আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
ইতিমধ্যে সমীরের বাবা মাকে খবর পাঠানো হয় পুলিসের তরফ থেকে। বুধাদিত্য ফোন করে জানায় সেই ঘটনা, সাথে সাথে জানায় ঝিলামের শারীরিক অসুস্থতা। দুই দিনের মধ্যে সমীরের বাবা, মা আলমোড়া পৌঁছে যান। সমীরের বাবা মা সোজা হসপিটালে এসে বুধাদিত্যের সাথে দেখা করে। বুধাদিত্যকে জড়িয়ে ধরে পুত্র শোকে সমীরের মা কেঁদে ফেলেন। বুধাদিত্য আসল ঘটনা চেপে শুধু মাত্র দুর্ঘটনার কথা জানায় সমীরের বাবাকে। সমীরের বাবার সাথে দেখা করার জন্য মুন্সিয়ারি থেকে অখিলেশ পৌঁছে যায় আলমোড়া। পুলিসের মুখে সবিস্তারে দুর্ঘটনার কথা শুনে খেই হারিয়ে ফেলেন সমীরের বাবা। অখিলেশ জানায় যে, পাহাড়ি নদী সমীরের মৃত দেহ গ্রাস করে নিয়েছে। দুই দিন লোক নামিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে পাওয়া যায়নি ওর মৃত দেহ। সমীরের মা মর্মাহত হয়ে যান, পুত্রের শেষ দেখা দেখতে পারেন না বলে আফসোস করেন। সমীরের বাবা, ঝিলামকে কোলকাতা নিয়ে যাবার কথা বলেন, সাথে এও জানায় যে ঝিলামের বাবা মাকে খবর দেওয়া হয়েছে। পরের দিন ঝিলামের বাবা আর দুই দাদা আলমোড়া পৌঁছে যান। সবাইকে সামাল দিতে দিতে বুধাদিত্য হিমসিম খেয়ে যায়। একদিকে অসুস্থ ঝিলাম বিছানায় পরে, অন্যদিকে ঝিলামের বাড়ির লোক আর সমীরের বাবা মা। হস্পিটালের বিছানায় শুয়ে চারপাশে নিজের লোকের ভেতরে ঝিলামের চোখ শুধু বুধাদিত্যকে খুঁজে বেড়ায়। সবার সামনে বুধাদিত্য ওর পাশে যেতে একটু দ্বিধা বোধ করে।
দিন চারেক পরে ঝিলাম সুস্থ হয়ে ওঠে। ঝিলামের বাবা ঝিলামকে দুর্গাপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। বাবার কথা শুনে ঝিলাম ভাষা হারিয়ে ফেলে, পুরানো জীবনে ফিরে যেতে নারাজ ঝিলাম। চোখ মেলে তাকালেই আশেপাশের লোকজন ওকে সমীরের কথা মনে করিয়ে দেয় আর সেই সাথে সমীরের বিশ্বাস ঘাতকতার কথা মনে পরে যায়। মুখ চাপা দিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে বারেবারে। ঝিলাম কিছুতেই সেই মনোভাব কাটিয়ে উঠতে পারে না, তার ওপরে সবাই মনে করিয়ে দেয় যে ঝিলাম আর সেই ঝিলাম নেই। জল ভরা কাতর চোখে বুধাদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকে।
ঋজু বুধাদিত্য চোখ বন্ধ করে বুক ভরে এক লম্বা শ্বাস নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে গম্ভির স্বরে বলে, “ঝিলাম কোথাও যাবে না। ঝিলাম আমার সাথে দিল্লী যাবে।”
সবার চোখে হাজার প্রশ্ন, কেন ঝিলাম বুধাদিত্যের সাথে থাকবে? বুধাদিত্য কিছু বলার আগে, ঝিলাম ধরা গলায় বলে, “সমীর আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। আমাকে কত ভুলিয়ে প্রেমের ভান করে এখানে নিয়ে এসেছে। ওর অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। আমাকে খাদের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। ধাক্কা মারার আগে আমাকে বলে, যে আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম তাই আমাকে মারতে নিয়ে এসেছে এখানে।”
সবাই হাঁ করে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঝিলামের কথা কেউ বিশ্বাস করতে পারে না।
ঝিলাম বলে চলে, “আমি ওর সাথে ঘুরতে যাব, সেই খুশিতে ছিলাম। এত মিষ্টি করে আমাকে বলল যে আমাকে নিয়ে দুরে বেড়াতে যাচ্ছে তাই আমি যেন কাউকে কিছু না জানাই, আর সেই কথায় আমি ভুলে গেলাম। ও নিজের মোবাইল আর আমার মোবাইল নিয়ে বন্ধ করে দিল।”
ঝিলাম বুধাদিত্যের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, “ভাগ্য বশত ওকে আমি একটা এস.এম.এস পাঠিয়েছিলাম তাই আজ বেঁচে আছি।”
সমীরের মা চাপা আঁতকে ওঠেন, ধিক্কার দিয়ে ঝিলামকে বলেন, “আমার ছেলের নামে তুমি মিথ্যে কলঙ্ক রটাচ্ছ?”
ঝিলাম বলে, “আমি মিথ্যে বলছি না, শুধু মাত্র আমার কাছে কোন প্রমান নেই আমি নিরুপায়।”
নিরুপায় বুধাদিত্য হলদে খাম থেকে প্লেনের টিকিট আর পাসপোর্ট সমীরের বাবার হাতে তুলে দেয়। মোবাইল থেকে সেই ফটো আর রেকর্ড করা কথোপকথন শুনিয়ে দেয়। সেই সব দেখে, শুনে আর ঝিলামের কথা শুনে ভেঙ্গে পড়েন সমীরের বাবা মা। চোখের সামনে সমীরের ব্যাভিচারের অকাঠ্য প্রমান দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেন। অনেকক্ষণ পরে সমীরের মা, ঝিলামের মাথায় হাত রেখে বলেন, “আমার পেটের সন্তান গেছে বলে দুঃখ আছে সেটা থাকবে। কিন্তু তোমার মতন লক্ষ্মীকে মেরে ফেলার কথা চিন্তা করতে পারে যে, সেই ছেলের আমার দরকার নেই। আমি তোমাকে আশীর্বাদ করি, ভবিষ্যতে তুমি সুখী হবে।”
বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই ওর ছোটবেলার বন্ধু, একসাথে খেলা করেছিস, একসাথে বড় হয়েছিস। একবারের জন্য ওর মতিগতি ফেরাতে পারলি না?” এই বলে বুধাদিত্যের সামনে কেঁদে ফেলে সমীরের মা। বুধাদিত্য সমীরের মাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সমীরের মা চোখের জল মুছে ওকে বলে, “তুই ভালো থাকিস। আমি চললাম রে। পারলে এই লক্ষ্মীকে দেখিস।”
সমীরের বাবা মায়ের সাথে সেই শেষ দেখা। ঝিলামকে শেষ আশীর্বাদ করে, সমীরের বাবা মা চলে যান আলমোড়া ছেড়ে।
ইতিমধ্যে প্রমীলা দেবীর ফোন আসে, “তুই কোথায় রে? আমি দিল্লী পৌঁছে গেছি। তোর বাড়িতে তালা মারা।”
বুধাদিত্য ভাবতে পারেনি যে মামিমা এত তাড়াতাড়ি চলে আসবেন, “আমি আলমোড়া, ঝিলামকে নিয়ে আজ রাতে দিল্লীর দিকে রওনা দেব। কাল রাতের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যাব। তুমি আজ রাতে হোটেলে থেকে যাও।”
বুধাদিত্য ঝিলামের বাড়ির লোককে বুঝিয়ে বলে সব কথা। বিকেল বেলায় ঝিলামকে নিয়ে দিল্লীর দিকে রওনা দেয়। ঝিলামের দাদাদের কাঠগোদামে নামিয়ে দিল, তাঁরা বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরে। সাড়া রাস্তা ঝিলাম চুপ করে পেছনের সিটে বাবার পাশে বসে থাকে। পরের দিন বিকেল বেলায় দিল্লী পৌঁছে যায়। প্রমীলাদেবী ছাড়া বুধাদিত্যের মনের কথা বোঝার এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। বুধাদিত্য প্রমীলাদেবী কে ঝিলামের ব্যাপার সব কথা খুলে বলে, জানায় যে ঝিলামকে ভালোবাসে।
ঝিলাম নিজেকে গুটিয়ে নেয় শামুকের খোলের মধ্যে। সারাদিন নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখে, কারুর সাথে কথা পর্যন্ত বলতে চায় না। আশেপাশে লোক দেখলে চমকে ওঠে, মানুষের ওপরে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে ঝিলাম। চোখে আতঙ্কের ছায়া, চোখ বন্ধ করলেই চমকে ওঠে, বারেবারে আঁতকে ওঠে, “শেষ পর্যন্ত তুমি... নাআআআআ”
প্রমীলাদেবী ঝিলামকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে সাড়া রাত জেগে থাকে। বাপ্পাকে সঙ্গে নিয়ে সুবিরবাবুর সাথে দেবস্মিতা দিল্লী চলে আসেন। ঝিলামের আঘাতের ফলে, বাড়ি ভর্তি লোকের চেহারায় চিন্তার ছাপ।
ঝিলামের বাবা কি করবেন কিছু বুঝে উঠতে পারেন না। প্রথমে ইতস্তত করেন অমিত বাবু, সমাজের দোহাই দিয়ে বলেন, যে মেয়েকে এখানে রাখা ঠিক হবে না। প্রমীলা দেবী অমিত বাবুকে সব কথা বুঝিয়ে বলাতে তিনি মেনে নেন বুধাদিত্য আর ঝিলামের সম্পর্ক। প্রমীলা দেবী জানিয়ে দেন যে ঝিলামের মানসিক অবস্থার উন্নতি হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
প্রমীলাদেবী সব কথা শুনে অমিত বাবুকে বলেন, “জীবন কখন এক ধাক্কায় শেষ হয়ে যায় না। এই ভদ্রমহিলা” দেবস্মিতাকে দেখিয়ে বলেন “বুধাদিত্যের বাবাকে দ্বিতীয় বার বাঁচার সুযোগ দিয়েছে। তার অপার ভালোবাসা দিয়ে ফিরিয়ে এনেছে সেই লোক কে যে একসময় প্রেম ভালোবাসা তুচ্ছ বলে মনে করত। সমাজের সামনে আজ আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়ে, শুধু মাত্র এই দেবী’র জন্য। আমি হলফ করে বলতে পারি যে আমার বুধি আপনার মেয়েকে ঠিক সেই রকম ভাবে রাখবে। বর্তমানে ঝিলাম মানসিক দিক থেকে খুব ভেঙ্গে পড়েছে, তাই বুধাদিত্যের কাছে থাকা শ্রেয়। বুধাদিত্যের ভালোবাসা আর প্রেম ঝিলামকে সেই অন্ধকার খাদ থেকে টেনে তুলবে।”
বুধাদিত্য প্রমীলাদেবী কে জড়িয়ে ধরে বলে, “পরের বার কথা দিচ্ছি মামি, তোমার কোলে জন্ম নেব।”
বাপ্পা বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করে, “এই আন্টি আমার সাথে গল্প করবে না কেন? আন্টির মন খারাপ তাই? এই আন্টি তোমার কে হয়? আন্টি কবে ভালো হবে?”
শিশুর প্রশ্নবাণে জর্জরিত বুধাদিত্য বাপ্পাকে কোলে করে বলে, “আন্টির শরীর খারাপ তাই। আন্টি ভাল হয়ে গেলে তোমার সাথে গল্প করবে, তোমার সাথে খেলবে।”
বাপ্পা বুধাদিত্যের কানেকানে বলে, “তুমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরে পেটে কাতুকুতু দাও দেখবে আন্টি ঠিক হয়ে যাবে, আন্টি আবার হাসবে আর তোমার সাথে কথা বলবে।”
বুধাদিত্য ভুরু কুঁচকে বাপ্পাকে জিজ্ঞেস করে, “কে বলেছে তোমাকে?”
বাপ্পা, “বাঃ রে, আমি জানি। মাম্মা যখন খুব রেগে যায় তখন ড্যাডার সাথে কথা বলে না চুপ করে থাকে। আর ড্যাডা মাম্মাকে জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে কাতুকুতু দেয় আর মাম্মা হেসে ফেলে ব্যাস।”
বাপ্পার কানেকানে কথা’টা বেশ জোরেই ছিল, আশেপাশের সবাই শুনতে পায়। বুধাদিত্য দেবস্মিতার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। দেবস্মিতা লজ্জা লুকানোর জন্য সুবির বাবুর দিকে তাকায়। চোখের ইশারায় জানায়, দেখেছ তোমার ছেলের কান্ড।
বুধাদিত্য কথা দেয় অমিত বাবুকে তাঁর মেয়েকে কোন আঘাত ছুঁতে পারবে না। মেয়ের মুখ দেখে পিতার হৃদয় শেষ পর্যন্ত বুধাদিত্যের কথা মেনে নেন। বাড়ির অনেকেই নিজের নিজের কর্ম স্থলে ফিরে যান, কিন্তু অমিত বাবু আর প্রমীলা দেবী, ঝিলামের মুখ দেখে থেকে যান। ঝিলাম, বাবার উপস্থিতি দেখে আর কুঁকড়ে যায়।
একদিন বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পরে ঝিলাম বুধাদিত্যকে ঘরের মধ্যে ডেকে নিয়ে যায়। বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?
ঝিলাম খুব নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি সত্যি আমাকে দুর্গাপুরে পাঠিয়ে দেবে?”
বুধাদিত্য ওর মুখ আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে নিয়ে বলে, “কে বলেছে যে আমি তোমাকে দুর্গাপুরে পাঠিয়ে দেব? তুমি সর্বদা আমার বুকের মধ্যে থাকবে। কেউ তোমাকে এই বুক থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না, ঝিল্লি।”
ওর উষ্ণ হাতের পরশে ঝিলাম গলে যায় বলে, “সবাইকে বাড়ি যেতে বলে দাও। শুধু তুমি পাশে থাকলেই আমি ঠিক হয়ে যাব।”
বুধাদিত্য, “তোমার শরীর খারাপ তাই সবাই আছে। তা ছাড়া তোমার বাবা তোমার জন্য একটু চিন্তিত তাই আছেন, তুমি ঠিক হয়ে গেলেই তাঁরা চলে যাবেন।”
ঝিলাম ওর বুকের ওপরে মাথা চেপে ধরে বলে, “সেই রাতে তুমি না এলে আমি ওই ফার্ম হাউসে আত্মহত্যা করতাম। আমি যেদিন সত্যি আত্মহত্যা করতে গেছিলাম ওর সামনে, তখন তুমি দরজা ভেঙ্গে ঢুকলে। আমি চাকরি করতে চেয়েছিলাম, বাড়ির সবাই আমাকে অনেক কথা শুনিয়ে আমাকে ক্ষান্ত করে দিল। শেষ পর্যন্ত তুমি এসে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলে, তোমার শক্তি বুকে করে আমি স্বাধীনতার স্বাদ খুঁজে পাই। আমার এই জীবন তোমার দেওয়া। আমাকে যদি ভালো হতে হয়, তাহলে তোমার কাছেই হব, আমাকে যদি মরতে হয় তাহলে তোমার কোলে মরব। আমার আর কারুর দরকার নেই, বুধো।”
বুধাদিত্য ঝিলামকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে, “ঠিক আছে, তাই যদি চাও আমি সবাইকে বলে দিচ্ছি চলে যেতে।”
“হ্যাঁ রে, তোর কি সারা বিকেল এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি” প্রমীলা দেবীর গলার আওয়াজে দুজনে পরস্পকে ছেড়ে দাঁড়ায়। ঝিলাম একটু লজ্জা পেয়ে প্রমীলা দেবীর পেছনে মুখ লুকিয়ে নেয়। বুধাদিত্য মামিমার দিকে এক বার তাকিয়ে মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। প্রমীলা দেবী বুধাদিত্যকে ডেকে হেসে বলেন, “আমি অজান্তেই তোদের কথোপকথন একটু খানি শুনে ফেলেছি। তোদের ভালতেই আমাদের ভালো, তোরা যাতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারিস সেটাই হবে। আমি অমিতবাবু কে বলে দেব খানে। তুই আমাদের বাড়ির ফেরার ব্যাবস্থা করে দে কাল।” পরেরদিন ঝিলাম আর বুধাদিত্যকে বিদায় জানিয়ে প্রমীলা দেবী আর অমিত বাবু বাসস্থলে ফিরে যায়। বুধাদিত্য ওদের প্লেনের টিকিট কেটে দেয়।
দিন দুই পরে, বুধাদিত্য ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে যে ওদের বাড়ির জিনিস পত্রের কি করা যায়। ঝিলাম জানিয়ে দেয় যে ওই বাড়িতে ওর কোন কিছু নেই। যেদিন বুধাদিত্যের বাড়ি এসেছিল, নিজের সব জিনিস সাথে নিয়ে এসেছিল। সমীরের সাথে যাবার দিনে শুধুমাত্র কয়েক জোড়া জামা কাপড় নিয়ে গেছিল। ভেবেছিল পরে এসে সব নিয়ে যাবে, কিন্তু ভালোই হয়েছে যে দ্বিতীয় বার সেই কষ্ট করতে হয়নি। ঝিলাম জানিয়ে দেয় ওই বাড়ির সব কিছু বিক্রি করে তার টাকা কোন নারী শক্তির এন.জি.ও কে দান করে দিতে। এই দেশে অনেক মেয়েরা তাদের স্বামীর হাতে নিপীড়িত, হয়ত কিছুটা সাহায্য করতে পারবে ঝিলাম। বুধাদিত্য ওর কথা মত সমীরের বাড়ি সব জিনিস পত্র বিক্রি করে সেই টাকা একটা এন.জি.ওতে গিয়ে সব দান করে দেয়।
কাজের লোককে বলা হয় দিনে দুই বার আসার জন্য। ভোরবেলা এসে কাজেরলোক রান্না বান্না করে রেখে যায়, দুপুরের পরে এসে বাকি ঘরের কাজ করে। সকালে উঠে ঝিলামের মাথার ব্যান্ডেজ করা, স্নান করিয়ে দেওয়া সব বুধাদিত্য নিজের হাতে করে। দিনে দিনে ঝিলামের মানসিক এবং শারীরিক সাস্থ্যের উন্নতি হয়। ঝিলামের গলায় সেই উৎফুল্ল ফিরে আসেনি, সেই নিয়ে বুধাদিত্য বেশ চিন্তায় থাকে। ঝিলাম শোয়ার ঘরে ঘুমিয়ে পড়ার পরেও বুধাদিত্য চুপ করে স্টাডিতে বসে কান পেতে থাকে, যদি ঝিলাম মাঝ রাতে কেঁদে ওঠে তাহলে। অনেক রাত কেটে যায়, বুধাদিত্য এক নয় সোফায় ঘুমিয়ে পরে না হয় স্টাডির টেবিলে ঘুমিয়ে পরে। সকাল বেলায় লক্ষ্য করে যে গায়ের ওপরে চাদর টানা। বুঝে যায় যে ঝিলাম রাতের বেলা উঠে ওর গায়ের ওপরে চাদর দিয়ে চলে গেছে। ঝিলামের সেই মিষ্টি হাসির কলতান শোনার জন্য বুধাদিত্যের হৃদয় ছটফট করে, ভেবে পায় না কি করে ওই আঁধার চোখে আবার আলোর রেখা মাখাবে। মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতে বললে, ঝিলাম মানা করে দেয়। বাড়ির বাইরে পা রাখতে নারাজ ঝিলাম, এমন কি সামনের বাজারে পর্যন্ত যেতে চায় না। সাধারনত ঝিলাম বাড়িতে যে রকম জামা কাপড় পরে থাকত, সেই সব বদলে গেছে। চুড়িদার কামিজ বা শাড়ি ছাড়া আর কিছু পরে না আজকাল। উচ্ছল, উদ্দাম হাসি খুশি ঝিলামের জায়গায় বুধাদিত্যের সামনে অতীব শান্ত এবং সঙ্কুচিত এক নারী।
বুধাদিত্যের ভয় যে স্কুল শুরু হয়ে গেলে কি করে ঝিলাম স্কুলের সাথে মানিয়ে নেবে। ভিশাল স্যার আর শমিতা ম্যাডামকে সব জানিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের প্রিন্সিপাল এসে বাড়িতে দেখা করে যান। সব কিছু শুনে জানিয়ে দেন যে যত দিন ঝিলাম সম্পূর্ণ রুপে সুস্থ হয়ে না ওঠে ততদিন স্কুল ওকে ছুটি দিয়ে দেবে। স্কুল শুরু হতে তখন কিছু দিন বাকি, কিন্তু চিন্তায় বুধাদিত্যের রাতের ঘুম হয় না। বাড়ি থেকে কেউ ফোন করলে বিশেষ কারুর সাথে ঠিক করে কথা বলে না। ঝিলামের বাবা মা খুব চিন্তিত সেই নিয়ে, কিন্তু ঝিলামকে দুর্গাপুর নিয়ে আসবে তার উপায় নেই। একবার বুধাদিত্য চেষ্টা করেছিল ঝিলামের সাথে সেই বিষয়ে কথা বলতে, ঝিলাম চুপ করে ছিল কোন উত্তর না দিয়ে না খেয়ে দরজা বন্ধ করে বসেছিল দুইদিন। সেদিনের পর থেকে আর দুর্গাপুর যাবার কোন কথা বলেনি। সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিল বুধাদিত্য, যাতে কেউ ঝিলামকে বাড়ি ছাড়ার কথা না বলে।
সেদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে বুধাদিত্যের একটু দেরি হয়ে যায়, রাত আট’টা বেজে যায়। বুধাদিত্য ফোন করে ঝিলামকে জানিয়ে দেয় যে বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হবে। ঝিলাম কোন কথা না বলে চুপচাপ শুনে ফোন রেখে দেয়। দরজায় টোকা মারতে, চুপচাপ দরজা খুলে দেয় ঝিলাম। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে যে ঝিলামের মুখ থমথমে, চোখের পাতা ভিজে, নাকের ডগা লাল। ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে যে কেন কাঁদছিল, ঝিলাম কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ রান্না ঘরে ঢুকে ওর জন্য কফি বানাতে চলে যায়। সেই মুখের করুন চাহনি দেখে বুধাদিত্যের বুক কেঁপে ওঠে, ভয় হয় ঝিলাম কিছু না করে বসে। বুধাদিত্য জানায় যে অফিসে কাজের চাপের জন্য বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেছে। চুপ করে ওর কথা শুনে নেয়, কোন উত্তর দেয় না। ঝিলামের শীতল নিস্তব্ধতা বুধাদিত্যের বুকে বড় বেজে ওঠে। অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশি শান্ত ঝিলাম, খাওয়ার সময়ে কোন কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নেয়। বুধাদিত্য বসার ঘরে বসে চিন্তায় ডুবে যায়। একা একা রেখে যাওয়া ঠিক নয়, কিন্তু ঝিলামের কথা মত সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছিল, এখন যদি ঝিলাম আবার কিছু করে বসে। ঝিলাম নিজের ঘরে ঢুকে আলমারির খুলে কিছু খুঁজতে শুরু করে। আলমারির সব জিনিস বের করে তোলপাড় করে ফেলে। বুধাদিত্য অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করে যে ঝিলাম আলমারির মধ্যে কিছু খুঁজছে। কিন্তু যখন দেখে যে আলমারি খালি করার পরে আবার আলমারি গুছাতে বসেছে, তখন বুধাদিত্য আর চুপ করে বসে থাকতে পারে না।
বুধাদিত্য ওর পেছনে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখে, “ঠিক করে বল, কি খুঁজছ।”
ওর দিকে শূন্য চোখে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বলে, “তোমার ঝিল্লিকে খুঁজছি, কিছুতেই পাচ্ছি না।”
বুধাদিত্য ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে, ঝিলাম ওর বুকের ওপরে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলে। ঝিলামের মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে বলে, “বোকা মেয়ে, নিজেকে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত আলমারি খুলতে হয়।” ওর মুখ আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে। ঝিলাম শক্ত করে চোখ বন্ধ করে থাকে। বুধাদিত্য দুই বুড়ো আঙুল দিয়ে নরম গালের ওপর দিয়ে জলের ফোঁটা মুছে দিয়ে বলে, “আমার চোখের দিকে তাকাও।” ভিজে চোখের পাতা ধিরে ধিরে খুলে যায়, পদ্ম ফুলের পাপড়ি মেলে ধরে ঝিলাম। বুধাদিত্য ওর দিকে ঝুঁকে বলে, “এই চোখের ভেতরে দেখ, নিজেকে খুঁজে পাবে, ঝিল্লিরানী।” ঝিলামের লাল নাকের ডগায় আলতো করে নাক ঘষে দেয় বুধাদিত্য। ঝিলামের উষ্ণ শ্বাস ভাসিয়ে দেয় বুধাদিত্যের ঠোঁট, চিবুক। ঝিলাম ওর বুকে দশ আঙ্গুলে খামচে ধরে। বুধাদিত্য ধিরে ধিরে ঠোঁট নামিয়ে আনে ঝিলামের লাল নরম ঠোঁটের ওপরে। আলতো করে ছুঁইয়ে দেয় ওই নরম গোলাপ পাপড়ির ওপরে। ঝিলাম ঠোঁট চেপে ধরে বুধাদিত্যের ঠোঁটে, আবেগের বশে দুই চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। চোখ বন্ধ করে প্রেমের চুম্বন ঘনীভূত করে নেয়। নিজেকে চেপে ধরে বুধাদিত্যের প্রসস্থ বুকের ওপরে চেপে ধরে নিজেকে। বুধাদিত্য ওর নিচের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে চুষতে শুরু করে। শরীর ছেড়ে যায় ঝিলামের, সারা শরীর সেই মধুর চুম্বনের ফলে অবশ হয়ে আসে। বুধাদিত্য ঝিলামের কোমল দেহ দু’হাতে জড়িয়ে নিজের শরীরের ওপরে পিষে ধরে। ঝিলাম বুক ছেড়ে দুই হাতে বুধাদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে। ভালোবাসার আলিঙ্গন বদ্ধ দুই চাতক চাতকির চারপাশে সদময় থমকে দাঁড়ায়।
কিছু পরে ঝিলাম ঠোঁট ছেড়ে মিষ্টি হেসে বলে, “খুঁজে পেয়েছি... বুধো’র ঝিল্লিকে।”
বুধাদিত্য হেসে ফেলে, “আইস্ক্রিম খেতে যাবে?” ঝিলাম মাথা নাড়ায়, হ্যাঁ। বুধাদিত্য বলে, “চলো কাপড় পরে নাও তাড়াতাড়ি।”
ঝিলাম বেশ সুন্দর একটা চুড়িদার কামিজ পড়েছিল তাই ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “কেন, চুড়িদারে অসুবিধে কি?”
বুধাদিত্য ওর দেহে আলতো চেপে বালে, “এটা বুধো’র ঝিল্লি নয়, এটা বুধাদিত্যের ঝিলাম। তুমি বলেছ যে বুধো’র ঝিল্লি।”
ঝিলাম, “মানে?”
বুধাদিত্য ওকে ছেড়ে আলমারি থেকে একটা সাদা জিন্সের কাপ্রি আর একটা গোলাপি টপ হাতে ধরিয়ে বলে, “পরো। আর হ্যাঁ নুপুরটা পরে নিও, বড় মিষ্টি লাগে তোমার পায়ের রিনিঝিনি সুর, ঝিল্লিরানী।”
ঝিলাম লাজুক হেসে ওর হাত থেকে জিন্স আর টপ নিয়ে বলে, “ঘর থেকে বের হও তবে ত ড্রেস চেঞ্জ করব।”
বুধাদিত্য ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “দেখলে ক্ষতি আছে।”
আদর করে বুকের ওপরে আলতো এক চাঁটি মেরে বলে, “শয়তানি করার সময় হয়নি, বুধো।” তারপরে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দেয়। বুধাদিত্য গালের ওপরে একটা চুমু খেয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
ঝিল্লির কণ্ঠস্বরে সেই উচ্ছল ঝঙ্কার ফিরে এসেছে। অবশেষে বেড়াতে যাবে, মন খুশিতে নেচে ওঠে বুধাদিত্যের। তাড়াতাড়ি একটা টিশার্ট গলিয়ে নেয়। গ্রীষ্ম কাল রাত দশ’টা বাজে, বাইরের আবহাওয়া একটু গুমোট। গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ছেনা। বুধাদিত্যের যেন আর তর সইছেনা, কখন ঝিলামকে স্বমহিমায় দেখতে পাবে।
বুধাদিত্য রুমের দরজায় টোকা দিয়ে বলে, “তাড়াতাড়ি...”
ঝিলাম ওপর পাশ থেকে ধমকে ওঠে, “এতদিন পরে বয়ফ্রেন্ডের সাথে আইস্ক্রিম খেতে যাব, একটু সাজতে দেবে না নাকি?”
বুধাদিত্য, “অনেক সাজ হয়েছে, প্লিস তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এস। আমার আর তর সইছে না। প্লিস প্লিস... ঝিল্লি।”
ঝিলাম দরজা খুলে বাঁ হাত কোমরে দিয়ে একটু বেঁকে দাঁড়ায়। ভুরু নাচিয়ে, নিচের ঠোঁট কামড়ে জিজ্ঞেস করে, কেমন?
বুধাদিত্য হাঁ করে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে স্বপ্নের সুন্দরীকে। মাথার চুল একপাস করে আঁচড়ান, ভুরু জোড়া কালো চাবুকের মতন। চোখের কোনে একটু কাজল মেখে চোখের ভাষা দ্বিগুন করে নিয়েছে। গোলাপি ঠোঁট চকচক করছে গোলাপি লিপ্সটিকে। মরালী গর্দানে একটা সরু সোনার চেন, উন্নত বুকের খাঁজের মাঝে একটা লাল রুবির লকেট দুলছে। ছোটো হাতার গোলাপি টপ ওর উরধাঙ্গের সাথে চেপে বসে। দুই ফর্সা হাতের ত্বকে যেন মাখনের প্রলেপ দেওয়া। সাদা জিন্সের ক্যাপ্রি হাঁটুর কাছে এসে শেষ হয়ে গেছে। ফর্সা পায়ের গুলি এত মসৃণ মনে হয় যেন মাছি বসলে পিছলে পরে যাবে। রাঙ্গা পায়ের গোড়ালিতে রুপোর নুপুর বাঁধা। আলতো পা দুলিয়ে ওকে ইচ্ছে করে শুনিয়ে দিল নুপুরের ছনছন আওয়াজ।
বুধাদিত্য ঝিলামকে জড়িয়ে ধরার জন্য ওর দিকে এগিয়ে যায়, ঝিলাম হেসে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ফাঁকা বাড়ি আবার ভরে ওঠে ঝিলামের নুপুরের আওয়াজে। দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয় মিষ্টি হাসির আওয়াজ। চাবির থোকা থেকে গাড়ির চাবি উঠিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়।
খিলখিল করে হেসে বলে, “তুমি না এলে কিন্তু আমি গাড়ি চালিয়ে চলে যাব। জানই ত আমি গাড়ি চালালে কি হবে।”
বুধাদিত্য দরজা দিয়ে বেড়িয়ে পরে। ঝিলাম তালা বন্ধ করে ওর বাঁহাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করে। পুরানো ঝিলামের নতুন রুপ দেখে মুগ্ধ বুধাদিত্য। ওর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারে না। বারেবারে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। গাড়িতে উঠে গাড়ি চালিয়ে দেয় ইন্ডিয়া গেটের দিকে। বুধাদিত্য ঝিলামের ডান হাত ধরে গিয়ারের ওপরে রেখে তাঁর ওপরে বা হাত চেপে ধরে। ঝিলাম যত বার হাত ছারাবার চেষ্টা করে ততজোরে চেপে ধরে হাত।
ঝিলাম ওর হাতের ওপরে চিমটি কেটে বলে, “গাড়ি চালাও ঠিক করে, পাগলামি করতে হবে না।”
বুধাদিত্য, “উম্মম্মম্ম...... তোমাকে যা সেক্সি লাগছে না। আমি চোখ ফেরাতে পারছি না, ঝিল্লি।”
ঝিলাম হাত ছাড়িয়ে বুধাদিত্যের গা ঘেঁসে বসে কানেকানে বলে, “সেক্সি আজ লেগেছে না যেদিন প্রথম দেখেছিলে সেদিন লেগেছিল, শুধু মুখে আজ বলছ, তাই ত।”
বুধাদিত্য হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “দুষ্টু মেয়ে, অনেক কিছু লক্ষ্য করো দেখছি, হ্যাঁ।”
ঝিলাম দুষ্টু মিষ্টি হেসে বলে, “সেদিন রাতে আমি যখন স্নান করে বেড়িয়েছিলাম তখন অনেক কিছু দেখেছিলে তাই ত।”
বুধাদিত্য ধরা পরে গেছে, লজ্জা লুকিয়ে সামনে দেখে বলে “কবে কি দেখেছি, প্রায় দশ মাস আগের কথা মনে আছে দেখছি।”
ঝিলাম আলতো করে বুধাদিত্যের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, “ইসস, এই ছেলে আবার লজ্জা পায়। দেখ দেখ, কেমন লাল হয়ে গেছে মেয়েদের মতন। প্লিস আরও একটু লজ্জা পাও বুধো, তোমাকে না দারুন দেখায়।”
লজ্জায় বুধাদিত্যের কান গরম হয়ে যায় ঝিলামের কথা শুনে। ঝিলামের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে, “এবারে যদি না থাম তাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।”
গাল টিপে ধরে নাড়িয়ে দেয় ঝিলাম, বলে, “কি করবে, হ্যাঁ শুনি।”
বুধাদিত্য, “গাড়ি থামিয়ে রাস্তার মাঝে তোমাকে একটা চুমু খাবো।”
ঝিলাম, “আচ্ছা তাই নাকি?”
বুধাদিত্য, “দেখতে চাও আমি কি করতে পারি।”
ঝিলাম বুধাদিত্যের নাকের ওপরে বুড়ো আঙুল টিপে, “তুমি ঘেচু কলা করতে পার, ওই ত বুকের পাটা। আজ যদি আলমারি না খুলতাম তাহলে ত খুজেই পেতে না।”
বুধাদিত্য, “প্লিস ঝিল্লি গাড়ি চালাতে দাও না হলে এক্সিডেন্ট করে দেব।”
ঝিলাম ওর গলা জড়িয়ে বলে, “ওকে বাবা, আমি আর ডিস্টার্ব করব না, চল।”
গাড়ি ইন্ডিয়া গেট পৌঁছে যায়। গাড়ি ঠিক ভাবে পার্ক করার আগেই নেমে যায় ঝিলাম। দৌড়ে গিয়ে দুটি আইস্ক্রিম কিনে নিয়ে আসে। ওর দৌড়ানো দেখে বুধাদিত্যের মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, মাথার চুল মেঘের মতন উড়ে যায়। অতীব আকর্ষণীয় দেহপল্লব দৌড়ানোর ফলে মদিরার ন্যায় ছলকে ওঠে। মাতাল হয়ে যায় বুধাদিত্য ওই তরঙ্গিণীর চাল দেখে। গোলাপি জিব বের করে আইস্ক্রিম খায় আর বুধাদিত্যের গাঁ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকে। মনে আগের সেই সঙ্কোচ নেই, নেই কোন দ্বিধা, সত্যি ভালোবাসার মানুষ আজ পাশে দাঁড়িয়ে। ঝিলামের মনে হয়, ওই কঠিন বুকের মাঝে লুকিয়ে পড়লে বেশ ভালো হত, দুই বলিষ্ঠ বাহুর আলিঙ্গনে হারিয়ে যেতে বড় আনন্দ।
বুধাদিত্য বাঁ হাতে ঝিলামকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, “ঝিল্লি, বেড়াতে যাবে।”
ঝিলাম, “কোথায়?”
বুধাদিত্য, “ওই সেদিনের মতন গাড়িতে, খালি তুমি আর আমি।”
ঝিলাম ওর বুকের ওপরে চিমটি কেটে বলে, “কেন কাল অফিস নেই?”
সেই চিমটি টা বড় ব্যাথা দেয়, তবে একদম বুকের বাম দিকে, বুধাদিত্য ককিয়ে বলে, “উফফফ... তোমার চিমটি খাবার জন্য কাল আর অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না।”
ঝিলাম ভুরু নাচিয়ে দুষ্টু হেসে বলে, “বুঝতে পারছি বাড়ি ফিরলেই আমার কপালে বিপদ আছে। চল বেড়াতে যাই...”
বুধাদিত্য ওর কথা ধরতে পেরে বলে, “ইসসসস... কেন যে মরতে লঙ ড্রাইভের কথা উঠাতে গেলাম...”
ঝিলাম গাড়ির দরজা খুলে গাড়িতে উঠে পরে। ওর দিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলে, “ভদ্রলোকের এক কথা বুধো সোনা, গার্লফ্রেন্ডকে এই রকম ভাবে ওয়েট করাতে নেই।”
বুধাদিত্য মাথা চুল্কাতে চুল্কাতে গাড়ি চালাতে শুরু করে। গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে দিল্লী ছেড়ে বেড়িয়ে চণ্ডীগড়ের হাইওয়ে ধরে। পানিপথ ছাড়াবার পরেই গাড়ি হাওয়ার সাথে গান করে। ঝিলাম ওর কাঁধ ঘেঁসে বসে থাকে আর মাঝে মাঝে ওর চুলের মধ্যে বিলি কেটে দেয়।
ঝিলাম কানের ওপরে ফুঁ দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আর সেদিন কি দেখেছিলে?”
বুধাধিত্য, “খুব জানতে ইচ্ছে করছে মনে হয়।”
ঝিলাম নিচের ঠোঁট কামড়ে বলে, “শুনি না একটু।”
বুধাদিত্য, “উম্মম্মম...ওই স্নান করার আগের দৃশ্য দেখেছিলাম।” চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই দৃশ্য, “উফফফ যা লাগছিল না।”
ঝিলাম মাথার পেছনে আদর করে চাঁটি মেরে বলে, “ছিঃ শুধু অন্য লোকের বউয়ের দিকে নজর। আয়েশা ছাড়া আর কটা কে? হ্যাঁ একটু শুনি ত।”
লজ্জায় বুধাদিত্যের কান মুখ গরম হয়ে যায়, কথা ঘুড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “আজ আর গান গাইবে না...”
ঝিলাম হেসে ফেলে, “তুমি শুনতে চাইলেই গাইব।”
বুধাদিত্য, “না আর গান গেয়ে কাজ নেই, এবারে এক্সিডেন্ট করে বসব কিন্তু।”
ঝিলাম, “কেন আমি কি বেসুরা গাই নাকি?”
বুধাদিত্য, “না না, আমার কথার মানে সেটা নয়। আমি কব্জিতে বেলফুলের মালা জড়িয়ে মদ খাব আর তুমি আমার সামনে বসে গান গাইবে, বেশ একটা অন্য আমেজ আসবে।”
ঝিলাম কানের লতিতে চুমু খেয়ে বলে, “ছেলের শখের বলিহারি, গার্লফ্রেন্ডকে শেষ পর্যন্ত বাইজি।”
ফাঁকা রাস্তার ওপর দিয়ে, ঘন কালো রাতের অন্ধকার চিড়ে গাড়ির বাতাসের সাথে খেলা করে চলে। খোলা জানালা দিয়ে ভেসে আসে মধ্যরাত্রের ঠাণ্ডা বাতাস। ঝিলাম দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বুকের মধ্যে সেই ঠাণ্ডা বাতাস ভরে নিয়ে প্রেমঘন সুরে বলে, “আজ মুক্তির স্বাদ পেলাম তোমার ছোঁয়ায়। আজ আমি সত্যি কারের মুক্ত, সত্যি কারের স্বাধীন।” হটাত ঝিলাম হাঁটু গেড়ে বসে পরে সিটের ওপরে। বুধাদিত্যের দিকে ফিরে ওর মুখ আঁজলা করে ধরে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। মাথা নামিয়ে আনে ওর মুখের ওপরে, গোলাপি নরম ঠোঁট চেপে ধরে পুরু ঠোঁটের ওপরে। চোখের সামনে ঝিলামের মুখ, চেহারার ওপরে ঝিলামের কালো রেশমি চুলের পর্দা ছাড়া রাস্তা দেখতে পারে না বুধাদিত্য। সমস্ত শক্তি দিয়ে ব্রেকে পা চেপে দেয়, গাড়ি জোর আওয়াজ করে ঘুরে গিয়ে রাস্তার পাশে থেমে যায়। ঝিলাম দুই হাতে বুধাদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে আরও জোরে ঠোঁট বুধাদিত্যর ঠোঁটের ওপরে চেপে ধরে। পরস্পরের মুখের লালা ভিজিয়ে দেয় পরস্পরের ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে, প্রগার আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে দুজনে ভেসে যায় প্রেমের জোয়ারে।
পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
দ্বিতীয় অঙ্ক
Written By pinuram
Written By pinuram
চতুর্দশ পর্বঃ মুক্তির স্বাদ (#1)
ইতিমধ্যে সমীরের বাবা মাকে খবর পাঠানো হয় পুলিসের তরফ থেকে। বুধাদিত্য ফোন করে জানায় সেই ঘটনা, সাথে সাথে জানায় ঝিলামের শারীরিক অসুস্থতা। দুই দিনের মধ্যে সমীরের বাবা, মা আলমোড়া পৌঁছে যান। সমীরের বাবা মা সোজা হসপিটালে এসে বুধাদিত্যের সাথে দেখা করে। বুধাদিত্যকে জড়িয়ে ধরে পুত্র শোকে সমীরের মা কেঁদে ফেলেন। বুধাদিত্য আসল ঘটনা চেপে শুধু মাত্র দুর্ঘটনার কথা জানায় সমীরের বাবাকে। সমীরের বাবার সাথে দেখা করার জন্য মুন্সিয়ারি থেকে অখিলেশ পৌঁছে যায় আলমোড়া। পুলিসের মুখে সবিস্তারে দুর্ঘটনার কথা শুনে খেই হারিয়ে ফেলেন সমীরের বাবা। অখিলেশ জানায় যে, পাহাড়ি নদী সমীরের মৃত দেহ গ্রাস করে নিয়েছে। দুই দিন লোক নামিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে পাওয়া যায়নি ওর মৃত দেহ। সমীরের মা মর্মাহত হয়ে যান, পুত্রের শেষ দেখা দেখতে পারেন না বলে আফসোস করেন। সমীরের বাবা, ঝিলামকে কোলকাতা নিয়ে যাবার কথা বলেন, সাথে এও জানায় যে ঝিলামের বাবা মাকে খবর দেওয়া হয়েছে। পরের দিন ঝিলামের বাবা আর দুই দাদা আলমোড়া পৌঁছে যান। সবাইকে সামাল দিতে দিতে বুধাদিত্য হিমসিম খেয়ে যায়। একদিকে অসুস্থ ঝিলাম বিছানায় পরে, অন্যদিকে ঝিলামের বাড়ির লোক আর সমীরের বাবা মা। হস্পিটালের বিছানায় শুয়ে চারপাশে নিজের লোকের ভেতরে ঝিলামের চোখ শুধু বুধাদিত্যকে খুঁজে বেড়ায়। সবার সামনে বুধাদিত্য ওর পাশে যেতে একটু দ্বিধা বোধ করে।
দিন চারেক পরে ঝিলাম সুস্থ হয়ে ওঠে। ঝিলামের বাবা ঝিলামকে দুর্গাপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। বাবার কথা শুনে ঝিলাম ভাষা হারিয়ে ফেলে, পুরানো জীবনে ফিরে যেতে নারাজ ঝিলাম। চোখ মেলে তাকালেই আশেপাশের লোকজন ওকে সমীরের কথা মনে করিয়ে দেয় আর সেই সাথে সমীরের বিশ্বাস ঘাতকতার কথা মনে পরে যায়। মুখ চাপা দিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে বারেবারে। ঝিলাম কিছুতেই সেই মনোভাব কাটিয়ে উঠতে পারে না, তার ওপরে সবাই মনে করিয়ে দেয় যে ঝিলাম আর সেই ঝিলাম নেই। জল ভরা কাতর চোখে বুধাদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকে।
ঋজু বুধাদিত্য চোখ বন্ধ করে বুক ভরে এক লম্বা শ্বাস নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে গম্ভির স্বরে বলে, “ঝিলাম কোথাও যাবে না। ঝিলাম আমার সাথে দিল্লী যাবে।”
সবার চোখে হাজার প্রশ্ন, কেন ঝিলাম বুধাদিত্যের সাথে থাকবে? বুধাদিত্য কিছু বলার আগে, ঝিলাম ধরা গলায় বলে, “সমীর আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। আমাকে কত ভুলিয়ে প্রেমের ভান করে এখানে নিয়ে এসেছে। ওর অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। আমাকে খাদের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। ধাক্কা মারার আগে আমাকে বলে, যে আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম তাই আমাকে মারতে নিয়ে এসেছে এখানে।”
সবাই হাঁ করে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঝিলামের কথা কেউ বিশ্বাস করতে পারে না।
ঝিলাম বলে চলে, “আমি ওর সাথে ঘুরতে যাব, সেই খুশিতে ছিলাম। এত মিষ্টি করে আমাকে বলল যে আমাকে নিয়ে দুরে বেড়াতে যাচ্ছে তাই আমি যেন কাউকে কিছু না জানাই, আর সেই কথায় আমি ভুলে গেলাম। ও নিজের মোবাইল আর আমার মোবাইল নিয়ে বন্ধ করে দিল।”
ঝিলাম বুধাদিত্যের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, “ভাগ্য বশত ওকে আমি একটা এস.এম.এস পাঠিয়েছিলাম তাই আজ বেঁচে আছি।”
সমীরের মা চাপা আঁতকে ওঠেন, ধিক্কার দিয়ে ঝিলামকে বলেন, “আমার ছেলের নামে তুমি মিথ্যে কলঙ্ক রটাচ্ছ?”
ঝিলাম বলে, “আমি মিথ্যে বলছি না, শুধু মাত্র আমার কাছে কোন প্রমান নেই আমি নিরুপায়।”
নিরুপায় বুধাদিত্য হলদে খাম থেকে প্লেনের টিকিট আর পাসপোর্ট সমীরের বাবার হাতে তুলে দেয়। মোবাইল থেকে সেই ফটো আর রেকর্ড করা কথোপকথন শুনিয়ে দেয়। সেই সব দেখে, শুনে আর ঝিলামের কথা শুনে ভেঙ্গে পড়েন সমীরের বাবা মা। চোখের সামনে সমীরের ব্যাভিচারের অকাঠ্য প্রমান দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেন। অনেকক্ষণ পরে সমীরের মা, ঝিলামের মাথায় হাত রেখে বলেন, “আমার পেটের সন্তান গেছে বলে দুঃখ আছে সেটা থাকবে। কিন্তু তোমার মতন লক্ষ্মীকে মেরে ফেলার কথা চিন্তা করতে পারে যে, সেই ছেলের আমার দরকার নেই। আমি তোমাকে আশীর্বাদ করি, ভবিষ্যতে তুমি সুখী হবে।”
বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই ওর ছোটবেলার বন্ধু, একসাথে খেলা করেছিস, একসাথে বড় হয়েছিস। একবারের জন্য ওর মতিগতি ফেরাতে পারলি না?” এই বলে বুধাদিত্যের সামনে কেঁদে ফেলে সমীরের মা। বুধাদিত্য সমীরের মাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সমীরের মা চোখের জল মুছে ওকে বলে, “তুই ভালো থাকিস। আমি চললাম রে। পারলে এই লক্ষ্মীকে দেখিস।”
সমীরের বাবা মায়ের সাথে সেই শেষ দেখা। ঝিলামকে শেষ আশীর্বাদ করে, সমীরের বাবা মা চলে যান আলমোড়া ছেড়ে।
ইতিমধ্যে প্রমীলা দেবীর ফোন আসে, “তুই কোথায় রে? আমি দিল্লী পৌঁছে গেছি। তোর বাড়িতে তালা মারা।”
বুধাদিত্য ভাবতে পারেনি যে মামিমা এত তাড়াতাড়ি চলে আসবেন, “আমি আলমোড়া, ঝিলামকে নিয়ে আজ রাতে দিল্লীর দিকে রওনা দেব। কাল রাতের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যাব। তুমি আজ রাতে হোটেলে থেকে যাও।”
বুধাদিত্য ঝিলামের বাড়ির লোককে বুঝিয়ে বলে সব কথা। বিকেল বেলায় ঝিলামকে নিয়ে দিল্লীর দিকে রওনা দেয়। ঝিলামের দাদাদের কাঠগোদামে নামিয়ে দিল, তাঁরা বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরে। সাড়া রাস্তা ঝিলাম চুপ করে পেছনের সিটে বাবার পাশে বসে থাকে। পরের দিন বিকেল বেলায় দিল্লী পৌঁছে যায়। প্রমীলাদেবী ছাড়া বুধাদিত্যের মনের কথা বোঝার এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। বুধাদিত্য প্রমীলাদেবী কে ঝিলামের ব্যাপার সব কথা খুলে বলে, জানায় যে ঝিলামকে ভালোবাসে।
ঝিলাম নিজেকে গুটিয়ে নেয় শামুকের খোলের মধ্যে। সারাদিন নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখে, কারুর সাথে কথা পর্যন্ত বলতে চায় না। আশেপাশে লোক দেখলে চমকে ওঠে, মানুষের ওপরে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে ঝিলাম। চোখে আতঙ্কের ছায়া, চোখ বন্ধ করলেই চমকে ওঠে, বারেবারে আঁতকে ওঠে, “শেষ পর্যন্ত তুমি... নাআআআআ”
প্রমীলাদেবী ঝিলামকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে সাড়া রাত জেগে থাকে। বাপ্পাকে সঙ্গে নিয়ে সুবিরবাবুর সাথে দেবস্মিতা দিল্লী চলে আসেন। ঝিলামের আঘাতের ফলে, বাড়ি ভর্তি লোকের চেহারায় চিন্তার ছাপ।
ঝিলামের বাবা কি করবেন কিছু বুঝে উঠতে পারেন না। প্রথমে ইতস্তত করেন অমিত বাবু, সমাজের দোহাই দিয়ে বলেন, যে মেয়েকে এখানে রাখা ঠিক হবে না। প্রমীলা দেবী অমিত বাবুকে সব কথা বুঝিয়ে বলাতে তিনি মেনে নেন বুধাদিত্য আর ঝিলামের সম্পর্ক। প্রমীলা দেবী জানিয়ে দেন যে ঝিলামের মানসিক অবস্থার উন্নতি হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
প্রমীলাদেবী সব কথা শুনে অমিত বাবুকে বলেন, “জীবন কখন এক ধাক্কায় শেষ হয়ে যায় না। এই ভদ্রমহিলা” দেবস্মিতাকে দেখিয়ে বলেন “বুধাদিত্যের বাবাকে দ্বিতীয় বার বাঁচার সুযোগ দিয়েছে। তার অপার ভালোবাসা দিয়ে ফিরিয়ে এনেছে সেই লোক কে যে একসময় প্রেম ভালোবাসা তুচ্ছ বলে মনে করত। সমাজের সামনে আজ আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়ে, শুধু মাত্র এই দেবী’র জন্য। আমি হলফ করে বলতে পারি যে আমার বুধি আপনার মেয়েকে ঠিক সেই রকম ভাবে রাখবে। বর্তমানে ঝিলাম মানসিক দিক থেকে খুব ভেঙ্গে পড়েছে, তাই বুধাদিত্যের কাছে থাকা শ্রেয়। বুধাদিত্যের ভালোবাসা আর প্রেম ঝিলামকে সেই অন্ধকার খাদ থেকে টেনে তুলবে।”
বুধাদিত্য প্রমীলাদেবী কে জড়িয়ে ধরে বলে, “পরের বার কথা দিচ্ছি মামি, তোমার কোলে জন্ম নেব।”
বাপ্পা বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করে, “এই আন্টি আমার সাথে গল্প করবে না কেন? আন্টির মন খারাপ তাই? এই আন্টি তোমার কে হয়? আন্টি কবে ভালো হবে?”
শিশুর প্রশ্নবাণে জর্জরিত বুধাদিত্য বাপ্পাকে কোলে করে বলে, “আন্টির শরীর খারাপ তাই। আন্টি ভাল হয়ে গেলে তোমার সাথে গল্প করবে, তোমার সাথে খেলবে।”
বাপ্পা বুধাদিত্যের কানেকানে বলে, “তুমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরে পেটে কাতুকুতু দাও দেখবে আন্টি ঠিক হয়ে যাবে, আন্টি আবার হাসবে আর তোমার সাথে কথা বলবে।”
বুধাদিত্য ভুরু কুঁচকে বাপ্পাকে জিজ্ঞেস করে, “কে বলেছে তোমাকে?”
বাপ্পা, “বাঃ রে, আমি জানি। মাম্মা যখন খুব রেগে যায় তখন ড্যাডার সাথে কথা বলে না চুপ করে থাকে। আর ড্যাডা মাম্মাকে জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে কাতুকুতু দেয় আর মাম্মা হেসে ফেলে ব্যাস।”
বাপ্পার কানেকানে কথা’টা বেশ জোরেই ছিল, আশেপাশের সবাই শুনতে পায়। বুধাদিত্য দেবস্মিতার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। দেবস্মিতা লজ্জা লুকানোর জন্য সুবির বাবুর দিকে তাকায়। চোখের ইশারায় জানায়, দেখেছ তোমার ছেলের কান্ড।
বুধাদিত্য কথা দেয় অমিত বাবুকে তাঁর মেয়েকে কোন আঘাত ছুঁতে পারবে না। মেয়ের মুখ দেখে পিতার হৃদয় শেষ পর্যন্ত বুধাদিত্যের কথা মেনে নেন। বাড়ির অনেকেই নিজের নিজের কর্ম স্থলে ফিরে যান, কিন্তু অমিত বাবু আর প্রমীলা দেবী, ঝিলামের মুখ দেখে থেকে যান। ঝিলাম, বাবার উপস্থিতি দেখে আর কুঁকড়ে যায়।
একদিন বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পরে ঝিলাম বুধাদিত্যকে ঘরের মধ্যে ডেকে নিয়ে যায়। বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?
ঝিলাম খুব নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি সত্যি আমাকে দুর্গাপুরে পাঠিয়ে দেবে?”
বুধাদিত্য ওর মুখ আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে নিয়ে বলে, “কে বলেছে যে আমি তোমাকে দুর্গাপুরে পাঠিয়ে দেব? তুমি সর্বদা আমার বুকের মধ্যে থাকবে। কেউ তোমাকে এই বুক থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না, ঝিল্লি।”
ওর উষ্ণ হাতের পরশে ঝিলাম গলে যায় বলে, “সবাইকে বাড়ি যেতে বলে দাও। শুধু তুমি পাশে থাকলেই আমি ঠিক হয়ে যাব।”
বুধাদিত্য, “তোমার শরীর খারাপ তাই সবাই আছে। তা ছাড়া তোমার বাবা তোমার জন্য একটু চিন্তিত তাই আছেন, তুমি ঠিক হয়ে গেলেই তাঁরা চলে যাবেন।”
ঝিলাম ওর বুকের ওপরে মাথা চেপে ধরে বলে, “সেই রাতে তুমি না এলে আমি ওই ফার্ম হাউসে আত্মহত্যা করতাম। আমি যেদিন সত্যি আত্মহত্যা করতে গেছিলাম ওর সামনে, তখন তুমি দরজা ভেঙ্গে ঢুকলে। আমি চাকরি করতে চেয়েছিলাম, বাড়ির সবাই আমাকে অনেক কথা শুনিয়ে আমাকে ক্ষান্ত করে দিল। শেষ পর্যন্ত তুমি এসে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলে, তোমার শক্তি বুকে করে আমি স্বাধীনতার স্বাদ খুঁজে পাই। আমার এই জীবন তোমার দেওয়া। আমাকে যদি ভালো হতে হয়, তাহলে তোমার কাছেই হব, আমাকে যদি মরতে হয় তাহলে তোমার কোলে মরব। আমার আর কারুর দরকার নেই, বুধো।”
বুধাদিত্য ঝিলামকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে, “ঠিক আছে, তাই যদি চাও আমি সবাইকে বলে দিচ্ছি চলে যেতে।”
“হ্যাঁ রে, তোর কি সারা বিকেল এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি” প্রমীলা দেবীর গলার আওয়াজে দুজনে পরস্পকে ছেড়ে দাঁড়ায়। ঝিলাম একটু লজ্জা পেয়ে প্রমীলা দেবীর পেছনে মুখ লুকিয়ে নেয়। বুধাদিত্য মামিমার দিকে এক বার তাকিয়ে মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। প্রমীলা দেবী বুধাদিত্যকে ডেকে হেসে বলেন, “আমি অজান্তেই তোদের কথোপকথন একটু খানি শুনে ফেলেছি। তোদের ভালতেই আমাদের ভালো, তোরা যাতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারিস সেটাই হবে। আমি অমিতবাবু কে বলে দেব খানে। তুই আমাদের বাড়ির ফেরার ব্যাবস্থা করে দে কাল।” পরেরদিন ঝিলাম আর বুধাদিত্যকে বিদায় জানিয়ে প্রমীলা দেবী আর অমিত বাবু বাসস্থলে ফিরে যায়। বুধাদিত্য ওদের প্লেনের টিকিট কেটে দেয়।
চতুর্দশ পর্বঃ মুক্তির স্বাদ (#2)
দিন দুই পরে, বুধাদিত্য ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে যে ওদের বাড়ির জিনিস পত্রের কি করা যায়। ঝিলাম জানিয়ে দেয় যে ওই বাড়িতে ওর কোন কিছু নেই। যেদিন বুধাদিত্যের বাড়ি এসেছিল, নিজের সব জিনিস সাথে নিয়ে এসেছিল। সমীরের সাথে যাবার দিনে শুধুমাত্র কয়েক জোড়া জামা কাপড় নিয়ে গেছিল। ভেবেছিল পরে এসে সব নিয়ে যাবে, কিন্তু ভালোই হয়েছে যে দ্বিতীয় বার সেই কষ্ট করতে হয়নি। ঝিলাম জানিয়ে দেয় ওই বাড়ির সব কিছু বিক্রি করে তার টাকা কোন নারী শক্তির এন.জি.ও কে দান করে দিতে। এই দেশে অনেক মেয়েরা তাদের স্বামীর হাতে নিপীড়িত, হয়ত কিছুটা সাহায্য করতে পারবে ঝিলাম। বুধাদিত্য ওর কথা মত সমীরের বাড়ি সব জিনিস পত্র বিক্রি করে সেই টাকা একটা এন.জি.ওতে গিয়ে সব দান করে দেয়।
কাজের লোককে বলা হয় দিনে দুই বার আসার জন্য। ভোরবেলা এসে কাজেরলোক রান্না বান্না করে রেখে যায়, দুপুরের পরে এসে বাকি ঘরের কাজ করে। সকালে উঠে ঝিলামের মাথার ব্যান্ডেজ করা, স্নান করিয়ে দেওয়া সব বুধাদিত্য নিজের হাতে করে। দিনে দিনে ঝিলামের মানসিক এবং শারীরিক সাস্থ্যের উন্নতি হয়। ঝিলামের গলায় সেই উৎফুল্ল ফিরে আসেনি, সেই নিয়ে বুধাদিত্য বেশ চিন্তায় থাকে। ঝিলাম শোয়ার ঘরে ঘুমিয়ে পড়ার পরেও বুধাদিত্য চুপ করে স্টাডিতে বসে কান পেতে থাকে, যদি ঝিলাম মাঝ রাতে কেঁদে ওঠে তাহলে। অনেক রাত কেটে যায়, বুধাদিত্য এক নয় সোফায় ঘুমিয়ে পরে না হয় স্টাডির টেবিলে ঘুমিয়ে পরে। সকাল বেলায় লক্ষ্য করে যে গায়ের ওপরে চাদর টানা। বুঝে যায় যে ঝিলাম রাতের বেলা উঠে ওর গায়ের ওপরে চাদর দিয়ে চলে গেছে। ঝিলামের সেই মিষ্টি হাসির কলতান শোনার জন্য বুধাদিত্যের হৃদয় ছটফট করে, ভেবে পায় না কি করে ওই আঁধার চোখে আবার আলোর রেখা মাখাবে। মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতে বললে, ঝিলাম মানা করে দেয়। বাড়ির বাইরে পা রাখতে নারাজ ঝিলাম, এমন কি সামনের বাজারে পর্যন্ত যেতে চায় না। সাধারনত ঝিলাম বাড়িতে যে রকম জামা কাপড় পরে থাকত, সেই সব বদলে গেছে। চুড়িদার কামিজ বা শাড়ি ছাড়া আর কিছু পরে না আজকাল। উচ্ছল, উদ্দাম হাসি খুশি ঝিলামের জায়গায় বুধাদিত্যের সামনে অতীব শান্ত এবং সঙ্কুচিত এক নারী।
বুধাদিত্যের ভয় যে স্কুল শুরু হয়ে গেলে কি করে ঝিলাম স্কুলের সাথে মানিয়ে নেবে। ভিশাল স্যার আর শমিতা ম্যাডামকে সব জানিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের প্রিন্সিপাল এসে বাড়িতে দেখা করে যান। সব কিছু শুনে জানিয়ে দেন যে যত দিন ঝিলাম সম্পূর্ণ রুপে সুস্থ হয়ে না ওঠে ততদিন স্কুল ওকে ছুটি দিয়ে দেবে। স্কুল শুরু হতে তখন কিছু দিন বাকি, কিন্তু চিন্তায় বুধাদিত্যের রাতের ঘুম হয় না। বাড়ি থেকে কেউ ফোন করলে বিশেষ কারুর সাথে ঠিক করে কথা বলে না। ঝিলামের বাবা মা খুব চিন্তিত সেই নিয়ে, কিন্তু ঝিলামকে দুর্গাপুর নিয়ে আসবে তার উপায় নেই। একবার বুধাদিত্য চেষ্টা করেছিল ঝিলামের সাথে সেই বিষয়ে কথা বলতে, ঝিলাম চুপ করে ছিল কোন উত্তর না দিয়ে না খেয়ে দরজা বন্ধ করে বসেছিল দুইদিন। সেদিনের পর থেকে আর দুর্গাপুর যাবার কোন কথা বলেনি। সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিল বুধাদিত্য, যাতে কেউ ঝিলামকে বাড়ি ছাড়ার কথা না বলে।
সেদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে বুধাদিত্যের একটু দেরি হয়ে যায়, রাত আট’টা বেজে যায়। বুধাদিত্য ফোন করে ঝিলামকে জানিয়ে দেয় যে বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হবে। ঝিলাম কোন কথা না বলে চুপচাপ শুনে ফোন রেখে দেয়। দরজায় টোকা মারতে, চুপচাপ দরজা খুলে দেয় ঝিলাম। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে যে ঝিলামের মুখ থমথমে, চোখের পাতা ভিজে, নাকের ডগা লাল। ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে যে কেন কাঁদছিল, ঝিলাম কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ রান্না ঘরে ঢুকে ওর জন্য কফি বানাতে চলে যায়। সেই মুখের করুন চাহনি দেখে বুধাদিত্যের বুক কেঁপে ওঠে, ভয় হয় ঝিলাম কিছু না করে বসে। বুধাদিত্য জানায় যে অফিসে কাজের চাপের জন্য বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেছে। চুপ করে ওর কথা শুনে নেয়, কোন উত্তর দেয় না। ঝিলামের শীতল নিস্তব্ধতা বুধাদিত্যের বুকে বড় বেজে ওঠে। অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশি শান্ত ঝিলাম, খাওয়ার সময়ে কোন কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নেয়। বুধাদিত্য বসার ঘরে বসে চিন্তায় ডুবে যায়। একা একা রেখে যাওয়া ঠিক নয়, কিন্তু ঝিলামের কথা মত সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছিল, এখন যদি ঝিলাম আবার কিছু করে বসে। ঝিলাম নিজের ঘরে ঢুকে আলমারির খুলে কিছু খুঁজতে শুরু করে। আলমারির সব জিনিস বের করে তোলপাড় করে ফেলে। বুধাদিত্য অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করে যে ঝিলাম আলমারির মধ্যে কিছু খুঁজছে। কিন্তু যখন দেখে যে আলমারি খালি করার পরে আবার আলমারি গুছাতে বসেছে, তখন বুধাদিত্য আর চুপ করে বসে থাকতে পারে না।
বুধাদিত্য ওর পেছনে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখে, “ঠিক করে বল, কি খুঁজছ।”
ওর দিকে শূন্য চোখে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বলে, “তোমার ঝিল্লিকে খুঁজছি, কিছুতেই পাচ্ছি না।”
বুধাদিত্য ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে, ঝিলাম ওর বুকের ওপরে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলে। ঝিলামের মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে বলে, “বোকা মেয়ে, নিজেকে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত আলমারি খুলতে হয়।” ওর মুখ আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে। ঝিলাম শক্ত করে চোখ বন্ধ করে থাকে। বুধাদিত্য দুই বুড়ো আঙুল দিয়ে নরম গালের ওপর দিয়ে জলের ফোঁটা মুছে দিয়ে বলে, “আমার চোখের দিকে তাকাও।” ভিজে চোখের পাতা ধিরে ধিরে খুলে যায়, পদ্ম ফুলের পাপড়ি মেলে ধরে ঝিলাম। বুধাদিত্য ওর দিকে ঝুঁকে বলে, “এই চোখের ভেতরে দেখ, নিজেকে খুঁজে পাবে, ঝিল্লিরানী।” ঝিলামের লাল নাকের ডগায় আলতো করে নাক ঘষে দেয় বুধাদিত্য। ঝিলামের উষ্ণ শ্বাস ভাসিয়ে দেয় বুধাদিত্যের ঠোঁট, চিবুক। ঝিলাম ওর বুকে দশ আঙ্গুলে খামচে ধরে। বুধাদিত্য ধিরে ধিরে ঠোঁট নামিয়ে আনে ঝিলামের লাল নরম ঠোঁটের ওপরে। আলতো করে ছুঁইয়ে দেয় ওই নরম গোলাপ পাপড়ির ওপরে। ঝিলাম ঠোঁট চেপে ধরে বুধাদিত্যের ঠোঁটে, আবেগের বশে দুই চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। চোখ বন্ধ করে প্রেমের চুম্বন ঘনীভূত করে নেয়। নিজেকে চেপে ধরে বুধাদিত্যের প্রসস্থ বুকের ওপরে চেপে ধরে নিজেকে। বুধাদিত্য ওর নিচের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে চুষতে শুরু করে। শরীর ছেড়ে যায় ঝিলামের, সারা শরীর সেই মধুর চুম্বনের ফলে অবশ হয়ে আসে। বুধাদিত্য ঝিলামের কোমল দেহ দু’হাতে জড়িয়ে নিজের শরীরের ওপরে পিষে ধরে। ঝিলাম বুক ছেড়ে দুই হাতে বুধাদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে। ভালোবাসার আলিঙ্গন বদ্ধ দুই চাতক চাতকির চারপাশে সদময় থমকে দাঁড়ায়।
কিছু পরে ঝিলাম ঠোঁট ছেড়ে মিষ্টি হেসে বলে, “খুঁজে পেয়েছি... বুধো’র ঝিল্লিকে।”
বুধাদিত্য হেসে ফেলে, “আইস্ক্রিম খেতে যাবে?” ঝিলাম মাথা নাড়ায়, হ্যাঁ। বুধাদিত্য বলে, “চলো কাপড় পরে নাও তাড়াতাড়ি।”
ঝিলাম বেশ সুন্দর একটা চুড়িদার কামিজ পড়েছিল তাই ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “কেন, চুড়িদারে অসুবিধে কি?”
বুধাদিত্য ওর দেহে আলতো চেপে বালে, “এটা বুধো’র ঝিল্লি নয়, এটা বুধাদিত্যের ঝিলাম। তুমি বলেছ যে বুধো’র ঝিল্লি।”
ঝিলাম, “মানে?”
বুধাদিত্য ওকে ছেড়ে আলমারি থেকে একটা সাদা জিন্সের কাপ্রি আর একটা গোলাপি টপ হাতে ধরিয়ে বলে, “পরো। আর হ্যাঁ নুপুরটা পরে নিও, বড় মিষ্টি লাগে তোমার পায়ের রিনিঝিনি সুর, ঝিল্লিরানী।”
ঝিলাম লাজুক হেসে ওর হাত থেকে জিন্স আর টপ নিয়ে বলে, “ঘর থেকে বের হও তবে ত ড্রেস চেঞ্জ করব।”
বুধাদিত্য ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “দেখলে ক্ষতি আছে।”
আদর করে বুকের ওপরে আলতো এক চাঁটি মেরে বলে, “শয়তানি করার সময় হয়নি, বুধো।” তারপরে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দেয়। বুধাদিত্য গালের ওপরে একটা চুমু খেয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
ঝিল্লির কণ্ঠস্বরে সেই উচ্ছল ঝঙ্কার ফিরে এসেছে। অবশেষে বেড়াতে যাবে, মন খুশিতে নেচে ওঠে বুধাদিত্যের। তাড়াতাড়ি একটা টিশার্ট গলিয়ে নেয়। গ্রীষ্ম কাল রাত দশ’টা বাজে, বাইরের আবহাওয়া একটু গুমোট। গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ছেনা। বুধাদিত্যের যেন আর তর সইছেনা, কখন ঝিলামকে স্বমহিমায় দেখতে পাবে।
বুধাদিত্য রুমের দরজায় টোকা দিয়ে বলে, “তাড়াতাড়ি...”
ঝিলাম ওপর পাশ থেকে ধমকে ওঠে, “এতদিন পরে বয়ফ্রেন্ডের সাথে আইস্ক্রিম খেতে যাব, একটু সাজতে দেবে না নাকি?”
বুধাদিত্য, “অনেক সাজ হয়েছে, প্লিস তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এস। আমার আর তর সইছে না। প্লিস প্লিস... ঝিল্লি।”
ঝিলাম দরজা খুলে বাঁ হাত কোমরে দিয়ে একটু বেঁকে দাঁড়ায়। ভুরু নাচিয়ে, নিচের ঠোঁট কামড়ে জিজ্ঞেস করে, কেমন?
বুধাদিত্য হাঁ করে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে স্বপ্নের সুন্দরীকে। মাথার চুল একপাস করে আঁচড়ান, ভুরু জোড়া কালো চাবুকের মতন। চোখের কোনে একটু কাজল মেখে চোখের ভাষা দ্বিগুন করে নিয়েছে। গোলাপি ঠোঁট চকচক করছে গোলাপি লিপ্সটিকে। মরালী গর্দানে একটা সরু সোনার চেন, উন্নত বুকের খাঁজের মাঝে একটা লাল রুবির লকেট দুলছে। ছোটো হাতার গোলাপি টপ ওর উরধাঙ্গের সাথে চেপে বসে। দুই ফর্সা হাতের ত্বকে যেন মাখনের প্রলেপ দেওয়া। সাদা জিন্সের ক্যাপ্রি হাঁটুর কাছে এসে শেষ হয়ে গেছে। ফর্সা পায়ের গুলি এত মসৃণ মনে হয় যেন মাছি বসলে পিছলে পরে যাবে। রাঙ্গা পায়ের গোড়ালিতে রুপোর নুপুর বাঁধা। আলতো পা দুলিয়ে ওকে ইচ্ছে করে শুনিয়ে দিল নুপুরের ছনছন আওয়াজ।
বুধাদিত্য ঝিলামকে জড়িয়ে ধরার জন্য ওর দিকে এগিয়ে যায়, ঝিলাম হেসে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ফাঁকা বাড়ি আবার ভরে ওঠে ঝিলামের নুপুরের আওয়াজে। দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয় মিষ্টি হাসির আওয়াজ। চাবির থোকা থেকে গাড়ির চাবি উঠিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়।
খিলখিল করে হেসে বলে, “তুমি না এলে কিন্তু আমি গাড়ি চালিয়ে চলে যাব। জানই ত আমি গাড়ি চালালে কি হবে।”
বুধাদিত্য দরজা দিয়ে বেড়িয়ে পরে। ঝিলাম তালা বন্ধ করে ওর বাঁহাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করে। পুরানো ঝিলামের নতুন রুপ দেখে মুগ্ধ বুধাদিত্য। ওর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারে না। বারেবারে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। গাড়িতে উঠে গাড়ি চালিয়ে দেয় ইন্ডিয়া গেটের দিকে। বুধাদিত্য ঝিলামের ডান হাত ধরে গিয়ারের ওপরে রেখে তাঁর ওপরে বা হাত চেপে ধরে। ঝিলাম যত বার হাত ছারাবার চেষ্টা করে ততজোরে চেপে ধরে হাত।
ঝিলাম ওর হাতের ওপরে চিমটি কেটে বলে, “গাড়ি চালাও ঠিক করে, পাগলামি করতে হবে না।”
বুধাদিত্য, “উম্মম্মম্ম...... তোমাকে যা সেক্সি লাগছে না। আমি চোখ ফেরাতে পারছি না, ঝিল্লি।”
ঝিলাম হাত ছাড়িয়ে বুধাদিত্যের গা ঘেঁসে বসে কানেকানে বলে, “সেক্সি আজ লেগেছে না যেদিন প্রথম দেখেছিলে সেদিন লেগেছিল, শুধু মুখে আজ বলছ, তাই ত।”
বুধাদিত্য হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “দুষ্টু মেয়ে, অনেক কিছু লক্ষ্য করো দেখছি, হ্যাঁ।”
ঝিলাম দুষ্টু মিষ্টি হেসে বলে, “সেদিন রাতে আমি যখন স্নান করে বেড়িয়েছিলাম তখন অনেক কিছু দেখেছিলে তাই ত।”
বুধাদিত্য ধরা পরে গেছে, লজ্জা লুকিয়ে সামনে দেখে বলে “কবে কি দেখেছি, প্রায় দশ মাস আগের কথা মনে আছে দেখছি।”
ঝিলাম আলতো করে বুধাদিত্যের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, “ইসস, এই ছেলে আবার লজ্জা পায়। দেখ দেখ, কেমন লাল হয়ে গেছে মেয়েদের মতন। প্লিস আরও একটু লজ্জা পাও বুধো, তোমাকে না দারুন দেখায়।”
লজ্জায় বুধাদিত্যের কান গরম হয়ে যায় ঝিলামের কথা শুনে। ঝিলামের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে, “এবারে যদি না থাম তাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।”
গাল টিপে ধরে নাড়িয়ে দেয় ঝিলাম, বলে, “কি করবে, হ্যাঁ শুনি।”
বুধাদিত্য, “গাড়ি থামিয়ে রাস্তার মাঝে তোমাকে একটা চুমু খাবো।”
ঝিলাম, “আচ্ছা তাই নাকি?”
বুধাদিত্য, “দেখতে চাও আমি কি করতে পারি।”
ঝিলাম বুধাদিত্যের নাকের ওপরে বুড়ো আঙুল টিপে, “তুমি ঘেচু কলা করতে পার, ওই ত বুকের পাটা। আজ যদি আলমারি না খুলতাম তাহলে ত খুজেই পেতে না।”
বুধাদিত্য, “প্লিস ঝিল্লি গাড়ি চালাতে দাও না হলে এক্সিডেন্ট করে দেব।”
ঝিলাম ওর গলা জড়িয়ে বলে, “ওকে বাবা, আমি আর ডিস্টার্ব করব না, চল।”
গাড়ি ইন্ডিয়া গেট পৌঁছে যায়। গাড়ি ঠিক ভাবে পার্ক করার আগেই নেমে যায় ঝিলাম। দৌড়ে গিয়ে দুটি আইস্ক্রিম কিনে নিয়ে আসে। ওর দৌড়ানো দেখে বুধাদিত্যের মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, মাথার চুল মেঘের মতন উড়ে যায়। অতীব আকর্ষণীয় দেহপল্লব দৌড়ানোর ফলে মদিরার ন্যায় ছলকে ওঠে। মাতাল হয়ে যায় বুধাদিত্য ওই তরঙ্গিণীর চাল দেখে। গোলাপি জিব বের করে আইস্ক্রিম খায় আর বুধাদিত্যের গাঁ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকে। মনে আগের সেই সঙ্কোচ নেই, নেই কোন দ্বিধা, সত্যি ভালোবাসার মানুষ আজ পাশে দাঁড়িয়ে। ঝিলামের মনে হয়, ওই কঠিন বুকের মাঝে লুকিয়ে পড়লে বেশ ভালো হত, দুই বলিষ্ঠ বাহুর আলিঙ্গনে হারিয়ে যেতে বড় আনন্দ।
বুধাদিত্য বাঁ হাতে ঝিলামকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, “ঝিল্লি, বেড়াতে যাবে।”
ঝিলাম, “কোথায়?”
বুধাদিত্য, “ওই সেদিনের মতন গাড়িতে, খালি তুমি আর আমি।”
ঝিলাম ওর বুকের ওপরে চিমটি কেটে বলে, “কেন কাল অফিস নেই?”
সেই চিমটি টা বড় ব্যাথা দেয়, তবে একদম বুকের বাম দিকে, বুধাদিত্য ককিয়ে বলে, “উফফফ... তোমার চিমটি খাবার জন্য কাল আর অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না।”
ঝিলাম ভুরু নাচিয়ে দুষ্টু হেসে বলে, “বুঝতে পারছি বাড়ি ফিরলেই আমার কপালে বিপদ আছে। চল বেড়াতে যাই...”
বুধাদিত্য ওর কথা ধরতে পেরে বলে, “ইসসসস... কেন যে মরতে লঙ ড্রাইভের কথা উঠাতে গেলাম...”
ঝিলাম গাড়ির দরজা খুলে গাড়িতে উঠে পরে। ওর দিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলে, “ভদ্রলোকের এক কথা বুধো সোনা, গার্লফ্রেন্ডকে এই রকম ভাবে ওয়েট করাতে নেই।”
বুধাদিত্য মাথা চুল্কাতে চুল্কাতে গাড়ি চালাতে শুরু করে। গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে দিল্লী ছেড়ে বেড়িয়ে চণ্ডীগড়ের হাইওয়ে ধরে। পানিপথ ছাড়াবার পরেই গাড়ি হাওয়ার সাথে গান করে। ঝিলাম ওর কাঁধ ঘেঁসে বসে থাকে আর মাঝে মাঝে ওর চুলের মধ্যে বিলি কেটে দেয়।
ঝিলাম কানের ওপরে ফুঁ দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আর সেদিন কি দেখেছিলে?”
বুধাধিত্য, “খুব জানতে ইচ্ছে করছে মনে হয়।”
ঝিলাম নিচের ঠোঁট কামড়ে বলে, “শুনি না একটু।”
বুধাদিত্য, “উম্মম্মম...ওই স্নান করার আগের দৃশ্য দেখেছিলাম।” চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই দৃশ্য, “উফফফ যা লাগছিল না।”
ঝিলাম মাথার পেছনে আদর করে চাঁটি মেরে বলে, “ছিঃ শুধু অন্য লোকের বউয়ের দিকে নজর। আয়েশা ছাড়া আর কটা কে? হ্যাঁ একটু শুনি ত।”
লজ্জায় বুধাদিত্যের কান মুখ গরম হয়ে যায়, কথা ঘুড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “আজ আর গান গাইবে না...”
ঝিলাম হেসে ফেলে, “তুমি শুনতে চাইলেই গাইব।”
বুধাদিত্য, “না আর গান গেয়ে কাজ নেই, এবারে এক্সিডেন্ট করে বসব কিন্তু।”
ঝিলাম, “কেন আমি কি বেসুরা গাই নাকি?”
বুধাদিত্য, “না না, আমার কথার মানে সেটা নয়। আমি কব্জিতে বেলফুলের মালা জড়িয়ে মদ খাব আর তুমি আমার সামনে বসে গান গাইবে, বেশ একটা অন্য আমেজ আসবে।”
ঝিলাম কানের লতিতে চুমু খেয়ে বলে, “ছেলের শখের বলিহারি, গার্লফ্রেন্ডকে শেষ পর্যন্ত বাইজি।”
ফাঁকা রাস্তার ওপর দিয়ে, ঘন কালো রাতের অন্ধকার চিড়ে গাড়ির বাতাসের সাথে খেলা করে চলে। খোলা জানালা দিয়ে ভেসে আসে মধ্যরাত্রের ঠাণ্ডা বাতাস। ঝিলাম দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বুকের মধ্যে সেই ঠাণ্ডা বাতাস ভরে নিয়ে প্রেমঘন সুরে বলে, “আজ মুক্তির স্বাদ পেলাম তোমার ছোঁয়ায়। আজ আমি সত্যি কারের মুক্ত, সত্যি কারের স্বাধীন।” হটাত ঝিলাম হাঁটু গেড়ে বসে পরে সিটের ওপরে। বুধাদিত্যের দিকে ফিরে ওর মুখ আঁজলা করে ধরে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। মাথা নামিয়ে আনে ওর মুখের ওপরে, গোলাপি নরম ঠোঁট চেপে ধরে পুরু ঠোঁটের ওপরে। চোখের সামনে ঝিলামের মুখ, চেহারার ওপরে ঝিলামের কালো রেশমি চুলের পর্দা ছাড়া রাস্তা দেখতে পারে না বুধাদিত্য। সমস্ত শক্তি দিয়ে ব্রেকে পা চেপে দেয়, গাড়ি জোর আওয়াজ করে ঘুরে গিয়ে রাস্তার পাশে থেমে যায়। ঝিলাম দুই হাতে বুধাদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে আরও জোরে ঠোঁট বুধাদিত্যর ঠোঁটের ওপরে চেপে ধরে। পরস্পরের মুখের লালা ভিজিয়ে দেয় পরস্পরের ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে, প্রগার আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে দুজনে ভেসে যায় প্রেমের জোয়ারে।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment