CH Ad (Clicksor)

Monday, September 8, 2014

সিরিজা - একটি উপন্যাস aka রজতের কামলীলা_Written By Lekhak (লেখক) [চ্যাপ্টার ১৫]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




সিরিজা - একটি উপন্যাস
Written By Lekhak (লেখক)








।। পনেরো ।।

রজতকে তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে যেতে হলো চান করে রেডী হওয়ার জন্য। সিরিজাকে নিয়ে দুটো তিনটে দিন ওর বেশ আনন্দে কেটেছে। যৌনসুখের তাগিদে অফিসে যাওয়াই ভুলে গেছিল এই কটা দিন। সবসময়ে সিরিজার গায়ে লেগে লেগে থেকে টু-রুম ফ্ল্যাটের চার দেওয়ালের মধ্যে সময়টা ভালোই কাটছিল। এখন অফিসে গিয়ে সাতদিনের ছুটিটা যে করেই হোক বাগাতে হবে। বাইরে কোথাও ঘুরতে না গেলে মন ভরছে না। সিরিজাকে নিয়ে ফুর্তীটা বেশ ভালোই হবে।

শাওয়ারের জলে চান করতে করতে রজত ভাবছিল, দিবাকর সাথে থাকলে অসুবিধের কি আছে? ও আর সিরিজা থাকবে একটা ডবল বেড রুমে। দিবাকরের জন্য আলাদা একটা সিঙ্গেল রুম ভাড়া করে নিলেই তো হলো। সবসময় দিবাকর তো আর ওদের রুমে থাকছে না। তাছাড়া রাত্রিবেলাটা তো পুরোটাই পাওয়া যাবে সিরিজা কে নিয়ে মস্তি করার জন্য। তখন তো দিবাকর ওর নিজের রুমে শোবে। সিরিজার সাথে সঙ্গম আনন্দটা ভালোই জমবে। হোটেলরুমটা তখন হয়ে উঠবে যৌন আনন্দের লীলাক্ষেত্র। স্বচ্ছন্দ যৌনবিহারের মৃগয়াভূমি।

অবাঞ্ছিত একটা ঘটনা সকালবেলা ঘটে গেছে বলে রজত নিজেকেই নিজে সান্তনা দিচ্ছিল। মনে মনে বললো, "লীলাভুমিতে চড়ে বেড়াতে গেলে, জীবনকে উপভোগ করতে গেলে নানারকম দাম তো দিতেই হয়। এটা নয় তার মধেই একটা। শ্বশুড় আর বউকে কালসকালেই ভাগিয়ে সব সমস্যার সমাধান করে নেবে। ভবিষ্যতে এরকম কোন ঘটনা দ্বিতীয়বার আর ঘটতে দেবে না।"

চান করে গা মুছে বাইরে বেরিয়ে এল রজত। দেখলো সিরিজা দিবাকরকে দ্বিতীয় বার চা করে এনে দিচ্ছে। ও শোবার ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে সিরিজাকে একবার ডাক দিল, "সিরিজা শোনো এদিকে, একটু দরকার আছে।"

আচমকা ডাকটা শুনে সিরিজা একটু বিরক্ত হোল। দিবাকরকে চায়ের কাপটা হাতে ধরিয়ে পেছন ফিরে বললো, "আসছি।"

দিবাকর চা খেতে খেতে বুঝলো, রজত সিরিজাকে ডাকছে, তার মানে ওকে চুমু খাওয়া ছাড়া আর কাজটা কি?

ভেতরের ঘরে রজত সিরিজাকে চুমু খাচ্ছে না আদর করছে ও কিছুই বুঝতে পারলো না। শুধু বসে বসে সময় গুনতে লাগলো কখন রজত ফ্ল্যাট থেকে এবার বার হবে। তা হলেই ওর শান্তি। সিরিজাকে প্রথমবার একা পাওয়ার জন্য ওর আনন্দ যেন আর ধরছে না। ভীষন একটা রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন ফ্ল্যাটটা এবার ওর স্বাধীন বিচরণের লীলাভূমি হবে। রজত এখন চুমু খাচ্ছে খাক না। এরপরে দিবাকরই সিরিজার কমলা কোয়া অধরে চুমুর দাগ এঁকে দেবে। বসে বসে ভাবছিল সিরিজার তপ্ত-কোমল ওষ্ঠস্বাদ পাওয়া তার ভাগ্যে এবার সত্যি সত্যিই জুটবে কিনা? না কি রজতের প্রভাবে ও আবার রজতের দিকেই ঝুঁকে পড়বে। শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটা ত্রিকোণ প্রেমের জটিল আবর্তের মতন ঘিরে উঠবে না তো? ভাবতে ভাবতে চা খেয়ে এবার একটা সিগারেট ধরালো দিবাকর। দেখলো রজত ঘর থেকে বেরিয়েছে। পেছন পেছন সিরিজা।

কিন্তু দিবাকরের দিকে সিরিজার দৃষ্টিটা সেই আগের মতনই রয়েছে। মনে হচ্ছে রজতের চুমুটা কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি ওর মনে। সিরিজার মন জুড়ে এখন দিবাকরই বিরাজ করছে।

 -- "আমি তাহলে আসি। তোমরা দুজনে রেডী হয়ে থেকো কিন্তু।"

ঘর থেকে বেরোনোর আগে এই কথাটাই বলে গেল রজত। দরজা দিয়ে বেরোনোর আগে একবার সিরিজার দিকে ঘুরে তাকালো, সিরিজা ওর চোখে চোখ রাখলো না। শুধু মাথাটা নীচু করে নিল। রজত বাইরে বেরিয়ে গেল।

ঘরের মধ্যে সিরিজাকে একা পেয়ে কিভাবে শুরুটা করবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছিল না দিবাকর। দেখলো সিরিজা দেয়াল ঘেসে দাড়িয়ে আছে। ও মুখে কিছু বলছে না।

নীরবতার মানেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না দিবাকর। সিরিজাই ওকে অবাক করে মুখটা প্রথম খুলল। ওকে উদ্দেশ্য করে বললো, "একটা কথা বলব দিবাকরদা? কিছু মনে করবেন না। সত্যি বলুন তো। আমাকে আপনার খুব পছন্দ তাই না?"

হঠাৎ এরকম একটা প্রশ্ন করে অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়ার মানে কি? দিবাকর ভাবল, সিরিজা বোধহয় ওকে পরীক্ষা করছে। দুম করে হ্যাঁ বলে দিলে সিরিজার কাছে ওর ভাবমূর্তিটা যদি ছোট হয়ে যায়। রজত কিভাবে ওকে পটিয়েছে সেটা ওর জানা নেই। রজতের মতন মেয়েছেলে পটাতেও দিবাকর ওস্তাদ নয়। এরপর দূর্বলতাটা প্রকাশ পেয়ে গেলে যদি সব মাটি হয়ে যায়। এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপচাপ থাকাটাই বোধহয় বুদ্ধিমানের লক্ষণ। ও কিছু না বলে মাথাটা নীচু করে বসে রইলো। দেখলো সিরিজা এবার এগিয়ে এসে ওর পাশে এসে বসছে। দিবাকরের শরীরের ভেতরটা নড়েচড়ে উঠলো।

 - "কি হলো, আমার দিকে তাকান না? বলুন না, আমাকে আপনার পছন্দ কিনা?"

মেয়েটা দেখছি সহজে ছাড়ার পাত্র নয়। রজতকে আর ভালো লাগছে না, তাই ওকে পটিয়ে দেখছে, বাগে আনানো যায় কিনা? অথচ এই মেয়েটাই সকালে কেমন অন্যরকম আচরণ করছিল।

দিবাকরের থুতনীতে হাত দিয়ে ওর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে সিরিজা এবার ওকে আরো ঝামেলায় ফেলে দিল। - "কি হলো বলুন না? তাকান আমার দিকে?"

হাজার হোক, দিবাকর তো আর রজত নয়। ওর জায়গায় রজত হলে এতক্ষনে বলেই দিতো, "পছন্দ মানে? রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছ তুমি। তোমার মত মেয়েকে পছন্দ না করে আমি থাকতে পারি?"

দেখলো সিরিজা ওর দিকে কেমন একটা মন আচ্ছন্ন করে দেওয়ার মতন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। ওর চোখটা সোজা দিবাকরের দিকেই। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যে ঐ দৃষ্টির উপর থেকে চোখ ঘুরিয়ে নেওয়ার মতন ক্ষমতা কোন পুরুষ মানুষের নেই।

নিজেকে বাঁচানোর শেষ তাগিদে দিবাকর রজতের নামটিই উল্লেখ করাটা সহজ হবে বলে মনে করলো। ও বললো, "কেন, রজতের তো তোমাকে খুব পছন্দ?"

 - "আমি রজতের কথা বলছি না। আমি আপনার কথা বলছি।"

 -- "তুমি এমনভাবে জানতে চাইছো কেন সিরিজা? কি যাচাই করার চেষ্টা করছো আমার কাছে?"

দিবাকরকে অবাক করে সিরিজা বললো, "সত্যি বলুন তো আমার কথা চিন্তা করে কাল রাত্রি থেকে কষ্ট পাননি? আপনার শরীরটা কেন খারাপ হয়ে গেছিল আর কেউ না জানুক আমি তো জানি। আমার মতন কোন মেয়েকে এর আগে দুজনে মিলে মন দিয়ে বসেছিলেন? আপনি তো নিজেই বলেছেন। রজতের জন্য যদি আপনার পাখী উড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আবার রজতের জন্যই এতটা করলেন কেন? ওর এই উপকারটা করে আপনার কি লাভ হলো?"

 -- "না মানে, ওর শ্বশুড়মশাই তোমাকে ওর সাথে দেখলে সাংঘাতিক কান্ড হয়ে যেত। কি হতো তখন বলা মুশকিল।"

 - "হতো হতো। তাতে আপনার কি? সকালবেলা ঝেমেলা হওয়ার জন্য বন্ধুর পরোপকার করলেন। এটা কি আমার চোখে ভালো হওয়ার জন্য?"

এ মেয়ে তো দেখছি একেবারে ডেনজারাস। গ্রামের মেয়ে এত চালাক হয়? দিবাকরের চিন্তাটা মাথায় বারবার ঘুরপাক খেতে লাগলো। এনিয়ে বেনিয়ে এমন সাড়াশির মতন চেপে ধরেছে, এবার সত্যি কথাটা বলে দিতেই হবে। তারপর যা থাকে কপালে দেখা যাবে। দিবাকর দেখলো সিরিজা ওর বুকের কাপড়টাকে সরিয়ে মাঝখানের খাঁজটাকে উন্মুক্ত করেছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে দিবাকরের ওখানে দৃষ্টি আকর্ষন করানোর চেষ্টা করছে সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

কি বলবে কি করবে ও কিছুই বুঝতে পারছিল না। রজত এখন ঘন্টা তিনেকের জন্য এ ফ্ল্যাটে নেই। সময়টা সিরিজার সাথে একান্তে কাটানোর সুযোগ পেয়ে গেছে। কিন্তু শুরুতেই ও যেভাবে শরীরের মধ্যে ঘন্টা বাজিয়ে দিচ্ছে, তাতে এরপরে যে কি হবে সেটাই তো ভেবে ও বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।

সিরিজা কি এভাবেই রজতকে বাগে এনেছিল? দিবাকরের প্রশ্নটা একবার মাথার মধ্যে এলো। ও সিরিজাকে এক ঝলক দেখলো। বক্ষ প্রদর্শন এবার ভালো মতন স্টার্ট করে দিয়েছে ও। বুকের আঁচলটা পুরোপুরি সরিয়ে একেবারে দিবাকরের গা ঘেষে এসে বলছে, "কি হলো বলুন? চুপ করে গেলেন কেন?"

এমন শরীর লাখে বোধহয় একটাও হয় না। একমাত্র শিল্পীই গড়তে পারে পাথরে। আঁকতে পারে তুলি দিয়ে। কিন্তু রক্তমাংস দিয়ে বানাতে? নৈব নৈব চ!

নিজের স্বামীকে প্রতারণা করে রজতকে যেভাবে ফাঁসিয়ে নিয়েছে তাতে মনে হয় না এ মেয়ের লজ্জা শরম বলে কিছু আছে। অসংলগ্ন এমন বেশবাস দেখলে মাথা খারাপ হতে বাধ্য। মনে হয় ব্লাউজটা পুরো খুলে ফেললে আরো স্বচ্ছন্দ মনে করবে নিজেকে। এই ঠাসা যৌবন আর বুকের দিকে তাকালে তো চোখই ফেরানো যায় না। দিবাকর দেখলো সিরিজা এবার সত্যি সত্যিই ব্লাউজটা খুলছে। ও মাথামুন্ডু কিছু ভেবে না পেয়ে নিজের চোখটাই বন্ধ করে ফেললো।

একে একে ব্লাউজ, ব্রেসিয়ার সব খুলে সিরিজা যেভাবে ম্যাজিক দেখাতে শুরু করেছে, দিবাকর চোখ বন্ধ করে তার কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। ধমনী শিরায় রক্তসঞ্চার শুরু হয়েছে। কিন্তু চোখ বন্ধ থাকার দরুন আসল শিহরণটাই উপলব্ধি করতে পারছে না।

মেয়েটী খুব দূঃসাহসী। সম্বল যা আছে সবই উজাড় করে দেবে। নিজের শরীর চাহিদার ক্ষুধাও কম নয়। মাষ্টারবেশন এর সাহায্যে কাল উত্তেজনা অনেক কষ্টে সামাল দেওয়া গেছে। এখন এই অবস্থাটা কি করে সামাল দেওয়া যায়?

 - "পুরুষ হয়ে নারীর দিকে এগিয়ে আসতে ভয় পান? আপনি না যেন কি!"

দিবাকর দেখলো সিরিজা উঠে দাঁড়িয়ে দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে ওর বুকের ব্লাউজটা আবার পরে নিচ্ছে। দিবাকরের দিকে পিছন ফিরেই ও বললো, "আপনার বন্ধু আমার সাথে এক রাত কাটিয়েই পাগল হয়ে গেছে। আর আপনার তো এখনো দৃঢ় আত্মবিশ্বাসটাই আসেনি। আমাকে নিয়ে উপভোগ করবেন কি করে?"

দিবাকর এবার খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল সিরিজাকে, "কিন্তু তুমি যে পরীক্ষাটা নিতে চাইছো আমার কাছে, তাতে ফেল না পাশ কোনটা করলে তুমি খুশী হবে সেটাই তো দ্বিধা রেখে দিয়েছ মনে। আমার জীবনে এমন কোন পরীক্ষায় আজ অবধি কোনদিন অবতীর্ণ হইনি আমি।"

সিরিজা এবার ঘুরে ওর দিকে তাকালো। দিবাকর আবার বললো, "কি সে তুমি খুশী হবে? আমি হারলে না জিতলে?"

দেহসুখের ম্যাজিক ভান্ডারটা এতক্ষণ ধরে খুলে রেখেও দিবাকরের দৃষ্টি ফেরাতে পারলো না। সিরিজা ভালোমতই জানে জবাবটা দিবাকরকে কি দিতে হবে। উপভোগ্য খাদ্যটা মুখের সামনে তুলে ধরেও উপবাসী লোকটাকে টলানো যায় নি। আখেরে দিবাকরের কি লাভ হলো সেটা দিবাকরই জানে। চোখ বন্ধ করে সিরিজার কাছে ভালো হয়ে ও মনে করলো জিতে গেল। এতে সিরিজা খুশী। সত্যি সত্যি তারমানে ওর শরীরের উপর কোনো লোভ নেই। আর যদি ঐ শরীরের মোহে সিরিজার উপর ঝাপিয়ে পড়ত, ততক্ষনাৎ সিরিজার কাছে হয়তো হার হোতো। আসল সত্যিটা ধরা পড়ে যেত। কিন্তু সিরিজা হয়তো খুশী হতো অথবা হতো না। কারন রজতকে সিরিজার মন থেকে মুছে ফেলাটাও এর উপর অনেকটা নির্ভর করছে। যেটী দিবাকরের কাছে এখনও ধোঁয়াশার মতন।

খুব স্পষ্ট ভাষায় সিরিজা বললো দিবাকরকে, "সকালবেলা এমন একটা উটকো ঝামেলায় মনটা একটু খারাপ হয়ে গিয়েছিল অবশ্যই। আপনার বন্ধুকে তার চাহিদা মতন আমি এমন কিছু নেই যা দিইনি। সারাজীবন ওকে নিয়ে থাকতেও আমি রাজী আছি। ভেবেছিলাম এখানে এসে আর কোন নতুন ঝামেলায় পড়তে হবে না কোনদিনই। ওর যে একটা বউ আছে সেটা আমিও ভালো করে জানি। বউ এর সাথে ছাড়াছাড়ি হলেও আইনগত ছাড়াছাড়িটা হয়নি। এখন শ্বশুড় মশাই আসার দরুন নতুন কোন ঝেমেলা এলে সেটা নিয়ে আমার থেকেও ওকে ভাবতে হবে বেশী। আপনি ওর উপকার করেছেন সেটাতে আমিও খুব খুশী। কিন্ত আমার কাছে ভালো সাজতে গিয়ে আপনি নিজেই তো ধরা পড়ে গেলেন। যাকে মন থেকে চাইছেন তাকে যখন নিতেই পারলেন না। আপনার এই আচরণটা আমার কাছে ঠিক বোধগম্য হলো না। মাফ করবেন। আমি বুঝতে পারিনি। যদি না বুঝে কিছু করে থাকি, তাহলে ক্ষমা করে দেবেন।"

দিবাকর এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে সিরিজার দিকে। ওর মুখে কোনো কথা নেই। বোকা হয়ে ও তখন পুরো বোবা বনে গেছে।

সারাজীবন শুধু ভুল করে করে ভুলের খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে। দিবাকরের মুখে যেন সেলাই করে দিয়েছে সিরিজা। আসতে আসতে কি সুন্দর নেকেড হচ্ছিল, আর এখন কথার প্যাঁচে কেমন স্তব্ধ করে দিল। সিরিজাকে নিয়ে এ জীবনে আর কোন স্বপ্নই পূরণ হলো না। রাত্রিবেলা ওর বাসায় ফাইনাল টেকের আগে এখন ওকে একটা রিহার্সাল এর সুযোগ দিয়েছিল সিরিজা। দিবাকর ভালোমানুষি দেখাতে গিয়ে সুযোগটা হাতছাড়া করলো। এমন হতভাগা পৃথিবীতে আছে আর কেউ?

মাথা নীচু করে গুম হয়ে বসেছিল দিবাকর। চোয়াল শক্ত করে ওর চুপ করে বসে থাকাটা যেন সিরিজাকে নরম করে দিল এবার। ও দিবাকরের কাছে এগিয়ে এলো। একেবারে সামনা সামনি বসে দিবাকরকে একটা কথাই বললো, "আমার কথায় কিছু মনে করলেন দিবাকরদা? আমি জানি আপনি ব্যাথা পেয়েছেন। যাক মন খারাপ করবেন না। আপনি বসুন। আমি বরঞ্চ আপনার জন্য আর এক কাপ চা করে এনে দি।"

 -- "না থাক। আমি এখন চলে যাবো।"

 - "চলে যাবেন? না না তা কেন? আপনি চলে গেলে ও এসে তো আপনাকে দেখতে পাবে না। তখন আবার টেনশনে পড়ে যাবে।"

 -- "তাতে কি হয়েছে। আমার জায়গায় বিকল্প ব্যাবস্থা করে নেবে রজত। ওর নিশ্চয়ই আরো কোন বন্ধু আছে।"

 - "কিন্তু আমাকে তো বলেছে, আপনি ছাড়া ওর তেমন কোন বন্ধু আর নেই। আপনি চলে গেলে ও সমস্যায় পড়ে যাবে।"

 -- "তাতে তোমার কি? রজতের মতন তুমি নিশ্চয়ই টেনশনে পড়বে না। একটু আগে তুমি নিজেই তো বললে-সমস্যাটা ওর। এটা ওকেই মেটাতে হবে। তাহলে এই ব্যাপারে তুমি টেনশন নিচ্ছ কেন?"

দিবাকর যেন শেষ অস্ত্র ছেড়ে এবার সিরিজাকেই চুপ করিয়ে দিল। সিরিজার মুখ দিয়ে এবার কোনো কথা বেরোচ্ছে না। দিবাকর আসতে আসতে এবার ওর মুখ খুলতে লাগলো। সিরিজাকে সামনে বসিয়েই এবার বলতে লাগলো, "এবার আমি তোমাকে কিছু কথা বলি সিরিজা। আশাকরি তুমি আমার কথাগুলো শুনবে। কি, তাই তো?"

সিরিজা উত্তর দিচ্ছে না। ওর সামনে চুপ করে বসে আছে। দিবাকর বলতে লাগলো।

 -- "ভেবো না তোমার প্রতি রাগে আমি এই কথাগলো বলছি। আমার কারুর প্রতি রাগ নেই। অভিমানও নেই। না রজত, না তোমার প্রতি। রজত যদি তোমাকে পেয়ে সোনার মোহর পেয়ে থাকে, তাহলে আমার কাছেও সেটা অমূল্য। আমি কৃতজ্ঞ তোমার কাছে, শুধু এই কারণেই, হঠাৎ আমার জীবনটা মনে হয়েছিল উত্তাপে ভরে গেছে। যে দিবাকর সেভাবে কোনদিন নারীর সান্নিধ্য পায়েনি, কাউকে ধরে রাখতে পারেনি, সম্পর্ক চিরস্থায়ী হয়নি, তার মধ্যে এমন আশার বাসা গড়ে উঠেছিল শুধু তোমার জন্যই। কিন্তু দোষ আমার একটাই, কোনো নারীকে ধরে রাখার নির্ভুল পদ্ধতিটা যে আমার ঠিক জানা নেই, তাই ভুলটা করে ফেলি ওখানেই। ওরা (নারী) আসে, ওরা চলে যায়। কেউ শিকড়ে বাকড়ে বাঁধে না। কেউ নোঙর ফেলে না। আর আমি নিশ্চিন্তভাবে অনুভব করি, আমি বোধহয় সত্যিই তাদের অযোগ্য। নইলে তারা কেন আমাকে ঠিক বুঝতে পারে না। বারেবারে আমাকে একাকী ফেলে চলে যায়।"

সিরিজা জানো আমার মধ্যে দুটো সত্তা কাজ করে। একটা শুধু নিজের কথাই ভাবে। যখন সে চালাক হওয়ার চেষ্টা করে। যা করছে এটাই তখন ঠিক। তখন সে ভাবে দিবাকর নামের লোকটার কি সুখ পাওয়ার অধিকার নেই। কেন শুধু শুধু পরের কথা ভেবেই জীবন নষ্ট করবে, তারও তো নারীর শরীর পাওয়ার অধিকার আছে।

আরেকটা হলো, সত্যিই সে যখন বোকা হয়ে যায়। কাউকে ঠকাতে সে চায় না। কামনা বাসনার বশে অন্যের সুখকে কেড়ে নেওয়ার আগে সে বারবার ভাবে, কাজটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। তালে গোলে সেই বাসনার নারী তখন তার হাত ফস্কে বেরিয়ে যায়। তার আর সুখ ভোগ করা এ জীবনে হয় না।

এবার বল, আমার কোন সত্তাটা ঠিক? চালাক হওয়াটা না বোকা হওয়াটা? যদি বল-চালাক হওয়াটা। তাহলে এক্ষুনি তোমাকে জড়িয়ে ধরে আমি তোমার ঠোঁটে একটা চুমু খাবো। তুমি কিন্তু কিছু বলতে পারবে না। আর যদি বলো - বোকা হওয়াটা তাহলে রজতের কথা ভেবে শেষবারের মতন এই ফ্ল্যাট থেকে বিদায় নেব। তুমি কোন আপত্তি করতে পারবে না। তাহলে বল কোনটা আমি করবো? প্রথম না দ্বিতীয়টা? খুব তাড়াতাড়ি উত্তর চাই তোমার কাছ থেকে। সিরিজা দেরী করলে কিন্তু চলবে না।"

দিবাকর কথাটা বলে এমন ভাব করলো যেন বাজীমাতটা ও করেই ফেলেছে। সিরিজাকে এবার দুটোর মধ্যে যেকোন একটাকে বেছে নিতে হবে। প্রথম থেকে দ্বিতীয়টি মেনে নেওয়া বেশী সহজ? না প্রথমটা? সিরিজা তাড়াতাড়ি উত্তরটা দিতে পারছে না। আর ওদিকে দিবাকর যেন সিরিজাকে চুমু খাওয়ার জন্য ঠোঁট বাড়িয়েই রয়েছে। সিরিজা ওকে বোকা বললে পা বাড়িয়ে রেখেছে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যাবার জন। মানসিক ভাবে দুটোতেই প্রস্তুত। রাত্রিবেলা আবার ওর পা ধরে রজতকে তো সিরিজাকে ওর ফ্ল্যাটেই নিয়ে আসতে হবে। রজতের যে দিবাকর ছাড়া কোন গতি নেই সেটা দিবাকরও জানে। সুযোগ বুঝে মোক্ষম চালটা চেলেছে। এখন কি করবে সিরিজা? দিবাকরের মগজে হঠাৎ যে এমন একটা বুদ্ধি চলে আসবে ও নিজেও বোধহয় কল্পনা করতে পারেনি। সিরিজাকে পাওয়ার এটাই শেষ সুযোগ। হ্যাঁ তো হ্যাঁ। নইলে না। হ্যাঁ আর না এর মাঝে কিছু নেই।

উত্তর না পেয়ে দিবাকর উঠে দাঁড়াতে চাইছিল। সিরিজাকে বললো, "তোমার উত্তর যখন পেলাম না, এবার তাহলে চলি।"

সিরিজা মুখটা তুলে দিবাকরের দিকে চোখে চোখ রেখে তাকালো। বললো, "আমি তো উত্তর দিইনি। তাহলে আপনি আমার উত্তরটা পেলেন কি করে? আমি তো আপনাকে চালাক বোকা কোনোটাই বলিনি। তাহলে?"

দিবাকর গম্ভীর মুখে বললো, "কি বলতে চাইছো বলো। আমি শুনতে চাইছি।"

সিরিজা খুব সহজ ভাবে এবার উত্তরটা দিল। বললো, "আমার কাছে আপনি বোকাই। তবে চালাক যদি হতে চান আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আমার কিছু শর্ত আছে।"

দিবাকর বুঝতে পারলো সিরিজা তার মানে এবার চুমু খাওয়ার শর্ত আরোপ করছে। ও তবু বললো, "কি শর্ত?"

সিরিজা বললো, "শর্ত একটাই চুমুটা আপনাকে রজতের সামনে খেতে হবে। আপনি রাজী আছেন?"

 -- "রজতের সামনে?"

 - "হ্যাঁ ওর সামনে। আমিও চাই আপনি আর বোকা হয়ে না থেকে ওকে বুঝিয়ে দিন যে এবার আপনার চালাক হওয়ার দিন চলে এসেছে। সিরিজাকে মনে প্রাণে আপনিও চান। ওর সামনে আমাকে চুমু খেতে আপনার কোনো ভয় নেই। কি পারবেন না?"

দিবাকর এবার যেন বোবা আর স্ট্যাচু।

সিরিজা আবার বললো, "রজত যদি আপনার সামনে আমাকে চুমু খেতে পারে, আদর করতে পারে। আপনি পারবেন না? কি হোল বলুন? আর কতদিন বোকা হয়ে থাকবেন।"

 -- "কিন্তু সেটা?"

 - "কিন্তু আবার কি দিবাকরদা? আমার যদি আপত্তি না থাকে আপনার তো আপত্তি থাকার কথা নয়? কাউকে পছন্দ করেন। মনে প্রাণে তাকে চাইছেন। অথচ সেটা জানিয়ে দিতে আপত্তি কোথায়? আপনি কি আপনার বন্ধুকে ভয় পান?"

 -- "না মানে?"

শর্তটা যে দিবাকরকে বেশ টলিয়ে দিয়েছে সিরিজা ভালোমতন বুঝতে পারছিল। ও শুধু দিবাকরকে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে শেষবারের মতন বললো, "আপনার যদি শর্ত পছন্দ না হয় তাহলে চুমু খাবেন না ওর সামনে। আমার কিছু বলার নেই। এখন তাহলে আমাকে চুমুটা খেয়ে নিন। আমি এগিয়ে আসছি আপনার কাছে। তবে আপনার সামনে ও কিন্তু আমাকে আবার চুমু খাবেই। তখন কি করবেন? সহ্য করতে পারবেন তো? কি হলো দিবাকরদা জবাব দিচ্ছেন না। কিছু একটা বলুন। আপনি যে একেবারে চুপ করে গেলেন।"

সুখের পরশ পেতে গিয়ে পরিস্থি্তি যেন শুধুই জটিল হয়ে পড়ছে। মেয়েটা কি চায় তাই তো বোঝা যাচ্ছে না। সিরিজা যেন ক্রমশই ধোঁয়াশায় পরিণত হচ্ছে। দিবাকরকে পরিষ্কার বলে দিক না যে রজতকে এখনো মন থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারে নি ও। শুধু শুধু সিরিজার মায়া করে লাভ নেই। কেন নিজের মান সন্মানটাও বিসর্জন দিচ্ছে বারবার। একবার যদি বলে দেয় যাই কিছু হোক আমি রজতকেই মনে প্রাণে পছন্দ করি, ভালোবাসি, তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়। তা না একবার ওর পরীক্ষা নিচ্ছে, বারবার কি সব শর্ত আরোপ করে দিবাকরের মাথাটাই খারাপ করে দিচ্ছে। মেয়েটা ওর সাথেই ভীড়তে গিয়ে এসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে কেন? কই রজতের বেলায় তো সটান কাপড় চোপড় খুলে একেবারে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে। তখন তো এসব মাথায় আসেনি। তাহলে এখন কেন?

 -- "কিন্তু তুমি যা বলছো সেটা তো না করলেও রজত বুঝে যাবে।"

 - "কি বুঝে যাবে?"

 -- "যে তুমি আর রজতের নেই। তুমি এখন আমার হয়ে গেছ।"

 - "আপনি বিশ্বাস করেন? রজত সেটা মেনে নেবে?"

 -- "কেন মানবে না কেন?"

 - "এতদিন যার সাথে বন্ধু হিসেবে মিশলেন, তাকে চিন্তে আপনার এত ভুল হলো? আপনি এমন একজনের কথা বলছেন যে নিজে কখনও বিশ্বাস করে না সিরিজা তার না হয়ে অন্যকারুর হয়ে যেতে পারে। আপনি আমাকে নিয়ে কোথায় তুলবেন? আপনার বাসায়? সে ওখানে যাবে। আপনি তাকে বাধা দিতে পারবেন? সে তো জানে আপনি তার শুধু উপকার করছেন। নাছোড়বান্দা রজতকে কি করে সামলাবেন তখন? সাহস থাকে অকপটে তার কাছে স্বীকার করুন, আপনি আমাকে চান। এইটুকু বলতে এত ভয়? আর তা যদি না পারেন, তাহলে বলে রাখি দুজনকে একসাথে শরীর আর মন দেবার কোনো ইচ্ছে আমার আপাতত নেই।"

দিবাকর বুঝতে পারছিল সিরিজার প্রতিটা কথায় ও কেমন জব্দ হচ্ছে। সত্যিই তো। রজতকে বলার কোনো ক্ষমতা নেই, অথচ সিরিজাকে ভোগ করার জন্য হ্যাংলামো সেই কাল থেকেই দেখিয়ে চলেছে। এবার যেন এটার শেষ হওয়া দরকার। সিরিজাকে বিজয়িনী ঘোষনা করে চ্যাপ্টারটা এখানেই শেষ করতে হবে। আর একটু পরেই রজত আসবে। নিজেকে তার আগে স্বাভাবিক করে নিতে হবে। শুধু শুধু রজতের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে বরং যে যেটা পেয়ে আনন্দ করছে, তাকে সেটাই করতে দিতে হবে। রজতের সাতে খামকা ঝেমেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। তার চেয়ে সিরিজা যেদিন সত্যি সত্যি ওর স্বাদ বদলাবে সেদিনই ও সিরিজাকে আপন করে নেবে। এখন বিষয়টা এখানেই সমাপ্ত হোক।

সিরিজাকে আশ্বস্ত করে ও শুধু একটা কথাই বললো, "তুমি ঠিক বলেছো সিরিজা। ভুলটা আমারই হয়েছিল। এবার এটা থেকে বেরিয়ে চল আমরা অন্য কথা বলি। আমার আর এ বিষয়ে কোনো কথা শুনতে বা বলতে আর ভালো লাগছে না।"





কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





লেখক(Lekhak)-এ লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

লেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment