আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
জীবন যে রকম - একটি উপন্যাস
Written By Lekhak (লেখক)
Written By Lekhak (লেখক)
।।উনিশ।।
শুভেন্দু বললো, "বিদিশার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যাওয়াটা বিরাট একটা ভাগ্যের ব্যাপার, জানিস তো দেব। একে তো আমার ফোন নম্বর বিদিশার কাছে নেই। কলকাতায় এতদিন বাদে ও ফিরে এসেছে, পুরোনো এক কলেজ বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎই গড়িয়াহাট মোড়ে তার দেখা হয়ে যাবে, না বিদিশা ভেবেছিলো, না আমি ভেবেছিলাম।"
আমি শুভেন্দুকে বললাম, "বিদিশা, তোকে দেখতে পেয়েছিল? না তুই বিদিশাকে?"
শুভেন্দু বললো, "বিদিশা যখন তোর সাথে প্রেম করতো, তখনো আমি তোর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলাম। আর এখনো তোর সাথে আমার সেই সম্পর্কটাই রয়েছে।। আমাকে বিদিশা দেখে স্বভাবতই খুব খুশি। জানে শুভেন্দুর সাথে দেখা হওয়া মানে দেবের খবর শুভেন্দুই তাকে দিতে পারবে। একটা দোকানে দাঁড়িয়ে আমি তখন কিছু জিনিষ কিনছি, হঠাৎই শুনলাম, পেছন থেকে কে যেন আমাকে ডাকছে, গলাটা খুব চেনা চেনা। মনে হল এ ডাক বিদিশার না হয়ে অন্য কারুর হতেই পারে না।"
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছিলাম শুভেন্দুর কথা। ওকে বললাম, "তারপর?"
শুভেন্দু বললো, "তারপর আর কি? শুরুটা করলো এইভাবে। প্রথমেই আমাকে বললো, কতদিন বাদে তোকে দেখলাম রে শুভেন্দু। আমাকে দেখে চিন্তে পারছিস?"
"আমি তো ওকে দেখে একেবারেই অবাক। ভাবতেই পারিনি বিদিশাকে এতদিন বাদে দেখবো। আমার কাছে এগিয়ে এলো বিদিশা। আমাকে বললো, এই 'দেব' কেমন আছে জানিস? আগে যে বাড়ীটায় ওরা থাকতো, দেব কি ওখানেই এখন থাকে? না অন্য কোথাও?"
শুভেন্দু বললো, "বিদিশার মুখে তোর নামটা শুনে আমি কেমন প্রফুল্ল মতন হয়ে গেলাম। আহা, সেই যে কত মিষ্টি মিষ্টি করে কলেজে তোকে নাম ধরে ডাকতো, একেবারে সেইরকম।"
আমি হাসতে হাসতে বললাম, "তারপর?"
শুভেন্দু বললো, "বিদিশাকে দেখে আমি সত্যি অবাক। এত বছর পরে ওর সঙ্গে দেখা, কিন্তু এখনও ওর সৌন্দর্যে একটুকুও ভাটা পড়েনি, বিদিশার যে রূপ, সেই রূপ তার অক্ষত। কি সুন্দর লাগছিল ওকে দেখতে। আমি তো কোন ছার, যে কেউ প্রেমে পড়বে ওর ওই মিষ্টি হাসিটা দেখলে। মনে হল, আমি কি ঠিক শুনছি? এতদিন বাদে ও তোর কথা জিজ্ঞাসা করছে, তোর খোঁজ খবর নিচ্ছে, বিদিশার কি লাভ এসব জেনে? তারপরেই মনে হল, 'দেব' হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যাকে ভুলেও কেউ ভুলতে পারবে না সহজে। বিদিশা প্রথমেই আমাকে বলো, এই দেবের ফোন নম্বরটা আমাকে দিবি? ভীষন দরকার।"
শুভেন্দু বললো, "আমি তো আরোই অবাক ও তোর ফোন নম্বর চাইছে দেখে। বিদিশাকে বললাম, কি হবে তোর দেবের ফোন নম্বর নিয়ে? তুই তো কবেই ওকে ছেড়ে চলে গেছিস। ব্যাচারাকে ফোন করবি, আর ও আবার তোর কথা ভেবে পাগল হবে।"
মনে হল, শুভেন্দুকে বলি, "চাইলো যখন, তুই বিদিশাকে আমার ফোন নম্বরটা দিতে পারতিস। বিরহের জ্বালায় এতদিন মরছিলাম। ফোনটা পেলে মনে একটা শান্তি আসতো।"
শুভেন্দু নিজে থেকেই বললো, "আমি জানি, বিদিশাকে তোর ফোন নম্বর না দিলে তুই আবার আমার ওপরে রেগে হম্বিতম্বি করবি। এতদিন ধরে তোকে দেখে আসছি, তোর দূঃখ কষ্টটা বোঝার মতন ক্ষমতা তো আমার হয়েছে, আমি এই ভুলটা কিছুতেই করবো না। ওকে তোর ফোন নম্বরটা দিলাম। আশ্চর্য, বিদিশা তখুনি তোকে ফোন করতে চাইছিল।"
আমি শুভেন্দুকে বললাম, "তাই? কই এই কথাটাতো তো তুই আমাকে আগে বলিসনি। তাহলে তো আমি আগে থেকেই সব জেনে যেতে পারতাম।"
শুভেন্দু বললো, "এটার জন্য অবশ্য তুই আমাকে গালাগাল দিতেই পারিস। কারণ আমিই বিদিশাকে তখন বারণ করেছিলাম।"
মনে হল, শুভেন্দুকে কাঁচা গিলে খাই, ওকে বললাম, "কেন? তুই ওকে বারণ করলি কেন?"
শুভেন্দু বললো, "সব কথা বিদিশার মুখ থেকে শোনার পর, আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো, তোর জন্য এটা তাহলে একটা সারপ্রাইজ থাক। বিদিশা তোর কাছে আসবে, কিন্তু একটা চমক হয়ে আসবে।* তুই যেন আগে থেকে কিছু জানিস না। আমি ওকে সেইভাবেই রাজী করালাম।"
বিদিশাকে বললাম, তোর কথা দেবকে আমি আগে থেকে কিছু জানাবো না। তুইও এখন ফোন করিস না। তুই যে ফিরে এসেছিস, এটা দেব তোকে নিজের চোখেই দেখুক।"
আমাকে অবাক করে দিয়ে শুভেন্দু বললো, "আচ্ছা দেব, বিদিশা যদি তোর বাড়ী নিজে থেকে চলে যেতো, তোর কেমন লাগতো? হঠাৎই কলিংবেলের শব্দ শুনে তুই ই দরজাটা খুললি। দেখলি বিদিশা দাঁড়িয়ে আছে তোর সামনে। সেই হারিয়ে যাওয়া মুখ, মনকাড়া চাউনি, সেই আকূলতা। দেবকে পাওয়ার জন্য যার এত ছটফটানি। এতদিন বাদে একেবারে তোর বাড়ীর দোরগোড়ায়। তোর মনে হত না এ আমি কি দেখছি সামনে?"
শুভেন্দু এমন ভাবে কথাটা বললো, আমার মনে হল বিদিশা যেন সত্যি আসতে চেয়েছিল আমার বাড়ীতে। শুভেন্দুকে বললাম, "তুই ওকে না করলি কেন?"
শুভেন্দু বললো, "আমি না করিনি। না করবোই বা কেন? যে মেয়েটার মধ্যে একটা অনুশোচনা রয়েছে। একদিন তোকে ভুল বুঝে সে ছেড়ে চলে গিয়েছিল, আবার সে ফিরে এসেছে। তোর সাথে দেখা করতে চাইছে। মনের মধ্যে একটু লজ্জ্বাও রয়েছে। কিন্তু তবু যেন তোর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে তারমনে কোনো দ্বিধাবোধ নেই। এতবছর পরে বিদিশার মধ্যে যেন সেই কলেজে পড়ুয়া বিদিশাকেই আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম। আমাকে নির্দ্ধিদায় ও বললো, আমি দেবের বাড়ীতে যেতে চাই, শুভেন্দু। ওর সাথে দেখা করতে চাই। তুই কি আমার মনে একটু সাহস জোগাবি শুভেন্দু? দেব আমাকে দেখলে রেগে যাবে না?"
শুভেন্দু বললো, "আমি বিদিশাকে বললাম, এক কাজ কর, তুই বরং আমার বাড়ীতেই চলে আয়। আমি ওখানেই দেবকে ডেকে নিচ্ছি। একসাথে সবাই মিলে আড্ডা দেবো। আবার মজা হবে, সেই কলেজের মতন। রনি আর মাধুরীকেও আসতে বলছি।"
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুভেন্দুর কথাগুলো শুনছিলাম। মাধুরী এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। আমাকে বললো, "সত্যি দেবদা। এখনো তুমি বিদিশাকে কত ভালোবাসো। তোমার মত কজনে হয়?"
রনি বললো, "দেব হচ্ছে, সত্যিকারের প্রেমিক। ও ব্যর্থ প্রেমিক নয়। বিদিশার কপাল ভালো, দেব ব্যাচারা বিয়ে করেনি। নইলে....."
শুভেন্দু বললো, "দেব হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যতক্ষণ নিজে থেকে কেউ ভুলটা না বুঝতে পারছে, ও জোর করে কারুর ভুল ধরাতে যাবে না। এই বিদিশাকেই দেখ, যখন নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।"
আমি বললাম, "ছাড় ছাড়। আমার সন্মন্ধে আর অত ভালো কথা বলতে হবে না। বিদিশা কখন আসছে, তাই বল।"
শুভেন্দু হেসে বললো, "দেখেছিস তো, বিদিশার কথা শুনে এবার তোর কেমন ছটফটানিটা শুরু হয়ে গেছে। আসছে আসছে অত ব্যাকূল হোস না। একটু পরেই এসে পড়বে। বিদিশাকে আমি ফোন করেছিলাম একটু আগে, ও ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিয়ে দিয়েছে। হয়তো এসে পড়বে আর দশ মিনিটের মধ্যেই।"
মাধুরী বললো, "এক কাজ করলে হয় না? বিদিশা আসার আগে, আমরা বরং দেবদাকে অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখি। ও এসে দেবদাকে খুঁজে পাবে না। আর দেবদার মত বিদিশাও একটু ছটফট করবে। মজা হবে একটু।"
শুভেন্দু বললো, "আইডিয়াটা মন্দ নয়। তবে দেব কি তাতে রাজী হবে? দেখ ওর মুখের দিকে চেয়ে দেখ। এখনই কেমন ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেল। ব্যাচারা বিদিশাকে না দেখতে পেলে, নিজেই যে কষ্ট পাবে।"
ওরা সবাই হাসতে লাগল। শুভেন্দুকে রনি বললো, "আজ হচ্ছে ঐতিহাসিক দিন। দুটি প্রেমিক প্রেমিকা এতদিন পরে আবার কাছাকাছি হচ্ছে দুজনে। এই ঐতিহাসিক দিনে আমরাও আজ উপস্থিত। দেব আর বিদিশার পুনর্মিলন কি জয় হোক।"
মাধুরী বললো, "হ্যাঁ দেবদা। এবারে কিন্তু বড়সড় একটা পার্টী দিতে হবে তোমাকে। পার্কস্ট্রীট বা বড় কোনো রেস্টুরেন্টে দেওয়া চাই। অনেক নোট খসবে তোমার। তৈরী থেকো।"
মনে হল, দম নিঃশেষ হওয়া ঘড়িকে যেমন দম দিয়ে আবার শক্তির যোগান দেওয়া হয়। ঠিক তেমনি বিদিশার আগমনের খবরটাও আমার ভেতরের শক্তিটাকে যেন অনেক বর্দ্ধিত করে দিয়েছে। ঠিক যেন জীবনের মরুভূমিতে বৃষ্টিপাতের মতন। সেই উদ্দামতা, সেই আবেগ আবার ফিরে পাচ্ছি। বিদিশা এখনো এসে পৌঁছোয়নি, কিন্তু ওর উপস্থিতি, ওর আবির্ভাব, শরীরে শরীরের স্পর্ষ আমি যেন আগে থেকেই টের পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, বিদিশা যেন আমার ঠিক পাশেই বসে রয়েছে, আর আমাকে বলছে, "কি গো, তাকাবে না আমার দিকে? রাগ করেছো বুঝি। দেখো আমি তো তোমার কাছেই আবার ফিরে এসেছি!"
জীবন খাতার প্রতি পাতায় বিদিশার নামটা লিখে রাখবো বলে আমি ঠিক করে রেখেছিলাম। আমার জীবন থেকে বিদিশা কোথায় হারিয়ে গেল। পাতাগুলোও সব শূন্য থেকে গেল। আজ আবার বিদিশাকে আমি ফিরে পেলাম। মনে হল শূন্য পাতাগুলোকে ভরাট করার জন্য আমি যেন আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠলাম।
।।বিশ।।
শুভেন্দু ঘড়ি দেখছে, রনিও ঘড়ি দেখছে। নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ঠিক সাতটা বেজে পঁচিশ মিনিট। বিদিশা আসার কথা ছিল, সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ। অথচ এখনো অবধি এসে পৌঁছোলো না। মাধুরী তখন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ছটফটানিটা ধরে ফেলেছে। শুভেন্দুকে বললো, "এই ছোড়দা, বিদিশাকে একবার ফোন করে দেখ না, এখনো এসে পৌঁছোলো না কেন? দেবদা চিন্তা করছে।"
শুভেন্দু বকা লাগালো মাধুরীকে। ওকে বললো, "ব্যাস্ত কেন হচ্ছিস? ও ঠিক এসে পড়বে। বললাম তো, ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। হয়তো রাস্তা জ্যাম আছে। এসে পড়বে এক্ষুনি।"
আমি একটু উতলা মতন হয়ে শুভেন্দুর কাছে একটা সিগারেট চাইলাম। শুভেন্দু বললো, "একি রে দেব? তোর টেনশন হচ্ছে না কি? সিগারেট খাওয়া তো তুই কবেই ছেড়ে দিয়েছিস। আবার যে সিগারেট খেতে চাইছিস?"
আমি শুভেন্দুর কথা শুনলাম না। জোর করে ওর প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে নিয়ে ঠোঁটে গুঁজলাম। একটা সিগারেট ধরাতে গিয়ে আমার এমন অবস্থা হল, যা জীবনে কোনোদিন হয় নি। দেশলাইয়ের সাত আটটা কাঠি নষ্ট হল। শুভেন্দু রনিকে বললো, "দেখ দেবের অবস্থা দেখ, এখনো সিগারেট ধরাতে পারছে না। ব্যাচারা।"
রনি বললো, "বুঝতে পারছি, বিদিশার আসছে শুনে দেবের ভেতরটা এখন কিরকম তোলপাড় চলছে। যতক্ষণ না ও এসে পৌঁছোবে দেবের এরকমই চলবে।"
জানি এতদিন বাদে বিদিশাকে দেখতে পাবো বলে মনের ভেতরে একটা অস্থিরতা কাজ করছে। কলেজের সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো বারে বারে মনে পড়ছে আর আমি যেন আরো ব্যাকুল হয়ে উঠছি বিদিশার জন্য। জীবনে প্রেম আমি একবারই করেছি, শুধু এই বিদিশার সঙ্গেই। কলেজে পড়া, বিদিশার সঙ্গে একসাথে ঘোরাঘুরি করা। যখন কোনো তরুনের মন, স্বপ্নময় প্রেমের অজস্র রূপরেখার ভিড়ের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চায়, প্রেমভাবনায় নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে চায়, আমি যেন সেভাবেই দিনগুলো অতিবাহিত করেছিলাম ঠিক স্বপ্নের মতই। বিদিশার চিন্তাকে আমি তাই মন থেকে দূর করতে পারিনা। মনে হয় ও নেই। তবুও ও যেন আমার কত কাছেই রয়েছে।
সিগারেটটা ধরিয়ে বেশ কয়েকবার জোরে জোরে টান দিলাম। ধোঁয়াটা গলায় আটকে গিয়ে খুক খুক করে কাশি হলো আমার। শুভেন্দু বললো, "এই তুই কি শুরু করলি বলতো? না আমাকে দেখছি, এবার বিদিশাকে একটা ফোন করতেই হবে।"
সেলফোনটা হাতে নিয়ে শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে কল করলো বিদিশাকে। দু'বার রিং হওয়ার পর, বিদিশাই ধরলো। শুভেন্দু, বিদিশাকে বললো, "কিরে বিদিশা? এখনো এসে পৌঁছোলি না? কোথায় তুই?"
বিদিশা বললো, "আমি এসে গেছি। আর হয়তো বড়জোড় দশ মিনিট।"
শুভেন্দু বললো, "তোর জন্য এখানে একজন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, ভীষন উতলা হয়ে পড়েছে। তাড়াতাড়ি দেখা দে মা। আর কখন আসবি?"
বিদিশা বুঝতে পেরেছে, শুভেন্দু আমার কথাই বলছে। ওর কথা শুনে আমিও হাসবো না কাঁদবো, তাই ভাবছিলাম। শুভেন্দু বললো, "জানিস বিদিশা, দেব আমার ওপরে রেগে কত খাপ্পা হয়ে রয়েছে। আমার দোষ কি? না আমি তোকে দেবকে ফোন করতে বারণ করেছিলাম। তুই শীগগীর আয়। নইলে দেব আর আমাকে আস্ত রাখবে না বলছে।"
বিদিশা কি বলতে চাইছিল, শুভেন্দু বললো, "নে তোর এক্সলাভারের সাথে একটু কথা বল। দেবও তোর সাথে কথা বলে একটু শান্তি পাক।"
নিজের সেলফোনটা হঠাৎই আমার হাতে ধরিয়ে দিল শুভেন্দু। আমার বাঁ হাতে তখন জ্বলন্ত সিগারেট। আচমকা ফোনটা ওভাবে বাড়িয়ে দেওয়াতে সিগারেটটা আমার হাত ফস্কে পড়ে গেল হঠাৎই। কোথায় পড়েছে বুঝতে পারছি না। মাধুরী চেঁচিয়ে উঠে বললো, "এই দেবদা ওঠো, ওঠো। তোমার জামার ওপরে পড়েছে সিগারেট। এখুনি জামাটা পুড়ে যাবে।"
সোফা থেকে তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম। এবার জামা থেকে সিগারেটটা মাটিতে গিয়ে পড়লো। রনি বললো, "বিদিশা আসুক। আজ তোর হবে। যা শুরু করেছিস তুই।"
ফোনটা কানের পাশে নিয়ে বিদিশাকে কি বলবো, তাই ভাবছি। ভাবলাম, শুরুটা এরকম ভাবে করি, বিদিশাকে বলি, "তুমি কেমন আছো বিদিশা? বিদিশাও তখন আমাকে বলবে, আগে বলো তুমি কেমন আছো?"
আমি জবাবে কিছু একটা বলবো। এই ভেবে ফোনটা কিছুক্ষণ কানের পাশেই ধরে রাখলাম। শুভেন্দু বললো, "হ্যা রে। আবার ভাবুক হয়ে গেলি তুই? বল কিছু, ও তো ফোনটা ধরেই আছে তোর জন্য।"
অনেকদিন বাদে বিদিশাকে ফিরে পেয়েছি, ভাবলাম, বিদিশাকে বলি, "বিদিশা তুমি ফিরে এসেছো। কত ভালো লাগছে। সেই পুরোনো আনন্দের দিনগুলো, ভালোবাসার মূহূর্তগুলো। বিদিশা কলেজের দিনগুলোর কথা তোমার মনে আছে? তুমি যে আমাকে ভুলে যেতে পারবে না আমি জানতাম, বিদিশা ও বিদিশা। শুনতে পারছো আমার কথা? বিদিশা....."
এবার শুভেন্দুর মুখ থেকে একটা বড় ধ্যাতানি খেলাম। চেঁচিয়ে উঠে বললো, "কিছু বলবি তো? তখন থেকে ফোনটা কানে ধরে শুধু বসে আছিস। যা বলার বিদিশাকে সব বলে ফেল। মনের মধ্যে কিছু রাখিস না।"
অতজোড়ে ধ্যাতানি খাবার পর আমার যেন চেতনা ফিরলো। মুখ দিয়ে শুধু বেরিয়ে এলো, "হ্যালো।"
বিদিশা বললো, "কখন এসেছো?"
-- "এই কিছুক্ষণ আগে।"
- "অনেক কষ্ট পেয়েছো না? এইকটা দিন? বিদিশাকে শুধু খারাপ ভেবেছো।"
-- "না ভাবিনি। কেন ভাববো? তুমি তো খারাপ নও।"
- "শুনে খুশি হয়েছো? আমি ফিরে এসেছি বলে।"
-- "তা তো হয়েছি কিছুটা।"
- "কিছুটা কেন? অনেকটা নয়?"
-- "হ্যাঁ অনেকটাই। আমি ভীষন খুশি হয়েছি।"
- "আমার কথা কেউ বলেছে তোমাকে?"
-- "হ্যাঁ। শুভেন্দু বলেছে, শুক্লাও বলেছে।"
হঠাৎই ফোনের ও প্রান্তে বিদিশার গলাটা কেমন আস্তে হয়ে গেল। মনে হল বলতে গিয়ে ওর গলাটা অনুশোচনায় কেমন কেঁপে গেলো। আমাকে বললো, "দেব, তুমি কি আমাকে সেই আগের মতই ভালোবাসো? যে ভালোবাসার দাম দিতে না পেরে আমি তোমাকে ছেড়ে একদিন চলে গিয়েছিলাম।"
বিদিশাকে বললাম, "আমি তোমাকে ভালোবাসি, এই কথাটা জীবনে কোনদিন তোমাকে ছাড়া আর কাউকে কখনো বলিনি। হয়তো প্রতিদানে যেটা পেতে চেয়েছিলাম, সেটা পাইনি ওটা আমার ভাগ্যের দোষে। কিন্তু তোমাকেও আমি দোষ দিতে চাইনি। ভালোবাসাটাকে বুকের মধ্যেই আঁকড়ে ধরে রেখেছিলাম এতদিন। ভেবেছিলাম, হয়তো যদি তুমি কোনদিন, আমার কাছেই আবার ফিরে আসো। বিদিশার প্রতি দেবের ভালোবাসা এখনো যে তাই মরেনি।"
মনে হল,অনুতপ্ত হয়ে বিদিশা যেন ফোনেই কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। গলাটা ভারী ভারী করে বললো, "দেব? তুমি এখনো সেই আগের মতন? তোমাকে যেমনটি আমি দেখে গিয়েছিলাম?"
বিদিশাকে বললাম, "এই বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন? তাড়াতাড়ি এসো। আমি তো তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি।"
।।একুশ।।
বিদিশার সাথে কথা বলার পরে ফোনটা ছেড়ে দিলাম। ঠিক তার পাঁচ মিনিট পরেই শুভেন্দুদের গলির মুখটায় একটা কালো রঙের ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো। মাধুরী ট্যাক্সির আওয়াজ শুনেই দৌড় লাগালো। আমাদেরকে বললো, "বিদিশা এসেছে মনে হয়। আমি ওকে এখানে নিয়ে আসছি।"
ট্যাক্সি থেকে বিদিশা নামছে। আমি ঘরের জানালা দিয়ে বিদিশাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। একটা ময়ুরকন্ঠী রঙের ছাপা শাড়ী পড়েছে বিদিশা। হাতে ওর সাদা রঙের একটা ভ্যানিটি ব্যাগ। গলির ল্যাম্পপোষ্টের উজ্জ্বল আলোতে বিদিশার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। মাধুরী ঘর থেকে বেরিয়ে ওর সামনে যেতেই বিদিশা ওকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনের দুজনকে জড়িয়ে ধরেই কি যেন একটু কথা হল। দুজনে তারপর হেঁটে এগিয়ে আসতে লাগলো শুভেন্দুদের বাড়ীর দিকে।
ঘরের মধ্যে আমি শুভেন্দু আর রনি বসে। শুভেন্দু বললো, "শোন দেব, তোকে আর বিদিশাকে কিন্তু আমরা আধঘন্টার জন্য আলাদা ছেড়ে দেবো। তারপরে কিন্তু পুরো সময়টাই আমাদের। আজকে অনেক গল্প হবে, আনন্দ হবে। আর তুই কিন্তু ভালো ভালো কয়েকটা গান গাইবি। নইলে তোকে কিন্তু ছাড়বো না আজকে।"
আমি কিছু বলতে চাইছিলাম। রনি বললো, "ভ্যানতারা আর করিস না তো। বিদিশা কি তোর পালিয়ে যাচ্ছে? এই তো এলো। এবারে একেবারে তোর পার্মানেন্ট হয়ে গেলো।"
বারান্দা পেরিয়ে বিদিশা মাধুরীর সঙ্গে ঘরে ঢুকছে। আমি মুখটা একটু নিচু করে নিলাম। মনে হল, এই বুঝি বিদিশা ঘরে ঢুকলো। আর তার আগে থেকেই আমিও কেমন আড়ষ্ট মতন হয়ে গেলাম।
মাধুরী বিদিশাকে ঘরে ঢুকিয়ে বললো, "দেখছো তো? ওখানে ওই সোফার ওপরে কে বসে আছে। চেনো লোকটাকে? চিনে বলো দেখি, ওই ভদ্রলোকটি কে?"
আমি মুখ তুলে বিদিশার মুখের দিকে তাকাতেই, বিদিশাও আমার মুখের দিকে তাকালো। প্রায় বেশ কিছু বছর পরে বিদিশাকে আবার খুব কাছ থেকে দেখছি, আমার মনে হল, সর্ব্বাঙ্গ সুন্দরী বিদিশা, চোখ দিয়ে যার সৌন্দর্য ও শরীরটাকে আকন্ঠে পান করা যায়, তাকে আবার এতো কাছ থেকে দেখছি আমি। আমার যেন সব স্বপ্নের মতন মনে হচ্ছে। ঠিক যেন চোখের সামনে এক রূপমাধুরী। অথচ প্রথমদিন ওর এই রূপ দেখে আমি কিন্তু ওর প্রেমে পড়িনি। বিদিশাই আমাকে প্রথম চিঠি দিলো। তারপরেই আমাদের প্রেম শুরু হল। মনের সঙ্গে মন মেলাতে লাগলো, দু একটা দিন। তারপরে যখন ওর রূপের প্রশংসা শুরু করলাম, বিদিশা বললো, "তাই বুঝি? আমি এতো সুন্দর? প্রথম দিন তো দেখে বলোনি আমাকে।"
প্রজাপতির মতো কোমল ওর সুন্দর ঠোঁটদুটোকে দেখছিলাম। কলেজে পড়ার সময় ছেলেমানুষি উচ্ছ্বাসে কতবার যে আমার গলা জড়িয়ে আমার গালে চুমু খেয়েছিল ওই ঠোঁট দিয়ে, তার ইয়ত্তা নেই। মনে হলো সৌন্দর্য ও মনের দিক থেকে বিদিশা যেন এখনো সেই তরুনীই আছে। তরুনী নারীর মতোই ভালোবাসার জন্য উন্মুখ, হয়তো আমাকেই আবার সুখী করার জন্য তার হৃদয় মনে এক উজাড় আকাঙ্খা। এই আকাঙ্খা অতীতের সেই আকাঙ্খার থেকেও তীব্র আরো উত্তপ্ত।
শুভেন্দু রনিকে বললো, "এই রনি, এদের দুজনের চোখদুটো যে দুজনের দিকে আটকে গেছে রে। আমরা ঘরে বসে আছি, অথচ এদের দুজনের কারুর খেয়ালই নেই। ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারছিস?"
রনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না রে দেব। বিদিশা আসছে বলে, তোকে আমরা বাড়ীতে ডাকলাম। তাই বলে তুই?....."
মাধুরী বিদিশাকে বললো, "বসো না বসো। দাঁড়িয়ে আর কতক্ষণ থাকবে? পারো যদি ওই লোকটার পাশে গিয়ে বসো।"
বলে আমার দিকে আঙুল তুলে মাধুরী বিদিশাকে ইশারা করলো।
যেটা হয়তো হবারই কথা ছিল না। শুভেন্দু আর রনি এবার সেটাই করে দেখালো দুজনে। ওরা দুজন এগিয়ে গেলো বিদিশার দিকে। বিদিশার হাত দুটো দুপাশ থেকে দুজনে ধরলো, তারপর দুজনে ওকে টেনে নিয়ে এসে বসিয়ে দিলো আমার পাশে।
শুভেন্দু বললো, "নে, এবার তোরা দুজনে পাশাপাশি। এখন আর দুজনে দুজনের দিকে তাকাবি না। এখন আমাদের দিকেই তাকিয়ে থাকবি, আর আমাদের সাথেই কথা বলবি।"
মাধুরী রনিকে বললো, "তুমি আর ছোড়দা, তোমরা দুজনে এত হিংসুটে কেন গো? দেখোতো বিদিশা কি ভাবছে। আর দেবদার মুখটাও কেমন অন্যরকম হয়ে গেছে।"
শুভেন্দু বললো, "এই ছুড়ী, বাজে বকিস না। দেব কে আমি ভালো করেই চিনি। ওকে মানা করলেও ও ঠিক চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিদিশার দিকে তাকাবে। আমাকে সামনে থেকে সব লক্ষ্য রাখতে হবে।"
রসিকতার মানে যে বোঝে, সে জানে। বুঝতেই পারছিলাম, এই শুরু হল এবার। শুভেন্দু আর রনি যা করবে, আমাকে আর বিদিশাকে, দুজনকেই এখন মেনে নিতে হবে।
শুভেন্দু বললো, "আচ্ছা দেব, বিদিশা তো ফিরে এলো। বড়সড় করে একটা পার্টী কবে দিচ্ছিস বল? আর বিয়ের ডেটটা যদি এখনি ঠিক করে ফেলিস। তাহলে কিন্তু বৌভাতের রিসেপশনটা ভালো করে দিতে হবে। মেনু কার্ডের আইটেম কি কি করবি, এখন থেকে ঠিক করে ফেল। ক্যাটারিং এর অর্ডারটা রনিকে দিয়ে দিচ্ছি। ও বিজলী গ্রীলের সাথে কথা বলে নেবে।"
মাধুরী বিদিশাকে বললো, "এই বিদিশা চা খাবে তো? সবার জন্য তাহলে চা করে আনছি।"
শুভেন্দু মাধুরীকে বললো, "এই দেবকেও ভালো করে একবার জিজ্ঞেসে করে নে। বাবু তো একজনের জন্য চা ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেকদিন আগে, যার জন্য ছেড়েছিলেন, তিনি এখন তার পাশেই বসে আছেন। দেব এখন আবার তার সামনে চা খাবেন কিনা?"
বলেই ও আমার দিকে তাকালো।
বিদিশা একটু লজ্জা করছিল। শুভেন্দু বললো, "লজ্জ্বা কোরো না, লজ্জ্বা কোরো না। আমরা সবাই তোমাদের বন্ধু। তোমাদের পুরোনো ইতিহাসটা আমরা তো সবাই জানি। তাই বলছি।"
মাধুরী চুপ করে দাঁড়িয়েছিল হাঁ করে। বিদিশা বললো, "তুমি যাও তো মাধুরী। চা করে নিয়ে এসো। তোমার এই দাদার কথা শুনো না। তোমার দাদাটা ভীষন দুষ্টু।"
রনি হাসছিল দাঁত বার করে। শুভেন্দু কে বললো, "দেখলি? বিদিশা যেই হ্যাঁ বলে দিলো, অমনি দেবও না করলো না। কি গভীর প্রেম, একেবারে লায়লা মজনুর মতন।"
আমি রনিকে বললাম, "চা তো আমি খাই। তবে আগে যেরকম ঘনঘন খেতাম, সেটা এখন খাই না। সকালে একবার খাই। আর এই বিকেল বা সন্ধেবেলাটা একবার।"
শুভেন্দু বললো, "আগে ঘনঘন যখন খেতিস, তখন সেটাকে কমিয়ে দিলি কেন? কেউ তোকে বারণ করেছিলো। সেটা বল না?"
বলেই ও বিদিশার দিকে তাকালো।
আমি বললাম, "বয়স হলে, সবই কমাতে হয় আসতে আসতে। শরীরটার দিকেও তো খেয়াল রাখতে হবে।"
শুভেন্দু বললো, "কত বয়স হয়েছে তোর? এমন ভাবে বলছিস, যেন তুই বুড়ো হয়ে গেছিস। এই তো কলেজ পাশ করলাম কয়েক বছর আগে। এখনো দিনগুলো সব মনে আছে। সেই কফি হাউস, শিয়ালদহর কাফেটরিয়া, বসন্ত কেবিন, কলেজ স্কোয়ারের পাশে শরবতের দোকানটা, কি যেন নাম?"
রনি বললো, "প্যারামাউন্ট। প্যারামাউন্ট। ওখানে দেব, বিদিশাকে নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে যেতো মনে নেই?"
শুভেন্দু বললো, "হ্যাঁ কি না, বিদিশা শরবত খেতে খুব ভালোবাসে। তারপরে যখন আমরা সবাই মিলে একদিন ওদের পিছু নিলাম, দেবের তারপরের দিন থেকে কলেজ স্কোয়ারে যাওয়াই বন্ধ করে দিলো। ব্যাচারা খুব কষ্ট পেয়েছিল বিদিশার জন্য।"
শুভেন্দু আর রনি দুজনেই হো হো করে হাসতে লাগলো। বুঝলাম, দুটোতে মিলে যা শুরু করেছে, পুরোনো কাসুন্দী সব ঘেঁটে বার করছে। এবার না মিনুর কথাটাও আলোচনার মধ্যে এসে না যায়।
বলতে বলতেই মাধুরী চা নিয়ে ঢুকলো। একটা বড় প্লেটে করে সবার জন্য চা নিয়ে এসেছে। বিদিশা বললো, "সে কী রে? এত তাড়াতাড়ি চা হয়ে গেল?"
রনি বললো, "ও খুব ফাস্ট। সব কিছুই খুব তাড়াতাড়ি করে। রান্নাটাও তাড়াতাড়ি সারে। সেই জন্য আমারো খুব সুবিধে হয়।"
- "থাক আর অত প্রশংসা করতে হবে না। এবার চা' টা সবাই মিলে হাত বাড়িয়ে ধরো তো দেখি।"
বলেই মাধুরী সবার দিকে চা বাড়িয়ে দিতে লাগলো। বিদিশা হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিলো। কিন্তু কাপটা প্রথমে আমাকেই দিলো। শুভেন্দু উল্টো দিক থেকে সব লক্ষ্য করছিলো। আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। তারপরেই বললো, "দেব কিন্তু আজ গান শোনাবে বলেছে, তোরা সবাই মিলে ওকে আর একবার বল। আর বিদিশা, তুমিও একটু বলো। নইলে যে বাবু আবার....."
চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি। বিদিশা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। আমাকে বললো, "কি, গাইবে না?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ। গাইবো।"
শুভেন্দুদের বাড়ীতে আবার হারমোনিয়াম, তবলা কিছুই নেই। মাধুরী ছোটবেলায় গীটার শিখতো। আমি গীটারটাও বাজাতে পারতাম বলে, মাঝে মাঝে ওর গীটারের সাথে সুর ভাজতাম। মাধুরী বিয়ে করে এ বাড়ী ছেড়ে চলে গেলো, সেই সাথে গীটারও ওর সাথে চলে গেল। আমি অবাক হলাম, যখন দেখলাম, পাশের ঘর থেকে রনি একটা স্কেল চেঞ্জিং হারমোনিয়াম নিয়ে এলো। আমাকে বললো, "সব ব্যবস্থা করেছি আজকে। তোর কোনো চিন্তা নেই।"
পাশের কোনো বাড়ী থেকে হয়তো হারমোনিয়ামটাকে নিয়ে এসেছে। মাধুরী বললো, "এ কি এ কি দাঁড়াও। এতদিন পরে বিদিশা এলো, দেবদার সাথে একটু কথা বলে নিক। তারপরে তো গান বাজনা সব হবে।"
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
লেখক(Lekhak)-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereলেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment