CH Ad (Clicksor)

Sunday, November 9, 2014

চুম্বনঃ ভাষাহীন ভালোবাসা



চুম্বনঃ ভাষাহীন ভালোবাসা




প্রেম লিখিতেছে গান কোমল আখরে অধরেতে থরে থরে চুম্বনের লেখা। দুখানি অধর হতে কুসুম-চয়ন, মালিকা গাঁথিবে বুঝি ফিরে গিয়ে ঘরে।

চুম্বন! কখনও তা স্নেহের উচ্ছ্বাস, প্রেমের প্রবল ঝড়, আশ্লেষের আনন্দ; কখনও তা বিদায়ের সংকেত, ব্যথার সমবেদনা। কি রসায়নে ভাসে হর্ষ-বিষাদ ফোটানোর এই স্বর্গীয় ভাষা? এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে জীবনের নানা ইমোশনের বহু স্তর, যৌবনের নানা মাত্রা, যৌনতার বহুতর তরঙ্গ। এই ছোট নরম নিভৃত নিঃশব্দ বিপ্লবকে ঘিরে ক্রমাগত সন্ধান বিজ্ঞানকে জানিয়ে দিয়েছে, চুমু সুস্থতার নিদর্শন, জীবনের জয়গান, যৌবনের জোয়ার। 



চুমুঃ গুড অর ব্যাড

যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা। পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করেছিলেন আমাদেরই এক পূর্বপুরুষ ও পূর্বনারী। গভীর আশ্লেষে তারা পরসপরের মুখ চুম্বন করছিলেন। ভালোবাসার মানুষকে আদর করে চুমু খাওয়ার সেই সূত্রপাত-ইতিহাস সে কথাই বলছে। সময় বয়ে চলেছে আপন গতিতে। বিগত সাড়ে তিন হাজার বছরে সূর্যের এই সবুজ গ্রহের অনেক কিছুই আমূল বদলে গেছে। চুম্বনের মাধ্যমে নরনারীর সম্পর্ক উত্তরণের যে ইতিহাসের সূত্রপাত হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশে, তাকেই সাদরে গ্রহণ করে নিল পৃথিবীর সব দেশের মানুষ।

তবে চুমু খাওয়ার ব্যাপারে প্রথমে উৎসাহী হয়েছিল রোমানরা। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানথ্রোপলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ভন ব্রায়ান্ট জুনিয়রের এক সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র থেকে জানা গিয়েছে যে চুম্বনে উত্তরণের আগে মানুষ তার প্রিয় সঙ্গীকে সোহাগ জানাতে নাকে নাক ঘষে। আর চুমু খাওয়ার নানা অর্থ স্থির করেছিল সেকালের রোমানরা। বন্ধু বা বয়োঃজ্যেষ্ঠ অথবা দেববেদীকে সমমান জানাতে এক ধরনের চুম্বন, শিশু সন্তান বা ছোটদের আদর করতে আর এক ধরনের চুম্বন, আবার শরীরী সম্পর্কে পৌঁছানোর আগে গভীর গাঢ় চুম্বন। দেশে দেশে এই রোমান চুম্বনের নানা রীতি আজও চলছে, জানিয়েছেন প্রফেসর ব্রায়ান্ট। তবে শুধু প্রফেসর ব্রায়ান্টই নন, বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন চুমু খাওয়ার ভালোমন্দ দিক নিয়ে। শুনে আশ্বস্ত হবেন যে ভালোর দিকের পাল্লাটাই অনেক অনেক বেশি ভারী।

১৯৯৭ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন যে চুম্বনের সময় আমাদের মস্তিষেক অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। ফলে একটা ভালোলাগার অনুভূতিতে ভরে ওঠে শরীর মনে। সারাদিনই মনটা থাকে ফুরফুরে। কিন্তু উপর্যুপরি চুমুর জন্য ঠোঁট ব্যাকুল থাকে। এর পেছনেও আছে নানা নিউরো হরমোনের খেলা। চুম্বনের সময় আমাদের মুখের ভেতরে এবং ঠোঁটের চারপাশে এমন কিছু রাসায়নিক নিঃসৃত হয় যে একটি চুমুতে মন ভরে না।



দুর্ঘটনা রুখতে চুমু

না এ কোনো বিজ্ঞানী চমক নয়, রীতিমত বিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্য। জার্মানীর একদল সাইকোলজিস্ট ও ফিজিশিয়ান দীর্ঘ সমীক্ষার পর দেখেছেন, যারা দিনের শুরুটা করেন প্রেমাসপদের মুখ চুম্বন করেন, তাদের সারাদিনের কাজে অনেক কম ভ্রান্তি হয়। তাদের কর্মদক্ষতা অন্যদের থেকে কিছুটা বেশি তো থাকেই, এ ছাড়া সারাটা দিন থাকে চনমনে। সাইকোলজিস্টদের তরফে ডা. আর্থার সাজবো (Dr. Arthur Sazbo) জানিয়েছেন, যারা নিয়মিত চুমু খেয়ে দিন শুরু কনের, তারা ড্রাইভিং করেন দারুণ ভালো। দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যায় অনেকটাই।



খাও চুমু, যমও জব্দ হবে

না এখানেই শেষ নয়। গবেষকদল আরও দেখেছেন, দিনের শুরুর চুমুর চুমুকে তাদের আয়ু বেড়ে যায় অন্তত বছর পাঁচেক। আর যে ব্যবসায়ীরা চুমুতে আনন্দ পান বলে দিন শুরু করেন চুম খেয়ে মহানন্দে, তাদের আয় ২০ থেকে ৩০% বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং জীবনের পজিটিভ অ্যান্টিটিউড বাড়াতে ভালোবেসে চুমু খান, তবে অবশ্যই মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রেখে।



মিনিটে ২৬ ক্যালরি

ফিলেম্যাটোলজি। অদ্ধুত এই শব্দের মানে চুম্বন বিজ্ঞান। এ বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য জানিয়েছেন ফিলেম্যাটোলজিস্টরা সায়েন্স ওয়ার্ল্ড পত্রিকায়। মাত্র এক মিনিটের চুম্বনে ২৬ ক্যালরি শক্তি খরচ হয়। সুতরাং বেশি খাওয়া দাওয়া হলে পরদিনের লাঞ্চ বা ডিনার স্কিপ না করে বরং গোটা দশেক চুমু খেয়ে নিন-অনেকটাই ক্যালরি ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন।



ব্যায়ামের বিকল্প চুম্বন

আপনি কি মুখের ব্যায়াম করেন? মুখের সতেজ ও টানটান ভাব বজায় রাখতে, বার্ধক্যকে রুখতে মুখের ব্যায়াম যে জরুরি, সে কথা অনেকেরই অজানা। আর জানলেও এক্সারসাইজের ব্যাপারে চিরকালীন বাঙালি অনীহা। তবে শুনে আশ্বস্ত হবেন যে, চুমু খেলেও কিন্তু মুখের পেশির দারুণ ভালো এক্সারসাইজ হয়। হ্যাঁ, গাঢ় গভীর চুম্বনে মুখের চৌত্রিশটি মাসলই নড়াচড়া করে। মুখের দারুণ ভালো এক্সারসাইজ হল চুম্বন।

এ তো গেল শুধুমাত্র মুখের ব্যায়ামের কথা। কিন্তু যদি বলি আপনি কি নিয়মিত স্প্রিন্টারের মতো দৌড়ান, অথবা প্যারাশুটিং করেন? জানি এর উত্তরে অধিকাংশ মানুষই বলবেন না, না। তাদের আশ্বস্ত করতে জানাই, ভালোবেসে একে অপরকে চুম্বনের সময় আমাদের মস্তিষক থেকে এমন কিছু নিউরো হরমোন নিঃসৃত হয় যা হার্ট বিট বাড়িয়ে দেয়, নিশ্বাস প্রশ্বাসের গতিরোধ করে তোলে দ্রুততর। ব্যাপারটা অনেকটাই দাঁড়ায় জোরে দৌড়ানো বা প্যারাসুটিংয়ের মতো। চজুম্বন যে কত ভালো ফিজিক্যাল এক্সারসাইজের উদাহরণ হতে পারে তার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আলগোছে চুমা নয়-গভীর গাঢ় চুম্বন-ই হতে পারে এক্সারসাইজের বিকল্প। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের চুম্বনের অন্তিম পরিণতি দৈহিক মিলন এবং সেটাই স্বাভাবিক। হৃদপিন্ড, ফুসফুস ভালো রাখতে, দীর্ঘ জীবন ও যৌবন পেতে চুমুর বিকল্প নেই।



জীবাণু তাড়ায় চুমু

মানুষের মুখের লালায় থাকে দশ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়ন জীবাণুগোষ্ঠী। না, এ কথা শুনে চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন না। কেননা স্বাভাবিক অবস্থায় এ সব জীবাণু মুখের লালায় ঘোরাফেরা করে, ওতপেতে থাকে সুযোগের অপেক্ষায়, কি করে হানবে আক্রমণ, সৃষ্টি করবে সংক্রমণ। ওদের ‘বাড়া ভাতে ছা্ই দিতে’ চুমু খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। প্রসঙ্গত এই সিঙ্গল সেল অর্গানিজমরা আসে মূলত খাবার, বাতাস, ময়লা হাতের মাধ্যমে। তবে কোট কোটি জীবাণুর কথা শুনে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। কেননা চুমু খাওয়ার আগের মুহূর্তেই স্যালাইভাতে এমন কিছু কেমিক্যালস তৈরি হয় (এন্টিব্যাক্টেরিয়াল কেমিক্যালস) যা মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করে ফেলে শরীরের অনিষ্টকারী এ সব ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়াকে। সুতরাং জীবাণুর বংশ ধ্বংস করতে ভালোবাসার মানুষজনের সঙ্গে চুম্বন বিনিময় করাই বুদ্ধিমানের কাজ।



সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো

ছোট্ট শিশুকে আশ্বস্ত করতে, ভালোবেসে চুম্বন করুন। বিশেষ করে যে সব মা চাকরিজীবি, বেশিক্ষণ সন্তানকে সঙ্গ দিতে পারেন না, চুমু খেয়ে তাকে বোঝাবার চেষ্টা করুন যে, আপনার স্নেহচ্ছায় ভালোবাসা সবসময়ই ঘিরে আছে ওকে। আমাদের দেশের সামাজিক পরিকাঠামো অনুযায়ী গুরুজনেরা ছোটদের কপাল, মাথা বা গালে চুমু খান। এটা কিন্তু যথেষ্ট স্বাস্থ্যসমমত। ছোটদের ঠোঁটে চুম্বন করলে নানা সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। চুম্বনের সাহায্যে কাছের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের বাঁধন দৃঢ় হয়। অনেক সময় ছোট শিশুদের যখন প্রথম স্কুলে পাঠানো হয়, তারা মায়ের সঙ্গে থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে (Separation anxiety disorder) আতঙ্কিত হয়ে কান্নাকাটি করে। তাকে আশ্বস্ত করতে চুম্বন করুন। সদ্য কিশোর বা কিশোরী বয়ঃসন্ধির ছেলে বা মেয়ে পদে পদে অজস্র ভুল করে ফেলে। অনেক সময় অকারণে দুঃখ পায়। বকাঝকার বদলে বুঝিয়ে বলে চুম্বন করে তাকে আশ্বস্ত করা যেতে পারে। অনেক না বলা কথাই ওরা বুঝে যায় চুম্বনের মাধ্যমে। সমাজ জীবনে এই Non sexual kissing-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।



প্রথম চুম্বন

‘গোধুলি লগ্নে তোমার প্রথম চুম্বন-ই আমার প্রকৃত পরিণয়’-দিনেশ দাসের এই ‘প্রথম চুম্বন’-এর প্রতিটি ছত্রে ফুটে উঠেছে বয়ঃসন্ধির সদ্য তরুণ-তরুণীদের হৃদয়ের কথা। সেক্সুয়াল কিসিংয়ের সূত্রপাত হয় এই বয়সেই। চুম্বন অনেক সময় যে কোনো সম্পর্কের একটা আবেগঘন পরিণতি দেয়। যে মানসিক সম্পর্ক একটা মাঝামাঝি অবস্থায় আছে, চুম্বনের দরজা দিয়ে তাদের সম্পর্ক একটা বিশেষ মাত্রা পায়। অনেক সময় দুজন ঘনিষ্ঠ মানুষের মধ্যে চুম্বন একটা সম্পর্ককে সুদৃঢ় করার থেকেও আরও বেশি কাজ করে। যেমন মানব মানবীর যে কোনো একজন সাময়িকভাবে ইমোশনাল আশ্বস্ততার প্রয়োজনবোধ করলে বা পারিপার্শ্বিক কারণে মানসিক চাপে পড়লে, ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির চুম্বন তাকে চাপমুক্ত করে।



ডিপ্রেশন কাটাতে চুম্বন

চুম্বনকারীর মস্তিষ্কের চুম্বনের সময় বিশেষ কিছু নিউরো হরমোন নিঃসৃত হয়, যা সাময়িকভাবে ডিপ্রেশন, এ্যাংজাইটি, স্ট্রেস কাটাতে সাহায্য করে। চুম্বনের সময় নিঃসৃত এইসব হরমোন প্রাকৃতিক এন্টিডিপ্রেসেন্ট এর কাজ করে। বাবা মায়ের ডিপ্রেশন কাটতে পারে সন্তানের চুম্বনে, সন্তানের উৎকণ্ঠা দূর হয় বাবা-মায়ের চুম্বনে। একইভাবে স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধুরা উপকার পেতে পারেন। তবে এ কথা ভুললে চলবে না, দুজন সমবয়সী মানব-মানবীর চুম্বন তাদের মানসিক সম্পর্ক থেকে দৈহিক সম্পর্ক তৈরির উত্তরণের প্রথম ধাপ।



চুম্বনঃ ভারতীয় প্রেক্ষিত

নরনারীর সপর্শের শ্রেষ্ঠতম পবিত্রতা ও নিষকলুস আনন্দানুভূতির আধার চুম্বন। সংখ্যাধিক দুঃখ দরিদ্রতার মধ্যে চুম্বন একটি টনিক বিশেষ। এ কথা ‘পরাগ’-এর। সাহিত্য, শিল্প, চলচ্চিত্র, গল্প ও উপন্যাসে মানুষ চুম্বন চায়। সেকালের মাসিক পরাগ পত্রিকায় আরও লেখা হয়েছে, "চাষী লাঙ্গল কাঁদে কাদাজল ঠেলে রৌদ্র বৃষ্টি সমস্ত দিন সহ্য করে সন্ধ্যাবেলায় যখন তার কুঠীরে ফিরে আসে তখন পল্লীবালা চাষীবধুর একটা গাঢ় তপ্ত চুম্বনেতে তার সমস্ত শ্রম বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই বলছিলাম চুম্বনের প্রয়োজন আছে বই কি-পৃথিবীর মরুপথে চলতে তৃষ্ণার্থ মানবের সঙ্গে প্রিয়তমার চুম্বন একটি সুন্দর ঝরণা বিশেষ।"

এ দেশের কামশাস্ত্র অনেক আগেই আমাদের জানিয়ে দিয়েছিল, চুম্বনকলা শিক্ষাসাপেক্ষ। বলেছিল এর প্রয়োজনীয়তা যৌন জীবনে অপরিহার্য। নারী-পুরুষের মনস্তত্ত্বের সঙ্গেও রয়েছে চুম্বনের অচ্ছেদ্য বন্ধন।



চুম্বনঃ বাৎস্যায়ন যা বলেছেন

চুম্বন বহু প্রকারের। স্থান কাল পাত্র ভেদেও আছে এই প্রকাশভেদ। চুম্বন প্রসঙ্গে ‘কামসূত্র’-র তৃতীয় অধ্যায়ে নীতিশাস্ত্র প্রণেতা বাৎস্যায়ন মুনি চুম্বনের নানা কলাকৌশল সম্বন্ধে বিশদ বর্ণনায় লিখেছেন অনেক কথা। অতি সংক্ষেপে কিছু কথা এই-

সাৎস্যায়ন বলেন, চুম্বনের স্থান ললাট, অলক (চূর্ণকুন্তল, কোঁকড়ান কেশদাম), কপোল, নয়ন, বক্ষ, স্তন, ওষ্ঠ এবং ওষ্ঠের ভেতরের দিক।

দক্ষিণ ভূখন্ডের পশ্চিম উপকূলের অন্তর্গত একশ্রেণীর লোকদের লাট বলে। তাদের মতে, উরুসন্ধি বাহুমূল আর নাভির নিচও চুম্বনের স্থান। তবে যে যে দেশে যে যে স্থানে চুম্বনের প্রথা প্রচলিত আছে, সেই স্থানই চুম্বিত হয় নর-নারীর অনুরাগ উপস্থিত হলে।

চুম্বনের সংজ্ঞায় বাৎস্যায়ন বলছেন, দুটি ঠোঁট ছুঁচালো করে আনা অর্থাৎ ‘মুকুলীকৃত’ মুখের সংযোজনকেই চুম্বন বলে। তবে তার স্থান বিশেষে রয়েছ নানা ধরনের দান ও গ্রহণ ভেদ। ফলে চুম্বনেও হয়েছে প্রকারভেদ। ফলে চুম্বনে মুখের প্রাধান্যই বেশি বলে এখানে বাৎস্যায়ন মুখের কথাই বলেছেন।

উপরোষ্ঠ ও নিম্নোষ্ঠ ভেদে অপ্রাপ্ত সঙ্গম (যে নারী আগে কখনও সঙ্গম করেনি) এবং অজাতবিশ্রম্ভা (যে নারী কখনও কারও সঙ্গে প্রেমালাপ করেনি) মেয়েদের চুম্বন তিন প্রকার। ‘নির্মিতক, স্ফুরিতক ও ঘট্টিতক। এই ধরনের চুম্বন মেয়েরাই প্রয়োগ করে থাকে।

পুরুষের দ্বারা বলাৎকারপূর্বক সহসা চুম্বনে নিযুক্ত হয়ে নারী যখন পুরুষের মুখে মুখ রাখে কিন্তু অধর পানের কোনো চেষ্টা করে না তখন তাকে নির্মিতক চুম্বন বলে। নির্মিতক অর্থে পরিমিত চুম্বন বোঝায়।

নারীর মুখে পুরুষ নিজের অধর প্রবেশ করিয়ে দিলে, নারীর কিঞ্চিৎ লজ্জা পরিত্যাগ করে তা হালকা চেপে ধরতে ইচ্ছা করে কিন্তু নিজের ওষ্ঠ ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং পুরুষের অধর নিজের অধরে রাখতে দেয় না। আবার পুরুষ যদি নিজেই নিজের অধর বের করে আনার চেষ্টা করে তখন নারী নিজে অধরওষ্ঠ দিয়ে চেপে ধরে। তখন তাকে স্ফুরিতক চুম্বন বলে।

হাত দিয়ে পুরুষের চোখ ঢেকে নারী নিজেও চোখ নিমীলিত করে পুরুষের অধরপ্রান্ত অল্পভাবে ধরে চারদিক ঘুরিয়ে দেখা, তখন তাকে বলে ঘট্টিতক চুম্বন। বাৎস্যায়ন আরও বলেছেন-

যখন নারী নিজেদের অধর দিয়ে পুরুষের ওষ্ঠাধর সপর্শ করে মাত্র, তাকে ‘নামমাত্র চুম্বন’ বলে।

স্পন্দিত চুম্বন-এ ক্ষেত্রে নারীদের ততটা লজ্জা থাকে না, নিচের ঠোঁট দিয়ে ওষ্ঠাধরে হাল্কা চাপ দিয়ে থাকে পুরুষের।

আর একটি touching kiss। এ ক্ষেত্রে নারী জিভ দিয়ে পুরুষের ঠোঁট স্পর্শ করে এবং চোখ বুজে নিজের হাতের সঙ্গে পুরুষের হাত মিলিয়ে দেয়।

এ দেশে হাজার একটা পন্ডিত, মতেরও আর অন্ত নেই। তাদের মতে, চুম্বন চার প্রকার। সম, বক্র, উদভ্রান্ত আর অবপীড়িতক।

সমান সমান মুখ রেখে একে অপরের অধরোষ্ঠ গ্রহণকে ‘সমচুম্বন’ বলে। মুখ ঘুরিয়ে অধরোষ্ঠ বর্তুলাকার অর্থাৎ ছুঁচালো করে যে অধর গ্রহণ তাকে বক্র বা তির্যক চুম্বন বলে।

চিবুক ও মাথা ধরা মুখ ঘুরিয়ে যে অধরোষ্ঠ গ্রহণ তাকে বলে উদভ্রান্ত চুম্বন। ঠিক সেই অবস্থায় যদি অত্যন্ত পীড়ন করে চুম্বন করা হয় তবে তাকে অবপীড়িতক চুম্বন বলে।

এই অবস্থায় যদি উভয়ে উভয়কে পীড়ন করে তবে সেই চুম্বনকে শুদ্ধপীড়িত চুম্বন বলে। আর যদি জিহ্বাসহ পীড়ন করা যায়, তবে সেই চুম্বন অধরপান বা চুষণ নামে অভিহিত।

হাতের আঙ্গুল যুক্ত করে অর্থাৎ বৃদ্ধ ও তর্জনীর মাথা একত্র করে অধরোষ্ঠকে চেপে ধরে পিন্ডাকার করে, না কামড়িয়ে শুধুমাত্র ওষ্ঠপুট দিয়ে অবপীড়িত করাকে পঞ্চম অবপীড়িতক চুম্বন বলে।

এই ধরনের চুম্বনের আগে পীড়ন থাকলেও আকর্ষণ করাটাই এখানে একমাত্র উদ্দেশ্য, বিশেষত্ব। এমন অবপীড়িতক চুম্বনকে আকৃষ্ট চুম্বনও বলে।

অতি সংক্ষেপে এই পর্যন্ত। এ ছাড়াও কথার কথায় হাজারও রকমের চুম্বন আর অসংখ্য রকমের প্রয়োগ প্রণালীর কথা ভাষার বিচিত্র বিন্যাসে লিখেছেন মুনি বাৎস্যায়ন তার অমরগ্রন্থ "কামসূত্রে"।








কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার লেখা শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment