CH Ad (Clicksor)

Tuesday, April 28, 2015

মহানগরের আলেয়া_Written By pinuram [পনেরো - রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (০৩ - ০৪)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram




পনেরো

রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#৩)

ল্যাপটপ খুলে ইন্টারনেটে ফোন নাম্বার পরীক্ষা করাতে দেখে এটা একটা বাইরের দেশের নাম্বার। সেই দেখে দানা আর মহুয়া আরো বেশি আশ্চর্য হয়ে যায়। নিশ্চয় নিজেদের আসল পরিচয় গোপন করার জন্য এই সব ব্যাবস্থা। এই অ্যানুয়াল মিট যখন পরের দিনেই অনুষ্ঠিত হবে তখন নিশ্চয় বাইরের দেশে হবে না, এই দেশেই হবে যেখানে ক্লাবের সদস্যরা অতি সহজে যেতে পারে। সাতপাঁচ ভেবে শেষ পর্যন্ত আমন্ত্রন পত্রের নীচে লেখা ফোন নাম্বারে ফোন করে দানা। বেশ কিছুক্ষণ ফোন বেজে যাওয়ার পরে ওইপাশে একজন অল্প বয়স্ক মেয়ের কণ্ঠ স্বর শোনা যায়।

দানা জিজ্ঞেস করে, "রেড এন্ড ব্লু ক্লাব?"

মেয়েলী কণ্ঠের উত্তর আসে, "কাকে চান?"

দানা খানিক ইতস্তত করে গম্ভীর কণ্ঠে আবার প্রশ্ন করে, "রেড এন্ড ব্লু ক্লাব?"

গম্ভির গলায় উত্তর আসে ওই পাশ থেকে, "দুঃখিত ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন।" বলেই মেয়েটা ফোন রেখে দেয়।

দানা হতাশ হয়ে যায়। এই ক্লাবে কিছু করে হোক ওকে যেতেই হবে, নাহলে কঙ্কনা আর নাসরিনের হদিস পাওয়া যাবে না। দানা আমন্ত্রন পত্র আবার দেখে, সঠিক নাম্বারেই ফোন করেছিল তাও কেন মেয়েটা ভুল বলছে? এইবারে ঠিক করে যে, আর জিজ্ঞেস না করে সোজা সুজি কথা বলবে। ঠিক সেই সময়ে ওই নাম্বার থেকে দানার কাছে ফোন আসে। মহুয়া ওকে ফোন উঠাতে বলে।

দানা ফোন উঠাতেই ওইপাশের নারী কণ্ঠ ওকে জিজ্ঞেস করে, "আপনার কোন রঙ, কার্ড নাম্বার কত?"

সঙ্গে সঙ্গে মহুয়া লাল কার্ড খানা দানার হাতে ধরিয়ে দেয়। দানা ফোনে উত্তর দেয়, "কার্ডের রঙ লাল, কার্ড নাম্বার ওয়ান নাইন সিক্স টু জিরো ফোর টু ফাইভ।"

মেয়েটা জিজ্ঞেস করে, "পাসওয়ার্ড?"

দানা কপাল ঠুকে সাদা কাগজে লেখা নম্বরটা বলে দেয়, "ফোর নাইন টু সিক্স।"

মেয়েটা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে হেসে ফেলে, "আচ্ছা আপনি (বলেই হেসে ফেলে)। তাহলে ওই ভাবে প্রশ্ন করতে গেলেন কেন? মস্করা করার ইচ্ছেটা আপনার সত্যি গেল না দেখছি। কিন্তু এইবারে আপনার গলা কেমন যেন শোনাচ্ছে। বেশ সুস্থ সবল, বয়স কমিয়ে ফেলেছেন নাকি?"

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, বুকের ভেতরে দুমদুম করে দামামা বেজে চলেছে। ভেবেছিল হয়ত ধরা পরে যাবে। কিন্তু ওইপাশের মেয়েটা ওকে লোকেশ ভেবেই কথা বলছে। মহুয়া ওকে ইশারায় জানায় উত্তেজনা দমিয়ে একদম সাধারন ভারী কণ্ঠে কথাবার্তা বলতে। নির্দেশ মতন দানা অন্যপাশের মেয়েটাকে বলে, "না মানে বেশ সুস্থ বোধ করছি তাই হয়তো আমার গলা ওই রকম শুনাচ্ছে। তাহলে কাল বিকেলে দেখা হচ্ছে।"

মেয়েটা হেসে বলে, "কি যে বলেন না আপনি। না না আমি কেন যাবো। আপনাদের জন্য প্রচুর নীল কার্ডের মেয়েরা রয়েছে। তাহলে আপনার নাম্বার লিস্টে লিখে ফেলি, ফাইনাল তো?"

দানা মুচকি হেসে জানায়, "হ্যাঁ করে ফেলুন।"

দ্বিধা বোধ জাগে, মেয়েটাকে কি সমাগমের জায়গা জিজ্ঞেস করা উচিত? জিজ্ঞেস করলে ধরা পরে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা আছে তাই এড়িয়ে যায় সেই প্রশ্ন।

মেয়েটা হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, "আপনি এইবারে কোন নীল কার্ড নিয়ে আসছেন কি?"

নীল কার্ড মানে? কিন্তু না জেনেও জানার ভান করে উত্তর দেয়, "না না, কোন নীল কার্ড সাথে নেই।"

মেয়েটা হেসে ফোন রেখে দেয়। দানার দৃঢ় বিশ্বাস এই ক্লাবে গেলে কঙ্কনা আর নাসরিনের হদিশ পাওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত এই মিট কোথায় হবে সেটা জানা গেল না। নীল কার্ডের কি অর্থ সেটা জানা গেল না। হাতে মাত্র একদিন সময়, এমনিতে রাত হয়ে গেছে, এখুনি কি পরিকল্পনা করা যায় ওদের বিরুদ্ধে।

দানা একটু ভেবে বলে, "নয়নার কাছে এর উত্তর পাওয়া যাবে। ওর বাড়ি একবার গেলে কেমন হয়?"

মহুয়া মানা করে দেয় দানাকে, "এতদিন দেখা পর্যন্ত করতে যাওনি আর এইরাতে হঠাৎ করে যাবে? রুহির কাল প্রথম স্কুল, আমাদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তুমি সোজা নয়নার বাড়িতে চলে যেও। এত ভেবো না, কাল বিকেল পর্যন্ত সময় আছে। কিছু একটা পরিকল্পনা করা যাবে।"

রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে, দানা স্টাডিতে বসে সিগারেট টানতে টানতে লাল কার্ড আর চাবি হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। এই কার্ডে লেখা নাম্বার আর কাগজে লেখা সংখ্যার রহস্য জানা গেল। রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের বার্ষিক যৌন সঙ্গমের সমাগম কোথায় হবে সেটা জানা যায়নি। এক কালে কঙ্কনা বলেছিল এই ক্লাবে এক রাতে এক লাখ টাকা আয় করা যাবে। ওইদিকে নয়নার মুখে শুনেছিল এইবারে নাকি চল্লিশ লাখ টাকা চায়। চারদিকে টাকার ছড়াছড়ি। কিন্তু এই চাবিটা কিসের? দেখে মনে হচ্ছে কোন তালার চাবি হয়ত কোন লকারের। সেই লকার কোথায়?

এই খবর একমাত্র নয়না ওকে দিতে পারবে। রাত অনেক হয়ে গেছে, এত রাতে নয়নাকে কি ফোন করা ঠিক হবে? এই সব আলোচনা সামনা সামনি হওয়া ভালো। হাতে সময় খুব কম, একটা দিন ও হাতে নেই।

পরের দিন আবার রুহির স্কুল, সকালে দাঁত মাজার সময়ে উভয়সঙ্কটে পড়ে যায় দানা। শেষ পর্যন্ত সিগারেট টেনে কমোডে বসে ঠিক করে আগে মেয়ের স্কুল তারপরে বাকি সব কাজ। মহুয়া রুহিকে ঘুম থেকে তুলতে ব্যাস্ত, এমনিতে রোজদিন দেরি করে ওঠে কিন্তু প্রথম দিন স্কুল যাবে তাই লাফাতে লাফাতে সকাল সকাল উঠে পড়েছে। নতুন স্কুল ড্রেস, মাথায় দুটো ঝুঁটি বাঁধা, সাদা ছোট জামা আর লাল কালো ডোরা কাটা স্কার্টে মেয়েকে দেখে মহুয়া প্রায় কেঁদে ফেলে। স্কুলের গেট পর্যন্ত ছেড়ে দিতে যায় দানা আর মহুয়া। রুহির বেশ আনন্দ স্কুল যাবে, কিন্তু বেচারি এটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে মাম্মা আর ডাডা ওর পাশে থাকবে না। যেই স্কুলের ম্যাডামের হাতে ওকে ধরিয়ে দেওয়া হয় সেই কান্না জুড়ে দেয়, আর রুহি কিছুতেই ভেতরে যাবে না। পা দাপিয়ে, স্কুল মাথায় করে তুলে ধরে। অবশ্য রুহি একা নয় ওই বয়সের আরো অনেক বাচ্চারাই এটা করে। তবে নিজের মেয়ের কান্না দেখে কি আর থেমে থাকা যায়, মহুয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে, একবার ভাবে না আজকে না হয় নাই বা গেল আগামী কাল থেকে যাবে।

নার্সারির ম্যাডাম ওকে বুঝিয়ে বলে, "একদিন আপনাকে ছাড়তেই হবে, সেটা আজ। আপনি বাড়ি যান।"

রুহি কিছুতেই মায়ের আঁচল ছাড়বে না। মহুয়া ওর ক্লাসের ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করে, "আমি একটু বসতে পারি।"

ওর ম্যাডাম মাথা দুলিয়ে বলে, "দুঃখিত ম্যাডাম। প্রথম দিন সব বাচ্চাই এমন করে, একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।"

মহুয়ার পা আর নড়ে না, দানার পাশ ঘেঁসে চুপচাপ ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে থাকে। দানা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের পুরানো দিনে হারিয়ে যায়। ওর মা কাজে বেড়িয়ে যাওয়ার সময়ে মায়ের আঁচল ধরে থাকত, কিছু করার ছিল না তখন। ওই বস্তির অলি গলির মধ্যে কুকুর বেড়ালের সাথেই খেলা করতো দানা আর ওর মা কাজে বেড়িয়ে যেত। রুহিকে অন্তত এঁদো বস্তির পুতিময় অলি গলিতে ছেড়ে ওরা যাচ্ছে না। রুহির ম্যাডাম ওকে নিয়ে চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে মহুয়া ওকে জানিয়ে দেয় যে প্রথম দিনে এই স্কুলেই বসে থাকবে। দানা ওকে মানা করে না তবে মনাকে বলে যায় একটু নজর রাখার জন্য।

যদিও মহুয়াকে একলা ছাড়তে একদম ইচ্ছে নেই তাও ওকে একা ছেড়ে নয়নার বাড়ির দিকে যাত্রা করে। হাতে সময় খুব কম, ওর দৃঢ় বিশ্বাস এই সমাগমে নিশ্চয় কঙ্কনা আর নাসরিন আসবে। তার খবর হয়ত নয়না দিতে পারবে না কিন্তু কিছু সাহায্য হয়তো করতে পারবে বলে ওর বিশ্বাস। যদিও নয়নার সামনে দাঁড়ালে ওর মাথার ঠিক থাকবে কি না সেটা সন্দেহের ব্যাপার তাও মহুয়া ওকে বারেবারে শান্ত থাকতে অনুরোধ করে।

এত সকালে দরজায় দানাকে দেখে নয়না বিস্মিত হয়ে যায়। ওই রাতের ঘটনার পরে আর দানার সাথে দেখা হয়নি অথবা কথাও হয়নি। কারন অবশ্য নয়নার অজানা নয়। হয়তো সেই বোঝা পড়া করার জন্যই এসেছে। বসার ঘরে ঢুকে চোখ চোখ রেখে কিছুক্ষণ কঠোর চাহনি নিয়ে নয়নাকে পর্যবেক্ষণ করে দানা। ওই কঠিন ধারালো দৃষ্টির সামনে দাঁড়াতে কুণ্ঠিত বোধে কুঁকড়ে যায় নয়না।

কুশল আদান প্রদানে সময় নষ্ট না করে সোজা বিষয়ে চলে আসে। দানা গম্ভীর কণ্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করে, "রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের বিষয়ে কি জানো তুমি?"

অবাক নয়না পাল্টা প্রশ্ন করে, "তুমি ওই ক্লাবের বিষয়ে কি করে জানলে?"

নয়নার চোখে চোখ রেখে দানা জিজ্ঞেস করে, "যা প্রশ্ন করছি তার সঠিক উত্তর দাও, নয়না।"

নয়না নিরুপায়, জানে ওর সামনে একটা ক্ষুধার্ত সিংহ বসে এর সামনে একটু এদিক ওদিক করলে ওর মাথা ধড় থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে। তাই পাশে বসে রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের বিষয়ে বলতে শুরু করে, "দেখো দানা, এই ক্লাব গুটি কয় উচ্চবিত্ত ধনী কামুক নর নারী কাম সহবাসের সমাগম। এই ক্লাবের সদস্যরা বেশির ভাগ পুরুষ আর বেশ কয়েকজন নারী, সব মিলিয়ে তিরিশ জনের মতন হবে। এদের বার্ষিক একটা সেক্সুয়াল মিট হয় তবে সেটা আর বার্ষিক নয়। এই সেক্সুয়াল পার্টি মিট গত দুই বছরে তিন চার মাস অন্তর অন্তর হয়ে থাকে। এই বছর কিছু কারনে হয়তো হয়নি। সেই কারন আমার অজানা। এই ক্লাবের নাম রেড এন্ড ব্লু এই জন্য কারন সদস্যদের কার্ডের রঙ লাল আর যে ছেলে মেয়েদের টাকা দিয়ে ওইখানে যৌন সঙ্গমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তাদের কার্ডের রঙ নীল। লাল কার্ডের সদস্যরা সবাই লাল রঙের মুখোশ আর লাল রঙের জাঙ্গিয়া অথবা প্যান্টি পরে ঘুরে বেড়ায়। নীল রঙের কার্ডের সদস্যেরা সবাই কোন অভিনেত্রী, অথবা মডেল অথবা সুঠাম স্বাথ্যবান কম বয়সী পুরুষ হয়। তাদের বাজুতে একটা নীল রঙের ফিতে আটকানো থাকে তাছাড়া অঙ্গে কোন বস্ত্র থাকে না। আমি এই ক্লাবের নীল রঙের কার্ডের অধিকারী। এই সমাগম কোথায় অনুষ্ঠিত হয় সেটা নীল কার্ডের লোকেরা জানে না। কারন সব নীল রঙের কার্ডের ছেলে মেয়েদের চোখে কাপড় বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। বাড়িতে ঢুকানোর পরেই আমাদের চোখের কাপড় খোলা হয়। আবার সকালে আমাদের চোখে কাপড় বেঁধে বের করে নিয়ে আসা হয়। লাল কার্ডের সদস্যদের কি নিয়ম তাও সঠিক ভাবে জানা নেই। খুব গোপন ভাবে নিজেদের আসল পরিচয় বাঁচিয়ে এরা সবাই এক রাতের জন্য প্রচন্ড যৌন সঙ্গমের খেলায় মেতে ওঠে। উলঙ্গ নর নারীরা মদ খেয়ে, ড্রাগস নিয়ে সারা রাত ধরে বিভিন্ন ভাবে যৌন ক্রিড়া করে চলে। সবার নানান ধররনের পছন্দ অপছন্দ। কারুর চাই কচি বাচ্চা মেয়ে, কারুর চাই সুন্দরী মেয়ে, কোন ছেলের আবার ছেলে চাই, কোন মেয়ের আবার মেয়ে চাই, কেউ চায় ভারজিন, কেউ একটু কড়া ধরনের সেক্স চায়। নীল কার্ডের মেয়েদের যোনি মেলে শুয়ে থাকতে হয়, এক রাতে কয়জনে ওর সাথে সঙ্গমে মত্ত হবে তার ইয়াত্তা নেই। কোন মানুষ কোন ফুটোতে কি ঢুকাবে সেটাও জানা নেই। হয়ত একটা মেয়ের সাথে একসাথে চার পাঁচ জন মিলে সেক্স করছে। কেউ পাছায়, কেউ মুখে, কেউ যোনিতে, কেউ বুকের ওপরে চড়ে। এর জন্য কয়েক লক্ষ টাকা দেয় ওরা। তবে একজন লাল কার্ডের সদস্যকে আমি চিনি যে আমার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। বিত্ত মন্ত্রালয়ের সচিব মিসেস রাগিণী ভৌমিক। দুঃখিত দানা এই ছাড়া আমি আর কোন খবর তোমাকে দিতে পারছি না।"

দানা সব শুনে চুপ করে থাকে তারপরে জিজ্ঞেস করে, "এইবারের এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের সমাগম কোথায় অনুষ্ঠিত হবে সেটা জানো?"

নয়না মাথা নাড়ায়, "না গো জানি না। লাল কার্ডের সদস্য ছাড়া এই সমাগম কোথায় অনুষ্ঠিত হবে সেটা কেউ জানে না। আর এইবারে আমি এই সমাগমে যাচ্ছি না দানা। কিন্তু তুমি কেন জানতে চাইছো?"

দানা বাঁকা হেসে বলে, "এই ক্লাবের নাম আমি বেশ কয়েক জনার মুখে শুনেছি, এমনকি একদিন তোমার মুখেও শুনেছিলাম নয়না।"

নয়না অবাক হয়ে যায়, দানা ওকে বলে, "এই ক্লাবের এইবারের মিট কোথায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেটা জানা খুব দরকার। তুমি বললে যে নীল রঙের কার্ডের সদস্যদের চেহারা মুখোশে ঢাকা থাকে না, তার মানে তাদের তুমি চেন। ঠিক কি না? তোমার জানা শোনা কেউ থাকলে ফোন করে দেখ কে যাচ্ছে এইবারের সমাগমে।"

নয়না প্রশ্ন করে, "কিন্তু সেও জানবে না দানা, তাহলে?"

দানা স্মিত হেসে বলে, "তাকে জানতে হবে না শুধু মাত্র কে যাচ্ছে সেই খবর দাও। তার পরের পরিকল্পনা আমার। আমি ঠিক খুঁজে চলে যাবো।"

নয়না ওকে বলে, "দানা, এই জায়গা খুব সাঙ্ঘাতিক। যেহেতু এই সমগম খুব গোপনে অনুষ্ঠিত হয় তাই এই ক্লাবের সদস্যেরা বেশ কড়া নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করে। এই ক্লাবের সদস্যরা সবাই সমাজের উচ্চবিত্ত প্রতিপত্তিশালী ধনী মানুষ। নিজেদের পরিচয় আর গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য অনেক কিছুই এরা করতে পারে। নিরাপত্তা রক্ষীরা সবাই বাইরে থেকে ভাড়া করে আনা। কালো পোশাকে হাতে খোলা বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ওদের এই জায়গার আশেপাশে কোন সন্দেহ ভাজন ব্যাক্তি দেখলে মেরে ফেলতে কুণ্ঠিত বোধ করবে না। সাবধান দানা।"

দানা মাথা দুলিয়ে বলে, "এই সমাগমে আমাকে যেতেই হবে নয়না। তুমি শুধু মাত্র এই খোঁজ লাগাও তোমার চেনাজানা কে এইবারের সমাগমে যাচ্ছে বাকিটা আমার ওপরে ছেড়ে দাও।"

নয়না প্রশ্ন করে, "কিন্তু এত বড় ঝুঁকি নিয়ে কেন যেতে চাইছো?"

দানা হিমশীতল কণ্ঠে জবাব দেয়, "দরকার আছে। এক নয় তুমি ফোন করে রাগিণীকে বল যে তুমি যাবে না হয় তুমি খবর লাগাও কে কে যাচ্ছে। তাদের সাথে একবার দেখা করা খুব জরুরি আমার।"

এই সমাগমে যাওয়ার মতন মানসিক অবস্থা নয়নার নেই কিন্তু দানাকে মানা করতে পারে না কিছুতেই। গত বারের মধ্যে যাদের নয়না চিনতে পেরেছিল তাদের এক এক করে ফোন করে। বেশির ভাগ ছেলে মেয়েদের এই বারে আমন্ত্রন জানানো হয়নি। প্রত্যেক বার যেমন এই ক্লাবের সমাগমের জায়গা বদল হয় ঠিক তেমনি দুই তিন বছর অন্তর অন্তর ছেলে মেয়েদের বদলে দেওয়া হয়। একজন কে বেশি বার ডাকা হয়না কখন, তবে নয়না এবং বেশ কয়েকজন ব্যাতিক্রম, প্রায় আট নয় বার এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের যৌন সমাগমে গেছে। অনেক ফোন করা পরে শেষ পর্যন্ত এক উঠতি টিভি অভিনেত্রী, রিচা দত্ত নয়নাকে খবর দেয় তাকে এই ক্লাবে ডাকা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, বিকেল চারটে নাগাদ ওর বাড়ির সামনে একটা গাড়ি আসবে আর সেই গাড়িতে করে ওকে নিয়ে যাওয়া হবে। এর চেয়ে বেশি আর কিছু জানে না। রিচা দত্তের জন্য এইবার প্রথম, একটু ভয় ভয় করছে কিন্তু ওই সমাগমের জন্য ওকে অনেক টাকা দেওয়া হচ্ছে। জানায় এক রাতের জন্য ওকে কুড়ি লাখ টাকা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দশ লাখ দেওয়া হয়েছে আর বাকি টাকা পরেরদিন সকালেই ওর একাউন্টে চলে আসবে বলে কথা দিয়েছে।

মহুয়ার দৌরাত্মে মাঝে মাঝে হিন্দি বাংলা টিভি সিরিয়াল দেখা হয়ে যায় আর মেয়ের আবদারে "কারতুন"। দানার হাতে টিভির রিমোট খুব কম থাকে। রুহির কাছ থেকে রিমোট চাইলে নাক মুখ কুঁচকে আদর করে বলে, "ইত্তু কারতুন তা-পয়ে দেব।" আর মহুয়ার সময়ে চাইলে, ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "আমার সিরিয়াল গুলো দেখার সময়ে তোমার যত রিমোটের কথা মনে পড়ে যায় তাই না। তুমি যখন ওই বাঘ সিংহ দেখ তখন মানা করেছি? কি একটা লোক বন বাদারে ঘুরে বেড়ায় পচা উঠের মাংস খায়, জ্যান্ত টিকটিকির মাথা ছিঁড়ে খায়। মাগো অয়াক অয়াক, সেই সব তুমি গোগ্রাসে গিলতে পারো। কেমন ছেলে গো তুমি? এখন পাবে না একদম।" ব্যাস দানার টিভি দেখার যবনিকা পাত।

ছোট পর্দার উঠতি অভিনেত্রী রিচা দত্তকে, মহুয়ার দৌরাত্মে বেশ কয়েকটা টিভি সিরিয়ালে, পত্রিকায় দানা দেখেছে। একটা টিভি সিরিয়ালে নায়িকার বোনের চরিত্রে দেখেছে। লাস্যময়ী সুন্দরী বলা চলে, গায়ের রঙ ঈষৎ চাপা হলেও চোখ নাক বেশ তীক্ষ্ণ। আর পাঁচ খানা বাঙালিদের মতন গোলগাল চেহারা, নধর গোলগাল দেহের গঠন। বুক পাছা দুই বেশ বড় বড়, তবে কোনোদিন পোশাকের নীচে কি লুকিয়ে রেখেছে সেটা দেখার সুযোগ হয়নি। ঈষৎ মোটা ঠোঁট জোড়া দেখলে বড় চুমু খেতে ইচ্ছে করে আর যখন হাঁটে তখন পাছার দুলুনি দেখে মনে হয় এই একটু চাঁটি মেরে দেওয়া যাক। এই অভিনেত্রী গুলোর হাতে সারা বছর বিশেষ কাজ থাকে না, কোনোরকমে একটা সিরিয়ালে ছোট কোন চরিত্র করার পরে হয়ত আবার অনেকদিন বসে থাকতে হয়। কিন্তু ওদের কেতা দুরস্ত জীবন শৈলীর জন্য অর্থের প্রয়োজন আর তার তাগিদে অনেকেই রাতের বেলা এই মহানগরের বুকে বেড়িয়ে পরে শরীর প্রদান করতে। এক রাতে কুড়ি লাখ টাকার হাতছানি অনেকেই সামলাতে পারে না।

নয়না দানাকে সাবধান করে বলে, "কি করতে চলেছ এইবারে? সাবধানে যেও, আমন্ত্রন পত্র আর কার্ড ছাড়া ওইখানে যাওয়া মানে সাক্ষাৎ মৃত্যুর কবলে। লাল কার্ডের সদস্যেরা অনেক শক্তিশালী ব্যাক্তি, খুব কড়া নিরাপত্তা নেওয়া হয়। তুমি কি করে যাবে, মাথায় কি কোন পরিকল্পনা আছে?"

দানা কিছু না জানিয়ে শুধু বলে, "সেটা তোমার জেনে দরকার নেই। তুমি শুধু রিচা দত্তের ঠিকানা আমাকে দাও।"







রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০৪)

নয়না ওকে রিচা দত্তের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দেয়। যাওয়ার আগে নয়না ওর হাত ধরে বলে, "এতোদিন আসোনি কেন? আমার ওপরে রেগে আছো?"

দানার হাতা ওর গলা চেপে ধরার জন্য নিশপিশ করে ওঠে কিন্তু নিজেকে সামলে হিমশীতল কণ্ঠে নয়নাকে বলে, "না ঠিক রেগে নেই।"

নয়নার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সোজা রুহির স্কুলে চলে যায় দানা। এতক্ষণে হয়ত ছুটি হয়নি, মহুয়া কি ওইখানে এক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে নাকি? মহুয়া চুপচাপ একটা গাছের নীচে বসে তখন পর্যন্ত রুহির স্কুল ছুটি হওয়ার অপেক্ষা করছিল। মহুয়াকে ওই ভাবে বসে থাকতে দেখে দানার মন কেমন করে ওঠে। মনে হয় এক একা সুন্দরী যেন অধীর অপেক্ষায়। স্কুলের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনেকক্ষণ প্রেয়সীকে দেখে যায়। শাড়ি সালোয়ার ছাড়া আর কোন পোশাক কোনোদিন পরে বের হয়না মহুয়া। দানার সাথে থাকার পরে, বাড়িতে শাড়ির দোকান। তুঁতে রঙের শাড়িতে ফর্সা মহুয়াকে আরো বেশি মাদকতাময় মনে হয়। প্রসাধনীর মাত্রা বরাবর একটু কম, কপালে ছোট টিপ, কানে দুল আর ঠোঁটে লিপস্টিক। খুব ইচ্ছে করলে চোখের কোনে হালকা কাজল লাগায়। মেয়েকে প্রথম বার স্কুলে দিতে এসেছে তাই একটু সেজেই এসেছে। বড় বড় চোখের পাতা একটু ভিজে, মেয়েকে কাঁদতে দেখে নিজের চোখের জল সামলাতে পারেনি।

ওকে দেখতে পেয়েই চোখের কোল মুছে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে নয়নার বাড়িতে কি কি হল। মহুয়াকে সব কিছু বলাতে মহুয়া পরামর্শ দেয়, রিচা দত্তের বাড়ির ওপরে নজর রাখতে। ওকে নিতে যে গাড়ি আসবে সেই গাড়িকে অনুসরন করলে দানা ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাবে।

ছুটির ঘন্টা বাজতেই "ডাডা" আর "মাম্মা"র খোঁজে রুহি। ওদের দেখে রুহির কি অভিমান, মুখ ভার করে একবার ডাডাকে দুই ঘা কষিয়ে দেয় একবার মাম্মাকে দুই ঘা কষিয়ে দেয়।

আদো আদো কণ্ঠে নালিশ জানায়, "ক্লাসে কেন আসোনি? স্তুলে আর যাবো না।" মাথা ঝাঁকিয়ে মাম্মার গলা জড়িয়ে মুখ লুকিয়ে পড়ে থাকে, "আমি স্তুলে যাবো না।"

রুহির ছুটির পরে মহুয়া আর রুহিকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে দানা বেরিয়ে পড়ে। বুকের মধ্যে কি হবে কি হবে ভাব। দানার মুখে সব কিছু শোনার পরে মহুয়ার বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে যায়। সাক্ষাৎ মৃত্যুর কবলে, ওই সমাগমে কেউ যদি ওকে চিনে ফেলে তাহলে নিরাপত্তা রক্ষী দ্বারা ওকে মেরে ফেলতে কুণ্ঠিত বোধ করবে না কেউই। সমাগমের সবাই উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী পুরুষ আর নারীর মেলা, নিজেদের পরিচয় অতীব গোপন করেই এই তীব্র যৌন সঙ্গমে সবাই মেতে ওঠে।

বের হওয়ার আগে রুহি আর মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে দানা। প্রেয়সী আর মেয়ের গায়ের উষ্ণতা নিজের বুকে মাখিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে যায়। বাড়ি থেকে লাল কার্ড, মুখোশ, আমন্ত্রন পত্র, চাবি ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে নেয়। সব থেকে আগে, হিঙ্গল গঞ্জে গিয়ে শঙ্কর রমিজ আর বাকিদের ওর পরিকল্পনা বুঝিয়ে বলে। দানা একা রিচা দত্তের গাড়ি অনুসরন করবে। ওর পেছনে মনা ওর গাড়ি অনুসরন করবে। দলের বাকিরা সবাই শঙ্করের নির্দেশ মতন কাজ করবে। একবার দানা ওই সমাগমের ভেতরে ঢুকে গেলে বাকিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। সব থেকে বড় বিষয়, কোথায় এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে সেটাই কারুর জানা নেই। তাই আগে থেকে ওই জায়গায় চলে যাবে তার উপায় নেই।

রমিজ ওকে দুটো পিস্তল দিয়েছিল, কিন্তু পিস্তলে কাজ হবে না। নিশ্চয় ওই নিরাপত্তা রক্ষীরা ওর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নেবে আর একবার ভেতরে ঢোকার পরে শুধু মাত্র জাঙ্গিয়া আর মুখোশ পরে থাকতে হবে সেখানে পিস্তল গোঁজার কোন অবকাশ নেই। একটা অন্য গাড়িতে মনা ওকে অনুসরন করে। রিচা দত্তের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় দুইজনে। মনা বাকিদের ফোন করে সেই খানে ডেকে নেয়। অল্প কথায় জানিয়ে দেয় খুন খারাবি হয়ত হতে পারে, আর সেই সাথে এই গোপন সম্প্রদায়ের গোপন যৌন সঙ্গমের কথাও জানাতে ভোলে না। দুটো গাড়ি করে শঙ্কর আর রামিজ ওদের বেশ দূরে অপেক্ষা করে। পরিকল্পনা মাফিক, দানা রিচা দত্তের গাড়ি অনুসরন করবে আর মনা দানাকে অনুসরন করবে। সবাই শঙ্করের হুকুমের তালিম করবে।

বিকেলের পর থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। একটু পরেই রিচা দত্তের বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। কিছু পরে রিচা দত্ত নীচে নেমে গাড়িতে উঠে বসে, সাথে কেউ নেই। দানা ঘড়ি দেখে বুঝে যায় চারটে বেজে গেছে এটা ওই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের গাড়ি। ওদের গাড়ি ছাড়তেই দানা ওকে অনুসরন করতে শুরু করে। মহানগর ছাড়িয়ে গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যেই দক্ষিণে নদীর মোহনার দিকে যাত্রা করে। ওদের গাড়ি পাশ কাটিয়ে আরো বেশ কয়েকটা দামী গাড়ি এগিয়ে যায়। গাড়ি গুলো দেখে দানা বুঝতে পারে সঠিক পথেই যাত্রা করছে। সবাই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের সদস্য। কারুর গাড়ি অবশ্য দানা চেনে না। কঙ্কনা আর নাসরিন হয়ত এই গাড়ি গুলোর একটায় থাকতে পারে।

বেশ কিছু দুর যাওয়ার পরে রিচার গাড়ি একটা গ্রামের পথ ধরে, সেই সাথে আরো বেশ কিছু গাড়ি গ্রামের পথ ধরে। কিন্তু কিছু গাড়ি সার বেঁধে বড় রাস্তা ধরে আরো দক্ষিনে চলে যায়। দানা উভয় সঙ্কটে পড়ে যায়, ঠিক কোনদিকে যাওয়া উচিত সেটা ভেবে পায় না। বড় রাস্তার ওপরে গাড়ি থামিয়ে একবার দক্ষিন দিকে দেখে একবার গ্রামের রাস্তার দিকে দেখে। শঙ্কর ওকে ফোন করে, দক্ষিনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলে, গ্রামের ভেতরে যে গাড়ি গুলো গেছে সেগুলো হয়ত নীল কার্ডের জন্য আর বাকি গাড়ি লাল কার্ডের সদস্যদের নিয়ে যাচ্ছে। শঙ্করের কথা মেনে দক্ষিনে গাড়ি চালানো শুরু করে দেয়। মনা গাড়ি নিয়ে গ্রামের ভেতরে ঢুকে পরে। বেশ কিছু দুর এগিয়ে যাওয়ার পরে দানা আবার আগের গাড়ি গুলোর দেখা পায়। ঠিক সেই সময়ে মনা ওকে ফোন করে জানায়, যে রিচা এবং আরও বেশ কয়েক জন ছেলে মেয়েকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটা বড় বাসে তোলা হয়েছে। বাসের চারপাশে বন্দুক ধারি কালো পোশাক পরা নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী। মনা আরো জানায়, বাসের সামনে পেছনে দুটো জিপে নিরাপত্তা রক্ষী বাসকে আগলে গ্রামের পথ ধরে দক্ষিনে মোহনার দিকে, কাবুলি ঘাটের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। দানা ওকে ওই বাসের পিছু নিতে পরামর্শ দেয়। বাসের বেশ তফাতে মনা অনুসরন করে।

আর অন্য দিকে দানা বাকি গাড়ি গুলো অনুসরন করে কাবুলি ঘাটে পৌঁছে যায়। কাবুলি ঘাটে একটা ছোট সাদা রঙের লঞ্চ দাঁড়ানো। বাঁধানো ঘাটের কাছে বেশ কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। বাকি গাড়ি গুলো থেকে বেশ কিছু দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রথমে ওদের পর্যবেক্ষণ করে। কারন ওর কাছে লাল কার্ড আর নয়না এই লাল কার্ডের সদস্যদের বিষয়ে কোন আলোকপাত করতে পারে নি। একটা গাড়ি থেকে একজন পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব ভদ্রলোক ধোপ দুরস্ত সুট পরে, লাল মুখোশে চেহারা ঢেকে লঞ্চের দিকে এগিয়ে যায়। লঞ্চ থেকে দুই কালো পোশাক পরিহিত বন্দুক ধারি নেমে এসে ওই ভদ্রলোকের কাছে কিছু দেখতে চায়। দানা অত দুর থেকে বিশেষ কিছু বুঝতে পারে না তবে এইটুকু বুঝতে পারে ওকে ওই মুখোশ পড়তে হবে। গাড়িটা ধীরে ধীরে চালিয়ে লঞ্চের কাছে নিয়ে যায়। গাড়িতে বসেই একটা সিগারেট ধরিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বসে চারপাশ ভালো ভাবে নিরীক্ষণ করে। বুকের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা বেড়ে ওঠে। যে কোন মুহূর্তে ঝড় জল অবশ্যাম্ভাবি। জলের মাঝে যদি এই সমগম অনুষ্ঠিত হয় তাহলে দানার পক্ষে ভালো। কারন মহেন্দ্র বাবুর কাছে থাকার সময়ে আড়াই মাসের মতন ঝড় জল মাথায় করে সমুদ্র যাত্রা করেছিল।

সিগারেট শেষ করে, পকেটে যা ছিল সবকিছু গাড়ির মধ্যে রেখে দেয়। লাল কার্ড, চাবি, মুখোশ আর আমন্ত্রন পত্র ছাড়া কিছুই সঙ্গে নেয় না। লাল মুখোশ পরে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। ঠোঁট আর চোখে দুটো ফুটো তাছাড়া সম্পূর্ণ চেহারা লাল কাপড়ে ঢাকা। ওকে দেখতে পেয়েই লঞ্চ থেকে দুটো নিরাপত্তা রক্ষী হাসি হাসি মুখ অভ্যর্থনা জানাতে নেমে আসে। একজনের হাতে বন্দুক অন্য জনের হাতে ছোট ল্যাপটপ। বন্দুকধারী রক্ষী ওর কাছে এসে কোন কিছু জিজ্ঞেস না করেই হাত বাড়িয়ে দেয়। দানা বুঝতে পারে যে ওকে কার্ড দেখাতে হবে তাই বুক পকেট থেকে লাল কার্ড বের করে লোকটার হাতে ধরিয়ে দেয়। দ্বিতীয় রক্ষী ওর দিকে ল্যাপটপ খুলে একটা স্ক্রিন দেখিয়ে দেয়। সেইখানে লেখা "পাসওয়ার্ড"। দানা মাথা চুলকে সংখ্যা মনে করতে চেষ্টা করে। ওর দেরি দেখে দুই জন রক্ষী পরস্পরের দিকে একটু চাওয়াচায়ি করে। দানা স্মিত হেসে ল্যাপটপের বোতাম টিপে পাসওয়ার্ড দিয়ে দেয়। দুই রক্ষী ওর সাথে হাত মিলিয়ে ওকে লঞ্চে আসতে আহবান জানায়।

ছোট লঞ্চ, মাঝ খানে জনা দশেক নর নারীর ভিড়। বেশির ভাগ পুরুষ মনে হয় চল্লিশের ওপরে। মেয়েদের দেখে পরিচয় জানার উপায় নেই, সবার চেহারা লাল কাপড়ে ঢাকা। মেয়েদের পোশাক আশাক বেশ খোলামেলা, হতেই হবে কারন এই সমাগমে সবাই একটু পরে উলঙ্গ হয়ে যাবে তাই বেশি রাখঢাক করার দরকার নেই। চারজন মহিলার পরনে রাত্রিবাসের মতন পাতলা স্ট্রাপ দেওয়া স্লিপ। সমুদ্র থেকে ভেসে আসা হাওয়ায় বারেবারে ওদের স্লিপ উড়ে যায় আর নধর গোলগাল পুরুষ্টু ঊরু যুগল বেড়িয়ে পরে। একজন মনে হয় বেশ সুন্দরী, চোখের ছিদ্র থেকে যেটুকু চোখ আর ঠোঁট দেখা গেছে তাতে বোঝা যায়। সেই মহিলার দেহের গঠন বেশ লোভনীয়। কিন্তু কাউকেই ঠিক ভাবে চেনা যায় না। ওদের দেহের গঠন দেখে দানা বুঝতে পারে এদের সাথে দানা কোনোদিন সহবাস করেনি। হয়ত এরা কঙ্কনার আওতার বাইরে অথবা ভিন্ন প্রদেশের মহিলা। কারুর মুখে কোন কথা নেই সবাই নির্বাক। সবাই এক একটা চেয়ারে বসে। ওকে দেখে বাকিরা মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানায়। দানাও মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানায়। এক কোনায় একজন ফর্সা মোটা মহিলাকে দেখে দানার চিনতে কষ্ট হয় না এই রাগিণী। ওর চোখ খুঁজে বেড়ায় কঙ্কনা আর নাসরিনকে। কঙ্কনা আর নাসরিনের শরীরের গঠন ওর পরিচিত, মুখ না দেখলেও ওদের দেহের গঠন দেখে দানা ঠিক চিনে যাবে।

এই চারপাশ খোলা লঞ্চে অত জায়গা নেই যে একটা ভীষণ কামনা বাসনা যুক্ত যৌন সঙ্গমের খেলা চলতে পারে। মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে ওদের কেন এই লঞ্চে তোলা হল? কিছুক্ষণ পরে লঞ্চ ছেড়ে দেয় আর দানার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। লঞ্চ তীব্র গতিতে সমুদ্রের দিকে যাত্রা করে। চারপাশে ততক্ষণে অন্ধকার নেমে এসেছে। কিন্তু লঞ্চ ছাড়া পর্যন্ত ওদের না দেখতে পেয়ে দানা হতাশ হয়ে যায়। তাহলে কি এত ঝুঁকি নিয়ে এইখানে আসা সব বৃথা। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওদের? শঙ্কর রমিজ আর বাকিরা ওর পেছনে আছে কি না সেটা আর বোঝা গেল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই নদীর তট অন্ধকারে ঢেকে যায়, ওদের চারপাশে কালো সাগরের জল আর উত্তাল ঢেউয়ের মেলা। সাগর তট অনেক পেছনে ফেলে প্রায় আধা ঘন্টা লঞ্চ চলার পরে সামনে একটা বিশাল সাদা রঙের জাহাজ দেখা যায়। আলোয় আলোকিত ওই জাহাজ দেখে দানার বুঝতে পারে যে এই যৌন সমাগম ওই জাহাজে অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তার এক অভিনব উপায়, চারপাশে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ জল, জাহাজের ডেকে অলিন্দে বন্দুক ধারী নিরাপত্তা রক্ষী। কোন প্রতারকের পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা নেই।

জাহাজের কাছে আসতেই দানা দেখতে পায় আরো ছোট দুটি লঞ্চ আগে থেকে জাহাজের কাছে দাঁড় করানো। হয়ত ওই দুটি লঞ্চের একটাতে কঙ্কনা আর নাসরিন এসেছে। ওদের লঞ্চের পেছনে একটা বেশ বড় লঞ্চ দাঁড়িয়ে, ওদের অপেক্ষায়।

ওদের লঞ্চ জাহাজের কাছে আসতেই একটা সিঁড়ি নেমে আসে। সিঁড়ি বেয়ে বাকি মুখোশ ধারী সদস্যদের সাথে জাহাজে উঠে যায়। জাহাজে উঠেই আরো এক প্রস্থ নিরীক্ষণ চলে, লাল কার্ড দেখায় তারপরে একটা ল্যাপটপ খুলে পাসওয়ার্ড দিতে হয়। একজন ওর কাছ থেকে আমন্ত্রন পত্র নিয়ে নেয়। দানার কার্ড দেখে আর আপাদমস্তক দেখে সেই নিরাপত্তা রক্ষী কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়, কিন্তু যেহেতু দানার কাছে সঠিক কার্ড আর সঠিক আমন্ত্রন পত্র আছে তাই কিছু বলার সুযোগ পায় না। কার্ডে লেখা জন্ম তারিখ হিসাবে এতদিনে ওর বয়স হওয়া উচিত পঞ্চাশের উপরে কিন্তু দানার বয়স অনেক কম। একজন নিরাপত্তা রক্ষী ওকে নিয়ে একটা ঘরের মধ্যে ঢুকে একটা বড় সুটকেস ধরিয়ে দেয়। সেই ঘরে আরও পুরুষের মেলা। দানা সবার দিকে দেখে, সবার চেহারা লাল মুখোশে ঢাকা, কারুর পরিচয় জানার উপায় নেই। বাকিদের দেখা দেখি পকেট থেকে চাবি বের করে ওই সুটকেস খোলে দানা। বাকিরা নিজেদের পোশাক খুলে শুধু মাত্র একটা লাল রঙের জাঙ্গিয়া পরে নেয়। দানাও বাকিদের দেখাদেখি নিজের পোশাক খুলে ওই সুটকেসে রেখে দেয় আর ওর ভেতরে রাখা একটা লাল রঙের জাঙ্গিয়া পরে নেয়। সারা অঙ্গ অনাবৃত, পরনে শুধু মাত্র একটা জাঙ্গিয়া আর মুখের ওপরে একটা মুখোশ ছাড়া আর কিছু নেই।

বাকি পুরুষদের পেছন পেছন দানা ওই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। সামনে এক নিরাপত্তা রক্ষী ওদের পথ দেখিয়ে একটা বিশাল সুসজ্জিত হল ঘরে নিয়ে আসে। হলের ছাদে একটা বিশাল বড় ঝাড় বাতি টাঙ্গানো, চারদিকের দেয়ালে বড় বড় আয়না আর অসংখ্য ছোট ছোট আলো। আয়নার ঘষা কাঁচে উলঙ্গ নর নারীর বিভন্ন ভঙ্গিমার যৌন সঙ্গমরত ছবি। হল ঘরে বেশ কয়েকজন অর্ধ উলঙ্গ নর নারীর ওদের আগেই উপস্থিত। জনা দশেক অর্ধ উলঙ্গ মহিলা আর কুড়ি জনের মতন পুরুষ। সবার যৌনাঙ্গ লাল রঙের কৌপিনে ঢাকা। তাহলে এখন নীল কার্ড ধারী ছেলে মেয়েদের আগমন হয়নি এখন। মহিলাদের ঊরুসন্ধি একটা লাল ক্ষুদ্র প্যান্টিতে ঢাকা আর বাকি অঙ্গ অনাবৃত। প্যান্টির সামনের ছোট ত্রিকোণ কাপড় কোন রকমে ওদের যোনি দেশ ঢেকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কারুর প্যান্টি বেশ পাতলা আর বেশ ছোট, যোনি চেরার ওপরে এঁটে বসে ফোলা যোনির আকার অবয়াব পরিস্কার ফুটিয়ে তুলেছে। কারুর প্যান্টির কাপড় একটু খানি যোনি পাপড়ি মাঝে ঢুকে গেছে। কোন স্থুল নারীর স্তন জোড়া ঝুলে পড়েছে, কারুর স্তন জোড়া নিটোল সুগোল, স্তনের বোঁটা জোড়া লোভনীয়। সমুদ্রের ঠাণ্ডা হাওয়া আর আসন্ন কামকেলির উত্তেজনায় সবার স্তনের বোঁটা উন্নত আকার ধারন করে নিয়েছে ইতিমধ্যে। কেউ ফর্সা, কেউ স্থুলালায়, কেউ নধর গোলগাল, কেউ কৃশকায়। তবে লাস্যময়ী বলতে যারা তারা হয়ত এখন এসে পৌঁছায়নি অথবা অন্য কোথাও আছে।

পুরুষেরা সবাই ওর মতন লাল কাটা জাঙ্গিয়া পরা। সবার দেহের গঠন, ছাতির কাঁচা পাকা চুল দেখে বয়স আন্দাজ করতে বাধে না, সবাই পঁয়তাল্লিশ পঞ্চাশের কোঠায়। মেয়েরা কেউ কেউ তিরিশের কোঠায়। ওদের দেখে বাকিরা মাথা নুইয়ে নিঃশব্দে অভিবাদন জানায়। হয়ত এরা সবাই সবাইকে চেনে তাও কেমন মেকি পরিচয় হীনতার আড়ালে দাঁড়িয়ে। বিশাল হলঘরের চারদিকে ছোট ছোট আরো অনেক ঘর। ওপরে একটা বিশাল ঝাড় বাতি। হলের চারদিকে বড় বড় সোফা আর ডিভান গোল করে সাজানো। মাঝখানে একটা গোল বড় টেবিল। হলের একপাশে খাওয়া দাওয়ার জায়গা, একপাশে বার। এই হলের মধ্যে সবাই অর্ধ উলঙ্গ। এমনকি যে পুরুষেরা মদ আর খাওয়াদাওয়া পরিবেশন করছে তাদের পোশাক বলতে একটা সাদা রঙের জাঙ্গিয়া।

দানার চোখ বারেবারে কঙ্কনা আর নাসরিনকে খুঁজে বেড়ায়। দেখা পাবে সেটা নিশ্চিন্ত জানা নেই, তবে ওদের নজর এড়িয়ে চলতে হবে।







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment