CH Ad (Clicksor)

Monday, September 8, 2014

সিরিজা - একটি উপন্যাস aka রজতের কামলীলা_Written By Lekhak (লেখক) [চ্যাপ্টার ১৯]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




সিরিজা - একটি উপন্যাস
Written By Lekhak (লেখক)








।। উনিশ ।।

রজতের কেনা নতুন শাড়ীটা সিরিজা যখন পড়ছিল রজত ওর সামনেই বসেছিল। মাথায় একটা ঘোমটা টেনে দিলেই নতুন বউ বউ দেখাবে। রজত বললো, "দাও না ঘোমটাটা। দেখি তোমাকে কেমন লাগে?"

উপভোগ্য যৌনসঙ্গমের পর নতুন বউ হিসেবে সিরিজাকে দেখতে ভীষন উসখুস করছিল মনটা। নীল রঙের লাইলন শাড়ী পড়ে সিরিজাকে পরীর মতন সুন্দর দেখাচ্ছে। রজতের দেওয়া উপহার সিরিজা বেশ সময় নিয়ে পড়ছিল। সিরিজা রজতকে বললো, "ইস, একদম বেছে বেছে পাতলা শাড়ীটাই কিনেছো? আমার আঁচলের তলা দিয়ে বুকের ওঠানামাটা তো দূরের লোকেদেরও চোখে পড়বে।"

 -- "এমন শাড়ীতেই তো তোমাকে মানায়।"

 - "আর কেউ যদি আমার দিকে খালি তাকায়?"

রজত হেসে বললো, "দূর, আমি তো তোমাকে ট্যাক্সিতে নিয়ে ঘুরবো। দূর থেকে তোমাকে দেখবে, এমন কার সাধ্যি?"

 - "কেন? আমি বুঝি পায়ে হেঁটে ঘুরবো না?"

 -- "এই ভর দুপুরবেলা পায়ে হেটে কোথায় ঘুরবে? শহর দেখতে হলে ট্যাক্সিটাই তো বেস্ট।"

 - "তোমার যদি একটা গাড়ী থাকতো, খুব ভালো হতো। তোমার পাশে বসে আমি গাড়ী করে ঘুরতাম।"

 -- "কিনবো, কিনবো। আগে আমার পুরোনো ঝেমেলাটা মিটতে দাও। তারপর দেখো তোমার জন্য আমি কি কি কিনি।"

শাড়ী পড়ে সেজেগুজে সিরিজা এবার রজতের দিকে পুরোপুরি মুখ ঘোরালো। বললো, "আর কি কিনবে আমার জন্য?"

 -- "এই পৃথিবীতে যা আছে, সব কিনে নেবো। আমার সিরিজার জন্য আমি সব কিনতেও রাজী।"

একটু কাছে এসে সিরিজা রজতের কাঁধের ওপর দুই হাত রাখলো। ওর দিকে তাকিয়ে বললো, "অত সোজা নয় বুঝলে? আমি গ্রামের মেয়ে তো, তাই আমার মন রাখার জন্য এসব বলছো।"

 -- "কেন? কিনতে পারি না নাকি? ছেলেরা ইচ্ছে করলে সব পারে। আমিও পারি। আমার সিরিজার জন্য আমি সব পারি।"

বলেই রজত একটা চুমু খেতে যাচ্ছিলো সিরিজার ঠোঁটে। ওকে বাধা দিয়ে সিরিজা বললো, "এই এখন আর নয়। এরপরে কিন্তু আমাদের আর বেরোনোই হবে না।"

একটা হালকা লিপস্টিক লাগিয়েছে সিরিজা ঠোঁটে। তাতেই মনে হচ্ছে আগুন জ্বলছে ওর ঠোঁটে। রজত চাইছিলো ওর আগুন ঠোঁটেই চুমুটা খেতে। লিপস্টিক খারাপ হয়ে যাবে বলে সিরিজা বললো, "এদিকে আমাকে সাজাবে বলছিলে, আর এখন আমার সাজ নষ্ট হয়ে গেলে বেরোতে পারবো? তখন তুমি একাই যেও।"

 -- "আচ্ছা আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে।"

রজত তখন মাথা নীচু করে সিরিজার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাব করছে। সিরিজা বললো, "সেই থেকে দুষ্টুমি করছো, আমাদের কতো দেরী হয়ে গেল বলো তো। কখনই বা খাবো, আর কখনই বা ঘুরবো?"

রজত বললো, "আমি একটা ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে আসি। একদম বাড়ীর সামনে। তারপর তুমি আর আমি, ট্যাক্সিতে চড়ে....."

 - "না না, এই প্রথম তোমার সাথে ঘরের বাইরে বেরুচ্ছি। একটু তো হাঁটি। ট্যাক্সি তো মোড় থেকেও পেয়ে যাবে।"

রজত সিরিজার কথার আপত্তি করলো না। ওকে পাশে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাবে। কেউ যদি তাকায়। ওর বুকটা দূর থেকে দেখে দেখুক না। সিরিজা ওদেরকে না দেখলেই হলো।

রজত সিরিজার হাতটা ধরে বললো, "চলো তাহলে যাই।"

সিরিজা হেসে বললো, "এবার ঘোমটাটা দেবো?"

এই প্রথম রজতের সাথী হয়ে বাড়ীর বাইরে বেরোলো সিরিজা। দুর্লভ মূহূর্তগুলো ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো এতদিন। সুখের সহবাসে সিরিজাকে নিয়ে যৌনমিলন করতে করতে চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে রজত ওকে বাইরে নিয়ে বেরোতেই ভুলে গেছে। আজ সেই ইচ্ছাটাও পূরণ হলো।

সিরিজার হাতটা ধরে রজত বললো, "ধ্যাত, এখন ঘোমটা দিতে হবে না। ওটাতো তোমাকে বউ হিসেবে কেমন লাগে সেটা দেখার জন্যই বলেছিলাম।"

ঘর থেকে বেরিয়ে গলিটা দিয়ে রজতের পাশে পাশে হাঁটছিলো সিরিজা। রজত হেসে বললো, "রাস্তায় তোমাকে যদি একটা চুমু খেতে পারতাম, দারুন হতো।"

 - "এই তুমি কিন্তু খেয়ো না। তাহলে সবাই কি ভাববে?"

রজত জানে লিপষ্টিক ঘসা সিরিজার ঠোঁটে চুমু খেতে পুড়িয়ে দিলে ভালোই লাগবে। কিন্তু এই রাস্তার মধ্যে কি করে তা সম্ভব? ও বললো, "ট্যাক্সিতে উঠি। তারপর তোমার ঠোঁটে চুমু খাবো।"

সিরিজা বললো, "খাওয়াচ্ছি দাঁড়াও!"

 -- "বারে? ট্যাক্সির মধ্যে খেলে আর কি দোষ?"

রাস্তার ওপরে হঠাৎই দাঁড়িয়ে সিরিজা বললো, "তাহলে এক্ষুণি খাও।"

 -- "এই না। তা খাওয়া যায় নাকি? তোমার সাজগোজ নষ্ট হয়ে গেলে? কেউ যদি দেখে ফেলে?"

মুখে বলাটা যত সহজ, করাটা তত সহজ নয়। ঘরের জিনিষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে করলে পাড়ার লোকেরা টিটকিরি মারবে। পাড়ায় টিকতে দেবে না। রজত তবু বললো, "এখনও দুপুর গড়িয়ে বিকেলটা হয় নি। সন্ধে হলে চুমুটা অনায়াসে খেতে পারতাম।"

সিরিজা বললো, "আর চুমু খেতে হবে না। এবার চলো তো।"

গলিটা পেরিয়ে রাস্তার মোড়ে এসেও রজত দেখলো একটাও খালি ট্যাক্সি নেই। দুপুরবেলা লোকজন বিশেষ চলছে না রাস্তা দিয়ে। একটা ট্যাক্সি বিকট আওয়াজ করতে করতে ওদের সামনে দিয়ে চলে গেলো। কিন্তু ট্যাক্সিটা খালি নয়। রজত বললো, "ট্যাক্সি না পেলে এই দুপুরবেলা তোমাকে নিয়ে আর কত হাঁটাই বলো তো?"

হাত ঘড়িতে টাইমটা দেখে রজত বললো, "নাহ সত্যিই অনেক দেরী হয়ে গেলো। তোমাকে নিয়ে আর একটু আগে বেরোলেই ভালো হতো।"

খালি একটা ট্যাক্সি ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। রজত ট্যাক্সিওয়ালাকে বললো, "ধর্মতলা যাবেন?"

 -- "হ্যাঁ যাবো, উঠুন।"

ড্রাইভারটা আড়চোখে সিরিজাকে একবার দেখলো। চোখের দৃষ্টিতে মুগ্ধতা। এমন চোখ ধাঁধানো নারী এই প্রথম উঠছে ওর ট্যাক্সিতে। সিরিজার মনে হলো, গাড়ীটা বোধহয় ওকে দেখেই দাঁড় করালো ড্রাইভারটা।

রজত সিরিজাকে পাশে নিয়ে শরীরে শরীর ঠেসে বসলো।

 - "চলুন তাড়াতাড়ি। আমাদের খুব দেরী হয়ে গেছে।"

 -- "ধর্মতলায় কোথায় যাবেন?"

 - "যাবো কোনো ভালো রেষ্টুরেন্টে। দুপুরের খাওয়াটা ওখানেই সারতে হবে।"

ধর্মতলা কোথায়? সিরিজা রজতকে বললো, "তুমি ধর্মতলায় যাবে?"

 -- "হ্যাঁ। ধর্মতলা হলো, এই শহরের হার্ট অব দ্য সিটি। আর একটু এগিয়ে চৌরঙ্গী তারপরে পার্কস্ট্রীট। কলকাতার সাহেবি পাড়া। তুমি তো দেখো নি। চলো আজ তোমায় সব দেখাবো।"

ড্রাইভারটা মুখ ঘুরিয়ে একবার তাকালো। যেন ওরও অবাক লাগছে। এই মহিলাটি বোধহয় অন্য জায়গা থেকে এসেছে।

রজত ভাবছে সিরিজাকে চুমুটা এবার খাবে কিনা। ওর কাঁধে পেছন দিক দিয়ে হাতটা রেখে বললো, "এই কাছে এসো না একটু।"

 - "আর কত কাছে আসবো বাবা, এই তো কাছেই রয়েছি।"

রজত সিরিজাকে চুমুটা খেতেই যাচ্ছিলো, সিরিজা বললো, "এই, এখন না। লোকটা কি ভাববে?"

 -- "সবাই তার নিজের বউকে চুমু খায়। আমি খাচ্ছি তো কার কি?"

 - "তাহলেও বলছি না পরে। আচ্ছা আচ্ছা ফেরার সময়। রাত্রিবেলা।"

রজত তাও মুখটা বাড়িয়ে দিচ্ছিলো সিরিজার দিকে। হঠাৎ ছন্দোপতন হলো, ড্রাইভারটা একটা কথা জিজ্ঞেস করাতে।ও বললো, "আচ্ছা, আমি কি পার্কস্ট্রীট যাবো?"

চুমু খাওয়াতে ব্যাঘাত ঘটালেই বিরক্তি এসে যায়। রজত বললো, "আমি তো পার্কস্ট্রীট বলিনি। ধর্মতলাতেই চলুন।"

ধর্মতলায় অম্বর রেষ্টুরেন্টটা বেশ ভালো। একতলা, দোতলা, তিনতলা। তিনটে তলাতেই রেষ্টুরেন্ট। মনে আছে একবার রেশমিকে নিয়ে রজত এসেছিলো ডিনার করতে। সাথে দিবাকরও ছিলো। ফেরার সময় সে কি বৃষ্টি। রেশমি খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো সেদিন। - "এমা, এতো বৃষ্টি! আমি বাড়ী যাবোও কি করে?"

 - "কেন? তোমাকে ট্যাক্সীতে পৌঁছে দিচ্ছি আমি।"

রজত তখন রেশমির জন্য পাগল।

গাড়ীতে প্রবল ইচ্ছা থাকলেও রেশমিকে চুমুটা খাওয়া হয় নি সেদিন। কারন পাশে দিবাকর ছিলো। বারবার মুখ ঘুরিয়ে ড্রাইভারটাও দেখছিলো ওদের তিনজনকে। আজ যেন এই ড্রাইভারটাও একই জিনিষ করছে। রজত বিরক্ত হয়ে বললো, "আপনাকে বারবার জিজ্ঞাসা করতে হবে না। সোজা ধর্মতলাতেই চলুন।"

সিরিজার দিকে মুখ ঘুরিয়ে রজত দেখলো, সিরিজা হাসছে। রজত চুমুটা খেতে পারেনি বলে ওর বোধহয় মজা লেগেছে।

ড্রাইভারটি তখনও চমকে ওঠেনি। সুন্দরী মহিলাটিকে নিয়ে লোকটা যেন কি শুরু করেছে। ও আর তাকালোই না পেছন ফিরে।

রজত বললো, "তোমার আগুন ঠোঁটে একটা চুমু খেতে দাও না সিরিজা?"

 - "দিতে পারি, কিন্তু আমার লিপস্টিক কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে।"

তাও তো বটে। রজত বললো, "তাহলে থাক। আমি বরং পরে। তবে গালে তো এখন একটা খেতে পারি।"

সিরিজার গালে চুমু খাওয়ার সময় গাড়ীটা একটা ঝাঁকুনি খেলো। রজত বললো, "আস্তে চালান।"

ড্রাইভারটা বললো, "কি করবো? বড় একটা গর্ত পড়ে গিয়েছিলো।"

অম্বর বার এন্ড রেষ্টুরেন্টে পৌঁছোতে সময় লাগলো পাক্কা চল্লিশ মিনিট। ঘড়িতে বিকেল চারটে বাজে। সিরিজা বললো, "এখানে খাবার পাবে এখন?"

রজত বললো, "এখানে সবসময়ই খাবার পাওয়া যায়। ভেতরে ঢুকি চলো। দেখবে কি দারুন রেষ্টুরেন্ট।"

একতলাটা পুরো ভর্তি। রজত বললো, "চলো তোমাকে নিয়ে আমি দোতলায় যাই।"

সিঁড়ির ওপরে কার্পেট পাতা। ওঠার সময় সিরিজা বললো, "কি দারুন। আমি কোনোদিন ভাবিনি। এতো দামী রেষ্টুরেন্টে এসে খাবো।"

দুটো লোক নামছিলো দোতলা থেকে। সিরিজার দিকে তাকিয়ে ওরা দেখছিলো। রজত বললো, "তুমি এমনই। সবাই খালি তোমার দিকে তাকায়। ভেতরে যখন ঢুকবো। তখনও দেখবে সবাই তোমার দিকে কেমন সবাই তাকাচ্ছে।"

দোতলায় বড় একটা হলঘর। রজত সিরিজাকে নিয়ে একটা টেবিলের মুখোমুখি বসলো। একতলার থেকে দোতলায় ভীড়টা কম। অল্প কিছু লোক বসে খাবার খাচ্ছে। দুটো ফ্যামিলি এসেছে। সাথে দুটো করে বাচ্চা।

এক ভদ্রলোক কিছুটা দূরে বসে ড্রিংক করছে একা একা। গ্লাসটা মুখে তুলে একবার সিরিজার দিকে তাকালো। সিরিজা বললো, "এখানে মদও পাওয়া যায়?"

 -- "হ্যাঁ এটা তো বার কাম রেষ্টুরেন্ট। ইচ্ছে করলে ড্রিংকও করা যায় আবার খাবারও খাওয়া যায়।"

খাবারের মেনু কার্ডটা হাতে নিয়ে রজত বললো, "কি খাবে বলো? অর্ডারটা দিই।"

 - "তুমি যা খাবে, আমিও তাই খাবো।"

 -- "চিকেন খাবে চিকেন? না ভাত আর মাছের ঝোল?"

ওয়েটার অর্ডার নিতে এসে সিরিজাকেই দেখছিলো, রজত তখন মেনুকার্ড এ চোখ বোলাচ্ছে। ওয়েটার এর নজর ঘুরিয়ে বললো, "এই যে এদিকে। দু জায়গায় রাইস, আর সাথে ডাল ফ্রাই দাও। পনীর মশালা আর চিকেন কারী। তাড়াতাড়ি। বড্ড খিদে লেগেছে।"

খাবারের অর্ডার নিয়ে ওয়েটার চলে গেলো। রজত বললো, "দেখেছো? সবাই তোমাকে কেমন দেখছে। এতোদিন তোমায় শুধু আমি দেখেছি, এখন বাকীরা দেখছে।"

সিরিজা বললো, "এখান থেকে খাবার খেয়ে কোথায় যাবে?"

রজত বললো, "যাবার জায়গা তো অনেক আছে। ধর্মতলা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পার্কস্ট্রীট। তারপরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। যদি বলো নিউমার্কেটেও নিয়ে যেতে পারি।"

 - "মার্কেট?"

 -- "হ্যাঁ অনেক জিনিষ কিনতে পাওয়া যায়। যাবে?"

 - "আমি আর কি কিনবো?"

 -- "তুমি যেটা কিনতে চাইবে। সেটাই কিনে দেবো।"

সিরিজা বললো, "না না, আজ কিছু কিনবো না। আজ শুধু ঘুরবো। এখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে। তুমি না বলেছো আজ আমাকে নিয়ে ঘুরবে?"

 -- "বলেছি তো। চলো কোথায় যাবে? তুমি যেখানে যেতে চাইবে, আমি সেখানেই নিয়ে যাবো।"

সিরিজা বললো, "আমি ধর্মতলা ঘুরবো।"

রজত বললো, "আসলে এই জায়গাটা শুধু লোকে গিজগিজ করছে। তোমাকে নিয়ে একটু ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো।"

 - "কেন?"

 -- "নিরিবিলিতে তোমাকে বসে আদর করতাম। তোমার বুকে মুখ রাখতাম, তোমার ঠোঁটে চুমু খেতাম। আর....."

 - "আর কি করতে?"

রজত মিটিমিটি হাসছিলো। সিরিজা ওকে ধমকে বললো, "তাহলে আমায় ধর্মতলায় নিয়ে এলে কেন? তোমার নিরিবিলি জায়গায় রেষ্টুরেন্ট ছিলো না?"

 -- "আচ্ছা বাবা আচ্ছা। আমি তো এমনি ইয়ার্কি মারছি তোমার সঙ্গে।"

 - "হ্যাঁ তোমার ইয়ার্কি মারা বার করছি!"

রজত তখনও হাসছিলো। হঠাৎ দিবাকরের কথা তুলে সিরিজাকে বললো, "দিবাকরটা কি বোকা। বললাম থাকতে, একসঙ্গে ঘুরতাম। তা না কি না চলে গেলো।"

সিরিজা মুখটা নিচু করলো, বললো, "আমিও তো বলেছিলাম থাকতে। শুনলো না দিবাকরদা। চলে গেলো।"

খাবারটা একটু পরে সার্ভ করলো ওয়েটার। রজত বললো, "চামচে ধরে খেতে না পারলে হাত দিয়েই খাও। এখানে কেউ দেখবে না। আমিও হাত দিয়েই খাচ্ছি।"

সিরিজা বললো, "দেখি না একটু চেষ্টা করে। পারি কিনা?"

রজত চামচেটা হাতে ধরে সিরিজাকে বললো, "প্রথম গ্রাসটা তাহলে আমি তোমার মুখে পুরে দিই।"

চামচেটা মুখে দিয়ে সিরিজাকে ডাল মাখানো ভাতটা খাইয়ে দিচ্ছে রজত। পাশ থেকে একা বসা ঐ লোকটা আপন মনে উঠলো, "ওহ্ লাভলী!"

সিরিজা মুখ ঘুরিয়ে তাকালো লোকটার দিকে। বললো, "লোকটা কি রকম করে উঠলো দেখলে?"

রজত বললো, "সঙ্গে করে যাকে নিয়ে এসেছি, সবাই দেখছে আর প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। এরপরে আমি কোথায় যাই?"

সিরিজাও রজতের দেখাদেখি চামচে করে ওর প্লেট থেকে একটু ভাত তুললো। চামচেটা রজতের মুখের সামনে ধরলো, বললো, "দেখি এবার আমিও তোমাকে খাইয়ে দিই।"

রজত মুখ বাড়িয়ে চামচেটা মুখে পুরে নিল। চোখ ঘুরিয়ে দেখলো, লোকটা তখনও ওদের দেখছে। বিশেষ করে সিরিজাকে। যেন মোহিত হয়ে গেছে। সিরিজার ম্যাজিক বলে কথা। আবার একটা কিছু বলে উঠলে সিরিজাও চমকে উঠবে।

রজত লোকটাকে অত পাত্তা না দিয়ে সিরিজার দিকেই তাকালো। খেতে খেতে দিবাকরের নামটা আবার উল্লেখ করলো। বললো, "তোমাকে যাবার আগে কিছু বলে গেছে দিবাকর? ওকে বলেছিলাম, তিনজনে মিলে ঘুরতে যাবো। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আসছি। ছুটিটাও তো মঞ্জুর হয়ে গেল। এখন বাবু যে কেটে পড়লো, আমাদের যাওয়াটা তাহলে কি হবে?"

 - "আসলে দিবাকরদা তোমার শ্বশুর আর বউ এর ভয়ে চলে গেছে। তুমি তো দিবাকরদাকে তখন ফোন করেই সব জানতে পারলে। আমিও ভয়ডর না রেখে তোমার বউকে সোজা সাপ্টা বলে দিয়েছি। দিবাকরদা চেয়েছিল আমি চুপচাপ থাকি। উনিই ব্যাপারটা সামলে নেবেন। মাঝখানে আমি তোমার বউ আর শ্বশুরের মাঝখানে এসে পড়াতে উনি একটু ভয় খেয়ে গেছেন। তুমি ব্যাপারটা কিভাবে নেবে? তাই অপেক্ষা করলো না, চলে গেল।"

রজত হেসে বললো, "ওকে একবার মোবাইলে ধরার চেষ্টা করবো নাকি? দেখি ব্যাটা কি করছে?"

সিরিজা রজতের হাতে হাত রেখে ওকে বাধা দিয়ে বললো, "না এখন থাক। আমরা এখন ঘুরবো, ফিরবো। একবারতো কথা বলেছো, তুমি বরং ঘরে ফিরে দিবাকরদার সাথে কথা বোলো।"

রজত সেলফোনটা টেবিলের ওপরই রাখলো। সিরিজার দিকে তাকিয়ে বললো, "আচ্ছা সিরিজা, তোমার কি মনে হয় না, কাল রাতে দিবাকর যেন একটু অন্যরকম হয়ে গেছিলো।"

 - "কি রকম?"

 -- "এই হঠাৎই রাত বিরেতে আমাদের ঘরে চলে এল। তারপর মাথা ঘুরে পড়ে গেল। তোমার কি ওগুলো সত্যি মনে হয়?"

সিরিজা খেতে খেতে রজতের মুখের দিকে ভালো করে তাকালো। বললো, "তোমার কি মনে হয়?"

 -- "আমার তো মনে হয় সত্যিই। তবুও কেমন যেন খটকা লাগে মাঝেমধ্যে।"

সিরিজা ঘুরিয়ে রজতকে বললো, "তুমি তোমার বন্ধুকে বিশ্বাস করো?"

 -- "বিশ্বাস তো করি।"

 - "তাহলে আবার খটকা কিসের?"

রজত বললো, "তাও কেমন জানি....."

 - "আসলে দিবাকরদার কোনো দোষ নেই। সবই ওর কপালের দোষ। ভালোবাসার জন্য কাউকে পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।"

 -- "সব ঠিক হয়ে যাবে?"

 - "হ্যাঁ। ঐজন্যই তো তোমাকে বললাম, রেশমির কথা। দিবাকরদার এখন ঐ মেয়েটাকে খুব দরকার।"

রজত মনে মনে বললো, "আমিই বা রেশমিকে এখন কোথায় পাই? সিরিজা যে দেখি থেকে থেকেই এখন রেশমির কথা বলছে। দিবাকরকে সাথে নিয়ে যদি রেশমিকে খুঁজতে পারতাম খুব ভালো হতো।"

খাবার খেয়ে অম্বর রেষ্টুরেন্ট থেকে ওরা বেরোলো দুজনে একসাথে। রজত বললো, "সত্যিই তুমি নিউমার্কেট যাবে না তো?"

সিরিজা বললো, "না।"

 -- "কিছু কিনবে না তো?"

 - "না কিনবো না। আমি এখন শুধু ঘুরবো।"

ধর্মতলাটা লোকে লোকারণ্য। এই ভীড়ের মধ্যে সিরিজাকে নিয়ে হাঁটতেও রজতের ইচ্ছে হচ্ছিল না। তার থেকে নিরিবিলিতে কোথাও গিয়ে বসলে কত ভালো হতো। রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সিরিজাকে নিয়ে কিছুটা পায়ে হেঁটে রজত দুম করে আবার একটা ট্যাক্সি ধরে বসলো।

 - "একি আবার কোথায় যাবে? ট্যাক্সি ধরলে যে?"

 -- "ওঠো না বলছি।"

সিরিজাকে তাড়াতাড়ি ট্যাক্সিতে তুলে রজত ওর পাশে উঠে বসল। একটু বিরক্ত হয়েই সিরিজা বললো, "তোমাকে বললাম, আমি ঘুরবো, আর তুমি কিনা আমাকে ট্যাক্সিতে ওঠালে?"

রজত বললো, "কেন এবার আমরা ট্যাক্সিতে করে ঘুরব।"

 - "দূর। ট্যাক্সি করে ঘোরার মধ্যে কোন আনন্দ আছে নাকি?"

 -- "তোমাকে এবার এমন জায়গায় নিয়ে যাবো, তোমার ওখানে গেলেই দারুন লাগবে, আনন্দও পাবে।"

 - "কোথায়?"

 -- "চলোই না বলছি"

রজত কিছু বললো না সিরিজাকে। একটু পরে ড্রাইভারটাও জিজ্ঞাসা করলো, "কোথায় যাবো স্যার?"

রজত ওকেও কিছু না বলে শুধু বললো, "সোজা চলুন, আমি একটু পরে বলছি।"

বেশ অবাক হলো সিরিজা। রজত ড্রাইভারকেও কিছু বলছে না। অথচ ওকে ট্যাক্সি করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

ধর্মতলা পেরিয়ে চৌরঙ্গী। তারপরে পার্কস্ট্রীট। ডানদিকে ময়দান। একটু দূরে সামনের দিকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল। রজত জানালার কাঁচ দিয়ে সিরিজাকে দেখালো, "ঐ দেখ ভিক্টোরিয়া।"

 - "এ মা, তুমি নামবে না?"

 -- "আজ নয় সিরিজা, আর একদিন।"

 - "তাহলে তুমি এখন আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?"

রজত এখনও জায়গাটার কথা বলছে না। সিরিজা অবাক হচ্ছে, সেই সাথে ড্রাইভারও। একটা সিগারেট ধরিয়ে এবার সিরিজার দিকে হেসে বললো, "কেন, আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না?"

 - "বিশ্বাস হবে না কেন? আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করছি তোমায়। আমায় বলতে কোনো অসুবিধে?"

আরো খানিকটা এগিয়ে এসে ড্রাইভার বললো, "স্যার এবার অন্তত বলুন, কোথায় যাবো? ডানদিকে না বাঁদিকে?"

রজত বললো, "সোজা নিন, একেবারে হাজরার মুখ থেকে মনোহরপুকুর ধরবেন।"

মনোহরপুকুর? সিরিজা রজতকে প্রশ্ন করলো, "সেখানে কে আছে?"

রজত বললো, "কেন রেশমি?"

 - "রেশমি? তুমি যে বললে ওর বাড়ী তুমি চেনো না।"

 -- "বাড়ী আমি সত্যিই চিনি না। তবে মনোহরপুকুরে ও থাকতো সেটা জানতাম। ওখানে তোমাকে নিয়ে পৌঁছে দিবাকরকে একটা ফোন করবো। বলবো সিরিজাকে নিয়ে খুঁজতে এসেছি তোমার রেশমীকে? কোন বাড়ীটায় থাকতো সেটা এখন বলো।"

রজত যে তড়িঘড়ি সিরিজার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে শুরু করে দেবে, সিরিজা কল্পনাও করতে পারেনি। অবাক হয়ে যাচ্ছিলো রজতের হঠাৎই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া দেখে। একেবারে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে রজতকে বলে বসলো, "তুমি সত্যি রেশমীকে খুঁজতে বেরিয়েছো, আমি ভাবতেই পারিনি।"

রজত বললো, "কেন তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?"

 - "সত্যি?"

 -- "হ্যাঁ সত্যিই তো। রেশমীকে খুঁজতেই তো যাচ্ছি।"

একেবারে মোহিত হয়ে সিরিজা কিছুক্ষণ রজতের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মুখে কোনো কথা নেই। রজত বললো, "কি, এবারে খুশী তো?"

 - "খুশী।"

 -- "তাহলে একটা চুমু খাই।"

সিরিজা বললো, "কি?"

 -- "বলছি তাহলে একটা চুমু খাই।"

 - "তুমি কি বলছো টা কি? এই গাড়ীর মধ্যে?"

 -- "হ্যাঁ গাড়ীর মধ্যে। অসুবিধাটা কি?"

 - "যাঃ। দুষ্টু কোথাকার!"

 -- "বাঃ। যেই চুমু খেতে চাইলাম অমনি দুষ্টু হয়ে গেলাম। ঘরে খেতে পারি, আর গাড়ীতে খেলেই যত দোষ। ট্যাক্সিতে তো অনেকেই চুমু খায়,আমিও খাই না একটা।"

ট্যাক্সি ড্রাইভারটা এবার রজতের কথা শুনে মুচকী মুচকী হাসছিল। সিরিজা রজতকে বাধা দিয়ে আসতে আসতে বললো, "এই না এখন না, লোকটা কি ভাববে।"

 -- "ভাবুক।"

রজত সিরিজার ঠোঁটে যেই চুমুটা খেতে যাচ্ছিলো অমনি সিরিজা এবার বললো, "দাঁড়াও। আগে রেশমী, তারপরে চুমু।"

বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হতাশ হয়ে গেল রজত, সিরিজাকে বললো, "আশ্চর্য, রেশমীর খোঁজার সাথে চুমু খাওয়ার শর্তের কি আছে? রেশমী তো দিবাকরের জন্য। রজতের জন্য যে, তাকে চুমু খেতে পারবো না কেন? এমন শর্তের কোনো মানে হয়?"

সিরিজা মুচকী মুচকী হাসছিল জানালার দিকে মুখ করে, রজত যেন টাইট খেয়ে গেছে সিরিজার কাছে। বললো, "সিরিজা তুমি এমন শর্ত আরোপ করে বসলে, আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।"

সিরিজা মুখ ঘুরিয়ে তাকালো রজতের দিকে। যেন বুঝতে পারেনি রজতের কথাটা। বললো, "কেন?"

 -- "আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম, যে বাড়ীটায় ও থাকতো, সেখানে ও এখন থাকে না। দিবাকরকে এখন ফোন করলে দিবাকরও সেই কথাই বলবে, তবুও বাড়ীটা খোঁজার জন্য যাচ্ছি, শুধু তোমার জন্য। যদি ওর কোন হদিশ পাওয়া যায়। জানি ওকে পাব না, তবুও যাচ্ছি, তোমার মনটা রাখবো বলে। আর তুমি কিনা বললে আগে রেশমী, তারপরে চুমু। তাহলে আমার কি হবে?"

কথাটা বলে এবার রজতও জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। সিরিজা বুঝলো রজত বেশ সিরিয়াস হয়ে গেছে। ও রজতের মুখ ঘোরানো অবধি অপেক্ষা করতে লাগলো, কিছুক্ষণ পরে নিজেই রজতকে খুশী করার জন্য বললো, "এই শোনো।"

রজত মুখ ঘোরালো।

সিরিজা বললো, "চুমুটা খাবে বলছিলে। খাও।"

হঠাৎ এমন মত পরিবর্তন। রজত তবু বললো, "চুমু খাওয়ার জন্য এত কষ্ট, আগে কখনও পাইনি তোমার কাছ থেকে।"

মনে মনে বললো, "দেখো দিবাকর, তোমার রেশমীর জন্য আমার কি দশা হয়েছে!"

গাড়ীতে সিরিজার দিকে জানালার কাঁচটা পুরোটা খোলা, রজত কাঁচটা একটু ওপরে তুলে দিয়েই মুখটা বাড়ালো সিরিজার ঠোঁটের দিকে। গাড়ীর মধ্যে চুমু খাওয়ার সাধ পূর্ণ হতে চলেছে, ওদিকে ট্রাফিক সিগনালে আটকে গেছে গাড়ী। এদিকে সিরিজার কাছ থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে রজত তখন মাতোয়ারা। পাশাপাশি একটা লাল মারুতী গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়েছে সিগন্যালে। জানালার কাঁচ দিয়ে মুখ বার করে একটা বাচ্চা ছেলে পাশে দাঁড়ানো রজতের ট্যাক্সিটাকে দেখছে। রজত অপেক্ষা করছিল, গাড়ীটা ছেড়ে দিলেই ঝপ করে চুমুটা খেয়ে নেবে সিরিজার ঠৌঁটে। বাচ্চাটা তখন চোখ বড় বড় করে ওদের দুজনকে দেখছিল। ছেলেটার গায়ের রঙ ধবধবে সাদা, ফুটফুটে বাচ্চা।

সিরিজা রজতকে বললো, "দেখ কি সুন্দর ঐ বাচ্চাটা। আমাদের দুজনকে দেখছে।"

বলে ও নিজেও তাকিয়ে দেখতে লাগলো বাচ্চাটাকে। ট্যাক্সির মধ্যে থেকে বাচ্চাটার সাথে অঙ্গভঙ্গী করতে লাগলো সিরিজা। দূর থেকে বাচ্চাটাকে চুমু ছুঁড়ে ওর সাথে কথাও বলতে লাগলো ও।

আর এদিকে বিরক্ত হতে লাগলো রজত। এতক্ষণ রেশমীর জন্য ওর সিরিজাকে চুমু খাওয়া হচ্ছিল না, এবার আবার একটা বাচ্চা এসে চুমু খাওয়াটাকে আরো বিলম্ব করে দিচ্ছে। গাড়ীটা এবার ছাড়তেই রজত যেন স্বস্তি পেল, বাচ্চাটার দিকে ও নিজেও হাত নেড়ে টা টা করে দিল। তারপর সিরিজার শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটের একদম কাছে ঠোঁটটা নিয়ে এসে বললো, "এবার?"

সিরিজা চোখ বুঁজে বললো, "তাড়াতাড়ি খাও।"

রজত যেই সিরিজার ঠোঁটে ঠোঁটটা ছোঁয়াতে গেল, ড্রাইভারটা সঙ্গে সঙ্গে বললো, "দাদা মনোহরপুকুর এসে গেছে। এবার কোথায় যাবেন?"

এতো মহা জ্বালায় পড়া গেছে দেখছি। যখনই চুমু খেতে যাবো, তখনই বিপত্তি। সবাই এমন চুমু খাওয়ার সাথে শত্রুতা করছে কেন? রজতের আর চুমু খাওয়া এ যাত্রায় হলো না। ও ভীষন আপসেট হলো। সিরিজা মজা পেয়ে এমন হাসি দিল, যেটা রজত অনেকদিন মনে রাখবে।

ড্রাইভারকে গাড়ীটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করাতে বললো রজত। তআরপর বললো, "দাঁড়ান দাঁড়ান, আমি একজনকে ফোন করে নিই। বাড়ীটা আসলে ঠিক কোথায় এই লোকই বলতে পারবে।"

দিবাকরকে মোবাইলে ধরার চেষ্টা করলো রজত।

 -- "হ্যালো কে দিবাকর?"

 - "বলছি।"

 -- "আমি রজত বলছি। এখন আমি ঠিক মনোহরপুকুরে ট্যাক্সি নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছি। সিরিজাও আছে আমার সাথে।"

 - "তোমরা ঘুরতে বেরিয়েছো?"

 -- "না তোমার রেশমীকে খুঁজতে বেরিয়েছি।"

 - "রেশমীকে? কি বলছো টা কি?"

 -- "ঠিকই বলছি। বাড়ীটা এক্সাক্টলি কোথায় বলতে পারবে?"

 - "কিন্তু রজত সে বাড়ীতে তো ও এখন থাকে না। আমি অনেকদিন আগে একবার গিয়েছিলাম, পাইনি।"

রজতকে যেন সিরিজার মন রক্ষা করতে হবে। ও সেভাবেই দিবাকরকে বললো, "সে তো আমিও জানি। তবুও সিরিজাকে নিয়ে একবার অন্তত যেতে চাই। ও খুব করে বলছে রেশমীর কথা। চোখের দেখা না পেলেও একবার যদি কোন হদিশ পাই।"

দিবাকর রজতের কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলো। ভেবে পাচ্ছিল না রজত হঠাৎ এত উতলা হয়ে পড়েছে কেন রেশমীকে পুনরায় পাওয়ার জন্য। বুঝলো এসবই সিরিজার জন্য হচ্ছে। রজতের ফ্ল্যাটে সিরিজার সাথে ওর ঐ ঘটনা ঘটার পর থেকে সিরিজা বুঝতে পেরেছে দিবাকরের মনের ব্যাথাটা। এরকম ভাবে একা একা থাকতে আর কার ভালো লাগে? সত্যি যদি রেশমীর হদিশ একবার পাওয়া যায়?

সেটা ভেবে দিবাকর রজতকে বললো, "তুমি মনোহরপুকুরের ঠিক কোন জায়গাটায় এখন রয়েছ বলতে পারবে? আমি তাহলে বলে দিচ্ছি বাড়ীটা ঠিক কোথায়?"

রজত বললো, "আমি এখন চলে এসেছি ঠিক দেশপ্রিয় পার্কের কাছে। ট্যাক্সিটা পার্কের একটু আগে দাঁড় করিয়ে রেখেছি। এবার বলো কি করবো?"

 - "তুমি তো বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছ। ওটা ল্যান্সডাউন রোড। ট্যাক্সিটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে তোমাকে ব্যাক করে আসতে হবে। বাঁদিকে ধরে একটু এলেই বাঁহাতে মনোহরপুকুর রোড পড়বে। ট্যাক্সিটা ঘুরিয়েই দেখবে, একটা সরু গলি ঢুকেছে, ডানহাতে ঠিক দুনম্বর বাড়ীটায় একতলায় ও থাকতো।"

রজত বললো, "ইস তুমি থাকলে কত ভালো হতো। আমি কি এতো মনে রাখতে পারবো?"

সিরিজা এতক্ষণ পাশে বসে ওদের কথা শুনছিল। বললো, "মনে না রাখার কি আছে? চল না আমিও ঠিক খুঁজে নেব।"

অবাক হয়ে গেল রজত। গ্রামের মেয়ে সিরিজা একদিনেই ট্যাক্সিতে বেরিয়ে শহর চিনে নিল। ওকে বললো, "বেশ, তাহলে তো আমার চিন্তা নেই।"

ড্রাইভারকে ট্যাক্সিটা ঘুরিয়ে নিতে বললো রজত। দিবাকরকে বললো, "ঠিক আছে রাখো। আমি পরে তোমাকে আবার ফোন করছি।"

যেতে যেতে রজতের একটা চিন্তা মাথায় কিন্তু ভালোমতন এল। সিরিজাকে নিয়ে ও যাচ্ছে রেশমীর বাড়ীতে। যদিও রেশমী ওখানে এখন থাকে না। শুনেছে ও নাকি ভাড়া থাকতো ওখানে। দোতলায় নিশ্চয়ই বাড়ীওয়ালা থাকেন। তিনিই যদি কোনো হদিশ দিতে পারেন। যদি বলে দিতে পারেন রেশমীর নতুন ঠিকানাটা। কিন্তু সত্যিই রেশমী যদি ঐ বাড়ীতে থাকতো, তাহলে সিরিজাকে রজতের সাথে দেখে রেশমী কি ভাবতো? রজত কি জবাব দিহি করতো রেশমীর কাছে? কি পরিচয় দিত সিরিজার? বলো তো এককালে তুমি ছিলে আমার পুরোনো সঙ্গিনী। আর এখন আমার নতুন সঙ্গিনী হচ্ছে সিরিজা। আজ তাকে সাথে করে নিয়ে এসেছি, তোমায় দেখাবো বলে?

কি ভাবতো রেশমী? ভালোবাসার ছল করেও সাধ মেটেনি? আবার নতুন করে এসেছ কাটা ঘায়ে নুনের ছেটা দিতে? সত্যি কথাটা বলতে চেষ্টা করেও রজত হয়তো থমকে যেত রেশমীর কাছে। দিবাকরের জন্য হঠাৎ তার এত বন্ধু প্রীতি? রেশমী হয়তো বিশ্বাসই করতো না। রজত মনে মনে ভাবছিল সিরিজার চাপে পড়ে সত্যিই কেমন যেন দূঃসাহসিক কাজ করে ফেলেছে ও।

ট্যক্সিওয়ালা বললো, "বাঁ দিকে মনোহরপুকুর রোড। এবার গাড়ীটা ঘোরাবো?"

 - "হ্যাঁ ঘোরান ঘোরান। বাঁদিকেই একটা গলি পড়বে।"

ঠিক গলির মুখটাতে ট্যাক্সিওয়ালাকে গাড়ীটা দাঁড় করাতে বললো রজত। সিরিজাকে বললো, "তুমি বসো, আমি দেখে আসছি।"

সিরিজা হেসে বললো, "কেন, আমি যাবো না?"

 -- "না না, তোমায় যেতে হবে না। আমিই দেখে আসছি। আমি শুধু দেখব বাড়ীওয়ালা আছে কিনা? রেশমীর খোঁজ যদি কেউ দিতে পারে তাহলে উনিই দিতে পারবেন। তুমি ট্যাক্সিতেই বসে থাকো, আমি এক্ষুনি আসছি।"

রজত গাড়ী থেকে নেমে গেল। সিরিজা ট্যাক্সিতে একা বসে। দুটো এলাকার ছেলে সামনের চায়ের দোকানটায় বসে সিরিজাকে বিস্ময় সহকারে দেখছে। সিরিজা একবার ওদেরকে দেখেও খুব একটা ভ্রুক্ষেপ করলো না। ও আপন মনে ট্যাক্সিতে বসে রইলো। রজত তখন গলির ভেতরে ঢুকে পড়েছে। গলিতে ঢুকেই ডানদিকের দু নম্বর বাড়ীটা। সাদা রঙের দোতলা বাড়ীটা। এখানে থাকতো রজতের একসময়ের সঙ্গিনী রেশমী।

একজন পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। রজতকে জিজ্ঞেস করলো, "কাকে খুঁজছেন?"

 - "না এখানেই একজন থাকতো"

 -- "কে?"

 - "আপনি চিনবেন কি তাকে?"

 -- "কেন চিনবো না? আমি এ পাড়াতে বাস করছি তিরিশ বছর হলো। আপনি স্বচ্ছন্দে আমাকে বলতে পারেন।"

 - "একটি মেয়ে।"

 -- "মেয়ে? কি নাম?"

 - "রেশমী।"

 -- "রেশমী? ও সে তো অনেকদিন আগেই চলে গেছে এখান থেকে।"

 - "কোথায় গেছে সেটা বলতে পারবেন?"

 -- "সে তো আমি বলতে পারবো না দাদা। আপনি বরং দোতলায় বাড়ীওয়ালা থাকেন। ওনাকে জিজ্ঞাসা করুন।"

রজত মনে মনে বললো, "সে তো আমিও জানি। দিবাকর একটু আগে এই কথাটাই ওকে ফোনে বলেছে। এখন বাড়ীওয়ালাই একমাত্র সহায়। তাছাড়া কোনো উপায় নেই।"

রজত লক্ষ করলো সিরিজা ট্যাক্সি থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখছে। রেশমীর হদিশ পাওয়া গেল কিনা সেটাই হয়তো অনুমান করার চেষ্টা করছে। রজতকে কে ও যে কতটা কর্তব্য পরায়ণ করে ফেলেছে সেটা রজত ভালো করেই জানে।

বাড়ীর সামনে গিয়ে দরজার সামনে কলিংবেল টিপলো রজত। এই বিকেলবেলা ভদ্রলোক এখন বাড়ী আছে কিনা কে জানে? বাড়ীওয়ালা সামনে এলে রজত কি বলবে সেটাও মনে মনে ঠিক করে নিল। এখন শুধু রেশমীর খোঁজটা ওকে নিতে হবে।

একতলার ফ্ল্যাটটায় সামনে একটা বারান্দা। ঢোকার প্রবেশ পথ ওখান দিয়েই। দেখে মনে হচ্ছে একতলাটা খালি পড়ে আছে। রেশমীরা চলে যাবার পর হয়তো নতুন কোনো ভাড়াটে আসেনি এই ফ্ল্যাটে। রজত খেয়াল করলো দোতলাতেও একটা বারান্দা রয়েছে। কলিংবেলের শব্দ শুনে হয়তো ওখান দিয়ে কেউ মুখ বাড়াবে। ঠিক তাই হলো। আর একবার কলিংবেলের বাজানোর পরেই একজন বারান্দা দিয়ে নিচের দিকে মুখ বাড়ালেন। জিজ্ঞেস করলেন কে? তবে তিনি কোনো ভদ্রলোক নন। একজন মহিলা। মনে হয় বাড়ীওয়ালার স্ত্রী।

 -- "কাকে খুঁজছেন?"

 - "আমার নাম রজত।"

 -- "কোথা থেকে আসছেন?"

 - "আমি কলকাতাতেই থাকি। রেশমীদের আত্মীয়। ওরা এখানে থাকতো না? এখন কোথায় আছে বলতে পারবেন? আমি ঠিকানাটা জানি না। তাই এসেছিলাম।"

ভদ্রমহিলা একটু ভূরু কূঁচকালেন। বললেন, "রেশমী? আচ্ছা দাঁড়ান। আমি নিচে আসছি।"

হঠাৎ যেন রেশমীর নাম শুনে ভদ্রমহিলা একটু বিরক্ত হলেন। রজত ভাবলো, কি হলো ব্যাপারটা? হঠাৎ রেশমীর নাম শুনে অস্বস্তি কেন? কিছু প্রবলেম হলো নাকি?

নিচে এসে মহিলা দরজা খুললেন। রজত তখন সামনে দাঁড়িয়ে। মহিলাটি বললেন, "কি ব্যাপার বলুন তো? আপনি আত্মীয়। কলকাতায় থাকেন। অথচ ওরা কোথায় গেছে সেটা জানেন না? আমাকে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করছেন?"

একটু থতমত খেলো রজত। ইতস্তত করে বলতে চেষ্টা করলো, "না মানে......"

 -- "রেশমী আমাকে ঠিকানা দিয়ে যেতে বারণ করে গেছে। বলেছে ওর যাকে যা দরকার। ওই জানিয়ে দেবে তাকে। বলেছে ওর খোঁজে কেউ এলে আমি যেন তাকে ঠিকানা না দিই। আমাকে বারণ করে গেছে রেশমী।"

 - "বারণ করে গেছে?"

 -- "হ্যাঁ কি করবো বলুন? আমি তো কাউকে চিনি না। উটকো কোনো লোক। কেউ এলেই তাকে বিশ্বাস করে ঠিকানা কি করে বলবো? ও যখন থাকতো, তখন একটা ছেলে তো খুব আসতো। কি যেন নাম ছেলেটার? হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, দিবাকর। রেশমী চলে যাবার পরও ও অনেকবার এখানে এসেছে। আমাকে অনেকবার ঠিকানা জিজ্ঞেস করেছে। আমি দিই নি। কারন রেশমী আমাকে বারণ করে গেছে ওকেও ঠিকানা না বলার জন্য। সেই যে আপনাকে পাঠায় নি? আমি কি করে বিশ্বাস করবো?"

রজত মনে মনে বললো, এ তো মহা ফ্যাসাদে পড়া গেল। মহিলাটি একবারে ঝানু মহিলা। সহজে পটানো যাবে না মনে হচ্ছে।

 - "কিন্তু আপনি যা ভাবছেন, তাতো আমি নই।"

 -- "আপনি কে?"

 - "বললাম তো আমি রেশমীর আত্মীয়।"

 -- "ঠিক আছে আত্মীয় যখন, আপনি আপনার ফোন নম্বরটা দিয়ে যান, আমি রেশমীকে বলব, আপনাকে ফোন করে নিতে।"

 - "আপনার কাছে রেশমীর নম্বর আছে?"

 -- "আছে কেন?"

 - "নম্বরটা দিন না? তাহলে আমি ফোন করে কথা বলে নেব।"

 -- "তাহলে সেই একই ব্যাপার হলো, রেশমী যদি আমাকে পরে কিছু বলে, যে তুমি ফোন নম্বর কেন দিয়েছ? আমার কোনো আত্মীয় নেই। আমি কেন কথা শুনব? তার থেকে আপনিই ফোন নম্বরটা দিয়ে যান, সেটাই বরং ভালো হবে।"

রজত বুঝতে পারছিল, ভদ্রমহিলা বেশ চালু মহিলা। খুব সহজে রেশমীর হদিশ বার করতে পারবে না ওনার থেকে। আমতা আমতা করে কি যেন বলতে যাচ্ছিলো মহিলাটিকে। হঠাৎ দেখলো ট্যাক্সি থেকে সিরিজা এবার নেমে এগিয়ে আসছে ঐ বাড়ীটারই দিকে।





কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





লেখক(Lekhak)-এ লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

লেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment