CH Ad (Clicksor)

Wednesday, March 2, 2016

পরিবর্তন_Written By mblanc [তৃতীয় পর্ব - ৩.২ ছায়ানীড়]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




পরিবর্তন
Written By mblanc




তৃতীয় পর্ব

।। ৩.২ ।।

ছায়ানীড়


সুনন্দাদি আমাদের কোন আত্মীয় নয় – কিন্তু এখন বোধহয় যেকোন আত্মীয়ের চেয়ে বেশী। ওরা ছিল আমাদের প্রতিবেশী, দেশে থাকতে। কলকাতায় আমার কাজ পাবার কিছু মাসের মধ্যেই দিদিও কাজ একটা পায়, টিসিএস-এ। সেখানেই প্রেম এবং বিয়ে। বর ইতিমধ্যে অফিসে ঝগড়া করে ছোট কোম্পানীতে কাজ নেয়। তারপর দিদি নিজেই একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট কেনে তেঘরিয়ার পেছনে।

তার পর থেকেই নন্দদা (দিদির বর) ওর ওপর অকারণে রাগারাগি করতে থাকে। নিষ্ফল পুরুষ আর সফল স্ত্রীর মধ্যে যা হয়। রাগারাগি করে নন্দদা আর বছর-দেড়েকের মাথায় ঘর ছাড়ল। এদিকে জ্ঞান টনটনে, ডিভোর্স কাগজে সই করে, পাশে নোট লিখে গেল, “আমার জন্যে আর তোমাকে সহকর্মীদের কাছে অপদস্থ হতে হবে না!”

যেন এতে সন্মান খুব বাড়বে। শেষমেষ জানি সে বর্ধমানের এক কোনায় চায়ের দোকান দিয়েছে। তার পয়সাই বা কোথা থেকে এল, সুনন্দাদিকে জিজ্ঞাসা করে কোন জবাব পাই নি।

চরম ইগো আর কিছু উদ্ভট আদর্শবাদ একসাথে মেশালে যা হয় আর কি।

কিন্তু এটুকু জানি, দিদি এতোকিছুর পরেও তাকেই ভালোবাসে। ভুলতে পারেনি। দিদিটা সুন্দরী বলে লাইন ক্লিয়ার জেনে অফিসের অনেকেই হাত বাড়িয়েছিল। কিন্তু হাজার প্রলোভন, থ্রেট, পলিটিক্স সত্বেও দিদিটা আমার এখনো সতীই রয়েছে। আমি তো জানি এ ধরনের বড় বড় কোম্পানী কিভাবে গিলে খায় - সে জন্যেই সুনন্দাদির প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরো বেশী। হতে পারে দিদি যা করছে, নেহাতই বোকামি। এতোদিনে সেটল করে যাওয়া দিদির কর্তব্য। অফিসের কলিগদের মধ্যে তো ভাল লোকও ছিল, স্বীকার করে নিলে এতোদিনে ঘরে বাইরে কোথায় উঠে যেত। কিন্তু আবার হতে পারে এই উন্নতিতেই দিদির আপত্তি। এর জন্যেই তো তার সাজানো বাগান শুকিয়ে গেছে।

হয়তো দিদি ঝাঁ-চকচকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর এসি ঘরে বসে ডাটা দিয়ে আটা মাখার বদলে, রুখু চুলে চা-অলার ঘরণী হতেই বেশী পছন্দ করবে। ও চিরকালই খুব স্বাধীন মেয়ে - যদিও নরম মুখের নরম স্বভাবের এই মেয়েটাকে দেখে সেটা ধরা মুশকিল।

আর আমি কেন এত পক্ষপাতী দিদির ব্যাপারে? সারা দুনিয়া তো ওকেই গাল পাড়ছে। এসব ব্যাপারে স্বাভাবিক ভাবে বৌটার-ই তো দোষ পড়ে। আমি কেন ওর দিকে টেনে বলছি?

কারন আমি ওর ভাই। আমি ওর ছেলে।

বিয়ের আগে কটা বছর আমার খুব কষ্টে গেছিল কলকাতায়। একদিকে হতভাগা শরীরে কিছু ছিল না, তায় মেসে রাবণের গুষ্টি - সেসব সাত কাহন আর নাইবা পাড়লাম। মোট কথা, আমারও দেশে ফিরে যাবার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠেছিলো এক সময়। থাকা-খাওয়ার অসুবিধাটাই চরমে উঠেছিল। তা করলে আজ ওই আবিস্কার-টাবিস্কার কিছুই হোত না - কোথাও কোনো অজপাড়াগাঁয়ে ছেলে ঠেঙ্গিয়ে হয়তো দিন কাটতো আমার। আমি শিওর আমি একলা এই পরিস্থিতির শিকার নই - অনেক ফুল আমাদের এই অসাধারণ ইকনমির চাকায় চটকে গেছে।

আমার ভাগ্য, এই সুনন্দা দিদির জন্য। পুরোটাই।

সেদিন সুনন্দাদি আমাকে নিজের ওই দেড়কামরার ফ্ল্যাটে স্থান দেয়। লোকলজ্জার ভয়, আমাকে অবিশ্বাসের ভয়, দিন চলবে কেমন করে সেই ভয় সব দূরে ঠেলে দিয়ে আমাকে বুকে তুলে নেয় ওই দিদি। অবিশ্যি পাড়ায় এবং দেশে একটা গল্প বলে রেখেছিল যে কলকাতা শহরে একলা মেয়ে থাকলে বিপদ, তাই আমাকে পাশে রাখছে। কিন্তু আমি তো জানি কে কাকে প্রোটেকশন দিয়েছে। আমার জণ্ডিস হতে মাথা কোলে নিয়ে অফিস কামাই করে সেবা করেছে দিদি। আমাকে নিজের বিছানায় শুইয়ে নিজে খাবার টেবিলের পাশে শতরঞ্চি পেতেছে। নিজের নাইটি থেকে আমার বমি কেচে তুলেছে। আর পরে, সুখের দিনে, আমার বউ খুঁজে এনে দিয়েছে এই দিদিটাই। হ্যাঁ, অনুপমা ওরই আবিস্কার।

কিন্তু নিজের ইচ্ছেয় বোধহয় না। দিদি যেমন আমাকে নিজের থেকেই কোলে তুলে নিয়েছিল, তেমনি বোধকরি নিজেয় ঠেলে দিয়েছে। অবিশ্যি মুখে কিছু পরিস্কার করে বলেনি, কিন্তু আমি তো জানি, আমি কি করেছি। বা, প্রায় করে ফেলেছিলাম।

সুনন্দাদির ঘরে ছিলাম প্রায় বছর তিনেক। তারপর, অর্ধেক নিজের লোনে আর বাকী বড়লোক ভাবী শ্বশুরের দাক্ষিণ্যে আমার নিজের ফ্ল্যাট এবং বিয়ের সাতদিন আগে গৃহপ্রবেশ। তবে সেই তিনবছর আমরা দুটি ভাই-বোন, না, তার থেকেও বেশী ছিলাম। আমার মরা মা যেন ওর মধ্যে ভর করেছিলেন। অন্তত, সেই বাদলা রাতের আগে অবধি।

কিন্তু তার আগে গোড়ার কথা কিছু বলা দরকার।

প্রথম বছরটা আমি যেমন শিশুর মতো সুনন্দাদির ওপর নির্ভরশীল ছিলাম, পরবর্তীকালে দিদিও আমার ওপর কিছুটা ভার নামিয়ে রাখতে শুরু করেছিল। না, সাংসারিক কাজে নয় - তাতে দিদি একা দশভূজা। আর আমি অন্ততঃ কোনদিন ওর শরীর খারাপ হতে দেখিনি - একটু বোধহয় মাসিকের অসুবিধা ছিল, ব্যথায় থাকত দুদিন - আর কিছু ছিল না। জ্বরজারি, অখাদ্যকুখাদ্য খেয়ে পেট খারাপ, কিচ্ছু না। অন্ততঃ ওই তিনবছর না।

কিন্তু ঘরের বাইরে দিদি মানসিকভাবে শক্ত থাকলেও, এক-একদিন নিজের ঘরে ভেঙ্গে পড়ত। দিদির অভ্যাস ছিল (এবং তার চাপে আমারও) সাড়ে-আটটা কি নটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিজের ঘরে বসে ডায়েরী লেখা বা স্রেফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা, ইত্যাদি। শুধু নিজের জন্য, নিদের পাশে সময় দেয়া। ওই তিরিশ-চল্লিশ মিনিট তার সাথে কোন কমিউনিকেশন বারণ, ঘরে আগুন না লাগলে বা ভূমিকম্প না হলে (একদিন হয়েছিল)। টিভি-রেডিও-গান ইত্যাদিও বারণ। আমি সাধারণতঃ সেই সময়টা অফিসের কাজ করতাম, বা পর্ণ দেখতাম (তখন সবেমাত্র ইন্টারনেট পর্ণ শুরু, ফ্রি পর্ন ক্লিক করলেই পাই, দারুণ উৎসাহ) লুকিয়ে। খুব একটা বোধহয় লুকোনো যেত না দিদির কাছ থেকে, যতই হোক ওই একটাই কম্পু ঘরে। তবে দিদি এ নিয়ে কিছু বলেনি কখনো, আর আমিও উটপাখির মত “যা দেখা যায় না তা নেই” ভাবে চালিয়ে যেতাম।

যাইহোক, এই সময়টা দিদি কোন কোন দিন অন্য একটা কাজ করত। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়া।

দিদির বিছানার পাশে ছোট টেবিলের ওপর নন্দদার ছবিটা পরদিন আর সেখানে দেখা যেত না। আবার পরদিন ফিরে আসত সেখানেই। আমি সবই জানতাম। দিদির সাথে কথা বলার চেষ্টাও করেছি এ নিয়ে। কিন্তু দিদি সবসময় হেসে পাশ কাটিয়ে গেছে।

একদিন দারুণ ভ্যাপসা গরম। রাতে চেনা ফোঁপানির আওয়াজ পেয়ে আর থাকতে না পেরে দুম করে গিয়ে ঢুকলাম দিদির ঘরে। খাটের পাশে দিদি হাঁটু গেড়ে বসে, বুকের মাঝে ছবিটা দুহাতে জড়ো, কপালটা তোশকের কিনারায়। আমার পায়ের আওয়াজ পেয়ে জলভরা বিশাল দুটো বাদামি চোখ তুলে তাকালো দিদি। রাগে কণীনিকা প্রসারিত হোল।

 - “এখানে তুই এখন -- ”

 - “আর কতদিন এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবি, দিদি?”

কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।

 - “রাত হয়েছে অনেক। যা গিয়ে শুয়ে পড়, দীপু।”

আমি তার বদলে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।

 - “দেখি মুখটা।”

গালের থেকে জলগুলো হাত দিয়েই টেনে টেনে মুছে দিলাম। তারপর কোথাও কিছু না পেয়ে নিজের গেঞ্জিতেই হাত মুছতে হোল। তারপর ওকে টেনে তুলে বললাম, “শুয়ে পড়।”

 - “আমার মশারিটা আগে -”

 - “আমি খাটিয়ে দিচ্চি। তুই ঘুমো।”

এর আধঘণ্টা পরে, আমি বড়ঘরে সোফার এককোণে বসে। বোবা টিভিটাতে কি দেখাবে ভেবে না পেয়ে শুধু অ্যাড ছাড়ছে। আমি অবিশ্যি সিলিং ফ্যান-টাতেই মগ্ন।

দিদি পায়ে পায়ে এসে আমার পাশে বসল।

- “ঘুম আসছে না?”

মাথা নাড়ল দিদি। কোলের ওপর হাত জড়ো করে, মাথা নিচু।

- “আমারো ঘুম আসছে না।”

আমি হাত বাড়িয়ে ওর গালে রাখলাম, আবার ভিজেছে। কি মাথায় এলো হঠাত ওকে টেনে নিজের বুকে নিয়ে এলাম, উল্টোদিকেই। একটা পা একটু তুলে মাথাটা সাপোর্ট দিয়ে, পাখি ধরে রাখার মতো করে দুহাতে দিদির শরীরের যতোটা পারা যায় জড়িয়ে ধরলাম। যেন এতে পৃথিবীর সব ঝড় আটকে যাবে।

মিনিট পনেরো কি তারও বেশী ছিল দিদি সেই রকম। আমার পাজামার হাঁটুটা ভিজে যাচ্ছিল। তারপর হঠাত উঠে পড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল।





কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





mblanc-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

mblanc-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment