CH Ad (Clicksor)

Tuesday, April 28, 2015

মহানগরের আলেয়া_Written By pinuram [চোদ্দ - রক্তের খেলা (১১ - ১২)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram




চোদ্দ

রক্তের খেলা (#)

এমন সময়ে কাজের মেয়ে মণি দৌড়ে নিচে এসে খবর দেয় নয়না বমি করছে। দানা আর মহুয়া দৌড়ে ঘরে ঢুকে দেখে, নয়না বমি করে বাথরুমের মেঝেতে অচৈতন্য হয়ে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে। সমুদ্র আর সুমিতার মৃত্যু ওকে বড় নাড়িয়ে দিয়েছে। কাজের মেয়ে দুটোর সাহায্যে নয়নার চোখে মুখে জল দিয়ে হুঁশ ফিরিয়ে আনে। দানা ওকে পাঁজাকোলা করে তুলে আবার বিছানায় শুইয়ে দেয়। সেই রাতে দানার আর মহুয়ার আর ঘুম হল না। বসার ঘরে বসে সকালের অপেক্ষায় প্রহর গোনে দুইজনে।

সকালের দিকে টিভি চালায় দানা, এতক্ষণে নিশ্চয় ওই খবর চারদিকে আগুনের মতন ছড়িয়ে গেছে। খবরের চ্যানেল খুলতেই বড় বড় করে ভেসে ওঠে ব্রেকিং নিউজ। রাজনৈতিক দলনেতা বিমান চন্দের বাগান বাড়িতে বিমান চন্দ খুন হয়েছে, সেই সাথে বিধায়ক বাপ্পা নস্কর খুন হয়েছে। অভিনেত্রী নয়নার বোসের সেক্রেটারি সুমিতা আর ম্যানেজার সমুদ্র মারা গেছে। আরো চারজনের মৃত দেহ পাওয়া গেছে। বাগান বাড়ির একাংশ আগুনে পুড়ে গেছে কিন্তু দেহ গুলো ভালো ভাবে জ্বলার আগেই গ্রামের লোকজন আগুন নিভিয়ে দেয়। কেন এতগুলো লোক একসাথে এক জায়গায় মারা গেছে সেই সম্বন্ধে তদন্ত চলছে। তবে পুলিস গোয়েন্দার প্রাথমিক সুত্রের খবর, বাপ্পা নস্কর আর বিমান চন্দের রাজনৈতিক বিরোধিতার ফলে পরস্পরকে খুন করেছে। বাড়ি থেকে বেশ কয়েকটা জ্বলে যাওয়া বন্দুক উদ্ধার করেছে পুলিস। অভিনেত্রী নয়না বোস কি ওই স্থানে উপস্থিত ছিল সেটা সঠিক এখন জানা যায়নি। তবে অভিনেত্রীর ফোন পাওয়া যাচ্ছে না, বাড়িতে ফোন করেও তার খবর পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকের যতদূর ধারনা, ওরা সবাই ওই বাগান বাড়িতে মধু লীলা করতে গিয়েছিল, কারন সুমিতা আর বিমানের দেহে কোন বস্ত্র ছিল না। বাড়ির পেছনে সমুদ্রের মৃত দেহে শুধু মাত্র একটা জাঙ্গিয়া ছিল।

সকাল সকাল দানার ফোন বেজে ওঠে। কে করলো এত সকালে ফোন? ফোন তুলে দেখে, শিল্পপতি মোহন খৈতান ফোন করেছে। মহুয়া আর দানা, চাপা উত্তেজনায় মুখ চাওয়াচায়ি করে। সঙ্গে সঙ্গে টিভি বন্ধ করে দুইজনে শোয়ার ঘরে ঢুকে পরে। পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে।

ফোন তুলে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে দানা বলে, "হ্যালো, হঠাৎ এত সকালে ফোন করেছেন?"

ওইপাশ থেকে মোহন চাপা গলায় প্রশ্ন করে, "আপনি এখন ঘুমাচ্ছেন? টিভি খুলে দেখুন সর্বনাশ হয়ে গেছে। সারা জগত তোলপাড় হয়ে গেছে।"

দানা না জানার ভান করে প্রশ্ন করে, "কি হয়েছে একটু খুলে বলুন।"

মোহন খৈতান চেঁচিয়ে ওঠে, "অবুঝ হওয়ার ভান করবেন না মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল। আপনি ভালো ভাবেই জানেন আমি কিসের কথা বলতে চাইছি। বিমানের বাগান বাড়িতে নয়না ছিল আমি জানি।"

দানার কান গরম হয়ে যায়। ভেবেছিল এই কথা কেউ জানে না এইবারে পুলিসের কাছে যদি মোহন খৈতান মুখ খুলে দেয় তাহলে ওর সর্বনাশ। মোহন চাপা কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "নয়না কোথায়, মিস্টার মন্ডল? আমি হলফ করে বলতে পারি আপনি নয়নার খবর জানেন।"

দানা চুপ করে যায়, মহুয়া চোখ বুজে কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে দানাকে নির্দেশ দেয় সব সত্যি বলতে। দানা অবাক হয়ে যায়, ফোন চেপে চাপা আঁতকে ওঠে, "কি বলতে চাইছো?"

মহুয়া ঠোঁট আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে থাকতে বলে বলে, "ওকে বলো তুমি আর নয়না ওইখানে ছিলে। কিন্তু বাপ্পা নস্কর আসার আগেই তোমরা দুইজনে ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছিলে। বাকি আমি তোমাকে পরে বলছি। তুমি আগে মোহনের সাথে কথাবার্তা সারো।"

মহুয়ার পরিকল্পনা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না দানা, কিন্তু বুদ্ধিমতী প্রেয়সী নিশ্চয় কিছু একটা ভেবেই ওকে এই কথা বলতে বলেছে। মোহনের প্রশ্নের উত্তরে বলে, "হ্যাঁ আমি জানি নয়না কোথায়। নয়না আমার বাড়িতে।"

ওইপাশে গর্জে ওঠে মোহন খৈতান, "আপনি সবার সাথে চাল খেলে বেড়াচ্ছেন। আপনাকে আমি দেখে নেব।"

দানা চোয়াল চেপে ক্রোধ সংবরণ করে বলে, "আমি কারুর সাথে কোন চাল চালিনি মিস্টার খৈতান। আমি জানি না বাপ্পা নস্কর কি ভাবে ওই বাড়ির খবর পেল। আমি এটাও ভালো ভাবে জানি একটু বাদে পুলিস গোয়েন্দা আমার বাড়িতে চলে আসবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। যেটা সত্যি সেটাই আমি ওদের বলবো।"

মোহন মুষড়ে পড়ে দানার কথা শুনে। ভাঙ্গা কণ্ঠে দানাকে বলে, "ওই ছেনালি মাগী নয়নাকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না। ওই মাগীর চক্করে পরে আমার বন্ধু প্রান হারিয়েছে। ওকে আমি কিছুতেই ছাড়ব না।"

দানা ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে বলে, "কয়েক সপ্তাহ খুব গরম থাকবে এই মহানগর। একসাথে দুই বড় রাজনৈতিক দলের নেতার খুন সেই সাথে অভিনেত্রী নয়নার সেক্রেটারি আর ম্যানেজারের খুন। এখুনি মাথা গরম করে কিছু করতে যাবেন না, মিস্টার খৈতান। হিতে বিপরিত হয়ে যাবে। কয়েক দিন শান্ত থাকুন।"

কণ্ঠস্বর নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, "আপনি যখন আমাকে বিশ্বাস করে চারশো কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছেন তখন এইটুকু বিশ্বাস রাখুন আমি আপনাকে সাহায্য করবো।"

মোহন ভাঙ্গা কণ্ঠে বলে, "বলছেন?"

দানা উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, আরো একটা কথা। পরের সপ্তাহে আপনার ওই বাগান বাড়িতে একবার দেখা করতে চাই। বিস্তারে সব পরিকল্পনা ওই বাড়িতে জানাবো আপনাকে।"

মোহন দাঁত পিষে বলে, "আমার সাথে ছল চাতুরি চলবে না মিস্টার মন্ডল। আপনি জানেন না আমি কি করতে পারি।"

দানা মনে মনে হাসে, জানে টাকার জোরে অনেক কিছু করতে পারে সিমোন আর মোহন খৈতান তবে এতদিন একটা রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়া ওদের মাথার ওপরে ছিল। সেটা সরে যেতেই ওরা দিশা হারা হয়ে পড়েছে। দানা জানিয়ে দেয় ওর সাথে কোন ছল চাতুরি করবে না।

ফোনে কথা শেষ হলে মহুয়াকে জিজ্ঞেস করে কেন ওকে সত্যি বলতে বলেছে। মহুয়া ফিসফিস করে ওকে বলে, "গোয়েন্দা পুলিস তদন্তে নামবে এইবারে। এটা খুব সংবেদনশীল কেস। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়ে উঠবে। কেউ কাউকে ছেড়ে দেবে না, জিত। গোয়েন্দা পুলিসকে সব সত্যি বলবে, শুধু মাত্র একটা জায়গায় একটু হেরফের করবে। বলবে তুমি আর নয়না, বাপ্পা নস্কর আসার আগেই ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলে তাই তোমাদের খুঁজে পায়নি ওরা আর মারতে পারেনি। বাকিটা নিজের বুদ্ধি বিবেচনা করে ঠাণ্ডা মাথায় সকল উত্তর দেবে। গোয়েন্দারা জিজ্ঞেস করলে বাপ্পা নস্কর আর নয়নার সম্পর্কের বিষয়ে জানিয়ে দেবে, সেই সাথে বাপ্পা নস্করের দৌরাত্মের সব কিছু খুলে বলে দেবে। দেখবে এক ঢিলে দুই পাখী মরে যাবে। মৈনাকের খুনের তদন্ত যদি একবার খুলে যায় তাহলে সিমোন ধরা পড়বে। আর যদি ধরা না পড়ে তাহলে আমরা নয়নাকে কাজে লাগাবো। বর্তমানে সুমিতা আর সমুদ্রের মৃত্যুর ফলে নয়না খুব ভেঙ্গে পড়েছে। নয়নার যা মনের অবস্থা ওকে সম্পূর্ণ গল্প বানাতে গেলেই গোয়েন্দারা ধরে ফেলবে। আমি নয়নাকে বুঝিয়ে দেব ভালো করে চিন্তা নেই।"

দানা বুঝতে পারে ওর প্রেয়সী সুচতুর এবং বুদ্ধিমতী। নিজেকে বাঁচাতে হলে সত্যির আশ্রয় নেওয়া বিবেচ্য তাতে অনেক সুবিধা। সঙ্গীতার প্রেমিকের খুনিদের ধরা যাবে।

আলোচনা সেরে বাইরে বেড়িয়ে দেখে নয়না ঘুম থেকে উঠে গেছে। চোখ মুখ ভার, চেহারায় ক্লান্তির সাথে সাথে ভীষণ বেদনার ছাপ স্পষ্ট। কাজের মেয়ে চা বানিয়ে আনলে বসার ঘরে ওরা তিনজনে বসে পরবর্তী পদক্ষেপের আলোচনা করে। মহুয়া নয়নাকে পাখী পড়ার মতন জানিয়ে দেয় কি কি বলতে হবে। কখন নয়না ওই বাড়িতে গিয়েছিল কাদের সাথে গিয়েছিল, কে কে এসেছিল। দানাকে ডাকা হয়েছিল সব যেন খুলে বলে পুলিসকে। শুধু মাত্র একটা ছোট ফের বদল করতে হবে এই গল্পে, নয়নাকে জিজ্ঞেস করলে যেন বলে যে দানা আসার কিছু পরেই ওরা ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল। গাড়ি নিয়ে অন্য কোথাও একটু খোলা আকাশের নীচে নিজদের সান্নিধ্য উপভোগ করছিল। শেষের কথা শুনে নয়না চমকে ওঠে। দানার স্ত্রী সত্যি জানে যে ওদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে? তাও এত মাথা ঠাণ্ডা রেখে কি করে মহুয়া ওকে এই সব কথা বলছে? কে এরা, এদের মনে কি কিছু ভিন্ন চক্রান্ত চলছে? মহুয়া আর দানার ঠাণ্ডা হিমশীতল চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই ওদের মনের ভেতরে কি চলেছে।

ঠিক সেই সময়ে রমলার ফোন আসে দানার কাছে। এতদিন পরে রমলার ফোন পেয়ে দানা অবাক হয়ে যায়। ফোন নিয়ে স্টাডিতে চলে যায়। রুহি ততক্ষণে জেগে গেছে। মহুয়া রুহিকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। নয়না চুপচাপ বসার ঘর মাথা ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয়। ওর চোখের জল আর থামতেই চায় না। সব থেকে প্রিয় বান্ধবী আর বুকের ভালোবাসার মৃত্যুতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে।

রমলা ফোন তুলেই দানাকে বলে, "কি করে এই সব হলো?"

দানা অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "কি হলো?"

রমলা চাপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "না জানার ভান করবে না দানা। আমি জানি তুমি বাপ্পা নস্করের খুব কাছের লোক সেই সাথে আবার মোহনের বিশাল প্রকল্প গুলো হাতে পেয়ে গেছ সুতরাং তুমি বিমানের কাছের লোক। এত কিছু হয়ে গেল আর তুমি না জানার ভান করছো?"

চোয়াল চেপে হেসে দানা উত্তর দেয়, "কি চাও তুমি?"

রমলা ফিসফিস করে বলে, "এইবারে ময়দান একদম খালি হয়ে গেছে। দুলাল একবার তোমার সাথে দেখা করতে চায়।"

এতদিনে দুলাল মিত্রের খেয়াল পড়লো? দানা চোয়াল চেপে উত্তর দেয়, "এখন আমার কাছে সময় নেই রমলা। পরে দুলালের সাথে আলোচনা করব এই বিষয়ে। একটু পরেই হয়তো পুলিস গোয়েন্দা সাংবাদিকের ভিড় লেগে যাবে আমার বাড়িতে। ওদের সামনে আমি সব সত্যি কথা বলবো।"

রমলা আঁতকে ওঠে, "কি বলছ তুমি? না না, নয়না ফেঁসে গেলে আমিও ফেঁসে যাবো। গোয়েন্দারা খুঁজে খুঁজে নয়নার সাথে আমার সম্পর্ক বের করে ফেলবে আর....."

দানা চোরা হেসে বলে, "তুমি চুপ থাকো আমিও চুপ থাকবো। শুধু একটা কথা মনে রেখো, কঙ্কনা আর নাসরিন যেদিন এই শহরে পা রাখবে সেইদিন আমি যেন খবর পাই।"

রমলা ওকে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ তাই হবে।"

এমন সময়ে রুহি এসে ওকে বকাঝকা শুরু করে দেয়, "ডিনার করতে আতনি কেন?"

রুহিকে কোলে নিয়ে ওর নরম টোপা গাল চুম্বন করে বলে, "কাল রাতে একটু কাজ ছিল, মা। আজকে আমরা সবাই মিলে ডিনার করবো।"

রুহি মাথা নাড়িয়ে বলে, "আন্তি কাঁদছে কেন?"

রুহি নয়নার সামনে গেছে জানতে পেরেই ওর মাথা গরম হয়ে যায়। দানা কিছুতেই চায় ওই হিংস্র জঘন্য মেয়ের দৃষ্টি কোনোভাবে ওর মেয়ের ওপরে পরুক। কিন্তু কচি রুহিকে কি আর সেইসব কথা বলে বোঝানো যায়? তাই রুহিকে শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেয়, "আন্টির মন খারাপ তাই কাঁদছে। মাম্মা কোথায়?"

রুহি উত্তর দেয়, "মাম্মা আর আন্তি ভেতলে।"

একটার পর একটা ঝড়। এই ঝঞ্ঝা এত সহজে থামবে বলে মনে হয় না। ষড়যন্ত্র ফাঁদার সময়ে এত অঙ্ক কষে দেখেনি দানা। ভেবেছিল নয়নাকে বাঁচিয়ে নিলেই কাজ শেষ, কিন্তু এটা মাথায় ছিল না যে নয়নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আহত নয়না সত্যি বলে দিতে পারে পুলিসের সামনে। মহুয়া পাশে না থাকলে এই যাত্রায় বাঁচা অসম্ভব হয়ে যেত। মনা পিন্টু যথারীতি সময় মতন ওর বাড়িতে চলে আসে। আকরাম, নাসির, শঙ্কর রামিজ সবার ফোনের এক এক করে উত্তর দিতে হয়। ফোনের রিং কিছুতেই আর থামতে চায় না। নয়নাকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারলে শান্তি। রুহিকে নিয়ে ভেতরের ঘরে ঢুকে দেখে নয়নাকে সান্ত্বনা দিয়ে শান্ত করিয়ে দিয়েছে মহুয়া। দানাকে বলে ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে। সেই সাথে আরো জানিয়ে দেয়, এতক্ষণে নিশ্চয় ওর বাড়ির সামনে সাংবাদিকের ভিড় উপচে পড়েছে, সেই গুলো যেন সাবধানে এড়িয়ে যায়। হয়ত পুলিস ওর বাড়িতে পৌঁছে যাবে আর সেই সুত্র ধরেই একদিন দানার বাড়িতে আসবে। তার মধ্যে দানার আর মহুয়া পরবর্তী পরিকল্পনার কথা ভেবে নেবে।

নয়নাকে নিয়ে ওর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় দানা। পথে যেতে যেতে নয়না দানাকে বারে বারে ধন্যবাদ জানায় আর বলে মহুয়া আর দানা না থাকলে রাতেই হয়তো ওর মৃত্যু হত। দানা মনে মনে হাসে, মাছের চারাকে কি কেউ অত সহজে মেরে ফেলে? মাছ ধরার জন্য কেঁচোকে জীবিত রাখতে হয়। নয়না জানিয়ে দেয়, মহুয়ার নির্দেশ মতন যা যা পাখী পড়া ওকে করানো হয়েছে, অক্ষরে অক্ষরে সেই কথা মেনে চলবে। নয়না একদম হাতের মুঠিতে তবে, সেই সাথে দানা এটাও জানে এই ছলনাময়ী আহত নারী যেদিন সুস্থ হয়ে দাঁড়াবে সেদিন খুঁজে খুঁজে সমুদ্র আর সুমিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে। তার আগেই দানাকে সঙ্গীতার ধর্ষণ আর ইন্দ্রাণীর নাম করে হুমকি দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে হবে। নয়না ওর পরিবারের সম্বন্ধেও জেনে গেছে, সুতরাং একবার যদি কোন ভাবে আঁচ পায় যে দানা এই সকল ষড়যন্ত্রের মূলে তাহলে ওকেও ছেড়ে দেবে না। ভবিষ্যতে নয়না যে মোহনের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করবে না সেটা কে বলতে পারে? তবে মোহন এখন নয়নার ওপরে ক্ষেপে, এটাই ওকে কাজে লাগাতে হবে।

নয়নার বাড়ির সামনে প্রচুর সাংবাদিকের ভিড়। গাড়ি থেকে নামতেই ওকে সাংবাদিকেরা ছেঁকে ধরে। "কোথায় ছিলেন আপনি?" "আপনার সেক্রেটারি আর ম্যানেজারের মৃত্যুর বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?" "আপনার সাথে বিমান চন্দের কি সম্পর্ক?" "আপনার সেক্রেটারি আর ম্যানেজার কি ভাবে বিমান চন্দকে চেনে?" "ওদের কে খুন করছে বলে আপনার মনে হয়?" ইত্যাদি প্রশ্নের ঝড় বয়ে আসে ওদের দিকে। দানার একবার মনে হচ্ছিল উত্তর দেয়, "শালা তোদের বাপ মরলে তোরা কি করিস।" কিন্তু চুপচাপ নয়নাকে আগলে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়।







রক্তের খেলা (#১২)

বাড়িতে ঢুকে দেখে, নিতা আর কমলা বুবাইকে আগলে ধরে জুবুথুবু হয়ে বসার ঘরে বসে। বলা ছিল যে রাতে ফিরবে না কিন্তু সকাল থেকে দরজার কলিং বেল আর থামতে চায় না। নয়নার দেহ রক্ষী এতজন মানুষ কে সামলাতে পারেনি।

নয়নাকে পেয়ে ওর ভাই ওকে জড়িয়ে ধরে মাথা দুলিয়ে প্রশ্ন করে, "ওরা কেন? ওরা কেন?"

কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না নয়না। ওকে নিয়ে ভেতরে যেতে বলে দেয়। দানা ওকে বলে সারাদিন যেন বাড়ির বাইরে না বের হয়। হয়ত পুলিস আসতে পারে আর পুলিস আসলে যেমন ভাবে মহুয়া ওকে শিখিয়ে দিয়েছে ঠিক সেই কথা গুলো যেন বলে। বাধ্য মেয়ের মতন নয়না মাথা নাড়ায়।

এমন সময়ে মহুয়ার ফোন, "এই তাড়াতাড়ি বাড়িতে এস। বড়দা আর সাত্যকি বাবু এসেছেন।"

দানার মাথায় বাজ পড়ে। তবে এটা জানে সাত্যকি বাবু যখন বাড়িতে এসেছেন তখন এই সমস্যার সুরাহা কিছু একটা হবে। তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছে যায়। বাড়িতে পৌঁছেই দেখে বসার ঘরে সাত্যকি চ্যাটার্জি আর মহেন্দ্র বাবু বসে।

দানাকে দেখে মহেন্দ্র বাবু স্মিত হেসে প্রশ্ন করে, "কখন ফিরেছিস তুই?"

মহুয়া ওর হয়ে উত্তর দেয়, "রাতেই ফিরে এসেছিল, বড়দা।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি চোরা হাসি দিয়ে বলেন, "শেষ পর্যন্ত আইন হাতে তুলে নিলি?"

সাত্যকি চ্যাটার্জির পাশে বসে দানা ওকে বলে, "বিশ্বাস করুন স্যার, আমি মেয়ের দিব্যি দিয়ে বলছি, আমি আইন হাতে নেইনি। আমার কাছে পিস্তল বন্দুক কিছুই ছিল না।"

মহেন্দ্র বাবু চোরা হাসি দিয়ে দানার দিকে তাকায়। সাত্যকি চ্যাটার্জি জিজ্ঞেস করাতে দানা এক এক করে সব কিছু খুলে বলে তাঁকে। দানা শুধু মাত্র একটা জায়গায় মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বলে রক্তারক্তি কান্ডের আগেই নয়নাকে নিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল সেটা বলে কারন নয়নার আর ওর বক্তব্যে যদি মিল না থাকে তাহলে সমস্যায় জড়িয়ে পড়বে। গুলি খরচ না করেই নিখুঁত ষড়যন্ত্র ফেঁদে সবাইকে একসাথে শেষ করে দেওয়ার কথা শুনে সাত্যকি চ্যাটার্জি বিস্মিত হয়ে যান। দানা সেই সাথে এটাও জানায় যে বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে ওর কাছে প্রচুর তথ্য প্রমান আছে। বাপ্পা নস্কর ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে ফারহানের ওপরে গুলি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

ফোন করে ইন্দ্রনীল আর ভুপেনকে বাড়িতে ডাকে। ইন্দ্রনীল আর ভুপেন, সাত্যকি চ্যাটার্জিকে সব ঘটনা খুলে বলে। নিতাই ভাড়াটে গুন্ডা এনেছিল। ফারহানকে মারার কারন শুনে ক্রোধে ঘৃণায় সাত্যকি চ্যাটার্জির শরীর রি রি করে জ্বলে ওঠে। দাঁতে দাঁত পিষে বলেন এইরকম নিষ্ঠুর দুরাত্মা পাপী লোকের মৃত্যু হওয়া অনেক ভালো।

সঙ্গীতার পাঠান চিপ সাত্যকি চ্যাটার্জির হাতে দানা তুলে দেয়। ওই চিপে, বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে প্রচুর তথ্য প্রমান রয়েছে, সেই সাথে কোন আমলা কোন পুলিস কোন সরকারী অফিসার কবে কোথায় কত টাকা খেয়ে কি কি কাজ করেছে সব কিছু আছে। সাত্যকি চ্যাটার্জি অবাক হয়ে দানা আর মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মহেন্দ্র বাবুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন এতদিন এইসব ওকে কেন জানানো হয়নি। মহেন্দ্র বাবু জানিয়ে দেন, সময় হয়নি তাই জানানো হয়নি। এখন সময় হয়েছে আর সেই সাথে যাদের সরানোর কথা ছিল তারা সবাই সরে গেছে। মহেন্দ্র বাবু বলেন, দানার মাথায় বুদ্ধি আছে। মহেন্দ্র বাবুর কাছে যতদিন কাটিয়েছে ততদিন খালি সময়ে বই পড়ে কাটিয়েছে। সবকিছু শোনার পরে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন সাত্যকি চ্যাটার্জি।

তারপরে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলেন, "সেদিন নাতনি কে দেখতে পেলাম না। কোথায়?" মহুয়া আর দানা স্বস্তির শ্বাস নেয়। মহুয়া ছলছল চোখে সাত্যকি চ্যাটার্জির দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা ব্যাক্ত করে। সাত্যকি চ্যাটার্জি মহুয়ার ছলছল চোখ দেখে বলেন, "কি হলো বৌমা? যাও নাতনিকে নিয়ে এসো, একটু দেখি।"

মহুয়া রুহিকে কাছে ডাকে। রুহি মায়ের আড়াল থেকে জুলুজুলু চোখে মহেন্দ্র বাবু আর সাত্যকি চ্যাটার্জির দিকে তাকিয়ে থাকে।

সাত্যকি চ্যাটার্জি রুহিকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, "তোমার কি খেতে পছন্দ?"

মহুয়ার আড়ালে দাঁড়িয়ে রুহি আদো আদো কণ্ঠে বলে, "চকোলেট।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি হেসে বলেন, "ইসসস রে সোনা, চকোলেট তো আনিনি।"

রুহি পুলিসের উর্দি পরা সাতকি চ্যাটার্জিকে দেখে নালিশ জানায়, "দুত্তু ডাডা, ডিনার করেনি আমাল সাথে।"

সাত্যকি চ্যাটার্জির সাথে সবাই হেসে ফেলে। ওকে খাওয়ানোর সময়ে মাঝে মাঝেই ভয় দেখানো হয়, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও না হলে পুলিস ধরে নিয়ে যাবে। ও জানে পুলিস "দুত্তু" লোকেদের ধরে নিয়ে যায় তাই নালিশ।

সাত্যকি চ্যাটার্জি ওকে হেসে বলেন, "আজকে মাম্মা আর বাবা তোমার সাথে ডিনার করবে। চিন্তা নেই।" তারপরে দানাকে বলেন, "শোন, তোকে একবার আমার সাথে আমার অফিসে যেতে হবে। সেইখানে তোর স্টেটমেন্ট নেব। চিন্তা নেই তোর, তোর গায়ে আঁচ পড়বে না।"

স্বস্তির শ্বাস নেয় দানা আর মহুয়া। পুলিস গোয়েন্দা নিয়ে বড় ভয় ছিল, কখন কোথা থেকে কি সুত্র খুঁজে বের করবে তার নেই ঠিকানা। ওদের অভয় দিয়ে বলেন, ভুপেন আর ইন্দ্রনীল কে ও একবার পুলিস স্টেসানে এসে স্টেটমেন্ট দিতে হবে। আদালতে তিনি সব চেষ্টা করবেন যাতে বাপ্পা নস্করের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। যেহেতু নয়না, বিমান চন্দ আর বাপ্পা নস্করের সাথে জড়িত তাই এখুনি কিছু কথা দিতে পারছেন না, তবে চেষ্টা করবেন নয়নাকে দূরে সরিয়ে রাখতে। দানা সেটাই চায়, একবার পুলিসের হাতে চলে গেলে পুলিস ওর ওপরে নজর রাখবে তাহলে ওর চক্রান্তের কি হবে। মহুয়া আর দানা চোখে চোখে কথা সারে।

মহুয়া মৃদু আবেদন জানায় সাত্যকি চ্যাটার্জির কাছে, "প্লিস একটু দেখবেন। মেয়েটা বড় ভেঙ্গে পড়েছে।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "সত্যি বৌমা, তোমার মন বোঝা বড় মুশকিল। রাতে দানা আর নয়না কি কি করে বেড়িয়েছে সেটা জেনেও?"

মহুয়া মৃদু হেসে বলে, "মেথর যখন পায়খানা পরিস্কার করে তখন কিছুটা গুয়ের ছিটে ওর গায়ে পরে। মেথর যে একেবারে পরিস্কার থাকার চেষ্টা করবে সেটা কিন্তু কখনই সম্ভব নয়। আর এটাই অকাট্য সত্যি।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি হেসে ফেলেন মহুয়ার কথা শুনে, "তুমি অনেক বুদ্ধিমতী আর সহনশীল মেয়ে, বৌমা।" দানার দিকে তাকিয়ে বলেন, "উঠি রে, দেখি কাল অথবা পরশু তোকে অফিসে ডেকে নেব।" রুহির দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন, "পরের বার তোমার জন্য অনেক চকোলেট আনবো।"

সকাল থেকে একবিন্দু স্বস্তির শ্বাস নিতে পারেনি দুইজনার কেউই। বাড়ি ফাঁকা হতেই সোফায় গা ভাসিয়ে দেয় দানা। রুহি ওর কোলে ঝাঁপিয়ে কিছুক্ষণ মারামারি করে।

মহুয়া ওর পাশে বসে বলে, "বাপ রে, একের পর এক ঝড় চলছে।"

দানা মৃদু হেসে বলে, "একটা ঝড় শেষ হলো, এইবারে দ্বিতীয় ঝড়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।"

মহুয়া গলা নামিয়ে ওকে বলে, "তোমার সাথে অনেক কথা আছে।"

দানা ভুরু কুঁচকে ইশারায় জানতে চায়, "কি?"

মহুয়া বলে, "ওই তোমার নয়নার ব্যাপারে। মেয়েটা প্রচন্ড ধুরন্ধর।"

দানা মাথা দোলায়, "জানি।"

মহুয়া বলে, "কি জানো?"

সত্য গোপন করে দানা উত্তরে বলে, "আমার বিরুদ্ধে কিছু একটা চক্রান্ত করেছিল ওরা, এই টুকু জানি।"

মহুয়ার চেহারা সঙ্গে সঙ্গে কঠিন হয়ে যায়, "মেয়েটা সত্যি শয়তানের গ্রহে জন্মেছিল। জানো ওর আসল নাম কি? ওর নাম শায়ন্তনি বসাক।"

দানা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, "তুমি কি করে জানলে।"

মহুয়া ওকে বলে, "কাঁদতে কাঁদতে পাপের পরিতাপ করতে করতে নিজের কথা খুলে বলে আমাকে। ওর ইতিহাস শুনে আমার গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেছিল জানো।"

তারপরে, মহুয়া, নয়না বোসের গল্প দানাকে শুনায়। নয়নার আসল নাম, নয়না নয়, ওর নাম শায়ন্তনি বসাক। ওদের বাড়ি ছিল দূরে খয়রাসোল নামে এক জায়গায়। বাবা, অশোক বসাক রেল ইঞ্জিনের কারখানায় চাকরি করতো, আর মা, মৃদুলা বসাক ছিলেন গৃহিণী। কুড়ি বছর আগে, যখন বুবাই খুব ছোট, হামাগুড়ি পর্যন্ত দিতে জানত না, সেই সময়ে এক সন্ধেতে শায়ন্তনির বাবা, ওর মা আর মায়ের মামাতো ভাই, সুখেনকে খুন করে। শায়ন্তনি তখন বাইরের বারান্দায় ভাইকে নিয়ে পুতুল খেলায় মত্ত ছিল। রক্তাক্ত বাবা ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে ওর ভাইকে তুলে ধরে মেঝের ওপরে ছুঁড়ে মারতে উদ্যত হয়। কচি বাচ্চাটার মাথা ফেটে যায়। ছোট শায়ন্তনি, বাবার এই রুদ্র মূর্তি দেখে ভয় পেয়ে মা'কে ডাক দেয়, কিন্তু ঘরের মধ্যে ঢুকে মায়ের আর দুর সম্পর্কের মামার মৃত দেহ দেখে ভয় সিটিয়ে যায়। ওর বাবা, ওর ভাইকে মেরে ফেলতে যায় তখন একটা দা দিয়ে শায়ন্তনি ওর বাবার হাতের ওপরে বসিয়ে দেয়। শায়ন্তনি তারস্বরে কান্না জুড়ে দেয়। কাটা হাতে ওর বাবা ওইখান থেকে পালিয়ে যায়। ছোট বালিকা শায়ন্তনি ওর অজ্ঞান ভাইকে বুকে ধরে মাথা থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার প্রবল প্রচেষ্টা করে। আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে ওদের সাহায্যের জন্য, সঙ্গে সঙ্গে বুবাইকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শায়ন্তনির দিদা ওদের ভার নিতে চলে আসে। চিকিৎসা করে ডাক্তার ওদের জানায় যে মাথার ঘিলুতে জোর আঘাতের ফলে বুবাই আর পাচজনের মতন সাধারন জীবন যাপন করতে পারবে না।

মায়ের মৃত্যুর পরে আর বাবা পালিয়ে যাওয়ার পরে, শায়ন্তনি আর বুবাই দিদার সাথে, নুরপুরে মামাবাড়িতে চলে আসে। মামা মামির লাথি ঝেঁটা ইত্যাদি সহ্য করে বুবাইকে কোলে আঁকড়ে ধরে বাঁচার পথ খোঁজে। ওর দিদা ওকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল, তাই দশ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনা করতে পেরেছিল। দিনে দিনে বুবাই বড় হল আর শায়ন্তনি বুঝতে পারল যে ওর ভাই মন্দবুদ্ধি।

সব থেকে বড় বাধা মায়ের পেটের ভাই, বুবাই। ছোট বেলায় মায়ের বুকের দুধ পায়নি, রোজ রাতে দিদির বুকে মায়ের স্তন খুঁজতে চেষ্টা করত। ছোট শায়ন্তনি কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিত, কিন্তু ওর করার কিছু ছিল না। একটু দুধ পেলে নিজের বুকের মধ্যে লাগিয়ে ভাইয়ের মুখে ধরতো, সেই দুধ টুকু চেটে খেয়ে মনের সুখে দিদিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়তো বুবাই। দিন দিন যত বড় হল তত একা একা হয়ে গেল, কেউ ওর সাথে খেলে না, কেউ ওর সাথে কথা বলে না। কিন্তু শায়ন্তনি ভাইকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না। দিদিকে ওর পাশে চাই, বড় হলেও ওর সেই স্তন থেকে দুধ খাওয়ার নেশা আর ছাড়ানো গেল না। ধীরে ধীরে বুবাই যত বড় হলো, তত ওর আবদার বেড়ে উঠল। শায়ন্তনির দেহে তখন ভরা যুবতীর লক্ষন। আড়ালে নিজের উধভিন্ন যৌবনা কচি স্তন খুলে দুধে মাখিয়ে যুবক বুবাইয়ের মুখে ধরতে হতো তবে ওর ভাই ঘুমাতো। দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে সদ্য যুবতী শায়ন্তনির শরীরে যৌবনের সুখের হাতছানি মাঝে মাঝেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো। আর সেই সময়ে শায়ন্তনি প্রেমে পড়ল, নুরপুর গ্রামের একটা ছেলের সাথে। ছেলেটা ওর স্কুলেই পড়তো।

দশ বছর পরে, দিদা মারা যেতেই ওর মামা মামি অত্যাচার ওর ওপরে অনেক বেড়ে ওঠে। এক রাতে পাশের বাড়ির একটা মেয়ের সাহায্যে মামা মামির খাবারের সাথে ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলে। তারপরে নিশুতি রাতে, নিজের ব্যাগ কাঁধে চাপিয়ে, ছোট ভাইয়ের হাত ধরে অজানা পথের দিকে পাড়ি জমায় শায়ন্তনি। নিরুদ্দেশের পথে এক নাম না জানা ট্রেনে উঠে পরে। শায়ন্তনির তখন বাড়তি বয়স, চাপা জামা ওর ফুলের কুঁড়ির মতন কচি দেহ পল্লবকে ঠিক ভাবে ঢেকে রাখতে অখম। ভিড় ভর্তি ট্রেনে অনেকেই ওর দিকে জুলুজুলু ক্ষুধার্ত চোখে তাকিয়ে।

সেই ট্রেনে সমরেশ নামের একজন বয়স্ক ভদ্রলোক শায়ন্তনিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। ভাইকে নিয়ে মৃত্যুর চেয়ে অজানা পথে পাড়ি দেওয়া সঠিক বলে মনে হয় তখন। খিদেতে পেট জ্বলছে, হাতে পয়সা কড়ি নেই, তাই কিছু না ভেবেই পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব সমরেশের সাথে ওর বাড়িতে আসে। সমরেশে ওকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়, বাড়ির কাজের সাথে সাথে পড়াশুনা আর ভাইকে দেখা। দেখতে সুন্দরী, ফর্সা, ঠিক মায়ের গায়ের রঙ আর বাবার সৌন্দর্য পেয়েছিল শায়ন্তনি। বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনায় বেশ ভালো ছিল, ইচ্ছে ছিল আরো পড়াশুনা করার। সমরেশ বাবু বিপত্নীক, তাই বাড়ির সব কিছুতে ওদের অধিকার ছিল। সমরেশ বাবু সৌখিন মেজাজের লোক ছিলেন, বাড়িতে মদের আসর, লাস্যময়ী নারীদের নিয়ে কাম কেলির আসর বসতো। মাঝে মাঝেই পারলে শায়ন্তনিকে কাছে ডেকে গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেন, এদিক ওদিকে ছুঁয়ে একটু আদর করে দিতেন। শায়ন্তনির খারাপ লাগতো, কিন্তু মুখ বুঁজে সহ্য করে থাকতো। একরাতে সমরেশ বাবু প্রচুর মদ খেয়ে শায়ন্তনিকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। বুবাই চেঁচিয়ে উঠে মারতে আসে সমরেশ বাবুকে। উল্টে সমরেশ বাবু, বুবাইয়ের চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে ফেলে এলো পাথারি কিল চড় লাথি মারতে শুরু করে দেয়। সেই দেখে শায়ন্তনির মাথায় রক্ত চড়ে যায়, হাতের কাছে একটা ফুলদানি দিয়ে মাথার মধ্যে জোরে মারতেই, মাথা ফেটে যায় সমরেশ বাবুর। টলতে টলতে বারান্দা দিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু ঘটে। সবাই ভাবে, সমরেশ বাবু মদের ঝোঁকে বারান্দা থেকে পড়ে মারা গেছে।

বালিকা শায়ন্তনি আর সেই কচি বালিকা নেই, ইতিমধ্যে ওর শরীরে মাদকতাময় সৌন্দর্যের দেখা দিয়েছে। সমরেশ বাবু মারা যাওয়ার পরে ওর এক ফটোগ্রাফার বন্ধু, আদিত্য ওকে কাজের অছিলায় নিজের বাড়ি নিয়ে যায়। এক রাতে আদিত্য, শায়ন্তনিকে নিজের স্তন খুলে ভাইকে দুধ খাওয়ানোর দৃশ্য দেখে ফেলে। উদ্ভিন্ন যৌবনা ভীষণ সুন্দরী শায়ন্তনিকে দেখে, আদিত্য নিজের কামক্ষুধা আর সংবরণ করতে পারে না। একাকী ঘরের মধ্যে বন্ধে করে ওর সতীত্ব হরন করে। তবে ওর নারী সুখের বদলে আদিত্য ওকে সামান্য এক মেয়ে থেকে, মডেলিংয়ের পথ দেখিয়ে ছিল। শায়ন্তনি আর বুবাইকে নিয়ে আদিত্য এই মহানগরে আসে। প্রতিরাতে আদিত্যকে শারীরিক সুখ দিত শায়ন্তনি, আর দিনের বেলা আদিত্য ওকে নিয়ে বিভিন্ন মডেলিং এজেন্সির কাছে নিয়ে যেত। শায়ন্তনি নিজের নাম বদলে নয়না বোস হয়ে উঠল। একটু আধটু অভিনয় করতে পারতো নয়না, সেই দেখে আর প্রডিউসারের সাথে শুয়ে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট রোল পেয়ে গেল। এক রাতে মদের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আদিত্যকে মেরে ফেললো।

নিজের ইতিহাস মুছে শায়ন্তনিকে সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিল নয়না বোস। যুবতী শায়ন্তনির মৃত্যুর পরে, সেই নারী হয়ে উঠল উদ্ভিন্ন যৌবনা লাস্যময়ী নয়না বোস। এই ঝকমকে দুনিয়ায় বাঁচতে হলে এক অবলা নারীকে নিজের শরীর সম্বল করেই বাঁচতে হবে। তারপরে আর পেছনে তাকায়নি নয়না। প্রডিউসার, ডাইরেক্টারের সাথে শুয়ে বসে নিজের কাজ হাসিল করেছে।

বছর চারেক আগে একটা পার্টিতে বাপ্পা নস্করের সাথে দেখা হয়। বাপ্পা নস্কর ওকে বড় নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। এতদিন শুধু শরীর দিয়ে ছোট ছোট রোল পেত, বাপ্পা নস্করের গুন্ডামির হুঙ্কারে বেশ কয়েকটা বড় রোল পেয়ে গেল। পেটে বিদ্যে ছিল, আর অভিনয় ভালোই করতে পারতো, নয়নাকে তাই আর পিছনে তাকাতে হলো না। ধীরে ধীরে নয়না নামকরা এক অভিনেত্রী হয়ে গেল। তবে বাপ্পা নস্কর ওকে বিশেষ টাকা দিয়ে সাহায্য করতো না, বরং ওকে স্বপ্ন দেখাত একদিন ওকে রাজনীতিতে নামাবে। কিন্তু চার বছর পরেও নয়নাকে রাজনীতিতে নামায়নি। নয়নার ইচ্ছে ছিল অভিনয় ছেড়ে রাজনীতি করার। যৌবন যতদিন ততদিন অভিনয়। বড় জোর দশ বারো বছর কাজ করা যায়, তারপরে বয়স হলে বয়স্ক অভিনেত্রীদের কেউ চিনতে চায় না। রাজনীতি করলে সারা জীবনের জন্য টাকা কামানো যাবে। বিমানের সাথে হাত মিলিয়ে বাপ্পা নস্করকে সরানো চক্রান্ত করে, কিন্তু দানা ওর ওপরে গুপ্তচর গিরি করাতে সেটা আর সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। বাকি কথা দানা ভালো ভাবেই জানে।

সবকিছু শোনার পরে, দানা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। মহুয়া ওকে বলে, "এইবারে বুঝলে নয়না কত সাঙ্ঘাতিক মেয়ে। ওর প্রান ভোমরা ওর ভাই বুবাই। সুমিতা আর সমুদ্রকে ছাড়া এই জগতে আর কাউকে বিশ্বাস করতো না। এখন নিরুপায় তাই পরিতাপে আমাকে খুলে সব বলে দিল। সুমিতা, ওর মামা বাড়ির পাশের বাড়ির মেয়ে, যে ওকে ওর মামা মামিকে মারতে সাহায্য করেছিল। আর সমুদ্র সেই ছেলে যাকে ছোটবেলায় ভালোবেসে ছিল।"

"শায়ন্তনি" যে সমুদ্রের "শায়নি" সেটা এইবারে দানার কাছে পরিস্কার হয়ে গেল। দানার বুঝতে বাকি রইলো না যে এক আহত সাপের গর্তে মাথা ঢুকিয়েছে। নয়না ভেঙ্গে পড়েছে বটে, তবে উঠে দাঁড়ালে ওদের ছোবল মারবেই এই ধূর্ত ছলনাময়ী মহিলা।

সব কিছু শোনার পরে দানা খানিক চিন্তা করে ওকে বলে, "নয়না একটা আহত সাপ, পাপড়ি। বর্তমানে একটু বেকায়দায় পড়ে গেছে তাই ছোবল মারতে দেরি হবে। গতকাল রাত্রে আমি ওই বাড়িতে শুনেছি যে বিমান আর মোহন খৈতান আমার বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত করেছিল। ওরা তোমাকে আর রুহিকে অপহরন করার চক্রান্ত করেছিল।"

কথাটা বলার সময়ে দানার গলা কেঁপে ওঠে। সেই সাথে ভীষণ ক্রোধে আর বিস্ময়ে মহুয়ার চোখ ফেটে জল চলে আসে।

দানা বলে চলে, "এর পেছনে নিশ্চয় সিমোনে আর নয়নার মাথা আছে। বাপ্পাকে কি ভাবে মারা হবে সেটার ছক আসলে নয়না একসময়ে আমাকে বলেছিল, আর সিমোনের ছকেই কিন্তু সঙ্গীতার বদলে মৈনাকের মৃত্যু হয়েছে। সুতরাং এরা যেদিন জানতে পারবে বিমান, সমুদ্র আর সুমিতার মৃত্যুর পেছনে আমাদের মাথা কাজ করেছে, তাহলে আমাদের শেষ করে দেবে।"

মহুয়া দাঁতে দাঁত পিষে দানাকে বলে, "ওকে ওইখানে শেষ করে দিয়ে এলে না কেন?"

দানা মাথা চুলকে বলে, "তুমি বারন করেছিলে, তাই।"

একবার ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে দেখে দানার হাত শক্ত করে ধরে বলে, "এখন কি করা যায় বলো তো?"

একটু খানি ভেবে বলে, "আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আছে। বর্তমানে নয়না খুব ভেঙ্গে পড়েছে আর তুমি ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছ। মোহন আর সিমোন এই সুযোগ নিতে চেষ্টা করবে, তার আগেই আমি যদি ওর পাশে ভালো বান্ধবীর মতন গিয়ে দাঁড়াই তাহলে নয়না বুকে বল পাবে। আর তখন দেখবে, ওকে ধরার জন্য মোহন হাঁসফাঁস করছে। সেই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে জিত।"

পরামর্শটা বেশ লাগে দানার, সেইসাথে মহুয়াকে পরামর্শ দেয় যেন খুব সাবধানে মেপে মেপে কথা বলে ওর সাথে।




********** পর্ব চোদ্দ সমাপ্ত **********







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment