আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram
Written By pinuram
পনেরো
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০১)
পুলিস গোয়েন্দা তদন্তে নেমে অনেক কিছুই উদ্ধার করে। নয়নার একটা গলার হার ওই পোড়া বাড়িতে পাওয়া যায়। আগে থেকেই বলা ছিল যে নয়না ওদের জানাবে দানা আসার পরে ওরা ওইখান থেকে বেরিয়ে গেছিল তাই এই খুনোখুনির ব্যাপারে কিছুই জানে না। বাড়ির ভেতরের অধিকাংশ দেয়াল পুড়ে গেছে, বিছানা জ্বলে গেছে। সমুদ্রের দেহ বাদে সব কয়টা মৃতদেহ বেশ খানিকটা ঝলসে যায়। তবে কাউকে শনাক্ত করতে বিশেষ অসুবিধে হয়নি কারন আগুন আর গুলির শব্দ শুনে গ্রামবাসীরা এসে পড়েছিল। পুলিস আসার আগেই গ্রামের লোকজন এসে যাওয়ার ফলে অনেক সুত্র ওদের পায়ের তলায় চাপা পরে অথবা হাত লেগে যাওয়ার ফলে হারিয়ে গেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মৃত দেহে যে কয়টা গুলি পাওয়া গেছে সব কটার বন্দুক ওই বাড়িতেই পাওয়া গেছে। সুতরাং পুলিস এই সিদ্ধান্তে আসে যে বাপ্পা নস্কর আর বিমান চন্দের রাজনৈতিক দ্বন্দের ফলে পরস্পরকে খুন করে। বাকিরা সাথে থাকায় ওই গোলাগুলির মাঝে পরে প্রাণ হারিয়েছে। দানা আর ইন্দ্রনীলের সহযোগিতায় পুলিস বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে প্রচুর জালসাজির নথিপত্র উদ্ধার করে। মৃত বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আদালতের আদেশে বাপ্পা নস্করের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ভুপেনের সাহায্যে পুলিস খুঁজে খুঁজে নিতাইয়ের সঙ্গী সাথীদের গ্রেফতার করে। খুনের মামলায় দানার সাহায্যে পুলিস অনেক তথ্য প্রমান উদ্ধার করেছে সেটা খবরের কাগজে, টিভিতে প্রকাশ হয়ে যায়। কয়েকদিনের মধ্যে দানার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পরে। দানা আর মহুয়া জানে এই সুনামের সাথে সাথে ওদের ওপরে বিরোধী পক্ষের নজরদারি বেড়ে উঠবে।
রাজনৈতিক মহল সরগরম। মহানগর জুড়ে দুই দলের মিটিং মিছিল বের হয়। একবার এক দলের রাজনৈতিক কর্মকর্তার বাড়ি ভাঙচুর হয় আর তার বদলে অন্য রাজনৈতিক কর্মকর্তার বাড়ি ভাঙচুর শুরু হয়ে যায়। পুলিস সেই সব আটকাতে হিমশিম খেয়ে যায়।
নয়না এক প্রকার গৃহ বন্দী হয়ে যায়। সাংবাদিকের ভিড় আর পুলিসের প্রশ্নাবলীর উত্তর দিতে দিতে হিমসিম খেয়ে গেছিল প্রায়। তবে দানাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন সাত্যকি চ্যাটার্জি, নয়নাকে বিশেষ পুলিস আদালতের ঝামেলা পোহাতে হয় না। দানার অনুরোধে, সাত্যকি চ্যাটার্জি নয়নার বাড়ির সামনে সাদা পোশাকের পুলিস মোতায়ন করে দেয়। যদিও আকরাম আর নাসির আড়াল থেকে নয়নার বাড়ির ওপরে নজর রেখে চলেছে। দানা জানে, বিমানের মৃত্যুর জন্য মোহন খৈতান দানাকে আর নয়নাকে দোষারোপ করবে আর সুযোগ পেলেই ওদের আক্রমন করবে। নয়নাকে সরাসরি আক্রমন করলেও দানাকে সরাসরি আক্রমন করতে চাইবে না, কারন মোহনের প্রচুর টাকার সম্পত্তি এখন পর্যন্ত দানার অধীনে। হয়ত মোহন কোন দুরাভিসন্ধি ফাঁদবে, যাতে আগে ওই প্রকল্প গুলো হাতাতে পারে তারপরে ওর ওপরে আক্রমন করবে।
ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে মহুয়া সকাল দুপুর বিকেল, প্রত্যেক দিনই দুই তিন ঘন্টা অন্তর অন্তর নয়নাকে ফোন করে কুশল জিজ্ঞেস করতে ভোলে না। দানাকে বলে, এমন কোন পদক্ষেপ এখুনি নেবে না যাতে নয়নার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। শুধু মাত্র সুযোগের অপেক্ষায় ওঁত পেতে থাকে। সমুদ্র আর সুমিতার মৃত্যুর পরে, পাশে কাউকে না পেয়ে এই কয়দিনে মহুয়ার ওপরে নয়না প্রচন্ড নির্ভরশীল হয়ে পরে। সব কথাতেই একবার করে মহুয়াকে ফোন করে শলা পরামর্শ নেয়। মহুয়া হাসি মুখে ওকে পরামর্শ দেয় বটে, কিন্তু মাথার পেছনে সেই এক চিন্তা ঘোরাফেরা করে এই ছলনাময়ী আহত নারী একসময়ে ওর মেয়েকে অপহরন করার চক্রান্ত করেছিল। এই মেয়ের চিতার ছাই না ওড়া পর্যন্ত শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না ওরা। ইতিমধ্যে নয়না হয়তো নিশ্চয় নিজের সব শক্তি লাগিয়ে সুমিতা আর সমুদ্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নয়না, মোহন আর সিমোনের শেষ না দেখা পর্যন্ত দানার অথবা মহুয়ার কারুর মনে শান্তি নেই। শত ব্যাস্ততার মধ্যে প্রত্যকে আধা ঘন্টায় ফোন করে খবর নেয় দানা, রুহি আর মহুয়া কি করছে। অফিসে যাওয়া যদিও বন্ধ করে না মহুয়া, পিন্টু আর মনা আরো সতর্ক হয়ে যায়, ওইদিকে আকরাম আর নাসির কড়া নজর রেখেছে নয়নার বাড়ির ওপরে।
এই ঝামেলার কয়দিনে দানার অনুপস্থিতির ফলে ওর কাজে বেশ ব্যাঘাত ঘটে। তবে মহেশ বাবু অনেকটাই হাল ধরে ছিলেন বলে রক্ষে। এই কয়দিনে মোহন খৈতান একবারের জন্যেও ওকে ফোন করেনি। সরিকেরা দানাকে বিশেষ ঘাঁটাতে সাহস পায় না। পুলিস প্রসাশনকে সাহায্য করার পরে ওর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে দানা ওদের প্রবোধ দিয়ে বলে, ছল চাতুরির ব্যাবসা ওর দ্বারা হয় না সুতরাং কাজ যেমন আগের মতন চলছিল ঠিক তেমনি ভাবেই চলবে। একবার ভেবেছিল এইবারে দানা গায়ের জোরে ওদের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নেবে। ছোট প্রকল্পের সরিকেরা সেই শুনে স্বস্তির শ্বাস নেয়।
ফারহান সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। ওর বিয়ে কয়েক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। জারিনা আর ফারহানের মা, দানাকে আর মহুয়াকে বারেবারে ধন্যবাদ জানায়।
ফারহানের সাথে দেখা করে দানা বলে, "এই বালচোদা ছেলে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়া। শালা তোর বিয়েতে নাচবো বলে বসে আছি, আর তুই বাড়া এইখানে মটকা মেরে পড়ে আছিস।"
জারিনা আর বাকিদের মুখ থেকে এতদিনে ফারহান সব খবর শুনেছে। বাপ্পা নস্করের মৃত্যু, বিমান চন্দের মৃত্যু সেই সাথে নিতাই আর বেশ কয়েকটা সাঙ্গপাঙ্গ মারা গেছে। সুমিতা সমুদ্র মারা গেছে। ফারহান ওর হাত ধরে বলে, "তুই এত সব করলি আমার জন্য? কেন?"
দানা মিচকি হেসে বলে, "ধুর বাল, তোর ফাটা গাঁড়ের জন্য করেছি নাকি? ওই জারিনার ফ্যাকাসে গাল দেখে করেছি। ইসসস শালা গুলি খেয়ে তুই উল্টে পরলি আর ডবকা সুন্দরী মেয়েটা একদিনে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।" কানেকানে ইয়ার্কি মেরে বলে, "ভেবেছিলাম তোর বিয়ের আগে শেষ বারের মতন একবার জারিনার গুদে বাঁড়া ঢুকাবো। হানিমুনে আমাকে সাথে নিয়ে যাস। তোর মনে হয় না চোদার ক্ষমতা হবে, আমি সেই জায়গা পুষিয়ে দেব।"
ফারহান হেসে ফেলে, "ম্যাডামকে বলবো নাকি? শালা বোকাচোদা, তোর বাড়া কেটে তোর হাতে ধরিয়ে দেবে ম্যাডাম। তখন ওই বাড়া হাতে নিজের গাঁড়ে ঢুকাস বালচোদা ছেলে।"
জারিনা আর মহুয়া অদুরেই দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ওদের ফিসফিসানি ওদের কানে যায়নি তাই রক্ষে না হলে দানাকে ফারহানের পাশের খাটে শুইয়ে দিত মহুয়া।
দানা ওর হাত শক্ত করে ধরে বলে, "এইবারে তোকে অফিসে কাজ দেব।"
ফারহান মাথা নাড়িয়ে তেড়ে ওঠে, "না না আমি অফিসে কাজ করবো না। আমি তোর গাড়ি চালাবো।"
মহুয়া আর দানা সমস্বরে বলে, "একি না না, তুমি আমার গাড়ির ড্রাইভার, সেটা চিন্তা ধারনার বাইরে ফারহান।"
ফারহান নাছোড়বান্দা হয়ে মহুয়াকে বলে, "আরে ম্যাডাম, জুতো পেটা করুন আর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিন। আমি এইবারে আপনার বি.এম.ডাবলু. চালাবো। কোন কথা শুনতে নারাজ আমি। এই বালচোদা ছেলেটা ছিল বলে..... আপনাকে মাইনে দিতে হবে না ম্যাডাম।"
দানা মাথা নাড়িয়ে বলে, "তোর মতন একটা আলবাল ছেলের হাতে গাড়ি দেব না, ভাগ শালা।"
ফারহান হেসে উত্তর দেয়, "তোর কাছ থেকে গাড়ির চাবি চেয়েছি নাকি রে? ওই গাড়ি আমার, আমি চালাবো। রুহিকে রোজদিন স্কুলে নিয়ে যাবো আর তারপরে ম্যাডামকে অফিসে নিয়ে যাবো। তুই বাল গাড়ির কাঁচ পরিস্কার করে দিস রোজ সকালে উঠে। আর বিকেলে তুই আর আমি পেছনের সিটে বসে মদ খাবো ব্যাস।"
সবাই হেসে ফেলে ওর কথা শুনে। "ঠিক আছে তাড়াতাড়ি সেরে ওঠ তারপরে দেখা যাবে কি করবে তুমি।" উত্তর দেয় মহুয়া।
মাঝেই মাঝেই মহুয়া নয়নার বাড়িতে ওর সাথে দেখা করতে যায়। সেদিন বিকেলে মহুয়া একাই নয়নার বাড়িতে গিয়েছিল দেখা করার জন্য।
কাজের পরে ফারহানের বাড়ি গিয়ে ওর সাথে দেখা করে বাড়ি ফিরে রুহিকে নিয়ে পড়াতে বসেছিল দানা। এই উটকো ঝামেলার জন্য রুহিকে স্কুলে ভর্তি করানো যাচ্ছে না। তবে এই বারে ভর্তি করাতেই হবে। এলাকায় খুব নামকরা ভালো একটা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে আছে, তার অধ্যাপিকার সাথে মহুয়ার আলোচনা হয়ে গেছে। অধ্যাপিকা জানিয়ে দিয়েছেন, রুহিকে নিয়ে এলেই ভর্তি করে নেবেন। নিজেরা ভাগ্যের ফেরে, না মহুয়া, না দানা কেউই ভালো ভাবে পড়াশুনা করতে পারেনি, কিন্তু মেয়ের জন্য সেটা করতে চায় না।
স্টাডিতে বসে রুহিকে নিয়ে পড়াতে বসেছিল। ডাডার কাছে কি আর পড়াশুনা হয়? একদম নয়, কত রকম ঘুষ দিতে হয়, তবে একটা অক্ষর পড়ে। একটু পড়ে নে তারপরে চকোলেট দেব, কালকে পুতুল কিনে দেব, পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাবো। এখন আবার টিভিতে ওয়াটার পার্ক দেখেছে সেখানে যাওয়ার বায়না ধরে। পড়বে কি, ওর বায়না আর প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে দানা হিমশিম। মহুয়ার ওপরে রেগে যায় দানা, কেন মরতে ওদের ছেড়ে ওই নয়নার সাথে দেখা করতে গেছে। তার চেয়ে ভালো, মেয়েকে নিয়ে একটু পড়াতে বসতে পারত, তা নয় ভদ্রতা দেখাতে গেছে, প্রাণের বান্ধবী সাজতে গেছে। দানা রাগে গজগজ করে আর পিন্টু ওইদিকে বসার ঘরে বসে ডাডা আর রুহির পাঠ যুদ্ধ দেখে হাসাহাসি করে।
মনার সাথে সাথে মহুয়াকে ঢুকতে দেখেই রুহির পড়াশুনা শিকেয় উঠল। "মাম্মা তি এনেতো? মাম্মা তি এনেতো?" বলেই দানার কবল থেকে এক দৌড়ে পালিয়ে যায়।
দানা হাল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "এত দরদ যখন বাড়িতে এনে রাখতে পারো তো।"
মহুয়া মিচকি হেসে বলে, "আগে হলে নিজেই যেচে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসতে, তাই না জিত।"
দানা ওর কথা শুনে হেসে ফেলে, "তুমি না, আর কি বলি।"
মহুয়া ব্যাগ থেকে একটা চকোলেট বের করে রুহির হাতে দিয়ে দানাকে বলে, "মেয়েকে পড়াতে পারলে না? যাই হোক ওই প্রিন্সিপালের সাথে বাজারে দেখা হয়েছিল। কাবেরি ম্যাডাম বলেছেন আগামী সপ্তাহে স্কুলে নিয়ে যেতে। বেশি দেরি করলে সেশান নষ্ট হয়ে যাবে।"
দানা মাথা দোলায়, "না না সেশান নষ্ট করতে চাই না। আর কেমন দেখলে নয়নাকে?"
মহুয়া মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, "ভালো আছে তবে বুঝতেই পারছ খুব গভীর জলের মাছ। ওর প্রকৃত মন বোঝা দুঃসাধ্য ব্যাপার। কথাবার্তা বলে মনে হল আমার ওপরে বেশ নির্ভরশীল। নতুন একটা ম্যানেজার এসেছে, নতুন সেক্রেটারি নিযুক্ত হয়েছে। বাড়ির বাইরে একটা সাদা পোশাকের পুলিস মোতায়ন আছে দেখলাম। তবে এইবারে খুব সাবধানে চলছে নয়না।"
দানা জিজ্ঞেস করে, "আকরাম আর নাসিরের সাথে দেখা হল?"
নয়না মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয়, আকরাম আর নাসির পালা করে আড়াল থেকে ওর ওপরে নজর রেখে চলেছে।
ঠিক সেই সময়ে মোহনের ফোন আসে দানার কাছে। বাল্য বন্ধু বিমানের মৃত্যুতে মোহন খৈতান একপ্রকার জ্বলছে, ফোন করেই দানাকে দৃঢ় কণ্ঠে বলে, "বাপ্পা নস্কর আর নেই মিস্টার মন্ডল। আপনার মাথার ওপর থেকে কিন্তু ছত্রছায়া উঠে গেছে। এইবারে আমার প্রকল্প গুলো আমাকে ফিরিয়ে দিন।"
সঙ্গে সঙ্গে দানার মনে পরে যায় বিমানের সাথে মিশে সিমোন খৈতান ওর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল। ওকে ধূলিসাৎ করার জন্যেই ওর প্রকল্প গুলো হাতিয়ে নিয়েছিল দানা। প্রকল্প ফিরিয়ে দেওয়ার কোন অর্থ হয়না। ওই হুমকিতে কাবু হয়ে পড়ার মতন মানুষ নয় তাই ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দেয়, "রাজনৈতিক মহল বর্তমানে গরম তেলের মতন টগবগ করে ফুটছে মিস্টার খৈতান। পুলিসের তদন্ত, আদালতের মামলার এখন সুরাহা হয়নি। এমত অবস্থায় আমাদের কিছুদিন শান্ত থাকা বাঞ্ছনীয় মিস্টার খৈতান। আপনি পালিয়ে যাচ্ছেন না আমিও এই মহানগরে আছি। সময় হলেই আপনার সম্পত্তি আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। একটু ধৈর্য ধরুন।"
মোহন তিতিবিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, "আমার সাথে আবার নতুন কি ছলনা করা হচ্ছে, মিস্টার মন্ডল।"
দানা বলতে যাচ্ছিল, বিমান চন্দের সাথে মিশে ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের উচিত শিক্ষা দেবে কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা করে উত্তর দেয়, "আপনি মাথা গরম করছেন কেন মিস্টার খৈতান? এই সময়ে মাথা গরম করে কোন কাজ হবে না।"
মোহন চাপা গরগর করে ওঠে, "বিমান আমার বাল্যবন্ধু, ওর মৃত্যুশোকে আমি পাগল হয়ে গেছি।"
দানা হিমশীতল কণ্ঠে ওকে বলে, "আপনার বাল্যবন্ধু মারা গেছে বলে আপনি পাগল হয়ে গেছেন। আসলে কে এর পেছনে সেটা এক বার খুঁজে দেখবেন না?"
দানা চাইছিল মোহনের সন্দেহের তীর নয়নার দিকে যাক তাই ওই উত্তর দেয়।
মোহন ওকে প্রশ্ন করে, "কি বলতে চাইছেন একটু খুলে বলুন মিস্টার মিন্ডল, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।"
দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, "আপনি কি সত্যি জানেন না, না জেনেও না জানার ভান করছেন মিস্টার খৈতান।"
ইচ্ছে করেই মোহনকে আরো খেপিয়ে তুলে বলে, "দেখুন মিস্টার খৈতান, প্রকল্প নেওয়ার সময়ে মিস্টার বিমান চন্দ আর নয়না আমাদের মাঝে মধ্যস্ততা করেছিল। এবারে যখন ফিরিয়ে দেওয়ার পালা, বিমান চন্দ যখন নেই তাহলে নয়নাকে মধ্যস্ততা করতে হবে। কি বলেন?"
যদি ওর তীর ঠিক নিশানায় লাগে তাহলে এইবারে মোহনের ক্ষোভ ওর বদলে নয়নার ওপরে গিয়ে পরবে। নয়নাকে আক্রমন করে শেষ করে দিক তাহলে ওর পথের কাঁটা আপনা থেকেই সরে যাবে আর তারপরে সঙ্গীতাকে খুনের চক্রান্তের রেকর্ড করা আলোচনা নিয়ে সোজা পুলিসের হাতে তুলে দেবে।
রাজনৈতিক মহল সরগরম। এই এলাকার দুই দলের রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুর পরে বিধায়ক পদের প্রার্থী হিসাবে একা দুলাল মিত্র। বিমানের দল অন্য একজনকে দাঁড় করাবে বলে ঠিক করে আর বাপ্পা নস্করের দল পিছিয়ে যায়। প্রথমে ভেবেছিল বাপ্পা নস্করের স্ত্রী, ঝুমা নস্করকে দাঁড় করাবে কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে এত চুরি জালসাজির তথ্য প্রমান উজাগর হতেই দল পিছিয়ে যায়। একদিন রমলা ফোন করে দানাকে দেখা করতে বলে। দানা জানিয়ে দেয় দেখা করতে পারে, তবে দুলাল মিত্রের সাথে নয়। সেই শুনে রমলা দমে যায়, আসলে দুলাল মিত্র চেয়েছিল দানাকে ব্যাবহার করে এই সিটে পরের নির্বাচন জেতে। কিন্তু দানা সেই পথে হাঁটে না, উল্টে রমলাকে জানিয়ে দেয় যদি রমলা ওর বিরুদ্ধে কোন কুচক্রান্ত করে তাহলে ওর আর দুলাল মিত্রের কানীন সন্তানকে সব বলে দেবে আর দুলালের যে নিষ্পাপ ছবি জনগনের সামনে রয়েছে সেটা খর্ব করে দেবে।
রাতের বেলা বড় আয়নার সামনে প্রসাধনী সারতে সারতে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "মোহন কি বলছে গো? এখন বাপ্পা নস্কর নেই ওইদিকে বিমান চন্দ আর নেই। এইবারে দেখবে মোহন খৈতান আবার দুলাল মিত্রের সাথে মিত্রতা করে বসেছে। সেই বিষয়ে কি কিছু ভেবেছ? মনে রেখো তোমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে কিন্তু এই কয়েক মাসে।"
দানা উত্তর কি দেবে, মহুয়ার মসৃণ পুরুষ্টু অনাবৃত জঙ্ঘা দেখে পাগল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। রুহি তখন ঘুমায়নি, বিছানায় শুয়ে মায়ের বকুনি খেয়ে চোখবুজে এপাশ ওপাশ ধপাস করছে। দানাকে ওই ভাবে তাকাতে দেখে আরও বেশি উত্যক্ত করে তোলে মহুয়া। প্রায় ঊরুসন্ধি পর্যন্ত গাউন টেনে সম্পূর্ণ পেলব জঙ্ঘা অনাবৃত করে দুই হাতে ক্মির মাখিয়ে লাগায়, আর আড় চোখে দানার ছটফটানি উপভোগ করে। নীচে ঝোঁকার ফলে সুউন্নত স্তন যুগল গাউনের ভেতর থেকে বেড়িয়ে পরে। ছোট ব্রার মধ্যে হাঁসফাঁস করে ওঠা নিটোল স্তনের মাঝের গভীর খাঁজ দানাকে হাতছানি দিয়ে ডাক দেয়। দানা চোয়াল চেপে একবার রুহির দিকে তাকায় একবার মহুয়ার দিকে তাকায়। রুহি চোখ চেপে বন্ধ করে পা দাপিয়ে জানিয়ে দেয় এখন ওর চোখে ঘুম আসেনি। বারমুডার ভেতরে পাহাড় তৈরি হয়ে গেছে। ফর্সা জঙ্ঘা জোড়া মৃদু হলদে আলোয় চিকচিক করছে। ঠোঁটে মাখা দুষ্টু মিষ্টি হাসি যেন বলতে চায়, মেয়ে এখন জেগে আছে জিত, সুতরাং কিছু করতে পারবে না।
মহুয়া চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কি হল বিকেলে মোহনের সাথে কি কথা হল বললে না তো?"
দানা মহুয়াকে খুলে বলে বিকেলের বার্তালাপ। সেই সাথে একটু চিন্তায় পরে যায়। মৈনাকের মৃত্যুর সম্বন্ধে পুলিসকে কিছুই জানায়নি দানা তাই মোহন খৈতান আর সিমোনে খৈতানের ওপরে পুলিসের আঁচ পরে না। আগে ওদের পথে বসাতে চায়। বিকেলের কথাবার্তা শুনেই বুঝে গেছে এই অভূতপূর্ব দুর্ঘটনায় মোহন খৈতান পাগল কুকুরের মতন তেতে আছে। বিমান মারা যাওয়াতে ওদের সব শক্তি খর্ব হয়ে গেছে, সম্পত্তির অনেকাংশ বিমান চন্দ আর নয়নার কথায় দানার নামে লিখে দিয়েছিল। সব শুনে মহুয়া ওকে চুপ করে থাকার পরামর্শ দেয়, কিন্তু সেই সাথে জানে মোহন খৈতান ওকে ছেড়ে দেবে না।
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০২)
কয়েক দিন আগেই রুহির স্কুলে এডমিশান করানো হয়ে গেছে। মনার কাজ আরো বেড়ে যায় কিন্তু তাতে ওর দ্বিরুক্তি নেই বরঞ্চ বেশ খুশি। পরেরদিন রুহি প্রথম বার স্কুল যাবে, খুব খুশি। মাম্মা ডাডার সাথে কেনাকাটা করতে বেড়িয়েছে। কেনা কাটার চেয়ে কোন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একটু ফুচকা খাওয়া, কোন রাস্তার দোকানে দাঁড়িয়ে এগ রোল খাওয়া, দুইজনে মেয়ে নিয়ে প্রথম প্রেম করতে বেড়িয়েছে। এতদিনে বাড়ি থেকে ঠিক ভাবে ঘুরতে বের হবার সময় পায়নি। আর আগে যাও বের হত সোজা কোন বড় রেস্তুরেন্তে ঢুকে যেত, রাতের খাওয়া না হয় দুপুরের খাওয়া সেরে বাড়ি। রুহিকে নিয়ে পাশে প্রেয়সীকে নিয়ে এই ভাবে বের হওয়া কোনোদিন হয়নি ওদের। একে গ্রীষ্ম কাল তায় আবার এই মহানগরের ভ্যাপসা গরম, কিছুক্ষণের মধ্যেই হাঁপিয়ে ওঠে দুইজনে। শেষ পর্যন্ত গাড়ি করে একটা বড় মলে এসে ঢোকে।
দানার অনেকদিনের ইচ্ছে মহুয়া জিন্স, শার্ট এই সব আধুনিক পোশাক আশাক পরুক। দানার মন রক্ষার্থে কেনেনি যে তা নয় তবে কোনোদিন পরেনি মহুয়া। বাড়িতে থাকলেও সেই শাড়ি না হয় সালোয়ার কামিজ। কোন কোনদিন অবশ্য লম্বা স্কার্ট টপ পরে, তবে সেদিন দানার দৌরাত্ম বেড়ে যায়। হয়ত মহুয়া রান্না ঘরে অথবা স্টাডিতে অথবা শোয়ার ঘরে কিছু একটা করছে, এমন সময়ে হঠাৎ দানা এসে ওকে জড়িয়ে ধরবে। ইলাস্টিক দেওয়া স্কার্টের কোমর বন্ধনি নামিয়ে দিয়ে নরম পাছার ওপরে হাত বুলিয়ে উত্যক্ত করে তুলবে। শয়তানি আর গেল না। একবার এমন উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল যে সম্পূর্ণ জামা কাপড় খোলার অবকাশ পায়নি দুইজনে। স্টাডির মধ্যে টেবিলে ওপরে মহুয়াকে উঠিয়ে দিয়ে, প্যান্টি সরিয়ে কোনোরকমে প্যান্টের চেন খুলে এক ধাক্কায় লিঙ্গ ঢুকিয়ে দিয়েছিল ওর শিক্ত যোনির মধ্যে। মহুয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গকে ওর শিক্ত কোমল যোনি গ্রাস করে নিয়েছিল তাই উপভোগ করা আর কিছু করার ছিল না। মাঝে মাঝে এমন অতর্কিতে হানা দেয় দানা সেটা যে মহুয়ার খারাপ লাগে তা নয়। খুব ভালো লাগে, সারাদিন সেই অনুভুতি গায়ে মাখিয়ে কাটিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে রান্না করতে করতে কিম্বা অফিসে বসে এমনি এমনি হেসে ফেলে আর শরীর চঞ্চল হয়ে ওঠে, গায়ে কাঁটা দিয়ে দেয়। উফফফ কি না একটা পাগলের পাল্লায় পড়া গেছে।
রুহি একমনে এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দানা আর মহুয়া হাত ধরে হাঁটে। মহুয়া ওর বাজু ধরে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করে, "এই আমরা বিয়ে কবে করবো?"
দানার খুব ইচ্ছে যত তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলা যায়। কত জায়গায় স্বাক্ষর করতে গেলে মাঝে মাঝেই মহুয়া ভুল করে মন্ডল লিখে দেয়। একবার অফিসের মাইনের চেক বাউন্স হয়ে চলে এসেছিল। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার হেসে ফোন করে বলেছিল, "স্যার এই বারে বিয়েটা সেরে ফেলুন।" কি লজ্জার ব্যাপার।
দানা ওর কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে বলে, "চলো আজকে রাতেই সেরে ফেলি।"
মহুয়ার গাল লাল হয়ে যায়, "ইসসস, তাড়া দেখ শয়তানের।"
দানা অবাক হয়ে বলে, "যাঃ বাবা, এই তো তুমি বললে আবার এখন পিছিয়ে যাচ্ছও কেন? বাড়ি থেকে পালিয়ে মন্দিরে কি কেউ বিয়ে করে না নাকি?"
মহুয়া লাজুক হেসে ওর নাক টেনে বলে, "করে তবে মেয়ে কোলে, বি.এম.ডাবলু. চড়ে বাড়ি পালিয়ে কেউ মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে না।"
পাশের একটা দোকানের কাঁচের জানালার পেছনে একটা পুতুল একটা ছোট টপ আর ছোট সাদা রঙের স্কার্ট পরে দাঁড়িয়ে ছিল। দানা সেটা দেখে মহুয়াকে বলে, "ওই পুতুলের জায়গায় তোমাকে দাঁড় করিয়ে দিলে ভালো লাগত পাপড়ি।"
মহুয়া কটমট করে তাকিয়ে বলে, "ওই পোশাক, না না একদম নয়। ইসসস এটা রুহির স্কারটের চেয়েও ছোট। আর তুমি না....." বলতে বলতে ওর স্কার্ট পরে কামকেলির দৃশ্য গুলো মনে পরে যায় আর কান লাল হয়ে ওঠে।
দানা ওর কানে ফিসফিস করে বলে, "স্টাডি না রান্না ঘর, কোথায় হারিয়ে গেলে?"
মহুয়া ওকে মারতে শুরু করে দেয়, "যাও আর কথা বলবো না।"
মাম্মার হাতে ডাডার মার খাওয়া দেখে রুহি হেসে ফেলে, "যাও আর কত্তা বব্ব না।"
দানাও হেসে ফেলে, "তোকে কি করলাম রে বাঃবা।"
মহুয়া অভিমানী কণ্ঠে বলে, "জিন্স কিনলাম কিন্তু পরতে পারলাম কই। কখন কোথাও বেড়াতে নিয়ে গেছ কি?"
সেটা সত্যি, প্রেম করার পর থেকে এই ঝামেলা সেই ঝামেলায় জড়িয়ে পরে ওদের কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। এই শহরের মধ্যে কোথাও গেলে মহুয়া জিন্স পরে বের হবে না। দূরে যদি দানা ওকে বেড়াতে নিয়ে যায় তবেই জিন্স পরবে নচেত নয়।
দানা ম্লান হেসে বলে, "পাপড়ি প্লিস রাগ কর না, এই ঝামেলা মিটে যাক আমি তুমি রুহি মিলে এক মাসের জন্য কোথাও বেড়াতে যাবো।"
বেড়াতে যাবার নাম শুনেই রুহি নেচে ওঠে, "ডাডা কোথায় যাবো?"
মহুয়ার কাছেও এক প্রশ্ন। বিয়ের পরে পূর্বতন স্বামী, রাজেশের সাথে একবার শুধু মাউন্ট আবু বেড়াতে গিয়েছিল তারপরে সেই যে গৃহ বন্দী হয়েছিল কোথাও বের হতে পারেনি। দানার হাত ধরে ওই খাঁচা থেকে বেড়িয়ে রোজদিন যেন ওর সাথে কাটানোটা একটা বেড়ানোর মতন।
দানার হাত খানি শক্ত করে ধরে বলে, "তুমি পাশে থাকলে ওই রান্না ঘর আর স্টাডি আমার বেড়ানোর জায়গা।"
সেটা দানাও জানে অবশ্য তাও এই মহানগরের হইচই ছাড়িয়ে দূরে কোথাও মেয়েকে নিয়ে প্রেয়সীকে নিয়ে বেড়াতে যেতে চায়। এক নয় পাহাড় পর্বতে না হয় কোন সমুদ্র সৈকতে।
দানা ওর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে ফিসফিস করে ইয়ার্কি মেরে বলে, "তাহলে আজ রাতে রান্নাঘরেই বেড়াতে যাওয়া যাক কি বলো?"
ওই কথা শুনে লজ্জায় মহুয়া কোথায় লুকাবে ভেবে পায় না। ওর বাজুতে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "ধ্যাত, তুমি না সবসময়ে। একদম ভাল্লাগে না কিন্তু।"
এমন সময়ে দানার ফোন বেজে ওঠে। ফোন খুলে রমলার নাম দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় দানা। একবার বলে দিয়েছিল যে দুলাল মিত্রের সাথে হাত মেলাতে নারাজ তাও কেন ফোন করেছে? মহুয়া ওকে ফোন তুলে কথা বলতে অনুরোধ করাতে শেষ পর্যন্ত দানা উত্তর দেয়।
ফোন তুলে রমলাকে জিজ্ঞেস করে, "তারপরে কেমন আছো?"
রমলা স্মিত হেসে বলে, "এই ভালো আছি। একটা খবর দেওয়ার ছিল তোমাকে।"
উৎসুক দানা জিজ্ঞেস করে, "কি খবর?"
রমলা ওকে জানায়, কঙ্কনা আর নাসরিন নাকি রমলার পত্রিকার বার্ষিক উৎসবে আসছে না। এই ঝামেলার মধ্যে পড়ে কঙ্কনা আর নাসরিনের কথা এই প্রকার ভুলতে বসেছিল। হঠাৎ রমলার ফোন পেয়ে শরীরের সব স্নায়ু একত্রে সতর্ক হয়ে যায়। সেটা শুনে দানার মাথা গরম হয়ে যায়, রমলাকে শাসায়, নিশ্চয় রমলা ওর নামে কঙ্কনা আর নাসরিনকে লাগিয়ে দিয়েছে তাই ওরা আর এই শহরে আসছে না। রমলা উত্তরে জানায়, এই কয়দিনে দানার নাম যেভাবে খবরের কাগজে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই যে কঙ্কনা আর নাসরিন সেই খবর পড়ে সতর্ক হয়ে গেছে। তবে রমলা সেই সাথে এটাও জানায় যে ওদের এই শহরে অন্য একটা কাজে আসার কথা ছিল। হয়ত রমলাকে না জানিয়ে ওরা সেই কার্যসিদ্ধি করতে আসবে। কিসের জন্য আসবে সেটা অবশ্য রমলা জানে না।
কঙ্কনা আর নাসরিন আসছে না শুনে দানা হতাশ হয়ে পড়ে। যদিও রমলা ওকে কঙ্কনা আর নাসরিনের নতুন ফোন নাম্বার আর ঠিকানা দিয়েছে, কিন্তু অতদুর জায়গায় গিয়ে ওদের খুঁজে বের করে প্রতিশোধ নেওয়া কেমন যেন ঠেকে ওর কাছে।
লোকেশের নামে একটা পোস্ট বক্স ছিল, সেটা লোকেশের বড় ছেলে সোমেশ নিজের নামে করে নিয়েছিল। এতদিন ওই পোস্ট বক্সে দরকারি কাগজ পত্র আসত। যেগুলো সোমেশের দরকারের হতো সেইগুলো রেখে দিয়ে বাকি কাগজ পত্র সব মহুয়াকে পৌঁছে দেওয়া হত।
বিকেলে বাড়ি ফিরে কাজের মেয়ে মণি জানায় মহুয়ার নামে একটা বাক্স এসেছে। একটা মাঝারি আকারের সাদা রঙের কার্ডবোর্ডের বাক্স, তার ওপরে পোস্ট বক্স নাম্বার ছাড়া আর কিছু লেখা নেই। দানা আর মহুয়া মুখ চাওয়াচায়ি করে। এই রকম একটা অদ্ভুত অপরিচিত বাক্সের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করে।
দানা বাক্সটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মহুয়াকে ইয়ার্কি মেরে জিজ্ঞেস করে, "কি গো, নতুন নতুন ল্যাপটপ পেয়ে ইন্টারনেট থেকে ডিলডো অথবা ভাইব্রেটার মার্কা কিছু কিনেছ নাকি?"
মহুয়া কিঞ্চিত রেগে গিয়ে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "ধ্যাত জত্তসব আজেবাজে কথাবার্তা। আমি কোন দুঃখে ওইসব কিনতে যাবো বলো তো? কোন রাতে কি আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও?"
দানা হেসে ফেলে, প্রতি রাতে একবার মহুয়াকে আস্টেপিস্টে ভালো না বাসলে ঠিক ঘুম হয়না। তার ওপরে আবার ফাঁক পেলে একটু এদিক ওদিকে হাত দিয়ে আদর করা, ফাঁক পেলে আর রুহির নজর বাঁচিয়ে রান্না ঘরে অথবা স্টাডিতে একটু কষে আদর করা হয়েই যায়।
দানা ওকে জড়িয়ে ধরে কানেকানে বলে, "চল স্টাডিতে গিয়ে একেবারে একসাথে মিলে এই বাক্স খুলি।"
স্টাডিতে ঢুকে বাক্সটাকে হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে, একবার কানের কাছে ধরে দেখে। এর মধ্যে কেউ আবার বোমা গুঁজে দেয়নি ত? কিন্তু লোকেশের পোস্ট বক্সে আসা, সুতরাং বোমা থাকার সম্ভাবনা খুব কম। সাদা বাক্স খুলতেই ওদের আশ্চর্যচকিত হয়ে যায়। বাক্সের ভেতরে একটা হলদে রঙের আমন্ত্রন পত্র, একটা চাবি আর একটা লাল রঙের একটা কাপড়ের মুখোশ। মুখোশ হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে চেহারার অর্ধেক ঢাকা যায়, সম্পূর্ণ মাথা ঢাকা যায় আর চোখের জায়গায় দুটো ফুটো, সম্ভবত নিজেদের পরিচয় গোপন করার জন্য এই লাল রঙের মুখোশ।
আমন্ত্রন পত্রের এক কোনায় দুটো পান পাতার চিহ্ন, একটা লাল অন্যটা নীল। জলছবিতে এক জোড়া যৌন সঙ্গম রত নর নারীর ছবি। কাগজের ওপরে বড় বড় অক্ষরে গাঢ় বাদামী রঙ্গে ইংরেজি হরফে লেখা "সুধী সদস্য, ওয়ান নাইন সিক্স টু জিরো ফোর টু ফাইভ। রেড এন্ড ব্লু ক্লাব, আপনাকে সাদর নিমন্ত্রন জানায় তাদের বার্ষিক মিলন সম্মেলনে। তারিখ (আগামী কাল) সন্ধ্যে ছ'টা আপনার উপস্থিতি কাম্য। আর.এস.ভি.পিঃ (একটা ফোন নাম্বার দেওয়া)"।
কার্ড, চাবি আর লাল রঙের মুখোশ দেখে দানা আর মহুয়া দুইজনে বিস্মিত হয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই "রেড এন্ড ব্লু ক্লাব" এর কথা মহুয়া লোকেশের মুখে শুনেছিল, দানাকে এই ক্লাবের কথা কঙ্কনা বলেছিল আর একবার গাড়ি চালাতে চালতে নয়নার মুখে শুনেছিল। কিন্তু লোকেশ মারা গেছে তাও কেন এই কার্ড পাঠানো হয়েছে? নিশ্চয় এই ক্লাবের উদ্যোক্তারা এখন হয়ত জানে না যে লোকেশ এই পৃথিবীতে আর নেই। কঙ্কনা লোকেশকে চেনে, সেই ওকে মহুয়ার খবর দেয়, কিন্তু নয়না কি কঙ্কনাকে চেনে? এর উত্তর ওদের জানা নেই। রমলা কি সত্যি জানে না এই বিষয়ে? জলছবি আর পান পাতা থেকে সহজে বোঝা যায় এই সমাগম যৌন কাম ক্রীড়ার সমাগম। কারা এর সদস্য, কি হয় এইখানে? ওই সংখ্যার কি অর্থ, লোকেশের নাম কেন লেখা নেই এই আমন্ত্রন পত্রে? কোথায় এই যৌন সঙ্গমের সমাগম অনুষ্ঠিত হবে সেটা ওই আমন্ত্রন পত্রে লেখা নেই। বহু প্রশ্ন মহুয়া আর দানার মনে ভিড় করে আসে।
দানা ওকে বলে, "কি ব্যাপার বলো তো? এই সংখ্যার অর্থ কি? তোমার কাছে কি লোকেশের কোন ফাইল অথবা জিনিস পত্র আছে?"
মহুয়া খানিক চিন্তা ভাবনা করে বলে, "শ্বশুরজির অনেক ফাইল পত্র আমার কাছে আছে। সব গুলো ঘাঁটার সময় পাইনি। একবার সেই গুলো ঘেঁটে দেখা যেতে পারে। হয়তো কিছু বের হতে পারে।"
পুরানো ফাইল, কাগজ পত্র ঘাঁটতে শুরু করে দুইজনে। বেশ কিছুক্ষণ ফাইল পত্র ঘাঁটার পরে একটা সাদা রঙের খাম থেকে একটা ছোট লাল রঙের প্লাস্টিকের কার্ড পায়। কার্ডের এক কোনায় লেখা "রেড এন্ড ব্লু ক্লাব"। হুবহু হলদে আমন্ত্রন পত্রের মতন লাল কার্ডে একটা নগ্ন নর নারীর যৌন সঙ্গম রত ছবি। কার্ডের ওপরে কারুর নাম লেখা নেই, তার পরিবর্তে একটা রুপোলী অক্ষরে আট অঙ্কের একটা সংখ্যা লেখা – ওয়ান নাইন সিক্স টু জিরো ফোর টু ফাইভ (এক নয় ছয় দুই শূন্য চার দুই পাঁচ) যেটা ওই আমন্ত্রন পত্রে লেখা। তাছাড়া ওই লাল রঙের কার্ডের কোথাও কিছু লেখা নেই। বড় রহস্য জনক ব্যাপার। এই কার্ড দিয়ে কি হবে? ওই মোবাইলে কি কেউ ফোন করবে? ফোন করলে কি উত্তর দেবে দানা? নিশ্চয় এটা কোন অতি গোপনীয় ক্লাব তাই কারুর নাম হয়ত উল্লেখ করা নেই। জলছবি দেখে এই সমাগমের অর্থ বোঝা অতি সহজ। এই ক্লাবের সদস্য কারা হয়? খাম থেকে আরো একটা ছোট কাগজ বের হয়, তার ওপরে লোকেশের হাতে লেখা আরো একটি সংখ্যা – ফোর নাইন টু সিক্স (চার নয় দুই ছয়)।
মহুয়া লাল কার্ডটি হাতে নিয়ে সংখ্যাটি বারেবারে পড়ে দানাকে বলে, "এই সংখ্যাটা শ্বশুরজির জন্মদিন। পঁচিশে এপ্রিল উনিশশো বাষট্টি আমার শ্বশুরের জন্মদিন। যতদূর মনে হয় সবার কার্ডে ওদের নামের জায়গায় ওদের জন্মদিন লেখা। আর যতদূর মনে হয় এই ক্লাবের সব কিছু গোপনীয় কেউ কাউকে নাম ধরে চেনে না। সবাই সবাইকে শুধু ওই সংখ্যা দিয়েই চেনে। আর এই কাগজে লেখা সংখ্যাটা যতদূর সম্ভব ওই ক্লাবের কোন পাসওয়ার্ড না হলে কোন লকারের তালার কম্বিনেশান, তাই এটা নিজের হাতে অন্য জায়গায় লেখা। চাবিটা কোন লকারের হতে পারে।"
একটু খানি চিন্তা করে দানাকে প্রশ্ন করে, "কঙ্কনা আমার শ্বশুরজিকে চেনে, কিন্তু কঙ্কনা নয়নাকে চেনে না। রমলা দুইজনকেই চেনে কিন্তু এই ক্লাবের বিষয়ে কিছু জানে না। বড় ধন্দে পড়া গেল জিত। এখানে যদি সবাই সবাইকে চেনে তাহলে এই কার্ডের ওপরে নামের জায়গায় সংখ্যা কেন লেখা?"
দানা মাথা চুলকিয়ে মহুয়াকে বলে, "ধুর পাগলী, আমি কোনোদিন এই ক্লাবে গেছি নাকি যে জানবো। মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে, দাঁড়াও একটু ভাবতে দাও। হতে পারে রমলা জানে কিন্তু বলছে না।"
মহুয়া হেসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, "তুমি জানবে না তো আর কে জানবে জিত। তুমি যে আমার অভিধান।" একটু ভেবে বলে, "না রমলা কিছু বলতে পারবে না তাহলে ফোনেই তোমাকে জানিয়ে দিত। আরো একটা কথা কেন ভুলে যাচ্ছ। ওই পার্টিতে কঙ্কনার সাথে রমলার প্রথম দেখা তার আগে ওদের পরিচয় ছিল না। আমার মন বলছে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের বার্ষিক সম্মেলনে কঙ্কনা আর নাসরিন নিশ্চয় আসবে। আর এর উত্তর তুমি নয়নার কাছ থেকে পেতে পারো।"
দানা স্মিত হেসে মহুয়াকে চুমু খেয়ে বলে, "হ্যাঁ হতে পারে। আগে চল এই ফোন নাম্বারে ফোন করে দেখা যাক।"
মহুয়া মাথা দোলায়, "হ্যাঁ ফোন করবে, কিন্তু নিজের নাম বলা চলবে না। একটা উলটো পাল্টা নাম ভেবে নাও।"
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment