CH Ad (Clicksor)

Thursday, January 2, 2014

নিষিদ্ধ ভালবাসা_Written By pinuram [১৩শ খন্ড (অজানার পানে ভ্রমন)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




নিষিদ্ধ ভালবাসা
Written By pinuram





অজানার পানে ভ্রমন (#01)

কিছুদিন পরে আমার মনে হল যেন আমার চোখে কিছু একটা অসুবিধা হচ্ছে, দুরের জিনিস ঠিক ভাবে দেখতে পারিনা। ডাক্তার দেখান হল, আমার চোখের সমস্যা শুনে মা একটু চিন্তায় পরে গেলেন। নাকের ওপরে চড়ে বসল চশমা। প্রথম কয়েক দিন চশমা পরে বেশ অসুবিধা হয়েছিল, ধিরে ধিরে সেটা কেটে যায়। মনে হয় যেন ওটা আমার শরীরের একটা অঙ্গ।

আমাদের ভ্রমনের বিস্তারিত আয়োজন আমাকেই করতে হবে। অনেক কিছু ভাবতে হবে, বাবা মাকে কি বলব, টাকা কথা থেকে যোগাড় করব। স্কুলের এক জন সিনিয়র, সুপ্রতিমদা, দিল্লীতে বাড়ি। নয়ডাতে খুব বড় একটা আই টি কোম্পানিতে চাকরি করে। একদন তাকে ফোন করলাম। ফোন পেয়েই প্রথমে তো আমাকে গালাগালি দিতে শুরু করল। তারপরে জানালাম যে আমি হিমাচল যাচ্ছি ঘুরতে, আমার একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করে দিতে হবে। সুপ্রতিমদা বলল যে আমি ওর টাটা সাফারি নিয়ে যেতে পারি। আমাকে মজা করে জিজ্ঞেস করল যে আমি কি একা যাচ্ছি না সাথে কেউ স্পেশাল কে নিয়ে যাচ্ছি। আমি হেসে জানালাম যে আমি আমার একজন স্পেশাল কে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি। আমাকে জিজ্ঞেস করল যে আমার বাবা মা আমাদের প্রেমের ব্যাপারটা জানেন কি না। আমি বললাম যে মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি ওর। আমি বললাম যে দেখা হলে সব কিছু বিস্তারিত ভাবে জানাবো, কিন্তু গাড়ি আমার কালকা স্টেসানে চাই। ও বলল যে সেটা হচ্ছে না, আমাকে আগে দিল্লী যেতে হবে তারপরে আমার সব গল্প শুনবে তারপরে ও গাড়ি দেবে।

আমি হেসে বললাম যে "এটা কি ঠিক হচ্ছে সুপ্রতিমদা।"

"দেখ, অনেকদিন পরে দেখা হবে তোর সাথে। তোর গল্প আমি শুনব তারপরে তুই আমার গাড়ি পাবি।"

হুম, আর এক মুশকিলে পরা গেল। এবারে আমাকে ভেবে দেখতে হবে যে কি করে দিল্লী যাওয়া যায়। একদিন রাতে খাবার সময়ে আমি বাবা মাকে জানালাম যে আমি ঘুরতে যেতে চাই। আমি আগেও অনেক একা একা ঘুরে বেরিয়েছি। তাই অনুমতি পেটে বিশেষ বেগ পেতে হল না। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে আমি কোথায় যাবো। আমি বললাম আমি হিমাচল প্রদেশ ঘুরতে যাবো, তবে সিমলা, কুলু মানালির মতন জায়গায় নয়, এমন জায়গায় যেখানে লোকজন কম যায়। আমাকে জিজ্ঞেস করল যে আমি একা যাচ্ছি না বন্ধুদের সাথে, আমি বললাম যে আমি একা যাবো। মিথ্যে কথা। আমি বললাম যে অনেক দিন ধরে আমি ঘুরতে যাইনি তাই একটা ব্রেক দরকার আমার। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে অনুমতি পাওয়া গেল। এবারে আসল সমস্যা কি করে পরী কে জানাই।





অজানার পানে ভ্রমন (#02)

বাবা দমদম এয়ারপোর্টের এক উচ্চ পদস্থ ম্যানেজার তার সাথে বেশ ভ্রমন রসিক। আমার প্লেনের টিকিট কাটা হল, শনিবার সকালের, ঠিক যেরকম আমি আর পরী প্লান করেছিলাম। একদিন আমাকে হিমাচলের ম্যাপ এনে দেখিয়ে বললেন যে আমি কোথায় যাবার প্লান করছি। আমি বললাম এমন জায়গায় যেতে চাই যেখানে লোকজন বিশেষ যায়না। আমাকে ম্যাপের একটা জায়গা দেখিয়ে বললেন যে আমি সাঙলা উপত্যকা যেতে পারি। জায়গাটা নাকি খুব সুন্দর আর দুর্গম। আমি যেহেতু একা তাই বিশেষ অসুবিধা হবে না। আমি কোনদিন নাম শুনিনি, চিতকুল বাঁ সাঙলা উপত্যকার। তবু আমি ম্যাপের দিকে ঝুঁকে একবার দেখে নেই জায়গাটা কোথায়। যেতে তো হবে পরীর সাথে, তাও দেবীর মন রেখে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যেখানে মানুষজন কম যায়।

এবারে আমাকে ভাবতে হবে যে পরীকে কি করে কালকা স্টেসান থেকে তোলা যায়। ওর বান্ধবীরা আমাকে দেখেছে, সেটাই সব থেকে বড় বাধা। তারপরে ভাবলাম, ওরা কেউ আমাকে চশমা পড়তে দেখেনি, এমন কি পরীও আমাকে চশমাতে দেখনি। ভালো হবে, যদি আরও সপ্তহা দুই দাড়ি না কামাই, তাহলে বেশ একটা ছদ্মবেশ ধারন করা যাবে যাতে করে ওরা আমাকে চিনতে পারবে না। মনের ভেতরে তো খুশীর জোয়ার বইছে। পিঠের ব্যাগ গছান শুরু করে দিলাম, জ্যাকেট, টর্চ, দস্তানা, টুপি, একদম যেন অ্যাডভেঞ্চার এর জন্য তৈরি আমি।

প্রমোদসফরে শুধু আমি আর পরী আর কেউ নয়। ভেবেই যেন গায়ে কাটা দিতে শুরু করে দেয়। আমরা পাড়ি দেব এক অচেনা অজানা জায়গায়, যেখানে আমাদের কেউ চেনে না, কেউ জানেনা। শুধু মাত্র পরী আর আমি। বাঁকা ভুরু, মিষ্টি লাল ঠোঁট, উন্নত সুগোল বক্ষ আমাকে কাছে টেনে নেবে, আমি পরীর মন প্রান ভরিয়ে দেব আমার ভালবাসা দিয়ে। এই রকম ভালবাসার কোন এক বাঁকে আমরা হয়তো সেই নদীতে ঝাঁপ দেব, বয়ে যাবো অনাবিল প্রেমের জোয়ারে। মনে মনে ভাবলাম যে ভেসে যাওয়ার পূর্বে কিছু সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন, তাই কয়েক প্যাকেট কন্ডম কোনে লুকিয়ে রাখলাম ব্যাগের মধ্যে।

অবশেষে এল সেই দিন যার জন্য আমি অধীর প্রতীক্ষায় দিন গুনছিলাম। দাড়ি গোঁফ বাড়িয়ে ঠিক একটা বনমানুষের মতন দেখাচ্ছিল আমাকে। মা জিজ্ঞেস করলেন যে কিরে তুই দাড়ি না কেটে চললি কোথায়। আমি জানালাম যে দিল্লী নেমে সুপ্রতিমদার বাড়িতে দাড়ি কামিয়ে নেব। মনে মনে হাসি, আরে এত আমার ছদ্মবেশ না হলে কি করে প্রানের রানীকে চুরি করবো ওর বান্ধবীদের সামনে থেকে। প্রবল উত্তেজনায় বুকের পাঁজরে হৃদয়টা জোরে জোরে ধাক্কা মারছে। কতদিন পরে প্রেয়সীর সাথে হবে দেখা। বাবা মাকে একটা সাদা খাম দিয়ে বললেন যে এতে আট হাজার টাকা আছে আমার ঘোরার জন্য।

প্লেন ছাড়ল কোলকাতা। রবিবার ভোর বেলায় কালকা স্টেসানে পরী আমার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকবে। সব থেকে বড় সমস্যা যে পরী জানে না যে আমি প্লেনে যাবো, কোথায় যাবো কিছুই জানে না। শুধু বিশ্বাস করে দাঁড়িয়ে থাকবে আমার পরী, যে ওর ছোট্ট রাজকুমার ওকে উড়িয়ে নিয়ে যাবার জন্য ঠিক আসবে। 

দিল্লী নামতেই দেখলাম সুপ্রতিমদা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে দেখেই বলে উঠলো "তো, অনেক দিন পরে দেখা হল।"

আমাকে জিজ্ঞেস করল যে কি চলছে কার সাথে চলছে। পরীর সাথে আমার সম্পর্ক টা লুকিয়ে বললাম যে প্রেম করছি আর তাকে নিয়েই ঘুরতে যাচ্ছি। আমি শুধু এইটুকু জানালাম যে মা পরীকে দেখেছে তবে ভবিষ্যতে কিছু অসুবিধা হতে পারে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে। আমি বাড়ির সবার কথা জিজ্ঞেস করলাম, সবাই ভালো আছেন কি না। সুপ্রতিমদা দিল্লীর চিত্তরঞ্জন পার্কে থাকে, বিয়ে করেনি এখন পর্যন্ত। আমার চেয়ে বছর দু তিনের বড়।

আমি মজা করে বললাম "কি শুধু এফেয়ার করে কাটিয়ে দিবি নাকি।" 

"আরে এখন তো শুধু টাইম পাশ করছি, সেটা তেও অনেক মজা আছে রে। সব কটা ওয়ান ডে ম্যাচ রে, টেস্ট খেলার পিচ পাচ্ছিনা খুঁজে।"

কথা শুনে দুজনে হেসে ফেললাম।

আমাকে জিজ্ঞেস করল "যাচ্ছিস কোথায় তোরা।"

আমি বললাম "চিতকুল, সাঙলা ভ্যালিতে একটা ছোটো জায়গা।"

"কোথায় রে জায়গাটা কোনদিন নাম শুনিনি আমি। তুই ডালহৌসি বা মানালি যেতে পারতিস।"

আমি বললাম "পরীর বান্ধবীরা মানালি যাচ্ছে, আর আমার রানীর ইচ্ছে যে তাকে নিয়ে একদম খালি কোন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে, যেখানে লোকজন কম যায়, যেখানে আমাদের কেউ চিনবে না।"

"হুম, বেশ রোম্যান্টিক"





অজানার পানে ভ্রমন (#03)

গাড়িতে উঠলাম, সুপ্রতিমদার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। সুপ্রতিমদা বলল যে ওর ড্রাইভার, একজন মধ্যবয়স্ক লোক, নাম বলবিন্দার আমদের সাথে যাবে। বলবিন্দার বেশ খোশমেজাজি লোক, আমাকে দেখে হেসে বলল, কোন অসুবিধা হবে না।

সুপ্রতিমদা জানাল যে দিল্লী থেকে কালকা যেতে ঘন্টা ছয় সাত লেগে যাবে। শীতকাল সেই জন্য রাস্তায় কুয়াশা জমতে পারে, তাই আমাদের বিকেল বিকেল রওনা দেওয়া ভালো। ও আর বলল যে হাইওয়েতে ট্রাকের ভিড় হবে রাতের বেলা তাই সাবধানে গাড়ি চালাতে। আমরা যেখানে যাবো, সেখানে রক্ত জমিয়ে দেওয়ার মতন ঠাণ্ডা পড়বে তাই জিজ্ঞেস করল যে আমি পর্যাপ্ত গরম জামা কাপড় এনেছি কি না। আমি জানিয়ে দিলাম যে আমার কাছে জ্যাকেট আছে। 

বিকেল ছ’টার সময়ে, সুপ্রতিমদাকে বিদায় জানিয়ে শুরু করলাম অজানার পানে যাত্রা। আমি বল্বিন্দার কে বললাম যে আমি গাড়ি চালাতে জানি, তাই এতটা রাস্তা একা একা গাড়ি না চালিয়ে আমি কিছুটা চালিয়ে নেব। বলবিন্দার বলল ঠিক আছে, একবার গাড়ি দিল্লী থেকে বেড়িয়ে হাইওয়েতে পৌঁছে গেলে আমি গাড়ি চালাতে পারি। দিল্লীর ট্রাফিক, মাথা ঘুরে গেল আমার, শুধু মাত্র কুড়ি কিলোমিটার যেতে দু’ঘন্টা লেগে গেল। 

গাড়ি সোনিপত ছাড়ার পরে বলবিন্দার আমাকে গাড়ি চালাতে বলল। আমি জানালাম যে আমি পাহারে গাড়ি চালাতে হয়তো পারবো না। আমি ড্রাইভারের সিটে বসে, গাড়ি হুহু করে দৌড়ে চলেছে হাইওয়ের ওপর দিয়ে। সুপ্রমতিমদা আমাকে বলেছিল যে গাড়ির তেলের পয়সা আমাকে দিতে হবে, আমি সম্মতি জানিয়েছিলাম।

বলবিন্দার আমাকে বলল "(হিন্দিতে) স্যার জি, আমার দু’টো খাম্বা চাই।"

খাম্বা, আমি বললাম সব হবে। বল্বিন্দার বলল যে পাঞ্জাবে মদের সস্তা, আমরা আম্বালাতে মদের বোতল কোনে নিতে পারবো। গাড়ি চালানর সাথে সাথে কথা বলতে বলতে বলবিন্দার বেশ কাছের মানুষ হয়ে ওঠে। ও জানে যে আমি আমার প্রেমিকার সাথে ঘুরতে যাচ্ছি।

আমাকে জিজ্ঞেস করে "স্যারজি, ভাবিজি কি করেন?"

আমি শুনে হেসে ফেললাম, আমার পরী ওর ভাবীজি। আমি বললাম যে, কলেজ পাশ করেছে সবে। 

"ট্রেন কটায় কালকা পৌছবে?"

"সকাল চারটে নাগাদ কালকা পৌছবে, হাওড়া কালকা মেলে।"

শুনে হেসে ওঠে বলবিন্দার "ও স্যারজি, কালকা মেল, ও তো লেট করবে।"

"ট্রেন লেট করবে কি না জানিনা, তবে আমি কালকা চারটের আগেই পৌঁছাতে চাই।"

পরী আসছে, এতদিন পরে দেখা হবে আমি চাইনা আমার জন্য এই ঠাণ্ডায় অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকুক। 

ঠাণ্ডা, কুয়াশা ঘন রাত কেটে গাড়ি ছুটে চলেছে। পাশ দিয়ে ট্রাক দৌড়ে চলে যাচ্ছে পেছনে। আই জ্যাকেট বের করে গায়ে জড়িয়ে নেই। বলবিন্দার বলল যে রাতের বেলায় এই রাস্তায় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, তাই একটু সাবধানে চালাতে। টানা চালানর জন্য, কিছুক্ষণ পরে মাথাটা ঝিম ধরে যায়। বল্বিন্দার বলল যে কারনালে গাড়ি থামাতে। চা খেয়ে নিলে ঘুমের আবেশ কেটে যাবে। রাত দশটা নাগাদ, কারনালে থামলাম আমরা। চা খেয়ে, ঘাড়ে মুখে জলের ঝাপটা মেরে চাঙ্গা হয়ে নিলাম।

আবার যাত্রা শুরু, কুয়াশাটা যেন হটাৎ করে বেড়ে গেল। আমি গাড়ির গতি ধিরে করে চালাতে লাগলাম। আম্বলা পৌঁছানোর আগে বলবিন্দার আমাকে বলল যে ফ্লাইওভার না নিয়ে পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে। ও নেমে দুটি মদের বোতল কিনতে চায়। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ আম্বালা পৌঁছে গেলাম, ধিরে ধিরে গাড়ি একটা মদের দকানের সামনে দাঁড় করালাম। বলবিন্দার হাতে টাকা দিয়ে বললাম যে মদ কোনে আনতে। ও দুটি ওল্ড মঙ্ক রামের বোতল কিনে আনল, আমার পছন্দের পানীয়। খেতে পারবো কিনা জানিনা, কেননা সাথে পরী থাকবে। 

বলবিন্দার বলল যে আমরা যদি এখনি এখান থেকে যাত্রা শুরু করি তাহলে রাত দুটো নাগাদ পৌঁছে যাবো কালকা। ও বলল যে পিঞ্জর পর্যন্ত আমাকে গাড়ি চালাতে তারপরে ও চালিয়ে নিয়ে যাবে। আমি ওকে জানালাম যে আমি এইদিকে একদম নতুন, রাস্তাঘাট কিছু চিনি না, তবে হ্যাঁ আমার কাছে ম্যাপ আছে। 

আম্বালার পরে এন এইচ এক ছেড়ে দিয়ে আমরা এন এইচ বাইশ ধরে চলতে শুরু করি। শীতের রাতের নিস্তধতা কে খান খান করে গাড়ি এগিয়ে চলেছে। পিঞ্জরের পরে বাল্বিন্দার গাড়ি চালায়। বল্বিন্দার বলল যে পিঞ্জর থেকে কালকা বেশি দুরে নয়। 

আমি পাশের সিটে বসে পেছনে মাথা হেলিয়ে বিশ্রাম নেই। কিছুক্ষণ পরে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। চোখের সামনে শুধু মাত্র আমার প্রেয়সীর মিষ্টি মুখ খানি, দু’গালে টোল পরা হাসি। মাথার ভেতরে খালি এক চিন্তা, স্বপ্নের রাজকন্যের সাথে দেখা হবে কতদিন পরে। পকেট থেকে ওর দেওয়া রুমালটা বের করে মুখের ওপরে মেলে ধরি, বুক ভরে ওর গায়ের গন্ধ টেনে নেই নিজের ফুস্ফুসের ভেতরে। মনে হল যেন ওর ঠোঁট আমার চোয়াল আমার গালে বিচরন করছে। রুমালে সেই গন্ধ নেই তবে, প্রেমিকের হৃদয় প্রেমিকার দেওয়া সব কিছু থেকে সুবাস নেওয়ার চেষ্টা করে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে কাজল কালো ডাগর দুটি নয়ন, ঠোঁটে মাখা মিষ্টি হাসি। গালে টোল পরে সেই হাসি টিকে আর বেশি সুন্দর মধুময় করে তোলে। ডান গালের ওপরে এল গুচ্ছ চুল সব সময়ে দুলতে থাকে, মাঝে মাঝে চোখের সামনে চলে আসে সেই গুচ্ছ। আলতো করে আঙ্গুল দিয়ে যখন সরিয়ে দেয় সেই চুলের গুচ্ছ, তখন মুখ খানি আর বেশি মিষ্টি দেখায়। কি করবে আমার সাথে? এত দিন পরে দেখা হবে আমাদের। এই দাড়ি গোঁফে যদি আমাকে চিনতে না পারে তাহলে তো আমি বড় মুশকিলে পরে যাবো। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরি ঠিক জানি না।





অজানার পানে ভ্রমন (#04)

"স্যারজি, ট্রেন এসে গেছে, উঠে পড়ুন।"

বলবিন্দার আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙ্গায়।

আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখি, সকাল হয়ে গেছে। ঘড়ি দেখলাম, সাড়ে আটটা বাজে। আমি বলবিন্দার কে জিজ্ঞেস করলাম যে আমাকে জাগায় নি কেন। ও বলল যেহেতু আমি ঘুমচ্ছিলাম তাই আর আমাকে জাগায় নি। ও স্টেসানে দাঁড়িয়ে ছিল, ট্রেন লেট ছিল তাই সময় মতন ঘুম ভাঙ্গায়নি আমার। চোখে মুখে জলের ঝাপটা মেরে একটু ঘুম কাটিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলাম, এতদিন পরে দেখা পাবো, একটু তো ভদ্রস্ত হয়ে দেখা করতে হবে।

মাথায় একটা টুপি চড়িয়ে, প্লাটফর্মে ঢুকে দেখলাম যে পরী ওর বান্ধবীদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চেয়ে দেখলাম যে এদিক ওদিক তাকিয়ে আমাকে খুঁজতে চেষ্টা করছে। আমি মনে মনে হেসে ফেলি ওর অবস্থা দেখে। একটা সাদা রঙের লম্বা জ্যাকেট গায়ে চাপিয়েছে, তাতে যেন একটু মোটাসটা দেখাচ্ছে ওকে। চোখ মুখের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে প্রচণ্ড ক্লান্ত, চোখ দুটি লাল, মনে হয়না রাতে ঘুমিয়েছে। 

আমি ধিরে ধিরে ওদের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম, যেহেতু কেউ আমাকে চিনতে পারেনি তাই কারুর চোখ যায়না আমার দিকে। কিছুক্ষণ পরে আমার সাথে ওর চোখাচুখি হয়, আমি রুমাল বের করে ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসি। আমাকে দেখে, অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। ঘুম পালিয়ে গেছে ওর চোখ থেকে। আমি ওর মুখ দেখে বুঝতে পারি যে বুকের মাঝে এক উত্তাল তরঙ্গ কে সামলে রেখে আমার দিকে ধির পায়ে এগিয়ে আসছে। কাছে এসেই আমার বাঁ হাতটা জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে। পরীকে আমার দিকে ওইরকম ভাবে আস্তে দেখে বাকিরা আমাদের দিকে তাকায়। 

আমি আমার আসল পরিচয় লুকিয়ে একটু গম্ভির গলায় বলি "আমি অর্জুন, ইন্দ্রানির হাসব্যান্ডের কাজিন ভাই। আমরা হয়তো আগে মিট করিনি"

আমি হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন ভদ্রলকের সাথে হাত মেলাই "আপনাদের জার্নি কেমন গেল?"

পরীর দুই বান্ধবী ওর দিকে প্রশ্নসুচক চাহনি নিয়ে জিজ্ঞেস করে কে আমি। পরী হেসে বলে, যে ও আমার সাথে দেখা করার জন্য আর আমার সাথে ঘুরতে যাবার জন্য এখানে এসেছে। আমি ওর চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারলাম যে পরী প্রানপন নিজের মনের অবস্থা টাকে দেখে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। থেকে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরে হেসে যাচ্ছে। 

পরী পরিচয় করিয়ে দিল ওর দুই বান্ধবীর সাথে, একজনের নামে কল্যাণী একজন রানী। দু’জনের গত বছর বিয়ে হয়েছে। কল্যানির বর দীপঙ্কর আর রানীর বর রামানুজ। বসিরহাটে ওদের পারিবারিক ব্যাবসা। ওরা সিমলা হয়ে কুলু মানালি ঘুরতে যাচ্ছে। কল্যাণী আমাকে জিজ্ঞেস করল যে আমি পরীকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছি। আমি হেসে উত্তর দিলাম যে যেখানেই যাচ্ছি তার জন্য চিন্তা নেই, আমার পাশে ও ঠিক থাকবে।

কল্যাণী বলল "সারা রাত শুচিস্মিতা ঘুমোয়নি। আপনি ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন সেটা ও জানে না, তাই প্রবল উত্তেজনায় সারা রাত জেগে কাটিয়েছে। কত রোম্যান্টিক ব্যাপার স্যাপার আপনাদের, এক রকম অজানা অচেনা জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। আপনারা আমাদের সাথেই তো বেড়াতে যেতে পারেন।"

রানী ও কল্যানির কথায় সায় দিয়ে বলে "হ্যাঁ, চলুন না আমাদের সাথে, সবাই মিলে বেশ মজা হবে।"

পরী দেখল যে ব্যাপারটা ঠিক হাতছারা হয়ে যাচ্ছে, তাই আমার হাত জড়িয়ে বলল "না না, ও নিশ্চয় কিছু প্লান করে এসেছে, সেটা মাটি হয়ে যাবে।" আমার হাতে চিমতি কেটে বলে "আমরা কি স্টেসানের বাইরে যাবো?"

আমি ওর ব্যাগটা হাতে নিয়ে সবাই মিলে প্লাটফর্ম থেকে বেড়িয়ে এলাম । বেড় হওয়া মাত্র, পরী আমার দিকে সহস্র প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে হেসে ফেলল, বলল যে দাড়ি গোঁফ নিয়ে এক অদ্ভুত ছদ্মবেশ ধারন করেছি যে ও নিজেই আমাকে চিনতে পারছিল না। আমি যদি ওর দেওয়া রুমাল না বের করতাম তাহলে হয়তো কাছেও আসত না আমার। জিজ্ঞেস করল যে আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমি বললাম যে আমরা, সাঙলা উপতক্যায় চিতকুল নামক একটা জায়গায় বেড়াত যাচ্ছি। কল্যাণী জানাল যে ওর আগে থেকেই সিমলা কুলু মানালির ট্রিপ বুক করে ফেলেছে না হলে আমাদের সাথে যেত। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, যা বাবা, আমি যাবো আমার পরীর সাথে সেখানে তোমাদের কেন নিয়ে যাব। দীপঙ্কর আমাকে জিজ্ঞেস করল যে আমরা সিমলা হয়ে যাবো কি না, আমি বললাম যে আমরা ঠিক সিমলা হয়ে যাবো না, আমরা শিম্লার আগে কান্দাঘাট নামে একটা জায়গা থেকে বেকে যাবো। জিজ্ঞেস করল আমি এদিকে আগে এসেছি কি না, আমি জানালাম যে আমি আসিনি তবে আমি ম্যাপ খুব ভাল ভাবে দেখে নিয়েছি আর রাস্তা মুখস্থ করে নিয়েছি তাই আমাদের যেতে বিশেষ অসুবিধা হবে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে ওরা ফিরবে কবে। দীপঙ্কর জানাল যে ওর পরের রবিবার ফিরবে। কল্যাণী পরীকে বলল যে "যেখানেই থাকিস, রবিবারের মধ্যে যেন কালকা ফিরে আসিস।"

আমি ওদের জানিয়ে দিলাম যে আমরা যেখানেই থাকবো, ঠিক রবিবারে পরীকে আমি কালকা নিয়ে আসবো।





অজানার পানে ভ্রমন (#05)

আমি বলবিন্দার কে ডেকে বললাম পরীর ব্যাগ গাড়িতে রাখতে। বলবিন্দার পরীকে দেখে হাত জোর করে বলল "নমস্তে ভাবিজি।"

পরী হিন্দি বিশেষ কিছু বোঝে না, তবে এইটুকু বুঝল যে ওকে ভাবিজি বলে ডেকেছে। পরী আমার দিকে একটু রেগে তাকাল, কেন ওকে ভাবিজি বলে ডাকা হয়েছে, সুন্দরীর মান হয়েছে। দীপঙ্কর আমার সাফারি দেখে বেশ চমকে গেল। আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি কি করে কালকা পৌঁছেছি। আমি জানালাম যে আমি প্লেনে করে দিল্লী এসছি কাল সকাল বেলা সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে।

রানী পরী কে একটু ধাক্কা দিয়ে হেসে বলে "তুই তো ডুবে ডুবে জল খাওয়ার মেয়ে রে। অনেক ভাগ্যবতী রে তুই।"

ওদের বিদায় জানিয়ে আমরা গাড়িতে চড়লাম। গাড়ি চলতে লাগলো। 

পরী আমার হাত জড়িয়ে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছে সমানে "তুমি সাংঘাতিক সেজেছ তো, আমি একদম চিনতে পারিনি তোমাকে। ঐ চশমা টাকি নকল না আসল? এই দাড়ি গোঁফ, এই গুলো নকল?"

"আমাকে কথা বলতে দেবে না শুধু হেসে যাবে"

"না না বল বল" বলে আবার মুখ টিপে হাসতে শুরু করে দেয়।

আমি ওকে সবিস্তারে আমার ছদ্মবেশের কথা, ঘুরতে যাবার প্লান, সব কিছু জানালাম। আমার কথা শুনে হাসি আর থামেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা কান্দাঘাট থেকে ছোটো রাস্তা ধরলাম পাহাড়ের মাঝ দিয়ে। এক পাশে উঁচু উঁচু পাইন, কেদার ঝাউএর বন, এক দিকে খাদ। ধিরে ধিরে গাড়ি এগিয়ে চলেছে, পাহারের সর্পিল রাস্তা ধরে।

পরী আমার বাঁ হাতটি নিজের হাথের মধ্যে চেপে ধরে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখছে। অনেকক্ষণ পড়ে আমি আমার প্রেয়সীর রূপ বুক ভরে দেখতে থাকি, এক কথায়, যেন গিলছি ওকে দু’চোখ দিয়ে। কালো রঙের আঁটো সালোয়ার কামিজের ওপরে সাদা রঙের লম্বা জ্যাকেট পরা। ডান হাতের আঙ্গুলে দিয়ে ওর গাল আলতো করে ছুঁই আমি।

আমার দিকে ফিরে হেসে বলে পরী "উম... আমি কোনদিন পাহাড় দেখিনি। আমার মনে হচ্ছে যেন আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি, আমি চাইনা কেউ আমাকে আমার এই ঘুম থেকে উঠিয়ে দিক।" 

"এই দেখো, আমি তোমার পাশে বসে, তুমি ঘুমিয়ে নও পরী, সব কিছু সত্যি।"

আমার কাঁধে গাল ঘষে পরী, আমি ওকে জড়িয়ে ধরে গালে আলতো করে চুমু খাই। একটু খানি রাগ দেখিয়ে হেসে বলে "আউচ, আমার লাগছে। এই দাড়ি গোঁফ নিয়ে একদম আমাকে চুমু খাবে না।"

"ওকে বাবা, এই দাড়ি গোঁফ আমি কেটে ফেলব, চিন্তা নেই।"

"উফ... আমি ভীষণ এক্সসাইটেড" আমার ডান হাত ওর বুকের ওপরে চেপে ধরে বলে "দেখো আমার বুক টা কেমন কাঁপছে।"

আমি দুষ্টুমি করে ওর বুকের ওপরে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেই। মৃদু রেগে বলে "একদম দুষ্টু ছেলে তুমি। আমি একটু ফ্রেস হব।"

আমি ওকে বললাম যে চ্যায়েল এলে আমরা একটা রুম নিয়ে নেব সেখানে স্নান করে একটু রেস্ট নিয়ে আবার এগিয়ে যাবো। 

চ্যায়েল পৌঁছে একটা রুম নিয়ে নিলাম। রুমে ঢুকে আমি পরীকে বললাম যে দেখো সময় তো খুব কম তাই একসাথে চান করে নেই। রেগে যায় আমার রমণী, চেঁচিয়ে বলে "আমি মেরে ফেলব এবারে তোমাকে।"

ফ্রেস হয়ে, চ্যায়েল থেকে বেড়িয়ে পড়ি আমরা। চারপাশে কুয়াশা কেটে গেছে। পরী একটা সাদা রঙের সালোয়ার পড়েছে, দেখতে একদম শিশিরে ভেজা পদ্ম ফুলের মতন। আমি দাড়ি গোঁফ কামিয়ে নিজের আসল চেহারা ধারন করে নিয়েছি, আমাকে না হলে কাছে আসতে দেবে না যে। বলবিন্দার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিয়েছে, গাড়ি আবার পাহাড়ি রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে অজানা গন্তব্য স্থানের পানে। 

এক সময়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল যে চিতকুল কত সময় লাগবে পৌঁছতে, আমি মাথা নেড়ে জানালাম যে আমি ঠিক জানিনা। বল্বিন্দার উত্তর দিল যে আমরা যখন চ্যায়েলে দাঁড়িয়েছিলাম ও আসে পাশের লোকজন কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছে যে চিতকুল পৌঁছতে আর আট থেকে দশ ঘন্টার মতন লাগবে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা হাইওয়ে ধরে ফেললাম, পাহাড়ি হাইওয়ে কিন্তু সঙ্কীর্ণ। 

আমার কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে জানালার বাইরের দৃশ্য দেখে চলেছে, দুজনে চুপ করে বসে। ও দেখছে পাহাড়ের সৌন্দর্য আর আমি দেখছি আমার সুন্দরীকে। আমি বাঁহাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বসে, ওর কোলে আমার ডান হাত, আমার হাতের আঙ্গুল নিয়ে আপনমনে খেলছে পরী। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা নারকান্ডা পাড় করে নিচে নামতে শুরু করি। নারকান্ডা পাড় করে বেশ কিছু দুর যাওয়ার পড়ে, দেখি রাস্তার বাঁ পাশ দিয়ে নদী বিয়ে চলেছে। 

পাহাড়ি স্রোতস্বিনী দেখে পরী উতফুল্লে চেঁচিয়ে ওঠে "উফ কি সুন্দর পাহাড়ি নদী, এর নাম কি?"

মাথা চুলকে মনে করে বললাম "সাটলেজ নদী।"

"সাটলেজ মানে, বাংলায় শতদ্রু?" 

আমি মাথা নারলাম "হ্যাঁ।"

পরী জেদ ধরল গাড়ি থামাতে হবে, ও নেমে নদীর পাড়ে যাবে। আমি যত বুঝাই যে নদীর জল খুব ঠাণ্ডা, হাত কেটে বেড়িয়ে যাবে, কিছুতেই শোনে না মেয়ে।





অজানার পানে ভ্রমন (#06)

আমার কথায় কোন কান দেয় না, বল্বিন্দার কে বলে গাড়ি দাঁড় করাতে। গাড়ি দাঁড়াতেই, দরজা খুলে এক লাফে নিচে নেমে যায় পরী। 

আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল "তুমি কি নামবে, না আমি নদী তে ঝাঁপ দেব?"

ঐ রকম সুন্দরীর কথা শুনে কোন পাষাণ হৃদয় একা একা বসে থাকতে পারে। অগত্যা আমাকে গাড়ি থেকে নামতে হল। আমাকে নামতে দেখে, রাস্তা ছেড়ে, নদীর পাড়ের দিকে নামতে শুরু করে দেয়। উঁচু নিচু, ছোটো বড় পাথরের ওপর দিয়ে বেশ সুন্দর ভঙ্গিমায় নেমে যায়। 

ঝুঁকে পড়ে কনকনে ঠাণ্ডা নদীর জল ছুঁয়ে চিৎকার করে ওঠে "বাপরে কি ঠাণ্ডা, আঙ্গুল গুলো কেটে গেল মনে হচ্ছে।"

আমি বললাম "সাবধানে যাও না হলে পড়ে যাবে।"

জলের ধারে গিয়ে আমার দিকে জল ছিটিয়ে বলে "তুমি না, কেমন যেন, একদম রোম্যান্টিক নও। তোমার সাথে একদম কথা বলতে নেই।"

আমি বললাম যে আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানে একটা নদী আছে। অবাক হয়ে যায় পরী জিজ্ঞেস করে সত্যি কি না, আমি বললাম হ্যাঁ। 

অভিমানিনী একটু রেগে গিয়ে বলে "তো আমাকে আগে বলো নি কেন?"

আমি বললাম "সবকিছু আগে থেকে বলে দিলে তো মজা তাই মাঠে মারা যাবে।"

"তাহলে আমি একদম রেগে নেই, চল এবারে।"

গাড়িতে চড়ার সময়ে আবার জিজ্ঞেস করে "কোথায় যাচ্ছি আমরা, জায়গার টার নাম কি?"

"ধুর বোকা মেয়ে। চিতকুল।"

গাড়ি চলতে শুরু করল, নদীর পাশে দিয়ে, একপাশে উঁচু পাহাড়, একপাশে বয়ে চলে শতদ্রু। গাড় নীল রঙের আকাশ যেন একটি বিশাল পর্দা কেউ ঝুলিয়ে রেখেছে মাথার ওপরে, সাদা তুলোর মতন মেঘের ছড়াছড়ি নিঈল আকাশের বুকে। পাহাড় গুলো সবুজ গাছে ঢাকা। কোন কোন পাহাড়ের ওপরে আপেলের বাগান দেখা যাচ্ছে, নদীর ওপরের পাহাড়ে ছোটো ছোটো গ্রাম যেন ছবিতে আঁকা। রামপুর পৌঁছে আমরা দুপুরের খাওয়া শেষ করি। খাওয়ার পরে আমার খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিল। 

সিগারেট বের করতেই আমার দিকে তাকিয়ে পরী ঝাঁজিয়ে উঠলো "তুমি নাকি সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিলে?"

আমি কাতর স্বরে বলি "দেখ শুধু একটা খাবো। এই ঠাণ্ডায় ঠিক থাকা যাচ্ছে না।"

আমি দেখলাম যে অভিমানিনী রাগ করে চুপচাপ গাড়িতে উঠে গেলেন, আমি তো প্রমাদ গুনলাম, না সিগারেট খাওয়াটা ঠিক হবে না। 

মানিনীর মান ভাঙ্গানর জন্য বললাম "দেখ, রাগ করোনা, আমি কিন্তু সিগারেট খাই নি।"

রামপুর ছাড়ার পড়ে পরী বলল যে ওর ঘুম পাচ্ছে, আমি সিটের ডান দিকে সরে গেলাম। আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল, সিটের ওপরে পাগুটিয়ে শুয়ে পড়ল, আমার বাঁ হাত নিজের বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরল। চোখ বন্ধ করা অপ্সরা, মুখের দিকে চেয়ে থাকি আমি। প্রথম বার আমি ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখছি, চুলের কিছু গুচ্ছ মুখের ওপরে চলে এসেছে। হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ভালো করে দেখি ওর মুখখানি, ঘুমন্ত অবস্থায় কত সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে। আমি একটু ঝুঁকে পরে ওর গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেই, আমার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে একটু নড়ে ওঠে। আমার হাত খানি জোর করে চেপে ধরে বুকের মাঝে, আমার উষ্ণতা টুকু শুষে নেয় কোমল বক্ষ। 

রাস্তা বেশ জনবহুল, অনেক ট্রাক বাসের আনাগোনা। কিছুদুর যেতে জিওরি নামে একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। 

গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে "কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?"

আমি বললাম "বেশীক্ষণ ঘুমোয়নি তুমি"

"আমরা থামলাম কেন?"

"তেল ভরার জন্য।"

"আর কত দেরি পৌঁছতে?"

আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বলবিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। 

পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আমরা কারছাম ব্রিজ পৌঁছই ততক্ষণে চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। কারছামে দেখলাম দুটি নদী একসাথে মিলেছে, একটির জল সবুজ একটির জল মাটির মতন ঘোলা।





অজানার পানে ভ্রমন (#07)

নদীর সবুজ জল দেখে পরী অবাক হয়ে গেল, আমাকে জিজ্ঞেস করল "আমি কোনদিন নদীর সবুজ জল হয় দেখিনি। এখানে গাড়ি থামাবে, আমি নামবো।" আমি দেখলাম যে ওর বিপরীত কিছু না বলাটাই ভালো, তাই আমি বল্বিন্দার কে বললাম গাড়ি থামাতে।

গাড়ি থেকে নেমে সবুজ নদীর দিকে দেখিয়ে বলল "কত সুন্দর দেখতে। এই নদীটা কি চিতকুলে আছে?"

আমি মাথা নেড়ে জানালাম যে এই নদীটা চিতকুলের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে। 

কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা ব্রিজ পেরিয়ে, সঙ্কীর্ণ পাথুরে রাস্তা ধরে এগিয়ে চলি। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে বাইরে, একদম হাড় কাঁপান বাতাস বিয়ে আসছে পাহাড়ের দিক থেকে। আমি ওকে জড়িয়ে ধরি যাতে গায়ের গরমে একটু ভালো লাগে দু’জনার। কিছুক্ষণ পরে বল্বিন্দার গাড়ির হেড লাইট জ্বালিয়ে দেয়, রাস্তায় কুয়াশা নেমে বিশেষ কিছু দেখা যাচ্ছে না। ভয় ভয় চোখে আমার দিকে তাকায় পরী, আমি ওকে আশস্ত করে বললাম চিন্তা করো না সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

আমার গালে হাত বুলিয়ে হেসে বলে "দুঃসাহসী ছেলে বটে তুমি। তুমি কি ভেবে আমাকে নিয়ে এইরকম একটা জনমানব শূন্য জায়গায় বেড়াতে নিয়ে এলে?"

আমি হেসে জবাব দিলাম "তুমি কাছে থাকতে আমি তো সারা পৃথিবীর সাথে লড়তে পারি।"

আমার গালে চুমু খেয়ে বলে "উম, আমার বীর ছোট্ট রাজকুমার।"

সাঙলা পের হতেই চারদিকে নেমে আসে ঘন অন্ধকার রাত। এবর খাবর রাস্তার ওপরে দিয়ে বল্বিন্দার বেশ ধির স্থির ভাবে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম কিছু অসুবিধা হচ্ছে কি না, আমাকে আশস্থ করে বলল যে ঠিক ভাবে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। 

পরীর চোখে মুখে উদ্বেগের ছায়া ফুটে উঠেছে। আমি ওকে বললাম যে টেনসান নিচ্ছে কেন। আমার কথা শুনে রেগে গেল পরী "তুমি একটা আস্ত পাগল, তোমার কোন বোধগম্য নেই। কেউ যদি আমাদের মেরে গভীর খাদে ফেলে দেয়, তাহলে কারুর কিছু করার থাকবে না। কেউ জানে না যে আমরা এখানে এসেছি। আমাদের এই রকম জায়গায় আসাই উচিৎ ছিলনা।"

রেগে মেগে মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাইরে দেখতে থাকে, বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

আমি ওকে ঠাণ্ডা করার জন্য বললাম "কিছু হবে না, চুপ করো" তারপরে মজা করে বললাম "বাইরে অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছ কি?"

রেগে মাথা নাড়িয়ে বলল "তোমার সাথে কথা বলে কি হবে।"

এত চেষ্টা করে মান ভাঙ্গান যাচ্ছে না অভিমানিনীর, আমি একটু রেগেই যাই তখন। আমি কি করে জানবো যে জায়গাটা এই রকম হবে, আমি প্রথম বার এখানে এসেছি।

সাঙলা থেকে আর এক ঘন্টা পরে আমরা চিতকুল পৌঁছলাম, ঘড়িতে তখন রাত সাতটা বাজে। আমি পরীকে বললাম গাড়িতে বসে থাকতে, আমি নেমে হোটেল খুঁজতে গেলাম। গাড়ি থেকে নামতেই, চারদিকের পাহাড়ের থেকে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া এসে আমাকে প্রায় জমিয়ে ফেলল। চারদিক অন্ধকার, বাড়ি ঘরের কোন চিন্হ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাস্তার শেষ প্রান্তে একটা হোটেল দেখলাম। হোটেলে ঢুকে ম্যানেজার আমাদের দেখে বলল যে আমরা শুধু মাত্র দুটি প্রাণী এই হোটেলে, এই সময়টা টুরিস্ট সিসেন নয়। সাঙলা ছাড়ার পর থেকে সেই যে পরী চুপ ছিল, হোটেলে ঢোকা পর্যন্ত একদম ঠোঁটে কুলুপ এঁটে ছিল। চোখ মুখের অবস্থা দেখে তো আমার আত্মা রাম খাঁচা ছাড়া।







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 




পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment