CH Ad (Clicksor)

Saturday, August 30, 2014

মেয়েমানুষের কেপ্ট_Written By Lekhak (লেখক) [৬ষ্ঠ খন্ড (চ্যাপ্টার ১৬ - চ্যাপ্টার ১৮)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




মেয়েমানুষের কেপ্ট
Written By Lekhak (লেখক)








।। ষোল ।।

শাস্বতী বললো, "কি ব্যাপার কি সুমন, তোমার মোবাইল সুইচ অফ?"

আচমকা ডলির ফোন। সুমন ভাবতেও পারেনি, মোবাইলটা অন করার সাথে সাথেই ডলির ফোনটা আসবে। শাস্বতী গা ধোবে বলে বাথরুমে ঢুকেছে। সঙ্গমটা শেষ হয়েছে একটু আগেই। শাস্বতী বললো, "গা টা কেমন চ্যাট চ্যাট করছে, ঘরে ঢুকেই তুমি তো আর অপেক্ষা করতে পারলে না। যাই এবার একটু গা ধুয়ে আসি।"

সুমন বললো, "তুমি যাও। তারপরে না হয় আমিও যাব।"

খাটে বসে মোবাইলটা অন করেছে সবে। ঠিক তখনই ডলির ফোন। ফোন করেছে অন্য একটা নম্বর থেকে যাতে সুমন বুঝতে না পারে।

ডলি বললো, "কি ব্যাপার তোমার? আমি তোমাকে ফোনে চেষ্টা করে করে হয়রান। ফোনটাও অফ করে রেখেছ, নাকি কারুর সাথে....."

সুমন এবার একটু রেগে গেল। বললো, "তোমাকে তো তখন বললাম, আমার শরীর ভালো নেই। ফোনটা অফ করে রেখেছিলাম তো ওই জন্যই। সবাই বিরক্ত করে। ডিস্টার্ব এড়াতেই তো বন্ধ রেখেছি।"

ডলি বললো, "সবাই বলতে কে কে? আমি ছাড়া আর কে আছে তোমার পেয়ারের রানী?"

সুমন বললো, "কেউ নেই ডলি, কেউ নেই। আমার কোন পেয়ারের রানী নেই।"

ডলি বলো, "আচ্ছা, খুব যে দেখি মিথ্যে কথা বলো আজকাল। এগুলো বুঝি তোমার ন্যাকামো? আর কি....."

সুমন জানে, ডলির স্বভাব কি রকম। তবুও ধৈর্য ধরে বললো, "এখন তুমি যদি আমার কথা বিশ্বাস না করো, আমার তো কিছু করার নেই। বাট আমি সত্যি বলছি।"

ডলি এবার একটু সুর নরম করে বলতে লাগল, "এই বলো না কে ছিল? নতুন কেউ? তোমার তো রোজই একটা করে নতুন ক্লায়েন্ট জুটছে।"

সুমন আবার ক্ষেপে গেল। বললো, "আঃ। সত্যি বলছি তো। কেউ নেই।"

ডলি এবার বেশ সিরিয়াস, সুমনকে বললো, "সুমন আমার মাথার দিব্যি খেয়ে তুমি মিথ্যা কথা বলতে পারবে? যদি মিথ্যে বলো, আমি কিন্তু ছাড়বো না তোমাকে।"

সুমন দেখল, আচ্ছা বিপদে পরা গেছে। ফোন করে মাথা খাচ্ছে মেয়েটা। ডলি যে জেদী ও জানে, তবুও বললো, "তুমি এত স্ট্রিক্ট হয়ে যাও কেন ডলি। আমি কি তোমার কোন ক্ষতি করেছি?"

ডলি এবার আরো একটু সিরিয়াস হয়ে বললো, "তোমার জীবনের ওপর আমার একটা অধিকার জন্মে গেছে।"

সুমন অবাক হয়ে বললো, "ওয়াট?"

ডলি শক্ত গলায় বললো, "আমাকে বাদ দিয়ে তুমি লাইফে কিছু করতে পারো না।"

সুমন বললো, "মানে?"

ডলি বললো, "মানেটা খুব পরিষ্কার। সুমনের লাইফে এখন থেকে শুধু ডলি আর ডলি। নো অদার বেবী ডারলিং।"

কি বলে কি মেয়েটা? দুদিন শুয়েই মাথা কিনে নিল নাকি? সুমনের লাইফে ডলির হস্তক্ষেপ? সবাই সুমনকে নিয়ে ছেলে খেলা করতে চায়। আমি দেহ বেচি, তারমানে আমার কোন স্বাধীন জীবন নেই? আমাকে যে কেউ চালাবে, আর আমি তেমনি চলবো? সুমন তবু বললো, "আমাকে নিয়ে কেন টানাটানি করছ ডলি? কি চাই তোমার?"

ডলি বললো, "কি চাই মানে? তুমি জানো, আমার হাজব্যান্ডকে আমি না করে দিয়েছি। কার জন্য? যে লোকটা রোজ আমাকে ফোন করছে, পায়ে ধরে সাধাসাধি করছে। আবার আমাকে বউ হিসেবে দেখবে বলছে, একটাই কথা ডলি তোমাকে আবার ফিরে পেতে চাই। সেখানে আমি বলছি, না, আমি শুধু সুমনকেই চাই। আর তুমি বলছ কি চাই তোমার? সুমন তুমি এত অবুঝ?"

সুমন বললো, "আর ইউ ম্যাড ডলি? কি যা তা বকছ? আমি একজন প্রফেশনাল। মেয়েদের খুশি করি। তাদের গলায় মালা পরাই না, যে কেউ আমার গলাতেও ঘন্টি বাঁধতে পারে না। তুমিও চেষ্টা কোর না ডলি। এগুলো বিফলে যাবে।"

ডলি বললো, "আমি তোমাকে বলেছিলাম না সুমন, তুমি আমাকে ছাড়া আর কাউকে খুশী করবে না। কেউ তোমাকে কামনা করবে, মনে প্রানে চাইবে। পাশে নিয়ে শুতে চাইবে। ডলি বেঁচে থাকতে তা কিছুতেই হতে দেবে না। আমাকে বাদ দিয়ে তুমি যদি অন্য মেয়েকে নিয়ে তোমার বেশ্যাগিরি করো, তাহলে কিন্তু আমি সুইসাইড করব।"

সুমনের কপাল ঘামছিল। উত্তেজিত হয়ে বললো, "এগুলো সব অবুঝের মত কথা বলছ ডলি। সবাই জানে আমি মেয়েমানুষের কেপ্ট। কেউ এক রাত শুলো, কি দুরাত শুলো, কি টানা এক মাস। ব্যাস ঐ পর্যন্তই। এ পর্যন্ত টাকা দিয়ে সারাজীবনের মত যারাই আমাকে কিনতে চেয়েছে। আমি কাউকে হ্যাঁ বলিনি। সুতরাং তোমাকেও বলব না। সুমনকে সারাজীবনের মতো পাওয়ার আশা ছেড়ে দাও। সুমন আজ থেকে এ পেশাই ছেড়ে দেবে। কেউ থাকবে না সুমনের পাশে। কাউকে খুশি নয়। সে ডলিও নয়, অন্য কেউও নয়। আজ থেকে সুমনের এক অন্যজীবন। সুমন কাউকে ভালবেসে ফেলেছে, তার সাথেই ঘর বাঁধতে চায় সে।"

ডলি বললো, "ভালবেসেছ? কাকে শুনি? কোন রূপসী? প্রেমে পড়েছ? শরীরি প্রেম? ও ভালোবাসা কতদিন টিকবে? সব জানা আছে আমার। নাও। বেশি রোমান্টিকতা দেখিও না তো। গা জ্বলে যায়। দুদিনের ভালোবাসা, পকেটে টাকা না থাকলে সব কর্পুরের মত উবে যাবে। মেয়েরা সব টাকা চায়। বুঝলে? বুঝলে? আমার মতন দ্বিতীয় একটা ডলি পাবে তুমি? বৌকে খাওয়াবে কি করে? বেশ্যাবৃত্তি করে? তোমার বউ দেখবে, তুমি তাকেও ভালোবাসছ? আবার অন্য মেয়ের ক্ষিধেও পূরণ করছ। যেন রক্ষিত এক পুরুষের জোর করে কাউকে ভালোবাসা। ও ভালোবাসা দুদিনও টিকবে না। মিছি মিছি মেয়েটার জীবন নষ্ট। তোমারও হাড় ভাঙা যৌন খাটুনি, আর তাকে ধরে রাখার কষ্ট।"

সুমন ফোনেতেই চেঁচিয়ে বললো, "তোমার কিন্তু বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে ডলি। সহ্যের একটা লিমিট আছে। সব কিছু মেনে নেওয়া যায় না। ইউ আর গোয়িং টু মাচ।"

ডলি বললো, "যাব নাকি মেয়েটাকে দেখতে? দেখে আসি ডলির সতীন কে? মেয়েটা তোমাকে যখন ফাঁসিয়েছে, নিশ্চয়ই কিছু একটা ক্রেডিট আছেই। সকাল থেকেই তোমার শরীরের ব্যামো। হঠাৎই জ্বর জ্বর। সব মন গড়া কথা। মেয়েটা তোমাকে আমার থেকে এত দূরে সরিয়ে দিল। দেখতে তো একবার হবেই। নইলে আমারও যে জেদ পূর্ণ হবে না। আই মাস্ট সি হার।"

শ্রীমতি ডলি ভয়ঙ্করী। এই ভয়ঙ্করী মহিলার হাত থেকে বাঁচবার জন্য এখন কি করা যায়? সুমন ওটাই চিন্তা করছিল। ডলি ওদিকে ফোনে সুমনের মাথা খারাপ করছে। সুরটা এবার নরম করে ফেলেছে। বলছে, "আসি না গো। একবার দেখি মেয়েটাকে। তোমার হবু বউ হবে। সুমনের বউ বলে কথা। তোমার বউকে আশীর্ব্বাদ করে আসব।"

কামনার ভূখ যেন এইভাবেই মেয়েদের জ্ঞানহারা করে ফেলতে পারে। বিভৎস কামনায় জ্বলছে। গৌরীর মত এই মেয়েগুলো।

সুমনের আবার গৌরীর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ওর জন্য জীবনটা নষ্ট। সুমন ভাবলো এবারো কি তাহলে আবার নষ্ট করে দেবে না কি এই মেয়েটা। মুখ দিয়ে গালাগালি বেরিয়ে এল, "খানকি মাগী।"

ডলি যেন কিছু না বোঝার ভান করেই বললো, "কি কিছু বলছ? আসব তাহলে?"

সুমন বললো, "তুমি কি পাগল হয়েছ? আমার মাথা খারাপ? আমি প্রেম করব? ও তো এমনি বলছিলাম। আমি মেয়েদের সাথে শুধু শুই, টাকার জন্য। তোমার ব্যাপারটা এক্সেপশনাল। ডলিকে যেভাবে আমি দেখি, সেভাবে আমি কাউকেই দেখি না। মেয়েরা মন দিতে চায়, আমিও দিই। মন দেওয়া নেওয়ার খেলা করি। ওটা আসল নয়। মেকী ভালোবাসা করতে হয়। বোঝো না? নইলে যে পেট চলবে না। ওরকমই একটা জুটেছে কপালে। দুদিন একটু ঘুরবো ফিরবো। তারপরে খেল খতম। পয়সাও হজম।"

ডলি বললো, "কে মেয়েটা?"

সুমন বললো, "ও তুমি চিনবে না। আছে একজন। তোমারই মতন। তবে তুমি যতটা সুন্দরী। ও ততটা নয়।"

ডলি বললো, "তুমি তাহলে ওই মেয়েটার সাথেই রয়েছ। ওসব শরীর খারাপের ঢং করছিলে।"

সুমন বললো, "না না শরীর সত্যি খারাপ। আমি যে মেয়েটার কথা বলছি,ওর সাথে আমার এক সপ্তাহ আগে দেখা হয়েছিল। তারপর আর হয় নি।"

ডলি বললো, "তুমি তাহলে কাল আসছ তো?"

সুমন বললো, "ইয়েস ডারলিং। কালকের বিকেলের পর থেকে সুমন শুধু তোমার। মাঝখানে এই কয়েক ঘন্টা তোমার কাছে সময় চাইছি।"

ডলি বললো, "ঠিক আছে তাহলে, রাখলাম। তুমি কিন্তু কথা দিলে আমাকে।"

সুমন বললো, "হ্যাঁ কথা দিলাম।"

ফোনটা রাখার পর সুমন বললো, "উফ হাঁফ ছেড়ে বাঁচা গেল। ব্যাটা যেন ঘাড়ে চেপে বসে আছে।"

বাথরুম থেকে বেরিয়েছে শাস্বতী। একেবারে সুমনের সামনে। যেন সব শুনেছে, সেভাবেই বললো, "কে ফোন করেছিল? ডলি?"

সুমন একটু আমতা আমতা করে বললো, "কে? কই না তো? কে ডলি?"

শাস্বতী বললো, "কেন লুকোচ্ছো? আমি সব শুনেছি, বাথরুম থেকে।"







।। সতেরো ।।

সুমন বললো, "কি শুনেছ?"

শাস্বতী বললো, "ওই যে মেয়েটা ফোন করে কিসব বলছিল।"

সুমন বললো, "আরে দূর। তুমি কি ভেবেছ? আমি সেই আগের সুমন আছি নাকি? গ্রাম্য সুমন, একদিন গৌরীর কব্জায় পরেছিল। আবার নতুন কেউ এসে বুঝি আমাকে কব্জা করবে?"

শাস্বতী বললো, "মেয়েটা তোমার পিছু ছাড়ছে না বুঝতেই পারছি।"

সুমন বললো, "ওরকম মেয়ে অনেক আছে। শুধু ডলি একা নাকি? সবাইকে ত্যাগ করলাম। আর তুমি পরে আছো ডলিকে নিয়ে?"

শাস্বতী পাশে বসার পর সুমন ওর পিঠটাকে জড়িয়ে ওকে কাছে টেনে নিল। শাস্বতীকে বললো, "জানো তো আমার কি ভয় হয়?"

শাস্বতী বললো, "কি?"

সুমন বললো, "তুমিও যদি সুন্দরীর মতন।"

শাস্বতী সঙ্গে সঙ্গে সুমনের মুখে হাতটা দিয়ে চাপা দিল। বললো, "ছিঃ ওকথা বলতে আছে? সুন্দরী আর আমি কি এক হলাম? সুন্দরী তো কিছুই জানতো না। আমি তো সব জেনে শুনেই....."

সুমন বললো, "আমি খুব খারাপ না শাস্বতী? তুমি সব জেনে শুনেই এই খারাপ ছেলেটাকে ভালবেসে ফেললে।"

শাস্বতী বললো, "আমি তো খারাপটা দেখি কম। শুধু ভালটাই দেখি বেশি। কিন্তু আজ যেন খারাপের মধ্যেও ভালোটাকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করলাম।"

সুমন বললো, "আমি খারাপ। আর আমার মধ্যে ভালোটা কি দেখলে তুমি?"

শাস্বতী বললো, "তুমি কি?"

সুমন বললো, "আমি সুমন।"

শাস্বতী বললো, "সুমনের কি পরিচয়?"

সুমন বললো, "আমি হলাম দোসর। মেয়েদের সখা। যে নারীদের খুশি করে।"

শাস্বতী বললো, "না, তা ঠিক নয়।"

সুমন বললো, "তবে?"

শাস্বতী বললো, "তুমি হলে প্রেমিক। সত্যিকারের প্রেমিক। যে কাউকে উজাড় করে ভালবাসতে পারে।"

সুমন বললো, "তাহলে আমার ভালোবাসাটা নাও। আমাকে ফিরিয়ে দিও না।"

শাস্বতী সুমনের গলাটা জড়িয়ে ঠোঁটে একটা আলতো করে চুমু খেয়ে বললো, "নিলাম তো! ফেরালাম কই? তুমি তো আমাকেও বুঝতে কত দেরী করে দিলে। ভেবেছিলে আমিও বোধহয় ওই গৌরীর মতন...... না, এখন তো আবার গৌরী নেই। এখন তার বদলে ডলি।"

বলতে বলতে ও নিজেই হেসে ফেললো।

শাস্বতী অনেক স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে ব্যাপারটা। সুমন একটু টেনশন মুক্ত হল। ঠিক করলো, কাল সকালে উঠেই মোবাইলের নম্বরটা আগে চেঞ্জ করবে। ডলি, মলি, পলি এদের হাত থেকে বাঁচতে হলে একটাই উপায়। নতুন সিম। নতুন নম্বর। যে নম্বরটা শুধু শাস্বতীর কাছে থাকবে। আর কোন ক্লায়েন্ট জানবে না।

শাস্বতী বললো, "ডলি তোমাকে খুব বিরক্ত করছে, না? সহজে ছাড়বে না।"

সুমন বললো, "বিরক্ত একটু করছে, কিন্তু আমি ভাবছি, মোবাইলের নম্বরটা চেঞ্জ করে নেব। তাহলে ও আর সহজে আমাকে পাবে না। মুক্তি পাওয়ার এটাই তো সহজ উপায়। দেখছ না আমার পেশাটাকে মনে করিয়ে দিয়ে ওটা কেমন বেজে ওঠে মাঝে মাঝে।"

শাস্বতী বললো, "তুমি তোমার মার সাথে ফোনে কথা বলো?"

সুমন বললো, "মায়ের সাথে কখনই কথা হয় না। তবে বোন আমাকে ফোন করে মাঝে মাঝে। আমার খবর নেয়। বুথ থেকে পয়সা দিয়ে ফোন করে। ওর কাছে আমার মোবাইল নম্বর আছে।"

শাস্বতী বললো, "মা কে তোমার দেখতে ইচ্ছে করে না সুমন?"

সুমন বললো, "দেখতে তো ইচ্ছে করে শাস্বতী। কতদিন দেখিনি মা কে। মা কে আমার মনে পড়ে। কিন্তু আমি শত চেষ্টা করেও যেতে পারি না মায়ের কাছে। বুকটা বেদনায় ভরে ওঠে। কষ্টটা সইতে হয়। কি করব? মেয়েদের নাগাল থেকে মুক্তি পেলে তবেতো কিছুটা সময় দিতে পারব মায়ের কাছে? মা, বোনকে খালি জিজ্ঞাসা করে, সুমনকে বল, ও কবে আসবে? কবে আসবে? আমি যে কতদিন দেখি না ওকে। বোন ফোন করে শুধু কান্নাকাটি করে। আমি বলি, কাঁদছিস কেন তুই? মাকে আর তোকে কদিন পরেই আমি গ্রাম থেকে নিয়ে আসব, দেখিস। তোর দাদা, দু’হাত ভরে শুধু টাকা রোজগার করতে চাইছে তোর আর মায়ের জন্য। তুই এমন কাঁদতে শুরু করলে আমি কি করে ঠিক থাকি বল? চিন্তা করিস না। আমি তোদের ঠিক নিয়ে আসব।"

একটু থেমে রুদ্ধ গলায় সুমন বললো, "আমি ছাড়া ওদেরকে দেখার কেউ নেই শাস্বতী। তোমাকে বলেছিলাম না। মা বোন, আমি ছাড়া কত অসহায়। যেদিন আমি ওদের এখানে আনতে পারব, সেদিনই আমার শান্তি। মা আসবে, আর সেদিন আমি তোমাকে নিয়ে যাব, মায়ের কাছে। বলব, 'এই দেখো মা, কাকে এনেছি। তোমার হবু বউ শাস্বতী'। একটু দুষ্টু, কিন্তু মিষ্টি, তোমার ছেলের বউ শাস্বতী।"

শাস্বতী সুমনকে বুকে জড়িয়ে বললো, "কালই মা কে আর বোনকে ডাকো। আমি ওদের এখানে থাকার ব্যবস্থা করছি।"

সুমন বললো, "সত্যি বলছ?"

শাস্বতী বললো, "সত্যিই তো বলছি। আমি তোমার জন্য সব করতে রাজী আছি সুমন। এই শাস্বতী কোনকিছুতেই পিছপা হবে না।"

সুমন বললো, "কিন্তু?"

শাস্বতী বললো, "কোন কিন্তু নয়।"

সুমন বললো, "কিন্তু এখানে ওদের থাকার ব্যবস্থা কি করে হবে? এই ঘুপচি ঘরে? এঁদো গলিতে আমি মা, বোনকে কি করে রাখব?"

শাস্বতী বললো, "সে ব্যবস্থা তো আমি করেই রেখেছি। আমার এই ঘরটা আছে কি করতে? এখানেও দুটো ঘর। তোমার মা বোন স্বচ্ছন্দে এখানে থাকতে পারবে।"

সুমন অবাক হয়ে যাচ্ছিল শাস্বতীর উদারতা দেখে। মুখে শুধু বললো, "তুমি?"

শাস্বতী বললো, "হ্যাঁ আমি। আমার ঘরেই রাখব ওনাদের দুজনকে। তোমাকে এই নিয়ে কিচ্ছু চিন্তা করতে হবে না।"







।। আঠারো ।।

সুমন তখনও হাঁ করে তাকিয়ে আছে শাস্বতীর দিকে। শাস্বতী বললো, "হাঁ করে দেখছ কি? নাও বোনকে ফোনটা করো" বলে মোবাইলটা বিছানা থেকে তুলে দিল সুমনের হাতে।

সুমন আবার শাস্বতীকে বললো, "তুমি পারলে আরো একবার চিন্তা করে নাও। একেবারে কালই?"

শাস্বতী বললো, "হ্যাঁ কালই। শুভ কাজের আবার দেরী কিসের গো? একদিন না একদিন তো ওনাদের আসতেই হত। সেটা কালকেই হোক, তোমার মা বোনও খুশি হবে।"

সুমন বললো, "কিন্তু?"

শাস্বতী বললো, "আবার কি হল? কিসের কিন্তু?"

সুমন বললো, "বোনের কাছে তো ফোন নেই। আমাকে তাহলে দীপেনের এসটিডি বুথে ফোন করতে হবে। দীপেন গিয়ে খবর দেবে, তারপর বোন এসে আবার আমাকে ফোন করবে। তাছাড়া মা যে শয্যাশায়ী, বোন একা একা মাকে কি করে ওখান থেকে নিয়ে আসবে? ও তো ঘাবড়ে যাবে। ভয়ে কিছুতেই আসতে পারবে না। রাস্তাঘাট চেনে না। ট্রেন ধরার ব্যাপারটা তো আছেই। ও অতসব বোঝেই না। তাছাড়া হুটোপাটি করে আসতে গেলে যদি কিছু বিপদ হয়?"

শাস্বতী বুঝতে পারছিল, সুমন বাড়ীর পরিস্থিতিটা জানে। ও যেটা বলছে, ঠিকই বলছে। সুমনের বোনের পক্ষে মা'কে কিছুতেই আনা সম্ভব নয়। ওর সঙ্গে সঙ্গে মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সুমনকে বললো, "তুমি আগে তোমার বোনকে ফোন করো। তারপর আমি ব্যবস্থা করছি।"

সুমন বললো, "কিভাবে?"

শাস্বতী বললো, "কালই আমি গাড়ী পাঠিয়ে দেব ওখানে।"

সুমন বললো, "গাড়ী?"

শাস্বতী বললো, "হ্যাঁ গাড়ী।"

সুমন চেয়ে আছে দেখে শাস্বতী বুঝলো পুরোপুরি বুঝতে পারেনি, তাই খুলে বললো, "আমি অফিস থেকে গাড়ী চেয়ে নেব। স্নেহা ম্যাডাম না বলবেন না। গাড়ীর ড্রাইভার অশোক খুব ভাল লোক। তুমি যদি ঠিকানা দিয়ে দাও, ও ঠিক চলে যাবে। তাছাড়া ভেবে দেখলাম, মা'কে তো গাড়ী ছাড়া নিয়ে আসা সম্ভব নয়। অতদূর থেকে ট্রেনে করে মা বোন কি করে আসবে? তার থেকে গাড়ী গিয়ে ওনাদের ওখান থেকে নিয়ে আসবে, সেটাই কি ভাল নয়?"

সুমন বললো, "তা ঠিক। কিন্তু অতদূরে সেই গ্রামে, তোমার ঐ অশোক কি পারবে?"

শাস্বতী বললো, "ঠিক পারবে। অশোক গাড়ী নিয়ে যেখানে খুশি যেতে পারে। আমি বললে ও না করতে পারে না। শুধু স্নেহা ম্যাডামকে রাজী করে নেওয়াটা দরকার।"

সুমন অবাক চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল শাস্বতীর দিকে। যেভাবে ও জোর দিয়ে বলছে, ফোনটা তাহলে এক্ষুনি করতে হয় কেয়াকে, ওর ছোট বোন।

শাস্বতী আবার বললো, "দেরী কোরো না। ও রাজী হলেই আমি স্নেহা ম্যাডামকে ফোন করব।"

সুমন শাস্বতীর কথা মত ঐ এসটিডি বুথে লাইন মেলাতে লাগল। ফোনটা করতে করতে শুধু ভাবছিল, সব যেন কত তাড়াতাড়িই ঠিক হয়ে গেল। মা আর বোনকে নিয়ে সুমনের দেখা স্বপ্ন। বাবা ওর জীবনকে যেভাবে গড়তে চেয়েছিলেন, সুমন সেভাবে গড়তে পারেনি। কোথায় যেন একটা কালসিটে দাগ লেগে গেল। বাঁচার তাগিদে শেষ মেষ এক ভাড়াটে পুরুষের জীবন। যেখানে ভালোবাসার কোন মানে নেই। শুধু কামনাবাসনায় দগ্ধ মহিলাগুলোর পাপী মনকে তৃপ্ত করা। কাঁটার মধ্যে হঠাৎই ফুটল গোলাপ ফুল। জীবনকে এক নতুন দিশা দেখাতে চাইছে। এ ফুলে শুধু ঘ্রাণ নয়। জীবনে চলার পথেও প্রেরণা, উদ্দীপনা জাগায়। শাস্বতীই ওর সেই প্রেরণা। যেন সদ্য ফোটা একটা মিষ্টি গোলাপ ফুল।

দুবার চেষ্টা করতেই ও পেয়ে গেল দীপেন কে। শাস্বতী তখন সুমনের সামনেই বসে আছে। সুমন বললো, "দীপেন, আমি কলকাতা থেকে সুমনদা বলছি। একটা কাজ করে দেবে ভাই। আমার বোন কেয়াকে একটু ডেকে দেবে? যদি ওকে একটু খবর দাও। ভাই হয়ে যদি এই উপকারটুকু করে দাও, খুব ভাল হবে। আমার কেয়াকে খুব দরকার। কাল কলকাতা থেকে গাড়ী পাঠাচ্ছি। মা'কে আর কেয়াকে কলকাতায় নিয়ে আসব। তুমি বলে দিলেই কেয়া ছুটে আসবে। ও তখন আমাকে ফোন করবে।"

দীপেন বললো, "এখুনি খবর দিচ্ছি সুমনদা। কেয়া এলেই আপনাকে, আমার এখান থেকে ফোন করবে। আমি এখুনি ওকে গিয়ে সব বলছি।"

ফোনের লাইনটা ছেড়ে দিয়ে সুমন বললো, "বলে তো দিলাম। কেয়া খবর পেলেই ছুটে আসবে। দাদাকে ও এত ভালবাসে, যদি দীপেন ঠিকঠাক সব বুঝিয়ে বলতে পারে, কেয়া খুশিতে পাগল হয়ে যাবে, মা'কেও বলবে, মা'ও শুনে খুশি হবে।"

সুমনের মুখে খুশির হাসি দেখে শাস্বতী ওকে আরো আস্বস্ত করলো। বললো, "আমি আছি তো? সব ঠিক হয়ে যাবে।"

উচ্ছ্বাস আর আনন্দটাকে মানুষ যখন চেপে রাখতে পারে না, তখন দু চোখ দিয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে আসে। ওটাকে আনন্দাশ্রু বলে। দুহাতে চোখের পাতা দুটোকে একবার মুছে নিয়ে সুমন বললো, "আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।"

শাস্বতী বললো, "কি?"

সুমন বললো, "তুমি আমার জন্য এতটা করছ? এও কি সম্ভব?"

শাস্বতী বললো, "কেন? একথা কেন বলছ?"

সুমন বললো, "বলছি কেন, আমার ভেতরটা একেবারে ফেটে যাচ্ছে শাস্বতী। ভাবছি, কি অতুলনীয়া তুমি। আমার বেঁচে থাকার মানেটা যেন পরিষ্কার করে দিলে আজ থেকে। এও এক জীবন, যেখানে টান আছে, শুধু স্বার্থটা নেই।"

শাস্বতী সুমনের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। সুমন বললো, "জীবনে জানো, আমি অনেক ভুল করেছি। ভেবেছিলাম ভুলের খেসারত তো আমাকে কোনদিন দিতে হবে না। আমি যা ভুল করেছি, তার যখন কোন ক্ষমা হয় নি, আমার জীবন এভাবেই চলবে। আমার বোঝা উচিৎ ছিল পৃথিবীতে সব নারী এক নয়। নারীদের মধ্যেও ভালবাসা আছে, কোমলতা আছে। শুধু সঠিক নারীকে খুঁজে নিতে হবে। তোমায় যেমন খুঁজে পেলাম।"

শাস্বতী বললো, "অতো ইমোশনাল হয়ে না তো। এখন জীবন ভীষন প্র্যাকটিকাল। জীবনের যা সত্যি সেটাই ভুল, আর যা মিথ্যে সেটাই ঠিক। আমরা জীবনে বেঁচে থাকার মানেটা অনেক সময় খুঁজে পাই না। অন্ধকারে হাতরাতে হাতরাতে নিজেরাই একদিন দিশাহারা হয়ে পড়ি। তখন মনে হয় সবি ভুল। কিছুই আর সত্যি নেই এই পৃথিবীতে।"

খুব পুরোনো একটা বাংলা গানের কলি মনে পড়ে যাচ্ছিল সুমনের। কথাটা ছিল এইরকম, এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা সবি ভুল। সবি ভুল।

শাস্বতীকে বললো, "আমার ভুলটা তুমি আজ ভেঙে দিলে। আমি আমার এই নোংরা পরিচয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারলাম শুধু তোমার জন্য। আমার জীবনটাকে তুমি বাঁচালে শাস্বতী।"

বলেই শাস্বতীকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল সুমন। শাস্বতী বললো, "তুমি খুব ছেলেমানুষ। আসলে এই পেশায় তুমি নিজেকে নিযুক্ত করলেও, সেই গ্রাম্য সরলতাটা তোমার মধ্যে এখনও রয়ে গেছে। শহরের ছেলেরা এমন হয় না। তুমি তাদের থেকে পুরো আলাদা রকম।"

সুমন এবার নিজেকে একটু ঠিক করে নিল। ফোনটা বাজছে। কেয়া ফোন করেছে বুথ থেকে।সুমন আনন্দে আত্মহারা হয়ে ফোনটা ধরলো। কেয়াকে বললো, "কি রে কেয়া কেমন আছিস?"

কেয়া বললো, "দাদা তুই? আমাকে আর মা'কে কলকাতায় নিয়ে যাবি? এসব কি শুনছি?"

সুমন হেসে বললো, "ঠিকই তো শুনেছিস। মা'কে আর তোকে আনতে গাড়ী পাঠাচ্ছি কলকাতা থেকে। অশোক বলে একজন যাবে। তোকে আর মা'কে নিয়ে আসবে ওখান থেকে।"

কেয়া বললো, "দাদা তুই আসবি না?"

সুমন বললো, "না আমি এখন গেলে একটু অসুবিধে আছে। আমি পরে যাব কোনদিন, জিনিষ পত্র আনতে।"

কেয়া বললো, "আমরা কোথায় যাব দাদা? কলকাতায়?"

সুমন বললো, "হ্যাঁ রে বোকা। তুই মাকে নিয়ে আমার এখানে আসবি, আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।"

কেয়া বললো, "মা তো শুনেই কেমন যেন করছে। বলছে, সে কি রে সুমন কলকাতায় নিয়ে যাবে আমাদের? আমি বললাম, দাঁড়াও, আগে দাদার সাথে কথা বলে আসি। তারপর তোমাকে এসে সব বলছি।"

সুমন বললো, "সাবধানে মা কে আনবি। যে লোকটা যাবে, খুব ভালো লোক। তোদের কে ওই নিয়ে আসবে এখানে। জামাকাপড় অল্প কিছু সাথে আনবি। বেশী কিছু আনার দরকার নেই। ঘরে তালা দিয়ে দিবি। আমি একমাস পরে গিয়ে আসবাব পত্র সব নিয়ে আসব।"

কেয়া বললো, "কিন্তু আমাদের বাড়ীটা? সেটা কি হবে দাদা? আমরা কি কলকাতাতেই এরপরে থাকবো।"

সুমন বললো, "বাড়ী না কুঁড়েঘর? কি হবে ওখানে থেকে। তোর জন্য একটা ভালো ছেলে দেখা শুরু করছি কাল থেকে। এখানেই তোর বিয়ে দেবো।"

কেয়া একটু লজ্জা পেয়ে বললো, "যাঃ তোর শুধু খালি ইয়ার্কি। দাঁড়া আমি মা'কে গিয়ে এক্ষুনি খবরটা দিই।"

শাস্বতী সুমনকে এবার একটু ইশারা করলো। সুমন বুঝে গেল। কেয়া বললো, "আর হ্যাঁ। যে লোকটা যাবে। ওর কাছে ফোন থাকবে। মোবাইলে আমার সাথে তোদের কথা বলিয়ে দেবে। তাহলে তোর আর মা'কে কোনো চিন্তা করতে হবে না। ও ঠিক নিয়ে আসবে।"

কেয়া ফোনটা রাখার আগে সুমন বললো, "এখনই বাড়ী গিয়ে সব গোছগাছ করে নে। কাল খুব সকালেই অশোক রওনা দেবে।"

কেয়া একটু খুনসুটি মেরে বললো, "দাদা, তুই কি কারুর সাথে ভাব করছিস?"

সুমন হাসতে হাসতে বললো, "তুই আয়। তারপরে তোকে সব বলব।"





কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





লেখক(Lekhak)-এ লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

লেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment