আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram
Written By pinuram
তেরো
চৌষট্টি ছক (#০৯)
বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়, প্রায় একটা। ততক্ষণে রুহি ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু মহুয়ার চোখে কি আর ঘুম আসে? যতক্ষণ না দানা বাড়ি পৌঁছায় ততক্ষণ চোখের পাতা এক করতে পারে না কিছুতেই। বারেবারে বারান্দায় ঘর বাহির করে, কোথায় গেল এতরাতে? নয়নার বাড়ি থেকে এইখানে আসতে কি এত সময় লাগে নাকি? কলিং বেলের আওয়াজ শুনেই দৌড়ে যায়। হাসি হাসি মুখ করে দানা ঘরের মধ্যে ঢোকে। ঢুকেই মহুয়াকে আস্টেপিস্টে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে, মনে হয় যেন এক পক্ষ কাল পরে দুইজনে পরস্পরের সাথে দেখা করছে।
মহুয়া অভিমানী কণ্ঠে বলে, "এত রাত হল কেন তোমার?"
দানা কালিঝুলি মাখা হাত দেখিয়ে বলে, "আর বলো না, শালা এই একটু আগে গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেল সেই ঠিক করতে শালা আরও আধা ঘন্টা বেড়িয়ে গেল।"
উৎকণ্ঠায় মহুয়ার বুক তখন কাঁপছিল, "কি হল তোমাদের আলোচনা? সিমোনে তোমাকে দেখে কি প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করল?" চোখ টিপে স্মিত হেসে বলে, "বাপরে নিশ্চয় চাঁদের হাট বসেছিল ওইখানে, হ্যাঁ? একপাশে নয়না অন্যপাশে সিমোন। কার সাথে কি কি করলে?"
দানা ওকে জড়িয়ে ধরে প্রবোধ দেয়, "আরে সিমোন আমাকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে উঠেছে। ভাবেনি আমি বেঁচে আছি।" তারপরে এক এক করে সবকিছু বলে মহুয়াকে।
শুনতে শুনতে চাপা উত্তেজনায় মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, "আচ্ছা ওরা কিছু টের পেয়ে যায়নি ত?"
দানা হেসে বলে, "কি যে বলো না তুমি? নয়নাকে একটু তুলে দিলাম ব্যাস। বিমান ওর গুদের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। নয়নার কথা কি আর ফেলতে পারে বিমান। ঠিক সব কিছু হাতিয়ে নিল খানকী আর সোজা আমার পাতে দিয়ে দিল।"
মহুয়াকে কোলে তুলে দানা সোজা ওদের মিলনের ঘরে ঢুকে পড়ে। শরীর পরিচর্যা করে যেন শতগুন সুন্দরী হয়ে উঠেছে প্রেয়সী। টানা টানা ভুরু, রেশমি কালো ঘন চুল, শরীর থেকে মাদকতাময় আঘ্রান, দানা মাতাল। ঠিক ভাবে হাত মুখ ধোয়ার আগেই মহুয়াকে বিছানায় ফেলে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। প্রেমিকের অধর সুধা আর হাতের পেষণে মহুয়া কামার্ত হয়ে ওঠে। পোশাক পরিত্যাগ করে ভালোবাসার খেলা শুরু করতে বেশি সময় লাগে না ওদের। বারেবারে দানা মহুয়াকে চরম সুখের শৃঙ্গে তুলে নিয়ে যায় আর এক আছাড় মারে। প্রেমে কাতর মহুয়া নিজেকে দানার দেহের সাথে বিলীন করে দেয়। একবার নিজে ওর ওপরে উঠে যায়, কখন ওর কোলে বসে ঊরুসন্ধির সাথে ঊরুসন্ধি ঘষে দামাল কাম রতিতে মগ্ন হয়। দুই কাম ক্ষুধার্ত কপোত কপোতী চরমে উঠে একে ওপরকে পিষে ধরে সুখের সাগরে ডুব দেয়।
পরের দিন থেকে আবার কাজ শুরু, অধীর প্রতীক্ষা, কবে মোহনের উকিল আর সি.এ. কাগজ নিয়ে আসবে। বাপ্পা নস্করের কাছে সব কিছু খুলে বলার পরে বাপ্পা আরো বেশি খুশি। এইবারে ওর বিরোধী পক্ষ একেবারে জালে ফেঁসে গেছে। দানা বাপ্পা নস্করের বিশ্বাসভাজন মানুষ হয়ে ওঠে। আজকাল কিছু হলেই দানার ডাক পড়ে। ইন্দ্রনীল অথবা নিতাইকে ঠিক খেপাতে চায় না দানা, ওদের হাতে রাখলে আগামী দিনে অনেক কাজ হাসিল করতে পারবে। প্রকল্পের কাজে ইন্দ্রনীল আর নিতাই লোকবল দিয়ে অনেক সাহায্য করেছে, যদিও তার জন্য দানা টাকা খরচ করেছে। ইতিমধ্যে কোন প্রকল্প সমাপ্ত হয়নি তাই বাপ্পা নস্কর ওর কাছ থেকে টাকা চাইতে দ্বিধা বোধ করে, কিন্তু নির্বাচনী প্রস্তুতি অতি শীঘ্র নিতে হবে।
পাঁচ দিনের মাথায়, মোহন নিজেই সি.এ. আর উকিলকে সঙ্গে করে দানার সাথে দেখা করে। মোহনের তুলনায় ওদের অফিস অনেক অনেক ছোট। মহেশ বাবুকে ডেকে নেয় দানা, উকিল সি.এ. সাথে করে আগে তাদের দিয়ে ওই প্রকল্পের কাগজ পত্র ঠিক আছে কি না দেখিয়ে নেয়। মাঝে মাঝে দানার উকিল আর মহেশ বাবু প্রশ্ন করে মোহন আর তার উকিলকে। এই সব আইনের মারপ্যাঁচ বিশেষ কিছুই দানার মাথায় ঢোকে না, তাই মহেশ বাবুর ওপরে সব ছেড়ে দেয়। মহেশ বাবু প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সব কাগজ পত্র দেখে দানাকে বলে, "হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। তুই সাক্ষর করে দে।"
মহেশ বাবু পড়ে জানিয়ে দেন যে দুশো কোটি টাকার বিনিময়ে মোহন খৈতান নিজের তিন খানা ছোট আবাসন প্রকল্প, দুই খানা বড় মাপের আবাসন প্রকল্প আর একটা পাঁচ তারা হোটেলের নির্মাণের প্রকল্প দানার কাছে বিক্রি করছে। মোহনের সাথে সাথে দানা মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ।"
সম্পূর্ণ লেনদেন আলোচনা সাক্ষর সব কিছু ক্যামেরা বদ্ধ করে দানা, ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগবে এই ভিডিও। মোহনের সাথে হাত মিলিয়ে সাক্ষর করে দেয় দানা। মোহন ওকে বারেবারে মনে করিয়ে দেয় ওর প্রতিশ্রুতি। দানা মিচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, শুধু মাত্র নয়না এর পরিচালিকা। নয়না ঠিক থাকলে দানাও ঠিক। সেই কথা শুনে মোহন বাঁকা হাসি দেয়। মোহন বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই দানা চুপচাপ অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে থাকে। বিশ্বাস করতে পারে না কিছুতেই যে সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকা শুধু মাত্র এক ছলনাময়ীর মুখের কথায় ওর নামে করে দিয়েছে মোহন। এইবারে নিশ্চয় মোহন আর বিমান ওর পেছনে লেগে থাকবে। কতক্ষণে দানা নিজের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাপ্পা নস্কর নামক কাঁটাকে ওদের পথ থেকে চিরতরে সরিয়ে দেবে আর বিমান আর মোহন মিলে এই এলাকা শাসন করবে।
সেদিন বিকেলে বাড়িতে বসে রুহিকে নিয়ে ইংরেজি পড়াচ্ছিল দানা, "মা, বল এ ফর এপেল....."
রুহি মাথা নাড়ায়, "নান্না নান্না..... কারতুন দেখব।"
দানা শত চেষ্টা করে, সামনে একটা নার্সারি স্কুলে এইবারে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে, "বল সোনা, এ ফর এপেল।"
রুহি নাছোড়বান্দা, "আগে কারতুন তা-পয়ে।"
দানা রুহির সামনে হাতজোড় করে, "প্লিস মা শুধু এইটুকু পড়ে নে তারপরে কার্টুন দেখতে দেবো।"
রুহি ওর "ডাডা"র গালে চুমু খেয়ে আদর করে বলে, "প্লিস ডাডা, ইত্তু কারতুন তা-পয়ে।"
রুহিকে বকাঝকা করা দুরের কথা ওর সাথে এমন কি উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলে না দানা, পাছে যদি কোনোদিন মহুয়া এটা ভেবে বসে যে হেতু রুহি দানার সন্তান নয় তাই ওর ওপরে স্নেহ কম। তবে মহুয়া মনে প্রাণে জানে, দানার রুহি অন্ত প্রান, বাবারা একটু মেয়েদের প্রতি বেশি সদয় হয়ে থাকে।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে পড়াশুনা শিকেয় ওঠে রুহির। এইবারে "ডাডা" ওকে ছেড়ে দেবে আর রুহি মজাসে "কারতুন" দেখতে পারবে। স্টাডি থেকে মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে দেখে ফারহান। অনেকদিন পরে দেখা, ইদানিং বাপ্পা নস্করের কাছে আসা যাওয়া কমে গেছে তাই দেখা সাক্ষাৎ কমে গেছে। মদনার দোকানে আর সেই আড্ডা আলোচনা সভা আর বসে না, শক্তি বলাই নিজের কাজে ফিরে গেছে, তবে নাসির আকরাম এখন নয়নার ওপরে নজর রেখে চলেছে। কখন কি ঘটে প্রত্যকে মিনিটের খবর দানার কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছে যায়।
ফারহান ওকে দেখে হেসে বলে, "কি রে শালা" বলেই রুহিকে দেখে থেমে যায়।
এতদিনে "ডাডা"র বন্ধুরা ওর বন্ধু হয়ে গেছে। রুহি দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে নালিশ করে, "ডাডা কারতুন দেত্তে দিত্তে না।"
ফারহান ওকে কোলে নিয়ে বলে, "আচ্ছা ডাডাকে বকে দেব।" তারপরে হেসে দানাকে বলে, "বেশ মেয়ে নিয়ে পড়াশুনা করছিস। ম্যাডাম কোথায় রে?"
মহুয়া ওর গলা শুনে বসার ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করে, "কি ব্যাপার বিয়ে শাদি কবে তোমার?"
ফারহান হেসে উত্তর দেয়, "এই দুই সপ্তাহ পরে। আপনার কাছে একটা অনুরোধ আছে।"
মহুয়া আর দানা মুখ চাওয়াচায়ি করে, ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে?"
ফারহান মহুয়াকে বলে, "এই একটু কেনাকাটা করতে সাহায্য করতে হবে আপনাকে। মানে আম্মি আর ভাবীজান ঠিক পেরে উঠবে না।"
মহুয়া হেসে বলে, "সে আর বলতে। আচ্ছা এখন বসো। কাল থেকে জারিনাকে নিয়ে তোমার বিয়ের বাজারে বেড়িয়ে পড়বো।"
মহুয়া কাজের মেয়েটাকে পানীয় আর খাদ্য নিয়ে আসতে বলে। ওরা বিয়ের গল্পে, জারিনার গল্পে মেতে ওঠে। বেশ কিছু পরে ফারহান দানাকে একপাশে ডেকে বলে, "এই একটু কথা ছিল রে তোর সাথে।"
দানা প্রশ্ন করে, "বল না কি হয়েছে?"
ফারহান এদিক ওদিক তাকায়, মনের মধ্যে বিশাল দ্বিধা বোধ। দানা ওর কাঁধ চাপড়ে অভয় দিয়ে মনের দ্বিধা কাটাতে অনুরোধ করে। ফারহান গলা নামিয়ে বলে, "কিছু টাকা ধার দিতে পারবি, মানে এই এক লাখের মতন। টাকা একটু কম পড়ছে রে।"
দানা হেসে ফেলে। ঠিক পেছনে মহুয়া দাঁড়িয়ে ছিল আর ওদের কথা শুনে ফেলে। মহুয়া হেসে ওকে বলে, "না গো ফারহান আমরা বড় গরীব মানুষ। আমাদের কাছে তোমাকে ধার দেওয়ার মতন টাকা সত্যি নেই।"
ফারহান কাঁচুমাচু মুখ করে একবার দানার দিকে তাকায় একবার মহুয়ার দিকে তাকায়। মহুয়া হেসে উত্তর দেয়, "তোমার বিয়ের খরচ পাতি আন্দাজ কত লাগবে?"
ফারহান নির্বাক হয়ে যায়, কি বলবে ভেবে পায় না। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি হটাত ঝাপসা হয়ে আসে। আমতা আমতা করে মহুয়াকে বলে, "না ম্যাডাম, এ কথা নয়, মানে।"
দানা ওর পিঠে কষে এক চাঁটি কষিয়ে বলে, "বোকাচোদ এই কথা বলতে তোর এত দেরি লাগে। শালা বের হ বাড়ি থেকে, কুত্তা এমন ঝ্যাঁটা পেটা করব বাল জারিনার....."
বাক্য শেষ করলো না, কারন পেছনে মহুয়া দাঁড়িয়ে। না হলে বলে দিত জারিনার যোনির মধ্যে ঢুকে পড়তে।
মহুয়া ওকে বলে, "আমি আরো একটা কথা ভেবেছিলাম।"
দানা আর ফারহান দুইজনেই ওর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এই বিষয়ে দানার সাথে এতদিন কোন আলোচনা করেনি মহুয়া। মহুয়া হেসে বলে, "হানিমুনে মরিশাস যাবে না ব্যাঙ্কক যাবে?"
ফারহানের চোখ জোড়া উপচে আসে, "না না ম্যাডাম এটা আমি নিতে পারব না।"
মহুয়া হেসে বলে, "তুমি নাকি এক কালে জিতকে দুই হাজার টাকা ধার দিয়েছিলে? ভেবে নাও এই টাকা সেই ধারের সুদ।"
দানা স্মিত হেসে বলে, "ভাই তুই আমাকে যদি ধরে না আনতিস তাহলে এতদিনে আমি হারিয়ে যেতাম রে।"
মহুয়া সমস্বরে বলে, "স্টেসান থেকে ধরে নিয়ে এসেছিলে বলে আমি ওকে খুঁজে পেয়েছি ফারহান। প্লিস না করো না।"
ফারহান না করতে পারে না। মহুয়া একটা দুই লাখ টাকার চেক কেটে ফারহানের হাতে ধরিয়ে দেয়, ফারহান কি করবে বুঝতে পারে না, শেষ পর্যন্ত ওদের জোরাজুরিতে চেক পকেটে নিয়ে নেয়।
পরেরদিন সকালেই গাড়ি নিয়ে রুহিকে সঙ্গে নিয়ে মহুয়া বিয়ের কেনাকাটা করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। ফারহান আগে থেকেই জারিনাকে বলে দিয়েছিল মহুয়ার সম্বন্ধে তাই মুখ ফসকে কিছু বলে না, যদিও মহুয়া সব বিষয়ে জানে। দানা নিজের কাজে খুব ব্যাস্ত, কুড়ি খানা ছোট আবাসন প্রকল্পের কাজ একসাথে চলছে, সেই সাথে দুটো বড় আবাসনের কাজ আর একটা বড় পাঁচ তারা হোটেলের নির্মাণ। নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই ওর কাছে। মাঝে মাঝে মহেশ বাবুর কাছে যায়। মোহনের সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হয়। তবে সেদিনের পরে সিমোনের সাথে দেখা হয় না আর। সিমোনের কাছে দানার পুরানো ফোন নাম্বার ছিল, তাই আর ফোন করতে পারে না। আর দানাও আগ বাড়িয়ে সিমোনেকে ফোন করেনি। পাছে ওদের মেলামেশা কারুর চোখে পড়ে যায়। তবে এখন বুক ঠুকে চলতে দ্বিধা বোধ নেই, যদি সিমোনের সাথে দেখা করার থাকে তাহলে ফোন করে নেবে। একে বারে মোহনের সামনেই দেখা করার সুযোগ শুধু মাত্র একটু গা বাঁচিয়ে চলা এই আর কি।
হোটেলের কাজের সাইটে দানা গিয়ে দেখে যে সিমোন উপস্থিত। কি ব্যাপার এইখানে কি করছে সিমোন? দানাকে দেখে অমায়িক হেসে এগিয়ে আসে। পাশেই স্বামী মোহন তাই দানা সংযত হয়ে যায়।
মোহনের সাথে হাত মিলিয়ে হেসে বলে, "কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট, না আরো কিছু করব?"
মোহন হেসে উত্তর দেয়, "না না এই দুই সপ্তাহে অনেকখানি হয়ে গেছে দেখছি।"
দানা চারদিক দেখে মাথা নাড়ায়, ভিত আগে থেকেই তৈরি ছিল, পিলার তোলা শুরু হয়ে গেছে। মোহন গলা নামিয়ে বলে, "একবার আপনার সাথে একটু অন্য বিষয়ে আলচনা করার ছিল। কাল বিকেলে একটু সময় করে একবার আমাদের বাগান বাড়িতে আসবেন। শুধু আমি আপনি আর বিমান।"
দানা বুঝে যায় কোন দুরাভিসন্ধির বিষয়ে আলোচনা করবে মোহন। কাজ কর্ম সেরে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। বাড়ি ঢুকে দেখে এক মেলা বসেছে। ফারহান, নাফিসা, নাফিসার স্বামী তাবিশ, সবাই বাড়িতে উপস্থিত। বসার ঘরে মনা পিন্টু সেই সাথে শক্তি বলাই। ঘরের মাঝে টাল করে জামা কাপড়, নাফিসার জন্য তুঁতে রঙের দামী একটা শাড়ি, ফারহানের জন্য দামী সাদা রঙের শেরওয়ানি। দেখে মনে হল মহানগরের দোকান খালি করে দানার বসার ঘরে উপস্থিত। বিয়ের আনন্দে সবাই মেতে। পিন্টু আবার কাজের মেয়ে মণির সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। মনা অনেকগুলো বেলুন ফুলিয়ে ঘর ভর্তি করে দিয়েছে আর রুহি সেকি খেলা সেই বেলুন নিয়ে। এই ভিড়ে দানার চোখ খুঁজে বেড়ায়, কোথায় মহুয়া।
তৃষ্ণার্ত চাতকের মতন মুখ খানি করে ফারহানকে জিজ্ঞেস করে, "তোরা কখন এলি রে?"
হেহে করে হেসে ফেলে ফারহান, "অনেক ক্ষণ এসেছি রে। তোকে দেখে না ঝড়োকাকের মতন মনে হচ্ছে।"
রুহিকে জিজ্ঞেস করে দানা, "মাম্মা কোথায়?"
রুহির কানে কি আর সেই কথা যায়? বেলুন নিয়ে খেলতে ব্যাস্ত, ডাডা তখন কে চেনে। শুধু মাত্র রাতে ডাডাকে আর মাম্মাকে পাশে না পেলে মনে পরে তা ছাড়া সারাদিন মনা আর পিন্টু।
রুহির হয়ে নাফিস উত্তর দেয়, "জারিনার লেহেঙ্গা পছন্দ হচ্ছে না তাই এখন ঘুরছে। একটু আগে ফোন করেছিলাম, হয়তো এখুনি চলে আসবে।"
ফারহান ওকে টেনে একপাশে নিয়ে গিয়ে দুই হাত ধরে বলে, "বাড়া তোকে কি বলে ধন্যবাদ জানবো ভেবে পাচ্ছি না রে। ম্যাডাম পারলে সারা বাজার কিনে আনে।"
দানা বসার ঘর দেখে সেটা বুঝে গেছিল। মন ছটফট করছে মহুয়াকে দেখার জন্য। বিকেলে মোহন আর সিমোনের সাথে দেখা হয়েছে, একটা ভুয়ো চক্রান্ত ভাবতে হবে, না হলে কাল কি বলবে ওদের সামনে। মহুয়া না আসা পর্যন্ত বুকের মাঝে চাপা উত্তেজনা বজায় থাকে। এক ঘন্টা পরে, বাজার মাথায় করে জারিনা আর মহুয়া ঘরে ফেরে। ওদের হাতেও কাপড় জামার ব্যাগ। জারিনা নিজের পছন্দ মতন লাল রঙের লেহেঙ্গা কিনে বেশ খুশি।
ঘরে ঢুকেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, "আপনি সত্যি পারেন বটে।"
দানা অদুরে দাঁড়িয়ে মহুয়াকে দেখে যায়। নিয়মিত শরীর পরিচর্যা করার ফলে দিনে দিনে ওর যৌবনের ডালি ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। শাড়ির পরতে পরতে ঢাকা নধর দেহ পল্লব ওকে কাছে ডাকে। দুই চোখের ভাষা, "কি হলো তোমার?" দানা মাথা দোলায়, "কিছু না। পরে বলবো।"
কেনা কাটা বাজার বিয়ের মাতামাতি অনেকক্ষণ চলে। এতজন লোকের খাওয়া দাওয়া, নাফিসা আর জারিনা রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। জানে মহুয়া নিরামিষাশী তাই রান্না নিরামিষ হয়।
রাতের খাওয়া পরে সবাই চলে যাওয়ার পরে দানা আর মহুয়া বসার ঘরে বসে। দানা জানায় বিকেলে মোহন আর সিমোনের সাথে দেখা হয়েছিল। আগামী কাল মোহনের বাগান বাড়িতে যেতে হবে। দানার বিশ্বাস মোহন আর বিমানের সাথে বাপ্পা নস্করকে খুনের চক্রান্ত করা হবে। দানার ভুমিকা এইখানে অনেক বড়, নয়নার বিশ্বাসভাজন ব্যাক্তি দানা। ওকে একটা ভুয়ো নিখুঁত চক্রান্ত তৈরি করতে হবে যাতে ওদের সন্দেহ না হয়। তবে আসল দিনের আগেই বাপ্পা নস্করকে সাবধান করে দেবে যাতে বাপ্পা নস্কর সেই জায়গা থেকে সরে যায়। তারপরে এই চক্রান্তের খবর বাপ্পা নস্করের কানে দিয়ে দেবে। ব্যাস, খেলা শুরু। বিমান, মোহন, সিমোন, নয়না একে একে সবাই ফাঁদে পড়ে যাবে। পারলে রমলার সাহায্যে এই চক্রান্তের খবর টিভিতে, খবরের কাগজের শিরোনাম করে দেবে।
মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "এই গেল পরের কথা, কিন্তু কাল কি বলবে ওদের সামনে?"
দানা জানে না কি করবে তাই উত্তর দেয়, "কাল বিকেলে যেতে যেতে ভাবা যাবে।"
চৌষট্টি ছক (#১০)
পরের দিন বিকেলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে দানা। এখন পর্যন্ত কারুর সন্দেহের ঘেরে আসেনি দানা, তাই মহুয়া একটু নিশ্চিন্ত, তবুও ভয় লাগে ওর। রুহিকে রীতিমত কোলের মধ্যে আঁকড়ে রুদ্ধশ্বাসে ওকে বিদায় জানায়। মনা আর পিন্টু ওর সঙ্গ নিতে চায় কিন্তু দানা বারন করে দেয়। কারন এই চক্রান্ত শুধু মাত্র ওর একার, অন্য কাউকে নিয়ে গেলে ওদের সন্দেহ হয়ে যাবে।
চুপচাপ একা একা গাড়ি চালাতে চালাতে দানা নিজের ভুয়ো চক্রান্তের অঙ্ক কষে। ওদের এমন কিছু বলতে হবে যাতে ওরা সবাই দানার কথা বিশ্বাস করে নেয় আর নয়নাকে একটু মাথায় করে রাখতে হবে তাহলে ভবিষ্যতে অনেক কাজ হাসিল করতে পারবে। নয়নাকে জালে একদম শেষে জড়াতে চায় দানা। নারী মাংসের লোভে অনেক কাজ হাসিল হয় পৃথিবীতে আর সেটাই দানা ওকে দিয়ে করাতে চায়।
বাগান বাড়িতে ঢুকতেই বাগানে বিমান চন্দ আর মোহন খৈতান কে দেখতে পায়। ওকে দেখেই দৌড়ে একটা দারোয়ান ওর গাড়ির দরজা খুলে দেয়। দানা দারোয়ানের হাতে গাড়ির চাবি দিয়ে বাগানের মধ্যে হেঁটে এগিয়ে যায়। মোহন আর বিমানের সাথে হাত মেলায়। স্মিত হেসে কুশল আদান প্রদান, কাজের কথা ইত্যাদি চলে কিছুক্ষণ। দানার কাজে মোহন বেশ খুশি, এই কয়দিনে সুনিপুণ হস্তে কাজ এগিয়ে চলেছে। যদিও এর কৃতিত্ব, মহুয়া আর মহেশ বাবুর। ওরা পেছনে না থাকলে দানা কিছুই করতে পারত না। মহেশ বাবুর ব্যাবসায়িক বুদ্ধি আর মহুয়ার পরিচালনা। মেয়েরা একটা বাড়ি যেমন নষ্ট করতে পারে তেমনি এক পুরুষের জীবন তৈরি করতে পারে আর সেই মহামায়া রূপী নারী, মহুয়া।
মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে বিমান ওকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা কি ভাবলে ওই ব্যাপারে?"
দানা খানিক চিন্তা করে উত্তর দেয়, "নয়না থাকলে একটু ভালো হত।"
বিমান আর মোহন হেসে ফেলে, "তুমি যে নয়না ছাড়া এক পা চল না দেখছি।"
দানা মুচকি হেসে বলে, "না না, সেটা নয় মানে ওর সাথে অনেকদিন আগে আলোচনা হয়েছিল তাই ও থাকলে একটু ভালো হত। যাই হোক নয়না যখন নেই তাহলে আর কি করা যাবে। আমার কাছে একটা পরিকল্পনা আছে একদম নিখুঁত। চারদিন পরে জঙ্গিঘাটে বাপ্পা নস্করের একটা পথ সভা আছে, আর তার তিনদিন পরে মনোহরপুরে একটা মিটিং মিছিল আছে। বাপ্পা নস্করকে মারতে হলে আড়ালে আবডালে মারলে হবে না। আজকাল পুলিসের তদন্ত অনেক আধুনিক হয়ে গেছে, ঠিক শুঁকে শুঁকে খুঁজে বের করবে। তাই খুন একদম সামনা সামনি ভিড়ের সাহায্যে করতে হবে। ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেলে ধরা অসম্ভব, কিন্তু একা একা কাউকে খুন করলে অনেক ছোট ছোট সুত্র অজান্তেই থেকে যায়। ভিড়ের আড়ালে সেই সুত্র হারিয়ে যাবে। ভিড়ের মধ্যে আমার লোক লুকিয়ে থাকবে। বাপ্পা নস্করের দলের পতাকা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ওর দিকে এগিয়ে যাবে। যেই বাপ্পা নস্কর গাড়ি থেকে নামবে ঠিক তখনি ওকে ঘিরে অনেক লোক দাঁড়িয়ে যায়। সেই ভিড়ের মধ্যে আমার লোক লুকিয়ে ওর বুক লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে ওইখান থেকে কেটে পরবে। চিন্তা নেই আওয়াজ হবে না, পিস্তলে সাইলেন্সার লাগানো থাকবে। যতক্ষণে বাপ্পা নস্করের জামা লাল হবে ততক্ষণে আমার ছেলে ওইখান থেকে পালিয়ে যাবে।"
বিমান আর মোহন মুখ চাওয়াচায়ি করে, "হুম খুব ভালো ষড়যন্ত্র ফেঁদেছে। তবে তোমার লোক তোমার বিশ্বাসী নাকি শেষ মুহূর্তে পালিয়ে যাবে?"
দানা হেসে বলে, "না না, খুব বিশ্বাসী ছেলেকে দিয়ে আমি কাজ করাবো। কাজ শেষ হওয়ার পর মুহূর্তে ওই ছেলে শহর ছেড়ে চলে যাবে। তবে প্রথম মিছিলে এই কাজ করব না, ওই দিন সবকিছু জরিপ করব। দ্বিতীয় মিছিলে ওর ওপরে হামলা করা হবে।"
বিমান মাথা দোলায়, "হ্যাঁ হ্যাঁ একদম ঠিক কথা। আগে থেকে ওর চাল চলন ভালো ভাবে জরিপ করে নিতে হবে।"
মোহন হেসে বলে, "তাহলে পরের সপ্তাহে একসাথে কাজ করা যাবে?"
দানা হেসে মাথা দোলায়, "সব ঠিক ঠাক থাকলে পরের সপ্তাহ কেন, যেদিন ওর চিতা জ্বলবে সেদিন আমরা এইখানে আগুন জ্বালিয়ে আয়েশ করে মেয়েদের নাচ দেখতে দেখতে কাজের কথা সারবো।"
মোহন আর বিমান একসাথে হেসে ফেলে দানার কথা শুনে। মোহন চোখ টিপে মিচকি হেসে দানাকে প্রশ্ন করে, "আপনি মিস্টার মন্ডল বড় রসিক মানুষ।"
দানা বাঁকা হাসে, হ্যাঁ অনেক রসিক, একসময়ে ওর বৌকে এই বাড়ির শোয়ার ঘরে অনেকবার সঙ্গম সম্ভোগ সুখ প্রদান করেছে আর সেই সাথে নয়নার সাথে কম বার সঙ্গম করেনি।
বিমানের কান একটু লাল হয়ে যায়, মোহনের কাঁধ চাপড়ে হেসে বলে, "তুই শালা হারামি। কাকে আনা যায় বলতো সেইদিন?"
দানা বলতে যাচ্ছিল নয়নাকে আনলে কেমন হয়? কিন্তু থেমে যায়। মোহন বলে, "দেখি একটা সুন্দরী মডেল আছে, বেশ ভালো নাচে মাইরি। বিশেষ করে ন্যাংটো নাচ বেশ ভালো ভাবেই করে।"
কাজ অনেকটাই হাসিল হয়ে গেছে, এইবারে আসল তথ্য জানতে হবে। কে আদেশ দিয়েছিল মৈনাককে খুন করতে, বিমান না সিমোন, আসল চক্রান্তকারী কে? দানা একটু চিন্তিত ভাব দেখায়। ওর চিন্তিত চেহারা দেখে বিমান জিজ্ঞেস করে, "কি হলো, কি এত ভাবছো?"
দানা মিচকি হেসে বলে, "না মানে, একদিন রাতে নয়নার বাড়িতে একটা চম্পাকলি মালকে খুব লাগিয়ে ছিলাম।"
বিমান কিছুক্ষণ চিন্তা করে হেসে বলে, "আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি। ওই সাংবাদিক মেয়েটার কথা বলছ তাই তো।"
বিমান তাহলে সঙ্গীতাকে চেনে, সঙ্গে সঙ্গে দানার মাথা গরম হয়ে যায়। চোখের সামনে সঙ্গীতার জল ভরা চোখ ভেসে ওঠে। বিমান হাসতে হাসতে মোহনকে বলে, "তোর মনে আছে মনু, ঐ যে কি নাম বেশ। শালীকে মারতে গেলাম, কিন্তু ওর পেছনে বসা ছেলেটা শেষ পর্যন্ত মরে গেল।"
মোহন একটু ভেবে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, সঙ্গীতার কথা বলছিস তাই তো?"
দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, কোমরের পেছনে হাত দিয়ে পিস্তল চেপে ধরে। সারা শরীর দাউদাউ করে বিতৃষ্ণা আর ক্রোধে জ্বলে ওঠে, পারলে এইখানে ওদের খুন করে ফেলে। কোন রকমে মাথা ঠাণ্ডা করে জিজ্ঞেস করে, "কি রকম পরিকল্পনা করেছিলেন বিমান বাবু? আসল মানুষকেই মারতে পারলেন না।"
বিমান ওর দিকে তাকিয়ে বলে, "সত্যি বলতে কি জানো, সিমোনের পরিকল্পনায় খুঁত ছিল না। শালা ওই লরির ড্রাইভার সব কেচিয়ে দিল। আমরা ভেবেছিলাম যে ওরা বাইকে থাকবে আর পেছনে সঙ্গীতা বসে থাকবে। কিন্তু সেদিন বাইকে নয় সঙ্গীতার স্কুটিতে ওরা বেরিয়েছিল। ধাক্কা ঠিক জায়গায় মারা হয়েছিল, কিন্তু ফলাফল উল্টে গেল।"
দানার মাথার শিরা ফেটে পড়ার যোগাড়, মাথায় রক্ত উঠে যায়। আরো এক গেলাস মদ আনিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেলে। এই রক্ত চক্ষু যে ক্রোধের নয়, সুরার সেটা ওদের বুঝাতে হবে না হলে মুশকিল। চেহারায় মেকি হাসি ফুটিয়ে বলে, "মাল টা কিন্তু জম্পেশ ছিল আর যাই বলেন। সেদিন সারা রাত ধরে চুদেছিলাম জানেন।"
বিমান আর মোহন একসাথে অবাক হয়ে ওকে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি? কোথায়?"
দানা হেসে বলে, "নয়নার বাড়িতে আবার কোথায়।"
মোহন ওর কাঁধ চাপড়ে চোরা হাসি দিয়ে বলে, "তাহলে সেই রাতে নয়নাকেও ডেকে নেওয়া যাবে কি বলেন মিস্টার মন্ডল। না না, অন্য কাউকে চাইলে বলে দেন, যোগাড় করে দেব।"
মদ খেয়ে আরো কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে বাড়ি ফিরে আসে দানা। বাড়িতে মহুয়া রুদ্ধশ্বাসে দানার অপেক্ষায়। মোহনের বাগান বাড়ি থেকে বেড়িয়েই দানা ফোন করে মহুয়াকে জানিয়ে দেয় সব ঠিক আছে। সেই শুনে মহুয়া স্বস্তির শ্বাস নেয়। বারেবারে এই রকম জালে পা দেয়, যদি কোনোদিন কোনোভাবে কারুর সন্দেহ হয়ে যায় তাহলে ওর রক্ষে নেই। ফিরে এসে রাতের খাওয়ার সময়ে মাহুয়াকে সব খুলে বলে। মহুয়া জিজ্ঞেস করে আসলে দানা কি করতে চায় সত্যি কি বাপ্পা নস্করের ওপরে হামলা করবে না শুধু মাত্র একটা নাটক রচনা করবে? দানা জানায়, বাপ্পা নস্করের ওপরে একটা নাটকীয় ভুয়ো হামলা করবে যাতে বিমানের সন্দেহের বাইরে থাকে। তবে আগে থেকে ফারহানের মাধ্যমে বাপ্পা নস্করকে সাবধান করে দেবে। সত্যি কারের নয় মিথ্যে গুলি চলবে আর সেটা অন্য কাউকে লাগবে। আর একবার এই হইচই শুরু হয়ে গেলে, বাপ্পা নস্করের কাছে চলে যাবে দানা, নয়নার আর বিমানের ছবি নিয়ে। খেপা বাপ্পা নিশ্চয় বিমান আর নয়নাকে শেষ করে দিতে উদ্যত হবে। তবে শুধু মাত্র বিমানের মৃত্যু হলে ভালো হয়। নয়নাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে ওকে দিয়ে মোহন আর সিমোনকে মারতে পারবে।
সকাল থেকে মেঘলা, বর্ষার ফলে আবাসনের কাজ বেশ ধীরে চলছে। ফারহানের বিয়ের প্রস্তুতি জোর কদমে। মহুয়া আজকাল অফিসে কম আর বাজারে বেশি যায়। রুহিকে কোলে নিয়ে জারিনা আর নাফিসাকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে ব্যাস্ত। বিয়ের কয়েকদিন আগে থেকে ফারহান ছুটি নেবে।
সেদিন দানা খুব ব্যাস্ত ছিল একটা আবাসনের কাজে। ওই মেঘলা আকাশ আর মাথায় বৃষ্টি নিয়েই প্রতিদিনের মতন জারিনা আর নাফিসাকে নিয়ে মহুয়া বেড়িয়ে পড়েছে বিয়ের কেনাকাটা সারতে। সেদিন আবার জঙ্গিঘাটে বাপ্পা নস্করের প্রথম নির্বাচনী পথ সভা। বাপ্পা নস্কর অবশ্য আগের দিন দানাকে ফোনে জানিয়েছিল ওর সাথে থাকার জন্য, কিন্তু নিজের নাম কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত করতে চায় না। আসলে বিমানকে এখুনি খেপাতে চায় না দানা তাই কাজের আছিলায় আর যায়নি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, চার ট্রাক ইট আসার কথা ছিল, এখন এলনা। ওইদিকে আগামী কাল শ্রমিকের মাইনের তারিখ, সি.এ. কে মহুয়া কি চেক কেটে দিয়েছে? প্রথমে সি.এ. কে ফোন করে জেনে নেয় দানা, মহুয়া সকালেই কেনাকাটা করতে বের হবার আগে চেক কেটে দিয়ে গেছে। একটু শান্তি পায়, কিন্তু ইটের ট্রাকের কি হল? সুপারভাইজারকে ডেকে একটু ধমক ধামক দিতে হবে না হলে চলছে না। মোহনের কাজ না হয় পরে করা যাবে কিন্তু বাকিদের কাজ গুলো ফেলে রাখলে চলবে কি করে?
ঠিক সেই সময়ে মহুয়ার ফোন। চাপা আতঙ্কে চেঁচিয়ে ওঠে ওইপাশ থেকে, "জিত তুমি কোথায়? এখুনি হস্পিটালে এস।"
দানা ভয় পেয়ে যায়, বুক কেঁপে ওঠে, কার কি হলো? চাপা উৎকণ্ঠায় জিজ্ঞেস করে, "রুহি ঠিক আছে? কার কি হয়েছে?"
মহুয়ার কণ্ঠস্বর থরথর করে কাঁপছে, "ফারহানের গুলি লেগেছে তুমি এখুনি হসপিটালে এসো।"
ওই কথা শুনে দানার গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, কেষ্টর পরে ওর প্রিয় বন্ধু ফারহান। কে গুলি মারল ওকে? আজকে বাপ্পা নস্করের সাথেই ছিল ওই পথ সভায়। গাড়ি তীর বেগে হসপিটালে ছুটিয়ে দেয় দানা।
দৌড়াতে দৌড়াতে ওপরে উঠে সবাইকে খোঁজে। মনা আর পিন্টুকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। ছোট্ট রুহি, মনাকে আঁকড়ে ধরে একরকম বুকের মধ্যে লুকিয়ে। চারপাশে এত লোক দেখে আতঙ্কে জড়সড় হয়ে গেছে রুহি। দানাকে দেখেই "ডাডা ডাডা" বলে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোনোরকমে মেয়েকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে চারপাশ তাকিয়ে দেখে। পুলিস মানুষে লোকে লোকারণ্য। একপাশে ইন্দ্রনীল এবং বাপ্পা নস্করের দলের বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে। জারিনা মহুয়ার কোলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। দানা মহুয়াকে দেখে এগিয়ে আসে। মহুয়ার চেহারা লাল হয়ে গেছে, চোখ জোড়া ছলছল কিন্তু জল ফেলতে পারছে না কেননা কোলে অজ্ঞান জারিনা। বেদনায় নাফিসার চোখের জল উপচে পড়ছে।
মহুয়াকে জিজ্ঞেস করে কি ভাবে ওরা খবর পেল। মহুয়া জানায়, জারিনাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে সকাল থেকেই ব্যাস্ত ছিল। দুপুরের পরে একটা রেস্টুরেন্টে বসে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করার সময়ে জারিনার কাছে ইন্দ্রনীলের ফোন আসে। সেই শুনেই ওরা দৌড়ে আসে হসপিটালে আর তারপরে দানাকে মহুয়া ফোন করে জানায়।
দানা ইন্দ্রনীলের কাছে যায়, "ফারহানের কি করে গুলি লেগেছে?"
ইন্দ্রনীল বলে, "ফারহানের বুকে আর কাঁধে গুলি লেগেছে।"
ইন্দ্রনীল পুরো ঘটনা খুলে বলে দানাকে। জঙ্গিঘাটে পথ সভা ছিল বাপ্পা নস্করের, ফারহান বাপ্পা নস্করের অনেকদিনের ড্রাইভার, বিশ্বাসী লোক। ওর সাথে সাথেই থাকে। অন্যদিন নিতাই সামনে বসে আর বাপ্পা নস্কর ইন্দ্রনীলের সাথে গাড়ির পেছনে বসে। তবে সেদিন পথ সভার জন্য সামনেই বসেছিল বাপ্পা নস্কর। গাড়ি মঞ্চের বেশ কিছুদূরে এসে থামে। গাড়ি থামতেই সামনে থেকে গাড়ির কাঁচ ভেদ করে দুটো গুলি এসে লাগে ফারহানের বুকে আর কাঁধে। ইন্দ্রনীল হলফ করে বলতে পারে ওই গুলি বাপ্পা নস্করকে খুন করার জন্য মারা হয়েছিল কিন্তু ফারহান বসে থাকায় ওই গুলি ফারহানের গায়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে অন্য গাড়ি করে ফারহান কে হসপিটালে নিয়ে আসা হয়।
হাত মুঠি হয়ে যায় দানার। মাথার রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়। প্রচন্ড বেদনায় শরীর কুঁকড়ে যায়, কেউ যেন ওকে একের পর এক চাবুকের আঘাত করে চলেছে। চক্রান্তের দিন আজকে নয় আর সেটা দানা করবে, বিমানের করার কথা ছিল না। বিমান নিজে থেকে চাল চালতে গেল কেন? ওর পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। একবার বিমানকে হাতে পেলে খুন করে ফেলবে। এটা নিশ্চয় নয়নার চাল। দানার পরিকল্পনার সুত্রপাত নয়নার হাত ধরেই। সেদিন রাতে এই রকমের একটা পরিকল্পনা নয়না ওকে জানিয়েছিল।
দানা জিজ্ঞেস করে, "ফারহান এখন কোথায় আছে?"
ইন্দ্রনীল উত্তর দেয়, "অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে গেছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়ে গেছে, জানি না কি হবে।"
চাপা কণ্ঠে দানা গর্জে ওঠে, "ফারহানের কিছু হবে না। ওর কিছু হলে এই মহানগর আমি জ্বালিয়ে দেব।"
দানা জানতে চায় বাপ্পা নস্কর কোথায়? ইন্দ্রনীল জানায়, ওই পথ সভা কয়েক ঘন্টা পরে শুরু হবে তবে ইতিমধ্যে টিভি মিডিয়াতে বাপ্পা নস্কর তার বিরোধী পক্ষদের সাবধান করে দিয়েছে। চরম অস্বস্তিতে এদিক ওদিক পায়চারি করে দানা কিন্তু কিছুতেই স্বস্তি পায় না। ওর গায়ে কেউ যেন গরম ছ্যাঁকা দিয়ে চলেছে। মহুয়ার অবস্থা সঙ্গিন, একদিকে দানার রক্ত চক্ষু মাথা গরম কখন কি করে বসে তার নেই ঠিক। ওইদিকে জারিনা কেঁদে কেঁদে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কয়েকদিন পরেই বিয়ে আর তার আগেই এই ঘটনায় জারিনা একদম ভেঙ্গে পড়েছে। সঙ্গীতার সাথে যা হয়েছিল সেটা জারিনার সাথে হতে দিতে পারে না। এর প্রতিশোধ নিতে হবেই আর আজ রাতেই নেবে। যা হবার হবে কিন্তু একটা একটা করে পিস্তলের সব গুলি নয়না আর বিমানের বুকে মাথায় নামিয়ে দেবে।
জারিনার জ্ঞান ফেরে, দানাকে দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে, "একি হলো আমার? ফারহান..... ফারহান....." বলে বার দুই আঁতকে উঠে আবার মহুয়ার কোলে ঢলে পড়ে।
দাঁতে দাঁত পিষে মহুয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে দানা। মহুয়া ওই চোখের ভাষা পড়ে ফেলে। দানার মাথায় রক্ত চড়ে গেছে। চারদিকে চাপা উত্তেজনা, সবাই শ্বাস আটকে অপারেশান থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে। রুহিকে কোলে নিয়ে নেয় দানা।
রুহি দানার ছলছল চোখ দেখে জিজ্ঞেস করে, "আন্তেলের কি হয়েছে, ডাডা?"
এই নিষ্পাপ শিশুকে কি উত্তর দেবে দানা। মনা আর পিন্টুকে বলে, রুহিকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে। ততক্ষণে মদনা বলাই শক্তি আকরাম এরা সবাই খবর পেয়ে হস্পিটালে এসে যায়। শঙ্কর আর রমিজ, ফারহানের আম্মি আর দাদা তাবিশকে নিয়ে পৌঁছে যায়। আরও একবার কান্নার রোল ওঠে। জারিনা আর ফারহানের আম্মিজানের চোখের জল বাঁধ মানে না কিছুতেই।
রুহিকে নিয়ে মনা আর পিন্টু বেরিয়ে যায়। হাতের ঘড়ির কাঁটা আর চলে না। দুই ঘন্টা পরে অপারেশান থিয়েটারের দরজা খুলে যায়। আতঙ্কে আর বেদনায় সবাই উন্মুখ হয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে।
দানা সবার আগে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছে ফারহান?"
ডাক্তার উত্তর দেয়, "দুটো গুলি বের করে ফেলা হয়েছে তবে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়ে গেছে। আগামী বাহাত্তর ঘণ্টার আগে কিছুই বলা মুশকিল।"
দানা চাপা গর্জন করে ওঠে, "বলা মুশকিল মানে? ফারহানকে বাঁচাতে হবে ডাক্তার, না হলে এই হসপিটাল এইখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না।"
ওর ওই বেদনা যুক্ত, তীব্র হুঙ্কার শুনে সবাই কেঁপে ওঠে। শঙ্কর দেখে এ যে মহা মুশকিল, দানাকে শান্ত না করতে পারলে এখুনি ওই ডাক্তারের টুঁটি চিপে ধরবে। মহুয়া দৌড়ে এসে ওকে টেনে ধরে, "কি হয়েছে, পাগল হয়ে গেছ নাকি তুমি? ডাক্তার বাবু গুলি বের করে দিয়েছেন। বাহাত্তর ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না।"
নাকের পাটা ফুলে ওঠে, চোখ জ্বলে ওঠে, প্রচন্ড বেদনায় দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, "বলা যাবে না মানে? বলতে হবে যে ফারহান উঠে দাঁড়াবে।"
মহুয়া ওকে জড়িয়ে ধরতেই দানা ভেঙ্গে পড়ে, "আমি জানি ফারহান তোমার কাছে কি। ওপর ওয়ালার ওপরে ভরসা রাখো সব ঠিক হয়ে যাবে।"
কিছুক্ষণ পরে চোখ মুছে দাঁতে দাঁত পিষে একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে দানা। কাকে বিশ্বাস করা উচিত আর কাকে নয়, কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। নয়না আর বিমানের কোন দুরাভিসন্ধি নয়ত। জারিনা কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল করে ফারহানের আম্মিজানের কাঁধে মাথা দিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। পাশে নাফিসা, তাবিশকে জড়িয়ে ধরে নিস্তেজ হয়ে গেছে। শঙ্কর রমিজ সবার চোখে উৎকণ্ঠা। মহুয়ার চোখ জোড়া টলটল করছে, একটু টোকা দিলেই উপচে পরবে।
কোমরে গোঁজা পিস্তলে হাত চলে যায় দানার। দাঁতে দাঁত পিষে মহুয়ার কানে কানে বলে, "আমি একটু আসছি। ফারহানকে আই.সি.ইউ. তে নিয়ে যাওয়ার পরে তুমি বাড়ি চলে যেও।"
ওই রক্তচক্ষু দেখে মহুয়া বুঝতে পেরে ভয় পেয়ে যায়। হাত শক্ত করে ধরে বলে, "এখান থেকে একপা নড়বে না।"
দানা জোরে জোরে মাথা নাড়ায়, "আমার হাতে বাহাত্তর ঘন্টা নেই পাপড়ি। আজ রাতেই ওদের শেষ করে দেব।"
বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি, তাও সেই আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি উপেক্ষা করে দানা বেড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতি যেমন তান্ডবে মেতেছে, দানার মাথার রক্ত আজ তান্ডবে মেতেছে। মহুয়ার কাতর প্রার্থনা উপেক্ষা করে বেড়িয়ে পরে নয়না আর বিমানকে খুন করতে। ওর মাথায় খুনের নেশা, আজ রাতে নয়না বোস, বিমান চন্দ আর মোহন খৈতানের রক্ত পান না করা পর্যন্ত এই তান্ডবের নেশা থামবে না।
গাড়িতে উঠতে যাবে কি তখনি এক অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসে ওর কাছে। ওইপাশের অজানা ব্যাক্তি ওকে প্রথমে জিজ্ঞেস করে, "তুই দানা?"
দানা গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ।"
অচেনা কণ্ঠস্বর ওকে বলে, "আমি জানি ফারহানকে কে খুন করেছে। এক ঘণ্টার মধ্যে হিঙ্গলগঞ্জ ডকে একা চলে আয়।"
দানা কিছু বলার আগেই ফোন কেটে যায়। বারেবারে ওই নাম্বারে ফোন করে কিন্তু ওইপাশ থেকে কোন সারা শব্দ আসে না। এটা ঠিক কি হল ওর সাথে? বিমান আর নয়না আবার নতুন কোন চাল খেলছে? একা আসতে বলেছে মানে ওকে এইবারে ওকে মারার চক্রান্ত। পিস্তল দুটি ভালো ভাবে পরীক্ষা করে দেখে নেয়, চার খানা গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন পকেটে। একবার ভাবে বাকিদের জানিয়ে দেবে, কিন্তু একাই মোকাবিলা করতে চায় সবার সাথে।
********** পর্ব তেরো সমাপ্ত **********
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment