CH Ad (Clicksor)

Saturday, December 14, 2013

দ্বিতীয় অঙ্ক_Written By pinuram [নবম পর্বঃ প্রবাহিণীর পায়ের ছাপ]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




দ্বিতীয় অঙ্ক
Written By pinuram





নবম পর্বঃ প্রবাহিণীর পায়ের ছাপ (#1)

“কি হয়েছে তোমার? ওইরকম মাথা নিচু করে বসে আছো কেন? আর একি, তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে যে মদ খাবে না, আবার খাচ্ছ?” একটা সুরেলা ধমকে চেতনা ভঙ্গ হয় বুধাদিত্যের। দরজা খোলা ছিল, হাতে বোতল নিয়ে সোফায় বসে ছিল বুধাদিত্য। বোতলের অর্ধেক গলায় ঢালা হয়ে গেছে। কখন সেই দরজা দিয়ে ঝিলাম এসে ঢুকেছে তার খেয়াল নেই। চোখ মুখ লাল, কঠোর শূন্য চোখে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এই দরজা দিয়েই বেশ কিছু আগে আয়েশা বেড়িয়ে গেছে, চিরতরে চলে গেছে, কোন দিন ফিরে আসবেনা। যদিও জানত বুধাদিত্য যে আয়েশা কোনদিন ওর হতে পারবেনা তাও এক নেশার মতন আয়েশার পেছনে ঘুরেছে। আয়েশা চলে যাবার পরে, জ্যাকেট গলিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। ভুলে যায় ঝিলামকে দেওয়া প্রতিজ্ঞার কথা। নিচে নেমে, দোকান থেকে হুইস্কির বোতল কিনে আনে। বাড়ি ঢোকে কিন্তু দরজা বন্ধ করতে ভুলে যায়। সোফার ওপরে বসে ঢক ঢক করে অর্ধেক বোতল খালি করে দেয়। মাথার মধ্যে সবকিছু গুবলেট হয়ে যায়। নিজের জীবন আর মিস্টার সুবির গুহর জীবন যেন এক পথের পথিক। ওর বাবা নারীসঙ্গে মত্ত ছিলেন, বুধাদিত্য কিছুদিন আগেও নারীসঙ্গে মত্ত ছিল। তফাত কোথায় মিস্টার সুবির গুহ আর বুধাদিত্য গুহ’র মধ্যে? 

ঝিলাম দরজা বন্ধ করে বুধাদিত্যের দিকে এগিয়ে আসে। বুধাদিত্য ওকে দেখে কিছু বলতে পারেনা। চুপ করে বসে বাকি বোতল শেষ করার জন্য ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসে। ঝিলাম দৌড়ে গিয়ে হাত ধরে ফেলে। জোর গলায় ধমক দেয় বুধাদিত্যকে, “কি হয়েছে তোমার?” বুধাদিত্য হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে, ঝিলাম ওর হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কাঁচের বোতল দ্বিতীয় বার মেঝের ওপরে পরে ভেঙ্গে যায়। ঝিলাম ওর পাশে বসে বুধাদিত্যকে আবার জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে?” বুদ্ধিমতী ঝিলামের বুঝতে দেরি হয় না যে বুধাদিত্যের ভালোবাসা ওকে ছেড়ে চলে গেছে। ঝিলামের ওর হাতের ওপরে হাত রেখে প্রিয় বান্ধবীর মতন হেসে বলে, “কি হয়েছে, গার্ল ফ্রেন্ড ছেড়ে চলে গেছে তাই এত দুঃখ? যাঃ বাবা, আমি ত ভাবতাম এই সব কান্না কাটি শুধু কলেজের ছেলে মেয়েরা করে। এত বুড়োধাড়ির চোখে জল আসবে ভাবতেই পারিনি।”

ঝিলামের উচ্ছল আওয়াজে মন কেমন করে ওঠে বুধাদিত্যের, এতক্ষণ চুপ করে থাকা বুধাদিত্য, হাতের ওপরে ঝিলামের হাতের পরশ পেয়ে যেন একটু শক্তি পায় মনের মধ্যে। ওর মিষ্টি হসিহাসি মুখ আর তরতাজা আওয়াজে বুধাদিত্যের মনের বেদনাভাব কেটে যায়। আয়েশার প্রস্থানের সাথে ঝিলামের আগমনের যেন একটা সুপ্ত যোগসূত্র আছে। ঝিলামের টান যখন বুকের মাঝে শেষ রেশ টানে তখন আয়েশার আগমন হয় আর ঠিক আয়েশা চলে যাবার পরেই যেন ঝিলামের প্রত্যাবর্তন হয় প্রতিবার। ঝাপসা চোখের সামনে ঝিলামের মিষ্টি মুখবয়াব দেখে বুক ফাঁকা এক হাসি দেয়। তারপরে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ঝিলামকে বলে, “আমি আজ একটু মুক্ত।”

ঝিলাম ওর হাত ছেড়ে হেসে বলে, “হ্যাঁ তা’ত দেখতেই পাচ্ছি। কে গেছে বললে না’ত? ঠিক আছে বলতে হবে না। সারাদিন কোথায় ছিলে? এতবার ফোন করলাম, ফোন উঠালে না?”

বুধাদিত্যের খেয়াল পড়ল যে মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখা ছিল এতক্ষণ। হেসে বলে, “ছাড়ো অসব কথা। আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি, তার খেসারত গুনছি এখন। যাই হোক আমার কথা নাই শুনলে। কোন খবর নেই তোমার, হটাত এখানে কি মনে করে?”

ঝিলাম, “বাঃ রে, তুমি না হয় নাই বা গেলে আমাদের বাড়িতে, তাই বলে কি আমি কি এখানে আসতে পারিনা?”

বুধাদিত্য একটু লজ্জায় পরে যায় ঝিলামের কথা শুনে, “আরে না না, তোমাদের জন্য আমার বাড়ির দরজা খোলা সময়ে। তা শালা কুত্তা টাকে দেখছি না যে।”

ঝিলাম, “বম্বে গেছে অফিসের কাজে, রাতে বাড়ি ফিরবে। আমি ভাবলাম একটু তোমার সাথে দেখা করে আসি। খবর নিতে হয় সেটা ত ভুলেই গেছ। অফিসে গেছিলাম, শুনলাম তুমি আসনি। মোবাইলে ফোন করলাম কতবার, কেউ উঠাল না, আমি একটু চিন্তায় পরে গেলাম তাই চলে এলাম।”

বুধাদিত্য, “ভালো করেছ চলে এসেছ।”

ঝিলাম, “ঠাণ্ডা’টা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে।” বলে গায়ের সোয়েটারটা আরও জড়িয়ে নিয়ে উঠে গেল রান্না ঘরের দিকে, রান্না ঘরের দরজা থেকে ওর দিকে জিজ্ঞেস করে “কিছু রান্না করা আছে? না সারাদিনে কিছু খাওয়া হয়নি।” 

বুধাদিত্য, “না দুপুরে খাওয়া হয়েছে, তোমাকে অত কষ্ট দেব না প্রথম দিনেই।”

ঝিলাম, “ধুত এতে আবার কষ্ট কি।” তারপরে বেশ খুশির হাসি হেসে বলে “যাই হোক, রাতে ওকে আনতে যাবো এয়ারপোর্ট থেকে, বেশ একটা সারপ্রাইস দেওয়া হবে ওকে।”

সেই হাসি দেখে বুধাদিত্য মনে মনে ভাবে, এই স্বামী স্ত্রী ওকে কলুর বলদ পেয়েছে। যাক ঝিলামের সান্নিধ্য, কাছে থাকা, ওর মিষ্টি হাসি, চোখের ভাষা এই যথেষ্ট ওর জন্য। বুধাদিত্য হেসে বলে, “বাপরে, প্রেম উথলে পড়ছে মনে হচ্ছে। একটা কথা জিজ্ঞেস করব, যদি কিছু মনে না কর।”

ঝিলাম হাসতে হাসতে বলে, “হ্যাঁ জিজ্ঞেস করে ফেল।”

বুধাদিত্য, “সমীরের সাথে সব ঠিকঠাক চলছে?”

ঝিলাম ভুরু কুঁচকে বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “হটাত এই কথা কেন জিজ্ঞেস করলে?”

বুধাদিত্য হেসে কথা ঘুড়িয়ে বলল, “না মানে, সমীরের মাথার কোন ঠিক নেই তাই বললাম।” বুঝতে দিলনা যে সমীরের সাথে ওর কথা হয়েছে আর সেদিনের ঝগড়ার কথা বুধাদিত্য সব জানে। 

ঝিলামের গলায় বেশ খুশির সুর, “হ্যাঁ আজকাল ভালোই আছি। সমীর ইদানীং অনেক বদলে গেছে। বেশ খুশি খুশি মনে হয়। তবে অফিসের কাজ বেড়ে গেছে ওর, আজকাল বেশ রাত করে বাড়ি ফেরে।” ফ্রিজ খুলে ওকে বলে, “তোমার ফ্রিজে কিছু নেই ত। যাও কিছু কাঁচা বাজার করে নিয়ে এস, আমি দেখি কিছু রান্না করে ফেলি। ডাল, তেল নুন কোথায়? সব আছে না আমাকে তোমার সাথে যেতে হবে?”

এযে দেখি একদিনেই গৃহিণী হয়ে গেল। বুধাদিত্য ওকে বারন করে, “তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? প্রথম বার এসেছ আর এসেই রান্না ঘরে? যা বাবা, একটু বস আমি কফি বানাই।”

ঝিলাম খিলখিল করে হেসে বলে, “আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না আমাকে। অনেক হয়েছে, তুমি যাও কিছু নিয়ে এস আমি চা বানিয়ে রাখছি।”

অগত্যা বুধাদিত্যকে বাজার বের হতে হয়। এমনিতে সকালে কাজের লোক রান্না করে যায়, না থাকলে বাইরে খেয়ে নেয়, মাঝে মাঝে নিজের হাত পুড়িয়ে রান্না করে অবশ্য। কিন্তু ঝিলামকে দেখে উৎফুল্ল মনে বাজারে চলে যায়। কিছু পরে কাঁচা বাজার করে ফিরে আসে। বাড়ি ঢুকে দেখে, ঝিলাম কফি বানিয়ে সোফার ওপরে বসে ওর অপেক্ষা করছে।

বুধাদিত্য, “কি হল চুপ করে বসে কেন? টিভি চালাতে পারতে’ত।”

ঝিলাম ওর হাত থেকে বাজারের প্লাস্টিক গুলি নিয়ে বলে, “বাড়ির মালিক বাড়ি নেই আর আমি একাএকা বসে কফি খাব নাকি? নাও খেয়ে নাও, দেখি কি এনেছ? কিছু কাটাকাটি করতে পার? একটু আলু না হয় কেটে দাও, পটল দিয়ে একটা ঝোল আর ডাল করে রেখে যাই।” 

বুধাদিত্য চুপ করে সোফার ওপরে বসে দেখে। ঝিলামের উচ্ছল রুপ যৌবন দেখে বুকের ভেতর বেশ একটা ভালোলাগায় ভরে যায়, ওর সান্নিধ্য বড় মিঠে। আলু ছুরি দিয়ে গেল ঝিলাম। হাত মুখ ধুয়ে, গায়ের সোয়েটার খুলে রান্না ঘরে ঢুকে পড়ল ঝিলাম। আলু কাটা হয়ে গেলে আলু নিয়ে চলে যায়। শীতকালে সন্ধ্যে অনেক তাড়াতাড়ি নেমে আসে। সাতটার মধ্যে যেন চারদিকে ঘন অন্ধকারে ডুবে যায়। দিল্লী তখন যেন জেগে ওঠে। বুধাদিত্য চুপ করে বসার ঘরে বসে শুধু ঝিলামের দিকে তাকিয়ে থাকে। এক উচ্ছল প্রবাহিণী ওর ঘরের মধ্যে নেচে বেড়াচ্ছে। নীল রঙের শাড়ি, নীল রঙের ব্লাউস, আঁচল কোমরে গুঁজে নিয়েছে, বেনুনি খুলে মাথার পেছনে একটা হাত খোঁপা করে বাঁধা। পেছন থেকে ঠিক একটা বালির ঘড়ির মতন দেহ গঠন। ঝিলামের যৌবনের ডালি ভরা আকর্ষণীয় রুপসুধা আকণ্ঠ পান করে চুপিচুপি। ঝিলামের সেদিকে খেয়াল নেই, নিজের মনের মতন রান্নায় মশগুল। স্বামীর বন্ধুর চেয়ে বুধাদিত্য যেন ওর বেশি কাছের বন্ধু। গুনগুন গানে রান্না সেরে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখে যে বুধাদিত্য ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে। 

মিচকি হেসে বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করে, “কি হল কি দেখছ?”

বুধাদিত্য একবার বলতে চায় যে তোমার রুপে পাগল হয়ে তোমাকে দেখছি, কিন্তু ম্লান হেসে বলে, “রান্না শেষ?”
মাথা নাড়ায় ঝিলাম চোখে একটু বিরহের বিষণ্ণতা, “হ্যাঁ শেষ। সবে সাড়ে আটটা বাজে, অনেক সময় বাকি। সেই রাত এগারটায় ফ্লাইট ল্যান্ড করবে। কি করা যায় বলত আমার আজকে আর তর সইছে না।”

বুধাদিত্য হেসে ফেলে, “প্রেম যে উথলে পড়ছে। তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আর বাড়িতে মন টিকছে না। বেড়াতে যেতে চাও?”

ঝিলাম, “কোথায় যাবো এই রাতে?”

বুধাদিত্য, “গাড়িতে এমনি এমনি। সময় মতন তোমাকে এয়ারপোর্ট নিয়ে যাবো চিন্তা নেই।”

ঝিলাম, “হ্যাঁ, তাই চল। বাড়িতে সত্যি আর মন টিকছে না।”

একবার যখন হ্যাঁ বলেছে ঝিলাম, তখন সিদ্ধান্ত বদলে ফেলার আগেই বেড়িয়ে পরা ভালো। উচ্ছল রমণীর যদি হটাত করে আবার মতিগতি বদলে যায়। বুধাদিত্য তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পরে ঝিলামকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। বাইরে লোক চলাচল কমে এসেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রায় শেষের দিকে, ঠাণ্ডা একটু যেন জাঁকিয়ে, ছেড়ে যাবার আগে যেন শেষ কামড় বসিয়ে দিয়ে তবে যাবে। ঝিলাম বুঝতে পারেনি যে বাইরে এত ঠাণ্ডা হবে। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে ওকে বলে হিটার চালিয়ে দিতে। 

বুধদিত্য গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল, নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে। গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে এয়ারপোর্ট ছাড়িয়ে জয়পুর হাইওয়ে ধরে ফেলে। এয়ারপোর্ট ছাড়াতেই ঝিলাম ওকে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছে? উত্তরে বলে, ঠিক নেই, তবে ঠিক সময়ে ওকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেবে। বুধাদিত্য চুপ করে গাড়ি চালায়, পাশে ঝিলাম চুপ করে বসে থাকে। একজনের মনে ভালোলাগার পূর্বরাগ কিন্তু সেটা অবৈধ, অন্য জনের মনে খুশির আমেজ, স্বামীর সাথে দেখা হবে। 

ঝিলাম কিছু পরে বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি পিস্তল নিয়ে ঘোরাফেরা কর কেন? তুমি ত আই.টি’তে চাকরি কর?”

বুধাদিত্য হেসে মজা করে উত্তর দেয়, “ওই তোমাকে বাঁচানোর জন্য পিস্তল যোগাড় করেছিলাম।”

ঝিলাম, “ধুত, সত্যি বল না, তুমি পিস্তল নিয়ে কি কর?”

বুধাদিত্য, “আমি একটু পাগলা প্রকৃতির লোক, তাই মাঝেমাঝে নিরুদ্দেশের দিকে যাত্রা করি একাএকা। রাত বিরাতে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যাই যেদিকে দু’চোখ যায়। নিজের আত্মরক্ষার করার জন্য একটা অস্ত্র চাই তাই পিস্তল কিনেছিলাম।”

ঝিলাম, “বাপরে,কাউকে সাথে না নিয়ে, তোমার একাএকা বেড়াতে ভালো লাগে?”

বুধাদিত্য ম্লান হেসে বলে, “সবাই’ত আর সমীরের মতন ভাগ্যবান নয়, কি করব আর, একা তাই একা ঘুরে বেড়াই।”

ঝিলাম লাজুক হসে বলে, “তুমি বিয়ে করনি কেন?”

খুব কঠিন প্রশ্ন, বুধাদিত্য কেন বিয়ে করেনি। বিয়ের কথা, কাউকে সাথে নিয়ে চলার কথা ওর মাথায় কোনদিন আসেনি। ঝিলামকে দেখে সেই কথা প্রথম মাথায় আসে যে যদি ঝিলামের মতন কাউকে পেত তাহলে বুকের বামদিকে বসিয়ে রাখত চিরজীবন। বুধাদিত্যকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে ঝিলাম, “গার্লফ্রেন্ড চলে গেছে বলে দুঃখ হচ্ছে?”

কাষ্ঠ হাসি হাসল বুধাদিত্য, আয়েশা চলে গেছে, একদিকে ভালো হয়েছে, ফাঁকা বুকে এক নতুন মানুষ খোঁজা যাবে যাকে নিজের করে নিতে পারবে বুধাদিত্য। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, “কারুর চলে যাওয়াতে আজকাল আর দুঃখ হয় না।”

ঝিলাম, “তাই নাকি? কে কে ছেড়ে গেছে তোমাকে?”





নবম পর্বঃ প্রবাহিণীর পায়ের ছাপ। (#2)

বুধাদিত্য বলতে গিয়েও দুঃখের কথা বলতে পারেনা। ঝিলামকে হেসে বলে, “সমীরকে সারপ্রাইস দেবে কি খালি হাতে?”

ঝিলাম মিষ্টি হেসে বলে, “না না, যাওয়ার আগে ওর জন্য একটা বোকে কিনে নেব। অইত আসার সময় একটা জায়গায় দেখলাম একটা দোকান খোলা আছে।”

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, “শীতকাল ডিয়ার, রাতে ফেরার সময়ে সেই দোকান খোলা পাবেনা।”

মুখ শুকিয়ে যায় ঝিলামের, “তাহলে কি হবে? আমি যে কিছুই কিনি নি।”

মনে মনে বলে, তুমি থাকতে আর ফুলের কি দরকার, নিজেই ত একটা ফুলের ডালি সাজিয়ে বসে। বাঁকা হাসি হেসে বলে, “তাহলে গাড়ি ঘুড়িয়ে নেই, বোকে কিনে আবার দেখা যাবে।”

খুশি হয়ে যায় ঝিলাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ গাড়ি ঘুড়িয়ে নাও, আমি ওর জন্য বোকে কিনবোই, খালি হাতে সারপ্রাইস দিতে ঠিক মন মানছে না।”

বুধাদিত্য যেন চালক আর ঝিলাম কর্ত্রী। বুধাদিত্য গাড়ি ঘুড়িয়ে নেয়, দোকানের সামনে এসে ফুলের বোকে কিনে আবার উঠে পরে গাড়িতে। সবে দশ’টা আরও অনেক সময় আছে হাতে। হাতে বোকে, ঠোঁটে হাসি, ফুলের চেয়ে ওর ঠোঁট গুলি বেশি মিষ্টি দেখায়। বুধাদিত্য একবার ঝিলামের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করে দিল। 

ঝিলাম, “এবারে বেশি দুরে যেওনা, তাহলে কিন্তু ঠিক সময়ে ফিরতে পারব না।”

বুধাদিত্য, “জো হুকুম মালকিন, আপনার আদেশ শিরোধার্য।” হেসে ফেলে দু’জনেই।

ঝিলাম, “আমরা দু’জনে তোমাকে খুব জ্বালাতন করি তাই না?”

বুধাদিত্য হাসতে হাসতে উত্তর দেয়, “তা করো বইকি, খুব জ্বালাতন করো। ছোটোবেলায় হস্টেলে তেলু শালা জ্বালাতন করেছে, বিয়ের পরে ওর বউ জ্বালাতন করে মারছে।” 

ঝিলাম হেসে বলে, “না আর জ্বালাতন করব না তোমাকে। সত্যি বলছি, আমাকে নামিয়ে দাও এখানে তাহলে।”

বুধাদিত্য, “পাগল হলে? সমীর ছেড়ে দেবে আমাকে? গলা টিপে মেরে ফেলবে তাহলে।”

ঝিলাম, “ওর আগে আমি তোমাকে মেরে ফেলব।”

বুধাদিত্য একবার ভাবে, খুব বাধে গো খুব বাধে, বেশি করে বাধে। হেসে বলে, “তুমি বললে আর আমি নামিয়ে দেব, ভাবলে কি করে? এত সুন্দর করে রান্না করে রেখে গেলে, তারপরেও স্বার্থপরের মতন তোমাকে ছেড়ে দেব, হতেই পারে না।”

ঝিলাম ঘড়ি দেখে, গল্প করতে করতে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে বড় বড় চোখ করে বলে, “বুধাদিত্য, আমার মনে হয় এবারে আমাদের এয়ারপোর্টের দিকে যাওয়া উচিত। এগারোটা বাজতে যায়।” ফুলের তোড়া’টা নাকের কাছে আনে গোলাপ আর অন্য ফুল মেশানো, ঘ্রান টেনে নেয় ঝিলাম। “উম্মম, জানো খুব ভালো লাগছে। পরের মাসের দশ তারিখের মধ্যে জীবনের প্রথম মাইনে পাবো। সবটা দুহাতে খরচ করে দেব।” গলার স্বর বেশ উৎফুল্ল, “সমুর জন্য একটা কালো চামড়ার জ্যাকেট কিনব, তোমার জন্য কিছু কিনব, বাড়ির সবার জন্য কিনব।” 

বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে, “নিজের জন্য কিছু কিনবে না?”

ঝিলাম মাথা নাড়ায়, “না, প্রথম মাইনে দিয়ে আমি কি কিনব? যা কেনার সমু কিনে দেবে আমাকে।”

এয়ারপোর্ট এসে যায়, ঘড়িতে এগারোটা বাজে। সামনের বড় এল.সি.ডি তে লক্ষ্য করল যে বম্বের ফ্লাইট ল্যান্ড করে গেছে একটু আগে। ঝিলাম সমীরকে ফোন করে জানল যে কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে যাবে। ঝিলামের চোখে মুখে উত্তেজনা ফেটে পড়ছে, সমীরকে জানায় নি যে ওর জন্য এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে ঝিলাম। উৎকণ্ঠায় বারেবারে ঘড়ি দেখে, মনের মধ্যে উশখুস ভাব। বুধাদিত্যকে বারেবারে জিজ্ঞেস করে, এত দেরি কেন? বুধাদিত্য বুঝিয়ে হাল ছেড়ে দেয়। 

কিছুপরে সমীর গেট থেকে বেড়িয়ে আসে। ঝিলাম ওকে দেখে প্রায় দৌড় লাগিয়ে হাত ধরে ফেলে। সমীর ঝিলামকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে ওঠে। বুধাদিত্য কিছু দুরেই দাঁড়িয়ে ছিল, ওদের প্রগাড় আলিঙ্গন দেখে বুকের ভেতর একটু চিনচিন করে ওঠে। ক্ষণিকের জন্য ওদের ভালোবাসা দেখে হিংসে হয় বুধাদিত্যের। কাউকে ভালোবাসা হয়ত ওর কপালে আর নেই। সমীর ঝিলামকে একহাতে জড়িয়ে ধরে, তারপরে কিছু দুরে দাঁড়িয়ে থাকা বুধাদিত্যের দিকে চোখ যায়। সমীরের চোখে একটু যেন ধরাপরে যাওয়ার একটা ভীতি লুকিয়ে আছে, সেটা বুধাদিত্যের চোখ এড়াতে পারেনা। বুধাদিত্যের সন্দেহ চেতন মন কিছুর একটা গন্ধ পায়।

সমীর মিচকি হেসে বলে বুধাদিত্যকে, “কিরে, আমার বউ তোকে খুব জ্বালাচ্ছে, তাই না?”

বুধাদিত্য হেসে ফেলে, “সেই বিকেল থেকে মাথা খেয়ে রখেছে, কখন আসবে কখন আসবে।” ঝিলামের দিকে তাকিয়ে বলে, “এবারে শান্তি, এসে গেছে তোমার প্রানে বাতাস ঢালতে।”

ঝিলাম লাজুক চোখে সমীরের দিকে তাকিয়ে শিশুসুলভ গলায় আব্দার করে, “কিছু এনেছে আমার জন্যে?”

সমীর ওর কাঁধে হাত দিয়ে টেনে বলে, “নিশ্চয় ডার্লিঙ, সেটা কি করে ভুলে যাই।”

ঝিলাম উৎফুল্ল হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি এনেছ?” 

গোলাপি নরম গালে আলতো করে নাক ঘষে বলে, “বম্বে থেকে একটা জুয়েলারি সেট।”

আনন্দে ঝিলাম ওর বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে, “সত্যি আমার কথা মনে ছিল তাহলে?”

সমীর উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মনে ছিল।” স্ত্রীকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় সমীরের চোখ একদিক ওদিক ঘোরাফেরা করতে থাকে, মনে হয় কাউকে যেন খুঁজছে এই ভিড়ে। 

বুকের কাছে জড়িয়ে থাকা ঝিলাম সমীরের চোখ দেখে জিজ্ঞেস করে, “কি হল, কাউকে খুঁজছ নাকি?”

সমীর, “কই না ত। না না, আমি এমনি দেখছিলাম এদিক ওদিক। চল বাড়ি চল, অনেক রাত হয়ে গেছে আর ঠাণ্ডা টাও বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে।” বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কাল তোর ছুটি না অফিস যেতে হবে?”

বুধাদিত্য হেসে ফেলে, সেই প্রথম রাতের কথা মনে পরে যায়, না আর নয়, এই একবার যা ঘটে গেছিল আবার যদি পেছল খায় তাহলে আবার সেই প্রেমকেলি রত স্বামী স্ত্রীর খেলা দেখতে হবে। কান লাল হয়ে যায় বুধাদিত্যের, চাপা হেসে বলে, “কাল ছুটি, তবে আমি তোদের বাড়ি নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে যাব।”

ওরা তিনজনে মিলে গাড়ি পারকিঙ্গের দিকে হাঁটতে শুরু করে দেয়। সমীরের হাত জড়িয়ে ঝিলাম আগে আগে হেঁটে যায়, বুধাদিত্য ওদের পেছন পেছন হাঁটে। বুধাদিত্য লক্ষ্য করে বেশ কিছু দুরে এক মহিলা দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। দুরে দাঁড়ান সেই মেয়েটাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বুধাদিত্য, মনে করতে চেষ্টা করে, ওকে কি আগে কোথাও দেখেছে? না দেখেনি। পারকিঙ্গে ঢোকার মুখে সমীর পেছন দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে আলতো করে মাথা দোলায়। দুরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা প্রত্যুত্তরে আলতো করে মাথা দোলায়। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় বুধাদিত্যের, মনের কোনে এতক্ষণ যে সন্দেহের মেঘ জমে এসেছিল সেটা সুনিশ্চিত হয়ে যায়। ঝিলামকে নিয়ে সমীর গাড়িতে উঠে পরে। বুধাদিত্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার নিরীক্ষণের দৃষ্টিতে ছবি এঁকে নেয়। এখন নয়, পরে সময় হলে জিজ্ঞেস করবে এই ব্যাপারে। ঝিলামকে দেখে খুব কষ্ট হয়, বুকে কত আশা বেঁধে স্বামীর হাত ধরে পেছনের সিটে বসে, আর এই ছেলে শেষে কিনা অন্য কারুর সাথে? জানে সমীরের উত্তর, মিথ্যে কথা বলে দেবে সোজা। 

ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বুধাদিত্য বাড়ি ফিরে যায়। সমীর আর ঝিলাম বারবার বলে রাতে থেকে যেতে, কিন্তু হেসে ফেলে বুধাদিত্য, চোখ টিপে ঝিলামের দিকে তাকায়। ঝিলাম বুঝে যায় বুধাদিত্যের চোখের ইঙ্গিত, সেই প্রথম দিনের কথা। আকর্ষণীয় কমনীয় যৌবনের ডালি নিয়ে সেই রাতে ভিজে স্লিপ পরে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে বুধাদিত্যের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ঝিলাম লজ্জায় লাল হয়ে যায়, মুখ ঘুড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। বুধাদিত্য চলে আসে ওদের ছেড়ে।

একদিন বিকেল বেলা, বুধাদিত্য চুপ করে বসে টিভি দেখছিল, এমন সময়ে কলিং বেল বাজে। ঠাণ্ডা কমে এসেছে, ছুটির দিন, কোন কাজ নেই। আজকাল আর বারে বসে মদ গেলা হয় না, কোন নারীসঙ্গে আর মন নেই। দরজা খুলে দেখে ঝিলাম দাঁড়িয়ে হাতে বেশ কয়েকটা শপিং ব্যাগ। ধবধবে সাদা জিন্স আর গাড় নীল রঙের টপে দারুন দেখাচ্ছে ঝিলামকে। পেছনে দাঁড়িয়ে সমীরের, তাঁর হাতেও বেশ কয়েকটা শপিঙ-এর ব্যাগ। বুধাদিত্য বুঝে যায় যে ফেব্রুয়ারির দশ তারিখে ঝিলাম প্রথম বেতন পেয়েছে আর সেই খুশিতে সারা বাজার কিনে ওর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। সমীর মুখ কাচুমাচু করে পেছনে দাঁড়িয়ে।

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, “শালা এতদিনে পরে তোকে দেখে মনে হচ্ছে কলুর বলদ। আয় আয় ভেতরে আয়।”

ঝিলাম ভেতরে ঢুকেই ওর হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দেয়, বলে, “এক বার খুলে দেখত পছন্দ হয়েছে কিনা? তোমার চয়েস ত আবার অনেক বড় বড়, জানি না বাবা মনে খুব খুত খুত ছিল কেনার সময়ে।”

বুধাদিত্য সমীর আর ঝিলামকে বলে, “শালা এই সব করতে গেলি কেন?”

সমীর, “অনেক হয়েছে, অনেক দেখিয়েছিস তুই। জানি শালা তুই অনেক বড়লোক এবারে একবার খুলে দেখ, পছন্দ কিনা। সারা বাজার আমার মাথা খেয়ে ফেলল এই নিয়ে।”

ব্যাগ খুলে দেখে একটা ছাই রঙের দামী সুটের পিস। মাথায় হাত বুধাদিত্যের, আলমারিতে প্রায় গোটা দশ বারো সুট আছে, তারপরে আবার। সমীর হেসে জিজ্ঞেস করে পছন্দ কিনা? বুধাদিত্য ঝিলামের দিকে তাকিয়ে জানায় যে উপহার খুব পছন্দ হয়েছে, ঝিলামের মুখ দেখে কি আর না বলা যায়। সমীর জানায় যে ঝিলাম সব পয়সা শপিং করে শেষ করে দিয়েছে। ওর জন্য একটা সুট পিস কিনেছে। বাড়ির সবার জন্য জামা কাপড় বা কোন না কোন উপহার কেনা হয়েছে। সমীর বলে যে বুধাদিত্যকে পুজোতেও কিছু দেওয়া হয়নি তাই ওর সুট ঝিলাম কিনেছে। দুই বন্ধু মিলে বসে গল্প করে, ঝিলাম রান্না ঘরে ঢুকে ওদের জন্য কফি বানিয়ে আনে। বুধাদিত্যের ফাঁকা বাড়ি ঝিলামের হাসির কল্লোলে ভরে ওঠে। 

কফি খেতে খেতে ঝিলাম সমীরকে বলে, “যাও ত বাজারে একটু মাংস নিয়ে এস, রান্না করে রেখে যাই ওর জন্য।”

সমীর বুধাদিত্যকে বলে, “আরে শোন, আজ রাতে আমার বাড়ি চল।”

ঝিলাম কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “ওকে বলে লাভ নেই, ও যাবেনা আমাদের বাড়ি।” একটু ঠেস দিয়ে কাষ্ঠ হেসে বলে, “একাএকা ঘুরে বেড়াবে, একা একা সব করবে, থাকুক একা। তুমি যাও।”

বুধাদিত্য ঝিলামের সাথে পেরে ওঠে না। সমীর ওর কথায় সায় দেয়, কিছুপরে দুই বন্ধু মিলে বাজারে বেড়িয়ে যায়। বুধাদিত্য একবার ভাবে যে এয়ারপোর্টে দাঁড়ান সেই মেয়েটার কথা একবার জিজ্ঞেস করে, বিকেলের কথা ভেবে আর জিজ্ঞেস করেনা, এই সুন্দর বিকেল মাটি করে দিতে মন করেনা। 

বুধাদিত্য সমীরকে বলে, “হুম শালা বেশ আনন্দে আছিস, কি বল। তা এত খরচ করতে গেলি কেন?”

সমীর, “নারে বাবা, খরচা আর কি। তুই শালা এত করিস, আর এইটুকু আমরা করব না? জানি বাবা জানি তুই শালা অনেক বড়লোক, আমাদের দুজনের মাইনে মিলিয়ে হয়ত তোকে ছুঁতে পারব না।”

বুধাদিত্য হাল্কা হেসে বলে, “ছাড় ওই সব কথা, আছিস কেমন তাই বল?”

সমীর, “ভালো আছি, একদম মস্ত। আজকাল একটু কাজের চাপ বেড়ে গেছে। মাঝে মাঝেই বাইরে যেতে হয়, তবে ঝিলামের জন্য রাতে থাকিনা, সেদিনেই ফিরে আসি। তবে এবারে ভাবছি, একটু কাজে মন লাগাতে, ঝিলামের চাকরি হয়ে গেছে, এবারে ও শান্ত হয়ে যাবে। এবারে একটু কাজের দিকে মন দিতে হবে।”

বুধাদিত্যের একবার বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, কাজের দিকে না অকাজের দিকে? চেপে যায় সেই প্রশ্ন। মাংস কিনে বাড়ি ফিরে আসে। ওদের গল্প চলাকালীন ঝিলাম রান্না সেরে ফেলে। অনেকক্ষণ এইসেই, কাজের গল্প, অকাজের গল্প করে খাওয়াদাওয়া সেরে ঝিলাম আর সমীর বারি ফিরে যায়। যাওয়ার সময়ে বুধাদিত্য করুন চোখে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে থাকে, মনে হল যেন ঘর ফাঁকা করে কেউ চলে গেল। সেই করুন চোখের চাহনি, ঝিলামের চোখে পরেনা। ঝিলাম বেশ খুশি, সমীর অনেক দিন পরে ওর সাথে শপিং করতে বেড়িয়েছে, জীবনের প্রথম মাইনে পেয়ে সবার জন্য জিনিস কিনেছে।





নবম পর্বঃ প্রবাহিণীর পায়ের ছাপ (#3)

সারা অফিস মাতামাতি একটা বেশ বড় প্রজেক্ট নিয়ে। পরে মাসে হয়ত আবার একটা ট্রিপ আছে। সারা অফিস মাতামাতি একটা বেশ বড় প্রজেক্ট নিয়ে। এবারে হয়ত সিডনি না হয় মেলবোর্ন যেতে হবে। টেকনিকাল কিছু প্রেসেন্টেসান দেবার আছে, সাথে সি.ই.ও বিশ্বনাথ আহুজা, সি.টি.ও অরুন ঠাকুর এবং আরও কিছু মার্কেটিঙের লোক যাবে। অফিসে বেশ ব্যাস্তই থাকে, তবে দুপুরের দিকে নিজেকে কয়েক ঘন্টার জন্য খালি রাখে, কখন প্রিয় বান্ধবী, ঝিলামের ডাক পরে ঠিক নেই। একবার ভেবেছিল একটা ড্রাইভার রাখবে, কিন্তু দুপুরে ঝিলামকে বাড়ি পৌঁছে দেবার আনন্দ হারাতে চায় না বুধাদিত্য। ঝিলাম মাঝে মাঝেই হানা দেয় বুধাদিত্যের অফিসে। অগত্যা বুধাদিত্যকে কিছু সময়ের জন্য অফিস ছেড়ে বেড়িয়ে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিতে হয়। বাড়ির পথে ওর সারাদিনের স্কুলের গল্প শুনতে হয়, চুপ করে শুনে যায়, মাঝে মধ্যে কিছু মন্তব্য করে। কোন কোন সময় কোন স্কুলের কোন লোক ওর দিকে তাকাল, কেমন ভাবে তাকাল সেইসব কথা হয়। দুজনে সেই সব কথা শুনে বেশ হাসি ঠাট্টা করে।

একদিন সমীর কে ফোন করে দেখা করতে বলে বুধাদিত্য, জানতে চায় যে এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মহিলা কে। বুধাদিত্য জানত সমীরের উত্তর, তাও জিজ্ঞেস করে। সমীর অকাট মিথ্যের প্রশ্রয় নিয়ে জানিয়ে দেয় যে কেউ ওর জন্য এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে ছিল না। সমীর হেসে জানিয়ে দেয় যে অন্য কোন নারীর প্রতি ওর কোন টান নেই, ওর বুকের মাঝে শুধু মাত্র ঝিলামের ছবি আঁকা। বুধাদিত্য সমীরের ফাঁকা হাসি বুঝতে পেরে যায়। সমীরের সাথে বাকবিতন্ডে যায় না বুধাদিত্য, একটু খানি সাবধান করে মাত্র, বলে যে, মদে আর নারীসঙ্গে যেন নিজেকে ডুবিয়ে না দেয়।

মার্চের শেষের সপ্তাহ, ঠাণ্ডা চলে গেছে দিল্লীর আকাশ থেকে। হোলি পেরিয়ে গেছে। বাতাসে বেশ একটা গরম ভাব এসে গেছে। বুধাদিত্যের জন্মদিন। প্রতিবছরের মতন সাতসকালে বুবাইয়ের ফোন আসে, মামাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। তারপরে অনিন্দিতাদি ফোন ধরে শুভেচ্ছা জানায়। মামিমা, প্রমীলা দেবী একটু দেরি করেই ফোন করেন প্রতিবারের মতন। ওর জীবনের বাধা ধরা নিয়ম। মামা, মামি, বুবাই আর অনিন্দিতাদি ছাড়া আরও একজন ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাত, আয়েশা, কিন্তু দেশ ছেড়ে, বুধাদিত্যকে ছেড়ে চলে গেছে। এমন সময়ে ফোন বেজে ওঠে, বুধাদিত্য বেশ খুশি হয়, নিশ্চয় আয়েশার ফোন। ফোন তুলেই থমকে যায় বুধাদিত্য, ওপর পাশে এক নারী কণ্ঠস্বর, সেই স্বর ঝিলামের নয়, সেই স্বর আয়েশার নয়। কণ্ঠস্বর মিস্টার সুবির গুহ’র দ্বিতীয় ভার্যা, দেবস্মিতার। ক্ষণিকের জন্য চোখ বন্ধ করে বুকের মাঝে ছলকে ওঠা উত্তপ্ত রক্ত সামলে নেয় বুধাদিত্য।

দেবস্মিতা, “মেনি মেনি হ্যাপি রিটারন্স অফ দা ডে; হ্যাপি বার্থডে, শরীর কেমন আছে? সব ঠিকঠাক?” সেই পুরানো, ভাববাচ্যে কথা। দু’জনেই দু’জনকে কি’ভাবে সম্বোধন করবে সেটা ঠিক করতে পারে না। কণ্ঠস্বরে মধুঢালা তাও যেন কানের কাছে বড় বাজে। বুধাদিত্যকে চুপ থাকতে দেখে দেবস্মিতা হেসে বলেন, “কি হল? কথা বলা মানা, আমাদের সাথে? মিস্টার গুহ কথা বলতে চান।”

বুধাদিত্য চিবিয়ে উত্তর দেয়, “ঠিক আছে।”

সুবিরবাবু ফোন ধরে বলেন, “কেমন আছো?”

সুবিরবাবুর গলার আওয়াজে পুরো দিনটা মাটি হয়ে গেল বলে মনে হল বুধাদিত্যের। চিবিয়ে উত্তর দেয়, “ভালো আছি, খারাপ থাকার ত প্রশ্ন ওঠে না। এতদিন পরেও যে মনে রেখেছ এই বড় কথা।”

বিশেষ কথা বাড়াবার ইচ্ছে ছিলনা বুধাদিত্যের। কিন্তু একটা শিশুর গলার আওয়াজ পাচ্ছিল পেছন থেকে, বায়না ধরেছে কথা বলবে। দেবস্মিতার গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, বারন করে চলেছে বাপ্পাদিত্যকে, কিন্তু সেই ছোটো বাচ্চা শুনতে নারাজ, এই কেঁদে ফেলে প্রায়। বুঝে গেল বুধাদিত্য যে, বাপ্পাদিত্য কথা বলতে চায়। বুধাদিত্যের মন একটু নরম হয়ে গেল সেই কাঁদো কাঁদো গলার আওয়াজ শুনে, সুবিরবাবুকে বলে, “বাপ্পাদিত্যকে ফোন দাও, কি বলছে একটু শুনি।”

হেসে ফেলেন সুবিরবাবু। বাপ্পাদিত্য ফোন ধরেই চেঁচিয়ে ওঠে, “তুমি কে? তোমার নাম কি? আমাকে মা জানো একটা প্লেন কিনে দিয়েছে কালকে। আমি না পরে গেছি, পায়ে খুব ব্যাথা তাই আজকে আর স্কুল যাইনি।”

সেই শিশুর মিষ্টি গলা শুনে বুধাধিত্যের মন গলে যায়, হেসে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় পরে গেছ? কোথায় লেগেছে?”

বাপ্পাদিত্য, “বাগানে খেলছিলাম, আর না, ধুপ করে পরে গেছি। আচ্ছা আমি আসছি, বাই।” বলেই ফোন সুবিরবাবুকে ধরিয়ে দেয়।

বুধাদিত্য কিছু বলার আগেই সুবিরবাবু ওকে বলেন, “ভালো থেকো, আর কি বলব।”

বুধাদিত্য, “তোমরা ভালো থেক।”

ফোন রেখে দেয়। চুপ করে মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। বাঁধানো কাঁচের ভেতর থেকে মঞ্জুষাদেবী মিটিমিটি হেসে বুধাদিত্যকে তিরিশ বসন্তের শুভেচ্ছা জানায়। 

অফিসে দিন মোটামুটি কেটে যায়, অনেকের শুভেচ্ছা, বিশেষ করে যারা নিচে কাজ করে তাদের একটু তেল মারার স্বভাব বেশি থাকে। লাঞ্চের পরে আশা করে বসে থাকে ঝিলামের হয়ত ফোন আসবে কিম্বা হয়ত নিজেই এসে উপস্থিত হবে বাড়ি পৌঁছে দেবার বায়না ধরবে। লাঞ্চ পেরিয়ে যাবার পরেও ঝিলামের ফোন আসেনা। একবার ভাবে নিজেই ফোন করবে, কিন্তু ফোন করতে গিয়েও মন খুতখুত করে ওঠে, ঠিক যেন সাহস জুগিয়ে পায়না। এমনি দিনে যদি কাজ থাকত তাহলে ফোন করে দিতে দ্বিধা বোধ করত না। এই যেমন সপ্তাহ দুই আগে, সি.এম.ও’র ফেয়ারওয়েল পার্টির জন্য ঝিলামকে জিজ্ঞেস করেছিল যে কি দেওয়া যায়। ঝিলাম ওকে বুদ্ধি দিয়েছিল যে চাঁদা তুলে একটা দামী হাতঘড়ি দিতে। তাই করেছিল বুধাদিত্য, অফিসের সবাই সেই বুদ্ধিতে মত দিয়েছিল। কারুর একজনার পকেট থেকে বেশি টাকা খসেনি, উপরন্তু একটা ভালো উপহার কিনে দিতে পেরেছিল ওরা সবাই। বুধাদিত্য রাতের বেলা অবশ্য ঝিলামকে ফোন করে সেই বুদ্ধি দেবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিল। ঝিলাম হেসে বলেছিল, মাঝে মাঝে একটু যেন ওর কথা শোনে। লাঞ্চ পেরিয়ে বিকেল হয়ে যায়, অফিস ছুটিও হয়ে যায়। মনের কোনে ক্ষীণ এক ব্যাথা নিয়ে বাড়ি ফেরে বুধাদিত্য। বাড়ি ফিরে নিজের মনেই হেসে ফেলে, ওর জন্মদিন নিয়ে, ঝিলাম বা সমীরের সাথে কোনদিন কোন কথা হয়নি, সুতরাং ওদের জানার কোন প্রশ্ন ওঠে না। জামা কাপড় খুলে যথারীতি, কফি বানিয়ে চুপ করে ল্যাপটপ খুলে মেইল দেখে। মিয়ুসিক সিস্টেমে মান্না দের গান, তার সাথে কোল্ড ড্রিঙ্কস আর সিগারেট। এমন সময় দরজায় দুমদুম শব্দ। চমকে ওঠে বুধাদিত্য। দরজা খুলে দেখে সমীর আর ঝিলাম।

সমীর হাতে একটা বড় প্যাকেট, একটা ফুলের তোড়া। ঝিলাম পেছনে দাঁড়িয়ে লাজুক হাসে। সমীর এক লাথি মেরে ওকে দরজা থেকে সরিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে পরে। 

সমীর, “বোকা... আজকের দিনে জন্মেছিস শালা পার্টি কি না তোর দেবার কথা আর দিচ্ছি বাড়া আমরা। নে শালা কেক কাট।”

অবাক হয়ে যায় বুধাদিত্য, ঠিক কি হচ্ছে বুঝে উঠতে পারে না। ঝিলামের দিকে তাকায়। ঝিলাম জানায় যে অনির্বাণ নাকি সমীরকে দুপুর বেলা ফোন করেছিল, ওর কাছ থেকে জানতে পারে জন্মদিনের কথা। কিন্তু তারিখ ঠিক মনে ছিল না অনির্বাণের। সমীর বাড়ি ফিরে ওর পুরানো ডায়রি ঘেঁটেঘুটে ঠিক তারিখ উদ্ধার করে। 

বুধাদিত্য, “শালা শত্রুর জন্মদিন কি লিখে রেখেছিলি ডায়রি তে?”

সমীর, “না শালা, শত্রু বা বন্ধু নয়, আমার একটা ডায়রিতে স্কুলের সবার জন্মদিনের তারিখ লেখা আছে রে। নে কুত্তা, এবারে কেক কাট, দেখি। তোর জন্য স্পেশাল অর্ডার দিয়ে কেক বানিয়ে এনেছি।”

বুধাদিত্য, “তোরা পাগল নাকি যে এখন আমি কেক কাটবো? বুড়ো হতে চললাম, শালা।”

ঝিলাম, “হ্যাঁ হয়েছে, তুই তিরিশে বুড়ো। বোকা... দেখ গিয়ে বিদেশে, শালা পঞ্চাস বছরে লোকে বিয়ে করে বাচ্চা পারছে।”

কথাটা খুব গায়ে লাগে বুধাদিত্যের, নিজের বাবা, সুবির গুহ, মনে হয় পঞ্চাসে গিয়ে দ্বিতীয় বার পিতা হয়েছেন। তবে সঠিক জানেনা, আদৌ বাপ্পাদিত্য কার ঔরসজাত, ওর বাবার না অন্য কারুর? 

বুধাদিত্য মিচকি হেসে বলে, “ঠিক আছে বাবা, কেক কাটলাম তারপরে?”

ঝিলাম “তাঁর আর পর নেই, নেই কোন ঠিকানা। জামাকাপড় পরে তৈরি হয়ে বের হও, বেশি দুরে নয়, ওই ইস্ট অফ কৈলাসেই একটা ভাল রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে খাওয়াবে চল।” 

বুধাদিত্য, “সেখানে কেন? আরও ভালো জায়গা আছে। বল ত পান্ডারা রোড নিয়ে যেতে পারি।”

সমীর, “চল শালা যেখানে নিয়ে যাবি সেখানে যাব, তবে তোর পকেট মারব আজকে।”

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, ঝিলামের হাসির জন্য, পকেট কেন বুকের পাঁজর খুলে দিতে বললে খুলে দেবে। কিছুক্ষণের মধ্যে বেড়িয়ে পরে। পান্ডারা রোডের একটা নামি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার সারে। খাবার সময়ে সমীর আর বুধাদিত্য সেই পুরানো দিনের স্কুলের কথা নিয়ে আবার শুরু হয়ে যায়। ঝিলাম অগত্যা বসে থাকে মাঝে মাঝে ওদের সেই কীর্তি কলাপ শুনে হাসে আর মন্তব্য করে। খাওয়া শেষ সমীরদের বাড়ি পৌঁছে দেয়। গাড়ি থেকে নামার পরে সমীর ঝিলামের দিকে একটু তাকিয়ে কিছু ইঙ্গিত করে। ঝিলাম একটা ছোটো বাটি বের করে ওর কাঁধের ব্যাগ থেকে। বুধাদিত্য ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। 

সমীর বুধাদিত্যের হাতে সেই বাটি ধরিয়ে দিয়ে বলে, “একটু পায়েস খাস ঝিলাম বানিয়েছে তোর জন্য। তুই ত বেশ বড়লোক মানুষ। পায়েস খাবি কি খাবি না, তাই দিতে একটু কেমন লাগছিল।” বুধাদিত্য ঝাপসা চোখে সমীর আর ঝিলামের দিকে তাকায়। সমীর ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “হ্যাঁ রে, কি হল? মাসিমার কথা মনে পরে গেল? ঝিলাম বলল পায়েসের কথা, না হলে আমার মনেও আসত না।”

বুধাদিত্য দুহাত বাড়িয়ে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে। ধরা গলায় বলে, “শালা, বন্ধুতের মধ্যে কি বড়লোক, কি গরিব লোক রে?”

ওর কথা শুনে ঝিলামের চোখে একটু জল চলে আসে। একটু হাসি, একটু কাঁপা গলায় বলে, “সমু মাসিমার কথা বলল তাই আমার পায়েসের কথা মনে পরে গেল। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে পায়েস বানিয়েছিলাম, খেয়ে দেখ।”

ভীষণ খুশি মনে বুধাদিত্য সেই পায়েসের বাটি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সারারাত ঘুমাতে পারেনা বুধাদিত্য, শুধু মায়ের কথা খুব মনে পরে। হস্টেলে থাকার সময় প্রতি বছরে মা ওর জন্য পায়েস বানিয়ে নিয়ে যেত, আর সেই পায়েস ওর ক্লাসের সবাই খেত। সারারাত পায়েসের বাটি হাতে করে মায়ের ছবির সামনে বসে থাকে। সকালে কাজের লোক এসেছিল, কাজ করে গেছে, রান্না করে গেছে। তারপরে আবার ঘুমিয়ে পরে বুধদিত্য। যথারীতি পরেরদিন দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। 

ঠিক দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঝিলামের ফোন, অপাশ থেকে চেঁচানি, “তুমি কোথায়? আমি তোমার অফিসে এসে শুনলাম তুমি অফিসে আসোনি। কি হয়েছে?”

বুধাদিত্য ঘুমচোখে উত্তর দেয়, “চেঁচাচ্ছ কেন, আমি কানে কালা নাকি? ঘুমাচ্ছিলাম আমি, এই উঠলাম।”

ঝিলাম, “কেন শরীর খারাপ নাকি? আমি এখুনি আসছি।”

বুধাদিত্য মজা করে বলে, “না মানে তোমার পায়েস খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কিছু মিশিয়ে দিয়েছিলে নাকি পায়েসের মধ্যে?”

ঝিলাম, “ধ্যাত, সত্যি বল, শরীর খারাপ?”

বুধাদিত্য, “না আমার শরীর খারাপ হতে যাবে কোন দুঃখে? আমি ভাল আছি, আসল কথা কাল রাতে ঠিক ঘুম আসেনি তাই দেরি ওরে উঠেছি।”

ঝিলাম একটু নিচু গলায় বলে, “আমি জানি কেন তোমার কাল রাতে ঘুম হয়নি। মাসিমার কথা খুব মনে পড়ছিল তাই না?” বুধাদিত্য চুপ করে থাকে, সত্যি কাল রাতে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল। অন্যদিন হলে হয়ত নিজেকে মদে ডুবিয়ে নিত আর এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ত। কিন্তু মদ ছেড়ে দিয়েছে তাই ব্যাথায় আর ঘুম আসেনি, চোখ বন্ধ করলেই মায়ের মুখ সামনে চলে আসে। ঝিলাম অনুধাবন করে বুধাদিত্যের মনের অবস্থা, বুঝে যায় যে বড় ব্যাথার জায়গায় ঘা দিয়েছে, হয়ত নাড়া দেওয়া ঠিক হয়নি। একটু ক্ষমার সুরে বলে, “প্লিস উলটো পাল্টা কিছু করো না, ভালো থেক। পরে দেখা হবে।” 

ঝিলামের পায়ের ছাপ সোজা বুধাদিত্যের বুকের ওপরে এসে পরে। ঝিলাম আর বুধাদিত্যের মাঝে এক প্রগাড় বন্ধুত্বের বন্ধন গড়ে ওঠে।







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment