আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
এরপর মাঝে মাঝেই ওখানে যেতাম। একদিন গিয়ে দেখি ওনার টেবিলের সামনে একজন ভদ্রলোক বসে। আমি গিয়ে আমার মেসিনের কথা বলে, মেসিন রিপেয়ার করি। ফিরে এসে দেখি ওই ভদ্রলোক তখনও বসে। আমার সেদিন বেশী কাজ না থাকায় মিঃ সরকারের সাথে কিছু গল্প করি। ওই ভদ্রলোকও আমাদের গল্পে যোগ দেন। আমাদের কথা সব ইংরাজিতেই হচ্ছিলো। একটু অবাক হয়ে যাই মিঃ সরকার ওই ভদ্রলকের সাথে আমার আলাপ করিয়ে দেন না।
আমি জেরক্স মেসিনের ইঞ্জিনিয়ার শুনে ওই ভদ্রলোক ওই মেসিন কি ভাবে কাজ করে জানতে চান। আমি ছোট করে ওনাকে থিওরি বোঝাই। উনিও মন দিয়ে শোনেন আর অনেক প্রশ্নও করেন। এর প মিঃ সরকার এক পিওন কে চা দিতে বলেন। তিন জনেই চা খাই। সিগারেট খেতে চাইলে মিঃ সরকার বলেন যে ওনার অফিসে স্মোক করতে পারি। আমার কাছে সেদিন কোন একটা বিদেশী সিগারেট ছিল। আমি অফার করলে দুজনেই সিগারেট নেন। সিগারেট খাবার পর ওই ভদ্রলোক বলেন যে ওনার অনেক কাজ আছে তাই উনি চলে যাবেন। উনি আমাকে থিওরি বোঝানোর জন্যে আর সিগারেটের জন্যে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যান।
আমি – আচ্ছা মিঃ সরকার আপনি ওনার সাথে আমার আলাপ করিয়ে দিলেন না কেন?
মিঃ সরকার – আমি জানতাম আপনি এই প্রশ্ন করবেন।
আমি – তাহলে বলুন কেন আলাপ করালেন না।
মিঃ সরকার – আসলে উনিও এখানকার একজন পেসেন্ট, আর আমরা কোন রুগীর সাথে কারো আলাপ করিয়ে দিতে পারি না।
আমি – মানে!
মিঃ সরকার – ওনার নাম ডঃ সুধীর রাও।
আমি – উনি ডাক্তার?
মিঃ সরকার - উনি ভাইজাগের একজন প্রতিষ্ঠিত সার্জেন ছিলেন
আমি – এখন?
মিঃ সরকার – এখন উনি এখানকার পেসেন্ট
আমি – দেখে বা কথা বলে তো কিছুই মনে হল না যে উনি পাগল!
মিঃ সরকার - এইটাই আমাদের সবার ভুল ধারণা। এখানকার রুগি হলেই যে পাগল হতে হবে তার কোন মানে নেই।
আমি – সে বুঝলাম, পাগল বলার জন্যে দুঃখিত। তবু আমরা এখানকার রুগি হলেই পাগল ভাবতে অভ্যস্থ।
মিঃ সরকার – উনি গত তিন বছর ধরে আছেন এখানে।
আমি – ওনার সাথে কথা বলে আমি তো কোন অসংগতি বুঝলাম না
মিঃ সরকার – কেউই বুঝতে পারেন না। বরঞ্চ এখানকার অন্য রুগীদের ছোট খাটো সমস্যার চিকিৎসা উনিই করে দেন।
আমি – তবে সমস্যা কোথায়?
মিঃ সরকার – উনি কোন মাঝবয়েসী মহিলা, বিশেষ করে কালো মহিলা দেখলেই খেপে যান। হাতের কাছে যা পান সেটা দিয়ে মারতে যান। উনি যদি ছুরি পান তবে ছুরি দিয়েই আঘাত করেন। তাছাড়াও আরও দু একটা ছোট খাটো সমস্যা আছে।
আমি – কি করে হল ওনার এই সমস্যা?
মিঃ সরকার – সেটা একটা গল্পের মত।
আমি – যদি ওনার ঘটনা বলেন তবে ভাল লাগবে।
মিঃ সরকার – এইসব ঘটনা কাউকে বলা নিষেধ।
আমি অনেক অনুরোধ ওনার কাছে ডঃ সুধীর রাও এর ঘটনা শুনি। আমাকে প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছিল যে আমি কোনদিন কাউকে এইসব ঘটনা জানাব না। আজ ২৬ বছর হয়ে গেছে। এই গল্প লেখার আগে আমি মিঃ সরকারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ওনাকে খুঁজে পাইনি। আমি আমার প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে সেই ঘটনা আপনাদের জানাব। কোন নাম সত্যি নয়। আসলে মিঃ সরকার আমাকে যে নাম গুলো বলেছিলান সেগুলোও হয়ত সত্যি নাম ছিল না। মিঃ সরকার নামটাও সত্যি নয়।
ডাঃ সুধীর রাও এর জন্ম অন্ধ্রপ্রদেশের এক ছোট কিন্তু বর্ধিষ্ণু গ্রামে। গ্রামের নাম রাইডান্ডি। যৌথ পরিবারে বড় হয়। সুধীরের দাদু সদানন্দ রাও ওই গ্রামের জমিদার ছিলেন। স্বাধীনতার পরে জমিদারি ক্ষমতা চলে যায় কিন্তু জমিদারি মেজাজ থেকে যায়। সুধীরের বাবারা আট ভাই ছিল। আট ভায়ের একটাই বোন ছিল। সে ছিল সবার ছোট। সুধীরের বাবা গণেশ রাও পাঁচ নম্বর ছেলে ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই গণেশের চাষ বাস করার দিকে মন ছিল না। ও পড়াশুনা বেশী ভালবাসত। সদানন্দ রাও গণেশকে পড়ার দিকেই মন দিতে বলেন। ফলে গণেশ চাষের কাজ প্রায় কিছুই করতো না। এতে ওর বাকি ভাই বা দাদারা কিছু বলতো না। কিন্তু গণেশের বোন কানিমলি এতে খুশী ছিল না। তখনও কোন ছেলে মেয়েরই বিয়ে হয়নি। সবাই একসাথেই থাকতো। কানিমলিও ভাইদের সাথে চাষের কাজ করতো। মাঝে মাঝেই মেয়ে কানিমলি কোন না কোন ঝামেলা বাঁধাত। একদিন দুপুরে খেতে বসে –
কানিমলি – মা তুমি সব সময় গণেশকে বেশী দুধ আর সব কিছু বেশী বেশী খেতে দাও কেন?
মা – আমি একই দেই তোর মনে হয় ওকে বেশী দেই
কানিমলি – দেখ আমার দুধের বাটি আর গণেশের বাটি। ওর বাটি বড় আর ওতে বেশী দুধ আছে
গণেশ – তুই এই বাটি নে আর আমাকে তোর বাটি দে
কানিমলি – চাই না আমার দয়া দেখান দুধ। আমি শুধু বলতে চাই যে মা তোকে বেশী ভালো বাসে।
মা – তুই শুধু দাদাদের সাথে জমিতে কাজ করিস তোর বেশী বুদ্ধি দরকার নেই। আমার গণেশ পড়াশুনা করে, দুধ খেলে বুদ্ধি বেশী হয়।
বাকি ভাইদের জন্যে কানিমলি বেশী কিছু বলতে পারে না। বাকি ভাইরাও চাইতো যে গণেশ পড়াশুনা করুক। তো গণেশ পড়াশুনা করলেও রোজ সকালে জমিতে কাজ করতে যেত। ভালো ভাবে কিছু করতে পারতো না, কিন্তু কিছু কাজ করতো। কানিমলি সেই কাজেরও ভুল ধরত আর ঝামেলা করতো। যখন গণেশ বি.এস সি. পড়ে তখন একদিন গণেশ ধানের চারা লাগানোতে কিছু ভুল করে।
কানিমলি – বাবা আমার একটা কথা ছিল।
সদানন্দ রাও – কি কথা?
কানিমলি - এই মায়ের আদরের গণেশকে বল চাষের কাজে না যেতে
সদানন্দ রাও – তোমার সাহস এতো হয়ে গেছে যে আমার সাথে এই ভাবে কথা বলছ
কানিমলি – অনেকদিন সহ্য করেছি, আজ আর না বলে পাড়ছি না
সদানন্দ রাও – এতো দিন কেন সহ্য করেছো? তোমার কিছু খারাপ লাগলে এতদিন কেন বলোনি? কিন্তু "এই মায়ের আদরের গণেশ" জাতীয় কথা আমি পছন্দ করি না।
কানিমলি – ঠিক আছে এই কথা আর বলবো না। কিন্তু এটাও সত্যি যে মায়ের আদরেই গণেশ এই রকম হয়ে গেছে।
সদানন্দ রাও – কি রকম হয়ে গেছে?
কানিমলি – গণেশ আজ বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে জমিতে রুয়েছে।
সদানন্দ রাও – সে তো ভালো কথা।
কানিমলি – ভালো কথা হত যদি ঠিক মত লাগাত
সদানন্দ রাও – কেন কি করেছে?
কানিমলি – এতো দূরে দূরে চারা রুয়েছে যে অনেক গাছ কম লেগেছে। পুরো পাঁচ কাঠা জমিতে ধান কম হবে।
সদানন্দ রাও – ওর মাঝখানে কয়েকটা করে চারা লাগিয়ে দাও।
কানিমলি – সেরকম করতে গেলে এখনকার চারা নষ্ট হয়ে যাবে।
সদানন্দ রাও – ঠিক আছে পাঁচ কাঠা জমিতে ধান কম হলে কিছু হবে না। তোমাকে ওই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
কানিমলি – এই ফসল উঠলে গণেশ যেন কম চালের ভাত খায়
সদানন্দ রাও – মানে কি বলতে চাইছ তুমি?
কানিমলি – ওর লাগানো জায়গায় চাল কম হবে। তাই ও কম খাবে ।
সদানন্দ রাও – কানি! এইভাবে কথা বলবে না, মেরে ঘর থেকে বেড় করে দেবো
কানিমলি – তাও আমারই দোষ, গণেশের কোন দোষ নেই
সদানন্দ রাও – গণেশ, এক্ষুনি এসো এখানে
গণেশ – কি বাবা
সদানন্দ রাও – তুমি আজ ধানের চারা লাগিয়েছ?
গণেশ – হ্যাঁ বাবা, একটু ভুল হয়ে গেছে
সদানন্দ রাও – কাল থেকে তুমি চাষের কাজে যাবে না
গণেশ – আমি সাবধান থাকবো বাবা, আর এই ভুল করবো না।
সদানন্দ রাও – আমি তোমাকে চাষের কাজে যেতে নিষেধ করেছি।
গণেশ – ঠিক আছে।
সদানন্দ রাও – রোজ সকালে কাজে না গিয়ে ঠিক করে পড়াশুনা করবে। আমি আগেও বলেছি, আবারো বলছি তোমাকে পড়াশুনা করে ডাক্তার হতে হবে।
গণেশ – চেষ্টা করছি বাবা।
সদানন্দ রাও – চেষ্টা করছি না। তোমাকে ডাক্তার হতেই হবে। তোমার ধান লাগানো ভুল হলে আমি কিছু বলবো না। কিন্তু ডাক্তার না হলে আমার মরা মুখ দেখবে।
সদানন্দ রাও বৌকে ডেকে বলে দেন পরদিন থেকে গণেশ যেন জমিতে কাজে না যায়। আর ওকে যেন রোজ আধসের করে দুধ বেশী দেওয়া হয়। কানিমলি বাবাকে কিছু বলতে পারে না। কিন্তু মনে মনে আরও ক্ষেপে যায়।
এমনিতেই অন্ধ্রের সবাই বেশ কালো। তার মধ্যে আমাদের কানিমলির চেহারা আরও বৈশিষ্ট্য পূর্ণ ছিল। ও জমিতে যেমন খাটতে পারতো, খেতও সেইরকম। প্রায় ছ ফিট লম্বা ১৫০ কেজিরও বেশী ওজনের চেহারা। তার ওপর সামনের তিনটে দাঁত উঁচু হয়ে মুখ থেকে বেরিয়ে থাকে। ওকে দেখেই গ্রামের বাচ্চারা ভয়ে পালিয়ে যায়।
এই ভাবে দিন কেটে যায়। গণেশ রাও ডাক্তারি পড়তে পারে না। ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করতে পারে না। বাবার পা ধরে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চায়। সদানন্দ রাও যতই কঠোর মানুষ হোক না কেন এই ছেলেকে খুব ভালবাসতেন। ছেলের সাথে সাথে উনিও কাঁদেন।
গণেশ – বাবা আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমার ছেলে বা মেয়ে যাই হোক তাকে আমি ডাক্তার বানাবো।
সদানন্দ রাও – আমি ছেলেকে ডাক্তার বানাতে পারলাম না, তোমাকে আশীর্বাদ করি তুমি সফল হও।
গণেশ – বাবা আমি এখানকার স্কুলে শিক্ষকতা করবো। আমার ছেলে মেয়ে হলে তাকে আমি প্রথম থেকে সেই উদ্দেশ্য নিয়েই পড়াবো।
কানিমলি আরও ক্ষেপে যায়। বাবার ভয়ে সামনে বেশী কিছু বলতে পারে না। কিন্তু বাবার আড়ালে গণেশকে ডাক্তারবাবু বলে ডাকে।
Tumi_je_amar-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here
মূল ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
চাঁদের অন্ধকার
Written By Tumi_je_amar
Written By Tumi_je_amar
ডঃ সুধীর রাও (০১)
এরপর মাঝে মাঝেই ওখানে যেতাম। একদিন গিয়ে দেখি ওনার টেবিলের সামনে একজন ভদ্রলোক বসে। আমি গিয়ে আমার মেসিনের কথা বলে, মেসিন রিপেয়ার করি। ফিরে এসে দেখি ওই ভদ্রলোক তখনও বসে। আমার সেদিন বেশী কাজ না থাকায় মিঃ সরকারের সাথে কিছু গল্প করি। ওই ভদ্রলোকও আমাদের গল্পে যোগ দেন। আমাদের কথা সব ইংরাজিতেই হচ্ছিলো। একটু অবাক হয়ে যাই মিঃ সরকার ওই ভদ্রলকের সাথে আমার আলাপ করিয়ে দেন না।
আমি জেরক্স মেসিনের ইঞ্জিনিয়ার শুনে ওই ভদ্রলোক ওই মেসিন কি ভাবে কাজ করে জানতে চান। আমি ছোট করে ওনাকে থিওরি বোঝাই। উনিও মন দিয়ে শোনেন আর অনেক প্রশ্নও করেন। এর প মিঃ সরকার এক পিওন কে চা দিতে বলেন। তিন জনেই চা খাই। সিগারেট খেতে চাইলে মিঃ সরকার বলেন যে ওনার অফিসে স্মোক করতে পারি। আমার কাছে সেদিন কোন একটা বিদেশী সিগারেট ছিল। আমি অফার করলে দুজনেই সিগারেট নেন। সিগারেট খাবার পর ওই ভদ্রলোক বলেন যে ওনার অনেক কাজ আছে তাই উনি চলে যাবেন। উনি আমাকে থিওরি বোঝানোর জন্যে আর সিগারেটের জন্যে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যান।
আমি – আচ্ছা মিঃ সরকার আপনি ওনার সাথে আমার আলাপ করিয়ে দিলেন না কেন?
মিঃ সরকার – আমি জানতাম আপনি এই প্রশ্ন করবেন।
আমি – তাহলে বলুন কেন আলাপ করালেন না।
মিঃ সরকার – আসলে উনিও এখানকার একজন পেসেন্ট, আর আমরা কোন রুগীর সাথে কারো আলাপ করিয়ে দিতে পারি না।
আমি – মানে!
মিঃ সরকার – ওনার নাম ডঃ সুধীর রাও।
আমি – উনি ডাক্তার?
মিঃ সরকার - উনি ভাইজাগের একজন প্রতিষ্ঠিত সার্জেন ছিলেন
আমি – এখন?
মিঃ সরকার – এখন উনি এখানকার পেসেন্ট
আমি – দেখে বা কথা বলে তো কিছুই মনে হল না যে উনি পাগল!
মিঃ সরকার - এইটাই আমাদের সবার ভুল ধারণা। এখানকার রুগি হলেই যে পাগল হতে হবে তার কোন মানে নেই।
আমি – সে বুঝলাম, পাগল বলার জন্যে দুঃখিত। তবু আমরা এখানকার রুগি হলেই পাগল ভাবতে অভ্যস্থ।
মিঃ সরকার – উনি গত তিন বছর ধরে আছেন এখানে।
আমি – ওনার সাথে কথা বলে আমি তো কোন অসংগতি বুঝলাম না
মিঃ সরকার – কেউই বুঝতে পারেন না। বরঞ্চ এখানকার অন্য রুগীদের ছোট খাটো সমস্যার চিকিৎসা উনিই করে দেন।
আমি – তবে সমস্যা কোথায়?
মিঃ সরকার – উনি কোন মাঝবয়েসী মহিলা, বিশেষ করে কালো মহিলা দেখলেই খেপে যান। হাতের কাছে যা পান সেটা দিয়ে মারতে যান। উনি যদি ছুরি পান তবে ছুরি দিয়েই আঘাত করেন। তাছাড়াও আরও দু একটা ছোট খাটো সমস্যা আছে।
আমি – কি করে হল ওনার এই সমস্যা?
মিঃ সরকার – সেটা একটা গল্পের মত।
আমি – যদি ওনার ঘটনা বলেন তবে ভাল লাগবে।
মিঃ সরকার – এইসব ঘটনা কাউকে বলা নিষেধ।
আমি অনেক অনুরোধ ওনার কাছে ডঃ সুধীর রাও এর ঘটনা শুনি। আমাকে প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছিল যে আমি কোনদিন কাউকে এইসব ঘটনা জানাব না। আজ ২৬ বছর হয়ে গেছে। এই গল্প লেখার আগে আমি মিঃ সরকারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ওনাকে খুঁজে পাইনি। আমি আমার প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে সেই ঘটনা আপনাদের জানাব। কোন নাম সত্যি নয়। আসলে মিঃ সরকার আমাকে যে নাম গুলো বলেছিলান সেগুলোও হয়ত সত্যি নাম ছিল না। মিঃ সরকার নামটাও সত্যি নয়।
ডাঃ সুধীর রাও (০২)
ডাঃ সুধীর রাও এর জন্ম অন্ধ্রপ্রদেশের এক ছোট কিন্তু বর্ধিষ্ণু গ্রামে। গ্রামের নাম রাইডান্ডি। যৌথ পরিবারে বড় হয়। সুধীরের দাদু সদানন্দ রাও ওই গ্রামের জমিদার ছিলেন। স্বাধীনতার পরে জমিদারি ক্ষমতা চলে যায় কিন্তু জমিদারি মেজাজ থেকে যায়। সুধীরের বাবারা আট ভাই ছিল। আট ভায়ের একটাই বোন ছিল। সে ছিল সবার ছোট। সুধীরের বাবা গণেশ রাও পাঁচ নম্বর ছেলে ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই গণেশের চাষ বাস করার দিকে মন ছিল না। ও পড়াশুনা বেশী ভালবাসত। সদানন্দ রাও গণেশকে পড়ার দিকেই মন দিতে বলেন। ফলে গণেশ চাষের কাজ প্রায় কিছুই করতো না। এতে ওর বাকি ভাই বা দাদারা কিছু বলতো না। কিন্তু গণেশের বোন কানিমলি এতে খুশী ছিল না। তখনও কোন ছেলে মেয়েরই বিয়ে হয়নি। সবাই একসাথেই থাকতো। কানিমলিও ভাইদের সাথে চাষের কাজ করতো। মাঝে মাঝেই মেয়ে কানিমলি কোন না কোন ঝামেলা বাঁধাত। একদিন দুপুরে খেতে বসে –
কানিমলি – মা তুমি সব সময় গণেশকে বেশী দুধ আর সব কিছু বেশী বেশী খেতে দাও কেন?
মা – আমি একই দেই তোর মনে হয় ওকে বেশী দেই
কানিমলি – দেখ আমার দুধের বাটি আর গণেশের বাটি। ওর বাটি বড় আর ওতে বেশী দুধ আছে
গণেশ – তুই এই বাটি নে আর আমাকে তোর বাটি দে
কানিমলি – চাই না আমার দয়া দেখান দুধ। আমি শুধু বলতে চাই যে মা তোকে বেশী ভালো বাসে।
মা – তুই শুধু দাদাদের সাথে জমিতে কাজ করিস তোর বেশী বুদ্ধি দরকার নেই। আমার গণেশ পড়াশুনা করে, দুধ খেলে বুদ্ধি বেশী হয়।
বাকি ভাইদের জন্যে কানিমলি বেশী কিছু বলতে পারে না। বাকি ভাইরাও চাইতো যে গণেশ পড়াশুনা করুক। তো গণেশ পড়াশুনা করলেও রোজ সকালে জমিতে কাজ করতে যেত। ভালো ভাবে কিছু করতে পারতো না, কিন্তু কিছু কাজ করতো। কানিমলি সেই কাজেরও ভুল ধরত আর ঝামেলা করতো। যখন গণেশ বি.এস সি. পড়ে তখন একদিন গণেশ ধানের চারা লাগানোতে কিছু ভুল করে।
কানিমলি – বাবা আমার একটা কথা ছিল।
সদানন্দ রাও – কি কথা?
কানিমলি - এই মায়ের আদরের গণেশকে বল চাষের কাজে না যেতে
সদানন্দ রাও – তোমার সাহস এতো হয়ে গেছে যে আমার সাথে এই ভাবে কথা বলছ
কানিমলি – অনেকদিন সহ্য করেছি, আজ আর না বলে পাড়ছি না
সদানন্দ রাও – এতো দিন কেন সহ্য করেছো? তোমার কিছু খারাপ লাগলে এতদিন কেন বলোনি? কিন্তু "এই মায়ের আদরের গণেশ" জাতীয় কথা আমি পছন্দ করি না।
কানিমলি – ঠিক আছে এই কথা আর বলবো না। কিন্তু এটাও সত্যি যে মায়ের আদরেই গণেশ এই রকম হয়ে গেছে।
সদানন্দ রাও – কি রকম হয়ে গেছে?
কানিমলি – গণেশ আজ বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে জমিতে রুয়েছে।
সদানন্দ রাও – সে তো ভালো কথা।
কানিমলি – ভালো কথা হত যদি ঠিক মত লাগাত
সদানন্দ রাও – কেন কি করেছে?
কানিমলি – এতো দূরে দূরে চারা রুয়েছে যে অনেক গাছ কম লেগেছে। পুরো পাঁচ কাঠা জমিতে ধান কম হবে।
সদানন্দ রাও – ওর মাঝখানে কয়েকটা করে চারা লাগিয়ে দাও।
কানিমলি – সেরকম করতে গেলে এখনকার চারা নষ্ট হয়ে যাবে।
সদানন্দ রাও – ঠিক আছে পাঁচ কাঠা জমিতে ধান কম হলে কিছু হবে না। তোমাকে ওই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
কানিমলি – এই ফসল উঠলে গণেশ যেন কম চালের ভাত খায়
সদানন্দ রাও – মানে কি বলতে চাইছ তুমি?
কানিমলি – ওর লাগানো জায়গায় চাল কম হবে। তাই ও কম খাবে ।
সদানন্দ রাও – কানি! এইভাবে কথা বলবে না, মেরে ঘর থেকে বেড় করে দেবো
কানিমলি – তাও আমারই দোষ, গণেশের কোন দোষ নেই
ডাঃ সুধীর রাও (০৩)
সদানন্দ রাও – গণেশ, এক্ষুনি এসো এখানে
গণেশ – কি বাবা
সদানন্দ রাও – তুমি আজ ধানের চারা লাগিয়েছ?
গণেশ – হ্যাঁ বাবা, একটু ভুল হয়ে গেছে
সদানন্দ রাও – কাল থেকে তুমি চাষের কাজে যাবে না
গণেশ – আমি সাবধান থাকবো বাবা, আর এই ভুল করবো না।
সদানন্দ রাও – আমি তোমাকে চাষের কাজে যেতে নিষেধ করেছি।
গণেশ – ঠিক আছে।
সদানন্দ রাও – রোজ সকালে কাজে না গিয়ে ঠিক করে পড়াশুনা করবে। আমি আগেও বলেছি, আবারো বলছি তোমাকে পড়াশুনা করে ডাক্তার হতে হবে।
গণেশ – চেষ্টা করছি বাবা।
সদানন্দ রাও – চেষ্টা করছি না। তোমাকে ডাক্তার হতেই হবে। তোমার ধান লাগানো ভুল হলে আমি কিছু বলবো না। কিন্তু ডাক্তার না হলে আমার মরা মুখ দেখবে।
সদানন্দ রাও বৌকে ডেকে বলে দেন পরদিন থেকে গণেশ যেন জমিতে কাজে না যায়। আর ওকে যেন রোজ আধসের করে দুধ বেশী দেওয়া হয়। কানিমলি বাবাকে কিছু বলতে পারে না। কিন্তু মনে মনে আরও ক্ষেপে যায়।
এমনিতেই অন্ধ্রের সবাই বেশ কালো। তার মধ্যে আমাদের কানিমলির চেহারা আরও বৈশিষ্ট্য পূর্ণ ছিল। ও জমিতে যেমন খাটতে পারতো, খেতও সেইরকম। প্রায় ছ ফিট লম্বা ১৫০ কেজিরও বেশী ওজনের চেহারা। তার ওপর সামনের তিনটে দাঁত উঁচু হয়ে মুখ থেকে বেরিয়ে থাকে। ওকে দেখেই গ্রামের বাচ্চারা ভয়ে পালিয়ে যায়।
এই ভাবে দিন কেটে যায়। গণেশ রাও ডাক্তারি পড়তে পারে না। ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করতে পারে না। বাবার পা ধরে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চায়। সদানন্দ রাও যতই কঠোর মানুষ হোক না কেন এই ছেলেকে খুব ভালবাসতেন। ছেলের সাথে সাথে উনিও কাঁদেন।
গণেশ – বাবা আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমার ছেলে বা মেয়ে যাই হোক তাকে আমি ডাক্তার বানাবো।
সদানন্দ রাও – আমি ছেলেকে ডাক্তার বানাতে পারলাম না, তোমাকে আশীর্বাদ করি তুমি সফল হও।
গণেশ – বাবা আমি এখানকার স্কুলে শিক্ষকতা করবো। আমার ছেলে মেয়ে হলে তাকে আমি প্রথম থেকে সেই উদ্দেশ্য নিয়েই পড়াবো।
কানিমলি আরও ক্ষেপে যায়। বাবার ভয়ে সামনে বেশী কিছু বলতে পারে না। কিন্তু বাবার আড়ালে গণেশকে ডাক্তারবাবু বলে ডাকে।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
Tumi_je_amar-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereTumi_je_amar-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment