CH Ad (Clicksor)

Monday, May 4, 2015

মহানগরের আলেয়া_Written By pinuram [পনেরো - রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (০৭ - ০৮)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram




পনেরো

রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#)

এতদিন পরে দানার কাছে সব পরিষ্কার হলো কি ভাবে কঙ্কনা আর নাসরিন ওর ফোন নাম্বার আর আসল পরিচয় যোগাড় করেছে। দেবুকে একবার যদি হাতের কাছে পেত..... দানা মনে মনে হেসে ফেলে, দেবু অনেক আগেই নিজের পাপের শাস্তি পেয়ে গেছে।

কঙ্কনা একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে, "কিন্তু তোমার এই স্বাস্থ্যবান দেহ দেখে আর থাকতে পারলাম না, তোমাকে ইন্দ্রাণীদির কবল থেকে মুক্ত করে নিজেদের কাজে লাগাবো ভাবলাম। আমাদের বাঁধা ছকে তুমি পা দিয়ে ফেঁসে গেলে। তোমাকে খুন করার আমাদের কোন পরিকল্পনা ছিল না কারন তোমাকে দিয়ে আমাদের বেশ কাজ হচ্ছিল। তুমি উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী মহিলাদের সাথে সেক্স করতে। এই উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী মানুষেরা বাগানের মালী, রান্নার লোক, কাজের লোক, গাড়ির চালক এদের মানুষ বলে গন্য করেনা আর সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগালাম। তোমাকে যে পেন দেওয়া হত সেইগুলো আসলে ছোট অত্যাধুনিক মাইক্রোফোন। ওর মধ্যে একটা চিপে কথাবার্তা রেকর্ড করা যায়। ওই পেন থেকে অনেকের গোপন কথোপকথন আমরা জানতে পারলাম। যদিও ওদের ব্লাকমেইল করার ইচ্ছে আমাদের ছিল না, তবে এই উচ্চবিত্ত সমাজে অন্যের গোপন খবর জানা গেলে তাকে দমিয়ে রাখা সহজ হয়। আমাদের কাছে একটা জায়গার কোন বার্তালাপ ছিল না। সেটা হলো, লোকেশের বাড়ির।"

দানার মনে পড়ে যায়, মহুয়া ওকে শোয়ার ঘরে জামা কাপড় খুলে ড্রেসিং গাউন পরে আসতে বলতো। তাই যখন মহুয়ার সাথে কথাবার্তা হতো, তখন ওর কাছে পেন থাকতো না।

কঙ্কনা বলে, "আসলে কি জানো, লোকেশ বাজপাই অত্যন্ত ধূর্ত আর সাঙ্ঘাতিক মানুষ। কচি মেয়েদের ওপরে ওর খুব লোভ। ইচ্ছে করেই রাজস্থানের ছোট জায়গা থেকে ছেলের জন্য বৌমা খুঁজেছিল। হারামির বাচ্চার কপাল দেখো, মহুয়া ভারী সুন্দরী। ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই মহুয়ার ওপরে ওর নজর। ছেলে মারা যাওয়ার পরে সেই সুযোগ একেবারে হাতে চলে আসে।"

এই খবর শুনে দানার সাথে সাথে বাকি লোকেরা চমকে যায়। কিন্তু কঙ্কনা যখন জানে যে মহুয়া বর্তমানে দানার স্ত্রী তাহলে নিশ্চয় ওরা মহুয়াকে দেখেছে অথবা মহুয়ার আসল পরিচয় জানে। সিমোন কি জানে মহুয়া আসলে লোকেশের ছোট ছেলে রাজেশের স্ত্রী?

দানা চোয়াল চেপে গর্জন করে ওঠে, "তোমরা সত্যি বলছো?"

কঙ্কনা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, সত্যি বলছি। বিশ্বাস না হলে লোকেশকে জিজ্ঞেস করে নিও। আসলে কি জানো, আমরা কোনোদিন লোকেশকে ভালো চোখে দেখতাম না। কিন্তু লোকটার অনেক টাকা আর এই যৌন সংসর্গের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করত। ওর বাড়ি আমরা কোনোদিন যাইনি, তাই ওর বৌমা, মহুয়াকে কোনোদিন দেখিনি। তবে যখন সিমোনের মুখে তোমার স্ত্রীর নাম মহুয়া শুনলাম তখন আমাদের সন্দেহ হয়েছিল বৈকি। কিন্তু হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কারন, লোকেশ বেঁচে থাকতে ওর কবল থেকে ওর বৌমাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সাধ্য কারুর নেই। এই আসল কথা বলি, ওই পনেরো কুড়ি দিন তুমি যে মহুয়ার সাথে যৌন সহবাস করেছিলে তাতে লোকেশের তোমার ওপরে সন্দেহ জাগে। বুড়ো ভয় পেয়ে যায়, বারেবারে এই যৌন সংসর্গ করতে করতে তোমার আর মহুয়ার মধ্যে যদি হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। যদি কোনোদিন তুমি ওর বাড়িতে এসে চড়াও হয়ে মহুয়াকে মুক্ত করে নিয়ে যাও? সেই ভয়ে লোকেশ আমাদের নির্দেশ দিল যে তোমাকে মেরে ফেলতে হবে।"

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, এরা এখন জানে না যে লোকেশ মারা গেছে। না জেনেই তাহলে নিজের খুনের চক্রান্তের প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে আর মহুয়াকে মুক্তি দিয়েছে।

দানা প্রশ্ন করে, "যদি লোকেশ তখন আমাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল তাহলে প্রায় এক মাস দেরি কেন করলে?"

কঙ্কনা বলতে শুরু করে, "তোমাকে সোজা মেরে ফেলতে হলে অনেক আগেই গুলি মারতাম, কিন্তু সিমোনের কাছে তোমাকে পাঠানো খুব দরকার ছিল। আসলে সিমোনকে কিছুতেই বাগে ফেলা যাচ্ছিল না। ওই আরেক ধূর্ত কুটিল নারী, নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য যেমন নীচে নামতে প্রস্তুত তেমনি খুন করতেও পিছপা হয় না। ঠিক তাই হল, তোমাকে সিমোনের কাছে পাঠালাম, আর প্রথম দিনেই তুমি আমাদের খবর এনে দিলে। শুধু ওই সাংবাদিকের পরিচয় জানতে পারলাম না, তাহলে একসাথে অনেক কেই বাগে ফেলতে পারতাম। সিমোন সেই সাংবাদিককে খুন করার পরিকল্পনা করছিল সেটা জানা গেল। আগে সিমোন এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ছিল। ওর কাছ থেকে সেই পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ওই বার্তালাপ কাজে লাগালাম। কোটি কোটি টাকা আসে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবে, সব টাকা খরচ হয় না। একবার সমাগমের পরে কেউই আর সেই টাকার আয় ব্যায়ের হিসাব চায় না, ওই টাকা খুব সহজে এদিক ওদিক করা যায়।"

সব কিছু শোনার পরে দানা চুপচাপ ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে চাপা কণ্ঠে বলে, "আমাকে খুনের চক্রান্তের প্রতিশোধ আমি নেব কঙ্কনা। বল কি ভাবে মৃত্যু বরন করতে চাও? রমিজ ভাইয়ের ছুরির ঘায়ে, না এই সাগর জলে সলীল সমাধি লাভ করে।"

কঙ্কনা আর নাসরিন দুইজনেই কেঁদে ফেলে। হাতজোড় করে ক্ষমা ভিক্ষে করে দানাকে বলে, "দানা আমাদের ছেলে মেয়েরা ছোট ছোট। দয়া করে ওদের মুখ চেয়ে অন্তত আমাদের ছেড়ে দাও।"

দানা বাঁকা হাসি হেসে বলে, "আমি যদি পাখীর সাথে দেখা করতাম তাহলে ওকেও তোমার খুন করতে তাই না? তখন শুচিস্মিতা আর দেবাদিত্যের কথা তোমাদের মনে পড়েনি?"

কঙ্কনা আর নাসরিন মাথা নিচু করে বসে থাকে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে নাসরিন মৃত্যু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে, "একটা কথা মনে রেখো দানা, তুমি যে আজকে এই ক্লাবের সমাগমে এসেছ তার মাশুল তোমাকে গুনতেই হবে। সিমোন আর মোহন খৈতান তোমাকে চিনে ফেলেছে। হয়তো তোমার পরিচয় ওই ক্লাবের সবাইকে জানাবে না, তবে ওরা তোমাকে ছাড়বে না, কারন তুমি ওদের অনেক গোপন তথ্য জেনে ফেলেছ। নিজেদের বাঁচানোর জন্য ওরা তোমাকে আর তোমার পরিবারকে আক্রমন করবেই। ইতিমধ্যে ওরা হয়ত তোমার বিরুদ্ধে ফাঁদ তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে।"

দানা মাথা দুলিয়ে হেসে বলে, "ওদের কি ভাবে শায়েস্তা করব সেটা তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই না, নাসরিন। তবে তোমরা যদি আমার কথা মতন কাজ কর তাহলে আমি তোমাদের ছেড়ে দেব।"

দানার কথা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। রমিজ জিজ্ঞেস করে, "কি বলছিস তুই? এই মহিলারা একবার তোকে খুন করার চেষ্টা করেছে, দ্বিতীয় বার করবে না তার প্রমান কি?"

দানা মৃদু হেসে শঙ্করকে জিজ্ঞেস করে, "ও শঙ্করদা, কাবুলি ঘাট আর কতদুর?"

শঙ্কর উত্তর দেয়, "যা ঝড় উঠেছে তাতে প্রায় এক ঘণ্টার মতন আরো লাগবে রে।"

কালো সমুদ্রের মাঝে উত্তাল ঢেউয়ের দোলায় ছোট মাছ ধরার নৌকা খোলামকুচির মতন দুলতে দুলতে কোনোরকমে মোহনার দিকে এগিয়ে চলেছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু অসীম উত্তাল বঙ্গোপসাগর। ওদের অনেক দূরে প্রমোদ জাহাজ। এতক্ষণে নিশ্চয় কঙ্কনা নাসরিন আর দানার অনুপস্থিতিত সবাই টের পেয়ে গেছে। এতদুর থেকে জাহাজের কিছুই পরিস্কার দেখা যায় না। ওদের কাছে কোন দূরবীন নেই যে ওই জাহাজে কি হচ্ছে সেটা একবার দেখে। প্রচন্ড দুলুনির ফলে নাসরিন আর কঙ্কনার নাড়িভুড়ি বেড়িয়ে আসার যোগাড়। নাসরিন জল খেতে চাইলে একজন ওর দিকে একটা জলের বোতল এগিয়ে দেয়। কঙ্কনা আর থাকতে না পেরে নৌকার পাটাতনের ওপরে বমি করতে শুরু করে দেয়।

দানা ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে, "জল খাওয়া হয়ে গেলে তোমাদের ছাড়।"

কঙ্কনা আর নাসরিন ওর কথা শুনে পরস্পরের দিকে তাকায়। তারপরে দানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি বলছো আমাদের ছেড়ে দেবে? আমাদের কি করতে হবে, দানা?"

দানা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে অঙ্ক কষতে শুরু করে। এমনিতে সিমোন জেনে গেছে যে দানা ওই জাহাজে ছিল। যদি ওরা কঙ্কনা আর নাসরিনের দেখা না পায় তাহলে সন্দেহের তীর সোজা দানার দিকেই আসবে। এখুনি কঙ্কনা আর নাসরিনকে মেরে ওর খুনের প্রতিশোধ নেওয়া ভুল পদক্ষেপ প্রতিপন্ন হবে। এরা যখন রমলাকে বলেনি এইখানে আসার কথা তাহলে নিশ্চয় আগে থেকে সিমোনকেও বলেনি যে ওরা এই সমাগমে আসবে। এখন যখন ওদের দেখা হয়েই গেছে তখন সিমোনের বিরুদ্ধে এদের ব্যাবহার করা যায়।

দানা ওদের জিজ্ঞেস করে, "তোমাদের মধ্যে কে ভালো প্রতারনা করতে পারে? আশা করি কঙ্কনা তুমি ভালো পারো?"

নাসরিন চুপচাপ বসে থাকে আর কঙ্কনা কি বলবে ভেবে পায় না।

নিরুত্তর কঙ্কনার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "মৌনং সম্মতি লক্ষনম, তাই ত কঙ্কনা। আমি হলফ করে বলতে পারি আমাকে ফাঁদে ফেলার পুরো পরিকল্পনা তোমার মাথা থেকেই এসেছিল। সিমোনেকে ওই কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র সেটাও নিশ্চয় তোমার মাথার উপজ। তাই তো?"

কঙ্কনা মৃদু মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

দানা বলতে শুরু করে, "তাহলে আমার কথা মন দিয়ে শোনো। তুমি কাল সকালে সিমোনকে বলবে তোমরা ডেকে গিয়েছিলে আর প্রবল ঝড়ের ফলে তোমরা ডেক থেকে জলে পড়ে গিয়েছিলে। জাহাজের অদুরে একটা মাছ ধরার লঞ্চ তোমাদের বাঁচায়। আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে, আমি ওই জাহাজে ছিলাম না। মনে থাকবে?"

কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, কিন্তু সিমোন তোমাকে চিনে ফেলেছে দানা। তোমার মতন পেটানো দেহ বহুবার সিমোনকে যৌন সুখ দিয়েছে, সেই উলঙ্গ দেহ কি করে ভুলবে।"

দানা ওদের বলে, "তুমি গল্প বানিয়ে বলবে, যে ওই ছেলেকে সিমোনের চিনতে ভুল হয়েছে। মুখোশের পেছনে কে ছিল সেটা তোমরা জানো না এবং বিশ্বাসের সাথে বলবে যে ওই ছেলে দানা নয়।"

কঙ্কনা মাথা দোলায়, "ঠিক আছে, সেটা না হয় ওকে আমরা বলব।"

দানা ওদের বলে, "এবারে আমাকে বল, সিমোন আমার বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করছে?"

কঙ্কনা আর নাসরিন দুইজনে মাথা নাড়ায়, "সেটার বিষয়ে জানি না দানা। কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে ওকে সরিয়ে দেওয়ার পরে সেই রকম ভাবে মেলামেশা আর নেই ওর সাথে। তবে জাহাজে তোমাকে দেখে আমাকে বলেছিল যে তোমাকে এইবারে সরাতে হবে। ঠিক কি ষড়যন্ত্র করছে সেটা জানা নেই। সত্যি বলছি দানা..... আমার ছোট ছেলের মাথার দিব্যি দিয়ে বলছি।"

দানা ওদের কথা বিশ্বাস করে নেয়। সিমোন আর মোহন প্রচন্ড ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ, অত সহজে কাউকে নিজেদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানাবে না। একটু ভেবে কঙ্কনাকে বলে, "তুমি ওকে বলবে যে আমার সাথে তোমার দেখা হয়নি। খবরের কাগজে নিশ্চয়ই আমার বিষয়ে পড়ে তুমি রমলার পত্রিকার বার্ষিক উৎসবে আসনি, তাই না?"

কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

দানা ওদের বলে, "তুমি বলবে যে তোমাদের সাথে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু তুমি রমলার মুখ থেকে শুনেছ যে আমি ওকে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। এবং নয়না আমাকে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাব সম্বন্ধে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে।"

কঙ্কনা সঙ্গে সঙ্গে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, সিমোন আর মোহন কথায় কথায় বলে ফেলেছিল যে ওই নয়নার জন্যেই নাকি ওদের বন্ধু বিমান চন্দের মৃত্যু হয়েছে। কি হয়েছিল আসলে দানা?"

দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ সেটা একপ্রকার সঠিক। ওই নয়না দুই নৌকায় পা রেখে চলতে চেষ্টা করেছিল আর যখন বাপ্পা নস্কর, নয়নার সাথে বিমানের যৌন সম্পর্কের বিষয়ে জেনে ফেলে তখন রাগে ওদের খুন করে। সেই খুনোখুনিতে সবাই মারা যায়।"

কঙ্কনা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, "কিন্তু নয়না আর তুমি বেঁচে গিয়েছিলে....."

দানা বাঁকা হেসে বলে, "এত উত্তর দেওয়ার সময় এখন নেই আমার কাছে। তুমি সিমোনকে গিয়ে বলবে আমাকে খৈতানের প্রকল্প গুলো হাতিয়ে দেওয়ার পেছনে নয়নার হাত ছিল। আসলে নয়না চেয়েছিল রাজনীতিতে নামার, তাই প্রথমে আমাকে ব্যাবহার করে বাপ্পাকে সরাতে চেয়েছিল। একবার বাপ্পা নস্কর সরে গেলে ওর ওপরে বিমান চন্দের বিশ্বাস বেড়ে যেত আর তখনি বিমান চন্দকেও পথের থেকে সরিয়ে দিত নয়না। খৈতানের প্রকল্প গুলো আমাকে দিয়ে হাতানোর পেছনেও নয়নার মাথা কাজ করেছে। কিছু বুঝলে?"

কঙ্কনা আর নাসরিন স্তম্ভিত হয়ে ওর কথা শুনে যায়। নাস্রিন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, "তুমি সত্যি বলছো?"

দানা মাথা দোলায়, "সব কিছু সত্যি বলছি আর এই সব কিছু তোমাকে সিমোনে আর মোহনের কানে তুলে দিতে হবে।"

কঙ্কনা ওকে বলে, "কিন্তু কোন প্রমান ছাড়া ওরা এই কথা বিশ্বাস করবে না।"

দানা সেটা ভালো ভাবে জানে তবে ওর কাছে এখুনি কোন প্রমান নেই, তাই ওদের বলে, "দেখো তুমি এইসব ওদের বলবে আর বলবে এই সব কথা তুমি রমলার কাছ থেকে শুনেছ। নয়না আর রমলার মাঝে গভীর সম্পর্ক আছে সেটা অবশ্য তোমার অজানা যাই হোক।"

কঙ্কনা আর নাসরিন মাথা দোলায়, "ঠিক আছে। কিন্তু এটা হলে সিমোন আর মোহনের সব রাগ নয়নার ওপরে পড়বে। তাতে তোমার কি লাভ?"

দানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "সেটাও জেনে তোমার দরকার নেই কঙ্কনা। আমি ঠিক যেমন বলছি তেমন কাজ করলে আমি তোমাদের ছেড়ে দেব। যখন সিমোন রাগে বিতৃষ্ণায় কাঁপতে শুরু করবে তখন তুমি ওকে নয়নাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা বলবে।"

কঙ্কনা আর নাসরিন দানার অনেক কথার অর্থ বুঝতে পারে না তাও মাথা নাড়িয়ে যায়। দানা ওদের বলে, "তুমি সিমোনের কাছে গিয়ে বলবে, যদি নয়নাকে বাগে করতে চায় তাহলে আগে ওর ভাইকে আঘাত করতে হবে। নয়নার প্রান ভোমরা ওর ভাই। ওকে যদি কিছু করে অপহরন করতে পারে তাহলে নয়নাকে অতি সহজে ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হবে। তুমি এটা ওদের বলবে যে আমি ওদের সব প্রকল্প ফিরিয়ে দিতে রাজি আছি। তুমি বলবে যে আমাকে তোমরা মহুয়াকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এইসব কথা বের করেছ। বুঝলে?"

কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ সব বুঝেছি।"

দানা ওদের বলে, "যতদিন না আমার কাজ শেষ হচ্ছে ততদিন নাসরিন আমাদের কাছে থাকবে।"

নাসরিন চিৎকার করে ওঠে, "না, প্লিস আমাকে ছেড়ে দাও।"

দানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "ঠিক আছে তাহলে কঙ্কনা আমাদের কাছে থাকবে আর তুমি এই সব কথা সিমোনকে বলবে। কে আমাদের কাছে থাকবে সেটা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে নাও।"

সব কিছু বলার পরে দানা চুপ করে ওদের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। নিরুপায় নাসরিন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, যতদিন কঙ্কনা এইসব কাজ করবে ততদিন দানার কাছে বন্দী থাকতে রাজি।







রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০৮)

প্রচন্ড ঝড়ের ফলে আর ছোট লঞ্চের ভীষণ দুলুনির ফলে নাসরিন আর কঙ্কনার শরীর খারাপ হয়ে যায়। একে আতঙ্কে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে ছিল, তায় সমুদ্রের ঠাণ্ডা জলো হাওয়ায় ওরা কাবু হয়ে পড়ে। প্রবল ঝড়ের ফলে কাবুলি ঘাট পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের বেশ রাত হয়ে যায়। রাত প্রায় এগারোটা বেজে যায় যখন ওরা কাবুলি ঘাটে পৌঁছায়। কঙ্কনা জানায় মধ্য মহানগরের একটা বেশ বড় হোটেলে ওরা উঠেছে, সেখান থেকে ভাড়ার গাড়ি করে ওরা কাবুলি ঘাটে এসেছিল। দরকারি সব কিচুই হোটেলের কামরায়, তবে ওদের হোটেলের কামরার কার্ড ওই জাহাজে রয়ে গেছে।

মনা ওকে দেখতে পেয়েই তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফোন করতে বলে। মহুয়া চরম উৎকণ্ঠায় কেঁদে কেটে একসা। বিমান বাপ্পার সময়ে ওর হাতে পিস্তল ছিল, সাথে লোকজন ছিল কিন্তু এইবারে যখন মনার মুখে শুনেছে যে দানা একটা লঞ্চে চেপে সমুদ্রের দিকে পাড়ি দিয়েছে, তখন থেকেই বুকের ধুকপুকানি থামেনি।

দানা ফোন করতেই মহুয়া কেঁদে ফেলে, "আমার কথা মেয়ের কথা মনে থাকে না তাই না?" ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে, "কি অদৃষ্টে তোমাকে প্রেম করেছিলাম কে জানে। না তুমি কোথাও যাবে, না আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি।"

দানা চুপ, কি বলবে, ওইপাশ থেকে শুধু ফোঁপানোর শব্দ ছাড়া কিছুই ভেসে আসে না। মহুয়া কিছুতেই ফোন ছাড়বে না, অন্তত দানার নিঃশ্বাসের শব্দটুকু ওর কানের রন্ধ্রে প্রবেশ করে বুকের মাঝে শান্তির মলয় বইয়ে দেয়। শত হোক ঠিক আছে। বেশ কিছুপরে মৃদু কণ্ঠে বলে, "কখন আসছো বাড়িতে? কিছু খেয়েছো?"

দানা এতক্ষণ পরে মুখ খোলে, "এই সোনা, প্লিজ কাঁদে না। দেখো আমি ঠিক আছি, কিছুই হয়নি। তুমি থাকতে আমার গায়ে কি কেউ আঁচড় লাগাতে পারে?"

কান্না ভরা মৃদু হেসে বলে, "হ্যাঁ, আমাকে যেন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলে!"

দানা হেসে ফেলে, "ওইখানে তোমার না যাওয়াই ভালো। যাই হোক কঙ্কনা নাসরিনের খবর পাওয়া গেছে। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যে কঙ্কনাকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে সব কিছু বলছি।"

কঙ্কনার বিষয়ে মহুয়ার মাথাব্যাথা নেই, আবার প্রশ্ন করে সুন্দরী প্রেয়সী, "কিছু খেয়েছো? তোমার’ত আবার জাহাজে চড়লে মাথা ঘোরায়। বমি টমি করনি তো?"

সত্যি মেয়েটা বড় ভালোবাসে। হ্যাঁ তা বাসে বৈকি, পারলে আঁচলের তলায় লুকিয়ে রাখতো, কিন্তু দানা শুনলে তো। দানা হেসে বলে, "তুমি কিছু খাওনি আমি কি করে খেতে পারি।"

কান্না ভেজা গলায় হেসে বলে, "তাড়াতাড়ি এসো, আমি আটা মাখছি।"

"আচ্ছা আসছি।" বলে দানা ফোন রেখে দেয়।

শঙ্কর একটা লুঙ্গি দিয়েছিল সেটা কোমরে জড়িয়ে নেয়। কোন এক ছেলে কঙ্কনার জন্য জামা দিয়েছিল, সেটা কোনোরকমে উলঙ্গ কঙ্কনা গায়ে জড়িয়ে দানার গাড়ির পেছনের সিটে উঠে বসে। কঙ্কনাকে নিয়ে দানা বেড়িয়ে পড়ে মহানগরের উদ্দেশ্যে, আর নাসরিনকে লঞ্চের মধ্যে বন্দী রেখে বাকিরা হিঙ্গলগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে যেতে যেতে শহরের এক জায়গায় থেমে কঙ্কনার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনে নেয়।

দানা জানতে চায় কেন ওরা এই মহানগর ছেড়ে দিয়ে অন্য শহরে চলে গেছে। তার উত্তরে কঙ্কনা জানায় ওর স্বামী শঙ্কর দেবনাথ আর নাসরিনের স্বামী আমজাদের নতুন জাহাজের কোম্পানিতে চাকরি হয়ে যায়, যার জন্য ওদের এই মহানগর ছেড়ে চলে যেতে হয়। তবে বিত্ত মন্ত্রালয়ের সচিব, রাগিণীর সাথে ওদের যোগাযোগ ছিল। রেড এন্ড ব্লু ক্লাব সম্বন্ধে জানতে চাইলে, কঙ্কনা বলে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের উদ্যোক্তা আসলে রাগিণী আর সিমোনের মতন কয়েকজন প্রচণ্ড কামুকী মহিলা বছর ছয়েক আগে শুরু করে। বছর পাঁচেক আগে একটা পার্টিতে রাগিণীর সাথে কঙ্কনার আলাপ পরিচয় হয়, তারপরে ওরা এই ক্লাবে যোগদান করে। বছরে প্রায় পাছ ছয় বার এই রিরংসা মাখা ভীষণ যৌন সহবাসের সমাগম হত। ক্লাবের সদস্যরা সবাই বিশাল বড়লোক, এক রাতের জন্য তিরিশ চল্লিশ লাখ টাকা দেওয়া ওদের পক্ষে কিছুই না। রাগিণীর কাছে এটাও জানতে পারে যে একবার টাকা দিলে সেই টাকার আয়ব্যায়ের খোঁজ খবর কেউ নেয় না। সিমোন এই ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত, ক্লাবের টাকা নাকি নিজের ব্যাবসায় খাটিয়েছে সিমোন। টাকার অঙ্ক দেখে ওদের লোভ হয় আর সেই থেকে ওদের মাথায় ঘোরে কি ভাবে কোষাধ্যক্ষ পদ সিমোনের কাছ থেকে হাতাবে। সেই সুযোগ দানার হাত ধরে ওদের ঝুলিতে এসে পড়ে। সাংবাদিকের খুনের পরিকল্পনা জানিয়ে এই কোষাধ্যক্ষ পদ নিজের নামে করে নেয়। বিভিন্ন পার্টি আর এইরকম গোপন কামক্রীড়ার সমাগমে গিয়ে ওরা নতুন সদস্য খোঁজে।

দানা চুপচাপ সব কিছু শোনার পরে ওকে জানিয়ে দেয় ওর কথা মতন কাজ করলে ওদের ছেড়ে দেবে। কঙ্কনাকে এক সপ্তাহের সময় দেয় দানা, তার মধ্যে যদি কাজ করতে না পারে তাহলে বন্দিনী নাসরিনের মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী। ছোট বেলার বান্ধবী নাসরিনের অসহায় অবস্থা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই কঙ্কনা জানিয়ে দেয় ওর কথা মতন কাজ করবে।

বাড়ি ফিরতে আরো রাত হয়ে যায় দানার। মহুয়া জেগেই বসে ছিল, দানা সেই যে দুপুরবেলায় বেরিয়েছিল, সেই থেকে ওর বুকের ধুকপুকানি বিন্দুমাত্র কমেনি। কি যে করে না মাঝে মাঝে। কিন্তু সেই সাথে জানে, এই সাপ গুলোকে না মারা পর্যন্ত ওরা শান্তিতে চোখ বুজে ঘুমাতে পারবে না। সবসময়ে মাথার মধ্যে মৃত্যু ভয় ঘোরাফেরা করবে।

গাড়ির আওয়াজ পেয়েই দৌড়ে নীচে নেমে জিজ্ঞেস করে, "কিছু খাওয়া দাওয়া করেছ, না কি শুধু....." দানার চেহারা দেখে কথাটা শেষ করতে পারে না মহুয়া।

দানাকে দুইহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে দেয়। ওর বুকের ধুকপুকানির মাত্রা আর কমতে চায় না কিছুতেই। দানা নিজের বুকের সাথে মহুয়াকে মিশিয়ে দিয়ে ওর মাথা চুম্বন করে বলে, "এই পাপড়ি.... এই তো আমি এসে গেছি।"

তাও মহুয়া ওকে ছাড়তেই চায় না। জামার কিছু অংশ জলে ভিজে ওঠে। বুকের ওপরে অশ্রুর সিক্ততা অনুভব করে ওর মুখ আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে দানা। দানার দিকে ভিজে চোখে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে, "চল না আমরা এইখান থেকে কোথাও চলে যাই।"

দানা মৃদু মাথা দোলায়, "কেন এত ভয় পাচ্ছো পাপড়ি?"

মহুয়া মৃদু ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "কেন ভয় পাই? তুমি বাড়ি থেকে বের হও আর আমার এক লিটার করে রক্ত শুকিয়ে যায়। ছেলেটা সময় মতন বাড়ি ফিরবে তো, পথে কিছু হল না তো। গত বার তাও তোমার হাতে পিস্তল ছিল..... এইবারে একেবারে সমুদ্রের মাঝে। কিছু হয়ে গেলে....."

কথাটা আর শেষ করতে পারল না মহুয়া। দানার প্রশস্ত ছাতির ওপরে মুখ লুকিয়ে কেঁপে ওঠে। ওর বুকের উত্তাপ নিজের চেহারায় মেখে নিয়ে নিজের ঠাণ্ডা দেহ খানি উষ্ণতায় ভরিয়ে বাঁচার প্রানশক্তি পুনরায় ফিরে পায়। এতক্ষণ মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে কাঁপতে দানার প্রতীক্ষা করছিল।

মহুয়ার মুখখানি আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে ওর চোখের জল মুছিয়ে দেয়। নরম গালে প্রেমিকের উষ্ণ আঙ্গুলের পরশে প্রান ফিরে পায় মহুয়া। দানা ওকে প্রবোধ উত্তর দেয়, "বেশিদিন নয় পাপড়ি। কঙ্কনা আর নাসরিনকে জালে জড়িয়ে ফেলেছি। ওদের ব্যাবহার করে সিমোন আর নয়নাকে জালে জড়াবো, তারপরে কাজ শেষ।"

একবার ভাবে ওকে কি সত্যি কথা বলে দেবে, কি কারনে কঙ্কনা আর নাসরিন ওকে খুন করতে চেয়েছিল? না থাক, পুরানো কথা না উঠানোই শ্রেয়। নিজের বিরুদ্ধে চক্রান্তের প্রতিশোধ আর মহুয়াকে নির্যাতনের প্রতিশোধ অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছে দানা। এইবারে বাকি শুধু চার সাংঘাতিক হিংস্র মহিলা - কঙ্কনা দেবনাথ, নাসরিন আখতার, নয়না ওরফে শায়ন্তনি বসাক, আর সিমোন খৈতান। নাসরিনকে দেখে মনে হয় বেচারি কঙ্কনার সাথে পড়ে ফেঁসে গেছে। তবে সিমোন আর মোহন খৈতান ক্রোধে ফুঁসছে, যে কোন মুহূর্তে ওর ওপরে আক্রমন করতে পারে ওরা।

এতরাতে রুহির জেগে থাকার কথা নয়। ওর প্রথম স্কুল যাত্রা ঠিক ভাবে উপভোগ করতে পারলো না ভেবে দানার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। কোন রকমে জামা কাপড় ছেড়ে ঘুমন্ত রুহিকে জড়িয়ে ধরে।

মহুয়াও না খেয়ে, ঠাকুরের মন্দিরের সামনে হত্যে দিয়ে বসেছিল। কিছুপরে মহুয়া ওকে এসে তুলে দিয়ে, খেতে ডাকে, "এই এসো রুটি হয়ে গেছে।"

সেই বিকেল থেকে পেটে কিছুই ঠিক ভাবে পড়েনি। খাওয়ার কথা একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল। প্রেয়সীকে পাঁজাকোলা করে তুলে কোলে বসিয়ে নেয়, "কি খাওয়াবে?" বলেই ওর সুডৌল স্তন যুগলের মাঝে মুখ ঘষে দেয়।

ওর মাথার চুল আঁকড়ে বুকের ওপর থেকে মাথা উঠিয়ে বলে, "অনেক প্রেম দেখানো হয়েছে, এইবারে একটু কিছু পেটে দিয়ে আমাকে উদ্ধার করে দাও।"

একপ্রকার কোলের ওপরে বসিয়ে খেতে খেতে রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের ঘটনা বলি বলে। শুনতে শুনতে মহুয়ার গায়ে কাঁটা দিয়ে আসে, "বাপরে, একেবারে মাঝ সমুদ্রে আয়োজন?"

দানার উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, ভীষণ কড়া নিরাপত্তা। সব বাইরে থেকে ভাড়া করে আনা রক্ষী, সবার হাতে বন্দুক।"

মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "আর কি কি হয়েছিল?"

দানা মিচকি হেসে বলে, "উফফফ মাইরি কি সব মালের আয়োজন, সব বড় বড় মডেল অভিনেত্রী, সবাই উলঙ্গ হয়ে যোনি মেলে এরতার সাথে যৌন সঙ্গমে মত্ত। জানো রিচা কাকলী দিব্যা বৈশাখী সুমনা আরো কত নামকরা সব অভিনেত্রী আর মডেল এসেছিল। বুঝলে এরা সবাই আসলে টাকা চেনে, শরীর নস্বর, টাকাই আসল।"

মহুয়া কপট অভিমান দেখিয়ে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ ওই উলঙ্গ অভিনেত্রী গুলোকে দেখো আর আমার বুকে শক্তিশেল বিঁধিয়ে দাও। মরে গেলে শান্তি পাও তাই না।"

দানা ওর কোমর বেশ জোরে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে, "সামনে শত উলঙ্গ অপ্সরা আসলেও তোমার কথা কি আর ভুলতে পারি পাপড়ি? তুমি মিষ্টি, তুমি অনন্যা, তুমি যে বুকের মধ্যে বাস করো।"

মহুয়া ওর মুখের মধ্যে রুটির টুকরো ঢুকিয়ে দিয়ে মৃদু ঝাঁঝিয়ে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ অনেক প্রেম দেখান হয়েছে। এইবারে সত্যি করে বলো তো, আজ রাতে কার কার সাথে সহবাস করলে?" চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "একদম সত্যি বলবে।"

দানা রুটি চিবোতে চিবোতে বলে, "কি করব বল, ওইখানে যদি শুধু মদ নিয়ে বসে থাকতাম তাহলে সবার নজরে পড়ে যেতাম।"

মহুয়া ধমকে ওঠে, "কার সাথে করলে? কে কে ছিল।"

দানা ঢোঁক গিলে বলে, "রিচা আর দিব্যা।"

মহুয়া তিতিবিরক্ত হয়ে কোল থেকে উঠে পড়তে উদ্যত হয় কিন্তু দানার কঠিন বাহুপাশ কাটিয়ে ওঠা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও শরীর বলে কোল থেকে উঠে পড়ো, কিন্তু মন কি আর চায় প্রেমিকের কোল থেকে উঠতে। এক হাতে দানার গলা জড়িয়ে কোমর উঠাতে চেষ্টা করে আর দানা আরো জোরে ওকে ধরে কোলে বসিয়ে দেয়।

মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, "সিমোন নিশ্চয় তোমাকে চিনে ফেলেছে?"

দানা উত্তর দেয়, "হতে পারেন তবে কঙ্কনাকে শাসিয়ে এসেছি।"

মহুয়া ওকে প্রশ্ন করে, "এরপরে কি করতে চলেছ?"

দানা উত্তর দেয়, "আগে নয়নাকে সাজা দিতে হবে তারপরে সিমোন। তবে এর মধ্যে বিশাল কিন্তু আছে।"

এইবলে দানা নিজের পরিকল্পনা মহুয়াকে জানায়। কঙ্কনাকে ব্যাবহার করে নয়নার বিরুদ্ধে সিমোনকে দাঁড় করাতে হবে। দুই শত্রু একে ওপরে বিরুদ্ধে দাঁড়ালে এক জন শেষ হয়ে যাবে, আর দ্বিতীয় জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেবে। তবে কঙ্কনা আর নাসরিনকে নিজে হাতে শেষ করতে চায় না, চায় কোন ফাঁদে পড়ে ওরা শেষ হয়ে যাক।

সকালে ঘুম ভাঙ্গে ছোট্ট রুহির আলতো চুমুতে, "ডাডা আমি স্তুলে যাবো না।"

ঘুম জড়ানো গলায় মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুইয়ে বলে, "কেন মা, কেন যাবি না?"

রুহি ওর গলা আরও কষে জড়িয়ে ধরে বলে, "তুমি চলো আমি যাবো।"

মহুয়া ঘরে এসে দেখে, মেয়ে আর বাপে কোলাকুলি করে গল্পে মেতেছে। রুহিকে উঠিয়ে দিয়ে বলে, "কি হলো, স্কুলে যেতে হবে না?"

রুহি মাথা নাড়ায়, "না, দাবো না।"

দানাকে ঝাঁঝিয়ে ওঠে মহুয়া, "ওঠ তো, আর মেয়েকে তৈরি করো।"

দানা মাথা চুলকে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, "যাঃ বাঃবা আমি কিছুই করলাম না আর আমি তোর জন্য বকা খেয়ে গেলাম।"

রুহি খিলখিল করে হেসে ফেলে। মাম্মা আর ডাডা যখন ঝগড়া করে তখন বেশ উপভোগ করে রুহি। বিশেষ করে মাম্মা যখন ডাডাকে মাঝে মাঝে আদর করে চড় চাপাটি দেয় তখন রুহির বেশ মজা লাগে। তিরিং তিরিং করে লাফিয়ে নেচে বলে, "বেশ হয়েছে বেশ হয়েছে।"

রুহিকে স্কুলে ছেড়ে দিয়ে আগের দিনের মতন মহুয়া স্কুলে বসে থাকে, আর পিন্টু গাড়ি নিয়ে গেটের বাইরে। মনার সাথে দানা বেড়িয়ে পড়ে হিঙ্গল গঞ্জের উদ্দেশ্যে। যতদিন না কঙ্কনা ওর কথা মতন কাজ করছে, ততদিন নাসরিনকে ছাড়া যাবে না। চাইলে ওই সমুদ্রে ওদের মেরে ফেলতে পারতো, কিন্তু তাতে সিমোন রাগিণী সবাই জেনে যেত মুখোশের আড়ালে জাহাজে দানাই ছিল। কঙ্কনাকে জ্যান্ত দেখে ওদের সেই সন্দেহ আর হবে না, হাতে কিছু সময় পেয়ে যাবে পরের পরিকল্পনা করার জন্য। কঙ্কনাকে বলা হয়েছে সিমোনকে কি কি বলতে হবে, কিন্তু কি ভাবে নয়নার ভাইকে অপহরন করবে সেটাই এখন ঠিক করে ওঠা হয়নি। এটাও জানা যায়নি, সিমোন মোহন ওর বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করছে। সেটা অবশ্য কঙ্কনার দ্বারা জানা সম্ভবপর নয়, কারন কোষাধ্যক্ষ পদ চলে যাওয়ার পরে নিশ্চয় কঙ্কনা আর সিমোনের সম্পর্ক অনেকটা আদায় কাঁচকলায় পরিনত হয়েছে।

নাসরিনের জন্য জামা কাপড় কিনে নেয়। হিঙ্গলগঞ্জে গিয়ে মাছ ধরার নৌকায় উঠে নাসরিনের সাথে দেখা করে। নিচের একটা ছোট ঘরের মধ্যে নাসরিনকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। দরজার বাইরে তালা মারা, বাইরে আকরাম আর নাসির বসে। পালা করে গত রাতে নাড়ু, বলাই শক্তি এরা ছিল। দানা ওদের নির্দেশ দেয় যেন কোনোভাবে নাসরিনকে পালাতে না দেওয়া হয়, আর যেন ওর সাথে কোন রকমের অপব্যাবহার না করে।

ছেলে গুলো হেসে ওকে বলে, "মাইরি এত ডবকা সোমত্ত মাগীকে এইভাবে আমাদের কাছে ছেড়ে যাচ্ছিসন আর খালি বাঁড়া ধরে বসে থাকব সেটা হয় কি করে!"

দানা হেসে বলে, "এখন নয়, আগে কাজ হয়ে যাক তারপরে না হয় সবাই মিলে ওকে ভালো করে চুদিস।"




********* পর্ব পনেরো সমাপ্ত **********







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment