আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
অসীম তৃষ্ণা
Written By pinuram
Written By pinuram
অষ্টম পর্ব
(#০১)
সুভাষ বেরিয়ে যাওয়ার পরে অনেকক্ষণ পর্যন্ত আদি চুপচাপ চেয়ারে বসে থাকে। অনেক প্রশ্নের উত্তর ওর আর জানা হল না, কোনোদিন জানতে পারবে কি না সেটা সন্দেহ আছে। যে ওকে আসলে জন্ম দিয়েছিল সে কেন ওকে ছেড়ে চলে গেল? তবে ওকে ছেড়ে চলে যাওয়াতে আদির সুবিধা হয়েছে। ভালোবাসা, মায়া মমতা, ওকে বড় করা কোন কিছুতেই সুভাষ আর ঋতুপর্ণা কোনদিনের জন্য কার্পণ্য করেনি। ঋতুপর্ণা এখন পর্যন্ত জানে না যে আদি ওর নিজের ছেলে নয় তাই চোখ খুলেই স্নেহারত মায়ের মতন আদিকে খুঁজেছিল কিন্তু ওর মা যে ওকে চিনতে পারছে না। আদির ফাঁকা বুক আবার টনটন করে ওঠে।
দুপুরের পরে ঋতুপর্ণার জ্ঞান ফেরে। জ্ঞান ফিরতেই ঋতুপর্ণার সেই এক চাহিদা, নিজের ছেলেকে দেখতে চায়। আদি প্রথমে মায়ের সামনে যেতে সাহস পায়নি। পাছে ওকে দেখে ভুল ভেবে বসে। ওর পাশে কেউ নেই, হঠাৎ করে বড় একা নিঃসঙ্গ বলে মনে হয় নিজেকে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার তৃষা হালদার আদিকে বলেন, "তোমার মায়ের পোস্ট ট্রমাটিক রেট্রোগ্রেড অ্যামনেশিয়া হয়েছে।"
আদি হাঁ করে ডক্টরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ডক্টর তৃষা আদির অবস্থা বুঝে বলেন, "তোমার মায়ের মনের মধ্যে, সময় থমকে গেছে দশ বছর আগে। তোমার মা, তোমাকে দশ বছর আগের হিসাবে খুঁজছে। তোমার চেহারা এই দশ বছরে অনেক বদলে গেছে। তুমি এখন ক্লাস সিক্সে পড়া সেই ছোট আদি নেই। তোমার মায়ের মাথায় তোমার যে ছবি আঁকা তার সাথে কিছুতেই বর্তমানের আদিকে মেলাতে পারছে না। এমত মানসিক অবস্থায় তোমার মায়ের সাথে খুব সাবধানে কথাবার্তা বলতে হবে। দশ বছর আগে সঠিক কি হয়েছিল যার জন্য তোমার বাবা মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হয়েছিল, সেটা সম্বন্ধে কি তুমি কিছু জানো?"
আদি মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় সেই ব্যাপারে কিছুই জানে না। ডক্টর তৃষা জানায়, "সেটা জানলে হয়তো একটু ভালো হত।"
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে জিজ্ঞেস করেন, "তোমার বাবার সাথে কি একবার কথা বলা যাবে?"
আদি, ডক্টরকে সুভাষের ফোন নাম্বার দেয়। তৃষা জানিয়ে দেয়, সুভাষের সাথে কথাবার্তা বলে তারপরে জানাবে।
আদি, তৃষাকে প্রশ্ন করে, "মা যদি আমাকে চিনতে নাই পারল, তাহলে বাড়ি নিয়ে কি করে যাবো?"
তৃষা একটু ভেবে উত্তর দেন, "নিজের বাড়ি তোমার মা চিনতে পারবেন, কিন্তু সেই বাড়িতে তুমি থাকলে তোমার মায়ের মনে সন্দেহ জাগবে। সেটা কি করে কাটানো যায় সেটাই বড় চিন্তার বিষয়।"
আদিও চিন্তায় পড়ে যায়। এক বাড়িতে এক ছাদের নিচে মায়ের সাথে অচেনা মানুষের মতন কি করে কাটানো সম্ভব। একটা উপায় বের করতেই হবে, নাহলে মা ওর সাথে থাকতে চাইবে না।
কড় গুনতে গুনতে, এদিক ওদিকে তাকিয়ে সাত পাঁচ চিন্তা ভাবনা করতে করতে আদি, তৃষার চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসে। পায়ে পায়ে, চুপচাপ আই.সি.ইউর সামনে এসে দাঁড়ায়। কাঁচের দরজার পেছনে, সাদা বিছানায়, সাদা চাদরে ঢাকা নিস্তব্ধ, নিশ্চল হয়ে শুয়ে থাকা ঋতুপর্ণার দিকে একভাবে চেয়ে থাকে। কাঁচের দরজায় নিজের প্রতিফলন দেখে ভড়কে যায়। নাওয়া খাওয়া এক প্রকার চুলোয় গেছে, উদ্ভ্রান্ত পাগলের মতন দেখাচ্ছে আদিকে।
তিস্তার ফোন এলো, "ঋতুপর্ণাদি এখন কেমন আছেন?"
উত্তর দেওয়ার তেমন মানসিকতা ছিলো না, তাও ভদ্রতার খাতিরে উত্তর দিতে হয়, "একই রকম।"
ভাবে একবার, তিস্তাকে কি সবিস্তারে জানাবে। ওকে জানানো কি ঠিক হবে? হয়তো একটু সাহায্য করতে পারে তিস্তা। প্রেম ভালোবাসা হয়তো ওদের মধ্যে নেই ঠিক, কিন্তু আন্তরিকতা আছে। আদি উত্তর দেয়, "মায়ের রেট্রোগ্রেড এম্নেসিয়া হয়েছে।"
তিস্তা বুঝতে না পেরে বলে, "মানে?"
আদি বলে, "অর্থাৎ, মা আমাকে চিনতে পারছে না। দশ বছর আগের আমাকে খুঁজছে, আমাকে দেখে মা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না যে আমি বড় হয়ে গেছি।"
তিস্তা সব কিছু শুনে বার কয়েক হুম হ্যাঁ, করার পরে বলে, "ঋতুপর্ণাদি কবে রিলিজ পাচ্ছে?"
আদি উত্তর দেয়, "দিন পাঁচ সাত লাগতে পারে।"
তিস্তা খানিক্ষন ভেবে বলে, "আমি তোমার বাড়িতে এসে থাকব, ঋতুপর্ণাদির দেখা শোনা করব চিন্তা কর না।"
এটা কি তিস্তার কোন মতলব আদির কাছাকাছি আসার না এর পেছনে অন্য কোন মতলব আছে? কিন্তু প্রেমিক কৌশিককে ছেড়ে ওর কাছে আসতে কেন যাবে তিস্তা? খানিক ভেবে আদি উত্তর দেয়, "ডোন্ট ওরি, আমি ম্যানেজ করে নিতে পারবো। তোমার অত চিন্তা করতে হবে না। আর এই যে তুমি বললে আমাকে হেল্প করবে তার জন্য মেনি মেনি থ্যাঙ্কস।"
তিস্তা মৃদু হেসে উত্তর দেয়, "অত ফরমাল হতে হবে না আদি। তুমি অনেক মেচিওর আর ম্যানেজ করে নেবে সেটা জানি, তাও বলে রাখলাম। এই সময়ে ঋতুপর্ণাদির পাশে একটা মেয়ে থাকলে, মানে আশা করি তুমি বুঝতে পারছ। অনেক সময়ে হয়তো তোমার সাহায্য নিতে চাইবে না, তখন তুমি কি করবে।"
আদি অনেক কিছুই এখন চিন্তা ভাবনা করে দেখেনি। মাকে নিয়ে কি করে বাড়িতে ফিরবে। মায়ের সামনে নিজের কি পরিচয় দেবে। তবে বাবা যখন অর্থনৈতিক সাহায্যের ভরসা দিয়েছে তখন সর্বদার জন্য একটা নার্স রাখবে। তাই তিস্তার জবাবে বলে, "নার্স রেখে নেব।"
তিনদিন একভাবে কেটে যায়। এর মাঝে অবশ্য সোসাইটি থেকে কমল জেঠু আর জেঠিমা ওর জন্য খাবার দাবার পাঠিয়ে দিয়েছিল। তিস্তা আর কৌশিক এসেছিল এর মাঝে দেখা করতে। ওর কলেজের বন্ধুরা, মায়ের স্কুলের কলিগরা সবাই এক এক করে দেখা করতে এসেছিল। দশ বছর আগে বীথিকা দেবী তখন ইতিহাসের টিচার ছিলেন, তাই ঋতুপর্ণা শুধু মাত্র তাকেই চিনতে পারলো।
ঋতুপর্ণাকে আই.সি.ইউ থেকে রুমে নিয়ে যাওয়া হল। মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে, তবে বেশ কয়েক জায়গায় স্টিকিং প্লাস্টার লাগানো। আদি পাশে ছিল, চোখের আড়াল হয়নি, কিন্তু মায়ের চোখের সামনে যেতে পারেনি, পাছে ওকে দেখে আবার কিছু গোলযোগ বেড়ে যায়। দিন যায় আর ঋতুপর্ণা যত সুস্থ হয়ে ওঠে, আদির বুকের ধুকপুকানি, আশঙ্কা আরো বেশি বেড়ে ওঠে। মা'কে নিয়ে কি করে বাড়ি যাবে। এদিকে ডাক্তার বলে দিয়েছে একদিন পরে মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে।
মনরোগি বিশেষজ্ঞ ডক্টর তৃষার সাথে শলা পরামর্শ করে আদি, কি ভাবে মা'কে বুঝানো যায়। তৃষা ওকে বুঝিয়ে বলে যে আগে ওর মাকে বুঝতে দিতে হবে যে তিনি অনেক কিছু ভুলে গেছেন। আদিকে মায়ের কাছাকাছি থাকতে হবে, বুঝতে দিতে হবে যে আদি ঋতুপর্ণার কাছের মানুষ, ওকে ভালবাসে। কারন স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরে ওর মায়ের একমাত্র সম্বল ওর ছেলে আদি। আদি মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, মায়ের জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত।
রাতের বেলা হসপিটালের ওয়েটিং রুমে একটা চেয়ারে বসে একটু ঝিমুনি ভাব এসে গিয়েছিল আদির। এমন সময়ে নার্স এসে ওকে ডেকে তুলে বলে ওর মা নাকি ওকে ডাকছে। আদি ভালো ভাবে জানে, মা যাকে খুঁজছে সেই মানুষ ও নয়। তাও ধীর পায়ে নার্সের পেছন পেছন রুমে এসে ঢোকে আদি। তিন বেডের, সেমি প্রাইভেট রুম, পর্দা দিয়ে ঘেরা।
ওকে কোনরকমে নিস্তেজ চোখ মেলে তাকায় ঋতুপর্ণা। নিস্তেজ হাতে কাছে আসতে ইশারা করে আদিকে। আদির বুকটা হঠাৎ করে ছলাত করে ওঠে। একটা চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসে।
মিনমিন মিহি নিস্তেজ গলায় ঋতুপর্ণা প্রশ্ন করে, "তোমার নাম কি?"
কি উত্তর দেবে আদি, একটু ভেবে মৃদু হেসে উত্তর দেয়, "আদিত্য, তোমার.... মানে আপনার ছেলের নাম।"
নিস্তেজ হাসি ফুটে ওঠে ঋতুপর্ণার ফ্যাকাসে ঠোঁটে, "আচ্ছা। আমি নার্সের কাছে শুনলাম তুমি নাকি সেইদিন থেকে এইখানেই রয়েছ?"
আদি মাথা দুলিয়ে জানায়, হ্যাঁ।
ঋতুপর্ণা সামনে বসা ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজতে চেষ্টা করে। অস্ফুট গলায় বলে, "তুমি আমার ছেলেকে খুঁজে দেবে?"
বুকের পাঁজর ভাঙলেও আদি মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ খুঁজে দেব।"
ঋতুপর্ণা উঠে বসতে চেষ্টা করে। আদি সঙ্গে সঙ্গে ঋতুপর্ণাকে ধরে পিঠের পেছনে দুটো বালিশ দিয়ে দেয়। মায়ের চেহারা দিকে তাকিয়ে দেখে আদি, এই কয়দিনে শুকিয়ে গেছে, গায়ের রঙ আরো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আগের সেই রূপের ডালি আর নেই সব কেমন যেন ঝরা পাতা আর শুকনো ফুলের গাদা।
ঋতুপর্ণা কোনরকমে উঠে বসে প্রশ্ন করে, "আমার ফ্যামিলি থেকে কি কেউ এসেছিল?"
আদি দাঁতে দাঁত চেপে কোন রকমে চোখের জল বেঁধে রাখে। মাথা দুলিয়ে বলে, "হ্যাঁ মানে মিস্টার সুভাষ এসেছিলেন আপনাকে দেখতে।"
সুভাষের নাম কানে যেতেই মুখ বেদনায় পাংশু হয়ে যায় ঋতুপর্ণার। ভাসা ভাসা চোখে প্রশ্ন করে, "ও ছাড়া?"
মাথা নাড়ায় আদি, "আপনার স্কুলের কলিগেরা আর আপনি যেখানে থাকেন সেই সোসাইটির কয়েকজন।"
ঋতুপর্ণার যেন ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না ছেলেটার কথা। এক অজানা অচেনা ছেলে ওর জন্য কেন এতদিন অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকবে। কি ওর পরিচয়? ও কি ওর কেউ হয়? আদির দিকে শ্রান্ত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
আদিও বুঝতে পারে ওর মা ওর পরিচয় খুঁজছে। কি পরিচয় দেবে? আদি হাত বাড়াল মায়ের হাত হাতে নেওয়ার জন্য। নিস্তেজ নরম হাতখানি হাতের মধ্যে নিয়ে পাশে বসলো। মায়ের মুখের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। বড় ইচ্ছে করে একবার আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে। এতদিন মা ওকে সব কিছু থেকে আগলে রেখেছিল এইবারে ওর পালা।
ঋতুপর্ণা অনেকক্ষন হাঁ করে চেয়ে থাকে ছেলের মুখের দিকে, কোথায় যেন দেখেছে ছেলেটাকে কিন্তু কিছুতেই মনে করে উঠতে পারছে না কোথায় দেখেছে। তবে ছেলেটার ছলছল চাহনির অর্থ ওর বোধগম্য হল না। ঋতুপর্ণা একটু দোনামনা করলেও ছেলেটার হাতের উষ্ণতা ওকে কেমন যেন ভরিয়ে দিল। এই ছোঁয়া যেন ওর অনেকদিনের চেনা, এই আওয়াজ ও কোথাও শুনেছে।
ম্লান হেসে আদি, ঋতুপর্ণার নির্বাক প্রশ্নের উত্তরে বলে, "আমি আপনার খুব কাছের একজন। আপনি ঠিক হয়ে গেলেই সব কিছু বুঝতে পারবেন। আগামি কাল আপনি হসপিটাল থেকে ছুটি পেয়ে যাবেন, তারপরে বাড়ি।"
এক নিঃশ্বাসে এত কথা বলার পরে আদি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।
চুপচাপ নির্বাক দুইজনে হাতে হাত রেখে বসে থাকে।
(#০২)
সকাল থেকেই আদি ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিল মাকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ডক্টর তৃষার সাথে দেখা করে আলোচনা সেরে নিয়েছিল যাওয়ার আগে। তৃষা বারেবারে আদিকে জানিয়ে দেয় যে, রেট্রোগ্রেড এম্নেসিয়ার ফলে ওর মায়ের মাঝে মাঝে মুড সুইং অর্থাৎ মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। সেই মানসিক পরিবর্তন ঠিক কোন দিকে বাঁক নেবে সেটা এখুনি বলা খুব মুশকিল তাই খুব সাবধানে ঋতুপর্ণাকে রাখতে হবে আর ওষুধ পত্র যেন ঠিক মতন খাওয়ানো হয়। আদি তৃষাকে বলে একজন নার্সের ব্যাবস্থা করে নেয়, হয়তো অনেক কিছুতে নার্সের দড়কার পরতে পারে বলে ওর ধারনা। যদিও ঋতুপর্ণা শারীরিক দিক থেকে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে তাও কিছুদিনের জন্য একজন নার্স থাকলে ওর ভালো হয়। অন্তত নিশ্চিন্ত মনে তাহলে কলেজে যেতে পারবে। এখন দুটো সেমেস্টার বাকি। মায়ের জোরাজুরিতে মেকানিকালে ভর্তি হয়েছিল তাই যত অসুবিধেই থাক না কেন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করতেই হবে ওকে।
হস্পিটালের কাজ কর্ম সেরে ঋতুপর্ণাকে নিতে ওর রুমে ঢোকে আদি। নার্সেরা ততক্ষণে ঋতুপর্ণাকে তৈরি করে দিয়েছে। আদির সাথে ক্ষণিকের জন্য চোখাচুখি হয় ঋতুপর্ণার।
আদি মাকে বলে, "এইবারে বাড়ি যেতে হবে।" বলে জিনিসপত্র হাতে উঠিয়ে নেয়।
নির্বাক ঋতুপর্ণা চুপচাপ আদির পেছন পেছন হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে। ট্যাক্সিতে উঠেও ঋতুপর্ণা চুপচাপ। পেছনের সিটে দুই অচেনা মানুষের মতন একজন সিটের এক প্রান্তে বসে অন্যজনে অপর প্রান্তে বসে। ঋতুপর্ণা চুপচাপ জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে নিজেকে খুঁজতে চেষ্টা করে। বারেবারে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে পাশে বসা ছেলেটার বিষয়ে। এই ছেলেটা কে, কেন ওর বারেবারে মনে হচ্ছে এই ছেলেটাকে কোথায় যেন দেখেছে অথচ কিছুতেই মনে করতে পারছে না। ওর গলার আওয়াজ, ওর হাতের ছোঁয়া সবকিছু কেমন যেন চেনাচেনা মনে হয়। সকালে যখন ডক্টর তৃষা ওকে দেখতে এসেছিলেন তখন একবার জিজ্ঞেস করেছিল ছেলেটার পরিচয় কিন্তু ডক্টর সঠিক উত্তর না দিয়ে জানিয়েছিলেন যে এই ছেলেটা নাকি ওর খুব কাছের একজন। নিজের ছেলে আদিত্য, সে কোথায়? সে কি ওর এই এক্সিডেন্টের খবর পায়নি? সুভাষ একবার দেখা করতে এসেছিল তারপরে আর সুভাষের দেখা পায়নি। সুভাষ কি ইচ্ছে করেই আদিকে ওর কাছ থেকে দূরে রেখে দিয়েছে? হতে পারে এটা সুভাষের দুরভিসন্ধি।
এই সব চিন্তা ভাবনাতেই ডুবেছিল ঋতুপর্ণা। পাশে বসা ছেলেটার ডাকে সম্বিত ফেরে, "চলুন আমরা এসে গেছি।"
ঋতুপর্ণা ছোট্ট একটা উত্তর দেয়, "হুম।"
ট্যাক্সি ঠিক ওদের বহুতল বিল্ডিঙের নিচে এসে দাঁড়ায়। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের বিকেল হয়ে গিয়েছিল, তাই ট্যাক্সি থামা মাত্রই সোসাইটির অনেকেই ওদের দেখে কাছে এসে গিয়েছিল। কমল বাবুর কাছ থেকে সবাই জেনে গিয়েছিল ঋতুপর্ণার অসুস্থতার কথা তাই আদিকে অথবা ঋতুপর্ণাকে বিশেষ কিছুই কেউ জিজ্ঞেস করেনি। আদি সবার দিকে তাকিয়ে ম্লান এক ছোটো হাসি দিয়ে লিফটে উঠে গেল।
নিজের ফ্লাটে ঢুকে ঋতুপর্ণা চারপাশে তাকিয়ে দেখে, ফ্লাট চিনতে যদিও কষ্ট হয়নি কিন্তু ফ্লাটের সাজশয্যা সবকিছু কেমন যেন অন্য ধরনের। ছেলেটা যার নাম ওর ছেলের সাথে মেলে, সে ওর সাথেই ওর পেছন পেছন ফ্লাটে ঢুকে পড়েছে। ঋতুপর্ণার কাছে সব কিছু কেমন একটা অবিশ্বাস ঘোরের মতন লাগে।
ঋতুপর্ণা চুপচাপ ফ্লাটের চারপাশ দেখতে দেখতে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। বাড়ির দেয়াল, বাড়ির পর্দা, নিজের ঘর সব কিছু কেমন যেন বদলে গেছে হঠাৎ করে। পেছনে দাঁড়ান ছেলেটা যেন ওকে এক অদৃশ্য নাগপাশে বেঁধে ফেলেছে নিজের চোখের চাহনি দিয়ে। ওকে চলে যেতে বলতেও পারছে না থাকতে বলতে পারছে না। মনের গভীরে এক দ্বন্দ, সেই দ্বন্দ কাটানোর মতন শক্তি ঋতুপর্ণা কিছুতেই আর খুঁজে পাচ্ছে না। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নেয় দরজার কাছে দাঁড়ানো মূর্তি মান ছেলেটার দিকে। ঠোঁট নড়তে গিয়েও কেমন যেন মনে হয়।
অবশেষে জিজ্ঞেস করে, "কিছু বলবে কি?"
আদি ব্যাগ হাতে মায়ের ঘরের মধ্যে ঢুকে একপাশে ব্যাগ রেখে মাথা নাড়িয়ে বলে, "না.... মানে আপনি রেস্ট নিন আমি ততক্ষণে কিছু খাবার বানিয়ে ফেলি।"
হাতের ব্যাগ রেখে আদি নিজের ঘরে ঢুকে বিছানায় বসে পড়ে। এক ধাক্কায় ওদের সরল জীবন রেখার মাঝে বিশাল এক পর্দা এসে গেছে। বাথরুমে স্নান সেরে নেয়। এই এক সপ্তাহের ধকল, ক্লান্তি সব কিছু মুছে ফেলতে চেষ্টা করে।
শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে কিছুদিন আগের কথা মনে পরে যায়। মা আর ছেলের নিরিবিলি জীবনে ধীরে ধীরে এক ভিন্ন পরিপূর্ণতার রেখা দেখা দিয়েছিল। এই কিছুদিন আগেই ওর রূপসী মমতাময়ী মা, এক উচ্ছল তরঙ্গিণীর মতন ছিল। ফোয়ারার নিচে দাঁড়িয়ে স্নান করতে করতে আদি ভাবে, সেই পুরানো বান্ধবী রুপী মাকে কি আর ফিরে পাবে? এখন ওকে চিনতেই পারছে না। এই বারেবারে নিজের মাকে অপরিচিত মানুষের মতন "আপনি" করে ডাকতে ডাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে। সাহস করে "তুমি" বলে ডাকতে পারছে না পাছে কিছু ভেবে বসে। এখন ত ঠিক ভাবে জানেনা মায়ের মনের মধ্যে কি চলছে।
স্নান সেরে রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে আদি। এমন সময়ে সুভাষের ফোন আসে। বাবাকে সব কথা বলার পরে প্রেসার কুকারে ভাত ডাল একসাথে বসিয়ে দেয়। মা ওকে শিখিয়ে দিয়েছিল যে তিনটে হুইসেল মারার পরে নামিয়ে ফেলতে হবে। আলু ভাজা করলে বড় ভালো হয়, মায়ের মতন সরু সরু করে আলু কাটতে একদম জানেনা। মা থাকতে কোনোদিন রান্না ঘরে ঢুকতে হয়নি। অবশ্য মাঝে মধ্যে ব্রেড টোস্ট বানাতে মাকে সাহায্য যে করতো না সেটা নয়। একবার কমল জেঠিমাকে ফোন করে জেনে নিলে কেমন হয়। কমল জেটিমাকে ফোন করতেই জেঠিমা জানিয়ে দিল যে ওদের জন্য রান্না করা হয়ে গেছে। আদি যেন এসে খাবার নিয়ে যায়।
খাবার আনতে যাওয়ার আগে আদি একবার মায়ের ঘরের দিকে উঁকি মেরে দেখে। মায়ের ঘরে মৃদু হলদে আলো জ্বলছে, পর্দাটা একটু একটু করে হাওয়া দুলছে। উঁকি মেরে ভেতরে দেখল। সাদা ধবধবে নরম বিছানার ওপরে ওর মা এক পাশ হয়ে শুয়ে। গলা খাঁকড়ানি দিয়ে নিজের অস্তিতের জানান দিল আদি, কিন্তু মায়ের মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখল না। মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। আদি কমল জেঠুর বাড়িতে খাবার আনতে চলে যায়। খাবার আনার সময়ে কমল জেঠু মায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উত্তরে জানায় যে এক প্রকার চুপচাপ হয়ে গেছে ওর মা।
খাবার নিয়ে এসে মায়ের ঘরে আবার উঁকি মারে আদি। মা সেই এক ভাবে একপাশ হয়ে শুয়ে। ওর মা, শাড়ি ছেড়ে একটা পাতলা সাটিনের নাইটি পরে শুয়ে। পোশাক গায়ের ত্বকের সাথে মিশে গেছে একেবারে। মৃদু হলদে আলোয় সারা ঘর ভেসে যাচ্ছে।
দরজায় দাঁড়িয়ে নিচু গলায় মাকে ডাক দিল আদি, "আপনি কি জেগে আছেন?"
মাকে এই ভাবে বারেবারে "আপনি" করে ডাকতে বড় গলায় বাধে আদির। ওইদিকে মায়ের দিক থেকে কোন সারা শব্দ পেল না। মনের মধ্যে একটু ভয় ঢুকে গেল কিছু হয়নি তো। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। ওর মায়ের দেহের গঠন অপূর্ব, ঘিয়ে রঙের পাতলা সাটিনের ম্যাক্সিটা একেবারে মিশে গেছে। মাথার নিচে বালিশ দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রয়েছে। ধীর লয়ে শ্বাসের ফলে ব্রা হীন বড় বড় স্তন জোড়া ফুলে ফুলে উঠছে। ম্যাক্সির সামনের দিক বেশ নিচে নেমে গিয়ে বুকের মাঝের ভাঁজ পরিস্কার হয়ে বেরিয়ে পড়েছে। বড় বড় স্তনের মাঝে হলদে আলো আধারির খেলা চলছে মনে হল। দুই হাত উন্মুক্ত, মাথার এলো চুল বালিশের ওপরে ছড়িয়ে। হাল্কা হলদে আলোতে মাকে অপূর্ব এক জল পরীর মতন দেখাচ্ছে। চওড়া কাঁধের পরেই বাঁকা পাতলা কোমর, তার পরে ফুলে ওঠা ভারি দুই পাছা। ম্যাক্সির নিচে কিছুই পরে নেই সেটা স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যায়। মায়ের এই রূপ ভীষণ ভাবে আকর্ষণ করে আদিকে। পুরানো সেই বান্ধবীটাকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে ইচ্ছে হয়। বিছানায় মায়ের পাশে বসবে কি বসবে না সেই নিয়ে মনের মধ্যে দ্বন্দের উদ্রেক হয়। মনে হয় এতদিন হসপিটালে ঠিক স্নান করেনি তাই বাড়ি ফিরে ভালো ভাবে স্নান করেছে। মায়ের শরীর থেকে ভুরভুর করে সাবানের মিষ্টি গন্ধ, চুল থেকে শ্যাম্পুর গন্ধ তার সাথে মায়ের গায়ের মাদক গন্ধে আদি পাগল প্রায় হয়ে ওঠে কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়। মা যে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ নয়।
বুকের মাঝে শক্তি সঞ্চার করে আলত করে মায়ের কাঁধে হাত রাখে আদি। কোমল মসৃণ ত্বকে হাত পরতেই আদির মনে হল সেই পুরানো মিষ্টি মায়ের ছোঁয়া। ঝুঁকে পরে মায়ের মুখের দিকে দেখে। মেকি রঙ বিহীন সারা চেহারার এক ভিন্ন উজ্জ্বলতার ছটায় আলোকিত। নিঃশ্বাসের ফলে নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে। রঙ হীন ঠোঁট জোড়া গোলাপি কোয়ার মতন। অবিশ্বাস্য রূপটা বড় চোখ ধাঁধানো। এতদিন হসপিটালে থাকার পরেও যেন এই রূপে বিশেষ কোন টোল পরেনি। হাতের থাবা ধীরে ধীরে মায়ের নরম কাঁধের ওপরে শক্ত হয়ে ওঠে।
আদি মায়ের কাঁধ ধরে একটু নাড়িয়ে নিচু গলায় বলে, "খাবার হয়ে গেছে, একটু খেয়ে নিলে ভালো হয়।"
ঘুম জড়ানো চোখ জোড়া ধীরে ধীরে খুলে যায়। গালের ওপরে এক অচেনা পূর্ণ বয়স্ক পুরুষের তপ্ত শ্বাস ঋতুপর্ণাকে জাগিয়ে তোলে। গলাটা যদিও চেনা চেনা ঠেকে কিন্তু এত কাছ থেকে ছেলেটাকে দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। ধরমর করে উঠে বসতে চেষ্টা করে ঋতুপর্ণা। বুকের কাছ থেকে মাক্সিটা একটু সরে গিয়ে বুকের খাঁজটা বেশি করে সামনের দিকে ঠেলে বেরিয়ে আসে। নিজের পোশাকের দিকে চেয়ে বড় লজ্জা পেয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে কান গাল লাল হয়ে যায়। ছেলেটা ওর জন্য অনেক কিছু করেছে এখন করছে তাই কিছু বলতে গিয়েও বাধা পায়। নিজের বিছানায় এতদিন পরে শুয়ে শরীরে একটু তেজ আসে। কিন্তু ছেলেটার ডাকে ঘুমটা পালিয়ে যায়।
বড় বড় চোখ জোড়া আদির দিকে একভাবে নিবদ্ধ করে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ যাচ্ছি।”
আদি মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে বেশ বিব্রত বোধ করছে। তাই বিছানা থেকে সরে গিয়ে উত্তর দেয়, "শরীর ভালো না লাগলে উঠতে হবে না। আমি খাবার এইখানেই নিয়ে আসছি।"
ঋতুপর্ণার চোখ জোড়া হঠাৎ করে ঝাপসা হয়ে আসে। হয়তো নিজের ছেলে হলে ঠিক এই কথাই বলত। কিন্তু ওর আদি কোথায়? কেউ কি ওর ছেলের কথা জানে? এখন পর্যন্ত ছেলেকে দেখতে পায়নি।
আমতা আমতা করে নিচু গলায় অপিরিচিত ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে, "না মানে এখন শরীরটা ঠিক আছে, আমি টেবিল পর্যন্ত যেতে পারব। তোমাকে অত কষ্ট করে এইখানে খাবার নিয়ে আসতে হবে না।"
মায়ের চোখের চাহনি দেখে আদির বুঝতে দেরি হয় না যে বুকের ভেতরে এক বিশাল দ্বন্দ চলছে। মা বিছানা ছেড়ে উঠে গায়ে একটা স্টোল জড়িয়ে আদির পেছন পেছন খাবার টেবিলে এসে বসে পড়ে। দুই জনেই চুপচাপ খাবার খেয়ে নেয়। রাতের খাবার সেরে ঋতুপর্ণা চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকে দরজা দিয়ে দেয়। আদি একবার বলতে যাচ্ছিল, না দরজা বন্ধ করো না, রাতে কিছু হলে কি করে খুলবো? কিন্তু সেই সাহস আদির হয়নি।
সিঙ্কে রাতের বাসন রেখে আদি চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে। সারা বাড়ি নিস্তব্দ। ধীরে ধীরে রাত ঘনিয়ে আসে সেই সাথে আদির আশঙ্কা, আগামী কাল আদি কলেজ গেলে মাকে কার কাছে রেখে যাবে? যদিও কমল জেঠিমাকে বলে এসেছে মাকে দেখার জন্য, কিন্তু কমল জেঠমার বয়স হয়েছে। সকালে যদি নার্স আসে তাহলেও সাথে একজন থাকলে বড় ভালো হত। প্রায় এক সপ্তাহ কলেজে যাওয়া হয়নি।
সকালে উঠে আদি রিতিমত চমকে যায়। রান্না ঘর থেকে আওয়াজ আসতেই দেখে ওর ওঠার অনেক আগেই মা উঠে গেছে। সেই পুরানো দিনের মতন সকাল সকাল স্নান সেরে তৈরি। এক ধাক্কায় যেন মায়ের বয়সটাও অনেক কমে গেছে বলে মনে হল আদির। পরনে সেই নরম সুতির গোলাপি শাড়ি আর কালো ব্লাউজ। পিঠের কিছুটা ভেজা চুলের জলে ভিজে গেছে। ফর্সা মরালী গর্দানে একটা সোনার হার। ভোরের সূর্য মায়ের অপরূপ রূপের কাছে ম্লান মনে হল।
পায়ের শব্দে ঋতুপর্ণা পেছনে ঘুরে তাকিয়ে অপিরিচিত ছেলেটাকে দেখতে পায়। মনের গভীরে ওঠা দ্বন্দ দূরে ঠেলে বলে, "উঠে পড়েছ? হাত মুখ ধুয়ে নাও আমি চা বানিয়ে দিচ্ছি।"
চা বানাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে ঋতুপর্ণা। রান্না ঘর তার একদম অচেনা নয়। রাতে যদিও মাথাটা একটু চিনচিন করেছিল কিন্তু সেটা একদম কেটে গেছে। সকালে উঠে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না যে সারা রাত এক অপরিচিত ছেলে ঠিক ওর পাশের ঘরে শুয়েছিল। যদিও একটু ভয় ভয় হয়েছিল কিন্তু ছেলেটার চোখের চাহনি ওকে হারিয়ে দিয়েছিল। এখন সেই চাহনি ওকে হারিয়ে দেয়।
আদি দেরি করে না, হয়তো ওর মায়ের স্মৃতি ফিরে এসেছে। এক প্রকার নাচতে নাচতে নিজের রুমে ঢুকে যায়। কিন্তু হাত মুখ ধুয়ে চা খেতে বসে ওর ভুল ভেঙ্গে যায়। টেবিলে শুধু একটা কাপ রাখা, কয়েকটা ব্রেড।
আদি চেয়ার টেনে খাবার টেবিলে বসে পড়ে। সামনের চেয়ারে ওর মা বসে ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, "আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলবে?"
আদি মাথা নাড়ায়, হ্যাঁ।
ঋতুপর্ণা আদির চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, "তোমার আসল পরিচয় ঠিক জানা হয়নি।"
এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে আদি ঠিক ভেবে পায়না। আমতা আমতা করে উত্তর দেয়, "আপনি একটু সুস্থ হয়ে নিন তারপরে সব কথা খুলে বলব।"
ঋতুপর্ণা একভাবে তাকিয়ে থাকে ছেলেটার দিকে, উত্তরটা ঠিক মনঃপুত হল না। ছেলেটাও এক ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে। একটু কেমন কেমন লাগলেও প্রশ্ন করে, "আমার ঠিক কি হয়েছিল?"
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আদি উত্তর দেয়, "আপনার একটা বড় এক্সিডেন্ট হয়েছিল। আপনি মাথায় চোট পেয়েছিলেন।"
তারপরে ঠিক কি বলবে আদি ভেবে পায়না। মাকে কি জানিয়ে দেবে যে মায়ের স্মৃতি দশ বছর লোপ পেয়ে গেছে। হঠাৎ করে এই কথা জানালে হয়তো মানসিক ধাক্কা লাগতে পারে, কিন্তু কিছু একটা বলতে হবে।
আদি কিছু বলার আগেই ওর মা ওকে প্রশ্ন করে, "তুমি কি করো?"
আদি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে, যাক এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। মৃদু গলায় বলে, "আমি মেকানিকাল পড়ছি।"
ওদের মাঝে এ যেন এক নতুন করে পরিচয় পর্ব শুরু!
চোখ বড় বড় করে তাকায় ঋতুপর্ণা, "আচ্ছা তাই নাকি?" একটু খানি হারিয়ে যায়। বিশাল খাবার ঘরের দেয়ালে টাঙ্গান এক পেন্টিঙ্গের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে, "আমার বড় ইচ্ছে আমার ছেলেও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুক।"
আদির চোখ ফেটে জল চলে আসার যোগাঢ়। কোন রকমে সামলে উত্তর দেয়, "আপনার ছেলে বড় হয়ে নিশ্চয় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে।"
মৃদু হাসে ঋতুপর্ণা, "বড় কষ্ট করে ছেলেটাকে দূর হস্টেলে পাঠিয়েছি।"
সুভাষের কথা মনে পড়তেই আবার হারিয়ে যায়। চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, দূর করে ঠেলে দেয় সেই বিবর্ণ চিত্র। না না, ওই সব নিয়ে ভাবার একদম সময় নেই। কিন্তু এই এক্সিডেন্ট কি করে হল সেটাই ওর কিছুতেই মনে পড়ছে না। আর কেনই বা এই ছেলেটাকে দেখে এত কাছের মানুষ বলে মনে হচ্ছে সেটাও কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
"তুমি কি এখন কোথাও যাবে?" ঋতুপর্ণা চিন্তা থামিয়ে প্রশ্ন করে।
আদি মাথা নাড়ায়, "বের হওয়ার ইচ্ছে আছে মানে অনেকদিন কলেজে যাওয়া হয়নি। কিন্তু আপনার শরীরের অবস্থা...."
ঋতুপর্ণা হেসে বলে, "না না, এখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছি। তুমি যেতে পারো।"
ভাঙ্গা মনে চা শেষ করে আদি বেরিয়ে পড়ে। ভেবেছিল মা হয়তো ওকে চিনতে পারবে, কিন্তু সে গুড়ে বালি।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment