আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
মেয়েমানুষের কেপ্ট
Written By Lekhak (লেখক)
Written By Lekhak (লেখক)
।। তেরো ।।
সকাল হয়েছে, শাস্বতী বললো, "আমি আজ কাজে বেরোবো না। তোমার সাথে বসে গল্প করবো। তুমি রাজী আছো তো?"
সুমন বললো, "সব কথা আমার কাছ থেকে জেনে নিলে, এবার আমাকে তোমার মনে ধরবে তো?"
শাস্বতী হাসছিল। বললো, "এ পেশায় আসার পর থেকে তোমার তো অনেক ক্লায়েন্ট। নাম গুলো যদি শুনতে শুরু করি, সারাদিন লেগে যাবে, এক একটা কাহিনী শুনতে। আমি ওসব শুনতে চাই না, শুধু জানতে চাই, গৌরীই কি তোমার জীবনকে এমন বদলে দিল? বিকাশদার কাছে ধরা পরার পরে তুমি কি করলে? তুমি গ্রাম ছেড়ে চলে এলে কলকাতায়?"
কথা বলতে বলতেই শাস্বতী দেখল, সুমনের মোবাইলটা বাজছে। এত সকালে কোন রমনীর ফোন? নিশ্চই কোনো ক্লায়েন্টের। সাত সকালেও সুমনের রেহাই নেই।
সুমন একটু ইতস্তত করছিল। দূরভাষ যন্ত্র বাজতে শুরু করা মানেই, এই বুঝি ডাক এল আবার। ফোনটা ধরছে না দেখে শাস্বতী বললো, "ধরো না কেন? ধরো। ইতস্তত করছ কেন? ধরে ওকে না বলে দাও।"
সুমন শাস্বতীর কথা মতন ফোনটা ধরলো। ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল যার গলা সে হল ডলি। সুমনের নতুন ক্লায়েন্ট।
সুমন ফোনটা ধরার সাথে সাথেই শাস্বতী কিছুটা এগিয়ে এল ওর দিকে। সুমনের কানের কাছে কানটা নিয়ে গিয়ে শুনতে লাগল মহিলা কি বলছে।
ডলি বললো, "কি ব্যাপার সুমন? কাল থেকে ফোন করছি। খালি তোমার ফোন এনগেইজড্। বলেছি না ঐসব মেয়েগুলোর প্রতি তোমার দূর্বলতা ছাড়ো। আমি যখন তোমাকে মনে প্রানে চেয়েছি, দরকার কি তোমার ঐসব ফালতু মেয়েদের সাথে কথা বলে?"
শাস্বতী শুনছে।
সুমন বললো, "কই, লাইন তো এনগেজ ছিল না। আমি তো কাল তোমার ওখান থেকে ফিরে আসার পরে, আর কারুর সাথে কথা বলিনি।"
ডলি বললো, "বলা তো যায় না, যা ডিমান্ড তোমার। এখন হয়তো আবার আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে সার্ভিস দিচ্ছো। পাশে কেউ নেই তো তোমার?"
সুমন একবার তাকালো শাস্বতীর দিকে। তারপর ডলিকে বললো, "না কেউ নেই। কি হয়েছে বলো?"
ডলি বললো, "কি হবে আবার? আমি আমার ডিয়ারকে ফোন করছি। জানো না তোমার সাথে কথা না বলা পর্যন্ত কিছু ভালো লাগে না আমার।"
সুমন বললো, "এই তো, কথা বলছো। বলো এবার কি করতে পারি তোমার জন্য?"
শাস্বতী অবাক চোখে সুমনের কথাগুলো শুনছে, আর কান খাড়া করে ডলির কথাগুলোও শোনার চেষ্টা করছে।
সুমনকে মেয়েটা বললো, "ইউ আর মাই সুইট নটি গাই সুমন, আই লাভ ইউ ভেরী মাচ।"
লাভ কথাটা মেয়েগুলোর মুখ থেকে শুনে শুনে পচে গেছে সুমনের। মহিলা ক্লায়েন্টদের অবৈধ অনৈতিক যৌনসঙ্গমে সাড়া দেওয়ার জন্য ওগুলো এক রকম মেকী ডাক। সব মেয়েরাই সুমনকে আই লাভ ইউ বলে। আসলে ভালবাসাটা কিছু নয়, দেহ সুখটাই আসল কথা।
মেয়েটা বললো, "কি করছ ডার্লিং? আজকে চলে এসো তাহলে। তুমি তো জানো, তোমাকে ছাড়া আমি কত নিঃসঙ্গ।"
সুমন একবার তাকালো শাস্বতীর দিকে, তারপর ডলি কে বললো, "আজ আমি কোথাও বেরোবো না ভাবছি।"
ডলি জানতে চাইলো, "কেন ডারলিং?"
সুমন বললো, "শরীরটা ভীষন খারাপ। কাল থেকে জ্বর জ্বর। রাস্তায় বেরোলে আরো কাবু হয়ে পড়ব।"
ডলি যেন নাছোড়বান্দা, সুমনকে বললো, "আমি তাহলে আসব তোমার কাছে? তোমার জ্বর ছাড়াতে তাহলে আসছি তোমার কাছে।"
সুমন সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে ওঠার মতন করে বললো, "না না, এখানে নয়। এ বাড়ীতে আমি কাউকে আনতে চাই না। এখানে এলে পাড়ার ছেলেগুলো বুঝে যায়। ওরা সন্দেহ করে। তুমি এলে অসুবিধে হবে।"
ডলি বললো, "কাল তো ভাল ছিল শরীরটা। কি করে খারাপ হল? আমি কাছে না থাকলেই বুঝি তোমার এসব হয়। তুমি আসবে না, ভাল লাগবে না। কি করে সারাদিন কাটাবো বলো তো আমি? ডলির জন্য একটুকু কষ্ট কি করতে পারবে না তুমি? এখন না হয়, বিকেলে এসো। একটু রেষ্ট নিয়ে। আমি বরং অপেক্ষা করবো।"
শাস্বতী কান লাগিয়ে মোবাইলে ডলির কথাগুলো শুনে ভাবছে, এবার সুমন কি বলে?
ডলিকে পুরোপুরি নিরাশ করে সুমন বললো, "আজ বাদ দাও ডলি। আজ আমার কিছুই আর ভালো লাগছে না।"
ফোনটা ছেড়ে দেওয়ার আগে ডলি বললো, "ঠিক আছে, ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আমি ঠিক বিকেলে তোমায় ফোন করবো। তোমার খবর নেবো। বলা তো যায় না, আমার কাছে না এসে তুমি যদি আবার অন্য কারুর....."
ফোন কাটার পরে সুমন শাস্বতীকে বললো, "দেখলে তো? তুমি ছাড়া আরো কত মেয়ে আমাকে চায়। এও তোমার মত নিঃসঙ্গ। স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে একা বাস করছে বালীগঞ্জের ফ্ল্যাটে। ডলি খুব সুন্দরী। অসম্ভব রূপসী বললেও সব কথা বলা যায় না ওর সম্পর্কে। যে রূপ সবাই দেখে ডিসেম্বরের কোন ঘন কুয়াশা ঢাকা সন্ধ্যায়, টেলিভিশনের পর্দায় মিস ইন্ডিয়া ফেমিনা কনটেস্টে, সব রূপই লেগে আছে ডলির শরীরের সবখানে। ও যখন ডাকে, আমাকে সারা দিতেই হয়। টাকার বিনিময়ে শরীর বেচি আমি, সেলফোনের সুইচ অফ করে রাখতে পারি না।জানিনা কখন আসবে বিচিত্র এই সব আমন্ত্রণ।"
শাস্বতী বললো, "কোথায় সেই গৌরী, আর কোথায় বা সুন্দরী? গ্রামের সুপুরুষ ছেলেটাকে এখন চেনা দায়। তোমার কখনো মনে হয় না, এক নারী খারাপ বলে, সব নারী কখনো খারাপ হয় না। মেয়েরা পুরুষকে কামনা করে বলে কি মেয়েরাই খারাপ? পুরুষেরও তো কামনা বাসনা আছে। কত মেয়ে আছে, তারাও কোন পুরুষের রক্ষিতা। পয়সার জন্য কত মেয়ে ভাড়া খাটে। বস্তাপচা গলিগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েগুলো, পুরুষ খদ্দেরের আশায়। ওরাও তো কামপাগল লোকগুলোর ক্ষিধে মেটায়। জীবনে সুখ ওরাও হয়তো পায়নি, তাই আজ এমন জীবিকা বেছে নিয়েছে।"
সুমন বললো, "সুখ তো আমিও পাইনি। কিন্তু তা বলে আমি কিন্তু স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিই নি।"
শাস্বতী বললো, "কিরকম?"
সুমন বললো, "বিকাশদার কাছে আমি ধরা পড়ে গেলাম। লোকটা ভীষন ভাবে মারতে মারতে প্রায় আধমরা করে দিয়েছিল আমাকে। আমাকে শাসালো। বললো, তোর মাকে খবর দিচ্ছি, তোর বোনও জানুক। তুই কত বড়ো জানোয়ার। আমি নেই আর তলে তলে এসে এসব করছিস। সারা গ্রামে ন্যাংটো করে ঘোরাবো তোকে।"
শাস্বতী বললো, "তারপর?"
সুমন বললো, "বিকাশদা পরে বুঝতে পেরেছিল, এমন কিছু করলে, নিজের ইজ্জ্বতটাও যে থাকবে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত। সারা গ্রামে আমার তো বদনাম হবেই, এছাড়া গৌরীকে নিয়েও ছিছি করবে সবাই। সবাই পরেরটা না বুঝলেও, নিজেরটা তো বোঝে তাই না?"
শাস্বতী বললো, "ও তোমাকে ছেড়ে দিল?"
সুমন বললো, "ছাড়লো, তবে ঐ শর্ত রেখে। আমাকে গ্রাম ছেড়ে চলে আসতে হবে। দুদিন আমাকে সময় দিল। বললো, যা করার তুই এর মধ্যেই করবি। আমি কোন কথা তোর শুনতে চাই না।"
আমি রাজী হলাম। হাতে মাত্র দুদিন সময়। জানি না মা বোনকে ফেলে কিভাবে গ্রাম ছেড়ে আসব। এদিকে না আসলে আবার বিকাশদা রেহাই দেবে না আমাকে। মাকে বাড়ী ফিরে এসে বললাম, "মা আমি কলকাতায় একটা কাজ পেয়েছি। দুদিন বাদেই যাব। তোমাকে আর বোনকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কি করবো? যেতে তো হবেই। এই কাজটা না করলে, সহজে আর কাজ জুটবে না মা।"
মা বললো, "কে তোকে কাজ দিল? বিকাশ দা?"
আমি হতভাগ্যের মতন বললাম, "হ্যাঁ। বিকাশদাই কাজটা দিয়েছে, দুদিন পরেই আমাকে কলকাতায় যেতে হবে।"
শাস্বতী অবাক চোখে সব শুনছে, সুমনকে বললো, "সুন্দরীকে গৌরী কি আগেই বলে দিয়েছিল? ওর কানভারীটা কিভাবে করলো?"
সুমন বললো, "গৌরী যখন আমাকে ডাকতো, আমি সহজে যেতে চাইতাম না। সুন্দরীকে সঙ্গ দিতাম। ওর সহ্য হতো না। একদিন হঠাৎই সুন্দরী আমায় যা নয় তাই বললো। গৌরীর সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক আছে, সে কথাও বললো। বললো, "তুমি খুব নিচ। আমি এমন জানলে কিছুতেই তোমাকে ভালবাসতাম না।"
আমি ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও কিছুতেই বুঝতে চায়নি আমার কথা। সুন্দরীকে আমি অনেক বলেছিলাম, "আমি গৌরীর কাছে যাই, তুমি কি করে জানলে? ও তো একবার কি দুবার মাত্র গেছিলাম। ও আমাকে কিছু টাকা দিয়েছিল। বিকাশদার বৌ, বিকাশদা আমাকে চাকরি দেবে বলেছে, তাই।"
সুন্দরী আমার বানানো কথাগুলো বিশ্বাস করে নি। আসল সত্যিটা ওর কাছে তখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। গৌরীই নিজে থেকে বদ বুদ্ধি খাটিয়ে ওর মনটাকে বিষিয়ে দিয়েছে। আমি তখনো জানি না। সুন্দরী যখন আমার সাথে দেখা বন্ধ করে দিল, তখন আমি যেন অসহায়। ভাবছি ভালোবাসার বদলে আমি কি পেলাম? তাহলে কি গৌরীর ভালবাসাটাই খাঁটি। যে এত বড় ঝুঁকি নিয়ে আমার সাথে দেহ ভালবাসা খেলছে, আমি তার ডাকে যাব? না সুন্দরীর মায়ায় পড়ে থাকবো?
শাস্বতী বললো, "তুমি কখন জানতে পারলে?"
সুমন বললো, "সুন্দরী ওভাবে আমার মুখের ওপর বলে দেওয়াতে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। দুদিন মন খারাপ করে বাড়ীতে বসেছিলাম। তারপর গৌরীই আমাকে আবার ডাকলো। ও দেখতে চেয়েছিল, আমি এবার পুরোপুরি ওর দিকে মন বসাতে পেরেছি কিনা? সুন্দরী জীবন থেকে চলে গেল। আর আমি যেন পাপে বিদ্ধ হয়ে আরো অতলে তলিয়ে যেতে লাগলাম।"
এরপরেও কয়েকবার ওর কাছে গেলাম, তারপর বিকাশদার কাছে ধরা পড়ে গেলাম। যেদিন গ্রাম ছেড়ে চলে আসছি, সেদিন সুন্দরীর সাথে অনেক চেষ্টা করেও দেখা করতে পারিনি। ও বাবা মায়ের সাথে কোথায় গেছে, শুনলাম বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমাকে আমার বাকী মেয়ে বন্ধুগুলো বলেছিল, "সুন্দরী খুব দূঃখ করেছে আমাদের কাছে। তুই ওই বিকাশদার বৌটার সাথে পিরীত করেছিস? খারাপ বউটার জন্য সুন্দরীকে এত কষ্ট দিলি কেন তুই? ওকে তো গৌরীই সব নিজে মুখে বলেছে। পুকুরপাড়ে দেখা হয়েছিল, বলেছে, "সুমনের সাথে প্রেম করো তুমি? ও তো আমার সাথেও করে।"
সুমনের জীবন কাহিনী শুনতে শুনতে, শাস্বতী যেন অতি উৎসাহী। হা করে কথাগুলো গিলছিল, সুমন তারপরই বললো, "আমি কিন্তু কলকাতায় আসার আগে, প্রথমে চলে গিয়েছিলাম পাটনায়।"
শাস্বতী বললো, "পাটনায়?"
সুমন বললো, "হ্যাঁ। তাও দুদিনের জন্য। সন্ধেবেলা গান্ধী ময়দানে পা রেখে আমি কিছু যুবককে দেখে অবাক হয়েছিলাম। পাজামা পাঞ্জাবী পরা, ঠোঁটে লিপস্টিক, চোখে সুরমা, ঘন ঘন পান খাচ্ছে আর পিক ফেলছে, হাতে বাঁকা রঙীন রুমাল। মনে হল ওরাই যেন এ যুগের আশ্চর্য শরীর যুবক। আমি ওদের কাছ থেকেই ধার করলাম বুদ্ধিটা। সাহস জোগালাম। একটা ছোট্ট বিজ্ঞাপন দিলাম দৈনিক সংবাদ পত্রে। আপনি কি নিঃসঙ্গ নারী? মনের কথা খুলে বলতে চান? তাহলে চিঠি লিখুন এই ঠিকানায়। তলায় বক্স নম্বর। প্রথম সপ্তাহেই অভাবিত সাড়া মিলেছিল এই আমন্ত্রণ পত্রে। নয় নয় করে গোটা কুড়ি চিঠি এসে জমা হয়েছিল। তাদের থেকে বাছাই করে আমি যখন ফোন করি আমার মহিলা ক্লায়েন্টদের। এক একটা কন্ঠস্বর শুনে বিমোহিত আমি, সেই শুরু হল এই পথে আমার অভিযানের পথ চলা। মহিলাদের কামুক জীবনের শেষ না হওয়া উৎসব। গ্রাম্য যুবক সুমনের এক রমরমে ব্যাবসা। অনেক টাকা চাই অনেক। যে টাকার জন্য সুমন হন্যে হয়ে ঘুরেছে অনেকের দোরে দোরে।"
।। চোদ্দো ।।
শাস্বতী বললো, "আজ থেকে এসব আর কিচ্ছু নয়। অবোধ শিশুর মত কামনার পাকে হামাগুড়ি তুমি অনেক দিয়েছ। এবার সুমনের এক অন্যজীবন, যেখানে সেলফোনের কোন আর্তনাদ নেই, রমনীদের হাতছানি নেই। শুধু একটি মেয়ে উজাড় করে ভালবাসতে চায় তোমাকে। তাকে তোমাকে শুধু আপন করে নিতে হবে। সুমন আজ থেকে কারুর ডাকে যাবে না, শুধু শাস্বতীকে ভালবাসা ছাড়া।"
সুমন বললো, "সত্যিই তো এর কি কোন দরকার ছিল? আমার জীবনটা এখন কাটছে, ইচ্ছা বা অনিচ্ছাতে। এই জীবন কাটাবো বলেই কি কলকাতায় এসেছিলাম? মধ্য কলকাতার কোন এক বদ্ধ গলির সূর্যহারা অরণ্যের মত অন্ধকার ঘরে বসে যেন পৃথিবীর আলো দেখবো বলে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি। এই জীবনটা তো আমি সত্যিই চাইনি শাস্বতী। এই ছাব্বিশ বছরের জীবনটা যদি কোন অভিজ্ঞ শল্য চিকিৎসকের ডিসেকশন টেবিলে রেখে কাঁটা-ছেড়া করা হয় কি বেরিয়ে আসবে? অনেক অনুচ্চার বেদনা, স্বপ্নভঙ্গের শেষ না হওয়া ইতিহাস, বিশ্বাসঘাতকতার করুন কাহিনী। এর পাশাপাশি জয়ের কোন নিশান নেই, জীবনের কোন লক্ষ্য নেই। আমার এই সুন্দর চেহারাটার দাম শুধু এই ই।"
শাস্বতী বললো, "ছাড়ো তো ওসব পুরোনো কথা। চলো তুমি আর আমি আজকে কোথাও বেরুবো।"
সুমন বললো, "কোথায়?"
শাস্বতী বললো, "কেন যাবার কি জায়গা নেই নাকি? রাস্তায় বেরোলে কত জায়গা আছে। তুমি শুধু আমার পাশে থাকবে, তাহলেই হবে।"
দুজনে এই প্রথম একসাথে বেরোলো একটু পরে। শাস্বতীর পরণে হালকা বেগুনি রঙের সিল্কের শাড়ী। বাঁ-হাতে নকশা করা ব্রেষ্টলেট। লেজার কাট চুল, দুই কানে রড রিং। কপালে এস টিপ। সুমন পরেছে পাজামা-পাঞ্জাবী। দুজনকে পাশাপাশি যেন দারুন মানিয়েছে।
শাস্বতী বললো, "তুমি যা সুন্দর দেখতে, তাই একটু বেশী করে সাজলাম, না হলে কি তোমার পাশে আমাকে মানাবে বলো?"
সুমন বললো, "সুন্দরী হলেই কি সব হয় নাকি? এক সুন্দরীকে তো হারালাম, আবার তোমাকে হারাবো? আমার বেশী সুন্দরীর আর দরকার নেই।"
দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল এসপ্ল্যানেডে। শাস্বতী সুমনকে একটা সুন্দর জামা কিনে দিল ধর্মতলা থেকে।
সুমন বললো, "আমিও কিছু কিনে উপহার দিই তোমাকে?"
শাস্বতী না করা সত্ত্বেও ও জোর করে একটা শাড়ী কিনল নিউমার্কেট থেকে। সুমনের তরফ থেকে ভালোবাসার উপহার। এই প্রথম সুমনের মনে হল, ওর ব্যক্তিগত জীবন, পাস্ট লাইফ, সব জেনেও শাস্বতী ওকে শুধু মাত্র মেয়েমানুষ কেপ্ট হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে না। ছলনা ভালবাসায় নয়, সত্যিকারের ভালবাসায় বাধতে চাইছে সুমনকে।
দুজনে এরপরে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল গড়ের মাঠ। যেখানে লোকজনের ভীড়, কোলাহল বিশেষ নেই। একটা বটগাছের তলায় দুজনে বসলো আরাম করে। সুমন বললো, "জানো তো, ভালবাসার নামের শব্দটা আমার অভিধান থেকে হারিয়ে গিয়েছিল এতদিন। আজ এতদিন বাদে মনে হল, সত্যিকারের ভালবাসার কোন বিকল্প নেই। জীবনের সুখ দূঃখ ভাগ করে নেওয়ার জন্য আমি যেন সত্যিই কাউকে পেলাম।"
শাস্বতী চুপ করে থেকে ঠোঁটটা একটু বাড়িয়ে দিল সুমনের দিকে। সুমন বললো, "তারপর থেকে আমাকে অনেক মেয়ে ভালবাসার কথা বলেছে। কোন অনুভূতি কাজ করেনি আমার মধ্যে। ভেবেছি, যাকে শরীর দিচ্ছি, আনন্দ দিচ্ছি। একমুঠো টাকা পাচ্ছি, এর মধ্যে ভালবাসাকে এনে আর কি হবে? কিছু মেয়ে আছে যারা চায় টাকা, আর কিছু মেয়ে চায় শরীরি সুখ। প্রেম, ভালবাসা এদের কাছে এখন আর কোনো দাম নেই।"
শাস্বতী বললো, "অনেক নারী আছে, যারা পুরুষ সঙ্গ বোঝে, কিন্তু পুরুষের মনটা বোঝে না। সেক্স ছাড়া সম্পর্কের যদিও কোনো মানে নেই। স্বামীকে ছেড়ে যখন বাড়ীতে একা থাকতাম, আমারো মনে হত, পুরুষের ছোঁয়া পাচ্ছি না। জীবনটা যেন অসহ্য হয়ে উঠছে, তারপর যখন তোমার জীবনের কথা শুনলাম, তোমার কষ্টটাকে বুঝতে পারলাম, তখন আমার মধ্যেও সেই বোধটা এল। শুধু শরীরি সুখের জন্য তোমাকে কেন আমি ব্যবহার করবো? যদি ভালবাসাটা আবার আমি ফিরিয়ে দিতে পারি, সেটাই তো ভাল হবে তাই না?"
সুমনের মনে হল, জীবনটা যেন আবার বদলে যেতে শুরু করেছে। ও শাস্বতীর ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁট মেলালো। চুম্বনটা আসতে আসতে গাঢ় হল। গাছের তলায় শাস্বতী সুমনকে জড়াতে লাগলো। ওর বুক দুটো সুমনের শরীরের সাথে লেপ্টে গেলো।
সুমন বললো, "তুমি সব কিছু জেনেও আমার মনটাকে বুঝতে পারলে, এর জন্য খুব আনন্দ হচ্ছে।"
শাস্বতী বললো, "বিশ্বাস করো, আমি কিন্তু নিজের স্বার্থটাকেই বড়ো করে দেখতে চাইনি। মনে হয়েছিল, তোমার এমন কাউকে দরকার, যে তোমাকে সত্যি ভালবাসবে। শরীরি ভালোবাসার বাইরেও মানুষ অনেক কিছু দিতে পারে, অনেক কিছু নিতে পারে। বিশ্বাস আর অনুভূতিকে তো আর অস্বীকার করা যায় না! তুমি কি বলো?"
কয়েক মূহূর্ত দুজনেই চুপচাপ। সুমন বললো, "শাস্বতী তোমার ভালবাসায় কোন ছলনা নেই, তোমার ভালোবাসা নিষ্পাপ স্নিগ্ধ সরল - এটা আমি বিশ্বাস করি। তোমার ভালবাসাকে প্রত্যাখ্যান করার কোন ইচ্ছাও আমার নেই। শুধু মনে রেখো আমি কিন্তু একটা বেশ্যা পুরুষ। জীবনের ঘটে যাওয়া সব বিপর্যয়ের কথাই বলেছি তোমাকে। যদি কোনদিন আমার ওপর তোমার রাগ হয়, এসব কথা বলে কিন্তু আমাকে দূঃখ কোনদিন দিও না। আমি কিন্তু তাহলে শেষ হয়ে যাব।"
শাস্বতী আস্বস্ত করলো সুমনকে। গাছের তলায় সুমনকে নিজের বুকে টেনে নিল। ভালবাসার বাধনে সুমনের গলায় মুখ ঘসতে লাগল। সুমনও মুখটা ঘসতে লাগল শাস্বতীর বুকে।
আস্তে আস্তে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ঠিক তখন বাজে পাঁচটা। সুমনের মোবাইলটা বেজে উঠল। দেখল ডলি ওকে আবার ফোন করেছে।
সুমন একটু বিরক্ত হল, ডলির ফোনটা আসতে দেখে। ফোনটা ধরবে কিনা সেটাই ভাবছিল।
শাস্বতী বললো, "সকালেই তো ফোন করেছিল, আবার এখন ফোন?"
সুমন দু-তিনবার ফোনটা বাজা সত্ত্বেও ধরলো না। শাস্বতীকে বললো, "এ খুব জেদী জানো তো? স্বভাবটা অনেকটা গৌরীর মতন।"
শাস্বতী বললো, "কি রকম?"
সুমন বললো, "ডলিকে দেখতে সুন্দর বলে ওর খুব অহংকার। ডানাকাটা পরীদের একটু এরকমই হয়। এরা ঘন ঘন পুরুষমানুষ বদলাতে দ্বিধাবোধ করে না।"
শাস্বতী বললো, "ও তো ডিভোর্সী। তুমি বললে।"
সুমন বললো, "হ্যাঁ, ডিভোর্সী তো বটেই, তবে সেটা সত্যি মিথ্যে কিনা জানি না। সবাই তো সত্যি কথাটা বলে না।"
শাস্বতী বললো, "তুমি কি এটা আমাকেও উদ্দেশ্য করে বলতে চাইছ?"
সুমন শাস্বতীর গাল দুটো হাত দিয়ে ধরলো, ওর দুগালে দু'টো চুমু খেয়ে বললো, "তোমাকে আমি বিশ্বাস করি শাস্বতী। কিন্তু ডলি কে নয়।"
শাস্বতী বললো, "ওর সাথে তুমি তাহলে ভিড়লে কেন?"
সুমন এবার একটু হাসল। বললো, "এই যা, তুমি সব ভুলে গেলে? আমার পেশাটা কি সেটা জানো না?"
শাস্বতী সুমনের বুকে মুখটা রাখলো। বললো, "ডলির সাথে তোমার কবে আলাপ হয়েছে?"
সুমন বললো, "পার্কস্ট্রীটে। এই কদিন আগে।"
শাস্বতী বললো, "পার্কস্ট্রীটে কোথায়?"
সুমন বললো, "তন্ত্রতে।"
শাস্বতী বললো, "তন্ত্র? ওটা তো ডিসকো থেক।"
সুমন মাথা ঝাঁকিয়ে বলো, "হ্যাঁ ওখানেই।"
শাস্বতী বললো, "ওখানে কি করে আলাপ হল? তুমি কি যাও নাকি?"
সুমন বললো, "মাঝে মাঝে যেতে হয়, খদ্দেরের আশায়।"
শাস্বতী বললো, "তারপর?"
সুমন বললো, "ওখানে গিয়ে ডলি কে পেলাম। মেয়েটার সাথে ভাব জমালাম। বুঝলাম, প্রচন্ডভাবে পুরুষসঙ্গী কামনা করে।"
শাস্বতী বললো, "তারপর।"
সুমন বললো, "তন্ত্র থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি করে আমাকে ওর বাড়ী নিয়ে গেল। বালীগঞ্জের সুসজ্জ্বিত ফ্ল্যাট। আমাকে আগেই বলেছিল, আমি এখন সিঙ্গল। স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে একা রয়েছি। মাঝে মাঝে ফুর্তী করার জন্য তন্ত্রতে আসি। আজ যে তোমার সাথে দেখা হবে, ভাবতেই পারিনি। আই অ্যাম ভেরী লাকি।"
শাস্বতী বললো, "ও কি তাহলে ডিভোর্সী নয়?"
সুমন বললো, "প্রথম দিন বুঝতে পারিনি। দ্বিতীয় দিন গিয়ে যখন ওর বিছানায় শুয়ে আছি। হঠাৎই ওর মোবাইলে একজনের ফোন। জোরে জোরে কথা বলছিল। ডলি ইংরেজীতে ওকে খুব গালাগালি দিচ্ছিল। পুরুষ কন্ঠস্বর। লোকটা ডলিকে যত মিনতি করছিল তত ওকে বাজে কথা বলছিল।"
শাস্বতী বললো, "কেন?"
সুমন বললো, "বুঝলাম, ওটা ডলির স্বামী। হয়তো বউয়ের সাথে রি-ইউনিয়ন করে নিতে চায়। কিন্তু ডলি রাজী নয়। চরম গাল দিয়ে লোকটাকে বেইজ্জ্বত করে ছাড়ল আমার সামনে। ডলিকে পরে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ও বলেছিল, হ্যাঁ ওটা ওর স্বামীই। এখন আবার ঘর করতে চাইছে ডলির সঙ্গে। কিন্তু ডলি রাজী নয়। ডিভোর্স যে হয়েছে মনে হয় না। হয়তো ডলি জেদ করে রয়েছে স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে।"
শাস্বতী সুমনের বুক থেকে মাথা তুলে বললো, "সত্যি এসব পুরুষগুলো কে দেখলে কষ্ট হয়। সবাই তো আমার স্বামীর মত নয়।"
সুমন বললো, "কেন, তোমার স্বামী তোমাকে ভালবাসত না? আলাদা হলে কেন?"
শাস্বতী বললো, "আমি প্রথমে আলাদা হতে চাইনি। কিন্তু পরে দেখলাম, ওর সাথে কোনো মেয়ের অবৈধ সম্পর্ক আছে, আমার কাছে লুকোচ্ছিল দিনের পর দিন। একদিন মেয়েটার সাথে ওকে দেখতে পেলাম, শ্যামবাজারে। ধরা পরে গেল। তারপর থেকেই আমি আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।"
সুমন বললো, "তোমার স্বামী কোনদিন তারপরে ডাকে নি তোমায়?"
শাস্বতী বললো, "না।"
সুমন বললো, "এই সম্পর্কের বাইরে আলাদা সম্পর্কটাই যেন ভালবাসার মধ্যে একটা চিড় ধরে দেয়। আমারো তাই হল। তোমারো তাই।"
শাস্বতী মুখটা নিচু করে ফেলেছে। সুমন বললো, "তুমিও পুরোনো কথা চিন্তা করছ?"
শাস্বতী বললো, "কই না তো?"
সুমন বললো, "তাকাও আমার দিকে।"
শাস্বতী তাকালো।
সুমন বললো, "কেউ ভাঙে, কেউ গড়ে। চলো আজ থেকে আমরা শুধু গড়ার কাজটাই করি। কেমন?"
শাস্বতী হাসল। সুমন বললো, "চলো বাড়ী যেতে হবে তো? সন্ধে হতে চলেছে। যা জোরে মেঘ করেছে আকাশে, মনে হচ্ছে খুব জোরে বৃষ্টি হবে।"
।। পনেরো ।।
সুমন শাস্বতীকে সাথে নিয়ে বড় রাস্তার মোড়ে এসে একটা ট্যাক্সি ধরার চেষ্টা করছিল। আকাশে ঘন কালো মেঘ। গুড় গুড় করে বিকট শব্দ শুরু করেছে। এক্ষুনি ট্যাক্সি না পেলে, দুজনকেই ভিজতে হবে।
শাস্বতী বললো, "কি শুরু হল বলো তো। যখন বেরোলাম পরিষ্কার আকাশ, আর এখন অঝোরে নামবে মনে হচ্ছে। ছাতা তো আনা হয় নি। কি হবে তাহলে? যদি এখনই নেমে যায়?"
সুমন বললো, "আকাশ তো এমনই। কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি। ঠিক আমাদের জীবনের মতন। নামলে ভিজবো। গাছতলা তো আছেই। কেন তুমি আগে কখনো ভেজো নি বৃষ্টিতে?"
শাস্বতা বললো, "বা রে? আমার শাড়ীটা তাহলে নষ্ট হবে না। নতুন জামাকাপড় গুলো রয়েছে। প্যাকেট দুটোও তো তাহলে ভিজে যাবে বৃষ্টিতে।"
ঠিক তখনই নামলো বৃষ্টি। পলকে শাস্বতীর শাড়ীটা দিল ভিজিয়ে। সুমনও ভিজছে। হাসতে শুরু করেছে শাস্বতীর করুন অবস্থা দেখে।
হাত ধরে দুজনে ছুটে গিয়ে একটা গাছতলায় দাঁড়ালো। বৃষ্টির জল এখানেও পড়ছে। শাস্বতী বললো, "গেল আজ, সব গেল।"
বাড়ী থেকে বেরুবার সময় ছাতাটা না নিয়ে এসে ও যে চরম ভুল করেছে, তা বেশ বুঝতে পারছিল শাস্বতী।
সুমন দেখল বৃষ্টিভেজা অবস্থায় শাস্বতীকে কি সুন্দর লাগছে। ঠিক যেন মোহময়ী। মেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজলে যেন আরো আকর্ষনীয় লাগে। শরীরের প্রতিটি কণা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে মধুর রস। ভিজে যাওয়া সিল্কের শাড়ী লেপ্টে যাচ্ছে শাস্বতীর শরীর জড়িয়ে। ভেজা শাড়ীর উপর দিয়ে ফুটে উঠছে ওর কোমল শরীরের বিভিন্ন অংশের রেখাগুলি।
সুমন গোগ্রাসে ওকে গিলছিল। শাস্বতী বললো, "আমি ভিজছি, আর তুমি দেখছ?"
কে এমন দৃষ্টি সুখের উল্লাস থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারে? সুমনের মনে পড়ে যাচ্ছিল সেদিনের সেই বৃষ্টি ভেজা রাত। সুন্দরীকে ঠিক এমনই ভিজিয়েছিল ও জোর করে। তারপরের মূহূর্তটা এখনো স্মৃতিতে স্পষ্ট। কামোদ্দীপনের হাওয়া তখন দুজনেরই শরীরে বইছে। সুমন মজেছে সুন্দরীর কামরসে। ওকে তখন শরীরের মধ্যে মিশিয়ে ফেলতে সুমন প্রস্তুত।
শাস্বতী একটু এগিয়ে এল সুমনের দিকে। গাছের তলাতেও বৃষ্টির ছাঁট থেকে রেহাই নেই। দমকা হাওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টি। একবার সামনের দিক দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট আসে তো পরের বার পেছন দিয়ে। কখনও আবার বাঁয়ে তো কখনও ডানে। বৃষ্টিতে শাস্বতীর শাড়ী ভিজে একেবারে চপচপ।
সুমন বললো, "তোমাকে একটা চুমু খাবো?"
শাস্বতী বললো, "কি এখন? এটা চুমু খাবার সময়?"
সুমন বললো, "আমি জীবনে চুমু অনেক খেয়েছি। কিন্তু বৃষ্টিতে চুমু খাবার কথা ভাবলেই আমার সুন্দরীর কথা মনে পড়ে। আমি তো তোমাকে সুন্দরীর জায়গায়ই ভাবি শাস্বতী। তুমিই তো আমার জীবনের আর এক সুন্দরী।"
শাস্বতী সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁটটা বাড়িয়ে দিল। সুমন চুমু খেল। ঠোঁটটা চুষতে লাগল। বৃষ্টিতে চুমু খেলেও শরীরে উষ্ণতার আবেশ আসে। শাস্বতী বললো, "ভীষন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিল। কিন্তু এখন? তুমি যে শরীরে উত্তাপ এনে দিলে সুমন।"
দুজনে ট্যাক্সি ধরে বাড়ী ফিরলো একটু পরে। অনেক কষ্টে ট্যাক্সিটা পাওয়া গেছে। বৃষ্টিটা তখন একটু ধরেছে। শাস্বতী বললো, "তোমাকে নিজের ঘরে আজ যেতে হবে না। তুমি এখন আমার ঘরে থাকবে।"
সুমন বললো, "কেন?"
শাস্বতী বললো, "বা রে? কাল যে আমি তোমার ঘরে ছিলাম?"
সুমন সিঁড়িতেই আবার শাস্বতীর ঠোঁটটা কামড়ে ধরলো। ঠোঁটের ওপর ঠোঁট চেপে বসেছে। একটা অদ্ভূত সুখ অনুভূতি। শরীরে শিহরণ তোলা প্রগাঢ় ভালোবাসা। অনেকদিন পরে কোন নারীর শরীরকে আদর। কিন্তু এ আদর কোন স্বার্থের জন্য নয়। অনেকদিন পরে ভালোবাসাকে ফিরে পেয়ে সুমন আনন্দে বিহ্বল। সিঁড়িতে হাত বুলিয়ে বিলি কাটতে লাগল শাস্বতীর অঙ্গে। মাঝে মাঝে ভেজা বুকের ব্লাউজে হাত বুলিয়ে আলতো টুসকি। আবার কখনো শাস্বতীর সিক্ত গালে ঠোঁট বুলিয়ে পরমা সুখ। সর্বত্রাসী সুখের মতন। প্রাক মৈথুন শৃঙ্গারকে রোমাঞ্চিত করতে সুমনের মত যেন কেউ পারবে না। জিভ দিয়ে শাস্বতীর ভিজে গালটাকে লেহন, আদরে ছড়াছড়ি, যেন রক্তগোলাপের বুকে ফুটে ওঠা এক আলপনা।
এমনভাবে শাস্বতী অস্থির করে তুলছে, যেন অসীম কায়দা জানে সুমন।
শাস্বতী বললো, "দেখেছো তো? সিঁড়িতেই শুরু করলে আবার আমাকে চুমু খেতে?"
সুমন বললো, "কাল যখন আমাকে সিঁড়িতে জাপটে ধরেছিলে? তখন কেমন?"
ওকে একটু ধাক্কা দিয়ে শাস্বতী বললো, "দাঁড়াও। আগে ঘরে যাই। তারপরে আমি যখন ভিজে শাড়ীটা খুলে তোমার সামনে নগ্ন হব, দেখব, তুমি কেমন জিভের ছোঁয়া দাও।"
সুমন বললো, "বেশ আমি তাহলে কালকের মত করব না। একটু রোমান্টিকতা মিশিয়ে। ভালোবাসার ছোঁয়া একটু অন্যরকম হতে হবে। তোমার যাতে ফিলিংস হয়।"
ঘরে ঢুকে শাস্বতী বললো, "তুমি যে শাড়ীটা আমায় কিনে দিলে, সেটাও গেল। আর এই শাড়ীটা তো পুরোই নষ্ট।"
সুমন হেসে বললো, "এক চিলতে রোদ্দুরে কি আর প্রেম হয়? বৃষ্টিতেই তো প্রেমের খেলাটা জমে। সেই গানটা শোনো নি? বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি। তুমি কত মিষ্টি।"
শাস্বতী বললো, "দূর এরকম কোন গান নেই। তুমি মিথ্যে বলছ।"
সুমন আরো হাসতে লাগল। বললো, "সত্যি এরকম কোন গান নেই। তবে গান শুনতে আমি খুব ভালবাসি, বিশেষ করে পুরোনো বাংলা গান। হারিয়ে যাওয়া বাংলা গান। যখন একা থাকি। ভালো লাগে না তখন শুনি।"
শাস্বতী বললো, "এবার তো তুমি আর একা নও। এখন থেকে মন ভালো করার জন্য আর গান শুনতে হবে না। তুমি এমনি এমনি শুনবে।"
সুমন শাস্বতীকে আবার জড়িয়ে নিয়ে বললো, "তাই? আর মন খারাপ হবে না বলছ? তুমি আমাকে ভালবাসবে, তাহলে আমার জীবনে আর কষ্ট নেই।"
শাস্বতীও একটু আবেগে ভেসে গেল। বললো, "সত্যি বলছি ভালোবাসব। সুন্দরীর মত তোমাকে ছেড়ে যাব না।"
বুকের মধ্যে চুমু খেতে খেতে সুমন শাস্বতীর ভিজে শাড়ীটা নিজেই খুলতে লাগল। শাস্বতী শায়া ব্লাউজ পরা অবস্থায় সুমনকে দেহটা সমর্পন করলো।
কে বলে পৃথিবীতে প্রেম ট্রেম বলে কিছু নেই? প্রেমের মুখোস পরে গৌরীর মত মেয়েরা যারা শুধু শরীরটাই কামনা করে, এক আদি অন্ধকারের তীব্রতম শরীর তিয়াস। শাস্বতী কিন্তু ওদের মত আর নেই। কালকে যেভাবে সুমনের কাছে ও এসেছিল, এক খিদে বাসনা নিয়ে, আজ ওর শরীরটাকে মেলে ধরার মধ্যে ভালোবাসাটাও উজাড় করে রয়েছে। সুমনকে শরীর দিয়ে ও নিজেও ভালবাসতে চায়, সেই সাথে ভালবাসা পেতে চায় প্রবল ভাবে।
বুকে মুখ রেখে যেন মধুর সন্ধান করছিল সুমন। শাস্বতী এবার একটু হাসতে শুরু করলো। সুমনের হাতটা ওর বগলের তলায় খেলা করছে। সুড়সুড়ি লাগছে। খিলখিলিয়ে হাসি। তবুও হাসিটাকে চেপে রাখার চেষ্টা করলো শাস্বতী। সুমন, মুখটাকে শাস্বতীর বুকের খাঁজে রেখেই বললো, শোন শাস্বতী, মিলনের প্রহরকে যদি আরো দীর্ঘ করতে হয়, তাহলে মনের কোন অনুভুতি প্রকাশ করা চলবে না। হাসি আর উল্লাস সব কিছু চেপে রাখতে হবে। তবেই তো বিস্ফোরণ ঘটবে।
এবার বোধহয় একটু একটু করে সেই ভয়ঙ্কর মূহূর্তটা এগিয়ে আসছে। চোখ বন্ধ করলো শাস্বতী। সুমন ততক্ষণে শাস্বতীর শায়াটা টেনে নিচে নামিয়ে দিয়েছে। নিচু হয়ে মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে শাস্বতীর যোনীদেশে আঙুল চালিয়ে দিয়েছে সুমন। ছিদ্রের মধ্যে আঙুলটা ঢোকাতেই শিরশির করে উঠল শাস্বতী।
দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো শাস্বতী, "কি করছ সুমন?"
এটাই তো খেলা। আঙুল দিয়ে চেরাকে চিরে রতিবৈচিত্রর খেলা। সুমন জানে ওর লিঙ্গকে গ্রহন করার আগে, শাস্বতীর জরায়ুর মুখটাকে যত খুলে দিতে পারবে ততই সঙ্গম উপভোগ্য হবে। প্রাক মৈথুনের প্রয়োগ ও অনেক নারীকেই করেছে। আঙুলের জাদুতে যত শিহরিত হবে শাস্বতী, তত দীর্ঘ হবে মিলন, বড়ই মধুর।
আঙুলটা ভেতরে দুবার চালান করে সুমন বললো, "তোমার লাগছে?"
শাস্বতী চোখটা বন্ধ করে বললো, "না করো। এবার আরাম লাগছে।"
কখনো ভেতরে, কখনো বাইরে। শরীরের রক্তকণিকাগুলো আনন্দে লাফাচ্ছে। আঙুলের খেলা যতক্ষণ চলতে লাগল, শাস্বতী ঐ একইভাবে দাঁড়িয়ে রইল। সুমন একটার বদলে এবার দুটো আঙুল ঢোকানোর চেষ্টা করতে লাগল। দেখল, প্রবিষ্ট আঙুল ক্রমশ কামরসে ভিজতে শুরু করেছে।
গভীর গোপণ অভ্যন্তরে মন কাড়া সুখ অনুভূতি। চরচর করে আঙুল এতটা গভীরে চলে গেছে শাস্বতীর মনে হচ্ছে, ভেতরে যেন ওয়েভ হচ্ছে। সুমন কতটা দক্ষ। আঙুলেও মাত করে দিতে পারে যে কোন নারীকে।
শাস্বতী শেষমেস বললো, "এই কি করছ বলতো? এভাবে কতক্ষণ করবে?"
সুমন প্রবিষ্ট আঙুল দুটো বার করে এবার ওখানে মুখটা নিয়ে গেল।
শাস্বতী বললো, "কি করবে তুমি?"
সুমন বললো, ঐ যে তখন বলছিলে জিভের ছোঁয়া দিতে।
চোখ দুটো বুজে শাস্বতী অনুভব করলো, সুমনের জিভ এবার যোনির অভ্যন্তরে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। ক্রমশ ওঠা নামা শুরু করেছে জিভটা। শাস্বতী ওদিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারছে ভালবাসার মেঘমালায় এভাবে কোনদিন ভাসেনি আগে। লজ্জ্বা ভরা গহ্বরে সুমনের জিভ ছুঁয়ে যাচ্ছে। নিভৃত গহ্বরে জিভের সাথে এবার আঙুলও। কখনও আঙুল কখনও জিভ। কখনও দুটোই একসাথে। ভালো লাগছে রতিরঙ্গ বিলাস। সুমনের মত এত ভালো কামকলার জাদু দেখাতে আর তো কেউ পারবে না।
শাস্বতী বুঝতে পারছিল ওর ভেতর থেকে রসক্ষরণ শুরু হয়েছে। সুখ সাগরে নিমজ্জ্বিত হওয়ার মতন ওর আবেগটা ক্রমশ ঘনীভূত হতে লাগল। নীরব আত্মনিবেদনের ভঙ্গীমা দিয়ে ও আঁকড়ে ধরলো সুমনের মাথাটাকে।
জিভের পরশে সিক্ত নাভীদেশ। ভালোবাসার চোষনের ধারাবাহিক আক্রমনে বিধ্বস্ত হচ্ছে শাস্বতী। তাও মনে হচ্ছে নিজেকে আরো সঁপে দিতে পারলেই ভালো হয় সুমনের কাছে। জিভ ছুঁয়ে ভালোবাসার খেলাটা যেন আরো দীর্ঘতর হোক, এটাই চাইছিল শাস্বতী। উন্মাদের মত সুমনের চুল আঁকড়ে ধরে তবু বললো, "জিভ দিয়ে আমার তলা চেটে আমাকে পাগল করছ। এবার আমি ক্ষেপলে তখন আমাকে সামলাবে কে?"
সুমন শাস্বতীর দেহটাকে এবার দু’হাতে তুলে নিল। বললো, "কেন? আমি তো আছি। আমি সামাল দেবো। ভরসা হচ্ছে না? এবার এসো বিছানায়।"
বিছানায় সুমনকে জড়িয়ে এবার উন্মাদের মত চুমু খেতে শুরু করলো শাস্বতী। আবেগ, ভালোবাসা যেন ফুলঝুরি হয়ে ঝরে পড়ছে। সুমন আবার নিয়ে গেল যোনীদ্বারে মুখটা। জিভের পরশ আর আঠালো তরল মিলে মিশে একাকার। শাস্বতী বুঝতে পারছিল বাঁধভাঙা শ্রোতের মতন কামরসগুলো এবার উৎসারিত হচ্ছে, হঠাৎই ডিনামাইটের মতন বিস্ফোরণ ঘটেছে নিম্নাঙ্গের গভীরে। বন্যার জলের মতন তেড়ে বেরোচ্ছে শ্রোত। নিশ্চিন্তে সুধা পান করছে সুমন। যেন তৃষ্নাগুলো জমিয়ে রেখেছিল এতদিন। আজ তার পিপাসা মেটাচ্ছে।
শাস্বতীর দেহটা পুলকে পুলকে আন্দোলিত হচ্ছে। ও যেভাবে ছটফট করতে লাগল, তখন ওকে সামাল দেবার আর উপায় নেই। অগত্যা সুমন যোনী থেকে মুখ তুলে এবার শাস্বতীর ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো ঠোঁট দিয়ে।
শাস্বতী চমকে নড়ে উঠলো, সুমন বললো, "কি হয়েছে?"
শাস্বতী হেসে বলো, "সব খেয়ে নিলে, আবার বলছ কি হয়েছে?"
সুমন ঠোঁটটা তুলে বললো, "কেন তোমার ভালো লাগে নি?"
শাস্বতী চোখে মুখে আবেগ নিয়ে সুমনকে দেখছে। লেহনের অনুভূতিতে শিরশির করছে সারা শরীর। কিভাবে সুমন চুষেছে, শুধু ওই জানে।
শাস্বতী বললো, "সব পারো তুমি তাই না?"
সুমন কেমন করে যেন হেসে বললো, "পারতে তো হয়। নইলে কি আর পুরুষ সঙ্গী হওয়া যায়? নারীকে আনন্দ দিতে হলে জানতে হবে তার শরীরি রহস্য। ওপর থেকে নিচ। নিচ থেকে ওপর। শরীরের অপার রহস্য। আমি নারীর শরীরকে ভালো করে চিনে গেছি শাস্বতী।"
ওর দুটো গলা জড়িয়ে শাস্বতী বললো, "কিন্তু আমি এখন আর পারছি না সুমন। এবার....."
সুমনকে ভেতরে ঢোকার জন্য আহ্বান করছে শাস্বতী। সুমন বুঝতেই পারছিল, আশ্চর্য আনন্দে আত্মহারা শাস্বতী এখন সোহাগটা ওর লিঙ্গ দিয়ে পেতে চায়। প্যান্টটা খুলে একপাশে ছুঁড়ে দিয়ে ও এবার লিঙ্গটা স্থাপন করতে লাগল শাস্বতীর যোনীর অভ্যন্তরে। সিক্ত যোনী নিমেশে গ্রাস করে নিল সুমনের দীর্ঘাকৃতি লিঙ্গকে। শুরু হল ওঠা নামা। আঘাত হানতে হানতে লিঙ্গ এতটাই গভীরে চলে গেল, শাস্বতী অনুভব করলো, পৃথিবীর সব সুখ গুলো একত্রে জড়ো হয়েও এই সুখকে হার মানাতে পারবে না। সুমনের অসাধারণ যৌন ক্ষমতার এমনই গুন।
ঠোঁটে ঠোঁট মিলে যাচ্ছে, জিভে জিভ। টাকরা উৎপন্ন হচ্ছে। সেই সাথে মধুর সঙ্গমের অনুভূতি। এক একটা স্ট্রোকে সুমন গেঁথে ফেলছে শাস্বতীকে। শরীরকে ভাসাতে ভাসাতে কোথায় যে হারিয়ে যাচ্ছে শাস্বতী, ও নিজেও জানে না।
শাস্বতী পা দু'টো সুমনের কোমরের ওপর তুলে দিয়ে বললো, "আমাকে কোনদিন ছেড়ে যেও না সুমন। তাহলে আমি বাঁচতে পারব না।"
সুমন বললো, "আমাকেই তো তুমি নতুন করে স্বপ্ন দেখালে শাস্বতী। আর তুমি বলছ বাঁচতে পারবে না। তোমাকে ছাড়া আমিও যে....."
বলতে বলতে চরম রতির মূহূর্ত এসে গেল। নির্গত হল এবার উষ্ণ শ্রোত। বীর্যধারা গড়িয়ে পড়ছে। কাল আর আজ, এই নিয়ে দু-দুবার শাস্বতীকে ভাসালো সুমন।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
লেখক(Lekhak)-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereলেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment