CH Ad (Clicksor)

Wednesday, December 9, 2015

অসীম তৃষ্ণা_Written By pinuram [দ্বাদশ পর্ব (চ্যাপ্টার ০৭ - চ্যাপ্টার ০৮)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




অসীম তৃষ্ণা
Written By pinuram




দ্বাদশ পর্ব

(#০৭)

বিল্ডিং থেকে নিচে নেমেই সামনের মাঠের পুজোর মন্ডপে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক লোকের চোখ চলে গেল ঋতুপর্ণার দিকে। পাশে আদি নেই, গাড়ি আনতে বেসমেন্টে গেছে। কয়েক জন চেনা পরিচিত মহিলাদের সাথে দেখা হয়ে গেল ঋতুপর্ণার। ওর সাজের আগুনে অনেকের চোখ ঝলসে গেল। পরিচিতদের মধ্যে কাকলি কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, "বের হচ্ছ নাকি?" ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দিল, "হ্যাঁ"। অন্য একজন মহিলা পাশ থেকে বলল, "এই কার সাথে যাচ্ছো?"

ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে ওদের সকলের কৌতূহলে জল ঢেলে উত্তর দিল, "ছেলের সাথে বের হচ্ছি।"

আসল খবর কে আর জানে, ঋতুপর্ণা যে আদির প্রেমে দেহ বল্লরী সিক্ত করে প্রেম সাগরে নিমজ্জিত!

অন্য একজনে অবিশ্বাসের গলায় জিজ্ঞেস করল, "ছেলের সাথে? ধুত।" কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, "সুপর্ণার কাছে শুনলাম যে তুমি নাকি...."

সুপর্ণার তাহলে সারা পাড়া গল্প করে বেড়িয়েছে। কথাটা জানতে পেরেই ঋতুপর্ণা একটু রেগে গেল, কিন্তু সেই রাগ কপট হাসির পেছনে লুকিয়ে বলল, "না না, ছেলে বড় হয়েছে এই বয়সে কি আর সেই সব করা যায় নাকি।"

কেউ একজন উত্তর দিল, "তোমার আর বয়স। তোমাকে না বড্ড হিংসে হয়। এই পোড়া রূপ থাকলে আমি সারা কোলকাতা চড়িয়ে খেতাম।"

ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে বারেবারে গাড়ি বের হওয়ার জায়গার দিকে তাকায়। কখন আদি গাড়ি নিয়ে বের হবে আর এদের হাত থেকে নিস্তার পাবে। ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে উত্তর দিল, "তোমরা কোলকাতা চষে বেড়াও আমি আমার ছেলে নিয়েই থাকি।"

আদি গাড়ি বের করে মাকে ডাক দিল। আদির গলা পেয়ে ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গাড়ির দরজা খুলে মৃদু ধমক দিল ছেলেকে, "গাড়ি বের করতে এত সময় লাগে নাকি? আমি...."

মিনিট পাঁচেকের বিরহে কাতর হয়ে উঠেছিল ঋতুপর্ণার প্রান, হাঁপিয়ে উঠেছিল ছেলেকে না দেখতে পেয়ে। গাড়িতে উঠেই ক্লাচ দিয়ে ছেলেকে পেটাতে শুরু করে দিল, "আমি নিচে গেলে কি ক্ষতি হত?"

মায়ের হাতের মিষ্টি মধুর মার খেয়ে আদি আর হাসি থামাতে না পেরে বলল, "ইসস তুমি না। চল চল আর পেটালে কিন্তু আমিও...." বলেই ঋতুপর্ণার কবজি মুচড়ে ধরে বুকের ওপরে চেপে মায়ের কোমল পীনোন্নত স্তনের গভীর বক্ষ বিভাজিকার ওপরে নিবদ্ধ করে নিচু গলায় বলল, "মুচড়ে দেব..."

ছেলের আগুনে চাহনি ওর ঊরু জোড়ায় আগুন ধরিয়ে দিল, কি মুচড়ে দেবে। স্তনের বোটা নুড়ি পাথরের মতন কঠিন হয়ে গেল। আদি চোয়াল চেপে মায়ের মুখের দিকে এগিয়ে বলল, "হাত।"

ঋতুপর্ণার গলা বয়ে হিসসস করে উঠল এক অজানা শব্দ। হাত মুচড়ে আদির হাত থেকে ছাড়িয়ে ওর বুকে পিঠে এলো পাথারি ছোট ছোট চড় মেরে বলে, "ধ্যাত শয়তান গাড়ি চালা।"

আদিও গাড়ি চালাতে শুরু করে দিল। ছোট মারুতি গাড়ি, কেবিন ছোট হওয়ার ফলে ওদের মাঝের ব্যাবধান অনেক কম। গাড়ির কাঁচ উঠানো তাই আদির সারা শরীর ভরে ভর ক্রএ এলো মায়ের মিষ্টি উষ্ণতা। চলন্ত গাড়ির দুলুনির মাঝে মাঝেই ঋতুপর্ণার ভারি কোমল স্তন জোড়া দুলে দুলে ওঠে। ছেলের বহমান শ্বাস আর উশখুসানি ভীষণ ভাবে উপভোগ করে ঋতুপর্ণা। মাঝে মাঝে নিচের ঠোঁট দাঁতের মাঝে নিয়ে দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে চোখের মণি এক করে নেয়। চোখের উষ্ণ ভাষা, তুই না বড্ড শয়তান। ওই ভাবে কেন দেখছিস রে আমার দিকে? বুঝতে পারিস না ওই চোখের আগুনে পুড়ে মরে যাচ্ছি।

ভিড় ভর্তি রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে এক নামকরা পুজো প্যান্ডালের সামনে এসে দাঁড়াল আদি। মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "কি, নামবে এইখানে?"

ঋতুপর্ণা একবার ভিড় ভর্তি প্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে দেখে মুচকি হেসে উত্তর দিল, "ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি নামবো না কেন? কিন্তু গাড়ি কোথায় রাখবি?"

আদি মাথা চুলকে এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে, কোথাও তিল ধারনের জায়গা নেই। এদিকে সন্ধ্যে সাতটা বাজে, এই সময়ে গাড়ি রাখা আর ঠাকুর দেখা দুটোই দুঃসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু মাতৃ আদেশ, ঠাকুর দেখাতেই হবে না হলে প্রানের প্রিয়তমা হয়ত মুখ ব্যাজার করে সারা রাস্তা ওর মুন্ডপাত করবে।

আদি ভেবে চিন্তে উত্তর দেয়, "আচ্ছা তুমি নেমে লাইনে দাঁড়াও আমি দেখি কোথাও একটা গাড়ি পার্ক করে আসছি।"

ছেলেকে ছেড়ে দেবে, বড্ড ব্যাথা পেল ঋতুপর্ণা। ব্যাথিত কণ্ঠে আদিকে বলল, "তুই গাড়ি পার্ক কর ততখন আমি গাড়িতে বসেই থাকি তারপরে না হয় একসাথেই লাইনে দাঁড়াবো।"

মায়ের ব্যাথিত নয়ন দেখে আদির ভীষণ হাসি পেয়ে যায়। নরম গাল টিপে মাকে আদর করে বলে, "আচ্ছা চল দেখা যাক কোথায় একটু পার্কিংয়ের জায়গা পাওয়া যায়।"

গাড়ি চালিয়ে এদিকে ওদিকে পার্কিংয়ের জায়গা খোঁজে, শেষ পর্যন্ত একটা অন্ধকার গলির মধ্যে গাড়ি ঢুকিয়ে দিল আদি। ঋতুপর্ণা হাঁ হাঁ করে উঠল, এখান থেকে গাড়ি কি করে বার করবে। আদি মাকে আশ্বস্ত করে বলে, ব্যাক করে ঠিক ভাবে গাড়ি বের করে নেবে। গাড়ি পার্ক করে মা আর ছেলে বেরিয়ে এলো। গলির মুখে বেশ কয়েকটা ছেলের জটলা। সেই দেখে আদির বিশেষ সুবিধের মনে হল না। আর তার ওপরে ঋতুপর্ণা যে ধরনের লাস্যময়ী ঢঙ্গের শাড়ি পড়েছে তাতে যেকোন পুরুষের চিত্ত বিচলিত হতে বাধ্য। আদি গাড়ি লক করে মায়ের পাশে দাঁড়াতেই, ঋতুপর্ণা প্রানপন শক্তি দিয়ে আদির বাজু আঁকড়ে ধরে ওই ছেলে গুলোর দিকে ইশারা করে দেখাল। আদি মাথা দুলিয়ে আসস্থ করে মাকে, কিছু হবে না, আমি আছি। ছেলের পিঠের পেছনে এক প্রকার লুকিয়ে চুপচাপ হাঁটতে শুরু করে দিল ঋতুপর্ণা। ছেলে আছে সুতরাং ভয় কিসের, কিন্তু জটলা সংখ্যায় বেশি আর গলিটাও বেশ অন্ধকার। আদি মাকে আগলে নিয়ে কোন রকমে ওই বখাটে ছেলেদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে এলো। কয়েক পা চলার পরে ওদের কানে শিষের আওয়াজ আর বেশ কিছু ইতর মন্তব্য ভেসে এলো। আদি মায়ের কাঁধ শক্ত করে ধরে নিজের বুকের কাছে আড়াল করে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখল ওই ছেলে গুলোর দিকে। স্যুটের হাতা গুটিয়ে কঠিন, হাত মুঠো করে হাতের পেশি ফুলিয়ে দিল। ওর রক্ত চক্ষু দেখে বেশ কয়েকজনের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল।

ছেলের হাত শক্ত করে চেপে ধরে আদিকে শান্ত করে বলল ঋতুপর্ণা, "ছেড়ে দে, ওদের নিয়ে মাথা গরম করিস না। চল ঠাকুর দেখে আসি।"

মায়ের পিঠের শেষ প্রান্তে হাত রেখে নিজের দেহের কাছে ঘন করে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল, "যত্ত সব উটকো পাবলিক, শালা এদের জ্বালায় ঠাকুর দেখতে যাওয়া যায় না।"

ভীষণ ভিড় ঠেলে মন্ডপে ঠাকুর দেখতে দেখতে প্রায় এক ঘন্টা লেগে গেল ওদের। পুজোর প্যান্ডেলে অহেতুক কোন অঘটন ঘটল না। ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এসে ঋতুপর্ণা সত্যি ঘামিয়ে যায়। ভেতরে লোকজনের এত ভিড় আর এত গরম যে ওর ঘাম দিয়ে দিল। বাহুমুল ভিজে ব্লাউজের সাথে চেপটে গেল আঠার প্রলেপের মতন। ঠেলাঠেলিতে বহুবার আদির পিঠের সাথে, বাজুর সাথে ওর স্তন, ওর সারা অঙ্গ পিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেদিকে অবশ্য কারুর খেয়াল ছিল না, তখন শুধু মাত্র আদিকে সম্বল করে কোনরকমে ঠাকুর দেখে বেরিয়ে আসতে পারলে বাঁচে।

বেরিয়ে এসেই ঋতুপর্ণা আদির ওপরে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "এত ভিড়ে নামতেই হত? কোন ফাঁকা প্যান্ডালে ঠাকুর দেখলে হত না।"

মায়ের বকুনি খেয়ে আদি থমকে যায় উলটে মাকে ধমকে বলে, "ঠাকুর দেখতে যাওয়ার বায়না কে করেছিল? আমি না তুমি?" গাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে ছোট ছেলের মতন মায়ের কাছে আবদার করে, "মা আইস্ক্রিম খাবো। প্লিস।"

ঋতুপর্ণা চোখ বড় বড় করে সাবধান করে বলে, "ঠাণ্ডা লেগে যাবে বাবা।"

আদি বাচ্চা ছেলের মতন পা দাপিয়ে আবদার করা থামায় না, "না মা আইস্ক্রিম খাবো।"

কচি ছেলের মতন বায়না করতে দেখে বড্ড হাসি পেল ঋতুপর্ণার, ইসস এই একটু আগেই কি ভাবে ওর দিকে জুলুজুলু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল আর এখন দেখ, মনে হল যেন ক্লাস সিক্সে পাঠরতা এক বাচ্চা ছেলে। মিষ্টি হেসে আদিকে বলল, "যা দুটো আইস্ক্রিম নিয়ে আয় আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি।"

সামনেই একটা আইস্ক্রিমের ঠেলা দাঁড়িয়ে ছিল, আদি দৌড় দিল সেদিকে। পেছনে সেই ছেলেদের জটলা তখন পর্যন্ত ওইখানে বসে, সেদিকে খেয়াল করতে পারেনি ঋতুপর্ণা। আদি আইস্ক্রিম কিনে একটা মাকে ধরিয়ে দিল। চকোলেট কোন খেতে ঋতুপর্ণার খুব পছন্দ তাই আদি চকোলেট কোন কিনে এনেছে মায়ের জন্য। আইস্ক্রিম টপের ওপরে গোলাপি জিব দিয়ে চাটতে চাটতে এপাশে অপাশে চেয়ে দেখে। মা আর ছেলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাতে হাত জড়িয়ে আইস্ক্রিম খাচ্ছে।

আশেপাশের কিছু লোকজনের চাহনি ওদের দিকে নিবদ্ধ, বিশেষ করে ঋতুপর্ণার অসামান্য রূপ যেন সবাই গিলে খাচ্ছে। ওর বুকের খাঁজের বেশির ভাগ ছোট আঁটো ব্লাউজ ঠেলে বেরিয়ে এসেছে, সকলের চোখ ওই অনাবৃত বক্ষ বিদলনে নিবদ্ধ হয়ে যায়। কারুর চোখের ইতর দৃষ্টি ঋতুপর্ণার নিম্ন নাভী আর থলথলে তলপেটের ওপরে চড়ে বেড়ায়। আদির কানে আশপাশের নিচু গলার কয়েকটা ইতর মন্তব্য ভেসে আসে, "উফফ কি মাল মাইরি।" "সত্যি ছেলেটা ভাগ্য করে মাগি তুলেছে। ইসস মাই নয়ত যেন ডাব ঝুলছে।" "এই জম্পেশ মাল তৈরি করা মনে হয় ভগবান ছেড়ে দিয়েছে। কি ফিগার মাইরি, মাথা ঘুরে যায়।" "যা বলেছিস মাইরি, শাড়ি নয়ত যেন জরি দিয়ে জড়ানো, একদম কাতিল লাগছে।" "বলেছিস মাইরি, এইরকম কাউকে পেলে সত্যি প্রতিমা করে ঘরে সাজিয়ে রাখতাম।" "ধুস বোকাচোদা ঘরে সাজিয়ে রেখে কি হবে ভোগের মাল মাইরি। উফফফ কি কাতলা মাছের পেট রে...."

কথা গুলো দুইজনেরই কানে পৌঁছায়। আদির কান গরম হয়ে যায়, লজ্জায় ঘৃণায় ঋতুপর্ণার চোখ জোড়া জ্বালা জ্বালা করে ওঠে, আদির বুকের কাছে সেঁধিয়ে আহত কণ্ঠে বলে, "আর ভালো লাগছে না রে চল বাড়ি ফিরে যাই।"

আদি চোয়াল শক্ত করে পেছনের দিকে দেখে মাকে বলল, "তুমি গাড়িতে গিয়ে বস আমি ওদের দেখে আসছি।"

"না" মুখ চাপা দিয়ে আঁতকে উঠল ঋতুপর্ণা, "ওদের সাথে মারামারি করতে যাসনে। যদি তোর কিছু হয়ে যায়.ফ.." বলেই কেঁদে ফেলল।

মায়ের চোখে জল দেখে ভীষণ রেগে গেল আদি। চোয়াল চেপে মায়ের কাঁধে হাত দিয়ে বলল, "এই তোমার জন্যেই ওরা আস্কারা পেয়ে যায়। রাস্তার কুকুরের দিকে একবার যদি ঘুরে দাঁড়ানো যায় তাহলে কুকুর গুলো ঘেউ ঘেউ করা বন্ধ করে দেয়।"

আদি হাত ধরে টেনে ঋতুপর্ণা মিনতি করে, "ঘেউ ঘেউ করা কুকুর কামড়াতে পারে আদি, আমার একটাই মানিক রে। তোর কিছু হলে কি করব আমি। ওদের সাথে লাগতে হবে না চল চলে যাই আর ভালো লাগছে না।"

আদি দাঁত কিড়মিড় করে দুই পা ওই ছেলে গুলোর দিকে এগিয়ে যেতেই ওরা জটলা ভেঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ে। পাশ দিয়ে তখন একটা পুলিসের ভ্যান যাচ্ছিল, তার সাইরেন শুনে ছেলে গুলো আস্তে আস্তে সেখান থেকে সরে দাঁড়ায়। আদিও ঋতুপর্ণাকে আগলে গলির মধ্যে ঢুকে গাড়ি বের করে নিয়ে আসে। ঋতুপর্ণা চুপ, আদিও চুপ। ভিড় ভর্তি রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ এলোমেলো চালাল গাড়ি, কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য জানা নেই।

মায়ের থমথমে চেহারা আদির বুকে বড় বেজে ওঠে। মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে ইয়ার্কি মেরে বলে, "আচ্ছা বল না ওই মেয়েগুলো তোমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে কি বলছিল?"

অনেকক্ষণ পরে ছেলের গলা শুনে স্বস্তির শ্বাস নেয় ঋতুপর্ণা। লাল ঠোঁটের ডগায় হাসি ফুটিয়ে বাঁকা চোখে আদির দিকে তাকিয়ে বলে, "মেয়েলী কথাবার্তা তোকে কেন জানাতে যাবো রে?"

হাসি মুখ দেখে আদি সব রাগ ভুলে যায়, "আচ্ছা বল কোথায় যাবে।"

ঋতুপর্ণা সামনের দিকে তাকিয়ে, কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাসা ভাসা চোখে নিচু অস্ফুট কণ্ঠে বলে, "হারিয়ে যেতে চাই।"

গাড়ির আওয়াজে আদি ঠিক ভাবে মায়ের কথা শুনতে পেল না তাই আবার জিজ্ঞেস করে, "কোথায় যাবে বল? বাড়ি ফিরতে চাও না অন্য কোথাও যেতে চাও।"

বাড়ি ফিরতে একদম ইচ্ছে করছিল না ঋতুপর্ণার। অনেকদিন পরে এইভাবে পরিপূর্ণ রূপে, তনু মন প্রান ঢেলে নিজের কাঙ্খিত পুরুষের জন্য ঢেলে সাজিয়ে কেউ কি আর বাড়িতে ফিরতে চায়। এইভাবে দুইজনে একা একা গাড়ির নিভৃত অন্তরালে মনে হচ্ছে প্রেমিকের সাথে অভিসারে বেরিয়েছে তীব্র সুন্দরী স্বর্গের অপ্সরা। নিষিদ্ধ প্রনয়ে জড়ানো হৃদয়ের ধমনীর মধ্যে ফুটন্ত রক্ত উথাল পাথাল হয়ে ইতস্তত বিচরন করছে।

আঁচল বুকের কাছ চেপে উত্তাল তরঙ্গায়িত স্তন জোড়া ঢেকে আদিকে বলে, "চল না একটা লং ড্রাইভে" বাকিটা ঠোঁটে এসে গলায় বসে গেল ঋতুপর্ণার..... "শুধু আমি আর তুই। কি রে সোনা আমাকে নিয়ে যাবি যেখানে আমাদের কেউই চিনবে না। এই রাতের আঁধার আমাদের নিজের কালো চাদরে লুকিয়ে ফেলবে..."

আদি মায়ের মুক ভাসা অন্ধকার গাড়ির মধ্যে ঠিক বুঝতে পারল না, জিজ্ঞেস করল, "কোথায় যেতে চাও।"

ধ্যাত ছেলেটা কি কিছুই বোঝে না নাকি? মৃদু ধমক দিয়ে উঠল ঋতুপর্ণা, "জাহান্নামে নিয়ে যা।"

আদি মুচকি হেসে মায়ের এই অভিমান ভরা লাল গালের লালিমা বড় উপভোগ করছিল। মাঝে মাঝে মায়ের দিকে তাকিয়ে মায়ের ভাসা ভাসা চোখের চাহনি দেখে হারিয়ে যাচ্ছিল। আদি মুচকি হেসে বলে, "এত সাধ করে প্রাণের বান্ধবীকে নিয়ে বের হলাম আর সে কিনা বলে জাহান্নামে যাবে।"

ঋতুপর্ণা আদির কাছে সরে কাঁধ ঘেঁষে বসে কানেকানে ফিসফিস করে বলল, "কোন গ্রামে যাই চল। সেখানের পুজো বেশ পবিত্র, লোকজনের ভিড় নেই।"

ঋতুপর্ণা ওর কাঁধ ছুঁয়ে পাশে বসতেই আদির বাজু ওর মায়ের স্তন বিভাজিকার মাঝে চেপে গেল। নরম তুলতুলে পীনোন্নত উত্তপ্ত স্তন জোড়া মাখনের মতন গলে গেল আদির বাজুর ওপরে। আদির ঊরু জোড়া কেঁপে উঠল মায়ের উষ্ণ ত্বকের পরশে। কানের কাছে মায়ের চুলের দোলা নাকের মধ্যে ভেসে এলো মায়ের গায়ের মিষ্টি মাতাল করা গন্ধ। মন্ডপে ঠাকুর দেখে ঋতুপর্ণা ঘামিয়ে গিয়েছিল, দেহের থেকে সেই ঘাম আর সেন্টের মাতাল করা গন্ধে আদি বুকের রক্ত উন্মত্ত হাতির মতন এলোপাথাড়ি ছুটে বেড়াতে লাগলো।

আদি কাঁপা গলায়, চিত্তের চাঞ্চল্য লুকিয়ে উত্তর দিল, "আচ্ছা তাই চল।"

আদির কথা শুনে ঋতুপর্ণার বুক নেচে উঠল। বড্ড গান গাইতে ইচ্ছে করে ঋতুপর্ণার, "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে, মেলে দিলাম গানের সুরে এই ডানা মনে মনে।" উৎফুল্ল চিত্তে ছোট খুকির মতন চেঁচিয়ে উঠল, "উম্মম আমার সোনা ছেলে" বলেই আদির চুল আঁকড়ে গালে একটা ভিজে চুমু খেয়ে দিল।

ভিজে ঠোঁটের পরশে ধিকিধিকি করে জ্বলতে থাকা আগুন দাউদাউ করে উঠল আদির বুকে, ছোট একটা উফফ করে মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "রাতে খাবে কোথায়?"

ঋতুপর্ণা তখন খুশিতে পাগল প্রায়, অনাবিল হাসির ছটা ছড়িয়ে উত্তর দিল, "যেখানে তুই খাওয়াবি।"

মায়ের উচ্ছ্বাস দেখে আদির মন প্রান গলে গেল, সত্যি নারীর এক অঙ্গে কত রূপ আর পাশে বসে এই রমণীর কথা আলাদা, কখন স্নেহময়ী মাতৃময়ী রূপে অবতারন করে, কখন কঠোর দেবী দুর্গা আবার কখন প্রণয়িনী উর্বশী। আদি স্মিত হেসে জানিয়ে দিল, "রাস্তায় কোন রেস্টুরেন্ট পেলে খাবার প্যাক করে নেব।"

ঋতুপর্ণা মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দিল, "আচ্ছা এখন চল।"







(#০৮)

আদি কথা না বাড়িয়ে এক্সেলেটারে পা চেপে দিল। গাড়ি হুহু করে হাওয়া কেটে শহর ছাড়িয়ে হাইওয়ে ধরে অনির্দিষ্টের পানে ধেয়ে চলল। ঘন কালো আঁধার কেটে ঝড়ের গতিতে গাড়ি ধেয়ে চলে সেই সাথে ঋতুপর্ণা আর আদির বুকের অসীম চাহিদা বেড়ে চলে। এই আঁধার রাত যেন শেষ না হয়। আদির ঊরু জোড়া টানটান হয়ে যায়, পায়ের মাঝের পুরুষাঙ্গ অনেক আগেই ফনা তুলে ভীষণ ভাবে ফুঁসছে, জাঙ্গিয়া প্যান্ট ফাটিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। পাশে বসা সুন্দরীর ক্রোড়ে হারিয়ে যেতে বড্ড ইচ্ছে করছে। মা গো তোমার ছেলে একবারের জন্য তোমার কোলে ফিরতে চায়। ওর নাকে ভেসে আসে মায়ের গায়ের তীব্র মাদকতাময় ঘ্রান। রক্তের উথাল পাথাল তরঙ্গে নিজেকে আর শান্ত করতে পারে না আদির দেহ। সামনে একটা ছোট বসতির দেখা পেতেই ঋতুপর্ণা আদিকে গ্রামের মধ্যে গাড়ি নিয়ে যেতে অনুরোধ করে। মায়ের কথা ফেলতে পারে না আদি, বড় রাস্তা ছাড়িয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঁচা রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ল।

রাত তখন দশটা বাজে, গ্রামের পুজো মন্ডপে তখন লোকজনের ভিড়। ওদের গাড়ি থেকে নামতে দেখে অনেকের চোখ ওদের দিকে চলে যায়। নাম না জানা এক গ্রামের মধ্যে শহর থেকে কেউ পুজো দেখতে আসবে সেটা হয়ত গ্রামের লোকজন ভাবতে পারে নি। নবমীর ঠাণ্ডা রাত্রে আদির হাত ধরে ঋতুপর্ণা গাড়ি থেকে বেরিয়ে মন্ডপে ঢুকে পড়ে। আশে পাশের কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়েদের চোখে অপরিসীম জিজ্ঞাস্য। ঋতুপর্ণা একটা বাচ্চাকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করাতে লজ্জা পেয়ে সেই বাচ্চাটা পালিয়ে যায়। ওদের দেখে আদি আর ঋতুপর্ণা দুইজনেই হেসে ফেলে।

গ্রামের ছোট প্যান্ডালের মূর্তি, একচালা ঢাকের সাজে শোলা দিয়ে সজ্জিত মহামায়া দেবী দুর্গার মূর্তি। অনেকক্ষণ ধরে ঋতুপর্ণা সেই দেবী দুর্গার মূর্তির মুখ মন্ডলের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখের কোল ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে উঠল। পাশে দাঁড়িয়ে ছেলেটার দিকে তাকাতে দ্বিধাবোধ করে। ওকে? আদির মাতৃময়ী স্নেহভরা জননী না এই সুঠাম পুরুষের নিশা যামিনীর সঙ্গিনী অপরূপা প্রণয়িনী। উত্তর জানা নেই ঋতুপর্ণার। দেবী প্রতিমার সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না ঋতুপর্ণা, বুক ছাপিয়ে নিষিদ্ধ প্রেমের বিষাক্ত দংশন ওকে ছিঁড়ে ফেলে।

আদি চুপচাপ মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে। এই নারী ওকে জন্ম দেয়নি, আসল জননী যে ওকে জন্ম দিয়েছিল সে জন্ম দিয়েই ওকে ছেড়ে চলে গেছে। এই অকাঠ সত্য ওর মা জানে না। ওর পাশে দাঁড়িয়ে স্নেহভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে যে রমণী সে ওর মা, বুকের দুধ খাইয়ে, নিজের আঁচলের তলায় সর্বদা ওর রক্ষণাবেক্ষণ করে গেছে সারা জীবন ধরে। এই নারী নিজের আগে ওকে কথা চিন্তা করেছে। এমনকি হস্পিটালের বেডে শুয়ে চোখ খুলেই ওর নাম ধরেই চেঁচিয়ে উঠেছিল। যদি এই নারী কোনোদিন জানতে পারে যে আদি ওর ছেলে নয় তাহলে কি মায়ের বুক ভরা ভালোবাসা হারিয়ে যাবে। তাই বলে সেই মাকে নিজের প্রণয়িনীর মতন সাজিয়ে, নিজের প্রেমিকার মতন করে ক্রোড়ে নিয়ে ভালোবাসার রঙ্গে রঞ্জিত করে তুলবে।

ধীরে ধীরে দেবী প্রতিমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আদিকে নিচু গলায় ঋতুপর্ণা বলে, "চল এইবারে বাড়ি ফিরি। অনেক রাত হল।"

ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে আর নিজেদের এই নিষিদ্ধ প্রেমঘন সম্পর্কের কথা ভাবতে ভাবতে বুকের রক্ত বিষিয়ে উঠল। থমথমে মুখ করে আদির দিকে না তাকিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়িয়ে দিল।

আদি মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দিল এইবারে বাড়ির দিকে যাত্রা করা উচিত। কথা না বাড়িয়ে দুইজনে গাড়িতে উঠে গেল। আদিও ঘড়ি দেখল, রাত এগারোটা বাজে। মায়ের হঠাৎ করে থমথমে চেহারা দেখে আদি কি বলবে কিছুই ভেবে পেল না। একটু আগেই কত হাসি খুশি ছিল, কত গল্প করতে করতে ওর হাত জড়িয়ে, নাক মুখ বেঁকিয়ে সারা রাস্তা এলো। হঠাৎ করে এই প্রতিমা দেখে এমন কি হয়ে গেল যে মা কথা বলতে ভুলে গেল। আদি মাথা নিচু করে ড্রাইভারের সিটে বসে পড়ে। রাস্তা ঠিকঠাক থাকলে বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো আড়াই ঘন্টা লেগে যাবে।

অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে গ্রাম থেকে বেরিয়ে অন্ধকার রাস্তা ধরে কিছুদুর এগিয়ে গেল। বেশ কিছুদুর এগিয়ে যাওয়ার পরে আদি বুঝতে পারল যে রাস্তা ধরে ওরা গ্রামে ঢুকেছে এই রাস্তা সেই রাস্তা নয়। এর মাঝে কত ছোট ছোট রাস্তা কত বাঁক পেরিয়ে এসেছে সঠিক জানা নেই। দুইপাশে ধুধু করছে খেত, তার মাঝে কাঁচা গ্রামের রাস্তা। রাস্তা এক নদীর তিরে এসে শেষ হয়ে গেছে। সামনে বয়ে চলেছে গঙ্গা নদী।

আদি গাড়ি দাঁড় করিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল। ঋতুপর্ণা জানালায় হাত রেখে তার ওপরে মাথা রেখে অনেক আগেই চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ক্লান্তিটা শরীরের নয়, ক্লেদটা মনের গহীন কোনায় উপচে উঠে এসেছিল।

অন্ধকারে গাড়ি দাঁড় করাতেই ঋতুপর্ণার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আদির দিকে ঘুম জড়ানো চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "কিরে হাইওয়ে এসে গেছি নাকি?"

আদি মুখ ব্যাজার করে উত্তর দিল, "না মা, রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছি।"

হঠাৎ এক দমকা ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঋতুপর্ণার দেহ কেঁপে উঠল। মাকে ঠাণ্ডায় কাঁপতে দেখে আদি নিজের ব্লেজার খুলে মায়ের দেহে জড়িয়ে দিল। বাইশ বছরে সেই প্রথম বার ছেলের হাতের ছোঁয়ায় বিষাক্ত দংশনের ছোবল অনুভব করল ঋতুপর্ণা। আদির ব্লেজার গায়ে যেন কাঁটার পরিধানের মতন লাগলো ঋতুপর্ণার। তাও সেই অনুভুতি লুকিয়ে চোখ কচলে ম্লান হাসি দিয়ে আদিকে বলল, "আর কি হবে, গাড়ি ব্যাক কর। গ্রামে ফিরে কাউকে জিজ্ঞেস করে নেব।"

আদি ঘড়ি দেখল, এগারোটা প্রায় বাজে। আঁকা বাঁকা পথে গাড়ি পেছনে কোনোমতে ঘুরিয়ে আবার গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করে দিল। কিছু দুর যাওয়ার পরে পথ হারিয়ে মায়ের দিকে অসহায় অবস্থায় তাকিয়ে বলল, "মা মনে পড়ছে না কোন বাঁকে টার্ন নিয়েছিলাম।"

বুকের ধুকপুকানি বেড়ে উঠল ঋতুপর্ণার, শেষ পর্যন্ত এই নিরালা নির্জনে রাত কাটাতে হবে নাকি? কোথায় আছে কিছুই জানা নেই। ম্লান হেসে আদির মাথার চুলে বিলি কেটে বলল, "পথ কেউই হারায় না রে পাগল। হয়ত এটাই আমাদের কপালে লেখা ছিল।"

ওর মা ঠিক কি কথা বলতে চাইছে ঠিক বোধগম্য হল না আদির। ঋতুপর্ণা ভালো ভাবেই জানে এর অর্থ কি। হয়ত এই পথ হারিয়েই এক নতুন পথের সন্ধান খুঁজে পাবে। হয়ত এটাই ওদের অদৃষ্টে লেখা, হয়ত এই নিরালা নির্জনে অন্ধকার রাতের আকাশের জ্বলন্ত তারা ওদের এই নিষিদ্ধ সম্পর্কের সাথী হবে। ম্লান হেসে ছলছল নিস্পলক চোখে ছেলের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইল ঋতুপর্ণা। আদি মায়ের চোখের কোলের অশ্রুকণার ঝিলিক দেখে ভুরু কুঁচকে ইশারায় প্রশ্ন করে, কি হয়েছে। ম্লান হেসে মাথা দুলিয়ে ঋতুপর্ণা জানায়, কিছু না এমনি।

গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ঋতুপর্ণা। নদীর থেকে ভেসে আসা ঠান্ডা জোলো বাতাস ওর চিত্ত সিঞ্চন করে দেয়। হুহু করে বয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে কেঁপে ওঠে রমণীর নধর অঙ্গ। মায়ের মুখের অচেনা ম্লান হাসির অর্থ হাতড়ে খুঁজতে চেষ্টা করে আদি। কিন্তু মায়ের ওই ঝাপসা দৃষ্টি, নরম ঠোঁটের স্মিত হাসি আর থমথমে চেহারার অব্যক্ত বানী ওর ছোট মস্তিকে বোধগম্য হয় না।

আদি নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। ধীরে ধীরে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, "তোমার কি হয়েছে, মা?"

ঠাণ্ডা নদীর বাতাস ঋতুপর্ণার শরীর কাঁপিয়ে দেয়। ছেলের দেওয়া ব্লেজার কোনরকমে গায়ের সাথে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নিল ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য। ছেলে পাশে দাঁড়াতেই যেন গরম বিষাক্ত ছ্যাকা খেল। চোয়াল চেপে অতি কষ্টে বিচলিত চিত্ত লুকিয়ে মিষ্টি হেসে আদিকে বলল, "তাহলে এই গাড়িতেই রাত কাটাতে হবে মনে হচ্ছে।"

আদি মাথা চুলকে এদিক ওদিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলল, "জানি না মা, সরি ভুল করে ফেলেছি।"

নদীর কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস আদিকেও ভীষণ ভাবে কাঁপিয়ে তোলে। মায়ের আদর পাওয়ার আকাঙ্খায় মায়ের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ে আদি। এতক্ষণ ঋতুপর্ণার বুকের ভেতরটা বিশাল এক শুন্যতায় ভরে উঠেছিল। গাড়িতে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ছেলেকে পাশে দাঁড়াতে দেখে সেই শূন্যতা ছাপিয়ে এক মাতৃত্বের আবেশ ভরে উঠল ওর বুকে। দুই হাত বাড়িয়ে ছেলেকে কাছে ডেকে নিল ঋতুপর্ণা। স্নেহময়ী মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা গুঁজে দিল আদি। মায়ের কাঁধে মাথা গুঁজে আদি খুঁজে বেড়ায় শীতের রাতের উত্তাপ। কত রাত জেগে ওর মা ওকে বুকে করে ঘুমিয়েছে, সেই কনকনে ঠাণ্ডার রাতের কথা ভেবে আদির বুকের মাঝে প্রশান্তির দেখা দেয়।

ছেলের চুলের মধ্যে বিলি কেটে মিষ্টি করে স্বান্তনা দিয়ে ঋতুপর্ণা উত্তর দিল, "ছাড় সোনা, হয়ত এটাই একটা এডভেঞ্চার।"

ওর যেন খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল আর হঠাৎ করেই নিয়তি যেন সেই সুযোগ ওর হাতের মধ্যে নিয়ে ফেলে দিল। বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো, "জানিস বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল।"

বুকের উচ্ছ্বাস এইবারে চেপে রাখল না ঋতুপর্ণা। আদির হাতখানি বুকের কাছে জড়িয়ে বলল, "সুভাষের সাথে শেষের দিকে মনে হত যেন আমি এক বন্দিনী। এই বন্দি জীবন থেকে অনেকবার ভেবেছি পালিয়ে যাবো, কিন্তু তোর মুখ চেয়ে কিছুতেই পালাতে পারলাম না। কি করব বল, নাড়ির টান যে ভীষণ টান রে বাবা।"

আদি মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, "মা গো প্লিস, ওই পুরানো দিনের দুঃখের কথা কি এখন না বললেই নয়? এই তো মা আর ছেলে মিলে ভালোই আছি।"

মিষ্টি হেসে উত্তর দিল ঋতুপর্ণা, "তা আছি তবে এইভাবে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকলে সকালে গ্রামের লোকজন আমাদের লাশ পাবে।"

হিহি করে হেসে দিল আদি। দুইহাতে আস্টেপিস্টে মাকে জড়িয়ে বলে, "ইসস মা, তুমি থাকতে কেন মরতে যাবো।"

সামনে বিশাল চওড়া গঙ্গা নদীর কালো জল কুলুকুলু অনবরত বয়ে চলেছে মোহনার পানে। দুর দিগন্তে অন্য পাড়ে কালো কালো জঙ্গল পিচাশের মতন মাথা উঁচিয়ে। দুর থেকে কখন কোন শেয়ালের অথবা অন্য কোন বন্য প্রাণীর ডাক শোনা যায়। কালো আকাশে অসংখ্য তারার ঝিকিমিকি, মিটমিট করে নদীর তিরে ঘন আলিঙ্গনে বদ্ধ দুই নর নারীর দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছে।

ঋতুপর্ণা আদির হাত খানা নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে গায়ের চারপাশে জড়িয়ে নিল। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া থেকে নিস্তার পেতে না ওর ক্লান্ত জীবন থেকে অব্যাহতি পেতে, সঠিক ভাবে ওর মন জানে না। মাকে জড়িয়ে ধরে ফাঁকা নদীর তীরে আদি যেন পুরানো ছোট বেলা খুঁজে পেল। আদির প্রচন্ড ইচ্ছে করে মায়ের ভেতরে সেঁধিয়ে যেতে, এই নির্মল প্রশান্ত ক্রোড়ে আবার নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কালের চক্র কোনোদিন পেছনে চলে না কিন্তু আদি মন প্রান দিয়ে চাইছিল এই রাত যেন শেষ না হয়, মায়ের কোলেই মাথা রেখে বাকিটা সময় কাটিয়ে দেওয়ার।

ঋতুপর্ণা আদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্নেহভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "কি রে বাবা ঠাণ্ডা লাগছে?"

আদির বাচ্চা ছেলের মতন ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে মাথা দুলিয়ে বলে, "হ্যাঁ মা খুব ঠাণ্ডা লাগছে।"

নদীর তিরে এইভাবে দাঁড়িয়ে কনকনে ঠাণ্ডায় ওরা জমে যাবে। ঋতুপর্ণা এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখল। অনেক দূরে বেশ কয়েকটা ঘরের মতন জায়গায় আলো জ্বলছে। আদিকে ওই দুরের বাড়ি গুলো দেখিয়ে বলে, "ওই দেখ দূরে মনে হয় কিছু আছে। চল একবার ওইখানে গিয়ে দেখি, হয়ত রাস্তা পাওয়া যাবে কিম্বা হয়ত থাকার জায়গা পাওয়া যাবে।"

মায়ের দৃষ্টি অনুসরন করে আদি দেখল দূরে একটা রিসোর্টের মতন জায়গা। কনকনে ঠাণ্ডা থেকে নিস্তার পাবে এইবারে ভেবেই মন খুশিতে ভরে উঠল। মাকে হেসে বলল, "মনে হচ্ছে কোন রিসোর্ট।"

ঋতুপর্ণাও স্বস্তির শ্বাস নিল, এই ঠাণ্ডায় এইভাবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা আর যাচ্ছে না, "যদি রিসোর্ট হয় তাহলে খুব ভালো কথা। ওইখানে তাহলে অন্তত রাতে থাকা যাবে।"

আদিও নেচে উঠল, "হুম, চল।"

গাড়ি নিয়ে এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চালিয়ে দুর রিসোর্টে গিয়ে পৌছাল ওরা। বেশি বড় নয়, নদীর তীরে ছিমছাম ছোট একটা রিসোর্ট। গেটে তালা দেওয়া, কে এই রাত বারোটায় এই গন্ড গ্রামের রিসোর্টে আসবে ভেবে হয়ত লোকেরা তালা লাগিয়ে এতখনে ঘুমিয়ে পড়েছে। আদি বেশ কয়েকবার হরন বাজালও। ঋতুপর্ণা বারন করার আগেই কেউ খুলছে না দেখে অগত্যা শেষ পর্যন্ত দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে গেল। ছেলের কান্ড দেখে ঋতুপর্ণা আর হাসি থামাতে পারে না। গাড়ি থেকে বেরিয়ে চুপচাপ ছোট ছেলের কান্ড কারখানা দেখতে দেখতে মনে মনে হাসে। এই ছেলে কয়েকদিন আগে পর্যন্ত মা ছাড়া এক পা চলত না, হঠাৎ করে ওর এক্সিডেন্ট ছেলেকে কত বড় করে তুলেছে। আদি দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিল। দরজার আওয়াজ পেয়ে একজন লোক বেরিয়ে এলো। সেই লোকটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করাতে জানিয়ে দিল যে রুম খালি পড়ে আছে। আদিকে সঙ্গে নিয়ে মেন গেট খুলে দিল লোকটা।

মেন গেট খুলতেই মায়ের কাছে দৌড়ে গেল আদি, "রুম পাওয়া গেছে।"

ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে পেছনের লোকটাকে জিজ্ঞেস করে, "রুম ভালো তো, নাকি সব নোংরা?"

লোকটা ইনিয়ে বিনিয়ে হাত কচলে বলল, "না না ম্যাডাম খুব ভালো রুম একদম পরিষ্কার।"

বলেই গাড়ির পেছনের দিকে চলে গেল, ভেবেছিল হয়ত এদের সাথে কোন জিনিস পত্রের ব্যাগ থাকবে।

আদি ওকে জানিয়ে দিল ওদের সাথে কোন ব্যাগ নেই। লোকটা একটু চমকে যেতেই ঋতুপর্ণা বলে, "আমরা আসলে গ্রামের ঠাকুর দেখতে এসে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। তা বড় রাস্তা এখান থেকে কতদুরে।"

উত্তরে লোকটা অন্যদিকের একটা রাস্তা দেখিয়ে হাইওয়ে ধরার দিক বলে দেয়।

লোকটা রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে যেতে উদ্যত হতেই ঋতুপর্ণা জিজ্ঞেস করে কিছু খাবারের বন্ডবস্ত করা যাবে কি না। প্রতিউত্তরে একটু হেসে হাত কচলে লোকটা জানায়, শুধু মাত্র নুডুলস, অমলেট, চিকেন সুপ আর কোল্ড ড্রিঙ্কস ছাড়া এত রাতে আর কিছুই পাওয়া যাবে না। ঋতুপর্ণা একবার আদির দিকে তাকিয়ে লোকটাকে সব কিছুই আনতে অনুরোধ করে। অনেকক্ষণ ধরেই পেটে কিছুই পড়েনি আর নদীর কনকনে বাতাসে হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে তুলেছে। এই রাতে অন্তত চিকেন সুপ আর ডিম খেলে একটু শরীর গরম হয়ে যাবে। লোকটা মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় আধা ঘন্তার মধ্যে খাবার তৈরি করে নিয়ে আসবে।

হোটেলের রুমটা বেশি বড় নয় তবে বেশি ছোট নয়, ছিমছাম ছোট রিসোর্ট। ঢোকার সময়ে দেখেছে, আশে পাশে আরো দুটো রিসোর্ট আছে। গঙ্গার তিরে আজকাল লোকেরা সঙ্গিনীদের নিয়ে সময় কাটাতে আসে, তবে বেশির ভাগ সকালে এসে বিকেলে ফিরে যায়। রাত কাটাতে খুব কম সংখ্যক লোক আসে এই নির্জন নিরালায়। ধবধবে সাদা নরম বিছানা দেখে ঋতুপর্ণার ঘুমের আবেশ জেগে ওঠে। রাতের পোশাক কিছুই নেই, কি করা যাবে, হঠাৎ করেই পথ ভুলে এই নির্জন রিসোর্টে এসে পড়েছে। আদি রুমে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিল, এই সব ছোট খাটো রিসোর্টে মাঝে মাঝে লুকানো ক্যামেরা থাকে, সেটা একটা বড় ভয়। আদি আগেও কয়েকবার তনিমাকে নিয়ে এমন রিসোর্টে গেছে তবে রুমে ঢুকেই আগে সব জায়গা মোবাইল ঘুরিয়ে নিরীক্ষণ করে নেয়।

ঋতুপর্ণা কিছু বুঝতে না পেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি দেখছিস রে?"

অনেকক্ষণ এদিকে ওদিকে মোবাইল নিয়ে নিরীক্ষণ করে আদি মাকে উত্তর দেয়, "না মানে একটু চেক করছিলাম।"

কি করে বলে মাকে যে তনিমাকে নিয়ে একবার একটা রিসোর্টে গিয়ে এই ধরনের ঝামেলায় পড়েছিল। তখুনি সেই রিসোর্ট ছেড়ে অন্য একটা রিসোর্টে চলে গিয়েছিল।

ঋতুপর্ণা কিছু না বুঝেই আচ্ছা বলে মাথা দুলিয়ে বড় জানালার দিকে এগিয়ে গেল। আদি পেছন থেকে মায়ের দেহ বল্লরীর দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে দেখল। শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে ওর অসামান্য রূপসী মায়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষিত দেহ পল্লব। মনে হল একটু জড়িয়ে ধরে, ওই দেহের ভাঁজে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে। খোঁপার মধ্যে নাক ডূবিয়ে মায়ের গায়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।

পা টিপে টিপে মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে, "তোমার কি হয়েছে গো? অমন থমথমে কেন?"

লাল নরম ঠোঁটে মিষ্টি মোহিনী হাসি টেনে ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, "কিছুই হয়নি।"

আসলে ওর হৃদয় দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। আদি কি ইচ্ছে করেই ওর সাথে রাত কাটাতে পথ ভুল করেছে না সত্যি সত্যি নিয়তি ওদের পথ ভুলিয়ে এই নির্জনে একান্তে ওদেরকে এনে ফেলেছে। ছেলের চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ছেলের চোখের ভাষায় ঋতুপর্ণা দেখে যে ছেলে সত্যি সত্যি নিয়তির কাছে হার মেনে এইখানে এসে পড়েছে। নিয়তির পরিহাসের কাছে নিজেকে বিসর্জন দেওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই ওর।

আদির বুকে হাত দিয়ে একটু ঠেলে বলে, "তুই শুয়ে পর আমি একটু হাত মুখ ধুয়ে আসছি।"

বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল ঋতুপর্ণা, একটাই বড় কম্বল। মনে মনে হেসে ফেলল, এই একটা বড় কম্বলের মধ্যে এক প্রাপ্ত বয়স্ক নর নারী একসাথে নিভৃত রাত কাটাবে। ভাবতেই ওর শরীর বেয়ে ভীষণ ভাবে শিহরন খেলে যায়। আদির দিকে তাকিয়ে দেখে ঋতুপর্ণা। আদি মাথা চুলকে বিছানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়। ঋতুপর্ণা দাঁতের মাঝে কড়ে আঙ্গুল কেটে আদির গালে আলতো চাপড় মেরে দূরে সরিয়ে দেয়। মায়ের ঠোঁটের মিষ্টি হাসি আর চোখের ঝিলিক আদিকে উন্মত্ত প্রায় করে তোলে।

ঋতুপর্ণা আনত লাজুক নয়নে আদিকে বলে, "সর, সর, তুই বাথরুমে না গেলে অন্তত আমাকে যেতে দে।"

আদি বুক চাপড়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "না না আমি আগে যাচ্ছি, বড্ড পেচ্ছাপ পেয়েছে।" বলেই এক দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে।





কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment