আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
নিষিদ্ধ ভালবাসা
Written By pinuram
Written By pinuram
অপ্রত্যাশিত রজনী (#01)
হোটেলের রুমটা বেশ বড়, দু’দিকে মেঝে পর্যন্ত নেমে আশা কাঁচের জানালা। জানালার ওপরে ভারী পর্দা টাঙ্গানো। হোটেল বয় আমাদের ব্যাগ রুমে রেখে যাবার পরে আমি রুমের দরজা বন্ধ করে দেই। পরী চুপচাপ দাঁড়িয়ে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে রুমটা কেমন, কোন কথা না বলে খালি মাথা নেড়ে উত্তর দিল ঠিক আছে। চেহারা হাবভাব দেখে বুঝতে পারলাম যে রাতে বিশাল একটা ঝড় বইবে।
পরী জ্যাকেটা খুলে ফেলেছে, চুপচাপ আমাদের ব্যাগ গুলো খুলে এক এক করে জামা কাপড় বার করে কাপবোর্ডে গুছিয়ে রাখছে। আমি একটা চেয়ার টেনে বসে দেখতে লাগলাম আমার প্রেয়সী কে। মেঘের মতন ঘন কালো চুল সারা পিঠের ওপরে ছড়ানো। পেছন থেকে পরীর দেহ অবায়াব যেন ঠিক আদি প্রাচিন বালির ঘড়ির মতন দেখতে লাগছে। কামিজের হাতা লম্বা। চওড়া কাঁধ দুপাশে বেঁকে নেমে এসেছে পাতলা কটিদেশ তারপরে ঢেউ খেলে বর্ধিত হয়েছে সুডৌল দুই পুরুষ্টু নিতম্বে। সালয়ারের নিচে মনে মনে দুই পেলব জঙ্ঘার ছবি এঁকে নিলাম। হাঁটুর নিচে সুন্দর মসৃণ পায়ের গুচ্ছের ছবি, এখন অসূর্যস্পর্শা নধর দেহখানি। হ্রদয়ের এক গভীর কোনে প্রবল আকাঙ্খা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, পেছন থেকে জড়িয়ে ধরি আমার প্রান প্রেয়সী কে, নিজ বাহুবেষ্টনী মাঝে আবদ্ধ করে চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেই ঐ দুটি গোলাপি গাল, মসৃণ গর্দান, সারা শরীর। থেকে থেকে চুড়ির আওয়াজে মনটা যেন মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। একমনে নিজের কাজ করে চলেছে পরী, আমি যে পেছনে বসে ওর দিকে তাকিয়ে ওর রূপ সুধা পান করছি সেদিকে হুঁশ নেই ওর।
মাঝে মাঝে গালের ওপরে নেচে ওঠে চুলের গুচ্ছ টিকে আঙ্গুল দিয়ে কানের পাশে সরিয়ে দেয়। আমি ওর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে উন্মাদ হয়ে যাবার যোগাড়। আমি উঠে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ওকে নিজের আলঙ্গনে আবদ্ধ করে দেই। ডান কাঁধের ওপর থেকে চুলের গুচ্ছ সরিয়ে দিয়ে কাঁধের ওপরে ছোট্ট করে একটি চুমু খাই। মসৃণ ত্বকের ওপরে আমার সিক্ত ঠোঁটের পরশ পেয়ে মৃদু কেঁপে ওঠে রমণী। ঘাড় ঘুড়িয়ে আমার দিকে শীতল চাহনি নিয়ে তাকায়। আমার এত উৎফুল্ল, উত্তেজনায় ঠাণ্ডা জল ঢেলে দিল ওর কঠিন কালো দুই চোখ।
আমার বাহুবন্ধনির মাঝে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শীতল কণ্ঠে বলে "বাথরুম যাবো আমি, ছাড়ো আমাকে।"
উত্তাল উমত্ত ঝঞ্ঝার পূর্বাভাস টের পাই আমি, আমার আলিঙ্গন পাশ হতে নিজেকে মুক্ত করে একটি ছোটো গোলাপি রঙের রাতের পোশাক আর ভারী উলের গাউন নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে। আমি বিছানার ওপরে বসে নিজের জামা কাপড় বদলে নেই। কিছুক্ষণ পরে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে আমাকে পরিস্কার হবার জন্য বাথরুমে ঢুকতে বলে।
আমি ওর শীতলতা দেখে না থাকতে পেরে জিজ্ঞেস করলাম "কি হয়েছে তোমার? এত চুপচাপ কেন? কথা বলবে না আমার সাথে?"
ভাবলেশ বিহীন কণ্ঠে বলে "তাড়াতাড়ি হাত পা ধুয়ে নাও। আমি কি ডিনারের অর্ডার করে দেব?"
"হ্যাঁ সেটা তো ঠিক আছে, কিন্তু তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না?"
আমাকে থেকে বাথরুমে ঢুকিয়ে দেয়। আমি হাতমুখ ধুয়ে বেড়িয়ে এসে দেখি পরী চুপচাপ একটা চেয়ার টেনে, একদিকের বিশাল একটা কাঁচের জানালার সামনে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। পায়ের ওপরে একটা পা দিয়ে, ডান হাতের ওপরে থুতনি রেখে ভাবহীন চোখে তাকিয়ে আছে বাইরে। বাইরে ঘুটঘুটে কালো আঁধার ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। পুরো ঘরের পরিবেশ বদলে গেছে এক অধভুত শীতল বাতাস বয়ে চলেছে, ঠাণ্ডার জন্য নয়, পরীর জন্য। সকাল বেলার দুরন্ত মেয়েটা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে হোটেলবয় এসে আমাদের ডিনার দিয়ে গেল। খাবার সময়ে কোন কথা না বলে চুপ করে খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম। রাত যত গভীর হয়ে চলেছে, তত যেন পরীর রাগ বেড়ে চলেছে। আমি দেখলাম যে এই বরফ যদি না গলানো যায় তাহলে ভবিষ্যতে সাংঘাতিক রূপ ধারন করবে।
খাওয়ার পরে কোন কথা না বলে, গায়ের উলেন গাউন খুলে, চুপ করে বিছানায় উঠে লেপে ঢেকে মাথার দিকে দুটি বালসে ভর দিয়ে বসে। কামরার নিষ্প্রভ আলোয় ঠিক যেন এক অপ্সরা আমার বিছানার ওপরে নেমে এসেছে মনে হয়। সোনার কানের দুল দুটি চিকচিক করছে নরম আলোয়। আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি বিছানার পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম "অসুবিধা টাকি তোমার, কিছু বলবে আমাকে?"
ফোঁস করে ওঠে সুন্দরী "বাইরের দিকে দেখেছ? এক চিলতে আলো নেই কোথাও, কোথায় নিয়ে এসেছ আমাকে? দোকানপাট নেই, বাড়ি ঘরদোর নেই, রেস্টুরেন্ট নেই। লোকজন থাকে এইখানে? একটা টুরিস্ট পর্যন্ত নেই।"
অপ্রত্যাশিত রজনী (#02)
"দেখ পরী তুমি চেয়েছিলে তোমাকে নিয়ে আমি কোথাও যাই। তোমার মতন আমিও প্রথম বার এসেছি এখানে। আমি কি করে জানবো?"
"শপিং করার মতন একটা দোকান নেই এখানে।"
"দোকান দিয়ে তুমি কি করবে?"
আমার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে "কেন দোকান দিয়ে মানুষে কি করে? শপিং করব আবার কি। সবাই বেড়াতে গেলে শপিং করে।"
"তুমি এখানে শপিং করতে এসেছ"
আমি একটু রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করি।
"আচ্ছা শপিং নয়, ঠিক আছে। কিন্তু কি আছে এখানে দেখার, বাইরে কিছু নেই, আর তুমি তো বলেছিলে যে এখানে নাকি একটা নদী আছে, কোথায় সেটা?"
"বাইরে অন্ধকার তাই তুমি দেখতে পাওনি।"
"ও, বাইরে অন্ধকার। এখানে আসার রাস্তা দেখেছ? রাস্তা, না রাস্তা নেই বললে চলে, শুধু পাথর ছাড়া কিছু ছিল? কি সাংঘাতিক রাস্তা।"
কথা শুনে আমি আর মাথা ঠিক রাখতে পারিনা। কপোত কপোতীর মাঝে তাদের প্রথম প্রেমালাপ থুড়ি দন্দযুদ্ধ আরম্ভ হল। চেঁচিয়ে উঠি আমি "আমি কি করে জানবো যে রাস্তা এত খারাপ হবে।"
"না তুমি সব জানতে আগে থেকে।"
"মাথা খারাপ করা কথা বোলোনা পরী।"
"কল্যাণী আর রানীর সাথেই ঘুরতে যাওয়া উচিৎ ছিল আমার। তোমার সাথে আসাই উচিৎ ছিলনা।"
"হ্যাঁ যেতে ওদের সাথে। আমার সাথে এসেছ কেন?"
চোখের কোল চিকচিক করে ওর "তুমি ভালো ভাবে জানো আমি কেন এসেছি তোমার সাথে, আর তুমি কিনা..."
"আমি কি, পরী... ?"
"বাইরে দেখ, কেমন একটা জায়গায় এনেছ যেখানে কোন লোকজন নেই। পুরো হোটেলে আমাদের ছাড়া একটা লোক নেই। আমাদের যদি কিছু হয় তখন কি হবে? কেউ জানেনা আমরা এখানে এসেছি..."
আমি চেঁচিয়ে উঠি "হাঁ ভগবান, কিছু হবে না আমাদের।"
কান্না জড়ানো গলায় বলে "আমি শুধু চেয়েছিলাম আমাদের প্রথম বেড়ান যেন আমার চিরদিন মনে থাকে, আর..."
কেঁদে ফেলে পরী, আঙ্গুল দিয়ে চোখের কোল মোছে। আমি রেগে ছিলাম তাই ওর চোখের জলের কোন মুল্য না দিয়ে চেঁচিয়ে বলি "কুমিরের কান্না কাদবে না আমার সামনে।"
আমার দিকে তর্জনী উচিয়ে চিৎকার করে বলে "একদম আমার সাথে ওইরকম ভাবে কথা বলবে না তুমি। কাল সকালে আমাকে সিমলা দিয়ে আসবে। আমি জানি কল্যানিরা কোন হোটেলে উঠেছে।"
"ঠিক আছে কাল সকালে দিয়ে আসবো তোমাকে।"
আর কথা না বাড়িয়ে, ডান পাশ ফিরে জানালার দিকে মুখ করে শুয়ে পরে পরী। গলা পর্যন্ত টেনে নেয় লেপ। আমি দেখলাম যে থেকে থেকে পিঠের ওপরে মৃদু কম্পন নাড়িয়ে দিচ্ছে পরীকে। আমি বেশ বুঝতে পারলাম যে কাঁদতে শুরু করেছে। আমি নিজের কর্মের জন্য কপাল চাপড়াই।
আমি যথাসম্ভব গলা নিচু করে ওকে শান্ত করার জন্য বললাম "কেঁদো না, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।"
কান্না ভেজা গলায় বলে "আমি জানি কেন যাচ্ছ, হ্যাঁ যাও, মর তুমি। তোমার সিগারেটের প্যাকেট গুলো আমি দেখেছি ব্যাগের ভেতরে। খাও আর মর।"
"আরে বাবা তুমি একটু চুপ করবে"
"আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও। আমি খুব ক্লান্ত আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমোতে দাও।"
আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছিল তখন, রাগের চোটে আমি সিগারেট আর লাইটার নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলাম। সিগারেট জ্বালিয়ে বুক ভরে ধোঁয়া নিয়ে ভাবলাম, এখুনি রুমের মধ্যে হল টাকি? আমি কি জানতাম আগে থেকে যে চিতকুল জায়গাটা এতটাই জনমানবশূন্য হতে পারে, আমিও এই জায়গায় প্রথম বার এসেছি, পরীও এই জায়গায় প্রথম বার এসেছে। আমার মাথা ঠাণ্ডা রাখা উচিৎ ছিল, পরীর ওপরে ঐরকম চিৎকার চেঁচামেচি করা উচিৎ ছিলনা আমার। অভিমন্যু তুমি হৃদয়হীন প্রাণী, তুমি তোমার শুচিস্মিতার ওপরে ঐ রকম ভাবে চিৎকার কেন করেছ। আমাদের এই ভ্রমন যাত্রা, বিষাদে পরিপূর্ণ। সবা প্রেমিক যুগল চায় তাদের প্রথম নিশাযাপন স্মরণীয় হোক, অভিমন্যু এই দুঃখ তোমাকে চির জীবন বহন করতে হবে। তুমি এই তপ্ত অবস্থার জন্য দায়ি, চাইলে তুমি হয়ত পারতে এই অবস্থার সামাল দিতে, কিন্তু সেটা না করে তুমি বাক বিতন্ডে লেগে গেলে। এই সব সহস্র কটু চিন্তায় মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে আমার। বাইরে প্রবল ঝড়ের আওউয়াজ শুনতে পাই, হয়তো বরফের ঝড় চলছে বাইরে। ঘরের ভেতরে ঝড়, ঘরের বাইরে ঝড়।
রুমে ঢুকে দেখলাম যে পরী ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ট্রাক সুটের জ্যাকেটটা খুলে, ওর পাশে লেপের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। মাথা নিচু করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। ঘুমন্ত অবস্থায় পরীকে খুব সুন্দরী দেখায়, মুখের ওপরে চুলের কয়েক গুচ্ছে নেমে এসে যেন চাঁদ কে ঢেকে দিয়েছে মেঘ। আমি আঙ্গুল দিয়ে চুলের গুচ্ছটি সরিয়ে সুন্দর মুখখানি ভালো ভাবে দেখার চেষ্টা করি। চোখের কোণ থেকে একটি সরু শুকনো জলের রেখা, নাকের ডগা পর্যন্ত বয়ে গেছে। দেখে খুব কষ্ট হয় মনে। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঐ জলে রেখা মুছে দিলাম আমি। ওর সুন্দর মুখ খানির ওপরে আমার উষ্ণ নিঃশ্বাস ঢেউ খেলে বেড়ায়, আমার নিঃশ্বাসের পরশ পেয়ে নড়ে ওঠে পরী। আলতো করে আমি ওর বাঁকা ভুরু ওপরে তর্জনী বুলাই। ঝুঁকে পড়ে আমি ওর গোলাপি গালে ঠোঁট দিয়ে আলতো করে চুমু খাই। গালে আমার ঠোঁটের পরশ পেয়ে কেঁপে ওঠে আবার।
সংকলকের মন্তব্যঃ
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment