আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
কিছুদিন পরে মানসী আর ভাস্কর স্বপনের বাড়ি যায়। কিছুক্ষন গল্প করে। মাসীর বাড়ির কথা বলে। স্বপন আর নীহারিকা দুজনেই খুব খুশী হয়।
মানসী – স্বপন আমি অনেকদিন একটা কথা শুনে এসেছি
স্বপন – কি ?
মানসী – অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়
স্বপন – তাতে কি হল
মানসী – আমি এতদিন ভাবতাম আমিও অভাগা আর যেদিকেই যাই না কেন, কোন সমাধান পাই না।
নীহারিকা – স্বপন কে তো অনেকদিন আগেই পেয়েছ।
মানসী - আর স্বপন তো আমার মরুদ্যান। বাকি সব দিকে ধু ধু বালি দেখে এসেছি।
স্বপন – আজ কি আলাদা দেখলে ?
মানসী – আজ দেখছি ওই কথাটা ঠিক নয়। কোন না কোন দিকে জল ঠিক পাওয়া যায়।
স্বপন – আসলে কি জানো এতদিন তুমি আর ভাস্কর মরুভুমির মাঝে দাঁড়িয়ে সমুদ্র খুঁজেছ। তাই শুধু দু একটা মরুদ্যান খুঁজে পেয়েছ। জল পেতে হলে তোমাকে মরুভুমির থেকে বাইরে আসতে হবে সেটা তোমরা ঠিক বোঝো নি।
ভাস্কর – তবে আজ কি করে আমরা মরুভুমি থেকে বেরিয়ে আসলাম !
স্বপন – তোমরা দুজনেই একটা অদৃশ্য লক্ষন রেখার মাঝে আটকে ছিলে। আজ দুজনেই সেই গণ্ডি অগ্রাহ্য করে বেরিয়ে এসেছ। ইংরাজিতে একটা কথা আছে – You have to come out of the box. তোমরা এতদিন সেই বাক্সের ভেতরে বসে জীবন খুঁজেছ।
মানসী – তবে কি আমরা কোন সময়েই কোন গণ্ডির মধ্যে থাকবো না ?
স্বপন – দেখো নিষেধের সীমারেখা বা শৃঙ্খলার নিয়ম আর virtual বা কাল্পনিক লক্ষন রেখা একটা ভিত্তিহীন বাধা। যে সীতার মত অবলা নারী – তার পক্ষে সেই গণ্ডি পার হওয়া সম্ভব নয় বা উচিতও নয়। কিন্তু তুমি তো সেই আগেকার দিনের ‘অবলা নারী’ নও।
নীহারিকা – কিন্তু বাড়ির লোক আমাদের সেই ভাবেই দেখতে চায়।
স্বপন – আমাদের সেই বাধা শুরুতেই ভেঙ্গে দিতে হবে
ভাস্কর – এখন কি করবো আমরা ?
স্বপন – মান্না দের সেই গানটা মনে করো – “তুমি আর আমি আর আমাদের সন্তান, এই আমাদের পৃথিবী, তুমি সুর আমি কথা, মিলে মিসে হয় গান, এই আমাদের পৃথিবী।”
মানসী – মনে করলাম, তারপর ?
স্বপন – এবার তোমাদের পৃথিবী বানাতে লেগে পড়ো।
মানসী – তুমি আর আমি না হয় হল, সন্তান কোথায় পাবো ?
স্বপন – তোমরা তোমাদের পৃথিবী বানাও, আমি সন্তানের ব্যবস্থা করে দেবো ।
নীহারিকা – কি করে করবে ?
স্বপন – তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। সময় হলে ঠিক জানতে পারবে।
নীহারিকা – আমার বাবা মাঝে মাঝে তোমায় ভীষণ ভয় করে।
ওরা চারজনে মিলে অনেকক্ষণ আলোচনা করে। প্রথমেই বিয়ের তারিখ ঠিক করে।
মানসী – আমার বিয়ের তারিখ আমি ঠিক করবো !!??
স্বপন – তবে কে ঠিক করবে
মানসী – একবার দাদার সাথে কথা বলবো না ?
নীহারিকা –এই মেয়েটা সত্যি কোনদিন মানুষ হবে না !
স্বপন – তোমার দাদা তোমার বিয়ে দিতে চায় ?
মানসী – মনে হয় না
স্বপন – তোমার দাদা ভাস্কর কে পছন্দ করে ?
মানসী – একদম না
স্বপন – তোমার দাদাকে ভাস্করের সাথে বিয়ের কথা বললে দাদা রাজী হবে ?
মানসী – মনে হয় না
স্বপন – তবে নিজের রাস্তা নিজে বানাও। অন্যের বানানো রাস্তায় হাঁটার স্বপ্ন দেখো না।
ওদের বিয়ের তারিখ ঠিক হয় ২০১২ সালের ২২-শে এপ্রিল, রবিবার। আর দেড় মাস মত বাকি।
মানসী – কাকে কাকে নিমন্ত্রণ করতে হবে ?
স্বপন – একদম কাছের মানুষদের
মানসী – আর প্যান্ডেল ?
স্বপন – তুমি কি প্যান্ডেল করবে ?
মানসী – প্যান্ডেল ছাড়া বিয়ে কোথায় করবো ?
নীহারিকা – আমার বোনের যে ভাবে বিয়ে হয়েছে, ঠিক সেই ভাবে।
অপ্রাসঙ্গিক হলেও এখানে বলে রাখি স্বপন নীহারিকার বোনের বিয়ে একজন বাঙালি খ্রিস্টান ছেলের সাথে দিয়েছে। আর ওর বিয়ে রেজিস্ট্রি করে একটা হোটেলে হয়েছিল। স্বপন সেই রেজিস্ট্রার কে চিনতো, তাই ও বলে বিয়ের সব ব্যবস্থা ওই করবে।
মানসী – জানো আমার স্বপ্ন ছিল সুন্দর প্যান্ডেল করে, অনেক আলো জ্বালিয়ে, কয়েকশো লোকের মাঝে আমি হালকা লাল বেনারসি পরে ছাদনা তলায় বিয়ে করবো।
স্বপন শুনে একটু চুপ করে থাকে। তারপর মানসীর হাত দুটো নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে কেঁদে ফেলে।
নীহারিকা – কি হল কাঁদছ কেন ?
স্বপন – আমি আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধুর এই স্বপ্ন পুরন করতে পারবো না।
ভাস্কর হতভম্ব হয়ে যায়। মানসীও একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে। একটু সামলিয়ে নিয়ে ও স্বপনের হাত ছাড়িয়ে ওর মাথায় হাত রাখে।
মানসী – তুমি আমার বিয়ে দিচ্ছ এই অনেক বেশী। যে ভাবে সম্ভব সেই ভাবেই বিয়ে দাও। আমি তাতেই খুশী থাকবো। তুমি ছাড়া বাকি সবাই সহানুভুতি জানায়, কেউ এগিয়ে আসে না।
স্বপন – তবু আমি তোমার স্বপ্নের কথা মনে রাখবো।
ভাস্কর – আমি আমার মাকে জানিয়ে দিয়েছি আমার বিয়ের কথা।
মানসী – তাই ! শুনে মা কি বললেন ?
ভাস্কর – মা খুশিই হল। বলল যে উনি তো বিয়ে দিতে পারেন নি। তাই আমি যাকে পছন্দ করে বিয়ে করবো তাতে কোন আপত্তি নেই।
স্বপন – খুব ভাল কথা
ভাস্কর – মায়ের শুধু একটা ইচ্ছে আছে
মানসী – কি ?
ভাস্কর – আমরা যেন বিয়ে করে একবার বাড়ি যাই, মা তোমাকে বরন করবে। তারপর আমরা আমাদের যেখানে ভাল লাগে সেখানে গিয়ে থাকবো।
স্বপন – আমার মনে হয় মানসী বিয়ের পরে তিন রাত্রি তোমার বাড়ি থাকবে। তুমি মাকে বলে রাখবে সেই তিনদিন যেন তোমার সেই ভুদেব কাকু না আসেন।
ভাস্কর – সেটা খুব ভাল। আমি মা কে বলে দেখবো।
তারপর ঠিক হয় ভাস্কর ওর বাড়ি থেকে খাট আর টেবিল চেয়ার নিয়ে আসতে পারবে। বাকি জিনিস পত্র মানসী কিনবে। আর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সব রেডি করে ফেলবে।
এর মধ্যে ভাস্কর খবর নিয়ে জেনেছে মাসীর চায়ের দোকানও মাসীদের কেনা জায়গায় বানানো। মানসী বলে বিয়ের পরে ওখানে একটা ছোট হোটেল চালু করা যায়। স্বপন বলে সেটা করতে গেলে অনেক কিছু লিগ্যাল কাজ করতে হবে। বিয়ের পরে ধীরে সুস্থে বসে সেসব প্ল্যান করা যাবে।
সেই রাতে ভাস্কর নিজের বাড়ি ফিরে যায়। মানসী স্বপনদের বাড়িতেই থেকে যায়। রাত্রে স্বপনের পাশে ঘুমায়।
স্বপন – আজকের পরে তোমার আর আমার সাথে ঘুমানো ঠিক হবে না
মানসী – কেন ?
স্বপন – ভাস্কর এটাকে ভাল ভাবে নাও নিতে পারে।
মানসী – ভাস্কর তোমার আর আমার সম্পর্ক ভাল ভাবেই জানে। আমি যে তোমাকে চুমু খাই সেটাও জানে।
নীহারিকা – ভাস্কর রাগ করে না
মানসী – তুই কি রাগ করিস ?
নীহারিকা – আমি তো স্বপন আর তোকে জানি। আর আমাদের মধ্যে সেক্স তো খোলামেলা।
মানসী – ভাস্কর আর আমার মধ্যে সেক্স নিয়ে কোন কথা হয় নি। কিন্তু ও আমার আর স্বপনের বন্ধুত্ব বেশ ভাল করেই বোঝে।
নীহারিকা – এতদিনে তুই ভাস্করের সাথে কোন সেক্স করিসনি ?
মানসী – আমরা শুধু চুমু খাই।
নীহারিকা – আর ?
মানসী – আর হাত ধরে বসে কথা বলি
নীহারিকা – ভাস্করের নুনু দেখেছিস ?
মানসী – ছি, না না ওইসব করিনি
নীহারিকা – কেন ?
মানসী – আমরা এখনও একে অন্যের শরীর দেখিনি
নীহারিকা – কেন ?
মানসী – আমরা যা দেখার বা করার সব বিয়ের পরে করবো।
স্বপন – খুব ভাল।
এরপর ওরা একসাথে ঘুমিয়ে পড়ে।
এর পরের মাস মানসী, ভাস্কর আর স্বপনের বেশ ব্যস্ততার মধ্যে কেটে যায়। ভাস্কর মাসীর বাড়ি পুরো পরিস্কার করে। আস্তে আস্তে ওর ঘরের যেটুকু ফার্নিচার আনতে পারে নিয়ে আসে। বাকি দু একটা জিনিস মানসীকে কিনতে হয়।
স্বপনের অফিসের অনেক পার্টি বা মিটিং হোটেল কেনিলওয়ারথ – এ হত। সেই জন্যে ওর ওই হোটেলে বেশ জানাশোনা হয়ে গিয়েছিল। স্বপন মানসী আর ভাস্করের বিয়ের আয়োজন ওই হোটেলেই অবিশ্বাস্য রকমের কম খরচে করে। অভিনব বিয়ের কার্ড বানানো হয়। হাতে লেখা কার্ড, তাতে লেখা,
আমরা দুজন আগামী ২২-শে এপ্রিল, রবিবার বিয়ে করছি। সেদিন সন্ধ্যেবেলা হোটেল কেনিলওয়ারথ – এ আমাদের বিয়ের সাক্ষী হিসাবে আসতে অনুরোধ করছি।
ইতি – ভাস্কর ও মানসী।
সব শুদ্ধ আমন্ত্রিতের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ জন। মানসী ওর বন্ধুর মধ্যে শুধু কস্তূরীকে বলে। ভাস্কর ওর কোন আত্মিয়দের বলে না। শুধু দুজন বন্ধু, ভূষণ বাবু আর ওই দোকানের বাকি কর্মচারীদের বলে। মানসী বিয়ের কার্ড নিয়ে প্রথম যায় শ্রদ্ধা জামাইবাবুর কাছে।
শ্রদ্ধা – এ কি করেছ তুমি !
মানসী – কেন জামাইবাবু ?
শ্রদ্ধা – নিজের বিয়ের কার্ড নিজে লিখেছ ?
মানসী – সব কিছুই তো আমরা দুজনেই করছি
শ্রদ্ধা – বড়দা কিছু করছে না ?
মানসী – দাদা এখনও জানেই না যে আমার বিয়ে
শ্রদ্ধা – কে কে জানে ?
মানসী – স্বপন, নেহা আর দীপ্তি জানে।
শ্রদ্ধা - কেনিলওয়ারথ তো বেশ দামী হোটেল !
মানসী – আমি জানি না, সেসব স্বপন ব্যবস্থা করেছে
শ্রদ্ধা – তোমার সাহস আছে বলতে হবে, বড়দাকে না জানিয়ে সব করছ।
মানসী – দাদা তো এতো বছরে আমার বিয়ে দিল না, তাই নিজে নিজেই সব করতে হচ্ছে।
শ্রদ্ধা – আমার আশীর্বাদ আর শুভেচ্ছা সব সময় তোমার জন্যে আছে।
তারপর কার্ড সৃজা আর মানস কে দেয়। সব শুনে সৃজা খুব খুশী। দীপ্তি আর লেখাকে কার্ড দিলে ওরা দুজনেই বলে যে ওরা কি পর যে কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করছে।
মানসী – আমার বিয়ে তো আমি নিজে করছি, দাদারা তো দিচ্ছে না, তাই।
দীপ্তি - লেখা দিদি জানে না কিন্তু আমি তো তোমার সাথেই আছি
লেখা – তুই জানতিস
দীপ্তি – আমি গত দু বছর ধরে জানি। ওর ঘরের সব ফার্নিচার আমার সাথেই কিনেছে
লেখা – তোমার আবার আলাদা ঘর হচ্ছে নাকি ?
মানসী – সব জানাবো সময় হলে।
লেখা – হ্যাঁ বুঝেছি, এই মুখপুড়িটাই তোমার আপন আর আমি তোমার পর।
মানসী – না বৌদি তা নয়। আসলে তুমি ঘরের কাজে থাকো, দীপ্তি আমার সাথে পার্লারে থাকে, তাই ওকে নিয়েই সব কিছু করেছি।
লেখা – কিন্তু আমি কার্ড নেবো না। তুমি যখন বড়দাকে কার্ড দেবে তখন বাকি দুই ভাইকেও দিও।
ভাস্কর যায় স্বপন কে কার্ড দিতে।
ভাস্কর – দাদা, আপনিই সব কিছুর হোতা, তাও আপনাকেই নিমন্ত্রণ করছি।
স্বপন – আমি তোমাদের একটু গাইড করছি শুধু, সব কিছু তো তোমরাই করছ
এরপর মানসী গিয়ে ওর মাকে সব জানায়।
মা – তুই দাদাকে বলিস নি ?
মানসী – দাদা তো ওকে পছন্দই করে না
মা – দাদা যাকে পছন্দ করে না তাকে বিয়ে করার কি দরকার !
মানসী – মা দাদাকি আমার বিয়ে দেবে
মা – সে ঠিক, তুই যা ভাল বুঝিস কর। স্বপন জানে ?
মানসী – স্বপনই তো প্রথম থেকে আছে আমার সাথে
মা – স্বপন সাথে থাকলে কোন চিন্তা নেই। তুই ভাল থাকবি তো ?
মানসী – সেই আশাই তো করছি।
মা – আমার আশীর্বাদ থাকলো, তুই ঠিক সুখী হবি।
মানসী – মা আমি এখনই খুব সুখী।
বিয়ের আগের রবিবার মানে ১৫-ই এপ্রিল সকালে সবাই একসাথে বসলে মানসী গিয়ে বড়দাকে কার্ড দেয়। দীপ্তি আর লেখা ভয়ে ভেতরে আসে না, দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে দেখে। দীপ্তি ফিসফিস করে লেখাকে বলে, “এতদিনে রাঙ্গাদির সাহস হয়েছে”।
বড়দা – কিসের কার্ড !
মানসী – আমার আর ভাস্করের বিয়ের
বড়দা – তুমি বিয়ে করবে ?
মানসী - হ্যাঁ
বড়দা – অনেক বড় হয়ে গেছ তো !
মানসী – দাদা আমার বয়েস ৪৯ হচ্ছে, আর সেটা মনে হয় নিজে সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে যথেষ্ট।
বড়দা – কিন্তু ভাস্কর ছাড়া আর কাউকে পেলে না ! আর সব ঠিক করার আগে আমার বা মায়ের অনুমতি নেবার দরকার মনে করলে না !
মানসী – আমি নিজে বিয়ে করছি, তাই তোমার অনুমতি নেবার দরকার আছে বলে মনে করিনি
বড়দা – এরপর কিছু হলে আমি কিছু জানিনা।
ব্রততী – রাঙ্গাদিদি তো তোমাকে কিছু জানতে বলে নি
বড়দা – তুমি এর মধ্যে কেন কথা বলছ ?
ব্রততী – তোমার বোন, আমারও কিছু হয়। আমিও রাঙ্গাদিদিকে ভালবাসি।
বড়দা – এই রকম একটা অপদার্থ ছেলেকে বিয়ে করবে, সেটাকে সাপোর্ট করছ। এই তোমার ভালবাসা ?
ব্রততী – তোমার বোঝার কোন দরকার নেই আমার ভালবাসা কিরকম সেটা জানার
বড়দা – কিন্তু এই বিয়েতে আমার মত নেই
মানসী – দাদা আমি তোমার মত জানতে চাইনি, শুধু বিয়েতে এসে আশীর্বাদ করতে বলছি
বড়দা – আমার মত নেই, তাই আসবোও না আর আশীর্বাদ দেবার কোন প্রশ্নই নেই।
মানসী – কিন্তু সামনের রবিবার আমরা বিয়ে করছি।
বড়দা – আমি এই বিয়ে হতে দেবো না
মানসীর বাকি দুই ভাই কিছুই বলে না। বড়দা ওদের জিজ্ঞাসা করে ওদের মত। দুই ভাইই মানসীকে সাপোর্ট করে। ওরা দুজনেই বলে ওরা তো মানসীর ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনদিন চিন্তা করেনি, তাই ওর বর্তমানেও কোন বাধা দেওয়া উচিত নয়।
বড়দা – তোমরা বুঝতে পারছ না
মেজ ভাই – আমার বোঝার দরকারও নেই
ছোট ভাই – আমাদের কি করতে বল ?
বড়দা – আমি জানতে চাই না তোমরা এই বিয়ে সাপোর্ট করছ কি করছ না। তোমরা আমি যা বলবো তাই করবে।
ছোট ভাই – তুমি যা বলবে আমাকে সেটা করতেই হবে।
২২-শে এপ্রিল হোটেল কেনিলওয়ারথ এর বেসমেন্টে একটা হল ঘর প্রচুর আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। মাঝখানে একটা ছাদনা তলাও বানানো হয়েছে। স্বপন মানসীকে একটা হালকা লাল বেনারসী কিনে দিয়েছে। নীহারিকা ভাস্করকে একটা শেরওয়ানী দিয়েছে। প্রায় সবাই এসে গিয়েছে। লেখা আর দীপ্তি ওদের মা কে নিয়ে এসেছে। সৃজা আর মানব এসেছে। শ্রদ্ধা জামাইবাবুও এসেছে। মাসী আর ভূষণ বাবু এসেছে। নীহারিকা মানসীকে নিয়ে হলে আসে। স্বপন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কে নিয়ে আসে।
স্বপন মানসীকে বলে যে মানসীর বিয়ে করা নিয়ে যে স্বপ্ন ছিল তার যতটা পুরন করা সম্ভব সেটা করার চেষ্টা করেছে। মানসী ধীরে ধীরে বলে, “তুমি আমার সব স্বপ্নই পুরন করে দিয়েছ বন্ধু।”
সবার শুভেচ্ছা আর আশীর্বাদের মধ্যে মানসী আর ভাস্কর ছাদনা তলায় আসে। ভাস্করের হয়ে ভূষণ বাবু আর স্বপনের মেয়ে সাক্ষী হবে। তখন স্বপনের মেয়ের বয়েস ২১ হয়ে গেছে আর ভাস্কর ওর মাস্টারমশায় ছিল। মানসীর হয়ে স্বপন আর মাসী সাক্ষী হবে। হাতে ঠাণ্ডা পানীয় নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে। হাতে মালা নিয়ে নীহারিকা আর কস্তূরী অপেক্ষা করছে সই করার পরে মালা বদল করানোর জন্যে।
এমন সময় চারজন পুলিশ নিয়ে বড়দা হলে ঢোকেন। একজন পুলিশ অফিসার গম্ভীর স্বরে বিয়ে বন্ধ করতে বলে।
স্বপন এগিয়ে এসে বিয়ে বন্ধ করতে বলার কারন জিজ্ঞাসা করে। শ্রদ্ধা জামাইবাবু স্বপনের পাশে দাঁড়ান কিন্তু কোন কথা বলেন না। পুলিশ অফিসার বড়দাকে দেখিয়ে জানান যে উনি অভিযোগ করেছেন যে ওনার বোন মানসীকে কিডন্যাপ করে ভাস্কর জোর কোরে বিয়ে করছে।
স্বপন মানসীকে ডাকে।
স্বপন – ওনাকে জিজ্ঞাসা করুন এই মেয়েটিই ওনার বোন কি না ?
পুলিশ – এই মেয়েটি আপনার বোন ?
বড়দা – হ্যাঁ, এই আমার বোন মানসী
স্বপন – এবার মানসীকে জিজ্ঞাসা করুন ও কার কথায় বিয়ে করতে এসেছে
পুলিশ – আপনি কি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছেন না কারো প্ররোচনায় বিয়ে করছেন ?
মানসী – আমি মানসী, ৪৯ বছর বয়েস, সাবালিকা হয়ে গিয়েছি অনেক বছর আগে। আর এই বিয়ে আমি আমার ইচ্ছায় করছি। এই যে এই ভাস্করের সাথে বিয়ে করছি।
স্বপন – এই যে এখানে ওই বড়দার আর মানসীর মা আছেন, ওনাকে জিজ্ঞাসা করুন ওনার মত আছে কিনা এই বিয়েতে।
পুলিশ – একটা ৪৯ বছরের মেয়ের জন্যে তার কোন অভিবাবকের অনুমতি দরকার হয় না।
স্বপন – তাও তো ওর দাদার কথায় আপনারা এসেছেন
পুলিশ – কেউ যদি থানায় গিয়ে কোন রিপোর্ট করে, আমরা আসতেই পারি।
স্বপন – খুব ভাল কথা, এসেই যখন পরেছেন তখন ওই বড়দার মায়ের মত জেনে যান।
মানসীর মা এসে পুলিশ অফিসার কে বলেন যে এই বিয়ে ওনার অনুমতি নিয়েই হচ্ছে আর ওনার বড় ছেলের মাথায় কোন গণ্ডগোল আছে তাই একটা সুস্থ সম্পর্ক নিয়ে এইসব উটকো ঝামেলা করছে।
বড়দা – না না অফিসার ওই ছেলেটি এই সবাইকে বোকা বানাচ্ছে
স্বপন – এই ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কে জিজ্ঞাসা করুন, এরা কবে বিবাহের নোটিশ দিয়েছেন
রেজিস্ট্রার – অফিসার, এরা ৩০ দিনেরও বেশী আগে নোটিশ দিয়েছে আর সেই সুবাদে ৩০ দিন আগের আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। ওনার যদি আপত্তি থাকতো ওনার সেই বিজ্ঞাপনের বিপক্ষে আবেদন করা উচিত ছিল।
অফিসার – আমি দুঃখিত আপনাদের এই শুভ অনুষ্ঠানে বাধা দেবার জন্যে। আপনারা বিয়ের কাজ চালু করতে পারেন।
বড়দা – আপনারা বুঝতে পারছেন না কত বড় সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার।
অফিসার – আপনি তো আচ্ছা লোক মশায় ! বোনকে ৪৯ বছর বয়েস পর্যন্ত বিয়ে না দিয়ে ঘরে রেখে দিয়েছিলেন কিসের ধান্দায় কে জানে। আপনাকে দেখে তো ভদ্রলোক বলেই মনে হয়। কিন্তু আপনার মনে এইরকম নোংরা উদ্দেশ্য কেন ! আর যদি বেশী কিছু বলেন তখন আমরা আপনাকে পুলিশকে ভুল তথ্য দেবার অপরাধে গ্রেপ্তার করবো।
ততক্ষনে হোটেলের ম্যানেজার এসে গিয়েছেন। উনিও বড়দাকে বেশ কড়া করে তক্ষুনি চলে যেতে বলেন, না হলে ওনাদের মত হোটেলে অকারণে পুলিশ আনার জন্যে মানহানির মামলা করবেন, আর তার ক্ষতি পুরন ১০ লক্ষ্য টাকার কম হবে না।
দশ লক্ষ টাকার কথা শুনেই বড়দা কারো সাথে কোন কথা না বলে পালিয়ে যান। পুলিশ অফিসারও সবার কাছে আর একবার ক্ষমা চেয়ে ওনার দল নিয়ে চলে যান। ওরা চলে গেলে স্বপন সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে। আর ওই রাতে বড়দার কাজ নিয়ে কোন আলোচনা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করে।
এরপর প্ল্যান মতই বিয়ে হয়। প্রথমে রেজিস্ট্রার মানসী আর ভাস্করকে দিয়ে শপথ গ্রহন করান। তারপর বাকি সবাইকে দিয়ে সই করান। স্বপন জিজ্ঞাসা করে যে শুধু চার জনের সই থাকলেই তো হয়। রেজিস্ট্রার বলেন যেহেতু ওই দাদা কোন ঝামেলা করতে পারে তাই এতো লোকের সই থাকলে আর কোন আইনি সমস্যা থাকবে না।
এরপর ছাদনা তলায় দাঁড়িয়ে দুজনে শুভদৃষ্টি করে আর মালা বদল করে আর মাঝখানে ছোট্ট আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে একে অন্যের হাত ধরে সাতবার ঘোরে। বাকি সবাই চারপাশ থেকে ওদের ওপর ফুল ছড়িয়ে দেয়। মিউজিক সিস্টেমে “মালা বদল হবে এই রাতে” গানটাও বাজান হয়। মানসী আর ভাস্কর এসে মাকে প্রনাম করে। মাসী আর ভূষণ বাবুকেও দুজনেই প্রনাম করে।
তারপর মানসী এসে স্বপনকে জড়িয়ে ধরে। কান্না ভরা গলায় বলে, “তোমার জন্যে আমি এতদিনে বিয়ে করতে পারলাম।”
স্বপন – আমি খুব খুশী হয়েছি আজকে তোমায় দেখে।
দীপ্তি – আজ সত্যি সত্যি রাঙ্গাদিদি বড় হয়ে গেছে। আমরা ভাবতেই পারিনা যে রাঙ্গাদি এই ভাবে কথা বলবে।
ভাস্কর – আমিও স্বপনদা আর বাকি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – তোমাদের কাউকে করো ওপর কৃতজ্ঞ থাকতে হবে না। আমরা সবাই খুশী। আমাদের সবার শুভেচ্ছা আর বড়দের আশীর্বাদ তোমাদের সাথে আছে। তোমরা সুখী হও।
এরপর রাত্রের খাবার খেয়ে যে যার বাড়ি ফিরে যায়। স্বপন আর নিহারিকা, মানসী আর ভাস্করকে নিয়ে ভাস্করের বাড়ি পৌঁছে দেয়। ভাস্করের মা মানসীকে বরণ করেন। উনি খুশী না দুঃখিত সেটা ওনার মুখ দেখে বোঝা যায় না। স্বপন বোঝে ভাস্কর আর ওর মায়ের মধ্যে কিছু একটা সমস্যা আছে। কিন্তু সেই সময় কিছু বলে না।
স্বপন আর নিহারিকা যাবার সময় মানসী বলে, “আমার স্বপ্নের থেকেও সুন্দর ভাবে আমাদের বিয়ে হল।”
পরদিন সকালে বড়দা ওখানকার দুই পার্টি অফিসেই যান আর ওনার বোনের বিয়ে নিয়ে পার্টি থেকে কিছু করানোর চেষ্টা করতে। যেহেতু বড়দা ওখানকার ব্যবসায়ী সমিতি আর অন্য কিছু সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন তাই দুই পার্টিতেই ওনার অনেক জানাশোনা। কিন্তু দুই পার্টিই পরিস্কার বলে দেয় ওই বয়েসের ছেলে মেয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করলে কোন পার্টি বা কোন আইন তাতে বাধা দিতে পারে না। আমার মনে হয় এরপর উনি এলাকার কিছু “দাদা” টাইপের লোকের সাথেও কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেখানেও কিছু করতে পারেন নি।
ওনার আপত্তির একটাই কারন ছিল আর সেই কারন হল মানসীর টাকা আর পার্লার। মানসী যদি বিয়ে না করে বাড়িতেই থাকতো তবে কোন না কোনদিন বড়দা ওর কাছ থেকে টাকা গুলো নিয়ে নিতেন। আর বিয়ের পরে উনি ওই টাকায় কোন নজর দিতেই পারবেন না সেটাই ওনার কষ্টের প্রধান কারন।
বুধবার সকালে সৃজা আর দীপ্তি মানসীর বেসির ভাগ জামা কাপড় আর জিনিস পত্র নিয়ে যায় মাসীর বাড়িতে।
বড়দা – এইসব নিয়ে কোথায় যাচ্ছ
সৃজা – রাঙ্গাপির জিনিস রাঙ্গাপিকে দিতে যাচ্ছি
বড়দা – কে বলেছে তোমাদের এই কাজ করতে ?
সৃজা – কেউ বলেনি। আমি নিজের ইচ্ছায় করছি
দীপ্তি – এই সব রাঙ্গাদির জিনিস, তাই ওর কাছেই থাকা উচিত
বড়দা – তোমারও খুব সাহস বেরে গেছে দেখছি, আমার মুখের ওপর কথা বলছ
সৃজা – কেউ তোমার মুখের ওপর কথা বলছে না। আমি ভেবে পাচ্ছি না তুমি কেন এই ঝামেলা করছ
ব্রততী – আমি তোমাকে আগেও বলেছি এই সব মেনে নিতে। তোমার জন্যে আমি ওর বিয়েতে গেলাম না। তুমি ভাই দুটোকেও যেতে দিলে না। আর কি চাও তুমি ?
বড়দা – আমি কি চাই সেটা তুমি বা তোমরা বুঝবে না।
ব্রততী – আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক আমি সব বুঝতে পারছি। আর তুমি যদি নিজের সন্মান রাখতে চাও সে নিয়ে কোন কথা বল না।
সৃজা আর দীপ্তি আর কোন কথা না বলে মাসীর বাড়ি চলে যায়। দুপুরের পরে নিহারিকা ওদের দুজনের সাথে গিয়ে মানসীর নতুন ঘর ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেয়। মাসী খুব খুশী। মাসীর মনে আনন্দের খই ফুটছে। যেন ঘরে নিজের মেয়ে জামাই আসবে। আমরা আমাদের নিজের লোকজনের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করি। যখন তাদের থেকে কিছু পাই না তখন দুঃখ হয়। আর অজানা অচেনা কারো থেকে যদি একটুও কিছু পাই আমাদের খুব বেশী আনন্দ হয়, কারন সেই খুশী অযাচিত ও অপ্রত্যাশিত।
মাসীর কাছেও এই মানসী আর ভাস্কর এক বছর আগে কেউ ছিল না। মাসী মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলে জীবনের বাকি কটা দিন একা একাই কাটাবেন। সেখানে একটা মেয়ে জামাই পেয়ে গিয়েছেন। ওনার তো আনন্দ হবেই। উনি যদি স্বার্থপরের মত ভাবতেন আমার ঘরে ওদের কেন থাকতে দেবো, তবে কিন্তু এই আনন্দ পেতেন না। আমরা সবাই অকারণে জীবনের এই ভাল দিকটা না ভেবে প্রতিপদে স্বার্থপর হয়ে যাই আর নিজেই নিজের দুঃখের কারন হই।
মানসী আর ভাস্করের কাছেও ব্যাপারটা একই রকমের। ওদের কাছেও মাসীর এই সাহায্য অপ্রত্যাশিত। ওরাও ভাবতে পারতো আমাদের খরচে মাসীর ঘর কেন সাজাবো। মানসী স্বপনকেও বলেনি যে মাসীর ঘরকে বাসযোগ্য করতে ওকে কত টাকা খরচ করতে হয়েছে। ও কোন কিছু না ভেবে, নিজের মাসী আর নিজের বাড়ি ভেবেই খরচ করেছে।
স্বপন বুধবার সন্ধ্যে বেলায় গিয়ে মানসী আর ভাস্করকে ওদের নিজের ঘরে নিয়ে আসে। ঘর দেখে দুকনেই কোন কথা বলতে পারে না।
মানসী – তুমি আর কত আনন্দ দেবে আমাকে ?
স্বপন – আমি এর কিছুই করিনি। যা করার এই সৃজা, দীপ্তি আর নিহারিকা করেছে।
সৃজা – না রাঙ্গাপি তোমার জিনিসপত্র আমি আর কাকি এনেছি। ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর বুদ্ধি এই পিসের।
মানসী – আমি কি বুঝি না কে কি করতে পারে আমার জন্য।
স্বপন – আমি আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধুর জন্যে এটুকু ভাববো না!
ভাস্কর – দাদা হতে পারে আপনি বন্ধুর জন্যে ভেবেছেন। কিন্তু একজন বাবার দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্বপন আর নিহারিকা মাসীর হাতে মানসী আর ভাস্করকে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সেই রাত থেকে ওদের দুজনের নতুন জীবন শুরু হয়।
আজ দুবছরের একটু বেশী হল ওদের বিয়ে হবার। সুখেই আছে। বড়দা আর কোন ঝামেলা করেনি। বিয়ের কিছুদিন পরে মানসী ভাস্করকে নিয়ে মায়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। বড়দা ওদের সাথে কথাও বলেছেন। ভাস্কর কথা বললেও মানসী যতটা সম্ভব দাদাকে এড়িয়ে গিয়েছে।
স্বপন ওদের কে বলেছে একটা ছেলে বা মেয়ে দত্তক নিতে। ওরা একটা কালো মেয়ে দত্তক নিতে চায়। সেই নিয়ে মাদার টেরেসার সংস্থায় কথাও বলেছে। আর দু এক মাসের মধ্যেই মেয়ে পেয়ে যাবে।
মাসী ওনার দোকানে জায়গাটা মানসী আর ভাস্করের নামে লিখে দিয়েছেন। ভাস্কর ওখানে রেস্টুরান্ট বানাচ্ছে। মাসীর ছেলে এখনও আসেনি।
আসুন আমরা সবাই প্রার্থনা করি যেন মানসী আর ভাস্কর বাকি জীবনটা সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারে।
Tumi_je_amar-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here
মূল ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
কাজল নদী
Written By Tumi_je_amar
Written By Tumi_je_amar
সপ্তম পরিচ্ছদ – এই আমাদের পৃথিবী
(#০১)
(#০১)
কিছুদিন পরে মানসী আর ভাস্কর স্বপনের বাড়ি যায়। কিছুক্ষন গল্প করে। মাসীর বাড়ির কথা বলে। স্বপন আর নীহারিকা দুজনেই খুব খুশী হয়।
মানসী – স্বপন আমি অনেকদিন একটা কথা শুনে এসেছি
স্বপন – কি ?
মানসী – অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়
স্বপন – তাতে কি হল
মানসী – আমি এতদিন ভাবতাম আমিও অভাগা আর যেদিকেই যাই না কেন, কোন সমাধান পাই না।
নীহারিকা – স্বপন কে তো অনেকদিন আগেই পেয়েছ।
মানসী - আর স্বপন তো আমার মরুদ্যান। বাকি সব দিকে ধু ধু বালি দেখে এসেছি।
স্বপন – আজ কি আলাদা দেখলে ?
মানসী – আজ দেখছি ওই কথাটা ঠিক নয়। কোন না কোন দিকে জল ঠিক পাওয়া যায়।
স্বপন – আসলে কি জানো এতদিন তুমি আর ভাস্কর মরুভুমির মাঝে দাঁড়িয়ে সমুদ্র খুঁজেছ। তাই শুধু দু একটা মরুদ্যান খুঁজে পেয়েছ। জল পেতে হলে তোমাকে মরুভুমির থেকে বাইরে আসতে হবে সেটা তোমরা ঠিক বোঝো নি।
ভাস্কর – তবে আজ কি করে আমরা মরুভুমি থেকে বেরিয়ে আসলাম !
স্বপন – তোমরা দুজনেই একটা অদৃশ্য লক্ষন রেখার মাঝে আটকে ছিলে। আজ দুজনেই সেই গণ্ডি অগ্রাহ্য করে বেরিয়ে এসেছ। ইংরাজিতে একটা কথা আছে – You have to come out of the box. তোমরা এতদিন সেই বাক্সের ভেতরে বসে জীবন খুঁজেছ।
মানসী – তবে কি আমরা কোন সময়েই কোন গণ্ডির মধ্যে থাকবো না ?
স্বপন – দেখো নিষেধের সীমারেখা বা শৃঙ্খলার নিয়ম আর virtual বা কাল্পনিক লক্ষন রেখা একটা ভিত্তিহীন বাধা। যে সীতার মত অবলা নারী – তার পক্ষে সেই গণ্ডি পার হওয়া সম্ভব নয় বা উচিতও নয়। কিন্তু তুমি তো সেই আগেকার দিনের ‘অবলা নারী’ নও।
নীহারিকা – কিন্তু বাড়ির লোক আমাদের সেই ভাবেই দেখতে চায়।
স্বপন – আমাদের সেই বাধা শুরুতেই ভেঙ্গে দিতে হবে
ভাস্কর – এখন কি করবো আমরা ?
স্বপন – মান্না দের সেই গানটা মনে করো – “তুমি আর আমি আর আমাদের সন্তান, এই আমাদের পৃথিবী, তুমি সুর আমি কথা, মিলে মিসে হয় গান, এই আমাদের পৃথিবী।”
মানসী – মনে করলাম, তারপর ?
স্বপন – এবার তোমাদের পৃথিবী বানাতে লেগে পড়ো।
মানসী – তুমি আর আমি না হয় হল, সন্তান কোথায় পাবো ?
স্বপন – তোমরা তোমাদের পৃথিবী বানাও, আমি সন্তানের ব্যবস্থা করে দেবো ।
নীহারিকা – কি করে করবে ?
স্বপন – তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। সময় হলে ঠিক জানতে পারবে।
নীহারিকা – আমার বাবা মাঝে মাঝে তোমায় ভীষণ ভয় করে।
(#০২)
ওরা চারজনে মিলে অনেকক্ষণ আলোচনা করে। প্রথমেই বিয়ের তারিখ ঠিক করে।
মানসী – আমার বিয়ের তারিখ আমি ঠিক করবো !!??
স্বপন – তবে কে ঠিক করবে
মানসী – একবার দাদার সাথে কথা বলবো না ?
নীহারিকা –এই মেয়েটা সত্যি কোনদিন মানুষ হবে না !
স্বপন – তোমার দাদা তোমার বিয়ে দিতে চায় ?
মানসী – মনে হয় না
স্বপন – তোমার দাদা ভাস্কর কে পছন্দ করে ?
মানসী – একদম না
স্বপন – তোমার দাদাকে ভাস্করের সাথে বিয়ের কথা বললে দাদা রাজী হবে ?
মানসী – মনে হয় না
স্বপন – তবে নিজের রাস্তা নিজে বানাও। অন্যের বানানো রাস্তায় হাঁটার স্বপ্ন দেখো না।
ওদের বিয়ের তারিখ ঠিক হয় ২০১২ সালের ২২-শে এপ্রিল, রবিবার। আর দেড় মাস মত বাকি।
মানসী – কাকে কাকে নিমন্ত্রণ করতে হবে ?
স্বপন – একদম কাছের মানুষদের
মানসী – আর প্যান্ডেল ?
স্বপন – তুমি কি প্যান্ডেল করবে ?
মানসী – প্যান্ডেল ছাড়া বিয়ে কোথায় করবো ?
নীহারিকা – আমার বোনের যে ভাবে বিয়ে হয়েছে, ঠিক সেই ভাবে।
অপ্রাসঙ্গিক হলেও এখানে বলে রাখি স্বপন নীহারিকার বোনের বিয়ে একজন বাঙালি খ্রিস্টান ছেলের সাথে দিয়েছে। আর ওর বিয়ে রেজিস্ট্রি করে একটা হোটেলে হয়েছিল। স্বপন সেই রেজিস্ট্রার কে চিনতো, তাই ও বলে বিয়ের সব ব্যবস্থা ওই করবে।
মানসী – জানো আমার স্বপ্ন ছিল সুন্দর প্যান্ডেল করে, অনেক আলো জ্বালিয়ে, কয়েকশো লোকের মাঝে আমি হালকা লাল বেনারসি পরে ছাদনা তলায় বিয়ে করবো।
স্বপন শুনে একটু চুপ করে থাকে। তারপর মানসীর হাত দুটো নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে কেঁদে ফেলে।
নীহারিকা – কি হল কাঁদছ কেন ?
স্বপন – আমি আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধুর এই স্বপ্ন পুরন করতে পারবো না।
ভাস্কর হতভম্ব হয়ে যায়। মানসীও একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে। একটু সামলিয়ে নিয়ে ও স্বপনের হাত ছাড়িয়ে ওর মাথায় হাত রাখে।
মানসী – তুমি আমার বিয়ে দিচ্ছ এই অনেক বেশী। যে ভাবে সম্ভব সেই ভাবেই বিয়ে দাও। আমি তাতেই খুশী থাকবো। তুমি ছাড়া বাকি সবাই সহানুভুতি জানায়, কেউ এগিয়ে আসে না।
স্বপন – তবু আমি তোমার স্বপ্নের কথা মনে রাখবো।
ভাস্কর – আমি আমার মাকে জানিয়ে দিয়েছি আমার বিয়ের কথা।
মানসী – তাই ! শুনে মা কি বললেন ?
ভাস্কর – মা খুশিই হল। বলল যে উনি তো বিয়ে দিতে পারেন নি। তাই আমি যাকে পছন্দ করে বিয়ে করবো তাতে কোন আপত্তি নেই।
স্বপন – খুব ভাল কথা
ভাস্কর – মায়ের শুধু একটা ইচ্ছে আছে
মানসী – কি ?
ভাস্কর – আমরা যেন বিয়ে করে একবার বাড়ি যাই, মা তোমাকে বরন করবে। তারপর আমরা আমাদের যেখানে ভাল লাগে সেখানে গিয়ে থাকবো।
স্বপন – আমার মনে হয় মানসী বিয়ের পরে তিন রাত্রি তোমার বাড়ি থাকবে। তুমি মাকে বলে রাখবে সেই তিনদিন যেন তোমার সেই ভুদেব কাকু না আসেন।
ভাস্কর – সেটা খুব ভাল। আমি মা কে বলে দেখবো।
(#০৩)
তারপর ঠিক হয় ভাস্কর ওর বাড়ি থেকে খাট আর টেবিল চেয়ার নিয়ে আসতে পারবে। বাকি জিনিস পত্র মানসী কিনবে। আর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সব রেডি করে ফেলবে।
এর মধ্যে ভাস্কর খবর নিয়ে জেনেছে মাসীর চায়ের দোকানও মাসীদের কেনা জায়গায় বানানো। মানসী বলে বিয়ের পরে ওখানে একটা ছোট হোটেল চালু করা যায়। স্বপন বলে সেটা করতে গেলে অনেক কিছু লিগ্যাল কাজ করতে হবে। বিয়ের পরে ধীরে সুস্থে বসে সেসব প্ল্যান করা যাবে।
সেই রাতে ভাস্কর নিজের বাড়ি ফিরে যায়। মানসী স্বপনদের বাড়িতেই থেকে যায়। রাত্রে স্বপনের পাশে ঘুমায়।
স্বপন – আজকের পরে তোমার আর আমার সাথে ঘুমানো ঠিক হবে না
মানসী – কেন ?
স্বপন – ভাস্কর এটাকে ভাল ভাবে নাও নিতে পারে।
মানসী – ভাস্কর তোমার আর আমার সম্পর্ক ভাল ভাবেই জানে। আমি যে তোমাকে চুমু খাই সেটাও জানে।
নীহারিকা – ভাস্কর রাগ করে না
মানসী – তুই কি রাগ করিস ?
নীহারিকা – আমি তো স্বপন আর তোকে জানি। আর আমাদের মধ্যে সেক্স তো খোলামেলা।
মানসী – ভাস্কর আর আমার মধ্যে সেক্স নিয়ে কোন কথা হয় নি। কিন্তু ও আমার আর স্বপনের বন্ধুত্ব বেশ ভাল করেই বোঝে।
নীহারিকা – এতদিনে তুই ভাস্করের সাথে কোন সেক্স করিসনি ?
মানসী – আমরা শুধু চুমু খাই।
নীহারিকা – আর ?
মানসী – আর হাত ধরে বসে কথা বলি
নীহারিকা – ভাস্করের নুনু দেখেছিস ?
মানসী – ছি, না না ওইসব করিনি
নীহারিকা – কেন ?
মানসী – আমরা এখনও একে অন্যের শরীর দেখিনি
নীহারিকা – কেন ?
মানসী – আমরা যা দেখার বা করার সব বিয়ের পরে করবো।
স্বপন – খুব ভাল।
এরপর ওরা একসাথে ঘুমিয়ে পড়ে।
এর পরের মাস মানসী, ভাস্কর আর স্বপনের বেশ ব্যস্ততার মধ্যে কেটে যায়। ভাস্কর মাসীর বাড়ি পুরো পরিস্কার করে। আস্তে আস্তে ওর ঘরের যেটুকু ফার্নিচার আনতে পারে নিয়ে আসে। বাকি দু একটা জিনিস মানসীকে কিনতে হয়।
স্বপনের অফিসের অনেক পার্টি বা মিটিং হোটেল কেনিলওয়ারথ – এ হত। সেই জন্যে ওর ওই হোটেলে বেশ জানাশোনা হয়ে গিয়েছিল। স্বপন মানসী আর ভাস্করের বিয়ের আয়োজন ওই হোটেলেই অবিশ্বাস্য রকমের কম খরচে করে। অভিনব বিয়ের কার্ড বানানো হয়। হাতে লেখা কার্ড, তাতে লেখা,
আমরা দুজন আগামী ২২-শে এপ্রিল, রবিবার বিয়ে করছি। সেদিন সন্ধ্যেবেলা হোটেল কেনিলওয়ারথ – এ আমাদের বিয়ের সাক্ষী হিসাবে আসতে অনুরোধ করছি।
ইতি – ভাস্কর ও মানসী।
(#০৪)
সব শুদ্ধ আমন্ত্রিতের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ জন। মানসী ওর বন্ধুর মধ্যে শুধু কস্তূরীকে বলে। ভাস্কর ওর কোন আত্মিয়দের বলে না। শুধু দুজন বন্ধু, ভূষণ বাবু আর ওই দোকানের বাকি কর্মচারীদের বলে। মানসী বিয়ের কার্ড নিয়ে প্রথম যায় শ্রদ্ধা জামাইবাবুর কাছে।
শ্রদ্ধা – এ কি করেছ তুমি !
মানসী – কেন জামাইবাবু ?
শ্রদ্ধা – নিজের বিয়ের কার্ড নিজে লিখেছ ?
মানসী – সব কিছুই তো আমরা দুজনেই করছি
শ্রদ্ধা – বড়দা কিছু করছে না ?
মানসী – দাদা এখনও জানেই না যে আমার বিয়ে
শ্রদ্ধা – কে কে জানে ?
মানসী – স্বপন, নেহা আর দীপ্তি জানে।
শ্রদ্ধা - কেনিলওয়ারথ তো বেশ দামী হোটেল !
মানসী – আমি জানি না, সেসব স্বপন ব্যবস্থা করেছে
শ্রদ্ধা – তোমার সাহস আছে বলতে হবে, বড়দাকে না জানিয়ে সব করছ।
মানসী – দাদা তো এতো বছরে আমার বিয়ে দিল না, তাই নিজে নিজেই সব করতে হচ্ছে।
শ্রদ্ধা – আমার আশীর্বাদ আর শুভেচ্ছা সব সময় তোমার জন্যে আছে।
তারপর কার্ড সৃজা আর মানস কে দেয়। সব শুনে সৃজা খুব খুশী। দীপ্তি আর লেখাকে কার্ড দিলে ওরা দুজনেই বলে যে ওরা কি পর যে কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করছে।
মানসী – আমার বিয়ে তো আমি নিজে করছি, দাদারা তো দিচ্ছে না, তাই।
দীপ্তি - লেখা দিদি জানে না কিন্তু আমি তো তোমার সাথেই আছি
লেখা – তুই জানতিস
দীপ্তি – আমি গত দু বছর ধরে জানি। ওর ঘরের সব ফার্নিচার আমার সাথেই কিনেছে
লেখা – তোমার আবার আলাদা ঘর হচ্ছে নাকি ?
মানসী – সব জানাবো সময় হলে।
লেখা – হ্যাঁ বুঝেছি, এই মুখপুড়িটাই তোমার আপন আর আমি তোমার পর।
মানসী – না বৌদি তা নয়। আসলে তুমি ঘরের কাজে থাকো, দীপ্তি আমার সাথে পার্লারে থাকে, তাই ওকে নিয়েই সব কিছু করেছি।
লেখা – কিন্তু আমি কার্ড নেবো না। তুমি যখন বড়দাকে কার্ড দেবে তখন বাকি দুই ভাইকেও দিও।
ভাস্কর যায় স্বপন কে কার্ড দিতে।
ভাস্কর – দাদা, আপনিই সব কিছুর হোতা, তাও আপনাকেই নিমন্ত্রণ করছি।
স্বপন – আমি তোমাদের একটু গাইড করছি শুধু, সব কিছু তো তোমরাই করছ
এরপর মানসী গিয়ে ওর মাকে সব জানায়।
মা – তুই দাদাকে বলিস নি ?
মানসী – দাদা তো ওকে পছন্দই করে না
মা – দাদা যাকে পছন্দ করে না তাকে বিয়ে করার কি দরকার !
মানসী – মা দাদাকি আমার বিয়ে দেবে
মা – সে ঠিক, তুই যা ভাল বুঝিস কর। স্বপন জানে ?
মানসী – স্বপনই তো প্রথম থেকে আছে আমার সাথে
মা – স্বপন সাথে থাকলে কোন চিন্তা নেই। তুই ভাল থাকবি তো ?
মানসী – সেই আশাই তো করছি।
মা – আমার আশীর্বাদ থাকলো, তুই ঠিক সুখী হবি।
মানসী – মা আমি এখনই খুব সুখী।
বিয়ের আগের রবিবার মানে ১৫-ই এপ্রিল সকালে সবাই একসাথে বসলে মানসী গিয়ে বড়দাকে কার্ড দেয়। দীপ্তি আর লেখা ভয়ে ভেতরে আসে না, দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে দেখে। দীপ্তি ফিসফিস করে লেখাকে বলে, “এতদিনে রাঙ্গাদির সাহস হয়েছে”।
বড়দা – কিসের কার্ড !
মানসী – আমার আর ভাস্করের বিয়ের
বড়দা – তুমি বিয়ে করবে ?
মানসী - হ্যাঁ
বড়দা – অনেক বড় হয়ে গেছ তো !
মানসী – দাদা আমার বয়েস ৪৯ হচ্ছে, আর সেটা মনে হয় নিজে সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে যথেষ্ট।
বড়দা – কিন্তু ভাস্কর ছাড়া আর কাউকে পেলে না ! আর সব ঠিক করার আগে আমার বা মায়ের অনুমতি নেবার দরকার মনে করলে না !
মানসী – আমি নিজে বিয়ে করছি, তাই তোমার অনুমতি নেবার দরকার আছে বলে মনে করিনি
বড়দা – এরপর কিছু হলে আমি কিছু জানিনা।
ব্রততী – রাঙ্গাদিদি তো তোমাকে কিছু জানতে বলে নি
বড়দা – তুমি এর মধ্যে কেন কথা বলছ ?
ব্রততী – তোমার বোন, আমারও কিছু হয়। আমিও রাঙ্গাদিদিকে ভালবাসি।
বড়দা – এই রকম একটা অপদার্থ ছেলেকে বিয়ে করবে, সেটাকে সাপোর্ট করছ। এই তোমার ভালবাসা ?
ব্রততী – তোমার বোঝার কোন দরকার নেই আমার ভালবাসা কিরকম সেটা জানার
বড়দা – কিন্তু এই বিয়েতে আমার মত নেই
মানসী – দাদা আমি তোমার মত জানতে চাইনি, শুধু বিয়েতে এসে আশীর্বাদ করতে বলছি
বড়দা – আমার মত নেই, তাই আসবোও না আর আশীর্বাদ দেবার কোন প্রশ্নই নেই।
মানসী – কিন্তু সামনের রবিবার আমরা বিয়ে করছি।
বড়দা – আমি এই বিয়ে হতে দেবো না
মানসীর বাকি দুই ভাই কিছুই বলে না। বড়দা ওদের জিজ্ঞাসা করে ওদের মত। দুই ভাইই মানসীকে সাপোর্ট করে। ওরা দুজনেই বলে ওরা তো মানসীর ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনদিন চিন্তা করেনি, তাই ওর বর্তমানেও কোন বাধা দেওয়া উচিত নয়।
বড়দা – তোমরা বুঝতে পারছ না
মেজ ভাই – আমার বোঝার দরকারও নেই
ছোট ভাই – আমাদের কি করতে বল ?
বড়দা – আমি জানতে চাই না তোমরা এই বিয়ে সাপোর্ট করছ কি করছ না। তোমরা আমি যা বলবো তাই করবে।
ছোট ভাই – তুমি যা বলবে আমাকে সেটা করতেই হবে।
(#০৫)
২২-শে এপ্রিল হোটেল কেনিলওয়ারথ এর বেসমেন্টে একটা হল ঘর প্রচুর আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। মাঝখানে একটা ছাদনা তলাও বানানো হয়েছে। স্বপন মানসীকে একটা হালকা লাল বেনারসী কিনে দিয়েছে। নীহারিকা ভাস্করকে একটা শেরওয়ানী দিয়েছে। প্রায় সবাই এসে গিয়েছে। লেখা আর দীপ্তি ওদের মা কে নিয়ে এসেছে। সৃজা আর মানব এসেছে। শ্রদ্ধা জামাইবাবুও এসেছে। মাসী আর ভূষণ বাবু এসেছে। নীহারিকা মানসীকে নিয়ে হলে আসে। স্বপন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কে নিয়ে আসে।
স্বপন মানসীকে বলে যে মানসীর বিয়ে করা নিয়ে যে স্বপ্ন ছিল তার যতটা পুরন করা সম্ভব সেটা করার চেষ্টা করেছে। মানসী ধীরে ধীরে বলে, “তুমি আমার সব স্বপ্নই পুরন করে দিয়েছ বন্ধু।”
সবার শুভেচ্ছা আর আশীর্বাদের মধ্যে মানসী আর ভাস্কর ছাদনা তলায় আসে। ভাস্করের হয়ে ভূষণ বাবু আর স্বপনের মেয়ে সাক্ষী হবে। তখন স্বপনের মেয়ের বয়েস ২১ হয়ে গেছে আর ভাস্কর ওর মাস্টারমশায় ছিল। মানসীর হয়ে স্বপন আর মাসী সাক্ষী হবে। হাতে ঠাণ্ডা পানীয় নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে। হাতে মালা নিয়ে নীহারিকা আর কস্তূরী অপেক্ষা করছে সই করার পরে মালা বদল করানোর জন্যে।
এমন সময় চারজন পুলিশ নিয়ে বড়দা হলে ঢোকেন। একজন পুলিশ অফিসার গম্ভীর স্বরে বিয়ে বন্ধ করতে বলে।
(#০৬)
স্বপন এগিয়ে এসে বিয়ে বন্ধ করতে বলার কারন জিজ্ঞাসা করে। শ্রদ্ধা জামাইবাবু স্বপনের পাশে দাঁড়ান কিন্তু কোন কথা বলেন না। পুলিশ অফিসার বড়দাকে দেখিয়ে জানান যে উনি অভিযোগ করেছেন যে ওনার বোন মানসীকে কিডন্যাপ করে ভাস্কর জোর কোরে বিয়ে করছে।
স্বপন মানসীকে ডাকে।
স্বপন – ওনাকে জিজ্ঞাসা করুন এই মেয়েটিই ওনার বোন কি না ?
পুলিশ – এই মেয়েটি আপনার বোন ?
বড়দা – হ্যাঁ, এই আমার বোন মানসী
স্বপন – এবার মানসীকে জিজ্ঞাসা করুন ও কার কথায় বিয়ে করতে এসেছে
পুলিশ – আপনি কি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছেন না কারো প্ররোচনায় বিয়ে করছেন ?
মানসী – আমি মানসী, ৪৯ বছর বয়েস, সাবালিকা হয়ে গিয়েছি অনেক বছর আগে। আর এই বিয়ে আমি আমার ইচ্ছায় করছি। এই যে এই ভাস্করের সাথে বিয়ে করছি।
স্বপন – এই যে এখানে ওই বড়দার আর মানসীর মা আছেন, ওনাকে জিজ্ঞাসা করুন ওনার মত আছে কিনা এই বিয়েতে।
পুলিশ – একটা ৪৯ বছরের মেয়ের জন্যে তার কোন অভিবাবকের অনুমতি দরকার হয় না।
স্বপন – তাও তো ওর দাদার কথায় আপনারা এসেছেন
পুলিশ – কেউ যদি থানায় গিয়ে কোন রিপোর্ট করে, আমরা আসতেই পারি।
স্বপন – খুব ভাল কথা, এসেই যখন পরেছেন তখন ওই বড়দার মায়ের মত জেনে যান।
মানসীর মা এসে পুলিশ অফিসার কে বলেন যে এই বিয়ে ওনার অনুমতি নিয়েই হচ্ছে আর ওনার বড় ছেলের মাথায় কোন গণ্ডগোল আছে তাই একটা সুস্থ সম্পর্ক নিয়ে এইসব উটকো ঝামেলা করছে।
বড়দা – না না অফিসার ওই ছেলেটি এই সবাইকে বোকা বানাচ্ছে
স্বপন – এই ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কে জিজ্ঞাসা করুন, এরা কবে বিবাহের নোটিশ দিয়েছেন
রেজিস্ট্রার – অফিসার, এরা ৩০ দিনেরও বেশী আগে নোটিশ দিয়েছে আর সেই সুবাদে ৩০ দিন আগের আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। ওনার যদি আপত্তি থাকতো ওনার সেই বিজ্ঞাপনের বিপক্ষে আবেদন করা উচিত ছিল।
অফিসার – আমি দুঃখিত আপনাদের এই শুভ অনুষ্ঠানে বাধা দেবার জন্যে। আপনারা বিয়ের কাজ চালু করতে পারেন।
বড়দা – আপনারা বুঝতে পারছেন না কত বড় সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার।
অফিসার – আপনি তো আচ্ছা লোক মশায় ! বোনকে ৪৯ বছর বয়েস পর্যন্ত বিয়ে না দিয়ে ঘরে রেখে দিয়েছিলেন কিসের ধান্দায় কে জানে। আপনাকে দেখে তো ভদ্রলোক বলেই মনে হয়। কিন্তু আপনার মনে এইরকম নোংরা উদ্দেশ্য কেন ! আর যদি বেশী কিছু বলেন তখন আমরা আপনাকে পুলিশকে ভুল তথ্য দেবার অপরাধে গ্রেপ্তার করবো।
ততক্ষনে হোটেলের ম্যানেজার এসে গিয়েছেন। উনিও বড়দাকে বেশ কড়া করে তক্ষুনি চলে যেতে বলেন, না হলে ওনাদের মত হোটেলে অকারণে পুলিশ আনার জন্যে মানহানির মামলা করবেন, আর তার ক্ষতি পুরন ১০ লক্ষ্য টাকার কম হবে না।
দশ লক্ষ টাকার কথা শুনেই বড়দা কারো সাথে কোন কথা না বলে পালিয়ে যান। পুলিশ অফিসারও সবার কাছে আর একবার ক্ষমা চেয়ে ওনার দল নিয়ে চলে যান। ওরা চলে গেলে স্বপন সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে। আর ওই রাতে বড়দার কাজ নিয়ে কোন আলোচনা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করে।
(#০৭)
এরপর প্ল্যান মতই বিয়ে হয়। প্রথমে রেজিস্ট্রার মানসী আর ভাস্করকে দিয়ে শপথ গ্রহন করান। তারপর বাকি সবাইকে দিয়ে সই করান। স্বপন জিজ্ঞাসা করে যে শুধু চার জনের সই থাকলেই তো হয়। রেজিস্ট্রার বলেন যেহেতু ওই দাদা কোন ঝামেলা করতে পারে তাই এতো লোকের সই থাকলে আর কোন আইনি সমস্যা থাকবে না।
এরপর ছাদনা তলায় দাঁড়িয়ে দুজনে শুভদৃষ্টি করে আর মালা বদল করে আর মাঝখানে ছোট্ট আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে একে অন্যের হাত ধরে সাতবার ঘোরে। বাকি সবাই চারপাশ থেকে ওদের ওপর ফুল ছড়িয়ে দেয়। মিউজিক সিস্টেমে “মালা বদল হবে এই রাতে” গানটাও বাজান হয়। মানসী আর ভাস্কর এসে মাকে প্রনাম করে। মাসী আর ভূষণ বাবুকেও দুজনেই প্রনাম করে।
তারপর মানসী এসে স্বপনকে জড়িয়ে ধরে। কান্না ভরা গলায় বলে, “তোমার জন্যে আমি এতদিনে বিয়ে করতে পারলাম।”
স্বপন – আমি খুব খুশী হয়েছি আজকে তোমায় দেখে।
দীপ্তি – আজ সত্যি সত্যি রাঙ্গাদিদি বড় হয়ে গেছে। আমরা ভাবতেই পারিনা যে রাঙ্গাদি এই ভাবে কথা বলবে।
ভাস্কর – আমিও স্বপনদা আর বাকি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – তোমাদের কাউকে করো ওপর কৃতজ্ঞ থাকতে হবে না। আমরা সবাই খুশী। আমাদের সবার শুভেচ্ছা আর বড়দের আশীর্বাদ তোমাদের সাথে আছে। তোমরা সুখী হও।
এরপর রাত্রের খাবার খেয়ে যে যার বাড়ি ফিরে যায়। স্বপন আর নিহারিকা, মানসী আর ভাস্করকে নিয়ে ভাস্করের বাড়ি পৌঁছে দেয়। ভাস্করের মা মানসীকে বরণ করেন। উনি খুশী না দুঃখিত সেটা ওনার মুখ দেখে বোঝা যায় না। স্বপন বোঝে ভাস্কর আর ওর মায়ের মধ্যে কিছু একটা সমস্যা আছে। কিন্তু সেই সময় কিছু বলে না।
স্বপন আর নিহারিকা যাবার সময় মানসী বলে, “আমার স্বপ্নের থেকেও সুন্দর ভাবে আমাদের বিয়ে হল।”
পরদিন সকালে বড়দা ওখানকার দুই পার্টি অফিসেই যান আর ওনার বোনের বিয়ে নিয়ে পার্টি থেকে কিছু করানোর চেষ্টা করতে। যেহেতু বড়দা ওখানকার ব্যবসায়ী সমিতি আর অন্য কিছু সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন তাই দুই পার্টিতেই ওনার অনেক জানাশোনা। কিন্তু দুই পার্টিই পরিস্কার বলে দেয় ওই বয়েসের ছেলে মেয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করলে কোন পার্টি বা কোন আইন তাতে বাধা দিতে পারে না। আমার মনে হয় এরপর উনি এলাকার কিছু “দাদা” টাইপের লোকের সাথেও কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেখানেও কিছু করতে পারেন নি।
ওনার আপত্তির একটাই কারন ছিল আর সেই কারন হল মানসীর টাকা আর পার্লার। মানসী যদি বিয়ে না করে বাড়িতেই থাকতো তবে কোন না কোনদিন বড়দা ওর কাছ থেকে টাকা গুলো নিয়ে নিতেন। আর বিয়ের পরে উনি ওই টাকায় কোন নজর দিতেই পারবেন না সেটাই ওনার কষ্টের প্রধান কারন।
(#০৮)
বুধবার সকালে সৃজা আর দীপ্তি মানসীর বেসির ভাগ জামা কাপড় আর জিনিস পত্র নিয়ে যায় মাসীর বাড়িতে।
বড়দা – এইসব নিয়ে কোথায় যাচ্ছ
সৃজা – রাঙ্গাপির জিনিস রাঙ্গাপিকে দিতে যাচ্ছি
বড়দা – কে বলেছে তোমাদের এই কাজ করতে ?
সৃজা – কেউ বলেনি। আমি নিজের ইচ্ছায় করছি
দীপ্তি – এই সব রাঙ্গাদির জিনিস, তাই ওর কাছেই থাকা উচিত
বড়দা – তোমারও খুব সাহস বেরে গেছে দেখছি, আমার মুখের ওপর কথা বলছ
সৃজা – কেউ তোমার মুখের ওপর কথা বলছে না। আমি ভেবে পাচ্ছি না তুমি কেন এই ঝামেলা করছ
ব্রততী – আমি তোমাকে আগেও বলেছি এই সব মেনে নিতে। তোমার জন্যে আমি ওর বিয়েতে গেলাম না। তুমি ভাই দুটোকেও যেতে দিলে না। আর কি চাও তুমি ?
বড়দা – আমি কি চাই সেটা তুমি বা তোমরা বুঝবে না।
ব্রততী – আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক আমি সব বুঝতে পারছি। আর তুমি যদি নিজের সন্মান রাখতে চাও সে নিয়ে কোন কথা বল না।
সৃজা আর দীপ্তি আর কোন কথা না বলে মাসীর বাড়ি চলে যায়। দুপুরের পরে নিহারিকা ওদের দুজনের সাথে গিয়ে মানসীর নতুন ঘর ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেয়। মাসী খুব খুশী। মাসীর মনে আনন্দের খই ফুটছে। যেন ঘরে নিজের মেয়ে জামাই আসবে। আমরা আমাদের নিজের লোকজনের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করি। যখন তাদের থেকে কিছু পাই না তখন দুঃখ হয়। আর অজানা অচেনা কারো থেকে যদি একটুও কিছু পাই আমাদের খুব বেশী আনন্দ হয়, কারন সেই খুশী অযাচিত ও অপ্রত্যাশিত।
মাসীর কাছেও এই মানসী আর ভাস্কর এক বছর আগে কেউ ছিল না। মাসী মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলে জীবনের বাকি কটা দিন একা একাই কাটাবেন। সেখানে একটা মেয়ে জামাই পেয়ে গিয়েছেন। ওনার তো আনন্দ হবেই। উনি যদি স্বার্থপরের মত ভাবতেন আমার ঘরে ওদের কেন থাকতে দেবো, তবে কিন্তু এই আনন্দ পেতেন না। আমরা সবাই অকারণে জীবনের এই ভাল দিকটা না ভেবে প্রতিপদে স্বার্থপর হয়ে যাই আর নিজেই নিজের দুঃখের কারন হই।
মানসী আর ভাস্করের কাছেও ব্যাপারটা একই রকমের। ওদের কাছেও মাসীর এই সাহায্য অপ্রত্যাশিত। ওরাও ভাবতে পারতো আমাদের খরচে মাসীর ঘর কেন সাজাবো। মানসী স্বপনকেও বলেনি যে মাসীর ঘরকে বাসযোগ্য করতে ওকে কত টাকা খরচ করতে হয়েছে। ও কোন কিছু না ভেবে, নিজের মাসী আর নিজের বাড়ি ভেবেই খরচ করেছে।
স্বপন বুধবার সন্ধ্যে বেলায় গিয়ে মানসী আর ভাস্করকে ওদের নিজের ঘরে নিয়ে আসে। ঘর দেখে দুকনেই কোন কথা বলতে পারে না।
মানসী – তুমি আর কত আনন্দ দেবে আমাকে ?
স্বপন – আমি এর কিছুই করিনি। যা করার এই সৃজা, দীপ্তি আর নিহারিকা করেছে।
সৃজা – না রাঙ্গাপি তোমার জিনিসপত্র আমি আর কাকি এনেছি। ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর বুদ্ধি এই পিসের।
মানসী – আমি কি বুঝি না কে কি করতে পারে আমার জন্য।
স্বপন – আমি আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধুর জন্যে এটুকু ভাববো না!
ভাস্কর – দাদা হতে পারে আপনি বন্ধুর জন্যে ভেবেছেন। কিন্তু একজন বাবার দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্বপন আর নিহারিকা মাসীর হাতে মানসী আর ভাস্করকে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সেই রাত থেকে ওদের দুজনের নতুন জীবন শুরু হয়।
পরিশিষ্ট
আজ দুবছরের একটু বেশী হল ওদের বিয়ে হবার। সুখেই আছে। বড়দা আর কোন ঝামেলা করেনি। বিয়ের কিছুদিন পরে মানসী ভাস্করকে নিয়ে মায়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। বড়দা ওদের সাথে কথাও বলেছেন। ভাস্কর কথা বললেও মানসী যতটা সম্ভব দাদাকে এড়িয়ে গিয়েছে।
স্বপন ওদের কে বলেছে একটা ছেলে বা মেয়ে দত্তক নিতে। ওরা একটা কালো মেয়ে দত্তক নিতে চায়। সেই নিয়ে মাদার টেরেসার সংস্থায় কথাও বলেছে। আর দু এক মাসের মধ্যেই মেয়ে পেয়ে যাবে।
মাসী ওনার দোকানে জায়গাটা মানসী আর ভাস্করের নামে লিখে দিয়েছেন। ভাস্কর ওখানে রেস্টুরান্ট বানাচ্ছে। মাসীর ছেলে এখনও আসেনি।
আসুন আমরা সবাই প্রার্থনা করি যেন মানসী আর ভাস্কর বাকি জীবনটা সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারে।
*********সমাপ্ত*********
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
Tumi_je_amar-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereTumi_je_amar-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment