আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
পাপ কাম ভালোবাসা
Written By pinuram
Written By pinuram
একুবিংশ পর্ব (#01)
কম্পিউটার ক্লাসের প্রথম সেমেস্টার পার হয়ে যায়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি, শীতকাল কোলকাতায় বেশ জাঁকিয়ে নেমে আসে। অনুপমাদের কম্পিউটারের প্রথম সেমেস্টার পরীক্ষা শেষ। ভালো অঙ্কে দুই জনে উত্তীর্ণ হয়।
ছেলের কঠিন পরিশ্রমের ফল দেখে দেবশ্রী বেশ খুশি হয়। দেবশ্রী, দিল্লী হেড অফিসে জানিয়ে দেয় যে তিনি দিল্লীতে জয়েন করতে পারবে না। দেবশ্রী বুঝতে পারে যে এই সিদ্ধান্তের জন্য মিস্টার ঠাকুর আর মিস্টার ব্রিজেশ ত্রিপাঠি বেশ আহত হবেন। তাই দেবশ্রী আগে থেকেই নতুন কাজ খুঁজছিল। দেবশ্রী পুরানো চাকরি ছেড়ে এক এয়ারলাইন্স অফিসে ডি.জি.এম এইচ.আর হিসাবে জয়েন করেন। নতুন অফিস, খুব বড় এবং দেশের নামকরা এয়ারলাইন্স কোম্পানি। কাজের ভার অনেক কম, তবে যে কাজ গুলো তাঁর কাছে আসে সেই গুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেবায়নের ফাইনাল পরীক্ষার আর কয়েক মাস বাকি। তার পড়াশুনা, তার খাওয়া দাওয়া, তার শরীর, সব দিকে দেবশ্রীর কড়া নজর। দেবশ্রী বারেবারে ছেলেকে বলে যে সব কিছু মাথা থেকে বের করে দিয়ে শুধু কলেজের পড়াশুনায় মন দিতে। স্নাতক না হলে, এই বাজারে চাকরি পাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার।
পায়েল আর বাড়ি থেকে বের হয় না। অনুপমার রুমে নিজেকে বন্দি করে রেখে দেয় সারাদিন। কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পারমিতার দুশিন্তা দিনে দিনে বেড়ে ওঠে পায়েলের মানসিক অবস্থা দেখে। সাইকিয়েট্রিস্টের ওষুধ আর কাউন্সিলিং নিয়মিত চলে। কিন্তু পায়েলের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন খুব ক্ষীণ। অঙ্কন ওকে নিয়ে বাইরে যেতে বললে কিছুতেই বাড়ির বাইরে যেতে চায় না। পারমিতা বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পায়েলের জন্য। অনুপমার কলেজ, ক্লাস ইতাদ্যির জন্য শুধু রাত ছাড়া পায়েলের সাথে দেখা হয় না। শুধু মাত্র ওকে আর অঙ্কনকে দেখলেই পায়েল একটু হাসে তাছাড়া আর কারুর সাথে কথা বলে না। প্রায় বন্ধু বান্ধবীরা এসে খবর নেয়, কিন্তু পায়েল পারমিতার আঁচলের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে।
একদিন রাতে খাবার সময়ে, মিস্টার সেন অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “তোদের কম্পিউটার ক্লাসের কি খবর?”
এতদিন পরে ওর বাবা ওর পড়াশুনা, ওর কলেজ ইতাদ্যি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে দেখে অনুপমার খুব ভালো লাগে, “প্রথম সেমেস্টার শেষ হয়ে গেছে। ভালো মার্কস পেয়েছি আমরা।”
মিস্টার সেন, “কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা কবে?”
অনুপমা, “আগামী বছর, গরমের ছুটির আগেই আশা করি।”
মিস্টার সেন, “পড়াশুনা কেমন চলছে আজকাল?”
অনুপমা হেসে বলে, “তুমি সত্যি জানতে চাও না মজা করছ?”
মিস্টার সেন হেসে ফেলেন মেয়ের কথা শুনে, “না রে মা। আমি সত্যি জিজ্ঞেস করছি। আর হ্যাঁ, একবার দেবায়নের ফোন নাম্বার দিস আমাকে। ওর সাথে কিছু কথা আছে।”
অনুপমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি এমন কথা যেটা তুমি আমাকে বলতে পারবে না?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “বাঃ রে, শ্বশুর জামাইয়ে কি নিজেস্ব কিছু কথাবার্তা হতে পারে না।”
অনুপমা হেসে ফেলে বাবার কথা শুনে, “ঠিক আছে কালকে আমি ওকে কলেজে বলে দেব বাড়িতে আসতে।”
মিস্টার সেন বলেন, “না না তুই ওর ফোন নাম্বার আমাকে দে। আমি কথা বলে নেব।”
সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে যাবার পরে। বসার ঘরে বসে থাকেন মিস্টার সেন। পায়েলকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে অনুপমা নিচে নেমে আসে। অনুপমা ওর বাবার সামনে একটা সোফায় বসে পরে।
মিস্টার সেন ড্রিঙ্কের গ্লাস টেবিলে রেখে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার তুই ঘুমাতে যাস নি এখন?”
অনুপমা বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
মিস্টার সেন, “কি কথা? তুই কি কোম্পানির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে চাস?”
অনুপমা মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ। তুমি বলেছিলে, এই বছরে কোম্পানি বিক্রি করে দেবে আর তুমি তোমার চাকরি বদলে অন্য চাকরি নেবে। কিছুই হয়নি, বাবা।”
মিস্টার সেন হুইস্কির গ্লাসে ছোটো চুমুক দিয়ে হেসে বলে, “কোম্পানির একটা গতি করব আমি। সেই সাথে অনেক কিছু ভেবেছি এই কয় মাসে। নতুন বছর, নতুন দিগন্তে পা রাখতে চাই আমি। তুই এত চিন্তা করছিস কেন? তুই কলেজের পড়াশুনা নিয়ে থাক। তুই ভাবছিস তোদের আই.টি কোম্পানির কথা, তাই ত? তার জন্য পয়সা চলে আসবে। আমি একবার দেবায়নের সাথে কথা বলতে চাই। তোর কি আমার অথবা দেবায়নের ওপরে বিশ্বাস নেই?”
কি উত্তর দেবে অনুপমা, ম্লান হেসে বলে, “ঠিক আছে, তুমি আর দেবায়ন যা ভালো বুঝবে তাই করো। এরপরে আমার আর কিছু বলার নেই।”
বিছানায় শুয়ে নিত্যদিনের মতন দেবায়নকে ফোন করে অনুপমা। ফোনে জানায় যে ওর বাবা ওর সাথে দেখা করতে চায়। দেবায়ন একটু চিন্তিত হয়ে যায়, সেই সাথে অনুপমা বলে যে বাবার কথায় সে নিজেও বেশ চিন্তিত। অনুপমা বলে দেয় যে, যাই করুক নিজের বিবেক বুদ্ধিকে সামনে রেখে যেন পা বাড়ায়।
পরের দিন দুপুর বেলা মিস্টার সেন দেবায়ন কে ফোন করে। মিস্টার সেনের ফোন পাবে সেটা দেবায়নের জানা ছিল। আগে থেকে প্রস্তুত ছিল উত্তরের জন্য। দেবায়ন অনুধাবন করেছিল যে ওর সাথে নিশ্চয় ব্যাবসা নিয়েই কথা হবে। মিস্টার সেন বলেন যে আগামী শনিবার, কম্পিউটার ক্লাসের পরে হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারনেশানালে চলে আসতে। বিকেলে দুইজনে ওইখানে ডিনার করতে চায় সেই সাথে মিস্টার সেন কিছু কথা বলতে চান।
শনিবার কম্পিউটার ক্লাসের পরে বিকেলে হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাসানালে চলে যায় দেবায়ন। অনুপমাকে আগে জানিয়ে দিয়েছিল যে ওর বাবা ওর সাথে দেখা করতে চায়। সেই মতন অনুপমা হেসে বলে যে বাবা ওকে বলেছে, আর বাবার কথা একটু বুঝে শুনে যেন পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। আগে থেকে একটা টেবিল রিসার্ভ করে রেখেছিলেন মিস্টার সেন। দেবায়নের আগেই মিস্টার সেন হোটেলে পৌঁছে ওর জন্য লবিতে অপেক্ষা করে।
মিস্টার সেন, দেবায়নকে দেখে হাত বাড়িয়ে অভিবাদন জানিয়ে বলে, “বেশ ঝড় গেল আমাদের সবার উপর দিয়ে তাই না?”
দেবায়ন হেসে বলে, “তা গেল। কিসের জন্য আমাকে ডাকা?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “কেন? আমাদের মাঝে কিছু কথা থাকতে পারে না?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ নিশ্চয় পারে, তবে বাড়িতে হতে পারত সেই সব কথা।”
মিস্টার সেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ বাড়িতে হতে পারত। এখানের শেফ আমার চেনা জানা। আমি লবস্টার আর সার্ক ফিন সুপের অর্ডার দিয়েছিলাম। পারমিতা আর অনুপমা, সার্ক ফিন সুপ খেতে ভালোবাসে না একদম। আমি ভাবলাম আমি একা কেন টেস্ট করব, তোমাকে ডেকে একবার টেস্ট করাই।”
দেবায়ন, “সার্ক ফিন সুপ! বাপরে যে হাঙ্গর আমাদের খায়, আমরা এখন তাকেই খাবো?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “জীবন অনেকটা সেই রকম। আজকে যে তোমাকে খেল, সময় পেলে তুমি তাকে খাবে। বসো বসো।”
দেবায়ন চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার বললেন না ত? কি কারনে আমাকে ডাকা হয়েছে?”
মিস্টার সেন, “তুমি কি এখন পর্যন্ত কারুর সাথে তোমার আই টি কোম্পানির ব্যাপারে কথা বলেছ? মানে তুমি এক বার বলছিলে, যে রূপক যাদবপুরে আই.টি তে বি.টেক করছে?”
দেবায়ন, “না, শ্রেয়া আর রূপকের সাথে এখন পর্যন্ত কোন কথা হয়নি। তবে মায়ের সাথে আর অনুপমার সাথে কথা হয়েছে।”
মিস্টার সেন, “এই কয়দিনে রূপককে দেখলাম। বেশ ভালো ছেলে, মনের দিক থেকে বেশ ভালো। বন্ধুবতসল, ওর সাথে কাজ করতে ভালোই লাগবে। শ্রেয়া মেয়েটা বেশ শক্ত, আমার মেয়ের চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখে। অনু হৃদয় থেকে ভাবে আর শ্রেয়া মাথা খাটিয়ে ভাবে। তোমার কি মনে হয়?”
দেবায়ন হেসে ফেলে সেই সাথে মিস্টার সেন হেসে ফেলেন। মিস্টার সেন জিজ্ঞেস করেন, “দেবশ্রীদি কি বলল তোমাকে?”
দেবায়ন, “মা একবার আপনার সাথে কথা বলতে চান এই সফটওয়্যার কোম্পানির বিষয়ে।”
ততক্ষণে অয়েটার সার্ক ফিন সুপ দিয়ে যায়। মিস্টার সেন, দেবায়নকে সার্ক ফিন সুপ চেখে দেখতে বলে, বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, সময় হলে কথা বলে নেব দেবশ্রীদি’র সাথে। এখন সব বাড়ির ব্যাপার স্যাপার, দেবশ্রীদি’কে না জানিয়ে ত কিছু করা যাবে না। হয়ত ভবিষ্যতে দেবশ্রীদির সাহায্য লাগতে পারে।”
দেবায়ন, “হ্যাঁ, মায়ের সাহায্য লাগবে। একা আমি সফটওয়্যার কোম্পানি তৈরি করতে পারবো না। আমি শুধু মাত্র টেকনিকাল দিক হয়ত দেখতে পারব বাকি দিক দেখার আছে।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “আমাকেই ভুলে গেলে নাকি?”
দেবায়ন লজ্জায় পরে যায়, যে টাকা দিচ্ছেন তার কথা প্রথমে মাথায় আসেনি। দেবায়ন লজ্জিত মুখে বলে, “না না, মানে আপনি বলছিলেন যে এই সব ছেড়ে দেবেন তাই মানে।”
মিস্টার সেন বলেন, “দেখো, তোমাকে একটা কথা আজকে জানাতে চাই। আমি ভাবছি, আমার এই বিজনেসের গন্ডী একটু বড় করতে। ভালো ভাবে শোনো, তারপরে তোমার মতামত জানাবে।”
দেবায়ন সুপ খেতে খেতে মন দিয়ে শোনে মিস্টার সেনের কথা। মিস্টার সেন বলেন, “তোমার আই.টি কোম্পানি তৈরি করতে প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্ট কুড়ি কোটি টাকার মতন লাগবে। তারপরে যতদিন না ব্রেক ইভেনে পৌঁছাবে ততদিন, ওই টাকা শুধু খরচার খাতায় যাবে। ব্রেক ইভেনে পৌঁছাতে একটা কম্পানিকে প্রায় পাঁচ সাত বছর লেগে যায়। ততদিনে এই টাকার পাহাড় কমে আসবে, আয় বিশেষ কিছুই হয়তো হবে না। সেই সব কথা কি একবার চিন্তা করেছ?”
দেবায়ন এতসব কথা চিন্তা করার সময় পায়নি। আসলে দেবায়ন এইসব ব্যাপার জানেই না, ওর পরিবারে কেউ কোনদিন ব্যাবসা করেনি অথবা কেউ অত বড়োলোক নয় যার নিজের একটা কোম্পানি থাকবে। দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে জানায়, এই সব ব্যাপার কোনদিন চিন্তা করে দেখেনি।
মিস্টার সেন বলেন, “আমাদের কন্সট্রাকশন কোম্পানি অনেক দিনের। আগে বাবার কাছে ছিল, সেইখান থেকে আমার দাদা পায়। তারপরে সেটা আমাদের হাতে এসে পরে। সুতরাং এই কোম্পানি এখন অনেক টাকা লাভ করে। এক একটা প্রোজেক্টে পঞ্চাস থেকে ষাট শতাংশ লাভ হয়। সেই টাকা দিয়ে আরও একটা প্রোজেক্টে বিনিয়োগ করা হয়। এই ভাবে এই লাইনে টাকা ঘোরে। কন্সট্রাকশানে প্রচুর কাঁচা টাকা উড়ে বেড়ায়। কোলকাতার বাইরে অনেক কাজ করেছে আমাদের কোম্পানি। এই কোম্পানি সোনার ডিম দেওয়া হাঁস, এই কোম্পানি বিক্রি করা বোকামোর কাজ।”
দেবায়ন, মিস্টার সেনের কথা শুনে বলে, “কাকু, আপনি কিন্তু কাকিমা আর অনুপমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কোম্পানি বিক্রি করে দেবেন।”
মিস্টার সেন হেসে ফেলেন, “আরে বাবা, সেটা না হয় একটু ঝোঁকের বশে বলে ফেলেছিলাম। কিন্তু একটা সোনার ডিম দেওয়া হাঁসকে মেরে ফেলা সম্পূর্ণ বোকামো। তোমার ব্রেক ইভেনে পৌঁছাতে যদি দেরি হয় আর তার মাঝে তোমার টাকার দরকার পরে তখন তুমি কোথায় যাবে? কন্সট্রাক্সান কোম্পানি পুরদমে লাভে চলছে। তোমার কোম্পানিতে টাকার দরকার পড়লে খুব সহজে এই কোম্পানি থেকে টাকা নিয়ে তোমার কোম্পানিতে লাগানো যাবে।”
দেবায়ন চুপ করে ভাবতে শুরু করে এই ব্যাবসার মারপ্যাঁচ। তারপরে মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ তা সত্যি, কিন্তু আপনার মেয়ের চোখে আর কাকিমার চোখে আপনি যে অনেক নিচু হয়ে যাবেন। আপনি তাদের কথা দিয়েছিলেন। আর যদি কোম্পানি বিক্রি না করেন তাহলে সফটওয়্যার কোম্পানি যে খুলতে টাকা দেবেন, সেই টাকা কোথা থেকে আসবে?”
মিস্টার সেন দেবায়নের চোখে চোখ রেখে বলে, “দেবায়ন, কাকে কি ভাবে বুঝাতে হয় সেটা ভালো ভাবে জানি। তোমার আর অনুর স্বপ্নের আই.টি কোম্পানির ইনিসিয়াল ইনভেস্টমেন্ট, সেই টাকা আমার কাছে আছে। কুড়ি ত্রিশ কোটি টাকা বাজারে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন দিকে। আমার কন্সট্রাক্সান কোম্পানি বিক্রি না করলেও চলবে। আমি চাইছি নতুন বছরে নতুন কিছু করার, আমার ব্যাবসার দিগন্ত একটু একটু করে বাড়াতে চাই। একা পেরে ওঠা সম্ভব নয়, বাইরের কাউকে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। অঙ্কন অনেক ছোটো, মিতা আর অনুকে এত বড় পরিকল্পনার ব্যাপারে কিছুই জানাই নি। তুমি আমার এক মাত্র ভরসা।”
দেবায়ন একটু চিন্তায় পরে যায়। মিস্টার সেন হেসে জিজ্ঞেস করেন দেবায়নকে, “তুমি কি ভাবছ দেবায়ন? দেবশ্রীদি কিন্তু আমার কাছে জিজ্ঞেস করবে এই আই.টি কোম্পানির টাকার ব্যাপারে। এতদিনে দেবশ্রীদি কে যতটা বুঝেছি, আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়াটা দেবশ্রীদি যে খুব সহজে মেনে নেবেন সেটা মনে হয় না। তাঁকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার ওপরে ছেড়ে দাও, কেমন? তুমি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাও না শুধু নিজের সফটওয়্যার কোম্পানি নিয়ে থাকতে চাও?”
দেবায়ন মহা ফাঁপরে পরে যায়। মা নিশ্চয় মিস্টার সেনের সাথে কথা বলবেন, সেই সময়ে যদি মিস্টার সেন বেঁকে বসেন তাহলে ওর সফটওয়্যার কোম্পানি তৈরি করার স্বপ্ন স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে। অনুপমাকে কি বুঝাবে, অথবা পারমিতা কি মিস্টার সেনের এই ব্যাপারে সম্মতি দেবে সেই নিয়ে প্রবল সংশয়ে ভোগে দেবায়ন। মিস্টার সেন দেবায়নের মুখের অভিব্যাক্তি দেখে অমনের কোথা বুঝে যায়। দেবায়ন চুপ করে সার্ক ফিন সুপ শেষ করে আর ভাবতে থাকে পরবর্তী পদক্ষেপ। না চাইতেই, ধন লক্ষ্মী ওর সামনে হেঁটে এসেছে। অনুপমার সাথে প্রেম করেছিল কারন অনুপমাকে খুব ভালবাসত, তার বাবার সম্পত্তির ওপরে কোনদিন ওর নজর ছিল না। কারন সেই সময়ে অনুপমা নিজেই জানত না যে ওদের একটা কন্সট্রাকশান কোম্পানি আছে। সাত পাঁচ ভেবে অবশেষে দেবায়ন মনস্থির করে যে মিস্টার সেনের সাথে হাত মিলিয়ে নেওয়া শ্রেয়। ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
দেবায়ন সার্ক ফিন সুপ শেষ করে মিস্টার সেনকে হেসে বলেন, “আপনি তাহলে নতুন বছরে একটা বিজনেস এম্পায়ার গড়তে চলেছেন? তার মানে শুধু এই কন্সট্রাক্সান আর সফটওয়্যার ছাড়াও অন্য কিছু নিশ্চয় আপনার মনের মধ্যে আছে। আমাকে কি করতে হবে তার জন্য?”
মিস্টার সেন, অয়েটারকে ডেকে বলে লবস্টার আর রেড ওয়াইন নিয়ে আসতে। দেবায়ন হাঁ করে মিস্টার সেনের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিস্টার সেন হেসে বলেন, “তুমি ওই রকম ভাবে দেখছ কেন আমার দিকে? আমি জানতাম তুমি আমার কথা মেনে নেবে, তাই আগে থেকেই লবস্টার অর্ডার করেছিলাম আর এবারে রেড ওয়াইনের সাথে লবস্টারের মজা নিতে নিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের আলোচনা করব। কাল রবিবার, বাড়িতে যাবার আশা করি তাড়া নেই আর তোমার বাইক আছে। তুমি ত আর অন্য কারুর সাথে নেই। তুমি আমার সাথে আছো। অত চিন্তা কিসের?”
দেবায়ন, “কিন্তু কাকু, আমি বিজনেসের ব্যাপারে সত্যি কিছু জানি না। সত্যি বলতে, আমি সফটওয়্যার কোম্পানি খুললে শুধু টেকনিকাল দিকটাই হয়ত দেখতাম।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “না, এই রকম করলে চলবে না। তুমি আমার এম্পায়ারের উত্তরাধিকারী। তুমি একটা আনকোরা হীরে, আমি তোমাকে কাটবো, তোমাকে পলিশ করব। তুমি আমার চেয়ে বেশি চকচক করবে।”
দেবায়ন, “মানে?”
মিস্টার সেন, “আদব কায়দা, ব্যাবসার প্যাঁচ, কোথায় কার সাথে কি ভাবে কথা ববে, এই সব। তাহলে এবারে আমার পরিকল্পনা খুলে তোমাকে বলি।”
লবস্টার আর রাসিয়ান স্যালাডের সাথে, অয়েটার রেড ওয়াইন দিয়ে চলে যায়। মিস্টার সেন বলেন, “পরের বছর একটা নতুন বছর হবে আমাদের জন্য। তোমার হবে সফটওয়্যার কম্পনি, সেই সাথে কন্সট্রাক্সান আছেই। আমি হসপিটালিটি সেক্টর মানে হোটেল বিজনেসে ঢুকতে চাই। কন্সট্রাক্সানের লাভের অনেক টাকা সরিয়ে আমি হোটেল বিজনেসে লাগিয়ে দিয়েছি, কেউ জানে না এই বিষয়ে কারন সব ব্লাক মানি। ছয় খানা খুব ভালো ভালো রিসোর্টে আর হোটেলে আমার শেয়ার আছে তবে কারুর মালিকানা নেই। উত্তরাখন্ডের বিন্সারে একটা, একটা হিমাচলের ডালহৌসিতে, একটা মানালির কাছে সোলাং ভ্যালিতে, একটা ব্যাঙ্গালোরে বেশ বড় থ্রি স্টার হোটেল, একটা উটিতে রিসোর্ট এবং পুনেতে বড় থ্রী স্টার হোটেলে।”
দেবায়ন থ বনে যায় মিস্টার সেনের কথা শুনে। সামনে বসা ভদ্রলোক আর কোথায় কোথায় কি কি লুকিয়ে রেখেছে সেটা ভাবতে চেষ্টা করে। মিস্টার সেন হেসে বলেন, “তুমি অবাক হয়ে গেলে নাকি? এই গুলোতে শুধু আমার বেনামে শেয়ার কেনা ছিল তাই আর পারমিতাকে বলিনি।”
একুবিংশ পর্ব (#02)
দেবায়ন হেসে ফেলে, “আরো কিছু আছে নাকি কাকু? বলেই ফেলুন আজকে।”
মিস্টার সেন, “না না, আর নেই। এবারে আসল কথায় আসি। আমি চাই পরমিতকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দিতে। আর সেই শেয়ার নিবেদিতাকে দিতে। নিবেদিতা কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট যোগাড় করেছিল, তবে কেউ পঁচাত্তর শতাংশের জন্য রাজি হয়নি। আসলে আমি চাইনি তখন। পরমিতের শেয়ার নিবেদিতাকে দিয়ে দিলে আশা করি শান্ত হয়ে যাবে। এমনিতে নিবেদিতার আর পারমিতার একদম বনে না। কিন্তু তোমার কাকিমা অনেক করেছে, আর নয়। এবারে ওকে কন্সট্রাক্সান থেকে সরিয়ে নিয়ে পরিষ্কার কাজে লাগিয়ে দেব, হোটেলে। আর নিবেদিতা আমাদের এই কন্সট্রাক্সান দেখবে। তবে ওর কাছে থাকবে পঁয়তাল্লিশ শতাংশ, বাকিটা তোমার কাকিমার নামেই থাকবে। তবে তোমার কাকিমা আর কাজ করবে না। এবারে আসি হোটেলের কথায়। এই যে নতুন প্লান করেছি, সেই খানে অনেক টাকার দরকার। কিছু হোটেল বেশ ভালো চলে, কিছু হোটেল ঠিক চলে না। সব হোটেল গুলো আমি মালিকানা মানে একান্ন শতাংশ কিনতে চাই। কিন্তু এই মালিকানা সত্তা কিনতে গেলে টাকার দরকার পড়বে। আমি কন্সট্রাসানের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট যোগাড় করেছি। সেই টাকা আমি সাইফন করব এই হোটেল গুলোর শেয়ার কেনার জন্য। তোমার সফটঅয়ারের টাকা বাজারে পরে আছে, যে কোন সময়ে তোলা যাবে।”
দেবায়ন মন দিয়ে সব কথা শুনে বলে, “আমি এখানে কোথায়?”
মিস্টার সেন হেলে বলেন, “তুমি আমার পাশে থাকবে, আবার কোথায়? অঙ্কনের এই কাজে মন লাগবে কি না সন্দেহ আর অঙ্কন এখন অনেক ছোটো। অনুপমা সফটওয়্যার দেখবে, শ্রেয়া আর রূপকের সাথে। পারমিতা, হোটেলে ইন্ডাস্ট্রি সামলাবে, নিবেদিতা কন্সট্রাক্সান সামলাবে। আমি আর তুমি, এই গ্রুপের মাথায় থাকব, তুমি এই গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাই একবার বলছিলাম যে গ্রাজুয়েশানের পরে এম.বি.এ করে নাও। অবশ্য আজকাল ডিস্টান্সে এম.বি.এ করা যায়। পরের বৃহস্পতিবার, রায়চকের র্যাডিসন ফোর্টে একটা বিজনেস পার্টি আছে। সেখানে একজন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট আসবে, জার্মান ভদ্রলোক। তিনশ কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট। নিবেদিতা ওইখানে থাকবে, তখন পরিচয় করিয়ে দেব নিবেদিতার সাথে। আর বাকি কথা তোমাকে পরে বলব।”
দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “সব ঠিক আছে কাকু। কিন্তু আমার একটা কিন্তু আছে। এতো কিছু বলছেন, আমি পারব তো?”
মিস্টার সেন বলেন, “আজকে তুমি লবস্টার আর ওয়াইনের স্বাদ নাও। পরের বৃহস্পতিবার গাড়িতে যেতে যেতে বাকি কথা বলব। আর হ্যাঁ, অনুপমাকে এত কিছু আবার বলতে যেও না। একটু মাথা খাটাও, তুমি সব কিছুতে বড্ড হৃদয় লাগিয়ে ফেল। সেটা করলে কি আর বিজনেস করা যায়, মিস্টার বসাক?”
দেবায়ন লাজুক হাসে, “আপনি যা বলবেন করতে রাজি আছি।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “তুমি আমার উত্তরাধিকারী। আমার একমাত্র জামাই যার ওপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।”
মিস্টার সেন আর দেবায়ন, ডিনার শেষ করে। বাকি কথা, ওর পড়াশুনা আর কম্পিউটার শিক্ষা দিক্ষা নিয়ে হয়। ওরা টেবিল ছেড়ে উঠতে যাবে এমন সময়ে একটি সুন্দরী মেয়ের সাথে দেখা হয়। দেবায়ন বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে, কোথায় যেন দেখেছে মেয়েটাকে। মেয়েটা বেশ সুন্দরী, চোখ দুটি বড় বড়, ভুরু জোড়া ধনুকের মতন বাঁকা, নাক টিকালো, মুখবয়াব অতি মধুর আকর্ষণীয়। মাথার চুল একপাশে ছাড়া বাম ঘাড়ের উপর দিয়ে সামনে এলিয়ে এসেছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, ঠোঁট দুটো গাড় বাদামি লিপ্সটিকে মাখা। বাম কব্জিতে একটা সোনার ব্রেসলেট। পরনে হাত কাটা, হাঁটু পর্যন্ত কালো রঙের চাপা পোশাক। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে লেপটে। বুকের দিকে তাকাতেই দেবায়নের বুক ছ্যাঁক করে ওঠে, চাপা পোশাকের ভেতরে সুউন্নত দুই স্তন জোড়া মুক্তি পাবার জন্য যেন ছটফট করছে। বুকের দিকে গভীর খাঁজ, স্তনের ভেতরের নরম ফর্সা ত্বকের উপরে রেস্টুরেন্টের হলদে আলো পিছল খেয়ে যায়। শরীরের ঘঠন অতি লোভনীয়। নরম তুলতুলে পাছা জোড়া দেখে দেবায়নের শরীরের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। দেবায়ন আড় চোখে মেয়েটার দিকে বারেবারে তাকায়। বয়সে ওর থেকে বছর তিন চার বড়ই হবে। কিন্তু কোথায় যেন দেখেছে মেয়েটাকে।
মেয়েটা মিস্টার সেনের দিকে এগিয়ে হেসে বলে, “কি ব্যাপার সেন স্যার আজকে ম্যামকে ছাড়াই ডিনার করছেন?”
মিস্টার সেন মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে অভিবাদন করে বলে, “তুমি এখানে, কি ব্যাপার। কারুর সাথে ডিনারের নিমন্ত্রন নাকি?”
মেয়েটা হেসে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে মিস্টার সেনকে নিচু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “আজকে হটাত আপনার নেচার বদলে গেল বলে মনে হচ্ছে? কি ব্যাপার। পারমিতা ম্যাম জানে তো?”
মিস্টার সেন হেসে ফেলেন, “আরে না না। তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই, আমার বিজনেস পার্টনার, মিস্টার দেবায়ন বসাক।” আর মেয়েটাকে দেখিয়ে দেবায়নকে বলে, “একে চিনতে পারছ না? টি.ভি সিরিয়াল করে, অনন্যা বাসু।”
দেবায়ন এবারে চিনতে পারে মেয়েটাকে। অনন্যা বাসু, বাংলা টি.ভিতে বেশ কয়েকটা সিরিয়াল করেছে, সেই সাথে গোটা দুই সিনেমাতেও নায়িকার বোন, বান্ধবীর পার্ট করেছে। হাত বাড়িয়ে হাত মেলায় অনন্যার সাথে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই আপনাকে দেখে তখন থেকে মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি।”
অনন্যা, দেবায়নের হাতে হাত মিলিয়ে বলে, “আপনার সাথে দেখা হয়ে বড় ভালো লাগলো। গ্ল্যাড টু মিট সাচ অ্যা হ্যান্ডসাম এন্ড ড্যাসিং ইয়াং ম্যান। কিসের বিজনেস আপনার?”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমাকে কেন আর আপনি বলে ডেকে কষ্ট দিচ্ছেন...”
মিস্টার সেন সঙ্গে সঙ্গে দেবায়নের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে, “আমার সাথে বিজনেসে আছে, মিস্টার বসাক। আচ্ছা, তুমি তাহলে বৃহস্পতিবারে ঠিক সময়ে পৌঁছে যেও র্যাডিসন ফোরটে। তনুজার কি খবর? কালকে তনুজা কেও নিয়ে এসো।”
দুষ্টুমি ভরা ভুরু নাচিয়ে অনন্যা, মিস্টার সেনকে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ আমারও তাই মনে হচ্ছে। আমি রাত নটার মধ্যে পৌঁছে যাবো। বাকি দুইজনকে বলা আছে ওরা আমার আগেই পৌঁছে যাবে। তনুজার সাথে না হয় আমি কথা বলে নেব, আপনি চিন্তা করবেন না। ওকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার।”
দেবায়নের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি আসছেন কি র্যাডিসন ফোরটে?”
মিস্টার সেন, দেবায়নের হয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ ও আসবে। যাই হোক ওই কথা রইল, বাকি কথা ফোনে বলে নেব।”
হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারনেশানাল থেকে বেড়িয়ে মিস্টার সেন দেবায়নকে বলে, “এবারে রাতে ভালো করে ঘুমাবে, বুঝেছ? রাত পোহালে বুদ্ধি বাড়ে। আর এখুনি সব কথা সবাইকে জানাতে হবে না। আগে এক এক করে পদক্ষেপ নেই আমরা। ধিরে ধিরে সিঁড়িতে চড়ি। সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়ে গেলে সবাইকে জানাব। দেবশ্রীদি কে সময় হলে আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। ভালো কথা, তোমার সুট আছে?”
দেবায়নের কোনদিন সুটের দরকার পড়েনি, তাই মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে সুট নেই। মিস্টার সেন বলেন, “আমি অনুকে বলে দেব। আগামী কাল ক্লাসের পরে তোমাকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিটের রেমন্ড শপে কিম্বা রেইড এন্ড টেলরে নিয়ে যাবে। বেশ পছন্দ মতন দুটি ভালো সুট কিনে নিও। আবার এটা ভেবে বস না যে শশুর দিচ্ছে বলে নেবে না।”
হেসে ফেলে দেবায়ন, “না না। সেই রকম কিছু নয়। ওকে তাহলে গুড নাইট।”
মিস্টার সেন চলে যাবার পরে দেবায়ন বাইকে চেপে ফিরে আসে বাড়িতে। বাড়িতে ঢোকা মাত্রই ওর মা জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁরে এতক্ষণ মিস্টার সেনের সাথে কি কথা বলছিল? মায়ের প্রশ্ন যথাসম্ভব এড়িয়ে উত্তর দেয় যে, ওদের সফটওয়্যার কোম্পানির ব্যাপারে কথা বলার জন্য ডেকেছিলেন মিস্টার সেন। দেবশ্রী দেবায়নের কথা শুনে আহত হয়ে বলেন যে আগে পড়াশুনা তারপরে বাকি সব। তিনি মিস্টার সেনের সাথে কথা বলার অভিপ্রায় ব্যাক্ত করেন। মাকে বুঝিয়ে বলে দেবায়ন যে এখুনি কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় নি, তবে আগামী বৃহস্পতিবার মিস্টার সেনের সাথে এক জায়গায় যেতে হবে কিছু কাজের জন্য। রাতে বাড়ি ফিরবে না। দেবশ্রীর সন্দেহ হয়, বলে যে অনুপমার সাথে কথা বলবে, সত্যি কি মিস্টার সেনের সাথে যাবে না অন্য কারুর সাথে। দেবায়ন হেসে বলে, সোজা মিস্টার সেনকে ফোনে জিজ্ঞেস করতে পারে।
দেবশ্রী ছেলের গালে আদর করে হাত বুলিয়ে বলে, “বাবা, যাই করিস। নিজের মান সন্মান বজায় রেখে করিস। তোকে এইখানে নিয়ে আসতে আমার বুকের রক্ত জল হয়ে গেছে।”
দেবায়ন মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “এত ভেব না মা। একবার আমার সফটওয়্যার কোম্পানি দাঁড়িয়ে যাক, তোমাকে মাথায় করে রাখব আমি আর অনু।”
দেবশ্রী, “দেখিস বাবা। যা শুতে যা। কাল আবার কম্পিউটার ক্লাস আছে তোদের।”
রাতের বেলা বিছানায় পরতেই, চোখের সামনে ভেসে ওঠে কালো চাপা পোশাকে পরিহিত অনন্যার দুষ্টু মিষ্টি মুখ। নধর গোলগাল বাঙালি ছাপে ভরা সুন্দরী। স্তন জোড়া বেশ বড় বড়, হাঁটা চলায় এক মত্ততার ছন্দ। মাথায় প্রশ্ন ঢোকে দেবায়নের, একটা বিজনেস মিটিঙয়ে এক জন অভিনেত্রীর কি দরকার? আর যে তনুজার কথা বলছিল অনন্যা সে কি নামকরা বাঙালি মডেল, তনুজা রায়? চোখ বুজে তনুজার নধর দেহপল্লবের স্বপ্ন দেখে দেবায়ন। একটা সাবানের বিজ্ঞাপন করেছে, মসৃণ খোলা পিঠের উপর দিয়ে জলের ফোঁটা গড়িয়ে পরে কোমর পর্যন্ত, কোমরের নিচে ফোলা নিতম্ব তোয়ালেতে ঢাকা। ভেজা চুল এলোমেলো হয়ে ডিম্বাকৃতি মুখবয়াবের কিছু অংশে দোল খায়। ফ্যাকাসে গোলাপি ঠোঁট জোড়া ঈষৎ খোলা, এক তীব্র যৌন আবেদন মাখা হাসি নিয়ে টি.ভি স্ক্রিনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় শেষে। মনে পরে যেতেই প্যান্টের ভেতরে শিথিল লিঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে। আপনা হতেই প্যান্টের ভেতরে হাত চলে যায়, লিঙ্গ মুঠি করে ধরে নাড়াতে শুরু করে।
বাধ সাধে অনুপমার ফোন, “কি গো তুমি। বাড়ি ফিরে একটা ফোন পর্যন্ত করতে ভুলে গেলে? কি ব্যাপার তোমার? বাবার সাথে এত কি কথা হল?”
ধরমর করে বিছানায় উঠে বসে দেবায়ন, “না মানে, আমি তোমার বাবার কথা গুলো ভাবছিলাম।”
অনুপমা, “কি কথা হল তোমাদের?”
দেবায়ন, “কিছু না এমনি ওই সফটওয়্যার কোম্পানি নিয়েই কথা হল। কাকু জিজ্ঞেস করছিলেন যে এখন পর্যন্ত আমরা রূপক শ্রেয়ার সাথে কথা বললাম না বলিনি। আমি বলেছি, এখন পর্যন্ত কোন কথা হয়নি। এই সব আর কি। তোমার কি খবর? পায়েল ঘুমিয়ে পড়েছে?”
অনুপমা, “হ্যাঁ, পায়েল অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আজকে ভাইয়ের সাথে একটু সামনের পার্কে বেড়াতে গেছিল, তাই মনটা অনেকদিন পরে বেশ ভালো আছে। আচ্ছা একটা কথা বল, বাবা বলল কালকে তোমাকে নিয়ে রেমন্ড শপে না হয় রেইড এন্ড টেলর যেতে। কি ব্যাপার হটাত সুটের কি প্রয়োজন পড়ল যে বাবা নিজে থেকে বলল?”
দেবায়ন, “পরের বৃহস্পতিবার একটা বিজনেস মিটিং আছে সেখানে যেতে হবে কাকুর সাথে তাই সুটের দরকার।”
অনুপমা, “তোমার সাথে কাল বিস্তারিত ভাবে কথা বলব। কিছু লুকাবে না, তাহলে মাথা ফাটিয়ে দেব একদম।”
দেবায়ন হেসে বলে, “না মা লক্ষ্মী তোমার কাছে কিছুই লুকাব না। কালকে ক্লাসের আগে সব বলব।”
পরের দিন কম্পিউটার ক্লাসে আসার পরেই অনুপমা দেবায়নকে গত রাতের আলচনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন ক্লাসের পরে অনুপমাকে সব কথা খুলে বলে। অনুপমা বেশ চিন্তিত হয়ে পরে ওর বাবার কথা শুনে। সব বলার পরে দেবায়ন অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে ওদের করনীয় কি।
অনুপমা বলে, “বাবা ঠিক যে রকম বলছে, ঠিক সেই রকম করে যাও। দেখা যাক বাবা কি করতে চান। আমাকে কিছুই জানাওনি তুমি। আমি আর এই ব্যাপারে বাবার সাথে কথা বলব না। ঠিক সময়ে ব্রেক লাগিয়ে বেড়িয়ে আসাটা জরুরি। এই সময়ে বাবার কথা না মানলে, মামনিকে বলে দেবে বাবা আর মামনি খুব আহত হয়ে পরবে, খুব ভেঙ্গে পরবে। আমার মনে হয়, মা এই সব জানে তাই বাবা বলেছে যে মাকে ঠিক করে বুঝিয়ে নেবে। জানো, সত্যি বলছি বড় কষ্ট পেলাম। এখন মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি মামনির কাছে যেতে পারলে বেঁচে যাই।”
দেবায়ন অনুপমার কাঁধে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দেয়, “এই কয়দিনে ঠিক যেমন চলেছে ঠিক তেমনি তুমি ব্যাবহার করবে।”
অনুপমা একটা বুদ্ধি দেয় দেবায়নকে, “বাবার সাথে গাড়িতে যাবে, সব কথাবার্তা আর ওখানে যা হবে তার কিছু কিছু ছবি অথবা ভি.ডি.ও করে রাখবে। আমি একবার দেখতে চাই। শেষ পর্যন্ত পুরাতন পন্থিতে চলতে হবে, দল ভেঙ্গে রাজত্ব করা।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “মানে?”
অনুপমা হেসে বলে, “কোথাও একটা ভাঙ্গন ধরিয়ে এদের আসল অভিসন্ধি জানতে হবে। এখন শুধু অপেক্ষা করা আর চোখ কান খোলা রাখা ছাড়া উপায় নেই। কলেজ শেষ হোক, আমাদের সফটওয়্যার কোম্পানির কি করছে সেটা দেখা যাক। তারপরে সবার আচার ব্যাবহার দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবার কথা ভাবা যাবে।”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে অনুপমার কথা মেনে চলবে। রেইড এন্ড টেলরের দোকানে ঢুকে দুটো দামী সুট কেনা হল দেবায়নের জন্য, একটা ছাই রঙের অন্যটা ঘিয়ে রঙের। রঙ দুটো অনুপমার পছন্দ মতন কেনা হল, সেই সাথে দুটো শার্ট আর দুটো টাই। অনুপমা বলল যে এই সব যদি বাড়িতে নিয়ে যায় তাহলে ওর মামনি দেবায়নের ওপরে সন্দেহ করবে এবং বকাবকি শুরু করে দেবে। তাই অনুপমা বলল আগামী বৃহস্পতিবারে সোজা বাড়িতে চলে আসতে। সেখানে ড্রেস করে বাবার সাথে বেড়িয়ে যেতে। ও বাবাকে বলে রাখবে যে দেবায়ন বাড়িতেই আসবে। দেবায়ন অনুপমাকে নিবেদিতার কথা জিজ্ঞেস করে। অনুপমা জানায় যে নিবেদিতাকে ভালো চেনে না। কয়েক বার বাবার পার্টিতে এসেছে কিন্তু কোনদিন বাড়িতে আসেনি নিবেদিতা চৌধুরী।
মিস্টার সেন দেবশ্রীকে ফোনে বলেন যে দেবায়নের সাথে বিশেষ কিছু কাজের জন্য একটা রাতের জন্য চাই। দেবশ্রী সেদিন রাতে দেবায়নকে প্রশ্ন করে এই কাজের ব্যাপারে। দেবায়ন মাকে বলে ওদের সফটঅয়ার কোম্পানির ব্যাপারে একটা বিজনেস মিটিং রাখতে চান মিস্টার সেন তাই তাদের সাথে দেখা করার জন্য র*্যাডিসন ফোরট হোটেলে যাওয়া। দেবশ্রী বিশেষ ঘাঁটায় না ছেলেকে, শুধু একবার বলে যে পড়াশুনা মাথায় রেখে তবে যেন বাকি কাজ করে।
বৃহস্পতিবারে দুপুরের একটু আগেই দেবায়ন, অনুপমার বাড়িতে পৌঁছে যায়। অনুপমা সেদিন আর কলেজে যায় নি। দেবায়ন উপরে অনুপমার রুমে ঢুকে দেখে পায়েল বিছানায় লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে। কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে শুকনো পায়েলকে দেখে। ওকে দেখে বড় কষ্ট হয় দেবায়নের। অনুপমা ওকে ডেকে নিচে নিয়ে যায়।
পারমিতা দেবায়নকে দেখে বলে, “তুমি বেশ বড় হয়ে গেছ এই কয়দিনে। ব্যাবসা সামলাতে শিখে গেছ। অনুর পছন্দ করা সুট গুলো দেখলাম। বেশ দারুন মানাবে তোমাকে।”
একসময়ে একটু একান্ত পেয়ে কাছে এসে বলে, “আমাকে কি সত্যি ভুলে গেলে? এই কয় মাসে একবারের জন্য আমাকে মনে পড়েনি?”
দেবায়ন মৃদু হেসে বলে, “মিমি, তোমাকে ভুলি কি করে। তুমি কি ভোলার? সময় হাতে বড় কম, মিমি তাই কারুর দিকে ঠিক নজর দিতে পারছি না। সত্যি বলছি, সময় পেলেই তোমার কাছে আসব।”
পারমিতা, দেবায়নের গা ঘেঁষে চোখে দুষ্টুমি ভরা হাসি মাখিয়ে বলে, “আমি ঠিক সময় চুরি করে নেব তোমার জন্য। অনেকদিন তোমাকে পাইনি। মিষ্টি মিমি কিন্তু এখন শুধু তোমার কাছেই মিমি আছে।”
দেবায়ন পারমিতার চোখের দিকে তাকায়। পারমিতা নিচের ঠোঁট কামড়ে এক আবেদন মাখা হাসি দিয়ে বলে, “আজকে যেখানে যাচ্ছও সেখানে বেশ মজা করতে পারবে। দেখো বাবা, সেখানে এক সুন্দরী আসবে মন ভুলাতে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কার কথা বলছ, অনন্যা?”
পারমিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার সাথে অনন্যার কবে দেখা হল?”
দেবায়ন, “গত শনিবার, হোটেল হিন্দুস্তানে।”
পারমিতা, “না না অনন্যা নয়। গেলেই জানতে পারবে কে সেই চোর। একটু সাবধানে থেকো।”
অনুপমার ইচ্ছেতে দেবায়ন ছাই রঙের দামী সুট খানা পরে। কোনদিন টাই বাঁধেনি তাই অনুপমা ওর টাই বাঁধতে সাহায্য করে দেয়। মিস্টার সেন তৈরি, অনুপমা তখন দেবায়নকে সাজিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিকে চুলের একটা গোছা কপালে একটু নামিয়ে দেয় কোনসময়ে তারপরে হেসে ফেলে আবার সেটা ঠিক করে দেয়। দেবায়ন বিরক্ত হয়ে বলে তাড়াতাড়ি করতে। অনুপমা দেবায়নের গালে চুমু খেয়ে একটা পেন জামার পকেটে গুঁজে দেয়। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে এই পেন আবার কোন কাজে লাগবে। অনুপমা বলে এই পেনটা, ক্যামেরা ওয়ালা পেন, সাথে থাকলে দরকার পরবে। দুপুরের কিছু পরেই গাড়িতে করে মিস্টার সেন আর দেবায়ন রায়চকের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
একুবিংশ পর্ব (#03)
পথে যেতে যেতে মিস্টার সেন বলেন, “কি ব্যাপার, টেন্সান নিচ্ছ কেন? এবারে একটু ফ্রাংক হও আমার সাথে। তুমি আমার উত্তরাধিকারী, আমার হবু জামাই। সবসময়ে আমার এক হাতের মধ্যে থাকবে তার বাইরে একদম যাবে না। সবসময়ে চোখ কান খোলা রেখে দেবে, এই রকম বিজনেস পার্টিতে খুব জরুরি। যদিও খুব কম সংখ্যক লোক আসবে।”
দেবায়ন, “কে কে আসছে?”
মিস্টার সেন, “জার্মানিতে আমার এক বন্ধু থাকে অনিমেশ সাহা, সে আসছে। আসলে এই ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট সেই যোগাড় করে দিয়েছে। মিস্টার ড্যানিয়েল হারজোগ আর তার সি.এফ.ও মিস্টার হেল্মুট মেরকেল। নিবেদিতা থাকবে আমার তরফ থেকে। আসল প্রেসেন্টেসান আর বেশির ভাগ আলোচনা আগেই হয়ে গেছে। শুধু একবার কোম্পানি দেখতে চায় আর ভবিষ্যতের রোডম্যাপ জানতে চায় এই আর কি। আমার চাহিদা পাঁচশো মিলিয়ন ইউরো, চারশো কোটি টাকার ভেঞ্চার দেখা যাক কোথায় গিয়ে ঠেকে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কিন্তু কোম্পানি ত আরাইশো কোটি টাকার?”
মিস্টার সেন, “হ্যাঁ জানি, তবে ওই সেদিন তোমাকে বলেছিলাম না, তিন ধরনের অডিট রিপোর্ট তৈরি করতে হয়। যাই হোক, ভদ্রলোক বেশ ঘাঘু মনে হয় না দেবে। ওদের ফাইনাল অফার সাড়ে তিনশো মিলিয়ন ইউরো, আজকের পার্টি তার জন্য দেখা যাক কতদুর কি হয়।”
দেবায়ন, “আমি এখানে কি করব, বলতে পারেন?”
মিস্টার সেন, “তুমি কিছু করবে না, তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি শুধু মাত্র অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। এরপরে মানুষকে কি করে সামলাতে হয় সেটা এখন থেকেই জানা উচিত তোমার। কার সাথে কি ভাবে কথা বলবে, সামনের মানুষকে কি হিসাবে চিনবে। বুঝলে দেবায়ন, ব্যাবসায় মানুষ চার প্রকারের হয়। গরু, কুকুর, বাঘ আর শেয়াল। এই গরু প্রকৃতির মানুষ হচ্ছে নিরীহ, বুদ্ধিমান এবং আসল শিক্ষিত যাকে বলে। এই সব মানুষের সাথে ভালো ভাবে কথা বলবে, ভালো কাজ দেখাবে, ওদের মন জুগিয়ে চলবে দেখবে ওরা তোমার কাজ করে দেবে অথবা তোমাকে কাজ দিয়ে দেবে। তোমার কর্ম দক্ষতাকে ওরা সন্মান দেবে। দ্বিতীয় প্রকৃতির মানুষ হচ্ছে, কুকুর। ওরা সব সময়ে একটু কিছু চায়, কাজের চেয়ে বেশি চায় একটু তোষামোদি একটু উপহার। ওদের সামনে হাড্ডি রাখলেই ওরা লেজ নাড়াতে নাড়াতে তোমার কাছে চলে আসবে। মানে ওদের কে শুধু টাকা দেখিয়ে বশে আনতে পারবে। এদের চেনা বেশ সহজ, কেউ যদি তোমাকে বেশি স্যার স্যার করে, তাহলে বুঝবে সে কুকুর। তাকে টাকা দিয়ে, উপহার দিয়ে সহজে কাজ হাসিল করতে পারবে। সব থেকে কঠিন হচ্ছে এই বাঘ প্রকৃতির মানুষ। এরা শিক্ষিত, এরা পয়সাওয়ালা এরা আদব কায়দা জানা লোক। এরা সহজে গলে না, এদের সাথে মেপে কথা বলতে হয়, ডিপ্লমেটিক হতে হয়, মন জুগিয়ে চলতে হয় আর ভালো সংগ দিতে হয়। এরা প্রতিপত্তি সম্পন্ন ব্যাক্তি। মডেল অথবা হাই ক্লাসের মেয়েদের দিকে এদের নজর নয়, এদের নজর অন্য দিকে। যেটা সহজে পাওয়া যায় না তার দিকে এদের নজর থাকে, সেটাই তারা চায়। বুঝলে কিছু?”
দেবায়ন বুঝতে পারে, কেন মিস্টার সেন পারমিতাকে কাজে লাগিয়েছিল। মনের ভেতরে হাসে দেবায়ন, পাশে বসার মানুষটার মুখোশ অনেকদিন আগেই খুলে গেছে, তাও সচক্ষে প্রত্যক্ষ করে কিঞ্চিত ঘৃণা বোধ জন্মায়। এই মানুষকে দিয়েই ওর কাজ হাসিল হবে, তাই মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, কিছু বুঝতে পেরেছি। সম্পন্ন বাড়ির ঘরোয়া মহিলা অথবা কোন নামি অভিনেত্রী চাই এদের।”
মিস্টার সেন বাঁকা হেসে বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পেরে গেছ তুমি। শেষে শেয়াল প্রকৃতির মানুষ। এরা হটাত করে বিত্ত আর শক্তি হাতে পেয়ে যায়। এরা খুব ধূর্ত কুটিল নেতা গোচরের মানুষ। এরা আগে ঠিক ভাবে খেতেই পেত না, কথাবার্তা ঠিক মতন বলতে জানে না, কিন্তু ওই শক্তি হাতে পাওয়ার পরে নিজেদের খুব বড় মনে করে। এদের যা দেবে তাই খাবে, এরা টাকা পয়সা খাবেই তাঁর সাথে মেয়ে দিতেও হয়। যে রকম মেয়ে দাও এদের চলে যায়। শুধু একটু গা গরম করা চাই এদের।”
দেবায়ন বাঁকা হেসে বলে, “হুম বুঝলাম। বেশ প্যাঁচ আছে এই ব্যাবসায় নামতে।”
মিস্টার সেন একটু চিন্তিত হয়ে বললেন, “জানো, নিবেদিতাকে নিয়ে একটু চিন্তায় পরে গেছি।”
দেবায়ন, “আপনি বলেছিলেন যে পরমিতকে সরিয়ে দেবেন, নিবেদিতাকে ও তাহলে সরিয়ে দেওয়া যায়।”
মিস্টার সেনের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় দেবায়নের কথা শুনে, “না ব্যাপারটা সেরকম নয়। ঠিক তোমাকে বুঝিয়ে উঠাতে পারছি না। পরমিত দিল্লীতে থাকে, বোর্ড মিটিঙের সময়ে মাঝে মাঝে আসে কিন্তু প্রফিট নেবার সময়ে একদম ঠিক। নিবেদিতা কিছুতেই পরমিতকে দেখতে পারে না। নিবেদিতা কোম্পানির সব দেখা শুনা করে আর পঁচিশ পারসেন্ট। বেশ কয়েক বছর ধরে বলে আসছে ওর শেয়ার বাড়ানোর জন্য, কিন্তু তখন আমার কাছে অত টাকা ছিল না যে পরমিতের শেয়ার কিনে ফেলি। নিজের শেয়ার দিতে রাজি নয় মিতা। মিতার সাথেও বনে না নিবেদিতার। মিতা, কোম্পানির জন্য প্রচুর ক্লায়েন্ট যোগাড় করেছে, কিন্তু অফিসে যায় না, অফিসের গণ্ডগোলে মাথা ঘামায় না। সেই বুদ্ধি মিতার নেই। মিতা হচ্ছে গরু, ওকে একটু ভালোবেসে কথা বললে, একটু আদর দিলেই গলে যায়। তুমি সেদিন বলার পরে আমি ফিরে পেলাম ওকে। তাই এইসব থেকে ওকে দুরে সরিয়ে রাখার জন্য এবারের বিজনেস মিটিঙে ওকে আনিনি। ওইদিকে নিবেদিতা একটু রেগেই আছে। ও যে ফাইন্যান্সিয়ার এনেছিল তাকে আমি ইচ্ছে করেই নাকচ করে দিয়েছিলাম। ওকে পরমিতের শেয়ার দিলেও ওর মন একটু কেমন কেমন করে থাকবে। দেখা যাক আজকে কিছু বুঝিয়ে উঠতে পারি কিনা। নিবেদিতা একা ছোটো ছেলে কে নিয়ে থাকে, ওকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দেবার কোন প্রশ্ন ওঠে না।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, এই জার্মান ভদ্রলোক কেন, মানে বিদেশি ফাইন্যান্সিয়ার কেন?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “অনেক দুরের চিন্তা করেই আমি অনিমেশকে একটা ক্যাপিটালিস্ট খুঁজতে বলি। তোমার সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজে দেবে। বাইরের বড় বড় প্রোজেক্ট আসবে ওর হাত ধরে, তুমি একটু মিস্টার হারজোগকে হাতে করার চেষ্টা কর। দেশে যে সব প্রোজেক্ট পাবে তাতে মাসের খরচ, দৈনন্দিন খরচ উঠে আসবে। যতক্ষণ না কোন বড় প্রোজেক্ট হাতে পাবে ততক্ষণ তোমার কোম্পানির নাম হবে না। বড় প্রোজেক্ট মানে বেশি লাভ, বেশি টাকা। বাইরের বড় প্রোজেক্ট পাওয়ার জন্য একজন বাইরের মানুষের দরকার। ইউরোপে আমার বিশেষ জানাশোনা নেই আমার। অনুর মেসো ডাক্তার, ছেলে ডাক্তার ওদের দিয়ে এইসব কাজ হবে না। অনিমেশ ফ্রাংকফুর্টে বেশ বড় একটা ইউরোপিয়ান ব্যাঙ্কে চাকরি করে, বেশ বড় পোস্টে। অনেক চেনা জানা আছে, সেই সুত্রে বেড়িয়ে গেল এই হারজোগের কথা। আর এই হারজোগ হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। অনেক কিছুতে হাত ডুবিয়ে টাকা কামিয়েছে। ওর অনেক চেনাজানা আছে ইউরোপে।”
দেবায়ন, “আপনি এত কিছু এত আগে থেকে ভেবে রেখেছেন?”
মিস্টার সেন, “ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে রাখতে হয় না হলে কি করে হবে। যদি আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন না দেখি তাহলে উড়তে পারবো কি করে, মিস্টার বসাক।”
শীত কাল, তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে আসে গঙ্গাবক্ষে। মিস্টার সেন, নিবেদিতা আর বেশ কয়েক জনকে ফোন করে জেনে নিলেন তারা কোথায়। নিবেদিতা জানাল তিনি পৌঁছে গেছে, অনিমেশ রাস্তায়, বাকিদের নিয়ে আসছে। বাকিরা পরে রওনা দেবে কোলকাতা থেকে। সন্ধ্যের একটু পরেই মিস্টার সেন আর দেবায়ন রায়চক, গঙ্গার ধারে র্যাডিসন ফোর্ট রিসোর্টে পৌঁছে যায়। ওদের নামে ছয় খানা রুম বুক করাছিল আগে থেকে। ম্যানেজার নিজে এসে, ডাইনিং আর মিটিঙের জায়গা দেখিয়ে দেয়। গঙ্গার পাশেই বেশ বড় হোটেল, উঁচু দেয়ালের পাশে সবুজ ঘাসে ঢাকা লন। তার একপাশে খোলা আকাশের নিচে মিটিঙের ব্যাবস্থা আর ডিনার। মিস্টার সেন, দেবায়নকে বলে একবার ম্যানেজারের সাথে গিয়ে রুম গুলো দেখে আসতে আর মিটিঙের জায়গা দেখে আসতে।
দেবায়ন এগিয়ে যেতেই এক মহিলা হাসি হাসি মুখে মিস্টার সেনের দিকে এগিয়ে আসে। ফর্সা সুন্দরী, আকর্ষণীয়, চোখে মুখে বুদ্ধিদিপ্তের ছটা। বয়স পয়ত্রিশের ওপারে নয়, দেহের গঠন বেশ আকর্ষণীয়। ঘিয়ে রঙের বিজনেস সুট আর খোঁপাতে দারুন দেখাচ্ছে মহিলাকে। মহিলার আদব কায়দা দেখে দেবায়ন বুঝতে পারে এই নিবেদিতা।
নিবেদিতা মিস্টার সেনকে দেখে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এত দেরি করে দিলে? শরীর কেমন আছে তোমার?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “হ্যাঁ শরীর ঠিক আছে। দুই দিনে আর নতুন কি হবে। অঙ্কুশ আসতে চায় নি?”
নিবেদিতা একগাল হেসে বলে, “হ্যাঁ, বায়না ধরেছিল। বাবার মাথার বাকি চুল ছিঁড়ে ফেলেছে আর কি। আমি বাবাকে আর চাকরকে বলে এসেছি যে বেশি কান্না কাটি করলে টিভি চালিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে।”
মিস্টার সেন, “নিয়ে আসলে পারতে। একদম ছোটবেলা থেকেই বিজনেস করা শিখে যেত আর কি।”
কথাটা বলেই হেসে ফেলেন মিস্টার সেন।
নিবেদিতা মিস্টার সেনের বাজুতে ছোটো একটা চাঁটি মেরে বলে, “তুমি না যাতা। এখন অনেক ছোটো আছে।”
মিস্টার সেন, দেবায়নের সাথে পরিচয় করিয়ে বলে হেসে বলে, “অনুর ফিয়ান্সে, বাকি টা নিজেই পরিচয় সেরে ফেল।”
নিবেদিতা দেবায়নেকে আপাদমস্তক জরিপ করে হেসে বলে, “আচ্ছা এই দেবায়ন। সোমেশের মুখে তোমার নাম শোনার পর খুব দেখার ইচ্ছে ছিল তোমাকে।”
মিস্টার সেনকে বলে, “চল কফি শপে গিয়ে বসি। অনিমেশদা একটু পরেই চলে আসবে। তোমাদের পেছনেই মনে হয় ওদের গাড়ি ছিল।”
মিস্টার সেন আর নিবেদিতার মেলা মেশার মধ্যে দেবায়ন বেশ একটা আন্তরিকতা খুঁজে পায়। এই আন্তরিকতা কি শুধু ব্যবসা সংক্রান্ত না তাঁর চেয়ে কিছু বেশি, এই প্রশ্ন জাগে দেবায়নের মাথায়। এর উত্তর এখন নয়, শুধু পর্যবেক্ষণ করে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। নিবেদিতা, মিস্টার সেনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বেশ হাত মুখ নেড়ে হেসে হেসে কথা বলে। দেবায়ন কফি শপে না গিয়ে, সিগারেট ধরানোর আছিলায় বাইরে যায়। লনে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনুপমাকে আর মাকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে ঠিক মতন রায়চকে পৌঁছে গেছে। অনুপমা, হেসে বলে যে বেশি যেন মদ না খায় আর নিজের চোখ কান যেন সর্বদা খোলা রাখে। সময় মতন পেছনে সরতে যেন পিছপা হয় না। দেবায়ন জানিয়ে দেয় যে বেশ সতর্ক থাকবে সব বিষয়ে।
কিছুপরে মিস্টার সেন বাকিদের নিয়ে লনে আসেন। মিস্টার সেন দেবায়নকে ডেকে মিস্টার ড্যানিয়েল হারজোগ, মিস্টার হেলমুট মেরকেল আর পুরানো বন্ধু, মিস্টার অনিমেশ সাহার সাথে আলাপ করিয়ে দেয়। অনিমেশ, দেবায়নের সাথে হাত মেলানর সময়ে একটু বাঁকা হেসে মিস্টার সেনের দিকে তাকায়। মিস্টার সেন মৃদু মাথা নাড়িয়ে কিছু একটা ইশারা করে, সেই ইশারা দেবায়নের চোখ এড়াতে পারে না।
কিছুক্ষণের মধ্যে, ড্রিঙ্কের আর স্টারটারের সাথে ওদের আলোচনা সভা শুরু হয়। মিস্টার হারজোগ বলেন কোম্পানির ব্যালেন্স সিট, কোম্পানি প্রোফাইল ইত্যাদি আগেই দেখে নিয়েছেন আর সেই সাথে এই কয়দিনে কোম্পানি দেখা আর বিভিন্ন কাজের সাইটে গিয়ে তদারকি করে দেখা হয়ে গেছে। সব ব্যাপারে বেশ সন্তুষ্ট তিনি, তবে ভবিষ্যতের রোডম্যাপ একবার জানতে চায় মিস্টার হারজোগ। মিস্টার সেন নিবেদিতাকে বলে ওদের রোডম্যাপের প্রেসেন্টেশান দিতে। নিবেদিতা ল্যাপটপ খুলে সব প্রেসেন্টেশান দেয়। সেই মতন জানায় যে আগামী দিনে ওরা চায় নতুন ভারটিকাল তৈরি করতে। এতকাল শুধু মাত্র হাউস বিল্ডিং কন্সট্রাক্সানে ছিল ওদের কোম্পানি, এবারে দুটি নতুন ভারটিকাল তৈরি করতে চায়। এক, রাস্তার কাজ, সেই জন্য বেশ কয়েকটা হাইওয়ের টেন্ডার ওরা পেয়েছে এবং অভার ব্রিজের কাজ, তাঁর টেন্ডার ওরা পেয়েছে। অন্য একটা ভারটিকালে ওরা বড় বিল্ডিং কন্সট্রাক্সানে হাত দিতে চায় যেমন বড় বড় হোটেল, বড় বড় মল। মিস্টার হারজোগ আর মিস্টার মেরকেল মন দিয়ে সব শোনার পরে বলেন, সব ঠিক আছে কিন্তু সাড়ে তিনশো মিলিয়নের উপরে ইনভেস্ট করা এখুনি সম্ভব নয়। দেবায়ন সব কথা মন দিয়ে শোনে। নিবেদিতা বলে যে দুটি নতুন ভারটিকাল তৈরি করতে অনেক খরচ আছে আর সরকারি কাজে একটু খরচ করে লাভের মাপ অনেক বেশি। সুতরাং বিনিয়গের যে রিটার্ন তিনি পাবেন সেটা মোটা অঙ্কের হবে। মিস্টার মেরকেল, ইনভেস্টমেন্টের রিটারনের ব্যাপারে কিঞ্চিত দ্বিমত প্রকাশ করে। তিনি বলেন, যে কুড়ি, পঁচিশ, তিরিশ এই ছকে রিটার্নে রাজি নন। রিটার্ন পারসেন্ট খুব কম। আগামী দশ বছরের জন্য টাকা ইনভেস্ট করবেন কিন্তু সেই তুলনায় রিটার্ন একটু বেশি দেওয়া উচিত। মিস্টার সেন বলেন, সাড়ে তিনশোর জায়গায় যদি চারশো মিলিয়ন ইউরো হয় তাহলে তিনি কুড়ি, সাতাশ, বত্রিশ হিসাবে রিটার্ন দিতে রাজি আছেন। সেই কথা শুনে, নিবেদিতা একটু দমে যায় কিন্তু মিস্টার সেনের কথার উপরে কথা বলতে পারে না। ওদের সামনে বসচা করা ঠিক নয়। মিস্টার মেরকেল বলেন যে অন্তিম অফার, তিনশো সত্তর মিলিয়ন ইউরো এবং রিটার্ন পারসেন্ট কুড়ি তিরিশ পঁয়ত্রিশ হিসাবে দিতে হবে। এই ডিলে রাজি থাকলে ডিল ফাইনাল করতে রাজি। মিস্টার সেন আর নিবেদিতা বিষণ্ণ হয়েও মানতে রাজি হয়ে যায়। ওদের টাকার খুব দরকার, কিন্তু লাভের অনেক অংশ মিস্টার হেরজোগ নিয়ে চলে যাবেন। মিস্টার সেন চান এই টাকায় হোটেল কেনার আর নিবেদিতা চায় পরমিতের শেয়ার কেনার। রায়চকে আসার সময়ে মিস্টার সেন দেবায়নকে সব ফাইল দেখিয়েছিল, সেই মতন লাভের কথা ওর মাথার মধ্যে আঁকা আছে। দেবায়ন চুপচাপ বসে একটা কাগজে কিছু একটা অঙ্ক কষে।
হটাত সবাইকে অবাক করে দিয়ে দেবায়ন বলে, “আই হ্যাভ অ্যা প্রোপোসাল। আমার একটা বক্তব্য আছে, মনে হয় সবার ভালো লাগবে এবং সবাই খুশি হবে।”
মিস্টার মেরকেলের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি যদি ফ্লাট পঁয়তাল্লিশ পারসেন্ট দেই আপনাকে তাহলে আপনি চারশো মিলিয়ন ইউরো ইনভেস্ট করবেন?”
মিস্টার সেন আর নিবেদিতা, অবাক হয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিস্টার সেন চাপা গলায় বাংলায়, ওকে কথা বলতে বারন করে। দেবায়ন মিস্টার সেনকে আসস্থ করে বলে সব ঠিক করে দেবে।
মিস্টার মেরকেল আর মিস্টার হেরজোগ একটু ভেবে জিজ্ঞেস করে, “হোয়াট ইজ দা ক্যাচ? এখানে কিছু লুকানো শর্ত আছে মনে হচ্ছে, সেটা কি?”
দেবায়ন বলে, “পঁয়তাল্লিশ পারসেন্ট, প্রফিট শেয়ারিং আগামী দশ বছর। এটা এক মাত্র প্রযোজ্য যদি আপনি চারশো মিলিয়ন ইউরো ইনভেস্ট করেন তবেই। রাজি তাহলে ডিল... ভেবে দেখুন একবার।”
টেবিলে বসে পাঁচ জনেই দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে, সবাই বুঝতে চেষ্টা করে কি বলতে চাইছে এই কালকের ছেলেটা।
মিস্টার সেন চাপা ধমক দিয়ে দেবায়নকে বলে, “তোমাকে মুখ খুলতে বারন করেছিলাম। তুমি কি জানো তুমি কি প্রোপোসাল দিয়েছ?”
নিবেদিতা রেগে গিয়ে মিস্টার সেনকে জিজ্ঞেস করে, “এই রকম একটা মানুষকে সত্যি তোমাকে আনতে হত?”
দেবায়ন চাপা হেসে মিস্টার হারজোগের দিকে তাকায়। মিস্টার হারজোগ বলেন, “প্রপসাল ভেরি গুড, কিন্তু একটু সময় দিতে হবে। কাল সকালে ডিল ফাইনাল করলে কেমন হয়।”
একুবিংশ পর্ব (#04)
দেবায়ন হেসে ফেলে, “মিস্টার হারজোগ, কালকের সকালকে দেখেছে। আপনি সময় নিন তবে বেশি সময় নিলে কিন্তু হাত থেকে প্রফিট বেড়িয়ে যাবে।”
মিস্টার সেন আর থাকতে না পেরে দেবায়নকে বলে, “তুমি একটু আমার সাথে বাইরে এসো।”
মিস্টার মেরকেল হেসে বলেন, “ওকে, তুমি আমাদের একটু সময় দাও। একটু পরে জানাচ্ছি।”
মিস্টার সেন, দেবায়নকে লনের একদিকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি ভেবে ওই প্রোপোসাল দিলে? একবার আমাকে জিজ্ঞেস করার দরকার মনে করলে না? এটা খুব বড় ঔদ্ধত্য দেবায়ন। তুমি কি ভাবো নিজেকে? আমি তোমাকে ছাড় দিয়েছি বলে তুমি যা ইচ্ছে তাই করবে?”
দেবায়ন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপরে বলে, “সরি কাকু, খুব সরি। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করতাম ঠিক, কিন্তু সময়ের অভাবে নিজেই বলে ফেলেছি। জানি আপনাকে আঘাত করেছি তবে একবার আমার পরিকল্পনা শুনুন। রিস্ক না নিলে প্রফিট করা যায় না, এটা আপনি আসার সময়ে শিখিয়েছেন। আর নিবেদিতা যা হ্যান্ডেল করতো সেটা নিজের জন্যেই করতো।”
মিস্টার সেন কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি ঠিক কি ভাবছ? আমি যা ভাবছি তুমি কি সেটাই ভাবছ?”
দেবায়ন, “আপনি কি ভাবছেন সেটা জানা নেই তবে আমার পরিকল্পনা আপনাকে জানাই। আপনি দুশো টাকা আয় করলেন, নব্বুই চলে গেলে পরে থাকে একশো দশ। সেখানে দুই জায়গায় একশো একশো টাকা রোজগার করুন। মিস্টার হারজোগ পাবে শুধু পঁয়তাল্লিশ, আপনার কাছে পরে থাকবে একশো পঞ্চান্ন।”
মিস্টার সেন খুশি হয়ে বলে, “সত্যি শুনে বড় খুশি হয়েছি। এতদিন পরে মনে হল একদম মনের মতন মানুষ পেলাম যে আমার মতন করে ভাবে।”
দেবায়ন, “একটা নতুন সিস্টার কন্সট্রাক্সান কোম্পানি খোলা হবে। বর্তমান কোম্পানির লাভের থেকে পঁয়তাল্লিশ পারসেন্ট পেলে মিস্টার হারজোগ খুশি। নতুন কোম্পানির সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিবেদিতা ম্যাডামকে দিয়ে দিন, সেও খুশি। দ্বিতীয় কোম্পানির লাভের টাকা পুরটাই আপনার আর এই কোম্পানির লাভের টাকার পঞ্চান্ন শতাংশ আপনার থাকল। কেমন লাগলো আমার পরিকল্পনা?”
মিস্টার সেন, দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি একজন বাঘ, তুমি পারবে সব সামলাতে। আমার আর চিন্তা নেই।”
দেবায়ন বলে, “এটা শুধু আপনার আর আমার মধ্যে। পরে ভালো ভাবে এই নিয়ে বিচার আলোচনা করা যাবে।”
মিস্টার সেন, দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে বলে, “নিবেদিতাকে আমি বুঝিয়ে বলে দেব। তোমার পরিকল্পনা শুনে খুব খুশি হবে। অনেক করেছে নিবেরিতা, অনেক খেটেছে এই কোম্পানির জন্য। ওর অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে।”
মিস্টার সেন আর দেবায়ন টেবিলে ফিরে আসে। নিবেদিতা মিস্টার সেনকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করে। মিস্টার সেন দেবায়নকে দেখিয়ে বলে, বাকি কথা পরে জানিয়ে দেবে, তবে ওর এই প্রোপসালে মত আছে। মিস্টার হেরজোগ বলেন ওদের মত আছে এই ডিলে। বাকি ব্যাবস্থার কথা জিজ্ঞেস করে মিস্টার মেরকেল। নিবেদিতা হেসে বলে, সব ব্যাবস্থা একদম ঠিকঠাক। ব্যাবসার কথা শেষে সবার হাতে উঠে আসে শ্যাম্পেনের গ্লাস। নিবেদিতা বলে, মিস্টার হারজোগের জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা, দামী ক্যাভিয়ার আনা হয়েছে কোলকাতা থেকে। মিস্টার মেরকেল হেসে বলেন একবার জ্যান্ত ক্যাভিয়ারের দর্শন করতে চান। নিবেদিতা ফোনে কারুর সাথে কথা বলে জানিয়ে দেয়, জ্যান্ত ক্যাভিয়ার ঠিক সময় মতন পৌঁছে যাবে। আলোচনা ছেড়ে সবাই বিভিন্ন গল্পে মেতে ওঠে। শ্যাম্পেন শেষে সবার হাতে স্কচের গ্লাস, একমাত্র দেবায়ন এক ছোটো বোতল বিয়ার নিয়ে একদিকে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু পরে মিস্টার হেরজোগ ওকে কাছে ডাকে। দেবায়নের ভারতীয় ইংরাজি আর মিস্টার হেরজোগের বিদেশি ইংরাজিতে দুইজনে কথা বলে।
মিস্টার হেরজোগ দেবায়নকে ডেকে বলে, “তুমি ফ্রাংকফুর্টে এসো, ওখানে তোমার দরকার।”
দেবায়ন হেসে ফেলে মিস্টার হেরজোগের কথা শুনে, উত্তর বলে, “না, মিস্টার হেরজোগ। আমি কোলকাতা ছেড়ে দিল্লী যেতে চাই না, ফ্রাংকফুর্ট কখনই নয়।”
মিস্টার হেরজোগ বলেন, “তাও আমার নিমন্ত্রন রইল। ঘুরতে এসো কোনদিন, জার্মানি বেশ ভালো দেশ। অনেক সুন্দর সুন্দর শহর আছে ঘুরে দেখার। তোমার এখানে গঙ্গা আমার ওখানে রাইন নদী, এক রকম সুন্দর। কখন কোন সাহায্য চাইলে দ্বিধা করো না।”
দেবায়ন, “হ্যাঁ নিশ্চয় আপনাকে মনে রাখব। এবারে ত আসা যাওয়া হবেই। কোলকাতা আর ফ্রাংকফুর্ট বেশি দূর মনে হবে না।”
নিবেদিতা কিছু পরে বেড়িয়ে গিয়ে মেয়েদের নিয়ে লনে আসে। দেবায়ন আড় চোখে অনন্যা আর তনুজাকে দেখে। ওদের সাথে আরও দুটো মেয়ে, তাদের দেবায়ন দেখেছে কোন বিজ্ঞাপনে। তনুজা আর বাকি মেয়েদের পরনে চাপা ইভিনিং পার্টি পোশাক। অনন্যা একটু অন্য সাজে সজ্জিত, গোলাপি রঙের পাতলা ফিনফিনে শাড়ি। হাতকাটা ব্লাউস, পিঠের দিকে শুধু মাত্র একটা গিঁট দিয়ে বাধা। নাভির বেশ কিছু নিচে শাড়ির গিঁট। নাভির চারপাশে ঈষৎ ফুলে থাকায় তীব্র যৌন আবেদনের ছটা নির্গত হচ্ছে ওর শরীর থেকে। নিবেদিতা, মেয়েদের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সবাই বুফে ডাইনিঙ্গে মেতে ওঠে। খাবার সাথে গল্প, হাসি কথা বার্তা। মাঝে মাঝে নিবেদিতা আড় চোখে দেবায়নকে জরিপ করে আর মিস্টার সেনের সাথে কিছু নিয়ে কথা বলে। দেবায়ন একপাশে চুপচাপ নিজের থালা নিয়ে একটু খেতে ব্যাস্ত আর নিজের খেয়ালে ব্যাস্ত।
এই নিবেদিতার পরিচয় কি? মিস্টার সেনের সাথে এত হৃদ্যতা কেন? নিবেদিতা আর মিস্টার সেনের কথা বার্তায় বেশ একটা নিবিড় ভাব। অনন্যা আর তনুজা একদিকে খেতে খেতে গল্প করে। বাকি দুই মেয়ের এক জন মিস্টার অনিমেশের সাথে একজন মিস্টার মেরকেলের সাথে। দেবায়ন বুঝে যায় যে নিজেদের রাতের সঙ্গিনী বাছাই করা হয়ে গেছে।
খাবার পরে নিবেদিতা দেবায়নের কাছে এসে ওর রুমের কার্ড দেয়। রুমের কার্ড দেবার সময়ে নিবেদিতার হাত দেবায়নের হাতের উপরে বেশ কিছুক্ষণ থাকে। নরম হাতের স্পর্শে দেবায়ন নিবেদিতার দিকে তাকায়। নিবেদিতা মিষ্টি হেসে বলে ঠিক সময়ে রুমে চলে যেতে। গঙ্গার কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় সবাই কাঁপতে শুরু করে খাওয়ার পরে। কিছুপরে সবাই নিজের নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। মিস্টার সেন ওকে বলেন তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে। দেবায়ন হেসে জানিয়ে দেয় একটা ফোন করে রুমে চলে যাবে।
সবে এগারোটা বাজে কিন্তু চারদিকে নেমে আসে ঘন কালো আঁধার। শীতের কারনে হোটেলের লোকজন সবাই হোটেলের মধ্যে। সবাই চলে যাবার পরে, দেবায়ন অয়েটারকে ডেকে একটা স্কচের অর্ডার দেয়। স্কচ আর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনুপমাকে ফোন করে দেবায়ন। ওর মন বেশ খুশি, মিস্টার সেনকে অবিভুত করে দিয়েছে ওর এই পরিকল্পনা। কি করে এই কথা ওর মাথায় এসেছিল সেটা নিজেই জানে না।
অনুপমাকে সব কথা বলতেই, প্রেয়সী ওকে বলে, “তুমি ঠিক আছো? খাওয়া দাওয়া হয়েছে? মামনিকে পারলে একটা ফোন করে দিও। আর হ্যাঁ বেশি স্কচ মারাতে হবে না। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরবে। কাল মনে হয় না তুমি কলেজ যেতে পারবে। আমি কালকে তোমার জন্য ওয়েট করব বাড়িতে। শ্রেয়া এসেছে, সঙ্গীতা এসেছে, রাতে থাকবে। ওদের দেখে পায়েল বেশ খুশি আজকে।”
দেবায়ন, “দাও একটু ডারলিংয়ের সাথে একটু কথা বলি।”
অনুপমা, পায়েলকে ফোন দেয়। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কি রে তোর কি খবর? ঠাণ্ডায় জমে গেছিস নাকি?”
পায়েলের কণ্ঠস্বরে সেই পুরানো তেজ, পুরানো উচ্ছলতা আর নেই, মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুই নাকি আজকে সুট পড়েছিস?”
দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ, ছাই রঙের সুট। তুই ত উঠে একবার দেখলি না। হ্যাঁরে, আমার শালা কোথায়?”
পায়েল, “পাশেই আছে। তোরা কেউ কি আমাকে একবিন্দুর জন্য চোখের আড়াল করিস? অনুকে, কাকিমাকে যত বলি আমি ঠিক আছি, কিন্তু কেউ শুনতে চায় না। শুধু অঙ্কনের সাথে ঘুরতে বের হলে একটু মনে হয় বাঁধন থেকে ছাড়া পেলাম।”
দেবায়ন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “অনুর আর কাকিমার ব্যাপারে আমি নাক গলাব না।”
পায়েল হেসে বলে, “তুই না বুঝালে কে বুঝাবে? আমার কথা শোনে না কেউ। দিদির সামনে অঙ্কনের মুখ ফোটে না। একা একদম ছাড়তে চায় না দেখে। আজকে আবার শ্রেয়া আর সঙ্গীতাকে ডেকেছে। প্লিস একটু কাকিমা আর তোর বউকে বুঝিয়ে বলিস।”
দেবায়ন, “এই ব্যাপারে আমি দুঃখিত ডারলিং। অনুর সেদিনে কাতর ডাক আজও আমার কানে বাজে আর ঋতুর কথাগুলো। আমি দুঃখিত পায়েল।”
পায়েল ম্লান হেসে বলে, “ঠিক আছে, তুই সাবধানে থাকিস। গুড নাইট।”
ফোন রেখে দিয়ে, অনুপমার কথা চিন্তা করছিল দেবায়ন। সত্যি কথা না বললে একসময়ে প্রেয়সীর কাছে ধরা পরে যেত, আবার বলে দিলে মিস্টার সেনের কাছে অসুবিধেতে পড়তে হত। কিন্তু ওর প্রেয়সী ওর চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধি রাখে।
“হ্যালো, একা একা দাঁড়িয়ে এখানে? আমি ওপরে তোমাকে খুঁজতে গেছিলাম।”
মিষ্টি একটা কণ্ঠ স্বর শুনে দেবায়ন ঘুরে দাঁড়ায়। পেছনে হাসি হাসি মুখে, গায়ে একটা শাল জড়িয়ে অনন্যা দাঁড়িয়ে।
দেবায়নের হাতের গ্লাস হাতে থেকে যায়। অনন্যার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে, এত কাছে এত সুন্দরী একজনকে দেখতে পাবে ঠিক মানতে পারে না। এতদিন টি.ভি স্ক্রিনে দেখেছে ওকে। কোন সময়ে নায়িকার বোন, কোথাও নায়িকার বান্ধবী। ছোটো বাজেটের কয়েকটা সিনেমা করেছে, তবে সেই গুলো দেখে নি দেবায়ন। তাও দেবায়নের অনন্যাকে ভালো লাগত ওর বড় বড় চোখের জন্য আর একটু উজ্জ্বল শ্যামলা ত্বকের জন্য।
দেবায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে বড় ভালো লাগলো।”
অনন্যার কথা শুনে দেবায়ন আকাশ থেকে পড়ল, বলে কি মেয়েটা। এই অসামান্য লাস্যময়ী তরুণী, নামকরা এক অভিনেত্রী আর মডেল। দেবায়ন, সিগারেটে বড় একটা টান মেরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “পাগল হলে নাকি? আমি ধন্য তোমার সাথে কথা বলতে পারছি। তুমি কি জানো, তুমি যদি একটা রুমাল ফেল সেটা তুলে ধরার জন্য হাজার লোক দৌড়ে আসবে।”
অনন্যা হেসে ওঠে খিলখিল করে, ওর মিষ্টি হাসির কলতানে হারিয়ে যায় দেবায়ন। অনন্যা দেবায়নের গায়ে ঢলে পরে বলে, “ধুর বাবা। যে লোক আমার রুমাল তুলে দেবে সে ত চিরকাল আমার রুমাল তুলতে ব্যাস্ত থাকবে, আমার দিকে দেখার সময় তাঁর কাছে কখন হবে তাহলে? আমি চাই আমার রুমাল না তুলে যে অদুরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে দেখবে সে।”
দেবায়নের নাকে ভেসে আসে অনন্যার শরীরের মাদকতা ময় মিষ্টি গন্ধ। শীতের রাতে অনন্যার শরীরের ছোঁয়ায় দেবায়নের শরীর উত্তপ্ত হতে শুরু করে। দেবায়ন ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এখন জেগে কেন?”
অনন্যা হাতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “একটা সিগারেট দাও ত আগে। একা একা টান মেরে যাচ্ছও একটু দাও।”
দেবায়ন প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ওর হাতে দেয়। গাড় বাদামি রঙ মাখা ঠোঁটের মাঝে সাদা সিগারেট চেপে দেবায়নের দিকে ঝুঁকে পরে। দেবায়ন, লাইটার দিয়ে ওর সিগারেট জ্বালিয়ে বলে, “বেশ জমে ঠাণ্ডা পড়বে এবারে।”
অনন্যা, “সেন স্যার কেন যে র্যাডিসন চুজ করল বুঝে পেলাম না। এই সময়ে কেউ গঙ্গার ধারে আসে? এখানে আসতে হয় গ্রীষ্ম কালে গঙ্গার ঠাণ্ডা হাওয়া খেতে। এখন হাড় কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, শুধু রুমে বসে গরম হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”
অনন্যা কথাটা বলেই হেসে ফেলে।
দেবায়ন হেসে বলে, “তাহলে যাও এখানে দাঁড়িয়ে কেন?”
অনন্যা হেসে বলে, “যাঃ বাবা। আমি তনুজাকে ওই জার্মান ভদ্রলোকের সাথে পাঠিয়ে দিলাম ইচ্ছে করে আর তুমি জিজ্ঞেস করছ আমি এখানে কেন? দাও দাও, তোমার রুমের কার্ডটা দাও। আর তাড়াতাড়ি সিগারেট শেষ করে চলে এস।”
দেবায়ন যেন হাতে চাঁদ পায়। স্বপ্নে ভাবেনি অনন্যার মতন এক অভিনেত্রী ওর এত কাছে এসে কোনদিন এই সব কথা বলবে। অনন্যা দেবায়নের অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছ এত? নিবেদিতা ম্যাডাম নিজে বলল আমাকে যে তোমাকে একটু দেখতে। তুমি সামান্য বিজনেস পার্টনার নয়। তোমার পরিচয় তার থেকে বেশি কিছু। যাই হোক অত শত আমার জেনে কি লাভ।”
দেবায়ন, পকেট থেকে রুমের কার্ড বের করে অনন্যার হাতে দেয়। কার্ড দেবার সময়ে ইচ্ছে করেই দেবায়ন অনন্যার হাত খানা নিজের হাতের মধ্যে ধরে রাখে। অনন্যা হাত ছাড়িয়ে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে চলে যায়। হাতের গ্লাসের বাকি স্কচ এক ঢোকে গলায় ঢেলে নেয়। মাথা একটু ঝিম ঝিম করে ওঠে, সেই সাথে বাকি বেঁচে থাকা সিগারেটে লম্বা এক টান দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় দেবায়ন। কি হবে রাতে, একা নিভৃতে একটা রুমের মধ্যে এক সুন্দরী অভিনেত্রীর সাথে রাত কাটাবে। হাঁটতে হাঁটতে নিজের হাতে চিমটি কাটে দেবায়ন। না, ব্যাথা লাগলো, সত্যি ব্যাথা লাগলো, স্বপ্ন দেখছে না তাহলে। একবার অনুপমাকে জানালে হয়। কি বলবে প্রেয়সীকে? পায়েলের সাথে সেই রাতের পরে অনুর অঙ্ক ছাড়া অন্য কারুর কোলে মাথা রাখেনি। অনেকদিন পরে এক অন্য তরুণীর রুপ সুধা আকণ্ঠ পান করবে, ভাবতে পারছে না। বলা কি উচিত? না থাক, আগামী কাল সকালে বলবে। আগে দেখা যাক, অনন্যা কি করে।
দেবায়ন কলিং বেল বাজিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ভেতর থেকে কোন আওয়াজ আসে না। একটু ভাবনায় পরে যায়, কি হল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে আরেকবার কলিং বেল বাজায়। কিছুপরে দরজা খোলে অনন্যা। পোশাক বদলে একটা পাতলা স্লিপের উপরে একটা ড্রেসিং গাউন পরে। অনন্যা দরজা খুলে ইশারায় ওকে চুপ থাকতে বলে। দেবায়নের চোখ যায়, বিছানার সাইড টেবিলে। ওখানে একটা গ্লাসে মদ রাখা, একটা এশট্রেতে একটা সিগারেট জ্বলে জ্বলে অর্ধেক হয়ে গেছে। হয়ত দুটো কি তিনটে টান মারা হয়েছে তার বেশি নয়।
অনন্যা কণ্ঠস্বর বেশ চিন্তিত শোনায়, “এটা কি করে হল? কথা ছিল দশটা এপিসোডের সেটা কি করে কমিয়ে ছটা এপিসোড হয়?...... ম্যানেজার তুমি না আমি? ...... কি? মোটে একুশ দিন শুটিং? ......... ওই এডের কি হল? সেই মার্চে? থাক এখন আর ডিস্টার্ব করো না আমি একটু ব্যাস্ত। কালকে ফিরে আমি নিজেই দেখব একবার।”
দেবায়ন রুমে ঢুকে সোফার উপরে বসে অনন্যাকে দেখে। অনন্যা, ফোন ছেড়ে চুপচাপ বিছানায় বসে সাইড টেবিলের গ্লাস উঠিয়ে পুরো মদ গলায় ঢেলে দেয়। ফোনের উপরে সব রাগ ঢেলে বিছানার একপাশে ফোন ছুঁড়ে দেয়। দেবায়ন গলা খ্যাঁকরে উঠতেই অনন্যা ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে মনের ভাব বদলে ফেলে।
অনন্যা হেসে ওর সোফার হাতলে বসে বলে, “সরি। কিছু মনে করো না।”
দেবায়ন বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “তোমার মুড মনে হয় ভালো নেই? কি হয়েছে, আপত্তি না থাকলে জানতে পারি কি?”
অনন্যা, “ছাড়ো অইসব। নিত্যদিনের ব্যাপার আর নিত্যদিনের কাজকারবার। তুমি ড্রেস চেঞ্জ করবে না?”
দেবায়ন, “একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি?”
অনন্যা দুম করে হেসে বলে, “না জিজ্ঞেস করতে পারো না।” তারপরে দেবায়নের গায়ের ওপরে ঢলে পরে বলে, “কি কথা?”
দেবায়ন, “কি নিয়ে কথা হচ্ছিল? তোমার প্রোফেশনাল কিছু মনে হল। না জানাতে চাইলে আমি জানতে চাইব না।”
অনন্যা, “এই মাসে শুধু একুশ দিন কাজ আছে। পরের তিন মাসে কিছু নেই, সেই একটা এডের কথা ছিল সেটা মার্চে, তাই একটু চিন্তায় আছি। যাই হোক সে সব নিয়ে মাথা ঘামিয় না।”
দেবায়ন, “তুমি মিস্টার সেনকে আগে থেকে চেন।”
অনন্যা, “হ্যাঁ, পারমিতা ম্যামের দৌলতে আগে থেকে চিনি। পারমিতা ম্যাম আমার জন্য করেছে।”
দেবায়ন ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “মানে?”
অনন্যা দেবায়নের গায়ে ঢলে বলে, “ছাড়ো না ওই সব কথা। এত ব্যাক্তিগত কথাবার্তা জানতে নেই। বিজনেস আগেই শেষ হয়ে গেছে, নাউ জাস্ট প্লেসার, বেবি। শুধু তুমি আর আমি।”
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment