CH Ad (Clicksor)

Sunday, May 25, 2014

জীবন যে রকম - একটি উপন্যাস_Written By Lekhak (লেখক) [১২শ খন্ড (চ্যাপ্টার ৩৪ - চ্যাপ্টার ৩৬)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




জীবন যে রকম - একটি উপন্যাস
Written By Lekhak (লেখক)








।।চৌত্রিশ-১।।

বাড়ীতে ফিরছি, ট্যাক্সি চড়ে। আবার সেই চিন্তাটা আমার মনকে ভীষন আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। এবার মনে হল, না, শুক্লা যতই বন্ধুত্বের কথা বলুক। ও যেন ইচ্ছে করেই আমার প্রতি ওর দূর্বলতা আর ভালবাসাটাকে আত্মগোপণ করে নিল। প্রেমের উদ্ভব ঘটাতে গিয়েও ঘটাতে পারল না। এর জন্য দায়ী শুধু আমিই। কারণ আমার মন তো সবসময়ই আচ্ছন্ন হয়ে আছে সেই একই বিদিশার চিন্তায়। জানি না বিদিশার জন্য আমাকে আরো কতদিন প্রতীক্ষা করতে হবে। আমি বোধহয় সেই পুরুষ, যাকে কোন নারী ইচ্ছে করলেও ভালবাসতে পারবে না। যেখানে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর এক নারী। সে শুধু বিদিশাই আর বিদিশাই। সে আর কেউ নয়।

ঠিক তখন বাজে রাত্রি দশটা। ভাবছি, শুভেন্দুকে একটা ফোন করি। কি হালচাল একটু জিজ্ঞাসা করি। আজকে যে শুক্লার বাড়ীতে গিয়েছিলাম, সেটাও ওকে বলি। শুক্লা আমাকে কি বলেছে, কি কথা হয়েছে, সেটাও ওকে খোলসা করি। তারপরেই ভাবলাম, শুক্লাকে ছোট করে আর কি লাভ? ব্যাচারা যদি কোনদিন জানতে পারে। কষ্ট পাবে। শুভেন্দুর মুখ পাতলা। শুক্লাকে বলেও দিতে পারে কথাটা। বিদিশার জন্য যদি স্যাক্রিফাইস করেও থাকে শুক্লা। সেটার আর কোন দাম থাকবে না কারুর কাছে।

তবুও শুভেন্দুকে ফোনটা করলাম। ইচ্ছে হল বিদিশার কথা তুলেই শুভেন্দুর সাথে একটু গল্প করি। কাল মাধুরী আর রনি এসেছিল। ওরা এখনো আছে না চলে গেছে, সেটাও শুভেন্দুর কাছ থেকে জানি। ফোন করলেই শুভেন্দু প্রথমেই আমাকে বিদিশার কথা জিজ্ঞাসা করবে, আজ সারাদিনে বিদিশার কোন খবর এসেছে কিনা সেটাও আমার কাছ থেকে জানতে চাইবে। বিদিশার জন্য আমি যাতে বেশী চিন্তিত হয়ে না পড়ি, সেটাও আমাকে বোঝাতে চাইবে। আমার মনকে শক্ত করতে বলবে শুভেন্দু। হাল যাতে না ছাড়ি, সে আশ্বাসও দেবে হয়তো আমাকে।

ওর মোবাইলের নম্বরটা এনগেজ হচ্ছিল। আমি জানি শুভেন্দুর কাছে দুটো মোবাইল। একটা নম্বরে না পেয়ে যথারীতি আর একটা নম্বরে ওকে ঠিক পেয়ে গেলাম। অন্য নম্বরটায় ঠিক দুটো রিং হবার পরই ফোনটা ধরল শুভেন্দু। আমাকে বলল, "দেব, তোকে আমি কল ব্যাক করছি। জাস্ট পাঁচ মিনিট।"

মনে হল, ও বোধহয় কারুর সাথে ফোনেই কথা বলছে এতক্ষণ ধরে। অন্য ফোনটা এনগেজ পাচ্ছিলাম, এই কারনেই। ফোনটা কেটে দিতে গিয়েও আমি কাটতে পারলাম না। পরিষ্কার শুনতে পেলাম, শুভেন্দু কাকে যেন বলছে, "তুই কি সত্যি কথাটা বলতে ভয় পাস? এরকম কেন করছিস তুই? দেব কি তোর অসুবিধার কথাটা বুঝবে না? ওকে সব খুলে বল। ওই তো সিদ্ধান্ত নেবে এখানে। দেবের উপরেই সব কিছু নির্ভর করছে।"

আমি দেখলাম শুভেন্দুও ভুলে লাইনটা কাটেনি। আর আমার ব্যাপারেই কারুর সাথে কথা বলছে। যা বলছে আমি পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি।

শুভেন্দু বলল, "কি হল, চুপ করে গেলি কেন তুই? কিছু তো বল? নাকি আমি তোর হয়ে বলব দেবের কাছে। তোর বলতে কেন অসুবিধা হচ্ছে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।"

কার সাথে কথা বলছে শুভেন্দু? কি বলবে? কার হয়ে বলবে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

কান পেতে শুনতে লাগলাম, অন্য ফোনে শুভেন্দুর কথা। কিন্তু যার সাথে কথা বলছে, তার কথা আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। শুধু শুভেন্দুর কথাটা ভেসে আসছে আর ও যেন ভীষন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে কাউকে।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর শুভেন্দু বলল, "দেখ দেবকে আমি সত্যি কথাটা বলতে পারতাম। কিন্তু বলিনি, তার কারণ আমি জানি, এই সমস্যাটা হয়তো কিছু দিনের, কিছু মাসের জন্য। চিরকালের জন্য তো তুই এই সমস্যা বয়ে বেড়াবি না? তাহলে অযথা কেন ভয় পাচ্ছিস? ডিভোর্স যখন হয় নি। তখন একদিন না একদিন ঠিক হয়ে যাবে। দেবও আশাকরি বুঝতে পারবে।"

আমি যেন চমকে উঠলাম। কার ডিভোর্সের কথা বলছে শুভেন্দু? কার সাথে কথা বলছে ও? তাহলে কি বিদিশা?

ঠিক সেই মূহূর্তে শুভেন্দু অন্য ফোনে বলে উঠল - "এক বছরটা কোনো সময়ই নয় বিদিশা। যে ছেলেটা তোর জন্য এতবছর অপেক্ষা করেছিল, মাত্র একবছর সে ওয়েট করতে পারবে না। তুই কি ভাবিস? দেবের মনটা অত পাথর নয়। তুই কিচ্ছু তাকে ঠকাচ্ছিস না। তোর অসুবিধার কথাটাই তাকে বলছিস।"

ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বুকের কাছে ধরে আমার একটা চাপা অস্বস্তি হতে লাগল। ভাবলাম, ভগবান এ আবার কি পরীক্ষায় ফেলল আমাকে? তবে কি বিদিশার এখনো ডিভোর্সটা হয় নি? কাল শুভেন্দু ইয়ার্কী নয়, সত্যি কথাটাই বলতে চেয়েছিল আমাকে। শেষেমেষে ওর ইয়ার্কীটাই এবার সত্যি হয়ে গেল আমার কাছে। ও সব জানতো। তাও গোপন করেছে আমাকে। কিছুই বুঝতে দেয়নি শুভেন্দু। কার কথা ভেবে শুভেন্দু সত্যিটা গোপন করল। বিদিশার কথা ভেবে? না এই দেবের কথা ভেবে। ঠিক বুঝতে পারছি না।







।।চৌত্রিশ-২।।

ফোনটা তখনও আমি ছাড়িনি। শুভেন্দু বিদিশাকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওদিক দিয়ে বিদিশাও যেন খুব অসহায়। শুভেন্দু মাঝে মাঝে ওকে বলছে, "চিন্তা করিস না বিদিশা। দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।"

এক মূহূর্ত স্তব্ধের মতন হয়ে ফোনটা এবারে আমি ছেড়ে দিলাম। বিদিশার জন্য কষ্টও হল। মনে হল, আমার কাছে ফিরে আসার জন্য ও এতটাই ব্যাকুল। অথচ শেকলটা পায়ে এখনও বাঁধা রয়েছে। কিছুতেই ওটা ছিঁড়ে ও বেরিয়ে আসতে পারছে না। বিদিশা কাঁদছে, চোখের জল ফেলছে। হয়তো আফশোসও করছে। প্রেমের সাথে জড়িয়ে থাকা, স্বপ্ন, আশা আর আকাঙ্খাগুলো এবার ধূলিসাত হতে চলেছে।

শুভেন্দু এবার আমাকে ঘুরিয়ে ফোন করল। ওকে বললাম, "কার সাথে তুই কথা বলছিলিস?"

শুভেন্দু বলল, "এই আমার এক ক্লায়েন্টের সাথে। ব্যাটা রাত দুপুরে আমাকে ফোন করেছে। বোঝাতে বোঝাতে আমার অবস্থা খারাপ। তাই তোকে বললাম, আমি পরে ফোন করছি।"

ওকে বললাম, "শুভেন্দু, বিদিশার জন্য আমার ভীষন চিন্তা হচ্ছে।"

শুভেন্দু বলল, "কিসের চিন্তা?"

 - "এই আমার কাছে কি যেন একটা লুকোলো বিদিশা। হয়তো কোন সমস্যায় আছে। কিন্তু আমার কাছে সত্যিটা বলতেও ওর কি অসুবিধা আছে? বিদিশা তো আমার কাছে বলতেই পারে। অসুবিধাটা। আমি তো....."

শুভেন্দু বলল, "কিসের জোরে সে তোকে বলবে? তোর জন্য সে কি করেছে?"

আমি বেশ অবাক হলাম। বললাম, "তুই একথা বলছিস? তুই না কালকে আমাকে....."

শুভেন্দু বলল, "হ্যাঁ বলেছিলাম। তোকে আমি সত্যি কথাটাই বলেছিলাম। কিন্তু কালকের সান্ধ্যআসরটা তাহলে মাটী হয়ে যেত। বিদিশার ফিরে আসার আনন্দটা তোর কাছে ম্লান হয়ে যেত। সত্যিটা মেনে নিয়েও, তুই নিজের মনকে অনেক প্রশ্ন করতিস। এই সমস্যা থেকে বিদিশা আদৌ বেরুবে কিনা, তোর মনে অনেক প্রশ্ন থেকে যেতো। আমি তোর মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলাম দেব। তোকে এত চিন্তায় ফেলতে আমিও চাইনি।"

আমি অবাক হলাম, বললাম, "তুই বিদিশার এই সমস্যাটার কথাটা জানতিস। জেনেও আমাকে কিছু বলিসনি?"

শুভেন্দু বলল, "হ্যাঁ জানতাম। বিদিশাই আমাকে সব বলেছে। আমিই ওকে মানা করেছিলাম। বলেছিলাম, দেবকে এখনই কিছু জানাবার দরকার নেই। তাহলে ওর মনটা ভেঙে যেতে পারে। বিদিশা আমাকে কথা দিয়েছিল, তাও সব শেষে নিজের মনকে ও ঠিক রাখতে পারল না। তোর কাছে ও ভেঙে পড়ল।"

আমি বললাম, "আর কি কেউ জানে এই ব্যাপারটা?"

শুভেন্দু বলল, "শুক্লা জানে কিনা জানি না। তবে রনি, মাধুরী এই ব্যাপারটা জানে না। আমি ওদেরকে বিদিশার ব্যাপারে কিছু বলিনি।"

শুভেন্দুকে বললাম, "বিদিশা তার মানে এক প্রকার ওর স্বামীকে ছেড়েই এখানে চলে এসেছে। ডিভোর্সটা এখনও হয় নি।"

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুভেন্দু বলল, "তুই ফোনে সব শুনেছিস না দেব? আমি বিদিশার সাথে কথা বলছিলাম।"

ওকে বললাম, "বিদিশা তো আমার কাছে আসল সত্যিটা কালকেই বলতে পারত। আমি ট্যাক্সিতে আসতে আসতেও ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বলল, দুদিন আমাকে অন্তত সময় দাও। আমি তোমাকে ভেবে বলব।"

শুভেন্দু বলল, "বিদিশা তোর কাছে এখন অপরাধী। ও নিজে তাই মনে করে। আর কারুর কথা বলতে পারছি না। কিন্তু বিদিশা বলেই নিজের স্বার্থটাকে বড় করে দেখতে পারছে না। তাছাড়া এ সমস্যা থেকে বেরুবার জন্য তোর তো কিছু করার নেই। ডিভোর্স যতদিন না হচ্ছে, তুই ওকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবি না। ইন্ডিয়ান ম্যারেজ অ্যাক্ট তো তাই বলে। অপরের বিবাহিত স্ত্রীকে কাছে রাখাটাও অবৈধ পর্যায়ে পড়ে। তুই ওর সাথে লিভ টুগেদার হয়তো করতে পারবি। কিন্তু সেটা কি তোর মা মেনে নেবে? বিদিশার মনের মধ্যে এখন সেই চিন্তাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। ও শুধু মনে জোর পাচ্ছে না তা নয়। এক প্রকার ভেঙেই পড়েছে বলা যায়। কাল থেকে ওর অবস্থা আরো খারাপ। কাল যদিও সব ভুলে টুলে তোর মুখটা দেখার জন্য ও এখানে এসেছিল। কিন্তু আজ ওর সাথে কথা বলে মনে হল, এই কষ্টভোগের পালা শুরু যখন হয়, তখন সেটাকে সহ্য করা খুব কষ্টকর। একেবারে বিধ্বস্তের মতন হতাশা গ্রস্থ হয়ে আমাকে কথাগুলো বলছিল। বলল, আমার আপেক্ষের আর শেষ নেই শুভেন্দু। তখন যে কেন দেবের কাছে আমি ফিরে গেলাম না। জীবনে এই পরিনামটাই বোধহয় আমার কপালে লেখা ছিল। আমার মনে হচ্ছে, সবকিছু এখন শেষ হয়ে গেছে। সামান্যটুকু সম্ভাবনাটাও এখন আমি দেখছি না। কেননা আমার স্বামী আমাকে বলেছে....."

আমি কৌতূহল হয়ে শুভেন্দুকে বললাম, "কি বলেছে বিদিশার স্বামী?"

শুভেন্দু বলল, "বিদিশার স্বামী বলেছে, কিছুতেই ডিভোর্সটা নাকি বিদিশাকে সে আর দেবে না। সারাজীবন এভাবেই স্বামী ছাড়া শুধু কাটাতে হবে বিদিশাকে। কোর্ট কাছারীতে আমরক্ত বেরিয়ে যাবে বিদিশার। উকিলের পেছনে টাকা খরচাটাই শুধু সার। এ জীবনে বিদিশারর দ্বিতীয় বিবাহ আর কোনদিন হবে না।"

ফোনটা ছাড়ার আগে শুভেন্দুকে বললাম, "আমি বিদিশার সাথে একবার কথা বলতে চাই। ওর সাথে দেখা করতে চাই।"

শুভেন্দু বলল, "আমি তো বিদিশাকে বলেছি। দেখ ও হয়তো ফোন করবে। কিংবা দেখাও হয়তো করবে।"

শেষকালে ফোনটা রাখার আগে শুভেন্দু শুধু বলল, "আমারও আফশোসের আর শেষ নেই রে দেব। মাঝে মধ্যে আমিও ভাবছি, তোর আর বিদিশার জীবনটা কি এভাবেই শুধু কেটে যাবে? জীবনে তোরা আর বিয়ে থা কোনদিন করতে পারবি না? এ কী জীবনের মানে? অদ্ভূত এই জীবন। আমি তো কোন তালগোল খুঁজেই কিছু পাচ্ছি না।"

শেষে ও নিজেই বলল, "তোকে অবশ্য হাল ছেড়ে দিতে আমি বলছি না। দেখ নিশ্চই কিছু তো রাস্তা বেরোবেই। ভগবান মুখ তুলে চাইবেন। এতটা নিষ্ঠুর কখনো হবেন না।"







।।পঁয়ত্রিশ।।

মাঝে মাঝে জীবনটা বড় অদ্ভূত মনে হয়। কলেজের দিনগুলোর মতন জীবনটা কেন ফিরে আসে না? কেন মনে হয়, এ পৃথিবীতে আনন্দ আর সুখ বলে কিছু নেই। আমারও তো কিছু পাবার ছিল। কিছু প্রত্যাশা ছিল। জীবনকে ঘিরে ধরে শুধু ব্যাথা আর বেদনা। পুরোনো কলেজ জীবনের, বিশ বছরের সেই উদ্দামতাকে যখন ফিরিয়ে আনতে চাই, জীবনকে পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই, তখুনি বাঁধা বিপত্তিগুলো আবার ফিরে ফিরে আসে। নারী যেন আমার জীবনে অংশভাগিনী হতে চেয়েও পারে না। কেউ আমাকে ভালবাসতে চায়, সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় অন্য নারী। আবার যখন সেই নারীকেই আমি ফিরে পেতে চাই, তখন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তার নিজের স্বামী। এ যেন জীবন সঙ্গিনীকে পাবার সমস্ত সুযোগই ব্যর্থ। আমার জীবনকে রমনীয় করে তোলবার জন্য সত্যি বোধহয় কোন নারী নেই। নেই কোন সঙ্গিনী।

পুরোনো দিনের কথা আর বর্তমান এই দুটোকে মেলাতে গিয়ে মনটা ভীষন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছিল। নতুন করে কার প্রেমে যে পড়ব, সেটাই ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। আবিষ্ট মন, স্পর্ষকাতর মন আমার সিদ্ধান্তকে একজায়গায় এনে ফেলতে পারছে না। কখনো বিদিশার মুখটা আমি চোখের সামনে দেখছি, কখনো শুক্লার মুখটা সেখানে ভেসে উঠছে। দুজনেই যদি আমার প্রেয়সী হয়, তাহলে কাছে পাওয়ার জন্য কার প্রতি আমার সুতীব্র আকুলতা জেগে উঠবে, সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি কি শুক্লার আশাটাকে মেনে নেব? না বিদিশাকে এখনো ভরসা দিয়ে যাব। যতক্ষণ না ওর ডিভোর্সটা সম্পন্ন না হচ্ছে, ততদিন অপেক্ষা করে যাব। কোন একজনেরই একনিষ্ঠ প্রেমিক হয়ে ওঠার জন্য আমি এখন আপ্রাণ চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছুতেই দুজনের মধ্যে কোনো একজনকে বেছে নিতে পারছি না। বড্ড কঠিন অবস্থা হয়ে উঠেছে আমার। দুজনের মুখ দুটোকে শুধু চিন্তা করে পীড়াদায়ক চিন্তারাশি আমার বুক ঠেলে উঠে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এমন এক দূরঅবস্থা। আমার মনের দুশ্চিন্তাটাকে আমি কাউকে জানাতেও পারছি না। সত্যিই কি করুন এক পরিস্থিতি।

ডায়েরীর পাতাটা খুলে ভাবছিলাম কিছু একটা লিখব। উপন্যাসটা হঠাৎই এমন একটা জায়গায় থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে যেন এগোতেই চাইছে না। অতীত ভুলে এখন বর্তমানটাই আমার চোখের সামনে। শুক্লা বিদিশা দুদুটো মেয়ে হঠাৎই এসে হাজির হয়েছে আমার জীবনে। তারা আমার সান্নিধ্য পেতে চাইছে, অথচ কি করে সমস্যা কাটিয়ে উঠব, ভেবে কোন কূলকিনারা পাচ্ছি না। বিদিশার জন্যও কষ্ট হচ্ছে আবার শুক্লার জন্যও মনটা ভীষন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আমার অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ আমার খেয়াল হল, শুভেন্দু বিদিশাকে বলেছে, "দেবের বাড়ীতে এক্ষুনি তুই যাস না। ওর সাথে দেখা করবার জন্য আমার বাড়ীটাই বেস্ট।"

আমাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে নিজের বাড়ীতেও ডেকে নিয়ে গেছে। বিদিশাকেও সেখানে আমন্ত্রণ করেছে। তারমানে শুভেন্দু এটা জানতো, ওর বাড়ীতে এসব সমস্যার কথা উঠবে না, বিদিশাও আমাকে কিছু বলবে না। বিদিশাকে শুভেন্দুই হয়তো বারণ করে রেখেছিল আগে থেকেই। - "এই মূহূর্তে দেবকে এসব কিছু বলার দরকার নেই।"

শুভেন্দু আমার কাছে সত্যি কথাটা বলেও পরে ওটা মিথ্যে বলে আমার মনটাকে হালকা করার চেষ্টা করে। শুভেন্দু হয়তো জানতো, আমি চিন্তায় পড়ে যাব বিদিশাকে নিয়ে। মন অস্থির হয়ে উঠবে। বিদিশার ফিরে আসার খবরটা আমার মনকে সেভাবে নাড়া হয়তো দেবে না। ও আমার কাছে ফিরে এলেও, সেটা কোন খুশীর খবর হয়ে উঠবে না।

ভাবছিলাম, শুভেন্দুরই বা বিদিশাকে নিয়ে এত আগ্রহ কেন? ও যখন সব আগে থেকেই জানে। জেনেও বিদিশার সাথে আমাকে আবার মেলানোর চেষ্টা করছে। বিদিশার কথা ভেবে শুভেন্দু এটা করেছে? না আমার কথা চিন্তা করে আমাকে ধৈর্য রাখতে বলছে। অতীতের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল, সেদিন কিন্তু বিদিশার প্রতি শুভেন্দু এতটা দয়ালু হয়নি। মিনুর বাড়ীতে ওই ঘটনাটা ঘটে যাবার পর দোষ দেখেছিল বিদিশারই। আমাকে বলেছিল, "বিদিশা এটা ঠিক করেনি। সত্যি মিথ্যে যাচাই না করে তোর দোষ দেখল বিদিশা। এটা কি ও ঠিক করল?"

মিনুর বাড়ীতে হঠাৎই ঘটে যাওয়া সেদিনের সেই ঘটনাটা। আমার বাড়ীতে তার কিছুদিন আগেই সৌগত এসে হাজির। কলিংবেল টিপতেই দেখি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে, একগাল হাসি। বিয়ের কার্ড নিয়ে এসেছে, বাবুর ফূর্তী যেন আর ধরে না। ওকে বললাম, "কি রে সৌগত তুই?"

সৌগত বলল, "সামনের মাসের দশ তারিখে আমার বিয়ে, তোকে কার্ডটা দিতে দেরী হয়ে গেল। অবশ্য কোন বন্ধুদেরই এখনো কার্ড দিইনি। বলতে পারিস, তোর কাছেই প্রথম এলাম। তুই ফার্স্ট।"

সৌগতকে ঘরে ডেকে বসালাম। বললাম, "এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছিস? তোর কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি রে শালা। এই তো সবে আমরা কলেজ পাশ করলাম।"

সৌগত বলল, "তাও নয় নয় করে তিনবছর তো হয়ে গেল। বাড়ীতে সবাই হূটোপাটি করছে। আমিও তাই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম।"

আমি বললাম, "তাও চব্বিশ বছরে বিয়ে? আমি তো ভাবতেই পারছি না।"

সৌগত বলল, "সেদিক থেকে বিয়েটা একপ্রকার একটু তাড়াতাড়িই হচ্ছে। আসলে আমার বউটা খুব সুন্দরী। ওদের বাড়ীর লোকেরাও আমাকে পছন্দ করেছে। ওরাই চটজলদি বিয়েটা সেরে নিতে চাইছে। আর আমিও ভেবে দেখলাম, বউ যা সুন্দরী। বিয়ে করে নেওয়াই ভালো। পরে যদি হাত ফসকে ছিটকে যায়।"

বলেই হাসতে লাগল সৌগত।

ওকে বললাম, "তোর বউয়ের বয়স কত?"

সৌগত বলল, "কুড়ি।"

আমি বললাম, "সে কি রে, তাহলে তো একেবারে কচি খুকী।"

সৌগত বলল, "চার বছরের ডিফারেন্স, তাই বা কম কি? আমি তো বলব, সেদিক দিয়ে আমি খুব লাকি।"

সৌগতকে উইশ করলাম। বললাম, "ভালো ভালো। বিয়েটা তাহলে কর। আমরা সবাই একটু ফূর্তী করি। কলেজ পাশ করার পরে, সেভাবে তো আর কারুর সাথে দেখাই হয় না। তোর বিয়েতে না হয় সবাই মিলে আনন্দ করা যাবে।"

সৌগত বলল, "বিদিশার খবর কি?"

আমি বললাম, "ভালোই আছে। মাঝে মধ্যে আসে। দেখা সাক্ষাত হয়। এখনো প্রেম করে যাচ্ছি। তোর মত এত তাড়াতাড়ি বিয়ে। ওটা এখনো ভাবিনি।"

সৌগত বলল, "আমি তো বলব, বেশী দেরী করা উচিৎ নয়। জানিস তো, কোথা থেকে কখন কি হয়ে যায়। আজকাল কোন কিছুর উপরেই আমার কোন ভরসা নেই।"

মনে হল, শুক্লার ব্যাপারে সৌগতর মনে হয়তো কিছু খেদ আছে। প্রেমটা ভেঙে গেল বলে, আমাকেও ও সাবধান করছে।

সৌগত নিজেই বলল, "আমি কিন্তু শুক্লার সাথে ব্যাপারটা সহজ করে নিয়েছি। ওকে ফোনও করেছি, কথাও বলেছি। বিয়েতেও শুক্লাকে আসতে বলব। আশা করি ও না বলবে না।"

আমি বললাম, "তোর আর শুক্লার ব্যাপারটা বড় অদ্ভূত। কি যে হল তোদের দুজনের মধ্যে। কিছুই বুঝতে পারলাম না। অথচ তোদের প্রেমটা....."

সৌগত বলল, "প্রেম মানে তো লাভ। আমি মনে করি লাভ ইস নট পার্মানেন্ট। যে কোন মূহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। আমার আর শুক্লার ব্যাপারটাও তাই হয়েছে। এরকম ঘটনা আর কারুর জীবনেও ঘটতে পারে। ভালবাসা, প্রেম, যেকোন মূহূর্তে ভেঙে যেতে পারে।"

কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সৌগত বলল, "তোর আর বিদিশার ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা। তোদের প্রেম হল, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রেম। একে অপরকে অঙ্গীকার করে বসে আছিস। চট করে এ প্রেম ভাঙা খুব কঠিন। সেদিক দিয়ে তুই আবার আমার থেকে একটু লাকি বলতে পারিস।"

আমি বললাম, "বিদিশা আসলে আমাকে একটু বেশী বিশ্বাস করে। ও জানে চট করে দেব, ওর বিশ্বাসটাকে ভাঙবে না।"

সৌগত এবার আমার মুখের দিকে তাকালো, আমাকে বলল, "বিশ্বাস থাকতে থাকতে, তুইও বিয়েটা করে নে দেব। বলাতো যায় না। কখন কি থেকে কি হয়ে গেল। আমার কেন জানি, প্রেমটেম ওগুলোকে আর চিরস্থায়ী বলে মনে হয় না। জীবনে প্রেম ভালোবাসার এগুলোর কোন দাম নেই। সব বেকার জিনিষ।"

 -- "তুই একথা বলছিস সৌগত? তুই না....."

সৌগত বলল, "হ্যাঁ আমিই বলছি। প্রেম আমার জীবনে টেকেনি বলে বলছি না। মেয়েদের মন বোঝা খুব কঠিন। কখন তোকে কি অবস্থায় ওরা ফেলে দেবে,তুই ঠাওরও করতে পারবি না। লেজে গোবরে এক হয়ে যাবি। শেষ পর্যন্ত হতাশায় তোর চুল ছিঁড়তেও তোকে হতে পারে। এরা ভীষন অবুঝ। সত্যি কথাটা শপথ করে বললেও বিশ্বাস করতে চায় না।"

আমি বললাম, "বিয়ে যাকে করছিস, তাকেও তো তোকে ভালবাসতে হবে। নইলে সেটাও তো টিকবে না। প্রেম মানে তো প্রেম। হয় বিয়ের আগে, নয়তো বিয়ের পরে। সেই একই তো কথা।"

সৌগত বলল, "জানি, সেটাও জানি। বিয়ের পরে ভালবাসা না টিকলে সেখানেও লবডঙ্কা। সবই জানি। সেই জন্যই তো এবারে একেবারে দেখেশুনেই বিয়ে করছি। একেবারে পার্মানেন্ট হিসেবে টিকে যাবে ও। তোকে গ্যারান্টী দিয়ে বলছি।"

দেখলাম শুক্লার থেকে নিজের বউয়ের ওপরেই ওর বিশ্বাসটা এখন অনেক বেশী। কিভাবে আস্থা অর্জন করল, আমার জানতে ভীষন ইচ্ছে করছিল। সৌগত বলল, "ভেবে দেখলাম, নিজের প্রেম করার থেকে বাড়ীর লোকজনের পছন্দমত বিয়ে করাই অনেক ভাল। তাছাড়া মেয়েটা সুন্দরী। স্বভাব চরিত্রও ভালো। অন্য মেয়েদের মত অত প্যাঁচালো নয়।"

সৌগত বলল, "বিদিশাকে তো আলাদা করেই নেমতন্নটা করতে হবে। তুই বরঞ্চ ওকে একটা ফোন কর। বল সৌগত যাচ্ছে, তোমাকে বিয়ের নেমতন্ন করতে। এখন যদি যাই? বিদিশা বাড়ী থাকবে তো? তুইও আমার সাথে যেতে পারিস।"

বিদিশাদের বাড়ীর ল্যান্ডফোন নম্বরে বিদিশাকে তক্ষুনি পেয়ে গেলাম। সৌগতর বিয়ের খবরটা শুনে ও কিছুটা অবাক হল, আমাকে বলল, "তুমি আসছ সাথে? তাহলে দুজনেই এসো। আমি বাড়ীতেই আছি।"

সেদিন বিদিশার বাড়ীতে আমার অবশ্য আর যাওয়া হয় নি। সৌগতর বাড়ী থেকে হঠাৎই তার কিছু পরেই একটা ফোন চলে এসেছিল। ওকে বেরিয়ে চলে যেতে হয়েছিল। আমাকে বলল, "বিদিশাকে আমি কার্ড পৌঁছে দেবো। তুই চিন্তা করিস না। বরযাত্রী হিসেবে তোদের জন্য আলাদা গাড়ীর ব্যবস্থা করেছি। সব কালকে ফোন করে তোকে বলছি। তুই, বিদিশা, শুভেন্দু সব একই গাড়ীতে যাবি। গাড়ীটা আমার গাড়ীর পেছনে পেছনে থাকবে। তোদের কোন অসুবিধা হবে না। ব্যারাকপুরে বিয়ে। কলকাতা থেকে যেতে এক ঘন্টা মতন লাগবে।"







।।ছত্রিশ।।

যতক্ষণ আমার কাছে বসেছিল সৌগত, কথায় কথায় এটাও আমাকে বলেছিল, "আমার কেন জানি না দেব, মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি যেন একটা খুব ভুল করে ফেলেছি।"

ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, "কি ভুল করেছিস তুই?"

সৌগত সেই সময় মিনুর প্রসঙ্গটা তুললো। আমাকে বলল, "মিনুর জন্য তোকে বোধহয় সেই হ্যাপাটা এখনো পোয়াতে হচ্ছে? সেই ওর বোনকে গান শেখানোর ব্যাপারটা? ভীষন বেয়ারা মেয়ে। একবার কারুর পিছু নিলে, সহজে তাকে ছাড়তে চায় না।"

ওকে হেসে বললাম, "না না, সেতো কবেই আমি সেই পাট তুলে দিয়েছি। এখন আর ওর বোনকে গান শেখাতে যাই না। সেই প্রথম প্রথম কদিন গিয়েছিলাম, তারপরে যাওয়া আমি বন্ধ করে দিয়েছি।"

সৌগত বলল, "কলেজ ছাড়ার পরে আর মিনুদের বাড়ী আর যাসনি?"

ওকে বললাম, "শ্যামল মিত্রর এক ছাত্রের কাছে আমি কিছুদিন তালিম নিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল মিনুর বোন রীনাকে ওখানে পাঠিয়ে দেবার। কিন্তু মিনু রাজী হল না। গোঁ ধরে বসে থাকলো। আমার কি ওখানে যেতে আর ইচ্ছে করে? তুই তো বিদিশার ব্যাপারটা জানিস। ও পছন্দ করে না রীনাকে গান শেখাতে আমি যাই বলে। সেই শেষ দিন থেকে মিনুর প্রতি বিদিশার একটা বিতৃষ্ণা। বিদিশা মিনুকে সহ্য করতে পারে না। নাম শুনলেই ক্ষেপে ওঠে। আমি যে মিনুর বাড়ীতে এখন যাই না। সেটা ওকে বললেও অবিশ্বাস করে ওঠে। বলে সত্যি বলছ তো? কি জানি তোমার কথা বিশ্বাস করলেও। মিনুকে আমার একদম বিশ্বাস হয় না।"

সৌগত বলল, "লাস্ট কবে গিয়েছিলিস মিনুর বাড়ীতে?"

আমি বললাম, "তাও নয় নয় করে মাস ছয়েক তো হয়ে গেল। এখন যাওয়া একদমই বন্ধ করে দিয়েছি।"

সৌগত বলল, "ভালো, এইজন্যই তো মিনুকে আমি বিয়েতে নেমতন্ন করতে চাই না। ওখানে বিদিশাও আসবে। মিনুকে দেখলে বিদিশা একেবারেই চটে যাবে। কি করতে কি করে বসবে মিনু। ওকে বোঝা খুব মুশকিল।"

সৌগত এরপরে চলে গেল। ভাবিনি মাস ছয়েক পরে হঠাৎই মিনুর আবার দর্শন পাবো। সেদিনই সন্ধেবেলা মিনুর হঠাৎই আবির্ভাব ঘটল আমার বাড়ীতে। সাথে ওর বোন রিনাকেও নিয়ে এসেছে। বেশ সেজেগুজে এসেছে মিনু। আমাকে বলল, "দেব, তোর জন্য এক বাক্স মিষ্টি নিয়ে এসেছি। রীনা খুব ভালোভাবে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। তুই ওর গানের গুরু। ওকে ভাল করে আশীর্ব্বাদ কর।"

রীনা মাথা হেট করে, ঝুঁকে প্রনাম করল আমাকে। ওকে বললাম, "থাক থাক আর প্রনাম করতে হবে না। তা গান টান কি গাইছ? নাকি ছেড়ে দিয়েছে সব?"

রীনা ঘাড় নেড়ে বলল, "এখনো গাইছি, ছেড়ে দিই নি এখনো। তবে আপনাকে খুব মিস করি। আপনি তো আর আমাদের বাড়ী আর আসেন না। আসুন না একদিন।"

ঠিক সেভাবে ওকে জোর দিয়ে বলার মতন আমার আর কিছু ছিল না। মিনু আমাকে পটানোর জন্য ওর বোনকে সাথে করে নিয়ে এসেছে, সেটাও বুঝতে পারলাম। পাছে আমি না বলে ফেলি, মিনু আগে থেকেই রীনাকে বলল, "ঠিকই যাবে। তুই ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? এখন দেবদার সময়ের খুবই অভাব। দেবদার এখন অনেক দায়িত্ব। চাকরী করতে হবে। বিয়ে করে বউকে খাওয়াতে হবে। তোর জন্য ভারী দেবদার দরদ? তবে তুই বলছিস যখন, ঠিকই যাবে। কি দেব, যাবি না?"

আমি রীনার সামনে মিনুকে সেভাবে কিছু বললাম না। শুধু বললাম, "যাব একদিন। এই সামনে সৌগতর বিয়ে। ওর বিয়েটা হয়ে যাক। তারপরে সময় করে একদিন যাব। তোমাদের বাড়ী যাবার পথে কলেজেও একবার ঘুরে আসব।"

মিনু জানতো, আমি শুধুই ওর বোনকে সান্তনা দিচ্ছি। যাবার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই আমার। আমাকে বলল, "সৌগতর বিয়েতে যাবি নিশ্চই? তোকে কার্ড দিয়েছে। কই আমাকে তো দিল না?"

আমি বললাম, "হয়তো পরে দেবে। এখনও অবধি আমাকে ছাড়া কাউকেই কার্ড দেয় নি ও।"

মিনু যেন পরিকল্পনা করেই এসেছিল। আমাকে বলল, "কাল বাড়ীতে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। তোকে কিন্তু আসতে হবে।"

হঠাৎ কিসের অনুষ্ঠান, কিছুই আমি জানি না। বেশ ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলাম। মিনু বলল, "আসলে রীনা ভালভাবে পাশ করেছে তো। তাই কজন বন্ধুবান্ধবদের বাড়ীতে ডাকছি। তুই ও আসবি, একটু আনন্দ আর হৈ-হুল্লোর হবে।"

আমি প্রায় মুখের ওপরেই না বলতে যাচ্ছিলাম। মিনু বলল, "কেন, বিদিশা রাগ করবে তোর ওপর? আমি যদি ওকেও বাড়ীতে ডাকি।"

বেশ অবাক হলাম মিনুর কথা শুনে। বিদিশাকে ও বাড়ীতে আসতে বলবে। আর বিদিশাও ওর কথা শুনে এক ডাকে ছুটে যাবে। কখনোই সেটা সম্ভব নয়। মিনুকে বললাম, "শুধু শুধু বিদিশাকে কেন বলতে যাবি? ও তোর ওখানে যাবে না।"

মিনু একটা গম্ভীর মতন হয়ে গেল। আমাকে বলল, "তাহলে তুই আসবি তো?"

আমি বললাম, "কথা দিতে পারছি না। তবে চেষ্টা করব।"

রীনাকে নিয়ে মিনু একটু পরে চলে গেল। আমাকে বলে গেল, "রীনার কথা ভেবে অন্তত আয়। তোকে কথা দিচ্ছি, আর কোন দিন তোকে আমার বাড়ীতে আসতে বলব না।"

আজ মনে পড়ে সেদিন কিন্তু মিনুর বাড়ীতে আমি গিয়েছিলাম। বিদিশা যাইনি। বিদিশাকে বলেই আমি মিনুর বাড়ীতে গিয়েছিলাম। মনে মনে একটু অসুন্তষ্ট হয়েছিল বিদিশা। ওকে বলেছিলাম। বোনটার পাশের জন্য বাড়ীতে একটা পাটি দিচ্ছে মিনু। রীনা যদি আমাকে না বলতো, আমি হয়তো ওর বাড়ীতে যেতাম না।






কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





লেখক(Lekhak)-এ লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

লেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment