আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram
Written By pinuram
চোদ্দ
রক্তের খেলা (#০৯)
নয়না ওর হাত খানি বুকের কাছে জড়িয়ে চোখ বুজে আয়েশ করে বসে থাকে। দানা চিন্তা করে, কি চলছে এই ধূর্ত কামুকী ছলনাময়ী মেয়েটার মনের গভীরে। হয়ত পাল্টা কোন চক্রান্ত করে ওকেই এইখানে না মেরে ফেলে। কান সতর্ক, বুকের মধ্যে টানটান উত্তেজনা, মনের মধ্যে কামের লেশ মাত্র নেই। ওর হাতের মধ্যে মনে হয় একটা নরম পুতুল। তাও জড়িয়ে ধরে থাকে নয়নাকে, বুঝতে দেওয়া চলবে না যে আগে থেকেই সবকিছু দানা জানে।
বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড়ানোর আওয়াজ পেয়েই দানা সতর্ক হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে "দুম" "দুম" দুটো গুলির আওয়াজ, রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে দেয়। নয়না আতঙ্কে কুঁকড়ে ওর দিকে ভয়ার্ত চাহনি নিয়ে তাকায়। চোখের ভাষা, "কি হলো হঠাৎ?" দানার চোয়াল কঠিন হয়ে যায়, নয়নার মুখে হাত চেপে চিৎকার করতে মানা করে। আতঙ্কে নয়নার শরীর কেঁপে ওঠে, দানা চোয়াল চেপে শক্ত করে ধরে ওকে চেঁচাতে মানা করে।
বেশ কয়েকজন মানুষের মিলিত কণ্ঠস্বর, চেঁচামেচি। দানা উঠে বাথরুমের আলো নিভিয়ে দেয়। "আহহহহ আমি না আমি না....." দেবুর আর্তনাদ শুনতে পেল দানা। "দুম দুম" আরো দুটি গুলি, তাহলে প্রথম গুলিতে নয়নার ড্রাইভার ধরাশায়ী হয়েছে এইবারে দেবু ধরাশায়ী হলো। ঘরের ভেতরে পায়ের আওয়াজ, শোয়ার ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়েছে ওরা তিনজনে। কে কোথায় ঠিক ঠাহর করা যাচ্ছে না। সমুদ্রের চাপা কণ্ঠস্বর, "শায়নি তুই কই?" নয়নার মুখ চাপা, কিছু বলতে যায় কিন্তু দানা ওকে টানতে টানতে সিঁড়ির পেছনের দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে যায়। পুকুরের পাশেই ঝোপ ঝাড় ভর্তি, পেছনে বেশ অন্ধকার। একটা ঝোপের পাশে দুইজনে ঘাপটি মেরে বসে পরে। নয়না আতঙ্কে ঠকঠক করে কাঁপছে আর দানার শরীর চাপা উত্তেজনায় টানটান হয়ে যায়। অন্ধকারে কিছুই ঠিক ভাবে ঠাহর করা যায় না।
দড়াম করে দরজা ভাঙ্গার আওয়াজ কানে আসে, সেই সাথে গর্জে ওঠে বেশ কয়েকটা বন্দুক। কয়জনকে সাথে নিয়ে এসেছে বাপ্পা নস্কর? ভুপেন খবর দিয়েছিল, নিতাই আর দুই জন বিশ্বস্ত ছেলে আর বাপ্পা নস্কর, মোট চার জন। বাপ্পা নস্করের হুঙ্কার শোনা গেল, "শালা মাদারচোদ হারামির বাচ্চা বিমান, আমাকে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করেছিস। এই নে শালা....." "দুম" একটা গুলি, "আহহহহ..... তুই মাদারচোদ কম কিসে হারামির বাচ্চা....." "দুম দুম দুম" তিনটে পরপর গুলির আওয়াজ, কে কাকে মারল ঠিক বোঝা গেল না। "না না আমাকে মারিস না....." বিমানের কাতর প্রার্থনা উপেক্ষা করে "দুম" একটা গুলির আওয়াজ, এইবারে বিমান চন্দ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল মনে হয়। ঘরের আলো আবার জ্বলে উঠেছে কিন্তু বাইরে থেকে ঘরের ভেতর দেখা দুঃসাধ্য। কে কোথায় আছে বোঝা যাচ্ছে না শুধু মাত্র চিৎকার আর বন্দুকের আওয়াজ। সুমিতার কাতর প্রার্থনা, "দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন, ওই দানা সব....."। নিতাইয়ের হুঙ্কার, "কেন রে মাগী, নয়নার সাথে তুই ও ছেনালি গিরি করে বেরাস, এই নে"। "দুম দুম" দুটো গুলি। "আহহহহ" নারী কণ্ঠের মৃত্যুর আর্তনাদ, মনে হয় এইবারে সুমিতাও শেষ। "দুম দুম" বেশ কয়েকটা গুলির আওয়াজ, একে একে অচেনা কয়েকটা গলার মৃত্যু আর্তনাদ। বাপ্পা নস্কর কি মরে গেছে? একা সমুদ্র মনে হয় যুদ্ধ করে চলেছে। বাপ্পা নস্করের কাঁপা কণ্ঠের হুঙ্কার, "কোথায় তুই শালা, বাইরে আয়।"
নয়না থর থর করে দানার বাহুপাশে প্রচন্ড আতঙ্কে কাঁপতে থাকে। ওর চোখ জোড়া আতঙ্কে বড় হয়ে গেছে, চিৎকার করতে চেষ্টা করে নয়না কিন্তু দানার হাত শক্ত করে ওর মুখের ওপরে চেপে বসা। দুইজনেই নগ্ন, গায়ে একটা সুতো পর্যন্ত নেই। কামোত্তেজনা ছাড়িয়ে ওদের দেহে ভর করেছে টানটান চাপা উত্তেজনা, কি হয় কি হয়। সময় আর কাটতে চায় না যেন। কুকুরের ঘেউঘেউ আওয়াজ খুব কাছ থেকে শোনা গেল। দানার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে গেছে। ওর হাতে কোন আগ্নেয়াস্ত্র নেই, ওর দিকে যদি কেউ চলে আসে আর দেখে ফেলে তাহলে কি করে বাঁচবে। চারপাশে ঘন অন্ধকার, কান পাতলে একটানা ঝিঝি পোকার আওয়াজ শোনা যায়। থমথমে আতঙ্কের পরিবেশে গা ছমছম করে ওঠে নয়নার। এই বুঝি ওদের কেউ দেখে ফেলল আর বন্দুক উঁচিয়ে ওদের দিকে গুলি ছুঁড়ে দিল।
নয়না কোনোরকমে ওর হাত মুখ থেকে সরিয়ে ভয়ার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "এই সব কি হচ্ছে?"
দানা ওকে চুপ করে থাকতে বলে, "নিজে বাঁচলে বাপের নাম। জানি না কি করে বাপ্পা নস্কর খবর পেল।"
নয়নার দুই চোখ জলে ভরে ওঠে। কম্পিত কণ্ঠে ওর কঠিন বাহুপাশে ছটফট করতে করতে বলে, "তুই কিছু জানিস না বলছিস? তুই সব জানিস, তুই সব চক্রান্তের মূলে।"
দানা ওর মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে, "চুপ একদম চুপ, এইদিকে কেউ আসছে।"
কেউ মনে হয় পেছনের দরজার দিকে এলো। ঘরের ভেতরের আলো সাহায্যে দেখা গেল একটা রক্তাক্ত মূর্তি টলতে টলতে পেছনের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে এসেছে। নিতাইয়ের জামা কাপড় রক্তে ভেসে গেছে। এদিক ওদিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে নিতাই, "এই শালা মাদারচোদ দানা, কোথায় লুকিয়ে আছিস শালা খানকীর বাচ্চা। এক মায়ের দুধ খেয়েছিস যদি বেড়িয়ে আয়।"
ওই কঠিন কম্পমান কণ্ঠের হুঙ্কার শুনে নয়নার শরীর আতঙ্কে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। দানার বুকের কাছে জড়সড় হয়ে কুঁকড়ে যায়। বুঝতে পারে এটা দানার চক্রান্ত নয়, এটা বাপ্পা নস্করের চক্রান্ত। আহত রক্তাক্ত নিতাই, অন্ধকার লক্ষ্য করে চেঁচিয়ে ওঠে, "খানকীর বাচ্চা, তোকে শেষ করে দেব আর শালী ওই রেন্ডি মাগী নয়নাকেও শেষ করে দেব। জানি শালা তুই আর নয়না এইখানে কোথাও....." "দুম দুম দুম" পর পর তিনটে গুলির আওয়াজ। নিতাই বার কয়েক ঝাকুনি দিয়ে প্রাণ হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
দরজায় একটা পুরুষের অবয়ব। সমুদ্র নিজের রক্তাক্ত দেহ মেঝের ওপরে টানতে টানতে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো। ওকে ওই ভাবে দেখে নয়নার বেদনায় কুঁকড়ে যায়। দানার হাত ছাড়িয়ে উলঙ্গ অবস্থায় দৌড়ে যায় সমুদ্রের দিকে। দানা বাধা দিতে যাবে কিন্তু ততক্ষণে নয়না মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সমুদ্রের মাথা নিজের কোলে নিয়ে নেয়।
বুকের কাছে সমুদ্রের রক্তাক্ত মাথা চেপে ধরে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে নয়না কেঁদে ওঠে, "না সনু তুই আমাকে ছেড়ে যেতে পারিস না, সোনা। আমি যে তোকে....." সমুদ্রর চোখ ছলছল, বুকে একটা গুলি, পেটে দুটো গুলি ওকে ফুঁড়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে বুক পেট থেকে।
কাঁপতে কাঁপতে নয়নার হাত খানা নিজের হাতের মধ্যে টেনে ম্লান হেসে বলে, "এই জন্মে আর তোর হতে পারলাম না শায়নি। কথা দিলাম পরের জন্মে নিশ্চয় তোকে বিয়ে করবো।"
এহেন দৃশ্য সিনেমার পর্দায় দেখলে অনেকের চোখে জল চলে আসবে।
এক প্রেমিকা তার আহত রক্তাক্ত প্রেমিকের মাথা নিজের কোলে নিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে, "সনু না সনু, প্লিস সোনা চোখ খোল আমাকে ছেড়ে যাস না।" দানার দিকে তাকিয়ে কাতর প্রার্থনা করে ওঠে, "প্লিস কিছু কর দানা, ওকে বাঁচাও। ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না দানা।"
দানা এগিয়ে আসে, কিন্তু ততক্ষণে সমুদ্র চোখ বুজে পরাপারে চলে যায়। সমুদ্রের প্রাণহীন মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরে কান্নায় ভাসিয়ে দেয় নয়না।
"শায়নি" কে এই "শায়নি"? ওর নাম নয়না বোস। কিন্তু হঠাৎ মৃত্যু পথযাত্রী সমুদ্র ওকে "শায়নি" বলে ডাকলো কেন?
ক্ষণিকের জন্য এই দৃশ্য দেখে দানার চোখ বেদনায় জ্বলে ওঠে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। দানা চোয়াল চেপে সেই বেদনা যুক্ত অনুভুতি গিলে ফেলে। এইখানে প্রতিশোধের খেলাতেই নামতে এসেছিল, এই চক্রান্ত সবাইকে নির্মূল করা। সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে। সুমিতা আর সমুদ্র জানতো নয়নার বাড়িতে সঙ্গীতাকে ধর্ষণ করা হবে। বিমানের মৃত্যু, সঙ্গীতার প্রেমিক মৈনাকের মৃত্যুর প্রতিশোধ। বাপ্পা নস্কর আর বাকিদের মৃত্যু, ফারহানকে মারার প্রচেষ্টার প্রতিশোধ। চোয়াল চেপে নয়নাকে টেনে মাটি থেকে তুলে দাঁড় করিয়ে দেয়। নয়না কিছুতেই সমুদ্রের মৃত দেহ ছেড়ে যাবে না। জোরে জোরে মাথা নাড়ায় নয়না, "আমাকে সনুর সাথে একটু থাকতে দাও দানা....."
ওর মুখ চেপে ধরে দানা। মাথা নাড়িয়ে বলে, "গুলির আওয়াজে কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রামবাসী এইখানে চলে আসবে। একটু বুঝতে চেষ্টা কর, আমাদের এখুনি এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে না হলে আমরা ধরা পড়ে যাবো।"
নয়নাকে টানতে টানতে ওর গাড়ির দিকে নিয়ে যায়। গাড়ির দিকে যাওয়ার সময়ে একটা বেড়াল কাছে থেকেই ডেকে উঠলো। দানা পেছন ঘুরে ওই ঝোপের আড়ালের বেড়ালের দিকে দেখে ইশারায় জানিয়ে দিল এখন একটু কাজ বাকি।
ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে নয়না অজ্ঞান হয়ে গেল। ওকে কোলে তুলে গাড়ির পেছনের সিটে শুইয়ে দিল দানা। নিজের গায়ে একটা সুতো নেই, নয়নার গায়ে সমুদ্রের রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে। ফর্সা স্তন জোড়া রক্তে লাল হয়ে গেছে, বুকে পেটে রক্তে মাখামাখি। একবারের জন্য মনে হল এই রাতে একে এইখানে খুন করে চলে যায়। না, তাহলে মোহন খৈতান আর সিমোন খৈতানকে কি করে ধরবে? নয়নাকে টোপ হিসাবে ব্যাবহার করতে হবে ওই দুই ধূর্ত নর নারীকে ফাঁদে ফেলার জন্য।
মহুয়া কি ঘুমিয়ে পড়েছে? না প্রেয়সী ঘুমাতে পারে নি। নাছোড়বান্দা ফুলপরী, রুহি খুব বায়না ধরেছিল, "ডাডার সাথে ডিনার করবো।" মহুয়া অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিরস্থ করে রুহিকে। বারেবারে মন বিচলিত হয়ে যায়, উড়ে চলে যায় দানার কাছে। কোথায় আছে, কি করছে, কেমন আছে? সিঁথিতে সিঁদুর পরানো বাকি, ওর ভাগ্যে কি সত্যি সেই সিঁদুর জুটবে? না এই রাত ওর অপেক্ষাতেই শেষ হয়ে যাবে আর এক রক্তিম বেদনা দায়ক সকালের দেখা দেবে। রুদ্ধশ্বাসে রাত জেগে বারান্দায় বসে থাকে। কি মুশকিল রে বাবা, সময় আর কাটতে চায় না। ঘড়ির কাঁটা কেন একটু তাড়াতাড়ি চলে না? গলার নিচে খাবার কেন ঠিক ভাবে জল পর্যন্ত গলতে পারল না মহুয়ার। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে বারেবারে কিন্তু এই ছলছল চোখে কি করে রুহির সামনে যাবে?
দানা, গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেয় যাতে নয়নার জ্ঞান ফিরলেও যেন গাড়ির বাইরে আসতে না পারে। বেশ কিছুক্ষণ ওইখানে দাঁড়িয়ে চাপা উত্তেজনা দমিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। চারপাশে সুন্দর ফুরফুরে বাতাস বয়ে চলে, এই বাতাস কি জানে এই কিছুক্ষণ আগে এই বাড়িতে মৃত্যুর তান্ডব হয়ে গেছে? মাথার ওপরে খোলা আকাশ, শত সহস্র তারা ঝিকিমিকি করছে। হঠাৎ মনে হল যেন ওই আকাশের কোন এক কোনায় একটা তারা একটু বেশি করে জ্বলজ্বল করে উঠল, ওইটা কি মৈনাক? আবার দরজা খুলে নয়নাকে দেখে নেয়। পেছনের সিটে নগ্ন নয়না তখন অজ্ঞান।
গাড়ির ড্যাশবোর্ড থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালায়। সঙ্গে সঙ্গে দুটো বেড়াল, দুটো কুকুর আর একটা পাখী ঝোপ ঝাড় থেকে বেড়িয়ে এলো। দানা মাথার ওপরে দুই আঙ্গুল ঘুরিয়ে ইশারা করে। নাড়ু আর শক্তি পিস্তল হাতে বাড়ির পেছনের দিকে দৌড়ে চলে যায়। বলাই, আকরাম আর নাসিরকে সঙ্গে নিয়ে সামনের দিকে হেঁটে যায় দানা। আকরাম নিজের জামা খুলে দানার হাতে ধরিয়ে দেয়। দানা সেই জামা কোমরে বেঁধে নিজের লজ্জা ঢাকে। কারুর মুখে কোন কথা নেই, শুধু মাত্র চোখের ইঙ্গিতে আর হাতের ইশারায় কাজ করে চলে। বাড়ির সামনে সার দিয়ে তিনটে গাড়ি দাঁড়ানো। দানা ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয় তিনটে গাড়ির পেট্রোল ট্যাঙ্ক খুলে পেট্রোল বের করে গাড়ির ওপরে ছড়িয়ে দিতে। নাসির আর বলাই সেই কাজে নেমে পড়ে। আকরাম দানাকে একজোড়া ডাক্তারের দস্তানা ধরিয়ে দেয় আর সেই সাথে কাপড়ে ঢাকা চপ্পল। এটা ওদের নিখুঁত পরিকল্পনার অঙ্গ, যাতে ঘরের মধ্যে কোথাও ওদের হাতের ছাপ না পড়ে।
আকরাম আর দানা খোলা পিস্তল হাতে পা টিপে টিপে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। একপাশে নয়নার ড্রাইভারের মৃতদেহ, মাথা ফুটিফাটা হয়ে গেছে। অন্যপাশে দেবুর মৃতদেহ, ওর বুকে দুটো গুলি ওকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভাঙ্গা দরজার ঠিক মুখে একটা ছেলের মৃতদেহ, এটা নিতাইয়ের লোক। রক্ত বাঁচিয়ে এদিক ওদিক দেখে শোয়ার ঘরে ঢোকে। সাদা বিছানা, নগ্ন সুমিতা আর নগ্ন বিমানের রক্তে লাল হয়ে গেছে। দরজার কাছেই বাপ্পা নস্করের প্রাণহীন দেহ। দানা খুঁজে খুঁজে নিজের জামা কাপড়, মোবাইল পার্স আর নয়নার পোশাক পার্স মোবাইল জুতো হাতে তুলে নেয়। এইসব পোশাক এইখানে একদম রাখা চলবে না, পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রামকে নির্দেশ দেয় বাথরুমে জল ঢেলে পরিষ্কার করে দিতে। পেছনের দরজা দিয়ে নাড়ু আর শক্তি ঘরে ঢুকে জানিয়ে দেয় সবাই শেষ, কেউ বেঁচে নেই। শক্তি, আক্রামের সাথে বাথরুম ধুতে চলে যায়। দানা ঘরের এপাশ ওপাশ ভালো ভাবে দেখে যেখানে যেখানে হাত রেখেছিল বলে মনে হয় সেই সব জায়গা মুছে ফেলে। ঘরের অনেক জায়গায় নিশ্চয় নয়নার হাতের ছাপ পাওয়া যাবে কিন্তু নিরুপায় অত শত ধোয়া মোছার সময় ওদের হাতে নেই। চারপাশে রক্তের ছড়াছড়ি, খুব বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে পা ফেলে এগোতে হয় ওদের, পাছে কোথাও রক্তের মধ্যে পা পড়ে গেলে সমস্যায় পরে যাবে। মৃত সাতজনের ছাড়া আর কারুর ছাপ এই বাড়িতে রাখতে চায় না। তার চেয়ে ভালো পেট্রোল ঢেলে গাড়ি বাড়ি সব পুড়িয়ে ফেলা। হাতের ছাপ পাওয়া মুশকিল হবে, কিন্তু এই মৃতদেহ গুলো পুলিসের হাতে পড়ে যাবে।
নিঃশব্দে আর রুদ্ধশ্বাসে সবাই তড়িৎ গতিতে নিজেদের কাজ সারে। নাসির আর বলাই পেট্রোলের ক্যান নিয়ে বাড়ির মধ্যে আর বাড়ির চারদিকে ছিটিয়ে দেয়। বাথরুম থেকে একটা তোয়ালে নিয়ে কোমরে জড়িয়ে দেয় দানা। নিজের পোশাক আর নয়নার পোশাক রক্তে ভিজে গেছে ওই পোশাক আর পরা যাবে না। নয়নার জন্য আরো একটা তোয়ালে নিয়ে নেয়। আকরাম শক্তি জানিয়ে দেয় কাজ শেষ।
রক্তের খেলা (#১০)
ঘড়ি দেখে দানা, রাত সাড়ে দশটা বাজে। মহানগরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত বারোটা হয়ে যাবে। গাড়ি নিয়ে গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া যাবে না। একা নয়নাকে গাড়িতে করে মাঠের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়। বাকিদের গাড়ি নিয়ে ওর পিছুপিছু আসতে বলে। এবোড়খাবোড় মাঠের মধ্যে দিয়ে নাচতে নাচতে গাড়ি চালিয়ে বড় রাস্তা ধরে। বড় রাস্তায় ওঠার আগে এক বার পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখে। বিমান চন্দের বাগান বাড়ি দাউদাউ করে জ্বলছে। ততক্ষণে মনে হয় গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে গেছে ওইখানে। রাতের নিস্তব্ধতা চিরে বহু মানুষের হইচই শোনা যায়। বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে দেয়।
কোমরে শুধু মাত্র একটা তোয়ালে, ঊর্ধ্বাঙ্গ খালি এইমত অবস্থায় মহানগরে পৌঁছালে সমস্যায় পরে যাবে। পেছনের সিটে নয়না তখন অজ্ঞান। তোয়ালে দিয়ে ওর শরীর যদিও ঢেকে দিয়েছিল কিন্তু গাড়ির নাচনের ফলে তোয়ালে আবার সরে গেছে। বেশ কিছুদুর গিয়ে একটা খালি জায়গা দেখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেয়। বাকিদের মহানগরে ফিরে যেতে বলে আর বলে মহুয়াকে যে জানিয়ে দেয় দানা ঠিক আছে। শক্তি আর বলাইকে গাড়ি পরিস্কার করার সরঞ্জাম আনতে অনুরোধ করে, রাতের মধ্যেই গাড়ি পরিষ্কার করে ফেলেতে হবে। নয়নাকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে তারপরে বাড়ি ফিরবে বলে জানিয়ে দেয়। আকরাম শক্তি গাড়ি চালিয়ে মহানগরের দিকে চলে যায়। কোথায় যাবে এত রাতে? নিজের বাড়িতে না নয়নার বাড়িতে? ওকে আর নয়নাকে রক্তাক্ত এইমত অবস্থায় দেখলে মহুয়া ভিরমি খেয়ে যাবে, ভয়ে কেঁদে ফেলবে। নয়নার বাড়িতে যাওয়া উচিত, ওইখানে ওকে রেখে তারপরে নিজের বাড়ি চলে আসবে। না না, নিজের বাড়িতে যাওয়াই বিবেচ্য, মহুয়া এতক্ষণে নিশ্চয় চরম উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনছে। এতক্ষণ পরে আর মাথা কাজ করছে না। বারেবারে রুহির আদো আবদার কানে ভেসে আসে, "ডিনার?" চোরা পকেটে যে মোবাইলটা ছিল সেটা এতক্ষণে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে ওর জামা কাপড়ের সাথে।
সকাল হলেই এই শহর জ্বলে উঠবে, একসাথে দুই তাবড় রাজনৈতিক নেতা খুন হয়েছে। সকাল হলেই পুলিস গোয়েন্দা নিজেদের তদন্তে নেমে পড়বে। নিজেকে কি ভাবে বাঁচাবে সেটা ভাবে, যদিও নিজে থেকে একটাও গুলি চালায়নি দানা। যতদূর মনে পড়ে ওই বাড়িতে ওর অস্তিত্বের প্রমান নেই কিন্তু নয়নার অস্তিত্বের প্রমান হয়ত খুঁজে বের করে নেবে গোয়েন্দারা। নয়নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে দানার ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়নাকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চালাতে হবে।
একটা সিগারেট জ্বালিয়ে জলের খোঁজে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। একটু দূরে রাস্তার পাশে একটা পুকুরের দেখা পায়। তোয়ালে খুলে পুকুরে নেমে গলা পর্যন্ত ভালো ভাবে স্নান করে নেয়। তোয়ালে দিয়ে গা হাত পা মুছে আবার তোয়ালে কোমরে জড়িয়ে এপাশ ওপাশ দেখে। একটা প্লাস্টিকের বোতল পেয়ে যায় আর তাতে পুকুর থেকে জল নিয়ে নেয় নয়নার জন্য। গাড়িতে এসে নয়নার মুখে চোখে জলের ছিটা মারতেই ভয়ার্ত চোখ মেলে আসেপাসে তাকায় নয়না। কোথায় আছে ঠাহর পেতে একটু সময় লাগে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সারা শরীরে রক্ত মাখা, ওর শরীরে একটা তোয়ালে জড়ানো। প্রচন্ড আতঙ্কে নয়নার চেহারা রক্ত শুন্য, চোখে ভাষা নেই। দানাকে দেখে ফ্যাকাসে চেহারায় আবার কেঁদে ফেলে।
মাথা জোরে জোরে নাড়িয়ে আর্তনাদ করে, "আমার সব শেষ হয়ে গেল দানা, আমার সব শেষ হয়ে গেল।"
দানা ওর পাশে বসে প্রবোধ দিয়ে বলে, "শান্ত হও নয়না, নিজে বেঁচে গেছ এই অনেক। ওইখানে থাকলে তুমিও বাপ্পার গুলিতে নয়ত নিতাইয়ের গুলিতে প্রান হারাতে।"
ওর বুকের ওপরে কিল মারতে মারতে চেঁচিয়ে ওঠে, "আমি কি করবো, দানা। আমি সব কিছু হারিয়ে ফেলেছি।"
দানা ওর হাত ধরে শান্ত কণ্ঠে বলে, "কাছেই একটা পুকুর আছে। সব থেকে আগে ওই পুকুরে নেমে স্নান করে গায়ের রক্ত ধুয়ে ফেল। তারপরে দেখি কোথায় যাওয়া যায়, কি করা যায়।"
নয়না তোয়ালে জড়িয়ে দানার পেছন পেছন পুকুর পাড়ে আসে। কোনোদিন কি পুকুরে নেমেছিল এই অভিনেত্রী নয়না বোস? তোয়ালে খুলে উলঙ্গ হয়ে পুকুরে নেমে, দানার নির্দেশ মতন গলা পর্যন্ত ভালো করে ডলে ডলে রক্ত মুছে স্নান সেরে ফেলে। তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে খানিকটা শান্ত হয়। কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলে গেছে, বেদনার সাথে সাথে চেহারায় ভয়ার্ত চাহনি। সাক্ষাৎ মৃত্যুর কবল থেকে কোনোরকমে বেঁচে ফিরে এসেছে। দানার বাজু আঁকড়ে ধরে ওর দেহের উত্তাপ নিজের দেহে মাখিয়ে নেয়। দানার দিকে প্রগাড় কৃতজ্ঞতার ভরা চোখে তাকায়। দুই চোখ ছলকে ওঠে। এই অশ্রু কি মেকি না সত্যি? দানা ওই অশ্রু দেখে ভোলার পাত্র আর নয়। তাও চেহারায় শান্ত ভাব এনে ওকে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। পেছনের সিটে কুঁকড়ে পা গুটিয়ে এক কোনায় বসে পড়ে নয়না। খালি রাস্তা ধরে প্রবল গতিতে গাড়ি চালিয়ে দেয় মহানগরের উদ্দেশ্যে।
নয়না মিহি কণ্ঠে ওকে ধন্যবাদ দিয়ে বলে, "তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো ভেবে পাচ্ছি না দানা। তুমি না থাকলে সত্যি আজকে ওইখানে মরে পড়ে থাকতাম।" একটু থেমে জিজ্ঞেস করে, "কিন্তু ভেবে পাচ্ছি না, বাপ্পা নস্কর এই বাড়ির খবর কি ভাবে পেল?"
সামনের আয়নায় নয়নার চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয় দানা, "ওইদিন বাপ্পা নস্করকে হুমকি দিয়ে শালা ভুল করেছিলাম। জানতাম না যে শালা মাদারচোদ আমার পেছনে লোক লাগাবে। শালা আমাকে অনুসরন করতে করতে যে শেষ পর্যন্ত এইখানে এসে পৌঁছাবে সেটা আমার ধারনার বাইরে ছিল।"
কোনরকমে ঠোঁটে ম্লান হাসি টেনে বলে, "আমাদের কপালে মৃত্যু লেখা ছিল না তাই ভগবান বাঁচিয়ে দিয়েছেন।"
দানা মনে মনে হেসে ফেলে, বাঁচানোর চক্রান্ত ওর। এরপরে না হলে মোহন খৈতান আর সিমোন খৈতানকে ফাঁদে কি করে ফেলবে? গাড়ি চালাতে চালাতে মাথায় ষড়যন্ত্র আঁটে যদি সব কিছু ঠিকঠাক হয় তাহলে তিন চারদিনের মধ্যেই নয়নার ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যাবে সেই সাথে এক নয় মোহন খৈতানের, নয় সিমোন খৈতানের। তবে এখন পর্যন্ত কঙ্কনা দেবনাথ আর নাসরিন আখতার বাকি। এদের কি ভাবে ধরবে? সঠিক জানা নেই তবে কঙ্কনা আর নাসরিনকে পারলে নিজের সামনে ওদের জানিয়ে খুন করবে। রমলা বিশ্বাস আর দুলাল মিত্রকে দানা কিছু করতে চায় না।
নয়না ওকে জিজ্ঞেস করে, "কোথায় যাচ্ছি?"
দানা উত্তর দেয়, "আমার বাড়ি।"
চুপচাপ নয়না জানালার বাইরে ভাসাভাসা চোখ নিয়ে তাকিয়ে কোথাও হারিয়ে যায়। কিছু পরে নয়নার দুই চোখ ছলকে ওঠে, ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কেঁপে ওঠে। বেদনা ভরা কণ্ঠে বলে, "সনু আর সুমিতা চলে গেল।" দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলে, "সমুদ্র আমার ভালোবাসা দানা, ওকে আমি ভালবাসতাম।"
কি বলছে নয়না? দানা একটু আধটু যে বোঝেনি সেটা নয়। দানা চোরা হেসে গাড়ি চালাতে মন দেয়। কিন্তু এই ধূর্ত হিংস্র নারীকে কোন মতেই বাঁচিয়ে রাখা উচিত নয়। বিমান আর নেই এখন হয়ত মহানগরে ফিরে গিয়ে মোহনের কোলে ঢলে পড়বে আর ওর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। একটু আগেই বিমান আর সমুদ্রের কাছে ওর বিরুদ্ধে ফাঁদা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সব কিছু জেনে ফেলেছে। এই চূড়ান্ত ছলনাময়ী নারীকে কোনোদিন বিশ্বাস করা উচিত নয়।
একটানা দুই ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে মহানগরে পৌঁছে যায়। রাত দেড়টা বাজে, রাস্তা নির্জন হয়ে গেছে তাও রাস্তায় বেশ কিছু ট্রাক আর ইতস্তত পুলিসের গাড়ির দেখা পাওয়া যায়। বড় কালো দামী বি এম ডাবলু দেখে কেউ আটকাতে সাহস করে না। সোজা নোনাঝিলে নিজের বাড়ির নিচে এসে গাড়ি দাঁড় করায়। বারান্দা থেকে মহুয়া গাড়ি দেখতে পেয়েই দৌড়ে নিচে নেমে আসে। চোখে মুখে চরম উৎকণ্ঠা। নাড়ু ফোন করে যদিও জানিয়ে দিয়েছিল কিন্তু চোখে না দেখা পর্যন্ত স্বস্তির শ্বাস নিতে পারেনি। বুক চেপে রুদ্ধশ্বাসে এতক্ষণ অধীর উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনছিল। ছলছল চোখে এক দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে আসে।
ড্রাইভারের দরজা খুলে দানাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, "এতক্ষণ লাগে নাকি আসতে?"
পেছনে গলা খাঁকড়ানির আওয়াজ শুনে চমকে যায়। পেছনে তাকিয়ে দেখে, একটা তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে নয়না বসে। নাড়ু যে বলেছিল নয়নাকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দেবে? এত রাতে কেন বাড়িতে এনেছে? চোখ মুছে দানাকে জিজ্ঞেস করে, কি ব্যাপার? দানা ওদের জন্য জামা কাপড় আনতে অনুরোধ করে। তড়িঘড়ি করে দৌড়ে, দানার জন্য একটা ট্রাকসুট আর নয়নার জন্য একটা টপ আর লম্বা স্কার্ট নিয়ে আসে। দানা ট্রাক সুট পরে গাড়ি থেকে নেমে পরে আর নয়নাকে পোশাক ধরিয়ে পরতে বলে দেয়।
গাড়ি থেকে নেমেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়। দুই হাতে শরীরের সব শক্তি নিঙরে নিয়ে দানার দেহ নিজের সাথে মিলিয়ে দেয় মহুয়া। বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি কান পেতে শোনে। রোজ দিন ওই হৃদপিণ্ডের ধুকপুক আওয়াজ কানে না আসলে ঠিক শান্তি পায় না। দানার শরীরের উত্তাপ নিজের শরীরের না মাখালে মনে হয় যেন ওর প্রসাধনী ওর সাজ অসম্পূর্ণ। ওর পুরু ঠোঁটের চুমু না খেলে ওর মন ভরে না। রাতে যদি জড়িয়ে না শোয় তাহলে ঘুম আসে না কিছুতেই।
দানা ওর মুখ আঁজলা করে তুলে ধরে বলে, "এই তো আমি পাপড়ি। এইবারে শান্তি?"
ছলছল চোখে ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। অনেককিছু বলার আছে কিন্তু পেছনে নয়নাকে দেখে থেমে যায়। বুক ফেটে যাচ্ছে ওর গল্প শোনার জন্য কিন্তু দুইজনের চোখে চোখে কথা হয়। "পরে বলব।" আলতো মাথা দোলায় মহুয়া, "ঠিক আছে।"
মহুয়াকে সব কিছু না বলা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছে না কিছুতেই, কিন্তু নয়নার সামনে মুখ খোলা যাবে না একদম। ওর সামনে বেফাঁস কিছু বেড়িয়ে গেলেই মুশকিল। ওইদিকে আবার শক্তি বলাইকে বলে দেওয়া হয়েছে কেমিক্যাল আর গাড়ি পরিষ্কার করার সরঞ্জাম নিয়ে আসতে। পেছনের সিটে বেশ কয়েক জায়গায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ পরে গেছে। গাড়ির নিচে মাঠের মাটি পরিষ্কার করে ফেলতে হবে, চাকার খাঁজ থেকে খুটে খুটে মাটি ফেলে বের করে দিতে হবে, ভালো ভাবে গাড়ি পরিষ্কার করতে হবে।
দানা নয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে। ফ্যাকাসে চেহারা, প্রচন্ড বেদনায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সারা শরীর শুকিয়ে গেছে। চোখে মুখ রক্তহীন, ভাষাহীন চাহনি নিয়ে মহুয়া আর দানার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে। দানা চাইছিল নয়নাকে ওর বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আসতে, কিন্তু মহুয়া বারন করে।
নয়নার অলক্ষ্যে দানার দিকে চোখ টিপে বলে, "মেয়েটা কাঁদছে আর তুমি কি যে বল না?" নয়নাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে তোমার?" এমন একটা ভাব দেখায় যেন কিছুই জানে না মহুয়া।
ওর উষ্ণ হাতের পরশ পেয়ে মহুয়ার কাঁধে মাথা গুঁজে ডুকরে কেঁদে ফেলে নয়না, "আমার সব শেষ হয়ে গেছে মহুয়া। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি এত পাপ করেছি আজকে সব পাপের শাস্তি একসাথে পেয়ে গেছি মহুয়া।"
ওর মাথায় হাত বুলিয়ে প্রবোধ দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে, "উপরে চলো, একটু শান্ত হও, তারপরে শুনবো কি হয়েছে।"
দানার চোয়াল কঠিন হয়ে যায়। নয়নাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে নারাজ, কিন্তু মহুয়া চোখের ইশারায় ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে। ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয়, বেফাঁস আচরন করলে হিতে বিপরিত হয়ে যেতে পারে। নয়নার মনে সন্দেহ জাগতে পারে। ওর কি বলা উচিত যে নয়না রুহিকে অপহরন করার চক্রান্ত করেছিল? না এখুনি বলা ঠিক হবে না তাহলে মহুয়া আরো ভয় পেয়ে যাবে। নিজের বাড়ির ওপরে পাহারা আরো কড়া করে দিতে হবে।
নয়নাকে ধরে ধরে বসার ঘরে নিয়ে আসে মহুয়া। কাজের মেয়ে নিতা ততক্ষণে ঘুম থেকে উঠে গেছে। অভিনেত্রী নয়নাকে বাড়িতে ওই অবস্থায় দেখে চমকে যায়। মহুয়া ওদের নির্দেশ দেয় জল আনতে। নয়নাকে জল খেতে দিয়ে ঘটনা বলি জিজ্ঞেস করে। মহুয়ার হাত আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে রাতের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরন দেয়। শুধু মাত্র নিজেদের কাম কেলির ঘটনা বাদ দিয়ে বাকি সব বলে মহুয়াকে। শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে মহুয়া আঁতকে ওঠে, "উফফফ তাই নাকি?" "জানতে পারলো কি করে?" ইত্যাদি জিজ্ঞেস করে। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ মাখিয়ে নেয় মহুয়া। বুকের রক্ত চঞ্চল, এই ছলনাময়ী নারীর সাথে উচিত হয়েছে। কতজনের সাথে ছলনার খেলা করেছে তার ইয়াত্তা নেই, তার পরিনাম একদিন এইভাবে হবে সেটা অবশ্যাম্ভাবি। নয়নাকে অতিথিদের শয়ন কক্ষে শুইয়ে দিল মহুয়া। আতঙ্কে আর দুঃখে এই কয় ঘণ্টায় ওর শরীরের সব রক্ত শুকিয়ে গেছে। শরীরে কিছু আর বেঁচে নেই। চোখ বুজলেও মাঝে মাঝেই কেঁপে কেঁপে ওঠে, কেঁদে কেঁদে ওঠে। মহুয়া আর দানা বড় মুশকিলে পড়ে যায়।
সকাল হতে আর কয়েক ঘন্টা বাকি, হাতে সময় খুব কম, নেই বললেই চলে। পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবতে হবে কিন্তু বাড়িতে নয়না থাকায় সেটা কিছুতেই সম্ভবপর হয়ে উঠছে না।
কিছুপরে শক্তি আর বলাই, গাড়ি পরিস্কার করার সরঞ্জাম নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। দানা ওদের নিয়ে গ্যারেজে চলে যায় গাড়ি পরিস্কার করতে। মহুয়াও ওর পেছন পেছন নেমে আসে। বাড়ির বাইরে একমাত্র একটু মন খুলে কথা বলতে পারা যাবে।
গ্যারেজে ঢুকেই ওকে জড়িয়ে ধরে মহুয়া, "তুমি গেলে আর আমার বুকের এক লিটার রক্ত শুকিয়ে গেল।"
দানা হেসে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে, "তোমাকে আর রুহিকে ছেড়ে কোথাও কি যেতে পারি বলো।"
শক্তি বলাই গাড়ি পরিস্কার করতে লেগে পরে। দানা এক এক করে সব ঘটনা মহুয়াকে খুলে বলে। বাথরুমের চরম কাম কেলির কথা লুকায় না। শুনতে শুনতে মহুয়া মাঝে মাঝেই আঁতকে ওঠে, "বাপরে কি অসম্ভব ঝুঁকি নিয়েছিলে।"
শক্তি ওদিক থেকে বলে, "আর বলবেন না ম্যাডাম। আমাদের বের হতেই দেয়নি। সবার হাতে পিস্তল ছিল কিন্তু এতক্ষণ বসে বসে শুধু মশা মেরে গেলাম একটাও গুলি মারতে পারলাম না।"
দানা মিচকি হেসে বলে, "তুই তোর কাজ কর বাড়া। পরে গুলি চালাস। গুলি চালানো আমাদের পরিকল্পনায় ছিল না।"
মহুয়া ওর গালে চাঁটি মেরে বলে, "ইসসস, এত চাপা উৎকণ্ঠার মধ্যেও তোমার ওইসব করতে মন চাইলো? তুমি না যাচ্ছেতাই একটা মানুষ মাইরি।"
দানা মিচকি হেসে বলে, "কি করব সোনা। না করলে ধরা পড়ে যেতাম ওদের কাছে। ওরা সবাই উলঙ্গ হয়ে সঙ্গমে মত্ত আর আমি জামা কাপড় পরে পকেটে পিস্তল গুঁজে পড়ে থাকতাম নাকি? অন্তত নয়নার সাথে করতেই হতো না হলে মেয়েটা সন্দেহ করতো।"
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment