CH Ad (Clicksor)

Sunday, May 25, 2014

জীবন যে রকম - একটি উপন্যাস_Written By Lekhak (লেখক) [৬ষ্ঠ খন্ড (চ্যাপ্টার ১৬ - চ্যাপ্টার ১৮)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




জীবন যে রকম - একটি উপন্যাস
Written By Lekhak (লেখক)








।।ষোল।।

মাধুরী চা নিয়ে এসে ঢুকেছে ঘরে, ঠিক তখুনি রনিও এসে হাজির। দেখলাম, ওর দুহাতে দু-দুটো প্যাকেট। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "এসে গেছিস বস? বোস তাহলে, আমি একটু ভেতর থেকে আসছি।"

রনি মাধুরীকে সামনে পেয়ে কি মনে করে মাধুরীর হাতেই প্যাকেট দুটো দিয়ে দিলো। বললো, "তুমি এই প্যাকেট দুটো ভেতরে রেখে আসো তো। আমি আর যাবো না ভেতরে।"

মাধুরী বললো, "কি এগুলো?"

রনি বললো, "আছে কিছু। তবে এটা আমাকে নয়। তোমার ছোড়দাকে জিজ্ঞেস কোরো।"

মাধুরী একটু মুখ ভেংচি কাটলো। রনিকে বললো, "আহা। আমার কর্তাটিও যেন কম যান না। খালি ছোড়দাকে দোষ দিলে হবে? কমপিটিশন করতে আপনিও তো মাষ্টার।"

মাধুরী ভেতরে চলে গেল। রনি আমার সামনের সোফাটায় বসলো। আমাকে হেসে বললো, "বউটা আমার খুব ভালো। জানিস তো দেব। নইলে আমার মত ছাগলটাকে ভালোবেসে ফেললো। মাধুরীর অনেক গুন আছে। ঠিক কিনা বল?"

আমি রনিকে বললাম, "তুই এখনো মাল খাওয়া চালিয়ে যাচ্ছিস?"

রনি বললো, "শোন, তোর কথা ভেবে আমি একটা শায়েরী লিখেছি।" বলেই শায়েরীটা শোনাতে লাগলো, 

"পি হ্যায় শরাব, হর গলি কি দুকান সে,
দোস্তি সি হো গয়ী হর শরাব কে জাম সে।
গুজরে হ্যায় হাম কুছ অ্যায়সী মুকাম সে,
কি আঁখে ভর আতী হ্যায় মহব্বত কে নাম সে।"

রনির চোখের দিকে তাকালাম, হেসে বললাম, "তোর কি শালা আমার মত এত দূঃখ নাকি। যে দূঃখে তুই মদ খাবি?"

রনি বললো, "আমি তো দূঃখে মদ খাই না। আনন্দ করেই খাই। তবে তোর জন্য কি আমাদের দূঃখ হয় না। এই তো শুভেন্দু। তোকে এত জ্ঞান মারে, উপদেশ দেয়, শালা তোর দূঃখে একদিন কেঁদেই ফেললো।"

আমি বললাম, "সেকী রে..... তাই নাকি?"

রনি বললো, "হ্যাঁ সেকী কান্না। তুই যদি একবার দেখতিস।"

আমি বললাম, "তাহলে মনে হয় একটু বেশী নেশা হয়ে গেছিলো।"

রনি বললো, "তা ঠিক। তবে ও তোকে খুব ভালোবাসে, জানিস তো দেব? এখনো বলে, বন্ধুদের মধ্যে তোর পরে দেবই আমার খুব কাছের ছিলো। সেই যে কলেজের পর ঘটনা ঘটে গেল। তারপর ও নিজেকে কেমন গুটিয়ে নিল। শালা হারামী মিনু। শয়তান, মাগীর বাচ্চা। ঢ্যামনা মাগী। বিদিশাকে পুরো চটিয়ে দিলো।"

রনি এমন গালাগাল দিতে শুরু করেছে। মাধুরী ভেতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। ওকে বললো, "কি হচ্ছেটা কি? কাকে গালাগাল দিচ্ছো এভাবে?"

রনি বললো, "জানো না? ওই শয়তান মিনু ঢেমনিটাকে। ওই তো দেব আর বিদিশার প্রেমটাকে বরবাদ করে ছাড়লো। ইস কি সুন্দর ছিলো সেই সময়টা। আমরা সবাই মিলে ঘুরতাম, ফিরতাম। তা না আপদটা এসে জুটে বসলো। আর দেবের জীবনটাকে নষ্ট করে দিলো।"

মাধুরী সবই জানে। বললো, "ছাড়ো না ওসব পুরোনো কথা। এখন দেবদার কি করা যায় সেটা আগে বলো। আমি কি মেয়ে দেখবো নাকি একটা দেবদার জন্য?"

রনি জোর করে পাশে বসালো মাধুরীকে। ওর গাল টিপে দিয়ে বললো, "তাই? তুমিও দেখবে? কিন্তু আজ যে আসছে, তাকে দেখলে, দেবের তো কাউকে আর পছন্দ হবে না।"

মাধুরী কিছুই জানে না। রনি কে বললো, "কে আসছে গো?"

রনি বললো, "ওটা এখন বলা যাবে না। ক্রমশ প্রকাশ্য।"

মাধুরী বললো, "ঢং রাখো দেখি। কি হবে বললে?"

রনি বললো, "শুভেন্দু আমাকে মানা করেছে। বললে আস্তো রাখবে না। দেবকে তো বলা যাবে না। তোমাকেও নয়।"

মাধুরী বললো, "আহা ন্যাকা। কি হবে বললে? আমার ছোড়দাটাও যেমন, আর তুমিও তেমন।"

কানটা রনির মুখের দিকে বাড়িয়ে মাধুরী বললো, "ঠিক আছে আমার কানে কানে বলো। দেবদা শুনতে পাবে না।"

রনি বললো, "না তোমার পেট খুব পাতলা। তুমি ঠিক বলে দেবে দেব কে । আর সব মাটি হয়ে যাবে আজকে।"

মাধুরী রেগে মেগে বললো, "ঠিক আছে যাও। বলতে হবে না। কে না কে খেদী পেঁচী আসবে। তার জন্য সব নখরা হচ্ছে।"

আমি ওদের দুজনের রকমটা দেখছিলাম। রনিকে বললাম, "আমি সব জানি। কে আসবে তাও জানি। শুধু মজাটা দেখছি। শেষ পর্যন্ত কি হয়।"

বলতে বলতে শুভেন্দুও ঠিক তখন এসে ঢুকলো। ঘরে ঢুকে বললো, "দেখলি তো। ঠিক টাইম মত এসেছি। আজ আর দেরী করিনি।"

মাধুরীকে বললো, "এই ছুড়ী, এই প্যাকেটটা ভেতরে রেখে দিয়ে আয়।"

দেখলাম শুভেন্দুর হাতেও একটা প্যাকেট। রনির মত ও কিছু কিনে নিয়ে এসেছে। মাধুরী বললো, "এটা কি আছে রে ছোড়দা?"

শুভেন্দু বললো, "ওর মধ্যে একটা গিফ্ট আছে। একজনকে দেবো। সে আসছে।"

মাধুরী অবাক হয়ে তাকালো শুভেন্দুর দিকে। ওকে বললো, "কে আসছে? কাকে গিফ্ট দিবি?"

শুভেন্দু বললো, "আমাদের সবার তরফ থেকে এই গিফ্ট। আর কে আসছে? এখুনি তাকে দেখতে পাবি। একটু অপেক্ষা কর।"

মাধুরী যথারীতি ওই প্যাকেটটা নিয়েও ভেতরে চলে গেল। আমি বুঝলাম, বিদিশার জন্য আজ অনেক কিছু অপেক্ষা করছে এখানে। কলেজে দিনগুলো তো আর ভোলার নয়। আমার বন্ধুরা সব, আমার মতন। বিদিশাকে কেউ ওরা ভোলেনি। সামান্য একটা ভুলের খেসারতে বিদিশা সেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। বিদিশার সেদিনের সেই আচরণে সবাই একটু দূঃখ পেয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আজ এতদিন পরে সবাই যেন একটু নড়ে চড়ে বসেছে। বিদিশা, আসবে বলে শুভেন্দু আর রনি বেশ এক্সসাইটেড হয়ে গেছে । ঠিক যেনো আমারই মতন।







।।সতেরো।।

আমার সামনে বসেই শুভেন্দু আমাকে বললো, "কি ভাবছিস?"

আমি বললাম, "কই কিছু না তো?"

কলেজে যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে শুভেন্দু হাসতো, ওর চেনা হাসিটাকে দেখে বুঝতে পারলাম, আমার মনের ভাবটা বোঝার চেষ্টা করছে। বিদিশাকে দেখলে, আমি হয়তো আত্মহারার মতন হয়ে উঠবো। মনের মধ্যে যে আলোড়নের সৃষ্টি হচ্ছে। সেটা সেভাবে প্রকাশ করতে পারছি না। আনন্দটা চেপে রেখেই বললাম, "তোর সারপ্রাইজের জন্যই তো আমি এসেছি। এবার বল, কি তোর সারপ্রাইজ?"

শুভেন্দু বললো, "আমি যে সারপ্রাইজটা তোকে দেবো, নিতে পারবি তো? পাগল হয়ে যাবি না?"

রনি শুভেন্দুর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল। আমি বললাম, "আগে তো শুনি, দেখি। তারপরে দেখা যাবে, পাগল হই কিনা?"

একটু রসিকতা করে শুভেন্দু রনিকে বললো, "দেব মনে হচ্ছে, আজ আর বাড়ী ফিরতে পারবে না। ওকে সারারাত এখানেই থাকতে হবে।"

আমাকে বললো, "তুই এক কাজ কর। মাসীমাকে ফোন করে বলে দে, আজ আমি শুভেন্দুদের বাড়ীতেই থেকে যাচ্ছি। সুতরাং তুমি শুধু শুধু আমাকে নিয়ে চিন্তা কোরো না।"

আমি বললাম, "আগে সারপ্রাইজটা তো বল। তারপরে মা'কে ফোন করছি।"

শুভেন্দু, রনি দুজনেই হাসতে লাগলো। আমাকে রনি বললো, "ভাবছিস কি সারপ্রাইজ তোর জন্য ওয়েট করছে। তাই না?"

আমি ওদের দুজনকেই হেসে বললাম, "সেটা তোরা দুজনেই জানিস। তবে আমিও জানি কিছুটা। তবে এখন সেটা বলবো না।"

শুভেন্দু বললো, "কি জানিস? কে বলেছে তোকে?"

পাছে ওরা কিছু জেনে যায় আমি বললাম, "কেউ বলেনি আমাকে। আমি এমনি বলছি।"

পকেটে মোবাইলটা ছিল, হঠাৎই দেখি শুক্লা ফোন করেছে আমাকে। খেয়াল হল, শুক্লাকে বলেছিলাম, ফোন করে ওকে জানাবো। ঘর থেকে যখন বেরিয়ে এসেছি, ওকে আর জানানো হয় নি। শুভেন্দুর আর রনির সামনেই শুক্লার ফোনটা রিসিভ করলাম।

ওরা দুজনে বলে উঠলো, "কে রে?"

আমি বললাম, "শুক্লা।"

শুক্লা বেশ রেগে রয়েছে আমার ওপরে। আমাকে বললো, "কি রে দেব? তুই ফোন করলি না তো? আসছিস তো তাহলে?"

শুভেন্দু আর রনি দুজনেই বেশ কৌতূহল চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে। আমি শুক্লাকে বললাম, "এই তো শুভেন্দুর বাড়ী এসেছি। তোকেও ফোন করতে ভুলে গেছি। শুক্লা, সরি।"

শুক্লা একটু আপসেট হল, আমাকে বললো, "এ মা, তুই শুভেন্দুর বাড়ীতে চলে গেছিস? তা আমাকে বলবি তো?"

বুঝতেই পারছিলাম, যেন খুব আশা করেছিল ব্যাচারা। ওকে বললাম, "শুভেন্দু আমার সামনেই আছে। কথা বলবি? রনিও আছে। নে কথা বল।"

শুভেন্দু এগিয়ে এসে, নিজে থেকেই আমার হাত থেকে ফোনটা নিলো। শুক্লাকে বললো, "হাই, সুইট হার্ট! কেমন আছো তুমি?"

আমি শুনতে পাচ্ছি না শুক্লার কথা। বোধহয় ওকে বলেছে, "আমার কথা তাহলে তোর মনে পড়লো?"

শুভেন্দু বললো, "কি করবো বলো? আমি তো তোমার গলায় তখনি মালা দিতে চেয়েছিলাম। দেব বারণ না করলে কি আর শুনতাম? সবই রেডী ছিল, মালা, ফুল, তোমার জন্য আমার উপহার। তুমি আমার দিকে ফিরেও তাকালে না। সৌগতর দিকেই ভীড়ে গেলে। ভগবান আমাকে সারাজীবন নিঃসঙ্গ করে রাখলো।"

শুক্লা ওকে কিছু বলতে চাইছিল, শুভেন্দু ওকে বাঁধা দিয়ে বললো, "আরে রাখ, রাখ, ও তো আমি এমনি রসিকতা করছি। জানিস তো ভালো একটা খবর আছে।"

শুক্লা বললো, "কি খবর?"

 - "দেব একটা বড়সড় পার্টী দিচ্ছে আমাদের জন্য। সেই কলেজে মাঝে মাঝে যেমন দিতো।"

শুক্লা বললো, "পার্টী? কি খুশিতে?"

শুভেন্দু বললো, "ওটা এখুনি বলা যাবে না। তাহলে দেবকে সারপ্রাইজটা আর দেওয়া যাবে না।"

শুক্লা কি একটা বলতে গেলো। শুভেন্দুর মুখটা শুকনো মতন হয়ে গেল। আমাকে বললো, "এ আবার কি হল রে? এ যে দেখি উল্টো কথা বলছে।"

সকালে শুক্লা এসেছিল, আমার বাড়ীতে। বিদিশার কথা ওই আমাকে বলেছে। শুক্লা চায় না আমি বিদিশার সাথে আবার দেখা করি। মুখ খানা ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেলে মানুষ যেমন কোনো তালগোল খুঁজে পায় না। শুভেন্দু সেভাবেই বললো, "আমি তো শুক্লার কিছু তাল খুঁজে পাচ্ছি না। তবে কী?....."

মনে হল, ভালোবাসা উজাড় করে একদিন নিজেকে নিঃশ্বেস করে দিয়েছিলাম এই বিদিশারই জন্য। দূর আকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ভাবতাম, আমার জীবনে বিদিশার উদয় হয়তো আর কোনদিন হবে না। ভালোবাসার কাঙালপনা করেও অজান্তেই আমি নিজের বলি দিয়েছি। নিজের খুশিকে বিসর্জন দিয়েছি। যখন এতদিন পরে আমি আবার বাঁচার একটা তাগিদ খুঁজে পাচ্ছি, তখন শুক্লা যেন ওই মিনুর মতই আমার স্বপ্নগুলোকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে চাইছে। কেন সেটা হবে কেন? আমার জীবনে অতীতেই হোক, আর বর্তমানেই হোক, বা আগামীদিনেও হোক। বিদিশা ছাড়া আমার জীবনে কোনদিন কোনো নারী ছিল না, নেই, আর কোনদিন থাকবেও না। আমার জীবনটাই যে এরকম।







।।আঠারো।।

শুক্লার সাথে কথা বলে ফোনটা ছেড়ে দেবার পর কেমন থম মেরে গেলো শুভেন্দু। মুখে ওর হাসিটা নেই। চোখের কোনে চিন্তার ভাঁজ। আমাকে শুধু মুখে বললো, "স্ট্রেঞ্জ, ভাড়ী অদ্ভূত তো....."

আমি বললাম, "এত গম্ভীর হয়ে গেলি। কি হয়েছে বলবি তো? শুক্লা কিছু বলেছে তোকে?"

শুভেন্দু বললো, "দেখ দেব, প্রেম আমি জীবনে করিনি। বিয়েও হয়তো করবো না। কিন্তু এই মিয়া যখন কারুর সাথে কথা বলে, বুঝে নিতে তার অসুবিধা হয় না। আমি তো আর অবুঝ বা ছেলেমানুষ নই?"

শুভেন্দুকে বললাম, "আরে কি হয়েছে বলবি তো?"

শুভেন্দু বললো, "যে কিনা কলেজে থাকতে থাকতে একটা প্রেম করলো। তাকে বিয়ে না করে, আবার অন্য একজনকে বিয়ে করলো। তার এখনো বাসনা জেগে রয়েছে তোর প্রতি? এটা শুনেও কি তোর বিশ্বাস হচ্ছে না?"

শুভেন্দুর কথাটা শুনে এবার আমিও থম মেরে গেলাম। সকালে শুক্লা আমার বাড়ী এসেছিল, আমাকে ওর বাড়ীতে যেতেও ইনভাইট করে গেছে। কিন্তু তা বলে প্রেম ভালোবাসার কথা এখানে আসবে কেন? শুক্লা তো আমাকে কোনদিন ভালোবাসেনি। আমাকে তো কোনদিন এভাবে কামনা করেনি। আমাকে জয় করার কোনো স্বপ্নই সে দেখায়নি। আমি বিদিশাকে ভালোবেসেছিলাম, তার দিকেই শুধু হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। হঠাৎ আমাকে বাড়ীতে ডাকার জন্য শুক্লার মনে এত উদ্বেগকূল। এটা কি প্রেম না দেহগত বাসনা?

নিজেকে একটু হালকা করার চেষ্টা করলাম। শুভেন্দুকে তাও বললাম, "না না শুক্লা এরকম মেয়েই নয়। হয়তো তোর বোঝার ভুল হয়েছে, কিংবা শোনার ভুল।"

রনি পাশে বসেছিল চুপ করে। এবার ফোড়ন কেটে বললো, "দেব শেষকালে শুক্লাও তোর প্রেমে পড়লো। ব্যাচারা বিদিশার কি হবে রে?"

বলেই জিভ কেটে ফেললো রনি। তারপরেই বললো, "এই যাঃ। ভুল হয়ে গেছে। হাঁটে হাঁড়ি ফাঁস হয়ে গেছে। যাঃ বলে দিলাম যে।"

শুভেন্দু রনিকে বললো, "তুই না বললে, আমি তো বলতামই। এবারে দেবকে তাহলে আসল কথাটা বলি।"

বুঝতেই পারছি, শুভেন্দু এবার সারপ্রাইজের উন্মোচন করছে আমার কাছে। আমাকে বললো, "শোন, দেব। শুক্লা তোকে কি বলেছে আমি জানি না। তবে গত পরশুই আমার বিদিশার সাথে দেখা হয়েছে। একটা চেনা মেয়েকে এতদিন বাদে দেখলাম, আমার তো বুঝে নিতে কখনো অসুবিধা হয় না। যে বিদিশাকে আমি দেখেছিলাম, সেই বিদিশা এখন আর নেই।"

আমি শুভেন্দুর মুখের দিকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে, ভাবছি বলবো কিনা। বিদিশা কেমন আছে? আমার কথা কিছু জিজ্ঞাসা করছিল? ও কি আগের মতই ভালোবাসে আমাকে? তাও চুপ করে রইলাম। দেখছিলাম, শুভেন্দু নিজে থেকে কিছু বলে কিনা?

শুভেন্দু আমাকে অবাক করে বললো, "শেষ খেলাটা জিততে একটু শক্তি দেখাতে পারবি না? বিদিশার জন্য এটুকু তো তোকে করতেই হবে।"

বিদিশাকে পাওয়ার জন্য যদি কোনো শক্তি দেখাতে হয়, নিশ্চই আমি দেখাবো। সেই অদম্য জেদটা নিয়েই তো আজ এখানে এসেছি। তবু বললাম, "কি শক্তি দেখাতে হবে বল? বিদিশাকে তো কারুর হাত থেকে ছিনিয়ে আনার প্রশ্ন নেই। ও তো....."

শুভেন্দু বললো, "বিদিশা এখন ডিভোর্সী। তাই তো?"

আমি বললাম, "হ্যাঁ, শুক্লা তো আমাকে সেকথাই বলেছে, ওর স্বামীর সঙ্গে নাকি ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। ও এখন কলকাতায় এসে রয়েছে। বাবা মায়ের কাছে থাকে। আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে, শুক্লা তাই তো বললো।"

শুভেন্দু বললো, "তোর জন্য আমার খুব কষ্ট লাগে, জানিস তো দেব। আমি বিদিশাকে বলেছি, কেন শুধু শুধু তুই দেবকে দোষী করলি? মিনুর সাথে দেবকি সেদিন কোনো নোংরামী করতেই গেছিল? নিজের কাছের লোকটাকে বিশ্বাস করতে পারলি না? মিনুর দোষটা তুই দেবের ঘাড়েই চাপালি? এতে কার ভালো হল? তোর না দেবের?"

শুভেন্দুকে জিজ্ঞাসা করলাম, "তোর সাথে বিদিশার কোথায় দেখা হয়েছিল?"

শুভেন্দু বললো, "গড়িয়াহাট মোড়ে।"

খেয়াল হল, শুক্লাও তাই বলেছে। বিদিশার সঙ্গে শুক্লারও গড়িয়াহাট মোড়েই দেখা হয়েছে।

শুভেন্দু বললো, "আমার ধমক খেয়ে ব্যাচারা রাস্তায় হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করেদিল। ওকে বললাম, একী এভাবে কাঁদিস না। লোকে আমাকে খারাপ ভাববে। নে, এবার চোখের জল মোছ। আর আমাকে বল, তোর জন্য আমাকে কি করতে হবে?"

চোখের পাতা এক করে আমি শুভেন্দুর কথাগুলো শুনছিলাম। ওকে বললাম, "তারপর?"

শুভেন্দু বললো, "বিদিশার মুখটা দেখেই বুঝলাম, ও খুব কষ্টে আছে। সেই হাসি নেই মুখে। ঝলমলে রূপটাও যেনো কত ম্লান হয়ে গেছে। কলেজে যখন তোদের দুজনকে পাশাপাশি দেখতাম, কি মধুর আর মনোরম লাগতো। সেই বিদিশার চোখের তলায় কালির দাগের মত ছিটছিটে দাগ। মনে হচ্ছিল, বিদিশাকে কেউ খুব কষ্টে রেখেছে। ওর মুখের দিকে তাকাতেই আমার কেমন যেন লাগছিল। মনে হচ্ছিল মেয়েটা, কোনো অন্যায় অবিচার নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে। কোনো নারীকে যদি কোনো পুরুষমানুষ পশুর মত আচরণ করে, তাহলে সেই নারীর নারীত্ম বলে তো কিছু আর থাকে না। ভালোবাসার জিনিষকে যত্ন করে রাখতে হয়। তুই তো বলেছিলিস আমাকে, প্রেম করতে করতে মনে নেই? তবে কেন?"

আমি বললাম, "বিদিশার এমন অবস্থা কে করেছে? ওর স্বামী?"

শুভেন্দু বললো, "করেনি শুধু। এখনো করছে। রীতিমতন টর্চার করছে ওর সঙ্গে। ওর স্বামীর কবল থেকে ওকে মুক্ত করে আনতে হবে।"

আমার মনে হল, ব্যাপারটা বড়ই অদ্ভূত। সামান্য একটা ঘটনায় বিদিশা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আর ওর স্বামী ওর ওপর এতো অত্যাচার করছে, সেই বিদিশা ওর স্বামীকে ছেড়ে আসতে পারছে না? কেন? কি অসুবিধা রয়েছে?

শুভেন্দুকে বললাম, "ডিভোর্স কি তাহলে হয় নি? তাহলে শুক্লা যে বললো....."

শুভেন্দু বললো, "শুক্লাকে বলতে গিয়েও হয়তো বলতে পারেনি বিদিশা। এই শুক্লাই তো, তোর হয়ে কত করে মিনতি করেছিল বিদিশার কাছে। তুই না জানলেও আমি তো সেটা জানি। নিজের দূঃখ কষ্টের কথা বলতে চায়নি শুক্লার কাছে। মেয়েরা আবার মেয়েদের কষ্টের কথা শুনলে অত দরদী হয় না। যতটা আমাদের মত পুরুষেরা দরদ দেখাতে পারি, মেয়েদের জন্য। তার ওপর শুক্লা যদি তোর ওপর পাগল হয়ে গিয়ে থাকে। তাহলে তো আরোই কোনো লাভ হবে না বললে। আমাকে বিদিশা প্রানখুলে যতটা বলতে পেরেছে, শুক্লাকে সেভাবে হয়তো বলতে পারেনি, মনের দূঃখটা।"

প্রায় অথৈ জলে পড়ার মতন আমি বলে উঠলাম, "তাহলে কি হবে?"

শুভেন্দু বললো, "কি হবে তাহলে বল? তুই কিছু কি করতে পারবি?"

ভেবে পাচ্ছিলাম না, এমন পরিস্থিতিতে আমার কি করণীয়? শুভেন্দুকে বললাম, "তাহলে ওর স্বামী এখন কোথায়?"

শুভেন্দু বললো, "স্বামী, স্বামীর জায়গাতেই আছে। বিদিশা তো কদিন বাপের বাড়ী থাকবে বলে এখানে এসেছে। কদিন কাটিয়েই আবার ওকে পশুটার কাছে ফেরত চলে যেতে হবে। যাবার আগে, বিদিশার জন্য আমাদের সবাইকেই কিছু না কিছু করতে হবে। এখন বল, তুই কি করবি?"

মনটা ভীষন বিষন্ন হয়ে গেলো। ভাবছি, সমস্যার সমাধান কি করে করা যায়? তাহলে কি? ওকে.....

হঠাৎ দেখলাম, রনি মুখ টিপে টিপে হাসছে। কঠিন একটা পরিস্থিতি। অথচ ওর ওই হাসি দেখে আমার ভীষন গা জ্বালা করছিল। 

শুভেন্দু রনিকে গালাগাল দিলো। বললো, "এটা হাসার সময়? সিরিয়াস একটা ব্যাপার এসে দাঁড়িয়েছে। আর তুই হাসছিস?"

রনি আরও হাসতে লাগলো।

আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। শুভেন্দু বললো, "বিদিশা কিন্তু একটু পরেই আসছে। তোকে কিন্তু তার আগেই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে।"

আমি মুখ কাচুমাচু করে বললাম, "কি সিদ্ধান্ত নেবো? আগে তো বিদিশাকে আসতে দে। ওর সাথে কথা বলি?"

শুভেন্দু বললো, "যা যা আমি তোকে বললাম, বিদিশা তোকে তাই ই বলবে। এখন তোর ওপর সব কিছু নির্ভর করছে।"

রনিকে দেখলাম, এরপরে হো হো করে হাসতে শুরু করেছে। মাধুরী সেইসময় ঘরে ঢুকেছে। বুঝতে পারছে না, ওর কর্তার হাসির কারণটা কি?

আমি দেখলাম, শুভেন্দুও এবার মুচকি মুচকি হাসছে। হাসিটা চেপে না রাখতে পেরে এবার একটু বেশী করেই হাসতে শুরু করলো শুভেন্দু। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুভেন্দু বললো, "আসলে আমরা একটু পরীক্ষা করে দেখছিলাম, তুই সত্যি বিদিশাকে আগের মতন ভালোবাসিস কিনা? তোকে একটু পট্টী মারছিলাম। ওসব টর্চার ফর্চার কিছু নয়। বিদিশা ওর স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে এখন এখানেই ওর বাবা মায়ের কাছে রয়েছে। ও দিব্যি আছে। শুধু ভালোবাসার জন্য তোকে শুধু দরকার।"

অনেকদিন বাদে মুখ দিয়ে একটা কাঁচা খিস্তী বেরিয়ে গেলো আমার। শুভেন্দুকে বললাম, "শালা ঢ্যামনা। এরকম ভাবে কেই ইয়ার্কী মারতে পারে? তুই কি রে শুভেন্দু!"

রনি হাসছে, শুভেন্দু হাসছে, মাধুরীও হাসছে। ওদের দেখে আমিও হাসতে লাগলাম। মনে হল, সেই কলেজের আনন্দের দিনগুলোই যেন আবার ফিরে এসেছে নতুন করে।






কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





লেখক(Lekhak)-এ লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

লেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment