CH Ad (Clicksor)

Sunday, March 8, 2015

পাপ কাম ভালোবাসা_Written By pinuram [সপ্তবিংশ পর্ব (চ্যাপ্টার ০৩ - চ্যাপ্টার ০৪)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




পাপ কাম ভালোবাসা
Written By pinuram





পর্ব ২৭ (#৩)

কয়েকদিন পরে সূর্যের দেওয়া ঠিকানায় অনুপমা একা গিয়ে ওদের সাথে দেখা করে। জলপাইগুড়ির থেকে সর্বস্বান্ত হয়ে কোলকাতায় ফিরে মনিদিপা আর সূর্য একটা ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেছে। কথায় কথায় অনুপমা জানতে পারে, সূর্য ওর দেওয়া টাকা একটা চিটফান্ডে ঢুকিয়েছিল, ওর সাথে আরো অনেকে টাকা দিয়েছিল সবাই টাকা হারিয়ে এক রকম পথে বসে গেছে। অনুপমা ওদের বলে যদি এতই ওদের টাকার দরকার ছিল তাহলে ওকে বলতে পারত, কিন্তু ভুয়ো চিটফান্ডে টাকা কেন দিতে গেল। নিরুত্তর সূর্য আর মনিদিপা। অনুপমা ভেবে পায় না কি ভাবে কোথা থেকে টাকা যোগাড় করবে।

ওর কাছে দশ হাজার টাকা ছিল সেইগুলো মনিদিপার হাতে তুলে দিয়ে বলে, "এই টাকা এখন রাখো, পরে দেখছি কি করতে পারি।"

মনিদিপা ওর হাত ধরে কাতর কণ্ঠে বলে, "সত্যি বলছি আমরা এইখানে কোন বদমতলবে আসিনি। ভেবেছিলাম গতবার তোমার কাছে হাত পেতেছি এইবারে যদি বৌদি ক্ষমা করে দিয়ে থাকে তাহলে হয়ত বৌদি আমাদের সাহায্য করবে।"

অনুপমা কঠিন কণ্ঠে উত্তর দেয়, "মামনির কাছে যাওয়াটা তোমাদের বড় ভুল হয়ে গেছে। দেবায়নের বাড়ি যাওয়া তোমাদের মোটেও উচিত হয়নি। তোমাদের কোলকাতায় থাকা মোটেও চলবে না, জলপাইগুড়ি ফিরে যাও। কারন একবার যদি দেবায়ন এই সব জানতে পারে তাহলে কিন্তু তোমাদের নিস্তার নেই। এই শেষ বারের মতন আমি টাকা দেব আর নয় এর পরে কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে যে আর মামনির ধারে কাছে আসবে না। যদি আস তাহলে আমি নিজে দেবায়নকে সব বলে দেব আর তোমাদের ওই....."

মনিদিপা আঁতকে ওঠে, "জলপাইগুড়ি ফিরে যাওয়ার মতন অবস্থা নেই আমাদের। ওইখানে ফিরে গেলে সূর্যকে কেউ ছেড়ে দেবে না। ওকে ধরে মেরে ফেলবে। না না এই শেষ বারের মতন আর আমরা তোমাদের ধারে কাছে আসব না।"

অনুপমা প্রশ্ন করে, "কি করেছে সূর্য? কারা ওকে মেরে ফেলবে?"

মনিদিপা মাথা নিচু করে বলে, "সূর্যের সাথে সাথে অনেকের টাকা ওই চিটফান্ডে লেগেছে। সূর্য দোকানের সাথে সাথে ওই চিটফান্ডের এজেন্ট ছিল। যাদের টাকা গেছে তারা হন্যে হয়ে সূর্যকে খুঁজছে। সবার ধারনা সূর্য এই সব জানত। সেই জন্য আমরা একরাতের মধ্যে জলপাইগুড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছি।"

বড় ভাবনায় পড়ে যায় অনুপমা। এমন সময়ে মনিদিপার ছোট ছেলেটা শিশু কণ্ঠে কিছু একটা আওয়াজ করে ওঠে। মনিদিপার ছোট ছেলেকে দেখে অনুপমার মন গলে যায়, ওকে কোলে নিয়ে মনিদিপাকে জিজ্ঞেস করে, "কি নাম রেখেছ?"

মনিদিপা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, "শুভায়ন বোস।"

মিচকি হাসে অনুপমা, বাচ্চাটাকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে, "দেখিস তোর দাদার মতন হস নে যেন।"

ওর কথা শুনে অনুপমার সাথে সাথে মনিদিপাও হেসে ফেলে। তারপরে ওর হাত ধরে কাতর প্রার্থনা জানিয়ে বলে, "প্লিস কিছু একটা কর। আমি কথা দিচ্ছি এরপরে এমন ভুল আর হবে না।"

কিছুদিন পরে অনুপমা, নিবেদিতার কাছ থেকে কোন এক অছিলায় টাকা চেয়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকার মতন সূর্যকে দেয়। অনুপমার টাকা চাওয়াটা নিবেদিতার মনে একটু খটকা লাগে, কোটিপতির মেয়ে, নিজের এত বড় কোম্পানি, দেবায়ন ঘুরে ঘুরে এত টাকা কামায় তাও কেন অনুপমা ওর কাছে হাত পাতল?

জিজ্ঞেস করাতে শেষ পর্যন্ত নিবেদিতাকে গল্প বানিয়ে বলে অনুপমা, "কিছু না গো, আমার এক বন্ধু খুব বিপদে পড়েছে। ওই বন্ধুর ব্যাপারে দেবায়ন কিছুই জানে না তাই তোমার কাছ থেকে চাইলাম। আসলে কি জানো, বাড়িতে কারুর কাছে হাত পাতলে সবাই দেবায়নকে বলে দেবে।"

নিবেদিতা ইয়ার্কি মেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, "হঠাৎ এমন কোন বন্ধু তোমার যে শেষ পর্যন্ত দেবায়নকে লুকিয়ে টাকা দিতে হচ্ছে?"

ওর অর্থ অনুপমা কি দেবায়ন ছাড়া অন্য কারুর সাথে প্রেম করে?

অনুপমা মিচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, "তুমি যা ভাবছ সেই রকম কিছুই নয়। তবে প্লিস দেবায়নকে এই সব যেন বল না তাহলে খুব বিপদে পড়ে যাবো।"

নিবেদিতা ওর হাত ধরে অভয় দিয়ে বলে, "আমার যা কিছু তা সব তোমার আর কথা দিলাম দেবায়ন এর সম্বন্ধে কিছুই জানবে না।"

এনুয়াল মিটের দিন কাছে চলে আসে। অনুপমার সব বন্ধুদের আমন্ত্রন জানানো হয়। দেবায়ন আর সোমেশবাবু, শান্তনু আর একজন এডমিনের লোক নিয়ে সকালেই রেডিসন ফোরটে পৌঁছে গেছে। এনুয়াল মিটের জন্য অনুপমা একটা দামী ডি.এন.কে.ওয়াই কালো রঙের ব্যাকলেস ইভিং গাউন পরে। পারমিতা যথারীতি শাড়ি পরে সেই সাথে পায়েলকেও শাড়ি পড়তে হয়। ওরা অঙ্কনকে নিয়ে বিকেলের মধ্যেই রায়চকের দিকে রওনা দেয়। যাবার আগে অনুপমা বারেবারে মাকে সাবধান করে দিয়ে বলে যেন মিটে বেশি মদ না খায়, মনের মধ্যে বহু পুরানো ভয়টা আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। পারমিতা একপ্রকার মদ খাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছে, শুধু বাড়িতে সোমেশের সাথে মাঝে মাঝে সাঝে একটু আধটু প্রেম করার সময় খায়। মাথা নাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের মতন জানিয়ে দেয় যে মদ খাবে না একদম।

অনুপমা জানিয়ে দেয়, মামনিকে সঙ্গে নিয়ে ও ঠিক সময়ে রেডিসন ফোর্টে পৌঁছে যাবে। গাড়ি নিয়ে লেকটাউন পৌঁছে দেখে দেবশ্রী তখন তৈরি হয়নি।

মামনিকে এক ধ্যাতানি দিয়ে বলে, "কি হল যাবে না, তাড়াতাড়ি তৈরি হও।"

দেবশ্রী মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়, "তোদের অফিসের অ্যানুয়াল পার্টিতে আমি গিয়ে কি করব বল? ওইখানে সব অফিসের লোকজন থাকবে। আমি বুড়ি মানুষ, বড় বেমানান লাগবে। প্লিস সোনা কিছু মনে করিস না।"

ছোটবেলা থেকে মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। ভাই আর বোন একে ওপরের পরিপূরক হয়েই বড় হয়েছে। মা'কে পেয়েছে দেবায়নের সাথে প্রেম করার পরে। তবে পারমিতা যে ছেলে মেয়েদের ভালবাসত না সেটা কখনই নয়। মায়ের ভালোবাসা অনেকটা মামনি ওকে দিয়েছে।

অনুপমা নাছোড়বান্দা, দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে, "তুমি বুড়ি কে বলেছে, মামনি? অ্যানুয়াল মিট হয়েছে ত কি হয়েছে। তোমার জন্য এই অ্যানুয়াল মিট, তোমার আশীর্বাদ ছাড়া কি আর আমরা এতটা পথ পাড় করে আসতে পারতাম? কখনই না।" আদুরে কণ্ঠে বলে, "মামনি তুমি না গেলে কিন্তু আমিও যাবো না। প্লিস মামনি তোমাকে যেতেই হবে।"

শেষ পর্যন্ত মেয়েটার জোরাজুরিতে দেবশ্রী তৈরি হয়ে নেয়। পথে যেতে যেতে সঙ্গীতা আর প্রবালকে সঙ্গে নিয়ে নেয়। শ্রেয়া আর রূপক, বাকিদের নিয়ে পৌঁছে যাবে। অনেকদিন পরে সঙ্গীতার সাথে দেখা হওয়াতে বেশ গল্পে মেতে ওঠে। প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে, সন্ধ্যে নাগাদ ওদের গাড়ি রায়চকে পৌঁছে যায়।

এর মাঝে নিবেদিতা বারেবারে ফোন করে জানতে চায়, উদ্যক্তার দেরি হলে কি করে হবে। সত্যি কথা, অনুপমা আর নিবেদিতা এই মিটের উদ্যক্তা আর নিজের দেরি হয়ে গেল। ফোনে ক্ষমা চেয়ে নেয় নিবেদিতার কাছে। সেদিনের পরে দেবায়নকে আর ওদের বন্ধুত্তের মাঝে মধ্যস্ততা করতে হয়নি, আপনা থেকেই কেমন যেন নিজের মতন করে মিশে গেছে অনুপমা আর নিবেদিতা।

নিবেদিতাকে বেশ কয়েকবার নিজের বাড়িতে ডেকেছিল অনুপমা কিন্তু কাজের আছিলায় অতি সুকৌশলে আমন্ত্রন এড়িয়ে গেছে। ওদের দেখা সাক্ষাৎ সবসময়ে বাড়ির বাইরেই হয়েছে, এক নয় অফিসে না হয় কোন রেস্টুরেন্টে অথবা নিবেদিতার বাড়িতে।

গাড়ি থেকে নামতেই নিবেদিতার মুখোমুখি। মেয়েরা সব রূপের ডালি সাজিয়ে এসেছে এই মিটে। নিবেদিতার পরনে একটা গাড় নীল রঙের পাতলা শাড়ি, হাতকাটা ব্লাউজ যার পিঠের দিক অনেকটা উন্মুক্ত। অতীব সুন্দরী লাস্যময়ী নিবেদিতাকে দেখে একটু হাসে অনুপমা।

ওকে দেখেই কপট ঝাঁঝিয়ে ওঠে নিবেদিতা, "দেখো মেয়ের কান্ড, এত দেরি করলে হয়? সবাই প্রায় এসে গেছে আর আসল লোকের দেখা নেই। এইদিকে আবার আকাশের অবস্থা খারাপ। মিটিং লনে হবে না ব্যাঙ্কোয়েট করা হবে?"

অনুপমাদের নামতে দেখে দেবায়ন এগিয়ে আসে ওদের দিকে। মাকে দেখতে পেয়ে বেশ খুশি। দেবশ্রী ছেলেকে হেসে বলে, "তুই তো আর দেখিস না আমাকে, তাই এই মেয়েটার সাহায্য নিতে হয়।"

দেবায়ন মাথা চুলকিয়ে উত্তর দেয়, "আমি আর ও আলাদা কোথায় হলাম মা?"

অনুপমা একটু লজ্জা লাগে সেই কথা শুনে তাই বলে, "তুই চুপ কর তো, আলাদা অনেক আলাদা। এই যেমন তুই মামনিকে দেখিস না আমি দেখি। তুই কোলকাতা থাকিস না আমি থাকি।"

নিবেদিতার সাথে মামনির পরিচয় করিয়ে বলে, "মিস নিবেদিতা চৌধুরী, বাবার কন্সট্রাকশান কোম্পানির....." নিবেদিতা করজোড় করে দেবশ্রীর সাথে কুশল বিনিময় করে।

কথাটা টেনে বাকিটা দেবায়ন পরিচয় দেয়, "নিবেদিতা ম্যাডাম আমাদের ভালো বান্ধবীন বলতে পারো এই পরিবারের একজন।"

নিবেদিতার চেহারা হঠাৎ করে ফ্যাকাসে হয়ে যায়, দেবায়ন স্মিত হেসে মাথা নাড়ায় নিবেদিতাকে দেখে। অনুপমা বিষয়টা লক্ষ্য করে। সত্যিই পরিবারের মতন নিবেদিতা, কারন অনেক দিন ধরেই বাবার সাথে নিবেদিতার ব্যাবসায়িক সম্পর্ক, যদিও বাড়িতে যাতায়াত নেই। 

অনুপমাও হেসে বলে, "হ্যাঁ মামনি, নিবেদিতা ম্যাডাম আমাদের খুব ভালো বান্ধবী।"

দেবশ্রীকে দেখে মনীষা এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করে। অনেকদিন পরে শান্তনু আর মনীষার সাথে দেবশ্রীর দেখা হয়। ওদের দেখে পারমিতা এগিয়ে আসে, কিন্তু পাশে নিবেদিতাকে দেখে একটু দুরেই দাঁড়িয়ে পরে। দেবশ্রীর সাথে চোখাচুখি হওয়াতে দেবশ্রী ওর কাছে চলে যায়। মেয়েরা যারাই শাড়ি পরে এসেছে তাদের শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ছটা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। একমাত্র দেবশ্রী ছাড়া বাকিদের শাড়ি যেন সুন্দরী লাস্যময়ীদের দেহ অনাবৃত করে দেখাতে প্রস্তুত। পারমিতার পরনে একটা কালো ফিনফিনে শাড়ি, গভীর বক্ষবিদলনের বেশ কিছুটা উন্মুক্ত। আঁচলে যদিও ঊর্ধ্বাঙ্গ ঢাকা তবে পাতলা আঁচলের নীচে কিছুই যেন আর ঢেকে নেই। সেই এক অবস্থা নিবেদিতার। পিঠের দিকটা অনেক কাটা, মনে হয় অন্তর্বাস পরেনি এমন মনে হচ্ছে দেখে।

পারমিতাকে দেখে দেবশ্রী হেসে বলে, "মেয়ে যত বড় হচ্ছে তত যেন তোমার বয়স কমছে।"

পারমিতা দেবশ্রীর হাত চেপে হেসে বলে, "কি যে বলেন না দিদি। আসুন বাকি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।" বলে দেবশ্রীকে নিয়ে অন্যদিকে হাঁটা দেয়।

নিবেদিতা দেবায়নকে একপাশে টেনে জিজ্ঞেস করে, "তুমি অনন্যাকে ফোন করেছিলে?"

অনন্যা আসবে সেটা অনুপমা জানত না তাই অবাক হয়ে ওদের প্রশ্ন করে, "অনন্যাদি আসছে নাকি? কই গেস্ট লিস্টে নাম নেই তো।"

নিবেদিতা মিচকি হেসে ওকে উত্তর দেয়, "না না আছে, ফাইনাল গেস্ট লিস্টে ওর নাম আছে।"

দেবায়ন মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় অনন্যাকে ফোন করে এমনকি ওকে কার্ড পাঠিয়ে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। ওর হয়তো শুটিং সেরে আসতে একটু দেরি হবে কিন্তু যখন কথা দিয়েছে তখন নিশ্চয় আসবে। সেই সাথে চোখের ইশারায় নিবেদিতার সাথে দেবায়নের কিছু কথা হয়ে যায় যেটা অনুপমার বোধগম্য হয়না।

নিবেদিতা চলে যাওয়ার পরে অনুপমা ওর বাজু আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "আমাকে কেমন লাগছে বললি না তো?"

দেবায়ন ওর কাঁধের ওপরে হাত রেখে কাছে টেনে বলে, "তুই পোশাকেও সুন্দরী আর বিনা পোশাকেও সুন্দরী।" বলেই ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে নেয়।

সর্ব সমক্ষে এইভাবে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতেই অনুপমা একটু লজ্জা পেয়ে যায়। ওইদিকে ওদের বন্ধু বান্ধবীরা সবাই এসে গেছে। শ্রেয়া, পায়েল, ঋতুপর্ণা, সঙ্গীতা সেই সাথে তাদের সাথীরাও। কিন্তু বেশিক্ষণ ওদের সাথে গল্প করতে পারে না অনুপমা আর দেবায়ন। ওদের ডাক সব দিকে, এক এক করে সবার সাথে ঘুরে ফিরে একটু কথা বলতে হয়।

একদিকে নাচের জায়গা, সেটা এখন খালি। একদিকে লম্বা টেবিলে বুফে খাবারের ব্যাবস্থা, একদিকে মদের বার আর স্টার্টারের ব্যাবস্থা।

এমন সময়ে ওর বাবা ওদের কাছে এসে দেবায়নকে ডেকে বলে, "কি হল দেবায়ন, এইবারে মিটের বক্তৃতাটা দাও। এটা কোম্পানির আমাদের প্রথম মিট, সুতরাং তোমার হাত দিয়েই শুরু হোক।"

দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে মৃদু হেসে বলে, "না কাকু আমার হাত দিয়ে নয়, এটা অনুপমার হাত দিয়ে শুরু করা হোক।"

অনুপমার সাথে সাথে সোমেশ বাবু অবাক হয়ে যায়। অনুপমা মুখ চেপে আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ আমাকে বলির পাঁঠা পেয়েছিস তাই না? প্লিস সোনা আমি যাবো না।"

দেবায়ন ওর হাত দুটো ধরে অভয় প্রদান করে বলে, "মনে রাখিস একটা কথা, তুই কারুর চেয়ে কোন অংশে কম নস। তুই এগিয়ে যা আমি তোর পেছনে আছি। আর মনে রাখিস, এই যে চারপাশে যা দেখছিস সেই সবের পেছনে দুই মহিলার অসামান্য অবদান আছে।" অনুপমা চোখের ইঙ্গিতে প্রশ্ন করে, "কে?"

উত্তরে দেবায়ন ওর কানে কানে বলে, "মিমি আর নিবেদিতা।" অবাক চোখে অনুপমা ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।

দেবায়ন ধীরে ধীরে ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মঞ্চের দিকে যেতে বলে। ধীর পায়ে মঞ্চের দিকে হাঁটতে হাঁটতে অনুপমা একবার জনারন্যের দিকে তাকিয়ে দেখে। প্রায় দুশোর মতন লোক ওর দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে। কোলকাতার বেশ কয়েক নামী ব্যাক্তি এসেছেন, দুটো কন্সট্রাকশান কোম্পানির কর্মচারীরা এসেছে, ওদের সফটওয়্যার কোম্পানির সবাই এসেছে, বাইরে থেকে হোটেলের মালিক আর হোটেলের ম্যানেজারেরা এসেছে, বিদেশ থেকে লোকজন এসেছে। এত লোকের সামনে দাঁড়িয়ে হটাত করে অনুপমার বড় একা মনে হয়। কিন্তু ওর পেছনে দাঁড়িয়ে, ঋজু দেহের লম্বা চওড়া ছেলেটা, যার বাহুপাশে চোখ বুজলে ঘুম পায়, যার বুকে মাথা রাখলে নিরাপত্তার আভাস পাওয়া যায়, তার ছোঁয়ায় এক জাদু আছে। ওকে দেখে স্মিত হেসে মাথা দোলায় দেবায়ন। ওর ওই হাসি দেখে অনুপমা বুকে বল পায়। কিন্তু দেবায়ন ওর কানে কানে কি বলতে চাইল? মঞ্চে উঠতেই একজন ওর দিকে মাইক এগিয়ে দেয়। না এতটা কোনোদিন আশা করেনি অনুপমা। হ্যাঁ, দেবায়নের সাথে দেখা হওয়ার আগে ভেবেছিল ওর জীবন খুব সাধারন হবে, পড়াশুনা শেষে একটা বড় লোকের বাড়িতে বিয়ে হবে, হয়ত চাকরি করবে কি করবে না সেটা জানা নেই, অনিশ্চয়তা ওর জীবনের একটা বড় অঙ্গ হতে পারত। মাইক হাতে নিয়ে একবার মায়ের দিকে দেখে, একবার নিবেদিতার দিকে দেখে একবার ওর মিষ্টি মামনির দিকে দেখে। সবাই হাঁ করে ওর দিকে চেয়ে।







পর্ব ২৭ (#০৪)

অনুপমা খানিকক্ষন চুপ করে থাকার পরে মাইক নিয়ে বলে, "আজকে আমাদের সেন গ্রুপ অফ কোম্পানির প্রথম অ্যানুয়াল মিট।"

সবাই চুপ, সবার কান ওর দিকে। অনুপমা বলে, "আমি জানিনা এনুয়াল মিটে কি বলতে হয়, তাও সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। একটা ছাদ দাঁড় করাতে গেলে অন্তত পক্ষে তিন খানা থামের দরকার পরে। এই গ্রুপ কোম্পানির বিষয়ে জানি না তবে আমার জীবনের তিন খানা থাম, তিন মহিলা....."

সবাই উৎকণ্ঠায় ওর দিকে তাকিয়ে। অনুপমা প্রথমে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে ডেকে বলে, "আমার মা, মিসেস পারমিতা সেন, যার ভালোবাসায় এতদুর এসেছি।" পারমিতার চোখে জল চলে আসে। চোখের কোল মুছতে মুছতে মেয়ের দিকে এগিয়ে যায়। তারপরে অনুপমা, দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে মঞ্চে ডেকে বলে, "আমার মামনি, মিস্টার দেবায়নের মা, যার আশীর্বাদে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।" দেবশ্রী অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, কি বলছে মেয়েটা? অনুপমা কাতর চোখে মামনিকে মঞ্চে আসতে অনুরোধ করে। অগত্যা দেবশ্রী ধীর পায়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যায়। তারপরে অনুপমা, নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে কাছে ডেকে বলে, "আমার বান্ধবী, মিস নিবেদিতা চৌধুরী যার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য আজকে আমরা এইখানে একত্রিত হয়েছি।" হতবাক নিবেদিতা দাঁতের মাঝে আঙ্গুল কেটে চোখের জল সংবরণ করে অনুপমার দিকে নিস্পলক নয়নে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা ওকেও হাত নাড়িয়ে কাছে ডাকে। তারপরে মাইকে বলে, "মহিলারাই এই জগতের জন্মদাত্রী। আজকের রাত তাই মেয়েদের রাত। এই পৃথিবী সব মেয়েদের জন্য" হাত মুঠি করে হাওয়ায় উঁচিয়ে চিৎকার করে বলে, "লেডিস, ড্যান্স ফ্লোর অনেকক্ষণ থেকেই খালি পরে। আজকে নো ব্যালেন্স সিট, নো বড় এন্ড ছোট, কার কাছে কি আছে, কার কাছে কি নেই। একটা রাত এইসব ভুলে..... লেটস পার্টি হার্ড....."

মঞ্চে দাঁড়িয়ে চার মহিলাকে দেখে সবাই হাততালি দেয়। গুঞ্জনে ভরে ওঠে রেডিসনের লন, আকাশে মেঘের গুরগুর শুরু হয়ে যায়। সেই উপেক্ষা করে অনুপমা মাইক নিয়ে চেঁচিয়ে, "মেয়েরা দেখিয়ে দাও, ওই আকাশের কালো মেঘের গুরগুর চড়চড় ধ্বনি আমরা ভয় করিনা।"

মঞ্চ থেকে নেমে এসেই দেবায়ন কে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা গুঁজে দেয়। ওর মাথা বুকে চেপে নিচু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "কি হল তোর?"

মাথা নাড়ায় অনুপমা, "কিছু না।" ওর গলা ধরে এসেছে এতক্ষণে। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছে, এই বুকের মধ্যে ঢুকে পড়লে ভালো হত।

ওকে ওইভাবে দেবায়নের বুকে মাথা গুঁজে থাকতে দেখে নিবেদিতা ওদের দিকে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে হাত রাখে। নরম হাতের পরশে অনুপমার সম্বিত ফিরে আসে। নিবেদিতাকে দেখে চোখের কোল মুছে মিষ্টি হাসি দেয়। নিবেদিতা স্মিত হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কি ওইখানে উঠে একটু পাগল হয়ে গেছিলে?"

অনুপমা দেবায়নের বাজু দুই হাতে আঁকড়ে ধরে বলে, "আমাকে পাগল করার লোক আর ঠিক করার লোক আমার পাশেই আছে।"

মিটের সাথে পার্টি কিছুক্ষণের মধ্যে জমে ওঠে। পারমিতা আর নিবেদিতা পরস্পরকে অতি মার্জিতভাবে অতি সুকৌশলে এড়িয়ে চলেছে। পারমিতা, দেবশ্রীকে নিয়ে একপাশে গল্পে মেতে ওঠে। নিবেদিতা আর অনুপমা কথা বলতে বলতে ভিড়ের দিকে এগিয়ে যায়। কম বয়সী ছেলে মেয়েরা ততক্ষণে নাচের জায়গায় উঠে নাচ করতে শুরু করে দিয়েছে।

ভিড়ের এক কোনায় হটাত করে ওর চোখ ধৃতিমানের দিকে চলে যায়। ধৃতিমানের হাতে একটা মদের গেলাস, ওর ঠাণ্ডা বরফের মতন চোখের সাথে চোখাচুখি হতেই ওর মেরুদন্ড দিয়ে হিমশীতল এক ধারা বয়ে যায়। একপাশে নিবেদিতাকে দেখে, অন্য পাশে দূরে দাঁড়িয়ে মায়ের সাথে মামনিকে দেখে। বাবার কোম্পানিতে চাকরি করছে ধৃতিমান, এই মিটে আসবে সেটা স্বাভাবিক কিন্তু ওর কথা একদম মাথায় ছিল না অনুপমার। এই সমাগমে কিছু করে বসবে না তো? অতটা সাহস নেই তবে যদি মামনির সামনে পরে যায় তখন কি হবে? সঙ্গে সঙ্গে হন্তদন্ত হয়ে দেবায়নের কাছে দৌড় লাগায়।

হাঁপাতে হাঁপাতে দেবায়নকে একদিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে, "সর্বনাশ হতে একটু বাকি আছে রে।"

দেবায়ন অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে একটু খুলে বল।"

দূরে এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা ধৃতিমানের দিকে দেখিয়ে অনুপমা বলে, "ধৃতিমানের কথা একদম ভুলে গিয়েছিলাম। একদিকে মামনি অন্যদিকে নিবেদিতা। ওদের সামনে পরে গেলে কি হবে?"

দেবায়নের সাথে ধৃতিমানের চোখাচুখি হয়, ওর ওই চাহনি দেখে চিন্তায় পড়ে যায়। খানিকক্ষণ পরে কিছু একটা চিন্তা করে ওর কাঁধে চাপ দিয়ে অভয় প্রদান করে বলে, "চিন্তা করিস না, আমি ওকে কিছু করে হোক এখান থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।"

ঠিক সেই সময়ে রূপক ওইখানে চলে আসে। ওকে দেখে দুইজনে চুপ হয়ে যায়। রূপক ওদের ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কারন জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন জানায় ওরা এমনি দাঁড়িয়ে আছে। মঞ্চের বক্তৃতা দেওয়ার পরে অনুপমা একটু ভাবাবেগে গলে গিয়েছিল তাই ওর কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের ওইখানে ছেড়ে দিয়ে দেবায়ন ভিড়ের মধ্যে এগিয়ে যায়, ধৃতিমানের দিকে।

রূপক সেটা লক্ষ্য করে অনুপমাকে প্রশ্ন করে, "হ্যাঁ রে ওই লোকটা সেই লোকটা না, যাকে আমরা মিস চৌধুরীর সাথে জলপাইগুড়িতে দেখেছিলাম?"

অনুপমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, ভেবেছিল হয়ত রূপক চিনতে পারবে না কিন্তু। অনুপমা মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানিয়ে বলে, "কই না তো?"

হাতের গেলাসে চুমুক দিয়ে ধৃতিমানের দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে রূপক ওকে বলে, "আরে কিছু একটা লুকাচ্ছিস তুই। ওই ভদ্রলোক জলপাইগুড়ির সেই ভদ্রলোক, কিন্তু এই মিটে কেন?"

অনুপমা ধরা পড়ে গেছে তাই ওকে সত্যি বলে দেয়, "আসলে ওই ভদ্রলোক বাবার কন্সট্রাকশান কোম্পানিতে চাকরি করে।"

রূপক মাথা দুলিয়ে বলে, "হুম, তাহলে মিস চৌধুরীর সাথে কিছু একটা হবে।"

অনুপমা ম্লান হেসে উত্তর দেয়, "না, নিবেদিতাকে ওর হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেই দেবায়ন গেছে। এই মিটে কিছু যদি করে বসে সেই ভয়ে।"

রূপক ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, "মানে? ওর সাথে মিস চৌধুরীর সম্পর্ক কেটে গেছে?"

অনুপমা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

রূপক হাতের গেলাস এক চুমুকে শেষ করে বলে, "ওই লোকটাকে কি এইখান থেকে তাড়াতে হবে? বল এখুনি লেগে পড়ছি।"

অনুপমা ওর বাজুতে ছোট চাঁটি মেরে বলে, "তুই আর পুচ্চু, মারামারি কাটাকাটি ছাড়া কিছু জানিস?"

ওর কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে কানেকানে বলে, "আরো একটা জিনিস করতে পারি কিন্তু শালা ছেলে না হলে ঠিক লাগিয়ে দিতাম।" বলেই হেসে ফেলে।

অনুপমা ওকে নিয়ে বন্ধু বান্ধবীরা যেখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল সেই দিকে এগিয়ে যায়। শ্রেয়া, পায়েল, ভাই অঙ্কন, সঙ্গীতা প্রবাল, ধীমান ঋতুপর্ণা সবাই একদিকে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল। কিছু পরে দেবায়ন ফিরে এসে ওদের সাথে যোগদান করে। অনুপমার সাথে চোখের ইশারায় কথা হয়ে যায় যে ধৃতিমানকে ঠিক করে দিয়েছে। বহু লোকের মাঝে তারপরে আর ধৃতিমানকে দেখা যায় না।

অনুপমা আর দেবায়ন আবার বন্ধুদের ছেড়ে সবার সাথে দেখা করার জন্য বেড়িয়ে পরে। এমন সময়ে ওদের দেখা অনন্যার সাথে হয়। অনন্যাকে দেখে অনুপমা বেশ আশ্চর্য হয়ে যায়, ওর পাশে আবার এক অচেনা আগন্তুক।

অনন্যা ওর হাত ধরে হেসে বলে, "বাপ রে তুই একদম পাক্কা বিজনেস ওম্যান হয়ে গেছিস দেখছি।"

অনুপমা স্মিত হেসে দেবায়নের বাজু আঁকড়ে ধরে বলে, "হ্যাঁ, এই ছেলেটার জন্য হতে হল।"

অনন্যা পাশের আগন্তুকের সাথে দেবায়নের পরিচয় করিয়ে বলে, "সত্যজিত, বলেছিলাম তোকে মনে আছে?"

অনুপমা হাত বাড়িয়ে সত্যজিতের সাথে হাত মিলিয়ে কুশল সম্ভাষণ আদান প্রদান করে।

দেবায়ন অনন্যাকে প্রশ্ন করে, "তোমার মানে....."

অনন্যা কাতর চোখে ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, "প্লিস আজকে নয়।" তারপরে অনুপমাকে বলে, "হ্যাঁ রে একটু সময় হবে তোর?"

অনুপমা ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করে কি ব্যাপারে কথা বলতে চায়। উত্তরে অনন্যা ওকে বলে, "তোরা দুইজনেই এইখানে আছিস আর সত্যজিত এসেছে। মানে ঐযে মিস্টার বসাক বলেছিল।"

অনুপমা বুঝতে পারে কি বিষয়ে অনন্যা ওর সাথে আলোচনা করতে চায় তাই হেসে ওকে বলে, "সরি অনন্যাদি, আজকে রাতে শুধু পার্টি। তুমি সময় করে একদিন আমার অফিসে এসো না হয় বাড়িতে এসো ওইখানে এইসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে।"

দেবায়ন মিচকি হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কত টাকার ধাক্কা লাগাতে চাও?"

অনন্যা সত্যজিতের দিকে একবার দেখে বলে, "সেই রকম একটা প্লান করে নিয়েছি তবে হাতে টাকা নেই তাই শুরু করতে পারছি না।"

সত্যজিত ওকে উত্তর দেয়, "মানে এই ষাট থেকে আশি লাখ টাকার মতন লাগবে।"

অনুপমা আর দেবায়ন মুখ চাওয়াচায়ি করে। তারপরে দেবায়ন মিচকি হেসে সত্যজিতের সামনেই অনন্যার কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, "চার পাঁচ লাখ টাকা হলে না হয় এখুনি দিয়ে দিতাম। কিন্তু আশি লাখ টাকা, এটা বিনিয়োগের ব্যাপার। কি রকম রিটার্ন পাবো সেই বিষয়ে কিছু জানা নেই।"

অনুপমা ওকে মৃদু বকুনি দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে, "প্লিস দেবায়ন এইখানে বিজনেস নয়।" অনন্যাকে হেসে উত্তর দেয়, "প্লিস ওর কথায় কিছু মনে কর না, তোমাদের লাইন অব বিজনেস, প্রোজেকশান, স্ট্রাটেজি সব নিয়ে একদিন আমাদের বাড়িতে এসো আলোচনা করা যাবে।"

দেবায়ন মিচকি হেসে অনন্যাকে বলে, "আজকে প্রথম কিস্তির রিটার্ন পেলে বড় ভালো হত।"

অনন্যা ওর দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে বলে, "তুমি না বড্ড শয়তান....." বলেই ওকে আলতো একটা চাঁটি মারে। ওদের ওইভাবে মিশতে দেখে সত্যজিতের একটু কেমন কেমন মনে হয়।

বহু মানুষের চোখ ওদের দিকে, ছোট পর্দার নায়িকা অনন্যাকে দেখে অনেকেই ওর সই নিতে এগিয়ে আসে। অনুপমা আর দেবায়ন ওদের ছেড়ে আবার অন্যদিকে এগিয়ে যায়। দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে, ধৃতিমানকে ও মৃদু শাসিয়ে রায়চক থেকে কোলকাতা পাঠিয়ে দিয়েছে। অনুপমা মাথা দোলায় আলতো করে। রাত যত বেড়ে ওঠে, তত বেড়ে ওঠে আকাশের গুরগুর চড়চড় ধ্বনি আর তত বেড়ে ওঠে নাচের তাল আর সঙ্গীত। নাচের ফ্লোরে অনেকেই উঠে নাচতে শুরু করে দিয়েছে। অনুপমার নাচের জায়গায়, বেশ কয়েক জন সুন্দরী ছোট চাপা আঁটো পার্টি পোশাক পরিহিত মেয়েদের দেখা পায়। গানের তালে তালে বিদেশী অথবা হোটেলের মালিকদের সাথে বেশ জড়াজড়ি করে নাচছে। ওদের অফিসের লোকজন, ছেলে মেয়েরা উদ্দাম নাচে ব্যাস্ত। সবাইকে দেখে আর দেবায়নের বাজু ধরে একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment