আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram
Written By pinuram
বারো
গোধূলি লগ্ন (#০১)
ইন্দ্রাণীর সাথে না দেখা করলেই নয়, ওকে জানাতেই হবে এইসব ব্যাপারে। ইন্দ্রাণীকে সতর্ক করতে হবে, পারলে এই মহানগর থেকে দূরে কোথাও কয়েক মাসের জন্য সরিয়ে দিতে হবে। একবার নয়না সুস্থ হয়ে উঠলে, ওই ধূর্ত সুচতুর নারী থেমে থাকবে না। সুযোগ খুঁজবে ইন্দ্রাণীকে আঘাত করতে যাতে দানাকে কুপোকাত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু নয়না আঘাত হানার আগেই ওকে আঘাত করতে হবে। জানিয়ে দিতে হবে দানা কিছুতেই দমবে না।
নয়না সাথে ধর্ষণের ঘটনার চারদিন পরে একদিন বিকেলে দানা ঠিক করে নেয়, ইন্দ্রাণীকে ফোন করবে। মোবাইল খুলে ফোন করতে যাবার আগে একবার ইষ্ট নাম জপ করে নেয়। ইন্দ্রাণীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ নেই প্রায় দশ মাস হয়ে গেছে। এতদিন পরে হঠাৎ কি ভাবে কথা শুরু করবে..... যদিও ওর এই বর্তমান ফোন নাম্বার ইন্দ্রাণীর কাছে নেই, হয়তো ফোন নাও উঠাতে পারে। যদি উঠায় তাহলে ওর কণ্ঠ স্বর শুনে ওর ফোন কেটে দেয় তাহলে কি করবে? এই সব ভাবতে ভাবতেই দানা ঘামিয়ে যায়। কিছুটা আশঙ্কায়, কিছুটা চাপা উত্তেজনায় শেষ পর্যন্ত দানা ইন্দ্রাণীকে ফোন লাগায়।
ওইপাশ থেকে ইন্দ্রাণীর নরম কণ্ঠস্বর শুনেই দানার হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে যায়, "হ্যালো কে বলছেন?"
দানার গলা শুকিয়ে আসে, বার কতক ঢোঁক গিলে, মনে সাহস সঞ্চার করে, "আমি দানা।"
ইন্দ্রাণী চোখ বুজে নির্বাক হয়ে যায়, যেন ওর শরীর জোরে কেউ নাড়িয়ে দিয়ে চলে গেছে। এইদিকে দানা নিরুত্তর হয়ে থাকে ইন্দ্রাণীর পরবর্তী উত্তরের জন্য। ইন্দ্রাণী হিমশীতল কণ্ঠে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে, ফোন কেন করেছো?"
দানা ঠিক কোথা থেকে কথাবার্তা শুরু করবে সেটা ভেবে পায় না, একটুখানি চুপ থাকার পরে বলে, "তোমার সাথে একটু দেখা করতে চাই।"
উত্তর আসে সেই হিমশীতল কণ্ঠে, "কেন দেখা করতে চাও?"
দানা বুকের ধুকপুকানি ধীরে ধীরে বেড়েই চলে, গলা শুকিয়ে কাঠ। বার কয়েক ঢোঁক গিলে বলে, "কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ছিল তোমার সাথে।"
গম্ভীর কণ্ঠে ইন্দ্রাণী প্রশ্ন করে, "কি ব্যাপার বলো।"
দানার গলা শুকিয়ে আসে, এতদিন পরে কথা বলছে ইন্দ্রাণীর সাথে। ওর কণ্ঠস্বর শুনে মনে হয় দানা যে ওকে ফোন করেছে সেটা ইন্দ্রাণীর একদম পছন্দ নয়, কিন্তু ইন্দ্রাণীকে সাবধান করতেই হবে না হলে কোন না কোন সময়ে নয়না ওকে আঘাত করতে পারে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দানা বলে, "দেখো আমি জানি তুমি আমার ওপরে রেগে আছো আর সেটাই স্বাভাবিক। তোমার জায়গায় আমি থাকলেও নিজের ওপরে রেগে যেতাম, বাড়ি থেকে বের করে দিতাম। কিন্তু দয়া করে একটি বার আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। অনেক কিছু বলার আছে।"
ইন্দ্রাণী চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দেয়, "দশ মাস পরে আমার কথা মনে পড়েছে? তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই বুঝেছো। তুমি আর আমাকে ফোন করবে না।"
ইন্দ্রাণীর ভেতরের ক্রোধ, বিদ্বেষ দানার অনুধাবন করতে অসুবিধে হয় না, তাও একবার শেষ চেষ্টা করে ইন্দ্রাণীর সাথে দেখা করার জন্য, "প্লিস পাখী, একটি বার শুধু তোমার সাথে দেখা করতে চাই।"
"পাখী" ডাক মনে হয় ইন্দ্রাণীকে নাড়িয়ে দিল, কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে ওইপাশ থেকে ধরা কণ্ঠে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "আমাকে ওই নামে ডাকার অধিকার অনেকদিন আগেই হারিয়েছো দানা। একদম আমাকে ওই নামে ডাকবে না। তোমার যা কিছু বলার সেটা ফোনে বলে দাও।"
দানা কাতর প্রার্থনা করে, "আচ্ছা আমি ক্ষমা চাইতে আসিনি, শুধু তোমার সাথে একটি বার দেখা করতে চাই। আমি একটু সমস্যায় পড়েছি তাই তোমার সাথে দেখা করা খুব জরুরি।"
ইন্দ্রাণী উৎসুক হয়ে ওঠে, একসময়ে দানাকে ভালবাসতো ঠিক তাই বুকটা একটু কেঁপে ওঠে। কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, "কাকে নিয়ে সমস্যা? কঙ্কনা কি আবার তোমার পেছনে লেগেছে নাকি?"
কঙ্কনার নাম শুনতেই দানার শরীরে লোম খাড়া হয়ে যায়। কঙ্কনা কি এখন ইন্দ্রাণী আর দানার ওপরে নজর রেখেছে? ইন্দ্রাণী কি এখন পর্যন্ত কঙ্কনার সাথে সম্পর্ক রেখেছে? প্রশ্নের ভিড় জমে ওঠে দানার মনে, এর উত্তর একমাত্র ইন্দ্রাণীর কাছেই পাওয়া যাবে। তবে এইবারে কঙ্কনা নয়, নয়না একটা বড় সমস্যা। কঙ্কনা আর নয়না দুইজনেই মারাত্মক ধূর্ত আর ভয়ঙ্কর নারী। দানা চাপা কণ্ঠে ইন্দ্রাণীকে জানায়, "না, ঠিক কঙ্কনা নয় অন্য কেউ।"
ম্লান হেসে দানাকে জিজ্ঞেস করে ইন্দ্রাণী, "আবার কি কোন মেয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছো?"
অবশেষে ইন্দ্রাণীর ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি ফুটেছে, দানা মন খুশিতে ভরে ওঠে। মাথা চুলকে মিচকি হেসে বলে, "অনেকটা তাই, তবে এইবারে সমস্যা একটু বেশি সংকটজনক।"
ইন্দ্রাণী মৃদু হেসে বলে, "বারেবারে নারী সংক্রান্ত সঙ্কটে পড়তে তোমার খুব ভালো লাগে তাই না?" কিছুক্ষণ থেমে একটু ভেবে বলে, "ঠিক আছে, কাল বিকেল ছ'টার পরে আমি খালি আছি।"
আনন্দে দানা লাফিয়ে ওঠে। শ্বাসের গতি এতক্ষণ রুদ্ধ করেছিল, এই বারে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে উত্তর দেয়, "আচ্ছা ঠিক আছে, পাখী। অনেক অনেক ধন্যবাদ পাখী।"
এইবারে "পাখী" ডাক শুনে ইন্দ্রাণী আর কিছু বলে না, মৃদু হেসে ওকে বলে, "অত লাফাতে হবে না। ঠিক আছে, সময় মতো চলে এসো।"
পরেরদিন আর ওদের আলোচনা সভা বসে না। সবার সাথে ফোনেই সংবাদ যোগাড় সেরে ফেলে। মহুয়া এখন পর্যন্ত মুখ ফুলিয়ে বসে। না না, ঠিক মুখ ফুলিয়ে নয়, ভাঙ্গা বুক নিয়ে বসে। তবে রুহির আধো আধো কণ্ঠস্বর শুনাতে দিয়েছে দানাকে। দানার পক্ষে সেটাই যথেষ্ট।
ইন্দ্রাণীর সাথে কথাবার্তা বলার পরে দানা বুঝে গেছে, যে ইন্দ্রাণীকে শেষ দেখেছিল আর যে ইন্দ্রাণীর সাথে দেখা করতে চলেছে, দুই নারী সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর। দেখা হওয়ার পরে কি হবে সঠিক জানা নেই। হয়তো সামনাসামনি দেখা হয়ে গেলে আবার সেই পুরানো দিন গুলো মনে পড়ে যাবে। রোজ রাতে ওর বিছানার পাশে বসে ওর আঁচড়ের দাগের ওপরে সোফ্রামাইসিন লাগানো, কোনো কোনদিন সকাল পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প করা, ওদের প্রগাঢ় ভালোবাসার খেলা।
সারাদিন শুধু এই চিন্তাতেই কেটে যায়, ওর সামনে গেলে কি করবে। বারেবারে মনে মনে আওড়ায় কি ভাবে কথা থেকে কথা শুরু করবে। আয়নায় দেখে নিজের প্রতিফলন কে ইন্দ্রাণী ভেবে বলে, "না মানে আমি খুব দুঃখিত পাখী।" ইসসস না হল না, একটু নরম কণ্ঠে ক্ষমা চাইতে হবে, "তোমার রাগ করা স্বাভাবিক পাখী।" না না ঠিক হচ্ছে না..... "পাখী তুমি খুব বড় সঙ্কটে"। এই সেরেছে রে.... এইকথা শুরুতেই বললে ওকে এক লাথি মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। যাই হোক, মাথা চুলকে গুমটি থেকে বেড়িয়ে পরে ইন্দ্রাণীর বাড়ির উদ্দেশ্যে। গুমটি থেকে বের হওয়ার আগে শক্তি আর বলাইকে ছুটি দিয়ে দেয়। ইন্দ্রাণীর বাড়ি যাওয়ার পথে গোলাপ, রজনীগন্ধা আর বেশ কিছু ফুল মিশিয়ে একটা বড় ফুলের স্তবক কেনে।
ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়ে দানা, বার কতক নিজেকে জরিপ করে নেয়। ঠিক ঠাক দেখতে লাগছে না সাধারন? রুদ্ধশ্বাসে দরজা খোলার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। এক সেকেন্ড এক ঘন্টার মতন মনে হয় দানার। দরজা খুলতেই ইন্দ্রাণীকে দেখে দানার মাথা ঘুরে যায়। এতদিন পরে চোখের সামনে ইন্দ্রাণী, একটা গোলাপি শাড়িতে ভীষণ সুন্দরী দেখায়। চূড়ান্ত লাস্যময়ী ইন্দ্রাণী এই এক বছরে অনেক বদলে গেছে, বয়স অনেক বেড়ে গেছে বলে মনে হয়। তবে চেহারার সৌন্দর্যে বিশেষ টোল খায়নি। একটু মেদ জমেছে তবে অসম্ভব সুন্দরী দেখায় ওকে। চোখের সামনে পুরানো প্রেম দেখে, গলার কাছে আওয়াজ দলা পাকিয়ে চলে আসে। ইন্দ্রাণী ওর দিকে ভুরু কুঁচকে মৃদু হেসে তাকিয়ে থাকে। দানার সারা শরীর অবশ হয়ে যায়। ঘরের মধ্যে ধীর পায়ে ঢুকে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দেখে। বসার ঘর অনেক বদলে গেছে। টিভির পাশে একটা বিশাল আলমারি, বই আর বিভিন্ন রকমের ঘর সাজানোর জিনিসে ঠাসা। দেয়ালে বেশ কয়েকটা শুচিস্মিতা আর দেবাদিত্যের ছবি টাঙ্গানো। এই গুলো আগে ওই দেয়ালে ছিল না। ওদের পরিবারের একটা বেশ বড় ছবি সোফার পেছনের দিকে টাঙ্গানো। রঞ্জন, ইন্দ্রাণী, শুচিস্মিতা আর দেবাদিত্য কোন পাহাড়ি জায়গায় ঘুরতে গিয়ে বরফের মধ্যে গড়িয়ে সেই ছবি তোলা। ইন্দ্রাণীর পাশে রঞ্জনকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য দানার মন ভার হয়ে উঠলো।
ইন্দ্রাণী দানাকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কেমন আছো?"
দানা ঘাড় ঘুরিয়ে ইন্দ্রাণীর মৃদু হাসি হাসি মুখ দেখে উত্তর দেয়, "এই চলে যাচ্ছে।" বলে ওর হাতে ফুলের স্তবক ধরিয়ে দেয়।
ইন্দ্রাণী ওর হাত থেকে ফুলের স্তবক নেওয়ার সময়ে দানার আঙ্গুলের সাথে ওর আঙ্গুল ঠেকে যায়। ক্ষণিকের ওই পরশে দুইজনে এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে পরে। পরস্পরের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পরে দানাকে ইন্দ্রাণী সোফার ওপরে বসতে বলে। ইন্দ্রাণী বেশ একটু তফাতে অন্য ছোট সোফার ওপরে বসে ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে।
আপাদমস্তক দানাকে জরিপ করে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, "এতদিন পরে আমার কথা মনে পড়েছে?"
দানাও এতদিনে অনেক বদলে গেছে। পোশাকের ধরন দেখে ট্যাক্সি চালক, অথবা গাড়ির চালক বলে কেউ বলতে পারবে না।
দানা ম্লান হেসে আমতা আমতা বলে, "না মানে হ্যাঁ....."
ইন্দ্রাণী ওকে প্রশ্ন করে, "এতদিন কি করলে? আজকাল কি করছ তুমি?"
নিজের কথা কোথা থেকে শুরু করবে সেটা ভাবতে শুরু করে। দানা খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পরে মৃদু হেসে ওকে বলে, "এই নয় দশ মাসে অনেক কিছু ঘটে গেছে আমার জীবনে, বলতে শুরু করলে সকাল হয়ে যাবে।"
ইন্দ্রাণী মৃদু হেসে জানায়, "সকাল পর্যন্ত আমার কাছে সময় আছে দানা।"
বুকের মধ্যে বল সঞ্চার করে দানা নিজের কাহিনী শুরু করে। ইন্দ্রাণীর কাছ থেকে ধাক্কা খাওয়ার পরে আর নিজের পাপবোধে দানা এই শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য রেল স্টেশানে যায়। সেইখানে দানার সাথে বাপ্পা নস্করের ড্রাইভার, ফারহানের সাথে দেখা হয়। ফারহান ওকে নিয়ে মহেন্দ্রবাবুর কাছে যায়। মহেন্দ্রবাবুর কাছে দানা অনেকদিন কাজ করে। যদিও আইন বিরুদ্ধ কাজ, তাও দানার সেই কাজ ভালো লাগে। ছোট নৌকায় সমুদ্রে যাওয়া, সাগর জলে ঝাঁপ দিয়ে সোনার বাক্স তোলা, বড় বড় ঢেউয়ের সাথে লড়াই করে মাছ ধরা ইত্যাদি। সেই সাথে পিস্তল রিভলভার চালানো শেখে। তারপরে ফারহানের সাথে বেশ কিছুদিন বাপ্পা নস্করের সঙ্গে সঙ্গে কাটায়।
ইন্দ্রাণী একমনে শ্বাস রুদ্ধ করে দানার রোমাঞ্চকর কাহিনী কোন প্রশ্ন না করে শুনে যায়। মাঝে মাঝেই এটা ওটা প্রশ্ন করে, "সমুদ্রে যেতে ভয় করেনি?" "কি কি মাছ ধরতে তুমি?" "শেষ পর্যন্ত বাপ্পা নস্করের সাথে?" ইত্যাদি।
সেই সব উত্তর দেওয়ার পরে দানা ইন্দ্রাণীকে জানায় যে ও অভিনেত্রী নয়না বোসের ড্রাইভারের কাজে যোগ দেয়। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত অভিনেত্রী নয়নার বোসের গাড়ির চালকের কাজ করত কিন্তু একটা সমস্যায় জড়িয়ে পরে সেই কাজ ছেড়ে দিয়েছে। ইচ্ছে করেই মহুয়াকে বাঁচানোর কাহিনী, আর মহুয়ার প্রেমের কথা দানা এড়িয়ে যায়। মনের এক কোনায় একটি বারের জন্য ইন্দ্রাণীকে কাছে পাওয়ার প্রবল বাসনা মাথা চাড়া দেয়।
এতক্ষণ দানার কাহিনী শোনার পরে ইন্দ্রাণী ওকে হেসে প্রশ্ন করে, "তোমার মতন একটা ছেলে নয়না বোসের ড্রাইভার? বাপ রে, এই কয় মাসে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ তাহলে।"
দানা মৃদু হেসে মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ, অনেক কিছু দেখেছি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।"
ইন্দ্রাণী বেশ কিছুক্ষণ দানার দিকে তাকিয়ে থাকে। দানার চোখে সেই পুরানো আগুন দেখতে পেয়ে ইন্দ্রাণীর চিত্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। নিজেকে একটা বাঁধের আড়ালে ঢেকে দুই হাতের নখ খোঁটে, কিছু একটা বলতে গিয়ে আটকে যায়। একটু ইতস্তত ভাব দেখা দেয় মনের আঙ্গিনায়। কি জিজ্ঞেস করতে চাইছে ইন্দ্রাণী?
ইন্দ্রাণী উৎসুক চাহনি দেখে দানা আর থাকতে পারে না, ইন্দ্রাণীর কাছে এসে বলে, "তোমাকে আজ ভারী সুন্দরী দেখাচ্ছে পাখী। এই শাড়িতে আরও বেশি সুন্দরী লাগছে তোমাকে।"
বহু দিন পরে দানার মুখে ওই বুলি শুনে ইন্দ্রাণীর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, মিষ্টি হেসে ওকে বলে, "তাই নাকি শয়তান ছেলে?"
দানা মৃদু কণ্ঠে বলে, "তোমার ওই কাজল কালো চোখের তারায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।"
ইন্দ্রাণীর চোখ ছলছল করে ওঠে, "কে বারন করেছিল হারিয়ে যেতে? ইচ্ছে করেই চলে গেছিলে।"
দানার চোখ ছলছল করে ওঠে ওই কথা শুনে, "বড় পাপ করেছিলাম যে। তোমাকে খুব মনে পড়তো জানো।"
ইন্দ্রাণী উঠে দাঁড়ায়, রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু থমকে দাঁড়িয়ে দানার দিকে দেখে ঠোঁট কামড়ে ধরে ছল ছল চোখে দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে দানাকে প্রশ্ন করে, "এতদিন আমার কথা মনে ছিল না, শয়তান ছেলে। এতদিন পরে প্রেম দেখাত এসেছো?"
দানা সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। বুকের মধ্যে দামামা বাজতে শুরু করে দেয়। দোদুল্যমান দানার চিত্ত কোন দিকে যাবে বুঝে উঠতে পারে না। ওর হৃদয় মাঝে নিষ্পাপ মিষ্টি সুন্দরী মহুয়ার বাস।
দানা ওর কোমল হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নিয়ে বলে, "পাখী, তুমি....." কথাটা কোন এক অব্যাক্ত কারনে শেষ করতে পারলো না দানা।
গোধূলি লগ্ন (#০২)
ইন্দ্রাণীর চোখের কোল উপচে পড়ে। হৃদয় দুলে ওঠে, দানার চোখ ওকে ভীষণ ভাবে কাছে টানে, কিন্তু এক দ্বিধা বোধ মনে কোনায় জেগে ওঠে ইন্দ্রাণী। তপ্ত হাতের ছোঁয়ায় শরীর অবশ হয়ে আসে, কিন্তু এই ইন্দ্রাণী অনেক মার্জিত। ধীরে ধীরে নিজের হাত দানার হাতের মধ্যে থেকে ছাড়িয়ে নেয়।
মৃদু হেসে দানাকে বলে, "তুমি সোফায় বস আমি তোমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি।"
দানা এখানে কফি খেতে আসেনি, এসেছিল ইন্দ্রাণীর সাথে দেখা করতে আর পারলে ইন্দ্রাণীকে কোন নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে রাখতে। দেখা করা হয়ে গেছে, আর মহুয়া যে ভয় করেছিল সেটা সত্যি হয়ে গেছে। কিন্তু এখন ইন্দ্রাণীকে লুকিয়ে ফেলার কথাটা ওকে বলা হয়নি। আবার সেই নিজের ভুলে ইন্দ্রাণীর জীবন বিপন্ন করেছে, কোন মুখে ইন্দ্রাণীকে সেই কথা জানাবে দানা। ইন্দ্রাণীর হাত ছেড়ে, মৃদু হেসে চুপচাপ বসার ঘরে চলে যায়। নিস্পলক চোখে ইন্দ্রাণীর যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে থাকে। বেশ কিছু পরে ইন্দ্রাণী একটা ট্রেতে কফির কাপ আর কিছু খাবার নিয়ে টেবিলে রাখে।
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে দানা একভাবে ইন্দ্রাণীর দিকে তাকিয়ে থাকে। ইন্দ্রাণী বুঝে যায় দানা কি চিন্তা করছে। ওর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কি এখনও আমাকে ভালোবাসো দানা?"
ওই প্রশ্ন শুনে দানা নড়ে ওঠে, এর কি উত্তর দেবে। সেই সাথে ইন্দ্রাণীকে দেখে ওকে ফিরে পাওয়ার এক সুপ্ত ইচ্ছে মনের এক কোনায় দেখা দেয়। একপাশে ইন্দ্রাণী অন্যপাশে মহুয়া, দুইজনকে সমান ভাবে ভালোবাসে। কাকে ছেড়ে কার কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে দানা? মহুয়া অবশ্য ইন্দ্রাণীর ব্যাপারে সব জানে, জানে দানা একসময়ে ইন্দ্রাণীকে খুব ভালবাসতো, কিন্তু ছলনায় পরে আর নিজের ভুলে ইন্দ্রাণীকে হারিয়েছে। হয়তো ইন্দ্রাণীর সাথে আবার দেখা হলে সেই পুরানো প্রেম জেগে উঠবে। নিজের চিত্ত কে স্বান্তনা দিয়ে, কঠিন চিত্তে বুক বেঁধে গত কয়েক দিনেই নিজেকে ওর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে আসন্ন বিরহের প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে।
ইন্দ্রাণীর এই মানসিক দ্বন্দ, মানসিক ঝঞ্ঝা দানার নজর এড়ায় না। বুঝে যায়, ইন্দ্রাণী আর ওকে সেই আগের মতন নজরে দেখে না। শক্তি আর বলাইয়ের মুখে ইতিমধ্যে শুনেছে একজন ভদ্র লোকের কথা। কে সেই ভদ্রলোক, কি তার আসল পরিচয়, সেই ভদ্রলোক কি ইন্দ্রাণীকে ভালোবাসে? ইন্দ্রাণী নিশ্চয় তাকে ভালোবাসে বলেই এতদিন পরে দানার সাথে দেখা হবার পরেও ঠিক ভাবে নিজের চিত্তকে মেলে দিতে পারছে না।
হৃদয় দুলে দুলে ওঠে। দোদুল্যমান দানার মন, শেষ পর্যন্ত নিজের হৃদয়ের কথাটা ব্যাক্ত করেই ফেলে, "হ্যাঁ পাখী আমি এখন তোমাকে ভালোবাসি।" কিন্তু না, দানা শেষ পর্যন্ত ওই কথা মুখে আনতে পারলো না। নিরুত্তর দানা নিস্পলক নয়নে ইন্দ্রাণীর ম্লান হাসিহাসি মুখের দিকে চেয়ে থাকে।
দানাকে নির্বাক দেখে ইন্দ্রাণী ছলছল চোখে দানার দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলে, "তুমি, আমার জীবন সম্পূর্ণ বদলে দিয়ে চলে গেলে, জানো।"
ইন্দ্রাণী চোখের কোল মুছে নিজের কথা বলতে শুরু করে। দানাকে দেওয়া কথা মতন, রাতে বেরাতে বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। বি.এড. করা ছিল না, তাই কোন বড় স্কুলে চাকরি পায়নি। একটা ছোট বাচ্চাদের মন্টেসরি স্কুলে বাচ্চাদের পড়ায় আর বি.এড. করতে শুরু করে দেয়। দানা চলে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পরে কঙ্কনার ফোন আসে। ইন্দ্রাণী ওর ফোন পেয়ে খুব ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে, বিশেষ কিছু কথা না বাড়িয়ে ওর সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। তারপরে কোনোদিন আর কঙ্কনার সাথে দেখা হয়নি। তবে একবার রমলার সাথে দেখা হয়েছিল। স্কুল আর বাচ্চাদের পড়াশুনা নিয়েই দিন কেটে যায়।
সব কথা বলার পরে ইন্দ্রাণী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ওর চোখে চোখ রেখে বলে, "দানা একটা কথা বলতে চাই তোমাকে।"
উৎসুক হয়ে দানা ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইন্দ্রাণী ওকে বলে, "তুমি আর আমি দুই ভিন্ন মেরুর মানুষ।" দানা এটা অনেকদিন আগেই বুঝে গিয়েছিল তাই এক সময়ে ওর থেকে দূরে সরে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু দুই পক্ষ থেকে এত ভীষণ আকর্ষণ দেখা দেবে সেটা ভেবেই পায়নি। ইন্দ্রাণী বলে চলে, "স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়, দানা। কিন্তু দানা, বাবা মায়ের মধ্যে, ভাই বোনের মধ্যে বিচ্ছেদ কখন শুনেছ তুমি?" কি কথা বলতে চায় ইন্দ্রাণী সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। ইন্দ্রাণী বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, "দানা, আমার স্বামী রঞ্জন আবার ফিরে এসেছে।"
অন্যকারুর সাথে ইন্দ্রাণীকে দেখলে হয়ত এতটা অবাক হত না দানা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওর স্বামী? যে মানুষ একসময়ে ইন্দ্রাণীর বিশ্বাস, ইন্দ্রাণীর ভালোবাসা উপেক্ষা করে অনেক মেয়ে সাথে কাটিয়েছে।
ইন্দ্রাণী ম্লান হেসে দানার মনের ভাব বুঝে বলে, "তুমি চলে যাবার পরে আমি বড় একা হয়ে গেলাম। আমিও ওই রাতে ঘুরে বেড়ান ছেড়ে দিলাম, স্কুল বাচ্চা আর পড়াশুনা নিয়ে মেতে উঠলাম। পুরুষ মানুষের প্রতি বিশ্বাস অনেক আগে থেকেই চলে গিয়েছিল, কিন্তু তুমি থাকাতে সেটা একবার জন্মে ছিল। তোমাকে হারানোর পরে আবার সেই পুরুষের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা জন্মে গেল। বারেবারে দুই বার, আমি খুব ভেঙ্গে পড়ে গেলাম। একমাস পরে রঞ্জন এই শহরে বদলি হয়ে আসে। মাঝে মাঝেই রঞ্জন আমার বাড়িতে আসতো। মাঝে মাঝেই আমাদের এখানে সেখানে দেখা হয়ে যেত। ধীরে ধীরে কেন জানি না, স্বামীর মধ্যে এক প্রেমিকের খোঁজ পেয়ে গেলাম। কখন জানি না, রঞ্জন সেই শুন্যস্থানে ঢুকে আমাকে ভরিয়ে দিল। বিয়ের কুড়ি বছর পরে, ছেলে মেয়েকে সাথে নিয়ে এই শীতে কাশ্মীর গেলাম হানিমুনে।" বলেই হেসে ফেলে ওই ছবি দেখায়, "অনেক কিছুই ফিরে পেলাম দানা।" বলে ওর হাতের ওপরে হাত রেখে মিষ্টি হেসে বলে, "আমাকে মন থেকে মুছে ফেল দানা।"
দানার হাতের ওপরে ইন্দ্রাণীর কোমল উষ্ণ হাত বেশ কিছুখন থমকে থাকে। দানার মনের সব দ্বিধা দ্বন্দ এক নিমেষের মধ্যে কেটে যায়। ইন্দ্রাণীকে আমরন ভালবাসতে কষ্ট নেই, তবে এইবারে মহুয়ার কাছে অকপটে ফিরে যেতে পারবে। অন্তত ইন্দ্রাণীর বুক চিরে মহুয়াকে কাছে পেয়েছে সেই মনোভাব আর থাকবে না।
দানা, হেসে ইন্দ্রাণীর হাতের ওপরে হাত রেখে হেসে ফেলে, "জানো পাখী, আমিও একজন কে ভালোবাসি, মানে সে আমাকে ভালোবাসে।"
ইন্দ্রাণীর মন খুশিতে নেচে ওঠে অবাক চোখে প্রশ্ন করে, "কে সে ভাগ্যবতী? তোমার নজর বরাবর সুন্দরীদের ওপরেই। কি নাম কোথায় থাকে?"
দানা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মিচকি হেসে বলে, "রাজস্থানি মেয়ে মহুয়া বাজপাই, খুব মিষ্টি মেয়ে। আমার চেয়ে মনে হয় এক বছরের বড় হবে। ওর একটা ছোট মেয়ে আছে, রুহি।"
ইন্দ্রাণী কপাল চাপড়ে হেসে ফেলে, "কি যে বলি না তোমাকে, দানা। বিবাহিতা মেয়ে ছাড়া অন্য কেউ তোমার নজরে পড়ে না তাই না।"
দানা মাথা চুলকিয়ে ওকে বলে, "না মানে মহুয়ার সাথে দেখা হওয়া আর প্রেমে পড়া একটু অন্যভাবে হয়েছে।" তারপরে সবিস্তারে মহুয়ার ব্যাপারে জানায়। মহুয়ার সাথে প্রথম দেখা, লোকেশের বাড়িতে। মহুয়ার পরিচয়, কি ভাবে মহুয়াকে ইতর লোকেশের হাত থেকে বাঁচিয়েছে ইত্যাদি।
মহুয়ার সম্বন্ধে শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে আতঙ্কে আঁতকে ওঠে ইন্দ্রাণী, মানুষ কি সত্যি মনুষত্ব হারিয়েছে? কোন মানুষ কি নিজের বিধবা বৌমাকে এই ভাবে যৌন নির্যাতন করে নাকি? একমাত্র বিকৃত কাম মনস্ক পিশাচেরা এমন জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়। তবে খুশি হয় দানার সাহস আর ভালোবাসা দেখে।
শেষ পর্যন্ত হেসে ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, "কবে দেখা করাচ্ছো তোমার প্রেমিকার সাথে।"
দানা মাথা চুলকে বলে, "মেয়েটা একটু ক্ষেপে আছে।"
ইন্দ্রাণী আঁতকে ওঠে, "কেন, আবার কি করেছ ওর সাথে।"
এইবারে আসল কথায় আসতেই হবে, দানার এইখানে আসার আসল কারন আর মহুয়ার ক্রোধ দুটোই পরস্পরের সাথে জড়িত। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দানা শুরু করে নয়নার কাহিনী। নয়নার সাথে, রাজনৈতিক নেতা বিমান চন্দের গোপন সম্পর্ক, রাজনৈতিক নেতা বাপ্পা নস্করের সাথে সম্পর্ক। সেই সাথে সঙ্গীতাকে ধর্ষণের ঘটনা। বাপ্পা নস্করকে খুনের পরিকল্পনা আর রমলার কাছ থেকে নয়না জেনে যায় দানার আর ইন্দ্রাণীর মেলামেশা। ইন্দ্রাণীর মুখ শুকিয়ে যায় এই জটিল পরিস্থিতির কথা শুনে। দানাকে বাগে ফেলার জন্য নয়না হয়ত ওকে আঘাত করতে পারে। সেই শুনে আতঙ্কে ইন্দ্রাণী শিউরে ওঠে। দানা ওকে অভয় দিয়ে বলে ওর কিছু হবে না, কারন ওর বাড়ির ওপরে বেশ কয়েকদিন থেকেই দুই জন লোক নজর রেখে চলেছে। সেই শুনে ইন্দ্রাণী অবাক হয়ে যায়।
সব বিষয়ে শোনার পরে ইন্দ্রাণী হেসে বলে, "না দানা, আমার জন্য আর তোমার চিন্তা করতে হবে না। কারন, রঞ্জনের পদন্নোতি হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা এই শহর ছেড়ে চলে আমগুরি চলে যাচ্ছি। পাহাড়ের কোলে বেশ বড় শহর আমগুরি, ছেলে মেয়েদের কাছেও থাকতে পারব আমরা।"
ইন্দ্রাণী চলে যাবে জেনে দানার মন খানিক ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। দানার হাতে হাত রেখে মিষ্টি হেসে বলে, "এই দানা তাই বলে ভেব না যে মহুয়াকে না দেখেই আমি এখান থেকে যাবো। তোমার বিয়ে খেতে পুরো পরিবার নিয়ে উপস্থিত থাকবো চিন্তা নেই।"
দানা জানায় অচিরে দেখা করাবে, কিন্তু ইন্দ্রাণী নাছোড়বান্দা, আগামী কাল দেখা করতে চায়। মোবাইল খুলে মহুয়া আর রুহির ছবি দেখায়। কচি শিশু রুহি আর মহুয়াকে দেখে, ইন্দ্রাণী যারপরনাই আনন্দিত। ইন্দ্রাণীকে এই কয়দিন একটু সাবধানে চলাফেরা করতে অনুরোধ করে। ইন্দ্রাণী হেসে জানিয়ে দেয়, যে কয়েকদিনের মধ্যে স্কুল যাওয়া ছেড়ে দেবে। বাড়ির জিনিস পত্র ঘুছানোর আছে, নতুন জায়গায় স্বামী কন্যে আর পুত্রকে নিয়ে নতুন ভাবে সংসার তৈরি করার এক অনাবিল উত্তেজনায় ইন্দ্রাণীর হাওয়া ভাসছে। ইন্দ্রাণীর ওই হাসি মুখ দেখে দানা একটু ভারাক্রান্ত হলেও, খুশি হয়, এইবারে বিনা দ্বিরুক্তিতে মহুয়াকে কাছে পেতে পারে।
বিদায়ের নেওয়ার জন্য দানা উঠে দাঁড়ায়। সেই সাথে ইন্দ্রাণীও উঠে দাঁড়ায়। ওর পাশে এসে মিহি কণ্ঠে বলে, "শেষ বারের মতন একবার জড়িয়ে ধরবে না।"
দানার চোখ ছলকে ওঠে। ছলছল নয়ন কিন্তু ইন্দ্রাণীর লাল ঠোঁটের মিষ্টি হাসি দেখে দানা, ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে যায়। দানা, ইন্দ্রাণীকে কোমরে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে আনে। ইন্দ্রাণী হাত দুটি দানার কাঁধে উঠে যায়, উষ্ণ প্রেমের শ্বাসে ইন্দ্রাণীর স্তন জোড়া ফুলে উঠে দানার প্রশস্ত ছাতির সাথে পিষে যায়। কঠিন আঙুলের ভালোবাসার পরশে ইন্দ্রাণীর কমনীয় দেহ পল্লব অসাড় হয়ে আসে। দানা ইন্দ্রাণীর কোমরের দুপাশে হাত রাখে, ইন্দ্রাণীর ওর প্রশস্ত বুকের ওপরে হাতের তালু মেলে আদর করে বুলিয়ে দেয়। দানা মাথা নিচু করে ইন্দ্রাণীর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। ইন্দ্রাণী দানার জামার কলার খামচে ধরে নিজের ঊর্ধ্বাঙ্গ দানার ছাতির সাথে মিশিয়ে ওর দেহের উত্তাপ নিজের দেহে মাখিয়ে নিতে তৎপর হয়ে ওঠে। দুই প্রেম পিপাসু নর নারী চোখের ভাষা বিদায়ের ক্ষণের অন্তিম মিলনের চাহিদা ব্যাক্ত করে। দানা ওর কাজল কালো গভীর চোখের তারায়, মণি নিবিষ্ট করে তাকিয়ে থাকে।
কঠিন হাতের উষ্ণ পরশে ইন্দ্রাণীর শুন্য চিত্ত ভরে ওঠে। একবারের জন্য মনে হয় নিজেকে উজাড় করে দিতে, কিন্তু পরখনেই পিছিয়ে আসে কিছু একটা বাঁধা পেয়ে। সেই পুরানো দানা, যে ওকে ভালোবাসার পথ দেখিয়েছিল, রাতের পর রাত ওর মাথার কাছে বসে থাকত, ওর নেশা গ্রস্থ অর্ধ অচেতন দেহ কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিত। সেই দানার চোখের আগুনে চাহনি, প্রগাড় আলিঙ্গন, বুকের ধুকপুক, শরীরের উত্তাপ ইন্দ্রাণীকে অবশ করে দেয়। দানা ইন্দ্রাণীর কোমর জড়িয়ে, মাথা ঝুঁকিয়ে দেয় ওর মুখের কাছে। ধীরে ধীরে ইন্দ্রাণীর দুই চোখের পাতা অবশ হয়ে ভারী হয়ে যায়। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট জোড়া অল্প খুলে অধর মিলনের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে পরে। ধীরে ধীরে দানার ঠোঁট নেমে আসে ইন্দ্রাণীর লাল নরম ঠোঁটের ওপরে। চোখ বুজে, দানার গলা জড়িয়ে ইন্দ্রাণী, দানার গভীর আলিঙ্গনে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। কোমর জড়িয়ে খোলা পিঠে হাত বুলিয়ে উত্তপ্ত করে তোলে কমনীয় নারীকে। দানারগলা জড়িয়ে চুলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে চুম্বন নিবিড় করে নেয় ইন্দ্রাণী। ওদের চারপাশে সময় থমকে দাঁড়িয়ে পরে। দুইজনে এই ক্ষণ অনন্ত কালের জন্য ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করে, কিন্তু সময়ের কাঁটা কারুর অপেক্ষা করে না। কতক্ষণ ওইভাবে পরস্পরের অধর মিশিয়ে শেষ বারের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল খেয়াল নেই। তবে একসময়ে ইন্দ্রাণী নিজেই ওই গভীর অধর চুম্বন থেকে নিজেকে মুক্ত করে দানার পাশ থেকে সরে দাঁড়ায়।
বিদায়ের বেলায় ইন্দ্রাণী ওকে বলে, "কাল সকালেই আমি মহুয়ার সাথে দেখা করতে চাই। ঠিক এগারোটা নাগাদ আমার বাড়িতে চলে আসবে। না হলে আধা ঘন্টার মধ্যে আমি তোমার গুমটিতে গিয়ে হানা দেব কিন্তু।"
দানা মাথা নুইয়ে হেসে ফেলে, "যথাআজ্ঞা মহারানী, আপনার আদেশ শিরোধার্য।"
ইন্দ্রাণী ওর বুকের ওপরে একটা চাঁটি মেরে মিষ্টি হেসে বলে, "এইখানের মহারানী বদলে গেছে। তোমাকে থাকতে বলতাম কিন্তু রঞ্জন আজ রাতে বাড়ি ফিরছে না তাই আর বললাম না।" বলেই হেসে ফেলে ইন্দ্রাণী।
দানাও ইন্দ্রাণীর সেই বাক্য শুনে হেসে দেয়। ওর ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে হেসে বলে, "না গো পাখী, এই মিষ্টি হাসি নিয়েই তুমি থাকো সেটাই আমার কাম্য।"
গোধূলি লগ্ন (#০৩)
ইন্দ্রাণীর বাড়ি থেকে বের হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দশটা বাজে। কথায় গল্পে এতটা সময় কেটে গেছে সেটা আর ওর খেয়াল নেই। মোবাইল খুলে মহুয়াকে একটা ফোন করতে বৃথা চেষ্টা করে। জানিয়ে দেওয়া ভালো যে আগামী কাল ইন্দ্রাণীর সাথে ওর বাড়িতে আসবে। যথারীতি ফোন বেজে বেজে থেমে যায়। কি করে বুঝাবে দানা, এইবারে ওর মনে আর কোন দ্বিরুক্তি নেই, "জিত" এইবারে নিজের "পাপড়ি"র গভীর আলিঙ্গনে ধরা দিতে চায়।
রাত আর কাটতে চায় না, বিনিদ্র রজনী প্রবল উত্তেজনায় কেটে যায়। কাকভোরে উঠে স্নান সেরে মনা আর পিন্টুকে ছুটির কথা জানিয়ে দেয়। এগারোটা কেন লাগাতে যাবে দানা, ঠিক দশটা নাগাদ ইন্দ্রাণীর বাড়িতে হাজির। গিয়ে দেখে ইন্দ্রাণীর দরজায় তালা মারা। সেই দেখে দানা একটু চিন্তিত হয়ে যায়। শক্তিকে ফোন করতে, শক্তি জানায় যে ইন্দ্রাণী ম্যাডাম, এই সকালে কেনাকাটা করতে বেড়িয়েছে। যদিও বিশেষ কোন দোকান তখন পর্যন্ত ঠিক ভাবে খোলেনি তাও মধ্য মহানগরের বেশ কয়েকটা বড় বড় দোকান ইতিমধ্যে খুলে গেছে। দানা একটা ট্যাক্সি নিয়ে মধ্যমহানগরে চলে আসে। ফাঁকা রাস্তাঘাট, অফিসের ভিড় ছাড়া এমনি লোকের ভিড় এখন পর্যন্ত জমে ওঠেনি মধ্য মহানগরে। শক্তির অভিমুখ নির্দেশ অনুযায়ী ইন্দ্রাণীকে খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ পেতে হলনা দানাকে। এই সময়ে দানাকে ওইখানে দেখে ইন্দ্রাণী আশ্চর্য চকিত হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে কি ভাবে ওকে খুঁজে পেয়েছে।
শক্তি আর বলাইয়ের কথা বলতেই ইন্দ্রাণী হেসে ফেলে, "এখন নজর রেখে চলেছো?"
দানা মাথা চুলকিয়ে বলে, "কি করি বল। চোখে চোখে না রাখলে যে বিপদে পরে যাবো।"
ইন্দ্রাণী হেসে ওকে বলে, "এই দেখো আর দরকার নেই ওদের। এইবারে ওদের ছুটি দিয়ে দাও।"
দানা ওকে বলে, "তুমি শহর না ছাড়া পর্যন্ত আমার স্বস্তি নেই তাই এই বিষয়ে কিছু আমি শুনতে চাই না। আর হ্যাঁ, তুমি কোথায় যাচ্ছ সেটা যেন ঘুণাক্ষরেও তোমার কোন বন্ধু বান্ধবীকে জানিও না।"
চোখে দুষ্টুমির হাসি নিয়ে ইন্দ্রাণী জিব কেটে আঁতকে ওঠে, "ইসস আমি যে রমলাকে বলে দিয়েছি, কি হবে?"
দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, কিছুক্ষণ ভেবে বলে, "ঠিক আছে, ওকে আমি দেখে নেব। তবে আমগুরিতে কখন তোমার আশেপাশে কোন সন্দেহ জনক ব্যাক্তি অথবা কোন ঘটনা ঘটলে আমাকে জানাবে। সব থেকে আগে আমি রমলার মাথা ওর ধড় থেকে নামিয়ে দেব। তারপরে ওর কাটা মাথাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।"
দানার এই রুদ্র মূর্তি ইন্দ্রাণী কোনোদিন দেখেনি তাই একটু ভয় পেয়ে যায় সেই সাথে নিরাপত্তার এক ছোঁয়া মনের ভেতরে শীতল মলয়ের পরশ বুলিয়ে চলে যায়। ওর বাজু জড়িয়ে ধরে খিলখিল করে হেসে বলে, "এই না গো। বন্ধুদের ওপরে আর বিশ্বাস নেই। বিশেষ করে রমলার কাছে যেদিন শুনলাম যে একজনের খবর অন্যজনের কাছে বেচে টাকা আদায় করেছে, সেদিন থেকে ওর ওপরে বিশ্বাস উঠে গেছে। বাড়ির লোক ছাড়া কেউ জানেনা আমি কোথায় যাচ্ছি।"
দানা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। ইন্দ্রাণী, মহুয়ার জন্য একটা দামী শাড়ি কেনে, রুহির জন্য দামী পোশাক, সাদা ফারের জ্যাকেট, বেশ বড়সড় একটা পুতুল, বেশ কিছু খেলনা। এইসব কেনা কাটা করতে করতে ওদের বেশ দেরি হয়ে যায়। তারপরে শক্তির গাড়ি করেই ওরা মহুয়ার বাড়ি এসে পৌঁছায়।
লিফট দিয়ে উপরে ওঠার সময়ে দানা প্রমাদ গোনে। জানে একবার সামনা সামনি পড়লেই বিশাল ঝগড়া লাগিয়ে দেবে, কিন্তু সাথে ইন্দ্রাণী আছে এই একটা বাঁচোয়া। ইন্দ্রাণী কে দেখে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে মহুয়া? কিছুতেই সেটা আর ভেবে পায় না দানা। রেগে হয়ত যাবে না, তবে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারে।
দানা সরাসরি ওর ফ্লাটের দরজার সামনে দাঁড়ায় না। একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রাণীকে ইশারা করে ফ্লাটের কলিং বেল বাজাতে। হাত ভর্তি জিনিস পত্র নিয়ে ইন্দ্রাণী একটু বিরক্তি প্রকাশ করে। দানা এসে ওর হাত থেকে জিনিস পত্র নিয়ে নেয় কিন্তু আবার সেই আড়ালে দাঁড়িয়ে যায়। বেশ কয়েকবার কলিং বেল পরে মহুয়া দরজা খুলে এক অচেনা মহিলাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। এই চেহারা দানার মোবাইলে অনেক আগে একবার দেখেছে। এই চেহারা ভোলার নয়। ইন্দ্রাণী ওর দিকে হাসিহাসি চেহারা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে মহুয়া ওকে চিনতে পারে।
অবাক চোখে ইন্দ্রাণীকে সামনে দেখে মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "আপনি এইখানে?"
ইন্দ্রাণী হেসে ওর হাত ধরে বলে, "তোমাকে দেখতে এলাম এই আর কি।"
মহুয়া মুচকি হেসে ইন্দ্রাণীকে জিজ্ঞেস করে, "শয়তানটা তাহলে নিশ্চয় আশেপাশেই লুকিয়ে আছে তাই না?"
দানা আড়াল থেকে হাত ভর্তি জিনিস পত্রের ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে একটা দেঁতো হাসি দেয় মহুয়াকে দেখে। সেই হাসি দেখে খুশির চেয়ে বেশি, মহুয়া ওর ওপরে অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে নেয়।
ইন্দ্রাণী, মহুয়ার হাত ধরে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। মহুয়া বেশ আশ্চর্য হয়ে যায় ওদের দুইজন কে একসাথে দেখে। ওর চোখের মুক ভাষা অতি সহজে ইন্দ্রাণী ধরে ফেলে আর তাই হেসে বলে, "তোর গাধাটার সাথে তুই নাকি বেশ কয়েকদিন থেকে কথা বলছিস না? তাই ভাবলাম একেবারে কান ধরে নিয়ে আসি আর তোর কোলে ছেড়ে যাই।"
"তুমি" থেকে এক বাক্যে "তুই" সম্বোধনে, মহুয়ার শুন্য হৃদয় খুশির জোয়ারে ভরে ওঠে। ইন্দ্রাণীকে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায়, "এতদিন কোথায় ছিলে গো তুমি?" বলেই ইন্দ্রাণীর ঘাড়ে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দেয়।
ইন্দ্রাণী ওর মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করে বলে, "এই পাগলী মেয়ে তুই কাঁদছিস কেন? তোকে ছেড়ে কেউ কোথাও যাচ্ছে না। এই দ্যাখ তোর জন্যে ওকে ধরে নিয়ে এসেছি আর তুই কাঁদছিস?" ওর মুখ আঁজলা করে ধরে চোখের জল মুছিয়ে বলে, "ওর ওই দানা নাম পালটে দে। দানা নামে একটা বুনো গন্ধ ছড়িয়ে, বুঝলি। তাই বারেবারে বুনো ষাঁড়ের মতন এদিক ওদিকে পালিয়ে যায়।"
চোখে জল, ঠোঁটে হাসি মনের মধ্যে অসীম খুশির জোয়ার। মহুয়া ইন্দ্রাণীকে হাসি কান্না মিশিয়ে বলে, "শেষদিনে দিয়েছিলাম একটা নাম, ভেবেছিলাম....."
ইন্দ্রাণী হেসে ফেলে, "আচ্ছা বাবা, তুই যা ভেবেছিস সেটা এখন তোর কাছেই রাখ, ঠিক আছে। এইবারে প্রান ভরে একটু তোকে ভালো ভাবে দেখি।" উৎসুক ইন্দ্রাণী চোখ টিপে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি নাম দিয়েছিলিস ওই শয়তানটার?"
লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ক্ষীণ কণ্ঠে বলে, "আমাকে একপ্রকার জিতে নিয়ে এসেছিল তাই, জিত।"
ইন্দ্রাণী ওর থুঁতনি নাড়িয়ে আদর করে বলে, "ইসসস মেয়ের লজ্জা দেখে মরে যাই।"
সেই কথা শুনে মহুয়া আরো লজ্জা পেয়ে যায়। ফর্সা চেহারা লাল হয়ে যায়, পারলে এখুনি কোথাও মুখ লুকিয়ে ফেলে। দানার দিকে আড় চোখে অগ্নি দৃষ্টি হেনে ইশারায় জানায়, হাতের কাছে পেলে মেরে ফেলবে।
ওর ভালোবাসার দুই নারীর এহেন মিলন দুই চোখ ভরে দেখে যায়। ওদের দেখে কেউ বলবে না যে দুই সম্পূর্ণ অচেনা নারী এই মাত্র ওদের পরিচয় হয়েছে।
ইন্দ্রাণী, মহুয়ার বিশাল পাঁচ খানা ঘরের ফ্লাট দেখে জিজ্ঞেস করে, "এত বড় বাড়িতে একা থাকতে তোর ভয় করে না রে?"
দানা ওকে খেপিয়ে ইন্দ্রাণীর প্রশ্নের উত্তরে বলে, "চিন্তা নেই পাখী, এক বছরের মধ্যে, ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট টিম তৈরি করে ফ্লাট ভরিয়ে দেব।"
লজ্জায় মহুয়ার চেহারা লাল হয়ে যায়। ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান করে বলে, "সবসময়ে যাচ্ছেতাই কথাবার্তা মুখে না আনলে হয় না, তাই না?"
কচি রুহি কোথা থেকে ছুট্টে এসে দানার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতদিন কাছে পায়নি আদো আদো কণ্ঠে সব নালিশ জানায়, "ডাডা, ডাডা, মাম্মা আমাতে কারতুন দেত্তে দেয়নি।" "আচ্ছা মাম্মাকে আমি বকে দেব।" "ডাডা, মাই চকোলেট।" দানা পকেট থেকে চকোলেট বের করে দেয়। গাল বাড়িয়ে বলে, "ডাডা, মাই কিসি....." দানা ওর টোপা গালে চুমু খায়। রুহিকে কোলে নিয়ে দানা মেতে ওঠে।
মহুয়া কিছুতেই ইন্দ্রাণীকে না খাইয়ে ছাড়বে না। দানাকে ছেড়েই দুইজনে রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। যদিও রান্নার আলাদা লোক আছে তাও নিজের হাতে রান্না শুরু করে। নিরামিষ সুস্বাদু আহার। সেই দেখে ইন্দ্রাণী ওকে বলে যে দানা আমিষ ভোজি প্রাণী। মহুয়া হেসে বলে, ওর আমিষের ব্যাপারে খেয়াল রাখবে, মাছ মাংস নিজে কোনোদিন খায়নি তবে ওর জন্য এরপর থেকে রান্না করা, খাওয়া একটু একটু করে শিখে নেবে। খাওয়ার পরে ইন্দ্রাণী বিদায় নিতে চায়, মহুয়া কিছুতেই ছাড়তে চায় না, বারেবারে আরো একটু সময় থাকতে অনুরোধ করে।
সেই শুনে ইন্দ্রাণী ওকে জড়িয়ে ধরে ছলছল চোখে ধরা গলায় বলে, "তোরা দুটোতে ঠিক থাকিস, আর ওই ছেলেটাকে হাত ছাড়া করসি না।" দানাকে বলে, "এরপরে যেন এদিকে ওদিকে আর দেখা না হয়। ভালোবাসা বারেবারে দরজার টোকা মারে না, দানা।"
সঙ্গে সঙ্গে মহুয়া ওর কানেকানে বলে, "দানা নয়, দানা নয়, জিত।"
ইন্দ্রাণী হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, "তোর জিত শুধু মাত্র তোর আর কারুর নয়। বাকি সকলের কাছে দানা, আমার কাছেও দানা।"
দানা, ইন্দ্রাণীকে ছাড়তে যায় ওর বাড়িতে। ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ ইন্দ্রাণী ওর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এই মনে হয় শেষ স্পর্শ,এর পরে কি আর দানাকে সেই ভাবে স্পর্শ করতে পারবে? ওর বুকে ওর স্বামী রঞ্জনের হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা, দানার পাশে এই বারে মহুয়ার দেখা পাবে। মুক ইন্দ্রাণীর ঠোঁটের ভাষা অনেক কিছু বলে দেয়। দানা ওর হাত ধরে ঠোঁটের কাছে এনে আলতো চুমু খেয়ে বলে, "পাশে নেই তো কি হয়েছে, পেছনে থাকবো।"
ইন্দ্রাণী নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় না, ওর ঠোঁটের উষ্ণতার পরশ অন্তিম বারের মতন অঙ্গে মাখিয়ে বলে, "মহুয়া কে দেখো। আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না, যাও ওর কাছে ফিরে যাও দানা।"
আর এইবারে গুমটিতে গিয়ে লাভ নেই। মহুয়ার ফ্লাটকেই নিজের বাসস্থান করে নিতে আর দ্বিধাবোধ হয় না। মনের আনন্দে এক রকম লাফাতে লাফাতে ফ্লাটে ঢোকে। ঢুকেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরতে হাত বাড়ায়।
হাত বাড়াতেই গালের ওপরে মহুয়ার কোমল হাতের এক চড়, "শয়তান ছেলে, আগে থেকে বলা নেই কওয়া নেই। দুম করে এমন একজন কে বাড়িতে আনতে আছে নাকি? কিছুই খেতে দিতে পারলাম না, কি ভাবল বলো তো?"
দানা হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায় না, গালের ওপরে হাত বুলিয়ে ওকে কাছে টেনে বলে, "পাপড়ি, গতকাল রাতে যে তুমি আমার ফোন উঠাও নি।"
"পাপড়ি" নাম শুনে ওর বাহু ডোরে নিজেকে সঁপে দেয়। মহুয়ার কোমরে হাত দিয়ে দানা কাছে টেনে ধরে। দিনের আলোতে একটু খানি আড়ষ্ট ভাব দেখায় কিন্তু এতদিন পরে বুকের মাঝে ভালোবাসা পেয়ে চিত্ত ছলকে ওঠে। দানার প্রশস্ত ছাতির সাথে মহুয়ার কোমল উন্নত স্তন যুগল পিষে যায়। দানা, ইচ্ছে করেই ওই কোমল উষ্ণ স্তনের ছোঁয়া পেতে ওকে আরো নিবিড় করে কঠিন বাহুপাশে বেঁধে ফেলে। কঠিন ছাতির ওপরে কোমল স্তনের চাপ, প্রেম তৃষ্ণার্ত শরীরের উষ্ণতা পরস্পরের শরীরে ছড়িয়ে উত্তপ্ত করে তোলে আশেপাশের বাতাস। এতক্ষণ "পাপড়ি" নাম শুনে ওর দিকে তাকাতে পারছিল না। ধীরে ধীরে, দানার দিকে মুখ তুলে তাকায়। দানা একটু ঝুঁকে পড়ে প্রেমিকা, মহুয়ার মুখের ওপরে, চশমা ভেদ করে চোখের কালো মনির মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। প্রগাড় প্রেমের আবেগে মহুয়ার গোলাপি নরম ঠোঁট জোড়া অল্প খুলে যায়, ঠোঁটের পেছনে দুই সারি মুক্তো সাজানো।
দানা ওর মুখের ওপরে আলতো উষ্ণ শ্বাস বইয়ে বলে, "পাপড়ি তুমি ভারী সুন্দরী।"
মহুয়া ওর কাঁধের ওপরে হাত রেখে নিজেকে ওর সাথে চেপে ধরে। দুই চোখে গভীর প্রেমে বারিধারা। ঠোঁট জোড়া একটু কেঁপে ওঠে, মিহি প্রেমঘন কণ্ঠে ওকে বলে, "একবারের জন্য ভেবেছিলাম তোমাকে আর ফিরে পাবো না। বড় ভয় করেছিল, ইন্দ্রাণীদিকে বড় হিংসে হয়েছিল।"
দানা ওর পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে বলে, "জানি সোনা, তোমার কষ্ট আমি বুঝেছিলাম। এখন আর ওই কথা নয় সোনা, এখন শুধু আমি আর তুমি।"
দানা ওকে টেনে ধরে, নিজের সাথে মিলিয়ে দেয়। মহুয়ার বুকের ধুকপুকানি নিজের ছাতির ওপরে অনুভব করতে পারে। মহুয়ার শরীর ধীরে ধীরে আসন্ন প্রেমের মিলনের উত্তেজনায় উত্তপ্ত হতে শুরু করে দেয়।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "জিত, এখন কিন্তু রাত হয় নি।"
দানা আর থাকতে পারে না, নাকের ওপরে নাক ঘষে বলে, "দিন রাত দেখে লাভ নেই সোনা।"
মহুয়ার অল্প ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে উষ্ণ শ্বাস প্রশ্বাস দানার বুকে কামনার লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে দেয়। পুরুষাঙ্গ ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে ওঠে। দানা, ওর কোমর টেনে কাছে এনে, ওর নরম তলপেটের ওপরে নিজের কঠিন উদ্ধত পুরুষাঙ্গ আলতো চেপে ধরে।
দানা মিহি প্রেমঘন কণ্ঠে ওকে বলে, "তোমার মধ্যে এক অদ্ভুত আকর্ষণ আছে যেটা উপেক্ষা করা যায় না। ওই কাজল চোখের গভীরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, শরীরে এক অনির্বচনীয় মাদকতা ভরে রয়েছে।"
মহুয়া মিষ্টি হেসে চোখ বড় বড় করে বলে, "বাপ রে, এতো কথা শিখলে কোথা থেকে, জিত? নয়নার কাছে কি ওর সিনেমার স্ক্রিপ্ট পড়তে নাকি?"
নয়নার নাম শুনতেই একটু কামোত্তেজিত হয়ে ওঠে সেই সাতে একটু বিতৃষ্ণা। মহুয়াকে একটু জোরে চেপে ধরে বলে, "পাপড়ি, এই সময়ে ওই ছেনালের নাম না আনলেই পারতে। তুমি যা মিষ্টি, তোমাকে দেখে যে কোন কারুর মন গলে যাবে।"
মহুয়া ওর ঠোঁটের ওপরে আলতো ফু দিয়ে বলে, "আমার মিষ্টি শুধু তোমার কাছে। এবারে একটু ছাড়ো, মেয়ে দেখে ফেললে লজ্জায় পড়ে যাবো।"
দানা ওর চোখের ভেতরে গভীর ভাবে তাকিয়ে বলে, "বাবা মা একটু প্রেম করতে পারে না নাকি?"
দানা ওর ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট নিয়ে যায়। মহুয়া নিজের রসালো নরম ঠোঁট মেলে দানার পুরু ঠোঁটকে আহবান জানায়। আলতো করে মহুয়ার নরম ঠোঁটের ওপরে পুরু কালো ঠোঁট ছুঁয়ে যায়। মহুয়া ওর কাঁধ ছেড়ে, মাথার পেছন আঁকড়ে ধরে, প্রেমঘন চুম্বনকে আরো গভীর করে তোলে। দানা, ওর কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে প্রেমিকার কমনীয় দেহপল্লব মিলিয়ে নেয়। মহুয়ার চোখের পাতা প্রগাঢ় প্রেমের আবেগে ভারী হয়ে আসে। মহুয়ার কুসুম কোমল অধর নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে চুষতে শুরু করে দেয়। ডান হাত নেমে যায় কোমরের নিচে, শাড়ির ওপর দিয়েই মহুয়ার কোমল নিটোল পাছা নিজের কঠিন থাবার মধ্যে পিষে ধরে নিজের ঊরুসন্ধির ওপরে মহুয়ার ঊরুসন্ধি চেপে ধরে। কঠিন উদ্ধত লিঙ্গের পরশে মহুয়ার কমনীয় দেহ পল্লবে প্রেমের শিহরণ বয়ে যায়। গোলাপি শিক্ত জিব দানার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে, ওর জিব নিয়ে কামঘন খেলায় মেতে ওঠে। দুই বিরহ কাতর, তৃষ্ণার্ত কপোত কপোতী প্রেমের খেলায় মজে যায়। সময় ওদের চারপাশে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে।
ঠিক এমন সময়ে, ছোট্ট রুহি কোথা থেকে দৌড়ে এসে ওদের মাঝে ঢুকে পড়ে। লজ্জায় মহুয়া লাল হয়ে যায়, সেই সাথে দানাও লজ্জায় লাল হয়ে যায়। রুহিকে কোলে নিতেই, দানার গালে ছোট্ট চুমু খেয়ে আদো আদো কণ্ঠে বলে, "ডাডা, মাই কিসি?" "ড্যাড" এর পরিবর্তে দানাকে "ডাডা" বলতে শিখিয়েছে মহুয়া।
মহুয়া ওর আলিঙ্গন পাশ ছাড়িয়ে দানার কান আলতো টেনে বলে, "বলেছিলাম রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। কিছুতেই শুনবে না। এবারে মেও সামলাও।" বলেই কমনীয় দেহ পল্লবে এক মাদকতা ময় হিল্লোল তুলে দানাকে আর রুহিকে ছেড়ে কাজে লেগে পড়ে।
অগত্যা দানা, কচি রুহিকে নিয়ে বাড়ি সামনের পার্কে খেলতে বেড়িয়ে যায়। এখন থেকে এই ওর সর্বস্ব।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment