আমাকে কিনে দিয়েছে।”

অনুপমা আদুরে কণ্ঠে দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মামনি, তুমি বড্ড ইমোশানাল করে দাও।”

দেবায়ন বুঝতে পারল যে হবু বউমা আর হবু স্বাশুরির মাঝে কিছুক্ষণ ভাবাবেগের আলাপ চলবে। দেবায়ন অনুপমাকে বলে, “আমি চললাম, তোমাদের ন্যেকামো শেষ হলে চলে এস।”

অনুপমার আর দেবায়ন, দেবশ্রীর রুম থেকে বেড়িয়ে নিজেদের রুমে ঢুকে পরে। নিজেদের রুমে ঢুকতেই দেবায়ন অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে দুই হাতে। প্রসস্থ বুকের সাথে অনুপমার কোমল দেহ পিষে মিলিয়ে একাকার করে দেয়। চুম্বনে আদরে ভরিয়ে দেয় অনুপমার সুন্দর মুখ। অনুপমা দেবায়নের গলা দুই হাতে জড়িয়ে প্রেমের চুম্বন নিবিড় করে আহরণ করে। জীবন প্রদীপ থমকে যাওয়ার আগের মুহূর্তের মতন পরস্পরকে আদরে চুম্বনে ভরিয়ে তোলে জোড়া কপোত কপোতী। দেবায়ন অনুপমাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যায়। 

অনুপমাকে, বুকের উপরে ফেলে মুখখানি আঁজলা করে ধরে বলে, “তুমি না থাকলে আজকে আমি মায়ের সামনে কথা বলতে পারতাম না। জানিনা তুমি না থাকলে কি হত আমার।” 

অনুপমা দেবায়নের চোখের মণির মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে বলে, “এমন করে কেন বলছ, আমি তোমার পাশে সবসময়ে আছি। তোমাকে ছাড়া আমি আর কিছু ভাবতে পারিনা পুচ্চু সোনা।”

দেবায়ন, “আচ্ছা মাকে কি ভাবে পটালে বলতে পারো, তোমাকে আমার সাথে রাতে থাকতে দিল যে?” 

অনুপমা দেবায়নের নাকের উপরে আঙুল ঘুরিয়ে বলে, “শুধু কি তুমি পারো মানুষ কে কথায় ভুলাতে, তোমার গার্লফ্রেন্ড অনেক কিছু পারে, বুঝলে।”

দেবায়ন, “সে বুঝলাম এবারে...”

অনুপমা ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি মাখিয়ে বলে, “এবারে আর কি, তুমি লাইট নিভিয়ে শুয়ে পরো আমি একটু গা ধুয়ে আসছি।”

দেবায়ন গেঞ্জি খুলে বিছানায় উঠে পরে। অনুপমা চোরা হাসি ঠোঁটে মাখিয়ে একটা পাতলা স্লিপ নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে। দেবায়ন পার্সের থেকে কন্ডম বের করে বালিশের নিচে রেখে দেয়, নিভৃতে প্রেয়সীর সাথে ভালোবাসার খেলার জন্য আগে থেকে তৈরি হয়ে এসেছিল। আসন্ন কামকেলির উত্তেজনায় প্যান্টের ভেতরে লিঙ্গ ছটফট করে। অনুপমা কিছু পরে বাথরুম থেকে ছোটো স্লিপ পরে বেড়িয়ে আসে। ঘরের মৃদু আলোকে অনুপমাকে ঠিক যেন স্বর্গের এক নর্তকীর মতন মনে হয়। কোমরে হাত রেখে বেঁকে দাঁড়িয়ে, চোখে মিষ্টি আহবানের ঝিলিক। দেবায়ন বিছানা ছেড়ে উঠে অনুপমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। কোমরে হাত রেখে নরম পেটের উপরে গাল ঘষে দেয়। অনুপমা দেবায়নের চুলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে দুই চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকে।

দেবায়ন স্লিপের নিচে হাত দিয়ে অনুপমার নগ্ন পাছার ত্বকের উপরে তালু চেপে বলে, “তুমি বড্ড মিষ্টি পুচ্চিসোনা।”

অনুপমা, দেবায়নের চুলে বিলি কেটে বলে, “সোনা, তুমি মিষ্টি করে তুলেছ তাই মিষ্টি, তুমি যেমন রাখবে, তেমনি থাকব আমি।”

দেবায়ন, চুম্বনে আলিঙ্গনে উত্তেজিত করে তোলে প্রেয়সীকে, দুই প্রেমঘন কপোত কপোতী মেতে ওঠে শরীরের খেলায়। নিভৃতে নির্জনে একাকী বন্ধ দরজার পেছনে দেবায়ন আর অনুপমার পার্থিব শরীর ভালোবাসার চরমে এক হয়ে যায়।

দেবায়ন আর অনুপমা রুম থেকে বেড়িয়ে যাবার পরে অনেকক্ষণ দেবশ্রী একাকী বসে চিন্তা করে নিজের ভবিষ্যৎ। ছেলের আর হবু বৌমার খুশি দেখে টেবিলের উপরে রাখা অফার লেটার দেখল দেবশ্রীর। দিল্লী তাহলে আর যাওয়া হচ্ছে না। হৃদয়ের এককোণে ধৃতিমানের জন্য প্রেম জেগে উঠেছিল সেটা হয়ত আর ফলপ্রসু হবে না। ধৃতিমানের, আগবাড়িয়ে দেবায়নের সাথে আলোচনায় দেবশ্রী একটু ক্ষুধ। একবার মনে হয় ধৃতিমানকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া উচিত যে ওর দিল্লী আসা হবে না এবং দেবায়নের সাথে ওদের সম্পর্কের ব্যাপারে কোন কথা হয় নি। ঠিক সেইসময়ে রুমের দরজায় টোকা শুনে অবাক হয়ে যায় দেবশ্রী। রাত অনেক, গায়ে শাল জড়িয়ে দরজা খুলে দেখে যে ধৃতিমান দাঁড়িয়ে। এতক্ষণ ধৃতিমানের কথাই ভাবছিল দেবশ্রী, চোখের সামনে ধৃতিমানকে দেখতে পেয়ে কথা ভুলে গেল। মনের মধ্যে একটু খুশির ছোঁয়া জেগে ওঠে। ধৃতিমান হেসে জিজ্ঞেস করে যে ভেতরে আসতে পারে না বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতে চায়। দেবশ্রী মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে এত রাতে আসার কারন আর ধৃতিমানকে রুমের মধ্যে আসতে বলে।







অষ্টদশ পর্ব (#05)

ধৃতিমান দেবশ্রীর দিকে ঝুঁকে কানেকানে বলে, “তুমি এমন ভাব করছ যেন আমার আসার কারন জানো না। যেতে বললে চলে যাবো, চিন্তা নেই তবে গুটি কয় কথা জিজ্ঞেস করার ছিল তাই তোমাকে এত রাতে ডিস্টার্ব করতে এলাম।” 

দেবশ্রী হেসে বলে, “হ্যাঁ, তুমি ত রাতের ঘুম সকালের ঘুম কাড়তে ওস্তাদ। কি জিজ্ঞেস করতে চাও?”

ধৃতিমান রুমে ঢুকে সোজা বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করে, “একটু কাছে আসবে না।”

দেবশ্রী হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, “তুমি না একদম যা তা, আচ্ছা বাবা আসছি।”

বলে ধৃতিমানের পাশে গিয়ে বসে।

ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “তুমি আমার ওপরে রেগে আছো তাই না।”

দেবশ্রী হাত না ছাড়িয়ে বলে, “তা আছি একটু রেগে। তুমি কেন দেবায়নের সাথে ওই চাকরির ব্যাপারে, দিল্লীর ব্যাপারে এখুনি কথা বলতে গেলে? তোমার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? প্রথম দিনে এমন ভাবভঙ্গি দেখালে ওদের মনে সন্দেহ হত না?” 

ধৃতিমান, “এই দেখ, আমি অতশত ভাবি নি। এই একটু দেবায়নের সাথে আলাপ করতে ইচ্ছে হল, ওর মনের অভিপ্রায় জানতে ইচ্ছে হল তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

দেবশ্রী, “দেখ ধৃতি, আমি ওদের দিল্লীর কথা জানিয়েছি, চাকরির কথা জানিয়েছি। দেবায়ন আর অনুপমা কোলকাতা ছাড়তে চায় না। আমি হয়ত দিল্লীতে ট্রান্সফার নেব না।”

ধৃতিমান, দেবশ্রীর কথা শুনে একটু আহত সুরে বলে, “আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়ত দিল্লী আসবে। আমি প্লান করে নিয়েছিলাম যে তুমি এই অফিস জয়েন করলে আমি চাকরি বদলে অন্য চাকরি নিয়ে নেব। তুমি ডি.জি.এম আর আমি সামান্য একটা সিনিয়র মারকেটিং ম্যানেজার, এক অফিসে ঠিক ভালো দেখাবে না।”

দেবশ্রী ম্লান হেসে বলে, “পৌরুষতে লাগছে তাই না? না গো, দিল্লী আসা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।”

ধৃতিমান, “আমি এক কাজ করতে পারি, আমি চাকরি বদলে কোলকাতা চলে আসি তাহলে কেমন হয়। শ্বশুর বাড়ি বেহালা, তার পাশে একটা ফ্লাট কিনে নেব। মলি ওর ঠাকুমার কাছে থাকতে পারবে।”

দেবশ্রী, “ধৃতি, তুমি কি মল্লিকার সাথে এই সব ব্যাপারে আলোচনা করেছ?” 

ধৃতিমান মাথা নাড়ায়, “না করিনি, তবে মলি আমার কথার খেলাপ করবে না।” 

দেবশ্রী, “প্লিস ধৃতি, ছেলে মেয়েরা এখন আর ছোটো নয়। একবার মল্লিকার মতামত নিয়ে নিও। একরাতে যে স্বপ্ন তুমি দেখিয়েছ সেই নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু আমাদের মিলনে যদি আমাদের সন্তানেরা খোলা মনে না নেয় তাহলে আমি মরেও শান্তি পাবো না ধৃতি।”

ধৃতিমান একটু চিন্তায় পরে যায়। দেবশ্রী আবার জিজ্ঞেস করে, “তুমি মল্লিকার সাথে কথা বলবে তো?”

ধৃতিমান মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ।”

দেবশ্রী, “তুমি যদি কোলকাতায় চলে আস তাহলে ও আমি ঠিক ভেবে উঠতে পারছি না, কি ভাবে ছেলের সাথে কথা বলব আমাদের বিষয় নিয়ে।”

ধৃতিমান নিজেও জানে না কি ভাবে মেয়ের সামনে এই ব্যাপার প্রস্তুত করবে। ধৃতিমানকে চিন্তিত দেখে দেবশ্রী বলে, “ধৃতি, রাত অনেক হয়েছে মল্লিকা একা রুমে আছে। আমার পাশের রুমে দেবায়ন আর অনুপমা। তুমি চলে যাও, ধৃতি, প্লিস একটু বোঝার চেষ্টা করো।”

ধৃতিমান মৃদু হেসে দেবশ্রীর কপালে একটা গভীর চুম্বন একে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। হোটেলের পেছনের দিকে ওর রুম, বড় কাঁচের জানালা দিয়ে দুরে দেরাদুন শহরের আলো ঝলমল করতে দেখা যায়। জানালার পাশে সোফায় বসে অনেকক্ষণ সেই দূর আলো গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে দেবশ্রী, প্রেমের টান দ্বিতীয় বার ওর মনকে দোলা লাগিয়েছে কিন্তু তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চিত। ভেবেছিল দেবায়ন দিল্লীতে আসতে চাইবে, কিন্তু অনুপমা আর দেবায়নের কথা শুনে মনে হল সেই আশা দূর অস্ত। দেবশ্রী জানে না, মল্লিকা আদৌ দিল্লী ছেড়ে কোলকাতা আসতে রাজি হবে কি না। ওর হৃদয়ের ভালোবাসার নবীন কিরণ ফুটে ওঠার আগেই যেন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে।

পরের দিন সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট সেরে বেড়িয়ে পরে মুসউরি ঘুরতে। মল্লিকাকে সাথে ডেকে নেয় দেবশ্রী। অনুপমা জানায় যে মুসউরির অদুরে একটা জায়গা আছে অনেক উঁচু নাম নাগ টিব্বা। গাড়ি নিয়ে ওরা নাগ টিব্বার উদ্দশ্যে রওনা হয়ে যায়। নাগ টিব্বা বেশ উঁচু জায়গা, চারপাশে শুধু উঁচু উঁচু পাইন, দেবদারু বন। তার মাঝখান থেকে বেশ কিছু দূর ট্রেকিং করে গেলে পাহাড় চুড়ায় পৌঁছান সম্ভব। সময়ের জন্য আর দেবশ্রীর জন্য অনুপমা আর দেবায়ন সেই চুড়ার দিকে আর এগোয় না।

মল্লিকার সাথে অনুপমা বেশ মিশে যায়, গল্পের ছলে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে ওর ব্যাপারে। মল্লিকা জানায় যে ওর মা ওর ছোটো বেলায় গত হয়েছে, মাকে ঠিক ভাবে মনে নেই ওর। সেই শুনে অনুপমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ওর বাবা বাড়িতে বিশেষ থাকেনা বললেই চলে। মাসের দশ দিন বাড়ির বাইরে কাটায়, মল্লিকার দেখাশোনা ওর দিদা করে। ছোটো বেলা থেকে দিদার কাছেই মানুষ। মল্লিকা বলে যে ওর বাবা ওকে বিশেষ কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায় না। গরমের ছুটির জন্য দিদা মামা বাড়ি, কোলকাতায় চলে গেছে। অনুপমা, মল্লিকাকে জিজ্ঞেস করে যে কোলকাতা কেমন লাগে। ছোটবেলা থেকে দিল্লীতে বড় হয়েছে মল্লিকা, মাঝে মাঝে ছুটি কাটাতে মামা বাড়ি বেহালা যায়। মল্লিকা জানাল যে কোলকাতা ভালো কিন্তু দিল্লীর মতন ওখানে ওর বন্ধু বান্ধবী নেই, কোলকাতা গেলে খুব একা একা মনে হয় ওর। মল্লিকার কথা শুনে দেবশ্রী ক্ষণিকের জন্য আহত হয়, মনের ভাব চেপে রেখে মল্লিকাকে বলে যে কোনদিন কোলকাতা গেলে যেন ওদের বাড়িতে যায়। মল্লিকা জানিয়ে দেয় যে পুজোর ছুটিতে মামা বাড়ি গেলে নিশ্চয় ওদের বাড়িতে বেড়াতে যাবে।

নাগ টিব্বা থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে যায়, মাঝপথে খাওয়া দাওয়া সেরে সোজা মুসৌরি পৌঁছে একবার কেম্পটি ফলস ঘুরে আসে। বিকেলে মেয়েদের শপিং এ যেন নিত্য এককর্ম, অনুপমা একরকম জোর করেই দেবায়নকে নিয়ে যায়। কেনাকাটা সেরে রুমে পৌঁছায় ওরা। সারাদিন দেবশ্রীর সাথে কাটিয়ে মল্লিকা যেন এক নতুনত্তের স্বাদ খুঁজে পায়, এক স্বাধীনতার স্বাদ যেটা ওর বাবার কাছ থেকে পায়নি। হোটেলে ফেরার সময় মাতৃহীন মেয়েটার মুখের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে দেবশ্রী, মল্লিকার মনে নেই ওর মা দেখতে কেমন ছিল। হোটেলে ফিরে নিজের রুমে যাওয়ার আগে, দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে পরেরদিন যেন ঘুরতে গেলে সাথে নিয়ে যায়। মাতৃহীন কুসুমকলির ছোঁয়ায় দেবশ্রীর বুক কেঁপে ওঠে, ঘাড় ঘুরিয়ে একবার অনুপমা আর দেবায়নের দিকে তাকায়। মিষ্টি হেসে মল্লিকার কপালে চুমু খেয়ে জানিয়ে দেয় পরেরদিন ওকে সাথে নিয়ে যাবে।

পরের দিন দেরাদুন ঘুরতে যায়, সেখানে সহস্র ধারা দেখে ফিরে আসে। এই কয়দিন ধৃতিমান হোটেলেই ছিল, মল্লিকা ওদের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে। অনুপমার বেশ মনে ধরে যায় মল্লিকাকে, সুন্দরী ফুটফুটে মেয়ে। দেবায়নকে বলে যে অঙ্কনের জন্য একদম সঠিক মেয়ে, বড় হলে মল্লিকার সাথে অঙ্কনের বিয়ে দেওয়া যেতে পারে। দেবায়ন হেসে জানায় ওর শ্যালক বাবুর চারপাশে অনেক মেয়ে ঘোরাফেরা করে, কখন কাকে কি ভাবে মন দিয়ে ফেলবে এই কাঁচা বয়সে সেটা অঙ্কন নিজেই জানে না। অনুপমা হেসে ফেলে দেবায়নের কথা শুনে, ভাইকে ভালো ভাবে চেনে।

বুধবার খুব ভোরবেলা হোটেল থেকে চেক আউট করে বেড়িয়ে পরে দিল্লীর উদ্দেশ্যে। দেবশ্রী আর মল্লিকার সাথে দেখা করেনি, বুঝতে পেরে গেছিল মল্লিকার সাথে হয়ত আর কোনদিন দেখা হবে না, তাই মিছিমিছি একটা বাঁধন বাড়িয়ে কি লাভ। দেবশ্রীর ছেলে, দেবায়ন কোলকাতা ছেড়ে যেতে নারাজ, ধৃতিমানের একমাত্র কন্যে দিল্লী ছেড়ে আসতে নারাজ। এইমত অবস্থায় এই দুই তৃষ্ণার্ত নর নারীর মিলন দূর অস্ত। গাড়িতে উঠে দেবশ্রী অনেকক্ষণ চুপচাপ ছিল, নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিল, হৃদয়কে বেঁধে নিয়ে নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল। চোখের কোণে একচিলতে অশ্রু টলমল করে আসে, বারেবারে মল্লিকার হাসি মুখ মনে পরে যায়। অনুপমা দেবশ্রীকে ওই টলমল অশ্রুর কারন জিজ্ঞেস করাতে, হেসে জানায় যে কিছু পুরানো কথা মনে পড়ে গেছে তাই এই অভাগির চোখে একটু জল এসে গেছিল। অনুপমা বেশ বুঝতে পারে তিনদিনে মল্লিকা ওর মামনির হৃদয় জয় করে নিয়েছে তার শিশুশুলভ বন্ধনে। কিছু প্রশ্ন করতে গিয়েও আর করে না অনুপমা, অনুপমা বুঝে যায় ওর মামনির লুক্কায়িত অশ্রুর আসল কারন। চিন্তায় মগ্ন অনুপমা, সুরাহা খুঁজে বেড়ায় চারপাশে, ওর মামনির হৃদয়ের কান্নার আওয়াজ ওকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মুসউরি থেকে দিল্লী পর্যন্ত, বারো ঘন্টা গাড়িতে বিশেষ কারুর মুখে কথা ছিল না। দেবায়ন রাস্তার সৌন্দর্য দেখতে ব্যাস্ত ছিল, পেছনে বসে দুই রমণীর মনের আওয়াজ ওর কানে পৌছয় না।

সন্ধ্যের কিছু পরে দিল্লী পৌঁছে যায় ওরা। মুসৌরি থেকে দিল্লী পর্যন্ত সবাই চুপ করেছিল। গাড়ি দিল্লী ঢোকার পরে সবার মুখে কথা ফোটে। অনুপমা আর দেবায়ন এই ভ্রমণের গল্পে মেতে ওঠে। দেবশ্রী বসে ছেলে মেয়েদের কথা শোনে। গাড়ি আউটার রিং রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে, দেবশ্রী একবার সেই হোটেলের দিকে তাকায় যেখানে ও ছিল। গাড়ি এয়ারপোর্ট ঢোকার আগে একবার গুরগাওয়ের দিকে তাকায় যেখানে ওদের হেডঅফিস। অনুপমা বিষণ্ণতার কারন জিজ্ঞেস করলে দেবশ্রী এড়িয়ে যায় ওর উত্তর, হাসি মুখে জানিয়ে দেয় ওর মন খারাপ নয়। চোখের সামনে ছেলে আর হবু বউমা নিয়ে ঘুরতে এসেছে ওর মতন খুশি আর কে।

প্লেনে, দেবায়নের সিট অন্য দিকে পড়ে। দেবশ্রী আর অনুপমা পাশাপাশি বসে। দেবায়ন চেয়েছিল অনুপমার পাশে বসতে কিন্তু অনুপমা বুঝিয়ে বলে যে ও ওর মামনির পাশে বসতে চায়। প্লেনে ওঠার আগেই অনুপমা বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল ওদের আসার কথা। পারমিতা জানিয়ে দিয়েছিল যে গাড়ি পৌঁছে যাবে এয়ারপোর্টে।

অনুপমা, দেবশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, “মামনি একটা কথা জিজ্ঞেস করব কিছু মনে করবে না।”

দেবশ্রী, “কি জিজ্ঞেস করবি?”

অনুপমা, “মামনি, মুসৌরি থেকে ফেরার পথে তুমি অত চুপচাপ ছিলে কেন?”

দেবশ্রী ভাবতে পারেনি অনুপমা এমন একটা প্রশ্ন করবে। কিছুক্ষণ অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে অনুপমার মনের কথা। অনুপমার চোখ জোড়া বলে দেয় অনুপমা আর ছোটো মেয়ে নয়, চোখ কান খোলা রেখে অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। দেবশ্রীর বুক কেঁপে ওঠে অনুপমার চোখের প্রশ্ন দেখে, কথা ঘুরিয়ে বলে, “না মানে এমনি।”

অনুপমা বেশ বুঝতে পারে যে ওর মামনি কথা লুকিয়ে ফেলেছে, তাও মামনির মনের কথা জানার জন্য জিজ্ঞেস করে, “মামনি, তুমি ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরে মল্লিকাদের বাড়ি গিয়েছিলে, তাই না?”

ধরা পরে যায় দেবশ্রী, মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। আমার অফিস কলিগ, একসাথে টুরে ছিলাম, তার উপরে এবার বাঙালি, তাই ডিনারে ডেকে ছিল মিস্টার দেবনাথ।”

অনুপমা, দেবশ্রীর হাত ধরে বলে, “মামনি, মিস্টার দেবনাথকে তোমার ভালো লাগে?”

সত্যি কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে দেবশ্রী। অনুপমা, দেবশ্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে, “মামনি, মিস্টার দেবনাথের সাথে মুসৌরিতে দেখা হয়ে যাওয়া। সেটা নিশ্চয় কাকতালিয় নয় তাই না?”

কি উত্তর দেবে দেবশ্রী, প্লেনের এ.সির ঠাণ্ডায় হাত দুটি হিম শীতল হয়ে যায়। অনুপমা যদি দেবায়নকে সব বলে দেয়, তাহলে খুব লজ্জার ব্যাপার। ওর মা কারুর প্রেমে পড়েছে আর সেই লোক মিস্টার ধৃতিমান দেবনাথ, যে দিল্লী থাকে।

অনুপমা আসস্থ কণ্ঠে বলে, “মামনি এত ভাবছ কেন? ভাবছ আমি দেবায়নকে বলে দেব। না মামনি, তুমি যতক্ষণ না চাইবে, দেবায়ন কিছু জানতে পারবে না। তুমি সত্যি বল, মিস্টার ধৃতিমানকে তোমার ভালো লেগেছে, তাই না। সেই জন্য মুসউরিতে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন মিস্টার দেবনাথ। যাতে আমাদের সবার সাথে দেখা হয়, দুই পরিবার যাতে পরস্পরকে চিনতে পারে জানতে পারে।”

দেবশ্রী নির্বাক, সারা চেহারা রক্ত শূন্য হয়ে যায়। অনুপমা দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মামনি তুমি কি চাও?” 

এর উত্তর ঠিক জানে না দেবশ্রী, কম্পিত কণ্ঠে অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “তোকে কে বলেছে আমি মিস্টার দেবনাথকে...”

অনুপমা, “মামনি, তোমার চোখ বলেছিল সব কথা ওই ধনোলটি গিয়ে। মামনি, আমাকে একটু বিশ্বাস করে নিজের মনের কথা বলবে না?”

দেবশ্রী মনে বল জুগিয়ে বলে, “জানিনা ঠিক আমি কি চাই। তবে তোদের মুখে হাসি ফুটে উঠলেই আমার সব থেকে বড় পাওনা।”

অনুপমা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “দিল্লী যেতে পারছ না বলে তোমার দুঃখ হচ্ছে তাই না? আচ্ছা মামনি, এই এক বছর পরে দেবায়নের নিজের কোম্পানি হয়ে যাবে, আমরা আমাদের জীবন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যাব। তুমি কি করবে?”

দেবশ্রী ম্লান হেসে বলে, “আমি চাকরি করে যাবো।”

অনুপমা দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “না মামনি, আমাদের কাজ শুরু হলে তোমাকে চাকরি করতে দেব না। তোমার সেবার জন্য সবসময়ে লোক থাকবে আর যাতে তোমাকে কষ্ট না করতে হয়। তোমার বাড়ির সামনে একটা বড় গাড়ি, একটা ড্রাইভার দাঁড়িয়ে থাকবে সব সময়ে।”

দেবশ্রী হেসে ফেলে, “রাম না হতেই রামায়ন গাইছিস? না রে। একটা ফুটফুটে নাতনী অথবা নাতি হবে, তাকে নিয়ে থাকব আমি। তোরা যাবি অফিসে আর আমি থাকব আমার কুট্টি নাতি নাতনী নিয়ে।”

অনুপমা হেসে ফেলে দেবশ্রী কথা শুনে, “মামনি তুমি কথা ঘুরিয়ে দিলে আবার। তুমি যেতে পারছ না দিল্লী তাই দুঃখ হচ্ছে তাই না। কিন্তু মিস্টার দেবনাথ কোলকাতা চলে আসতে পারে ত? ওনার শ্বশুর বাড়ি ত বেহালাতে? উনি এখানে কোন কাজ খুঁজে নিতে পারেন।”

দেবশ্রী, “একটা সমস্যা আছে রে মা। দেবু যেমন কোলকাতা ছেড়ে বাইরে যেতে চায় না তেমনি মল্লিকা দিল্লী ছেড়ে আসতে চায় না। তারপরে মিস্টার দেবনাথের সাথে মোটে কয়েক দিনের আলাপ, আমি এখন পর্যন্ত গভীর ভাবে কিছুই চিন্তা ভাবনা করে দেখিনি। কি করে করব বল, এই যে তুই আমার সাথে এত গল্প করলি, এত মনের কথা বললি, অন্য কেউ কি আমার কথা বুঝত রে। তোদের ফেলে কোথাও গিয়ে যে শান্তি পাবো না।”

অনুপমা, “মামনি আমি যদি দেবায়ন কে বুঝিয়ে বলি।”

দেবশ্রী, “তুই কি বলতে চাস?”

অনুপমা, “মামনি, মানে আমাদের কলেজের শেষে আমরা নিজেদের কাজে ব্যাস্ত হয়ে যাব। তুমি আরো একা হয়ে যাবে তখন। আমি যদি দেবায়নকে বুঝিয়ে বলি, তাহলে কি তুমি বিয়ে করবে মিস্টার দেবনাথকে?”

দেবশ্রী অথই জলে পরে যায় অনুপমার কথা শুনে, কোনদিন ভাবতে পারেনি এই টুকু মেয়ে এত বড় কথা বলবে। হাঁ করে অনুপমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে উত্তর দেয়, “না রে। আমার সূর্য পশ্চিমে ঢলে গেছে, তোদের সূর্য উদিয়মান। ওই একটা সুন্দর গান আছে না, তোমার হল শুরু আমার হল সারা। মিস্টার দেবনাথ আমার জীবনের পথের মাঝে এক পথিক মাত্র, ক্ষণিকের অতিথি, পথ চলতে একসময়ে হটাত দেখা হয়ে গেল, কিছু দূর একসাথে হাঁটলাম। তারপরে তার পথ অন্যদিকে বাঁক নেয় আমার পথ অন্যদিকে। আর আমাকে প্রতিজ্ঞা কর দেবুকে এই সব ব্যাপারে কিছু জানাবি না কোনদিন।”

অনুপমার চোখ ভিজে আসে ওর মামনির চোখের দিকে তাকিয়ে, একবার মনে হয় জড়িয়ে ধরে বলে মামনি তুমি চলে যাও, আমি দেবায়ন কে সব বুঝিয়ে বলে দেব। কিন্তু ওর মামনি নিজের হৃদয়কে বুঝিয়ে শান্ত করে নিয়েছে, মিস্টার দেবনাথ ওর জন্য নয়, ওর জীবনে একজন এসেছিল সেই শূন্য স্থান কেউ পূরণ করতে পারবে না।

অনুপমা ওর মামনির হাত বুকের কাছে নিয়ে বলে, “মামনি আমি প্রতিজ্ঞা করছি, কেউ জানবে না এই কথা। তবে মামনি আমাকে একটা কথা দিতে হবে, যদি মিস্টার দেবনাথ কোলকাতা চলে আসেন তাহলে কিন্তু তোমাদের একসাথে করার দায়িত্ত আমার।”

দেবশ্রী চেয়ে থাকে অনুপমার মুখের দিকে, এক কন্যের অপূর্ণ ইচ্ছে অনুপমা ভরিয়ে দেয়। দেবশ্রী অনুপমার মাথায় হাত বুলিয়ে হেসে বলে, “তুই আমার সোনা মেয়ে, এইরকম যেন থাকিস। সেটা পরের কথা, পরে ভেবে দেখা যাবে।”

কোলকাতা নেমে এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়েই পারমিতার দেখা। অনুপমা অবাক হয়ে যায় মাকে দেখে, ভেবেছিল শুধু মাত্র গাড়ি পাঠিয়ে দেবে, ভাবতে পারেনি যে ওর মা ওকে নিতে আসবে। অনুপমা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ওর মাকে, “কি ব্যাপার তুমি চলে এলে?”

এয়ারপোর্টে পারমিতাকে দেখে দেবশ্রী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “বাপ রে তুমি নিজে চলে এলে আমাদের নিতে।”

পারমিতা, “কেন, তুমি ছেলে মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে যেতে পারো আর আমি এই এয়ারপোর্ট থেকে তোমাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে পারি না?”

দেবশ্রী হেসে বলে, “না না তা পারো। তুমি নাকি আমাদের বাড়িতে এসেছিলে? কি বলত, প্রথম বার এলে আর আমি ছিলাম না। এবারে কিন্তু একদিন আসতেই হবে।”

দেবশ্রীর কথা শুনে অনুপমা আর দেবায়ন মুখ টিপে হেসে ফেলে। ওদের হাসি দেখে পারমিতার কান লজ্জায় লাল হয়ে যায়। কোনোরকমে লজ্জা ঢেকে বলে, “তুমি আগে আমাদের বাড়িতে আসবে তারপরে আমি যাবো।”

দেবশ্রী, “ঠিক আছে, তা নাহয় গেলাম। কিন্তু তোমার জন্য যেগুলো এনেছি তাহলে সেগুলো নিতে কে আসবে?”

পারমিতা, “উফফ আর পারি না। ঠিক আছে পরের রবিবার আসব।” অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই বেশ ভালো ঘুরেছিস মনে হচ্ছে? এই কয়দিনে একবার ফোন করিস নি, মামনিকে কাছে পেয়ে মাকে ভুলে গেলি।”

অনুপমা পারমিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “না মা, সেটা নয়।”

অনুপমার গাল টিপে পারমিতা বলে, “বুঝি রে, মেয়ে যে বিয়ের আগেই স্বাশুরির হাতে চলে গেছে।”

দেবশ্রী হেসে বলে, “না না, তোমার মেয়ে অনেক ভালো। কোন জ্বালাতন করেনি, একটু শুধু বড় হয়ে গেছে, মায়েদের মনের কথা একটু বেশি বুঝতে শিখে গেছে।” 

পারমিতা অবাক হয়ে অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, সত্যি মেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছে। দেবায়ন আর দেবশ্রীকে লেক্টাউনে পৌঁছে দেয়। নামার আগে দেবশ্রী পারমিতাকে বলে যে আগামী রবিবার সপরিবারে নিমন্ত্রন রইল।





******************* অষ্টাদশ পর্বের সমাপ্তি *******************






কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

2 comments:

  1. I don't know whether it's just me or if everyone else encountering problems with your site.
    It appears as if some of the written text within your
    content are running off the screen. Can somebody else please provide feedback
    and let me know if this is happening to them
    too? This could be a issue with my web browser because I've had
    this happen previously. Kudos

    ReplyDelete
  2. Wonderful beat ! I would like to apprentice while you amend your website, how could i subscribe for a blog web site?
    The account helped me a acceptable deal. I have been tiny bit acquainted of this your
    broadcast provided brilliant transparent idea

    ReplyDelete