CH Ad (Clicksor)

Sunday, February 22, 2015

পাপ কাম ভালোবাসা_Written By pinuram [ষষ্টবিংশ পর্ব (চ্যাপ্টার ০৫ - চ্যাপ্টার ০৬)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




পাপ কাম ভালোবাসা
Written By pinuram





পর্ব ২৬ (#০৫)

অনুপমা সারা রাস্তা গাড়িতে এক প্রকার গজগজ করতে করতে বাড়ি ফেরে। সোমেশ একবার শুধু জিজ্ঞেস করে মেয়েকে কি হয়েছে হসপিটালে। আগে মেয়ে একদম কথাবার্তা ঠিক ভাবে বলতো না, ইদানিং একটু আধটু বলে, তাও বেশির ভাগ ওই কোম্পানি সংক্রান্ত। সোমেশ পারমিতা কোনোদিন ছেলে মেয়ের কাছের লোক ছিল না।

অনুপমা উত্তর দেয়, "তোমার কথা অনেক আগেই শোনা উচিত ছিল আমার, জানো।"

সোমেশ মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন, "তোর কি মনে হয়, কি কারন হতে পারে? দেবায়ন কি কিছু ধরতে পেরেছে?"

অনুপমা মাথা নাড়ায়, "না গো, আমরা কিছুই ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারছি না। তবে বাবা, তোমাকে বলে দিচ্ছি, অনিমেশ আঙ্কেলের ছেলে যদি এর মধ্যে হয় তাহলে কিন্তু কাউকেই আমি ছেড়ে দেব না।"

সোমেশের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দেয়, "এর মধ্যে ইন্দ্রনীল আবার কি করল?"

অনুপমা বলে, "ইদানিং শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল বেশ গভীর ভাবে মেলামেশা করছে। দুইজনে একসাথে জার্মানি গেছে। এই যে ইন্দ্রনীল এসেছে, অফিসে কাজের চেয়ে বেশি ইন্দ্রনীলের সাথে ঘোরাফেরা করে শ্রেয়া।"

সোমেশ চিন্তামগ্ন হয়ে শুধু মাত্র একটা হুম করে শব্দ করেন। বাড়ি প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে, সেই সাথে বৃষ্টিটাও একটু ধরে গেছে। ড্রাইভার ওদের নামিয়ে দিয়ে গ্যারেজে গাড়ি রাখতে চলে যায়। বাড়িতে ঢোকার আগে সোমেশ মেয়েকে বলে, "তোর সাথে একটু কথা আছে। তুই ড্রেস চেঞ্জ করে নীচে আসিস।"

অনুপমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকায়। সচারাচর ব্যাবসা কোম্পানি সংক্রান্ত যা কথাবার্তা আলোচনা হয় সব দেবায়নের সাথেই করে। কোনোদিন ওর সাথে ব্যাবসা অথবা কোম্পানি সংক্রান্ত কোন আলোচনা করে না। করলেও ওর মাথায় কিছুই ঢোকে না। যতক্ষণ না দেবায়ন শুদ্ধ বাংলা ভাষায় ওকে বুঝিয়ে দেয় ততক্ষণ সবকিছু কেমন যেন আরবি, ফার্সি ভাষার মতন মনে হয়। অনুপমা মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় আসবে।

বাড়িতে ঢুকতেই পায়েলের সামনাসামনি। এতক্ষণ উৎকণ্ঠায় জেগে ছিল বাকিরা। শ্রেয়ার সাথে যে রাগারাগি হয়েছে সেটা খুলে আর বলে না শুধু জানিয়ে দেয় যে বাইকের এক্সিডেন্ট এমন কিছু গুরুতর নয়, শুধু মাত্র ডান পায়ের হাড়ে একটু চিড় ধরেছে, ক্রেপ ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছে ডাক্তার, আগামী কাল সকালের মধ্যে ছুটি পেয়ে যাবে। নিজের ঘরে ঢুকে জামা কাপড় ছেড়ে আগে দেবায়নকে ফোন করে। কি করছে ছেলেটা, যা মাথা গরম রাতেই না কিছু করে বসে। তবে মামনি নিশ্চয় এতক্ষণে ওকে বকে ঝকে শান্ত করিয়ে দিয়েছে। ফোন বারেবারে রিং হয়ে গেল, একটু চিন্তায় পড়ে যায় অনুপমা। সঙ্গে সঙ্গে মামনিকে ফোন করে। দেবশ্রী জানিয়ে দেয় এখন পর্যন্ত বাড়িতে ফেরেনি, এইসবে নিবেদিতার বাড়িতে পৌঁছেছে, ওর বাড়িতে গাড়ি রেখে বাড়ি পৌঁছালে ফোন করতে বলবে।

রাত জেগে বসে থাকে অনুপমা, বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ ধপাস করে শুধু। এত দেরি লাগে নাকি সল্টলেক থেকে লেকটাউন আসতে? না নিশ্চয় বাইক নিয়ে কোথাও আবার বেড়িয়ে পড়েছে।

একটু পরেই দেবায়নের ফোন পেয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "কোথায় মরতে গেছিলিস তুই? ফোন করতে পারিস না।"

প্রেয়সীকে শান্ত করিয়ে বলে, "বাইরে বৃষ্টি পড়ছে সেটা খেয়াল আছে? বাইক নিয়ে কি করে ভিজতে ভিজতে বের হওয়া যায় বলতো?"

অনুপমা জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখে, এক নাগারে ইলশেগুরি ঝড়ে পড়ছে। সেদিকে খেয়াল ছিল না এতক্ষণ, এসির আওয়াজে বৃষ্টির ছাঁটের শব্দ কানে যায়নি। ঘরে পায়েল থাকলে না হয় তাও কিছু একটা বলতে পারতো, কিন্তু সে তো এতক্ষণে ভাইয়ের কোলে মাথা রেখে কোথায় চলে গেছে কে জানে।

অনুপমা জিজ্ঞেস করে, "কি করা যায় বলতো? এদের সাথে নিয়ে চলা খুব মুশকিল।" হঠাৎ খেয়াল হয় দরজার বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে।

সোমেশ গলা খাঁকড়ে জানিয়ে দেয় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। ইসসস, অনুপমা সঙ্গে সঙ্গে স্লিপের ওপরে ড্রেসিং গাউন চাপিয়ে নেয়। বাবা কিছু বলবে বলছিলেন কিন্তু সেই কথা বেমালুম খেয়ে ফেলেছে। দেবায়নকে পরে ফোন করবে বলে উঠে চলে যায়। বাবাকে বলে, "একটু দাঁড়াও আমি আসছি।"

সোমেশ উত্তরে বলেন, "ঠিক আছে, তুই ঠিকঠাক হয়ে নীচে আয়, আমি অপেক্ষা করছি।"

দৌড়ে বাবার পেছন পেছন নীচে নেমে যায় অনুপমা। হঠাৎ মধ্যরাত্রে কি আলোচনা করবে বাবা? চাপা উত্তেজনায় মন চঞ্চল হয়ে ওঠে।

সোফায় বসে বাবাকে জিজ্ঞেস করে, "কি বলবে বলছিলে?"

সোমেশ একটা ফাইল থেকে একটা কাগজ বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, "একটা কথা তোদের জানানো হয়নি। মানে ইচ্ছে করেই তখন জানাইনি। আসলে তোদের ওই কোম্পানিতে অনিমেশের দশ কোটি টাকা লগ্নি করা আছে।"

অনুপমা আকাশ থেকে পড়ে, "তুমি বলেছিলে সব টাকা নাকি তোমার?"

সোমেশ মাথা দোলায়, "হ্যাঁ সব টাকা আমার। তবে অনিমেশ অনেক ধরেছিল তাই ওর দশ কোটি টাকা তোর কোম্পানিতে লগ্নি করিয়েছি এই যা।"

অনুপমা ঝাঁঝিয়ে ওঠে বাবার ওপরে, "আজ এক বছর হতে চলল, এতদিন কেন বলনি এই কথা?"

সোমেশ ওকে শান্ত করে বলেন, "দ্যাখ, ইন্দ্রনীল যদি শ্রেয়ার সাথে মিলিত থাকে তাহলে তোদের কোম্পানির পক্ষে একটা আশঙ্কাজনক খবর এটা। আমি এত বুঝতে পারিনি আগে। আমার যতদূর মনে হয়, তুই যে ইন্দ্রনীলকে বোর্ড মেম্বার না বানিয়ে পায়েলকে বানিয়েছিস তার প্রতিশোধ স্বরূপ ওরা তোদের কাবু করতে চেষ্টা করবে।"

অনুপমা ভাবনায় পরে যায়, "কি করতে বলছ তাহলে? একটু পরামর্শ দাও।"

সোমেশ একটু চিন্তিত হয়ে বলেন, "শোন, যদি শ্রেয়া রেজিগনেশান দেয় আর তোর কাছ থেকে শেয়ারের টাকা চায় তাহলে ওকে সোজা কোর্টে নিয়ে যাবি। টাকা ওর হাতে একদম দিবি না। দ্বিতীয়, যদি ইন্দ্রনীল এই দশ কোটি টাকার বিষয়ে কিছু বলে তাহলে ওকে সোজা বলে দিবি ওর বাবার যেন আমার সাথে দেখা করে। তুই বলে দিবি ওই দশ কোটি টাকার সম্বন্ধে তুই কিছু জানিস না। অনিমেশ আমাকে টাকা দিয়েছল ওর বাবা যেন এই সব আলোচনা আমার সাথে করে, তোর সাথে নয়।"

অনুপমা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। শ্রেয়া হুমকি দিয়েছে রেজিগনেশান দিয়ে দেবে। শ্রেয়া ছেড়ে দিলে রূপক নিশ্চয় ছেড়ে দেবে। ওদের সাথে যদি ইন্দ্রনীল মিলিত থাকে তাহলে সেও ছেড়ে দেবে। ওদের কোম্পানি অথৈ জলে ভেসে যাবে তাহলে। চিন্তিত অনুপমা বাবাকে জিজ্ঞেস করে, "ইন্দ্রনীল, শ্রেয়া আর রুপক একসাথে যদি কোম্পানি ছেড়ে দেয় তাহলে কোম্পানি ভেসে যাবে। বাইরের প্রোজেক্ট গুলোর প্রচণ্ড ক্ষতি হয়ে যাবে। সেটাই খুব চিন্তার।"

সোমেশ বলেন, "কাল একবার দীপঙ্করকে আমার অফিসে পাঠিয়ে দিস। দেখা যাক কি করা যেতে পারে। এইদুই দিন দেখ ওরা কি করছে। আর আগামী পরশু তো তোদের বোর্ড মিটিং তাই না?"

অনুপমা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

সোমেশ বলেন, "ঠিক আছে। বেশি চিন্তা করিস না। আমি না হয় নিজেই একবার জার্মানি যাবো আর মিস্টার মেরকেল আর হেরজোগের সাথে আলোচনা করে আসব।"

রাতে আর দেবায়নকে ফোন করা হল না।

পায়েলকে এইসব ঝামেলার থেকে দূরে সরিয়ে রাখাই বাঞ্ছনীয়, তাই বিশেষ কিছুই ওকে বলেনি। পরের দিন রূপক হসপিটাল থেকে ছুটি পেয়ে যায়, তাই শ্রেয়া সারাদিন ওর বাড়িতেই কাটিয়ে দেয় অফিসে আসেনি। তবে ইন্দ্রনীল অফিসে এসেছিল। তারপরের দিন বোর্ড মিটিং। মিটিংয়ের প্রস্তুতিতে সেদিন কেটে গেল দুই জনার। একবার দিপঙ্কদার সাথে দেবায়ন আর অনুপমা আলোচনা সেরে নিল, যদি ইন্দ্রনীল অফিস ছেড়ে দেয় তাহলে কি করা যেতে পারে। জার্মানি আর ইউরোপের জন্য অতি শীঘ্র একটা ছেলে খুঁজতে হবে। বাবার নির্দেশ মতন দুপুরের পরে দীপঙ্করকে বাবার সাথে আলোচনা করতে বলে। বাইরের প্রোজেক্ট গুলো সুপর্ণা ম্যাডামের তদারকিতে কাজ হচ্ছিল তাই তাতে বিশেষ অসুবিধে হওয়ার কথা নেই। তবে এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এয়ারলাইন্স কোম্পানি গুলো চাইলে মাঝপথে প্রোজেক্ট বন্ধ করে দিতে পারে বলে মনীষা ওদের জানিয়ে দেয়, সেই নিয়ে বেশ চিন্তিত দেবায়ন আর অনুপমা।

অনুপমা পায়েলকে সিঙ্গে নিয়ে সকালেই অফিসে পৌঁছে গিয়েছিল। বৃষ্টি মাথায় করে, দেবায়ন সময় মতন অফিসে পৌঁছে যায়। যদিও ওদের বোর্ড মিটিং দ্বিতীয় অর্ধে, ইন্দ্রনীল এসে গেছে আর নিজের ডেস্কে বসে কাজে মগ্ন। শ্রেয়া আর রূপক তখন আসেনি। একবার মনীষাকে জিজ্ঞেস করে, ওদের খবর নিতে। মনীষা ফোন করাতে শ্রেয়া জানিয়ে দেয়, দ্বিতীয় অর্ধে বোর্ড মিটিংয়ের আগেই ও আর রূপক অফিসে পৌঁছে যাবে। কার মনে কি চলছে কিছুই ঠিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে না। এত সকালে ইন্দ্রনীলকে নিজের ডেস্কে বসে থাকতে দেখে ধন্ধে পড়ে যায় অনুপমা।

দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার বলতো?"

দেবায়ন হেসে বলে, "হবে হয়ত নিজের রেজিগনেশান লেটার টাইপ করছে।"

সেদিন পায়েল শাড়ি পরে এসেছিল, দেবায়ন ওকে নিয়েই মেতে ওঠে। "কি রে মাল একদম ফুলটুসি হয়ে সেজে এসেছিস। গতকাল রাতে ভাই বেশ লাগিয়েছে তাই না?" পায়েল লজ্জায় লাল হয়ে যায়, আর দেবায়ন ততই চেপে ধরে ওকে, "হ্যাঁ রে, সত্যি করে বলতো কে বেশি ভালো লাগিয়েছে? আমি না ভাই?"

অনুপমা ওর ওপরে রেগে গিয়ে বলে, "তুই ওকে ছেড়ে একটু আমার কথা শুনবি।"

ওর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে বলে, "না শুনবো না দেখব। একটু নাচ?"

অনুপমা এক চাঁটি মারে ওর ঊরুসন্ধির ওপরে, "ধ্যাত, একটু পরে বোর্ড মিটিং। মাথা কাজ করছে না আর ছেলে বাঁড়া নিয়ে পরে আছে।"

পায়েল ওদের দেখে লজ্জায় লাল হয়ে বলে, "এই আমি আসছি রে। সময় হলে আমাকে ডেকে নিস।"

দেবায়ন ওর হাত ধরে কাছে টেনে বলে, "ইসসস লজ্জায় মরে যাই। যাচ্ছিস কোথায় রে?"

দেবায়নের একপাশে প্রেয়সী অনুপমা, অন্যপাশে পায়েল। ওদের কাঁধে হাত দিয়ে গলা নামিয়ে বলে, "বোর্ড মিটিং করা হবে না বোর্ড সেক্স করা যায় বলতো।" বলেই পায়েলের নধর গোলগাল নরম পাছার ওপরে আলতো চাঁটি মারে। সুগোল মাংসল পাছা জোড়া দুলে ওঠে আর দেবায়ন ওর নরম পাছা আলতো করে চেপে ধরে।

পায়েল ওর হাত নিজের পাছার ওপরে থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে, "তুই তোর বৌকে নিয়ে পড়ে থাক, আমি চললাম।"

অনুপমাও রেগে যায় একটু, "অফিসের মধ্যে করিস কি বলতো?"

দেবায়ন হেসে বলে, "কেন অফিসে বুঝি সেক্স করা মানা?"

অনুপমা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "হ্যাঁ মানা। অন্তত অন্যদের সাথে মানা।"

দেবায়ন ওকে পেছন থেকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে দিয়ে বলে, "তোর সাথে মানা নেই যখন তাহলে চল কনফারেন্স হলে। টেবিল টা বেশ বড়, ওর ওপরে তোকে শুইয়ে দিয়ে চালু করি।"

অনুপমা অভিমানী কণ্ঠে বলে, "ছাড় ছাড়।" পায়েলকে বলে, "তুই বের হ কেবিন থেকে। এই পাগলা ষাঁড় ক্ষেপে গেছে। এই দুঃশাসন যদি তোর বস্ত্র হরনে নামে তাহলে কোন কেষ্ট তোকে বাঁচাতে পারবে না কিন্তু।"

পায়েল ওদের দেখে মিচকি হেসে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়। দেবায়ন ওর ঘাড়ের ওপরে মাথা গুঁজে মরালী গর্দানে চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। সকাল সকাল প্রেমিকের উত্তপ্ত ঠোঁটের ছোঁয়ায় অনুপমার বুকের রক্তে হিল্ললের দেখা দেয়। সারা অঙ্গ শিরশির করে ওঠে ভালোবাসার জ্বালায়। দেবায়নের হাত দুইখানি নিজের শরীরের চারপাশে শক্ত করে বেঁধে চোখ বুজে চুপচাপ ওর পুরু উষ্ণ ভিজে ঠোঁটের পরশ সারা গালে, গর্দানে কানের লতিতে মাখিয়ে নেয়। মনের মধ্যে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে কামোত্তেজনা চরমে উঠে যায় দুইজনার। বেশ কিছুক্ষণ প্রেমিকের হাতের নিবিড় আলিঙ্গন পাশে বদ্ধ হয়ে থাকে। এমন সময়ে কেবিনের ফোন বেজে ওঠে। দেবায়ন ফোন তুলতেই, মনীষা জানিয়ে দেয় যে শ্রেয়া আর রূপক এসে গেছে।

অনুপমা মিহি কণ্ঠে দেবায়নকে বলে, "এইবারে ছাড়। দেখ গিয়ে রুপকের কি অবস্থা।"

দেবায়ন শেষ বারের মতন দুইহাতে ওকে পিষে ধরে বলে, "ইসসস এই বৃষ্টি ভেজা দিনে তোকে ছাড়তে একটুও ইচ্ছে করছে না।"

আদুরে কণ্ঠে অনুপমা ওকে বলে, "তোর শরীরের উষ্ণতা কাটিয়ে আমারো যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু কি করা যাবে বল। শিরে সংক্রান্তি, ওরা দুইজনে এসে গেছে। হয়ত এতক্ষণে ইন্দ্রনীলের সাথে একসাথে বসে জল্পনা শুরু করে দিয়েছে।"

দেবায়নের বাহুপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে কেবন থেকে দুইজনে বেড়িয়ে আসে। ইন্দ্রনীল নিজের ডেস্কে তখন পর্যন্ত বসে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে রূপক ওদের দিকে হাসিহাসি মুখ করে এগিয়ে আসে। দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের দিকে চাওয়াচায়ি করে।

দেবায়ন হেসে রূপককে বলে, "কি বাল ছাল ছেলে তুই। ঠিক ভাবে বাইক চালাতে জানিস না নাকি রে?"

রূপক মৃদু হেসে জবাব দেয়, "আরে এত বৃষ্টি হচ্ছিল যে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। তার ওপরে কি ভাবে শালা ওই স্করপিওটা পেছন থেকে ধাক্কা মারল। বাল।"

অনুপমা ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, "শ্রেয়ার কি খবর।"

রূপক গলা নামিয়ে উত্তর দেয়, "একটু পরেই মিটিং, ওইখানে সব পরিস্কার হয়ে যাবে।"

অনুপমা ওকে প্রশ্ন করে, "একটা সত্যি কথা বল। তুই কি রেজিগনেশান দিচ্ছিস?"

রূপক কিছু না বলে একটু হেসে দেয়। ওদের সন্দেহ হয়, কিন্তু রূপক কোন উত্তর দেয় না।

লাঞ্চের পরে কনফারেন্স রুমে বসে মিটিং শুরু হয়। লম্বা বিশাল টেবিলের একপাশে দেবায়ন বসে, ওর বাম পাশে অনুপমা আর ডান পাশে পায়েল। ঠিক দেবায়নের উলটো দিকে শ্রেয়া বসে, যেন একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েই বসেছে। হিমশীতল কঠিন চেহারা দেখে মনের ভাব আঁচ করা কঠিন। ওর একপাশে রূপক অন্য পাশে ইন্দ্রনীল। শ্রেয়া এক মনে নিজের ট্যাবলেটে কিছু একটা লিখে চলেছে। মাঝে মাঝে দেবায়নের দিকে আড় চোখে দেখে নেয়। দীপঙ্করদা, মনীষা আর সুপর্ণা ম্যাডাম এসে গেছেন। শুরু হয়, ওদের সারা বছরের কাজকর্ম নিয়ে। দেবায়ন বলতে শুরু করে, শ্রেয়া চুপচাপ শুনে যায়। মনীষা তারপরে ব্যালেন্স সিট নিয়ে আলোচনা শুরু করে, তারপরে দীপঙ্করদা ওদের আগামী বছরের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নিয়ে কথাবার্তা বলে। অর্ধেক আলোচনা অনুপমার মাথার ওপর দিয়ে বেড়িয়ে যায়। তীক্ষ্ণ চোখে শুধু মাত্র শ্রেয়াকে জরিপ করে যায়। শ্রেয়া কম যায় না, ওর চোখে চোখ রেখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করে অনুপমার ফোনে একটা এস এম এস আসে। এস এম এস পড়ে অনুপমার চক্ষু চড়ক গাছ। শ্রেয়া পাঠিয়েছে। ছোট্ট এস এম এস, শুধু লেখা, "আই এম সরি।" শ্রেয়ার দিকে তাকাতেই শ্রেয়া, আলতো করে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ইশারা করে। ওর মাথা ঘুরে যায়, কি চলছে আসল শ্রেয়ার মনে ভেতরে। সেদিনের হসপিটালে দেখা শ্রেয়ার চোখ আর এই মুহূর্তে শ্রেয়ার চোখ একদম আলাদা।

সব শেষে দেবায়ন শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বলে, "তোর কিছু বলার নেই?"

শ্রেয়া, গলা নামিয়ে ইন্দ্রনীলের সাথে কিছু কথাবার্তা বলে। অনুপমা দেবায়নকে, শ্রেয়ার পাঠানো এস এম এস দেখায়। দেবায়ন অবাক হয়ে রূপক আর শ্রেয়ার দিকে তাকায়। ওদের চোখে আবার আগের সেই দৃঢ়তা, কুটিল রেখা। কি চলছে সেটার আভাস পাওয়া যায় না।

শ্রেয়া গলা খাঁকড়ে বলতে শুরু করে, "সব ডাইরেক্টর যখন এইখানে আছে তখন আমার কয়েকটা বিষয়ে কিছু বলার আছে। সবাই ওয়ার্কিং বোর্ড মেম্বার, কিছু না কিছু করে এই কোম্পানিতে দিয়েছি। পায়েল কি দিয়েছে?"

ওই কথা শুনে দেবায়নের কান লাল হয়ে যায়। অনুপমার চোখে রক্ত উঠে যায়। দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দেয়, "আমার পাশে থাকে সেটাই তোর পক্ষে জানা যথেষ্ট। এর থেকে বেশি কৈফিয়ত তোকে দেব না আমি।"

শ্রেয়া স্মিত হেসে বলে, "বেশ তো, তাহলে গত বোর্ড মিটিঙে ইন্দ্রনীলকে কেন মেম্বার বানানো হয়নি? একটা কারন দে?"

অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকিয়ে ওকে উত্তর দেয়, "ওকেও বানানোর কথা চিন্তা করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে এই কথা এইখানে উঠছে কেন?"

শ্রেয়া স্মিত হেসে বলে, "দ্যাখ, তোর কোম্পানি বলে তুই যা ইচ্ছে তাই করতে পারিস না। আমার এই কোম্পানিতে বারো পারসেন্টের শেয়ার আছে সুতরাং আমিও কথা বলতে পারি।"







পর্ব ২৬ (#০৬)

অনুপমা ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দেয়, "নিশ্চয় বলতে পারিস। তোর কাজ কর্ম নিয়ে কোনোদিন আমরা তোকে কিছু বলিনি। জার্মানি থেকে ফিরে এসে তুই ভীষণ ভাবে কাজে ডুবে গেছিস সেটা আমাদের কোম্পানির পক্ষে খুব ভালো। নিজেই ডিজাইনিং সামলে নিয়েছিস, নিজে থেকে জার্মানি ঘুরে ওদের সাথে কথাবার্তা আলোচনা করেছিস।"

শ্রেয়া ঠাণ্ডা গলায় বলে, "হ্যাঁ করেছিলাম, ভেবেছিলাম কাজ করলে অন্তত আমার শেয়ার বেড়ে যাবে। কিন্তু ফল হল উলটো। পায়েলকে শেয়ার দেওয়া হল কিন্তু আমার কাজের ফল স্বরূপ আমার শেয়ার বাড়ানো হল না। কারন জানতে চাই না।"

পায়েলকে খুব কম, নাম মাত্র শেয়ার শেয়ার দিয়ে বোর্ড মেম্বার বানানো হয়েছিল, যাতে অনুপমার দল ভারী হয়। সেই খবর শ্রেয়ার কাছে চলে গেছে। ইদানিং ব্যালেন্স সিট, কাগজ পত্র নিয়ে বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করেছে সেটা অনুপমার অবিদিত নয়। ওর চেহারা কঠিন হয়ে যায়। ঠাণ্ডা গলায় শ্রেয়াকে উত্তর দেয়, "কারন যখন জানতে চাস না তাহলে নিজের কথাটা বল। তুই কি চাস।"

শ্রেয়া কিছুক্ষণ থেমে ওর দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলে, "আমি ডাইরেক্টর পদ থেকে রেজিগনেশান দিচ্ছি।"

এটা আগে থেকেই ওরা বুঝতে পেরে গেছিল। তাই বিশেষ আশ্চর্য হল না অনুপমা। কাগজ হাতে নিয়ে দেবায়নের দিকে এগিয়ে দিল। সাদা কাগজে শুধু মাত্র দুই লাইন লেখা, শ্রেয়া অবিদিত কারনে ডাইরেক্টর পদ স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিচ্ছে। দেবায়ন একবার পড়ে নিয়ে পায়েলের দিকে এগিয়ে দিল পড়ার জন্য।

শ্রেয়া বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলে, "প্লিজ, যদি কিছু মনে না করো তাহলে আমাদের একটু একা ছেড়ে দেবে প্লিস।"

ওর কাতর কণ্ঠের আবেদন শুনে সবাই দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকায়। দেবায়ন একবার শ্রেয়া রুপকের দিকে দেখে, একবার দীপঙ্করদা, মনীষা আর সুপর্ণা ম্যডামের দিকে তাকায়। অনুপমা ওদের অনুরোধ করে কনফারেন্স হল থেকে চলে যাওয়ার জন্য। শ্রেয়া এ আবার কোন নতুন খেলায় নেমেছে। সেটা অনুধাবন করতে বেশ অসুবিধে হচ্ছে।

বাকিরা চলে যাওয়া পরে, কনফারেন্স হলের টেবিলের একদিকে পায়েল, অনুপমা আর দেবায়ন বসে, আর ঠিক তার উলটো দিকে শ্রেয়া, ইন্দ্রনীল আর রূপক বসে।

শ্রেয়া ওদের উদ্দেশ্যে বলে, "আমার শেয়ারের টাকা তৈরি আছে কি?"

অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, "তুই কোর্টে যা, সেইখানে তোকে দেখব।"

শ্রেয়া স্মিত হেসে বলে, "আচ্ছা তাই হবে।" তারপরে ইন্দ্রনীলের দিকে দেখে বলে, "তোমার কিছু বলার নেই?"

ইন্দ্রনীল গলা খাঁকড়ে বলে, "হ্যাঁ মানে, আমিও রেজিগনেশান দিচ্ছি। মানে এইভাবে বাইরে বাইরে কাটিয়ে কাজ ভালো লাগছে না। ভেবেছিলাম ওই দুটো এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট আসার পরে আমি ডাইরেক্টর হব কিন্তু সেটা হতে পারলাম না তাই ছেড়ে দেব বলে ঠিক করেছি।"

অনুপমা বাঁকা হেসে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, "এই গুলো তাহলে সব তোর ফন্দি।"

শ্রেয়া বাঁকা হেসে বলে, "হ্যাঁ।"

দেবায়ন চাপা গর্জন করে ওঠে, "তুই আস্তিনের সাপ।"

শ্রেয়ার চোখ ছলছল করে ওঠে, ঠোঁট একটু কেঁপে ওঠে, কিন্তু ওর কথার উত্তর না দিয়ে চোখের কোল মুছে নেয়। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ইন্দ্রনীলকে বলে, "তোমার রেজিগনেশান লেটার কি মেইল করে দিয়েছ না প্রিন্ট আউট দেবে?"

ইন্দ্রনীল পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে ওর দিকে এগিয়ে দেয়। শ্রেয়া একবার পরে নীচে সই করতে অনুরোধ করে দেবায়ন আর অনুপমার দিকে ইন্দ্রনীলের রেজিগনেশান লেটার এগিয়ে দেয়। পাকা গাল ভরা ইংরেজিতে লেখা বেশ লম্বা চওড়া রেজিগনেশান পত্র, শ্রেয়ার ছোট চিঠির থেকে অনেক অনেক আলাদা।

দেবায়ন ওই চিঠিতে চোখ বুলিয়ে রুপকের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে, "এইবারে কি তুই রেজিগনেশান দিচ্ছিস?"

রূপক কিছু না বলে চুপ করে চোখ টিপে কিছু একটা ইশারা করে জানাতে চায়। সেই ইশারা ওদের বোধগম্য হয় না। শ্রেয়া উঠে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে, "ইন্দ্রনীল একটা নতুন কোম্পানি খুলতে চায় আর তার জন্য টাকার দরকার। ওর কাছ থেকে আমি জেনেছি এই কোম্পানিতে ওর দশ কোটি টাকা লগ্নি করা আছে।"

অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায় সেই কথা শুনে। এই বিষয়ে দুইদিন আগে বাবার মুখে শুনেছিল, শ্রেয়া যে এত ডুবে ডুবে জল খেয়েছে সেটা আগে থেকে বুঝতে পারেনি। শ্রেয়া ইন্দ্রনীলের উদ্দেশ্যে বলে, "ওই টাকা তোমার নয় নিশ্চয়।"

ইন্দ্রনীল মাথা নাড়ায়, "না, ওই টাকা বাবা, সেন আঙ্কেলকে দিয়েছিল।"

শ্রেয়ার কণ্ঠ স্বর হঠাৎ করে বদলে যায়, "তাহলে ওই টাকার ওপরে তোমার কোন অধিকার নেই। অনিমেশ আঙ্কেলকে বল সেন কাকুর সাথে কথা বলতে।"

শ্রেয়ার এই কণ্ঠ স্বর শুনে অনুপমা আর দেবায়ন বিস্মিত হয়ে যায়। এই কথাটাই ওর বাবা সেদিন রাতে ওকে বলেছিল, তাহলে কি এই বিষয়ে শ্রেয়া ওর বাবার সাথে আলোচনা করে নিয়েছে?

ইন্দ্রনীল কিছু বুঝতে না পেরে ওকে প্রশ্ন করে, "মানে? এতদিন কি তাহলে তুমি আমার সাথে ছলনা করে গেছ?"

শ্রেয়া কঠিন চোখে ইন্দ্রনীলের দিকে তাকিয়ে বলে, "তুমি করনি আমাদের সাথে?" অনুপমার দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বলে, "সরি রে সোনা। তোকে আগলে রাখার জন্য গেম খেলতে হয়েছিল।" চোখের কোল মুছে বজ্র কণ্ঠে ইন্দ্রনীলকে বলে, "এইখানে আসার আসল উদ্দেশ্য সেটা একবার ঝেড়ে কাশা, না হলে ওই" দেবায়নের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে আর রুপকের দিকে তাকিয়ে বলে, "দুই বাঘ বসে আছে তোমাকে ছিঁড়ে খাবার জন্য।"

ইন্দ্রনীলের গলা শুকিয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলতে চেষ্টা করে। শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "প্রথম দিন থেকেই তোমার ওপরে আমার সন্দেহ ছিল। তুমি ভালো মনে এইখানে আসোনি। তবে তোমার আসল উদ্দেশ্য ধরার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে হয়েছিল।"

অনুপমার কান লাল হয়ে যায় এই কথা শুনে। কি বলছে শ্রেয়া? শ্রেয়া বলে চলে, "তাই না ইন্দ্রনীল? তুমি আর তোমার বাবা এইখানে এসেছিলে আসলে অনুপমাকে হাতাতে। র‍্যাডিসন ফোর্টের সমাবেশে যখন তোমার বাবা দেখলেন যে সেন আঙ্কেলের বিশাল টাকা, তখন যেচে এই কোম্পানিতে টাকা ঢাললেন আর তোমাকে এইখানে ওকে হাতানোর জন্য পাঠালেন। বাবা ছেলে মিলে বেশ ফাঁদ পেতেছিলে তাই না?" কাঁপা কান্না জড়ানো অথচ দৃঢ়কণ্ঠে বলে, "তোমার পেট থেকে কথা বের করার জন্য শেষ পর্যন্ত তোমার সাথে শুতে হয়েছে। তবে মদের নেশায় আর আমার শরীরে নেশায় তোমার পেট থেকে কথা বের হয়েছে।"

ইন্দ্রনীল আহত কণ্ঠে বলে, "তুমি আমার সাথে এত বড় প্রতারণা করলে?"

শ্রেয়া চেঁচিয়ে ওঠে ওর দিকে, "চুপ, একটা কথা বলবে না। প্রতারণা? কাকে বলে প্রতারণা তুমি জানো। তুমি কি কি করেছ আমার সাথে আর কি কি বলেছ সেই সব আমার কাছে রেকর্ড করা আছে। বলো তো নন্দনে সত্তর এম এম ফ্লিম চালাতে পারি।"

ইন্দ্রনীল রুপকের দিকে দেখিয়ে বলে, "ওর এক্সিডেন্ট, সেটা?"

দেবায়ন অনুপমা অবাক, কি চলছে কনফারেন্স হলে? শ্রেয়া প্রায় কেঁদে ফেলে, "তোমাকে বিশ্বাস করানোর জন্য ওই জঘন্য খেলা খেলতে হয়েছিল। স্করপিওর ড্রাইভার আমার চেনা তাই শুধু মাত্র ওকে ফেলে দিতে বলেছিলাম। আর আসলে রূপক জানত, কিন্তু বৃষ্টি পড়ে থাকায় হাড় ভেঙ্গেছে, না হলে সেটাও হত না। জানো কত বড় পাথর বুকে রেখে আমাকে তোমার সাথে এই ছলনার খেলায় নামতে হয়েছে? প্রতিবার কান্না পেত কিন্তু ওই দুইজনকে আগলে রাখার জন্য আমাকে করতে হয়েছিল না হলে তুমি আর তোমার বাবা বেশ নিখুঁত ফন্দি এঁটেই এসেছিলে রাজকন্যে আর রাজ্য হাতিয়ে নিতে। আমার অনু আর দেবুকে এইভাবে বিচ্ছেদ করা? না, কারুর পক্ষে সম্ভব নয়।"

ইন্দ্রনীল আহত কণ্ঠে বলে, "তুমি যে রেজিগনেশান দিয়েছ, সেটা তাহলে কি মিথ্যে?"

অনুপমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে, "সেটা ওর ব্যাপার। চিঠিটা ঠিক ভাবে পড়লে দেখতে পারতে। আমি শুধু মাত্র ডাইরেক্টর পদ থেকে রেজিগনেশান দিয়েছি, কাজ করব না সেটা কোথাও লেখা নেই। এর পরে আমাকে রাখবে কি রাখবে না সেটা ওর ব্যাপার। তবে ওর সাথে ছলনা? আমার গলায় পাড়া দিলেও করতে পারব না। জানো ওরা কি ধরনের? ওই পায়েল বসে আছে, দেখেছ? ওকে ওরা কোথা থেকে বাঁচিয়ে এনেছে সেটা তোমার ধারনার বাইরে। কেন আমি ব্যালেন্স সিট দেখতাম জানো? গত এক বছরে কুড়ি কোটি টাকার মধ্যে পনেরো কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে, আর আয় বলতে মাত্র পাঁচ কোটি টাকা। আমি শুধু নেচেই বেড়াতাম আর টাকা উড়িয়ে বেড়াতাম। যা দিয়েছে ওই মেয়েটা দিয়েছে আর যা করেছে ওই ছেলেটা করেছে।"

অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, "হ্যাঁ, আমি সব জানি। প্লিজ, আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিস।"

ইন্দ্রনীল উঠে দাঁড়িয়ে চাপা কণ্ঠে চিবিয়ে শ্রেয়া আর বাকিদের উদ্দেশ্যে বলে, "তোমাদের সবাইকে আমি দেখে নেব।"

শ্রেয়া ওর দিকে এক পা এগিয়ে এসে বলে, "বেশি দেখতে যেও না ইন্দ্রনীল। এতদিন আমার সাথে কি কি করেছ, সেই সিডি তোমার পেয়ারের গার্ল ফ্রেন্ড, কি নাম যেন? ও হ্যাঁ, মনিকা দেলাকরিক্স, লন্ডনে থাকে তাই না? এতক্ষণে পৌঁছে গেছে। রাইন না হলে থেমসের জলে তোমাকে কেটে ভাসিয়ে দেবে। ইমেল দেখতে চাও?"

বলে হাতের ট্যাবলেট খুলে দেখায় ওকে।

আহত ইন্দ্রনীল কাঁপতে কাঁপতে শ্রেয়ার দিকে তেড়ে আসে। অনুপমা উঠে দাঁড়ায় সাথে সাথে রূপক ভাঙ্গা পা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গর্জে ওঠে ইন্দ্রনীলের দিকে, "এক পা এগোলে, ধড় থেকে মাথা আলদা করে দেব।"

রূপককে ওই ভাবে গর্জে উঠতে দেখে দেবায়ন উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুই জানতিস তাহলে বলিস নি কেন?"

রূপক মাথা নাড়িয়ে ইন্দ্রনীলের দিকে দেখিয়ে বলে, "শ্রেয়ার বারন ছিল তাই বলিনি, সরি।"

আহত পরাজিত ইন্দ্রনীল রাগে ক্ষোভে গজগজ করতে করতে সব কিছু হারিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়। সবার দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, "কি ভাবে ওই প্রোজেক্ট গুলো তোমাদের হাতে আসে সেটা দেখে নেব আমি।"

শ্রেয়া হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, "সে গুড়ে বালি ইন্দ্রনীল। তোমার সাথে আমি বার্লিন, হেগ, ফ্রাঙ্কফুর্ট এমনি এমনি ঘুরে বেড়াইনি। আসলে আমি ওই জায়গায় গিয়ে এয়ারলাইন্স কোম্পানির বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছি। মিস্টার হেরজোগ আর মিস্টার মেরকেলের সাথেও দেখা সাক্ষাৎ করেছি। দুইজনে আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে দেবায়ন যখন আছে তখন এই প্রোজেক্ট কিছুতেই হাতছাড়া হবে না।"

ইন্দ্রনীল মাথা নিচু করে পরাজিত হয়ে ক্ষোভে গজগজ করতে করতে কনফারেন্স হল থেকে বেড়িয়ে যায়।

ইন্দ্রনীল চলে যেতেই। শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে অনুপমা বলে, "এত কিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে একটুর জন্য জানালি না কেন?"

দেবায়ন রূপককে একটা লাথি কষিয়ে বলে, "শালা বাল চোদা চোদনা ছেলে আমাদের বললে কি ক্ষতি হত?"

শ্রেয়া চোখের কোল মুছে মৃদু হেসে উত্তর দেয়, "আসলে বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ইন্দ্রনীল অনেক ঘাঘু মাল। মার্কেটিংয়ের ছেলে, অনেক লোক চড়িয়ে বেড়ায়। আমাদের কথাবার্তার ধরন ধারন দেখলেই আঁচ করতে পারত যে আমি তোদের সব কিছু বলে দিয়েছি। তোদের এই যে ক্ষোভের দুঃখের অভিব্যাক্তি এখন ফুটে উঠেছে, তোরা যদি আগে থেকে জেনে যেতিস, তাহলে সেটা আর ফুটে উঠত না। সেটা যদি একবারের জন্য ইন্দ্রনীল টের পেয়ে যেত তাহলে ওর পেট থেকে কথা বের করতে পারতাম না। তবে হ্যাঁ, আরো একজন এই বিষয়ে জানত।"

দেবায়ন আর অনুপমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "কে?"

পায়েল ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, "আমি।"

অনুপমা কেঁদে ফেলে প্রায়, "তুই? কিন্তু..." শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে অনুপমা, "তুই না সত্যি একটা মেয়ে মাইরি।"

তিনজনে একপ্রকার একটু মেয়েলী কান্না কাটি সেরে ফেলে। রুপকের ভাঙ্গা পায়ের ওপরে এক লাথি কষিয়ে জিজ্ঞেস করে, "সেই জন্যে শালা তুই হসপিটালে চুপ মেরে ছিলিস তাই না?"

রূপক মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, আর তোদের পেছনে ইন্দ্রনীল দাঁড়িয়ে ছিল।"

পায়েল ওদের বলে, "আমি ইচ্ছে করেই তোদের ঘাটাইনি কেননা বুঝতেই পারছিস। বেশি ঘাঁটালে যদি আমার পেট থেকে কথা বের হয়ে যায় তাই। আর শ্রেয়া শুরু থেকে আমাকে বলে রেখেছিল।"

দেবায়ন ওকে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "আজ রাতে তোকে বেশ আদর করব।"

পায়েল ওর পাশে সরে এসে বলে, "মেরে ফেলবো এইবারে।"

অনুপমা, শ্রেয়ার চোখের জল মুছিয়ে বলে, "এই সব করতে করতে তোর যদি কিছু হয়ে যেত?"

শ্রেয়া হেসে বলে, "হত না, মনিকাকে বলা আছে সব। জার্মানিতে ফিরলে ওর জন্য খাঁড়া নিয়ে অপেক্ষা করছে।"

দেবায়ন হাতপা ছুঁড়ে বলে, "উফফফ শালা এইকয় মাস যা গেল কি যে বলি।"

শ্রেয়া বলে, "হ্যাঁ জানি।"

দেবায়ন ওর গালে টোকা দিয়ে বলে, "ফ্রাঙ্কফুর্টের হোটেলের বাকিটা তাহলে রাতে সেরে ফেলি কি বল?"

শ্রেয়া ওর পাশে ঘন হয়ে বলে, "যদি অনু অনুমতি দেয় তাহলে।"

রূপক চেঁচিয়ে ওঠে, "এই বাল, নিজের বৌকে লাগা না শালা।"

পায়েল মৃদু হেসে বলে, "এই আমি এইবারে আসছি রে।"

শ্রেয়া চেঁচিয়ে ওঠে, "কেন কোথায় যাবি? আজকে আর কাজ নয়, আজকে....."

দেবায়ন ওর কথা টেনে বলে, "সারা রাত জম্পেশ পার্টি।"

অনুপমা খিলখিল করে হেসে ফেলে, "ভদকা এন্ড রাম....."

রূপক বলে, "উফফফ মাইরি, তোর পেটে একবার হুইস্কি পড়লে তুই যে কি হয়ে যাস।"

অনুপমার কান লজ্জায় লাল হয়ে যায়, "যাঃ এমন কি হয়েছে রে?"

শ্রেয়া ভুরু কুঁচকে রুপকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কবে কোথায় কি করেছ?"

দেবায়ন অবাক হয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, "কি রে বাল, শ্রেয়া জানেনা জলপাইগুড়ির কথা?" শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, "তুই শালী ফ্রাঙ্কফুর্টে আমাকে লাগাতে দিলি না, ওইদিকে জলপাইগুড়ি গিয়ে রূপক আর আমার বৌ হুইস্কি মেরে নিজেদের বাঁড়া গুদ এক করে দিয়েছিল।"

শ্রেয়া, দেবায়নের গালের ওপরে চাঁটি মেরে বলে, "এই একদম মিথ্যে কথা বলবি না। আমি এসেছিলাম, তুই শালা আদিখ্যেতা দেখিয়ে আমাকে চটকে আদর করে পাঠিয়ে দিলি।"

দেবায়ন আর রূপক সমস্বরে বলে ওঠে, "তাহলে আজ রাতে পার্টি। অঙ্কনের কি হবে?"

পায়েল ওদের থেকে একটু তফাতে সরে দাঁড়িয়ে বলে, "যাঃ পাগল আমি নেই। মদ খেয়ে তোরা যা শুরু করবি সেটা আমার জানা আছে।"

রূপক বলে, "আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। বুঝতে পারছি, অঙ্কনের সামনে অনুকে ওইভাবে....."

অনুপমা ওর দিকে তেড়ে যায়, "আর একটা পা বাকি আছে কুত্তা, এইবারে ওইটা ভেঙ্গে দেব।"

রূপক ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, "তুই আমার তৃতীয় পা ভাঙ্গিস।"

অনুপমা হাসতে হাসতে কনুই দিয়ে ওর বুকে গুঁতো দিয়ে বলে, "ভাবছি বাকিদের ডেকে নেব, কিন্তু জায়গা? সেইবারে মামনি বাড়ি ছিল না তাই পুচ্চুর বাড়িতে করতে পেরেছিলাম এইবারে?"

দেবায়ন হেসে বলে, "চিন্তা নেই, আগামী কাল উটির রিসোর্টে যাবো। এখুনি চারদিকে ফোন করে দেখ কে কে যাবে, শান্তনুকে বলে সেই মতন প্লেনের টিকিট করিয়ে নেই।"

পায়েল মাথা নাড়িয়ে বলে, "আমি আর অঙ্কন যাবো না।"

অনুপমা হেসে বলে, "না তোদের যেতে হবে না।"

শ্রেয়া ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, "ইসসস তোকে খুব মিস করব।"

পায়েল ওর গালে আলতো টোকা দিয়ে বলে, "সেটা একটু করব তবে....."

শ্রেয়া বলে, "জানি, ভাইয়ের প্রেমে এখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস তুই।"

ওইখানে বসে সবাইকে ফোন করা হয়, একদিনের মধ্যে যাওয়া একটু মুশকিল, তাও ধীমান আর ঋতুপর্ণা জানিয়ে দেয় বিকেলের মধ্যে ওদের জানিয়ে দেবে। সঙ্গীতা যাওয়ার জন্য লাফিয়ে ওঠে কিন্তু শান্ত শিষ্ট প্রবাল জানে ওইখানে গেলে কি হবে তাই পিছিয়ে যায়। জারিনার বাড়ি থেকে মানা করে দেয় তাই পরাশর পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ঠিক হল, ছয়জনে মিলে উটি যাবে। সেই মতন শান্তনুকে বলে প্লেনের টিকিট কাটা হয়। দেবায়ন মিস্টার পারিজাতকে বলে দেয় ওরা কইম্বাতুর হয়ে আগামী কাল বিকেলের মধ্যে উটি পৌঁছে যাবে। সব একদম তৈরি, শুধু রাত পার করা বাকি।






কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment