আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
নিষিদ্ধ ভালবাসা
Written By pinuram
Written By pinuram
সত্য উদ্ঘাটন (#01)
বিকেল চারটে নাগাদ আমরা বাড়ি পৌঁছে যাই। নব দম্পতি কে বরণ করে নেওয়ার জন্য বাড়ির দরজায় সবাই উপস্থিত। মা, মায়ের মাসি (পরীর মা), মেঘনা মামি, বড়মামি আর অনেকে। আমি গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম যে পরী বেশ হাসি খুশী, বেশ কথা বলছে মৈথিলীর সাথে। আমি বড় আশা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি একটু কৃপা দৃষ্টি বরিষণ করে এই কপদরক হীন পানের দিকে। হায় আমার ভাগ্য, তাকায় না যে পরী। আমি চুপ করে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকি বধু বরণ অনুষ্ঠান। আমি পেছনে দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছেন, বাবা আমাকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন যে রাতে কোন কষ্ট হয়নি তো, আমি উত্তর দিলাম যে, না, সব কিছু ব্যাবস্থা ঠিকঠাক ছিল।
বরণ শেষে মৈথিলী কে নিয়ে ঘরে ঢোকার আগে আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে পরী, তারপরে চোখে একটা মিষ্টি হাসি মাখিয়ে ঢুকে পরে ঘরের মধ্যে। মৃগাঙ্ক পাশেই ছিল দাঁড়িয়ে, আমাকে ডেকে বলল যে পাশেই ওদের বাড়ি, আমি যেন হাত মুখ ধুয়ে ওদের বাড়ি যাই। আমি জানিয়ে দিলাম যে ঠিক আছে আমি ফ্রেস হয়ে ওদের বাড়ি পৌঁছে যাব।
বাড়ির মধ্যে ঢুকতে না ঢুকতেই মা আমাকে ধরে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি শাল টার কি করেছি? আমি বললাম যে পরীর ঠাণ্ডা লাগছিল তাই আমি ওকে শাল দিয়ে দিয়েছি। মা বললেন ভালো করেছিস।
আমি জামা কাপড় ছাড়ার জন্য বাথরুমে ঢুকতে যাবো এমন সময় দেখি পরী আমাদের রুমে এসে হাজির। পেছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হেসে চলেছে। মা ওর দিকে তাকিয়ে দেখল যে ও এখন নিজের জামা কাপড় বদলায়নি, মৃদু বকা খেল তার জন্য মায়ের কাছে। পরী মাকে জিজ্ঞেস করে যে আমার মা ওর মায়ের সাথে ওর পড়াশুনার ব্যাপারে কথা বলেছে কি না। মা জানিয়ে দিলেন যে আজ রাতে সব কিছু মিটে যাবার পড়ে মা এই নিয়ে কথা বলবেন সবার সাথে। পরী মাকে জড়িয়ে ধরে বলে "তুমি আমার সোনা দিদি। আজ থেকে তোমাকে ছোটোমা বলে ডাকব।"
মায়ের গলা ধরে আসে, অঞ্জলি দেওয়ার মতন, দু’হাতে পরীর মুখখানি নিয়ে ভেজা গলায় বলে "তুই তো আমার চোখের মণি রে। আয় আমার পাশে বস, তোকে একটু প্রান ভরে দেখি, কত দিন দেখিনি।"
আমি চেয়ে দেখলাম যে আমার সব থেকে ভালোবাসার দুই নারীর মধ্যে স্নেহ যেন উপচে পড়ছে।
মা আমার দিকে তাকিয়ে বলে "মা মেয়ের কথা হচ্ছে, তুই কি দেখছিস?"
আমি জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢোকার আগে এক বার খাটের ওপরে দেখলাম। মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরী, মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর স্নেহ ভরা নয়নে ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে।
আমি হাত মুখ ধুয়ে বেড়িয়ে দেখি, যে পরী মায়ের কোলে মাথা গুঁজে কাঁদছে আর মায়ের চোখে জল। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে কি হয়েছে তোমাদের। আমাকে মা বললেন ওদের কে একলা ছেড়ে দিতে।
ঠিক সেই সময়ে, কামরার বাইরে থেকে মৃগাঙ্ক আমাকে ডাক দিল। আমি মা আর পরী কে ছেড়ে মৃগাঙ্কর সাথে ওদের বাড়ির দিকে রওনা হয়ে গেলাম। সারাটা রাস্তা আমার মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে এক বিশাল প্রশ্ন, এমন কি কথা হল যে মা পরী দু’জনের চোখে জল। আমি ভেবে ভেবে কুলকিনারা খুঁজে পেলাম না।
মৃগাঙ্কর বাড়ি পৌঁছে দেখলাম যে সুব্রত আগে থেকে উপস্থিত। আমাকে দেখে সবাই বেশ নড়েচড়ে বসল। আমরা সবাই মিলে খাটে উঠে বসে পড়লাম। সমীর বারটেন্ডার, মদের বোতল আর গ্লাসের ভার ওর হাতেই। গ্লাস ভরে উঠলো, আমরা সবাই সুব্রতকে নতুন জীবনের অভিবাদন জানালাম, আমাদের মধ্যে ও এক’জন যার বিয়ে হয়েছে।
গল্প গুজবে সময় ধিরে ধরে কাটতে থাকে। কথাবার্তা বেশ জমে ওঠে, মেয়েদের প্রসংগ নিয়ে কথা ওঠে। সুব্রত আর মৃগাঙ্ক দু’জনের রক্তে লাগে মদিরার নেশা। শুধু মাত্র সমীর আর আমি একটু ঠিক ছিলাম।
সত্য উদ্ঘাটন (#02)
হটাৎ করে মৃগাঙ্ক চেঁচিয়ে ওঠে "জানিস কি তোরা? শুচিস্মিতা কে আমার খুব ভালো লাগে।"
কথা শুনে আমার মনে হয় যেন কেউ সপাটে আমার কানে চড় মেরেছে। মাথা গরম হয়ে যায় আমার, হাতের গ্লাস হাতেই থেকে যায়, ঢোক গিলতে ভুলে যাই আমি।
সুব্রত বলে "তুমি তো বোকাচোদা, সারা জীবনে বলে উঠতে পারলে না।"
মৃগাঙ্ক নেশার ঘোরে বলে "শালা সব তোর বড়দার ভয়ে।"
সুব্রত "আমার বড়দা আমার বাবার মতন, একদম মাটির মানুষ। ঠিক যেন নারকেল, ওপরে কঠিন কিন্তু ভেতরটা বড় নরম স্বভাবের।"
মৃগাঙ্ক "ওকে, ঠিক আছে, তাহলে আজ আমি তোর বড়দার কাছে গিয়ে জানাব যে আমি শুচিস্মিতা কে বিয়ে করতে চাই।"
আমার তখন মনে হচ্ছিল যে সপাটে টেনে এক চড় কসিয়ে দেই মৃগাঙ্কর গালে। কোন ক্রমে নিজেকে সামলে নিয়ে হাতের গ্লাস টা গলায় ঢালি।
সুব্রত আমাকে দেখিয়ে বলে "এই ছেলেটা, অভিমন্যু, এর কিছু বলার আছে? কি বলার নেই?"
আমার যেন মনে হল কেউ আমার মাথার ওপরে গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে। মদের নেশা ছুটে গেছে ঐ কথা শুনে, আমি কি ধরা পড়ে গেলাম তাহলে? কি বলতে চায়, কি বুঝাতে চায়? আমার সামনে রামের বোতল ছিল, দাঁত দিয়ে ছিপি টেনে খুলে নিট এক ঢোঁক গলায় ঢালি। গলা জ্বলতে শুরু করে দেয়, আমি বুঝতে পারছিলাম যে রাম আমার গলা দিয়ে নামছে।
আমি সুব্রত কে জিজ্ঞেস করলাম "কি বলার আছে আমার?"
"কি আবার, তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে কি না?"
কথা শুনে আমার যেন ধরে প্রান ফিরে আসে, যাক বাবা, তাহলে আমার আর পরীর সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু জানেনা।
"কলেজে আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই, সব শালা, বই পড়া মাগি।"
আমার কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে।
এমন সময়ে আবার মৃগাঙ্ক চেঁচিয়ে ওঠে "আমি শুচিস্মিতা কেই বিয়ে করব।"
সুব্রত ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, দু’চোখে যেন আগুন ঝরে পড়ছে "বোকাচোদা অনেক হয়েছে। এখন আর ওসব ভেবে কাজ নেই। পরীর মাথার মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু একটা চলছে, সেই জন্য উলুপিদি, মানে ওর মাকে, আমার বিয়েতে নিমন্ত্রন করা হয়েছে।"
তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বলে "আমি আঁচ করতে পারছি যে আজ রাতে অথবা কাল সকালে, বিশাল কিছু একটা নিয়ে ঝড় উঠবে বাড়িতে। ছোটোবেলার কথা আমার ঠিক ভাবে মনে নেই, তবে আমি শুনেছি যে ওর মা আমার বাবা মারা যাবার পড়ে আমাদের জন্যে অনেক কিছু করেছেন, বিশেষ করে পরীর জন্য। আমি শুনেছি যে সেই সময়ে উলুপিদি আমাদের সংসার টাকে নিজের সংসার হিসাবে চালিয়েছেন। আমাদের কাপড় কিনে দিয়েছেন, মুখের ভাত ও জুগিয়েছেন। আমি জানিনা ঠিক যে এর মাঝে কি ঘটনা ঘটেছে তবে এই টুকু বলতে পারি যে উলুপিদি যার জন্যে এসেছেন বা যা করতে এসেছেন সেটা আমাদের সবার জীবনে একটা বিশাল দাগ কেটে যাবে।"
সুব্রতর কথা শুনে আমার নেশার ঘোর কেটে যায়, আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে জল। সেই দেখে আমার চোখে জল চলে আসে। আমার হাত ধরে সুব্রত জিজ্ঞেস করে যে আমার মা কেন এসেছেন। আমি ভেবে পাইনা কি বলব, সত্যি কথাটা কি জানান উচিৎ? সবাই আমার দিকে তাকিয়ে, যেন এই প্রশ্নের উত্তর শুধু আমার কাছে আছে।
সুব্রত থামতে চায় না, "আমাকে আজ বলতে দে। আমি জানি আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে কি হয়েছিল। আমার দুই দিদি, ইন্দ্রানিদি আর চন্দ্রানিদি, এই দু’দিদির জন্য উলুপিদির সাথে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে। আমার দিদি দের বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হয়েছে, সেই দেমাকে মাটিতে পা পড়েনা তাদের। অতীতে যারা তাদের সাহায্য করেছে তাদের ভুলে গেছে আমার দিদিরা। আর যাই হোক, উলুপিদি যে কারনেই হোক এসেছে, আমি সাথে আছি।"
আমি ভেবে দেখলাম যে, বলে দেওয়া ভালো "আমার মা পরীর জন্য এসেছেন। পরী এম.এস.সি পড়ে মায়ের মতন টিচার হতে চায়। কিন্তু তোমার ফ্যামিলির কাছ থেকে অবজেকসান আছে, বিশেষ করে ইন্দ্রানি মাসি আর চন্দ্রানি মাসি।"
সুব্রত আমার কাঁধে হাত রেখে বলল "কিছু ভেবনা, আজ আমি কথা বলব, পরী পড়াশুনা করবে। আজ আমি আমার দিদিদের কথা শুনব না।"
ঠিক সেই সময়ে দুষ্টু, সুমন্ত মামার ছেলে, দৌড়ে এসে, হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, বাড়িতে আমাদের ডাক পড়েছে, খাবার ঘরে কিছু একটা মিটিং বসেছে। কথা শুনে আমি আর সুব্রত মুখ চাওয়াচাওয়ি করি, দু’জনার নেশার ঘোর এক ধাক্কায় উড়ে গেছে। দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি গিয়ে ঢুকি।
সত্য উদ্ঘাটন (#03)
খাবার ঘরে ঢোকা মাত্র দেখতে পেলাম যে বড়ির সবাই একত্রিত হয়ে বসে, বাবা, মা, তার পাশে দিদা (পরীর মা), তার পাশে ইন্দ্রানি মাসি, ইন্দ্রানি মাসির স্বামী, তার পাশে চন্দ্রানি মাসি, চন্দ্রানি মাসির স্বামী, শশাঙ্খ মামা, মেঘনা মামি, এবং সুমন্ত মামা। পরী মায়ের পেছনে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সুব্রত আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে যে সব কিছু ঠিক হবে। ইন্দ্রানি মাসি বললেন "দেখো উলুপি দি, আমাদের বাড়ির কোন মেয়েরা গ্রাজুয়েট নয়, তা সত্তেও আমরা পরীকে পড়িয়েছি। এখন ওর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে, ওর বিয়ে করা উচিৎ। আমরা ওর ভালো চাই, একটা ভালো ছেলে দেখেই ওর বিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের দুই বোন কে দেখো, আমরা বিয়ে করে ঘর সংসার নিয়ে ভালো আছি।"
মা বললেন যে "পরী যদি পড়াশুনা করতে চায় তাহলে ক্ষতি কি?"
ইন্দ্রানি মাসি তার কথায় অনড় "অত পড়াশুনা করে কি হবে? ওর বয়সে আমার বিয়ে হয়ে গেছিল।"
সুব্রত এতক্ষণ ধরে চুপ করে সব শুনছিল, ইন্দ্রানি মাসির কথা শুনে বলল "পরী পড়াশুনা করবে। উলুপিদি যা বলেছেন সেটা আমাদের মেনে নেওয়া উচিৎ।"
সবাই ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। ইন্দ্রানি মাসি আর চন্দ্রানি মাসি হয়ত ভাবতে পারেনি যে সুব্রত এর মাঝে কথা বলবে।
শশাঙ্খ মামা সুব্রত কে বললেন যে "তুই চুপ কর, তোকে এখানে কেউ কথা বলতে বলেনি।"
চন্দ্রানি মাসি বলে উঠলো "তোর মতামত কি কেউ জিজ্ঞেস করেছে এখানে?"
সুব্রত "আমি এই পরিবারের একজন আমার বক্তব্য রাখার অধিকার আছে।"
ব্যাপারটা বেশ পেঁচিয়ে উঠেছে। আমি আড় চোখে পরীর দিকে তাকিয়ে দেখি, ওর চোখে জল। দিদা পরীর দিকে তাকিয়ে আছে, পরী মাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে, যেন মা ওর শেষ আশা ভরসা। দিদা সুমন্ত মামার দিকে তাকিয়ে মামার অভিমত জানতে চাইলেন।
সুমন্ত মামা বললেন "আমার মনে হয়, পরী পড়াশুনা চালিয়ে যাক। ইতিমধ্যে আমরা পরীর জন্য ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দেব যে কিনা ওকে পড়াশুনা করতে দেবে।"
পরী ধরা গলায় চেঁচিয়ে ওঠে "না আমি এখন বিয়ে করবো না। তোমরা সবাই চাও যে আমি এ বাড়ি থেকে চলে যাই?"
মা পরীর হাতে হাত বুলিয়ে আসস্থ করে, শান্ত করতে চেষ্টা করে।
ইতিমধ্যে ইন্দ্রানি মাসি মাকে জিজ্ঞেস করেন "তুমি এতদিন পড়ে কেন এসেছ এখানে?"
দিদা ইন্দ্রানি মাসির কথা শুনে একটু রেগে গিয়ে বললেন "আমি শশাঙ্খ কে বলেছিলাম উলুপিকে নিমন্ত্রন করতে। উলুপির সাথে একদম উঁচু গলায় কথা বলবি না।"
ইন্দ্রানি মাসি দিদার কথা অমান্য করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে "আমরা দু’বোনে আমাদের পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছি। তুমি কি করেছ? কোথায় ছিলে সতের বছর?"
কথাটা বলার পরে মনে হল যেন কেউ অ্যাটম বম্ব ফেলেছে ঘরে। কারুর মুখে কোন কথা নেই, সবাই চুপ করে বসে আছে, শুধু পরীর ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ ছাড়া আড় কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না।
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি, রাগে লাল হয়ে গেছে মায়ের দু’চোখ, জলে ভরে এসেছে। ধরা গলা অথচ বেশ গম্ভির স্বরে মা বললেন "ভুলেও আমাকে জিজ্ঞেস করতে যাস না আমি কি করেছি। আমি এখানে শুধুমাত্র পরীর জন্য এসেছি। আমি ওর জন্যে যা করব সেটা তোদের সবাই কে মেনে নিতে হবে। জানতে চাস আমি কি করেছি?"
সবাই মায়ের দিকে তাকিয়ে, দিদা মাকে চুপ করতে অনুরোধ করেন।
দিদা "আমি বলছি পরী পড়াশুনা করবে, তুমি চুপ কর উলুপি দোহাই।"
মা থামার পাত্রি নন "না, আজকে আমাকে বলতে দাও। ওরা কারন জানতে চেয়েছে, ভুলে গেছে ওরা" তারপরে ইন্দ্রানি মাসি আড় চন্দ্রানি মাসির দিকে তাকিয়ে বললেন "তোরা সবাই অনেক ছোটো যখন তোদের বাবা মারা যান। পরী শুধু দেড় বছরের, আমার ছেলে তখন আমার পেটে। তোরা সবাই তখন অনেক ছোটো ছিলিস, তোদের দেখার কেউ ছিলনা। মাসিমা শুধু কাঁদতেন, এই শশাঙ্খ পড়াশুনা ছেড়ে ধানকলে কাজ করে, যাতে তোদের পেটে দুটো ভাত জোটে। সেই পাঁচ বছর আমি দিয়েছি এই সংসারে, আমার আয় আমার সব কিছু। তোদের খাওয়া দাওয়া, তোদের জামা কাপড় সব কিছু, যার জন্যে তোরা সবাই আজ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস। এরপরে তুই আমাকে জিজ্ঞেস করিস আমি কি করেছি?"
দিদা মাকে শান্ত করার প্রবল চেষ্টা করেন। পরী জলভরা চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। গাল বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে চলেছে। কারুর মুখে কোন কথা নেই, সবাই চুপ। আমি আর সুব্রত মুখ চাওয়াচায়ি করি।
মা থামেন না বলে চলেন "বুকের দুধ খাইয়ে বড় করেছি পরীকে। ওকে তো তোরা ফেলনা করে দিয়েছিলিস, ওর জন্ম হবার পরে যে মেসো মারা গেছিলেন তাই পরী কে তোরা অলুক্ষুনে বলতিস। ওর কি দোষ ছিল? আমি এই বুক কেটে আমার ছেলের সাথে ওকে দেখেছি।"
সত্য উদ্ঘাটন (#04)
সুব্রত মায়ের পায়ের কাছে গিয়ে বসে পরে। সবার চোখে জল। এর মধ্যে দেখলাম যে বাবা উঠে চলে গেলেন নিজের চোখের জল লুকানোর জন্য। মা আবার বলতে শুরু করেন "এই বুক চিরে যদি দেখাতে পারতাম তাহলে দেখিয়ে দিতাম, ও আমার কে। আমার মেয়ে নেই। পরী আমার মেয়ে নয় তবে আমার মেয়ের মতন। আমি এখানে তোদের কারুর জন্য আসিনি, তোদের অনেক বড় বড় বাড়িতে বিয়ে হয়েছে, দুজনেই ব্যাবসা করে, অনেক টাকা পয়সা তোদের। দেমাকে এখন তোদের মাটিতে পা পড়ে না।"
দিদা আর পরী দু’জনে কেঁদে চলেছে, সব কিছু জানার পরে আর দেখার পরে আমার চোখে জল এসে যায়।
"কাল, বউভাত শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, আমি পরীকে নিয়ে কোলকাতা চলে যাবো। ক্যালকাটা উনিভারসিটি তে আমি পড়াব ওকে, যা টাকা লাগে আমি দেব। তোরা কি ভাবিস কি করিস আমি কোনদিন দেখতে যাব না।"
মায়ের বুক থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস বের হয়, পরী মায়ের পায়ের কাছে বসে মায়ের কোলে মুখ গুঁজে কাঁদতে শুরু করে দেয়। পুরো ঘরের পরিবেশটা বদলে যায় এক উত্তেজনাপূর্বক ঘটনা বলিতে, সবাই চুপ করে বসে আছে, কারুর মুখে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত নেই।
অবশেষ সুমন্ত মামা বলে ওঠেন "আমি উলুপিদি কে সমর্থন করি। দিদির ন্যায্য অধিকার আছে পরী কে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাবার। আমরা সবাই ভুলে গেছিলাম যে উলুপিদি এক সময় আমাদের জন্য কি করেছেন।"
তারপরে যা বললেন সেটা শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে গেল "কাল বাদে পরশু, বিয়ের সব কিছু মিটে যাবার পরে, আমি এই সম্পতির সাত ভাগ করবো।"
ইন্দ্রানি মাসি প্রশ্ন করেন "সাত ভাগ কেন? আমরা তো ছয় ভাই বোন।"
গর্জে ওঠেন সুমন্ত মামা "তুই চুপ করে বসে থাক। এক ভাগ মায়ের আড় বাকি ছয় ভাগ আমাদের। মায়ের ভাগ মা যাকে চাইবেন তাকে দিয়ে যাবেন।
শশাঙ্খ মামা সেই কথায় সায় দিলেন।
"এই বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা, তর্ক বিতর্ক হল। এই কথা যেন এই চার দেওয়ালের মধ্যে থাকে। আমি চাইনা সুব্রতর বিয়ের আনন্দ মাঠে মারা যাক। আজ এখানেই কথা শেষ, সবাই নিজের কাজে চলে যাও।"
আমি ঘড়ির দিকে দেখি, রাত প্রায় ন’টা বাজে।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment