CH Ad (Clicksor)

Friday, October 23, 2015

অসীম তৃষ্ণা_Written By pinuram [অষ্টম পর্ব (চ্যাপ্টার ৩ - চ্যাপ্টার ৪)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




অসীম তৃষ্ণা
Written By pinuram




অষ্টম পর্ব

(#০৩)

নার্স পরের দিন সকালেই এসেছিল। সেদিন বিকেল থেকেই মায়ের চরিত্রের পরিবর্তন দেখতে পায় আদি। সব কিছুতেই কেমন যেন হাল্কা একটা ভাব। আদি বুঝতে পারে যে মা নিজেকে খুঁজতে চেষ্টা করছে। ধীরে ধীরে মা প্রচন্ড চুপচাপ হয়ে যায়। কয়েকদিন পরেই নার্স কে ছাড়িয়ে দেয়, বলে যে নার্সের দরকার নেই। ধীরে ধীরে ঋতুপর্ণা নিজেকে নিজের ঘরের মধ্যে বন্দি করে নেয়। সারাদিন নিজের ঘরের মধ্যেই কাটিয়ে দেয়। কোন কোনোদিন বিকেলে কমল জেঠু জেঠিমা এলে বাইরে বের হয় না হলে নিজের ঘর ছেড়ে একদম বাইরে বের হয় না।

আদি বড় ভাবনায় পড়ে যায়, সারাদিন একা একা থেকে ওর মা যদি হঠাৎ কিছু করে বসে তাহলে। যদিও মাঝে মাঝে আদি কমল জেঠিমাকে ফোন করে মায়ের খোঁজ খবর নেয় তবুও ওর মা নিজের চারপাশে এক অদৃশ্য বেড়াজাল বুনে ফেলে। কিছুতেই সেই দুর্ভেদ্য বেড়াজাল ছিঁড়ে মাকে বের করা যাচ্ছে না। এর মাঝে আদি কয়েকবার ডক্টর তৃষাকে ফোন করে মায়ের অবস্থার কথা জানায়। তৃষা জানায় আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে, পারলে মায়ের ঘরে যেন ওদের পুরানো ফটো অথবা আদির কোন স্মৃতি চিহ্ন রেখে দেয়। যদি সেই দেখে ঋতুপর্ণার কিছু মনে পড়ে....

এইভাবে দিন দশেক কাটার পরে একদিন বিকেলে আদি বাড়ি ফিরে দেখে দরজায় তালা মারা। আদির মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ে। এইটাই আদি সন্দেহ করেছিল, ওর মা হয়তো কিছু একটা করে বসবে। সঙ্গে সঙ্গে আদি কমল জেঠুকে ফোন করে। কমল জেঠু জেঠিমা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে, সেই সাথে সোসাইটির অনেক লোকজন ছুটে আসে। ঋতুপর্ণার এক্সিডেন্টের কথা কারুর অজানা নয়, অনেকেই এই রূপসীর আকস্মাত মানসিক আর চরিত্রের পরিবরতনে চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। এর মাঝে এই ঘটনা।

আদি ওদের সোসাইটির দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করে যে সে কিছু জানে কি না। দারোয়ান জানায়, আদি কলেজে বেরিয়ে যাওয়ার কিছু পরেই ঋতুপর্ণা ম্যাডামকে বাইরে যেতে দেখেছে। কথাবার্তা বলে তেমন কিছু অস্বাভাবিক বলে মনে হয়নি, সম্পূর্ণ সুস্থ মনে হয়েছিল। আদি আর জানতে পারে যে মায়ের হাতে একটা ব্যাগ ছিল আর কিছু না। আদি মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে, ওর মা কোথায় যেতে পারে? মুম্বাই ওর বাবা সুভাষের কাছে নিশ্চয় যাবে না, কারন সেই ঠিকানা মায়ের কাছে নেই। বাকিরা ততক্ষণে গার্ড টাকে বকাবকি শুরু করে দিয়েছে। আদির পায়ের তলায় মাটি সরে গেছে, মাথা ঘুরছে, গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কি করবে, কোথায় যাবে কোথায় খুঁজবে। একবার একা ছেড়ে গিয়েছিল তাতেই এই এক্সিডেন্ট আবার এক্সিডেন্ট হলে এইবারে বেঁচে থেকে আর লাভ নেই। অনেকেই পুলিসে এফ.আই.আর লেখানর কথা বলছে।

ঠিক সেই সময়ে আদির কাছে ফোন আসে। নাম্বারটা অজানা। আদি ফোন তুলে হ্যালো বলতেই গলাটা চেনা চেনা মনে হল। দার্জিলিঙে যে হোস্টেলে আদি পড়াশুনা করতো সেই স্কুলের হেডমাস্টার ফোন করেছে।

ফাদার স্যামুয়েল বললেন, "হ্যালো আদিত্য কেমন আছো?"

এত দিন পরে ফাদার স্যামুয়েলের গলার আওয়াজ শুনে আদির খুশি হওয়ার কথা কিন্তু মা নিখোঁজ হয়ে যাওয়াতে মনমরা হয়ে উত্তর দিল, "এই চলে যাচ্ছে ফাদার। আপনি কেমন আছেন?"

ফাদার স্যামুয়েল জিজ্ঞেস করেন, "তোমার মায়ের কি হয়েছে?"

আদি চমকে ওঠে, "কেন ফাদার, কি হয়েছে?"

ফাদার স্যামুয়েলের গলার স্বর বড় গম্ভীর শোনায়, "তোমার মা এই কিছু আগে, স্কুলে এসে তোমার খবর জানতে চাইছিল। তোমার মায়ের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারলাম কিছু একটা বড় ঘটে গেছে।"

মায়ের খোঁজ পাওয়া গেছে জেনে আদি স্বস্তির শ্বাস নেয়। আদি বুঝতে পেরেছিল বেশি দিন নিজের পরিচয় আত্মগোপন করে থাকা সম্ভব হবে না। যে ভাবে নিজের ছেলেকে খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল এই ঘটনা একদিন না একদিন ঘটতই। আদি ধরা গলায় ফাদারকে বলে, "ফাদার, মায়ের একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল তাতে মা সব কিছু ভুলে গেছে।" তারপরে আদি, মায়ের মানসিক অসুস্থতার সম্বন্ধে সব কিছু বিশদে জানায়। তার সাথে এও জানায় যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সন্ধ্যের ফ্লাইট ধরে আদি বাগডোগরা পৌঁছে যাবে। ফাদার জানিয়ে দেয়, ওর মাকে স্কুলের গেস্ট হাউসে রাখা হয়েছে। আদিকে আনার জন্য এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠিয়ে দেবেন।

আদি কোন রকমে একটা ব্যাগে অল্প কিছু জিনিস পত্র নিয়ে দৌড় লাগালো এয়ারপোরটের দিকে। ভাগ্য ক্রমে সন্ধ্যের ফ্লাইটে একটা টিকিট ও পেয়ে গেল। ফ্লাইটে ওঠার আগে একবার ফাদারকে ফোন করে জেনে নিল মায়ের খবর। ফাদার জানিয়ে দেয় যে যত রাত হোক, গাড়ি ওর জন্য তৈরি থাকবে, আর ওর মাকে খুব সাবধানে ওদের গেস্ট হাউসে এক প্রকার নজর বন্দি করে রাখা হয়েছে। আদি এই ব্যাপারে ওর বাবাকে কিছুই জানাল না।

সারাক্ষন শুধু মায়ের চিন্তায় কেটে গেল। বাগডোগরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল। রাতের অন্ধকারে পাহাড়ি রাস্তা ধরে এঁকে বেঁকে গাড়ি দুরন্ত গতিতে ছুটে চলল স্কুলের দিকে। ফাদার মনে হয় ড্রাইভারকে আগে থেকেই বলে দিয়েছিল আদির সম্বন্ধে, সেই জন্য ড্রাইভার বিশেষ কোন প্রশ্ন করেনি। আদির বুকের ধুকপুকানি কিছুতেই আর কমতে চায় না। ঘন্টা তিনেকের মধ্যে গাড়ি স্কুলের গেস্ট হাউসে পৌঁছে যায়। ফাদার স্যামুয়েল আদির জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। আদি পৌঁছাতেই ফাদার ওকে ডেকে আগে নিজের অফিসে নিয়ে যান।

ফাদার জানতে চান আদির মায়ের আসলে কি হয়েছে। আদি সংক্ষেপে ঘটনার বিবরন দিয়ে বলে ওর মা সব কিছুই ভুলে গেছে। মায়ের মনের মধ্যে আদি এখন স্কুলে পড়া ছোট ছেলে আর সেই জন্যেই ছেলের খোঁজে ওর মা এই স্কুলে এসে হাজির হয়েছে। আদির কথা শুনে ফাদার একটু চিন্তিত হয়ে পড়েন, যদিও ওর মাকে বিষদে কিছুই জানানো হয়নি তাও ওর মাকে নিরস্ত করতে সবাই হিমশিম খেয়ে গিয়েছিল। ওর মা প্রথমে মানতেই চায়নি যে ছেলে আর এইখানে পড়েনা। শেষ পর্যন্ত অনেক বুঝিয়ে শুঝিয়ে ঋতুপর্ণাকে বলা হয়েছে যে তিনি যেন গেস্ট হাউসে চলে যান, সময় মতন ছেলেকে নিয়ে আসা যাবে। ওর তাও কিছুতেই নড়তে নারাজ। তারপরে ফাদার জানিয়ে দেয় যে আদি এক স্কুলের কাজে একটু বাইরে গেছে, রাতের মধ্যে ফিরে এলেই মায়ের সামনে প্রস্তুত করা হবে। এই শুনে ঋতুপর্ণা নিরস্ত হন আর শেষ পর্যন্ত গেস্ট হাউসে যান।

রাত অনেক হয়ে গেছে। পুজো এসে গেলেও আকাশে বৃষ্টির আনাগোনা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান। ফ্লাইট থেকে নেমেই বুঝতে পেরেছিল যে ঝড় উঠবে। বাইরে যেমন ঝড় ঠিক তেমনি আদির বুকের ভেতরেও ঝড় চলছিল। এক দৌড়ে গেস্ট হাউসে পৌঁছে যায়। দারোয়ান রুম দেখিয়ে দিতেই দৌড়ে গিয়ে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। আকাশ ততক্ষণে ডাক ছাড়তে শুরু করে দিয়েছে। দরজায় মৃদু টোকা মেরে অস্থির ভাবে দাঁড়িয়ে দরজা খলার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। এক মিনিট যেন এক ঘন্টার মতন মনে হয়। এতখন কেন লাগছে দরজা খুলতে? ভীষণ ব্যাস্ত হয়ে পড়ে আদি। মাকে কাছে না পেলে এক প্রকার মরেই যাবে। আবার টোকা মারে আদি। দ্বিতীয় বার দরজায় ধাক্কা মারার পরে দরজা খুলে যায়।

দরজায় পা রেখে আদি থমকে যায়। মাথার চুল এলোমেলো, চোখ জোড়া জবা ফুলের মতন লাল, মনে হয় কেঁদে কেঁদে একসা হয়ে গেছে। আঁচলটা কোন রকমে কাঁধের একপাশে ঝুলে রয়েছে। মায়ের এই ভগ্ন অবস্থা দেখে আদির কাঁদতে ইচ্ছে করে। যদি সামনে দাঁড়ান মহিলা ওর মা না হয়ে ওর প্রেমিকা অথবা বান্ধবী হত তাহলে আদি এতখনে ওর গালে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দিত।

ধরা গলায়, দাঁতে দাঁত পিষে মায়ের জল ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বুকের ব্যাথায় চাপা গর্জন করে ওঠে, "এই ভাবে কাউকে কিছু না বলে পাগলের মতন কেউ বেরিয়ে যায় নাকি? তুমি কি সত্যি কিছু বোঝ না না বুঝতে চাও না।"

রাগের মাথায় কথা গুলো বলে ফেলার পরে আদির মনে পড়ে ওর মায়ের যে স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়ে গেছে। মা কি করেই বা জানবে যে যার খোঁজে এতদুর একা একা পাগলিনীর মতন ধেয়ে এসেছে সেই মানুষ এতদিন ওর কাছেই ছিল।

আদির এই হঠাৎ চাপা গর্জন শুনে ঋতুপর্ণা ক্ষণিকের জন্য দমে যায়। হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে আদির দিকে একটু রাগ আর অভিমান ভরা চাহনি নিয়ে তাকায় ঋতুপর্ণা। ঋতুপর্ণা কিছুক্ষণ আদির দিকে একভাবে চেয়ে থাকার পরে প্রশ্ন করে, "আমি তো আমার ছেলের খোঁজে এসেছি। তুমি কেন এসেছ এইখানে?"

আদি মায়ের এই কথা শুনে শেষ পর্যন্ত নিজেকে আর সামলাতে পারে না। প্রায় কাঁদো কাঁদ হয়ে মাকে বলে, "এই ভাবে কাউকে না জানিয়ে একা আসতে আছে নাকি? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি করতাম বলো তো? তোমার ছেলে ভালো আছে, ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে এইভাবে তুমি আমাকে না জানিয়ে বেরিয়ে আসবে...."

আর থাকতে না পেরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ঋতুপর্ণা, "আমি কি করব। কিছুতেই যে আমার আদিকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না যে।"

বলেই আদির জামার কলার ধরে বুকের কাছে চলে আসে, "বলো আমার ছেলে কোথায়। তুমি জানো আর তাই তুমি দৌড়ে এইখানে এসেছ। বলো না আমার ছেলে কোথায়?...."

আদি, মা'কে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে। দুই বলিষ্ঠ বাহু ঋতুপর্ণার কোমল দেহ আবদ্ধ করতেই ঋতুপর্ণা অবশ হয়ে যায়। আদির বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে। মায়ের পিঠের ওপরে হাত রেখে মাকে নিজের সাথে মিশিয়ে দেয় আদি। কালো ঘন চুলের মধ্যে মাথা গুঁজে মায়ের সব দুঃখ কষ্ট লাঘব করতে প্রানপন চেষ্টা করে। মাকে জড়িয়ে আদি ভাবতে শুরু করে কোথা থেকে কথা শুরু করবে, কি ভাবে জানাবে যার বুকে মাথা রেখে মা দাঁড়িয়ে সেই ছেলেটাই মায়ের আদি। ফুঁপিয়ে কাঁদার ফলে মায়ের পিঠ ওঠা নামা করে সেই সাথে মায়ের নরম সুগোল স্তন জোড়া আদির বুকের সাথে লেপটে যায়। বুকের থেকে আঁচল সরে যায়, খালি পিঠের ওপরে আদির হাত বিচরন করে। আদির বাম হাত নেমে যায় মায়ের পিঠের নিচে অন্য হাতে মায়ের ঘাড়ের কাছে ধরে মাকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে পাথরের মতন দাঁড়িয়ে থাকে। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে পরে দুইজনের মাঝে।

বেশ কিছু পরে আদি, মায়ের মুখ আঁজলা করে ধরে নিজের দিকে তুলে ধরে। দুই কাজল কালো চোখ থেকে বন্যার জলের মতন অশ্রু এক নাগারে বয়ে চলেছে ঋতুপর্ণার। কিছুতেই সেই কান্নায় বাঁধ লাগাতে পারছে না। আদি মায়ের মুখের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পান পাতার আকারের চেহারা, বড় বড় ছলছল কালো চোখ জোড়া। আদির চোখের সামনে শুধু মায়ের চোখ, মায়ের গোলাপি নরম ঠোঁট জোড়া, মৃদু গরম শ্বাস বইছে সেই অল্প খোলা ঠোঁটের ভেতর থেকে।

ছেলের বিরহে এক প্রকার পাগলিনী হয়ে গেছে কিন্তু তাও এই ছেলেটার আলিঙ্গন যেন শান্তির এক পরত ছড়িয়ে দেয় ওর ফাঁকা বুকের মধ্যে। মুখের ওপরে এই ছেলেটার তপ্ত শ্বাসের বন্যা, গালে তপ্ত হাতের পরশ, শরীর জুরিয়ে যাওয়া উষ্ণতা ঋতুপর্ণাকে শান্ত করে দেয়। ফুলে ওঠা নরম স্তন জোড়া ততক্ষণে আদির বুকের সাথে মিশে গেছে। আদির জামা উপচে ওর গায়ের উষ্ণতা মায়ের ব্লাউজ ভেদ করে নরম স্তন জোড়া ভাসিয়ে তুলেছে। বুকের থেকে আঁচল খসে গেছে অনেক আগেই, কিন্তু সেইদিকে কারুর খেয়াল নেই।

বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মায়ের গালের জলের রেখা মুছাতে মুছাতে আদি বলে, "প্লিজ সোনা, শান্ত হও আমি তোমাকে সব বলব।"

অচেনা অথচ বড্ড কাছের এই ছেলেটার মুখ থেকে "সোনা" শুনে অবাক হয়ে যায় ঋতুপর্ণা। হঠাৎ করে মাকে "সোনা" বলে ফেলে আদিও বড় বিবৃত বোধ করে। ঋতুপর্ণার কান গাল হঠাৎ করে লাল হয়ে যায় লজ্জায়, একি, এই ছেলেটার বুকের মধ্যে লুকিয়ে পড়েছে। আদিও মাকে শরীর থেকে হাত সরিয়ে কাঁধে হাত রাখে। ঋতুপর্ণার কেমন কেমন মনে হলেও শরীর যেন এই পরশে অবশ হয়ে আসে।







(#০৪)

ঋতুপর্ণা ভেবে কূলকিনারা পায় না যে ছেলেটা হঠাৎ করে ওকে "সোনা" বলে কেন ডাকল। এতদিন বাড়িতে থেকে কেন এত সেবা শুশ্রূষা করেছিল। ওকে বাড়িতে দেখতে না পেয়ে কেনই বা এত রাতে দৌড়ে এতদুর চলে এল।

মাকে যে ফিরে পেয়েছে এটাই যথেষ্ট। আদি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে মায়ের মনে অজস্র প্রশ্নের ভিড় জমে উঠেছে। হাজার প্রশ্ন জমা, ছোট্ট বাচ্চার মতন কাঁদো কাঁদো চেহারা মায়ের মুখ দেখে আদির হাসি পায় সেই সাথে এক ভালোলাগা জন্মে ওঠে ওর বুকের মধ্যে। আদির মনে হয় পারলে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে মাকে।

ঋতুপর্ণা ছেলের হাতের ওপরে হাত রেখে আলতো করে গাল থেকে হাত সরিয়ে দেয়। কুসুম কোমল হাত স্পর্শ করে কঠিন হাতের সাথে। চোখের দিকে ঠিক ভাবে চোখ রাখতে না পেরে চোখ নামিয়ে নেয়। তখন বুঝতে পারে যে বুকের থেকে আঁচল সরে গেছে। আড় চোখে একবার ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে নেয় ওর দৃষ্টি কোথায়। না, যাক বাঁচিয়েছে, ছেলেটা একভাবে ওর মুখের দিকেই তাকিয়ে।

আদি মায়ের কাঁধে হাত রেখে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে, "কিছুই খাও নি তাই না?"

অল্প মাথা নাড়ায় ঋতুপর্ণা। ছেলেটা কলেজে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই কোন রকমে আদির খোঁজে এক প্রকার পালিয়ে এসেছে দার্জিলিংয়ে।

আদি মায়ের কাঁধ ধরে আলতো ঝাঁকিয়ে বলে, "এতই যখন মরতে ইচ্ছে তখন আমাকে সাথে নিয়ে মরতে পারলে না।"

ছেলেটাকে যত দেখে আর যত ওর কথাবার্তা শোনে তত বিস্মিত হয় ঋতুপর্ণা। ইসসস, বালাই ষাট, একে নিয়ে কেন মরতে যাবে, যদি মরতেই হয় তাহলে নিজের ছেলেকে সাথে নিয়েই যাবে। আলতো কাঁধ ঝাঁকিয়ে কাঁধ থেকে ছেলেটার হাত সরাতে চেষ্টা করে কিন্তু ছেলেটার হাতের থাবার বড় জোর, শক্ত করে ধরে থাকে ওর কাঁধ মনে হয় যেন পাখী ধরে রেখেছে একটু শিথিল করলেই উড়ে পালিয়ে যাবে। ছেলেটা মনে হয় বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। ঋতুপর্ণার ধৈর্যের বাঁধে একটু ফাটল দেখা দেয়।

মৃদু ঝাঁঝালো সুরে ছেলেটাকে বলে, "এতই যখন আমার প্রতি টান তাহলে আমার ছেলেকে খুঁজে এনে দাও!"

আদি এইবারে হেসে ফেলে, "হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ, খুঁজে এনে দেব। কিন্তু এইবারে লক্ষী মেয়ের মতন কান্না থামিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নাও। মনে হয় না এত রাতে কোথাও কোন খাবার দাবার পাওয়া যাবে।"

ছেলেটার কথাবার্তা আর ভাব দেখে ঋতুপর্ণা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না কেন এই ছেলেটাকে এত কাছের বলে মনে হচ্ছে। ছেলেটার কথাবার্তা ভাব ভঙ্গি আচার ব্যাবহার এই কয়দিনে বেশ নজর করেছে। ক্ষণিকের জন্যেও মনে হয়নি যে ছেলেটার কোন কুমতলব আছে। বারং বার ছেলেটার পরিচয় খুঁজতে চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু এক দ্বিধা বোধ আটকে রেখেছিল। কিন্তু ছেলেটা যে কিছুতেই ওকে সত্যি কথা বলছে না। চোখ ফেটে আবার জল বেরিয়ে আসার যোগাঢ়। এতদুর এসেও কেউ ওর ছেলের খোঁজ দিচ্ছে না উলটে স্কুলের ফাদার ওকে এই গেস্ট হাউসে নজর বন্দি করে রেখেছে।

মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আদি বুঝতে যে ওর মা ওর কথা একবিন্দুও বিশ্বাস করতে পারছে না। আদি পড়ল মহা ফাঁপরে, কি করা যায়, কিছু করে হোক মাকে শান্ত করতে হবে। এক বার বাড়িতে নিয়ে যেতে পারলে স্বস্তি। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একবার ডক্টর তৃষার সাথে আলোচনা করা যাবে, পারলে একবার দেখিয়ে নিয়ে আসবে। যদি কাউন্সিলিং করে কোন কাজে দেয়। কিন্তু এইদিকে মা যে একদম বেঁকে বসেছে, নিজের ছোট ছেলে আদিকে না দেখতে পারলে শান্তি পাবে না। আদি বেশ বুঝতে পারল শেষ ধাক্কাটা এখন না দিলেই নয় এর পরে দেরি হয়ে গেলে হয়তো এই রাতেই মা কিছু একটা বিপদ ঘটিয়ে বসবে।

আদি দুই হাতের মধ্যে মায়ের হাত ধরে বলে, "প্লিজ আমাকে একটু বিশ্বাস কর। আমি তোমাকে সব বলব।"

ঋতুপর্ণা মাথা ঝাঁকিয়ে ধরা গলায় বলে, "বিশ্বাস, কাকে ঠিক ভাবে বিশ্বাস করব ভেবে পাচ্ছি না। আমার স্বামী আমাকে ধোঁকা দিল, আমি ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না, তোমার কেউ বলতে চাইছ না আর তারপরে বলছ তোমাদের বিশ্বাস করতে?"

গত কয়দিনে বাড়িতে বসে বসে ঋতুপর্ণা নিজেকে খুঁজতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কিছুতেই আশে পাশের সবার সাথে তাল মেলাতে পারছিল না। কিছুতেই মেলাতে পারছিল না যে পাশের ঘরে থাকা ছেলেটা আসলে ওর কে হয়, কেন ওর ওপরে এত নজর, কেন ওকে ভালবাসে। স্বপ্নের মতন সব কিছু যেন ধোঁয়াশা ঠেকায় ওর সামনে। এই যে ছেলেটা দৌড়ে এসেছে এর চেহারা কোথায় দেখেছে সেটাও ঠিক ভাবে মনে করতে পারছে না। হাতের ওপরে হাত পরতেই ঋতুপর্ণার শরীর অবশ হয়ে আসতে শুরু করে দেয়।

আদি মায়ের হাত দুটো ধরে বিছানার ওপরে বসিয়ে দেয়। নিজে মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। আদি মায়ের হাত দুটো মুঠো করে ধরে আলতো চেপে বলে মায়ের চোখে চোখ রেখে বলে, "আমাকে বিশ্বাস করে দেখো, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না।"

ঋতুপর্ণা কাকে ঠিক ভাবে বিশ্বাস করবে ভেবে পায় না, তাও এই হাতের ছোঁয়ায় এক নিবিড় ভালোবাসার পরশ খুঁজে পায়। খানিক লজ্জা, খানিক দ্বিধা বোধে ঋতুপর্ণা আদির মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে, কিন্তু আদির হাতের মুঠো কিছুতেই শিথিল হয় না। ঋতুপর্ণা নিচু গলায় উত্তর দেয়, "আচ্ছা বিশ্বাস করে নিলাম, কিন্তু কথা দাও যে আমার ছেলেকে খুঁজে দেবে।"

আদি মুচকি হেসে বলে মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, "আচ্ছা হ্যাঁ দেব, কিন্তু...."

ঋতুপর্ণা ছেলেটার হাসি হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, "কিন্তু কি?"

আদি হেসে বলে, "তোমার ওপরে অনেক ধকল গেছে বুঝতে পারছি এইবারে কাপড় ছেড়ে একটু রেস্ট নাও। আগামি কাল কলকাতা ফিরে গিয়ে তোমার ছেলের খোঁজ করব।"

ভুরু কুঁচকে তাকায় ঋতুপর্ণা, কলকাতায় কেন, ওর ছেলে কি এই স্কুলে আর পড়ে না? তাহলে কোথায় ওর ছেলে? সেই সাথে দ্বিধা বোধ ভর করে মনের মধ্যে, এই রাতে কি এই রুমে এই অচেনা ছেলেটার সাথেই কাটাতে হবে নাকি?

ঋতুপর্ণা জিজ্ঞেস করে, "তা না হয় কাপড় ছারতে যাচ্ছি কিন্তু, আমার ছেলে কলকাতায় আছে সেটা এতদিন আমাকে বল নি কেন?"

আদি হেসে উত্তর দেয়, "সব কিছুর উত্তর ঠিক সময়ে পেয়ে যাবে।"

আর একটু হলেও, মামনি বলে ফেলছিল আদি কিন্তু সামলে নিয়ে বললো, "আরে বাবা বলছি তো আমি তোমার ছেলেকে তোমার কাছে এনে দেব। আর হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নাও। সকাল থেকে টেনশানে আমাকে একেবারে মেরে ফেলেছ প্রায়।"

ছেলেটার কথা বার্তা শুনে আর হৃদ্যতা দেখে অদ্ভুত এক ভালো লাগা মনের গভীরে উদয় হয় ঋতুপর্ণার। চোখ বড় বড় করে আদির দিকে তাকিয়ে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি! একেবারে মরেই গেছিলে নাকি?"

মায়ের কথার ধরন শুনে আদির বেশ ভালো লাগে। গত দশ দিনে মাকে মন মরা হয়ে থাকতে দেখেছে। এতদিন পরে হাসি হাসি মুখ দেখে আদি হেসে বলে, "তা আর বলতে, যদি ফাদার আমাকে ফোন না করতো তাহলে একেবারে অক্কা পটল যেতাম বুঝলে।"

আদি মায়ের নরম হাত টেনে বুকের ওপরে চেপে ধরে। বুকের ধুকপুকানি ততক্ষণে যদিও অনেক কমে এসেছিল কিন্তু মায়ের নরম হাতের ছোঁয়ায় সেই ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে ওঠে। কেন বেড়ে ওঠে আদি ঠিক জানে না তবে আদির মনে হয়, সামনে বসা এই মহিলাকে শুধু মা বলে নয় নিজের প্রেমিকার মতন ভালবাসতে, লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করছে। এই সুপ্ত বাসনা আদির মনের গহীনে অনেকদিন ধরেই ছিল।

ছেলেটার বুকের ওপরে হাত রাখতেই ঋতুপর্ণা কুঁকড়ে যায়। উফফ, কি ভাবে ধুকপুক করছে ছেলেটার বুক। বড় শক্ত ছাতি। একটু আগে যখন কলার ধরে ওই ছাতির ওপরে মাথা রেখেছিল তখন মনে হয়েছিল এর চেয়ে নিরাপদ স্থান এই পৃথিবীতে আর নেই। ওর মনের গভীরে এই বিশাল ছাতির সাথে মিলিয়ে যাওয়ার এক সুপ্ত বাসনা মাথা চাড়া দিয়েছিল কিন্তু ছেলেটা বয়সে বেশ ছোট, সঠিক ভাবে চেনা পরিচয় নেই। নির্লজ্জের মতন নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি।

আদি বুকের ওপরে মায়ের হাত চেপে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে, "এইবারে কিছু মনে হচ্ছে কি?"

ঋতুপর্ণার কান গাল লজ্জায় ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হতে শুরু করে দেয়। ইসস ছেলেটা কি যে করছে না, এইভাবে বসে থাকতে খুব ভালো লাগছে। মনের গভীরে এক সুপ্ত ইচ্ছে জেগে ওঠে, ছেলেটাকে আরো কাছে পেতেও ইচ্ছে করে। নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে লজ্জিত ভাবে বলে, "হ্যাঁ মনে হচ্ছে যে তোমাকে বিশ্বাস করা যায়। এইবারে যদি একটু হাতটা ছাড় তাহলে ফ্রেশ হতে পারি।"

আদি মায়ের হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, "এই তো... এইবারে মনে হচ্ছে তুমি আমার সেই...."

থেমে গেল আদি, এখুনি বলবে না পরে বলবে। না থাক, আগে ফ্রেস হয়ে আসুক তারপরে না হয় ধীরে সুস্থে আলাপ আলোচনা করা যাবে।

ঋতুপর্ণা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সঙ্গে আনা ছোট ব্যাগ খুলে তোয়ালে আর স্লিপ নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়। মনের অলিন্দে এক নতুন সুরের বাজনা বাজতে শুরু করে দেয়। যদিও এই সঙ্গীতের কারন তার অজানা তাও বেশ ভালো লাগে। ঋতুপর্ণার সারা চেহারায় নতুন প্রেমের লজ্জিত ভাব মাখা। অঙ্গে যেন দোলা লেগে গেছে এই পুরুষের ছোঁয়ায়। সুভাষ চলে যাওয়ার পরে মনে হয় কোন পুরুষ ওকে এইভাবে নাড়া দিল।

আদি একভাবে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। এক্সিডেন্ট হওয়ার পরে আর এই কয়দিনে ওর মায়ের বয়স যেমন কমে গেছে তেমন যেন রূপের ডালি আরো বেড়ে উঠেছে। ডক্টর তৃষা বলেছিল যে মায়ের মতিগতি বদলাতে পারে, মুড সুইং অর্থাৎ মেজাজ বদলাতে পারে। কোনদিকে সেই বদল যাবে সেটা এখন সঠিক ভাবে জানা নেই তবে বুকের ওপরে যখন হাত রেখেছিল তখন মায়ের চেহারার রক্তিম লালিমা দেখে আদির বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে উঠেছিল। একবার মনে হয়েছিল জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে সত্যি কথাটা বলেই ফেলে। যে কোন মানুষ এই অসম্ভব সুন্দরীর প্রেমে পড়ে যেতে বাধ্য। আদির বুকের পাঁজর চেঁচিয়ে ওঠে, "তুমি আমার মা, তুমি আমার প্রেমিকা আমার ভালোবাসা আমার সবকিছু। তোমাকে ছেড়ে কি করে থাকতে পারি বল।"

আদির ওপরে কম ধকল যায়নি। কলেজ থেকে ফিরেই না খেয়ে না দেয়ে দৌড় লাগিয়েছে মায়ের খোঁজে। বাগডোগরা নেমে শুধু এক কাপ চা খেয়েছিল আর কিছুই খাওয়া হয়নি, তাও সেই রকম খিদে পায়নি। মনের ভেতরে বেশ একটা খুশি খুশি ভাব। প্রায় দিন পনের পরে মায়ের সাথে "হ্যাঁ" আর "না" ছাড়া বেশ কথা বার্তা হয়েছে। এখন কার জন্যেই এটাই যথেষ্ট। বাথরুমে ঢোকার আগে মায়ের ঠোঁটের মুচকি হাসি দেখে মনে হয়েছিল আকাশের বাঁকা চাঁদ। একবার মনে হয়েছিল জড়িয়ে ধরে ওই গোলাপি গালে চুমু খায়। মা হলেও ওর ভালোবাসার পাত্রী বটে এই নারী।

স্কুলের গেস্ট হাউসের রুমটা বিশেষ বড় নয়। এটা কোন হোটেল নয়, স্কুলের গেস্ট হাউস তাই রুমটা বিশেষ বড় নয় তবে বেশ গুছানো, এক রাত কাটানোর মতন বেশ। মাঝখানে একটা বড় বিছানা, একপাশে একটা বড় আলমারি, বিছানার অন্যপাশে ড্রেসিঙ টেবিল আর তার সামনে একটা টুল। এই বিছানায় এক সাথে রাত কাটাবে নাকি? মা হয়তো রাজি হবে না এক অচেনা পুরুষের সাথে এক বিছানায় শুতে। রাজি না হলে পাশের কাউচে রাত কাটিয়ে দেবে।

বাথরুমে ঢুকে শাড়ি ব্লাউজ ছেড়ে আয়নায় তাকাল নিজের দিকে ঋতুপর্ণা। হসপিটালে যে ঋতুপর্ণা ছিল সেই ঋতুপর্ণা এখন আর ওর সামনে দাঁড়িয়ে নেই। এই কয়দিনে যদিও নিজেকে বহুবার আয়নায় দেখেছে তাও কেমন নতুন মনে হয় আয়নার ভেতরে দাঁড়ানো প্রতিফলনটাকে। ওর শুধু মনে আছে যে কিছু এক কারনে হসপিটালে ছিল, তারপরে বাড়ি আর এই বাইরে দাঁড়ানো ছেলেটা, এর বেশি কিছুই অঙ্ক মিলছে না। ঘুমালে মাঝে মাঝে আবছা আবছা টুকরো টুকরো ছবি ভেসে ওঠে কিন্তু তার অর্থ ঋতুপর্ণার বোধ গম্য হয় না। হয়তো ওই টুকরো টুকরো আবছা ছবি গুলোর উত্তর এই ছেলেটার কাছে থাকবে। তাড়াহুড়োতে শুধু মাত্র একটা স্লিপ, একটা তোয়ালে অল্প কিছু প্রসাধনি নিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল। আগামি কাল বাড়ি ফিরতে হলে এই পোশাকেই ফিরতে হবে।

সায়ার দড়িতে টান মারলo। ধীরে ধীরে সায়া কোমর ছাড়িয়ে নিচে নেমে গেল। এতদিন পরে নিজের নগ্নতা দেখে নিজেই কেমন লজ্জা পেয়ে গেল ঋতুপর্ণা। নরম দুই জোড়া স্তন একটা ছোট লাল ব্রার মধ্যে ঢাকা, আর পরনে একটা লাল প্যান্টি। নিচের ঠোঁট কামড়ে লাজুক হেসে শেষ পোশাক টুকু খুলে ফেলে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরে। শাওয়ারের ঈষদুষ্ণ জলের তোড়ে সারাদিনের ক্লেদ ক্লান্তি ধুয়ে যায়। বুক ভরে শ্বাস নেয় ঋতুপর্ণা, অজানা ভালোলাগায় রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। একটু গভীর ভালোবাসা, একটু নিবিড় করে কাউকে জড়িয়ে ধরা, এক জোড়া কঠিন বাহুপাশের আলিঙ্গন যেন ওকে ডাকছে। স্নান সেরে তোয়ালে দিয়ে ভালো করে গা হাত পা মুছে নিল। জলের ছোঁয়ায় না নিজের হাতের ছোঁয়ায় না অজানা ভালোলাগায় ঠিক জানা নেই, স্তনের বোঁটা জোড়া বেশ ফুলে উঠেছে। দুই ঊরুতে এক কাঁপুনি, বুকের রক্তে অজানা এক ছলকানি, ধমনিতে অজানা উষ্ণতা, সব কিছু মিলিয়ে ঋতুপর্ণা যেন উড়ে চলেছে এই অজানা দিগন্তের পানে।

স্লিপ খানা গায়ে চড়ানোর পরে বুঝতে পারল তাড়াহুড়োতে হাতের কাছে যা পেয়েছে সেটাই নিয়ে চলে এসেছে। সাটিনের গোলাপি রঙের স্লিপটা হাঁটুর কাছে এসে শেষ হয়ে গেছে, কাঁধে পাতলা দুটো স্ট্রাপ, সামনে পেছনে বেশ ফাঁকা। বাড়িতে নিজের ঘরে শুতে যাওয়ার আগে এই পোশাক পরে। ইসস বড় লজ্জায় পড়া গেল, এই পোশাকে কি ওই ছেলেটার সামনে যাওয়া যায়, এ যে ওকে ঢেকে রাখার চেয়ে অনেক বেশি উন্মুক্ত করে ফেলেছে। তার ওপরে আবার ভেতরে কিছুই পরা নেই। স্তনের বিভাজন যেন ঠিকরে সামনের দিকে বেরিয়ে এসেছে, শক্ত স্তনের বোঁটা জোড়া স্লিপ ফুঁড়ে সামনের দিকে উঁচিয়ে গেছে। চুল একটু ভিজে গিয়েছিল, সেই জলে পিঠের দিকটা একটু ভিজে গেছে। দুই মসৃণ উরুর মাঝের, ওর নারী অঙ্গের চারপাশে ঘন কালো কেশের বাগান ভিজে গিয়েছিল। জল মুছে ফেলার পরেও সাটিনের স্লিপ কেমন দুষ্টুমি করে পায়ের সাথে লেপটে গেছে। একটাই তোয়ালে, এই দিয়ে এক নয় শরীরের উপরে জড়ানো যায় না হয় কোমরে পেঁচিয়ে বেরিয়ে আসা যায়। যা হবার হবে, ছেলেটাকে দেখে বেশ ভালোই লেগে গেছে, অন্তত ছেলেটা ওর কোন ক্ষতি করবে না, করার ইচ্ছে হলে এতদিনে করেই দিত। এইভাবে পদ্ম পাতায় শিশিরের বিন্দুর মতন আগলে রাখত না।

অনেকক্ষন হয়ে গেছে মা বাথরুমে ঢুকেছে। জল পরার আওয়াজ অনেক আগে থেমে গেছে তাও দেরি দেখে আদির মনে ভয়ের সঞ্চার হল। মাথা ঘুরে পরে যায়নি তো? হয়তো ক্লান্তির ফলে অথবা চিন্তার ফলে কিছু হয়ে যেতে পারে। ইতস্তত করতে করতে আদি শেষ পর্যন্ত বাথরুমের দরজায় টোকা মারে। একবার নাড়া দিল, কিন্তু ভেতর থেকে কোন আওয়াজ এলো না।

দ্বিতীয় বার একটু জোরেই নাড়া দিয়ে ডাক দিল, "কি হলো, এত দেরি করছো কেন? কিছু হয়নি তো?"

আষাঢ়ের মেঘের মতন গভীর এই ছেলেটার গলা, তাড়াতাড়ি তোয়ালেটা গায়ে জড়িয়ে উত্তর দেয় ঋতুপর্ণা, "না না, এই হয়ে গেছে।"





কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment