আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram
Written By pinuram
আট
বন্দিনীর মুক্তি (#০১)
ঠিক পুজোর আগে দানা ঠিক করে, বরুন, সুনিতা বৌদি, রজনী, বুড়ো দুলাল, দেবুর বাবা মা এদের জন্য নতুন জামা কাপড় কিনবে। ফারহান আর কেষ্টকে নিয়ে মধ্য মহানগরে যায় কেনা কাটা করার জন্য। পাল বাগানেও জামা কাপড়ের দোকান আছে, কিন্তু দানার ইচ্ছে সুনিতা বৌদি আর রজনীর জন্য বড় দোকান থেকে শাড়ি কিনবে। চারপাশে লোকে লোকারণ্য, কোথাও এক ফোঁটা পা ফেলার জায়গা নেই। রাস্তা ঘাটে পণ্য বিক্রেতা নিজেদের পসরা মেলে জামা কাপড় বিক্রি করতে বসে পড়েছে। সারা শহর যেন ওই মধ্য মহানগরে জমে গেছে, আবাল বৃদ্ধ বনিতা পথে নেমেছে পুজোর খুশিতে নতুন জামা কাপড় কেনার জন্য। চিৎকার চেঁচামেচিতে কান পাতা দায়, পথে চলতে কখন কার গায়ে হাত পরে যায়, কার সাথে ধাক্কা লাগে সেইদিকে কারুর ভ্রূক্ষেপ নেই।
ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে হঠাৎ এক মহিলাকে পেছন থেকে দেখে দানা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। প্রায় চার, পাঁচ মাস আগে দেখা, মহুয়া বাজপাই তার ছোট মেয়ে রুহিকে নিয়ে বাজার করতে বেড়িয়েছে। যদিও ঠোঁটে হাসি মাখা কিন্তু ওর চেহারায় সেই পুরাতন জেল্লা আর নেই। পাতলা চশমার পেছনে নির্মল দুই চোখ, উজ্জ্বলতা হারিয়ে কোঠরাগত, চোখের কোল কালিমা লিপ্ত, চেহারা মনে হল রক্ত শুন্য। শুধু মনে হয় মেয়ের জন্য আজও ঠোঁটে হাসি মাখিয়ে কোন অনির্দিষ্টের দিকে এগিয়ে চলেছে। কাজের মেয়ের কোলে রুহি, মায়ের পাশে পাশে এগিয়ে চলে। কোন দোকানের কোন খেলনা পছন্দ হলেই চেঁচিয়ে আবদার করে। মহুয়া মৃদু বকুনি দেয়, বাড়িতে অনেক খেলনা আছে। ওই দৃশ্য দেখে দানা দাঁড়িয়ে পড়ে, চারপাশে হঠাৎ করে শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে আসে। একবার ভাবে কাছে এগিয়ে যাবে, জিজ্ঞেস করবে কেমন আছে। কিন্তু মহুয়া কি ওকে চিনবে, হয়ত না চেনার ভান করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে। বেশ্যা বৃত্তি পেশায় এটাই নিয়ম, যার সাথে একাকী কোন হোটেলের কামরায় সহবাস করেছ, জন সমক্ষে দেখা হলে সেই মানুষ পরিচয় দিতে চায় না। দানাকে ওই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহান আর কেষ্ট প্রশ্ন করে, কিন্তু দানা ম্লান হেসে ওদের প্রশ্ন এড়িয়ে যায়।
হঠাৎ মহুয়া কিছু দেখার জন্য পেছনে তাকাতেই দানার সাথে চোখাচুখি হয়ে যায়। মহুয়ার চোখের তারা দানার চেহারার ওপরে আটকে যায়, বহু পরে ফ্যাকাসে ঠোঁটে এক ম্লান হাসি ফুটে ওঠে। দানার বুক খুশিতে ভরে যায়। তাহলে মহুয়া ওকে চিনতে পেরেছে। দানা ভিড় ঠেলে মহুয়ার দিকে এগিয়ে যেতেই, মহুয়া আঙ্গুলের ইশারায় ওকে কাছে আসতে মানা করে দেয়। ইশারায় জানায় যে রাতের বেলা ফোন করবে। দানা ইতিমধ্যে নিজের ফোন নাম্বার বদলে নিয়েছে, তাই মহুয়ার ফোনে একটা মেসেজ লিখে পাঠিয়ে নিজের নাম্বার দিয়ে দেয়।
মহুয়ার সাথে দেখা হওয়ার আগেই অবশ্য রজনী আর সুনিতা বৌদির জন্য শাড়ি কেনা হয়ে গেছিল। তাই মহুয়ার সাথে দেখা হওয়ার পরে দানার ওই ভিড়ের মধ্যে থাকতে আর ইচ্ছে করে না। নিজের গুমটিতে ফিরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মহুয়ার ফোনের অপেক্ষা করে। এক মিনিট যেন অনন্ত কাল বলে মনে হয় ওর কাছে, ঠিক এইরকম মনে হত, যখন দানা ইন্দ্রাণীর জন্য ওর দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে অপেক্ষা করত। এগারোটা বেজে গেল, বারোটা বেজে গেল, এমনকি একটা বেজে গেল কিন্তু দানার চোখে ঘুম নেই। বারেবারে ফোন দেখে, আর বিছানার ওপরে এপাশ ওপাশ করে। ঘণ্টা আর মিনিটের মাঝে যে দুই দাগ ফুটকি মনে হয় সেদিন যেন খুব আস্তে আস্তে চলছে। ঠিক আড়াইটে নাগাদ ওর ফোন বেজে ওঠে।
বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দানা ফোন তুলে জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছেন আপনি?"
মহুয়া ম্লান হেসে ওকে প্রশ্ন করে, "আমি আর কেমন থাকতে পারি মিস্টার দানা। আপনি বলুন আপনি কেমন আছেন? আপনার কাজ কর্ম কেমন চলছে....." শেষের বাক্য মনে যেন একটু ঠেস দিয়ে বলা।
কথাটা দানার বুকে বড় বেজে ওঠে, যদিও মহুয়া ওকে ধিক্কার দিয়ে বলেনি তাও ওই ব্যাথা গিলে নিয়ে দানা বলে, "না ম্যাডাম, আমি ওই কাজ ছেড়ে দিয়েছি।"
মহুয়া ওকে বলে, "হ্যাঁ ভালো করেছেন। এই পেশা আপনার মতন লোকের সাজে না। কি করে আপনি জড়িয়ে পরলেন সেটাই ভাবি। যাই হোক আজকাল তাহলে কি করছেন আপনি?"
দানা হেসে উত্তর দেয়, "আমাদের মতন মানুষের কাজ খোঁজা একটা বড় কাজ ম্যাডাম। আপনি কেমন আছেন সেটা বলেন। রুহিকে দেখলাম ভারী মিষ্টি হয়েছে দেখতে।"
রুহির নাম শুনতেই মহুয়ার বুক কেঁপে ওঠে, ধরা গলায় হাসি টেনে বলে, "শুধু ওর মুখ চেয়ে বেঁচে আছি না হলে কবে আত্মহত্যা করতাম।"
কথাটা শুনেই মহুয়ার প্রতিকূল অবস্থার কথা দানার মনে পড়ে যায়। ইতর লম্পট শ্বশুরের কাছে নির্যাতিতা বন্দিনীর জীবন যাপন করছে এই মহিলা। দানার মুখ থেকে আর কোন শব্দ বের হয় না, গলায় যেন কিছু আটকে যায়।
পাঁজর নিঙরে চাপা ক্রন্দন মহুয়ার গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠে আসে, "একা একা কোথাও যেতে পারি না জানেন। আমি সবসময়ে চাকর ড্রাইভারের নজরবন্দি। পুজোর কেনা কাটা করতে যাবো তাও ওদের সাথে নিয়ে যেতে হয়। আজ বিকেলেও দুইজনে পাশে ছিল তাই আপনার সাথে ওইখানে কথা বলতে পারিনি। এই একটু আগে শ্বশুরজির ইতর ইচ্ছের তালিম করে তবে একটু ছুটি পেয়েছি। তবে ভাগ্য ভালো আপনার পরে আর কারুর সাথে আমাকে সহবাস করতে বলেনি শ্বশুরজি। যদি জোর করত তাহলে আমি মেয়েকে নিয়েই বিষ খেতাম। তবে কি জানেন যত দিন গেছে ওর অত্যাচার আরও বেড়ে গেছে। বাড়িতে শুধু মাত্র ছোট গাউন পড়িয়ে রাখে, ভেতরে কিছুই পড়তে দেয় না। আজকাল সময় ক্ষণ দেখে না, ইচ্ছে হলেই ঘরের মধ্যে ডেকে শুরু হয়ে যায়। আমি ওর কাছে একটা প্রানহীন রক্ত মাংসের খেলার পুতুল। কোন কোনোদিন সারা রাত ধরে আমার এই শরীর নিয়ে জঘন্য খেলায় মেতে থাকে। সারা রাত মেয়েটা একা ঘুমায়, মাঝে মাঝে কেঁদে উঠলে ওই উলঙ্গ অবস্থাতেই ওকে ঘুম পাড়িয়ে আবার শ্বশুরের কাম পিপাসা চরিতার্থ করতে হয়। একবার চলাফেরা করতে পারলে নাকি আমাকে নিয়ে কোন রেড এন্ড ব্লু ক্লাব আছে সেখানে নিয়ে যাবে।"
কথা গুলো বলতে বলতে মহুয়া কেঁদে ফেলে, "আমি আর পারছি না দানা, আর পারছি না। কিন্তু মেয়েটাকে কার কাছে রেখে যাই সেটাই চিন্তা।"
এর আগেও দানা, কঙ্কনা নাস্রিনের কাছে ওই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের নাম শুনেছে। মহুয়ার কান্না শুনে দানার রক্ত গরম হয়ে যায়, প্রচন্ড ক্রোধে মাথার শিরা ফেটে পড়ার যোগাড় হয়। মহুয়ার চোখের জলের একটা বিহিত করতেই হবে ওকে।
মহুয়া ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলে, "একটা বাঁচোয়া, শ্বশুরজি রুহির নামে, নোনাঝিলে একটা বিশাল ফ্লাট কিনে দিয়েছেন। শ্বশুরজির মৃত্যুর পরে ব্যাবসার বেশ কিছু অংশ আমার নামে হয়ে যাবে, সেই মতন উইল করেছেন। এমন শয়তান বুড়ো যে প্রচুর সাক্ষী সাবুদের সামনে, ভিডিও করে উইল তৈরি করেছে যাতে আমি পালাতে না পারি। বুড়োর শারীরিক অবস্থা দিন দিন যেমন ভাবে উন্নতি হচ্ছে তাতে মনে হয় না আমার এই অদৃষ্ট জীবন খুব শীঘ্র শেষ হবে। মনে হয় আরও বিশ বাইশ বছর আমার শ্বশুরজি আমার ওপরে নির্যাতন চালিয়ে যাবেন।"
রক্তাক্ত বেদনার কাহিনী শুনে দানার চোখ জ্বালা করে ওঠে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে প্রবোধ দিয়ে বলে, "আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি ওই ইতর পশুর হাত থেকে আপনাকে বাঁচাব।"
মহুয়া চাপা আঁতকে ওঠে, "না, না, ভুলেও আমার দিকে হাত বাড়াবেন না, দানা। আপনি আমাকে বাঁচাতে পারবেন না, দানা। আমার শ্বশুরজি বিশাল বড়লোক, অনেক শক্তিশালী। এই মহানগরের প্রচুর ক্ষমতাশালী ব্যাক্তির সাথে তাঁর পরিচয় আছে। লোক লাগিয়ে আমার শশুরজি আপনাকে মেরে ফেলবে, আমাকে মেরে ফেলবে আর রুহির কি হবে জানি না। দানা, আমি ভেবেছিলাম আপনাদের এই পেশায় কেউ কারুর বিষয়ে নাক গলায় না, তাই মনের ভার হালকা করার জন্য আপনাকে বলেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে সত্যি ভুল করেছিলাম আমি, কেন যে মরতে আপনাকে বলতে গেলাম..... যাই হোক আমি ফোন রাখছি।"
ক্ষোভে দুঃখে মহুয়া ফোন রেখে দিতে যায় কিন্তু দানা ওকে থামিয়ে বলে, "ম্যাডাম দয়া করে ফোন রেখে দেবেন না। এখন আর মরতে ভয় নেই ম্যাডাম। যদি মরতেই হয় তাহলে আপনাকে আর রুহিকে ওই নরক থেকে বাঁচিয়ে এনেই মরব। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি ম্যাডাম, একবার আমাকে বিশ্বাস করে দেখুন।"
কিছুক্ষণ থেমে মহুয়াকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা একটা কথা আমাকে বলতে পারেন? আমার খবর আপনাকে কে দিয়েছিল?"
মহুয়া চোখ মুছে খানিকক্ষন চুপ থাকার পরে উত্তর দেয়, "আমার শ্বশুরজি আমাকে বলেছিল, সেই আমাকে নির্দেশ দিয়েছিল ওই রেস্টুরেন্টে যেতে। সেই আমাকে নিজের মোবাইলে আপনার ফটো দেখিয়েছিল আর তাই আমি ওই রেস্টুরেন্টে আপনাকে চিনতে পেরেছিলাম। আমি আর কাউকে চিনি না।"
দানার মাথার মধ্যে কেমন যেন সব তালগোল পাকিয়ে যায়, সত্যি কি মহুয়া, কঙ্কনা অথবা নাসরিনকে চেনে না? অবশ্য মহুয়াকে দেখে মনে হয় না যে এই নারী, কঙ্কনা অথবা নাসরিনকে চিনতে পারে। মহুয়া যদি ওর ফটো দেখে চিনেছিল তাহলে ওর পকেটের ওই পেনের কি দরকার ছিল? কঙ্কনা ওকে বলেছিল যে সব মহিলারা ওর পকেটের পেন দেখেই ওকে দেখে চিনবে কিন্তু মহুয়ার কাছে সত্য জানতে পেরে সন্দেহের উদ্রেক হয়। বাকি মহিলারাও নিশ্চয় ওর ফটো দেখেই ওকে চিনেছিল। লোকেশ বাজপাই যেমন লম্পট আর কামুক স্বভাবের মানুষ, তাতে কঙ্কনা আর নাসরিনের সাথে পরিচয় থাকা কোন অসম্ভব ব্যাপার নয়। কুয়াশা কাটিয়ে দানা বেশ কিছু প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পায়। কঙ্কনা আর নাসরিনের পরিচয়ের পরিধি অনেক বিস্তৃত, সেই সুত্রে লোকেশ বহু শক্তিশালী ব্যাক্তিদের চেনে। এহেন শক্তিশালী মানুষের সাথে সম্মুখ সমরে জেতা অসম্ভব, কিন্তু মহুয়ার চোখের জলের প্রতিশোধ দানা নেবেই। দানা চিন্তা ভাবনা, পরিকল্পনা করার জন্য মহুয়ার কাছে কয়েকদিনের সময় চেয়ে নেয়।
সারা রাত ধরে দানা মাথা খাটায় কি করে এই লম্পট পশুর হাত থেকে মহুয়াকে বাঁচানো যায়। সম্মুখ সমরে নামলে লোকেশ, মহুয়া আর রুহির ক্ষতি করবেই। লোকেশকে প্যাঁচে ফেলতে হবে, কিন্তু কি ভাবে প্যাঁচে ফেলা যায়। আইন কানুন ওদের মতন ক্ষমতাশালী মানুষের পকেটে। সরাসরি ধমকি দিলে কোন কাজ হবে না, একমাত্র শঙ্কর রামিজকে নিয়ে হুমকি দেওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই, কিন্তু হুমকি দিতে গেলেও অসুবিধা আছে। পুলিস দিয়ে ঠিক দানাকে খুঁজে বের করে নেবে। হুমকি নয়, সরাসরি লোকেশকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে, কিন্তু কি ভাবে?
দুইদিন পরে গভীর রাতে মহুয়া ফোন করে দানাকে। দানা ওর কাছ থেকে ডাক্তারের নাম ধাম জেনে নেয় আর ওকে বলে, ওর আর লোকেশের সহবাসের একটা ভিডিও কোনরকমে যদি মহুয়া নিজের মোবাইলে তুলতে পারে তাহলে বেশ ভালো হয়। মহুয়া জানতে চায় দানা কি করতে চলেছে, দানা নিজের পরিকল্পনা খুলে বলে, জানায় ওই ভিডিও নিয়ে সংবাদ পত্রে দিতে চায়, জানাতে চায় সমগ্র দেশ বাসিকে কি ভাবে এক বিধবা নারী তাঁর শ্বশুরের হাতে নির্যাতিত হয় এই দেশে। মহুয়া আঁতকে ওঠে, নিজের উলঙ্গ ছবি, নিজের আত্মসন্মান এই ভাবে বিলিয়ে দিতে রাজি নয়। দানা মহা ফাঁপরে পড়ে যায়, তাহলে কি করে কি করা যায়। মহুয়া জানায় ভিডিও দিতে পারে তবে একটা শর্তে, দানা ওই ভিডিও কোন সংবাদ পত্রে, কোন সংবাদ চ্যানেলে জানাতে পারবে না। দানা জানায় ওর পরিকল্পনা বদলাতে হবে কিন্তু ভিডিও দিলে খুব ভালো হয়।
দানা জানে মহুয়ার সাথে যোগাযোগ করতে হলে ওকে একটা ভিন্ন ফোন নাম্বার থেকে করতে হবে না হলে যদি কোন সময়ে মহুয়ার ফোন কেউ দেখে ফেলে তাহলে মহুয়া বিপদে পরবে। এই সব ভেবে দানা একটা নতুন ফোন কেনে আর একটা নতুন নাম্বার নেয়। পরেরদিন গভীর রাতে মহুয়ার বাড়ির দেয়াল টপকে ওর বাড়িতে ঢোকে। নিশুতি রাতের অন্ধকারের সাহায্যে গা ঢাকা দিয়ে পেছনের দরজায় দাঁড়িয়ে মহুয়াকে একটা ফোন করে। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে, মহুয়া অতি সন্তর্পণে পেছনের দরজা খুলে দানাকে বাড়ির মধ্যে ঢুকায়। সামনে মহুয়াকে দেখে দানার গলা কেঁপে ওঠে, কয়েক মাস আগে দেখা সুন্দরী মহুয়া নিজের আব্রু লজ্জা খুইয়ে এক জ্যান্ত লাশের মতন ওর সামনে দাঁড়িয়ে। মহুয়ার মিষ্টি চেহারার যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, লোকেশের নির্দেশে ঠোঁটে লিপ্সটিক মেখে, চোখের কোলে কাজল পরে, লাস্যময়ী সাজ সেজে শ্বশুরের কাম পিপাসা চরিতার্থ করার জন্য তৈরি। দানাকে দেখে মহুয়া ভেঙ্গে পড়ে, কাজল কালো চোখের কোল ভাঙ্গা বাঁধের মতন উপচে পড়ে।
"আপনি" ছেড়ে চোখের সামনে দানাকে দেখে ওর কলার ধরে জিজ্ঞেস করে, "কেন এসেছ এতরাতে? আমার অসহায় পরিস্থিতি দেখতে এসেছ?"
মহুয়ার বুকের ভাঙ্গা আওয়াজ দানার বুকের মধ্যে বড় বেজে ওঠে, ওর মুখ আঁজলা করে ধরে কপালে ঠোঁট চেপে ধরে সাহস দেয়, "ওই পশুটার হাত থেকে তোমাকে বাঁচাবোই মহুয়া। তুমি চিন্তা করো না মহুয়া, আমার ওপরে একটু ভরসা রাখো। আমি কথা দিচ্ছি সব ঠিক করে দেব।"
মহুয়া জল ভরা চোখে ওর দিকে আতঙ্কত কণ্ঠে বলে, "কি ঠিক করে দেবে দানা, শ্বশুরজি কোন ভাবে আঁচ করতে পারলে তোমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে বিক্রি করে দেবে আর রুহিকে ধরে রাখবে।"
বন্দিনীর মুক্তি (#০২)
দানা সান্ত্বনা দিয়ে বলে, "লোকেশের সাথে সম্মুখ সমরে যাচ্ছি না মহুয়া, ওকে প্যাঁচে ফেলে মারবো।"
দানা মহুয়ার হাতে নতুন ফোন ধরিয়ে বলে এরপর থেকে মহুয়া যেন ওকে এই নতুন ফোন থেকেই ফোন করে। ওর নিজেস্ব ফোন যদি কোনোদিন কারুর হাতে পরে তাহলে কেউ ওদের এই মেলামেশার ব্যাপারে জানতে পারবে না। রক্ত শুন্য ঠাণ্ডা গালের ওপরে দানার তপ্ত হাতের ছোঁয়া পেয়েই মহুয়া ওর জামা খামচে ধরে বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে কেঁপে ওঠে।
কিন্তু ওই পরশ ক্ষণস্থায়ী, কিছুপরেই লোকেশের ঘরে মহুয়ার ডাক পড়ে। মহুয়া কোনরকমে দানার হাত ছাড়িয়ে, চোখ মুছে, ঠোঁটে মেকি হাসি এঁকে নিয়ে শ্বশুরের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
দানা, লোকেশের ঘরের বাইরে, পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে মোবাইলে সব কিছু রেকর্ড করে নেয়। বারেবারে মনে হয় লোকেশকে এই রাতেই শেষ করে দিক, কিন্তু খুনের দায়ে তাহলে মহুয়া আর দানার জেল হয়ে যাবে। দানা যেইরকম ভাবে চুপচাপ মহুয়ার বাড়িতে এসেছিল, ঠিক সেই ভাবে মহুয়ার বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
পরেরদিন দানা, লোকেশের চিকিৎসক, ডক্টর মানস সোমের কাছে যায়। লোকেশের আত্মীয় হসাবে নিজের পরিচয় দিয়ে লোকেশের শরীর স্বাস্থের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পরে দানা বুঝতে পারে, ডক্টর মানস সোম ভালো লোক, লোকেশ বাজপাইর সাথে শুধু মাত্র ডক্টর আর রুগীর সম্পর্ক তার চেয়ে বেশি কিছু নয়। হয়ত ডক্টর মানস সোমকে সব কিছু খুলে বললে মানস বাবু ওর সাহায্য করতে পারে।
দানা ঝুঁকি নিয়ে ডক্টর মানসকে বলে, "ডাক্তার বাবু আপনার সাথে একটা গোপন বিষয়ে কিছু কথাবার্তা আছে।"
ডক্টর মানস গোপন বিষয়ের ব্যাপারে চাইলে, মহুয়ার শ্লীলতা বাঁচিয়ে লোকেশের অত্যাচারের কথা কিছুটা জানায়। প্রথমে ডক্টর মানস কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না দানার কথা। দানাকে হুমকি দেয় পুলিশে ধরিয়ে দেবে, সিকিউরিটি দিয়ে ওকে বার করে দেবে ইত্যাদি। নিরুপায় দানা, ডক্টর মানসকে শান্ত করে শেষ পর্যন্ত মোবাইলে তোলা ভিডিও দেখায়। ওই ভিডিও দেখার পরে ডক্টর মানস মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়েন তিনি।
বারেবারে মাথা ঝাঁকিয়ে অবিশ্বাসের সুরে বলে, "এতদিন তাহলে আমি এক পাপীর চিকিৎসা করছি। ছিঃ ধিক্কার আমাকে, একবার যদি মহুয়া আমাকে কোন ভাবে জানাতো তাহলে....."
দানা ওকে বলে, "কি করে বলবে ডাক্তার বাবু, লোকেশ যে মহুয়াকে হুমকি দিয়েছে। কিছু হলেই মহুয়াকে কোন বেশ্যালয়ে বিক্রি করে দেবে আর ওর মেয়ে রুহিকে নিজের কাছে আটকে রেখে দেবে। কি করা যায় বলুন। লোকেশ যেমন ক্ষমতাশালী আর বিত্তশালী ব্যাক্তি তাতে আইনের সাহায্য নেওয়া যাবে না, হুমকি দেওয়া যাবে না, সরাসরি খুন করলেও মহুয়া ফেঁসে যাবে।"
দানা ডক্টর মানসের হাত ধরে কাতর মিনতি করে, "সব কিছু আপনার হাতে ডাক্তার বাবু। আপনি লোকেশকে আবার প্যারালাইসিস করে দিন, ও যেন আর বিছানা ছেড়ে উঠতে না পারে এমন করে দিন।"
ডক্টর মানস বেশ কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে বলেন, "সেটাতে সমস্যার সমাধান হবে না মিস্টার দানা, বরঞ্চ সমস্যা আরো জটিল হয়ে উঠবে। ওর বড় ছেলে আমার ওপরে কেস করতে পারে। ওদের অনেক টাকা, বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ঠিক করিয়ে নিয়ে আসবে। ডাক্তারের কাজ মানুষের প্রাণ বাঁচানো আর রোগের নির্মূল করা। একটা কাজ আমি করতে পারি, দানা। কোন ভাবে আপনি যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে লোকেশকে আমার অপারেশান টেবিলে ফেলতে পারেন তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, ওর প্রাণহীন দেহ অপারেশান থিয়েটার থেকে বের হবে।"
খুশিতে দানার চোখে জল চলে আসে, ডক্টর মানসের দুই হাত ধরে ধন্যবাদ জানিয়ে বেড়িয়ে আসে।
কিন্তু লোকেশ বাড়ি থেকে বিশেষ বের হয় না। বাড়ির মধ্যেই হুইল চেয়ারে বসে এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করে। চাকর বাকর সবসময়ে সাথে থাকে, বাইরে গেলেও এক চাকর সাথে থাকে। কিছু করে যদি লোকেশকে বাড়ির বাইরে বের করা যায় তাহলে ওর গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটানো যেতে পারে, অথবা বাড়ির ভেতরেই কোন ভাবে দুর্ঘটনা ঘটাতে হবে যাতে লোকেশ আহত হয়ে হসপিটালে ভর্তি হয়।
প্রথমে লোকেশের চাকর আর ড্রাইভারকে সরাতে হবে আর তার জন্য ওর লোকবলের প্রয়োজন। দানা সোজা মহেন্দ্র বাবুর কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে মহেন্দ্র বাবু দানাকে বেশ কয়েকটা থাপ্পড় কষিয়ে বলেন, দানা কেন শুরুতেই লোকেশকে খুন করেনি, এক অবলা নারীর অত্যাচার কেন জেনে বুঝেও হতে দিয়েছে। দানা মহেন্দ্র বাবুকে মহুয়ার জটিল পরিস্থিতির কথা বুঝিয়ে বলাতে তিনি শান্ত হন। দানা আরও জানায় যে আগে ওই ড্রাইভার আর চাকরকে লোকেশের বাড়ি থেকে সরাতে হবে তবে বাকি কাজ করা যাবে।
শঙ্কর আর রমিজ কোমরে পিস্তল গুঁজে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে, "তুই শুধু এক বার দেখিয়ে দে কার মাথা নামাতে হবে, বাকি কাজ আমাদের।"
পুজোর ভিড়ে যখন বাকি লোকজন পুজোর আনন্দে মেতে তখন দানা মহুয়াকে কি ভাবে উদ্ধার করবে সেই চিন্তায় ডুবে। না মহুয়ার রূপের মোহের বশে মহুয়াকে বাঁচাতে চায় না, ওর করুণ পরিস্থিতি থেকে ওকে বাঁচাতে চায়। পরের দিন সকাল থেকে দানা আর বাকি ছেলেরা, লোকেশের বাড়ির আশেপাশে ছায়ার মতন মানুষের ভিড়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকে। ড্রাইভার আর ওই কাজের মেয়েকে আগে সরাতে হবে, না হলে লোকেশকে বাগে ফেলা সম্ভবপর হয়ে উঠবে না।
সুযোগ চলে আসে সন্ধ্যেবেলার পরে, কাজের মেয়েকে নিয়ে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে বাজারের দিকে বের হয়। একটা গাড়িতে দানা, শঙ্কর রমিজ আর কয়েকটা ছেলে নিয়ে ওদের গাড়ি অনুসরন করে, দ্বিতীয় গাড়িতে কেষ্ট নাসির শক্তি ওদের গাড়ি অনুসরন করে। পরিকল্পনা মাফিক দানার গাড়ি আর কেষ্টর গাড়ি, লোকেশের গাড়িকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায়। কেষ্টর গাড়ি একদম সামনে গিয়ে ব্রেক কষে, আর তার ফলে দানার গাড়ি ব্রেক চেপে দেয়। পেছনে থাকা লোকেশের গাড়ি আচমকা ব্রেক কষতে না পেরে দানাদের গাড়ির পেছনে ধাক্কা মারে। কোন কিছু বলার আগেই দুই গাড়ি থেকে ছেলেরা নেমে ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে উত্তম মধ্যম মারতে শুরু করে দেয়, কাজের মেয়েটা বাধা দিতে এলে ওকেও অকথ্য গালিগালাজ শুরু করে দেয়। গাড়ি ভাঙচুর করে, লোকেশের গাড়ির ড্রাইভারকে মারতে মারতে আধমরা করে ওইখানে রেখে চলে যায়। কাজের মেয়েটা লোকেশের বাড়িতে খবর দেয় কিন্তু ততক্ষণে দানা আর বাকি ছেলেরা ওইখান থেকে সরে যায়। সব ছেলেরাই নকল দাড়ি গোঁফ লাগিয়ে ছদ্মবেশে এসেছিল, এমনকি নিজেদের গাড়ির নাম্বার বদলে নকল নাম্বার লাগিয়ে এনেছিল তাই পুলিসে খবর দিলেও এক রাতে ওদের ধরা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
সেদিন রাতে দানা মহুয়াকে ডক্টর সোমের কথা জানায়, ড্রাইভারকে কেমন ভাবে সরানো হয়েছে সেই বিষয়ে জানায়। কাজের মেয়েটাকে সরাতে পারেনি শুধু এই টুকু আক্ষেপ। সব শুনে মহুয়া ভয়ে কেঁপে ওঠে, সেইসাথে মুক্তির এক ক্ষীণ আলো দুর অন্ধকার গগনে দেখতে পায়।
মহুয়া ধরা গলায় বলে কানের কাছে ফোন চেপে ধরে, "তোমাকে কি ভাবে ধন্যবাদ জানাবো জানি না দানা।"
দানা মহুয়াকে শান্তনা দিয়ে বলে, "কেঁদো না। মন শক্ত করো, আর শুধু এইটুকু ভাবতে চেষ্টা কর কি ভাবে লোকেশকে বাড়ির বাইরে আনা যায়, অথবা ঘরের মধ্যে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটানো যায়। এমন ভাবে কাজ করতে হবে যাতে কোন ভাবে সন্দেহের তীর যেন তোমার দিকে না যায়, তাহলেই বড় সমস্যা হয়ে যাবে। তোমার ড্রাইভার ঠিক হওয়ার আগেই আমাদের কাজ সারতে হবে আর ওই কাজের মেয়েটাকে ফাঁসাতে হবে।"
মহুয়া ফোনে ঠোঁট চেপে বলে, "কেন দানা, কেন আমার জন্য এত বড় ঝুঁকি নিচ্ছ? তুমি কি আমার....."
কথাটা শেষ করার আগেই মহুয়া ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে অন্যপাশে।
দানা বুঝতে পারে মহুয়া কি বলতে চায়, সেই পথে উত্তর না দিয়ে ওকে বলে, "আমি রুহির জন্য করছি, মহুয়া। দয়া করে কেঁদো না, নিজেকে শক্ত কর তাহলেই হবে। এবারে আমার পরিকল্পনা মন দিয়ে শোন। আগামী কাল রাতের বেলা তুমি লোকেশকে বল তোমার সাথে সহবাস করার আগে যেন ভালো করে স্নান করে। ঠিক তার আগে তুমি কাজের মেয়েটাকে দিয়ে বাথরুম পরিষ্কার করাবে, আর ঠিক তারপরে বাথরুমের মেঝেতে স্নানের জেল ঢেলে পিচ্ছিল করে দেবে। এর ফলে তোমার ওপরে সন্দেহ জাগবে না কারুর। তুমি বাথটাবের পর্দা গুলো ঢিলে করে দেবে। লোকেশের স্নানের সময়ে কোন কাজের অছিলায় নিজে বাথরুমে যাবে না, কাজের মেয়েটাকে সাথে পাঠাবে। লোকেশ এমনিতেই ভালো ভাবে হাঁটতে চলতে পারে না, তোমার সাথে সঙ্গম করার উত্তেজনায় এই ফাঁদে পা দেবেই দেবে। আর বাথরুমে গিয়ে পা পিছলে পরবে, পিঠে চোট লাগবে, আকস্মিক পড়ে গিয়ে মাথা ফাটাতে পারে। আর এর মাঝে আমরা আর কোন ফোন করব না।"
পরিকল্পনা শুনতে শুনতে মহুয়ার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে, "আমার খুব ভয় করছে দানা। যদি শ্বশুরজি বাথরুমে না যায় তাহলে কি হবে, যদি কাজ না হয় তাহলে বড় বিপদে পড়ে যাবো কিন্তু।"
দানা ওকে শান্তনা দিয়ে বলে, "লোকেশকে উস্কাও ভালো ভাবে উস্কাও, উত্তেজিত করে তোল ওকে। ও যেমন লম্পট কামুক স্বভাবের মানুষ তোমার কথা অনুযায়ী নিশ্চয় বাথরুম যাবে।"
লোকেশের ড্রাইভার, দানা শঙ্কর রমিজের হাতে মার খেয়ে আধ মরা হয়ে হসপিটালে ভর্তি, একদিনে বিশ্বাসযোগ্য ড্রাইভার পাওয়া সম্ভব নয়। পুজো শেষ, তাও খুদে বাজার এলাকা খুব জমজমাট। দানা, মানুষের ভিড়ে মিশে লোকেশের বাড়ির ওপরে কড়া নজর রাখে। দেখতে দেখতে সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নেমে আসে। রাত ন'টা বাজতে যায় কিন্তু লোকেশের বাড়ি থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দানা অস্থির হয়ে ওঠে। ওর পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি লোকেশ বাথরুমে যায় তাহলে পড়তে বাধ্য আর যদি না যায় তাহলে ভিন্ন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। ঠিক রাত দশটা নাগাদ বাড়িতে লোকজন আসতে শুরু করে, সবাই ত্রস্ত। মহুয়া সবার নজর এড়িয়ে দানাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় লোকেশের দুর্ঘটনার ব্যাপারে। পরিকল্পনা মতন কাজের মেয়েটা লোকেশকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকেছিল। কামুক লম্পট লোকেশ, বিধবা ছোট বৌমার সাথে জলকেলি করবে সেই ইচ্ছেতে হুইল চেয়ার ছেড়ে বাথটাবের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। জেল ভর্তি পিচ্ছিল মেঝেতে পা রাখতেই পিছল খেয়ে পড়ে, আর বাথটাবের কোনাতে লেগে মাথা ফেটে যায়। রক্তে বাথরুম ভেসে গেছে, মহুয়াও নকল আর্তনাদ করে বাড়ির সবাইকে জড় করে দেয়। কাজের মেয়ের ওপরে সবাই চোটপাট শুরু করে দিয়েছে, এ্যাম্বুলেন্স খবর দেওয়া হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স চলে আসে। রক্তাক্ত লোকেশকে নিয়ে মহুয়া আর মহুয়ার ভাসুর সোমেশ হসপিটালের দিকে যাত্রা শুরু করে, পেছনে গাড়িতে বাকি আত্মীয় সজ্জন। দানা একটা ট্যাক্সি নিয়ে ওদের পেছন পেছন হাসপাতালে পৌঁছে যায়। অপারেশান থিয়েটারের সামনে লোকে লোকারণ্য, এক কোনায় মহুয়া রুহিকে কোলে নিয়ে মেকি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। বড় ছেলে সোমেশ আর তার পরিবার ইতস্তত বিক্ষিপ্ত, সবাই উৎকণ্ঠায় ডাক্তারের অপেক্ষায়। দানা বেশ কিছু তফাতে দাঁড়িয়ে ওদের লক্ষ্য করে যায়। কিছুপরেই দানার মোবাইলে ডক্টর মানস সোমের একটা মেসেজ আসে, "ডোন্ট ওরি (কিছু ভেব না)।"
ডক্টর মানস অপারেশান থিয়েটারে ঢোকার আগে লোকেশের আত্মীয় সজ্জনদের সান্ত্বনা বাক্য শুনিয়ে ঢুকে পড়ে। লোকেশের আত্মীয় সজ্জনের ফিস ফিসানিতে দানা জানতে পারে, লোকেশের মাথা ফেটে প্রচুর রক্ত ক্ষয় হয়ে গেছে। কিছু কিছু আত্মীয় সজ্জন লোকেশের মৃত্যু কামনা করে, বলে লোকটা একটা পয়সা পিচাশ শয়তান ছিল, কেউ বলে লোকটা একজন লম্পট। দানা মনে মনে হাসে, তাহলে ওকে মেরে দানা কোন পাপ করেনি। দুই ঘন্টা কেটে যায়, বাইরে লোকজন সবার চোখে মুখে চাপা উত্তেজনা।
মহুয়া এক কোনায় চুপচাপ ছোট্ট রুহিকে কোলে নিয়ে বসে, ওর চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই এই দুর্ঘটনায় কত খুশি। দানার সাথে চোখ মিলতেই মহুয়ার চোখের তারা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, ফ্যাকাসে ঠোঁটে রঙ লাগে, রক্তহীন গালে নতুন রক্তের সঞ্চার হয়। মহুয়ার মনে নেচে ওঠে, মনে হয় সবার সামনে দানাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানায়। সবার অলক্ষ্যে দূরে দাঁড়িয়ে দানা ইশারা করে ওকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করে।
বেশ কিছু পরে ডক্টর মানস সোমের উর্ধ্বতন একজন ডাক্তার, অপারেশান থিয়েটার থেকে বেড়িয়ে এসে লোকেশের আত্মীয় সজ্জনদের দুঃসংবাদ দেয়। প্রচুর রক্ত ক্ষরণ আর মাথার ঘিলু বেড়িয়ে যাওয়ার ফলে বহু চেষ্টা করেও মিস্টার লোকেশ বাজপাইকে তারা বাঁচাতে পারেনি। মহিষাসুরের ন্যায়, এক নর পিশাচের হাত থেকে অবলা মহুয়াকে উদ্ধার করতে পেরে দানার মন খুশিতে ভরে ওঠে। অনেক আত্মীয় সজ্জনের চোখে হাসি কিন্তু মেকি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, বড় ছেলে সোমেশ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। ওর মনে হয় ইচ্ছে ছিল বাবার সম্পূর্ণ ব্যাবসা ধীরে ধীরে নিজেই হাতিয়ে নেবে, কিন্তু লোকেশের অকাল মৃত্যুর ফলে আর উইল অনুসারে মহুয়াকে ওর সম্পত্তির অর্ধেকের মালিকানা দিতে হবে। মহুয়া, মেয়েকে নিয়ে চুপচাপ এক কোনায় বসে থাকে, অনেকে ওর কাছে এসে সান্ত্বনা দেয়, অনেকে অনেক কথা বলে। গভীর রাতে লোকেশের শব দেহ হাস্পাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সবার অলক্ষ্যে মহুয়া দানাকে দেখে আলতো মাথা নত করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।
লোকেশের মৃত্যুর পরে, মহুয়া খুদেবাজারের লোকেশের বাড়ি ছেড়ে, নোনাঝিলের বিশাল ফ্লাটে চলে আসে। উইল অনুযায়ী, লোকেশের অর্ধেক সম্পত্তি, প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকানা সত্ত্বা পায়। পুরানো কাজের লোকদের ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। নতুন ফ্লাটে নতুন ভাবে, কচি শিশু, রুহিকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করে মহুয়া। বিশেষ পড়াশুনা করেনি, এত টাকা কি ভাবে কোথায় লাগাবে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। টাকার লোভে প্রচুর আত্মীয় সজ্জন, মহুয়ার আশেপাশে মাছির মতন ভনভন করতে শুরু করে দেয়। বুদ্ধিমতী মহুয়া এই টুকু বুঝতে পারে যে এই আত্মীয় সজ্জন সবাই ওর টাকার জন্যেই ওর পাশে এসেছে তাই মিষ্টি কথায় সবাইকে এড়িয়ে যায়। শরতের শীতল হাওয়ায় আবার খুশির আমেজ ছড়িয়ে পরে। এতদিন বন্দিনী জীবন যাপন থেকে মুক্তি পেয়ে মহুয়া ডানা মেলে উড়তে চায়, এই খোলা আকাশে বিচরন করতে চায়।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment