আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
সিরিজা - একটি উপন্যাস
Written By Lekhak (লেখক)
Written By Lekhak (লেখক)
।। উনত্রিশ ।।
সন্ধে হওয়ার একটু আগেই দিবাকর চলে গেছে সিরিজাকে নিয়ে। দুজনকে এগিয়ে দিতে রজত চলে এসেছিল রাস্তার মোড়ে। সিরিজাকে ছাড়ার আগে রজত আর উপভোগ্য আদরটুকু করতে পারেনি ওকে। মনের মধ্যে আফশোসটা নেই, কিন্তু দোলনকে নিয়ে দুশ্চিন্তা একটা রয়ে গেছে রজতের মনে মনে। সিরিজা থাকাকালীনই যে স্পর্ধা দেখিয়েছিল দোলন, ওর অনুপস্থিতিতে সেটা যে কোন পর্যায়ে যাবে, তা এখনও রজতের অজানা। মুখে যতই বলুক, রজতের কিছুটা হলেও একটা আশঙ্কা রয়েছে দোলনকে নিয়ে। দিবাকরকে যতই ও বোঝাক, দোলনকে ও ভয় পায় না। বলে দেখানো ব্যাপারটা যতটা সহজ, করে দেখানো কাজটা মোটেই সহজ নয়।
ঘরে ফিরেই দেখলো, দোলন একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছে। টেবিলের তলায়, কোথায় জানি ওটা রাখা ছিল। দোলন ম্যগাজিনটা টেনে হাতড়ে বার করেছে। যৌন ম্যাগাজিনটা দোলন চোখ বড় বড় করে দেখছে, রজত একটু অস্বস্তি বোধ করলো। দোলনকে বললো, "ওটা কি বার করেছো? রেখে দাও। সব কিছু ওভাবে দেখতে নেই।"
দোলন যেন ভ্রুক্ষেপ করলো না রজতের কথাটায়। ওর হাত থেকে ম্যাগাজিনটা কেড়ে নিয়ে রজত বললো, "এসব কে দেখতে বলেছে তোমাকে? আমাকে জিজ্ঞেস না করে কোন কিছুতে হাত দেবে না বুঝেছো?"
ম্যাগাজিনটা হাতে নিয়ে চলে এল শোবার ঘরে। দোলনও চলে এল রজতের পিছু পিছু।
পেছনে ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে রজত বললো, "কি ব্যাপার? কি চাই তোমার?"
দোলন বললো, "সিরিজা কি কালকে সকালেই চলে আসবে আবার?"
রজত একটু বিরক্ত। মুখে বললো, "হ্যাঁ কালই তো আসবে। তবে সকালে নয়। একটু বিকেলের দিকে। কেন তোমার কি অসুবিধা? বলো আমাকে।"
-- "না তেমন কিচ্ছু নয়। এমনি জিজ্ঞেস করলাম।"
আলনাতে রজতের গেঞ্জী পায়জামা, সব ঝুলছে। প্যান্টটা ছেড়ে ড্রেসটা চেঞ্জ করতে হবে। দোলনকে মুখের ওপরেই বললো, "তুমি একটু ও ঘরে যাও দোলন, আমি জামাকাপড় ছাড়বো।"
বলা সত্ত্বেও অসভ্যের মতন দাঁড়িয়ে রইলো দোলন। রজত বেশ বিরক্ত হয়েই বললো, "কি হলো? বললাম না ও ঘরে যেতে। আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।"
-- "আমি কি এখন চা করবো?"
রজত বললো, "না, দরকার নেই।"
দোলন মাথায় একটা হাত দিয়ে চুলকোতে লাগলো। রজত বললো, "কি হলো?"
-- "না মানে আমার খেতে ইচ্ছে করছে। তাই ভাবলাম, তোমার জন্যও বানিয়ে দিই কিনা....."
রজত বললো, "তোমার খেতে ইচ্ছে করলে, তুমি বানিয়ে খাও। আমার জন্য তোমাকে চা বানাতে হবে না।"
-- "চা বানিয়ে আমি একা খাবো? সিরিজা থাকলে তো তখন তুমিও খেতে।"
- "ওফ আবার সেই এক কথা। সিরিজার ভূত চেপেছে তোমার মাথায়। বলছি তো খাবো না। শুধু শুধু আমায় বিরক্ত করছো।"
একটু রাগ দেখিয়ে দোলন বললো, "ঠিক আছে, আমিও খাবো না তাহলে। সিরিজা না আসা অবধি এ বাড়ীতে আর চা হবে না।"
রাগ দেখিয়ে আবার পাশের ঘরে চলে এল দোলন। রজত দরজাটা আলতো করে ভেজিয়ে প্যান্টটা ছেড়ে এবার পাজামা গলাতে লাগলো আসতে আসতে। সবে মাত্র পাজামাটা গলিয়েছে। প্রায় দু তিন সেকেন্ডের ব্যবধানেই দোলন আবার ভেজানো দরজাটা ঠেলে ঢুকে পড়লো রজতের শোবার ঘরে।
প্রায় চমকে উঠেছে রজত। আর একটু হলেই ওর দৃঢ় আকারের লিঙ্গটা দোলন দেখতে পেত সচক্ষে এই ঘরের মধ্যেই। কুটকুটানির কি শেষ নেই? সিরিজা যাওয়ার পরেই খেলা শুরু করে দিয়েছে এখন থেকেই।
- "কি হলো? তোমাকে বললাম না ও ঘরে যেতে। আমাকে জিজ্ঞেস না করে যখন তখন এ ঘরে ঢুকছো কেন? ঢুকবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।"
রজতের বকানিকে কোনরকম গ্রাহ্য না করেই দোলন বললো, "সিরিজা তো রান্না করেই গেছে, রাতের রুটিটা খালি করতে হবে। আমি কি করে দেব? তুমি কটা রুটি খাও গো রাত্রে?"
রজত বললো, "আমি কিছু খাবো না। তুমি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ো।"
দোলনের যেন পছন্দ হয় নি রজতের উত্তরটা। মুখখানা একটু ব্যাজার মত করে ও বললো, "মানে? খাবে না কেন?"
- "খাবো না। তাতে তোমার কি? তোমার এত কি অসুবিধে হচ্ছে দোলন? আমি কি খাবো না খাবো, সেটাও কি তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে না কি দোলন? সেই থেকে আমাকে বিরক্ত করছো। বলছি তো খাবো না। তুমি রাত্রে যেকটা রুটি খাও। নিজে বানিয়ে নিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়ো। আমাকে বিরক্ত করতে এসো না। আর হ্যাঁ এখন ও ঘরে গিয়ে বসো। আমাকে ডিস্টার্ব কোরো না। আমি কিছুক্ষণ এখন ঘুমোবো। কেউ এলে আমাকে জিজ্ঞেস না করে দরজা খুলবে না। রাতে তোমার খাওয়া হয়ে গেলে আমাকে একবার জাগিয়ে তুলবে। ও ঘরে তোমার শোবার ব্যবস্থাটা করে দেব। তারপর আমি এসে আবার এ ঘরে শোব।"
একটু বেশ করুন মত করে মুখটা, দোলন বললো, "তুমি কি এ ঘরে একা শোবে?"
রজত বললো, "হ্যাঁ। একাই তো শোব। কেন?"
-- "আমি ও ঘরে আলাদা শোব?"
- "তা ছাড়া কি? তোমাকে কি রাত্রে আমি পাশে নিয়ে শোব দোলন? কি বলতে চাও তুমি দোলন?"
রজতের কথার উপযুক্ত কোন জবাব না দিতে পেরে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো দোলন। বুঝতেই পারছিল, সিরিজা নেই, কিন্তু রজত যেন মানসিক ভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দোলনের চক্করে পা ফাঁসাতে ও একেবারেই নারাজ। কিছুতেই ওর মায়াবী ছলনার জালে পড়তে রাজী নয়। সিরিজাকে যেন রজত কথা দিয়েছে, আমি দোলনকে যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখব, আজকের রাতটুকুর জন্য। কিছুতেই ওকে নিজের কাছে ভীড়তে দেব না। তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে দিবাকরের বাড়ী যেতে পারো এবার। তোমার আর কোন চিন্তা নেই।
ট্যাক্সি থেকে দিবাকর নামল সিরিজাকে নিয়ে। ভাড়াটা মিটিয়ে সিরিজাকে বললো, "এসো সিরিজা, এবার আমার কুটীরে পদার্পন করো।"
বাচ্চাটাকে সাথে নিয়ে এসেছে সিরিজা, দোলনের ওপর ভরসা না করেই। দিবাকরের পিছন পিছন ও ঢুকলো দিবাকরের একতলার বাড়ীতে। দরজার তালা খুলল দিবাকর। সিরিজাকে বললো, "এসো ঢোকো। কাল সকাল অবধি তুমি এখন আমার জিম্মায়। এখানে তোমার আর কোন চিন্তা নেই।"
বাচ্চাটাকে একজায়গায় শুইয়ে সিরিজা দিবাকরের ঘরের ভেতরটা ভালো করে দেখতে লাগলো। একা থাকে লোকটা। অথচ নিজের ঘর দোর কেমন সাজানো গোছানো অবস্থায় রেখেছে। কোথাও কোন জায়গা অগোছালো নয়। একেবারে পরিপাটি সুন্দর করে সাজানো।
সিরিজা বললো, "তুমি একা থাকো, তোমাকে দেখে মনেই হচ্ছে না। এত সাজানো গোছানো ঘরটা। বউ এসে দেখলে তো অবাক হয়ে যাবে।"
দিবাকর একটু হাসল। বললো, "আগে বউ তো আসুক। তারপর দেখা যাবে। আমার কপালে সেরকম আর কেউ জুটলো কোথায়?"
সিরিজা বললো, "তোমার এ বাড়ীতে কোন মেয়েমানুষ আসে নি আগে?"
দিবাকর বললো, "মেয়েমানুষ?"
- "রেশমী এসেছিলো কোনদিন?"
সিরিজার মুখের দিকে তাকিয়ে দিবাকর বললো, "একদিনই এসেছিল। তাও প্রথম দিকে। তারপর যখন রজতের সাথে মেলামেশা শুরু করলো, আর আসেনি আমার এখানে।"
একটু হেসে সিরিজা বললো, "আর এখন যদি আবার আসে?"
-- "সবই তোমার ওপর নির্ভর করছে সিরিজা। তুমি কিভাবে ওকে রাজী করাবে, তার ওপর। হলে সব তোমার কৃপায় হবে।"
সিরিজা বললো, "সেদিন আসতে খুব বেশি দেরী নেই। আর তো কিছুদিন বাদেই আমাদের দেখা হচ্ছে। এবার রেশমী তোমার বউ হবে। দিবাকরদার তখন আর কোন চিন্তা থাকবে না।"
মুখটা একটু নীচু করে নিল দিবাকর। যেন ক্ষনিকের একটা লজ্জা। শহরের একটা পোড় খাওয়া লোককে গ্রামের মেয়েটা লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে, প্রেম ভালোবাসার অনুভূতিগুলো সব এরকমই হয়। ও বললো, "আমি আশায় দিন গুনছি, দেখি কি হয়?"
বাচ্চাটাকে যেখানে শুয়েছিল, সিরিজা ওর পাশেই বসতে যাচ্ছিলো, দিবাকর ওর শোবার বিছানাটা দেখিয়ে বললো, "ওখানে নয়, তুমি এখানে বসো সিরিজা। এখানে। রাত্রে বাচ্চাটাকে নিয়ে এখানেই শোবে তুমি।"
সিরিজা বললো, "বারে, তুমি কোথায় শোবে তাহলে?"
দিবাকর বললো, "আমার শোবার ব্যাপারে তোমাকে চিন্তা হবে নাকি? দূর। আমি ঠিক কোথাও শুয়ে রাতটা কাটিয়ে দেব।"
একটু হেসে সিরিজা বললো, "এক সাথে শুলে কি হয়? তোমার লজ্জা করছে এখনও?"
দিবাকর মাথাটা চুলকে বললো, "তুমি এখন রজতের আমানত। তোমার পাশে আমি শুলে ওর সাথে বেইমানি করা হবে। ব্যাচারা দোলনকে নিয়ে এত টেনশনে পড়ে গেছে আমি যেচে আবার ওর টেনশন বাড়াই?"
বলেই একটু হেসে ফেললো দিবাকর।
- "বন্ধুকে তো খুব ভালোবাসো। তোমার বন্ধুও তোমাকে খুব বিশ্বাস করে। নইলে আমাকে কি তোমার সাথে পাঠাতো?"
-- "আমি জানি সিরিজা। রজত আমাকে কত বিশ্বাস করে। তার মর্যাদা দিতে জানি আমি। একবারই ভুল হয়ে গিয়েছিল, আর ভুল হবে না আমার।"
সিরিজা বললো, "তোমাকে নিয়ে তো ওর চিন্তা নেই। চিন্তাটা দোলনকে নিয়ে। কি যে কান্ডকারখানা শুরু করেছে। আজ রাতে না আবার উল্টোপাল্টা কিছু করে না বসে।"
দিবাকর বললো, "তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো সিরিজা। রজত যেভাবে আমাকে আশ্বাস দিয়েছে, ও কিছুই করতে পারবে না। দোলনকে রজত ভীড়তেই দেবে না আজকে। আমি বলছি, দেখে নিও, আমার কথা মিলিয়ে নিও, তাই হবে।"
সিরিজা তবু যেন একটু চিন্তিত, মনের ভাবটা গোপন না করে বললো, "আমাকেও ভরসা দিয়েছে রজত এ ব্যাপারে। আমি তো ওকে নিয়ে ভাবছি না। ভাবছি দোলনকে নিয়ে।"
দিবাকর সিরিজাকে সান্তনা দিয়ে বললো, "দূর কিচ্ছু হবে না। তুমি খামোকা উতলা হচ্ছো। কালকে আমার সাথে আবার ও বাড়ী যাবে, দেখবে সব ঠিক আছে আবার আগের মতন।"
সিরিজা বললো, "আমরা এখানে এসে গেছি, ওকে একবার ফোন করে দেখ না, কি করছে এখন?"
দিবাকর রজতকে লাইনটা মেলাতেই যাচ্ছিলো। সিরিজা বাধা দিয়ে বললো, "না না, থাক থাক। এখন নয়। ফোনটা বরং একটু পরের দিকে কোরো। রাত্রে শোবার সময়।"
দিবাকর বললো, "আমি না করলেও, ও ঠিক করবে। একটু দেখে নিই। তারপরে না হয় করবো।"
সিরিজার দিবাকরের বিছানায় এবার একটু গড়াতে ইচ্ছে করছে। ওকে দিবাকর বললো, "আমার অবস্থাটা জানো তো? অনেকটা রজতের মতই। রান্নাটা ঘরে সবসময় করতে পারি না। হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে হয়। কাল ঐ খাবার খেয়েই যত বিপত্তি। এখন ভাবছি অল্প করে কিছু রাতের খাবার কিনে নিয়ে আসি সামনের হোটেলটা থেকে। তুমিও তো খাবে। আমি আসা না পর্যন্ত তুমি ততক্ষণ না হয় খাটে শুয়ে একটু বিশ্রাম করো। আমি এক্ষুনি আসছি। আর হ্যাঁ। আমার মোবাইল ফোনটাও রেখে গেলাম, তোমার কাছে। রজত ফোন করলে, ওর সাথে কথা বোলো।"
দরজাটা খুলে দিবাকর বেরোতেই যাচ্ছিলো,সিরিজা পেছন থেকে হঠাৎ ওকে ডাক দিল। - "শোন দিবাকরদা।"
দিবাকর দাঁড়াল, বললো, "বলো কি বলছো?"
সিরিজা বললো, "তুমি কিন্তু আমার পাশেই শোবে দিবাকরদা। তোমার অত ভয় নেই। বিশ্বাস করে একা একা তোমার বাড়ীতে চলে এলাম। আর এইটুকু বিশ্বাস করতে পারবো না তোমাকে?"
সিরিজার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে আর দাঁড়াতে পারলো না দিবাকর। বললো, "ঠিক আছে, ঠিক আছে, ও দেখা যাবে পরে। আমি খাবার টা তাড়াতাড়ি নিয়ে আসি বরং দোকান থেকে। তোমাকে অভূক্ত রেখে দিলে রজত আমার ওপর রাগ করবে আবার।"
ঘর থেকে বেরিয়েই খুব কাছেই খাবারের দোকান। দিবাকর পা চালিয়ে জলদি হেঁটে দোকানটার কাছে গিয়ে পৌঁছল। একটা বউ চাটু তে গরম গরম রুটি সেঁকছে বাইরের দিকটায় বসে। ভেতরে একটা জোয়ান লোক খদ্দেরদের তদারকি করছে। বাচ্চা দুটো ছেলে খাবার পরিবেশন করছে কাস্টমারদের ফরমাইশ অনুযায়ী। সামনে বসা বউটা দিবাকরকে বললো, "কি দিবাদা? কি লাগবে বলো? রুটি মাংস?"
স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে খাবারের হোটেলটা চালায়। এই মহল্লাতে অনেক পুরোন বাসিন্দা। দিবাকরকে অনেক দিন ধরেই চেনে। মাঝে মাঝে এখান থেকে খাবার নিয়ে যায় দিবাকর। বউটা দিবাকরকে বললো, "রুটির সাথে মাছ নেবে? না মাংস নেবে?"
দিবাকর বললো, "যেটা ভালো হয় দাও। মাছ ভালো থাকলে মাছই দাও। নয়তো মাংসের কারী। সাথে তরকারী কিছু আছে?"
বউটা বললো, "হ্যাঁ ভালো আলু পটলের তরকারী হয়েছে। নেবে?"
দিবাকর বললো, "দাও তাহলে। কত তোমার রুটি তরকারী আর মাংস?"
বউটা বললো, "রুটি কটা নেবে তো বললে না?"
- "আমার একার আর কটা লাগবে? দাও ঐ পাঁচটা মতন।"
বউটা দিবাকরের মুখের দিকে একটু অবাক চোখে তাকালো। বললো, "সেকি, তোমার সাথে যে এক মহিলাকে দেখলাম। বিয়ে করেছো বুঝি? দুজনের জন্য কেবল পাঁচটা?"
একটু হকচকিয়ে গেল দিবাকর। বললো, "তুমি আবার কখন দেখলে?"
-- "ঐ যে ট্যাক্সি থেকে যখন তোমরা নামলে। সাথে তো একটা বাচ্চাও দেখলাম। কবে তুমি বিয়ে করলে? আর কবে তোমার বাচ্চা হল গো? আগে তো দেখিনি কোনদিন।"
বউটার নাম অনীমা। দিবাকর বললো, "অনীমা তুমি পারো বটে। মেয়েছেলে সাথে থাকলেই কি আর বউ হয়ে যায় নাকি? আরে ও তো আমার বন্ধুর বউ। বন্ধুও অফিস ডিউটি করে আসবে আজকে। একটু বেশি রাত হবে। বউ তাই একটু আগে চলে এসেছে।"
বউটা শুনে বললো, "ও তাই? আমি বুঝতে পারিনি। ভাবলাম, তোমার তাহলে এতদিনে একটা হিল্লে হল। যা বাবা। বন্ধুর বউ যখন তাহলে আর শুনে কি হবে?"
দিবাকর হাসছিল অনীমার কথা শুনে। বললো, "না তোমার ঠেলায় আমাকে এবার বিয়েটা করতেই হবে দেখছি। নইলে রেহাই নেই।"
ভেতরে তদারকি করা জোয়ান লোকটা তখন অনীমা আর দিবাকরের কথা শুনে বেরিয়ে এসেছে। দিবাকরকে বললো, "আমার বউ তোমার কথা সবসময়ই বলে। তুমি এখান থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাও। ও প্রায়ই বলে, দিবাকরদার জন্য আমার খুব চিন্তা হয়। একটা যদি বিয়ে করে ফেলত? কষ্ট করে দোকান থেকে খাবার নিয়ে যাওয়া। বউ না জুটলে ব্যাচারীর বড় কষ্ট। নিজের খদ্দেরকে এভাবে হাতছাড়া করতে কে চায়? আমরা দুজনেই তোমার কথা খুব ভাবি। দোকানদারি চালাই কিন্তু অপরের দূঃখ কষ্ট আমরাও বুঝি।"
অনীমার হাত থেকে মাংস রুটি আর তরকারীর প্যাকেটটা নিয়ে দিবাকর বললো, "কত হয়েছে বলো তো? আরে আমার যেন বিয়ে করলেই সব সমস্যা মিটে যাবে। এখানে তোমার দোকানের এত ভালো রান্না। অত সহজে আমি ছেড়ে দেব? বিয়ে করেও রোজ খাবার নিয়ে যাবো এখান থেকে। অত সহজে এখানে আসা আমি ছাড়ছি না।"
খাবারের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দিবাকর এবার রওনা দিল ঘরে ফেরার দিকে। বাড়ী ফিরে সিরিজাকে এবার জিজ্ঞেস করতে হবে, রজত ফোনটা করেছিল কিনা?
দিবাকর বেরিয়ে যাবার পর সিরিজা কিছুক্ষণ মোবাইলটা হাতে ধরে বসে রইলো যদি রজত এখুনি ওকে ফোন করে। মিনিট দশেক পরেও ফোন এল না। সিরিজা ভাবল, হয়তো পরে করবে রজত। দোলনকে নিয়ে স্বাভবিক ভাবেই খুব দুশ্চিন্তায় আছে। কি করে মেয়েটাকে সামাল দেবে, সেটাই হয়তো ভাবছে। সিরিজা ভাবল, ঠিক মনে করে ওকে ফোন করবে রজত। ওর ভুল হবে না।
ঘরে বসে ওর মনে পড়ছিল, দোলনের সেই দূঃসাহসিক, বেহায়াপনা কথাগুলো। কি অবলীলায় নির্লজ্জ্বের মতন সিরিজাকে বলে যাচ্ছিলো রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। একবারও ভাবছিল না, যা বলছে, সেটা কখনই সম্ভব নয়। এক পুরুষ, দুজন মেয়েমানুষকে একসাথে প্রেম ভালোবাসা আর শরীরি খেলা খেলবে, সেটা কখনই সম্ভব নয়।
কামের জ্বলুনিতে এতটাই পাগল হয়ে গেছে ছুঁড়ীটা। বলে কিনা দাদাবাবুর ভাগ আমাকেও দাও।
রেগে মেগে উঠেছিল সিরিজা। দোলনকে বলেছিল, "ভাগ মানে? কিসের ভাগ?"
-- "তুমি যে দাদাবাবুকে নিয়ে সোহাগ করছো, তার ভাগ চাই আমার।"
গা পিত্তি জ্বলে উঠেছিল সিরিজার। দোলনকে বলেছিল, "কি বলতে চাস তুই? ভাগ দেবো মানে?"
বদ ছুঁড়ী দোলন, অত সহজে ভালো হবার মেয়ে নয়। সিরিজাকে নির্লজ্জ্বের মতন বললো, "কিছুই বুঝতে পারছো না? তুমি যেন ন্যাকা। বিবাহিত লোকটার সাথে এত পীরিত তোমার। আর আমি ভাগ বসাতে চাইলেই আপত্তি? কেন? সব রসনা কি তোমার একারই আছে নাকি? ইচ্ছে তো আমারও জাগতে পারে। নিজের কাম মেটাচ্ছ এ বাড়ীতে এসে। আজ থেকে আমিও তোমার ভাগীদার। দেখি তুমি কেমন করে আটকাও আমাকে।"
সিরিজা ভেবেছিল হয়তো মজা করছে দোলন। তারপরেই দোলন নির্লজ্জ্বের মতন বলে উঠলো, "ক্ষতি কি আছে? দাদাবাবু নয়, তোমাকেও একটু আদর করলো, আমাকেও একটু। দুজন কে পালা করে। এক সাথে দুজনে মিলে একটু দাদাবাবুর সোহাগ খাই না? ক্ষতি কি?"
যেন স্বামী খুইয়ে মাথাটা একেবারেই গেছে দোলনের। সিরিজা যে রজতের সাথে শুধু দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলেনি। সম্পর্কটা অন্য দিকেও মোড় নিয়েছে, সেটা কে বোঝাবে ওকে?
বিরক্ত হয়েই সিরিজা ওকে বলেছিল, "দেখ দোলন, এসব খারাপ খারাপ কথা আমাকে বলবি না। তোর দাদাবাবু আমাকে যতটা পছন্দ করে, অন্য কাউকে কখনই করবে না। তুই চাইলেও সেটা হবে না। তোর এই মনের বাসনা তুই নিজের কাছেই রাখ। আমাকে বলতে আসিস না।"
মানতে চাই নি দোলন, বলেছিল, "দেখো দাদাবাবুকে আমি ঠিক পটিয়ে নেব। তখন তোমারই আফসোস হবে। আমাকেই তুমি ভাগ দিতে চাইবে না।"
পটানোর নাম করে শোবার ঘরে ঢুকে রজতের ঠোঁটে চুমু খেয়েছে দোলন। সিরিজা এখনও ভুলতে পারছে না ব্যাপারটা। মেয়েটার যেন অত্যাধিক বাড় বেড়েছে। আজ ওর জেদাজেদীর জন্যই ওকে ও বাড়ী ছেড়ে চলে আসতে হল।
রজতের ফোনের জন্য একটু অপেক্ষা করে থেকে থেকে সিরিজা শেষপর্যন্ত ঠিক করলো, দিবাকর ফিরলেই দোলনের এই কথাগুলো বলবে দিবাকরকে। লোকটা রজতের প্রিয়বন্ধু। এখন সিরিজার কাছেও অনেক বন্ধুর মত হয়ে গেছে। কাছের লোককে পরিস্থিতির কথা বলতে পারলে মনটা অনেক হালকা হয়। দোলনের ঝেমেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এখন এই লোকটার সাহায্যও একান্ত ভাবে দরকার। যখনই প্রয়োজন পড়েছে, রজতের পাশে দাঁড়িয়েছে দিবাকর। এখন সিরিজার এই কঠিন পরিস্থিতিতে দিবাকর ঠিক ওর পাশেও দাঁড়াবে। লোকটার মনটা তো খুব ভালো। খুব নরম আর দয়ালু টাইপের। রেশমীর জন্য সিরিজার প্রতি ও এমনিতেই কৃতজ্ঞ। সিরিজা যদি মন খুলে ওকে সব কথা বলে, বলা যায় না দিবাকরই কোন উপায় ওকে বাতলে দিতে পারে।
বিছানায় কিছুক্ষণ বসে থেকে সিরিজা এবার উঠে পড়লো। দিবাকর আসার আগে চোখে মুখে জল দিয়ে, গা হাত পা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। শাড়ীটাও বদলে নিতে হবে দিবাকর আসার আগে। ঘরের এক কোনায় বাথরুমটা খুঁজে বার করে ব্যাগে করে আনা আর একটা শাড়ী হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকল সিরিজা। বাচ্চাটা অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ওর দিকে তাকিয়ে একবার হাসল সিরিজা। মনে মনে বললো, "তোর জন্য নতুন একটা বাবা খুঁজে নিয়েছি আমি। এবার আর তোকে কিছু চিন্তা করতে হবে না। কাল থেকে আমি ছাড়াও, নতুন বাবাও তোকে খুব আদর করবে। দেখে নিস।"
বাইরের ঘরে একা একা বসে দোলন বেশ গুমড়ে উঠছিল। রজত শোবার ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে রেখেছে। মনে হচ্ছে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে এখন। কাল সকাল হওয়া অবধি এমনি করেই দোলনকে শায়েস্তা করবে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর, দোলনও অধৈর্য হয়ে এবার উঠে পড়লো। ওর মনের মধ্যে এবার একটা শেষ চেষ্টা করার মরীয়া প্রয়াস। একবার যদি নিজের নগ্ন শরীরটা দেখিয়ে রজতকে আকৃষ্ট করা যায়। সিরিজা তো নেই, সুতরাং ঘরের মধ্যে নগ্ন হতে অসুবিধা কি?
শাড়ী, ব্লাউজ আর শায়া খুলে পুরোপুরি উলঙ্গ হল দোলন। আসতে আসতে পা টিপে এগিয়ে যেতে লাগলো রজতের শোবার ঘরের দিকে। ভেজানো দরজাটা ঠেলে ঢুকবে, তারপর রজতকে দেখাবে ওর শরীরি সম্পদ। বলা যায় না সিরিজার মতন দোলনের ঐ নগ্নরুপ দেখে যদি রজতের হৃদয়টা শেষ পর্যন্ত ওর দিকে দুলে যায়।
কপালটা সত্যিই খারাপ দোলনের। উলঙ্গ শরীরি প্রদর্শন একেবারেই ব্যার্থ হল। ভেজানোর নাম করে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে রেখেছে রজত। যাতে ভেতরে ও ঢুকতে না পারে। বৃথাই উলঙ্গ হয়ে রজতকে আকর্ষন করার চেষ্টা। সব বেকার গেল। দুতিনবার ঠেলে ও দেখলো, শোবার ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে কিছুতেই খুলছে না। ও যাতে ভেতরে ঢুকতে না পারে, তার জন্যই এমন ব্যবস্থা করে রেখেছে রজত। মনটা উদাস করে আবার সোফার ওপর গিয়ে বসে পড়লো দোলন। ওর যেন কিছুই তখন আর ভালো লাগছে না।
মিনিট দশেক চুপচাপ ঐভাবেই বসে রইলো দোলন। রাগে আর হিংসায় জ্বলছে শরীর। মনে মনে বললো, "কতক্ষণ তুমি এভাবে এড়িয়ে চলতে পারো, আমিও দেখব দাদাবাবু। আমার নাম দোলন। অত সহজে তোমাকে আমি ছাড়ছি না।"
হোটেল থেকে রুটি, তরকারী আর মাংস নিয়ে এসেছে দিবাকর। দরজার বাইরে থেকে কলিংবেল টিপে সিরিজাকে বললো, "সিরিজা আমি এসে গেছি। দরজাটা খুলবে?"
বাথরুমের মধ্যে সিরিজা। বালতি থেকে জল নিয়ে মুখ হাত ধুচ্ছিল। দিবাকরকে ভেতর থেকেই একটু চেঁচিয়ে বললো, "আমি বাথরুমে দিবাকরদা। তুমি একটু দাঁড়াতে পারবে? আমি এক্ষুনি আসছি।"
দিবাকর বাইরে থেকে বললো, "হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক আছে। আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি। তুমি রয়ে সয়ে এসো।"
গায়ের কাপড়টা এর মধ্যে আর বদলানো হয় নি। তারমধ্যেই দিবাকর চলে এসেছে। সিরিজা ঠিক করলো, শুধু শুধু লোকটাকে দাঁড় করিয়ে রেখে লাভ নেই। তার থেকে দরজাটা খুলে নিয়ে ভেতরে ডেকে নেওয়া দরকার। কাপড়টা বরং পড়ে ছাড়বে, রাত্রে শোবার আগে।
বাথরুম থেকে বেরিয়েই দরজা খুলল সিরিজা। দিবাকর খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে। সিরিজাকে বললো, "তোমার জন্য গরম গরম রুটি আর ফার্স্ট ক্লাস মাংসের কারী এনেছি। চটপট খেয়ে নাও।"
দরজা খুলে সিরিজা বললো, "এত তাড়াতাড়ি খাবো? সবে তো আটটাও বাজেনি বোধহয়।"
দিবাকর বললো, "না খেলে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে সিরিজা। তখন আর খেতে ভালো লাগবে না।"
সিরিজা বললো, "পরে নয় গরম করে খেয়ে নেব। এত তাড়াতাড়ি খাবো? তাই বলছিলাম....."
খাবারের প্যাকেটটা দিবাকরের হাতে রয়েছে। সিরিজা বললো, "ওটা আমাকে দাও তো। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না।"
প্যাকেটটা হাত থেকে নিয়ে ও বললো, "এটা রান্নাঘরে রেখে দিই বরং। রাতে একটু গরম করে নিলেই হবে। আর তুমিও খাবে তো?"
-- "না না, আমি খাবো না। ও শুধু তোমার জন্যই এনেছি।"
- "সে কি তুমি খাবে না? এ শুধু আমার একার?"
দিবাকর বললো, "আমার শরীরটা খুব খারাপ সিরিজা। আজ তাই পুরোপুরি উপোস দিচ্ছি। একদিন না খেলে কিচ্ছু হবে না। "
বাথরুমের জলে সামান্য ভিজে যাওয়া শাড়ীটা একটু সামলে নিয়ে সিরিজা প্যাকেট টা রান্নাঘরে রেখে এল।
ওর দিকে তাকিয়ে পেছন থেকে দেখছিল দিবাকর। উন্নত স্তনযুগল সিরিজার শরীরের সব আকর্ষনকে সবসময় চাগিয়ে রাখে। এমন একটা শরীর, যার জেল্লা কোনদিন কমবে না। পুরুষমানুষ ফিকে হয়ে যাবে, কিন্তু সিরিজা জ্বলজ্বল করবে সবসময়।
সেদিনের ঐ ঘটনার দিন দিবাকরের প্রতি সিরিজার যে ক্ষোভটা জন্মেছিল, সেটা এখন আর নেই। রজতের এই বন্ধুটা ওর কাছে অনেক সহজ হয়ে গেছে।
দিবাকরের দিকে চোখে চোখ রেখে সিরিজা বললো, "কি দেখছো?"
দিবাকর বললো, "না কিছু না, এমনি....."
হাসতে হাসতে সিরিজা বললো, "আরে বাবা আমি রেশমীর মত অত সুন্দরী নই। তোমার রেশমী আমার থেকেও বেশী সুন্দর। বললে হবে? আমি সব জানি।"
কিছু বলতেই যাচ্ছিলো দিবাকর, সিরিজা বললো, "তোমার বন্ধুও সবসময় আমার গুনগান করে। আরে আমার মধ্যে কি এমন আছে বলো তো? খালি পাগল হয়ে যায় আমার জন্য?"
দিবাকর মুখটা নীচু করে ফেললো। সিরিজা এবার বললো, "মনে হচ্ছে তুমি এবার কিছু বলবে....."
দিবাকর বললো, "সবসময় সব কথার উত্তর তো দেওয়া যায় না সিরিজা। আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি, তোমার দিকে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকাই যায় না। তুমি এমনই। আর বেশী তারিফ তো করতে পারি না। বন্ধুটার আমার কপাল সত্যিই ভালো। আমি রেশমীকে ভালোবেসেছিলাম ঠিকই। কিন্তু ও তোমার মত নয়।"
উত্তরটা পেয়ে সিরিজা কিছুক্ষণ প্রানবন্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল দিবাকরের দিকে। প্রশংসা আর কদরে ওর মুখের মধ্যেও একটা আনন্দের রেশ ছড়িয়ে পড়ছে। দিবাকর ওর সুখ্যাতি করছে, ওর রুপের তারিফ করছে, এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে? তবুও সান্তনা দেবার জন্য ওকে বললো, "আমি তোমার রেশমীর থেকেও বেশী সুন্দরী? হতেই পারে না। তুমি আমার মন রাখার জন্য বলছো।"
দিবাকর বললো, "না না, আমি সত্যি বলছি। বিশ্বাস করো। তোমার সাথে কারুর তুলনা হয় নাকি? রজত কি এমনিই পাগল তোমার জন্য? আমি এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না। স্বয়ং রেশমীও যখন তোমাকে দেখবে। ও নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাবে। কেউ আছে এই পৃথিবীতে, যে রুপের চমৎকারীত্বে ওকেও হারিয়ে দিতে পারে অনায়াসে।"
সিরিজা বললো, "সে তো আমার থেকেও অনেক সুন্দরী আছে এই পৃথিবীতে। আমি কি একাই সুন্দরী নাকি? আরও কত রূপসী আছে, তারা তো আমার থেকেও সুন্দর।"
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দিবাকর বললো, "নাহ, তোমাকে আমি আর বোঝানোর চেষ্টা করবো না। যাকে ভালো লাগলো, তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে সুন্দরী হিসেবে আমি মেনে নেব? এ কিছুতেই সম্ভব নয়।"
সিরিজা বললো, "সত্যি দিবাকরদা। তোমার জন্য ভেবে আমার কষ্ট হয়। তোমার কপালটা সত্যিই মন্দ ছিল এতদিন। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, তোমাকে সত্যিই ভুল বুঝেছিলাম সেদিন। কাউকে পাওয়ার জন্য তুমি এত ছটফট করে মরছ, অথচ তোমার কথাটা কেউ একবার ভাবছে না।"
দিবাকর বললো, "কেউ তো আছে, যে আমার জন্য ভাবছে। কেউ ভাববে না তাকি হয়? একজন তো আমার জন্য ভাবছে। তুমি আমার জন্য ভাবছো সিরিজা, আমার আর চিন্তা কি আছে?"
একটু খানি দিবাকরের কাছে এগিয়ে এল সিরিজা। বললো, "আমি এখন তোমাদের কাছে যতটা ভালো, ততটাই খারাপ আবার ওদের কাছে। ওরা আমার শত্রু। আমাকে ওরা সুখে থাকতে দেবে না।"
-- "কাদের কথা বলছো তুমি সিরিজা?"
একটু চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে সিরিজা বললো, "ঐ আমার অপদার্থ স্বামীটা। মাতাল লম্পট। এসেছে আবার জ্বালাতে। কি যে পীরিত জেগে উঠেছে আবার কে জানে? আমার শরীরটার প্রতি লোভ যে ওর ষোল আনা। যখন বিয়ে করেছিলাম, ঘুরেও তাকাতো না। মদ খেয়ে রাত বিরেতে হূজ্জুতি করত এসে। ছেড়ে চলে এলাম, অন্য কারুর সাথে সম্পর্ক তৈরী করবো বলে, আর এখন আবার চলে এসেছে আমার পিছু পিছু। বদমায়েশ দোলনকেও বিশ্বাস নেই। আমার ক্ষতি করার জন্য একেবারে তৈরী হয়ে আছে। সুযোগ পেলেই আমার বুকে ছুরী বসাবে।"
দিবাকর বললো, "আমি আছি না? তোমার আর রজতের জন্য জান লাগিয়ে দেব। এই দিবাকরকে সব সময়ই পাশে পাবে তুমি।"
চোখে মুখে উদ্বেগ। যেন বড়ই চিন্তিত সিরিজা। দিবাকর বললো, "তোমাকে বড়ই টেনসড লাগছে সিরিজা। এত চিন্তা কেন করছো তুমি? কাকে ভয় পাচ্ছ? দোলনকে? না অন্য কাউকে?"
একটু করুন মুখ নিয়ে সিরিজা দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ। দিবাকরকে বললো, "যদি ও কিছু করে বসে?"
-- "কি করবে?"
- "যদি আজ রাতে?"
-- "আজ রাতে কি করবে? রজতের সাথে? তোমার রজতের ওপর বিশ্বাস আছে তো সিরিজা?"
- "বিশ্বাস করি আমি ওকে। সেইজন্যই তো....."
-- "তাহলে একেবারে নিশ্চিন্ত থাকো। দোলন কিছুই করতে পারবে না।"
মুখটা একটু উদাস করে সিরিজা এবার বসে পড়লো বাচ্চাটার পাশে। দিবাকর ওকে দেখছে। সিরিজার মন ভালো করে দেওয়ার জন্য ও এবার বললো, "দাঁড়াও, আমি রজতকে এক্ষুনি ফোন লাগাচ্ছি। ও তালে গোলে ফোন করতে ভুলে গেছে বোধহয়।"
ফোনটা সিরিজার পাশেই রাখা ছিল। ওটা হাতে নিয়ে রজতের নাম্বার সার্চ করে ডায়াল করতে শুরু করলো দিবাকর।
ফোন বাজতে শুরু করেছে। একবার নয় বারবার। বেজেই চলেছে। রজত কেন জানি ফোনটা রিসিভ করছে না। দিবাকর আবার কল করলো। একবার নয় পরপর বেশ কয়েক বার। বুঝতে পারছে না ও রজত কেন ফোনটা রিসিভ করছে না।
সিরিজা জিজ্ঞাসা করলো দিবাকরকে, "কি হলো? "
দিবাকর হতবাকের মতন চেয়ে সিরিজাকে বললো, "বুঝতে পারছি না। ফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বেজে চলেছে, ধরছে না। তাহলে কি ও ঘরে নেই এখন?"
ফোনটা ধরছে না রজত, অথচ দিবাকর বারবার ডায়াল করেই যাচ্ছে। সিরিজাকে খুশি করার আপ্রান চেষ্টাটা বারবার যেন বিফলে যাচ্ছিলো। দেখলো সিরিজা ওর দিকে তাকিয়েই রয়েছে, দেখছে এভাবে কতক্ষণ রজতের জন্য ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেয় দিবাকর। সিরিজাকে সান্তনা দেবার জন্য শুধু বললো, "তুমি চিন্তা কোরো না, ও ঠিক ফোন ধরবে। হয়তো বাথরুমে ঢুকেছে বোধহয়। এতক্ষণ ধরে ফোন বাজছে, অথচ ও ফোন ধরবে না এটা হয় না।"
দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে রজত কথা দিয়েছিল দিবাকরকে। অথচ কেমন যেন অজানা এক আশঙ্কায় আসতে আসতে ঘিরে ফেলছে দিবাকরের মনের চারপাশটা। রাতারাতি লোকটা পাল্টে যাবে? এও কি সম্ভব? তাহলে কি ও এখনই দোলনের সাথে?
সিরিজাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে দিবাকর বললো, "তুমি বরং ততক্ষণে খেয়ে নাও না সিরিজা। আমি দেখছি খানিক পরে রজতকে আর একবার চেষ্টা করে।"
সিরিজা বললো, "তুমি আর ফোন করে কি করবে? ও যদি ফোনই না ধরে, বেকার করে লাভ আছে কি? নিজে থেকে যখন করলো না তখন....."
দিবাকর বললো, "তুমি বৃথাই মন খারাপ করছো সিরিজা। কিছুই হয়নি হয়তো দেখো গিয়ে। হয় ফোনটা ওর কাছে নেই। নয়তো সাইলেন্ট মোড হয়ে গেছে রজত বুঝতে পারছে না।"
সিরিজার মুখে কোন কথা নেই। একেবারেই চুপচাপ।
বিশ্বাসটাকে কারুর মনে ফিরে আনানোর জন্য মানুষ যেভাবে সর্বশক্তি দিয়ে আপ্রান চেষ্টা করে, ঠিক সেভাবেই সিরিজার খুব কাছে গিয়ে ওর হাত দুটো ধরে দিবাকর বললো, "তাকাও আমার দিকে। এই যে দেখ। কিছুই হয় নি। আমি বলছি তো? সব ঠিক আছে। রজতও ঠিক আছে, ঐ বাড়ীতেও সব ঠিক ঠাক আছে। কিছু হয় নি।"
সিরিজা বললো, "যদি না ঠিক থাকে?"
-- "কারুর ভাগ্যে তোমার মতন মেয়ে দুবার কখনও জোটে না সিরিজা। যদি রজত ঠিক না থাকে, তাহলে আমি বলব, ওর কপাল মন্দ। কিন্তু তবুও আমি বলছি, ও ঠিক আছে। রজতের কোন ভীমরতি হয় নি।"
একটু বেশ রেগে গিয়েই দিবাকর বললো, "কালই আমি যাচ্ছি ও বাড়ীতে, তোমাকে নিয়ে। তারপর দোলনকে ওখান থেকে আমি তাড়াব। তুমি দেখে নিও। ওকে ঠিক ভাগাবো এখান থেকে।"
সিরিজা দিবাকরকে অবাক করে বললো, "যদি আমিই না যাই? আর না ফিরি ও বাড়ীতে?"
চমকে উঠলো দিবাকর। সিরিজাকে চোখ দুটো গোল গোল করে বললো, "কি বলছো তুমি? কেন যাবে না? কি হয়েছে তোমার?"
যে মেয়েটা রজতের মনে কামনার আগুন জ্বালিয়েছে। সেই এখন আগুন থেকে দূরে থাকতে চাইছে। সিরিজার রজতের প্রতি এই উদাসীনতা কেন? দিবাকর বেশ ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল।
সিরিজা বললো, "আমি চলে যাবো এখান থেকে।"
-- "কেন? কোথায়?"
- "দূরে কোথাও। কি হবে এখানে থেকে? এই বাচ্চাটাকে নিয়েই কোথাও চলে যাবো। এখানে থাকলেই দোলন জ্বালাবে। সবাই বিরক্ত করবে। আমার আর এখানে থাকা চলবে না।"
দিবাকর বেশ আতঙ্কিত হয়ে বললো, "রজত যদি ফোন না ধরে, আমি এক্ষুনি যাচ্ছি ঐ বাড়ীতে। গিয়ে দেখছি। কি হয়েছে ওখানে। তোমার সব আশঙ্কা দূর হয়ে যাবে, মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি সিরিজা। তুমি মন খারাপ কোরো না।"
- "তুমি কোথাও যাবে না। বসো এখানে।"
এবার দিবাকরেরই হাত দুটো ধরে ওর পাশে বসিয়ে দিল সিরিজা। কিছুক্ষণ এমন ভাবে চেয়ে রইলো ওর দিকে যে দিবাকর ধরেই নিল, সিরিজা কিছু চিন্তা করছে। একটু ভেবে নিয়ে সিরিজা বললো, "আমি যদি এখানেই থাকি? তোমার এখানে? তোমার আপত্তি আছে?"
একি বলছে সিরিজা? আমার এখানে থাকবে? এর মানে কি?
মনে পড়ছিল, এই দুদিন আগেকার কথা। সিরিজাকে রজতের বাড়ীতে দেখে হঠাৎ ওর মনের মধ্যে উদ্দীপনা। সেই উদ্দীপনাটা হঠাৎই যেন নিভে গেল। রজতের এক রঙ্গীন পৃথিবী। সিরিজার স্পর্ষে রজতের কথায়, আচরনে শিহরণ। আনন্দকে উপভোগ করার শক্তিকে মুঠোয় নিয়ে রজত তখন পাগল, উন্মাদ। এমন এক নারীরত্নকে জয় করে নিয়েছে রজত, অহঙ্কার ওর মধ্যে থেকে ফেটে পড়ছে। নিজের দূর্বলতাকে সামাল দিতে পারেনি দিবাকর। সিরিজাকে দেখে টলে গিয়েছিল ও। প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বুঝতে পেরেছিল কি মারাত্মক ভুল করে ফেলেছে ও। রেশমীর কথা বলে সিরিজার মন বিষিয়ে ও যেন সিরিজারই কাছে আসতে চেয়েছিল। আজ সিরিজাই হতাশ হয়ে ওর কাছে থাকতে চাইছে, এ কি অবস্থা হল?
দিবাকরের কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে সিরিজা বললো, "কি হলো? আমাকে বললে না? আমি যদি তোমার এখানেই থাকি? তোমার আপত্তি আছে?"
কঠিন একটা পরিস্থিতি। অনেকটা সেই আগের মতন। রেশমীর কথা শুনে রজতের প্রতি কিছুটা হলেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল সিরিজা। আবার একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এবার দোলনের জন্য। যে সিরিজাকে হিংসা করছে। কিন্তু দোলনকে সিরিজা কেন এত ভয় পাচ্ছে?
দিবাকর বললো, "তুমি কেন এত ভয় পাচ্ছ সিরিজা? কিছুতো এমন হয় নি। রজত তো তোমাকে ছাড়া আর কারুর কথা ভাবতেই পারে না। তুমি ও বাড়ীতে না গেলে ওর চলবে কি করে? শ্বশুড়বাড়ী নিয়ে এত ঝামেলা পোয়াচ্ছে। তুমি ও বাড়ীতে না ফিরলে ও আরও ভেঙে পড়বে। কি করবে ব্যাচারা? তোমাকে ছেড়ে ও তো পাগল হয়ে যাবে।"
সিরিজা একটুও মন বদলাচ্ছিল না দিবাকরের কথা শুনে। ওকে বললো, "আমি যাবো না। তুমি আমাকে শুধু শুধু জোর কোরো না।"
পুরুষমানুষকে মোহিত করার যে স্বাভাবিক দক্ষতা নারীর মধ্যে আছে, রজতকে নিজের রুপ সৌন্দর্য দিয়ে সেভাবেই মোহিত করে দিয়েছে সিরিজা। অথচ একটা সামান্য মেয়ের জন্য রজতকে নিজের জীবন থেকে মুছে দিতে চাইছে। নিজেই তো একদিন রজতের কাছে গিয়ে ধরা দিয়েছিল, রজত ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো ঐ দোলন মেয়েটার জন্য এমন তো নয়। সিরিজা কি এখনও সেটা বুঝতে পারছে না?
দিবাকরকে অবাক করে সিরিজা বললো, "তোমার কি রেশমীর চেয়ে আমাকে বেশী ভালো লাগে? আমাকে ওর বদলে ভালোবাসতে পারবে তুমি? বলো না? যদি আমি এই কথাতেই থেকে যাই তোমার এখানে। তাহলে আর কোথাও যাবো না। বাচ্চাটাকে নিয়ে তোমার এখানেই থেকে যাবো।"
সিরিজা যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে দিবাকরকে। ও ওভাবেই সিরিজার দিকে তাকালো। মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন, যে নারী একবার বিপথগামিনী হয়েছে, সে যে আবার তা হবে না তার স্থিরতা কি? তার কেবল অবৈধ আনন্দই ভালো লাগতে পারে। কোনো কর্তব্যের বাঁধন এদের নেই। খুব সহজেই মতি পরিবর্তন করতে পারে। সিরিজা রজতের প্রতি একেবারেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ও কেন বুঝতে চাইছে না? রজতের এখানে কোন দোষ নেই। দোষ যদি কারুর থাকে, সে দোলনেরই। ঐ সমস্ত ঝামেলার সৃষ্টি করছে।
এবার দুজনকেই অবাক করে রজতের ফোনটা এল। দিবাকরের মোবাইল বাজছে, একবার নয়, দু-দুবার। সিরিজার দিকে তাকিয়ে দিবাকর বললো, "দেখলে তো? আমার মন বলছিল ও ঠিক ফোন করবে? রজত মনে হয় ঘরে ছিল না। আমি খুব অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। এবার মনটা হালকা হল। নাও কথা বলো। ও তো তোমার জন্যই ফোন করেছে।"
সিরিজা বললো, "তুমি কথা বলো। আমি তারপর বলছি।"
দিবাকর যখন ফোনটা ধরে হ্যালো হ্যালো বলতে লাগলো, তখন ও প্রান্ত থেকে রজত খুব আস্তে আস্তে কথা বলছে। এত আস্তে যে শোনাই যাচ্ছে না। দিবাকর বললো, "একটু জোরে বলো না। কিছু শুনতে পাচ্ছি না। তুমি কোথায় ছিলে? আমি তো ফোন করেছিলাম।"
ও প্রান্ত থেকে রজত বললো, "হ্যাঁ আমি জানি। তোমার ফোনটা ইচ্ছা করেই ধরিনি। ফোনের আওয়াজ শুনে দোলন দুবার এসে দরজা ধাক্কা দিয়েছে। আমি শোবার ঘরে রয়েছি। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়েছি। ও ঢুকতে পাচ্ছে না। শোনো, সিরিজা কোথায় আছে? তোমরা পৌঁছলে কখন?"
দিবাকর বললো, "সিরিজা পাশেই আছে। কথা বলবে? আমরা তো অনেকক্ষণ এসেছি এখানে।"
রজত বললো, "না, এখন দরকার নেই। আমি যা বলছি শুধু চুপ করে শোন। কিছু বলবে না। শুধু শুনে যাও।"
দিবাকর কানে ফোনটা চেপে ধরে রজতের কথা শোনার চেষ্টা করছে। সিরিজা দেখলো দিবাকর বলার পরও রজত কথা বলতে চাইল না সিরিজার সাথে। খুব স্মার্টলি দিবাকরের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ও শোনার চেষ্টা করতে লাগলো রজত কি বলছে।
কিছুটা অস্বস্তি আর টেনশনে পড়ে গেছে দিবাকর। রজত কি বলছে ও শুনতে পাচ্ছে না। অথচ সিরিজা দিব্যি কানে ফোনটা ধরে ওর কথা শুনছে।
ও প্রান্ত থেকে রজত বললো, "আমি সিরিজাকে ব্যাপারটা জানাতে চাই না। তাই তোমাকে বলছি। দোলন একেবারে উলঙ্গ হয়ে বসে আছে ঘরের মধ্যে। দুবার এসে দরজা ধাক্কা দিয়েছে, আমি খুলিনি। একবার দরজাটা ফাঁক করে দেখলাম, এখনও ঐ অবস্থাতেই বসে রয়েছে বসার ঘরে। তোমার ফোনটা এসেছিল, তখন ইচ্ছে করেই ধরিনি। যাতে ও ভাবে আমি ঘুমোচ্ছি। দিবাকর, মেয়েটা পুরো ক্ষেপে উঠেছে এখন। সিরিজা নেই, ওর আরও সুবিধে। আমার সঙ্গে কিছু একটা ও করবেই। আজ আমাকে রেহাই দেবে না। কতক্ষণ এভাবে ঘরের মধ্যে বসে থাকবো? আমাকে তো একবার না একবার বেরোতেই হবে। বাথরুমে যেতে হবে। আর বেরোলেই ওর নগ্ন শরীরটা দেখব, একদম সামনে থেকে। আমাকে এত মারাত্মক ভাবে কামনা করছে যে সম্পূর্ণ দিশাহারা হয়ে যাচ্ছি আমি। দোলনের সাথে এক রাতের যৌনমিলন করে যদি ওকে সন্তুষ্ট করা যায়, তাহলেই চেষ্টা করে দেখি। আমার তো এছাড়া আর কোন উপায় নেই। সিরিজা যেমন আছে, থাকবে। আমি শুধু ওকে বশে আনার চেষ্টা করবো। কিছু করার নেই। তুমি শুনতে পাচ্ছো তো? কি বললাম বুঝতে পারলে তো?"
তাড়াতাড়ি ফোনটা দিবাকরের হাতে ফেরত দিয়ে সিরিজা বললো, "আমি যে কানে দিয়ে শুনেছি ফোনটা, ওকে বলবে না। নাও, কথা বলো এবার।"
দিবাকর কিছুই জানে না। সেভাবেই ফোনটা ধরে বললো, "হ্যাঁ, বলো এবার?"
রজত বললো, "যা বললাম, বুঝতে পারলে না?"
দিবাকর যেন বলার চেষ্টা করছে। ফোনটা সিরিজার হাতে ছিল, ওর কাছে ছিল না। দিবাকরকে মুখে আঙুল দিয়ে এমনভাবে ইশারা করলো সিরিজা, দিবাকর বলতেই পারলো না। রজতকে শুধু বললো, "হ্যাঁ শুনেছি। তুমি দোলনকে....."
রজত বললো, "হ্যাঁ, দোলনকে নিয়ে বিছানায় নিয়ে শুতে হবে এখন। আমি যাচ্ছি। ও মনে হচ্ছে দরজায় কান লাগিয়ে আমার কথা শোনার চেষ্টা করছে। তুমি সিরিজাকে কিছু বোলো না। আমি রাখছি এখন।"
ফোনটা কেটে যাবার পর দিবাকর হতভম্বের মতন দাঁড়িয়ে রয়েছে। সিরিজাকে শুধু একবার বললো, "কি বললো ও। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।"
সিরিজা বললো, "আমার মন বলছিল এরকমই কিছু একটা ঘটবে। তুমি অনেকক্ষণ ধরে আমাকে মানানোর চেষ্টা করছিলে। কিন্তু আমি মানতে চাইছিলাম না।"
দিবাকর বললো, "কেন, কি হলো বলবে তো?"
দিবাকরের একটু কাছে এগিয়ে এল সিরিজা। বললো, "আমি তাহলে চলে যাই?"
দিবাকর বললো, "কোথায়?"
- "এখান থেকে। অনেক দূরে। তোমাদেরকে ছেড়ে।"
দিবাকর বললো, "কেন, তুমি ও বাড়ীতে আর যাবে না?"
একটু চুপ করে রইলো সিরিজা। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো, "আর কি হবে গিয়ে? ও তো দোলনকে নিয়ে বিছানায় শুচ্ছে।"
দিবাকরের মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। একেবারে স্তব্ধ। কি বলবে সিরিজাকে ভেবে পাচ্ছে না। জীবনে এমন অস্বস্তিতে কোনদিন পড়ে নি। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রয়েছে সিরিজার দিকে। রজত যে কি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, ওরও মাথায় ঢুকছে না।
সিরিজা বললো, "দোলন এখন শাড়ী শায়া সব ছেড়ে খালি গায়ে বসে আছে। তোমার বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছে। ও দোলনের কাছে গেলই বলে..... এতক্ষণে হয়তো....."
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
লেখক(Lekhak)-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereলেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment