CH Ad (Clicksor)

Monday, September 8, 2014

সিরিজা - একটি উপন্যাস aka রজতের কামলীলা_Written By Lekhak (লেখক) [চ্যাপ্টার ১৭]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




সিরিজা - একটি উপন্যাস
Written By Lekhak (লেখক)








।। সতেরো ।।

দরজা খুললো দিবাকর। চোখের সামনে রজতকে দেখবে কি? যাকে দেখলো তাকে দেখে চরম বিরক্তি ফুটে উঠলো দিবাকরের। ওফঃ আবার? এই তো সকালে এসেছিল। আবার এসেছে বুড়োটা? এ তো দেখছি জ্বালিয়ে খেল একেবারে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রজতের শ্বশুড়। বুড়ো শ্বশুড় আবার এসেছে। আবার সাথে কাকে এনেছে? শ্বশুড় মশাইয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে এক ভদ্রমহিলা। পরণে শাড়ী। গায়ের রঙ ফর্সা। দেখতে খারাপ নয়। ইনি কে? রজতের স্ত্রী? কেলেঙ্কারী করেছে। এমন অসময়ে আগমন ঘটিয়ে ফেললো। তাও আবার দুজনে একসাথে? রজত ঘরে নেই এখন কি হবে? একটু আগে রেগে ওঠা দিবাকরের এবার দাঁতগুলো ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। ওর মনে হলো সিরিজাকে একটু আগে রাগটা না দেখালেই ভালো হতো। ও যদি এখন মিছিমিছি দিবাকরের স্ত্রী হতে বেঁকে বসে? সর্বনাশ করেছে।

 - "আপনারা?"

ভদ্রলোক বেশ কর্কশ গলায় বললেন, "আপনি কে?"

 - "আমি? আমি, আমি রজতের বন্ধু।"

 -- "ও তারমানে আপনি এখনও আছেন দেখছি।"

 - "হ্যাঁ।"

 -- "সকালে তো আমি এসেছিলাম। রজত বললো, আপনি নাকি স্ত্রী নিয়ে কাল রাতে ওর বাসায় এসেছেন। গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন আপনারা। রজত কিছুতেই আপনাদের ডিস্টার্ব করতে চাইল না। যে কাজে এসেছিলাম, সেটা না করেই আমাকে ফিরে যেতে হলো। তা সে ব্যাক্তি এখন কোথায়? তাকে ডাকুন। আমি মেয়েকে নিয়ে এসেছি। কাজটা সেরেই চলে যাবো।"

 - "কিন্তু রজত তো এখন নেই।"

 -- "কোথায় গেছে?"

 - "অফিসে।"

 -- "কখন ফিরবে?"

দিবাকর বোকার মতন বলে ফেললো, "এই একটু পরেই। আমাকে থাকতে বলেছে। তাই রয়ে গেছি।"

 -- "ও তাহলে তো ঠিকই আছে। আমরা বরং রজতের জন্য ইসিলি ওয়েট করতে পারি। আপনি বরং ওকে ফোন করে খবর দিন, আমরা এসেছি।"

দিবাকর আমতা আমতা করছিল। শ্বশুড় মশাই আর কোনো সুযোগ না দিয়েই মেয়েকে নিয়ে ঢুকে পড়লো ঘরের ভেতরে।

যেন কাল থেকেই শুধু নাকানি চোবানি খেয়ে চলেছে দিবাকর। এর আর শেষ হচ্ছে না। প্রথমটা হয়েছিল নিজের দোষে। মাল খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে একটা কেলেঙ্কারী বাঁধিয়ে দিচ্ছিল। তারপরে শুরু করলো রজত। রজতের পরে সিরিজা। এখন শুরু করেছে রজতের শ্বশুড় মশাই। ওফ! এর থেকে কি আর রেহাই নেই?

দিবাকর কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললো, "আপনারা বসবেন? ঠিক আছে বসুন। আমি দেখছি রজতকে ফোনে ধরা যায় কিনা?"

শ্বশুড় মশাই সোফায় বসল। রজতের স্ত্রী গটগট করে শোবার ঘরের দিকে চলে যাচ্ছিলো। দিবাকর ওকে বাধা দিয়ে বললো, "দাঁড়ান দাঁড়ান। ওঘরে যাবেন না।"

 -- "কেন?"

 - "মানে....."

 -- "আপনার স্ত্রী আছে তো ভেতরে? ঠিক আছে, অসুবিধার কি আছে? আমি খালি আলমারীটা খুলে কাপড় চোপড় গুলো বার করে নেব।"

দিবাকরকে পাত্তা না দিয়েই ও আবার শোবার ঘরের দিকে যাচ্ছিলো। দিবাকর কোনোরকমে পথটা আড়াল করে ওর স্ত্রীকে বাঁধা দিয়ে বললো, "একটু দাঁড়ান, একটু দাঁড়ান। ও আছে তো ভেতরে। আমি বরঞ্চ ওকে ডেকে তুলি। খোলামেলা ভাবে শুয়ে আছে হয়তো। আপনার নিজেরই খারাপ লাগবে। লজ্জা পাবে ও। তাই একটু বসুন। একটু বসুন। আমি সব ব্যাবস্থা করছি।"

রজতের বউটা দজ্জাল না হলেও বেশ বদমেজাজী। দিবাকরকে চোখ রাঙিয়ে বললো, "আর কেউ নেই তো ভেতরে? রজত?"

 - "না না, ওতো অফিসে গেছে। ভেতরে আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই।"

কোনরকমে দিবাকরের কথাটা বিশ্বাস করে রজতের বউটা তখন ওর বাপের পাশে গিয়েই বসল। দিবাকর একবার তাকাল শোবার ঘরের দিকে। ওর গায়ের রক্ত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো। এই মূহূর্তে হূট করে কিছু না বুঝে সিরিজা যদি এঘরে চলে আসে তাহলেই মুশকিল।

রজতের বউকে ঠান্ডা করার জন্য বললো, "আপনি বসুন। আমি দেখছি, ওকে জাগিয়ে তুলছি।"

চোখে মুখে একটা টেনশন্ নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলো দিবাকর। সিরিজাকে যে করেই হোক রাজী করাতে হবে।

রজতের বউ রীতা পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, "শুনুন।"

দিবাকর আবার দাঁড়িয়ে পড়লো।

 -- "আপনার স্ত্রী কি সত্যি ঘুমোচ্ছেন?"

 - "হ্যাঁ বোধহয়। আপনি বসুন। আমি দেখে আসছি।"

 -- "ঠিক আছে, ঠিক আছে। ওনাকে জাগাতে হবে না। আমরা বরং রজতের জন্যই অপেক্ষা করছি।"

চালু আছে বউটা যেন দিবাকরকে কিছু শেখাতেও দেবে না। এমন পরিস্থিতির চাপে পড়েছে দিবাকর যেন মাথা দিয়ে কোনো বুদ্ধিও বার হচ্ছে না। ও তবু শোবার ঘরে ঢুকে গেল রজতের বউ এর কথা না শুনে। দেখলো সিরিজা বসে আছে যথারীতি খাটে। দিবাকরকে অবাক করে দিয়ে সেই তুমি তুমি করেই বললো, "আমি সব বুঝতে পেরেছি। ওর বউ এসেছে বাপ কে নিয়ে। আমি এখন ওঘরে যাবো না। বল আমি অঘোরে ঘুমোচ্ছি। ওদের বরং রজত না আসা অবধি অপেক্ষা করতে বল। রজতই এসে ওদের সামলাবে। আমি এখন সন্দেহ কাটাবার জন্য তোমার বউ সাজতে পারবো না। ওসব অভিনয় টভিনয় আমার দ্বারা হবে না।"

 -- "কিন্তু সিরিজা, ওরা যদি সন্দেহ করে?"

 - "করে করুক। আমি বলেছি না। এসব ঝেমেলা সামলানোর দায়িত্ব রজতের, আমার নয়।"

বেগতিক দেখে দিবাকর সিরিজাকে অগত্যা বললো, "ঠিক আছে, তুমি বরং এ ঘরে চুপটি করে শুয়ে থাক। আমি ওদের কে সামলে নিচ্ছি।"

বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো সিরিজা। দিবাকরকে যাবার আগে বললো, "দরজাটা হাট করে খুলে যেও না। আলতো করে ভেজিয়ে দিয়ে যাও। আর দেখ ওর বউ যেন এঘরে ঢুকতে না পারে।"

বসার ঘরে বাপ বেটি একসাথে বসে আছে। দিবাকর শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে একটা বোকার মতন হাসি দিল ওদের সামনে। মাথাটা হাত দিয়ে চুলকোতে চুলকোতে ওদের দুজনকে বললো, "সিরিজাকে ডাকলাম। ও অঘোরে ঘুমোচ্ছে। উঠলো না কিছুতেই। আপনাদের কথাটা বলতেই পারলাম না।"

 -- "সিরিজা?" - রজতের বউটা দিবাকরকে বললো, "বাব্বাহ, আপনার বউ এর নামটাতো অদ্ভূত। এমন নাম শুনিনি কখনও আগে।"

বাবাও মেয়ের সাথে ফোড়ন কেটে বললো, "অসময় ঘুমোচ্ছে কেন? রাত জেগেছে নাকি? সকালেও তো এসে দেখলাম ঘুমোচ্ছে।"

 - "হ্যাঁ ওর শরীরটা একটু খারাপ তো তাই।"

 -- "ও আচ্ছা আচ্ছা।"

দিবাকর ওদের সামনে বসল। রজতের বউ রীতা বললো, "আপনি ওর কদিনের বন্ধু? আগে তো শুনিনি ওর মুখে।"

 - "আমি? আমি অনেক দিনের? সেই ছোটোবেলা থেকে।"

 -- "ছোটোবেলার বন্ধু? আপনাকে তো বিয়েতে দেখিনি।"

 - "বলেছিল তো। বলেছিলো। আমিই আসতে পারিনি। আসলে ওর বিয়ের সময় আমি এখানে ছিলাম না।"

 -- "আর আপনার বিয়ে?"

 - "আমার বিয়ে?"

 -- "হ্যাঁ। ওর আগে হয়েছে না পরে?"

টেনশন কাটানোর জন্য দিবাকরের একটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করছিল। শ্বশুড় মশাই এর অনুমতি চেয়ে ও বললো, "আমি একটা সিগারেট ধরাব?"

 -- "হ্যাঁ হ্যাঁ খান। অসুবিধে নেই।"

দিবাকর সিগারেটটা ধরালো। যেন একটু স্বস্তি এল। শ্বশুড় মশাই ওকে বললো, "আপনি রজতকে ফোন করুন। দেখুন অফিস থেকে বেরিয়েছে কিনা? আমাদেরও তো কাজ সেরে ফিরতে হবে।"

 - "হ্যাঁ হ্যাঁ। এই করছি।"

এক চান্সেই লাইন পেয়ে গেল দিবাকর। ফোনটা কানে নিয়ে রজতকে ও বললো, "আমি দিবাকর বলছি।"

 -- "হ্যাঁ হ্যাঁ বলো।"

 - "তোমার আর কত দেরী?"

 -- "এই তো আসছি আর একটু পরে।"

 - "অফিস থেকে বেরিয়েছো?"

 -- "হ্যাঁ বেরিয়েছি। সিরিজার জন্য একটা ভালো শাড়ী কিনছি দোকান থেকে।"

 - "শাড়ী?"

রজত ও প্রান্ত থেকে কিছু বলার আগেই দিবাকর বুঝতে পারলো মারাত্মক একটা ভুল করে ফেলেছে শাড়ী কথাটার উচ্চারণ করে। ও শ্বশুড় মশাই আর রজতের বউ তখন নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।

 - "শোনো শোনো। তুমি তাড়াতাড়ি এখন চলে এসো।"

 -- "কেন কেন কি হয়েছে?"

 - "তোমার শ্বশুড় মশাই এসেছেন, তোমার স্ত্রীকে নিয়ে। ওনারা অপেক্ষা করছেন তোমার জন্য। আমি ঘরে বসিয়ে রেখেছি।"

 -- "তার মানে?"

দিবাকর এবার একটু চেঁচিয়ে বললো, "তোমার শ্বশুড় মশাই আর তোমার বউ এসেছে। ওনারা ওয়েট করছেন।"

বেশ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে রজত ও প্রান্ত থেকে বললো, "আমার সাথে ত্যাঁদরামো হচ্ছে? কালকে যাদের আসার কথা তারা চলে এল আজকে? আমি কি সবসময় ঘর জুড়ে বসে থাকব ওদের জন্য? ওদের বল চলে যেতে। আমার আসতে দেরী হবে।"

রজত তখনও চেঁচাচ্ছিল। দিবাকর হাত দিয়ে ফোনের মাউথপীসটা চেপে শ্বশুড় আর বউকে বললো, "ও বলছে আপনাদের তো কালকে আসার কথা?"

শ্বশুর মশাই বললেন, "হ্যাঁ সেই মতই তো কথা হয়েছিল। কিন্তু আমার মেয়ে শুনতে চাইল না। তাছাড়া কাল ওর সময় হবে না।"

দিবাকর মাউথ পিসের ওপর থেকে হাতটা তুলে রজতকে বললো, "ওনারা বলছেন, কাজটা আজকেই সারতে চান। কালকে ওনাদের সময় হবে না।"

 -- "এ তো মহা জ্বালা দেখছি। যেমন বাপ তেমনি শালা মেয়ে। নতুন করে ঘাড়ে ঝ্যামেলা পাকাতে চাইছে। ভালো লাগে না আমার। ঠিক আছে, ঠিক আছে। বল ওদের বসতে আমি আসছি। আর শোনো?"

 - "হ্যাঁ বলো।"

 -- "আমি যা বলব, তুমি শুধু হ্যাঁ তে আর না তে জবাব দেবে।"

 - "হ্যাঁ বলো।"

 -- "আমার বউ কিছু সন্দেহ করেছে?"

 - "না।"

 -- "শ্বশুড় মশাই?"

 - "না।"

 -- "ওরা সিরিজাকে দেখেছে?"

 - "না।"

 -- "তুমি বলেছো তো? সিরিজা তোমার বউ?"

 - "হ্যাঁ।"

 -- "সিরিজা ঠিক আছে তো?"

 - "হ্যাঁ।"

 -- "ঠিক আছে তুমি একটু সামাল দাও, আমি আসছি।"

দিবাকর লাইনটা ছেড়ে দিল। রজতের শ্বশুড় মশাই ওকে বললেন, "কি বললো ও?"

 - "আসছে আসছে। বেরিয়ে পড়েছে। আপনাদের বললো বসতে। আর বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না।"

 -- "তুমি থাকো কোথায় বাপু? তোমাতে তুমি বললাম, কিছু মনে কোরো না।"

 - "না না আপনি বয়জেষ্ঠ ব্যক্তি। আমাকে তুমি বলতেই পারেন।"

 -- "কোথায় থাক তুমি?"

 - "আমি? খুব কাছেই থাকি। এই শহরেতেই।"

 -- "রজতের ব্যাপারে কিছু জানো?"

 - "কি ব্যাপারে?"

 -- "ও কিসব করে বেড়ায় তুমি খবর রাখো?"

দিবাকর মনে মনে বললো, বুড়োটা হারামজাদা। এখন যেই বসতে বললাম, অমনি আমাকে খুঁচিয়ে সব জানার চেষ্টা করছে। তবু বললো, "কিসের খবর?"

 -- "আমার মেয়েকে বিয়ে করেও ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমি জানি ও অনেক কিছুই করে বেড়ায়।"

দিবাকর যেন কিছুই জানে না এমন ভাব করলো। রজতের শ্বশুড়কে বললো, "দেখুন মেশোমশাই, এটাতো হলো ব্যক্তিগত প্রশ্ন। তাছাড়া আমি ওর ব্যাপারে কিছুই খবর রাখি না। নিজের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকি। তাছাড়া সংসার ধর্ম আছে। স্ত্রী আছে। ঐ নিয়েই আমার সময় কেটে যায়। একটু আগে বললাম না, যার জন্য রজতের বিয়েতে আমি আসতে পারিনি।"

 -- "তবু ভালো। তুমি তোমার স্ত্রীকে ভালোবাসো। আর আমার মেয়ের তো কপালটাই খারাপ। রাগ করে আমার কাছে চলে এল। এখন ডিভোর্স নেওয়া ছাড়া ওর কোনো গতি নেই।"

কপালের নাম গোপাল। দিবাকর মনে মনে বললো, ভালোবাসতে গিয়ে কি খেসারতটাই না দিতে হচ্ছে। ওরও দম আটকে গেছে। এখন মিছি মিছি ভালোবাসাটাকে যতদূর ধরে রাখা যায়। শ্বশুড় মশাইকে উস্কে দিয়ে ও বললো, "আমার মনে হয় মনের মিলটাই আসল। মতপার্থক্য থাকলে শুধু শুধু একজনকে জীবন দিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তার চেয়ে বরং আলাদা আলাদা হয়ে যাওয়াই উচিত। আপনার মেয়ে ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।"

 -- "তুমি ঠিকই বলেছো। সেই জন্যই তো....."

দিবাকর মনে মনে এবার একটু ওপরওয়ালাকে স্মরণ করলো। তারমানে অল লাইন ইজ ক্লিয়ার। রজতকে আর এদের দুজনের কাছ থেকে কোনো বেগ পেতে হবে না। রজত আর সিরিজার নতুন জীবন সুখময় হোক।

রজতের বউ ওর বাপের কথাই শুনছিল। মাথা নীচু করে বসেছিল। মুখ দেখে মনে হবে রজতের প্রতি বিতৃষ্ণায় মন ভরে গেছে। কথা বলছিল না কিন্তু রাগটা ভীষন ভাবে ফুটে উঠছিল। হঠাৎ এবার দিবাকর আর ওর বাবাকেও চমকে দিয়ে এমন একটা কথা বললো যে দিবাকর প্রায় আঁতকে উঠলো। একি সর্বনাশ!

রজতের বউ বললো, "আমি তো ভাবছি ওকে ডিভোর্সও দেব না। সারাজীবন এভাবেই পচিয়ে মারবো।"

চমকে উঠলো শ্বশুড় মশাইও। মেয়েকে বললেন, "কি বলছিস তুই! তোর মাথার ঠিক আছে। রজতকে তুই ডিভোর্স দিবি না মানে? তুই কি ওর সাথে ঘর করবি না কি?"

 -- "ঘরও করবো না। ডিভোর্সও দেব না।"

দিবাকর রীতিমতন হকচকিয়ে গেল। ভাবলো এতো নতুন বিপদ এল। রজত তো বিপাকে জড়িয়ে পড়লো। ডিভোর্স না পেলে সিরিজাকে নিয়ে বাকী জীবনটা তো সুখেও কাটাতে পারবে না। বউটা ত্যাঁদোড় আছে তো? বেছে বেছে মাথা দিয়ে এমন বুদ্ধি বার করেছে যাতে রজত শান্তিতে না থাকে।

দিবাকর তবুও বললো, "আপনি যদি রজতকে আর পছন্দ না করেন, তাহলে ডিভোর্স দেওয়াটাই তো বুদ্ধিমানের কাজ। শুধু শুধু নিজের লাইফ নষ্ট করবেন কেন? তার থেকে আপনিও একটা বিয়ে করে নিন।"

 -- "তাই বুঝি? আপনার বন্ধুও বিয়ে করছে নাকি? তা পাত্রীটি কে? একবার জানতে পারি?"

 - "বিয়ে? না না ও বিয়ে করছে না?"

 -- "সত্যি বুঝি?"

 - "সত্যি সত্যি বিয়ে করলে আমায় বলতো। সে রকম যখন বলেনি তার মানে ওর এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই।"

 -- "আপনি জানলেন কি করে? ও সব পারে। তাছাড়া ও বিয়ে না করেও এমন কিছু করে যাতে ওর বিয়ে না করলেও চলে। ওর হয়ে আপনি আর সাফাই গাইতে আসবেন না প্লীজ।"

দিবাকর বুঝলো, বউটা মুখরা আছে বেশ। এটাকে বাগে আনতে বেশ সময় লাগবে। ব্যাচারা রজতের কপাল খারাপ, যা বলছে তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে রজতকে বেশ বেগ পেতে হবে। এ মেয়ে সহজে রাজী হওয়ার মেয়ে নয়।

বাপ তখন মেয়েকে বোঝাচ্ছে, "ছেলেমানুষি করিস না রীতা। বাপ হয়ে আমিও কি চাইব তোর জীবনটা নষ্ট হোক। আমি তোর আরেকটা বিয়ে দেব।"

দিবাকরও বুদ্ধিমানের মত সাথে সাথে তাল দিয়ে যেতে লাগলো, "হ্যাঁ ঠিকই তো, ঠিকই তো।"

মেয়ে এবার এমন জোরে চেঁচিয়ে বললো, "না না আমি কোনো কথা শুনছি না। আমি ওকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব। ডিভোর্স আমি কিছুতেই ওকে দেব না।"

শোবার ঘরে রজতের বউ এর চিৎকারটা সিরিজার কানে গিয়ে পৌঁছোল। ও ওখান থেকেই দিবাকরকে ডাক দিল, "এই একটু শোনো এদিকে। এঘরে।"

রজতের বউ আর শ্বশুর মশাই দুজনেই ভাবল, দিবাকরের বউ এর ঘুম ভেঙেছে তাহলে। দিবাকর আবার শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

এদিক সামলাবো না ওদিক? কোনদিকে আমি যে যাই?

ঘরে ঢুকল দিবাকর। সিরিজার তখন বেশ রুদ্রমূর্ত্তি। চোখটা বেশ বড় বড় করে সিরিজা দিবাকরকে বললো, "কি বলছে কি ওরা? তখন থেকে বাপ মেয়ে খুব চ্যাঁচাচ্ছে। এবার মনে হচ্ছে আমাকে সামনে যেতে হবে।"

দিবাকর আরো টেনশনে পড়ে গেল। বললো, "এই না না তুমি যেও না। আমি দেখছি ব্যাপারটা। তাছাড়া ও কিছু নয়। তুমি চিন্তা করছো কেন? রজতও তো এক্ষুনি এসে পড়লো বলে।"

 - "আমি ও ঘরে না গেলে তুমি একা সামলাতে পারবে দিবাকরদা?"

 -- "ঠিক সামলে নেব। তুমি দেখে নিও। তাছাড়া তুমি ওঘরে গেলে বাপ মেয়ে বরং সন্দেহ করবে। তারপর রজত এসে আর কিছু করতে পারবে না।"

 - "আমি ওদেরকে গিয়ে সব সত্যি কথাটা বলে দেব।"

 -- "পাগল হয়েছ নাকি? কি সত্যি বলে দেবে?"

 - "যা সত্যি তাই বলব। ক্ষমতা থাকে ওর বউ আমাকে কিছু বলে দেখাক।"

দিবাকর বুঝলো সিরিজা এবার রজতের প্রতি যেন গলে গেছে। ওদের সাথে মহরা নিতে চাইছে। ও তবু বললো, "না না তোমার ও ঘরে যাওয়ার দরকার নেই। মেয়েছেলে মেয়েছেলেতে মুখ লাগানটা ঠিক নয়। আমার সব চেষ্টা পন্ড হয়ে যাবে। সিরিজা প্লীজ তুমি ওঘরে এখন এস না।"

 - "তুমি কি বলেছো? আমি তোমার বউ?"

 -- "হ্যাঁ। তাছাড়া তো আর উপায় ছিল না।"

 - "তাহলে আমিও গিয়ে বলব ওর বউকে, যে আমি তোমার বউ নই।"

সিরিজার এমন উক্তিতে অবাক হয়ে গেল দিবাকর। ও কি পুরো ব্যাপারটা তার মানে ঘেঁটে দিতে চাইছে? রজতকে আরো ভালো করে ফ্যাঁসাদে জড়াবে বলে? এমন আচরণ সন্দেহজনক। কি করতে চাইছে ও?

এত করে ওকে বোঝালো দিবাকর, তাতেও সিরিজার মন টলল না। বেশ বিরক্ত হলো, সেই সাথে বেশ ভয়ও পেল দিবাকর। কিন্তু সিরিজা এবার একটা দারুন কথা বলে দিবাকরকে সব সন্দেহ থেকে মুক্তি দিয়ে দিল। বললো, "আমি তোমার বন্ধু কে ভুল বুঝেছিলাম। ও আগে হয়তো খারাপ ছিল, এখন নেই। আমাকে পেয়ে পুরো পাল্টে গেছে ও। বউটা ওর ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করছে জানি। রজতকে সুখে থাকতে ও দেবে না। আমিও দেখব এই জল কোথায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায়। আমি রজতকে ছাড়ব না। ওর বউকে আরো জ্বালিয়ে মারবো। আফসোস করবে ওর বউ। দেখবে তখন ওর কি অবস্থা হয়।"

একেবারে মনের কথা বলে দিয়েছে সিরিজা। দিবাকর এত খুশি বোধহয় জীবনে হয় নি। শুধু মাথা গরম না করে সিরিজাকে এখন রজতের সাথে প্রেম পর্বটা চালাতে হবে নির্বিঘ্নে। এমন ভাবে কাজটা করতে হবে, যাতে সাপও মরবে অথচ লাঠিও ভাঙবে না। রাগের বশে মাথা গরম করে ওর বউকে কিছু বলেদিলে সেটা বোকামোর মত কাজ হয়ে যাবে।

দিবাকর তবু বললো, "তুমি রজতকে না ছাড়লে ওর বউ এর শক্তি নেই, তোমাদের দুজনকে আলাদা করবার। শুধু একটাই অনুরোধ, তুমি এর মধ্যে নিজেকে জড়িও না। আমি দেখছি ব্যাপারটা।"

সিরিজা দিবাকরকে গুরুত্ব না দিয়ে বললো, "তুমি পারবে না। এটা আমিই পারবো। মেয়ে হয়ে মেযেকে কেমন জব্দ করতে হয় আমরা ভালোই জানি। আমি একবার ওঘরে যাই। তারপর দেখবে, বাপ মেয়ে দুজনেই একেবারে চুপ হয়ে যাবে।"

 -- "ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুমি অত উতলা হয়ো না। শান্ত হয়ে বস। আমি ওদেরকে সামলে নিচ্ছি।"

কোনরকমে সিরিজাকে শান্ত করে দিবাকর ঘর থেকে বেরিয়ে এল। সিরিজা কিন্তু ওর কথা কর্ণপাতও করলো না। দিবাকরের কথা না শুনেই ও যে সাথে সাথে বসার ঘরে চলে আসবে সেটা দিবাকরের কল্পনার বাইরে ছিল। ব্যাপারটা ঘটল একেবারে সঙ্গে সঙ্গেই। সিরিজা যা করলো এককথায় অভাবনীয়। দিবাকর চিন্তাও করতে পারবে না কোনদিন।

দিবাকর বসার ঘরে ঢুকতেই শ্বশুড়মশাই বললেন, "কি, বউ এর ঘুম ভেঙে গেল, তোমাকে ডাকছিল?"

দিবাকর কিছু বলার আগেই সিরিজাও পেছন পেছন এসে বলে উঠলো, "হ্যাঁ, ডাকছিলাম। আমার ঘুম তো ভাঙিয়ে দিলেন আপনারাই।"

চমকে উঠলো দিবাকর। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো, সিরিজা বসার ঘরে চলে এসেছে। ওর ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে।

চোখের দৃষ্টিটা সোজা রজতের বউ আর শ্বশুড়মশাইয়ের দিকে। দিবাকরকে গ্রাহ্য করছে না। যেন হঠাৎ একটা কান্ড ঘটাবে বলে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। দেখে মনে হবে গলা মিলিয়ে ঝগড়া করবে বলে ঢুকেছে ঘরে।

আচমকা সিরিজা ওভাবে ঘরে ঢোকাতে দিবাকরও ভেবে পাচ্ছে না কি করবে। তার উপর রজতের বউ আর ওর বাবাকেও অবাক করে দিয়েছে।

হাঁ করে সিরিজাকে দেখছে রজতের বউ আর শ্বশুড়। এ মেয়েটা দিবাকরের বউ? দেখে যেন আদৌ বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। বিশ্বাস করতে পারছে না ওরা দুজনে। বাপ মেয়ে দুজনের মুখ দিয়েই কথা বেরোচ্ছে না ক্ষণিকের জন্য। শ্বশুড় ভাবছে এ মেয়ে তো রূপের আগুনে হারিয়ে দেবে ওর মেয়েকেও। আর মেয়ে ভাবছে দিবাকরের স্ত্রী হিসেবে ওর অকস্মাত প্রবেশ ঘটল বসার ঘরে। কিন্তু এ মেয়েকে কোথাও যেন ও দেখেছে। ওর খুব চেনা চেনা লাগছে। ঠিক মনে করতে পারছে না।

 -- "বসো না। তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? দিবাকর ব্যাপারটা সামলে দেওয়ার জন্য সিরিজাকে বললো। কায়দা করে ওদেরও মন রাখার জন্য বুদ্ধি করে বললো, "আসলে আমিই ওকে আসতে বললাম। ওকে বললাম - আপনারা ঘরে বসে আছেন। অনেক তো ঘুমোলে। এবার একটু এঘরে এসো।"

সিরিজা একটু ঝাঁঝালো ভাবেই ওদেরকে শুনিয়ে দিবাকরকে বললো, "তুমি না বললেও আমি আসতাম। তোমার বন্ধুর স্ত্রী আর শ্বশুড়মশাই বলে কথা। না এসে থাকতে পারি? আমার তো ঘুমোতেই ইচ্ছে করছিল না।"

দিবাকর বুঝলো বেশ বড়সড় একটা যুদ্ধ বাধতে চলেছে। আর রজতকে চেষ্টা করেও বাঁচানো যাবে না। কোনো রাস্তা নেই।

কি দরকার ছিলো গায়ে পড়ে এসে ঝগড়া শুরু করার? দিবাকর ব্যাপারটা সামলে দিচ্ছিল। সহ্য হলো না? এখন কি হবে?

পরিস্থিতিটা হালকা করার জন্য দিবাকর বললো, "আসলে ওর আর আমি এখানে এসেই সব ঝ্যামেলা পাকালাম। সকাল বেলা এসে রজতকে আপনিও রাজী করীতে পারলেন না। আর এখনও তাই। বিঘ্ন ঘটানোর মূলে আমরাই।"

রজতের বউটা তখনও সিরিজাকে দেখে যাচ্ছিলো। সিরিজার শরীর যেন ভালোবাসার শরীর। প্রেমের জোয়ার আনার মতন চেহারা মেয়েটির। কপাল ভালো মেয়েটি দিবাকরের বউ। না হলে রজত নিশ্চয়ই যেন নিজের স্বামীকে ওর থেকে ভালো আর কেউ চেনে না।

সিরিজা একদম ওদের সামনে গিয়েই বসল, যে জায়গাটায় দিবাকর বসেছিল। দিবাকর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ভাবতে লাগলো - মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটবে। কপালে এবার বেজায় দূঃখ আছে। ও মনে মনে ভগবানের নাম জপ করতে লাগলো। এরপরে কি হয় সেই ভেবে ভীষন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। ভয়ের চোটে ওর চোখ দুটো একেবারে কাতুমুতো হয়ে গেল।

রজতের বউ সিরিজাকে বললো, "তোমার নামটা তো খুব অদ্ভুত। সিরিজা এমন নাম শুনিনি আগে। তবে তোমাকে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। ঠিক মনে করতে পারছি না। কোথাও যেন দেখেছি।"

 - "আমি তো আপনাকে দেখিনি। এই প্রথম দেখছি। তবে আপনার কথা শুনেছি।"

 -- "কে বললো?"

 - "কে আবার? এই যে এখানে দাঁড়িয়ে আছে, (দিবাকরকে উদ্দশ্য করে ) ইনি।"

 -- "তোমাদের বিয়ে কবে হয়েছে?"

 - "আপনাদের বিয়ের অনেক আগে।"

 -- "আমি তো ভেবেছি, তোমাদের সদ্য বিয়ে হয়েছে বোধহয়।"

 - "না না, সদ্য কেন হবে? অনেকদিন হয়ে গেছে। এখন আমারও ওকে আর ভালো লাগছে না। তাই ভাবছি....."

দিবাকরের চোখ কপালে উঠে গেছে। শ্বশুড় মশাই গোল গোল চোখ করে সিরিজাকে দেখছে। বউটা ভাবছে এ আবার কি কথা?

রজতের বউ বললো, "ভালো লাগছে না সেকী? তোমার বর তো খুব ভালো।"

মুখটা একটু বেঁকিয়ে সিরিজা বললো, "ভালো তো আমিও জানতাম, কিন্তু এখন শুনছি বাবু রেশমী নামে কোন মেয়েকে নাকি ভালোবাসতেন।"

 -- "তাতে কী?"

 - "তাকে বিয়ে করলেই তো পারত। আমাকে কেন?"

দিবাকরের মতো সিরিজাও রেশমীকে ভুলতে পারছে না। কথাটা শুনে দিবাকরও অবাক হলো। সিরিজা এবার কি শুরু করেছে?

 -- "বিয়ের আগে হলে ওসব কোনো ব্যাপার নয়। বিয়ের পরে হলেই মুশকিল।"

 - "আমিও তো সেই কথাই বলছি। উনি তো এখনও রেশমিকে ভুলতে পারছেন না। খালি থেকে থেকে রেশমীর কথা স্মরণ করছেন।"

রজতের বউটা এবার দিবাকরকে একটু বকাঝকা দিল। - "দিবাকর বাবু এটা আপনার ঠিক নয়। এত সুন্দর বউ থাকতে আপনি আবার রেশমী কেন? আপনারা সব ব্যাটাছেলে গুলোই একরকম। রজতের সাথে আপনার তাহলে পার্থক্য রইলো কি?"

শ্বশুড় মশাই তখন কোনো কথা বলছিলেন না। ঘাড় নেড়ে মেয়ের কথায় সায় দিচ্ছিলেন।

দিবাকর কিছু বলার আগেই সিরিজা বলে উঠলো, "ভাবছি এবার আমিও কারুর সাথে প্রেম করবো।"

মাথাটা তো খারাপ হয়েই গেছে, এবার ওরা থাকতে থাকতে এ ফ্ল্যাট ছেড়ে পলায়ন করা ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই দিবাকরের। তারপর রজত যা পারে করুক। ওর দ্বারা আর কিছু করা সম্ভব নয়। ভেবেই পাচ্ছিল না, সিরিজা আসলে করতে কি চাইছে?

আড়চোখে সিরিজাকে দেখতে লাগলো। ওর আবার যখন তখন শাড়ীর আঁচল খসে বুক বেরিয়ে পড়ে। শ্বশুড় মশাই আর বউ এর সামনে বুক বেরিয়ে পড়লেই মুশকিল।

 -- "না না অমন কথা বোলো না। তোমার স্বামী এমনি এমনি বলেছে। উনি অতটা খারাপ নন।"

 - "আপনি কি করে বুঝলেন? আপনি কি ঘর করেছেন আমার স্বামীর সাথে?"

 -- "ঘর নাই বা করলাম। মানুষ চিনতে আমার ভুল হয় না। উনি খুব ভালো। তোমার সাথে মজা করছেন।"

 - "কিন্তু আমি যে সত্যি সত্যিই একজনকে ভালোবেসে ফেলেছি।"

 -- "মানে?"

 - "বেসেছি একজনকে। আপনাকে বলা যাবে না।"

সিরিজার স্পর্ধা দেখে দিবাকরও অবাক হয়ে যাচ্ছিলো। গ্রামের মেয়ে হলে কি হবে। রজতের বউ কে একেবারে ঘোল খাইয়ে দিচ্ছে। সামনে যে ওর বাপও বসে আছে, তাকেও ভ্রূক্ষেপ করছে না। ঘুরে ফিরে আসল জায়গায় ফিরে এসেছে। এবার যদি প্রেমিক হিসেবে রজতের নামটা বলে দেয় কি হবে? কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে। ওকে বাধা দিয়ে দিবাকর বললো, "কি যা তা বলছো?"

সিরিজা অনায়াসে বললো, "আমি ঠিকই বলছি।"

রজতের বউ এর মুখটা এবার খুব গম্ভীর হয়ে গেল। ও বুঝেই উঠতে পারলো না। এ আবার কার প্রেমে পড়লো? রজত নয় তো?

এক কথাতেই কুপোকাত। যেন সমস্ত তর্জন গর্জন শেষ। রজতের বউ এর মুখ দিয়ে আর কথা বেরোচ্ছে না। মাথা নীচু করে ফেলেছে। অপ্রস্তুতে পড়ে গেছে শ্বশুড় মশাইও। দিবাকর দাঁড়িয়ে আছে গোবেচারার মতন। আর সিরিজা মুচকী মুচকী হাসছে। যেন সব বাজীমাত করে দিয়েছে ও একাই।

রজতের বউ বাপকে বললো, "বাবা চলো, আমার আর ভালো লাগছে না।"

 - "সেকী আপনারা বসবেন না?" দিবাকর তখন প্রশ্ন করছে।

 -- "বসার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।"

 -- "তা কি করে হয়? তোর জন্যই তো এখানে এলুম। নইলে আমার তো আসার কথা ছিল কাল সকালে। এখন হঠাৎ চলে যাবি বলছিস কেন?" রজতের শ্বশুড় মশাইও তখন প্রশ্ন করছে মেয়েকে।

 -- "এমনি। আমার আর ভালো লাগছে না তাই।"

 -- "এমনি মানে? রজতকে এখানে ডেকে পাঠানো হলো। ওতো এখানে এসে আমাদের দেখতে না পেলে চটে যাবে। খামোকা এলি কেন তুই?"

সিরিজা কোনো জবাব দিচ্ছে না। দিবাকর বললো, "হ্যাঁ হ্যাঁ। বসুন। রজত আসছে। আপনার দরকারী কাজটাও তো হয়ে যাবে।"

বউ যেন হঠাৎ সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছে। এখন ওর দরকারী কাজটা মাথা থেকে উবে গেছে। সিরিজার মুখের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। কিন্তু সিরিজা খুবই স্বাভাবিক। দিবাকরের মতন চোখে মুখে বিচলিত হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। ভাবখানা এমন ওর বউটা এখন গেলে বাঁচা যায়।

রীতার বাবা ভূরু কুঁচকে বললেন, "তোর শাড়ীটাড়ী গুলোর কি হবে। আমাকে যে বললি তোর শাড়ী ছাড়া অসুবিধে হচ্ছে। এখন তাহলে কি হবে?"

 -- "কেন ও বাড়ীতে কি আমার পরার কোনো শাড়ী নেই? না হয় আরেকদিন আসবো। তাতে কি আছে?"

রজতের বউ এর এমন সিদ্ধান্ত বদল করার ব্যাপারটা দেখে দিবাকরের কেমন সন্দেহ হলো। ও ধরেই নিল রজতের বউ কিছুটা না হলেও আঁচ করতে পেরেছে ব্যাপারটা। এবার ও অন্যরকম বুদ্ধি খাটাচ্ছে। সিরিজা যে কি করলো। এর খেসারত এখন রজতকে দিতে হবে।

 - "আমি বলছিলাম কি, একটু বসলে ভালো হতো না? রজত তো এক্ষুনি এসেই পড়বে। আপনাদের দেখতে না পেলে তখন আমার ওপর রাগারাগি করবে। তাই বলছিলাম।"

 -- "রাগারাগি কেন করবে? বলবেন আমি বসে থেকে চলে গেছি। আজ হুট করে চলে এসেছি। এরপরে যখন আসবো তখন ওকে জানিয়েই আসবো। আর তখন তো আপনি আর আপনার স্ত্রী কেউই থাকবেন না। তাই আজকের মতন ঝ্যামেলাও আপনাকে পোয়াতে হবে না। আর আপনার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জেগে উঠতে হবে না। যা ঝ্যামেলা পোয়ানোর রজতই পোয়াবে।"

দিবাকর দেখলো বাপ মেয়ে দুজনেই সোফা ছেড়ে উঠে পড়েছে। আর ওদের আটকানো যাবে না।

রজতের স্ত্রী রীতা সিরিজাকে বললো, "চলি ভাই, তোমাকে মনে থাকবে। আশাকরি আবার দেখা হবে।"

ঝড়ের মতন বাপ মেয়ে দুজনে এল। আবার চলেও গেল। দিবাকরের সব প্রচেষ্টাতে জল ঢেলে দিল সিরিজা। এখন কি হবে? বদমায়েশী অভিসন্ধি মনে মনে যদি পোষণ করে থাকে রজতের বউ তাহলে তো জ্বালিয়ে মারবে রজতকে। নিশ্চিন্তে সিরিজা কে নিয়ে সঙ্গম বিহার কি সুখের হবে তখন? দিবাকরের যেন আফসোস যাচ্ছিলো না কিছুতেই। রাগের চোটে সিরিজাকে বলেই দিল, "দেখলে তো? এই জন্যই তোমাকে বলছিলাম, এ ঘরে এসো না। এখন সব দিলে তো গন্ডগোল করে। রজত এসে তোমাকেই বকাঝকা করবে।"

সিরিজা হাসছিল। শ্বশুড়মশাই আর রজতের বউ দুজনেই তখন প্রস্থান করেছে। যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব করে দিবাকরকে বললো, "ওর বউ বলছিল না রজতকে ডিভোর্স দেবে না। ভালোই তো। রজতকে জব্দ করতে গিয়ে এখন আমাদের প্রেম দেখে নিজেই জব্দ হবে। তোমার বন্ধুকে ডিভোর্স না দিয়ে ও থাকতে পারবে না। রজতও তখন ঝ্যামেলা থেকে মুক্তি পাবে।

তাজ্জব হয়ে যাচ্ছিলো দিবাকর। অবাক গলায় বললো, "কি বলছো তুমি? তুমি ওর বউকে দেখিয়ে দেখিয়ে রজতের সাথে প্রেম করবে?"

 - "তাই যদি বলো তাহলে তাই। আচ্ছা তুমি এত ভয় পাও কেন দিবাকরদা? রজত কিন্তু এরকম নয়।"

 -- "আমি জানি ও খুব ডেসপারেট। কিন্তু বউ এর ঝ্যামেলা আর কে পোয়াতে চায় বল। দেখলে না তোমাকে কেমন আমার বাসায় পাঠাতে চাইছিল রাত্রিরে। ভুলে গেলে?"

 - "এবার থেকে সে সাহসটা আমি জোগাবো। আমি পাশে থাকলে ও আর ভয়ই পাবে না।"

অবাক হয়ে দিবাকর বোকার মতন তাকিয়ে রইলো সিরিজার দিকে। ওকে আর মাথা খারাপ করতে না বলে সিরিজা বললো, "এবার তাড়াতাড়ি তুমি চানে ঢোকো তো। আমাদের এবার বেরোতে হবে না? ওতো এসে পড়লো বলে। বউও নেই শ্বশুড়ও নেই। আমাদের বেড়ানোটা এখন খুব মজার হবে।"

তবু যাচ্ছে না দেখে সিরিজা নিজেই বাথরুম থেকে তোয়ালেটা নিয়ে এসে দিবাকরের হাতে ধরিয়ে দিল। বললো, "কি হলো, যাও। তুমি বেরোলে তারপর আমাকে চানে যেতে হবে না? দেরী করছো কেন? যাও।"

ঠিক ঐ মূহূর্তে তোয়ালেটা হাতে নিয়েও চানে যেতে ইচ্ছে করছিল না দিবাকরের। ওর যেন রজতকে এখন ফেস করতেই কেমন ভয় করছে। চুলোয় যাক রজত। সিরিজা যখন কথা শোনেনি, তখন রজতকে ফেস করতে হলে ওই করবে। ওর এখন এখানে থাকাটাই গোলমেলে ঠেকছে। দুজনের মাঝখানে আবার ফেউ হয়ে বেড়াতে যাবারও দরকার কি? যেতে হলে ওরা দুজন যাক। দিবাকরের তো যাবার কোনো প্রশ্ন নেই। সিরিজা ঠিক ওকে ম্যানেজ করে নেবে। ও বললো, "সিরিজা আমি বরং এখন যাই। রজতকে যা বলার তুমিই বলে দিও। আমি বরং পরে একদিন আসবো।"

 - "সেকী, তুমিও চলে যাবে?"

 -- "আমাকে যেতে দাও সিরিজা। আমি আমার কাজ করে দিয়েছি। বাকীটা তুমি সামলিও।"

 - "চান করবে না দিবাকর দা?"

 -- "না আর একদিন।"

চলে গেল দিবাকর। সিরিজা এখন ফ্ল্যাটে একা। আবার যদি সিরিজাকে পেয়ে রজতের কামনাবাসনাটা মাথা চাড়া দেয় অবাক হওয়ার কিছু নেই। হাজার হোক সিরিজাই ওর সবকিছু। কিন্তু বুলডোজার চালানোর মতন, নিঃশ্বাস ফুরিয়ে যাওয়ার মতন চুমুটা আগের মতই কি তীব্র হবে? ঘাড়ের কাছে রজতের বউ নিঃশ্বাস ফেললে তখন যে চুমু আরামদায়ক হবে না। সেদিকে খেয়াল আছে সিরিজার? ও তো বলেই খালাস হলো। এখন কি হবে?

সিরিজা একা একা বসে আপন মনে কি যেন ভাবতে লাগলো। যার শরীর ছুঁয়ে রজত ধন্য হয়ে গেছে, তাকে বুঝিয়ে দিতে ওর এত কষ্ট হবে? সিরিজা যেন হালকা মনেই ভাবতে লাগলো কথাটা। দিবাকর কেন যে ভয়ে ভয়ে চলে গেল সেটাই ওর কাছে অবাক লাগছিল।





কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





লেখক(Lekhak)-এ লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

লেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment