আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
অসীম তৃষ্ণা
Written By pinuram
Written By pinuram
নবম পর্ব
(#০৩)
চারপাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা। গাড়ি তীর বেগে খালি রাস্তা ধরে নেমে চলেছে। গাড়ির জানালা খোলা, ভেতরের লাইট বন্ধ। কিছুক্ষণ পরেই ঠাণ্ডা বাতাসে ঋতুপর্ণার মন হারিয়ে যায় এক অচিন পুরে। গাড়িতে ওঠার সময়ে মা ছেলে পেছনের সিটে নিজেদের মাঝে একটু ব্যাবধান নিয়েই বসেছিল কিন্তু ঘুমের আবেশ চোখে লাগতেই আদি মায়ের পাশ ঘেঁষে বসে। ঋতুপর্ণা একমনে জানালার বাইরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল অতীতে। সুভাষকে মন প্রান দিয়েই ভালবেসেছিল, কিন্তু তার দাম সুভাষ দিল না। প্রেমের আসল অর্থের সমাধান খুঁজতে বেড়িয়েছিল ওর ফাঁকা বুক। কাকে ভালোবাসে ঋতুপর্ণা, ভালোবাসার আসল অর্থ কি। শুধু কি দেহের টান, যার খিদের জ্বালায় প্রদীপের বিছানায় ধরা দিয়েছিল। কিন্তু সেখানেও প্রতারণা ছাড়া আর কিছু পেল না। মাথা ঝাঁকা দিয়ে হেসে ফেলে মনে মনে। ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখল ঋতুপর্ণা। ইসস নিশ্চয় ঘুম পেয়েছে, এই ভাবে ঢুলছে।
"এই বাবা, মাথায় বাড়ি লাগবে তো। এইদিকে আয়।" ঋতুপর্ণা ছেলেকে ডাকে।
গতকাল থেকে চোখের পাতা এক করতে পারেনি। ঠাণ্ডা বাতাসে শরীর একদম ছেড়ে দিয়েছে। মায়ের ডাকে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে মাকে তারপরে বাধ্য ছেলের মতন মায়ের পাশে সরে আসে। ছেলের গালে মাথায় হাত বুলিয়ে ঋতুপর্ণা বলে, "আয়, কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়।"
আদি ঘুম ঘুম চোখে হেসে জিজ্ঞেস করে, "তোমার ঘুম পাচ্ছে না, মা?"
ঋতুপর্ণা ওর উস্কোখুস্কো চুলে বিলি কেটে আদর করে বলে, "না এখন আর ঘুম পাচ্ছে না। তুই ঘুমা, এয়ারপোর্ট এলে তোকে তুলে দেব।"
আদি আর কথা না বাড়িয়ে, বাচ্চা ছেলের মতন মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। ইসস, এই ঠাণ্ডা বাতাসে ছেলের না ঠাণ্ডা লেগে যায়। এই ভেবে শাড়ির আঁচল ছেলের শরীরের ওপরে দিয়ে ঢেকে দিল। ঋতুপর্ণার এক এক করে মনে পরে আগের কথা। রোজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগে ছেলে এইভাবে ওর কোলে মাথা রেখে কিছুক্ষণ তন্দ্রা নেবে, একটু জড়িয়ে আদর করবে তারপরে বিছানা ছাড়বে। এই পনেরো দিনে সেই পরশ পায়নি ঋতুপর্ণা। পনেরো দিন নয়, যেন পনেরো বছর কেটে গেছে এর মাঝে।
ছেলের মাথা কোলে চেপে ধরে চুপচাপ বসে থাকে। আদির ছোট বেলার কথা মনে পরে যায়, বুকের পাঁজর কেটে একমাত্র ছেলেকে হোস্টেলে পাঠিয়েছিল। তারপরে ওর জীবনে ধস নেমে আসে। ডিভোর্স দিতে দ্বিধা করেনি সুভাষ, সেই সাথে ওদের থাকার জন্য বিশাল বাড়িটা দিয়েছিল। বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নিতে চায়নি, শর্ত ছিল কোনোদিন ছেলেকে সুভাষের কাছে আসত দেবে না। সুভাষ বেঁকে বসেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মেনেছিল এক মায়ের অপার মমতার কাছে। আজ আর কোন পুরুষের প্রতি বিশ্বাস নেই, কোলকাতা ফিরে গিয়ে নিজের স্কুল আর বাড়িতে নাচের ক্লাস নিয়েই পরে থাকবে আর থাকবে ছেলে। কাছের মানুষ বলতে কমল দা আর বৌদি, তা ছাড়া বাকিরা যারাই ওর দিকে তাকায় সবার চোখে যেন এক চাহিদা। একা এক নারীর দ্বারা ছেলে মানুষ করা বড় কষ্টকর। ফিরে গিয়ে সব থেকে আগে প্রদীপের টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে কিন্তু ওর সামনে যেতেই ঘৃণা বোধ করে। দেড় লাখ টাকা এখুনি কোথা থেকে যোগাঢ় করবে। ওইদিকে আদির পড়াশুনা, কলেজ। যদিও পরের দিকে সুভাষ ছেলের পড়াশুনার খরচ দিত। প্রথমে নিতে চায়নি, কিন্তু যখন আদি হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরে বারবার সুভাষের কথা জিজ্ঞেস করতো তখন সঠিক উত্তর দিতে পারত না। তারপরে একদিন বাবার কাছে যাবে বলে বাড়ি থেকে পালাবার উদ্যোগ নেয়। সেদিন খুব কেঁদেছিল ঋতুপর্ণা, ছেলে ছাড়া ওর আর কেউ নেই। বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের কাছে হার মেনে সুভাষকে ফোন করেছিল। ওদের মাঝের বরফ যদিও বিন্দুমাত্র গলেনি তবে তারপর থেকে সুভাষ আদির পড়াশুনার খরচ জুগিয়ে গেছে।
পুব আকাশে রঙ লেগে গেছে। ঘড়ি দেখল ঋতুপর্ণা, সাড়ে ছ'টা বাজে। পথ আর বেশি নেই, গাড়ি পাহার ছেড়ে নেমে এসেছে। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে উত্তর পায় যে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এয়ারপোর্ট পৌঁছে যাবে।
আদির চুলে বিলি কেটে জাগিয়ে তোলে, "উঠে পড়, এয়ারপোর্ট এসে গেছে।"
প্রতি দিনের সকালের মতন মায়ের কোমর জড়িয়ে ঘুম ঘুম আদুরে গলায় আদি বলে, "আর পাঁচ মিনিট প্লিজ।"
হেসে ফেলে ঋতুপর্ণা, "ওকে বাবা, শুধু পাঁচ মিনিট।" চোখের কোনায় এক চিলতে জল জমে আসে আদির কথা শুনে।
তন্দ্রা অবস্থাতেই কোলের মধ্যে নাক মুখ ঘষে দেয় আদি। শক্ত করে মায়ের কোমর জড়িয়ে নরম পেটের ওপরে আদর করে দেয়। আলতো এক চাঁটি মেরে ঋতুপর্ণা আদিকে তুলে দিয়ে বলে, "এই কি করছিস রে দুষ্টু...."
আদি ঘুমের ঘোরে ভুলেই গিয়েছিল যে ওরা গাড়িতে। ঘুম ভাঙতে বুঝতে পেরে মায়ের কোল থেকে ধড়মড় করে মাথা উঠিয়ে নেয়। আড়মোড়া খেয়ে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, "ইসসস.... একটু ঘুমাতে দিলে না।”
স্নেহ ভরে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, "এই তো, একটু পরেই এয়ারপোর্ট, তারপরেই বাড়ি। একেবারে বাড়িতে গিয়ে লম্বা হয়ে ঘুমিয়ে পড়িস, আমি আর তোকে জাগাবো না।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই এয়ারপোর্ট এসে গেল। চেক ইন আগে থেকেই করে রেখেছিল আদি তাই বেশি দেরি না করে সিকিউরিটি চেক হয়ে গেল। আদিকে জোর করে অয়াশ রুমে পাঠিয়ে দিল মুখ ধুয়ে আসার জন্য। ইসস ছেলেটা এখন ঘুমে ঢুলছে, বড় কষ্ট হল সেই দেখে।
প্লেনে উঠে ঋতুপর্ণা ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, "এই কয়দিনে কে কে এসেছিল রে?"
আদি সবার কথা জানালো, স্কুলের শিক্ষিকারা, সোসাইটির বেশ কয়েকজন। তিস্তা মাঝে মাঝেই আসতো দেখা করতে। সেই শুনে ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে আদিকে জিজ্ঞেস করে, "বড্ড বেশি তিস্তা তিস্তা করা হচ্ছে, কি ব্যাপার?!"
লজ্জা পেয়ে যায় আদি, "না না, এই শুধু একটু বন্ধুত্ন তা ছাড়া আর কিছু নয়।"
তিস্তাকে ভালো ভাবেই চেনে ঋতুপর্ণা তাই অবিশ্বাস ভরা চাহনি নিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে, "তা বন্ধুত্বটা কত গভীর একটু শুনি না!"
লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় আদির। লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় আদির, মায়ের দিকে না তাকিয়ে উত্তর দেয়, "না বলব না। তুমি ও ত মাঝে মাঝেই তোমার বন্ধু প্রদীপ বাবুর কাছে যাও।"
ঋতুপর্ণা যে সন্দেহ করেনি সেটা নয়। তিস্তার পারটিতে যে ভাবে আদি আর তিস্তা এক ঘন আলিঙ্গনে বেঁধে ছিল তাতেই সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু ভেবেছিল যেহেতু তিস্তার একটা বয় ফ্রেন্ড আছে সেহেতু হয়তো তিস্তা ওর ছেলের দিকে হাত বাড়াবে না। কিন্তু আদির লজ্জা দেখে সন্দেহ দূর হয়ে যায়। বুকের ভেতরটা কিঞ্চিত হিংসে কিঞ্চিত ভয়ে রি রি করে ওঠে।
আদির গালে হাত রেখে নিকের দিকে টেনে ধরে বলে, "ওকে বাবা। তবে দেখিস বেশি দূর যেন এগোস না। ওর একটা বয় ফ্রেন্ড আছে, পরে যেন কেঁদে কেটে...."
আদি লজ্জায় লাল হয়ে যায়, "আরে বাবা, যাও তো। তুমি কথাটা কোথা থেকে কোথায় নিয়ে চলে গেলে।" একটু থেমে বলে, "আচ্ছা জানো, তোমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে বাবা দৌড়ে এসেছিল।"
বিশ্বাস হল না এটা, "মানে?" ঋতুপর্ণা ছেলেকে প্রশ্ন করে।
আদি উত্তরে বলে, "হ্যাঁ মা, তোমার এক্সিডেন্টের কথা শুনেই বাবা এসেছিল। হসপিটালের সব খরচ সব কিছু বাবাই দিয়েছে।"
ঋতুপর্ণা একটু রেগে যায়, "কেন, একাউন্টে কি টাকা ছিল না?"
আদি মাকে ক্ষান্ত করে বলে, "আরে সেই কথা নয় মা। আসলে সেই সময়ে মাথা একদম কাজ করছিল না। কি করব কার কাছ থেকে সাহায্য চাইব কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না তাই বাবাকে ফোন করেছিলাম। তারপরে....." একটু থেমে গেল আদি। মনে পরে গেল বাবার কথা, মনে পরে গেল আদির আর ঋতুপর্ণার আসল পরিচয়। চোখ জোড়া জ্বালা করে উঠল। মাকে যদি সব কথা বলে দেয় তাহলে মা হারিয়ে যাবে, আবার হয়তো বড় ধাক্কা খাবে। এতদিন যখন বাবা এই সত্য লুকিয়ে রেখেছে তখন বাকি জীবন এই সত্য লুক্কায়িত থাক।
ঋতুপর্ণা প্রশ্ন করে, "তারপরে কি?"
আদি মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, "তারপরে আর কি। তুমি কাউকে চিনতে পারলে না। বাবাকে দেখা মাত্রই চেঁচিয়ে উথলে, দেখতে পর্যন্ত চাইলে না, দুরদুর করে তাড়িয়ে দিলে। বড্ড দুঃখ পেয়ে ফিরে গেল।"
ঋতুপর্ণা চোয়াল শক্ত করে চিবিয়ে উত্তর দেয়, "কি দরকার ছিল তোর বাবাকে ডাকার। আমি কি মরে গিয়েছিলাম?"
আদি আমতা আমতা করে বলে, "না মানে একা একা বড় অসহায় ফিল করছিলাম।"
ঋতুপর্ণা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। নিচে ছোট ছোট গ্রাম গঞ্জ, চারপাশে মেঘের ভেলা। শরত এসে গেছে, সামনে পুজো। সত্যি সুভাষের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে আত্মীয় সজ্জনের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। এই শহর কোলকাতা ছাড়িয়ে অনেকদুরে ওদের বাড়ি। সুভাষের সাথে পালিয়ে আসার পরে কোনোদিন আর সেই বাড়ি মুখো হয়নি এমনকি ডিভোর্সের পরেও বাড়ি মুখো হতে পারেনি। একা একাই জীবনের সাথে এই দুনিয়া এই সমাজের সাথে লড়াই করে গেছে। তবে কি সুভাষ এখন ওকে ভালোবাসে, না কি শুধু মাত্র ছেলের অসহায় অবস্থা দেখে এসেছিল।
একটানা গুনগুন আওয়াজে কান ধরে গেছে। কোলকাতা পর্যন্ত একদম চুপ ছিল ঋতুপর্ণা। প্লেন ধীরে ধীরে নামতে শুরু করে দিতেই তন্দ্রা ভাব কেটে গেল ঋতুপর্ণার। ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখল একবার। হাঁ করে সিটে মাথা রেখে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সেটার খেয়াল ছিল না। আদির কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে তুলে দেয়। চোখ ডলে মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসে আদি। ঋতুপর্ণা প্রতি উত্তরে অল্প হেসে জানিয়ে দেয় যে কোলকাতা এসে গেছে।
এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি পর্যন্ত বেশ চুপচাপ ছিল দুইজনে। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় বারোটা বেজে গেল। সোসাইটি তে গাড়ি ঢুকতেই ঋতুপর্ণার মনে হয় নিজের পুরানো হারিয়ে যাওয়া জীবনে ফিরে এসেছে। আকাশে পোজা তুলোর মেঘ, বাতাসে আগমনীর গানের সুর।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে আদি মাকে জিজ্ঞেস করে, "একবার ডাক্তারের কাছে গেলে হত না?"
ঋতুপর্ণা মাথা দুলিয়ে সায় দেয়। মায়ের এই অতিরিক্ত চুপ করে থাকা ওর বুক জ্বালিয়ে দেয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই মাকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে বলবে একটু। সেই কখন থেকে গুম মেরে বসে আছ।"
রাগত দৃষ্টি নিয়ে ছেলের দিকে তাকায় ঋতুপর্ণা, "কিছু হয়নি। স্নান সেরে রেস্ট নে আমি দেখি আলুভাতে বানিয়ে দি। তারপরে না হয় ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে।"
মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কোমরে হাত রেখে প্রশ্ন করে, "কি হয়েছে না বললে আমি সরব না।"
ভুরু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, "কি হয়েছে মানে? সুভাষকে ফোন করাটা কি খুব দরকার ছিল।"
ওর চিকিতসার খরচ সুভাষ দিয়েছে জানতে পারার পর থেকেই মন বিষিয়ে ছিল। ছেলের হঠাৎ করে কতৃত্ব ফলানো দেখে আরো বেশি রেগে যায়। চেঁচিয়ে ওঠে আদির ওপরে, "আমাদের একাউন্টে কি টাকা ছিল না নাকি আমরা বানের জলে ভেসে গিয়েছিলাম।"
মাকে এইভাবে হঠাৎ করে রেগে যেতে দেখে আদি থম মেরে যায়। মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বলে, "না মানে, আমি নিতে চাইনি। বাবা দিয়ে দিল।"
মুখ কাঁচুমাচু করে মায়ের হাত ধরে বিনয় করে বলে, "মা গো প্লিজ রেগে যেও না। আমি সেই সময়ে কি করব, কোথায় যাবো কিছুই বুঝতে পারিনি।"
মায়ের রাগ কমাতে হবে, ডাক্তার বলে দিয়েছিল যে মায়ের যাতে মানসিক চাপের সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে। মাকে জড়িয়ে ধরে আদো আদো গলায়, "এই ভাবে রেগে গেলে আমি যাই কোথায় বল ত। আর দেখো এইভাবে রেগে যাওয়া কিন্তু তোমার শরীরের পক্ষে একদম ভালো নয়।"
হঠাৎ করে রেগে যাওয়াতে মাথাটা ঘুরে যায় ঋতুপর্ণার। হঠাৎ করে টলতে শুরু করে দেয়। ভাগ্যিস আদি ওকে জড়িয়ে ধরেছিল না হলে টলে পরে যেত। ছেলের আদুরে গলা শুনে শেষ পর্যন্ত ঋতুপর্ণার রাগ কমে আসে, "আচ্ছা ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে ফেল। আমি প্রেসার কুকারে ততক্ষণে আলুভাতে ভাত বসিয়ে দেই।"
আদি তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে ঢুকে গেল। গত কাল থেকে চোখের পাতা এক করেনি। গায়ে ঠাণ্ডা জল পড়তেই সারা শরীর জুড়িয়ে এলো। স্নান সারতে সারতে বারেবারে মায়ের নগ্ন রূপ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ঠাণ্ডা জলের ধারা কিছুতেই আদির রক্তের উত্তাপ কমাতে পারেনা। মায়ের উলঙ্গ রূপের আগুনে ঝলসে যায় আদির বুক। সারা শরীরের রক্ত জমে ওঠে ওর লিঙ্গে। ঠাণ্ডা জল উপেখা করে মুহূর্তের মধ্যে টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে যায় ওর বিশাল লিঙ্গ। দপদপ করে ওঠে সারা শরীর। দাঁতে দাঁত পিষে অবৈধ কামনাকে দমিয়ে নিজেকে দংশন করে। কামনার দেবী নয় ওর মা, ওর মা সুন্দরী ঋতুপর্ণা ভালোবাসার এক নারী।
বেশিক্ষন এইভাবে শাওয়ারের নিচে দাঁড়ালে উগ্র কামনার আগুন জ্বলে উঠবে, তাই কোনরকমে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে বেরিয়ে আসে। হসপিটালে ফোন করে ডাক্তারের সাথে এপয়েনমেন্ট সেরে ফেলে।
বিকেলের দিকে মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, অর্থাৎ এই বেলা আর তিস্তার সাথে দেখা করা যাবে না। একটু ছোঁয়া পেলে বড় ভালো হত, গত কাল রাত থেকেই লিঙ্গটা লম্বা বাঁশের মতন দাঁড়িয়ে। হাত দিয়ে কাজ সারার পরেও কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না এই দামাল শাল গাছটাকে। আদির চাই এক কোমল নারী দেহ আর সিক্ত তপ্ত নারী যোনি যার মধ্যে নিজের বিশাল পুরুষাঙ্গ ঢুকিয়ে উথাল পাথাল সঙ্গম করে বুকের জ্বালা আর দেহের রস মেটাবে।
(#০৪)
ঋতুপর্ণা কোন রকমে হাতে মুখে সাবান দিয়ে ধুয়ে রান্না ঘরে ঢুকে পরে খাবার বানাতে। ছেলের খিদে পেয়েছে সেই সাথে গত কাল থেকে এক ঝড় বয়ে গেছে ওদের ওপর দিয়ে। প্রেসার কুকারে সব কিছু একসাথে বসিয়ে দিয়ে রান্না ঘরের বাইরে এসে দেখে ছেলের স্নান সার হয়ে গেছে। খালি গায়ে একটা বারমুডা পরে বসার ঘরে বসে টিভি দেখছে। ছেলের খালি গা, পুরুষালি মেদহীন দেহ কাঠামো, লোমশ বুক, গালে এখন খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখেই ঋতুপর্ণার ঊরু জোড়া টানটান হয়ে যায়। হাত দুটো মুঠো হয়ে বুকের উদ্দাম রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রনে রাখতে চেষ্টা করে। তলপেটের তলায় চিনচিন করে ওঠে, দেহ কান্ডে ঝঞ্ঝার পূর্বাভাস দেখা দেয়। সুগোল ঊরু জোড়া অজান্তেই পরস্পরের সাথে চেপে বসে। পায়ের মাঝের গোপন জায়গায় ঝিরিঝিরি বাসনার নির্যাস বইতে শুরু করে দেয়। নিচের ঠোঁট দাঁতের মাঝে চেপে আড় চোখে ছেলের উন্মুক্ত দেহের দিকে তাকিয়ে একবার পর্যবেক্ষণ করে নেয় ওর লোলুপ নয়ন। ধিকিধিকি করে জ্বলে ওঠা এই বুকের আগুন নেভানো বড় দায়। মাথাটা হঠাৎ করেই ঝিমঝিম করতে শুরু করে দেয়।
এই রকম মোটেই হওয়ার কথা নয় কিন্তু গত রাত থেকেই এই কামনার জ্বালা কেন বারেবারে ওর শরীর ওর মাথাকে দোলা দেয় তাঁর অর্থ খুঁজে পায় না। বিবেক বুদ্ধি, মায়া মমতা এক যুক্তি তক্ক দিয়ে ওকে বুঝাতে চেষ্টা করে অন্যদিকে বুকের রক্ত, আদিম কামনা, অতৃপ্ত ভালোবাসার তীব্র আকাঙ্খা সব মিলিয়ে যুক্তি তক্ক কে হারিয়ে দেয়। গত রাত থেকে এই অবস্থা। যত বার আদিকে দেখেছে ততবার ওর বুকের রক্ত অসভ্যের মতন ছলকে উঠেছে, বারেবারে হৃদয়ের সাগর পারে অব্যাক্ত অবৈধ কাম তৃষ্ণার ঢেউ আছড়ে পড়েছে।
চোখের সামনে যেন হঠাৎ করে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে, সেই সাথে ঝিমানি ভাবটাও বেশ করে চাগিয়ে উঠেছে। এই ধরনের ভীষণ কাম পিপাসা কি ওর আগেও ছিল? মাথার রগের শিরা টান টান করে ওঠে। চেয়ার ধরে নিজেকে সামলে দাঁড়িয়ে পড়ে। আদিম পিপাসা বারেবারে কেন ওর বুকে এই ভাবে উথাল পাথাল ঢেউ উঠায়, যখন ওর বুকে পুরুষের প্রতি অনীহা। কেন তবে বারেবারে এই দেহ তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে, একটু ছোঁয়া পেতে চায়।
ভাগ্য ভালো ছেলে ওর দিকে তাকায়নি, না হলে ধরা পড়ে যেত ওর কাম তপ্ত গালের রক্তিম আভা। ত্রস্ত পায়ে নিজের রুমে ঢুকে এক টানে গায়ের থেকে শাড়ি ব্লাউজ খুলে ফেলে। গত কাল থেকে একই পোশাক পরে রয়েছে, পোশাক দেখে নিজের প্রতি ঘেন্না লাগলো। শাড়ি খুলে ফেলার পরে একটু স্বস্তি পেল। যদিও বাইরে একটু ঠাণ্ডা কিন্তু বুকের ভেতরে অসহ্য গরম হয়তো অতৃপ্ত তৃষ্ণার ফলে এই প্রচন্ড উত্তাপের আবির্ভাব। আলমারি থেকে একটা তোয়ালে বের করে দুলকি চালে বাথরুমে ঢুকে পড়ে।
পরনের ব্রা প্যান্টি ঘামে ভিজে একসা হয়ে ত্বকের সাথে লেপটে গেছে। যোনির কাছের নরম প্যান্টির কাপড় ঘামে আর শরীরের সুপ্ত নির্যাসে ভিজে যোনির সাথে অসভ্যের মতন লেপ্টে গেছে। দুব্বো ঘাসের মতন গজানো থোকা থোকা যোনি কেশ সেই নির্যাসে ভিজে গেছে। পরনের শেষ অন্তর্বাস খুলে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরে।
ঠাণ্ডা শাওয়ারের জল শরীর মন ঠাণ্ডা করে। উঁচিয়ে থাকা স্তন জোড়া হাতের মুঠোর মধ্যে চেপে ধরে। বেলুনের মতন ফোলা দুই স্তন মথিত করে নিজের হাতের থাবার মধ্যে। উফফফ কি অসহ্য এই কামজ্বালা। গত রাত থেকেই এই কামজ্বালা ভীষণ ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারছে। উফফ, ইসস সারা শরীর জুড়ে ভীষণ জ্বালা। এক হাত নেমে আসে পায়ের মাঝে। সুগোল মসৃণ ঊরু জোড়া দুইপাশে মেলে ধরে হাতের জন্য জায়গা করে দেয়। দুব্বো ঘাসের মতন থোকা থোকা যোনি কেশ সরিয়ে মধ্যমা আর অনামিকা চেপে ধরে ভগাঙ্কুরের ওপরে। আহহহ, বড্ড সুখ, এই সময়ে যদি কেউ ওকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরত তাহলে বুকের রক্ত কিছুটা হয়তো ঠাণ্ডা হত। ওর চাই কম বয়সী এক সুপুরুষের বিশাল পেশি বিহুল শরীর, যার নিচে শুয়ে কাতরাতে কাতরাতে কামনার জ্বালা নিবারন করবে। সেই স্বপ্নের পুরুষের কথা ভাবতে ভাবতে পিচ্ছিল ভগাঙ্কুর ডলে আর মাঝে মাঝে দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয় সিক্ত পিচ্ছিল যোনি গুহার মধ্যে। পা দুটো অবশ হয়ে আসে ঋতুপর্ণার। চোখ বন্ধ করে একপাশে মাথা হেলিয়ে ধীরে ধীরে ভিজে বাথরুমের মেঝেতে বসে পড়ে। হাঁটু মুড়ে দুই পা দুইদিকে ছড়িয়ে দেয়। নরম আঙ্গুল জোড়া অজানা অচেনা কোন বিশাল দেহী পুরুষের লিঙ্গের পরিপূরক না হলেও বর্তমানে ওকে এই আঙ্গুল সঞ্চালন করেই রাগ মোচন করতে হবে। সারা শরীর জুড়ে ভীষণ কামনার জ্বালা কিলবিল করে। আসন্ন রাগ মোচনের পূর্ব মুহূর্তে শরীরের সব পেশি টানটান হয়ে ওঠে। উফফফ, কর কর, এক হাতের থাবার মাঝে এক স্তন খামচে ধরে অন্য হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে তীব্র গতিতে যোনি মধ্যে সঞ্চালন করে। কোমর উঁচিয়ে ওঠে ভিজে বাথরুমের মেঝে থেকে। দুই পাছার সুগোল দবানায় প্রচন্ড কাঁপুনি দেখা দেয়। থরথর করে কেঁপে ওঠে সারা শরীর। এতক্ষনের ঝিরিঝিরি নির্যাস ঝমঝম আষাঢ়ের বর্ষার মতন নেমে আসে ওর যোনি থেকে। ধরা পড়ে যাওয়ার লজ্জায় ঠোঁট দাঁতের মাঝে নিয়ে বুকের মধ্যে জমে থাকা ভীষণ কামনার শিৎকার দমন করে রাখে।
রাগমোচনের পরে উঠে দাঁড়ায় ঋতুপর্ণা। চেহারায় অনাবিল কাম পরিতৃপ্তের আলোকছটা, উফফফ জমানো ব্যাথা যেন খানিকের জন্য প্রশমিত হল। স্নান সেরে তাড়াতাড়ি তোয়ালেটা জড়িয়ে বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে। পর্দা ফাঁক করে একবার বসার ঘরের উঁকি মেরে দেখে নিল আদিকে। এখন চুপচাপ বসে টিভি দেখছে আর ঢুলছে। নরম গোলাপি ঠোঁটে মুচকি হাসি টেনে ছেলেকে জানিয়ে দিল তাড়াতাড়ি আসছে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে ভালো করে সাজবে তাই একটা ঢিলে প্যান্ট আর ঢিলে টিশার্ট পরে বেরিয়ে এলো নিজের রুম থেকে। ভেতরে কিছুই পরে নেই, চলতে ফিরতে বুকের ওপরে উঁচিয়ে থাকা সুগোল স্তন জোড়া দুলে দুলে উঠছে সেই সাথে সুগোল পাছা জোড়া ভীষণ ভাবে আন্দোলিত হয়। ভাগ্যিস টি শার্ট একটু ঢিলে না হলে ওর শক্ত হয়ে যাওয়া স্তনের বোঁটার আকার ঠিকরে সামনের দিকে বেরিয়ে আসত। প্যান্টটা ঢিলে হলে হবে কি, ওর দুই সুগোল বড় বড় পাছার ওপরে আঠার মতন লেপ্টে গেছে ঢিলে প্যান্টের পাতলা কাপড়।
ছেলেটা এখন ঢুলছে দেখে বড় মায়া হল ঋতুপর্ণার। আদির পেছনে এসে চুলে বিলি কেটে জিজ্ঞেস করলো, "কিরে, ঘুম পেয়েছে নাকি?"
মায়ের ঠাণ্ডা হাতের ছোঁয়া পেয়ে আদি পেছন ফিরে তাকাল। পেছনে দাঁড়িয়ে সদ্য স্নাত সুন্দরী মাতৃ ময়ী মূর্তি। মায়ের ঠাণ্ডা নরম হাত গালে চেপে ধরে বললে, "যেমন খিদে পেয়েছে, তেমন ঘুম পেয়েছে। তাড়াতাড়ি খেতে দাও।"
রান্না ঘরে ঢুকে প্রেসার কুকার খুলে দুটো প্লেটে ভাতে ডাল সিদ্ধ নিয়ে এসে খেতে বসে। খেতে বসে কলেজের কথা, ঋতুপর্ণার স্কুলের কথাবার্তা। ঋতুপর্ণার ইচ্ছে পরের দিন থেকেই স্কুল জয়েন করবে, কিন্তু আদি অনুরোধ করে, আরো কয়েকদিন যাক, মা একটু সুস্থ হয়ে উঠুক তারপরে না হয় স্কুল জয়েন করা যাবে। ঋতুপর্ণা জানিয়ে দেয়, যেহেতু ওর শরীর অনেকটা ভালো হয়ে গেছে সুতরাং স্কুল যেতে অসুবিধে হবে না। আসলে বাড়িতে একা একা বসে হয়তো ওর মাথার মধ্যে উল্টোপাল্টা চিন্তাধারা জেঁকে বসতে পারে, সেই আশঙ্কায় ঋতুপর্ণা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের জীবনে ফিরতে চায়। বিভিন্ন মানুষের সাথে আবার দেখা সাক্ষাত হবে, কথাবার্তা হবে মন ভালো থাকবে কাজের মধ্যে থাকবে তাতে হয়তো ওর এই ভীষণ কাম তৃষ্ণা একটু লাঘব পাবে।
আদিও তাড়াতাড়ি নিজের জীবনে ফিরতে চায়। তনিমা চলে যাওয়ার পরে সেই রকম ভাবে কারুর দিকে তাকায়নি। এর মধ্যে আবার তিস্তার সাথে বন্ধুত্বটা গভীর হয়ে গেছে। কলেজে না গেলে তিস্তার সাথে দেখা সাক্ষাত করা সম্ভব হবে না। যদিও তিস্তা আর মা সহকর্মীনি, কিন্তু তাও কেন জানে না তিস্তা ওর বেশি বন্ধু। অন্তত ওর দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, এমনকি বাড়িতে এসে মায়ের দেখাশুনা করার প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছিল। বর্তমানের এই লোভী জগতে এইভাবে পাশে এসে কেউ দাঁড়ায় না। মায়ের স্কুলের সবাই ওই হসপিটাল পর্যন্ত এসেছিল, ওর কলেজের বন্ধুদের কথা বাদ দেওয়া যায়, এমন কি কমল জেঠু জেঠিমা ছাড়া সোসাইটির কেউই সেইরকম ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। দেখা হলে শুধু মাত্র চুকচুক করে মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করা ছাড়া আর আক্ষেপ করা ছাড়া। খেতে খেতেই মনে মনে হেসে ফেলে, যদি তিস্তা ওর সমবয়সি হত তাহলে মায়ের কোন অভিযোগ থাকত না। একে মায়ের সহকরমিনি এবং ওর চেয়ে বয়সে বড়, মা জানে তিস্তার এক বয় ফ্রেন্ড আছে এই সব মিলিয়ে তিস্তার সাথে ওর সম্পর্ক ঠিক মেনে নিতে পারছে না। এর পরে না হয় লুকিয়ে চুরিয়েই তিস্তার কাছে যাবে।
খাওয়া শেষে আদি জানিয়ে দিল যে পাঁচটায় এপয়েনমেন্ট, ঋতুপর্ণাও মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দিল ঠিক সময়ে তৈরি হয়ে যাবে। আদি একটু খানি বিশ্রাম নেওয়ার জন্য নিজের ঘরে ঢুকে গেল। স্নান করে, খাওয়া দাওয়া সেরে শরীর পুরোটা ছেড়ে দিয়েছে এর পরে বিছানা ধরলে একেবারে মধ্য রাত্রে ঘুম ভাঙবে। তাও বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিল আদি, আর নরম বিছানায় পড়তেই চোখ বন্ধ হয়ে গেল।
স্নান করে খাওয়া দাওয়া সেরে ঋতুপর্ণা শরীরে যেন এক নতুন শক্তির উৎস খুঁজে পেল। অনেকদিন আলমারি খোলা হয়নি, বিকেলে কি পরে বের হওয়া যায়। আলমারি খুলে এক একটা শাড়ি বের করে দেখল, একটাও ঠিক পছন্দ হল না। পুজোর জন্য দুটো শাড়ি কিনেছিল সেই গুলো পুজোতেই পড়বে। কাপড় ঘাঁটতে ঘাঁটতে আদির পছন্দের সেই পাতলা স্বছ গোলাপি শাড়ি বের করলো। শাড়িটা হাতে নিতেই অনেক কিছু মনে পরে গেল ঋতুপর্ণার। ইসস কি শয়তান ছেলে, এক প্রকার জোর করেই এই শাড়িটা কিনিয়েছিল। দোকানি ভেবেছিল ওরা হয়তো প্রেমিক প্রেমিকা, ইসস কি লজ্জা কি লজ্জা। ফর্সা গালে রং লেগে গেল ঋতুপর্ণার। সেইদিন শাড়ির সাথে একটা টাইট জিন্স আর টপ কেনা হয়েছিল। তারপরে রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে প্রবল বৃষ্টিতে গাড়ির চাকা ফেটে যাওয়া। নির্জন নিরালা রাস্তায় ছেলের বাহু মাঝে আবদ্ধ হওয়া। গাড়ি থেকে বেরিয়েই একদম ভিজে গিয়েছিল। সেদিন বড্ড ভালো লেগেছিল ওইভাবে ছেলের আলিঙ্গন পাশে বদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। হৃদয়ের মরা গাঙ্গে জোয়ার এসেছিল ক্ষণিকের জন্য, বারেবারে মনে হয়েছিল ওকে জড়িয়ে যে পুরুষ সে ওর ছেলে নয়, ওর ভালোবাসার মানুষ। শাড়িটা হাতে নিয়ে বুকের কাছে চেপে ধরে থাকে অনেকক্ষণ। তারপরে মুচকি হেসে ফেলে, এই শাড়ি পরে ডাক্তারের কাছে যাওয়া চলে না, এই শাড়ি পরে কোন পার্টিতে যাওয়া চলে। শাড়িটা আবার গুছিয়ে রেখে একটা সুন্দর গোলাপি রঙের কামিজ বের করে নিল।
আয়নার সামনে বসে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল কিছুক্ষণ। অনেকদিন বিউটি পার্লার যাওয়া হয়নি, বগলে ছোট ছোট চুল জমেছে, দুই পায়ের গুলিতে ছোট ছোট লোম গজিয়ে গেছে, চাবুকের মতন ভুরু জোড়াতে অতিরিক্ত কিছু রোম গজিয়েছে। সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে না দেখলে যদিও কারুর চোখে এইসব পড়বে না কিন্তু তাও রূপ পরিচর্যার অভাবে ওর রূপের ডালি নিজের চোখে কিছুটা খর্ব।
মোবাইলে এলার্ম দেওয়া ছিল, তাই সাড়ে চারটে নাগাদ আদি উঠে পড়লো। পুরো ঘুম না হওয়াতে গা হাত পা ভীষণ ম্যাজ ম্যাজ করছে। যদি কেউ ওকে একটু ম্যাসাজ করে দিত তাহলে বড্ড ভালো হত। এই সময়ের জন্য সত্যি একটা বান্ধবী চাই, অন্তত তিস্তার কাছে গিয়ে ওকে বলা যায় না যে আমাকে ম্যাসাজ করে দাও। মাকে বলে দেখলে কেমন হয়, হয়তো মমতাময়ী মাতৃ রূপেই যদি একটু ম্যাসাজ করে দেয়। এই সব ভাবতে ভাবতেই মনে মনে হেসে ফেলে আদি। তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পরে নিজের ঘর ছেড়ে বাইরে চলে আসে। মায়ের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে একবার ওর চোখ বলে উঁকি মারতে, কিন্তু থেমে যায় আদি।
গলা খাঁকড়ে নিজের জানান দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "পাঁচটা প্রায় বাজতে চলল, তুমি কি তৈরি?"
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, "ও... তুই উঠে পড়েছিস। এই তো আমার প্রায় হয়ে গেছে, তুই গাড়ি বের কর।"
হি হি করে হেসে ফেলে আদি, "আরে মা, গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে একাকার। ওটা এখন পুলিস স্টেশানে আছে, ওইখান থেকে এখন আনা হয়নি।"
ঋতুপর্ণা হেসে উত্তর দেয়, "ইসস একদম ভুলেই গিয়েছিলাম। তুই একটু বস, আমার হয়ে গেছে।"
(#০৫)
কিছু পরে ঋতুপর্ণা রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো। মাকে দেখে আদির মাথা চুলকে বড় বড় চোখ করে নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। গায়ে গোলাপি রঙের চাপা কামিজ, মায়ের দেহের প্রতিটি আঁকি বুকির সাথে অতপ্রত ভাবে লেপটে। হাতা দুটো ছোট, মায়ের পেলব মসৃণ বাহু জোড়া সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। বুকের দিকে গভীর কাটা, ভারি নরম ফর্সা স্তনের খাঁজের বেশ খানিকটা দেখা যাচ্ছে। আঁটো কামিজের ফলে স্তন জোড়া সামনের দিকে ঠিকরে উঁচিয়ে রয়েছে। ওড়না খানি কাঁধের একপাশে ঝুলিয়ে রেখেছে। ঘন কালো চুল একটা লম্বা বেনুনি করা, পিঠের ওপরে সাপের মতন দুলছে। ঠোঁটে গোলাপি রঙ, চোখের কোলে কাজল রেখা, দুই চাবুকের মতন ভুরু জরার মাঝে ছোট লাল টিপ। সব মিলিয়ে মাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন মর্তধামে স্বর্গের কোন নর্তকী নেমে এসেছে। গোলাপি কামিজের সাথে মিলিয়ে একটা সাদা লেগিন্স পড়েছে। লেগিন্স দেখে মনে হল মায়ের কোমরের নিচ থেকে রঙ করা, পায়ের গুলি, সুগোল মোটা মোটা ঊরু জোড়া ভারি নিতম্ব সবকিছু যেন ওর চোখের সামনে উন্মুক্ত।
বেশ খানিকক্ষণ মায়ের দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে দেখে আদি মস্করা করে জিজ্ঞেস করে, "কি হলো, কোন পার্টিতে যাচ্ছ নাকি?"
ছেলের চোখের আগুনে দৃষ্টি দেখে ঋতুপর্ণার বুকের রক্তে দোলা দেয়। ছেলের চোখের দিকে কিছুতেই তাকাতে পারছে না, যেন ওই জোড়া চোখের আগুন ওকে ঝলসে দিচ্ছে। চোখের পাতা নামিয়ে ছেলের কাছে এসে পেটের ওপরে ছোট্ট ঘুসি মেরে বলে, "তুই ওই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু আমি আর তোর সাথে কোথাও বের হব না।"
মায়ের গালের রক্তিমাভা দেখে আদি মায়ের কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে নিল, "ইসস, লাজুক লাজবতি লতা আমার!"
উফফফ, ছেলেরা কি সত্যি এইভাবে মায়েদের সাথে কথা বলে নাকি। গলে পড়তে ইচ্ছে করছে ঋতুপর্ণার। নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে আদির বুকের পেশিতে চিমটি কেটে মিহি কণ্ঠে বলে, "কোন দুষ্টুমি না করে ডাক্তারের কাছে চল।"
বুকে চিমটির মিষ্টি আদর খেয়েই আদির রক্তে আগুন লেগে যায়, "দেখলে তো, আমি কিছু না করতেই আগে থেকে দুষ্টুমি করতে বারন করে দিলে।" মায়ের কানের কাছে মুখ নামিয়ে মাকে উত্যক্ত করে ফিস ফিস করে বলে, "ইচ্ছে নাকি একটু দুষ্টুমি করার...."
ঋতুপর্ণার সারা চেহারা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ইসস, কি বলতে কি বলে ফেলল। হ্যাঁ এটা সত্যি, ওর বুকের এক গহীন কোণে সুপ্ত ইচ্ছে ছিল যে ছেলে ওর এই মোহ ময়ী রূপ দেখে একটু দুষ্টুমি করুক। শরীর বেয়ে সিক্ত ধারা বয়ে গেল। দরজার দিকে পা বাড়িয়ে কোনরকমে ছেলেকে বললো, "তুই না.... যা, এর পরে আমি আর কিন্তু তোর সাথে কোথাও বের হব না। দিনে দিনে বড্ড অসভ্য হয়ে যাচ্ছিস কিন্তু।"
মায়ের হাত ধরে আদুরে গলায় বলে, "আচ্ছা বাবা আচ্ছা। কিন্তু সত্যি বলছি আজকে তোমার পুরানো রূপ দেখে পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।"
নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে ছেলের দিকে কাজল কালো আয়ত চোখ মেলে তাকায়। ওর বাম হাতখানি ছেলের হাতের মুঠোতে, একটু যদি টান মারে তাহলে অনায়াসে ঝাঁপিয়ে পড়ে লুকিয়ে যাবে ওই প্রশস্ত বুকের মধ্য। হোক না ছেলে তাই বলে ওই চওড়া লোমশ বুকের মাঝে নিজের নিরাপত্তা আর ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে। লাজবতী লতার মতন কুঁকড়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ঋতুপর্ণার সারা শরীর, এইভাবে বেশিক্ষণ যদি ছেলে ওর হাত খানি শক্ত করে ধরে থাকে তাহলে যেকোনো মুহূর্তে মধুর মতন গলে যাবে।
কবজি একটু মোচড় দিয়ে সিক্ত কম্পিত গলায় ছেলেকে বলে, "এই বাবা প্লিজ সোনা আমার, হাত ছাড়, দেরি হয়ে যাবে। সময়ে না পৌঁছালে...."
আদির হাতের মুঠোতে মায়ের নরম হাত গলতে শুরু করে দেয়। একবারের জন্য ইচ্ছে হল টগবগে অথচ লাজুক কোমল মাকে টেনে নিজের চওড়া বুকের ওপরে আছড়ে ফেলে, চটকে ধরে আদর করে দেয় সুকোমল রমণীয় দেহ। কিন্তু এই ঘন আদরে যদি হিতে বিপরীত হয়ে নিজের প্যান্ট ভিজে যায়। ইসস, না না। একটু মোচড় দিয়ে মাকে দুষ্টুমি করে উত্যক্ত করে হাত ছেড়ে দেয়।
ছোট ত্রস্ত পায়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে পরে ঋতুপর্ণা, সিক্ত মননা চঞ্চল বুকের রক্ত ভাবে এইবারে ছেলে আর দুষ্টুমি করতে পারবে না। চোখের ভাষায় অদৃশ্য প্রেমের চুম্বকীয় টান। নিচের ঠোঁট দাঁতের মাঝে কেটে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখে মুখে এমন ভাব, এইবারে কি করবি দেখি।
"কেমন আছেন বৌদি" সামনের ফ্লাটের পার্থ ঋতুপর্ণাকে দেখে জিজ্ঞেস করে।
বুকে এমন ভাবে হিল্লোল দেখা দিয়েছিল যে একটু হলেই হাঁপিয়ে যাচ্ছিল। ভিন্ন একজনের গলার স্বর শুনে আশস্ত হয়ে উত্তর দেয়, "ভালো আছি, তোমরা কেমন আছো?"
পার্থ ঋতুপর্ণাকে আপাদমস্তক জরিপ করে দেখে একটা ঢোঁক গিলে বলে, "বড় চিন্তায় ছিলাম আপনার এই অবস্থা শুনে। যাক ভালো হল আপনি ফিরে এসেছেন।"
দুই পা ঋতুপর্ণার দিকে এগিয়ে আসতেই আদি মায়ের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। আদিকে ঋতুপর্ণার পেছনে দাঁড়াতে দেখে পার্থ দুই পা আবার পিছিয়ে যায়। একটু হেসে বলে, "কোথাও যাচ্ছেন নাকি?"
আদি মুচকি হেসে গম্ভীর গলায় উত্তর দেয়, "এই একটু বাইরে যাচ্ছি। তোমার অফিস ঠিকঠাক?"
এই সব লোক হল বসন্তের কোকিল। সামনের ফ্লাটে থাকে কিন্তু এতদিন একবারের জন্যেও খোঁজ খবর নিতে আসেনি। যদি কোনোদিন সকালে অথবা বিকেলে দেখা হয়ে যেত তখন ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করতো ওর মায়ের ব্যাপারে।
পার্থ আদির চোখ দেখে বেশি কিছু বলার সাহস পেল না। ঋতুপর্ণার পেছন পেছন আদি বেরিয়ে এলো। ট্যাক্সিতে ওঠার আগে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে নিল, বৃষ্টি হবে না তো। না, আকাশে শরতের পেঁজা পেঁজা তুলোর মতন ভাসমান মেঘের ভেলা। ঋতুপর্ণার বুকের কোন এক গহীন কোণ হয়তো চাইছিল আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা হোক। এমনিতেই কামিজটা দেহের পরতে পরতে আঠার মতন লেগে রয়েছে, লেগিন্সটাও ভীষণ অসভ্যের মতন কোমরের নিচের প্রতিটি অঙ্গে প্রত্যঙ্গের সাথে লেপটে। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে সেই দিনের মতন অবস্থায় পড়তে হবে।
ট্যাক্সিতে দুইজনে একটু তফাতে চুপচাপ বসে। আদি বারেবারে আড় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে, অন্য পাশে ঋতুপর্ণা একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু বাম হাত পড়ে থাকে সিটের ওপরে। মনটা ককিয়ে উঠছিল যাতে ছেলে একটুর জন্য ওর হাতের ওপরে নিজের হাত রাখে। মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতা বড় নিষ্ঠুর বলে মনে হয়। একটু কথা বলতে কি হয়েছে। ছেলের দিকে না তাকিয়েও ঋতুপর্ণা বেশ বুঝতে পারে যে ছেলের চোখ বারেবারে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে। বুকের মাঝে হাসির দমকা হাওয়া বারেবারে উথালি পাথালি করে নাড়া দেয়, কিন্তু দাঁতের মাঝে কড়ে আঙ্গুল কেটে সেই দমকা হাসিটাকে বদ্ধ করে রাখে।
গাড়ির গোঁ গোঁ শব্দ ছাড়া কিছুই কানে যায় না। বেশিক্ষণ এই ভাবে চুপচাপ থাকতে পারল না আদি, "কাল থেকে কি স্কুল জয়েন করতে চাও।"
হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ঋতুপর্ণার বুক। ছেলের গলা শুনে ছলাত করে নেচে উঠল বুকের রক্ত, "জানিনা দেখি, তুই কি বলিস। কাল থেকে জয়েন করব না আরো কিছু দিন রেস্ট নেবো।"
আদি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে উত্তর দেয়, "দেখো আগে ডাক্তারে কি বলে, তারপরে ডিসিশান নেওয়া যাবে।"
ঋতুপর্ণা একটু চুপ করে আদিকে বলে, "আচ্ছা একটা কথা আমাকে সত্যি করে বলবি?" আদি মাথা দোলায়, ঋতুপর্ণা জিজ্ঞেস করে, "তোর পাপা কত টাকা দিয়েছে?"
আদি জানে এর উত্তর শুনলে মা আবার রেগ যাবে তাই মায়ের কাছে সরে এসে আদুরে গলায় বলে, "আরে মা ওই নিয়ে এত টেনশান নিচ্ছ কেন। ছাড়ো না পাপা কি করেছে না করেছে।" মায়ের কোমল হাতের ওপরে হাত রেখে চাপ দিয়ে আসস্থ করে বলে, "তুমি না হয় পাপার টাকা ফেরত দিয়ে দিও হয়েছে।"
বুকের গভীর থেকে এক ক্রন্দন যেন এই ঠিকরে বেরিয়ে আসবে। ছেলের মানসিকতা বোঝার জন্য ঋতুপর্ণা ভুরু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, "রিসেন্টলি তোর পাপার সাথে খুব মিল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।"
মায়ের ছলছল চোখ দেখে আদি বুঝতে পারে যে এই টাকা নেওয়াটা মা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। পারতপক্ষে মা চায় না আদি ওর পাপার সাথে বেশি সম্পর্ক রাখুক কিন্তু আদি জানে, মায়ের অত ক্ষমতা নেই ওকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়ে বাকি সব কিছুর খরচা বহন করবে। ওর মা পারলে আচলের তলায় লুকিয়ে রাখে আদিকে, যদি মায়ের ক্ষমতা থাকত তাহলে হয়তো এই বাড়িটাও নিত না পাপার কাছ থেকে।
ট্যাক্সিতে বসে ছিল বলে বেশি কিছু বললো না আদি, শুধু মৃদু ধমকের সুরে মাকে শান্ত করে বলে, "আরে মা প্লিজ ওই সব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে দূর করে দাও। ওই একটা কথা নিয়ে কেন যে গত কাল থেকে পরে রয়েছ বুঝতে পারছি না। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কথা উঠালে কিন্তু একদম ভালো হবে না।"
ছেলের এই প্রভুত্ব ফলানো দেখে ঋতুপর্ণা একটু থমকে গিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে, "যখন থেকে জানতে পেরেছি যে আমার চিকিৎসার টাকা সুভাষ দিয়েছে তখন থেকে আমার গা হাত পা জ্বলছে। তুই কি করে বুঝবি ও আমার জীবনে...."
কথা শেষ করতে পারল না ঠিক ভাবে, তার আগেই একজোড়া অজানা হাত যেন ওর বুক চেপে ধরল।
মায়ের কষ্ট সব কিছুই বোঝে আদি। বাবার কাছ থেকে সব শুনেছে। বাবার প্রতি ঘৃণা যে হয়নি সেটা নয়, তবে এই দুর্দিনে বাবা মুম্বাই থেকে দৌড়ে এসেছিল। হয়তো পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছিল। কিন্তু মায়ের চোখের বাঁধ ভাঙ্গা জল দেখে আদি বুঝে যায় বাবার প্রতারণা মায়ের বুকে কত ভীষণ ভাবে বেজে উঠেছে। ট্যাক্সি না হলে মাকে জড়িয়ে ধরে নিজের মধ্যে লুকিয়ে নিত।
আদি মায়ের পাশ ঘেঁষে বসে, কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে স্বান্তনা দিয়ে বলে, "ছাড়ো অইসব কথা। এই দেখো না, তুমি আবার ফিরে এসেছ, আমি তোমার পাশে বসে আছি।"
হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখের কোল মুছে ছেলের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "তুই সত্যি পাগল ছেলে, না হলে কেউ এই ভাবে রাতের পর রাত মাথার কাছে জেগে বসে থাকে।"
আদি মায়ের নরম হাত নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে বুকের কাছে টেনে চেপে ধরে বলে, "তুমি ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই মা।"
ছেলের বুকের ধুকপুকানি হাতের তালুর ওপরে ভীষণ ভাবে অনুভব করে। নিজের বুকটা যেকোনো মুহূর্তে ফেটে পড়বে। একবার মনে হয় ছেলেকে জড়িয়ে ধরে, ভালোবাসা মায়া মমতা স্নেহ দিয়ে ভরিয়ে তোলে একমাত্র পুত্রের জীবন। হসপিটাল আসা পর্যন্ত মা আর ছেলে পাশাপাশি ঘন হয়ে চুপচাপ বসে রয়। এইবারের নিস্তব্ধতা ওদের বুকে মধুর সুর নিয়ে বেজে ওঠে, যেন বহুকাল পরে এক মা তাঁর ছেলেকে ফিরে পেয়েছে আর আদির মনে হয় সব শান্তি, সকল নিরাপত্তা, স্নেহের শিতল ছায়া সবকিছু এই মায়ের আঁচলের তলায়।
ডক্টর তৃষার চেম্বারে পা রাখতেই ডক্টর হেসে জিজ্ঞেস করেন, "কেমন আছেন মিসেস সান্যাল? দেখে বেশ ভালো মনে হচ্ছে।"
আদি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে, ডক্টর তৃষা ঋতুপর্ণাকে পাশে রাখা একটা বড় ডিভানে আরাম করে বসতে বলে। ডক্টরের প্রশ্নের উত্তরে, আদি সবিস্তারে গত কালের ঘটনা জানায়। ওর মা কিভাবে ছোট্ট আদির খোঁজে পাগলিনীর মতন একা একা দার্জিলিং চলে গিয়েছিল, তারপরে আদি দার্জিলিং যায় মায়ের খোঁজে। রাতের বেলা মায়ের স্মৃতি ফিরে আসে।
সব শুনে ডক্টর তৃষা ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তাহলে এখন কেমন ফিল করছেন?"
ঋতুপর্ণা মাথা দুলিয়ে উত্তর দিল, "এখন শারীরিক দিক থেকে ঠিক আছি কিন্তু কিছু অন্য প্রবলেম আছে।" বলে আদির দিকে তাকাল। "মানে গত কাল রাত থেকে মাঝে মাঝেই মাথাটা হঠাৎ করে ঝিম ঝিম করছে, আর বুকের মাঝে ভীষণ ভাবে ধড়ফড় করে ওঠে সেই সময়ে।"
তৃষা একটু খানি চিন্তামগ্ন হয়ে উত্তর দেয়, "এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এতদিন যে মেডিসিন গুলো দিয়েছিলাম সেই গুলো বেশ হাই ডোজের ছিল, এইবারে ডোজ কমিয়ে দেব আশা করি মাথার ঝিম ঝিমানি বুকের ধড়ফড়ানি কমে যাবে।"
ঋতুপর্ণা নিচু গলায় বলে, "আপনার সাথে একান্তে কিছু কথা ছিল।" এই বলে আদির দিকে তাকায়।
আদি বুঝতে পারে যে এইবারে তৃষা আর মাকে একা ছেড়ে দিতে হবে। সামনে বসা রমণী যতই হোক ওর মা, অনেক কিছু আলোচনা মায়েরা ছেলের সামনে করতে পারে না। এই ভেবে আদি মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বাইরে চলে গেল।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment