আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram
Written By pinuram
চার
বলাকার ডানা মেলে (#০৪)
গ্রীষ্ম কালে সকাল সকাল উঠে স্নান করা ভীষণ আনন্দের ব্যাপার। ঠাণ্ডা বাতাস, সেই সাথে মাথার ওপরে খোলা আকাশ। কালী পাড়ার বস্তির পুরুষদের স্নানের জায়গা হচ্ছে রাস্তার ধারের কর্পোরেশনের কল, বুড়ো কচি হদ্দ মদ্দ সবাই ওইখানে বালতি মগ নিয়ে স্নান করে। সকাল সকাল স্নান বেশি কতক লোকে করে না, তাই দানা বেশ আয়েশ করে সাবান মেখে স্নান সেরে নিল। পাশের রাস্তা দিয়ে বাস গাড়ি মোটর চলে যায়, মাঝে মাঝে নোংরা জল ছিটে চলে আসে এইদিকে, কিন্তু এত ভোরে সেই সবের বালাই নেই। মাথায় শ্যাম্পু করতেই বলাই জানতে চায় ভালো করে স্নানের কারন। দানাও হেসে বলে বলাইয়ের বৌকে সোহাগ করবে তাই এত ভালো করে স্নান সারছে। নাসির ওইদিকে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে এসে বলাইয়ের পাছায় এক লাথি মারে সঙ্গে সঙ্গে বলাইয়ের পরনের গামছা খুলে যায়, সেই নিয়ে ওদের কতক হাসাহাসি চলে।
স্নান সেরে কোমরে গামছা জড়িয়ে যখন ভেতরের দিকে পা বাড়াল, তখন অনেকেই উঠে গেছে এই কালী পাড়ার বস্তির বুকে। অন্যদিনের চেয়ে সেদিন সবাই অনেক চুপচাপ, বস্তির আবহাওয়া থমথমে। দুই রাত আগের ভয়ঙ্কর ঘটনার রেশ তখন কাটেনি। পায়খানার সামনে মেয়েরা জটলা বাঁধিয়ে কানাঘুষো করে। সেই সবের দিকে আড় চোখে একবার দেখে, নিজের মনে নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে। বেশ কিছু মেয়েরা আবার ওকে দেখে চুপ করে যায়, এমন ভাব দেখায় যেন দানা দোষী। মনসা মাসি মারা যাওয়ার পর থেকেই এই কালী পাড়ার বস্তির কোন কিছুতে বিশেষ মাথা ব্যাথা ছিল না। অন্য কোথাও মাথা গোঁজার জায়গা নেই তাই রাতে এইখানে শুতে আসা। যদি অন্য কোথাও একটা মাথা গোঁজার জায়গা পেয়ে যেত তাহলে এই কালী পাড়ার বস্তি থেকে চলে যেত। এই কালী পাড়ার বস্তি ওর মা'কে, ওর মনসা মাসিকে ছিনিয়ে নিয়েছে।
নতুন জামা, কত জায়গায় পিন মারা, এক এক করে পিন খুলে ধোয়া গেঞ্জির ওপরে জামাটা চড়ালো। গাঢ় বাদামি রঙের প্যান্ট পরে নিল, সেই সাথে কোমরে বেল্ট। খুব ইচ্ছে নিজেকে একবার আপাদ মস্তক দেখে, কিন্ত ছোট আরশিতে সেটা সম্ভব নয়। গত রাতে বাড়ির ফেরার পথে কমলের দোকান থেকে দাড়ি কেটে এসেছিল। আজকে আর ট্যাক্সি চালানো নেই, ইন্দ্রাণীর সাথে ব্যাঙ্কে যাওয়ার আছে, সেইখানে কত সময় লাগবে সেটা জানে না। যদি ইন্দ্রাণীর কাছ থেকে ছুটি পায়, তবে ট্যাক্সি চালাতে যাবে। জামা জুতো পরে হাতা গুটিয়ে ঘরের দরজা থেকে বের হতেই অনেকের চোখ ওর দিকে চলে যায়। বস্তির লোক যে দানাকে রোজ দিন দেখে সেই দানা এই জামা কাপড়ের ভেতরে নেই।
পথে বলাইয়ের সাথে দেখা, বলাই ওকে দেখে হাঁ করে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, "ট্যাক্সি চালানো ছেড়ে দিয়েছিস নাকি রে? কোথাও চাকরি পেয়েছিস নাকি?"
বলাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে বলল, "না রে, একটু কাজ আছে তাই বের হচ্ছি।"
বলাই ওর কাছে এসে নাক কুঁচকে শুঁকে শুঁকে প্রশ্ন করে, "বাপরে..... বেশ দামী ডিও মেখেছিস মনে হচ্ছে..... এই শার্ট প্যান্ট বেশ দামী..... শালা আমার সারা মাসের টাকা মনে হয়!"
তা বটে! এই বস্তির অনেকে সারা মাসে যা কামায়, দানার পরনে সেই দামের পোশাক। দানাও যে এমন কিছু বেশি আয় করে সেটা নয়, ওর দিন আনা দিন খাওয়া, মাসে কত হয় সেটা নিজে কোন দিন হিসেব করেনি। বলাইকে "এই যাচ্ছি রে" বলে বেড়িয়ে যায়।
ইন্দ্রাণী আগে থেকে ওকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছিল কোন ব্যাঙ্কে যেতে হবে, সেই মতন সেই ব্যাঙ্কে পৌঁছে দেখে যে ইন্দ্রাণী তখন পর্যন্ত ব্যাঙ্কে পৌঁছায় নি। কারুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে, ট্যাক্সি চালকের কাজ হচ্ছে অপেক্ষা করা কিন্তু ইন্দ্রাণীর জন্য অপেক্ষা করতে, দাঁত কিড়মিড় করে ওঠে, কেন ঠিক সময়ে আসতে পারে না, একটু তাড়াতাড়ি এলে কি হত, ব্যাঙ্কে ঢুকে যাবে না এইখানে দাঁড়িয়ে থাকবে।
একটু পরেই ইন্দ্রাণীর কণ্ঠ স্বর শুনতে পায়, "হাই, তুমি কি অনেকক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে?"
কথাটা জিজ্ঞেস করেই ওকে দেখে থমকে দাঁড়ায়, একবার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে থাকে তারপরে মিচকি হেসে ওর পাশে এসে বলে, "হাউ আর ইউ ডুইং হানি (কেমন আছ সোনা?)" ওর বাজুতে চিমটি কেটে চোখ টিপে ফিসফিস করে বলে, "দানা, কোথায়?"
সত্যিই তো! দানা কোথায়? সামনের কাঁচের দরজায় নিজের প্রতিফলন দেখে ঠিক কেমন যেন মনে হয়, দানা নেই, দানা হারিয়ে গেছে। দুই অসম বয়সী নর নারী, কিন্তু পাশা পাশি হাঁটলে ওদের বয়সের পার্থক্য ঠিক বোঝা যায় না। তার কারন ইন্দ্রাণী যে ভাবে নিজের যৌবন ধরে রেখেছে, তাতে ওর বয়স সাতাশ আঠাশের বেশি কেউ বলতে পারবে না, আর দানাকেও এই পোশাকে অনেক ভারিক্কী দেখায়। দুধ সাদা জামা আর গাঢ় নীল রঙের জিন্সে, অতীব সুন্দরী ইন্দ্রাণীকে দানার যথাযথ সঙ্গিনী বলেই মনে হয় সবার। দানার সাথে সাথে ইন্দ্রাণী ব্যাঙ্কে ঢুকে ওর কাগজপত্র ফর্ম ইত্যাদি লিখে দিয়ে জমা দিয়ে দিল। কালী পাড়ার বস্তির ঠিকানা দেখে ব্যাঙ্কের লোক একবার দানাকে দেখে তারপরে ইন্দ্রাণীকে, ইন্দ্রাণী হেসে ঠিকানা ঠিক করে দেয়, ওটা ভুল করে হয়ে গেছে, ইন্দ্রাণী নিজের ঠিকানা লিখে দেয়। ব্যাঙ্কের লোক ওর পোশাক আশাক দেখে প্রথমে স্যার স্যার করেছিল কিন্তু প্রথম ঠিকানা দেখে কি বলবে আর ভেবে পায়নি। পেশার জায়গায়, ইন্দ্রাণী সেলফ এমপ্লয়েড (নিজেস্ব কাজ ব্যাবসা) লিখে দেয়। ব্যাঙ্কের কাজ শেষ করে ডেস্কে বসা লোক জানায় যে সবকিছু নির্ধারিত ঠিকানায় কুরিয়ার করে দেওয়া হবে।
ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে এসে দানা, ইন্দ্রাণীকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা পাখী, এইসবের কি মানে?"
ইন্দ্রাণী ওকে আবার নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে আপাদ মস্তক দেখে হেসে বলে, "এই এই দাঁড়াও, আগে তোমাকে একটু দেখি!"
চারপাশের লোকজন ওদের দিকে একবার দেখে। ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দানার বেশ লজ্জা করে, কিন্তু ইন্দ্রাণী কিছুতেই ছাড়বে না, ওকে ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড় করিয়ে মোবাইলে একটা ছবি তোলে। ছবি তোলার পরে ওর কাছে এসে বলে, "এবারে এই একাউন্টে টাকা জমাবে, বুঝলে? তুমি না পারলে আমি জমাবো, সেটা নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।"
দানা ইন্দ্রাণীর এই মিষ্টি হাসি মুখ দেখে বড় বিব্রত বোধ করে, চাপা কণ্ঠে ওকে বলে, "পাখী বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এটা। কেন এমন স্বপ্ন দেখাচ্ছো যেটা আমরা কোনোদিন পূরণ করতে পারবো না।"
ইন্দ্রাণী এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দেয়, "মানুষ যদি স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেয় তাহলে কি নিয়ে বাঁচবে বলতে পারো? মানুষ পাখী দেখে ওড়ার স্বপ্ন দেখেছিল তাই আজকে এরোপ্লেন হয়েছে, মানুষ ঘোড়া দেখে দৌড়াতে চেষ্টা করেছিল তাই এই গাড়ি মোটর হয়েছে। আর আমি....."
দানা ওকে বলে, "আমি সামান্য একটা ট্যাক্সি ড্রাইভার, পাখী।"
ইন্দ্রাণী ওর পাশে এসে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "আমার সাথে এখানে ঝগড়া করতে এসেছো? সামান্য ট্যাক্সি ড্রাইভার তুমি? সেই রাতে ট্যাক্সি থেকে ফ্লাটের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে পারতে। অত দরদ দেখিয়ে কোলে তুলে ফ্লাটে নিয়ে গিয়েছিলে কেন? সেই রাতে ভুল করে আবেগের বশে অনেক কিছু করে ফেলেছিলাম, তাই না? তাহলে রাতের পর রাত জেগে আমার শরীরের আঁচড় কামড়ের দাগের ওপরে সোফ্রামাইসিন লাগাতে কেন? ফেলে রাখতে পারতে ঘেয়ো কুকুরের মতন, ছেড়ে যাওনি কেন দানা?"
বুকের ভেতর কেমন যেন কেঁপে ওঠে। ইন্দ্রাণীকে যতবার ছেড়ে আসে ততবার এই কাঁপুনি ওর বুকের মধ্যে জেগে ওঠে। চোয়াল শক্ত করে সেই হৃদকম্পনকে সংবরণ করে নেয়। ইন্দ্রাণীর কাজল কালো চোখ দুটি উপচে পড়ার অপেক্ষায়, চোখের পাতা ভিজে, নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠেছে। দানা কি করবে ভেবে পেল না, এহেন সর্ব সমক্ষে কি ওর হাত ধরবে? এই এলাকায় ওকে কি কেউ চেনে, চিনতেও পারে, সামনেই কত গুলো ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে, নিমাই, পাচু, হেবো, নাসির কত শত ট্যাক্সি চালককে ও চেনে। ওই দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সির মধ্যে কেউ যদি ওকে চিনে ফেলে তাহলে কি হবে কি বলবে ওদের? একটা ট্যাক্সি চালকের সঙ্গিনী বড় জোর কোন বাড়ির কাজের মেয়ে অথবা হসপিটালের আয়া এর বেশি দুর নয়। ইন্দ্রাণীর মতন সুন্দরী ধনী শিক্ষিতা রমণী ওর সঙ্গিনী, কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না, বরঞ্চ একটা বদনাম সম্পর্ক বানিয়ে নেবে। কিন্তু এই বদনাম সম্পর্কের পেছনে প্রগাঢ় ভালোবাসা ফল্গু ধারার মতন বয়ে চলেছে সেটা কি আর কেউ জানে?
অবশেষে সেই সব দ্বিধা কাটিয়ে ইন্দ্রাণীর কাঁধে হাত রেখে ওকে প্রবোধ দিয়ে বলে, "পাখী সবাই দেখছে, এইভাবে এইখানে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়।"
ইন্দ্রাণী চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে সবার অলক্ষ্যে চোখের কোনা মুছে নিয়ে ব্যাগ থেকে একটা সানগ্লাস বের করে চোখ ঢেকে নেয়। তারপরে ওর থেকে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, "তোমার এখন কি কোন কাজ আছে?"
দানা উত্তর খুঁজে পায় না, কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "না, তেমন কিছু নেই, এই ট্যাক্সি নিয়ে বেড়িয়ে পড়বো আর কি।"
ইন্দ্রাণী ঝাঁঝিয়ে উঠে ওকে বলে, "তাহলে তাই করো গে যাও, আমি আসছি....."
দানার ফাঁকা বুক চেঁচিয়ে ওঠে, "পাখী যেও না, পাখী একটু দাঁড়াও।"
কিন্তু সেকথা মুখে আনতে পারল না দানা, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। ইন্দ্রাণী ওর উত্তরের অপেক্ষা না করে হেঁটে চলে যায়। দানার দুই পা কে যেন পেরেক দিয়ে মাটির সাথে গেঁথে দেয়, নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ইন্দ্রাণীর যাওয়ার পথের দিকে নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকে। পাঁজর ভেঙ্গে এক চিৎকার ঠিকরে বেড়িয়ে আসে, "পাখী যেও না, পাখী, প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।"
সেই আওয়াজ পাঁজরের খাঁচায় শেষ পর্যন্ত আটকা পড়ে যায়।
ইন্দ্রাণী কয়েক পা এগিয়ে ওর দিকে ঘাড় বেঁকিয়ে মৃদু ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "কি হলো, সারাদিন কি ওইখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি আর কোন কাজ নেই?"
দানার প্রান হীন দেহ যেন হটাত করে প্রান ফিরে পায়, মন নেচে ওঠে যাক তাহলে ইন্দ্রাণী রাগেনি। সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পায়ে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে, "আমি..... না....."
ইন্দ্রাণী হেসে ফেলে, "তুমি না যাচ্ছেতাই একটা মানুষ, শুধু কাঁদাতেই জানো। যাই হোক, শোনো, আগামী সপ্তাহে আমার ছেলে মেয়ের গরমের ছুটি শুরু হচ্ছে। তখন হয়ত আমরা বেড়াতে যেতে পারি।"
দানা মজা করে জিজ্ঞেস করল, "আমি যাবো সঙ্গে?"
ইন্দ্রাণী নাক কুঁচকে ঠোঁট উল্টে ভেংচি কেটে বলে, "ছেলের শখ দেখো, আমি যাবো সঙ্গে? আমি যাতে তাড়াতাড়ি গলায় দড়ি দিতে পারি তার ব্যাবস্থা করছো?"
দানা ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, "দুটো ফাঁস লাগিও, একটা তুমি ঝুলবে অন্যটাতে আমি।"
ইন্দ্রাণী আবার ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "সব সময়ে যাচ্ছেতাই কথাবার্তা। আমার কথা শোনো, দেড় মাসের মতন আমাদের দেখা হবে না বুঝলে।"
দানা মৃদু হেসে বলল, "হ্যাঁ বুঝেছি, শুচিস্মিতা আর দেবাদিত্যের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেবে না?"
ইন্দ্রাণী হেসে উত্তর দেয়, "দানা নয়, তবে মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল আমার বাড়িতে আসতেই পারে।"
দানা হেসে উত্তরে বলে, "নিশ্চয় দেখা করব। তা এখন মহারাজ্ঞী কোথায় নিয়ে যেতে চান?"
হঠাৎ সব বাধা কাটিয়ে ওর বাজু দুই হাতে জড়িয়ে ধরে ওর সাথে হাঁটতে হাঁটতে ইন্দ্রাণী বলে, "তুমি আজ সারাদিন আমার সাথে কাটাবে। দুপুরে আমার এক বান্ধবী আসার কথা আছে, বাড়িতেই একসাথে লাঞ্চ করা যাবে। তারপরে আমরা রাতে একটা পার্টিতে যাবো।"
দানা ওকে জিজ্ঞেস করল, "হঠাৎ পার্টিতে? তুমি পাগল হয়েছো নাকি যে আমাকে নিয়ে পার্টিতে যাবে? সেখানে আমি কি করবো পাখী?"
ইন্দ্রাণী বলে, "আরে এত চিন্তা করছো কেন? আমার কলেজের বান্ধবী সাংবাদিক রমলা বিশ্বাসের পার্টি। পার্টিতে শুধু মদ গেলা আর এরতার সাথে গায়ে ঢলে পরে গল্প করা ছাড়া আর কিছু হয় না বুঝলে।" দানার হাতখানি শক্ত করে ধরে আবেগ মাখা কণ্ঠে বলে, "তুমি শুধু আমাকে আগলে রেখো....."
দানা জানাল এই এলাকা থেকে ট্যাক্সি চাপতে নারাজ। ইন্দ্রাণী হেসে ওর হাতে গাড়ির চাবি ধরিয়ে দিল। দানা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞস করে, "কই তুমি তো বলোনি যে তোমার গাড়ি আছে?"
ইন্দ্রাণী হেসে বলে, "গাড়ির কথা বললে কি আর তুমি আসতে? আর রাতের বেলা মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাতে পারি না, তাই কোনোদিন গাড়ি নিয়ে বের হইনা।"
বলাকার ডানা মেলে (#০৫)
ইন্দ্রাণীর ছোট গাড়ি চেপে বাড়ির দিকে রওনা দেয় দুইজনে। যাওয়ার পথে ইন্দ্রাণী ওর বান্ধবীর পরিচয় দেয়। বান্ধবীর নাম কঙ্কনা দেবনাথ, ত্রিশ বছরের মতন বয়স। কঙ্কনার স্বামী শঙ্কর দেবনাথ, মার্চেন্ট নেভিতে চাকরি করে। বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করে, বছরের বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটায়। কঙ্কনার একটা ছোট মেয়ে আছে। ইন্দ্রাণী কোনোদিন কঙ্কনার বাড়িতে যায়নি। বছর চারেক আগে এক উচ্চ পদস্থ সরকারী আমলার পার্টিতে ওদের দেখা হয় সেই থেকে জানাশুনা। কঙ্কনার সাথে আগে দুয়েকবার বেড়িয়েছিল কিন্তু ওর মেলামেশার ধরন দেখার পরে ওর সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। কঙ্কনা যাদের অঙ্কশায়িনী হয় তারা সবাই বিত্তশালী ক্ষমতাশালী ব্যাক্তির সাথে সাথে প্রচন্ড কামুক জঘন্য লিপ্সা মাখা পুরুষ। একসাথে বহু নর নারীর সঙ্গম, মনে হয় যেন কামক্রীড়ার কুম্ভ মেলা লেগেছে। এই ধরনের মিলিত কামক্রীড়া ইন্দ্রাণীর একদম পছন্দ নয়। ইন্দ্রাণীর এক সময়ে এক পুরুষের সাথে সঙ্গম করতে ভালো লাগে, বহু পুরুষের সামনে নগ্ন হতে নিজেকে বড় নিচ বলে মনে হয়।
বাড়ি ফিরে পোশাক বদলে রান্নার কাজে লেগে যায় ইন্দ্রাণী। দানা ওর সাথে এটা ওটা কেটে কুটে দিয়ে, রান্নার কাজে সাহায্য করে। রান্না করতে করতে দুইজনের মনে হয় এইভাবে চিরটা কাল কাটাতে পারলে বড় ভালো হত। চোখে চোখ পড়তেই ইন্দ্রাণীর চোখের ভাষা সেই অব্যক্ত কথা বলে দেয়। ভালোবাসা গলার কাছে এসে আটকে যায় দানার। ইন্দ্রাণী জানায় যে আজকের একটা দিন দানাকে কিছুতেই পাশ ছাড়া করতে নারাজ। আগামী দিন বিকেলে ইন্দ্রাণী চলে যাবে বাপের বাড়ি তারপরে ছেলে মেয়েরা এসে যাবে আর দেখা হবে না প্রায় এক দেড় মাসের মতন। এর মাঝে আবার রঞ্জন হয়ত আসতে পারে, ওরা বাইরে কোথাও ঘুরতেও যেতে পারে।
দুপুরের একটু পরেই ইন্দ্রাণীর বান্ধবী, কঙ্কনার আবির্ভাব হয়। ইন্দ্রাণীর মতন সুন্দরী নয়, তবে মন্দ বলা চলে না। চাপা গায়ের রঙ, মেদুর গোলগাল দেহের গঠন, ছোট বয় কাট চুল। স্তন যুগল বেশ বড় বড়, চাপা জামার সামনের দুটো বোতাম খোলা আর চলনে নরম দুই স্তন দুলে দুলে উঠছে। লম্বা স্কার্ট আর চাপা জামা, গলায় একটা ওড়না। বাঙালিদের আবার নতুন রেওয়াজ, গলায় কানে ভারী পোড়া মাটির গয়না, কপালের টিপ খানা দেখে মনে হল সারা কপাল জুড়ে "ক" অক্ষর লেখা। সেটা কি এই মহানগরের নাম না ওই মহিলার নামের আদ্যক্ষর সেটা বোঝা গেল না।
ইন্দ্রাণী ওকে দেখে একটা বাঁকা হাসি হেসে বলে, "তুই এই উদ্ভট সাজ আর ছাড়লি না, তাই না?"
দানাকে দেখে কঙ্কনা একটু চমকে যায়, তারপরে ইন্দ্রাণীর পাশ ঘেঁসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার তোমার, একেবারে বাড়িতে শুরু করেছো নাকি আজকাল?"
ইন্দ্রাণী ওর দিকে খানিক কটমট করে দেখে হেসে ফেলে বলে, "না না, এটা আমার খুব ভালো বন্ধু, মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল।" তারপরে গলা নামিয়ে কঙ্কনার কানে কানে বলে, "ওর সামনে একদম উলটো পালটা কিছু করবি না। তাহলে কিন্তু আর বাড়িতে ঢুকতে দেব না।"
নিজের পুরো নাম আগে কারুর মুখে এমন ভাবে শোনেনি দানা তাই একটু চমকে ইন্দ্রাণীর দিকে তাকায়। ইন্দ্রাণী আড় চোখে ওকে ইশারায় চুপ করিয়ে দেয়। ওর বেশ ভুষা দেখে কারুর বলার জো নেই যে দানা সামান্য একজন ট্যাক্সি চালক।
কঙ্কনা ঘরে ঢুকেই কাঁধের ব্যাগটা একদিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বলল, "আচ্ছা বাবা আচ্ছা। আমি ভাবলাম তুমি একা, যাক গে যা গরম পড়েছে, একটা বিয়ার দাও ত আগে গলা শুকিয়ে গেছে।"
ইন্দ্রাণী হেসে ফেলে, "না রে, বিয়ার নেই আমার ঘরে, শুধু স্কোয়াশ আছে। সেটা তোর গলা দিয়ে নামবে না।"
কঙ্কনা হেসে ফেলে, "কি গো ইন্দ্রাণীদি, তুমি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ নাকি?" তারপরে দানার দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দেয়, "আমি কঙ্কনা দেবনাথ, ইন্দ্রানীদির বান্ধবী।"
দানা, হাত বাড়িয়ে হাত মিলিয়ে কিছু বলতে যায় কিন্তু তার আগেই ইন্দ্রাণী ওর হয়ে বলে, "হি ইজ আ বিজনেস ম্যান (ইনি একজন ব্যবসায়ী মানুষ), আমার বহু পুরানো বন্ধু, আজকে হঠাৎ বাজারে দেখা হয়ে গেল।"
কি ব্যবসা কিসের ব্যবসা, ইন্দ্রাণী কি বলে চলেছে? ইন্দ্রাণী আবার দানার দিকে চোখ টিপে ইশারা করে চুপ করিয়ে দেয়। দুই নারী নিজেদের মধ্যে গল্প শুরু করে। ইন্দ্রাণী বেশ সংযত, হিসেব করে কথা বলে, সেই তুলনায় কঙ্কনা বেশ খোলা মেলা। দানা যে একজন অচেনা পুরুষ ওদের সামনে বসে সেটা কিছুক্ষণের মধ্যে কাটিয়ে ওঠে। ওদের গল্প, এই নতুন পোশাকের রেওয়াজ, কোথায় কোন নতুন রেস্টুরেন্ট খুলেছে, এই গরমের ছুটিতে মেয়েকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবে ইত্যাদির গল্প শুরু হয়ে যায়। দানার বিশেষ কিছু বলার নেই, তাই শুধু হ্যাঁ না ইত্যাদি ছোট ছোট বাক্যে উত্তর দেয়। গল্পে গল্পে ওদের কথা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিকে চলে যায়।
মুক শ্রোতা হয়ে শিক্ষিত দুই নারীর মাঝে বসে থাকতে বড় বিবৃত বোধ করে দানা, কিন্তু কিছুতেই উঠে চলে যেতে দেবে না ইন্দ্রাণী। ইন্দ্রাণী বেশ বুঝতে পারে যে দানার অস্বস্তি হচ্ছে কিন্তু নিরুপায়, কঙ্কনা একবার কথা বলতে শুরু করলে থামতে চায় না। দুপুরের খাওয়ার আগে তিনজনে মিলে একটু হুইস্কি খায়। কঙ্কনা বারেবারে দানার সুঠাম দেহের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হেসে দেয়। হুইস্কির সুরা ওদের চেয়ে কঙ্কনা বেশ তাড়াতাড়ি শেষ করে দেয়, ওরা যখন প্রথমটাতে চুমুক দিতে ব্যাস্ত ততক্ষণে কঙ্কনা দুই গেলাস শেষ করে তৃতীয় বারের জন্য হুইস্কি ঢেলে নেয়। কথায় কথায় ইন্দ্রাণী রাতের পার্টির ব্যাপারে বলে ফেলে। কঙ্কনা জানায় যে ওই পার্টিতে ওর নেমন্তন্ন, কারন নায়িকা নয়না বোস ওর খুব চেনা। ইন্দ্রাণী অবাক হয়ে যায় যে রমলা ওকে জানায়নি যে ওর পার্টিতে নায়িকা নয়না বোস আসছে।
খাওয়া শেষে কঙ্কনা জানায় যে ঠিক সময়ে পার্টিতে পৌঁছে যাবে, এই বলে আরো কিছুক্ষণ ওদের সাথে কাটিয়ে বিকেলের দিকে চলে যায়। কঙ্কনা চলে যাওয়ার পরে মনে হল সারা ঘরে ঝড় বয়ে গেছে, দুইজনে হাসতে হাসতে গায়ে ঢলে সোফার ওপরে শুয়ে পরে। ঠাণ্ডা এসির হাওয়ায় আর ইন্দ্রাণীর কোমল আদরে দানার চোখ বুজে আসে।
ইন্দ্রাণী ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে উঠিয়ে দিয়ে বলে, "এই, কি গো উঠবে না, সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে এলো যে?"
দানা চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে দেখে সত্যি রাত হয়ে এসেছে। ইন্দ্রাণী স্নান সেরে একটা গাউন পরে মাথায় একটা তোয়ালে জড়িয়ে ওর সামনে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে। ইন্দ্রাণীকে ওই রূপে দেখে নিজের অর্ধাঙ্গিনী বলে মনে হল ওর। হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকতেই মিষ্টি হেসে সামনের টেবিলে চায়ের কাপ নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। দানা ওর চলে যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে হেসে ফেললো।
ইন্দ্রাণী নিজের ঘর থেকে উচ্চ স্বরে ওকে বলে, "এই দানা শুনছো, বের হবার আগে একবার স্নান সেরে ফেলো, খুব গরম পড়েছে।"
চা শেষ করে বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে বেড়িয়ে আসে। ওর পরনের জামা কাপড় আবার একবার ঝেড়ে ঝুরে বিছানার ওপরে পাট পাট করে রেখে দিয়েছে ইন্দ্রাণী। বিছানার ওপরে শাড়ির টাল, কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়বে সেটার অপেক্ষায়।
দাঁতে কড়ে আঙ্গুল কেটে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "এই দানা প্লিস একবার বল না গো কোন শাড়িটা পরবো?" একটা স্বচ্ছ পাতলা গোলাপি রঙের শাড়ি দেখিয়ে বলে, "এটা পরবো?", একটু পরে একটা লাল পাড় দেওয়া স্বচ্ছ কালো রঙের শাড়ি দেখিয়ে বলে, "এটা?"
দানা মহা ফাঁপরে পরে যায়, এর আগে কাউকে এইভাবে শাড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়াতে দেখেনি ওর সামনে, কি করে। মাথা চুলকে ওকে বলে, "পাখী তুমি ভীষণ সুন্দরী তুমি যা পরবে সেটাই তোমাকে মানাবে।"
ইন্দ্রাণী আদুরে কণ্ঠে বলে, "এই, বলো না প্লজ, আমি একদম ঠিক করে উঠতে পারছি না। নাকি অন্য দিনের মতন একটা পার্টি ড্রেস পড়বো?"
দানার মন বলছে রোজ দিন ওকে ছোট পার্টি ড্রেসেই দেখে, কোনদিন ইন্দ্রাণীকে শাড়ি পড়তে দেখেনি। অনেকক্ষণ ধরে সব শাড়ি গুলো দেখে ঠিক করে উঠতে পারে না কিছুতেই, সব কটা শাড়ি দামী আর সুন্দর। শেষ পর্যন্ত ইন্দ্রাণী নিজেই ওর দ্বিধা কাটিয়ে একটা হালকা নীল রঙের শাড়ি দেখিয়ে বললো, "এটা পরি কি বলো?"
দানাও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দিল।
দানার সামনেই ইন্দ্রাণী নিজের পোশাক পরতে শুরু করে। পরনের তোয়ালে খুলে ফেলতেই তীব্র যৌন আবেদনময় ইন্দ্রাণীর দেহ পল্লব ওর চোখের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায়। নিস্পলক চোখে দানা ওইখানে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রাণীর রূপসুধা আকন্ঠ পান করে। ধীরে ধীরে কোমর পাছা নাড়িয়ে গাঢ় নীল রঙের ছোট প্যান্টি পরে নেয়। দানার লিঙ্গ ছটফট করতে শুরু করে দেয়। স্তনের ওপরে ক্ষুদ্র নীল রঙের ব্রা চাপিয়ে নেয়। ব্রা প্যান্টি পরিহিত ইন্দ্রাণীর লাস্যময়ী দেহ কান্ড দেখে দানা আর থাকতে না পেরে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। দুই হাতে ইন্দ্রাণীর কোমল পাছা চেপে প্যান্টির ওপরে ঠোঁট চেপে সিক্ত কামঘন এক চুম্বন এঁকে দেয়। যোনি বেদির ওপরে দানার পুরু ঠোঁটের চুম্বনে ইন্দ্রাণীর ঊরু দুটিতে কাঁপুনি ধরে। দুই হাতে ইন্দ্রাণীর নরম পাছা জোড়া চেপে ধরে জিব বের করে প্যান্টির রেশমি কাপড়ের ওপর দিয়েই যোনিচেরা বরাবর চাটতে শুরু করে দেয় দানা। চরম কামাবেগে ইন্দ্রাণীর দুই চোখ বুজে আসে, ওইদিকে দানা কিছুতেই ওর যোনিচেরা থেকে ঠোঁট সরাতে নারাজ। ইন্দ্রাণী যতবার ওকে দূরে সরাতে চায়, তত জোরে পাছা চেপে যোনি চুম্বন করে ইন্দ্রাণীকে পাগল করে তোলে। ইন্দ্রাণীর শরীর কামাগ্নির আগুনে তপ্ত হয়ে ওঠে।
ইন্দ্রাণী ওর মাথার চুল দুই হাতে শরীরের সব শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ওকে বলে, "সোনা প্লিজ এখন এইরকম করো না। আমাদের বের হতে হবে সোনা। প্লিজ, রাতে তুমি আমার সাথে যা ইচ্ছে তাই করো, তখন আমি শুধু তোমার।"
ইন্দ্রাণীর প্যান্টি দানার লালা আর যোনি রসে জবজবে ভিজে যায়। দানার ঠোঁটে ওর যোনিরস মাখামাখি হয়ে যায়। দানা ওর নরম তুলতুলে পেটের ওপরে, গভীর নাভির চারপাশে বেশ কয়েকটা চুমু খায়। ইন্দ্রাণী ওকে আদর করে গোটা কতক চাঁটি মেরে নিজের জামা কাপড় পড়তে বলে। দানা তোয়ালে খুলে, কঠিন উত্থিত লিঙ্গ হাতের মধ্যে নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ইন্দ্রাণীর অর্ধ নগ্ন লাস্যময়ী দেহ পল্লব দেখে দানার লিঙ্গ কাঁপতে শুরু করে দেয়। এখুনি ওই মিষ্টি সিক্ত যোনির মধ্যে না প্রবেশ করলে দানার লিঙ্গ ফেটে যাবে। ইন্দ্রাণী সেই দেখে দানাকে আদর করে মারতে মারতে ঘর থেকে বের করে দেয়। দানা ঠোঁট চাটতে চাটতে, মিচকি হেসে নিজের জামা কাপড় নিয়ে বসার ঘরে চলে আসে।
টিভি চালিয়ে নিজের পোশাক পরে নিয়ে ফ্রিজ থেকে স্কোয়াশ বের করে গলায় ঢালে, এই গরম কিছুতেই কমতে চায় না। সাড়ে আটটা বাজতে চলল ওইদিকে ইন্দ্রাণীর সাজা গোজা শেষ হওয়ার নাম নেই। এতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, ওই সুন্দরীর জন্য, মিটিমিটি নিজেই হেসে ফেলে।
ইন্দ্রাণীর দেরি দেখে ওকে তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পড়তে বলে, "কতক্ষণ লাগে তোমার সাজতে, সাড়ে আটটা বাজে যে পাখী।"
দরজার ওপাশ থেকে রাগত কণ্ঠে সুরেলা আওয়াজ আসে, "মেয়েদের সাজতে একটু দেরি হয় বুঝলে। যদি অপেক্ষা না করতে পারো তাহলে মেয়ে ছেড়ে কোন গান্ডু ছেলে খুঁজে নিও বুঝলে?"
নিরুপায় দানা একবার শোয়ার ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে কিন্তু ইন্দ্রাণী বকে চেঁচিয়ে ওকে বের করে দেয়।
অনেকক্ষণ পরে দানাকে ঘরের মধ্যে ডাকে। শোয়ার ঘরে ঢুকে দানার ওর রুপ দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়। অতীব সুন্দর দেহ পল্লব ফিনফিনে এক হালকা নীল রঙের শাড়িতে জড়ানো, হাতা বিহীন কাঁচুলি পিঠের দিকে একটা গিঁট দিয়ে বাঁধা, মাথার চুল একপাশে আঁচড়ানো, ঠোঁটে টকটকে লাল রঙের লিপ্সটিক, বড় বড় চোখের পাতা, গলায় একটা দামী মুক্তোর হার। এই সাজে কোনোদিন ইন্দ্রাণীকে দেখেনি, তাই আর থাকতে না পেরে ওকে জড়িয়ে ধরতে যায়। ইন্দ্রাণী নিজেকে বাঁচিয়ে মিষ্টি হেসে পালিয়ে যায়।
দানা ইন্দ্রাণীকে দেখে মাথা নাড়িয়ে বলে, "আজকে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না পাখী।"
ইন্দ্রাণী ওর হাত ধরে টানতে টানতে বসার ঘরে এসে বলে, "প্লিজ দানা, রাতে আমরা বাড়িতেই ফিরবো। রমলা বারবার যেতে বলেছে না হলে যেতাম না।"
দানা মুখ বেঁকিয়ে আক্ষেপ করে বলে, "কে এই রমলা যে ওর পার্টিতে তোমার না গেলেই নয়?"
ইন্দ্রাণী উত্তরে বলে, "রমলা আমার কলেজের বান্ধবী, আগে বহুবার ডেকেছে কিন্তু প্রত্যেক বার এড়িয়ে যেতাম। এইবারে বাড়ি এসে নিমন্ত্রন দিয়ে গেছে, এইবারে যেতেই হবে দানা।"
দানার নাক টেনে মাথা নাড়িয়ে মিষ্টি হেসে আক্ষেপের সুরে চুকচুক করে বলে কিছু করার নেই। দুইজনে একটু তফাতে ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে পরে। নিচে নেমে দানা ইন্দ্রাণীর গাড়ি বের করে একটু এগিয়ে দাঁড়ায় যাতে ফ্লাটের লোকজন ওদের একসাথে গাড়িতে উঠতে না দেখতে পায়। বেশ কিছু পরে ইন্দ্রাণী চলে আসে। দরজা খুলে ওর পাশে বসে ওর হাতের ওপরে হাত রেখে গাড়ি চালাতে বলে। দানার মনে হল যেন ওর জীবনটাই একটা বিশাল স্বপ্ন, এই ঘুম থেকে যদি উঠে যায় সেই ভয়ে বারেবারে ইন্দ্রাণীর দিকে তাকিয়ে থাকে। ঘুম ভাঙলেই যে ইন্দ্রাণী আর ওর পাশে থাকবে না।
ইন্দ্রাণী ওর মনের কথা টের পেয়ে যায়, ওর গালে হাত দিয়ে মাথা সামনের দিকে করে বলে, "সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাও না হলে এক্সিডেন্ট করবে।" হটাত ওর দিকে ঝুঁকে ইন্দ্রাণী গান গেয়ে ওঠে, "ও চাঁদ সামলে রেখো জোছনাকে, কারো নজর লাগতে পারে..... মেঘেদের উড়ো চিঠি উড়েও তো আসতে পারে ও চাঁদ সামলে রেখো জোছনাকে....."
সামনে তাকিয়ে কোন রকমে বলে ওঠে দানা, "আমি এই ঘুম থেকে উঠতে চাই না পাখী।"
কিন্তু ওই কথা ওর বুকের মধ্যে থেকে যায়, এমন সুন্দর এক সন্ধায় সুন্দরী ইন্দ্রাণীর চোখে জল দেখতে চায় না দানা।
বলাকার ডানা মেলে (#০৬)
পার্টি খুব বড় একটা বাগান বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছিল। বাগান বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করাতেই উর্দি পরা একজন লোক এসে ওদের দরজা খুলে দিল। দানা এইসবে একদম অভস্ত্য নয়, একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ইন্দ্রাণীর দিকে তাকায়। ইন্দ্রাণী ওর হাত চেপে অভয় দিয়ে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে, শুধু দানাকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। দানা যেন এমন কিছু আচরন না করে যাতে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে। আশেপাশে যা কিছু হচ্ছে, সেটা শুধু যেন চুপচাপ দেখে যায় আর বাকি সব যেন ইন্দ্রাণীর ওপরে ছেড়ে দেয়।
ইন্দ্রাণী ওকে পাখী পড়ার মতন শিখিয়ে দেয়, "শোনো দানা, মেয়েদের সাথে দেখা হলে, ওর ডান হাত আলতো করে নিজের হাতে নেবে আর নিজের ডান গাল দিয়ে আলতো করে ওর ডান গাল ছুঁইয়ে দেবে। ছেলেদের সাথে মেশার সময়ে হাত বাড়িয়ে শক্ত করে একটা হ্যান্ডশেক করবে আর মনে থাকে যেন, তোমার হাত ওপরে দিকে রাখতে চেষ্টা করবে, এটা নিজের শক্তির পরিচয়। মেয়েদের সাথে কথা বলার সময়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে, না হয় ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে, কখন বুকের দিকে তাকাবে না।"
দানা বাধ্য ছাত্রের মতন হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, "যে আজ্ঞে মহারানী, আপনার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো।"
মাথার ওপরে খোলা আকাশের সামিয়ানা, অজস্র তারা মিটিমিটি করে ঘন কালো আকাশের বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। দুইজনে পাশাপাশি হেঁটে বাগান বাড়িতে ঢুকে পড়ে। চারপাশে ছোট ছোট আলোর সম্ভার, এক কোনায় নাচের জায়গা। সেখানে মানুষের ভিড় তখন জমে ওঠেনি। মৃদু কোন বাদ্য যন্ত্রের সঙ্গীত এক টানা বেজে চলেছে। ইতস্তত লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে মশগুল। বেশ বড়সড় বাগানের একপাশে, লম্বা টেবিলে সাজানো খাবারের প্লেট আর ছোট ছোট উনুনে হাঁড়ির মতন কিছু চড়ানো। এক কোনায় মদের বার, সেইখানে ছেলেদের জটলা অন্যদিকের তুলনায় বেশি। ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষ, কোথাও পুরুষের জটলা বেশি, কোথাও নারীর জটলা বেশি, কোথাও জোড়ায় জোড়ায় নারী পুরুষ দাঁড়িয়ে। পুরুষ নারী নির্বিশেষে সবার হাতেই মদের গ্লাস, দুই আঙ্গুলের মাঝে সিগারেট। অনেক মেয়েরাও সিগারেট টানছে, এই দৃশ্য বহুবার সিনেমা টিভিতে দেখেছে দানা কিন্তু নিজের চোখে দেখা এই প্রথম। মেয়েদের অনেকেই শাড়ি পড়ে এসেছে, বেশির ভাগ মেয়েদের শাড়ি অতি ফিনফিনে মাছের জালের মতন। বেশির ভাগ মেয়েদের পরনে হাতা বিহীন ব্লাউজ, অনেকে মনে হয় অন্তর্বাস পরেই চলে এসেছে, কারুর কারুর বুকের খাঁজের নিচের দিকে গিঁট বাঁধা যার ফলে সেই নারীর অর্ধেকের বেশি বক্ষ বিভাজন বেড়িয়ে এসেছে সামনের দিকে, অনেকের পিঠ সম্পূর্ণ খালি। অনেক মেয়েদের পরনে হাতা বিহীন কাঁধ বিহীন ছোট পার্টি পোশাক ঠিক পাছার নিচে এসে থেমে গেছে। পুরুষেরা এইসব কম পোশাক পরিহিত মেয়েদের আশেপাশে মাছির মতন ভনভন করছে।
ইন্দ্রাণীর পেছন পেছন ছোট ছোট পায়ে এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়ায় আর এইসব দেখে। এই সব বিত্তশালী প্রতিপত্তি শালী লোকজনের মাঝে খুব বিবৃত বোধ করে। কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। ঘামে পরনের গেঞ্জি ভিজে ত্বকের সাথে লেপটে যায়। একটা ওয়েটার এসে ওদের হাতে মদের গ্লাস ধরিয়ে দিল আর সেই সাথে অন্য এক ওয়েটাররে ট্রে থেকে মাংসের কাবাব উঠিয়ে নিল একটা প্লেটে। এই সমাগমে ইন্দ্রাণী বিশেষ কাউকে চেনে না, তবে অনেক পুরুষের চোখ ওর দিকে। এহেন সমাগমে পুরুষেরা আড়ালে আবডালে নারীর ছোঁয়া পেতে চায়, নারীরাও পিছিয়ে থাকে না। অনেক পুরুষ পাশের নারীর কোমরে হাত দিয়ে, কারুর খালি পিঠের ওপরে হাত দিয়ে, কেউ আবার পাশের নারীর পাছায় আলতো আদর করে দিচ্ছে। সিনেমা টিভিতে এইসব দেখেছে কিন্তু চাক্ষুষ এইসব কোনোদিন দেখেনি অথবা ভাবতে পারেনি যে কোনোদিন এমন একটা পার্টিতে আসতে পারবে। একটা গাছের আড়ালে এক পুরুষ তার নারী সঙ্গীর সাথে কাম লীলায় মত্ত। মেয়েটার স্কার্টের নিচে পুরুষের হাত, সাদা রঙের প্যান্টি দেখা যায়। প্যান্টির ওপর দিয়েই মেয়েটার পাছা খামচে ধরে নিজের ঊরুসন্ধি ওই মেয়েটার ঊরুসন্ধির ওপরে ঘষে চলেছে। ঠোঁট ঠোঁট মিলিয়ে গভীর চুম্বনে হারিয়ে গেছে দুইজনে। কোথাও হাসির ছলে এক নারী তার পুরুষসঙ্গীর লিঙ্গ প্যান্টের ওপর দিয়েই আলতো করে বুলিয়ে হয়তো দেখে নিচ্ছে রাতের সুখ কি রকম হবে।
দানাকে পাশে দেখে হয়ত অনেকেই ইন্দ্রাণীর দিকে এগিয়ে আসছে না। ইন্দ্রাণী মাঝে মাঝে দানার দিকে তাকিয়ে মিচকি হেসে বলে, "পাশেই থেকো, না হলে কখন কোন কুকুর কেঁউকেঁউ করে পাশে চলে আসবে!"
দানাও মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে ওর কথা শুনে।
তাও মাঝে মাঝে এই মানুষের সমাগমে কিছু চেনা মানুষ বেড়িয়ে যায়। ইন্দ্রাণী ওদের দেখে শুধু মাত্র মাথা হেলিয়ে কুশল আদান প্রদান করে। কেউ কেউ দানার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে ইন্দ্রাণী বলে, "মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল, আমার অনেক পুরনো বন্ধু।"
এমন সময়ে এক মহিলা হাসতে হাসতে হাতে ওদের দিকে এগিয়ে এলো। মহিলা সাধারন বাঙালি মহিলাদের মতন গোলগাল, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের, গলায় কানে বেশ ভারী গয়না। পরনে বেশ দামী সালোয়ার কামিজ, গলা বেশ গভীর কাটা যার ফলে বক্ষ বিভাজনের অনেকটা অনাবৃত। দুই চোখের নিচে মোটা করে কাজল, কপাল জুড়ে একটা বিশাল হলদে টিপ। এইখানে মনে হয় সবাই শরীর ঢাকার চেয়ে শরীর দেখাতে এসেছে। ইন্দ্রাণী সঙ্গে সঙ্গে দানাকে ফিসফিস করে সেই মহিলার পরিচয় দিল, রমলা বিশ্বাস। রমলা ওকে দেখেই একদম হেসে গলে পড়ে দুই হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো।
ইন্দ্রাণীর হাত ধরে রমলা জিজ্ঞেস করে, "কি রে কি ব্যাপার, তুই একদম ঈদের চাঁদ হয়ে গেছিস? ছেলে মেয়ে কেমন আছে?" দানার দিকে দেখে হাত বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দেয়, "হাই, আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।"
ইন্দ্রাণী ওর হয়ে উত্তর দেয়, "আমার বন্ধু মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল, ভাবলাম তোর পার্টিতে নিয়ে আসি। তুই কেমন আছিস সেটা বল।" গলা নামিয়ে চারদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার বলতো, হঠাৎ এই পার্টির মানে কি?"
রমলা ওর কানে কানে আসল ঘটনা খুলে বলে, "এই তোকেই বলছি, আসলে কি জানিস গত মাসে আমি একটা পত্রিকা বের করেছি আর তার সম্পাদক আমি তাই এই পার্টি। তবে এই পার্টির আয়োজন করার পেছনে আরও একটা কারন আছে। তুই, অভিনেত্রী নয়না বোস কে চিনিস ত?"
ইন্দ্রাণী মাথা নাড়িয়ে জানায় যে চেনে।
রমলা বলে, "এই পার্টি ওর কারনেও রাখা। কিছু পরে বাপ্পা নস্কর, দুলাল মিত্র, বিমান চন্দ এই সব রাজনৈতিক নেতারা আসবে।"
বাপ্পা নস্করের নাম শুনতেই দানা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন বোধক চিহ্ন নিয়ে ইন্দ্রাণীর দিকে তাকায়। বাপ্পা নস্কর আসা মানে ফারহান হয়ত সাথে আসবে। এই সমাগমে যদি ফারহান ওকে দেখে ফেলে তাহলে ওর আসল পরিচয় সবাই জেনে যাবে। আশঙ্কায় দানার বুক কেঁপে ওঠে, ইন্দ্রাণী চোখের ইশারায় ওকে স্বাভাবিক হয়ে থাকতে অনুরোধ করে।
ইন্দ্রাণী ভুরু কুঁচকে রমলাকে জিজ্ঞেস করে, "কিন্তু বাপ্পা নস্কর, দুলাল মিত্র, বিমান চন্দ; এরা সবাই যে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, এরা একসঙ্গে কেন আসবে?"
রমলা চোখ টিপে ঠোঁট বাঁকিয়ে গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, "আসলে কি জানিস নয়নার সাথে এদের কোন আলোচনা আছে। নয়না আসলে বাপ্পার কেপ্ট মানে রক্ষিতা! বুঝতেই পারছিস, সুন্দরী নায়িকার টানে রাজনেতা কেন, মহর্ষি বাল্মীকিরও আসন টলেছিল! এই পার্টির আড়ালে ওদের দেখা সাক্ষাৎ হবে, এদের মধ্যে কিছু একটা বোঝাপড়া হবে। পার্টির আয়োজনে নয়নার অনুদান বেশি।"
ইন্দ্রাণী চোখ মেরে ইয়ার্কি করে জিজ্ঞেস করে, "তোর সাথে নয়নার এত গলায় গলায় সম্পর্ক কি করে হল।"
রমলা ফিসফিস করে ইন্দ্রাণীর কানে কানে বলে, "এক বছর আগে আমার এক জুনিয়ার সাংবাদিক, সঙ্গীতা রায়, ওই মাঝেরহাটির জমি বন্টন কেনা বেচা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে বাপ্পার বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের টাকা নয়ছয় করার প্রমান পায়। সেই সময়ে সঙ্গীতা জেনে ফেলে নয়না আর বাপ্পার এই গোপন মেলামেশা। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে যায়, প্রোমটারের কালো কারবারির পেছনের খবর আরো অনেক গোপন খবর আমাকে জানিয়েছিল। আমি দেখলাম যে এই ভাঙ্গিয়ে অনেক টাকা কামানো যাবে। আমি সেই খবর আর ছাপালাম না, আমি সব তথ্য প্রমান নিয়ে নয়নাকে দিলাম আর নয়না আমার পত্রিকার জন্য এক কোটি টাকা দিল। সেই থেকে আমাদের পরিচয় বেড়ে যায়।"
তারপরে চুকচুক করে হেসে বলে, "বেচারি সঙ্গীতা, ওইরকম বোলতার চাকে কি ঢিল ছুঁড়তে আছে? নয়না আমাকে অনেক বার সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু সঙ্গীতার নাম আমি বলিনি, যতই হোক মেয়েটা খুব ভালো। যাই হোক ছাড় ওইসব কথা, বল তোর এত দেরি কেন হল?"
দানা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দুই নারীর গল্প শোনা ছাড়া কিছু করার থাকে না। নয়না আর বাকি রাজনৈতিক দলের নেতারা একটু গভীর রাতে আসবে। তাড়াতাড়ি এসে গেলে আবার ফটোগ্রাফাদের ভিড়, সাংবাদিকের ভিড় জমে যাবে, এমনিতেই এই সমাগমে কম সাংবাদিক, সম্পাদক আসেনি। দুই নারী গল্প করতে করতে একটু তফাতে চলে যায়। ইন্দ্রাণী ওর দিকে এক নিরুপায় হাসি দেয়, কিছু করার নেই।
দানা চুপচাপ মদের বারের পাশে বসে মদের গেলাসে চুমুক দেয় আর এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে। রাত বেড়ে ওঠার সাথে সাথে নাচের জায়গায় আলো ধীরে ধীরে কমে আসে আর সেই সাথে আলোর চমকানি শুরু হয়ে যায়। জোড়ায় জোড়ায়, ধীরে ধীরে নারী পুরুষ এগিয়ে যায় নাচের জায়গায়। কেউ কেউ পাশে দাঁড়িয়ে পা নাচায়, এমন ভাব দেখায় যেন একটু বললেই নাচতে শুরু করবে। বেশ কয়েকটা কম বয়সী ছেলে মেয়ে উদ্দাম তালে একদিকে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। সেই দেখে কয়েকজন বয়স্ক নর নারী নেশার তালে জড়াজড়ি করে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। দানা এইরকম কোন বড়লোক পার্টিতে কোনোদিন যায়নি। ওর দৌড় ওই কালী পাড়ার বস্তির কারুর বিয়ে, ওইখানেও প্রচুর হইহুল্লোড়, হাসা হাসি গায়ে ঢলাঢলি সব চলে, ওইখানেও মদ খেয়ে মাতলামো করে ছেলেরা, ওইখানেও খুব জোরে গান বাজে, লোকে নাচে। বিশেষ কিছু তফাৎ নেই ওই কালী পাড়ার বস্তির সমাগমে আর এই বড়লোক পার্টিতে, এইখানে কমদামী মদের জায়গায় দামী মদ, কমদামী খাবারের জায়গায় দামী সুস্বাদু খাবার, এইখানে মেয়েদের পরনে জামাকাপড় একটু কম, এই যা। রাতে হয়ত এর স্ত্রী ওর বাহুতে ধরা দেবে, অথবা ওর ছেলে কোন বড়লোক নারীকে কোলে তুলে বাড়ি যাবে।
দেখতে দেখতে রাত সাড়ে দশটা বেজে যায়, আর কিছু পরেই নায়িকা নয়না বোসের আবির্ভাব হয়। পেছন পেছন মাছির মতন ক্যামেরা আর সাংবাদিকের ভিড়। লোকজন সব হুমড়ি খেয়ে পড়ে নায়িকার সাথে ফটো উঠানোর জন্য, অনেকে বিত্তশালী প্রতিপত্তি শালী ব্যক্তি আবার নায়িকার কানে কানে কিছু বলে। নয়না ঢুকতেই ভিড়টা যেন বেড়ে ওঠে। ওর চোখ বারেবারে ইন্দ্রাণীকে এই জনসমুদ্র মাঝে খুঁজে বেড়ায় কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পায় না। দানার মন বিচলিত হয়ে ওঠে, ওকে ভুলে আবার কাউকে ধরে ফেলল না ত? না সেটা আজ রাতে অন্তত নয়।
পিঠের ওপরে চাঁটি খেয়ে সম্বিত ফেরে, পেছনে হাসিহাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রাণী, "কি গো, ভয় পেয়ে গেছিলে নাকি যে তোমার পাখী পালিয়ে গেল?"
সেটা ঠিক, দানা ভয় পায়নি তবে বুক কেমন যেন ফাঁকা হয়ে গেছিল ক্ষণিকের জন্য। কিন্তু ইন্দ্রাণীর বড় বড় কাজল কালো চোখের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দিয়ে বলল, "এবারে চলো পাখী, আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।"
ইন্দ্রাণী ওকে জিজ্ঞেস করে, "একটু দাঁড়াও, একটু পরে যাচ্ছি।"
মত্ত তালে নাচতে থাকা মানুষ, নায়িকা নয়নার পাশে মাছির মতন ভনভন করা লোকজন দেখে ওকে বলে, "দানা, এইসব খুব মেকি বলে মনে হচ্ছে, তাই না?"
দানা মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ।"
ইন্দ্রাণী, দানার বাজু শক্ত করে ধরে অন্যদিকে একটু ফাঁকা জায়গা দেখে দাঁড়িয়ে ওই কিলবিল করা মানুষ দেখে আর হাসে। ঠিক সেই সময়ে কঙ্কনা যেন মাটি ফুঁড়ে হাসতে হাসতে ওদের সামনে এসে উপস্থিত হয়। ওর পেছনে আর একজন মহিলা, মনে হয় কঙ্কনার বান্ধবী।
কঙ্কনা মিচকি হেসে ইন্দ্রাণীকে জিজ্ঞেস করে, "কি গো ইন্দ্রাণীদি, কখন এলে?"
ওর উত্তরে ইন্দ্রাণী বলে, "বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল, এবারে ফিরবো।"
কঙ্কনা ঘড়ি দেখে বড় বড় চোখ করে বলে, "এই যাঃ ইন্দ্রাণীদি, সবে মাত্র এগারোটা বাজে এখুনি কি যাবে? এই তো, রাত কেবল শুরু হল গো।" দানার দিকে তাকিয়ে বলে, "তুমি না হয় নাই বা নাচলে, মিস্টার বিশ্বজিতের সাথে আমি নাচতেই পারি। তাই না মিস্টার বিশ্বজিৎ?" এইবলে দানার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, "তোমার পার্স পড়ে গেছিল বিশ্বজিৎ।” বলে এক অদ্ভুত হাসি দিয়ে ওর পার্স ওকে দেয়।
দানা আকাশ থেকে পড়লো, কখন ওর পকেট থেকে পার্স পড়েছে সেটা টের পায়নি, পার্স নিয়ে ধন্যবাদ জানায়। কঙ্কনা পেছনের মহিলার সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দেয়, মিসেস নাসরিন আখতার, ওর বান্ধবী। কঙ্কনা আর নাসরিন দুইজনেই শাড়ি পরে এসেছে, সবার মতন বিশেষ রাখঢাক ছাড়া পোশাকের বাহার। কঙ্কনা দানার পাশ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে ওকে নাচার জন্য প্ররোচিত করার চেষ্টা করে, কিন্তু দানার মন বলে যে এই নারীর উদ্দেশ্য সুবিধের নয়।
ইন্দ্রাণীর ঠোঁটে কঠোর এক হাসি ফুটে ওঠে, "নারে ভাই কঙ্কনা, আজকে নয়, এখন আমাদের ফিরতেই হবে। কাল খুব ভোরবেলা ও বেরিয়ে যাবে রে। পরে একদিন সময় করে আমার বাড়িতে আসিস, অনেক গল্প করা যাবে।"
কঙ্কনা ওর হাত ছেড়ে চুকচুক করে বলে, "মিস্টার বিশ্বজিৎ, আমাদের দেখা একদিন হবেই হবে।"
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment