আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
জীবন যে রকম - একটি উপন্যাস
Written By Lekhak (লেখক)
Written By Lekhak (লেখক)
।।এক।।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মত খবরের কাগজটা তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলাম। মা বলল, "আজ তো খবরের কাগজ দেবে না রে খোকা। কাল যে ছুটী ছিল তোর খেয়াল নেই?"
সত্যি তাই। কাল যে ছুটী ছিল একেবারেই ভুলে গেছি। ২৬শে জানুয়ারী, প্রজাতন্ত্র দিবস। সর্বভারতীয় ছুটী। আগামীকাল এই প্রত্রিকার কোন সংষ্করণ প্রকাশিত হবে না। হেড লাইনটা দেখেছি, কিন্তু একেবারেই মনে নেই।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চা খেতে খেতে খবরের কাগজটা পড়ি। রোজ একবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কাগজ পড়ার অভ্যাসটা আমার চিরদিনের। রাজনীতি থেকে খেলাধূলা। কোথায় কি ঘটেছে, সব যেন একবার ভাল করে চোখ বুলোনো চাই। কাগজ পড়ে তারপর স্নানে ঢুকি। অফিসে যাওয়ার তাড়া থাকে বলে, লেখালেখিগুলো সকালের দিকে একদমই হয় না। তরকারীর সাথে দুটো রুটি। মুখে কিছু দিয়েই অফিসের জন্য তারপরে আমাকে বেরোতে হয়।
ভাবছিলাম, স্নানটা তাহলে সেরে নেব কিনা? আজ একবার শুভেন্দুর বাড়ী যেতে হবে। কি জানি, এতদিন পরে আমাকে কেন ডেকেছে শুভেন্দু? অফিস থেকে বেরিয়ে পিকনিক গার্ডেনে যেতে একঘন্টা সময় লাগবে। শুভেন্দু বলেছে, "ঠিক সাতটার মধ্যে আসবি। তোর জন্য অনেক সারপ্রাইজ আছে।"
পুরোন দিনের স্মৃতিগুলো এখনও যখন মনে পড়ে, ভালো লাগে। সেদিনের সেই উচ্ছ্বল, আনন্দমুখর জীবন, আর আজকের কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যে যেন কত ফারাক। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো। মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে সেই চেনা পরিচিত মুখগুলো। শুভেন্দু, শুক্লা, সৌগত, মিনু আর রনি। আর সাথে বিদিশা তো আছেই।
জানি না ওরা এখন সব কোথায়। বিদিশা বিয়ে করে মুম্বাই চলে গিয়েছিল। ওর স্বামী ওখানে ভালো কোম্পানীতে চাকরি করে। সৌগতও বিয়ে করল। বউটা ভারী মিষ্টি। মুখটা একেবারে প্রতিমার মত। বিয়েতে আমাদের সবাইকে নেমতন্ন করেছিল। সবাই আমরা গিয়েছিলাম। বৌভাতে যায়নি কেবল বিদিশা। সেদিন ওকে খুব মিস করেছিলাম। শেষবারের মতন দেখতে চেয়েছিলাম। সে সুযোগ আর হয় নি।
বিদিশা সৌগতকে কথা দিয়েছিল, বৌভাতে আসবে, তাও আসেনি। হয়তো আমারই জন্য। বুকের মধ্যে চাপা এক দূঃখ নিয়ে গুমড়ে গুমড়ে অনেকদিন মরেছি বিদিশার জন্য। ভেবেছিলাম, শেষবারের মতন ওকে একবার দেখব। বিদিশাকে উইশ করব। ওকে বলব, "বিদিশা, তোমার বিবাহিত জীবন সুখময় হোক। দেবকে চটকরে ভুলে যেতে তোমারও হয়তো কষ্ট হবে জানি। কিন্তু কি করবে? এটাই তো জীবন। আমিও তোমার স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে আর বাঁচতে চাই না। যা হয়েছে এটাকেই ভাগ্যের পরিহাস বলে আমি মেনে নেবো। তুমিও তাই মেনে নাও।"
সেদিন শুভেন্দু আমাকে বলেছিল, "সত্যি দেব, তোর জন্য আমার দূঃখ হয়। মিনুটা যে কি করল। সব কিছু জেনেও ও তোর ক্ষতিটা করল। বিদিশা তোকে ভুল বুঝল। যখন সত্যিটা জানতে পারল। তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।"
ভালবাসার খেসারত দিতে দিতে একদিন ভালবাসাটাই এভাবে মিথ্যে হয়ে যায়। জানি বিদিশা আমাকে হয়তো ক্ষমা করে দেবে। কিন্তু ওকে কি আমি সত্যি ভুলে যেতে পারব? কখনই নয়। আমি তো প্রেম কি তাই জানতাম না জীবনে। বিদিশাই শিখিয়েছিল হাতে হাত ধরে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কখনও কলকাতার রাজপথে, কখনও ভিক্টোরিয়ায়, কখনও ইডেন গার্ডেন এ কিংবা গঙ্গার পাড়ে, দুজনের ভালোবাসার একে অপরকে পাওয়ার আনন্দ এক অনুভূতি। যেন এক আচ্ছন্ন করা তীব্র সুখ। সেদিন বিদিশা আমাকে বলেছিল, "আমাকে ছাড়া দেব তুমি কোনদিন সুখী হতে পারবে না জানি। আর আমিও তোমার সঙ্গ ছাড়া কোনদিন সুখে থাকতে পারবো না। জেনে রেখো বিদিশা যদি দেবকে কোনদিন কাছে না পায়, তাহলে বিদিশা মরে যাবে।"
বিদিশার সেদিনের সেই কথাগুলো আজও আমার মনে আছে। দুনিয়াটা এরকমই। কেউ কারুর জন্য মরে না। অথচ সবাই নাকি মরতে চায়। এই আমি কেমন দিব্যি বেঁচে আছি। বিদিশাও হয়তো তাই। মরার কথা তুলে ভালবাসাটাকে সেদিন হয়তো আরো শক্ত মজবুত করতে চেয়েছিল বিদিশা। কিন্তু ও আর আমি, কেউ আমরা ভালবাসাটাকে ধরে রাখতে পারিনি। সন্দেহ, অবিশ্বাস, বিদিশার মনটাকে ছাড়খাড় করে দিয়েছিল। ভেবেছিল, আমি বুঝি ওর প্রতি আর আসক্ত নই। কলেজে আমাদেরই সহপাঠিনী মিনু তখন আমার প্রেমে মত্ত। বিদিশার কাছ থেকে মিনু আমাকে ছিনিয়ে নিতে চায়। যে কোন মূল্যে মিনু হাসিল করতে চায় আমাকে। সেদিনের সেই বর্ষামুখর কালো রাত। মিনু নির্লজ্জ্বের মতন একটা কান্ড করে বসল। আর তা দেখে বিদিশাও হারিয়ে গেল আমার জীবন থেকে। হারিয়ে গেল প্রেম। পড়ে রইল কিছু টুকরো স্মৃতি। জীবনের সেই ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যদি অধ্যায়কারে লিখতে বসি, তাহলে একটা বড় উপন্যাস তো হবেই। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ভাবছি, তাহলে শুরু করি আজ থেকে। দেখাই যাক না শেষপর্যন্ত কি হয়।
মা বলল, "কি রে খোকা? জল গরম করবি না? নাকি এই ঠান্ডা জলেই চান করবি? সর্দি লেগে যাবে যে। সকালবেলা গানের রেওয়াজে অসুবিধে হবে।"
ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন এক ঘন্টা গানের রেওয়াজ করি। এ কথাটা বলা হয় নি। ক্ল্যাসিকাল গানের চর্চাটা যেটা শুরু করেছিলাম। আজও রয়ে গেছে। বাবা বলতেন, "পড়াশুনা ছাড়া, একমাত্র গানের মধ্যেই মা সরস্বতীকে পাওয়া যায়। তোর গলা এত ভালো, রেওয়াজ কোনদিন ছাড়িস না।"
বাবা আজ নেই, কিন্ত তাঁর কথাটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছি। মনে পড়ে, বিদিশা কলেজে আমার গান শুনেই কেমন পাগল হয়ে গিয়েছিল আমার প্রতি। ও বলেছিল, "তোমার গলা এত মিষ্টি। মনে হয় ঠিক যেন মধু ঝরে পড়ছে গলা দিয়ে।"
শুধু বিদিশা কেন? অনেক মেয়েকেই গান শুনিয়ে তাদের মন জয় করে নিয়েছিলাম। তারা সবাই যে আমার সাথে প্রেম করতে চেয়েছিল তা ঠিক নয়। আসলে বিদিশা জীবনে এসে যাওয়াতে, অন্য কারুর প্রেমিক হতে আমারো ঠিক মন চায়নি। ভালবাসা আর প্রেমটা ছিল স্বচ্ছ, গাঢ়। একে অপরকে অঙ্গীকার করার মতন। একটা মেয়েকে ভালবেসে, তার জীবনটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আমিও চাই নি। প্রেমের মধ্যে কোন দাগ ছিল না। আমার ভালোবাসায় কোন ছল ছিল না। প্রগাঢ় ভালবাসায় কলঙ্ক যেটা এল, সেটা শুধু মিনুর জন্য। মিনুও আমার গানের পাগল ছিল। বিদিশাকে জব্দ করার জন্যই ও এই খেলাটা খেলল।
কলেজের পরে মিনুর সাথে অনেকবারই দেখা হয়েছে। এই ক'বছরে মিনু যেন আরো অনেক পাল্টে গেছে। ওকে এখন দেখলে মনে হয়, পুরুষ ধরায় ও যেন গিনেসবুকে নাম তুলতে চলেছে। আমার পরেও কত ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা করল। সঙ্গী বদলানোর তাগিদে চার চারটে বিয়েও করল। কিন্তু কারুর সাথেই সেভাবে কোনদিন একাত্ম হয়ে ঘর করতে পারল না। মিনু বলতো, "আমি এখনও রাইট পার্টনারটাকে খুঁজছি। যেদিন পাবো, সেদিন আমি এই খেলাটা ছেড়ে দেবো!"
বছর তিনেক আগে মিনুর সাথে শেষ দেখা হয়েছিল। তখন ও যে লোকটার সাথে আমায় আলাপ করিয়েছিল, সেটা ওর ফোর্থ হাজব্যান্ড। ভদ্রলোক নাকি দুবাইতে অনেকদিন ছিলেন। পয়সাওয়ালা। মিনু তাকে ফাঁসিয়েছে এবং দিব্যি ঘর করছে তার সাথে। এরপরে অবশ্য মিনুর খবর আর জানি না।
শুক্লা মেয়েটা একটু অন্য স্বভাবের। সৌগতর সাথে ও কিছুদিন ভাব করল আমার আর বিদিশার মতন। তারপর সৌগত বিয়ে করল। শুক্লাও বিয়ে করে নিল আর একজনকে। পরে শুনেছিলাম, সৌগতকে বিয়ে করা নিয়ে নাকি মত দেয়নি শুক্লার বাবা মা। অথচ ভাগ্যের এমনই পরিহাস। একবছর ঘুরতে না ঘুরতেই, শুক্লার সাথে ওর স্বামীর ছাড়াছাড়ি। এখন শুনেছি, শুক্লা নাকি একা থাকে। সল্ট লেকে একটা ফ্ল্যাট কিনেছে। ব্যাঙ্কে ভালো চাকরি করে বলে লোন পেতে নাকি অসুবিধে হয় নি। সৌগতর বিয়েতে শুক্লাও এসেছিল। দেখলাম পুরোনো অ্যাফেয়ারটা ভুলে গেছে ওরা দুজনেই। বিয়েবাড়ীতে শুক্লাকে পেয়ে সৌগত স্বাভাবিক। শুক্লাও তাই। যেন দেখে মনে হবে না। এই দুজনেও আমার আর বিদিশার মতন হাত ধরাধরি করে ভিক্টোরিয়াতে ভিজেছিল একদিন!
সেদিন শুভেন্দু আমাদের চারজনকে দেখে হাসতে হাসতে ভিক্টোরিয়ার ভেতরটায় পুকুরটায় পড়ে গিয়ে কিছুতেই আর উঠতে পারে না। পরে জেনেছিলাম, ও জলকে ভীষন ভয় পায়, সাঁতার জানে না। আমাকে বলল, "কি করব? তোদের যা রকম দেখলাম, হাসতে হাসতে পা পিছলে পুকুরটার মধ্যে পড়ে গেলাম। জলের মধ্যে পড়ে গিয়ে দেখি, আর কিছুতেই উঠতে পারি না।"
আমি আর সৌগত দুজনে শুভেন্দুর হাত ধরে ওকে টেনে তুলেছিলাম জল থেকে। আসলে বিদিশা বৃষ্টিতে মাথা বাঁচানোর জন্য ওর শালোয়ারের ওড়নাটা আমার মাথায় দিয়েছিল। ওড়নার তলায় আমি আর বিদিশা তখন একটু একে অপরকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করছি। তাই দেখে সৌগত আর শুক্লাও তাই করতে লাগল। শুভেন্দু গিয়েছিল বাদাম কিনতে। ফেরার পথে ওড়নার তলায় আমাদের চারজনকে চুমোচুমি করতে দেখে ও হেসে অস্থির। প্রথমে আনন্দে কিছুটা নাচতে চেষ্টা করল। তারপর হেসে একেবারে কুতিয়ে পড়ছে। সেই সময়ই পা পিছলে একেবারে পুকুরের জলে। আমি আর সৌগত ছুটে গেলাম। বিদিশা বলল, "ধরো ধরো ওকে ধরো। যা আজকে করলো। সব আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল।"
মনে পড়ে সেই সব দিন। আজও ভাবি পুরোনো দিনগুলোতে একবার যদি ফিরে যেতে পারতাম। যদি বয়সটা কমে গিয়ে আবার সেই কলেজের দিনগুলোর মতন হৈ চৈ আর মাতামাতিতে মেতে উঠত। আনন্দ আছে, আছে হুল্লোরবাজী, ঘন্টার পর ঘন্টা ক্যান্টিনে কেটে যাওয়া, কফি হাউসের বড় টেবিলটাকে দখল করে দেদারে ঘন্টার পর ঘন্টা আমাদের প্রানখোলা আড্ডা মারা। এছাড়া প্রতি শুক্রবার নতুন কোন ছবি রিলিজ করলে, অ্যাডভান্স টিকিট কেটে আবার দেখা চাই। হিট ছবির গানগুলো আমি ক্যান্টিনে বসে গাইতাম। মাঝে মাঝে প্রিন্সিপাল ওপর থেকে নিচে নেমে আসতেন। আমাকে বলতেন, "দেব, তোমার গলা ভালো আমি জানি, তা বলে পড়াশুনাটাও তো মন দিয়ে করো। সামনে বি.এস.সি ফাইনাল পরীক্ষা। তুমি যে কি রেজাল্ট করবে, আমার তোমাকে নিয়ে বড় চিন্তা হচ্ছে।"
আমি এক চান্সে বি.এস.সি পাশ করেছিলাম ঠিকই। তবে কলেজ ছেড়ে দেবার পর ক্যান্টিনের ভেতরটা পুরো বদলে গিয়েছিল। সরস্বতী পূজোয় একবার করে যখন যেতাম। তখন দেখতাম ক্যান্টিনের ভেতরে কাঠের টেবিলগুলো আর নেই। ওখানে সব বাঁধানো সিমেন্টের টেবিল হয়ে গেছে। আসলে আমার গানের সাথে টেবিল বাজিয়ে এমন নাচানাচি হত, আওয়াজটা প্রিন্সিপালের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে যেত। আমাকে উনি বকা দিতেন, আবার ভালও বাসতেন। কারন কলেজের প্রতিবছরের কালচারাল প্রোগ্রামটা, আমাকে বাদ দিয়ে যে হত না। ঐ প্রোগ্রামে আমি নিজে গাইতাম সবার প্রথমে। ভাড়া করা যারা আর্টিস্টরা আসত। তারা একে একে সব গেয়ে চলে যেত। কিন্তু আমাকে প্রোগ্রামের শেষেও অনেকের আবদার মেটাতে হত। কিসব ছিল সেইসব দিন। পুরোন দিনগুলোর কথা মনে পড়লে বড় অদ্ভূত লাগে। ভাবি মানুষের জীবনটা অনেক স্বল্প দৈর্ঘ্যের। আনন্দটা কম, কষ্টটা বেশী হয়তো সেই জন্যই।
শুভেন্দু বলেছিল, "তুই বড্ড বেরসিক হয়ে গেছিস দেব। একা একা থাকিস, মাঝে মধ্যে সময় কাটাতে আমাদের কাছে তো আসতে পারিস। কি এক বিদিশাকে তুই ভালবেসে জীবনটা শুধু ওর স্মৃতিতেই কাটিয়ে দিলি। মেয়েদের মন বোঝা যে বড় শক্ত। দেখতো আমাকে, কাউকে ভাল না বেসে কেমন দিব্যি আছি আমি। ভাগ্যিস বিদিশার মত আমার জীবনে কেউ আসেনি। প্রেম যারা করে তারা সব মুর্খ হয়। পৃথিবীতে প্রেমের মত বোকামি আর কিছুতেই নেই। তুই না মানলেও আমি এটা প্রবলভাবে মানি। যারা তোর মত সারাদিন কেবল লেখালেখিতে ডুবে থাকে, তারাও দেখ, হয়তো তোরই মতন। কাউকে ভালবেসে বিফল হয়ে এখন এটাকেই জীবনের সঙ্গী হিসেবে মেনে নিয়েছে। মাঝে মধ্যে একটু আড্ডাতে তাই আয়। ফুর্তীর আসর জমাই। গল্পগুজব করি। সাথে হূইস্কি কিংবা রাম অথবা ভদকা তো আছেই। তুই এলে আমার রনির দুজনেরই খুব ভালো লাগবে।"
শুভেন্দুর পিকনিক গার্ডেনের বাড়ীতে বেশ কয়েকবার গেছি। আমার মত শুভেন্দুও এখনো বিয়ে করেনি। প্রতি শনি রবিবার নিয়ম করে রনি ওর কাছে যায়। কলেজের সময় থেকেই রনির সাথে শুভেন্দুর একটা আলাদা খাতির ছিল। রনি বিয়ে করেছে শুভেন্দুরই বোন মাধুরীকে। ওদের এখন শালা জামাইবাবুর সম্পর্ক। আমাকে পেলে দুজনেই মিনু আর বিদিশার কথা তুলে প্রথমে একটু হাসি ঠাট্টা মশকরা করত। তারপর আর করে না। বিদিশাকে রনি একবার ঠাট্টা করে কলেজে বলেছিল, "দেবকে দেখে আমার খুব হিংসে হয়। তুই কি দেখে দেবের প্রেমে পড়লি বলতো? কেন? পাত্র হিসেবে আমি কি খারাপ ছিলাম? তোকে রাজরানী করে রাখতাম। নে এবার দেবকে বাতিল করে দে। কালীঘাটে গিয়ে দুজনে মালা দিই। আর দেবকে বলি, বিদিশা তোর সাথে প্রেম করে ভুল করেছিল, এখন পস্তাচ্ছে। তাই ওকে আমি বিয়ে করে নিলাম।"
বিদিশাও কম যায় না। রনিকে বলেছিল, "শুভেন্দুর বাড়ীতে কার টানে তুই যাস, সেকী আমি আর জানি না? শুধু শুধু মেয়েটার মাথা খাচ্ছিস। আগে ওকে যে প্রতিশ্রুতি গুলো দিয়েছিস, সেগুলো পালন করার চেষ্টা কর। তারপর তোকে বলব, কেন আমি দেবের সাথে প্রেম করি। সত্যিকারের ভালোবাসা দেব রাখতে জানে। ও যদি কাউকে কথা দেয়, সেকথা ও রাখতে জানে।"
রনি বলেছিল, "দেবকে নিয়ে তুই এত আদিখ্যেতা করিস কেন বলতো বিদিশা। পৃথিবীতে বুঝি দেবই একা ভালবাসতে জানে। আমরা কেউ ভালবাসতে জানি না?"
বিদিশা বলেছিল, "মাধুরীকে কি তুই সত্যি ভালবাসিস?"
রনি বলেছিল, "হ্যাঁ।"
বিদিশা বলেছিল, "তাহলে আবার আমার পেছনে পড়ছিস কেন? তার মানে তোর ভালবাসাটা মেকী। ওর মধ্যে কোন স্বচ্ছতা নেই। ঠিক আছে শুভেন্দুকে আমি বলছি, ও ঠিক জুতো পেটা করবে তোকে। বোনের সাথে প্রেম করা। মজা বার করে দেবে তোর।"
সবই ঠাট্টার ছলনে কথাগুলো বলা। বিদিশা জানতো, রনি ইয়ার্কী মারছে, রনিও তাই। কেউ কারুর কথা গায়ে মাখেনি। শেষ পর্যন্ত শুভেন্দু বোন মাধুরীকে বিয়ে করে রনি প্রতিশ্রুতি পালন করল। আর বিদিশার বলা কথাগুলো আমি রাখতে পারলাম না। জানি না হয়তো আমারই দোষে। মিনুকে বিশ্বাস করেছিলাম। মিনু সেই বিশ্বাসের মর্যাদা আমার রাখতে পারেনি। শুধু কয়েকটা ভুলের দোষে বিদিশা আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল।
।।দুই।।
মা বলল, "কি রে দেব? তুই কি আজকে অফিস যাবি না? সকালে উঠেই লেখালেখি করতে শুরু করে দিয়েছিস, অফিস যাবি কখন? নটা তো বেজে গেল। এরপরে কখন আর চানে যাবি, আর কখন তৈরী হবি? তোকে তো দেখে মনে হচ্ছে অফিস যাবার তোর আজ কোন তাড়া নেই।"
মা'কে বললাম, "না গো মা। অফিস তো যাবই। তাছাড়া আজ আবার শুভেন্দুদের বাড়ীতেও আমাকে একটু যেতে হবে। ও বলেছে সাতটার পরে আসতে। ভাবছি অফিস থেকে বেরিয়েই তারপর সোজা ওখানেই....."
মা বলল, "শুভেন্দু? এতদিন পরে? কেনরে? হঠাৎ তোকে ডাকলো?"
মা'কে বললাম, "কারনটা আমিও জানি না মা। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, শুভেন্দু বলেনি। শুধু বললো, তোকে যখন ডেকেছি, ব্যাস তোকে আসতেই হবে। আর আমি কিছু শুনতে চাই না। সাতটার পরে আসবি, আজ তোর জন্য এখানে অনেক সারপ্রাইজ আছে।"
শুভেন্দু বলেছে, অথচ আমি ওর ডাকে যাইনি, এমন খুবই কম হয়েছে। শুভেন্দু আমাকে একসময় অনেক হেল্প করেছিল। ব্যাবসা করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতিতে, দেনায় একসময় ডুবে গিয়েছিলাম। শুভেন্দু আমাকে বেশ কিছু টাকা ধার দিয়ে তখন বাঁচিয়েছিল। দেনাগুলো শোধ করেছি, ওকেও একটু একটু করে ওর দেওয়া পুরো টাকাটাই শোধ করেছি। শুভেন্দুর করা উপকার জীবনে কোনদিন ভুলতে পারব না। একমাত্র কলেজের পরে ওই আমার সাথে যোগাযোগটা রেখেছিল।
পিকনিক গার্ডেনে চারতলা শুভেন্দুদের বিশাল বাড়ী। শুভেন্দুরা চার ভাই। শুভেন্দু তার মধ্যে ছোট। বড়ভাই ওকালতি করেন, মেজভাই ডাক্তার। আর সেজ ভাইয়ের দীপেন্দুর সাথে শুভেন্দু জয়েন্টলি প্রোমোটারি ব্যাবসা করে। ওদের একটা মাত্র বোন মাধুরীকে বিয়ে করল রনি।
এদিক দিয়ে রনি খুব লাকি। আসলে রনিদের আবার বড়বাজারে বিশাল বিল্ডিং মেটারিয়ালের দোকান। রনি যখন কলেজে পড়ে, তখন ওর বাবা দোকানটা চালাতেন। বিশাল ব্যাবসা। রনি দায়িত্ব নিল কলেজ পাশ করার পর। সেজভাই দীপেন্দু আগে থেকেই প্রোমোটারি লাইনে ছিল। শুভেন্দুও এবার তার সাথে যুক্ত হল। এদিকে রনির সাথে শুভেন্দুর ব্যাবসায়িক এবং কলেজের বন্ধুত্বের গাঢ় সম্পর্ক। রনি তখন থেকেই শুভেন্দুর বাড়ীতে যাতায়াত শুরু করল। মাধুরীকে দেখে রনির প্রেম। তারপরেই বিয়ে করল মাধুরীকে। রনির বিয়েতে আমরা সবাই গিয়েছিলাম। বিদিশাও এসেছিল। তার ঠিক পরের দিনই বিদিশা আমাকে ছেড়ে চলে যায়। বৌভাতে বিদিশা যায় নি। বলেছিল, 'দেব' যেখানে থাকবে, সেখানে কোনদিন যাব না। ও ভীষন পাপী। মিনুকে নিয়ে যা কান্ডটা 'দেব' করেছে, তারপর ওর মুখ দেখাটাও পাপ। আমি কেন যে ওকে ভালবেসে ভুলটা করেছিলাম, সেটাই এখন বুঝতে পারছি। ভগবান আমার চোখ খুলে দিয়েছে।
রনি আর মাধুরীর বৌভাতে আমিও যাইনি। বিদিশার দূঃখে সারারাত অনেক কেঁদেছিলাম। ছেলে হয়ে কোন মেয়ের জন্য কাঁদছি। মা বলেছিল, "তুই কি পাগল? যে বিদিশার জন্য এত কষ্ট পাচ্ছিস?"
মা'কে বলেছিলাম, "মা কষ্ট কেন পাচ্ছি, তুমি বুঝবে না। পৃথিবীতে ছেলেরাই শুধু দোষ করে আর মেয়েরা বুঝি সব ধোয়া তুলসী পাতা। বিশ্বাসটা অর্জন করতে অনেক সময় লেগে যায়, কিন্তু ভাঙতে একদিনও সময় লাগে না এটা যেমন সত্যি। তেমনি সত্যি আর মিথ্যের বিচার না করেই, কেউ কাউকে অবিশ্বাস করতে একমূহূর্তও সময় নেয় না। এটাও কি সহজে মেনে নেওয়া যায়? বিদিশা আমার সাথে কেন এমন করল? ও যদি সত্যিটা একবার অন্তত তখন আমার কাছে জানতে চাইত, তাহলে হয়তো....."
যখন জানলো, তখন যে অনেক দেরী হয়ে গেছে।
বিদিশাকে আমার মা যতবারই দেখেছে, বিস্মিত হয়েছে। মা আমাকে বলতো, "এই মেয়েটার মুখ চোখ খুব সুন্দর। দেখে মনে হয় ওর স্বভাবটাও কত মিষ্টি। আজকাল এমন মেয়ে তো পাওয়াই যায় না। কি রূপ, সুন্দর মুখশ্রী ওর। ভগবান যেন আলাদা তুলি দিয়ে ওকে গড়েছেন। ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয়, কলেজে ওই বোধহয় সবচেয়ে সুন্দরী। এত ভালো স্বভাবের মেয়েটা। ওকি তোকে সত্যিই ভালবাসে?"
আমি বলতাম, "মা, বিদিশা শুধু সুন্দরী নয়। ওর মনটাও খুব ভাল। একেবারে ফুলের মতন নরম। বিদিশার পক্ষে আঘাত সহ্য করা তাই খুব কষ্ট। ও বলে, "জানোতো 'দেব', তোমার কাছ থেকে কোনদিন তো আমি আঘাত পাব না। তাই তোমার সাথে প্রেম করতেও খুব নিশ্চিন্ত বোধ করি। কি জানি অন্যের মনে কি আছে? তুমি খুব সরল। তোমার এই সরল মনটাই আমার সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে। তাই তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি, ভাবি পৃথিবীতে 'দেব' বলে বোধহয় একজনই পুরুষ আছে, যে বিদিশার মনটাকে বুঝবে, তাকে ঠকাবে না। কোনদিন বিদিশাকে ছেড়ে দেব চলে যাবে না।"
কলেজে বিদিশা সবসময় শাড়ী পড়ে আসত। কলেজ ছুটীর পরে আমরা দুজনে ঠিক দুঘন্টা একসাথে ঘুরতাম। কখনও কলেজ স্কোয়ারে, কখনও লেবুতলা পার্কে। এছাড়া ছুটীর দিনগুলোতে ভিক্টোরিয়া, গঙ্গার ঘাট তো আছেই। বিদিশা বেশ কয়েকবার আমার বাড়ীতে এসেছে। মা'র সাথে প্রথম যেদিন আলাপ করালাম। ঢুপ করে মা'কে একটা প্রনাম করে বসল। মা ওর থুতনীতে হাত রেখে আশীর্ব্বাদ করে বলল, "বাহ্ তোমার মুখটা তো খুব সুন্দর। তুমি কি দেবের বন্ধু? না অন্যকিছু?"
বিদিশা মুখ নিচু করে লজ্জায় হেসেছিল। আমাকে পরে বলেছিল, "তুমি খুব দুষ্টু। মা'কে বলোনি কেন? আমি তোমার কে?"
বিদিশার গালে হাত রেখে বলেছিলাম, "মা বাবাকে যেচে কখনও কিছু বলতে হয় না। ওনারা দেখলেই সব বুঝতে পারেন। মা যেমন তোমাকে দেখে বুঝে গেছে তুমি আমার কে?"
বিদিশা আমাকে একবারই ওর বাসায় যেতে বলেছিল। সেদিন ওর জন্মদিন ছিল। তার আগে জানতাম না বিদিশারা খুব বড়লোক। ল্যান্সডাউনে বিশাল ওদের বাড়ীটা দেখে আমার মাথা ঘুরে গিয়েছিল। রনি সেদিন টিপ্পনি কেটে আমায় বলেছিল, "ওরেব্বাস, দেব, তুই কি লাকী রে। বিদিশারা এত বড়লোক, আমরা তো কেউ এটা আগে জানতাম না। কপাল করে তুই ই ওকে শুধু পেলি। না এর জন্য তোকে এবার একটা পার্টী দিতে হবে।"
পার্টি আমি দেবো কি? সেদিন যা এলাহী ব্যাপার দেখেছিলাম, আমার মাথার ঠিক ছিল না। লোকে লোকারণ্য। যেন বিয়েবাড়ী। জন্মদিনেও এত অতিথির সমাগম হতে পারে, আমার ধারনা ছিল না। অত বড় বাড়ীতে গাদা গাদা লোকের মধ্যে, আমি যেন নেহাতই এক নগন্য অতিথি। চুপচাপ এক কোনে দাঁড়িয়ে বিদিশাকে একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছিলাম। ও ঘোরাঘুরি করছিল, সবাইকে অ্যাটেন্ড করছিল। কিন্তু কিছুতেই একবারও আমার কাছে এসে কথা বলছিল না। কারুর সাথে আমার পরিচয়ও করিয়ে দিচ্ছিল না। হয়তো আমাকে সেদিন পরীক্ষা করেছিল বিদিশা। শুভেন্দুর সাথে একটা সিগারেট টানবো বলে সবে মাত্র বাইরে বেরিয়ে এসেছি। এমন সময় বিদিশাও বাইরে চলে এলো। আমাদেরকে বলল, "এখানে কি করছ? ও ফোঁকার জন্য বাইরে আসা হয়েছি বুঝি? এই শুভেন্দু চল শীগগীর ভেতরে চল। কেক কাটা হবে। তোদেরকে বাদ দিয়ে আমি কেক কাটতে পারছি না।"
আমাকে বলল, "যেই একটু কথা কম বলেছি, অমনি রাগ হয়েছে বুঝি? চলো ভেতরে চলো। বাবা মা দুজনেই তোমাকে দেখেছে দূর থেকে। বলেছি, 'দেব' হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। দেখোতো ওর সাথে কথা বলে, তোমাদের মেয়ে যাকে পছন্দ করেছে, সে একদম ঠিকঠাক হয়েছে কিনা?"
বিদিশার বাবা মা আমার সাথে কথা বলবে? তার আগেই আমার হাত পা গুলো কেমন কাঁপছিল। শুভেন্দু বলল, "এই দেব, নার্ভাস হয়ে গেলি নাকি? চল চল ভেতরে চল। কেক কাটা হবে। বিদিশা নয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। মা বাবার পর তোকেই ও ফার্স্ট কেকটা খাওয়াবে। এমন সুযোগ কিছুতেই মিস করিস না। চল।"
বিদিশার মা বাবা খুব ভাল। দুজনেই খুব অমায়িক। কেক কাটার পর বিদিশা ঠিক আমার মুখেই প্রথম কেকটা গুঁজে দিল। তাই দেখে রনি আবার বলল, "কিরে, আমাদেরকেও খাওয়াবি না? শুধু দেবকে খাওয়াবি, আর আমরা বাদ?"
সেদিন বিদিশার জন্মদিনে আমরা সবাই গিয়েছিলাম। শুধু মিনু বাদে। শুক্লা এসেছিল একটু রাতের দিকে। সৌগত, শুক্লা আসছে না দেখে ওর জন্য ছটফট করে মরছিল। কারুর সাথে কথা বলছে না, যেন মন মরা হয়ে বসে আছে। শুভেন্দু ওকে জিজ্ঞাসা করাতে বললো, "আমার ডারলিংটা আসছে না। খুব চিন্তা হচ্ছে।"
শেষ পর্যন্ত শুক্লা এলো। তবে অনেক দেরীতে। এসে বলল, "সরি গাইস্। একটু লেট হয়ে গেল। বাড়ীতে মার শরীরটা খুব খারাপ। হঠাৎই জ্বর। আমি শুধু এলাম, বিদিশার জন্য। ও অনেক করে আসতে বলেছে। আর যাই হোক বিদিশার কথা তো আর চট করে কখনও ফেলা যায় না। পার্টিটা অন্যকারুর হলে হয়তো আসতাম না।"
সৌগত তখন একটু মুখটা কাচুমুচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শুক্লা ওর দিকে তাকিয়ে আমাদের কে বলল, "আর আমার এই হবু বরটা তো আছেই। ওর জন্য না এসেই বা যাই কোথায়?"
সৌগতর মুখে হাসিগুলো কোথায় চলে গিয়েছিল। কথাটা শুনে ফিক করে সবকটা দাঁত একসাথে বের করে ফেললো।
সেদিন অনেক রাত্রি অবধি আমরা বিদিশাদের বাড়ীতে ছিলাম। ফেরার পথে সবাই মিলে আমরা একটা ট্যাক্সি ধরলাম। শুভেন্দু আর রনি এমনই বদমাইশ, সৌগতকেও পটিয়ে নিয়ে, ট্যাক্সিভাড়াটা আমাকে দিয়েই দেয়া করালো। ফেরার পথে আবার দোকান থেকে তিন বোতল বিয়ার কিনলো ওরা তিনজনে। সে পয়সাও আমি দিলাম। আমাকে বলল, "আজকি শাম, দেব আর বিদিশাকে নাম। এবার থেকে মাঝে মধ্যেই আমরা তোর আর বিদিশার খুশীতে পার্টি দেবো। আর সে খরচা পুরো তুই বীয়ার করবি। বিদিশার সাথে যতদিন তোর বিয়ে না হচ্ছে, এইভাবেই তুই আমাদের খুশি করে যা। বন্ধুদের খুশি করলে, আমরাও তোকে আশীর্ব্বাদ করব। প্রেমটা তাহলে আরও জমাট বাঁধবে। সুখে সংসার করতে পারবি।"
সংসারটা হয় নি। তবে সত্যি জমাট বেঁধেছিল আমার আর বিদিশার প্রেমটা। প্রথম প্রথম ওকে অবশ্য বেশী পাত্তা দিতাম না। একদিন লাইব্রেরী রুমে বসে আছি। দেখলাম বিদিশা এসে ঢুকলো, তিনটে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে। আমি যে টেবিলটায় বসে বায়োলজী পড়ছি, ও ঠিক তার পাশের টেবিলটাতেই বসে পড়ল ওদেরকে সঙ্গে নিয়ে। আড়চোখে ও আমাকে দেখছে। আমি বইয়ের মধ্যে চোখটাকে নিবদ্ধ করে বসে আছি। কিন্তু বুঝতে পারছি মেয়েটা ঝাড়ি মারছে আমাকে। বিদিশাকে ক্যান্টিনে দেখেছি, বেশ কিছুদিন ধরে। মূগ্ধ হয়ে ও আমার গান শোনে। কিন্তু আজকে হঠাৎ লাইব্রেরী রুমে আমার পাশে বসে এখানে কি করছে? ও এভাবে আড়চোখে দেখছেই বা কেন আমাকে? মনে হল, কিছু একটা মতলব নিয়ে এসেছে মনে হয়। কিছুক্ষণ বসে, "আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে তারপর চলে গেল। একটু পরে শুভেন্দু এলো ওখানে। ওকে বললাম, মেয়েটাকে চিনিস?"
শুভেন্দু বলল, "কোন মেয়েটা বলতো?"
- "একটু আগে এখানে এসেছিল। আমাকে দেখছিল আড়চোখে। মেয়েটাকে কদিন দেখেছি ক্যান্টিনে। দেখতে বেশ ভালো। স্লিম ফিগার, লম্বা হাইট। চোখ মুখও খুব সুন্দর। কিন্তু আমার প্রতি ওর এত ছোঁক ছোঁক কেন? এত আগ্রহ নিয়ে দেখছিল, মনে হল....."
শুভেন্দু বলল, "কোন মেয়েটা বলতো? আমাদের ক্লাসের নিশ্চই নয়। তাহলে তুইও বুঝতে পারতিস। এ কলেজে সুন্দরী বলতে তো একজনই আছে। তুই যা বর্ণনা দিচ্ছিস, তাতে মনে হচ্ছে, ফার্স্ট ইয়ারের ওই মেয়েটা। কি যেন নাম। ওকে আমিও দেখেছি একদিন, ক্লাসে এসে তোর খোঁজ করছিল। তুই সেদিন কলেজে আসিস নি।"
আমি অবাক হলাম। বললাম, "আমার খোঁজ করছিল? কে বলতো? ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে। এমন সুন্দরী মেয়ে এ কলেজে কে আছে? তুই কার কথা বলছিস?"
শুভেন্দু বলল, "প্রেমঘটিত কোন ব্যাপার মনে হচ্ছে। এ মেয়েটা তোর প্রেমে পড়ল না তো? কি রে দেব? এতো ভালোবাসার চক্কর বলে মনে হচ্ছে।"
কলেজে এত মেয়ে। আমি তো কারুর সাথে কখনো প্রেম করিনি। শুভেন্দুকে বললাম, "হেঁয়ালিটা ছাড়। ব্যাপারটা জানতে হবে। তুই ভাল করে খবর নিয়ে দেখতো মেয়েটা আসলে কে? দেব চটকরে কারুর সাথে ভীড়বে না।"
শুভেন্দু আমার কথা মত কাজ করল। আমাকে বলল, "তুই এখানেই বস। আমি এখুনি আসছি।"
আমাকে লাইব্রেরী রুমে বসিয়ে রেখে ও চলে গেল। ফিরে এল আধঘন্টা পরে। আমাকে এসে বলল, এই দেব, ও তোকে ডাকছে, চল আমার সঙ্গে একটু তিনতলায় চল। ও সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বলল, "ওকে একটু ডাকবে? বলো, আমি ওর জন্য এখানে অপেক্ষা করছি।"
আমি বললাম, "মেয়েটা কে?"
শুভেন্দু বললো, "ওর নাম বিদিশা।"
আমি একটু বিরক্ত হলাম। শুভেন্দুকে বললাম, "কেন? আমি যাব কেন? কে না কে, বিদিশা আমাকে ডাকছে, আর ওর ডাকে আমাকে যেতে হবে? কিছু বলার থাকলে, ওকে বল, এখানেই আসতে। আমি তো লাইব্রেরী রুমেই বসে আছি।"
শুভেন্দু ঠিক বুঝতে পারল না। আমাকে বলল, "যা বাবা। মহা হ্যাপাতো। তুই তো বললি, আমাকে যেতে। ও তোকে কিছু হয়তো বলতে চায়। চল না আমার সঙ্গে। তাহলেই বুঝতে পারবি।"
আমি কিছুতেই গেলাম না। শুভেন্দুকে বললাম, "ছাড় ওকে। ছেড়ে দে। পরে দেখা যাবে। ওর যদি দরকার থাকে, ও নিজেই আমার কাছে আসবে। আমি যাব না।"
আসলে বিদিশাকে আমি খেলাতে চাইনি। কিন্তু কেন জানি আমার মনে হয়েছিল, কলেজের মেয়েগুলো সব বন্ধু হিসেবেই মেয়েগুলো সব ঠিক আছে। বেশী প্রেমের খেলা খেলতে গেলে মুশকিল। একেতো কলেজে এসে গান গেয়ে এমনই হীরো বনেছি, তাতেই পড়াশুনার বারোটা বাজছে। তারপরে আবার প্রেমে পড়লে, পড়াশুনা একেবারেই ডকে উঠবে। ভালো চাকরি পাওয়া তো দূর কেরানীর চাকরীও তখন জুটবে না কপালে। অতএব এসব বিদিশা টিদিশাকে যত দুরে রাখা যায় ততই মঙ্গল।
শুক্লা আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। সেই শুরু থেকে ক্লাসে ও আর আমি পাশাপাশি বসতাম। শুক্লা আমার কাছ থেকে ফিজিক্স এর নোট নিত। আমার ডায়েরীর পাতাগুলো উল্টে পাল্টে দেখত। ভালো কিছু চোখে পড়লে, সঙ্গে সঙ্গে টুকে রাখতো। এদিকে সৌগত বেশ কিছুদিন ধরেই শুক্লার সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছে। আমাকে বারবারই বলছে, "দেব তোকে বিরিয়ানি খাওয়াবো। চাউমিন খাওয়াবো। তুই যা খেতে চাইবি তাই খাওয়াবো। শুধু শুক্লাকে তুই আমার হয়ে একবার রাজী করিয়ে দে। তারপর দেখ, তোকে আমি কেমন খুশি করি।"
আমি সবই বুঝছি, দেখছি। কিন্তু শুক্লাকে বললেও শুক্লা কিছুতেই সৌগতকে পাত্তা দিচ্ছে না। একদিন কলেজে এসে শরীরটা আমার ভীষন খারাপ হল। গরমে প্রচন্ড বমি হচ্ছে। চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় অজ্ঞান হবার মত অবস্থা হল। সবাই চোখে মুখে জল দিয়ে আমাকে ক্যান্টিনে একটু ছায়ার তলায় নিয়ে গেল। শুক্লার কোলে মাথা রেখে আমি তখন শুয়ে আছি। শুক্লা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তাই দেখে বিদিশা বুঝে গেল, আমি বোধহয় শুক্লার সাথে নিশ্চই প্রেম করি। ওর আমার প্রতি জেদটা আরো বেড়ে গেল।
আমি বিদিশাকে সাতদিন আমার কাছে ভীড়তে দিইনি। লাইব্রেরীতে সেদিন ও আমাকে দেখার পর থেকে আমি দূরে দূরে থাকতাম। ক্যান্টিনে যখন গান গাইতাম, ও দূরে বসে শুনতো। কিন্তু আমি কিছুতেই ওর দিকে তাকাতাম না।
এরপরই এল সেইদিনটা। সেদিন ছিল কলেজে সরস্বতী পূজোর দিন। বিদিশাকে দেখলাম, ঠিক আমার পেছনেই এসে দাঁড়িয়েছে। একটা ঘি রঙের লাল পেড়ে শাড়ী পড়েছে। কপালে লাল টিপ। সরস্বতী পূজোয় মেয়েরা যেমন সাজে, তার থেকেও সুন্দর লাগছে ওকে। ওর হাসিখুশি মার্জিত চেহারায় একটা স্নিগ্ধতার ছাপ। লম্বা, ঈষৎ ভারী গড়ন আর একরাশ কালো চুল। আমাকে বলল, "তুমি খুব ভালো গাও। তোমার গান শুনেছি, আমি মুগ্ধ। আজকে তো সরস্বতী পুজো। আমাদের গান শোনাবে না?"
আমি ভাল করে একবার তাকালাম বিদিশার দিকে। ওকে কয়েক পলক দেখলাম। বিদিশার ঠোঁটের কোনে হঠাৎই এক চিলতে হাসি দেখলাম। মনে হল, মেয়েটা যেন কিছু প্রত্যাশা করে রয়েছে আমার কাছ থেকে পাবে বলে। গান শোনাব? না ওর আমাকে ভাললাগাটাকে মেনে নেবো, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার হাতে হঠাৎই একটা চিরকূট গুঁজে দিয়ে বিদিশা বলল, "আমি এখানে কিছু লিখে রেখেছি। তোমাকে দেবার জন্য। পড়ে দেখো।"
বলেই এক নিমেষে ছুটে পালিয়ে গেল ওখান থেকে।
আমি ওর গুঁজে দেওয়া কাগজটা হাতে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। একটু পরে শুভেন্দু এল ওখানে। আমাকে বলল, "কিরে? কি বলছিল বিদিশা? তোকে কিছু বলল?"
আমি বললাম, "না সেরকম কিছু না। শুধু একটা কাগজ গুঁজে দিয়ে গেল হাতে। বলল, তোমার জন্য লিখেছি, এটা পড়ে দেখো।"
শুভেন্দু বলল, "খুলে দেখ। নিশ্চই আমার মনে হচ্ছে এটা কোন প্রেমপত্র। বিদিশা তোকে মনে হয় এই চিঠির মাধ্যমেই প্রেম নিবেদন করেছে।"
।।তিন।।
এটা ঠিক, আজকাল যেভাবে প্রেম ভালোবাসা হয়, আমাদের সময় প্রেমটা এরকম ছিল না। তখন প্রেমটা দানা বাঁধতে একটু সময় নিত। একটু বোঝাপড়ার জন্য সময় লাগত। বিদিশা আমাকে চিঠিতে দুলাইন লিখেছিল, "আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমিও কি তাই?"
মেয়েটাকে যতবারই দেখেছি আমার মন্দ লাগেনি। রূপ আছে, গুনও আছে নিশ্চই। কিন্তু ওকে পাবার জন্য আমার মধ্যে তখনও ব্যাকুলতাটা আসেনি। সেইভাবে ছটফটানিটাও অনুভব করিনি। মনে হয়েছিল এতই কি সহজ? ও বলল, আমাকে মেনে নিতে হবে? সত্যি ভালবাসে কিনা একবার যাচাই করে নেওয়া তো দরকার।
শুভেন্দু বলল, "দেব, তুই না দিনকে দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছিস। আরে ও তোকে প্রেম নিবেদন করল। ওর ভালোবাসাটাকে অ্যাকসেপ্ট কর। কলেজে সবাই তোকে নিয়ে মাতামাতি করে বলে, তুই একটু দেমাকী হয়েছিস। দেখতো মেয়েটা কেমন সরল, সুন্দর। পুরুষেরা চিরদিন এমন নারীকেই ভালবেসে এসেছে যার স্নিগ্ধ কোমলতা ব্যাটাছেলেদের শান্তি দিতে পারে। বিদিশার মত মেয়ে আর একটা খুঁজে পাবি তুই?"
ঠিক ঐ মূহূর্তে কোন চিন্তা আমার মাথায় এল না। ভাবলাম,শুভেন্দু যা বলছে, তার ঠিক কতটা সত্যি? সুন্দরী নারী বিদিশা। আমার মধ্যে কি এমন ও দেখল, যে আমাকে ওর ভালো লেগে গেল।
শিয়ালদহর কাফেটোরিয়াতে পরের দিন আমরা সবাই বসে আছি। ঠিক ঐ সময়ে বিদিশাও ওখানে এসে উপস্থিত। শুভেন্দু, রনি, সৌগত আর আমি চারজনেই আমরা বিদিশার মুখের দিকে তাকালাম। ওরা তিনজনে বিদিশাকে দেখে খুব খুশি হল। কিন্তু আমি ভীষন অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।
শুভেন্দু বলল, "কি রে দেব? তুই কি ওকে খেলাচ্ছিস?"
আমি কোন জবাব দিচ্ছি না।
রনি কিছু জানে না, এমন ভাবে শুভেন্দুকে বলল, "কি হয়েছে রে শুভ? দেব কাকে খেলাচ্ছে?"
শুভেন্দু বলল, "ঐ যে মেয়েটাকে দেখছিস, দেবের খোঁজে এখানে পর্যন্ত চলে এসেছে। দেব ওকে খেলাচ্ছে।"
আমি রেগে গেলাম। বললাম, "কি যাতা বলছিস? আমি কাউকে খেলাচ্ছি না।"
রনি বলল, "কি হয়েছে ব্যাপারটা? আমাকে খুলে বল দেখি।"
শুভেন্দু, বিদিশার চিঠি দেবার ব্যাপারটা ওকে সব খুলে বলল। তাই শুনে রনি বলল, "ওরে দেব। এই ছিল তোর মনে? ঠিক আছে তুই যদি ওর সাথে লাইন মারতে না চাস, তাহলে বল, আমিই লাইন মারা শুরু করছি।"
বিদিশাকে আমাদের মাঝে রনিই ডেকে বসালো। ততক্ষণে শুক্লাও ওখানে এসে উপস্থিত। বিদিশা আমারই উল্টোদিকের চেয়ারটায় এসে বসেছে। ও মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে। আমি মুখ নিচু করে বসে আছি। রনি বলল, "এই যে বিদিশা, আমাদের এই বন্ধু মাননীয় শ্রী দেব মহাশয় কে দেখছো তো। ইনি খুব লাজুক প্রকৃতির। ইনি যখন গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন, তখন ইনার মুখ দিয়ে মধু ঝরে পড়ে। কিন্তু প্রেম নিবেদনে ইনি একটু কাঁচা। ইনার গলা দিয়ে তখন আওয়াজ বেরোয় না। কন্ঠস্বর রোধ হয়ে থাকে। জিভে আড়ষ্ঠতা এসে যায়। তুমি একে বাদ দিয়ে বাকী তিনজনের মধ্যে কাউকে পছন্দ হয় কিনা দেখোতো? দেব মনে হচ্ছে ঠিক খেলতে চাইছে না তোমার সঙ্গে।"
ইচ্ছে হচ্ছিল রনির পাছায় ক্যাঁত করে একটা লাথি মারি। ও বিদিশার সামনে আমাকে জেনেবুঝেই বেইজ্জ্বত করছে, সেটাও বুঝতে পারছি। কোন কথা না বলে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে বিদিশার হাতটা ধরলাম। ওকে বললাম, "এসো তো তুমি আমার সঙ্গে। এসব ফালতু ছেলেদের সাথে মুখ লাগিয়ে কোন লাভ নেই। চলো আমরা বরং আলাদা কোথাও গিয়ে বসি।"
বিদিশার হাত ধরে ওকে আমি ক্যাফেটেরিয়া থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছি। পেছনে একবার তাকিয়ে দেখলাম, রনি হাসছে। ওকে দেখে বাকীরাও হাসছে। রনি হাসতে হাসতে বলল, "এই তো গুরু জেগেছে। কেয়া বাত কেয়া বাত। এই না হলে দেব।"
শুভেন্দু হাসতে হাসতে বলল, "যাঃ এই বিদিশা এলো। আর অমনি তুই আমাদের ভুলে গেলি? তুই কি স্বার্থপর রে। দেব যাস না আমাদের ছেড়ে। তাকা, একবার তাকা। প্লীজ প্লীজ।"
আমরা বাইরে বেরিয়ে এসেছি। ওদের হাসির আওয়াজটা তখনও ভেতর থেকে আসছিল। বিদিশা একটু দূরে গিয়ে বলল, "তোমার চিঠিটা আজকেই পেয়েছি। শুভেন্দু আমার হাতে তোমার চিঠিটা দিয়ে বলল, দেব তোমাকে চিঠি দিয়েছে আর ক্যাফেটেরিয়াতে আসতে বলেছে। এই নাও দেবের চিঠি।"
আমি বললাম, "কই দেখি। চিঠি? কই আমি তো চিঠি লিখিনি তোমাকে।"
বিদিশা একটা কাগজ দিল আমার হাতে। বলল, "যাঃ তা হয় নাকি? তুমিই তো লিখেছ। নইলে কে আবার লিখবে?"
খুলে দেখলাম। তাতে আমারই নাম করে বিদিশাকে চিঠিটা লেখা হয়েছে,
বিদিশা,
আমি তোমার চিঠি পড়লাম। জানি না, তোমার ভালবাসাকে আমি কিভাবে গ্রহন করব? আমার মত অতি সাধারন একটা ছেলেকে তুমি ভালবেসে ফেলেছ। মুখ ফুটে আমিও এতদিন বলতে পারিনি। আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি বিদিশা। এ জীবনে কেন, জনমে জনমে আমি তোমাকে চাই। আমার ভালোবাসা তুমিও কি গ্রহন করবে? তাহলে আজকে ক্যাফেটেরীয়াতে অবশ্যই এসো। আমি ওখানে তোমার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করব। ইতি তোমার দেব।
চিঠিটা পড়ার পর আমি আর বিদিশাকে কিছু বলিনি। ওকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিলাম কলেজ স্কোয়ারে। দুজনে নিরিবিলিতে বসে অনেক্ষণ কথা বলেছিলাম। ফিরে এসেছিলাম সন্ধে হবার পর। তারপর পরপর দুদিন শুভেন্দু কলেজে আর আসেনি। যেদিন এসেছিল, ওকে খুব তাড়া করেছিলাম। কলেজ গেট থেকে একেবারে বড় রাস্তার মোড় পর্যন্ত। আমার তাড়া খেয়ে কান ধরে শেষ পর্যন্ত হাসতে হাসতে শুভেন্দু বলেছিল। মাফ করে দে বস। এটা তো করতেই হত। নইলে তোদের প্রেম পর্বটা যে শুরু হতে হতেও বাকী থেকে যেত। বিদিশারও আফশোস থাকত না। আর আমাদের তো নয়ই।
আসলে ওরা সবাই এটা জানত। শুভেন্দু সবাইকে বলে রেখেছিল। এমনকি শুক্লাকেও। সেদিন কাফেটরিয়াতে ওরা কেউ বুঝতে দেয়নি আমাকে। এমনকি রনিও নয়। আজ মনে পড়ে সেসব কথা। আর ভাবি বন্ধুত্বটা আমাদের এমনই ছিল।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
লেখক(Lekhak)-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereলেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment