CH Ad (Clicksor)

Tuesday, August 26, 2014

নিষিদ্ধ পল্লী_Written By Lekhak (লেখক) [৬ষ্ঠ খন্ড (চ্যাপ্টার ১৬ - চ্যাপ্টার ১৭)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




নিষিদ্ধ পল্লী
Written By Lekhak (লেখক)








।। ষোল ।।

নিষিদ্ধপল্লীর নিষিদ্ধ স্বাদের টানেই আসে সবাই সোনাগাছিতে। কিন্তু এ আমি কি করলাম? কামিনী যে বাবুয়ারই পত্নী। আর আমি কিনা ওকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম? কামিনী আমার জীবনটাকে নিয়ে খেলা করল শুধু। যেটা কোনদিনই সম্ভব নয়, মানুষ সেটা নিয়ে শুধু আশার আলো দেখে জীবনে। একটা দূঃস্বপ্নের মত এতদিন দিনগুলো কাটছিল আমার। সোনাগাছির মায়া ত্যাগ করতে পারিনি শুধু কামিনীরই জন্য, আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল আগুন নিয়ে খেলা করছি আমি। এ খেলার শেষ পরিণতি যে এরকমই ভয়ঙ্কর হয়। সর্বনাশের খেলার আজই পরিসমাপ্তি ঘটেছে জীবনে, সুদীপ বসুকে এখন নতুন করে বাঁচতে হবে আবার সোনাগাছির মোহ কাটিয়ে।

জায়গাটা আমার একদমই ভাল লাগছে না। কোনরকমে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে এলাম। রাখী আমাকে অনেকক্ষণ ধরে নজর করছিল, আমি আর তাকাইনি ঐ দিকে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে অনেকটা পথ চলে এসেছি। রাস্তায় দু একটা লোক আমার দিকে তাকাচ্ছে, আমার জামা ছিড়ে গেছে, যেন মনে হচ্ছে কারুর সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি করেছি আমি।

বেশ কিছুটা আসার পর একটা ট্যাক্সি পেলাম। প্রথমে ট্যাক্সিওয়ালা আমার ঐ দূরবস্থা দেখে আমাকে গাড়ীতে তুলতে চাইছিল না। ওকে অনেক করে বুঝিয়ে সুজিয়ে আমি গাড়ীতে উঠলাম। বললাম, "আমি বাড়ী যাব, আমাকে তাড়াতাড়ি আপনি বাড়ি নিয়ে চলুন।"

ভগবানের কি যে ইচ্ছা, কি যে মতিগতি, আমি কিছুই জানি না। জীবনটা যেন নানা রঙে মোড়া। লেগে যাওয়া কালিগুলো আমি চাইছি তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলতে, অথচ কে আমার জীবনে আবার নতুন করে রঙ লাগতে চলেছে আমি নিজেই জানি না।

মোবাইল ফোনটা ভাগ্যিস পকেটেই ছিল, গাড়ীতে চলতে চলতেই দেখলাম ওটা বাজতে শুরু করেছে, হাতটাকে অনেক কষ্ট করে প্যান্টের পকেটের মধ্যে ঢোকালাম। ব্যাথায় ভীষন টনটন করছে হাতটা। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে দেখলাম, সোমনাথদা ফোন করেছে আমায়।

লোকটার ফোনটা কিছুতেই ধরতে ইচ্ছে করছে না আমার। কি ভাববে? কেমন নাকানি চোবানি খেয়ে বিধ্বস্ত হয়েছি আমি। এটা আমার জীবনের চরমতম লজ্জ্বার ঘটনা। এ কথা কাউকে কষ্ট হলেও বলা যায় না। অথচ লোকটা আমার শুভাকাঙ্খির মতন বার বার ফোন করে যাচ্ছে আমাকে, আমি ফোনটা কিছুতেই রিসিভ করছি না।

অনেকক্ষণ ধরে ফোনে না পেয়ে সোমনাথদা একটা ম্যাসেজ পাঠালো আমাকে, "সুদীপ প্লীজ ফোনটা ধরো। আমি খুব চিন্তায় আছি তোমার জন্য।"

ম্যাসেজটা দেখতে পেয়ে আমি নিজেই ফোন করলাম, কি বলব বুঝতে পারছি না। এমন একটা পরিস্থিতি আমার নিজেরই খারাপ লাগছে।

আমি বললাম, "হ্যালো।"

সোমনাথদা ফোন ধরে বললো, "সুদীপ তুমি এখন কোথায়? কি হয়েছে তোমার?"

আমি বললাম, "আমি?....."

সোমনাথদা বললো, "হ্যা কোথায় তুমি? রাখী এইমাত্র ফোন করল আমাকে। বলল, তোমার বন্ধুকে দেখলাম, এখানে, রাস্তায় বারবার পড়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে, তুমি শিঘ্রী ফোন করো ওকে।"

মনে মনে বললাম, "রাখী? আবার সেই পুরোনো গলি? এ গলদা আমার চেনা হয়ে গেছে সোমনাথদা, এখানে সব মেয়েই একরকম।"

সোমনাথদা আবার বললো, "কি হয়েছে তোমার সুদীপ? আমার কথার জবাব দাও। কেউ মারামারি করেছে তোমার সঙ্গে?"

আমি তবু জবাব দিচ্ছি না দেখে সোমনাথদা বলল, "রাখী বলল, তোমার জামা নাকি পুরো ছিঁড়ে গেছে, তুমি বারবার লাইটপোষ্ট ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলে। কি হয়েছে সুদীপ? বলো কে মেরেছে তোমাকে? এই মূহূর্তে তুমি এখন কোথায়? সুদীপ....."

আমি তবু চুপ করে থাকি। সোমনাথদা নরম গলায় বললো, "সুদীপ?"

আমার মনটা খুব নরম, আঘাত পেলে ভেতর থেকে যেন দলা পাকিয়ে যায়, কথা বলার শক্তিটা আমি হারিয়ে ফেলি। কেউ আমাকে কষ্ট দিলে ভীষন ব্যাথা পাই। সোমনাথদাকে আমি বাবুয়ার দুর্ব্যাবহারের কথা বলতে পারছি না, শুধু একটা অস্পষ্ট আওয়াজ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে। অনেক কষ্ট করে বললাম, "সোমনাথদা আমার খুব ভুল হয়ে গেছে, আমি আর কোনদিন আসব না সোনাগাছিতে।"

গলাটা বেশ কয়েকবার কেঁপে গেল কথা বলতে বলতে, সোমনাথদা বলল, "সুদীপ এই অবস্থায় তুমি বাড়ী ফিরো না, মাসীমা কষ্ট পাবেন, তোমাকে দেখলে, উনি সন্দেহ করবেন।"

আমি যেন অতি অবুঝ। বললাম, "কষ্ট পেলে পাক, আমি আজ মাকে সব কথা বলে দেব।"

সোমনাথদা বললো, "পাগল হয়েছ তুমি? এমন কথা কেউ বলে? আমি আসছি তোমার কাছে, সব কথা শুনে তারপর যা করার করবো।"

সোমনাথদাকে বললাম, "আমি এখন ট্যাক্সিতে, বাড়ী ফিরছি, আমার মানিব্যাগ খোয়া গেছে, বাড়ী না ফিরলে আমি ট্যাক্সিভাড়া দিতে পারব না।"

সোমনাথদা বলল, "তুমি ট্যাক্সিটা নিয়ে চলে এসো উল্টোডাঙা ব্রীজের কাছে, আমি ঐখানেই তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। এসেছিলাম এখানে একটা কাজে, এইমাত্র রাখী আমাকে ফোন করল। তবে দোহাই তোমার, বাড়ী কিন্তু এই অবস্থায় কিছুতেই যেও না। আমি তোমার ট্যাক্সিভাড়া দিয়ে দেব।"

সোমনাথদার কথা শুনে ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, "গাড়ী উল্টোডাঙায় নিয়ে চলুন, ওখানে একজন আমার জন্য অপেক্ষা করছে।"

ট্যাক্সি যথারীতি পৌঁছে গেল উল্টোডাঙাতে। ব্রীজের নীচটায় সোমনাথ দা দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে পেয়ে ট্যাক্সি দাঁড় করালাম। সোমনাথদা ট্যাক্সিতে আমার পাশে উঠেই বলল, "এ কি অবস্থা হয়েছে তোমার! কে করল এমন?"

আমি কথা বলার শক্তিটা হারিয়ে ফেলেছি, তবুও অনেক যন্ত্রণা নিয়ে আসতে আসতে সব ঘটনাগুলো খুলে বললাম। সোমনাথদা আমাকে বলল, "তুমি চলো আমার বাড়ীতে। আজ রাত্রে মাসীমার ওখানে ফেরার দরকার নেই।"

গাড়ীতে যেতে যেতে সোমনাথদা বলল, "এরকম লোক বেশ্যাপট্টিতে প্রচুর আছে। স্ত্রীকে বেশ্যা বানিয়ে এরা আয়েশ ফুর্তী করে। বাবুয়া সেরকমই একজন। তোমাকে ঐজন্যই ও মেরেছে ওর ধান্দা চোপাট হয়ে যাবে বলে। সারাদিন এরা কোন কাজ করে না। বসে বসে খায়, মদ গেলে আর জুয়া খেলে। স্ত্রী শরীর বেচে অনেক পয়সা এনে দিচ্ছে ওদের আর কাজ করার দরকার কি? বেশ্যাপট্টিতে এদের কে বলে ভেড়ুয়া। সোনাগাছিতে এরকম ভেড়ুয়া অনেক আছে। অনেক সময় দেখা যায় দালালগুলোও বেশ্যাকে বিয়ে করে ফুর্তী লোটাচ্ছে, বেশ্যার হয়ে দালালগিরি করতে করতে ওরা বেশ্যাকেই বিয়ে সাধী করে নেয়। তোমার সেরকমই একজনের সাথে মোকাবিলা হয়েছে।"

সোমনাথদাকে বললাম, "কিন্তু কামিনী আমার সাথে এরকম কেন করল? ওর তো বোঝা উচিৎ ছিল।"

সোমনাথদা বলল, "বাবুয়াকে হয়তো ওর পছন্দ নয়। একে সুন্দরী, তার ওপর ভাল ছেলে দেখলে অনেকেই বন্দী খাঁচা থেকে উড়ে বেরোতে চায়। কামিনী হয়তো সেই কাজটাই করতে চেয়েছিল তোমাকে হাতিয়ার করে। বাবুয়া সব জেনে ফেলাতে, প্ল্যান সব ভেস্তে গেছে।"

সোমনাথদাকে বললাম, "খুব কষ্ট পেলাম সোমনাথদা, জীবনে এরকম ভুল আর কখনও করব না।"

সোমনাথদা বলল, "ভুল তো আমিই করেছি সুদীপ। এবার সে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত আমি করতে চাই।"

কথাটার মানে আমি বুঝিনি। একটু অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম, "কি রকম?"

সোমনাথদা বলল, "ঘরে চলো সুদীপ, আসতে আসতে সবই তুমি জানতে পারবে।"







।। সতেরো ।।

ট্যাক্সিটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে সোমনাথদা আমাকে ওর বাড়ী নিয়ে গেল। একা থাকে লোকটা। কোন বাঁধন নেই। প্রাণ খোলা লোকটার সাথে অনেক রাত্রি অবধি কথা বলে আমার মনটা যেন এবার কিছুটা হালকা হল।

সোমনাথদা বলল, "এবার শুয়ে পড়ো সুদীপ। কাল সকালে তোমার সাথে এখানে কেউ দেখা করতে আসবে।"

কে আসবে জানি না, অনেক জিজ্ঞেস করতেও সোমনাথদা কিছুতেই তার নামটা বলল না, আমার মনে হল কাল সকালটা আমার বাকী জীবনের প্রথম দিন, সব কিছু ভুলে আমাকে জীবনটা আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।

কামিনীর কষ্টটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে আমি শুয়ে পড়লাম। সকালবেলা ঘুম ভাঙল দেরীতে। সোমনাথদা নিজের হাতে চা বানিয়ে নিয়ে এল আমার কাছে, বলল, "গুড মর্নিং। এই তো তোমাকে এবার খুব ফ্রেশ লাগছে। নাও তাড়াতাড়ি চা টা খেয়ে হাত মুখ ধুয়ে নাও, সে আসছে।"

আমি বললাম, "কে আসছে সোমনাথ দা?"

সোমনাথদা বলল, "রাখী।"

আমি অবাক হয়ে বললাম, "রাখী এখানে? কি করে?"

সোমনাথদা হেসে বললো, "বেশ্যার জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে গেছে ও সুদীপ। রাখী সোনাগাছি ছেড়ে দিয়েছে চিরকালের জন্য।"

আমি এবার আরো অবাক গেলাম, বললাম, "কি করে এটা সম্ভব হল?"

সোমনাথদা বলল, "সবই ধরে নাও হয়েছে আমারই জন্য। রাখী যার জন্য কৃতজ্ঞ আমার কাছে। আমি চাইনি মেয়েটা ওভাবে নিষিদ্ধপল্লীতে পড়ে থেকে জীবনটা নষ্ট করুক। আবার নয়তো পড়বে কোনো ভেড়ুয়ার খপ্পরে, ওর জীবনটা এমনিতেই কষ্টে ভরা, আরও নষ্ট হবে।"

আমি বললাম, "এমন অসাধ্য সাধনের কাজটা তুমি করলে কেমন করে?"

সোমনাথদা বলল, "আমার কিছু টাকা গেছে এর জন্য। একেবারে খালি হাতে তো কোন মেয়েকে নিষিদ্ধ এলাকা থেকে বের করে নিয়ে আসা যায় না। যার কাছে গচ্ছিত রেখে এসেছিল ওর সেই আত্মীয়, তাকে দিয়েছি হাজার বিশেক। তবেই মুক্তি পেয়েছে রাখী।"

অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি সোমনাথদার দিকে। এমন উদার মনের মানুষ আমি জীবনে দেখিনি।

সোমনাথ দা বলল, "আমি এর মধ্যে রাখীর বাড়ীতেও ঘুরে এসেছি সুদীপ। রাখীর মায়ের সাথেও দেখা করে এসেছি। খুব ভাল মানু্য। শুধু আমাকে বলেছেন, মেয়েটার জন্য কষ্ট হয়, ভালবেসে একটা ছেলের খপ্পরে পড়ে কি কষ্টটাই না পেল জীবনে। ও এখন কোথায় আছে জানো?"

রাখীর মা'কে আমি সত্যি কথাটা বলতে পারিনি সুদীপ। চোখে জল চলে এসেছিল। সেদিনই ঠিক করেছিলাম, রাখীকে ঐ গলতা থেকে আমি বার করব খুব শীঘ্রই।

আমি সোমনাথদাকে বললাম, "রাখী এখন তাহলে কি করবে?"

সোমনাথদা আন্তরিকভাবে হেসে বললো, "ওর জন্য আমি একটা চাকরীও ঠিক করেছি সুদীপ। রাখী তো লেখাপড়াও জানে। এখন শুধু একটা বাসার প্রয়োজন। যেখানে ও থেকে চাকরীটা অনায়াসে করতে পারবে।"

আমার হাতে চায়ের কাপটা ধরা রয়েছে, মুখে না দিয়ে সোমনাথদার কথা শুনছি। সোমনাথদা বলল, "চা খেয়ে নাও সুদীপ। তোমার চা ঠান্ডা হচ্ছে।"

এরকম মানুষও কি আছে পৃথিবীতে? ভালবাসা নেই, শরীরি লালসা নেই, অথচ একটা লোক নিঃস্বার্থভাবে মেয়েটার জন্য কত কিছু করছে। আমাকে অবাক করে সোমনাথদা বলল, "রাখীর জন্য ভাল একটা পাত্রও খুঁজছি, সুদীপ তুমি ওকে বিয়ে করবে?"

আমি চোখ দুটো গোল গোল করে তাকিয়ে আছি সোমনাথদার দিকে। আমার কাছে এসে একটু আমার চোখের দিকে ভাল করে তাকিয়ে সোমনাথদা বলল, "হাজার হোক, ও তো কামিনী নয়? তুমি যাকে ভালবেসে পাগলের মতন শুধু ছুটে গেছ সোনাগাছিতে, তোমার ভালবাসার দাম যে দিতে পারিনি, তাকে ভুলে পারবে না এই মেয়েটাকে একটা নতুন জীবন ফিরিয়ে দিতে? রাখীকে তুমি ভালবাসতে পারো নি হয়তো আমারই ভুলে, কিন্তু ও এমনই মেয়ে, যাকে সত্যি কারে ভালবাসা যায়।"

আমি কি শুনছি আমি জানি না। অথচ সোমনাথদা পাগলের মতন শুধু সেধে যাচ্ছে আমাকে।

সোমনাথদা বললো, "আমি জানি সুদীপ তোমার মনের কি অবস্থা। কিন্তু দেখো, ঐ একটা মেয়ে, শুধু তোমার কথা চিন্তা করেই আমাকে ফোন করেছে, কাল রাতে যখন বললাম, তুমি আছো আমার বাড়ীতে, আমাকে বলল, ভালই হল, তোমার বাড়ী যাচ্ছি, তোমার বন্ধুর সাথেও তাহলে দেখা হয়ে যাবে। ওনার এই মূহূর্তে মনের শান্তিটা শুধু দরকার। পাশে দরকার এমন কাউকে, যে সত্যি ওনাকে ভালবাসবে।"

একটু চুপ করে থেকে আবার সোমনাথদা বলল, "রাখী ইচ্ছে করলে কামিনীর থেকেও তোমাকে অনেক বেশী ভালবাসতে পারে সুদীপ। এ ভালবাসা নির্ভেজাল, খাঁটি বিশুদ্ধের মতন। ওর শুধু ভয় হয়, একবার ভুল ও করেছিল জীবনে, আবার যদি সেরকম হয়। তাহলে হয়তো বাঁচতে পারবে না আর জীবনে।"

এবার আমার হাতটা ধরে সোমনাথদা বলল, "আমি তোমাকে বলেছিলাম না ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। আমার ভুল এটাই, আমি তখনও বুঝিনি তুমি কোন বেশ্যাকে ভালবাসতে পারো। রাখীর ঘরে তোমাকে নিয়ে গিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু রাখীর সাথে তুমি যৌনসংসর্গ করো আমি চাইনি। সেদিন যদি বুঝতাম, তুমি কারুর প্রেমে পড়তে চাইছ? তাহলে কি....."

সব শুনে বললাম, "সোমনাথদা, তাই বলে কি রাখী রাজী হবে? ও তো আমার আর কামিনীর ব্যাপারটা শুনেছে নিশ্চই।"

সোমনাথদা বলল, "ওর জীবনেও তো এর থেকেও খারাপ ঘটনা ঘটেছে, সবকিছু তুমি যদি মানিয়ে নাও, তাহলে ও কেন পারবে না?"

আমার চোখে মুখে এবার ভেসে আসছিল কাল রাতে রাখীর দেখা সেই মুখটা, কি করুন মুখ করে চিন্তিত অবস্থায় আমার জন্য বারান্দাতে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল রাখী, অথচ আমি একবারের জন্যও ফিরে তাকাই নি ওর দিকে। মেয়েটা সত্যি ভাল নইলে এমন......

বলতে বলতেই সোমনাথদার বাড়ীর বাইরে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো। সোমনাথদা বলল, "রাখী এসে গেছে, দাঁড়াও ওকে নিয়ে আসি ভেতরে। আমার বাড়ীতে আগে তো কোনদিন আসেনি, মুখটা না দেখালে চিনতে অসুবিধে হবে।"

চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে থ মেরে বসে আছি, ভাবছি আমার শরীরে তাহলে কি এক অন্য নারীর ছোঁয়া লাগতে চলেছে, এ নারী ঐ সোনাগাছিরই মেয়ে, তার হাত ধরেই ভালবাসাকে আবার ফিরে পেতে চলেছি? আমি জানি না।

ঘরের পর্দাটা সরিয়ে সোমনাথদা ঢুকলো, পেছনে পেছনে রাখী। একটা হলুদ রঙের তাঁতের শাড়ী পড়েছে, মিষ্টি রাখীকে আরও মিষ্টি দেখাচ্ছে।

আমার পাশে বসে রাখী বলল, "কেমন আছেন ভালো?"

আমি মাথাটা নাড়লাম, ঘাড়টা নিচু করলাম। সোমনাথদা বলল, "রাখী বলছিল, তোমাকে খোঁজার জন্য ও নাকি লোক পাঠিয়েছিল কালকে। অনেকক্ষণ পরে খুঁজে এসে সে বলেছে, না উনি নেই, বোধহয় চলে গেছেন।"

আমি ভাল করে তাকাতেই পারছি না রাখীর দিকে। সোমনাথদা বলল, "সুদীপ পাস্ট ইজ পাস্ট। পেছনের দিকে ভেবে কোন লাভ নেই। যা হয়েছে ভুলে যাও। আমরা দুজনেই আছি তোমার পাশে।"

রাখীর মুখের দিকে তাকালাম, দেখলাম ওর মুখে মিষ্টি হাসি, যে হাসির মধ্যে কোন ছল নেই, পুরুষমানুষকে প্রলুব্ধ করার কোন বাসনা নেই।

রাখী আমাকে বলল, "কষ্ট পেয়েছেন বলে আমার সাথেও কথা বলবেন না? বা রে? আমি যে এলাম আপনারই জন্য।"

এই রাখীই আমার লজ্জাটা কাটিয়ে দিয়েছিল একদিন, কামিনীর শরীরি প্রেমে পাগল হয়ে তাড়নার মতন ছুটে গেছি তারপর থেকে। এতদিন বাদে রাখীকে দেখতে পেয়ে লজ্জাটা যেন নতুন করে আবার ফিরে এসেছে। মুখটা তুলে বললাম, "আমি জানি, আজ আপনার নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে।"

আমাকে অবাক করে রাখী বলল, "কামিনীকে ভালবেসে ফেলেছিলেন, আবার কি কাউকে ভালবাসতে পারবেন?"

সত্যিই কি পারবো? এর উত্তর আমি জানি না। সোমনাথদা বলল, "রাখী কিন্তু আবার নতুন করে কারুর ভালবাসা পেতে চায়। যদি তুমি সুদীপ রাজী থাকো।"

প্রাণ খোলা লোকটার কথা শুনে আমাদের দুজনেরই অস্বস্তি বেড়ে গেছে, আমি গম্ভীর, রাখীও গম্ভীর। সোমনাথদা দুটো কান ধরে বলল, "সরি বাবা, আমার খুব ভুল হয়ে গেছে। আর বলব না।"

রাখী আর আমি দুজনেই হাসতে লাগলাম সোমনাথদার কথা শুনে। ওর সাথে এরপরে আমার অনেক কথা হল। রাখী কোথায় চাকরী পেয়েছে সব জানলাম। ওর বাড়ীর গল্প, মায়ের কথা, অনেক্ষণ ধরে শুনলাম। কথা বলতে বলতেই রাখী আমার হাতটা একটু ধরলো, যেন মনে একটু শক্তি দেওয়ার মতন। আমার হাতের ওপরে রাখীর হাতের কোমল স্পর্শ। আমিও ওর হাতে হাত রাখলাম। রাখী আমার চোখের দিকে চেয়ে বলল, "আমি খুব খারাপ মেয়ে সুদীপ, পারবে কি আমায় ভালবাসতে?"

ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখটা ওর ছলছল করছে। ভালবাসার কাতর প্রার্থনা একটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে যাওয়া লোকটাকেই করছে। ওর মুখটা দু হাত দিয়ে ধরলাম, কিছু বলতে চেষ্টা করলাম, রাখী বলল, "কাল সারারাত ঘুমোতে পারিনি তোমাকে দেখে, সোমনাথদাকে দশদিন আগেই বলেছিলাম, তোমার কথা। আমাকে বলল, সুদীপ এখন আর ফোন করে না, দেখাও হয় না। এই কদিনে ও কেমন পাল্টে গেছে, কেন জানি। আমার তো সেইদিনই তোমাকে ভাল লেগে গিয়েছিল সুদীপ, সোমনাথদাকে অন্তর থেকে বলেছিলাম ভাল লাগার কথাটা, সোমনাথদা হয়তো সেভাবে তোমাকে পায়েনি বলেই বলতে পারেনি আমার মনের কথাটা।"

ভাবতে পারছিলাম না, একই দিনে দুটো মেয়েই আমাকে এক সাথে ভালবেসে ফেলেছিল, অথচ একজনের ভালবাসাকে বুঝতে বুঝতে আমার অনেক দেরী হয়ে গেল।

আবেগে হঠাৎই রাখীর ঠোঁটের ওপর নেমে এলো আমার ঠোঁট। আমি ওর সাথে তখন চুম্বনে আবদ্ধ হয়ে গেছি। ভীষন ভালবাসার খেলা চলছে, ঠিক এই মূহূর্তে সোমনাথদা কিন্তু ঘরের ভেতরে আর নেই।




সমাপ্ত





কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





লেখক(Lekhak)-এ লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

লেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment