আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
অসীম তৃষ্ণা
Written By pinuram
Written By pinuram
ত্রয়োদশ পর্ব
(#০৩)
বুকের কাছে তোয়ালে টেনে ঊর্ধ্বাঙ্গ ঢেকে হাইহাই করে চেঁচিয়ে উঠল ছেলের দিকে, "কি রে খাট ভেঙ্গে ফেলবি নাকি? আর এই ভাবে এই ঘরে এলি কেন, নিতা এখন যায়নি।"
আদি মুচকি হেসে উত্তর দিল, "ডোন্ট ওরি মা, এই খাট ভাঙলে অন্য খাট আছে তো।"
ঘরে নিতা আছে তাও কেমন অসভ্যতামি শুরু করছে ছেলে, শিরশির করে উঠল সারা দেহ। ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, "সেটাও তো মনে হয় এতদিনে ভেঙ্গে ফেলেছিস।"
আদি মুচকি হেসে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "দুটো খাট না হয় মিলিয়ে একটা পোক্ত খাট বানিয়ে নেব, তাহলে ভাঙ্গার আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।" তারপরে চোখ টিপে অসভ্যের মতন তাকিয়ে বুকের ওপরে হাত বুলিয়ে বলে, "তারপরে আমার ওপরেই শুয়ে যেও, সেটা কিন্তু আর ভাঙবে না অনেক...."
ঋতুপর্ণা আড় চোখে আর দরজার দিকে তাকিয়েই দৃষ্টি পিছলে যায় আদির ঊরুসন্ধির দিকে। লুক্কায়িত অজগর সাপ একটু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে, আজকে যেন রাকঢাক না করেই অসভ্যের মতন দুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছেলেকে একটা চড়ের ইশারা করে বলে, "তুই না সত্যি বড্ড শয়তান।"
আদি মুচকি হেসে বলে, "বেশ দারুন একটা ড্রেস করো তো"
ঋতুপর্ণা আলমারি থেকে একটা হাত কাটা গোলাপি টপ বের করে আদির সামনে ধরে বলে, "এটা ঠিক আছে?"
আদি মাথা দুলিয়ে বলে, "একদম পারফেক্ট। তাড়াতাড়ি ঢুকিয়ে নাও বড্ড খিদে পেয়েছে।" বলেই বুকের ওপরে হাত বুলিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা এক হাসি দেয়।
যেমন ইতর ভাবে "ঢুকিয়ে নাও" বলল ওর ছেলে, সেই শুনে ওর কান গরম হয়ে গেল। চোখ পাকিয়ে উত্তর দেয় ছেলেকে, "কি রে তুই? যতসব ফাজলামো তাই না? নিতা এখন বাড়িতে রয়েছে।"
আদি চোখ পাকিয়ে বলে, "নিতা এখন রান্না ঘরে বাসন মাজছে।"
গোলাপি টপ ঋতুপর্ণার উর্ধাঙ্গের সাথে চেপে বসে গেল। ব্রার বাঁধনে হাঁসফাঁস করতে করতে পীনোন্নত স্তন যুগল সামনের দিকে সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন উঁচিয়ে গেল। বক্ষ বিভাজিকার বেশ খানিকটা টপের থেকে ছলকে বেড়িয়ে এলো।
চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে আদিকে বলল, "যা গিয়ে বের করে নিয়ে আয় তারপরে বসে পড়ি।"
আদিও কম যায় না, এ যেন এক খেলা। মায়ের দিকে একপা এগিয়ে গিয়ে বলে, "বের করে নিয়ে এলেই তাহলে বসে পড়বে তো?"
আয়নার প্রতিফলনে মায়ের ঠোঁট দুষ্টু মিষ্টি হাসি দেখে অর্থ কিছুতেই ধরতে সক্ষম হয় না। ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে আগের বাক্যের অর্থ বুঝিয়ে দেয়, "রান্নাঘর থেকে খাবার বের করে নিয়ে আর তারপরে আমরা খেতে বসে পড়ি।" বলেই মাথা নাড়িয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে উত্তর দেয়, "নোংরা মাথা নোংরা চিন্তাধারা নিয়েই ভর্তি।"
সদ্য স্নাত স্নিগ্ধ মায়ের অপরূপ সুন্দর মুখমন্ডলের দিকে একভাবে চেয়ে থাকে আদি। প্রসাধনহীন চেহারা হলেও স্নানের পরের মায়ের সৌন্দর্য ভীষণ ভাবে উন্মিলিত হয়ে উঠেছে। গালের দুইপাশে দুটো চুলের গুচ্ছ গোলাপি নরম গালের ওপরে দুলছে। দুই অনাবৃত ফর্সা পেলব হাত, ফর্সা রোমহীন বাহুমূল, গোলাপি টপ মায়ের স্বাস্থ্যবতী নধর ঊর্ধ্বাঙ্গের সাথে রঙের প্রলেপের মতন চেপে বসা। গোল নরম পেটের মাঝে সুগভীর নাভির আবছা নরম ফোলা আকার। স্তনের ওপরে চেপে বসা ব্রা'র দাগ পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। কোমরের নিচে সাদা রঙের প্লাজোর এক অবস্থা, ভারি সুগোল নিটোল নিতম্বের ওপরে রঙের প্রলেপের মতন এঁটে বসে গেছে। লাল রঙের প্যান্টি আবছা দেখা যাচ্ছে, ফোলা নরম ঊরুসন্ধির ত্রিকোণ আকার দেখে শুকনো নেতিয়ে পরা সাপও ফনা তুলে অনায়াসে দাঁড়িয়ে যাবে। মুখে হাতে ক্রিম মেখে তৈলাক্ত করে নিয়েছে ত্বক, সেই ত্বকের জ্বলজ্বল স্নিগ্ধরূপ ভীষণ সুন্দরী করে তুলেছে ঋতুপর্ণাকে।
ঋতুপর্ণা উঠে দাঁড়িয়ে আদির দিকে একটু রাগত কণ্ঠে বলে, "এখন গেলি না? একটু কাটাকুটি করে মাখতেও হবে যে তবে না বসব।"
আদি মায়ের রূপে বিভোর হয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মায়ের কথা শুনে হাঁ করে জিজ্ঞেস করে, "কি মাখব?"
চোখ পাকিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, "আলু সেদ্ধ দিয়েছি সেটা মাখতে হবে। যা রান্নাঘর থেকে একটু পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নিয়ে বস।"
আদি নাছোড়বান্দা মাকে ছেড়ে যেতে হবে শুনেই মুখ কাঁচুমাচু করে উত্তর দিল, "তুমিও চল না প্লিস।"
ঋতুপর্ণা ভেজা চুল পিঠের ওপরে এলিয়ে, মিষ্টি হেসে ছেলেকে বলল, মা ছাড়া এক পা চলার গতি নেই বুঝি?"
আদি মাথা দুলিয়ে মায়ের দিকে দুই হাত জোড় করে প্রনাম করে বলে, "তুমি অন্নপূর্ণা মাতৃময়ী দেবী, তোমাকে ছেড়ে কি করে থাকি।"
ঋতুপর্ণা আদির কাছে এসে ওর ভেজা চুলে বিলি কেটে আদর করে বলে, "আচ্ছা চল।"
ওরা বেড়িয়ে আসতেই নিতা ওদের দেখে হেসে জিজ্ঞেস করল, গত রাতে কোথায় গিয়েছিল ঠাকুর দেখতে। মুচকি হেসে ঋতুপর্ণা উত্তর দিল যে, কোলকাতার অনেক ঠাকুর দেখেছে তারপরে রাতে একটা গ্রামে গিয়েছিল ঠাকুর দেখতে সেইখান থেকে ফিরতে ফিরতে সকাল হয়ে গেছে। নিতা কাজ সেরে বেড়িয়ে চলে যাওয়ার পরে ঋতুপর্ণা রান্না ঘরে ঢুকে পড়ল খাবার আনতে। আদি টেবিলে বসে তবলা বাজাতে বাজাতে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। গজগামিনী মন্দ ছন্দ তালে ঋতুপর্ণার সুডৌল নিতম্বের দুলুনি দেখতে দেখতে ওর সাপের ফনা উদ্ধত হয়ে ওঠে। আদি সেই ফনা তোলা সাপের মাথা ঢাকতে একদম চেষ্টা করে না।
দুই থালা নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়েই ঋতুপর্ণার চোখ চলে যায় আদির অনাবৃত ঊর্ধ্বাঙ্গের দিকে। লোমশ ছাতি ফুলিয়ে ওর দিকে ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে। ছেলের পেশীবহুল ছাতি আর বলিষ্ঠ বাহু দেখে জড়িয়ে ধরতে বড্ড ইচ্ছে করে ঋতুপর্ণার। অকস্মাত ওর চোখের দৃষ্টি পিছলে পরে যায় আদির বারমুডার ওপরে, না চাইতেও ফনা তোলা সাপের মাথা দেখে নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে হৃদয়ের আন্দোলন সংবরণ করে নেয়।
আদি ওর পাশের চেয়ারে চাপড় মেরে মাকে বসতে অনুরোধ করে। ঋতুপর্ণা থালা হাতে ওর পাশে এসে দাঁড়াতেই মায়ের কোমর জড়িয়ে নরম পেটের ওপরে নাক মুখ ঘষে উত্যক্ত করে তোলে। সদ্য স্নাত মায়ের গায়ের সাবানের সুগন্ধের সাথে সাথে মায়ের ভেজা স্নিগ্ধ শরীর থেকে এক মন মাতানো সুবাস ছলকে বেড়িয়ে আদির নাসারন্ধ্র, মাথা বুক পাগল করে তোলে।
আচমকা ওইভাবে জড়িয়ে নরম তুলতুলে পেটের ওপরে গরম নাকের ঘর্ষণে মিউমিউ করে বেড়ালের মতন কেঁপে ওঠে ঋতুপর্ণা। ভাতের থালা টেবিলে নামিয়ে ছেলেকে মারতে মারতে মিহি গুঙ্গিয়ে ওঠে, "ছাড় ছাড় বদমাশ, এক মিনিটের জন্য যেন ছেড়ে থাকতে পারিস না তাই না।"
মায়ের তুলতুলে নরম পেট কচলে ধরে আদর করে বলে, "এমন কি বাড়াবাড়ি করলাম, ছেলে মাকে ছাড়া চলতে পারে না এটাই বাড়াবাড়ি হয়ে গেল নাকি?"
ঋতুপর্ণা চেয়ারে বসে পড়তেই আদি মায়ের গায়ের ওপরে ঢলে পড়ে আদুরে গলায় আবদার করে, "খাইয়ে দাও।"
স্নিগ্ধ মাতৃ হৃদয় ছলকে ওঠে ছেলের এই আবদারে। দুটো থালার ভাত একসাথে মেখে আদির মুখে গ্রাস তুলে বলে, "আচ্ছা বাবা, তবে হাতে কামড় দিলে কিন্তু খুব পেটান পেটাব।"
কচি বাচ্চার মতন মাথা দুলিয়ে দেয় আদি। বলেই বাঁ হাতে ছেলের গাল টিপে বলে, "উম্ম আমার দুষ্টু সোনা নে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। তারপরে একটু রেস্ট নিয়ে নে। রাতে বিসর্জন কখন ফিরব তার নেই ঠিক।"
আদিও খেতে খেতে বারেবারে মায়ের উন্নত বক্ষ বিভাজনের দিকে ঝুঁকে পরে। কর্কশ গাল দিয়ে আলতো করে চেপে ধরে পীনোন্নত বক্ষ। দুইহাতে মায়ের নরম কোমর জড়িয়ে এক প্রকার মাকে কোলের কাছে টেনে নিয়ে আসে। দুই দেহের মাঝে তিল ধারনের স্থান নেই। ছেলের আদর খেতে খেতে ঘন হয়ে বসে খাওয়া দাওয়া সেরে ফেলে ঋতুপর্ণা আর আদি। দুষ্টু ছেলে মাঝে মাঝেই ওর টপের তলার দিক থেকে তুলে নরম পেটে কাতুকুতু দিয়ে ওকে উত্যক্ত করে তোলে। ঋতুপর্ণাও ছেলেকে মাঝে মাঝে আলতো চড় মেরে আদর করে দেয়।
খাওয়া শেষে ঋতুপর্ণা এঁটো বাসন রান্না ঘরের রেখে আদিকে হাত ধুয়ে বসার ঘরে বসতে বলে।
আদি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকাতেই গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয় ঋতুপর্ণা, "তোর সাথে কিছু কথাবার্তা আছে।"
মায়ের গম্ভীর চেহারা দেখে আদি প্রমাদ গোনে, যখন তখন মাকে জড়িয়ে ধরে দুষ্টুমি ভরা আদর করা হয়ত মায়ের ভালো লাগছে না। মা মনে হয় রেগে গেছে, হয়ত বলে বসবে অনেক হয়েছে এইবারে আমাদের মাঝে একটা দেয়াল দেওয়া উচিত। চুপচাপ ডিভানে বসে মনের মধ্যে অনেক কিছু অঙ্ক কষতে চিন্তা মগ্ন হয়ে পড়ে।
ঋতুপর্ণা বসার ঘরে ঢুকে আদিকে চিন্তামগ্ন হয়ে বসে থাকতে দেখে মনে মনে ভীষণ ভাবে হেসে ফেলে। ছেলের চিত্তের আন্দোলন সহজেই ধরে ফেলে মায়ের মন।
ঋতুপর্ণা মুখ গম্ভীর করে ডিভানে এসে বসে ছেলের চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, "এত কি ভাবছিস?"
মায়ের গুরু গম্ভীর কণ্ঠ স্বর শুনে আদির গলা বসে যায়, প্রমাদ গুনতে গুনতে আমতা আমতা করে বলে, "না মানে তুমি কিছু বলবে বলছিলে তাই ভাবছিলাম।"
ভীষণ হাসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তাও সেই কল্লোল হাসি বুকের অন্দরে চেপে ঋতুপর্ণা কঠিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "এই সেমেস্টারের পরে আরো একটা সেমেস্টার বাকি। তারপরে কি?"
মায়ের মনের অভিপ্রায় বিন্দু মাত্র ধরতে পারে না আদি, মায়ের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে বুঝে যায় যে পাশে বসা রমণী এখন ওর কঠোর জননী। আদি গলা খাঁকড়ে উত্তর দেয়, "মানে লাস্ট সেমেস্টারে ক্যাম্পাসিং হবে তাতে কোন বড় কোম্পানিতে চাকরি পেয়েই যাবো। না হলে কয়েকজন সিনিয়ার আছে যাদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক আছে তাদের ধরলে কোথাও না কোথাও একটা ভালো চাকরি হয়েই যাবে ওই নিয়ে চিন্তা করো না।"
হাতের মুঠো শক্ত করে বুকের মধ্যে ফেটে পড়া হাসি চেপে ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, "চাকরি পেয়ে যাবি তাই বলে কি পড়াশুনা মাথায় তুলে দিবি?"
আদি মাথা নাড়ায়, "না না, কাল থেকে কলেজ শুরু একদম মন দিয়ে পড়াশুনা করব।"
গম্ভীর ভাবে খানিক চিন্তামগ্ন হয়ে ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, "বেশ, আচ্ছা যদি তোর কোলকাতার বাইরে চাকরি হয় তাহলে কি করবি?"
আদি মাথা চুলকে উত্তর দেয়, "সেটা অনেক পরের কথা তখন দেখা যাবে কি করব। হঠাৎ এই সব প্রশ্ন কেন আসছে বল না। কি হয়েছে তোমার?"
ঋতুপর্ণা আদির কাছে সরে এসে বলে, "মাঝে মাঝে তোর জন্য আমার জন্য বড় ভাবনা হয়। তোকে বড় করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছি রে।"
বলেই মনের ভাব আর চেপে রাখতে পারে না ঋতুপর্ণা। আদির গালে নরম হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, "সব মায়ের একটা স্বপ্ন থাকে, ছেলে বড় হবে, মায়ের দেখাশুনা করবে।"
নরম হাত গালে পড়তেই আদিও গলে যায়, মায়ের কোলে মাথা দিয়ে আদুরে কণ্ঠে উত্তর দেয়, "ওহ শুধু এই কথা। আমি ভাবলাম কি না কি বলবে।"
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে মনে মনে বলে, হ্যাঁ আমি জানি তুই এতক্ষন ধরে কি চিন্তা ভাবনা করছিলিস!
এতক্ষন বুকের মধ্যে যে মাতৃ স্বত্বা জাগ্রত হয়ে উঠেছিল, কোলের ওপরে ছেলের মাথা পড়তেই সেই স্বত্বা প্রেমিকা স্বত্বার কাছে হার মেনে গেল। ছেলের চুলের মধ্যে বিলি কেটে চোখের তারায় মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে সেই অষ্টমী থেকে মণিমালাকে তোর কাছে ঘুরঘুর করতে দেখে আসছি। কি রে সত্যি করে বলত, মেয়েটাকে কি মনে ধরে গেছে।"
আদি ভুরু কুঁচকে উঠে বসে উত্তর দেয়, "হঠাৎ মণিমালা কোথা থেকে এলো?"
বুকের মধ্যে আরো একটা প্রশ্ন ভীষণ ভাবে চাগিয়ে উঠেছে, ছেলের ভবিষ্যৎ। ছেলের চুলে বিলি কেটে আদর করতে করতে কেমন যেন হারিয়ে যায়, "আমি আর কত দিন আছি বল, কিন্তু তোর সামনে বিশাল এক জীবন পড়ে রয়েছে। তারপরে কি একা একাই কাটাবি নাকি?"
মায়ের গলার স্বর পালটে যেতেই আদি উঠে বসল। মায়ের চোখে চোখ রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করল, "তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবে?"
চলে যাবে অর্থাৎ, কোথায় যাবে আবার ওকে ছেড়ে। মা ছাড়া কেউই ত নেই ওর জীবনে। জোরে জোরে মাথা দুলিয়ে মায়ের হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে চেপে ধরে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, "না তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। আমি অনাথ হতে চাই না।"
ছেলের এই আর্তনাদ ওর মাতৃস্বত্বাকে খুঁজে ফিরছে। ক্ষনিকের জন্য হারিয়ে যায় প্রেমিক ঋতুপর্ণা, ছেলের আর্তনাদে চোখের কোলে জল চলে আসে। ছেলের হাতের ওপরে হাত রেখে মিষ্টি করে বলে, "আমিও তো একসময়ে বুড়ি হয়ে যাবো রে সেটা কেন ভাবিস না।"
জোরে জোরে মাথা দুলায় আদি, "মা গো সেটা পরের কথা। এটাও হতে পারে যে এই যে বসে আছি, এখুনি একটা ভুমিকম্প হল আর আমরা সবাই মরে গেলাম, তাও কি বাঁচার আশা ছেড়ে দেব।"
ঋতুপর্ণা ওকে আস্বস্থ করে বলে, "বাঁচার আশা ছাড়তে বলিনি, তবে সময়ের সাথে মানুষের মনের পরিবর্তন অবশ্যাম্ভাবি। এই সত্য একদিন প্রকট হয়ে দাঁড়াবে তাই মনিমালার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম।"
আদি মায়ের হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলে, "হ্যাঁ মানুষ পরিবর্তনশিল, আমার মধ্যেও যেমন পরিবর্তন এসেছে ঠিক সেই রকম পরিবর্তন তোমার মধ্যেও এসেছে। তবে আমাদের জীবন সর্বদা একে ওপরকে ঘিরেই ছিল। এর মধ্যে কোন মণিমালা, কোন তিস্তা, কোন তনিমা নেই।"
ছেলের কথা শুনে আবার ওর হৃদয় মাঝে প্রেমিকা স্বত্বা জেগে ওঠে। আদি যে শুধু ওকেই প্রান ভরে ভালোবাসে সেটা আর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয় না। ছেলের হাত দুটো বুকের কাছে চেপে ধরে বলে, "এইখানে কোন সুভাষ, কোন প্রদীপ কোন কেউই নেই।" চোখের তারায় দুষ্টু মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বলে, "শুধু তোকে একটু পরীক্ষা করতে...."
মায়ের চোখের দুষ্টু মিষ্টি হাসি দেখে আদি হেসে ফেলে, "আচ্ছা এই ছিল তোমার মনে!"
মায়ের নরম গোলাপি গাল টিপে আদর করে বলে, "তবে মণিমালাকে ভালো লাগে এইমাত্র। ও এখন অনেক ছোট আর বড় কথা তোমার সাথে অন্য কাউকে এই বুকে ধরাতে চাই না।" আদি মায়ের কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে এনে গালে গাল ঘষে আদর করে বলে, "তুমি অনন্যা, তোমার তুলনা কারুর সাথে করা যায় না। তুমি একদিকে লক্ষ্মী, একদিকে দেবী দুর্গা, একদিকে মহামায়া" নাকের ওপরে নাকের ডগা ঘষে মিষ্টি ওরে বলে, "আমার রম্ভা উর্বশী সব কিছুই তুমি। মনে হয় না কোন ছেলে তার মায়ের মধ্যে এত রূপের দর্শন পায়।"
আদির কথা শুনে ঋতুপর্ণার হৃদয় উপচে ওঠে, ছেলের মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি? তাহলে ওইদিন অত মনিমালার সাথে মাখামাখি করছিলিস কেন?"
আদি মুচকি হেসে উত্তর দেয়, "কি করব বল ওইভাবে কেউ যদি গায়ে পড়ে কথা বলতে চলে আসে তাকে কি ফিরিয়ে দেওয়া যায় নাকি?"
ঋতুপর্ণা ভুরু কুঁচকে বলে, "সত্যি কিছু নেই তো?"
মায়ের গলায় কিঞ্চিত ঈর্ষার গন্ধ পেতেই আদি মুচকি হেসে মাকে জিজ্ঞেস করে, "কোথায় যেন কিছু একটা জ্বালা পোড়ার গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে।"
ছেলের কথা শুনে হেসে ফেলে ঋতুপর্ণা, "ইসসস ওই কচি মেয়েটাকে নিয়ে যেন আমি হিংসে করতে যাবো।"
আদি মায়ের পাতলা কোমর দুই বলিষ্ঠ বাহু দিয়ে আঁকড়ে ধরে নরম নিটোল বক্ষের মাঝে মাথা চেপে ধরে বলে, "আমি আর তুমি চিরকাল এইভাবেই থাকব। আমি চাকরি পেলে তোমাকে আর চাকরি করতে দেব না। আমার জন্য দিন রাত এক করে তুমি অনেক করেছ, আমি জানি কত কষ্ট করে তুমি আমাকে মানুষ করেছ। যেদিন চাকরি পেয়ে যাবো সেদিন তোমাকে আমি সোনায় সাজিয়ে দেব, মোমের পুতুলের মতন আমার বুকের মধ্যে সাজিয়ে রেখে দেব।"
ওর বুক ভেসে যায় ছেলের মুখের কথা শুনে। আশ্রয় নিরাপত্তা প্রেম ভালোবাসা এক পুরুষের কাছ থেকে এক নারীর যা চাহিদা তার সব পরিপূর্ণ করতে সক্ষম ওর প্রাণের ধন একমাত্র পুত্র, একমাত্র প্রেমিক, একমাত্র চোখের তারা, আদিত্য।
চোখের কোনায় শিশিরবিন্দু জমে আসে ঋতুপর্ণার, ছেলের গালে আদর করে হাত বুলিয়ে বলে, "তুই জড়িয়ে ধরলেই সোনা দিয়ে মুড়ে দিস ওই ধাতব সোনার প্রয়োজন আমার কাছে ফুরিয়ে এসেছে রে।"
আদি মায়ের কোমল দেহ পল্লব বলিষ্ঠ বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে কোমল বক্ষের ওপরে মাথা চেপে ধরে বলে, "সেটা ছিল এক ছেলের মনের কথা কিন্তু আমার বান্ধবী আমার ডার্লিংকে আমি কি একটু নিজের মতন করে সাজাতে পারি না।"
ঋতুপর্ণা নাক কুঁচকে মিষ্টি হেসে বলে, "ইসস, আচ্ছা সাজাস, মনের মতন করেই সাজাস।"
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুপুর গড়িয়ে তিনটে বেজে গেছে। চারটে সাড়ে চারতে নাগাদ দেবী বরন করতে যেতে হবে। আদির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে মিহি কণ্ঠে বলে, "নে নে, উঠে পড়, আর পড়ে থাকিস না।"
(#০৪)
ওই ডাগর কালো চোখের চাহনি দেখে আদি এক মুহূর্ত দেরি না করে ডিভান ছেড়ে লাফিয়ে উঠে পড়ে। মায়ের হাত টেনে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। আচমকা হাত টেনে ধরাতে টাল সামলাতে না পেরে ছেলের প্রসস্থ বুকের ওপরে আছড়ে পরে ঋতুপর্ণার কোমল দেহ পল্লব। কবজি মুচড়ে নিজেকে মুক্ত করার বৃথা প্রচেষ্টা করে, কিন্তু আদি ঋতুপর্ণার চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে ওকে অবশ করে দেয়।
ছেলের বুকের ওপরে ঘন হয়ে এসে মিহি সুরে জিজ্ঞেস করে, "এই কি করছিস রে, দেরি হয়ে যাবে না?"
আদি এক হাতে মায়ের নরম কোমর জড়িয়ে চেপে ধরে মাথা নিচু করে দেয় মায়ের আধাখোলা ঠোঁটের দিকে। আদ্রকণ্ঠে বলে, "একটু আদরে কত আর দেরি হবে।" বলে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় মায়ের লাল নরম ঠোঁটের ওপরে।
হারিয়ে যায় ঋতুপর্ণা। ছেলের গালে হাত দিয়ে আদর করে মাথা টেনে ধরে গভীর করে নেয় চুম্বন। এই চুম্বনে কামেরগন্ধ নেই, লালসা, কামনার লেশমাত্র নেই শুধু আছে অনাবিল আনন্দ, অনাবিল প্রেমের জোয়ারে ভেসে যাওয়ার পরম তৃপ্তি। ছেলের ঠোঁট ওর ঠোঁটের ওপরে চেপে বসে, একটু একটু করে ওর মুখের মধ্যে সেঁধিয়ে যাচ্ছে ছেলের জিব আর লালা। ওপরে ঠোঁট কামড়ে ধরল ঋতুপর্ণা, চোখ বন্ধ, নিঃশ্বাস ধিমে লয়ে ছেলের শ্বাসের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের ঠোঁটের উষ্ণতায় পরস্পরকে ভাসিয়ে দেয়। চুম্বনটা দীর্ঘ করার আপ্রান চেষ্টা করে আদি কিন্তু ঋতুপর্ণা কিছু পরে শ্বাস নেওয়ার জন্য ঠোঁট ছেড়ে দেয়। আদি চুপচাপ মিটিমিটি হাসতে হাসতে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে।
ঋতুপর্ণা, সারা অঙ্গে মদমত্ত ছন্দ তুলে চোখ পাকিয়ে হেসে দেয় ওর দিকে, "তুই না বড্ড.... যাহ।"
ঠোঁট কুঁচকে একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে যায়। আদি মায়ের এক পা বাড়াতেই, তর্জনী নাড়িয়ে বারন করে দেয় কাছে আসতে। চোখের ইশারায় জানিয়ে দেয় নিজের জামা কাপড় পরে বসার ঘরেই বসে থাকতে। আদি জানে, মায়ের সাজগোজ করতে করতে এক ঘন্টার মতন লেগেই যাবে, ততক্ষন কিছুই করার নেই। বন্ধ দরজার আড়ালে মা আবার কোন রূপে সেজে বের হবে সেই চিন্তায় মগ্ন। সপ্তমীতে স্বর্গের নর্তকী রূপে দর্শন দিয়েছিল, তার পরে অষ্টমীতে মদালসা রূপ, নবমীতে ভীষণ লাস্যময়ী সুন্দরী প্রেয়সীকে কাছে পেয়েছিল এই দশমীতে ওর মহামায়া মা কোন রূপে অবতারন করবে সেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়।
তাই নিজের ঘরে গিয়ে একটা সাদা পাঞ্জাবি আর জিন্স পরে তৈরি হয়ে বসার ঘরে বসে টিভি দেখতে শুরু করে দিল। একবার এর মাঝে তিস্তার ফোন এলো, আক্ষেপ করে জানাল কোলকাতা ফিরতে এখন ওদের বেশ কয়েকদিন দেরি। আদি নির্বিকার ভাবেই উত্তর দিল তিস্তার প্রশ্নের। এখন ওর বুকের মধ্যে কোন তিস্তা কোন মণিমালা কারুর আর জায়গা নেই, পুরো বুকটাই ওর প্রেয়সী মায়ের জন্য সযত্নে রক্ষিত। এক পা এগিয়ে রেখেছেই অন্য পা বাড়ানোর অপেক্ষায় প্রতি মুহূর্ত প্রহর গুনছে আদি। মাঝে মাঝে বন্ধুদের ফোন আসে, কথাবার্তা হয় কিন্তু মন পরে থাকে মায়ের ঘরের দিকে।
এর মাঝে পুজোর প্যান্ডেল থেকে পার্থ ফোন করে জিজ্ঞেস করে কতক্ষনে ও আসবে। বিসর্জনের আগে একটু মদের আসর জমিয়েছে সোসাইটির অফিসে। আদি জানিয়ে দেয় এক ঘন্টার মধ্যেই নিচে নেমে যাবে। পার্থ জানিয়ে দেয় ওরা এখন বোতল কিনতে যাচ্ছে, এক ঘন্টার মধ্যে চলে আসবে।
এক ঘন্টা প্রায় হয়ে এলো এখন মা বের হচ্ছে না দেখে ভীষণ অধৈর্য হয়ে পড়ে। আদি জানে মাকে তাড়া দিতে গেলে সেই এক কথা, মেয়েদের একটু দেরি হয়।
নিজের ঘরে ঢুকে দরজা দিয়ে দিল ঋতুপর্ণা, ছেলের ওপরে একদম বিশ্বাস করা যায় না কখন দুম করে ঢুকে পরে। সর্বাঙ্গে ভীষণ ভাবে নিরাপত্তার পরশ জড়িয়ে, বুকের মধ্যে গভীর প্রেমের উচ্ছ্বাস, মাতৃস্বত্বা খানখান করে দিয়ে প্রেমিকা স্বত্বা জেগে উঠেছে, এই উত্তর এতদিন হাতড়ে খুঁজে বেড়িয়েছে ঋতুপর্ণার হৃদয় মরিচিকা। সুভাষের কাছে সেই নিরাপত্তা শুধু মাত্র মরুভুমিতে একটা মরুদ্যানের মতন দেখা দিয়েছিল কয়েক বছরের জন্য, প্রদীপের কাছে সেই নিরাপত্তা কখন পায়নি ওর সাথে সম্পর্কটা মরিচিকার পেছনে দৌড়ে বেড়ানোর মতন। কোন নারী হয়ত স্বপ্নেও ভাবে না যে যে পুরুষের স্বপ্ন এতদিন ধরে দেখে এসেছে সেই কাঙ্খিত পুরুষ নিজের ছেলে হয়েই ওর সামনে প্রকট হয়ে দাঁড়াবে। ছেলে অন্ত প্রাণ কিন্তু সেই ভালোবাসায় যে এমন রঙ ধরবে সেটা কি আর আগে থেকে জানত। হয়ত আদিও জানত না, হয়ত ভাবতেও পারেনি যে একদিন মাকে শ্রদ্ধা করতে করতে স্নেহ মায়া মমতার চেয়েও আরো অন্য ভাবে ভালোবাসা যায়।
মিনিটের কাঁটা যেন আর নড়তে চায় না এমন আস্তে আস্তে চলছে, আদিও মায়ের দেরি দেখে অধৈর্য হয়ে ওঠে। সাড়ে চারটে কখন বেজে গেছে, বলে গেল এক ঘন্টার মধ্যে সাজা হয়ে যাবে। চঞ্চল মন বারেবারে মায়ের রুমের বন্ধ দরজার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে, জানে প্রশ্ন করলে সেই এক উত্তর, মেয়েদের একটু দেরি হয় চুপচাপ বসে থাক। ওর অধৈর্যের কারন অন্য, আজকে কোন সাজে মা ওই ঘর থেকে বের হবে সেটা দেখার আশায় প্রহর গুনছে।
মায়ের মিষ্টি কণ্ঠ স্বরে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়, "কি রে, অধৈর্য হয়ে পড়েছিস মনে হচ্ছে।"
ঋতুপর্ণা ধীর পায়ে নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
ঋতুপর্ণার অসামান্য জ্বলন্ত মাতৃ ময়ী রূপে মুগ্ধ হয়ে যায় ওর একমাত্র ছেলে। চওড়া লাল পাড়ের ঘিয়ে রঙের তসরের শাড়িটা আটপৌরে বাঙ্গালী ধাঁচে দেহের সাথে জড়িয়ে, ঊর্ধ্বাঙ্গ ঘটি হাতা লাল টকটকে ব্লাউজে ঢাকা। সাক্ষাৎ মহামায়া রূপ। ঘন কালো চুল ঘাড়ের কাছে একটা বড় খোঁপা করে বাঁধা, ডাগর দুই চোখের কোণে কাজল, ফর্সা ললাটের মাঝে দুই চাবুকের মতন ভুরুর সন্ধিস্থলে ছোট একটা রক্ত রাঙ্গা লাল টিপ আঁকা। উন্নত নাকে একটা সোনার নথ জ্বলজ্বল করছে। দুই ঠোঁট রক্তে রঞ্জিত, গাল দুটো নরম গোলাপি। কানে একজোড়া সোনার লম্বা ঝুমকো কানের দুল দুলছে। গলায় চেপে বসা একটা সোনার হার এবং একটা লম্বা হার। দুই হাতে সোনার বালার সাথে কয়েকগাছা সোনার চুড়ি। যদিও কোমর দেখা যাচ্ছে না কিন্তু সোনার বিছাটা ইচ্ছে করেই শাড়ির ওপরে পড়েছে ঋতুপর্ণা। শাড়ির পরতে সর্বাঙ্গ ঢাকা, নধর দেহপল্লবের সবকিছুই আবৃত। মৃদু গতিতে হাঁটার ফলে ফর্সা গোড়ালিতে বাঁধা রুপোর নুপুরের নিক্কনে ঘর ভরে ওঠে। আদি মায়ের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। এইরূপে মাকে এর আগে কোনোদিন দেখেছে বলে ওর মনে পড়ে না।
মাথা চুলকে মুচকি হেসে মায়ের দিকে এগিয়ে যায়। ছেলেকে মুচকি হেসে এগোতে দেখে ঋতুপর্ণার বুক দুরুদুর করে ওঠে, এক অজানা ভালোলাগা আশঙ্কা জেগে ওঠে ওর বুকের গভীরে।
ঋতুপর্ণা দুই পা ছেলের দিকে এগিয়ে গিয়ে মুচকি হেসে আঙ্গুল নাড়িয়ে বলে, "একদম ছুঁতে চেষ্টা করবি না, এখন পুজো মন্ডপে যাচ্ছি, সাজ নষ্ট হয়ে গেলে কিন্তু ভীষণ পেটাবো।"
আদি স্মিত হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, "না সেই ভাবে ছোঁয়ার ইচ্ছে নেই।" মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে হাতজোর করে মাথা নিচু করে বলে, "এই রূপে অন্য কেউ পাগল হতে পারে কিন্তু আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে সে আমার সাক্ষাৎ মহামায়া।" মায়ের চোখে চোখ রেখে মুখবয়াব জরিপ করে ভুরু কুঁচকে হেসে বলে, "একটু কিছু বাকি আছে মনে হচ্ছে?"
ঋতুপর্ণা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, "আবার কি চাই?" কোমরে হাত দিয়ে একটু বেঁকে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, "কেন, এটা কি ভালো লাগলো না?"
আদি মায়ের কাঁধ ধরে হেসে উত্তর দেয়, "ভীষণ, কিন্তু একটু দাঁড়াও আমি এখুনি আসছি।" বলে মায়ের রুম থেকে কাজল পেন্সিল নিয়ে আসে।
ঋতুপর্ণা অধীর চিত্তে আদির দিকে হাজার প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ওকে আবার কি সাজে সাজাবে ওর ছেলে। আদি মায়ের থুতনিতে আঙ্গুল রেখে মুখটা তুলে ধরে। ঋতুপর্ণার চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করে ওঠে ছেলের স্পর্শে। আদি কাজল পেন্সিল নিয়ে মায়ের চোখের দুই কোনায় ছোট ছোট তিনটে দাগ ফুটকি এঁকে দেয়। তারপরে মায়ের হাত খানি নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে উলটো হাতের ওপরে ছোট চুমু খায়।
ছেলে ওর হাতে চুমু খাওয়ার জন্য ঝুঁকে পড়তেই ঋতুপর্ণা ছেলের মাথায় চুমু খেয়ে বলে, "সাজানো হল তোর?"
আদি মাথা দুলিয়ে বলে, "হ্যাঁ।" তারপরে গলার হার হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমার কাছে এইগুলো ছিল? আগে ত কোনোদিন পড়তে দেখিনি?"
ঋতুপর্ণা লাজুক হেসে বলে, "আগে এই ভাবে সাজার সুযোগ আসেনি তাই সাজতে ইচ্ছে করেনি। নেকলেসটা সোনার নয়, তবে এই গলার লম্বা হারটা সোনার।" হাতের চুড়ি গুলো আদির সামনে ঝনঝন করে বাজিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "এইগুলো আসল।"
আদি বড় বড় চোখ করে বলে, "আচ্ছা আজকে তাহলে সুযোগ এসেছে?"
লজ্জায় কিঞ্চিত রক্ত রঞ্জিত হয়ে যায় ঋতুপর্ণার কান আর গাল। ভীষণ ভাবে লাজুক হেসে গলা নিচু করে বলে, "জানি না যা। আমি বরন কুলো সাজিয়ে নিয়ে আসছি তুই ততক্ষণে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দে।"
ঋতুপর্ণা বরন কুলো সাজিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল ছেলের সাথে। আদি দরজা বন্ধ করে মায়ের পেছন পেছন বেড়িয়ে এলো বাড়ি থেকে। মায়ের গজগামিনী ছন্দে ওর বুকের রক্তের হিল্লোল তালেতালে বেড়ে ওঠে কিন্তু নিরুপায় আদি চুপচাপ মায়ের চলনের ছন্দে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে চুপচাপ মন্ডপে চলে আসে।
মন্ডপে সোসাইটির মহিলাদের মেয়েদের ভিড় উপচে পরে আসার যোগাড়, সেই সাথে ছেলেরাও এসে গেছে। ঋতুপর্ণাকে দেখেই সুপর্ণা মণিমালা আরো বেশ কয়েকজন মহিলারা এগিয়ে এলো। অনেকেই সাদা পাড়ের লাল শাড়ি পরে এসেছে তবে কেউই ঋতুপর্ণার মতন আটপৌরে ধাঁচে পড়েনি তাই ওর সাজ ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। পুরুষদের চোখ পারলে ঋতুপর্ণাকে গিলে খায়। আদি চুপচাপ মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে একবার সবার দিকে নজর ঘুড়িয়ে দেখে নেয়, কার চোখ কি ভাষা ব্যাক্ত করছে। পার্থ, মনিষ, বিশ্বজিৎ, দেবজিত সবার চোখের ভাষায় জুলুজুলু ভাব। আদি মনে মনে হাসে আর ভাবে, দেখলে হবে খরচা আছে আর ঋতুপর্ণা এখন সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
মনিষ আদিকে ডাক দিল, "কি রে এদিকে আয়।" আদি মুচকি হাসতে হাসতে মনিষের দিকে এগিয়ে যায়। মনিষ ওর কানেকানে বলে, "বিসর্জনের আগে একটু হয়ে যাবে নাকি?" বলে মদের ইশারা করে।
আদি একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে মায়ের দিকে দেখে নিল। মা'কে ঘিরে মহিলারা গল্পে মেতে উঠেছে, মা ইতিমধ্যে মধ্যমণি হয়ে উঠেছে সবার মধ্যে। আদি জানে এরপরে মা'কে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আদিও বিসর্জনে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। আদি, পার্থ মনিষ এবং আরো কয়েকজন মিলে সোসাইটির মিটিং রুমে চলে গেল। ঠাকুরের মূর্তি তোলার আগে শক্তির প্রয়োজন সেটা এক পেগ গলায় ঢাললে ঠিক চলে আসবে।
মণিমালা ঋতুপর্ণার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "আন্টি তোমাকে ভীষণ সুন্দরী দেখাচ্ছে।"
সুপর্ণাও মেয়ের সাথে গলা মেলায়, "কি ঋতুদি কি ব্যাপার বলো তো? এক্কেবারে নতুন বউয়ের সাজ দিয়েছ?" বলেই মেয়ের চোখ বাঁচিয়ে চোখ টিপে ইশারা করে ওকে।
ঋতুপর্ণা স্মিত হেসে জবাব দেয়, "তুমি পারো বটে।" আলতো মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, "কেউ নেই।"
পাশ থেকে প্রতিভা প্রশ্ন করে, "গতকাল কোথায় গিয়েছিলে ঋতুদি?"
ঋতুপর্ণা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, "পুজোর সময়ে রাতের বেলা তো আর কলা কিনতে যেতে পারি না। ছেলের সাথে ঠাকুর দেখতে বেড়িয়েছিলাম, আবার কি।"
সুপর্ণা মণিমালাকে অন্যদিকে ওর বন্ধু বান্ধবীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে ঋতুপর্ণাকে প্রশ্ন করে, "সত্যি বলো তো ঋতুদি, কি এমন ঠাকুর দেখলে যে দুপুরে বাড়ি ফিরতে হল।" চোখ টিপে হেসে বলে, "তুমি কলা কিনতেই গিয়েছিলে মনে হচ্ছে।"
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে উত্তর দেয়, "তুমি এর মধ্যে কটা কলার দেখা পেলে ভাই?"
সুপর্ণা ঠোঁট উলটে উত্তর দেয়, "বাড়িতে নন্দন না হলে কলার খোঁজ ঠিক পেয়ে যেতাম।"
প্রতিভা হাঁ হাঁ করে ওঠে, "কলা না কলা না, শসা চাই।"
সুপর্ণা মুচকি হেসে বলে, "সত্যি কলা বড় পিছলে আর নরম, শসা ভালো বেশ শক্ত।"
পাশ থেকে রাখী হেসে বলে, "তোমাদের জত্তসব আজগুবি, শসা খাবে আর শিক কাবাব কাজে লাগাবে।" সবার উৎসুক চোখ ওর দিকে যেতেই রাখী ঠোঁট চেপে হেসে উত্তর দেয়, "গরম গরম খাওয়া ভালো, রংটা একদম ওই ধরনের আর লম্বা বটে সব থেকে ভালো কথা, মাঝখানে একটা ফুটো থাকে।" সেই ব্যাখ্যা শুনে সবাই এরতার গায়ের ওপরে হাসতে হাসতে ঢলে পড়ে।
সুপর্ণা চোখ টিপে ঋতুপর্ণাকে প্রশ্ন করে, "ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই ঘুরলে নাকি, আদি কিছু বলল না।"
ঋতুপর্ণার কান লজ্জায় লাল হয়ে যায়, লাজবতি রমণী লজ্জা লুকিয়ে একবার আদির খোঁজে মন্ডপের চারপাশে দেখে নেয়। আদিকে কোথাও দেখতে না পেয়ে মন একটু আনচান করে ওঠে। তারপরে মুচকি হেসে উত্তর দেয় ঋতুপর্ণা, "ছেলে আমার বড় হয়ে গেছে, মায়ের দুঃখ কষ্ট বোঝে।"
সুপর্ণা ঋতুপর্ণার গায়ের ওপরে ঢলে পরে উত্তর দেয়, "ইসসস যদি আমার দুঃখটা একটু বুঝত তোমার ছেলে তাহলে কি ভালো হত।"
সুপর্ণার কথা শুনে প্রতিভা চোখ পাকিয়ে তাকায় ওর দিকে, "ইসসস কত শখ দেখ। তোমার যে নাগর গুলো ছিল তাদের কি হল?"
এমন সময়ে ইন্দ্রানি এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, "বাপরে, এ যে দেখি চাঁদের হাট লেগেছে।" ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কি ঋতুদি কেমন আছো?"
ঋতুপর্ণার হয়ে সুপর্ণা উত্তর দেয়, "ঋতুদি ভালো আছে, তোর কি খবর? তোর বর’টা কোথায়?"
ইন্দ্রানি দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ওর স্বামীকে দেখিয়ে বলে, "ওই যে দাঁড়িয়ে আছে।"
সুপর্ণা, প্রতিভা খিলখিল করে হেসে জিজ্ঞেস করে, "তোর মা তাহলে বেশ ভালো জামাই সেবা করছে তাই না?"
ইন্দ্রানির কান গাল লাল হয়ে যায় সুপর্ণা প্রতিভার কথা শুনে, ঠোঁট চেপে হেসে উত্তর দেয়, "ইসস নিজেদের চরকায় তেল দাও না।"
সুপর্ণা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে, "তুই পাঠিয়ে দিস আমি তেল মালিশ করে দেব খানে।" বলেই সবাই একসাথে হেসে ফেলে।
ঋতুপর্ণা সুপর্ণাকে চিমটি কেটে বলে, "তোমার মুখে কোন ট্যাক্স নেই তাই না।"
সুপর্ণা ঠোঁট চেপে হেসে বলে, "কেন গো নিজে একটা জুটিয়ে নিয়েছ তাই এখন ইন্দ্রানি নতুন বর কে দেখে হিংসে হচ্ছে নাকি?" তারপরে গলা নামিয়ে ঋতুপর্ণার কানেকানে বলে, "মেয়েটা আমার আদি আদি করে একসা হয়ে গেল। একটু ছাড় দাও না, মেয়েটাকে।"
ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে উত্তর দিল ঋতুপর্ণা, "আদি কি করবে না করবে তাতে আমি ওকে বাধা দিয়েছি নাকি?"
সুপর্ণা উত্তর দেয়, "তুমি যে ছেলেকে আঁচলের তলায় লুকিয়ে রেখেছ।"
পাশ থেকে কাকলি বলে ওঠে, "ছাড়ো ছাড়ো সুপর্ণাদি, যে ছেলে আজকে মায়ের আঁচলের তলায় থাকে তারা কিন্তু বিয়ের পরে বউয়ের আঁচলের তলায় লুকায়।"
চাপা হাসি দিয়ে উত্তর দেয় ঋতুপর্ণা, "আদি আমার সেই ধরনের ছেলে নয়।"
সুপর্ণা ওর সাথে গলা মিলিয়ে সায় দেয়, "না না আদিত্য একদম ওই ধরনের ছেলে নয়। ইসস ওর পা ধুয়ে জল খাওয়া উচিত এমন মাতৃ ভক্ত ছেলে।"
"মাতৃভক্ত" তা সত্যি, ভক্তি ভালোবাসা সব কিছু মিলিয়ে মিশিয়ে ঋতুপর্ণার আদিত্য ওকে ভীষণ ভাবে ভালোবাসে আর সেই আদিকে কাছে পাবে বলেই এই সাজ।
ইন্দ্রাণী গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে, "সুপর্ণাদি তুমি ধুয়ে জল খাও নাকি? আমি ত বাবা একেবারে মুখ দিয়েই চুষে জল খাই।" হিহি করে আবার এক চোট হাসির কলতান ছড়িয়ে পরে।
প্রতিভা কানেকানে জিজ্ঞেস করে, "পাইপের সাইজটা বেশ বড়ো তো, না কিছুদিন পরে অন্য কোন জল খেতে অন্য পাইপের খোঁজে যাবি?"
ইন্দ্রাণী চোখ টিপে বলে, "শাবল এক্কেবারে শাবল। তোমার ওই শান্তনু দাকে দেখে মনে হয় না শাবল আছে।"
প্রতিভা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে, "বাড়ি আসিস শান্তনু দেখিয়ে দেবে, শাবল না শাল গাছ।"
সুপর্ণা ঋতুপর্ণার বাজুতে একটা ছোট চিমটি কেটে জিজ্ঞেস করে, "আজকে এক্কেবারে নতুন বউয়ের সাজে এসেছ কি ব্যাপার। সে আসছে নাকি?"
ঋতুপর্ণা চাপা হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, "যে আসার সে অনেক আগেই এসে গেছে।"
সবাই হাঁ হাঁ করে ওঠে, "কোথায় কোথায় একটু দেখাও না। প্লিস প্লিস...."
ঋতুপর্ণা ঠোঁট চেপে হেসে উত্তর দেয়, "লুকিয়ে রেখেছি পাছে তোমাদের পাল্লায় পড়ে হারিয়ে যায়।"
সুপর্ণা, কাকলি আর বাকিরা মন্ডপের এদিকে ওদিকে একবার তাকিয়ে দেখে নেয়, কোন অজানা ব্যাক্তি দেখলেই ওর দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে ঋতুপর্ণাকে জিজ্ঞেস করে, "ওই নাকি গো।"
ঋতুপর্ণা মাথা দুলিয়ে উত্তরে জানিয়ে দেয়, ওর মনের মানুষ এই মন্ডপে উপস্থিত আছে কিন্তু সবার চোখের আড়ালে। কেউই আর ঋতুপর্ণার গুঢ় কথাটা ধরতে সক্ষম হয় না। ওদের চোখ নতুন মানুষের খোঁজে এদিকে সেদিকে খুঁজে বেড়ায়। ঋতুপর্ণার চঞ্চল চিত্ত নিজের মনের মানুষটাকে খুঁজে বেড়ায়। ওকে একা ফেলে কোথায় গেল ছেলেটা। মহিলাদের আবর্তে ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার যোগাড়, ছেলের দেখা না পেয়ে ওর বুকের অবস্থা জল বিহীন মাছের মতন হাঁসফাঁস করে উঠছে। মণিমালাকে মন্ডপের এক কোনায় দেখে আশস্ত বোধ করে। ক্ষনিকের জন্য মাথার মধ্যে আশঙ্কা জ্বলে উঠেছিল। আদির কথা গুলো মনে পরে যায়, গভীর ভালোবাসা, গভীর প্রেমে সিঞ্চিত বার্তা ওর হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে দিয়েছে। ওর বুকে শুধু মাত্র মায়ের জায়গা ছাড়া আর কেউই নেই। সেই জন্যেই নতুন বউয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে এসেছে দেবী বরন করতে।
লোকজনের ভিড় বেড়ে উঠল মন্ডপে, আরো অনেকে এসে গেছে দেবী বরনের জন্য। দেবী বরনের সিঁদুর খেলা শুরু। সুপর্ণা এগিয়ে এসে ওর মাথায় সিঁদুর লাগিয়ে দেওয়ার উপক্রম করতেই বাধা দেয় ঋতুপর্ণা। ওর চোখ দেখে আর সিঁদুর মাখানোর সাহস পেল না সুপর্ণা তবে এক মহিলা এগিয়ে এসে ঋতুপর্ণার গালে লাল রঙের আবির লাগিয়ে দিল। ঋতুপর্ণা বাধা দেওয়ার আগেই সুপর্ণাও এক মুঠো আবির ওর গালে লাগিয়ে দিল। ঋতুপর্ণা বুঝল যে এদের হাত থেকে নিস্তার নেই তাই নিজেও এক মুঠো আবির নিয়ে এক এক করে মহিলাদের মাখাতে লাগলো। ওর ঘিয়ে রঙের তসরের শাড়ির বুকের দিকে বেশ কিছু অংশ আবিরের রঙ্গে লাল হয়ে উঠল। এয়োস্ত্রি মহিলারা একে ওপরকে মাথায় গালে যেখানে পারছে সিঁদুর লাগিয়ে উত্যক্ত করে তুলছে। ভাগ্যিস আটপৌরে ধাঁচে শাড়ি পড়ার জন্য ওর বুকের দিকে কেউ নজর দিতে পারেনি। শুধু মাত্র গালেই সিঁদুর আর আবির লাগিয়েছে সবাই।
এর মধ্যে কোথা থেকে সুপর্ণা একগাদা আবির এনে ঋতুপর্ণার মাথায় ঢেলে দিল। বাধা দেওয়ার আগেই ঋতুপর্ণার মাথা ভর্তি হয়ে গেল লাল আবিরে। আবিরের গন্ধে আর নাকের ওপরে আবির পড়তেই ঋতুপর্ণার মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠল, কিছু কি মেশানো ছিল ওই আবিরে?
মাথা ঝেড়ে আবির ফেলে চোখ মেলে সুপর্ণার দিকে তাকাতেই সুপর্ণা একগাল হেসে বলে, "এইটা কিন্তু সিঁদুর নয় কিছু বলতে পারবে না।" বলেই চোখ টিপে ফিসফিস করে বলে, "যাকে মনে ধরেছ সে দেখলে একদম পাগল হয়ে যাবে।"
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে জবাব দেয়, "তার ব্যাপারে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। তার জায়গা অনেক আগেই পাকা পোক্ত হয়ে রয়েছে।" বলে আলতো করে বুকের বাম দিকে দেখিয়ে দেয়।
নাকের ওপরে লাল টকটকে আবির, মাথা ভর্তি আবির নিয়ে ঋতুপর্ণার উৎসুক নয়ন একবার ছেলের খোঁজে এদিকে সেদিকে ঘুরে বেড়ায়। মন আনচান করে ওঠে, গেল কোথায় এখন দেখা পাচ্ছে না।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment