Monday, January 30, 2017

নিয়তির স্রোতস্বিনী_Written By SS_Sexy [চ্যাপ্টার ৫২]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




নিয়তির স্রোতস্বিনী
Written By SS_Sexy




(#৫২)

বিজলীমাসির কথার মাঝপথেই অনুরাধা তাড়াতাড়ি বলল,"হ্যাঁ হ্যাঁ মাসি বলছি। কিন্তু একটু গুছিয়ে না বললে রুমুদি তো ঠিক মিল খুঁজে পাবে না। হ্যাঁ রুমুদি। মাসি তখনও জানত না যে তুমি তার নীলু জেঠুর মেয়ে। কারন সে যখন তোমাদের বাড়ি থাকত তখন তো তোমার আর তোমার ছোড়দা অভির জন্মই হয় নি। আর তাছাড়া তুমি তো মাসিদের বাড়ি যাবার আগে থেকেই মিনু হয়ে গিয়েছিলে। আর মাসিকেও তুমি কখনও নিজের আসল পরিচয়, নিজের অতীতের কথা বা মা বাবার কথা বলনি।

তাই শান্তুদা যখন তোমাকে ফিরে পাবার বিনিময়ে পয়সা দেবার কথা বলেছিলেন তখনও কিন্তু মাসি তোমার আসল পরিচয় জানতে পারেনি। তাই ব্যবসায়িক কথা বার্তাই বলেছিল। আমি ও বাড়িতে যাবার পরের দিন রাতেই তুমি মাসির ঘরে তোমাদের বাড়ির ওই দুর্ঘটনার কথা প্রকাশ করেছিলে। মাসি তখনই বুঝেছিল যে গজানন তোমার পরিবারের সবাইকে মেরে তোমাকে কিভাবে সর্বসান্ত করেছিল। সেদিন রাতেই সে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে গজাননকে তার পাপের শাস্তি দেবে। আর তোমাকে বেশ্যাবৃত্তি থেকে সে চিরতরে নিষ্কৃতি দেবে। কিন্তু তখনও মাসি তোমার আসল পরিচয় জানতে পারেনি। তুমিই যে তার নীলু জেঠুর মেয়ে এটা সে তখনও বুঝতে পারেনি। শান্তুদা যেদিন তাকে এ বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছিল সেদিনই সে বুঝতে পেরেছিল তুমি তার নীলু জেঠুর মেয়ে। সেদিন মাসি এ বাড়িতে এসে ওই ছবিটা দেখে অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছে। তোমার বারোটা বছরের দুর্ভোগের কথা ভেবে মাসি সেদিনই মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল যে তোমাকে সে বিনে পয়সাতেই শান্তুদার হাতে তুলে দেবে। শান্তুদা টুপু আর ঝুনুদিকেও সে সেদিনই কথা দিয়েছিল যে তোমাকে সে তাদের হাতে যে করেই হোক তুলে দেবে। তোমার মুখ থেকে সেদিন রাতে তোমাদের ওই দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরে আর পরদিন তোমার ঘরে বসে তোমার সবটুকু কথা শোনার পর মাসি শান্তুদাকে ফোন করে বলেছিল যে সে তার সাথে দেখা করতে চায়। শান্তুদা সেদিন তাকে এ বাড়িতেই ডেকে পাঠিয়েছিল। সেদিন ঝুনুদি আর শান্তুদার সাথে কথা বলে মাসি তোমার আসল পরিচয় জানতে পেরে আর তোমাদের সকলের ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। তখনই মাসি ঝুনুদি আর শান্তুদাকে কথা দিয়ে যায় যে তোমাকে পরের রবিবারেই তাদের কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু তোমার সাথে কথা বলে মাসি যখন জানতে পারল যে তুমি মাসির বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে রাজি নও, তখন সে মনে মনে ভাবল তোমাকে কিছুটা সময় দিতে হবে। তাই সেই রবিবারে তোমাকে এখানে নিয়ে আসার প্ল্যান ক্যানসেল করে ঝুনুদি আর শান্তুদাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছিল। আর সেদিন থেকেই তোমার ঘরে খদ্দের পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল। আর সেদিন থেকেই আমি আর শ্যামলীদিও মাসির দলে ভিড়ে গিয়েছিলাম। আমিও টুপুর কাছ থেকে সব খবর পেতাম। মাসির কাছে তখন আমিও আমার পরিচয় দিয়ে বললাম যে আমিও চাই তুমি যেন টুপুর কাছে ফিরে আসো। তারপর থেকে মাসি আমি আর শ্যামলীদি মিলে তোমার সাথে লুকোচুরি খেলতে শুরু করেছিলাম। শান্তুদা আর টুপুর অনুরোধে মাসি সেদিন থেকেই তোমার কাছে আর কোন খদ্দের পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল। তোমার শরীরের ফাঙ্গাল ইনফেকশন শারিরীক অসুস্থতা নিয়ে তোমাকে আমরা এতদিন যা কিছু বলেছি তার পুরোটাই পুরোপুরি মিথ্যে কথা ছিল। কিন্তু তোমার ঘরে মাসি কেন খদ্দের পাঠানো বন্ধ করবে তার তো একটা বিশ্বাসযোগ্য কারণ থাকতে হবে। তাই ও’সব কথা বলা হয়েছিল। তুমি আজও যেমন ফিট আছ, তখনও তাই ছিলে। মাঝে মধ্যে টুপুর কথা উত্থাপন করে আমি তোমাকে বাজিয়ে দেখেছি। বুঝতে চেষ্টা করেছি যে টুপুর প্রতি তোমার মনোভাব কেমন। তুমি টুপুর জীবনে আসতে চাও কি না। খুব একটা লাভ হয়নি। আমি যে মাঝে মধ্যে সকালের দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতাম সেটা তো তুমি জানো। কিন্তু তোমাকে আমরা সবাই বলেছিলাম যে আমি ক্লায়েন্টের কাছে যেতাম। কিন্তু আসলে আমি এখানে টুপু, শান্তুদা আর ঝুনুদির সাথে শলা পরামর্শ করতে আসতাম। মাঝে মাঝে মাসিও আমার সাথে আসত। কিন্তু তোমার কাছে সে’সব গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। কারন তুমি আমার আর মাসির কথায় কিছুতেই রাজি হচ্ছিলে না। তখন আমরা সবাই ভাবলাম যে তুমি হয়ত তোমার ওই ভুয়ো অসুস্থতার কথা ভেবেই পিছিয়ে যাচ্ছ। তখন ভাবলাম, তুমি যদি জানতে পার যে তোমার কোনরকম শারিরীক অসুস্থতা নেই, আর টুপু তোমার জন্যেই বারোটা বছর ধরে অপেক্ষা করছে, তাহলে হয়ত তুমি টুপুর কাছে আসতে রাজি হলেও হতে পার। তাই পরের বার শান্তুদার ওই নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে তার সাহায্যেই ও’সব টেস্ট ফেস্ট করা হল। ওদিকে মাসিও তোমাকে এমনভাবে বোঝাতে শুরু করেছিল যে তুমি ভেবে নিয়েছিলে যে তোমার মতের তোয়াক্কা না করেই মাসি তোমাকে কারো হাতে বেচে দিতে চাইছে। তাই নিরূপায় হয়ে তুমিও সেটাকেই তোমার ভবিতব্য বলে ধরে নিয়েছিলে। কিন্তু সবরকম লুকোচুরির অবসান ঘটিয়ে আমরা আজ শান্তুদার প্রাইভেট চেম্বারে আসবার নাম করে তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি। আর আমাদের সকলেরই ধারণা ঝুনুদি আর টুপুকে দেখে, তাদের সব কথা শুনে তুমি কিছুতেই আর আমাদের সবার অনুরোধ ফেলতে পারবে না।"

শ্যামলীদি এবার প্রথম মুখ খুলল। সে পেছন থেকে আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, "হ্যাঁরে মিনু। রাধা একদম সত্যি কথা বলছে। এতদিন বাধ্য হয়েই তোর কাছে আমরা এ’সব কথা গোপন রেখেছিলাম। কিন্তু আজ তো বুঝতে পারছিস যে আমরা তোর ভালোর কথা ভেবেই এ’সব করেছি। দ্যাখ বোন, গজাননের হাতে থাকতেই তো নিজেকে মেরে ফেলেছিস মনে মনে। আর ধান্দাই বলি বা ব্যবসাই বলি, আমাদের ও বাড়িটায় থেকে তোকে দশটা বছর ধরে যা কিছু করতে হয়েছে, তা তোর মত ভদ্র পরিবারের মেয়ের কাছে নরক যন্ত্রণার সমান। আমরা তো সবাই ওই নরকের কীট। ওই নোংরা কুয়োর মধ্যেই আমাদের সাঁতরে বেঁচে থাকতে হবে সারাটা জীবন। কিন্তু ডাক্তার বাবুর গোটা পরিবারটাই যখন তোকে আপন করে নিতে চাইছে, তোকে সেই নরক থেকে উদ্ধার করতে চাইছে, আর মাসিও যখন তোকে স্বেচ্ছায় একটা ভালো জীবনে ফিরিয়ে দিতে চাইছে, তখন তুই আর এতে আপত্তি করিস না বোন। আমাদের সকলের অনুরোধটা মেনে নে।"

আমি সকলের কথা শুনে দিশেহারা বোধ করছিলাম। কী করব, কী বলব কিছুই যেন বুঝতে পারছিলাম না। এমন সময় বিজলীমাসি আবার বলল, "মিনু, তোকে তো আমি আগেই কথা দিয়েছি যে তুই নিজের ইচ্ছেয় আমার বাড়ি থেকে চলে যেতে না চাইলে আমি কখনও তোকে তাড়িয়ে দেব না। এখনও তোকে আমি একই কথা বলছি। আজ এতসব কিছু জেনে বুঝেও তুই যদি আমার ওই বাড়িতেই থাকতে চাস, আমি তাতেও তোকে বাঁধা দেব না। কিন্তু এতদিন তুই যেভাবে ছিলি, সেভাবে আর থাকতে পারবি না। তোর ঘরে কক্ষনো কোন খদ্দের ঢুকতে দেব না আমি। তোর সাথে আমার রক্তের কোন সম্পর্ক তো নেই। কিন্তু নীলু জেঠুকে আমি আমার বাবার মতই শ্রদ্ধা করতাম। তাই তুই তো আমার বোনই হলি। তোর দাদাকে আমি কোলে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতাম। এতদিন তো না জেনে আমি আর মা দু’জনেই অনেক পাপ করে ফেলেছি। ভেবেছিলাম ঝুনু আর ডাক্তারবাবুর হাতে তোকে তুলে দিলে আমাদের পাপের কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত হয়ত করতে পারব। কিন্তু তুই তাতে রাজি না হলে আমি তো তোর ওপর আর অবিচার করতে পারব না। তোকে আমার সাথেই ফিরিয়ে নিয়ে যাব। আমার বাড়িতেই তোকে সারাজীবন আটকে রাখব আমি। কিন্তু এখন যখন আমি জেনে গেছি যে তুই আমার নীলু জেঠুর মেয়ে, আগের মত তোকে আর আমার ব্যবসার কাজে নামাতে পারব না। গত দু’ আড়াইমাস ধরে তুই যেভাবে একা একা ঘরে বসে সময় কাটিয়েছিস, সারাজীবন তোকে এভাবেই থাকতে হবে।"

আমি মাসির কথা শুনে তার একটা হাত জড়িয়ে ধরে বললাম, "মাসি ......"

বিজলীমাসি ধমক দিয়ে বলল, "চুপ। মাসি বলে ডাকবি না, এ’কথা আর কতবার বলতে হবে? আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা। তোর মনে একটা ভয় ছিল যে তুই যেখানেই যাবি গজানন তোর পিছু ছাড়বে না। আমিও সেটাই বিশ্বাস করতাম। নইলে এই দু’মাস আমি অপেক্ষা করতাম না। আরো আগেই তোকে এদের কাছে নিয়ে আসতাম। কিন্তু এখন তো আর গজানন তোকে জ্বালাতে পারবে না। সে তো চিরতরে এ দুনিয়া থেকে সরে গেছে। এখন আর তোর ভাবনা কিসের রে বোন? এখন তুই মুক্ত। আজ থেকে তোর জীবনে না কোন গজানন থাকবে, না থাকবে কোন বিজলীমাসি। এখন থেকে তোর জীবনে থাকবে টুপু, ঝুনু, ডাক্তার বাবু আর তাদের ওই ছোট্ট মিষ্টি ফুটফুটে ছেলেটা আদি। এনারা সকলে যখন তোকে আদর করে কাছে টেনে নিতে চাইছে, তুই আর আপত্তি করিস না বোন। আমি তোর দুটি পায়ে পড়ি। আমাকে তোর বাবা মার কাছে আর বেশী অপরাধী করে তুলিসনা রুমু। এদের সকলের কথা মেনে নে লক্ষ্মী বোন আমার। আর একবার আমাকে দিদি বলে ডাক। তোর মুখের দিদি ডাক শুনলেই আমার মনে হবে নীলু জেঠু আর জেঠীমা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন"

বলে বিজলীমাসি ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।

আমিও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। পেছন ফিরে বিজলীমাসিকে বুকে জড়িয়ে ধরে "দিদি" বলে কেঁদে ফেললাম।

অনেকক্ষণ কাঁদবার পর নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, "ঝুনুদি, আমি একবার তোমাদের ড্রয়িং রুম থেকে ঘুরে আসছি।"

ঝুনুদি আমার হাতটা ধরে বলল, "তোকে যেতে হবে না। কি চাই তোর বল। আমি এনে দিচ্ছি। না কি টয়লেটে যাবি?"

আমি দুর্বল গলায় বললাম, "না গো ঝুনুদি, টয়লেট নয়। ওই ছবিটা আরেকটু দেখব আমি।"

ডক্টর মুখার্জি সাথে সাথে উঠে গেলেন। ঝুনুদি বিজলীমাসির হাত ধরে বলল, "আপনি আর আপনারা সকলে এভাবে আমাদের সাহায্য না করলে আমরা রুমুকে ফিরে পেতাম না। এবার রুমুকে পেয়েও যদি হারাতে হত তাহলে আর আমার ভাইটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম না আমি। আপনাদের সকলের কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। বিজলীদি টাকা যে আপনি নেবেন না সেটা তো আগেই বলে দিয়েছেন। তবু বলে রাখছি যে কোনও সময়ে যে কোনও কারনে যদি আমাদের কারুর সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে একেবারে নির্দ্বিধায় আমাদের এখানে চলে আসবেন, বা একটা ফোন করবেন।"

ডক্টর মুখার্জি ফটোফ্রেমটা নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়ে বললেন, "রুমু, এ বাড়িটার আসল মালিক টুপু হলেও আমাকেই এ বাড়ির অভিভাবকের দায়িত্বে রাখা হয়েছে। সেই অধিকারেই একটা কথা তোমাকে বলছি। এই ছবিটাকে নিজের বুকে চেপে ধরে কিছুক্ষণ চোখ বুজে থাকো। তোমার মা বাবা দাদাদের আশীর্বাদ অনুভব করতে পারবে। মনে মনে তাদের তুমি জিজ্ঞেস করে দেখ তোমার কী করা উচিৎ। আমার মনে হয় তাদের নির্দেশও তুমি অনুভব করবে।"

আমি ডক্টর মুখার্জির হাত থেকে ছবিটা নিয়ে সেটার দিকে তাকাতেই মা বাবা দাদাদের হাসি মুখ গুলো দেখতে পেলাম। বড়দা নতুন ডিজিটাল ক্যামেরা কিনে এনেছিল সেবার। নিচের তলায় বাবা মা-দের বেডরুমেই ছবিটা ওঠানো হয়েছিল। একবারে মধ্যিখানে আমি। আমার বাঁ পাশে বাবা আর ডান পাশে মা। মার ডানদিকে ছোড়দা দাঁড়িয়েছিল। সেলফ টাইমার সেট করে বড়দা ছুটে এসে বাবার বাঁ পাশে দাঁড়িয়েছিল। ছোট্ট ডিসপ্লে মনিটরে ছবিটা খুব ঝকঝকে দেখাচ্ছিল। সবাই সেটা দেখে খুব খুশী হয়েছিল। মা তখনই বড়দাকে বলেছিলেন ‘বড়খোকা, ছবিটা বড় করে ছাপিয়ে বাঁধিয়ে আনিস তো। ড্রয়িং রুমের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখব। খুব সুন্দর লাগবে দেখতে’।

মা-র সে কথাগুলো যেন এখনও আমার কানে বাজছে। চোখ আবার ঝাপসা হয়ে এল। নিজের অজান্তেই ছবিটাকে বুকে চেপে ধরে চোখ বুজলাম।

বারোটা বছর পর এই প্রথম বাবা মা আর দাদাদের ছবি দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। চোখ বুজে থেকেই মনে হল বাবা যেন আমায় বলছেন ‘ভাল আছিস মা? কতদিন পর তোকে দেখছি আজ। সুখে থাকিস তুই’। মা-ও যেন বলছেন ‘টুপুর মত ভদ্র ছেলে আমাদের শহরে আর একটাও নেই। রমেনদা আর সোনাবৌদি রাজি হলে টুপুর সাথেই তোর বিয়ে দেব, দেখিস’।

এমন কথা মা বেঁচে থাকতেও দু’একদিন আমায় বলেছিলেন। টুপুকে আমারও খুব ভাল লাগত। তবে নিজের প্রেমিক বা স্বামী হিসেবে ওকে কখনোই ভাবিনি। টুপুর চেহারা আমার মনে পড়ছে না। শুধু ওর ভাসা ভাসা দুটো চোখে সরু সোনালী ফ্রেমের চশমাটার কথাই মনে পড়ছে।

টুপু দেখতে কেমন? এতক্ষণে একটি বারও তো ওকে দেখতে পেলাম না। আদি একবার বলেছিল ওর মামু ওপরের ঘরে শুয়ে শুয়ে কাঁদছিল। কিন্তু সে তো একটি বারও আমাকে দেখতে এল না। ওদের বাড়ির ছাদের ওপর পায়চারি করতে করতে ও প্রায়ই আমার জানালার দিকে তাকাতো। কিন্তু ও যে মনে মনে আমাকে এত ভালবাসত তা তো আমি ভাবতেই পারিনি।

মনে আছে মা-র সাথে যেদিন আমি প্রথম সেক্স করেছিলাম সেদিন অসংলগ্ন অবস্থায় টুপুর সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে গিয়েছিল। আমার খোলা বুকটা বোধহয় টুপু সেদিন দেখেও ফেলেছিল। তারপর ছোড়দার সাথেও আমার রুমেই বেশ কয়েকবার সেক্স করেছি। অবশ্য আমার সেক্স লাইফ শুরু হবার কয়েকমাস বাদেই মা আমাকে সচেতন করে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে আমার ঘরে আর কারুর সাথে সেক্স করিনি। তবে বড়দা যেদিন প্রথমবার আমায় করেছিল সে রাতেও তো আমার ঘরেই সে ঘটনাটা ঘটেছিল।

টুপুকি কখনো সে’সব দেখেছিল? আর সে’সব দেখার পরেও কি আমাকে এমনভাবে ভালবাসতে পেরেছিল ও? ওই চরম সর্বনাশের দিন টুপুর সাথে ওদের বাড়ির ছাদের ওপরে গিয়ে দেখেছিলাম যে ওদের ছাদের একটা জায়গা থেকে আমার ঘরের ভেতরের অনেকটা অংশই দেখা যাচ্ছিল। সেখান থেকে বড়দা বা ছোড়দার সাথে আমাকে কিছু করতে দেখেনি তো সে? মা তো টুপুর সাথে আমার বিয়ে দিতেই চাইতেন। বেশ কয়েকবার এমন কথা আমাকেও বলেছেন তিনি। কিন্তু সেটা হবার নয় জেনেই বোধহয় আমি ওকে নিয়ে কিছু ভাবিনি। কিন্তু শান্ত শিষ্ট বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার টুপুকে দেখতে খুব ভালই লাগত।

আর আমার বাবা আর রমেন কাকুও যে আমাদের দু’জনের বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলেন সেটা তো আমি কখনো জানতে পারিনি। অবশ্য সেটা তো ওই শেষ দিনের ঘটনা। বাবা হয়ত মাকেও সে’কথাটা বলতেই পারেননি। সে রাতেই তো সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছিল। সে আলোচনার সময় আর যারা উপস্থিত ছিলেন, তারাও তো আর কেউ বেঁচে নেই। ঝুনুদির কথার সত্যাসত্য প্রমাণ করবার আর কেউ নেই।

তবে ঝুনুদি তো নিশ্চয়ই আমাকে মিথ্যে কথা বলবে না। আর এই ছবি গুলো? বারো বছর ধরে এত যত্ন করে আমাদের সকলের ছবি রাখবার মানে কি? বিদ্যুৎবাবু আমার ছবি দেখেই কী করে চিনতে পেরেছিলেন আমাকে? সেদিন ফার্ম হাউসে সেনবাবু নামের ওই লোকটা ছুটে পালিয়ে যাবার পর আমি মনে মনে অবাক হয়েছিলাম। সেই সেনবাবুই যদি এই বিদ্যুৎ হয়ে থাকে, তাহলে তার অমন আচরনের পেছনের কারনটা আজ বোঝা যাচ্ছে। আর সেটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে বিদ্যুৎ যে এ বাড়ির দেয়ালে টাঙানো ছবিটা অথবা টুপুর ঘরে কিংবা তার মানিব্যাগে রাখা আমার ছবি দেখেই আমাকে সেদিন চিনতে পেরেছিলেন, সে ব্যাপারে তো আর সন্দেহ নেই।

ছবিটা বুকে চেপে ধরে আমি চোখ বুজে এ’সব কথা ভাবতে ভাবতে আমার বন্ধ চোখের পাতা ছাপিয়েই দরদর করে জল বেরোতে লাগল। ঘরের মধ্যে কেউ কোন শব্দ করছিল না। ছবিটাকে বুকে চেপে ধরেই আমি মনে মনে ভাবলাম এখন আমার করণীয় কী? এদের সকলের অনুরোধ মেনে এ বাড়িতে আসা আর টুপুর জীবনে দাখিল হওয়া কি ঠিক হবে? যদি আমি এ প্রস্তাবে রাজি না হই তাহলে আমার পরিণতি কী হতে পারে? বিজলীমাসি তো স্পষ্টই বলে দিল যে আমাকে দিয়ে সে আর বেশ্যাবৃত্তি করাবে না। তাহলে দিনের পর দিন ওই বাড়ির ওই ঘরটার ভেতরেই তো আমাকে একঘরে হয়ে থাকতে হবে। সেটাই কি খুব সহনীয় ব্যাপার হবে? ঘরে খদ্দের আসবে না বলে রোজ দুপুরের পর থেকে আমাকে রাত এগারোটা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত একা বসে থাকতে হবে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হয়ত বিজলীমাসি, শ্যামলীদি, অনুরাধা বা অন্যান্য মেয়েরাও আমার ঘরে আসতে পারে। কিন্তু দুপুরের পর থেকে ন’ দশ ঘণ্টা তো আমাকে একাই কাটাতে হবে

 না, সেক্সের কথা নিয়ে ভাবছি না। গত বারোটা বছর ধরে হাজার হাজার খদ্দেরের সাথে সেক্স করলেও নিজের ভেতরে সেক্সের তাগিদ বলতে সত্যিই কিছু ছিল না। গত দু’মাস ধরে তো পুরোপুরি সেক্স বিহীন জীবনই কাটিয়ে আসছি। কৈ, তেমন কোন অসুবিধে হয়েছে বলে তো মনে হয়নি আমার। তাই সেক্স ছাড়া সময় কাটাতে কোন অসুবিধে হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু কোন কাজ ছাড়া বিজলী মাসির একটা ঘর দখল করে বসে থাকব, তারা আমার খাওয়া পড়ার বন্দোবস্ত করে যাবে দিনের পর দিন, সেটাই কি আর মেনে নেওয়া যায়? তারা আমাকে খাওয়াবে পড়াবে অথচ তাদের কোন কাজে আমি লাগব না। এমন পরগাছার মত জীবন কতদিন কাটাতে পারব?

আর যদি এদের সকলের প্রস্তাব মেনে নিই, তাহলে এমন একটা পরিবারে এসে আমি অনেক সুখে থাকতে পারব। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার আর কোন দুশ্চিন্তা থাকবে না। হলই বা টুপু আমার চেয়ে বছর দেড়েকের ছোট। এ পৃথিবীতে স্ত্রীর চেয়ে বয়সে ছোট স্বামী তো অনেকই আছে। তারা সকলেই সুখে সংসার করছে। মা বলতেন, সাংসারিক জীবনে কে কতটা সুখী হবে সেটা নির্ভর করে নিজেদের স্বভাব আর পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর। পরিবারের আর সকলের মানসিকতা বুঝে তাদের ভালমন্দ তাদের পছন্দ অপছন্দ গুলোকে যে নিজে মন থেকে মেনে নিতে পারে, সে-ই সুখী হয়। পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপরেই সংসারের শান্তি অশান্তি নির্ভর করে। সেখানে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বয়সের স্বাভাবিক ফারাক না থাকলেও, বা অস্বাভাবিক ফারাক থাকলেও কিছু এসে যায় না। মা বলতেন আমার বিয়ে হলে আমি নাকি শ্বশুর বাড়ি গিয়ে খুব সুখী হব। কারন আমার মধ্যে সবাইকে মেনে নেবার মত একটা মানসিকতা আছে। তাই স্ত্রী হিসেবে আমি যে কোন পুরুষকেই সুখী করতে পারব। যে কোন পরিবারের প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠতে পারব।

মা হয়ত ঠিকই বুঝেছিলেন। গত বারোটা বছরে নিজের শরীরটা বিলিয়ে দিতে মনের সায় না থাকলেও আমি কাউকে কোন কাজে বাধা দিইনি। অবশ্য বাধা দেবার মত সাহসও তো আমার ছিল না। যখন যে পরিস্থিতিতে পড়েছি তাকেই নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছি। এ বাড়িতে টুপুর স্ত্রী হিসেবে এসেও আমি যে সকলের সাথে মানিয়ে চলতে পারব তাতে আমার মনে সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধু নিজের স্বার্থ, নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে আর পাঁচটা লোককে সমাজের চোখে ছোট করে তুলতেও যে মন থেকে সায় পাচ্ছি না।

টুপু, ঝুনুদি, ডক্টর মুখার্জি, ঝুনুদির ছোট্ট ছেলেটা আদি এরা সকলে আমাকে যতই আপন করে নিক না কেন, গত বারোটা বছর ধরে আমি যে জীবন কাটিয়ে এসেছি তার কালো ছায়া কি এদের ওপরেও এসে পড়বে না? গত বারো বছরের মধ্যে যারা আমার দেহটাকে ভোগ করেছে তাদের কারুর সাথে কি আর আমার মুখোমুখি হবে না কখনো? তখন টুপু, ঝুনুদি, ডক্টর মুখার্জিরা পরিস্থিতির মোকাবিলা কি করে করবে?

আমার তো মান সম্মান বলতে কিছুই নেই। কিন্তু টুপু, ডক্টর মুখার্জি, বিদ্যুৎ- এরা সকলেই তো নিজ নিজ জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাদের সকলেরই সুন্দর সামাজিক প্রতিষ্ঠা আছে। আমার মত একটা বারবনিতাকে তাদের ঘরের বৌ করে তুলে তারা কি করে নিজেদের সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে পারবে? আমি যখন তাদের সাথে পথে ঘাটে বেরোব তখন আমার পুরোন খদ্দেররা আমাকে চিনে ফেললে? তারা যদি অসম্মানজনক কোনও মন্তব্য করে বসে, তখন এদের সম্মান হানি হবে না? শুধু নিজের স্বার্থের জন্য তাদের সকলকে পদে পদে অপমান হতে বাধ্য করে ফেলব আমি!

না না, এ কিছুতেই হতে পারে না। মানছি, টুপু আমাকে অনেক আগে থেকেই মনে মনে ভালবাসত। আমিও হয়ত শুরুতে একটু জড়সর থাকব। ওকে প্রেমিকের মত ভালবাসতে হয়ত কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তারপর আমিও ওকে স্বামী বলে ভাবতে পারব। ওর সব রকম চাহিদা পূরণ করে ওকে সুখী করতে চেষ্টা করব। হয়ত সে কাজে সফলও হব। কিন্তু আমার জন্য ওকে যদি কখনও অসম্মানিত হতে হয়, সেটা কি আমি নিজেই সহ্য করতে পারব? না না, এ আমি কিছুতেই পারব না। বিনা দোষে এদের সকলকে আমি অতখানি বিপদের মুখে ফেলতে পারি না।

হঠাৎ মনে হল মা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে বললাম, ‘আমি কী করব মা? কী করা উচিৎ আমার? আমি যে কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তুমি আমাকে বলে দাও মা। তুমিই যে আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু সব থেকে বড় হিতৈষী আমার’। মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে আদর করে চুমু খেয়ে বললেন, ‘এমন পাগলামো করছিস কেন রুমু সোনা? টুপুকে যে আমিও মনে মনে আমার জামাই করতে চেয়েছিলাম রে। আমি জানি ও তোকে খুব ভালবাসবে। তোকে সারাজীবন সুখে রাখবে। টুপুর মত ভাল ছেলে আর একটাও দেখিনি আমি। ওর মানসিক শক্তিও খুব প্রবল। তোকে ও যেমন মন থেকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেবে, তেমনি তোর জীবনের সমস্ত কালিমাকেও ও নিজের ভালবাসা দিয়ে ধুইয়ে দেবে। সব রকম প্রতিকূলতার মোকাবিলা করার ক্ষমতা ওর আছে। ওর ভালবাসায় তুই খুব শিগগীরই নিজের কালো অতীতটাকে ভুলে যেতে পারবি। তুই যেমন বারোটা বছর ধরে নরক যন্ত্রণা ভোগ করেছিস, টুপুও তেমনি তোকে দেখতে না পেয়ে খুব কষ্ট পেয়েছে। টুপু তোর গত বারো বছরের সব কিছু জেনেও তোকে স্ত্রীর মর্য্যাদা দিতে চাইছে। কত বড় মনের মানুষ হলে কেউ এমনটা করতে পারে। তুই আর একদম অন্য কিছু ভাবিস না। টুপুকে বিয়ে কর। আমি, তোর বাবা, বড়খোকা, ছোটখোকা সবাই এতে খুব খুশী হব। আজ থেকে আর আমাদের মনে তোকে নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা থাকবে না। আমরা সবাই চাই, টুপু তোর মাথায় সিঁদুর পড়িয়ে তোকে তার স্ত্রীর মর্যাদা দিক। আমরাও সবাই তোদের দুটিকে প্রানভরে আশীর্বাদ করব। তুই নিশ্চয়ই সুখী হবি মা। আর আমরা সকলেই তো সবসময় তোর পাশে আছি। আমরা তোকে আর দুঃখ পেতে দেব না’।

এমন সময়ে কেউ আমার দু’কাঁধ ধরে জোরে ঝাঁকি দিয়ে আমার নাম ধরে ডাকতেই আমি চোখ মেলে চাইলাম। দেখি ঝুনুদি। ঘরে আর তৃতীয় প্রাণী বলতে কেউ নেই। ঝুনুদি তার শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার গালদুটো মুছে দিতে দিতে বলল, "কিরে? এখনও মনস্থির করতে পারিস নি বুঝি?"

আমি কান্না ভেজা সুরে খুব দুর্বল গলায় বললাম, "জানিনা গো ঝুনুদি। তোমরা সবাই যা বলছ তা মেনে নিতে আমি যে মন থেকে সায় পাচ্ছিনা। আমার মত একটা নষ্টা মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে তোমরা যে সমাজের সকলের চোখেই ছোট হয়ে যাবে, সেটা তোমরা ভেবে দেখেছ?"

ঝুনুদি আমাকে তার বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, "অনেক ভেবেছি রে রুমু, অনেক ভেবেছি। সেই রাতটার পর থেকে বারোটা বছর ধরে রোজই এ’কথা ভেবেছি আমরা। তবে তখন তো তোকে সত্যি সত্যি ফিরে পাব কি না, সেটা নিয়েও আমাদের মনে সন্দেহ ছিল। তিনমাস আগে বিদ্যুৎ যেদিন প্রথম তোর কথা বলেছিল আর তারপর কোন এক ফার্ম হাউসে তোকে দেখে চিনতে পারার পর থেকে বিদ্যুৎ, লিপি, টুপু, আমি আর শান্তু মিলে সম্ভাব্য সব রকম প্রতিকূলতার কথাই আমরা ভেবে দেখেছি। আর সেভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই বিজলীদি যেদিন আমাদের বাড়ি এসে জানাল যে তোকে আমাদের হাতে তুলে দেবে সেদিন থেকেই নতুন করে ভাববার আর কিছু ছিলনা। এখন ওঠ তো। চল এবার তোকে ওপরে নিয়ে যাই। টুপুটা তোর মুখ থেকে ‘হ্যাঁ’ না শোনা অব্দি শান্ত হবে না। তখন থেকে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে ও। চল, সোনা বোন আমার"

বলতে বলতে আমাকে টেনে ওঠাল। আমার হাত থেকে ছবিটা নিয়ে বিছানার ওপরে রেখে আমার পড়নের শাড়িটা একটু ঠিকঠাক করে দিল। মাথার কয়েকটা অবিন্যস্ত চুল হাতের আঙুল দিয়ে ঠিক করে দিয়ে আমার হাত ধরে বলল, "চল।"

আমি ঝুনুদির হাতটা ধরে বললাম, "বাকিরা সব কোথায় গো?"

ঝুনুদি আমার হাত ধরে দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলল, "সবাই ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে। এখন ভাই ওর ঘরে একা আছে। বিদ্যুৎও ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসেছে। আমি চাই তোরা দুটিতে মুখোমুখি হয়ে একটু কথা বলে নে। আমি তোকে ওর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েই নেমে আসব।"

আমি তার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই তার একটা হাত চেপে ধরে শান্ত গলায় বললাম, "ঝুনুদি, ছোটবেলায় বাবা আর দাদাদের ছাড়া আর কোনও পুরুষের সাথেই আমি কথা বলতাম না। কিন্তু এখন আর পুরুষ মানুষের সামনে একা যেতে আমি ভয় পাই না। কিন্তু আমি চাই তুমি আমার সাথে থাকো।"

সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে ঝুনুদি আমার কানে ফিসফিস করে বলল, "বারোটা বছর বাদে নিজের প্রেমিকাকে কাছে পেয়ে ভাই যদি তোর ওপর হামলে পড়ে? তাহলে আমার সামনে লজ্জা পাবি না?"

আমি ঝুনুদির রসিকতা বুঝতে পেরেও শান্তভাবে জবাব দিলাম, "লজ্জা শরমের বালাই তো বারো বছর আগেই ঘুচে গেছে ঝুনুদি। তোমরাই শুধু সেটা কেন বুঝতে চেষ্টা করছ না, জানিনা।"

ঝুনুদি আমাকে তার শরীরের সাথে চেপে ধরে বলল, "সে’সব কথা এখন থেকে ভুলে যা রুমু। এই বারোটা বছরে তোর ওপর দিয়ে যে কত ঝড় ঝাপটা বয়ে গেছে তার সব কথাই আমরা শুনেছি। তাই তোকে আর কিছু বলতে হবে না। এখন থেকে ওই কথাগুলো মুখে বলা তো দুরের কথা, মনেও আনবি না, বুঝেছিস?" বলতে বলতে একটা ঘরের বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাতে নক করে বলল, "ভাই, ঘরে আছিস তুই?"

ভেতর থেকে খুব ভারী গলার জবাব এল, "হ্যাঁ, দিদি। আয়।"







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





SS_Sexy- লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

SS_Sexy- লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment