আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
জীবনের আর এক অধ্যায়
Written By Lekhak (লেখক)
Written By Lekhak (লেখক)
।।এক।।
চার বন্ধুতে আমরা খোকনদার চায়ের দোকানটায় বসে আড্ডা মারছি। আমি, শ্যামল, বাপী আর ভুজঙ্গ। সবাই পাড়ায় নতুন বউদিকে দেখে এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। সবেমাত্র খবর কাগজের প্রথম পাতাটায় চোখ বোলাচ্ছিলাম। বৌদি যে দারুন সুন্দরী, আমার চোখে তখনও পড়েনি। কাগজের আড়ালে সুধাবৌদির ঢেউ খেলানো শরীরটা ঢাকা পড়ে গেছে। ভুজঙ্গই প্রথম বলে উঠল, "এই বাবুয়া, ইনি তোর খোঁজ করছেন। কাগজটা নামিয়ে একবার দেখ। দেখ না বাবুয়া।"
সেদিনই প্রথম দেখলাম সুধাবৌদিকে। তার দুদিন আগেই পাড়ার মুখার্জ্জী বাড়ীতে একতলায় ভাড়াটে হয়ে এসেছে বৌদি। দুবছর হল বিয়ে হয়েছে। স্বামী পুলক ঘোষদস্তিদার, মার্কেটিং এর চাকরি করেন।এখানে ওখানে ট্যুর করে বেড়ান। বাড়ীতে স্বামী এখন নেই, কে বা কারা এসে চাঁদার নাম করে হুমকি দিয়ে গেছে কাল বিকেলে। বৌদি খুব ভয় পেয়ে গেছে। বাড়ীওয়ালা সটান বলে দিয়েছেন, "আমি এ ব্যাপারে আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারবো না। আপনি ক্লাবের ছেলেদের গিয়ে বলুন।ওখানে বাবুয়া আছে। ও খুব কো-অপারেটিভ। পাড়ায় সবাই ওকে সমঝে বুঝে চলে। বাবুয়া কড়কানি দিয়ে দিলে, ছেলেগুলো দ্বিতীয়বার আর এসে বিরক্ত করবে না আপনাকে।"
বৌদি তাই শুনে আমার স্মরনাপন্ন হয়েছে। চায়ের দোকানে এসে আমার খোঁজ করছে।
আমি কাগজটা নামিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। বছর ছাব্বিশের এক মহিলা। মুখের ভাবটা অনেকটা হিন্দী সিনেমার নায়িকা রাখী গুলজারের মতন। ভারী মিষ্টি।
পরণে পাতলা ফিনফিনে একটা সিল্কের শাড়ী। ভরা যৌবনের উত্তাল ঢেউ খেলানো শরীরটা এত পাতলা শাড়ী দিয়ে কি কখনও আড়াল করা যায়? আমি স্তম্ভিত ও হতভম্বও। ব্লাউজের আড়াল ভেদ করে বৌদির বুকের খাঁজটা স্পষ্ট। আমার লোভী দৃষ্টিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই বৌদি রিকোয়েস্ট করে বসলো, "আমি নতুন এসেছি এখানে। এসেই একটা সমস্যায় পড়েছি। আমার প্রবলেমটা একটু সলভ্ করে দেবে?"
বোদি আমাদের তুমি বলে সন্মোধন করছে, আমি একটু অবাকই হলাম।
- "কি প্রবলেম আপনার?"
আমার হয়ে ভুজঙ্গই প্রথম সাড়া দিল। আসলে আমি ঠিক কথা বলার মতন অবস্থায় তখন নেই। পাড়ায় নতুন বৌদিকে দেখে আমার শরীরের ভেতর একটা কম্পন অনুভূত হচ্ছে। রোগটা মাঝে মধ্যেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, হৃদপিন্ডের ধকধকানি। কামনার রোগ, সেই যবে থেকে লেগেছে শরীরে, রেহাই পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই কামনার এই রোগকে বিসর্জন দিতে পারিনি। আমি মেয়েমানুষের শরীরটাকে পছন্দ করি। কিন্তু কোনদিন তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করিনি। সব হয়েছে স্বেচ্ছায়, পরষ্পরের ইচ্ছায়, নয়তো ঘটনাচক্রে আর নয়তো আচম্বিতে।
আমি বাবুয়া, ওরফে তীর্থঙ্কর মিত্র। বাপ মায়ের একমাত্র আদুরে ছেলে। ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার কোন ক্ষতি করিনি। মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করার পর, কমার্স নিয়ে পড়াশুনা করলাম। তিনবছর হল গ্র্যাজুয়েশন কম্প্লিট করেছি অনার্স নিয়ে। এই পাড়াতেই সেই ছোটবেলা থেকে রয়েছি।পাড়ার নবজাগরণ ক্লাবের বর্তমান সম্পাদক আমি। বছরে একটা ঘটা করে দূর্গাপূজো, কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রক্তদান শিবির তো হয়ই। তার প্রধান উদ্যোক্তা আমিই। কিন্তু এরমধ্যেই মেয়েমানুষের প্রতি আমার যে সাংঘাতিক দূর্বলতা তৈরী হয়েছে, সেটার জন্য দায়ী কিছুটা আমিই। কলেজে পড়ার সময় কাকলীর সাথে প্রেম শুরু করলাম। কাকলী পিকনিকে গিয়ে উদোম হয়ে সারারাত কাটালো আমার সঙ্গে। কাছেই একটা হোটেল ভাড়া করেছিলাম। বাকীরা কেউ তখন ছিল না। সে রাত্রে শুধু আমি আর কাকলি। আমার সাথে সাতপাকে ঘুরবে বলে কাকলি কথা দিয়েছিল, কিন্তু তারপরেই ও অন্য কারুর বউ হয়ে গেল।
মাঝে মাঝে সুন্দরী মেয়ে দেখলে ইচ্ছা তো আবার জাগে। কিন্তু একজন ছাড়া সেভাবে কারুর সাথে সম্পর্ক আর গড়ে ওঠেনি। যদিও সেটা অন্যরকম সম্পর্ক। ছাত্র আর মাষ্টারনীর সম্পর্ক। একটু অন্য দিকে মোড় নিয়েছে, পাড়ার অনেকেই সেটা এখনও জানে না।
পাড়াপড়শীদের কাছে আমি নিতান্তই একটি ভালো ছেলে, কো-অপারেটিভ, পরোপকারী, আর হেল্পফুল। আমার কাছে কেউ সমস্যায় পড়লে, না এসে তারা থাকতে পারে না। আমি হলাম পপুলার "বাবুয়া" দ্য অনলি গাই। যে, যেকোন সমস্যার সমাধান করতে সিদ্ধহস্ত, যদি কেউ এসে তাকে রিকোয়েস্ট করে।
ভুজঙ্গ এমন ভাবে সাড়া দিয়েছে, ভদ্রমহিলা ধরেই নিয়েছে, এ বোধহয় বাবুয়ার মেন অ্যাসিসটেন্ট। বাবুয়ার হয়ে সমস্যার সমাধানগুলো এই বোধহয় করে। চারজন সাকরেদ নিয়ে যখন বসে আছে, বাড়ীওয়ালার কথা মিথ্যে হয়নি। উনি এও বলে দিয়েছেন, "বাবুয়া ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারী। ওর হাতে প্রচুর ছেলে। সবাই ওর কথায় ওঠে বসে। এখুনি যান, হয়তো ক্লাবঘরের পাশে যে চায়ের দোকানটা আছে ওখানেই ওকে পেয়ে যাবেন।"
একেবারে "তুমি" বলে সন্মোধন করে শেষকালে ভুজঙ্গকেই মনে ধরলো কিনা সুধাবৌদির আমি ঠিক বুঝে উঠলাম না। একেবারে সামনে, মাত্র আমাদের থেকে দু হাত দূরে দাঁড়িয়ে বৌদি দাঁড়িয়ে। বুকের ওপর একটা হাত রেখে বলল, "উফ কি ভয় কি ভয় আমার। ছেলেগুলো রীতিমতন শাঁসানি দিয়ে গেল আমায়। বলল, পাঁচশ টাকা চাঁদা দিন। নইলে দেখে নেবো আপনাকে। প্লীজ একটু হেল্প করো।প্লীজ। আমি খুব বিপদে পড়ে এখানে এসেছি।"
আমি এবারে মুখ খুললাম, বললাম, "পাঁচশ টাকা চাঁদা? কে এসেছিল? এখন আবার চাঁদা কিসের? দূর্গাপূজো তো হয়ে গেছে।"
সুধাবৌদি বলল, "ছেলেগুলোকে তো চিনি না। পাড়ায় নতুন এসেছি। তবে ওরা বলল, বাগানবাড়ী থেকে এসেছি। আমাদের জগধাত্রী পূজোর জন্য এই চাঁদাটা আপনাকে দিতেই হবে। নইলে ভালো হবে না। তাই....."
ক্ষেপে গেল ভুজঙ্গও। সুধাবৌদিকে বলল "মামা বাড়ী নাকি? বেপাড়া থেকে আমাদের পাড়ায় এসে আমাদেরই পাড়ার লোককে চমকে যাবে? আপনি নিশ্চিন্তে ঘরে যান তো। আমি বলছি, কিছু হবে না।ও আমরা বুঝে নেবো।"
সুধাবৌদি এবার তাকালো আমার দিকে। যেন একটু আশা ভরসা চাইছে। আমার মুখ থেকেও বোধহয় একই কথা শুনতে চাইছিল। আমি আশ্বস্ত করলাম। বললাম, "হ্যাঁ, আপনি ঘরে যান। আমরা ব্যাপারটা সামলে নেবো। আপনাকে এই নিয়ে আর টেনশন করতে হবে না।"
সুধাবৌদি তারপরই চলে গিয়েছিল। আর সেদিনই আমি প্রথম দেখেছিলাম সুধাবৌদিকে। একটা বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মতন যৌবনবতী শরীর, আমার দেহে ঝড় তুলে দিয়ে চলে গেল। অথচ আমি চেয়ে চেয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলাম না। কিই বা আর করতে পারি? লোভ লালসার বশে কারুর সঙ্গে তো আর অভদ্র আচরণ করতে পারি না। আমি এ পাড়ায় একজন পরোপকারী যুবক। সবাই আমার ওপর আশা ভরসা করে বসে থাকে। আমার মুখ পানে চেয়ে থাকে। তাদের কাছে ছোট হতে আমি যে তাই পারি না। আমাকে যা কিছু করতে হয়, বুঝে শুনে করতে হয়। গায়ে বদনামের দাগটি যেন না লাগে। কেউ ছি ছি করবে, আড়ালে কটু কথা বলবে। শুরু হয়ে যাবে, বাবুয়া কে নিয়ে ফিসফিসানি। ও আমার সহ্য হবে না। তাই লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।ওর থেকে নিজেকে দূরে রাখাই ভালো।
সুধাবৌদিকে দেখে আপাতত ক্ষনিকের জন্য শরীরে যে রোগটা উদয় হয়েছিল, সেটা নিজেই ঝেড়ে ফেললাম। ভুজঙ্গকে শুধু বললাম, "বাগানবাড়ীর ছেলেগুলোকে বিকেল বেলায় গিয়ে ধ্যাতানি দিয়ে আসবি। বলবি, এই জগধাত্রীর পূজোর চাঁদার জুলুমবাজী যেন আমাদের পাডায় দেখাতে না আসে। নইলে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে দেবো। আর কোনদিন এ পাড়ায় ঢুকতে পর্যন্ত পারবে না। আর নবজাগরণ ক্লাবের ছেলেরা কেউ হাতে চুড়ি পড়ে বসে নেই। যে বাইরে থেকে যে যা খুশি এসে চাঁদা চাইবে। আর পাড়ার ছেলেরাও তা অবাধে মেনে নেবে।"
ভুজঙ্গর শাসানিতে ছেলেগুলো দ্বিতীয়বার আর ঘুরে আসেনি। সুধাবৌদির কাছে আমার পপুলারিটি নতুন করে স্থান পেলো। ওর মনের কোঠায় আমি একটা জায়গা দখল করে ফেললাম। কিন্তু কিভাবে প্রবল প্রেম পর্ব শুরু হল, আর শুরু হল শরীর নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি, সে যেন এক গভীর গোপণ ইতিহাস। সম্পর্কটা তৈরী হবার পর কোনদিন তা জনসমক্ষে আসতে দিইনি। সুধাবৌদিও খুব চালাক। আমার পপুলারিটি যাতে কোন মতেই হ্রাস না পায়, তার জন্য সুধাবৌদিও সচেষ্ট। প্রেম প্রেম আর শরীরি খেলা চলতো গোপনেই। একটা নির্দিষ্ট সময়কে বেছে নিয়েছিলাম আমরা। দুপুরবেলা ঠিক একটা থেকে বিকেল পাঁচটা। আর কখনও সুযোগ হলে রাত বারোটার পর। আমি আর সুধাবৌদি।
নিশুতি রাতে এক অল্পবয়সী যুবক ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছে মুখার্জ্জী বাড়ীর একতলার ফ্ল্যাটের দিকে। আলতো করে দরজায় টোকা মারলেই সুধা বৌদি বুঝে যাবে কে এসেছে? ধরা পড়ার ভয় নেই, কেউ সন্দেহ বা উঁকি মারার সুযোগ নেই। একতলার সেই ফ্ল্যাটে তখন শুধু সুধাবৌদি আর আমি। আর হ্যাঁ, ওর স্বামী পুলক ঘোষ দস্তিদারও যে সেই সময় ওখানে উপস্থিত নেই। কারণ এতদিন কাজের সূত্রে উনি মাঝেমধ্যেই ট্যুরে যেতেন। বর্তমানে এখন ওনার বাসস্থানের ঠিকানাটা পাল্টে গেছে। কারণ সুধাবৌদির মুখেই শুনেছি, স্বামীও লুকিয়ে লুকিয়ে অন্য এক মহিলার সঙ্গে এতদিন প্রেম করছিলেন। এবার সেটা চরম আকার নিয়েছে। সুধাবৌদির সঙ্গে ঘর করা তার পক্ষে আর সম্ভব নয়। এক প্রকার বৌকে ফেলে উনি তাই ভেগে পড়েছেন। অসহায় সুধাবৌদিকে সঙ্গ দেবার জন্য সেই সময় আমিই একমাত্র সহায়। আমাকে ছাড়া সুধাবৌদির আর কোন গতি নেই।
।।দুই।।
অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ট্যাক্সি বাস কিছুই চোখে পড়ছে না। বুঝলাম, আমার কপালে আজ ভোগান্তি আছে। আদৌ বাড়ী ফিরতে পারবো কিনা সেটাই এখন বুঝতে পারছি না। আকাশে আবার অল্প বিস্তর কালো মেঘ জমেছে, অসময়ে যদি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে, তাহলে আরও বিপদে পড়ে যাব।একরাশ দুশ্চিন্তা আর দূর্ভাবনা মাথায় নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় রইল না। দূর থেকে দেখছি একটা ট্যাক্সি আসছে। হেড লাইটটা চোখে পড়ল। পড়ি মরি করে ট্যাক্সিটা থামানোর জন্য উদ্যোগ নিলাম। বেশ কয়েকবার হাত নাড়তেই সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল ট্যাক্সিটা। ড্রাইভার সামনের সীটে। পেছনে বসে রয়েছে এক মহিলা। আমাকে দেখেই সানন্দে বলে উঠল, "আরে বাবুয়া? তুমি এখানে? বসো বসো, ট্যাক্সিতে বসো। আমিও তো বাড়ীতেই ফিরছি।"
স্বভাবতই আমি কিছুটা অবাক হয়েছি। এই সেই মহিলা, যিনি চায়ের দোকানে এসে হেল্প চেয়েছিলেন।যাকে দেখে আমার ক্ষনিকের জন্য পুলক জেগে উঠেছিল। কিন্তু এত রাত্রে মহিলা কোথা থেকে ফিরছেন? তাও আবার একা? পাশে তো ওনার স্বামীও নেই দেখছি।
ট্যাক্সিতে উঠে বসলাম। সুধাবৌদিরই পাশে। আমাকে বলল, "আমি একটু ক্লাবে যাই মাঝে মাঝে। আজ আমাদের ক্লাবের অ্যানুয়াল বার্থডে সেরিমনি ছিল। পার্টি চলবে, সেই ভোর রাত অবধি। আমার আবার সারারাত ধরে হুল্লোড়বাজী পোষায় না। কিছুতেই আমাকে ওরা আসতে দেবে না। অনেক কষ্টে বেরিয়ে এসেছি। ট্যাক্সিটা পেয়ে গেলাম তাই রক্ষে। আমার তো আর গাড়ী নেই। তা তুমি এখানে?"
আমি ট্যাক্সিতে উঠেই সুধাবৌদিকে এক ঝলক দেখে নিয়েছি। বগল কাটা ব্লাউজ, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। বেশ ঘটা করে সেজেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা পার্টির ড্রেস। আমাকে দেখে বিন্দুমাত্র আশ্চর্য নয়, যতটা আমি সুধাবৌদিকে দেখে আশ্চর্যিত।
ট্যাক্সিটা আবার চলতে শুরু করেছে, সেই পুলক পুলক ভাবটা আবার আসতে লাগল শরীরে। সুধাবৌদিকে বললাম, "আসলে অনেকদিন ধরেই আমার এই বন্ধুটা আসবার জন্য খালি বলছিল। আসবো আসবো করে আর আসা হয় না। আর এমন দিনে এলাম, যে আর একটু হলেই বাড়ী ফেরা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল।"
বৌদি হাসতে লাগল আমার কথা শুনে। বলল, "বাব্বা, তোমরা ব্যাটাছেলে হয়েও এত ভয় পাও? তাহলে আমরা মেয়েরা কোথায় যাব? আমার তো হাজব্যান্ডও এখন কলকাতায় নেই। একা একাই রিস্ক নিলাম। ও থাকলে অবশ্য আসতে দিত না। তাছাড়া এসব পার্টি ফার্টিতে যাওয়া আবার ও পছন্দ করে না।"
সুধাবৌদিকে জিজ্ঞাসা করলাম, "আপনার স্বামী এখন কোথায়? আউট অব স্টেশন? কলকাতার বাইরে আছেন বুঝি?"
স্বামী যে মার্কেটিং এর চাকরি করে, সেটা সেদিই জেনেছিলাম। সুধাবৌদি বলল, "বছরে তিনশো দিনই তো হাজব্যান্ড বাইরে থাকে। সেই বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছি। অফিস ওকে একদন্ড বসতেও দেয় না। আমাকে নিয়ে যে এদিক ওদিক ঘুরতে যাবে, তারও স্কোপ নেই। বিয়ের পর সাতদিনের জন্য একটা ছুটীর দরখাস্ত করেছিল, আমাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল সেই গোয়ায়। ওই প্রথম আর ওই শেষ। তারপর আর সুযোগ হয় নি।"
গোয়া তো খাসা জায়গা। মধুচন্দ্রিমা যাপণের জন্য হট প্লেস। মনে মনে বললাম, "বিয়ের পরে এই একটাই হানিমুন হয়েছে বোধহয়। আজকাল যা দিনকাল পড়েছে, বিয়ের পর স্ত্রীকে সময় দেওয়া স্বামীর পক্ষ্যে এখন খুবই কঠিন। সবাই এখন টাকার পেছনে দৌড়োচ্ছে। স্ত্রীও বেচারি অসহায়। পর্যাপ্ত সুখ না পেয়ে পেয়ে তারাও এখন ব্যাভিচারের পথ ধারণ করছে। চোখের সামনে দু একটা কেস তো এরকম দেখলাম, তা, এই নতুন বৌদিটিও আবার সেই পথ অবলম্বন করেনি তো? কে জানে?"
বৌদিকে দেখলাম, ট্যাক্সিতে আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। মুখ ঘুরিয়ে বললাম, "কি? কিছু বলবেন?"
সুধাবৌদি বলল, "তোমার বয়স কত বাবুয়া? খুব বেশি বয়স তো হয়নি? তাই না?"
হঠাৎ বয়স কত জানতে চাইছে, ব্যাপারটা বোধগম্য হল না। ঘুরিয়ে বললাম, "আপনার ও তো বয়স বেশি হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। কতদিন বিয়ে হয়েছে? একবছর না দুবছর?"
বৌদি বলল, "এই গত মাসের ১২ তারিখে দুবছর কমপ্লিট হল। আমাকে দেখে কি তাই মনে হচ্ছে? আমি অবশ্য একেবারে নতুন বউ না। তবে তোমার থেকে আমি কিন্তু বয়সে বড়। আমার এখন ছাব্বিশ প্লাস।"
হিসেব করে দেখলাম, আমার থেকে ঠিক দুবছরের বড় সুধাবৌদি। তবে আজকাল মেয়েদের বয়স বোঝা খুব কঠিন। বেশি বেশি বয়সের মেয়েরাও ছুকরী সেজে থাকে। সাত ঘাটে জলখাওয়া মেয়েরা আবার এ ব্যাপারে খুব সেয়ানা। বয়স জিজ্ঞেস করলে দশ বছর কমিয়ে বলে। রাস্তাঘাটে, এখানে সেখানে চষে খাওয়া মেয়েগুলো শরীরের মেদ ঝরিয়ে এমন চেহারা করেছে, তিরিশ বছরের মেয়েগুলোকেও বাইশ বছরের তম্বী বলে মনে হবে। এই তো আমাদের পাড়ার "পাপিয়া" বলে যে মেয়েটি আছে তারও সেই এক কেস। তিরিশ বছরে পা দিয়েছে, এখনও বিয়ে করেনি। জিমে গিয়ে গিয়ে মেদ ঝরিয়ে ঝরিয়ে এমন চেহারা বানিয়েছে, দেখে মনে হবে যেন গোলাপ ফুল ফুটেছে সবে। ঠিক যেন যুবতী। পাপিয়ার সঙ্গে আমারও একটা সম্পর্ক আছে, সেটা অবশ্য অন্যরকম সম্পর্ক, যাক সেকথা। প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম, "আর কোন সমস্যা হয় নি তো আপনার? ওই ছেলেগুলো? বাগানবাড়ী থেকে যারা এসেছিল। আর আসেনি তো ঝামেলা করতে?"
বোদি বলল, "ওফ বাবুয়া ইউ আর গ্রেট। তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো, আমি ভেবে পাচ্ছি না। জানো তো তারপরে একজনই মাত্র এসেছিল ওই বাগানবাড়ী থেকে। আমাকে বলল, ভুল হয়ে গেছে বৌদি। মাফ করে দিন। আপনি মাত্র কুড়ি টাকা চাঁদা দিলেই হবে। যদি তাও না দেন, তাহলেও কিছু বলবো না। শুধু একটা সরি বলতে এসেছিলাম, আমাদের মাফ করে দিন।"
শুনেই বুঝলাম, ভুজঙ্গর কড়কানিতেই তার মানে কাজ হয়েছে। ভুজঙ্গ বলে এসেছিল, "বৌদির কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আসবি।" তাই ওরা হয়তো কাউকে পাঠিয়েছে। যাক তাহলে আর কোন টেনশন নেই। এবারে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।
সুধাবৌদি বলল, "ছেলেটার কথা শুনেই বুঝলাম তোমাকে ওরা যমের মত ভয় পায়। আমাকে আমার ল্যান্ডলর্ড ঠিকই বলেছিল, এই ব্যাপারে বাবুয়াই হল আলটিমেট সলুশান। আপনি বাবুয়ার কাছে যান, তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।"
একটা গর্বের হাসি দিলাম। বৌদিকে দেখলাম, সেই সময় ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে কি যেন একটা বার করতে যাচ্ছিল। একটা সাদা প্যাকেটের মতন, তারপর কি আবার ভেবে ওটা ব্যাগের মধ্যেই ঢুকিয়ে নিল, বাইরে আর বার করলো না। আমি ঠিক বুঝে উঠলাম না। বৌদি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "এক্ষুনি একটা মিসটেক করতে যাচ্ছিলাম। যাক, তুমি তোমার বাড়ীর কথা বলো।"
আমি বললাম, "কি বলবো?"
সুধাবৌদি বলল, "এই বাড়ীতে তোমার কে আছে? বাবা মা, দিদি, দাদা ভাই বোন।"
আমি বললাম, "বাড়ীতে আমার শুধু বাবা মা-ই আছে। আমার কোন ভাই নেই, বোনও নেই। আমি বাবা মায়ের এক ছেলে।"
বৌদি বলল, "বাপ মায়ের এক ছেলেরা তো শুনেছি খুব আদুরে হয়। তুমি বোধহয় তাই। বাবা কি করেন? আর মা বুঝি হাউজ ওয়াইফ?"
আমি বললাম, "আমার বাবা কলকাতা ছেড়ে চাকরির সূত্রে হায়দ্রাবাদে পোষ্টিং হয়ে রয়েছেন, বছর দুয়েক হল। দুমাস অন্তর অন্তর একবার করে শুধু কলকাতায় আসেন। মা'কে নিয়ে যদিও আমি এখানেই রয়েছি। তবে মা'ও একটু এদিক ওদিক ঘুরতে ভালবাসেন। কখনও গৌহাটির আশ্রম, কখনও মামা মাসীদের সাথে দলবেঁধে বাইরে ঘুরতে যাওয়া। এগুলোই শুধু মায়ের অনেকদিনের শখ। মাঝে মাঝে সখ পূরণ করেন। আর আমিই শুধু নিজেদের বাড়ী ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারি না।"
বৌদি বলল, "হাও সুইট। তোমার মত ছেলে পাওয়া তো বাবা মায়ের কাছে খুব ভাগ্যের ব্যাপার।তবে আমার কপালে সে সুযোগ হয় নি। আমি কিছুটা ব্যাড লাক-ই বলতে পারো।"
আমি বললাম, "কি রকম?"
বৌদি কিছু বলতেই যাচ্ছিল। ট্যাক্সিটাও তখন উল্টোডাঙ্গায় এসে পৌঁছেছে। ড্রাইভার, ট্যাক্সি ডান দিকে ঘুরিয়ে বাগুইহাটির পথ ধরেছে। হঠাৎই সুধাবৌদিকে দেখলাম, একটু অস্বস্তি বোধ করছে। হঠাৎ ওর মাথার কাছটায় যেন পেইন উঠেছে। দুহাত দিয়ে ক্রমশ মাথাটা সজোরে টিপে যাচ্ছে। গরমে হাঁসফাঁস করার মতন হাঁসফাঁস করতে শুরু করে দিয়েছে, বুকের ওপর থেকে শাড়ীটা সরে গিয়েছে অনেকখানি। দেখে মনে হবে, এক্ষুনি হয়তো বমি করতে শুরু করে দেবে বৌদি। ঠিক যেন ভমিটিং এর লক্ষণ। বিচলিত বোধ করতে শুরু করলাম আমিও। জিজ্ঞাসা করলাম, "আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে? কোনও প্রবলেম? কি হল বৌদি?"
বৌদি বলল, "তোমাকে গাড়ীতে তুলে আমিও তোমাকে বিড়ম্বনায় ফেললাম বাবুয়া। হঠাৎই কপালটায় অসম্ভব ব্যাথা শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে কপাল ছিঁড়ে যাবে। প্লীজ একটু মাথাটা টিপে দেবে বাবুয়া, যদি কিছু মনে না করো।"
।।তিন।।
পাপিয়ার নিজেকে নিয়ে খুব অহঙ্কার। চেহারাটা এখনও স্লিম রেখেছে বলে, দেমাকে মাটিতে পা পড়ে না। বগলদাবা করে যে ছেলেগুলোকে নিয়ে ঘুরতো, সবই ভ্যাবলা, ক্যাবলা। আমি একটু টিপ্পনি কাটতাম। পাপিয়ার সহ্য হত না। গরম খেয়ে রেগে উঠত। গত বছর দূর্গোপূজোর সময় আমাকে একচোট নিল। - "তুই নিজেকে কি ভাবিস রে বাবুয়া? খুব স্মার্ট? তোর পাশে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। তাই তো? যা যা, তোর মত বখাটে ছেলের সাথে পাপিয়া মুখ লাগাতে আসবে না। আমি যাদেরকে নিয়ে ঘুরি। তুই তাদের নখের যুগ্যিও নোস বুঝলি?"
নবমীর দিন রাত্রিবেলা একটা ট্যাক্সি করে এসে পাপিয়া নামলো। ওর সাথে যে ছেলেটা ছিল, সে আর ট্যাক্সি থেকে নামেনি। রাত বারোটার সময় আমি আর বাপী প্যান্ডেলে বসে ঠাকুর পাহাড়া দিচ্ছি। ট্যাক্সি থেকে পাপিয়াকে নামতে দেখে বাপী বলল, "এই একটা মেয়ে, ষষ্ঠী থেকে শুরু করেছে। সপ্তমী, অষ্টমী আর নবমী। এই চারটে দিনে চারটে ছেলেকে নিয়ে ঘুরলো। সত্যি পাপিয়ার এলেম আছে। ছেলেগুলোকে কেমন হাতে রেখেছে দেখছিস?"
আমি কোন জবাব দিচ্ছি না। বসে বসে সিগারেটে লম্বা টান দিচ্ছি আর ধোঁয়া ছাড়ছি। বাপী বলল, "এই বাবুয়া। পাপিয়া তো এইদিকেই আসছে মনে হচ্ছে। প্যান্ডেলের দিকে। এই বাবুয়া।"
কোনও রকম ভ্রুক্ষেপ না করে বাপীকে বললাম, "ছিঃ। ও তোর থেকে কত বড় হয় না? দিদি বল, পাপিয়া দি।"
বাপী বলল, "তুই যে ওর নাম ধরে ডাকিস, তার বেলা?"
আমি বললাম, "আমার ব্যাপারটা অন্যরকম। আমি ডাকি বলে তুইও ডেকে বসিস না।"
বাপী অবশ্য আমার কথাটাই রাখলো। আমাকে বলল, "হ্যাঁ, পাপিয়াদি এসেছে। তোকে ডাকছে। প্যান্ডেলের বাইরে অপেক্ষা করছে।"
চেয়ার থেকে উঠে প্যান্ডেলের বাইরে এলাম। দেখি কালো রং এর একটা ছাপা শাড়ী পড়ে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে পাপিয়া। আমাকে দূর থেকেই বলল, "এই বাবুয়া শোন। তোর সাথে কথা আছে।"
সামনে গেলাম। তারপরেই আমাকে একচোট নিল। "কি ভাবিস কি তুই নিজেকে?" - বলে একনাগাড়ে যা তা কথাগুলো বলে গেল।
আমি যে মজা করেছি, পাপিয়ার সঙ্গে একটু রঙ্গ করেছি, সেটা ওকে বোঝায় কে? বেগতিক দেখে বাপীও এগিয়ে এসেছে। পাপিয়া এক ধমক লাগালো বাপীকে। "এই শালা বাবুয়ার চামচা। যা ভাগ এখান থেকে। আমার এখন ওর সাথে কথা হচ্ছে। তুই এখানে মাথা গলাতে আসবি না।"
বাপী আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল, আমি ঠেলে বাপীকে সরিয়ে দিলাম। তারপরই দেখলাম পাপিয়া খিলখিল করে হাসছে।হাসতে হাসতেই বলল, "কি? কেমন ভয় পাই দিলাম তো? তোরা দুজনে হলি ভীতুরাম আর গঙ্গারাম। প্যান্ডেলে রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছিস। তাই তোদের সাথে একটু মজা করতে এলাম। এখন আমার কাজ শেষ। আমি বাড়ি যাচ্ছি।"
বাপী বলল, "আজব মেয়ে তো। বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে মস্তি করে এসে এখন আমাদের সাথে মস্করা করলো? বা সুন্দর। অতীব সুন্দর।"
পেছন থেকে আমি আর বাপী দেখছি, পাপিয়া একটু একটু করে এগোচ্ছে। আর টলে টলে পড়ে যাচ্ছে। বাপী বলল, "এই বাবুয়া। শালা মনে হচ্ছে আজ মদ খেয়েছে প্রচুর। তুই ধরে ধরে বাড়ী নিয়ে যা। নইলে মাঝরাস্তায় পড়ে যাবে।"
সত্যি পাপিয়া সেদিন খুব মদ খেয়েছিল। আমি ঠিক সময় হাতটা না ধরলে মাঝরাস্তায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতো সারারাত। আমাকে প্রথমে ছুঁতেই দিচ্ছিল না। বলল, "না আমি পারবো। আমাকে ছুঁবি না। তোর হেল্পের দরকার নেই।ঠিক চলে যাব।"
তারপর যখন কিছুতেই আর পারছে না। নিজেই আমার হাতটা ধরলো। আমি বাড়ীর দোরগোড়ায় পাপিয়াকে ধরে ধরে নিয়ে এলাম।
কলিংবেলটা নিজেই পাপিয়ার হয়ে টিপে দিয়ে আমি চলে যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে আমার হাতটা ধরে পাপিয়া বলল, "এই বাবুয়া, ভেতরে আসবি না? আয় না। কতদিন তো আসিস না।"
পাপিয়ার মা রেবা চ্যাটার্জ্জী দরজা খুলেছেন। মেয়ে যে পাড় মাতাল হয়ে বাড়ী ফিরেছেন, ওনার চোখে মুখে বিরক্তির ভাব দেখে আমারও তখন বেশ কিছুটা অস্বস্তি। পাপিয়া তখনও আমার হাত ধরে ভেতরে টানছে। মা অবশেষে মেয়েকে বেশ রেগেমেগেই বলে উঠলেন, "ঠাকুর দেখার নাম করে কোথায় যাস রোজ রোজ? আর এসব কি ছাইপাস গেলা শুরু করেছিস। পাড়ার লোকেরা দেখলে বলবে কি? মেয়ে আমার গোল্লায় গেছে।"
সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, পাপিয়া ওর মা'কে বিশেষ পাত্তা দেয় না। বাবা মারা যাবার পর মেয়েকে মানুষ করেছেন মা'ই। মেয়ে এখন কল সেন্টারে চাকরি করে। মোটা টাকা মাইনেও পায়। আর অগুন্তি ব্যাটাছেলে বন্ধু জুটিয়েছে, তাই নিয়ে মা'রও দূঃখের শেষ নেই। মেয়েকে বলে বলেও বিয়েতে রাজী করাতে পারছেন না। কারণ বিয়েতে পাপিয়ার একেবারেই বিশ্বাস নেই।
পাপিয়াও ওর মা'কে ধমক দিয়ে বলল, "তুমি ভেতরে যাও তো। আমি এখন বাবুয়ার সাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প করবো। ডোন্ট ডিস্টার্ব।"
- "ও আমার মহারানী রে।"
মেয়ের ধমক খেয়ে মা'ও একটু গাল পেড়ে ভেতরের ঘরে চলে গেলেন। পাপিয়া আমাকে ওর ভেতরের ঘরটায় নিয়ে গেল। বিছানায় আমাকে বসিয়ে বলল, "হাত পা ছড়িয়ে বোস ভাল করে। আর কি খাবি বল?"
আমি বললাম, "তোমাকে ব্যস্ত হতে হবে না। আমি বরং প্যান্ডেলে ফিরে যাই। ওখানে বাপী বসে আছে।"
পাপিয়া বলল, "বসে থাকুক ও। সারাটাদিন তো প্যান্ডেলেই বসে কাটাস। এখন না হয়, আমার সাথে বসে একটু গল্প করলি। তোর তো কোন গার্ল ফ্রেন্ড নেই। ধরে নে আমি এখন তোর গার্ল ফ্রেন্ড।"
আমার থুতনীটা একটু হাত দিয়ে নেড়ে দিয়ে বলল, "ওরে, আমার জন্য যে তোর এত দরদ। কেন আমি খারাপ মেয়ে হয়ে যাচ্ছি বলে? তা তুই নয়, আমার জন্য একটা বর খুঁজে দে। আজ থেকে দায়িত্বভারটা তোর ওপরই আমি অর্পন করলাম।"
পাপিয়ার সাথে মজা করতে ভালবাসি। সেই ছোটবেলা থেকেই করে আসছি। এবারো একটু মজা করেই বললাম, তোমাকে বিয়ে করবে কে?"
আবার তেলেবেগুন জ্বলে উঠল পাপিয়া। মুখে তখন খিস্তি খেউর। আমাকে বলল, ছেনালীপনা করবি না বাবুয়া। কেন আমার বিয়ে হবে না কেন? একথা বললি কেন?"
নেশার চোটে পাপিয়ার ছাপা শাড়ীর আঁচল গা থেকে খসে মাটিতে লুকোচ্ছে। হেসে বললাম, "বাংলা খেয়েছো, না ইংলিস? মুখ দিয়ে তো ভরভর করে গন্ধ বেরোচ্ছে। মাসীমা আজ টের পেয়ে গেছেন। তোমাকে দেবে আচ্ছামতন আমি চলে যাবার পরে।"
পাপিয়া ওই অবস্থায় বলল, "তুই আগে আমার কথার জবাব দে। কবে থেকে তুই এমন ঢ্যামনা হয়েছিস বল দেখি।"
আমি বললাম, "দোরগোড়ায় পৌঁছে দিলাম, এখন বাড়ীতে ডেকে আমায় গালাগালি দিচ্ছো। মুখ ছোটাচ্ছো? তাহলে আমি সত্যিই চলে যাব।"
পাপিয়ার স্তনযুগলের খানিকটা ব্লাউজ ছাপিয়ে ওপর দিকে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। দুটি স্তনের মাঝখানে গভীর খাঁজ বিদ্যমান। আমি পাপিয়াকে এভাবে কোনদিনই কোন অবস্থাতেই দেখিনি। ও যেহেতু আমার থেকে বয়সে ছ বছরের বড়, তাই ওর প্রতি আমার দূর্বলতা সে অর্থে নেই। মাঝে মাঝে একটু খুনসুটি করি। ছোটবেলায় পাপিয়ার কাছে অঙ্ক শিখতে আসতাম। তখন থেকেই একটা বন্ধু বন্ধু সম্পর্ক তৈরী হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় পাপিয়া টিউশনি করেই মায়ের সংসারের খরচার জোগান দিত। আমাকে তখন ও খুব একটা পাত্তাও দিত না। তারপরে আসতে আসতে বড় হলাম, পাড়ায় আমার পপুলারিটি বাড়লো। পাপিয়াও জানে, বাবুয়া হলো পাড়ার এখন একটা ইমেজ। বাবুয়াকে বাদ দিয়ে এ পাড়ায় হাজারো সমস্যা মেটানো সহজ কথা নয়। নিজে যে খারাপ সঙ্গদোষে নিজেকে বিপথে চালিত করেছে সেকথা পাপিয়ারও অজানা নেই। শুধু আমার সামনে সেটা অকপটে স্বীকার করবে না। ভাবখানা এমন দেখাবে যেন ওর বয় ফ্রেন্ডরা হোল সব রথী মহারথীর ছেলে। মিনিষ্টারের ভাইপো, নয়তো ব্যারিষ্টারের ভাগ্নে কে নিয়ে ঘুরছে পাপিয়া। এ দুনিয়াটায় যে নিজেকে সেয়ানা ভাবে, সেই সব থেকে বোকা হয়, সে কথা ওকে আর বোঝায় কে?
শাড়ীর আঁচলটা সরে গিয়ে বুকদুটো যেন ব্লাউজ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। আবার সেই খিলখিলে হাসি। পাপিয়া বলল, "তুই যদি আমার নাগর হতি তাহলে খুব ভালো হতো রে বাবুয়া। আসলে সেই ছোটবেলা থেকে বাবুয়াকে দেখে আসছি তো? বাবুয়া এখন অনেক পাল্টে গেছে। ভাল মন্দ বুঝতে শিখেছে, ব্যাটাছেলের মত বদমায়েশী ভাবটা যেখানে সেখানে দেখাতে চায় না। খুব সেয়ানা তুই। ঠিক একেবারে রাম খচ্চরের মতন।"
আমি বললাম, "কি আজে বাজে বকছো? তোমাকে আমি সেভাবে দেখেছি কোনদিন? পাড়ায় আমার একটা সুনাম আছে না? তাছাড়া তোমার কাছে আমি কোচিং নিয়েছি। তুমি সেই অর্থে আমার কাছে মাষ্টারনী। খারাপ কিছু ভাবলেই হল?"
পাপিয়া বলল, "নে নে। অত আর কপচাতে হবে না। সব আমি বুঝি। এখন আমার মাথাটা একটু টিপে দে। খুব যন্ত্রনা হচ্ছে।"
-- মাথা টিপে দেবো? যন্ত্রনা হচ্ছে?"
- হ্যাঁ দে না একটু। উফ কি ব্যাথা। ঠিক এই জায়গাটা। মাথার এখানটা একটু হাত দিয়ে দেখ।"
বলে নিজে থেকেই আমার হাতটা কপালে ঠেকিয়ে দিল পাপিয়া। দেখলাম বিছানায় শুয়ে পড়েছে ও। আর ওর বুকটা নিঃশ্বাস আর প্রশ্বাসে উঠছে আর নামছে শুধু।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
লেখক(Lekhak)-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereলেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment